4. মসজিদ ও জামাআত
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করলো ।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নামের যিকিরের জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করেন। [৭৩৩] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ অনুরূপভাবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। [৭৩৪] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ সম্পদ ব্যয়ে আল্লাহ্র জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। [৭৩৫] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য টিড্ডির ঢিবির ন্যায় বা তার চাইতেও ক্ষুদ্র একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। [৭৩৬]
মসজিদসমূহ সৌন্দর্যমণ্ডিত করা।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা মসজিদের সৌন্দর্য ও সুসজ্জিতকরণ নিয়ে পরস্পর গর্ব না করবে ততক্ষণ কিয়ামাত সংঘটিত হবে না। [৭৩৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার মনে হয়, তোমরা আমার পরে তোমাদের মসজিদসমূহকে ইহুদীদের সিনাগগ ও নাসারাদের গির্যার ন্যায় বিশালাকার প্রাসাদরূপে তৈরি করবে। [৭৩৮] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন জাতির মসজিদসমূহকে সোনা-রূপা খচিত করা কত মন্দ কাজ! [৭৩৯] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ জিদ্দান।
মসজিদসমূহ নির্মাণের বৈধ স্থান।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লাম)-এর মসজিদের স্থানটি ছিল নাজ্জার গোত্রের, সেখানে কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ এবং মুশরিকদের কবর ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বলেন, তোমরা এই জমিখণ্ড আমার নিকট বিক্রয় করো। তারা বলেন, আমরা কখনো এর বিনিময় মূল্য গ্রহন করবো না। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং সাহাবীগণ তাঁকে মাটি ও কাদা দিতে থাকেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে থাকেনঃ “আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। আপনি আনসার ও মুজাহিদদের ক্ষমা করুন”। ইতোপূর্বে যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হয়ে যেতো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানেই সালাত আদায় করতেন। [৭৪০] উসমান বিন আবূল আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তায়েফবাসীদের জন্য তাদের মূর্তির পাদপিঠে মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। [৭৪১] ইবনু উমার (রাঃ) তাকে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বরাতে বলেন, কয়েকবার পানি ঢেলে দেয়ার পর তথায় সালাত পড়া যাবে। [৭৪২]
যেসব স্থানে সালাত পড়া মাকরূহ।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত সকল (পবিত্র) জায়গাই মসজিদ। [৭৪৩] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাত স্থানে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেনঃ ময়লা-আবর্জনাপূর্ণ স্থানে, কসাইখানায়, কবরস্থানে, রাস্তার মাঝখানে, গোসলখানায়, উটের খোঁয়াড়ে এবং কা‘বার ঘরের ছাদে। [৭৪৪] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সাত জায়গায় সালাত পড়া জায়েয নয়ঃ কাবা ঘরের ছাদে, কবরস্থানে, ময়লা ফেলার স্থানে, কসাই খানায়, গোসলখানায়, উঁটের খোঁয়াড়ে ও রাস্তার মাঝখানে। [৭৪৫]
মসজিদসমূহে যেসব কাজ করা মাকরূহ।
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কতিপয় আচরণ মসজিদে নিষিদ্ধ। মসজিদকে চলাচলের পথ বানানো যাবে না, সেখানে অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনী করা যাবে না, তীর, বর্শা বা কামান বহন করা যাবে না, কাঁচা গোশত নেয়া যাবে না, হদ্দ কার্যকর করা যাবে না, কারো কিসাস কার্যকর করা যাবে না এবং একে বাজারে পরিণত করা যাবে না। [৭৪৬] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, তবে মসজিদকে চলাচলের পথ করা যাবে না-এ অংশ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদসমূহে ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কবিতা আবৃত্তি করতে নিষেধ করেছেন। [৭৪৭] ওয়াসিলা ইবনুল আসকা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের মসজিদসমূহকে শিশু, পাগল, ক্রয়-বিক্রয়, ঝগড়া-বিবাদ, হৈ-চৈ, হদ্দ কার্যকরকরণ ও উন্মুক্ত অস্ত্র বহন থেকে হেফাযত করো। তোমরা তার দরজাসমূহের কাছে শৌচকর্মের জন্য ঢিলা রাখো এবং জুমুআহ্র দিন তাকে সুগন্ধময় করো। [৭৪৮]
মসজিদে ঘুমানো।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে মসজিদে ঘুমাতাম। [৭৪৯] তিখফাহ বিন কায়স (রাঃ) তিনি আসহাবে সুফফার অন্যতম সদস্য। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেনঃ তোমরা যাও। অতএব আমরা আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে গেলাম এবং পানাহার করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা ইচ্ছা করলে এখানেও ঘুমাতে পারো, আর চাইলে মসজিদেও যেতে পারো। রাবী বলেন, আমরা বললাম, বরং আমরা মসজিদে চলে যাই। [৭৫০] তাহকিক আলবানীঃ দঈফ মুযত্বরাব। মুযতারিব।
সর্বপ্রথম যে মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে? তিনি বলেন, মাসজিদুল হারাম। রাবী বলেন, আমি আবার বললাম, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, তারপর মাসজিদুল আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বলেন। চল্লিশ বছরের। এখন তোমার জন্য সমগ্র পৃথিবীই মসজিদ। অতএব যেখানেই তোমার সালাতের ওয়াক্ত হয়, সেখানেই তুমি সালাত আদায় করতে পারো। [৭৫১]
গোত্রের এলাকায় বা মহল্লায় নির্মিত মসজিদেসমূহ।
ইতবান বিন মালিক আস-সালিমী (রাঃ) তিনি ছিলেন তাঁর গোত্র বনু সালিমের মসজিদের ইমাম এবং তিনি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং সয়লাবের কারণে আমার ঘর ও আমার গোত্রের মসজিদের মধ্যকার নালাটি পরিপূর্ণ হয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তা পার হয়ে আসা-যাওয়া আমার জন্য বেশি কষ্টকর। আপনি যদি মনে করেন, আমার বাড়িতে এসে আপনি একটা স্থানে সালাত পড়বেন, যাকে আমি সালাতের স্থান বানাতে পারি, তাহলে তাই করুন। তিনি বলেন, আচ্ছা! তাই করবো। পরের দিন দুপুরের পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) আমার বাড়িতে আসেন এবং ভিতরে আসার অনুমতি চান। আমি তাঁকে ভিতর বাড়িতে আসার অনুমতি দিলাম। কিন্তু তিনি না বসে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গায় তোমার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আমার সালাত পড়া তুমি পছন্দ করো? আমি ঘরের যে স্থানে আমার সালাত পড়া পছন্দ করি সেই জায়গাটি তাঁকে ইশারায় দেখিয়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাঁড়ালেন এবং আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাদের নিয়ে দু’রাকআত সালাত পড়েন। এরপর আমি তাঁকে খাযীরা (এক প্রকার খাদ্য) খাওয়ানোর জন্য অপেক্ষা করালাম, যা তাঁদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। [৭৫২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) এক আনসারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে তাঁকে অনুরোধ করেন, আপনি এসে আমার বাড়ির একটি স্থান আমার সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে দিন। যাতে সেখানে আমি সালাত আদায় করতে পারি। ঘটনাটি ছিল তার অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের। অতএব তিনি এসে তাই করলেন। [৭৫৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কোন এক ফুফু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য খাবার তৈরি করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেন, আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে এসে পানাহার করুন এবং তাতে সালাত পড়ুন। অতএব তিনি এলেন। ঘরে একটি কালো চাটাই ছিল। তিনি ঘরের এক কোণের দিকে ইশারা করেন। আমার চাটাইয়ে পানি ছিটিয়ে (তা পরিষ্কার করে রেখে) দিলাম। তিনি সালাত পড়লেন এবং আমরাও তাঁর সাথে সালাত পড়লাম। আবূ আবদুল্লাহ বিন মাজা (রহঃ) বলেন, যে চাটাই পুরানো হয়ে কালো হয়ে যায় তাকে ‘ফাহ্ল’ বলে। [৭৫৪]
মসজিদসমূহ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখা এবং তাকে সুগন্ধিযুক্ত করা।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে ময়লা দূর করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। [৭৫৫] আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং তাতে খোশবু ছড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। [৭৫৬] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে এবং সুগন্ধি ছড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। [৭৫৭] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন তামিম আদ-দারী (রাঃ)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি মসজিদে আলো-বাতির ব্যবস্থা করেন। [৭৫৮] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ জিদ্দান।
মসজিদে থুথু ফেলা মাকরূহ
আবূ হুরায়রাহ ও আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তারা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের দেয়ালে থুথু বা কফ দেখতে পেলেন তিনি একটি কাঁকর তুলে নিয়ে তা দিয়ে থুথু (কফ) মুছে ফেলেন, অতঃপর বলেন, তোমাদের কেউ থুথু ফেলতে চাইলে সে যেন তা তার সামনের দিকে এবং তার ডান দিকে না ফেলে, বরং তার বাম দিকে বা তার বাম পায়ের নিচে ফেলে। [৭৫৯] আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের কেবলার দিকে থুথু দেখতে পেয়ে খুবই রাগান্বিত হন, এমনকি তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। এক আনসারী মহিলা এসে তা মুছে ফেলে এবং সেই স্থানে সুগন্ধি লাগিয়ে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটা কত উত্তম। [৭৬০] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের কিবলার দিকে থুথু দেখতে পান। তখন তিনি লোকেদের নিয়ে সালাত পড়ছিলেন তিনি তা মুছে ফেলেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি বলেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতে রত থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন, অতএব তোমাদের কেউ যেন সালাতরত অবস্থায় তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। [৭৬১] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের কিবলার দিকে (নিক্ষিপ্ত) থুথু মুছে ফেলেন। [৭৬২]
মসজিদে হারানো জিনিস খুঁজে বেড়ানো নিষেধ।
বুরায়দাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়লেন। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, কে লাল উটের খোঁজ দিতে পারে (আমার লাল উটটি হারিয়ে গেছে)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ যে উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তা সেই উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হবে। [৭৬৩] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে নিষেধ করেছেন। [৭৬৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে মসজিদে হারানো জিনিস খোঁজার ঘোষণা দিতে শুনলে সে যেন বলে, আল্লাহ তোমাকে যেন তা ফিরিয়ে না দেন, কারণ এজন্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়নি। [৭৬৫]
উট ও বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত পড়া।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বকরী বা উটের খোঁয়াড় ব্যতীত সালাত পড়ার জায়গা না পেলে, বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করতে পারো কিন্তু উটের খোঁয়াড়ে পড়বে না। [৭৬৬] আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল আল-মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করতে পারো, কিন্তু উটের খোঁয়াড়ে সালাত পড়ো না। কেননা তা শয়তানের থেকে সৃষ্ট। [৭৬৭] সাবরা বিন মা’বাদ আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উটের খোঁয়াড়ে সালাত পড়া যাবে না, তবে বকরীর খোঁয়াড়ে সালাত পড়া যাবে। [৭৬৮]
মসজিদে প্রবেশের দুআ’
ফাতিমাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশকালে বলতেনঃ “আল্লাহর নামে (প্রবেশ) এবং আল্লাহর রসূলকে সালাম। হে আল্লাহ ! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার দয়ার দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন”। তিনি (মসজিদ থেকে) বের হওয়ার সময় বলতেনঃ “আল্লাহর নামে (প্রস্থান) এবং সালাম আল্লাহর রসূলকে। হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমার জন্য আপনার অনুগ্রহের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন।” [৭৬৯] আবূ হুমায়দ আস-সাইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতি সালাম পেশ করে, তারপর যেন বলেঃ “হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দিন” এবং বের হওয়ার সময় যেন বলেঃ “হে আল্লাহ ! আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করি”। [৭৭০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের যে কেউ মসজিদে প্রবেশকালে যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ “হে আল্লাহ! আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন” এবং বের হওয়ার সময়ও যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সালাম পেশ করে, অতঃপর বলেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে রক্ষা করুন। ”
পদব্রজে সালাত আদায় করতে যাওয়া।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ উত্তমরূপে উদূ করার পর কেবল সালাত পড়ার উদ্দেশেই মসজিদে আসে, আল্লাহ তার প্রতি কদমের বিনিময়ে তার একটি ধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ মুছে দেন যাবত না সে মসজিদে প্রবেশ করে। মসজিদে প্রবেশ করার পর সে যতক্ষণ সালাতের জন্য সেখানে অবস্থান করে, ততক্ষণ সালাতরত হিসাবেই গণ্য হয়। [৭৭২] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সালাতের ইকামাত শুরু হলে তোমরা তার জন্য দ্রুত বেগে আসবে না, বরং ধীরে সুস্থে হেঁটে আসবে। এরপর সালাতের যতটুকু পাও তা পড়ো এবং যতটুকু ছুটে যায় তা পূর্ণ করো। [৭৭৩] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন জিনিসের কথা বলে দিবো না, যার দ্বারা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের গুনাহরাশি ক্ষমা করবেন এবং নেকীর পরিধিও বাড়ীয়ে দিবেন? তারা বলেন, হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেন, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে উদূ করা, মসজিদসমূহের দিকে বেশি বেশি কদম রাখা এবং এক সালাতের পর অপর সালাতের অপেক্ষায় থাকা। [৭৭৪] আবদুল্লাহ্ (রাঃ) যে ব্যক্তি আগামীতে (কিয়ামাতে) মুসলিম হিসেবে আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাত করে আনন্দিত হতে চায়, সে যেন এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতি যত্নবান হয়, যেখানে তার জন্য আযান দেয়া হয়। কেননা এটাই হল হেদায়াতের উত্তম পন্থা। আর আল্লাহ তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য হেদায়াতের পন্থা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমার জীবনের শপথ! তোমাদের সকলে যদি নিজ নিজ বাড়িতে সালাত পড়ো, তবে তোমরা অবশ্যই তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে। আর তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই পথভ্রষ্ট হয়ে গেলে। অবশ্যই আমরা প্রকাশ্য মুনাফিক ব্যাতীত অপর কাউকে সালাতের জামাআত ত্যাগ করতে দেখতাম না। আমি এমন ব্যাক্তিকেও দেখেছি, যিনি দু’ব্যাক্তির কাঁধে ভর করে জামাআতের কাতারে শারীক হতেন। যে ব্যাক্তি উত্তমরূপে ওযু করে মসজিদে উপস্থিত হয়ে সালাত পড়ে, তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তার এক ধাপ মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার একটি গুনাহ মুছে দেন। [৭৭৫] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের উদ্দেশ্যে তার ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলেঃ “হে আল্লাহ! তোমার নিকট প্রার্থনাকারীদের যে অধিকার আছে তার উসীলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, এই পদব্রজের অধিকারের উসীলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি। কেননা গৌরব, অহংকার, প্রদর্শনেচ্ছা প্রসিদ্ধি লাভ ইত্যাদির জন্য আমি মোটেই বের হইনি। আমি বের হয়েছি তোমার অসন্তোষের ভয়ে এবং তোমার সন্তুষ্টির অন্বেষায়। অতএব আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি যে, তুমি আগুন থেকে আমাকে বাঁচাবে এবং আমার গুনাহসমুহ ক্ষমা করবে। কারন তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। [৭৭৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের অন্ধকারে মসজিদসমুহে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দেওয়া হোক। [৭৭৭] সাহল বিন সা’দ আস-সাইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের অন্ধকারে মসজিদসমুহে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দেওয়া হোক। [৭৭৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের অন্ধকারে মসজিদসমুহে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। [৭৭৯]
মসজিদ থেকে দূরে আরো দূরে বসবাসকারীর জন্য মহা পুরস্কার রয়েছে।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মসজিদ থেকে দূরে আরও দূরে বসবাসকারীর জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। [৭৮০] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যক্তির বাড়ি ছিল মাদীনাহর শেষ প্রান্তে। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতে উপস্থিত হতে কখনো ভুল করতো না। রাবী বলেন, তার জন্য আমার মনে কষ্ট অনুভব করলাম। তাই আমি বললাম, হে অমুক! একটি গাধা কিনে নিলে তা তোমাকে গরম থেকে, পথের কষ্ট–কাঠিন্য থেকে এবং মাটির কীট-পতঙ্গ থেকে রেহাই দিত। লোকটি বলল, আল্লাহ্র শপথ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরের লাগোয়া আমার ঘর হোক, এটাও আমার পছন্দনীয় নয়। রাবী বলেন, আমি তার কষ্টে ব্যথিত হলাম, অবশেষে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একই কথা ব্যক্ত করে। সে আরো উল্লেখ করে যে, সে তার পদক্ষেপসমূহের নেকী আশা করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি যেরূপ আশা করছো তদ্রূপই পাবে। [৭৮১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, বনূ সালিমার লোকেরা তাদের বাড়িঘর মসজিদে নববীর নিকটে স্থানান্তরিত করার ইচ্ছা করলো। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহর প্রান্ত এলাকা জনশূন্য হওয়া অপছন্দ করলেন। তাই তিনি বলেন, হে বনূ সালিমা! তোমরা কি তোমাদের পদক্ষেপের নেকী আশা করো না? অতএব তারা স্বস্থানেই থেকে গেল। [৭৮২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আনসারদের বসতি মসজিদে নববী থেকে দূরে ছিল। তারা মসজিদের কাছাকাছি স্থানান্তরিত করতে চাইলে এ আয়াত নাযিল হয় (অনুবাদ) : “আমি লিখে রাখি যা তারা অগ্রে পাঠায় এবং যা তারা পিছনে রেখে যায়” (সূরাহ ইয়াসীনঃ ১২)। রাবী বলেন, তখন তারা তাদের অবস্থানে বহাল থাকেন। [৭৮৩]
জামাআতে সালাত পড়ার ফাদীলাত।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), বলেছেন, কোন ব্যক্তির জামাআতে সালাত তার ঘরে বা বাজারে পড়া সালাত অপেক্ষা বিশ গুণের অধিক মর্যাদাপূর্ণ। [৭৮৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জামাআতের ফাদীলাত তোমাদের কারো একাকী সালাত পড়ার তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি। [৭৮৫] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জামাআতের সালাত তার বাড়িতে পরা সালাত অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। [৭৮৬] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জামাআতের সালাত তার একাকী পড়া সালাত অপেক্ষা সাতাশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। [৭৮৭] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির জামাআতে সালাত তার একাকী পড়া সালাত অপেক্ষা চব্বিশ কিংবা পঁচিশ গুণ বেশি মর্যাদাপূর্ণ। [৭৮৮] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) কথাটি ছাড়া সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ।
সালাতের জামাআত ত্যাগ করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি সালাত কায়েমের নির্দেশ দেই এবং এক ব্যক্তিকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ করি। অতঃপর আমি লাকড়িসহ একদল লোককে নিয়ে বেরিয়ে যাই সেইসব লোকের নিকট যারা জাআমাতে উপস্থিত হয়নি, অতঃপর তাদেরসহ তাদের বসতি আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে দেই। [৭৮৯] আবদুল্লাহ বিন উম্মু মাকতূম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), কে বললাম, আমি বৃদ্ধ ও অন্ধ, আমার বসতিও দূরে এবং আমার সাহায্যকারী কোন পরিচালকও নেই। সুতরাং আপনি কি (আমাকে জামাআতে হাযির না হওয়ার ব্যাপারে) অবকাশ (অনুমতি) দিবেন? তিনি বলেন, তুমি কি আযান শুনতে পাও? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, আমি তোমার জন্য অবকাশ পাচ্ছি না। [৭৯০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আযান শুনল এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্ত্বেও জামাআতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত নাই। [৭৯১] ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমার (রাঃ) তারা উভয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর কাঠের মিম্বারের উপর থেকে বলতে শুনেছেনঃ লোকেরা অবশ্যই যেন জামাআত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকে। অন্যথায় আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে সীলমোহর মেরে দিবেন, অতঃপর তারা বিস্মৃতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে। [৭৯২] উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকজনকে অবশ্যই জামাআত ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় আমি তাদের ঘরবাড়ি ভস্মীভূত করে দিবো। [৭৯৩]
ইশা ও ফজরের সালাত জামাআতে পড়ার ফাদীলাত।
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি লোকেরা ইশা ও ফজরের সালাতের যে কত ফাদীলাত তা জানতো, তাহলে অবশ্যই তারা এই দু’সালাতে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হত। [৭৯৪] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুনাফিকদের সবচেয়ে ভারবহ (কষ্টকর) হচ্ছে ইশা এবং ফজরের সালাত। তারা যদি এই দু’সালাতের ফাদীলাত সম্পর্কে অবহিত থাকতো, তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে হাযির হতো। [৭৯৫] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ যে ব্যাক্তি মসজিদে এসে জামাআতের সাথে চল্লিশ রাত তাকবীরে ঊলাসহ ইশার সালাত পড়বে, তার বিনিময়ে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে তার মুক্তির সনদ লিখে দেন। [৭৯৬] তাহকীক আলবানীঃ ইশার প্রথম তাকবীর ছুটবে না-একথা ছাড়া হাসান।
মসজিদসমূহে যাতায়াত বাধ্যতামূলক করে নেয়া এবং সালাতের জন্য অপেক্ষারত থাকা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে এবং যতক্ষণ সালাত তাকে আটক রাখে, ততক্ষণ সে সালাতের মধ্যে থাকে। তোমাদের কেউ যে মজলিসে সালাত পড়েছে তাতে যতক্ষণ সে অবস্থান করে ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকেন। তারা বলেন, “হে আল্লাহ্! তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! তাকে অনুগ্রহ করুন। হে আল্লাহ্! তার তওবা কবূল করুন।” যতক্ষণ না তার উদূ ছুটে যায়, যতক্ষণ না সে কাউকে কষ্ট দেয় (ততক্ষণ এ দুআ চলতে থাকে)। [৭৯৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নাবী (সাল্ললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন মুসলিম ব্যক্তি যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও যিকিরে রত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তাঁর পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়। [৭৯৮] আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্ললাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মাগরিবের সালাত পড়লাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেলেন এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্ললাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এত দ্রুতবেগে এলেন যে, তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগলো। তিনি তাঁর দু’ হাঁটুর উপর ভর করে বসে বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের নিকট তোমারদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেনঃ তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফার্দ আদায়ের পর পরবর্তী ফার্দ আদায়ের অপেক্ষা করছে। [৭৯৯] আবূ সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কোন ব্যক্তিকে মসজিদে যাতায়াত করতে দেখলে তার ঈমানের পক্ষে সাক্ষ্য দিও। মহান আল্লাহ বলেন, “তারাই তো আল্লাহর মসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করে যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে...”(সূরাহ তাওবাঃ ১৮)। [৮০০]