3. আযান ও তার সুন্নাত

【1】

আযানের সূচনা

আব্দুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গাধ্বনি করার মনস্থ করেন এবং ঢোল বাজিয়ে লোকেদের (সলাতের জন্য) ডাকার নির্দেশ দেন। এরপর আবদুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) কে স্বপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেন, আমি সবুজ বর্ণের একজোড়া কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তিকে একটি নাকূস বহন করতে দেখলাম। আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি নাকূস বিক্রি করবে? সে বললো, তা দিয়ে তুমি কি করবে? আমি বললাম, আমি তা দিয়ে সলাতের জন্য ডাকবো। সে বললো, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন জিনিস সম্পর্কে অবহিত করবো না? আমি বললাম, তা কী? সে বললো, তুমি বলোঃ “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। সলাতের দিকে এসো, সলাতের দিকে এসো। কল্যাণের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই”। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ বিন যায়দ (রাঃ) বের হয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসেন এবং যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি স্বপ্নযোগে একজোড়া সবুজ কাপড় পরিহিত এক ব্যক্তিকে নাকূস বহন করতে দেখলাম। এরপর তিনি তাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের এই সাথী একটি স্বপ্ন দেখেছে। তুমি বিলালের সাথে মাসজিদে চলে যাও, তাকে এগুলো শিখিয়ে দাও এবং বিলাল যেন আযান দেয়। কারণ বিলাল তোমার চাইতে উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী। রাবী বলেন, আমি বিলালের সাথে মাসজিদে গেলাম। আমি তাকে শিখিয়ে দিলাম এবং তিনি তা উচ্চ স্বরে ঘোষণা দিলেন। রাবী বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এই বাক্যধ্বনি শুনে বেরিয়ে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমিও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি। ইরওয়া’ ইবনু মাজাহ এর উষ্ণতায় আবূ উবায়দ (রাঃ) বলেন, আবূ বাকর আল-হাকামী আমাকে অবহিত করেছেন যে, আবদুল্লাহ বিন যায়দ আল-আনসারী (রাঃ) এ সম্পর্কে (কবিতা) বলেন, আমি মহামহিম গৌরবান্বিত অশেষ প্রশংসা করছি আযান দেয়ার জন্য। যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদদাতা তা নিয়ে আমার নিকট এলো, আমাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য তাকে সম্মান করে, সে তিন রাত আমাকে আযান দিলো, যখনই সে এলো, আমার মর্যাদা বাড়িয়ে দিলো। [৭০৪] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের জন্য সমবেত করার ব্যাপারে সহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। তারা শিঙ্গার কথা উল্লেখ করেন, কিন্তু এটি ইহুদীদের যন্ত্র বলে তিনি অপছন্দ করেন। অতঃপর তারা নাকূসের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এটি খ্রিস্টানদের ঘণ্টা বলে তিনি অপছন্দ করেন। সেই রাতে আবদুল্লাহ বিন যায়দ নামে এক আনসারীকে স্বপ্নে আযানের পদ্ধতি দেখানো হলো এবং উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও (রাতে একই স্বপ্ন দেখেন)। আনসারী সহাবী রাতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলে তিনি আযান দেন। যুহরী (রাঃ) বলেন, বিলাল (রাঃ) ফজরের সলাতে (ঘুম থেকে সালাত উত্তম) বাক্যটি সংযোজন করেন এবং রাসূল তা বহাল রাখেন। উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমিও এ ব্যাক্তির অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছি, কিন্তু সে আমার আগেই পৌঁছে গেছে। [৭০৫] তাহকিক আলবানীঃ দঈফ, এর কিছু অংশ সহিহ, যা বুখারি, মুসলিমে রয়েছে।

【2】

আযানের তারজীর বিবরণ

আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) (আবদুল্লাহ বিন মুহায়রীয়) ইয়াতীম হিসেবে আবূ মাহযূরা (রাঃ) এর তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় তিনি আমাকে সিরিয়ার দিকে পাঠান। তখন আমি আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) কে বললাম, হে চাচাজান! আমি সিরিয়ায় যাচ্ছি। আমি আপনাকে আপনার আযান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) বলেন, আমি একটা দলের সাথে রওয়ানা হলাম এবং আমরা কোন এক রাস্তা অতিক্রম করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুয়াযযিন তাঁর উপস্থিতিতে সালাতের আযান দেন। আমরাও মুয়াযযিনের আযান ধ্বনি শুনলাম। তা অপছন্দ হওয়ার কারণে আমরা তার শব্দাবলীর প্রতিধ্বনি করতে লাগলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিধ্বনি শুনে আমাদের নিকট লোক পাঠান। আমাদেরকে তার সামনে পেশ করা হলে তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কার কণ্ঠস্বর উচ্চ, যার কণ্ঠস্বর আমি শুনতে পেলাম? লোকেরা ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিল। তিনি সকলকে ছেড়ে দিলেন এবং আমাকে আটক রাখলেন। তিনি আমাকে বলেন, দাঁড়াও এবং আযান দাও। অতএব আমি দাঁড়ালাম। আমার কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তিনি যার নির্দেশ দিয়েছেন তার চাইতে অধিকতর অপ্রিয় কোন কিছুই ছিল না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দাঁড়ালাম এবং তিনি নিজে আমাকে আযান শিক্ষা দিলেন। তিনি বলেন, তুমি বলোঃ “আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই; আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন, তুমি আরো উচ্চকণ্ঠে বলোঃ “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই; আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আমি সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। সালাতের দিকে এসো, সালাতের দিকে এসো। কল্যাণের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই”। আমি আযান শেষ করলে তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন এবং কিছু রূপার মুদ্রা ভর্তি একটি থলে দান করেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত আবূ মাহযূরা (রাঃ)– এর কপালের অগ্রভাগে রাখেন, অতঃপর তা তাঁর মুখমণ্ডলে বুলিয়ে দেন, অতঃপর তাঁর হাত তার বুকে বুলিয়ে দেন, এমনকি তাঁর হাত আবূ মাহযূরাহ (রাঃ) – এর নাভিমূল পর্যন্ত পৌঁছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাকে বরকত দান করুন এবং তোমার উপর বরকত নাযিল করুন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে মাক্কাহ মুয়াযযামায় আযান দেয়ার জন্য নিয়োগ করুণ। তিনি বলেন, হাঁ, তোমাকে নিয়োগ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর যা কিছু আমার নিকট অপ্রিয় ছিল তা সব দূর হয়ে গেল এবং তদস্থলে তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা স্থান পেল। অতঃপর আমি মাক্কাহ মুয়াযযামায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর গভর্নর আত্তাব বিন উসাইদ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমি তার উপস্থিতিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর নির্দেশ মোতাবেক সালাতের আযান দিলাম। [৭০৬] আবদুল্লাহ বিন মুহাইরীয (রাঃ) আবূ মাহযূরা (রাঃ) তাকে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আযানের ঊনিশটি এবং ইকামতের সতেরটি বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। আযানের বাক্যগুলো হলোঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এবং ইকামাতের ১৭ টি শব্দ হলোঃ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ, হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাস সালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ, হায়্যা আলাল ফালাহ, কদ-কামাতিস সালাহ, কদ-কামাতিস সালাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। [৭০৭]

【3】

আযানের সুন্নাত।

সা’দ বিন আয়েয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)– কে তার দু’কানের ছিদ্রে তার দু’ আঙ্গুল প্রবিষ্ট করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, তাতে তোমার কণ্ঠস্বর আরো উচ্চ হবে। [৭০৮] আবূ জুহায়ফা (রাঃ) আমি আল-আবতাহ (মিনা) নামক উপত্যকায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি লাল তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছিলেন। বিলাল বেরিয়ে এসে আযান দিলেন। আযান দেয়ার সময় তিনি এদিক-সেদিক তার মুখ ফিরান এবং তার দু’কানের ছিদ্রে তার দু’ আঙ্গুল প্রবিষ্ট করান। [৭০৯] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুয়াযযিনের কাঁধে মুসলিমদের দুটি বিষয় অর্পিতঃ তাদের সালাত ও সাওম। [৭১০] জাবির বিন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, ওয়াক্‌ত হলে বিলাল (রাঃ) কখনো আযান দিতে বিলম্ব করতেন না। তবে তিনি কখনো ইকামতে কিছুটা বিলম্ব করতেন। [৭১১] উসমান বিন আবূল আস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার থেকে সর্বশেষ যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তা হলোঃ আমি যেন বেতনভুক্ত মুয়াযযিন নিয়োগ না করি। [৭১২] বিলাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – আমাকে ফজরের সলাতে তাসবীব করার নির্দেশ দেন এবং ইশার সালাতে তাসবীব করতে নিষেধ করেন। [৭১৩] বিলাল (রাঃ) তিনি ফজরের সালাত সম্পর্কে অবহিত করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন। তাকে বলা হলো যে, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন বিলাল (রাঃ) বলেন, “ঘুম থেকে সালাত উত্তম; ঘুম থেকে সালাত উত্তম”। এ বাক্য ফজরের আযানে যোগ করা হলো এবং তদনুযায়ী আমাল চলে আসছে। [৭১৪] যিয়াদ ইবনুল হারিস আস-সুদাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক সফরে রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দিলে আমি আযান দিলাম। বিলাল (রাঃ) ইকামাত দিতে চাইলে রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমার ভাই সুদাঈ আযান দিয়েছে। আর যে ব্যক্তি আযান দিবে সেই ইকামাত দিবে। [৭১৫]

【4】

মুয়াযযিন যখন আযান দেয় তখন যা বলতে হবে ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুয়াযযিন যখন আযান দেয়, তখন তোমরা তার কথার অনুরূপ বলো। [৭১৬] উম্মু হাবীবাহ (রহঃ) তার পালার দিন ও রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তার নিকট অবস্থান করতেন তখন তিনি তাঁকে মুয়ায্‌যিনের আযান শুনে তার অনুরূপ বলতে শুনেছেন। [৭১৭] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা যখন আযান শুনতে পাও, তখন মুয়ায্‌যিন যা বলে তোমরাও তা বলো। [৭১৮] সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি মুয়ায্‌যিনের আযান শোনার পর নিম্নোক্ত দুআ’ পড়লে তার গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল। আমি আল্লাহ্‌কে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট”। [৭১৯] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি মুয়ায্‌যিনের আযান শুনে নিম্নোক্ত দু’আ পড়লে তাঁর জন্য কিয়ামাতের দিন শাফাআত অবধারিত হবেঃ “হে আল্লাহ, এই পূর্ণাঙ্গ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সলাতের প্রভু! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দান করুন সুমহান মর্যাদা ও সম্মান এবং তাঁকে প্রশংসিত স্থানে পৌছান, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাকে দিয়েছেন।” [৭২০]

【5】

আযানের ফাদীলাত ও মুয়াযযিনের সাওয়াব ।

আবদুর রহমান বিন আবূ সা’সাআহ আবূ সাঈদ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, যখন তুমি গ্রামে বা বন-জঙ্গলে থাকবে, তখন উচ্চৈঃস্বরে আযান দিবে। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ জিন, মানুষ, বৃক্ষলতা ও পাথর যে-ই এই আযান শুনবে, সে তাঁর জন্য (আখেরাতে) সাক্ষ্য দিবে। [৭২১] আবূ হূরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নিজ মুখে বলতে শুনেছিঃ মুয়াযযিনের আযান ধ্বনি যত দূর পর্যন্ত পৌছবে, তত দূর তাঁকে ক্ষমা করা হবে এবং জীবিত ও নির্জীব সকলে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। সলাতে উপস্থিত লোকদের পঁচিশ নেকী লেখা হয় এবং তার দু’ সলাতের মধ্যর্বতী কালের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। [৭২২] মুআবিয়াহ বিন আবূ সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামাতের দিন মুয়াযযিনগণ লোকদের মাঝে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবে। [৭২৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অবশ্যই তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তি আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যকার উত্তম কারী (কুরআন বিশেষজ্ঞ) ইমামতি করবে। [৭২৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নেকীর আশায় সাত বছর আযান দেয় আল্লাহ তাঁকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সনদ লিখে দেন। [৭২৫] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি বারো বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযান বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়। [৭২৬]

【6】

ইকামতের শব্দগুলো একবার করে বলা ।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) সাহাবীগণ সলাতের ওয়াক্তের সংকেতবাহী কোন পন্থা খুঁজছিলেন। তখন বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দাবলী দু’বার করে এবং ইকামতের শব্দাবলী একবার করে বলার নির্দেশ দেয়া হয়। [৭২৭] আনাস (রাঃ) বিলাল (রাঃ)-কে আযানের শব্দাবলী জোড়া সংখ্যায় এবং ইকামাতের শব্দাবলী বেজোড় সংখ্যায় বলার নির্দেশ দেয়া হয়। [৭২৮] সা’দ বিন আয়েয (রাঃ) বিলাল (রাঃ) আযানের শব্দাবলী দু’বার করে এবং ইকামতের শব্দাবলী একবার করে উচ্চারণ করতেন। [৭২৯] আবূ রাফি’ (রাঃ) আমি বিলাল (রাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে আযানের প্রতিটি বাক্য দু’বার করে এবং ইকামতের প্রতিটি বাক্য একবার করে বলেছেন। [৭৩০]

【7】

তুমি মাসজিদে থাকা অবস্থায় আযান হলে, সেখান থেকে বের হয়ে চলে যেও না ।

আবূশ-শা’সা’ (রাঃ) আমরা আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-এর সাথে মাসজিদে বসা ছিলাম। মুয়ায্‌যিন আযান দিলে পর এক ব্যক্তি মাসজিদ থেকে ঊঠে চলে যেতে থাকে। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)–এর দৃষ্টি তাকে অনুসরণ করতে থাকে। অবশেষে সে মাসজিদ থেকে বের হয়ে চলে যায়। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, লোকটি তো আবূল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফরমানী করলো। [৭৩১] উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মাসজিদে আযান হয়ে যাওয়ার পর যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে বেরিয়ে যাবে এবং তার ফিরে আসার ইচ্ছা নাই সে মুনাফিক। [৭৩২]