30. পানীয় ও পানপাত্র
শরাব সমস্ত পাপ কাজের প্রসূতি
আবূ দারদা (রাঃ), আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উপদেশ দিয়েছেন : শরাব পান করো না, কারণ তা সমস্ত পাপাচারের প্রসূতি। [৩৩৭১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। খাব্বাব ইবনুল আরাত্তি (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাবধান ! শরাব পরিহার করো। কারণ শরাবের পাপ অন্যান্য পাপাচারকে আওতাভুক্ত করে নেয়, যেমন তার গাছ (আংঙ্গুর গাছ) অন্যান্য গাছের উপর বিস্তারিত হয়। [৩৩৭২] তাহকীক আলবানীঃ দূর্বল।
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে শরাব পান করে, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে শরাব পান করলো, সে তা থেকে তওবা না করলে, আখেরাতে তা পান করতে পারবে না। [৩৩৭৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে শরাব পান করে, সে আখেরাতে তা পান করতে পারবে না। [৩৩৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শরাবখোর
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শরাবখোর (পাপের ক্ষেত্রে) মূর্তিপূজকের সমতুল্য। [৩৩৭৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। আবূ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [৩৩৭৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যে ব্যক্তি শরাব পান করে তার নামায কবুল হয় না
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শরাব পান করে এবং মাতাল হয়, চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হয় না। সে মারা গেলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আর যদি সে তওবা করে, তবে আল্লাহ 'তায়ালা তার তওবা কবুল করবেন। সে পুনরায় শরাব পানে লিপ্ত হলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'য়ালা তাকে 'রাদগাতুল খাবাল' পান করাবেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ‘রাদগাতুল খাবাল’ কী? তিনি বলেনঃ জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ ও রক্ত। [৩৩৭৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যা থেকে শরাব তৈরি হয়
আবূ হুরায়রাহ(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শরাব এ দুটি গাছ থেকে তৈরী হয়ঃ খেজুর গাছ ও আংগুর গাছ। [৩৩৭৮] তাহকীক আলবানীঃ সহিহ। নু'মান বিন বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গম থেকে শরাব হয়, বার্লি থেকে শরাব হয়, আংগুর থেকে শরাব হয়, খেজুর থেকে শরাব হয় এবং মধু থেকে শরাব হয়। [৩৩৭৯] তাহকীক আলবানীঃ সহিহ।
শরাবের উপর দশ প্রকারের অভিসম্পাত করা হয়েছে।
ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শরাবের উপর দশভাবে অভিসম্পাত করা হয়েছেঃ স্বয়ং শরাব (অভিশপ্ত), শরাব উৎপাদক, যে তা উৎপাদন করায়, তার বিক্রেতা, তার ক্রেতা, তার বহনকারী, তা যার জন্য বহন করা হয়, এর মূল্য ভোগকারী, তা পানকারী ও তা পরিবেশনকারী (এদের সকলেই অভিশপ্ত)। [৩৩৮০] তাহকীক আলবানীঃ সহিহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ দশভাবে শরাবের উপর অভিশম্পাত করেছেনঃ শরাব প্রস্তুতকারী, তা উৎপাদনকারী, যে তা উৎপাদন করায়, যার জন্য তা উৎপাদন করা হয়, তা বহনকারী, যার জন্য তা বহন করা হয়, তার বিক্রেতা, তার পরিবেশনকারী এবং যার জন্য পরিবেশন করা হয়। এভাবে তিনি দশজনের উল্লেখ করেছেন। [৩৩৮১] তাহকীক আলবানীঃ সহিহ।
শরাবের ব্যবসা
আয়িশাহ (রাঃ), যখন সূদ সম্পর্কিত সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নাযিল হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে বের হয়ে আসেন এবং শরাবের ব্যবসাও নিষিদ্ধ (হারাম) ঘোষণা করেন। [৩৩৮২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) সামুরা (রাঃ) শরাব বিক্রয় করেন এ কথা উমার (রাঃ) জানতে পেরে বললেন, আল্লাহ সামুরাকে ধ্বংস করুনঃ সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "আল্লাহ তা'য়ালা ইহূদীদের অভিশম্পাত করুন, তাদের প্রতি চর্বি হারাম করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা গলিয়ে বিক্রি করতো’’। [৩৩৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
লোকেরা (শেষ যমানায়) শরাবের বিভিন্ন নামকরণ করবে
আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কোন রাত এবং দিন অতিবাহিত হবে না, যখন আমার উম্মাতের কতক লোক শরাবের ভিন্ন নামকরণ করে তা পান করবে না। [৩৩৮৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মতের কতক লোক শরাবের ভিন্নতর নাম রেখে তা পান করবে। [৩৩৮৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
প্রতিটি নেশা উদ্রেককারী জিনিস হারাম
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নেশা উদ্রেককর প্রতিটি পানীয় হারাম। [৩৩৮৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। [৩৩৮৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। [৩৩৮৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। মু'আবিয়া (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জন্য হারাম। [৩৩৮৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। ইবনু উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি নেশা উদ্রেককর জিনিস শরাবের অন্তর্ভুক্ত এবং যে কোন শরাবই হারাম। [৩৩৯০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ মুসা (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নেশা সৃষ্টকারী প্রতিটি জিনিস হারাম। [৩৩৯১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমাণও হারাম।
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন নেশা উদ্রেককর জিনিস হারাম। আর যে জিনিসের অধিক পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিমাণও হারাম। [৩৩৯২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে জিনিসের অধিক পরিমান নেশা উদ্রেক করে, তার সামান্য পরিমানও হারাম। [৩৩৯৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে জিনিসের অধিক পরিমান নেশা সৃষ্টি করে, তার সামান্য পরিমানও হারাম। [৩৩৯৪] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।
দু'টি জিনিসের সংমিশ্রণে (উত্তেজক পানীয়) প্রস্তুত নিষিদ্ধ।
জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর ও আংগুর একত্রে ভিজিয়ে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন এবং পাকা খেজুর ও কাঁচা খেজুর একত্রে মিশিয়ে নাবীয তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন। মুহাম্মাদ বিন রুমহ, লায়স বিন সা'দ, আতা, জাবিন বিন আবদুল্লাহ (রাঃ)। [৩৩৯৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা খেজুর ও শুকনা খেজুর একত্রে ভিজিয়ে নাবীয তৈরী করো না, তবে এর প্রতিটি পৃথকভাবে ভিজিয়ে নাবীয তৈরী করতে পার। [৩৩৯৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ কাতাদাহ (রাঃ), তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ কাঁচা খেজুর ও পাকা খেজুর একত্রে মিশাবে না এবং খেজুর ও আঙ্গুরও একত্রে মিশাবে না। তবে এর প্রতিটি পৃথকভাবে ভিজিয়ে নাবীয তৈরী করতে পারো। [৩৩৯৭] তাহকীক আলবানী সহীহ।
নাবীয বানানো এবং তা পান করা
আয়িশাহ (রাঃ), আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি পাত্রে নাবীয বানাতাম। আমরা এক মুঠো খেজুর অথবা এক মুঠো আংগুর তুলে নিয়ে পাত্রের মধ্যে ছেড়ে দিতাম, অতঃপর তাতে পানি ঢেলে দিতাম। আমরা সকালবেলা তা ভিজাতাম এবং তিনি সন্ধ্যাবেলা তা পান করতেন। আবার কখনও আমরা সন্ধ্যাবেলা তা ভিজাতাম এবং তিনি সকালবেলা তা পান করতেন। আবূ মুআবিয়া (রাঃ), তার বর্ণনায় বলেন, দিনে ভিজাতেন এবং তিনি রাতের বেলা তা পান করতেন অথবা রাতের বেলা ভিজাতেন এবং তিনি দিনের বেলা তা পান করতেন। [৩৩৯৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য নাবীয তৈরি করা হতো এবং তিনি তা ঐদিন অথবা পরের দিন সকাল অথবা তৃতীয় দিন পর্যন্ত পান করতেন। পান করার পর এর কিছু অংশ অবশিষ্ট থাকলে তিনি তা ঢেলে ফেলে দিতেন অথবা ঢেলে ফেলার নির্দেশ দিতেন। [৩৩৯৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটি পাথরের পাত্রে নাবীয তৈরী করা হত। [৩৪০০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
শরাবের পাত্রে নাবীয বানানো নিষেধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঠের পাত্রে, তৈলাক্ত পাত্রে, কদুর খোলের পাত্রে ও মাটির সবুজ পাত্রে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেনঃ সমগ্র নেশা সৃষ্টিকর জিনিস হারাম। [৩৪০১] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৈলাক্ত পাত্রে ও কদুর খোলে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪০২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির সবুজ পাত্রে, কদুর খোলে ও কাঠের পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪০৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুর রহমান বিন ইয়া’মার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কদুর খোল ও মাটির সবুজ পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪০৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
উপরোক্ত পাত্রগুলোতে নাবীয তৈরী করার অনুমতি
বুরায়দাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তোমাদেরকে কতগুলো পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তাতে নাবীয তৈরী করতে পারো এবং সমস্ত নেশা উদ্রেককারী জিনিস পরিহার করো। [৩৪০৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু মাসঊদ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কতকগুলো পাত্রে নাবীয তৈরী করতে তোমাদের নিষেধ করেছিলাম। জেনে রাখো! পাত্র কোনো জিনিসকে হারাম করে না। তবে সকল নেশাকর দ্রব্যই হারাম। [৩৪০৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
মাটির কলসে নাবীয বানানো
আয়িশাহ (রাঃ), তোমাদের মধ্যে কোন মহিলা কি প্রতি বছর তার কোরবানির পশুর চামড়া দিয়ে একটি মশক বানাতে সক্ষম নয়? তিনি পুনরায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির কলসে এবং এরূপ এরূপ পাত্রে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন, অবশ্য সিরকা বানানো যেতে পারে। [৩৪০৭] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল। আবূ হূরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির কলসে নাবীয বানাতে নিষেধ করেছেন। [৩৪০৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হূরায়রাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মাটির কলসে প্রস্তুত নাবীয নিয়ে আসা হলো, যাতে মাদকতা সৃষ্টি হয়েছিলো। তিনি বলেন, কলসটা ঐ দেয়ালের ওপর নিক্ষেপ করো। কারণ তা কেবল সেইসব লোক পান করতে পারে যাদের আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের প্রতি ঈমান নাই। [৩৪০৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
পাত্র ঢেকে রাখা
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা খাদ্য ও পানীয় পাত্র ঢেকে রাখো, মশকের মুখ বন্ধ করো, প্রদীপ নিভিয়ে দাও (শয়নকালে) ঘরের দরজা বন্ধ করো। কারণ, শয়তান (মুখবন্ধ) মশক খুলতে পারে না, (বন্ধ) দরজাও খুলতে পারে না এবং (ঢেকে রাখা) পাত্রও খুলতে পারে না। তোমাদের কেও যদি পাত্র ঢাকার মত কিছু না পায় তবে সে যেন তার ওপর একটি কাঠ আড়াআড়িভাবে রেখে দেয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে। কেননা ইঁদুর মানুষের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। [৩৪১০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হূরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্র ঢেকে রাখতে, মশকের মুখ বন্ধ করতে এবং খালি পাত্র উপুড় করে রাখতে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। [৩৪১১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ), আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য রাতের বেলা তিনটি পাত্র রাখতাম এবং তিনটিই ঢেকে রাখতাম। একটি তাঁর পবিত্রতা অর্জনের জন্য, একটি তাঁর মিসওয়াকের জন্য, একটি তাঁর পান করার জন্য। [৩৪১২] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
রুপার পাত্রে পান করা
উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি রুপার পাত্রে পান করে, সে নিজের পেটে গড় গড় করে জাহান্নামের আগুন ঢালে। [৩৪১৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হুযায়ফাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনা ও রুপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ তা দুনিয়াতে তাদের (কাফিরদের) জন্য এবং তোমাদের জন্য আখেরাতে। [৩৪১৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি রুপার পাত্রে পান করে, সে নিজের পেটে গড় গড় করে জাহান্নামের আগুন ঢালে। [৩৪১৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
তিন নিঃশ্বাসে পানীয় দ্রব্য পান করা
আনাস (রাঃ) তিনি তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। [৩৪১৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি পান করলেন এবং পানের সময় দু’বার নিঃশ্বাস নিলেন। [৩৪১৭] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
মশকের মুখ উল্টিয়ে পানি পান করা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের মুখ উল্টিয়ে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪১৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের মুখ উল্টিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ নিষেধাজ্ঞার পর এক ব্যক্তি রাতের বেলা উঠে পাত্রের মুখ উল্টে পানি পান করতে গেলে তৎক্ষণাৎ তা থেকে একটি সাপ বের হয়ে আসে। [৩৪১৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪২০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪২১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ), আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে যমযমের পানি পরিবেশন করলাম। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় তা পান করলেন। শা’বী (রঃ) বলেন, আমি এ হাদীস ইকরিমার নিকট বর্ণনা করলে, তিনি আল্লাহর নামে শপথ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করেননি। [৩৪২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। কাবশাহ আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট এলেন। নিকটেই পানির মশক ঝুলানো ছিল। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় তা থেকে পান করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখ লাগানো স্থানের বরকত লাভের আশায় কাবশা (রাঃ) মশকের মুখ কেটে সংরক্ষণ করেন। [৩৪২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। [৩৪২৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
পানীয় পানের সময় পর্যায়ক্রমে ডান দিকের ব্যক্তিকে দিতে হবে
আনাস বিন মালিক (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য পানি মিশ্রিত দুধ আনা হলো। তাঁর ডান পাশে ছিল এক বেদুইন এবং বাম পাশে ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)। তিনি তা থেকে পান করার পর বেদুইনকে দেন এবং বলেনঃ পর্যায়ক্রমে ডান দিক থেকে। [৩৪২৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য দুধ দেওয়া হলো। তাঁর ডান দিকে ছিলেন বিন আব্বাস (রাঃ) ও বাম দিকে ছিলেন খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিন আব্বাস (রাঃ) কে বলেন, তুমি কি আমাকে অনুমতি দিবে যে আমি খালেদকে পানি পান করাবো? বিন আব্বাস বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উচ্ছিষ্টের ব্যাপারে আমার উপর অপর কাউকে অগ্রাধিকার দেয়া আমি পছন্দ করি না। অতএব বিন আব্বাস (রাঃ) দুধের পাত্র নিয়ে পান করেন এবং খালিদ (রাঃ)-ও পান করেন। [৩৪২৬] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
পানির পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলা নিষেধ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ পানীয় দ্রব্য পানকালে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ফেলে। নিঃশ্বাস নেয়ার প্রয়োজন হলে সে মুখ থেকে পাত্র সরিয়ে নিবে, অতঃপর আরও পান করতে চাইলে পাত্র থেকে পান করবে। [৩৪২৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। [৩৪২৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দেয়া নিষেধ
ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানপাত্রে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। [৩৪২৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও পানীয় দ্রব্যে ফুঁ দিতেন না। [৩৪৩০] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
আঁজলা ভরে পানি পান করা এবং পানিতে মুখ লাগিয়ে পান করা
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে উপুড় হয়ে (পাত্রের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে) পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে এক হাতের আঁজলা ভরে পানি পান করতেও নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কুকুরের মত পানিতে মুখ দিয়ে পান না করে, এক হাতেও যেন পানি পান না করে, যেমন একদল লোক পান করে থাকে, যাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট; রাতের বেলা পানপাত্র আন্দোলিত না করে যেন পানি পান না করে। তবে পাত্র আবৃত অবস্থায় থাকলে ভিন্ন কথা। যে ব্যক্তি পাত্র থেকে পান করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হাত দিয়ে পানি পান করে এবং এর দ্বারা বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ তার উদ্দেশ্য, তবে আল্লাহ তা’আলা তার আংগুলের সমপরিমাণ পুণ্য তার আমলনামায় লিখে দিবেন। কারণ হাত হচ্ছে ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ)-এর পানপাত্র, যখন তিনি পানপাত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেছিলেনঃ আফসোস ! এটাও পার্থিব উপকরণ। [৩৪৩১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসার সাহাবীর নিকট গেলেন। তখন তিনি নিজের বাগানে পানি দিচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তোমার নিকট মশকের বাসি পানি থাকলে আমাদের পান করাও, অন্যথায় আমরা মুখ লাগিয়ে পান করে নিবো। তিনি বলেন, আমার নিকট মশকের বাসি পানি আছে। অতঃপর তিনি কুঁড়ে ঘরের দিকে গেলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে গেলাম। ঐ সাহাবী তাঁর জন্য একটি বকরী দোহন করে তার দুধ মশকের পানিতে ঢাললেন। তিনি তা পান করলেন। অতঃপর তাঁর সাথে তাঁর যে সাহাবী ছিলেন তার সাথেও এরূপ করা হলো। [৩৪৩২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) আমরা একটি পানির চৌবাচ্চা অতিক্রমকালে তা থেকে মুখ লাগিয়ে পানি পান করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা মুখ লাগিয়ে পানি পান করো না, বরং তোমাদের হাতগুলো ধৌত করে তার সাহায্যে পান করো। কারণ হাতের তুলনায় অধিক পরিচ্ছন্ন কোন পাত্র নাই। [৩৪৩৩] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।
পরিবেশনকারী সবশেষে পান করবে
আবু কাতাদাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেদের পানীয় পরিবেশনকারী সবশেষে পান করবে। [৩৪৩৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
গ্লাসে পান করা
ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি কাঁচের গ্লাস ছিল। তিনি তাতে পানীয় দ্রব্য পান করতেন। [৩৪৩৫] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।