5. সালাত আদায় করা ও তার নিয়ম কানুন
সালাত শুরু করা।
আবু হুমায়দ আস-সাইদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাতে কিবলামুখী হতেন তখন তাঁর দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার (তাকবির তাহরীমা) বলতেন। [৮০১] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শুরু করে (তাকবীরে তাহরীমার পর) বলতেন: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা” (হে আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মাহাত্ন সুউচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই)। [৮০২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরীমা বলার পর, তাকবীর ও কিরাআতের মাঝখানে কিছুক্ষণ নীরব থাকতেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, আপনি তাকবীর ও কিরাআতের মাঝখানে চুপ থাকেন কেন? তখন আপনি কী বলেন আমাকে বলুন! তিনি বলেন: আমি বলিঃ (আল্লাহুম্মা বা’ইদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বায়াদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কাস-সাওবিল আবইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মাগসিলনী মিন খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াস-সালজি ওয়াল বারাদ।) “হে আল্লাহ্! আপনি আমার ও আমার গুনাহের মাঝে এরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেরূপ আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপরাশি থেকে পবিত্র করুন, যেমন ময়লা থেকে ধবধবে সা’দা কাপড় পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ হিমশীতল পানি দিয়ে ধৌত করুন।” [৮০৩] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শুরু করে বলতেন- (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি হামদিকা তাবারাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক) “হে আল্লাহ্! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার মাহাত্ন্য সুউচ্চ। আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই।” [৮০৪]
সলাতের মধ্যে আশ্রয় প্রার্থনা।
জুবায়র বিন মুতঈম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখেছি যে, তিনি সালাতে প্রবেশ করে বলতেন: “আল্লাহু আকবার কাবীরা” তিনবার, “আলহামদু লিল্লাহি কাসীরা” তিনবার এবং “সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসীলা” তিনবার। অতঃপর তিনি বলতেনঃ (আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাশ শাইতনির রজীম, মিন হামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি।) “ (হে আল্লাহ্! আমি বিতাড়িত শয়তানের শয়তানী, তার অশ্লীল কবিতা এবং তার অহংকার হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই) আমর (রহঃ) বলেন, অর্থ তার শয়তানী অর্থ তার অশ্লীল কবিতা এবং অর্থ তার অহমিকা। [৮০৫] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ (আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাশ শাইতনির রজীম ওয়া হামযিহি, ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফসিহি)। রাবী বলেন, এর অর্থ, তার শয়তানী, অর্থ, তার অশ্লীল কবিতা এবং -এর অর্থ, তার অহমিকা। [৮০৬]
সালাতের মধ্যে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা।
হুলব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইমামতি করতেন। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন।[৮০৭] ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে তাঁর বাম হাত ধরেন। [৮০৮] আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি আমার বাম হাত ডান হাতের উপর রেখেছিলাম। তিনি আমার ডান হাত ধরে বাম হাতের উপর রাখেন। [৮০৯]
কিরআত শুরু করা।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলহামদু লিল্লাহি রাবিবল আলামীন (সূরা ফাতিহাহ) দ্বারা কিরাআত শুরু করতেন। [৮১০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , আবূ বকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ) “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” দ্বারা কিরাআত শুরু করতেন। [৮১১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” দ্বারা কিরাআত শুরু করতেন। [৮১২] আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, ইসলামে নতুন কিছু উদ্ভাবন বা প্রচলনের বিরুদ্ধে আমার পিতার চাইতে অধিক কঠোর মনোভাবাপন্ন লোক আমি খুব কমই দেখেছি। তিনি আমাকে (সালাতের মধ্যে) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তে শুনে বলেন, প্রিয় বৎস! বিদআত থেকে বিরত থাকো। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , আবূ বকর (রাঃ) , উমার (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) -এর সাথে সালাত আদায় করেছি, কিন্তু আমি তাদের কাউকে বিসমিল্লাহ পড়তে শুনিনি। অতএব তুমি “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” দ্বারাই কিরাআত শুরু করবে। [৮১৩]
ফজরের সলাতের কিরাআত।
কুতবাহ বিন মালিক (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ফজরের সালাতে “ওয়ান-নাখলা বাসিকাতিল লাহা তালউন নাদীদ” (সূরা কাফ থেকে) তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। [৮১৪] আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত পড়লাম এবং তিনি ফজরের সলাতে (সূরা তাকবীর) পড়লেন। আমি যেন (এখনো) তার কিরাআত পাঠ শুনছি। [৮১৫] আবূ বারযাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতে ষাট থেকে এক শত আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করতেন। [৮১৬] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাথে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যোহরের প্রথম রাকাআত দীর্ঘ করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাআত সংক্ষেপ করতেন। তিনি ফজরের সলাতেও এরূপ করতেন। [৮১৭] আব্দুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতে “সূরা মু’মিনূন" তিলাওয়াত করলেন। তিনি তিলাওয়াত করতে করতে ঈসা (আলায়হিস সালাম) -এর প্রসঙ্গ পর্যন্ত উপনীত হলে তাঁর হাঁচি (বা কফ) আসে। তিনি তখন রুকূতে চলে গেলেন। [৮১৮]
জুমুআহ্র দিন ফজরের সলাতের কিরাআত।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহর দিন ফজরের সলাতে সূরা আলিফ-লাম-মিম তানযীল আস-সাজদা এবং হাল আতা আলাল ইনসানে (সূরা আদ-দাহর) তিলাওয়াত করতেন। [৮১৯] সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহর দিন ফজরের সলাতে আলিফ-লাম-মীম তানযীল এবং হাল আতা আলাল ইনসান সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন। [৮২০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহর দিন ফজরের সলাতে আলিফ-লাম-মীম-তানযীল এবং হাল আতা আলাল ইংসান সূরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন। [৮২১] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহর দিন ফজরের সলাতে আলিফ-লাম-মীম তাংযীল এবং হাল আতা আলাল ইংসান সুরাদ্বয় তিলাওয়াত করতেন।[৮২২]
যোহর ও আসর সলাতের কিরাআত।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, এতে তোমার জন্য কোন কল্যাণ নেই। আমি বললাম, আপনি স্পষ্ট করে বলুন, আল্লাহ আপনাকে অনুগ্রহ করুন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য যোহর সলাতের ইকামত দেয়া হতো। আমাদের কেউ আল-বাকী নামক স্থানে গিয়ে তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে উযুর করতো, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যোহরের প্রথম রাকআতেই পেতো। [৮২৩] আবূ মা’মার আমি খাব্বাব (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যোহর ও আসর সলাতের কিরাআত কিসের মাধ্যমে বুঝতেন? তিনি বলেন, তাঁর দাড়ি নড়াচড়ার মাধ্যমে। [৮২৪] আবূ হূরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের সাথে অমুকের সলাতের চাইতে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ আর কারো সালাত দেখিনি। রাবী বলেন, তিনি যোহরের প্রথম দু’রাকাআত দীর্ঘ করতেন এবং পরবর্তী দু’রাকআত সংক্ষেপ করতেন এবং আসরের সালাত সংক্ষেপ করতেন।[৮২৫] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তিরিশজন সাহাবী সমবেত হয়ে বলেন, আসুন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নীরবে পঠিত (যোহর ও আসর) সলাতের কিরাআত সম্পর্কে অনুমান করি। তাদের মধ্যে দু’জন সাহাবীও তাদের এ অনুমানে মতভেদ করেননি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের প্রথম রাকআতে ত্রিশ আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকআতে তার অর্ধেক সংখ্যক আয়াত তিলাওয়াত করতেন। এভাবে তারা অনুমান করলেন যে, তিনি আসরের সলাতে যুহরের দ্বিতীয় রাকআতে পঠিত কিরাআতের সমপরিমাণ কিরাআত পড়তেন। [৮২৬] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, তবে সহীহ মুসলিমে কিয়াস শব্দ ব্যতীত মারফূ’ সূত্রে বর্ণনা রয়েছে।
যোহর ও আসর সলাতে কখনো সশব্দে কুরআন তিলাওয়াত।
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরসহ যোহরের সালাত পড়াকালে প্রথম দু’রাকাআতে কখনো কখনো আমাদের শুনিয়ে কিরাআত পাঠ করতেন। [৮২৭] আল- বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে যুহরের সালাত করতেন। আমরা সূরা লুকমান ও সূরা যারিয়াত থেকে তাঁর পঠিত আয়াতের পর আয়াত শুনতে পেতাম। [৮২৮]
মাগরিবের সলাতের কিরাআত।
লুবাবাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাগরিবের সলাতে “ওয়াল মুরসলাতে উরফা” সূরা থেকে তিলাওয়াত করতে শুনেছেন। [৮২৯] জুবায়র বিন মুতইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মাগরিবের সলাতে সূরা তূর থেকে তিলাওয়াত করতে শুনেছি। জুবায়র (রাঃ) অন্য হাদীসে বলেন, আমি যখন তাঁকে তিলাওয়াত করতে শুনলাম (অনুবাদ) ঃ “তারা কি সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়েছে, না তারা নিজেরাই সৃষ্টিকর্তা?....তাহলে তাদের সেই শ্রোতা সুস্পষ্ট প্রমাণ পেশ করুন” (সূরা তূরঃ ৩৫-৩৮) , তখন আমার অন্তর উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। [৮৩০] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাতে সূরা কাফিরূন ও সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতেন। [৮৩১]
ইশার সলাতের কিরাআত।
বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ইশার সলাতে পড়েন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে সূরা ওয়াত-তীন ওয়ায-যাইতূন পড়তে শুনেছি। বারা’ (রাঃ) তিনি আরো বলেন, আমি তাঁর চাইতে উত্তম ও সুমধুর কন্ঠে তিলাওয়াত আর কোন মানুষের নিকট শুনিনি। [৮৩৩] মুআয বিন জাবাল (রাঃ) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) তার সংগীদের নিয়ে ইশার সালাত পড়লেন এবং তাদের সালাত দীর্ঘায়িত করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি সূরা ওয়াশ-শামস, সুরাহ আলা, সুরাহ লায়ল ও আলাক ইত্যাদি (ক্ষুদ্র সূরা) পাঠ করবে। [৮৩৪]
ইমামের পিছনে কিরাআত পড়া।
উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহাহ পাঠ করেনি, তার সালাত হয়নি। [৮৩৫] আবূস সায়িব, আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি কোন সালাত পড়লো এবং তাতে উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) পড়েনি তার সালাত অসম্পুর্ন। আবূস সাইব (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হুরায়রা! আমি কখনো কখনো ইমামের সাথে সালাত পড়ি। তিনি আমার বাহুতে খোঁচা দিয়ে বলেন, হে ফারিসী! তুমি তা মনে মনে পড়ো। [৮৩৬] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফারদ্ অথবা অন্য সলতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কোন সূরা পড়েনি তার সালাত হয়নি। [৮৩৭] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে কোন সলাতে সূরা ফাতিহা না পড়া হলে তা অসম্পূর্ণ। [৮৩৮] আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে কোন সলাতে সূরা ফাতিহা না পড়লে তা অসম্পূর্ণ তা অসম্পূর্ণ। আবূদ-দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো, ইমামের কিরাআত পড়ার সাথে সাথে আমিও কি কিরাআত পড়বো? তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলো, প্রত্যেক সলাতেই কি কিরাআত আছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হাঁ। উপস্থিত লোকেদের মধ্যে একজন বললো, এটি বাধ্যতামূলক হয়ে গেলো। [৮৪০] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যোহর ও আসর সলাতের প্রথম দু'রাকআতে ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহাহ ও অন্য সূরা এবং শেষ দু'রাকাআতে কেবল সূরা ফাতিহাহ পড়তাম। [৮৪১]
ইমামের নীরবতা অবলম্বনের দু'টি স্থান।
সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিরবতা অবলম্বনের দু'টি স্থান রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কণ্ঠস্থ করেছি। ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) তা অস্বিকার করেন (এবং বলেন, আমরা একটি স্থান জানি)। আমরা বিষয়টি মদীনাতে উবাই বিন কা'ব (রাঃ) -কে লিখে জানালাম। তিনি লিখেন, সামুরা (রাঃ) বিষয়টি স্মরণ রেখেছেন। অধস্তন রাবী সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমরা কাতাদাহ (রাঃ) -কে বললাম, সেই নিরবতা অবলম্বনের স্থান দু'টি কী কী? তিনি বলেন, যখন তিনি তাঁর সলাতে প্রবেশ করতেন এবং যখন তিনি কিরাআত শেষ করতেন, অত:পর তিনি বলেন, যখন তিনি "গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায যআল্লীন" পড়তেন। রাবী বলেন, কিরাআত পাঠ শেষ করে নি:শ্বাস নেওয়ার জন্য তিনি নিরবতা অবলম্বন করতেন, এটা লোকেদের ভালো লাগতো। [৮৪২] সামুরাহ (রাঃ) আমি সলাতের মধ্যে নীরবতা অবলম্বনের দু'টি স্থান স্মৃতিতে ধরে রেখেছিঃ একটি কিরাআত শুরু করার পূর্বে এবং অপরটি রূকু'র সময়। ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) তা অস্বীকার করেন। তারা বিষয়টি সম্পর্কে মদীনাতে উবাই বিন কা'ব (রাঃ) -কে লিখেন। তিনি সামুরা (রাঃ) -এর মত সমর্থন করেন। [৮৪৩]
ইমাম যখন কিরাআত পড়েন তখন তোমরা নীরব থাকো।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অনুসরণ করার জন্যই তো ইমাম নিযুক্ত করা হয়। সুতরাং ইমাম যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো। যখন তিনি কিরাআত পড়েন তখন তোমরা নীরব থাকো। যখন তিনি "গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায-যুআলীন" বলেন, তখন তোমরা ‘আমীন' বলো। যখন তিনি রুকু' করেন, তখন তোমরাও রুকু' করো। আর যখন তিনি "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলেন, তখন তোমরা “আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ" বলো। যখন তিনি সিজদা করেন, তখন তোমরাও সিজদা করো। তিনি বসা অবস্থায় সালাত পড়লে তোমরাও সকলে বসা অবস্থায় সালাত পড়ো।[৮৪৪] আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ইমামের কিরাআত পাঠের সময় তোমরা নীরব থাকবে। তিনি তাশাহুদ পাঠের জন্য বসলে তোমাদের যে কোন মুসল্লির প্রথম যিকির যেন হয় তাশাহুদ।[৮৪৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে সালাত পড়লেন, আমাদের মতে তা ছিল ফজরের সালাত। সালাত শেষে তিনি বলেন, তোমাদের কেউ কি কিরাআত পড়েছে? এক ব্যক্তি বললো, আমি পড়েছি। তিনি বলেন, তাই তো (মনে মনে) বলছিলাম আমার কুরআন পাঠে বিঘ্ন ঘটছে কেন! [৮৪৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত পড়লেন...উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এই বর্ণনায় আরো আছেঃ যে সলাতে ইমাম সশব্দে কিরাআত পড়েন, তখন থেকে সেই সলাতে তারা কিরাআত পাঠ ত্যাগ করেন।[৮৪৭] জাবীর বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাদের ইমাম আছে ইমামের কিরাআতই তার কিরাআত। [৮৪৮]
সশব্দে আমীন বলা।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কুরআন পাঠকারী (ইমাম) আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বলো। কেননা ফেরেশতাগণও তখন আমীন বলেন অতএব যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে হয় তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করা হয়। [৮৪৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কুরান পাঠকারী (ইমাম) আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বলো। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে হয়, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। [৮৫০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা আমীন বলা ত্যাগ করেছে। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায যআললীন' বলার পর আমীন' বলতেন, এমনকি প্রথম সারির লোকেরা তা শুনতে পেতো এবং এতে মাসজিদে প্রতিধ্বনি হতো।[৮৫১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে 'ওয়ালাদ দাল্লীন' বলার (পড়ার) পর আমিন' বলতে শুনেছি। [৮৫২] ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত পড়লাম। তিনি "ওয়ালায যআল্লীন" বলার পর "আমীন" বলেছেন। আমরা তা তাঁকে বলতে শুনেছি। [৮৫৩] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়াহুদীরা তোমাদের কোন ব্যপারে এত বেশী ঈর্ষান্বিত নয় যতটা তারা তোমাদের সালাম ও আমীনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত। [৮৫৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইহূদীরা তোমাদের আমীন বলায় যত বেশী ঈর্ষান্বিত হয়, আর কোন জিনিসে তত ঈর্ষান্বিত হয় না। তাই তোমরা অধিক পরিমাণে আমীন বলো। [৮৫৫] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ জিদ্দান, অধিক বলার কথা ব্যতীত সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে।
রুকূ‘তে যেতে ও রুকূ‘ থেকে মাথা তুলতে রাফউল ইয়াদাইন করা।
ইবনু উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তিনি সলাত শুরু করতে তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন, তিনি রুকূ‘তে যেতে এবং রুকূ‘ থেকে মাথা তুলতেও তাই করতেন, কিন্তু দু‘ সাজদাহর মাঝখানে হাত উত্তোলন করতেন না। [৮৫৬] মালিক ইবনুল হুয়াইরিস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকবীরে তাহরীমা বলতেন তখন তাঁর দু’ হাত তাঁর উভয় কানের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠাতেব। তিনি তিনি রুকূ‘তে যেতেন তাই করতেন এবং রুকূ‘ থেকে মাথা তুলতেও অনুরূপ করতেন। [৮৫৭] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তিনি সলাত শুরু করতে, রুকূ‘তে যেতে এবং সিজদায় যেতে তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন। [৮৫৮] আবদুল্লাহ ইবনু উবায়দ বিন উমায়র এর দাদা উমায়র বিন হাবীব (রাঃ) তিনি (দাদা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাতের প্রতিটি তাকবীরের সাথে তাঁর দু’হাত উপরে উঠাতেন। [৮৫৯] আবূ হুমায়দ আস-সাইদী (রাঃ) তিনি আবু কাতাদাহ (রাঃ) সহ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দশজন সাহাবীর উপস্থিতিতে বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক অবগত। তিনি যখন সলাতে দাঁড়াতেন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং তাঁর দু’ হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন, অতঃপর আল্লাহু আকবার বলতেন। তিনি যখন রুকূ‘তে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। অতঃপর তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তাঁর দু’ হাত উত্তোলন করতেন এবং সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। তিনি দ্বিতীয় রাক্আতে দু’ সাজাদাহ থেকে যখন দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন, যেমনটি তিনি সলাত শুরু করার সময় করতেন। [৮৬০] আব্বাস বিন সাহল আস-সাইদী বলেন, আবু হুমায়দ, আবু উসাইদ আস-সাইদী, সাহল বিন সা‘দ ও মুহাম্মাদ বিন মাসলামা (রাঃ) আব্বাস বিন সাহল আস-সাইদী বলেন, আবু হুমায়দ, আবু উসাইদ আস-সাইদী, সাহল বিন সা‘দ ও মুহাম্মাদ বিন মাসলামা (রাঃ) একত্র হয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত সম্পর্কে আলোচনা করেন। আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাত সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক অবগত। রসূলুল্লাহ্ যে সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন এবং তাঁর উভয় হাত উপরে উঠাতেন। তিনি তাকবীর বলে রুকূতে যাওয়ার সময়ও উপরে উঠাতেন, অতঃপর দাঁড়াতেন এবং তাঁর দু’ হাত উপরে উঠাতেন ও সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, যাতে সকল প্রত্যঙ্গ যথাস্থানে এসে স্থির হয়।” [৮৬১] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফার্দ সলাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন। যখন তিনি রুকূ‘তে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও অনুরূপ করতেন, যখন রুকূ‘ থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও অনুরূপ করতেন। যখন তিনি দু’ রাকআত শেষ করে দাঁড়াতেন তখনও অনুরূপ করতেন। [৮৬২] ইবনু আব্বাস(রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি তাকবীরের সময় তাঁর দু’ হাত উপরে উঠাতেন। [৮৬৩] আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শুরু করার সময় এবং রুকূ‘ যাওয়ার সময় তাঁর দু’হাত (উপরে) উঠাতেন। ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে সলাত পড়েন আমি তা অবশ্যই দেখবো। তিনি দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হলেন এবং তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ কান বরাবর উঠালেন। তিনি রুকূ‘তে যাওয়ার সময়ও তার দু’ হাত অনুরূপভাবে উঠালেন। তিনি যখন রুকু‘ থেকে তাঁর মাথা উঠালেন তখনও তাঁর উভয় হাত অনুরূপভাবে উঠালেন। [৮৬৫] আবুয-যুবায়র (রাঃ) জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) যখন সলাত শুরু করতেন, তখন তার উভয় হাত উপরে উঠাতেন। তিনি যখন রুকূ‘ করতেন এবং রুকূ‘ থেকে তার মাথা উঠাতেন, তখনও অনুরূপ করতেন। তিনি বলতেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপ করতে দেখেছি। অধস্তন রাবী ইবরাহীম বিন তাহমান (রহঃ) তার দু’ হাত তার দু কান পর্যন্ত উঠালেন।
সলাতে রুকূ
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ‘ করতেন, তখন তাঁর মাথা উঁচুও করতেন না, নিচুও করতেন না, বরং সোজা রাখতেন। [৮৬৭] আবূ মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রুকূ‘ও সাজদাহ করে তার পিঠ সোজা করে না, তার সলাত পূর্ণাঙ্গ হয় না। [৮৬৮] আলী বিন শায়বান (রাঃ) তিনি ছিলেন প্রতিনিধি দলের সদস্য। তিনি বলেন, আমরা রওনা হয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলাম, তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করলাম এবং তার পিছনে সলাত পড়লাম। তিনি এক ব্যক্তির দিকে হালকা দৃষ্টিতে তাকান যে রুকূ‘ ও সাজদা্হয় তার পিঠ সোজা রাখেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে বলেন, হে মুসলিম সমাজ! যে ব্যক্তি রুকূ‘ ও সাজদাহয় তার পিঠ সোজা করে না তার সলাত হয় না। [৮৬৯] ওয়াবিসাহ বিন মা‘বাদ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন রুকূ‘ করতেন তখন তাঁর পিঠ এমনভাবে সোজা করতেন যে, তার উপর পানি ঢাললে অবশ্যি তা স্থির থাকতো। [৮৭০]
দু’ হাঁটুর উপর দু’ হাত রাখা।
মুসআব বিন সা’দ আমি আমার পিতা (সাদ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) এর পাশে রুকূ‘তে গেলাম এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলো একত্র করে তা দু’ হাঁটুর মাঝখানে রাখলাম। তিনি আমার হাতে আঘাত করে বলেন, আমরা (প্রথমে) এরূপ করতাম, অতঃপর আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [৮৭১] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - রুকূ‘ করার সময় তাঁর দু’ হাত তাঁর দু’ হাঁটুতে রাখতেন এবং তাঁর বাহুদ্বয় তাঁর বগল থেকে আলাদা রাখতেন। [৮৭২]
রুকূ‘ থেকে মাথা তোলার সময় যা বলবে।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ বলার পর বলতেন “রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দহ্”। [৮৭৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইমাম যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদা” বলেন তখন তোমরা বলবে “রব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ” (হে আমাদের রব! সকল প্রশংসা তোমার জন্য)। [৮৭৪] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ ইমাম যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে তখন তোমরা বলবে, আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ’। [৮৭৫] বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ থেকে মাথা তুলতেন তখন বলতেন (অনুবাদ) - “ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রশংসা করে আল্লাহ তা শুনেন। আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, আকাশমণ্ডলী, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে এবং তুমি যা চাও সব কিছুই তোমার প্রশংসায় পূর্ণ”। [৮৭৬] আবূ জুহাইফা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতরত থাকা অবস্থায় তাঁর নিকটেই ধন-সম্পদ সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। এক ব্যক্তি বলেন, অমুকের অনেক ঘোড়া আছে। আরেকজন বলেন, অমুকের অনেক উট আছে। আর একজন বলেন, অমুকের অনেক বক্রী আছে। অন্যজন বলেন অনেক দাস-দাসী আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ রাক্আতের রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ্! আমাদের প্রভূ! তোমার জন্য সকল প্রশংসা, আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে এবং তুমি যা চাও সব কিছুই তোমার প্রশংসায় পূর্ণ। হে আল্লাহ্! তুমি কাউকে দান করলে তাঁর কোন প্রতিরোধকারী নাই এবং তুমি কাউকে দান না করলে কেউ তাকে দান করতে পারে না। সম্পদশালীকে তাঁর সম্পদ তোমার বিপরীতে উপকৃত করতে পারে না।” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সম্পদ’ শব্দটি উচ্চৈঃস্বরে বললেন, যাতে লোকেরা বুঝতে পারে যে, তারা যা বলছে তা তেমন নয়। [৮৭৭] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, কিন্তু উল্লেখিত দুআটি সহীহ, সিফাতুস সালাত ৩১৩৭।
সিজদা করা।
মায়মূনাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাজদাহ্তে তাঁর দু’ হাত (বগল থেকে) এতটা বিস্তার (ফাঁকা) করে রাখতেন যে, বকরীর বাচ্চা যেতে চাইলে তাঁর দু’ হাতের মাঝখানের ফাঁক দিয়ে চলে যেতে পারতো। [৮৭৮] আকরাম আল-খুযাঈ (রাঃ) (উবায়দুল্লাহ্) বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে নামিরা এলাকায় এক সমতল ভূমিতে ছিলাম। আমাদের নিকট দিয়ে কতক আরোহী অতিক্রম করে এবং তারা রাস্তার এক প্রান্তে তাদের উট বসায়। আমার পিতা আমাকে বলেন, তুমি তোমার বকরীর পালের সাথে থাকো যাবত না আমি তাদের জিজ্ঞেস করে আসি যে, তারা কারা। রাবী বলেন, এরপর তিনি বেরিয়ে গেলেন এবং আমিও তার কাছে পৌছলাম। তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। ইত্যবসরে সলাতের ওয়াক্ত হলো। আমি তাদের সাথে সালাত পড়লাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই সাজদাহ্ করেছেন, আমি তাঁর দু’ বগলের শুভ্রতার দিকে দৃষ্টিপাত করেছি। [৮৭৯] ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তিনি সাজদা্য় দু’ হাতের আগে দু’ হাঁটু রাখতেন। তিনি সাজদাহ্ থেকে দাঁড়াতে তাঁর দু’ হাঁটুর আগে দু’ হাত উঠাতেন। [৮৮০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি সাত অঙ্গে সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। [৮৮১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি সাত অঙ্গে সিজদাহ্ করতে এবং চুল ও পরিধেয় বস্ত্র না গুটাতে আদিষ্ট হয়েছি। বিন তাউস (রাঃ) বলেন, আমার পিতা বলতেন, (সাত অঙ্গ হলো) দু’ হাত, দু’ হাঁটু, দু’ পা এবং কপাল ও নাক। তিনি নাক ও কপালকে একটি অঙ্গ গণ্য করতেন। [৮৮২] আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার সাথে তার সাতটি অঙ্গ সিজদা করে- তার মুখমণ্ডল, তার দু’ হাতের তালু, তার দু’ হাঁটু ও তার দু’ পা। [৮৮৩] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী আহমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদারত অবস্থায় তাঁর বাহুদয় (বগল থেকে) এতটা পৃথক করে রাখতেন যে, তাঁর অত্যধিক কষ্টে আমাদের মনে সহানুভূতি জাগতো। [৮৮৪]
রুকূ’ ও সিজদার তাসবীহ।
উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নাযিল হয় (অনুবাদ) , “অতএব তুমি তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।” (সূরা ওয়াকিয়াঃ ৭৪ ও ৯৬ এবং আল-হাক্কাহ ৫২) , তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেন, একে তোমাদের রুকূ’তে স্থাপন করো। আবার যখন নাযিল হয় (অনুবাদ) : “তুমি তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো” (সূরা আল-আলাঃ ১) , তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেন, একে তোমাদের সাজদা্হয় স্থাপন করো।” [৮৮৫] হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রুকূ’তে “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” তিনবার বলতে এবং সাজদা্হয় “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” তিনবার বলতে শুনেছেন। [৮৮৬] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রুকূ’ ও সিজদায় প্রায়ই বলতেনঃ “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফির লী” (হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, হে আল্লাহ! তুমি আমায় ক্ষমা করো)। তিনি কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী তা করতেন। [৮৮৭] বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ রুকূ’তে গিয়ে যেন তাঁর রুকূ’তে “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” তিনবার বলে। সে তাই করলে তাঁর রুকূ’ পূর্ণ হলো। তোমাদের যে কেউ তাঁর সিজদায় গিয়ে যেন “সুবহানা রব্বিয়াল আলা” তিনবার বলে। সে তাই করলে তাঁর সিজদা পূর্ণ হলো। আর এটা হল তাঁর ন্যূনতম সংখ্যা। [৮৮৮]
সুষ্ঠুভাবে সিজদা করা।
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন সুষ্ঠুভাবে তাঁর সিজদা করে। সে যেন কুকুরের ন্যায় তাঁর বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে না দেয়। [৮৮৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা সুষ্ঠুভাবে সিজদা করো। তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় তাঁর বাহুদ্বয় মাটিতে বিছিয়ে দিয়ে সিজদা না করে। [৮৯০]
দু’ সাজদাহ্র মাঝখানে বসা।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ’ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত সিজদায় যেতেন না। তিনি এক সাজদাহ্ থেকে তাঁর মাথা তুলে সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত দ্বিতীয় সাজা্হয় যেতেন না এবং তিনি তাঁর বাম পা বিছিয়ে বসতেন। [৮৯১] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আলী! তুমি কুকুরের ন্যায় বসো না। [৮৯২] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আলী! তুমি কুকুরের ন্যায় বসো না। [৮৯৩] আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, তুমি সিজদা থেকে তোমার মাথা তুলে কুকুরের মত বসো না। তোমার উভয় নিতম্ব তোমার দু’ পায়ের পাতার মাঝখানে রাখো এবং তোমার দু’ পায়ের পিঠ মাটির সাথে স্থাপন করো। [৮৯৪]
দু' সাজদা'হ্র মাঝখানে পড়ার দু’আ।
হুযায়ফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ সাজদাহ্র মাঝখানে বসে বলতেন “রাব্বীগফির লী রাব্বীগফির লী” (“প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন”) [৮৯৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সলাতে দু’সাজদাহ্র মাঝখানে (বসে) বলতেনঃ "রাব্বিগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়ারযুকনী ওয়ারফা'নী (হে প্রভু! আমায় ক্ষমা করুন, আমায় দয়া করুন, আমার বিপদ দূর করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন)। [৮৯৬]
তাশাহ্হুদ সম্পর্কে।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত পড়ার সময় বলতাম "আল্লাহর উপর সালাম তার বান্দাদের পক্ষ থেকে, জিবরাঈল, মীকাইল ও অমুক অমুক ফেরেশতাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমরা আসসালামু আলাল্লাহ বলো না। আল্লাহ্ই তো সালাম (শান্তিদাতা)। অতয়েব তোমরা বসে বলবে: “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি --- আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু” অর্থাৎ “সমস্ত সম্মান, ইবাদত, উপাসনা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক,আল্লাহর রহমত ও প্রাচুর্যও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। সে এ কথা বললে আসমান ও যমীনের সকল নেক বান্দাদের নিকট তা পৌছে। “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মদ তার বান্দা ও রসূল”। (উপরোক্ত হাদীসটি ১৫ টি সনদে বর্ণিত হয়েছে, অপর সনদগুলো হলঃ) ১. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। ২. আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন…..পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [৮৯৭] তাহকীক আলবানী: সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন, যেমন তিনি আমদেরকে কুরআনের সুরা শিখাতেন। তিনি বলতেনঃ (আরবি) (আত্তাহিয়্যাতুল মুবারাকাতুস সলাওয়াতুত তায়্যিবাতু লিল্লাহি আস-সালামু আলাইকা আয়্যুহান নবীয়ু ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস স্বালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু)। “সমস্ত বরকতময় সম্মান, ইবাদত ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও করুণা বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমি, আরও সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দাহ ও রাসুল”। [৮৯৮] আবু মুসা আল-আশআরী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দ্যেশ্যে ভাষণ দেন, আমাদের জন্য আমাদের পালনীয় সুন্নাতসমুহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন এবং আমাদেরকে আমাদের সালাত শিক্ষা দেন। তিনি বলেন, তোমরা যখন সালাত পড়বে, এবং বৈঠকে বসবে তখন তোমাদের প্রথম কথা হবেঃ "আত্তাহিয়্যাতুত তায়্যিবাতুস সলাওয়াতু.........ওয়া রসূলুহু"। ("সমস্ত প্রশংসা,পবিত্রতা ও, ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক,আল্লাহর রহমত ও বরকতও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রসূল”)। এই সাতটি বাক্যই সলাতের আত্তাহিয়াতু। [৯০০] তাহকীক আলবানী: (ছাবউ কালিমাতিন) কথাটি ছাড়া সহীহ। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহুদ শিক্ষা দিতেন, যেমন তিনি আমাদেরকে কুরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। (বিসমিল্লাহি ওয়া বিল্লাহি.......আউযুবিল্লাহি মিনান নার। (আল্লাহর নামে ও আল্লাহর তাওফিকে শুরু করছি। সমস্ত সম্মান, ইবাদত ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রাহমত ও বারকাতও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দেই যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই।আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দাহ্ ও তাঁর রসূল। আমি আল্লাহর নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই)। [৯০১]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর প্রতি দরূদ পাঠ।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ হলো আপনার প্রতি সালাম যা আমরা জেনে নিয়েছি। অতএব দরূদ কীরূপ? তিনি বলেন তোমরা বলোঃ (অনুবাদ) - "হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা ও রসূল মুহাম্মদের উপর আপনি রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ রহমত নাযিল করেছন ইবরাহীমের প্রতি। আপনি মুহাম্মদের উপর বরকত নাযিল করুন, যেরূপ নাযিল করেছেন ইবরাহিমের উপর। [৯০২] ইবনু আবূ লায়লা কা'ব বিন উজরাহ (রাঃ) আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেন, আমি কি তোমাকে একটি উপহার দিব না? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে আসলে আমরা বললাম, আমরা আপনার প্রতি সালাম পেশের নিয়ম জেনে নিয়েছি। আপনার প্রতি দরূদ কীভাবে পড়তে হবে? তিনি বলেন, তোমরা বলোঃ (অনুবাদ) "হে আল্লাহ্! আপনি মুহাম্মাদ ও তার পরিবারবর্গের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিম (আঃ) এর প্রতি রহমাত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি অধিক প্রশংসিত, মহিমান্বিত। হে আল্লাহ্ আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করুন, যেমন আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহিম (আঃ) এর উপর। নিশ্চয় আপনি পরম প্রশংসিত মহিমান্বিত। [৯০৩] আবূ হুমায়দ আস-সাইদী (রাঃ) তারা বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি দরূদ পাঠের জন্য আমরা আদিষ্ট হয়েছি। অতএব আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করবো? তিনি বলেন, তোমরা বলোঃ (আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা সল্লায়তা আলা ইবরাহীম। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া যুররিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহীম ফীল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।) "হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) - এর উপর এবং আপনি মুহাম্মাদ, তাঁর স্ত্রীগণ ও বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেমন আপনি এ বিশ্বজগতে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর বংশধরদের প্রতি। নিশ্চয়ই আপনি অধিক প্রশংসিত মহিমান্বিত"।[৯০৪] আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি দরূদ পেশ করবে, তখন তোমরা তাঁর প্রতি উত্তমরূপে দরূদ পেশ করবে। কেননা তোমাদের জানা নেই যে, নিশ্চয় তা তাঁর সামনে পেশ করা হয়। রাবী বলেন, সাহাবীগণ তাঁকে বললেন, আপনি আমাদের শিখিয়ে দিন। তিনি বলেন, তোমরা বলোঃ (আল্লাহুম্মাজআল সলাতাকা ওয়া রহমাতাকা ওয়া বারাকাতিক আলা সায়্যিদিল মুরসালীন, ওয়া ইমামিল মুত্তাকীন, ওয়া খাতামিন নবীয়্যীনা মুহাম্মাদ, আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ইমামিল খায়রি ওয়া কায়িদল খায়র, ওয়া রসূলির রহমাহ। আল্লাহুম্মাবআস মাকামাম মাহমূদা ইয়াগবিতুহু বিহিল আওওয়ালূনা ওয়াল আখারূন। আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লায়তা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহীম ওয়া আলা আলি ইবরাহীম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।) "হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা ও আপনার রসূল, প্রেরিত রসূলগণের নেতা, মুত্তাকীগণের ইমাম, সর্বশেষ নবী, কল্যাণের উৎস, কল্যাণের দিকে পরিচালনাকারী ও দয়ার নবী মুহাম্মাদের উপর আপনার রহমাত, আপনার দয়া ও আপনার প্রাচুর্য নাযিল করুন। হে আল্লাহ্! তাঁকে সেই সুপ্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দিন, যার প্রতি পূর্ববর্তী ও পরবর্তীগণ ঈর্ষান্বিত। হে আল্লাহ্! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের উপর রহমাত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি রহমাত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত। হে আল্লাহ্! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইবরাহীম ও তাঁর বংশধরদের বরকত দান করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত"।[৯০৫] আমির বিন রাবীআহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কোন মুসলিম ব্যক্তি আমার প্রতি দুরূদ পাঠ করে এবং যতক্ষণ সে আমার প্রতি দুরূদ পাঠরত থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকেন। অতএব বান্দা চাইলে তার পরিমাণ (দরূদ পাঠ) কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে।[৯০৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠাতে ভুলে গেলো সে জান্নাতের পথই ভুলে গেলো। [৯০৭]
তাশাহ্হুদ এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতি দরূদের মধ্যে যা বলতে হবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে অবসর হয়ে যেন চারটি বিষয়ে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেঃ জাহান্নামের শাস্তি থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে। [৯০৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি সলাতে কী পড়ো? সে বললো, আমি তাশাহুদ পড়ার পর আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। তবে আল্লাহর শপথ! আপনার ও মুআযের নীরব দুআ কতই না উত্তম। তিনি বললেন, আমরা নীরবে জান্নাতের পরিবেশ লাভের দুআ করি।[৯০৯]
তাশাহ্হুদের মধ্যে (আঙ্গুলে) ইশারা করা।
নুমায়র আল-খুবাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সলাতের মধ্যে তাঁর ডান হাত তাঁর ডান উরুর উপর রাখতে এবং তাঁর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে দেখেছি। [৯১০] ওয়ায়িল বিন হুজুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাশাহুদে) বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা বৃত্তাকার করতে এবং তর্জনী উঁচু করতে দেখেছি। তিনি তা দিয়ে তাশাহুদের মধ্যে দুআ' করতেন।[৯১১] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের (তাশাহুদের) বৈঠকে বসে তাঁর দু' হাত তাঁর হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখতেন এবং ডান হাতের তর্জনী উঁচু করতেন ও তার দ্বারা দুআ' করতেন। বাম হাত তাঁর হাঁটুর উপর বিছানো থাকতো। [৯১২]
সালাম ফিরানো।
আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডানে ও বামে সালাম ফিরাতেন, এমনকি তাঁর দু' গালের শুভ্রতা দেখা যেতো। (তিনি বলতেন) : "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ" (আপনাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হোক)।[৯১৩] সা'দ বিন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরাতেন।[৯১৪] আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ডানে ও বামে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে, তার দু' গালের শুভ্রতা দেখা যেত। (তিনি বলতেন) : "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহ্মাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া ,রহমাতুল্লাহ"। [৯১৫] আবূ মূসা (আশআরী) (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) উটের যুদ্ধের দিন আমাদের সহ সলাত পড়েন। তার সলাত আমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। জানি না, আমরা কি সেই পদ্ধতি ভুলে গিয়েছি, না আমরা তা ত্যাগ করেছি। তিনি তার ডানে ও বামে সালাম ফিরালেন। [৯১৬] তাহকীক আলবানীঃ মুনকার। কিন্তু পূর্বোক্ত হাদীসে বর্ণিত, ডানে ও বামে সালাম ফিরানোর কথা সহীহ।
যে ব্যক্তি একবার সালাম উচ্চারণ করে।
সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-তাঁর সামনের দিকে একবার সালাম ফিরান। আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- তাঁর সামনের দিকে একবার সালাম ফিরাতেন। [৯১৮] সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.) কে সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি একবার সালাম বলেছেন। [৯১৯]
ইমামের সালামের জবাব দেয়া
সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) নাবী (সা.) বলেন, ইমাম যখন সালাম ফিরান, তোমরা তখন তার জবাব দিও। [৯২০] সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের ইমামগণকে এবং আমাদের একে অপরকে সালাম দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। [৯২১]
ইমাম যেন শুধু নিজের জন্য দুআ’ না করে।
সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোন বান্দা ইমামতি করলে সে যেন অন্যদের বাদ দিয়ে কেবল নিজের জন্য দুআ’ না করে। সে যদি তাই করে, তবে সে মুকতাদীদের সাথে প্রতারণা করলো। [৯২২]
সালাম ফিরানোর পর যা বলতে হয়।
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরানোর পর নিম্মোক্ত দুআ‘ পড়ার অতিরিক্ত সময় বসতেন নাঃ “হে আল্লাহ্! আপনিই শান্তি বিধাতা এবং আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে। হে মহিমান্বিত ও গৌরবময় সত্তা! আপনি প্রাচুর্যময়”। [৯২৩] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নাবী (সা.) ফজরের সলাত পড়ে সালাম ফিরিয়ে বলতেন: [আরবী] (আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান নাফিআওয়া রিযকান তয়্যিবা, ওয়া আমালান মুতাকব্বিলা) “হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক ও এবং কবূল হওয়ার যোগ্য কর্মতৎপরতা প্রার্থনা করি”। [৯২৪] আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করাও সহজ, কিন্তু এ দুটি অভ্যাস অনুশীলনকারীর সংখ্যা কম। প্রতি ওয়াক্ত সলাতের পর দশবার সুবহানাল্লাহ, দশবার আল্লাহু আকবর এবং দশবার আলহামদু লিল্লাহ বলা। আমি রসূলুল্লাহ কে এগুলো তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে গণনা করতে দেখেছি। তিনি বলেন, তা মুখে পড়লে হয় একশত পঞ্চাশ এবং মীযানে হয় এক হাজার পাঁচ শত। সে শয্যা গ্রহণকালে সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার একশতবার পড়লে তা তার মুখে হয় একশত এবং মীযানে হয় এক হাজার। তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে প্রতিদিন দু হাজার পাঁচ শত গুনাহ করবে? তারা বলেন, কেউ এ দুটি অভ্যাস কেন অনুশীলন করবে না। তিনি বলেন, তোমাদের কেউ কেন সলাতে দাড়ায় তখন শয়তান তার নিকট এসে বলে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ করো, এমনকি বান্দা (সলাত থেকে) বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং বুঝতে পারে না (যে, সে কত রাকআত পড়ছে)। অনুরূপভাবে সে তার বিছানায় অবস্থানকালেও শয়তান সেখানে আসে এবং তাকে ঘুম পাড়াতে থাকে, অবশেষে সে ঘুমিয়ে যায়। [৯২৫] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সা.)-কে বলা হলো (সুফিয়ানের বর্ণনায় আছে, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বিত্তবান লোকেরা পুরস্কার লাভে আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। আমরা যা বলি, তারাও তা বলে এবং তারা সম্পদ ব্যয় করে, কিন্তু আমরা তা পারি না। তিনি আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয় বলে দিবো না, যা করলে তোমরা তোমাদের অগ্রবতীদের ধরতে পারবে এবং তোমরা যাদের অগ্রবর্তী হতে পারবে, তারা তোমাদের অতিক্রম করতে পারবে না? তোমরা প্রতি ওয়াক্ত সলাতের পর আলহামদু লিল্লাহ, সুবহানাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার ৩৩ বার, ৩৩বার এবং ৩৪ বার পাঠ করবে। সুফ্ইয়ান (রাঃ)বলেন, আমার মনে নেই যে, কোন কলেমাটি ৩৪ বার পাঠ করতে হবে। [৯২৬] সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সা.) সলাত সমাপনান্তে তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন অতঃপর বলতেন: {আরবী} (আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবরাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম) হে আল্লাহ্! আপনি শান্তিদাতা এবং আপনার পক্ষ থেকে শান্তি পাওয়া যায়। হে মহত্ব ও মর্যাদার অধিকারী! আপনি বরকতময় প্রাচুর্যময়। [৯২৭]
সলাত শেষে ফিরে বসা।
হুলব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাদের ইমামতি করতেন এবং (সালাম ফিরিয়ে) তার উভয় দিকে সম্পূর্ণরূপে তার চেহারা ঘুরাতেন। [৯২৮] আবদুল্লাহ (রাঃ) তোমাদের কেউ যেন নিজের মধ্যে শায়তানের জন্য অংশ নির্ধারিত না করে। সে মনে করে যে, তার প্রতি আল্লাহর অধিকার হলো, কেবল তার ডান দিকে মোড় ঘোরা। অথচ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রায়ই তার বাম দিকে ঘুরে বসতে দেখেছি। [৯২৯] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সা.) কে সলাত শেষে তার ডান দিকে ও বাম দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতে দেখেছি। [৯৩০] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সলাত শেষে সালাম ফিরানোর পর মহিলারা উঠে চলে যেতেন। অতঃপর তিনি উঠে যাওয়ার আগে নিজ জায়গায় কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেন। [৯৩১]
সলাতের সময় রাতের আহার পরিবেশন করা হলে।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- বলেন, (একই সময়) সলাতের ইকামাত ও আহার দেয়া হলে, তোমরা আগে আহার করো। [৯৩২] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রাতের খাবার উপস্থিত করা হলে এবং (একই সময়ে) সলাতের ইকামাত দেয়া হলে তোমরা প্রথমে আহার করো। রাবী বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) একরাতে ইকমাত শ্রবণরত অবস্থায় আহার করেন। [৯৩৩] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- বলেন, রাতের খাবার উপস্থিত হলে এবং সলাতের ইকামাতও দেয়া হলে তোমরা আগে আহার করে। [৯৩৪]
বৃষ্টিমুখর রাতে সলাতের জামাআত।
উসামা বিন উমায়র (রাঃ) (আবুল মালীহ) বলেন, আমি এক বৃষ্টিমুখর রাতে বের হলাম। আমি ফিরে এসে ঘরের দরজা খুলতে বললাম। আমার পিতা (উসামা বিন উমায়র (রাঃ) বলেন, কে? আমি বললাম, আবূ মালীহ। তিনি বলেন, আমরা হুদায়বিয়ার দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। আমাদেরকে বৃষ্টিতে পেলো, যাতে আমাদের জুতার তলাও সিক্ত হয়নি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষক ডেকে বলেন, তোমাদের শিবিকায় সলাত পড়ে নাও। [৯৩৫] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, বৃষ্টিপাতের রাতে অথবা শীতের রাতে বায়ু প্রবাহ হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘোষক ডেকে বলতেন, তোমরা তোমাদের আবাসস্থলে সালাত পড়ো। [৯৩৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টিমুখর জুমুআহ্র দিনে বলেনঃ তোমরা তোমাদের নিজ নিজ আবাসে সালাত পড়ো।[৯৩৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) জুমুআহ্র দিন মুয়ায্যিনকে আযান দেয়ার নির্দেশ দেন। দিনটি ছিল বৃষ্টিমুখর। মুয়াযযিন বলেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ। অতঃপর তিনি বলেন, লোকদের মাঝে ঘোষণা দাও যে, তারা যেন তাদের আবাসে সালাত পড়ে। লোকেরা তাকে বললো, আপনি একি করলেন? তিনি বলেন, আমার চেয়ে মহান ব্যক্তি এটাই করেছেন। তোমরা কি আমাকে নির্দেশ দাও যে, আমি লোকদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করি, আর তারা হাঁটু পর্যন্ত কাদা মেখে আমার নিকট উপস্থিত হোক? [৯৩৮]
সলাতী যা দিয়ে সুতরা বানাবে।
তা্লহাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সালাত পড়তাম, আর চতুষ্পদ জন্তু আমাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করতো। বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উত্থাপন করা হলে তিনি বলেনঃ তোমাদের কারো সামনে শিবিকার খুঁটির ন্যায় কিছু থাকলে তার সামনে দিয়ে যে কেউ অতিক্রম করলে তা তার কোন ক্ষতি করবে না। [৯৩৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সফরকালে তাঁর জন্য একটি বর্শা সাথে নেয়া হতো। তিনি তা মাটিতে গেড়ে তার দিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন। [৯৪১] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একটি চাটাই ছিল, যা দিনের বেলা বিছানো হতো এবং রাতে তিনি তা দিয়ে ঘের তৈরি করে সেদিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন।[৯৪২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন নামায পড়বে তখন তার সামনে কোন একটি কিছু দিয়ে দিবে। যদি কোন কিছু না পাও তবে একটি লাঠি দাঁড় করাবে। তাও যদি না পাও তবে দাগ দিয়ে দিবে। এরপর তার সামনে দিয়ে কোন কিছু অতিক্রম করলেও (নামাযের) কোন ক্ষতি হবে না। [৯৪৩]
সালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা।
যায়দ বিন খালিদ (রাঃ) (বুশর বিন সাঈদ) সলাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য সাহাবীগন আমাকে যায়দ বিন খালিদ (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সলাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চাইতে “চল্লিশ” পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। সুফ্ইয়ান (রাঃ) বলেন, চল্লিশ দ্বারা তিনি চল্লিশ বছর না মাস না দিন, না ঘন্টা বুঝিয়েছেন তা আমি অবগত নই। [৯৪৪] যায়দ বিন খালিদ (রাঃ) যায়দ বিন খালিদ (রাঃ) আবূ জুহাইম আল-আনসারী (রাঃ) -এর নিকট জিজ্ঞেস করতে পাঠানঃ সালাতরত ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী সম্পর্কে আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কী শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের যে কেউ তার সালাতরত ভাইয়ের সামনে দিয়ে অতিক্রম করার পরিণতি সম্পর্কে যদি জানতো, তাহলে অবশ্যি সে ‘চল্লিশ’ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম ভাবতো। রাবী বলেন, তিনি কি চল্লিশ বছর অথবা চল্লিশ মাস বা চল্লিশ দিন বলেছেন তা আমি অবগত নই।[৯৪৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ যদি জানতো যে, তার সালাতরত ভাইয়ের সামনে দিয়ে তার অতিক্রম করার পরিণতি কী, তাহলে সে এ ধরনের পদক্ষেপ ফেলার চাইতে এক শত বছর দাঁড়িয়ে থাকাকে অবশ্যি অধিক উত্তম মনে করতো। [৯৪৬]
যা সালাত নষ্ট করে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে সালাত পড়ছিলেন। আমি ও ফাদল গাধায় চড়ে সলাতের একটি কাতারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করলাম। আমরা গাধার পিঠ থেকে নেমে সেটিকে ছেড়ে দিয়ে সলাতের কাতারে শামিল হলাম। [৯৪৭] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সালামাহ (রাঃ) -এর ঘরে সালাত পড়ছিলেন। আবদুল্লাহ অথবা উমার বিন আবূ সালামাহ তাঁর সামনে দিয়ে যেতে উদ্যত হলে তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করলে তিনি ফিরে যান। তারপর যয়নব বিনতে উম্মু সালামাহ (রাঃ) যেতে চাইলে তাকেও তিনি হাতের ইশারায় নিষেধ করেন, কিন্তু তিনি অতিক্রম করে চলে যান। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষে বলেন, নারীরা (পুরুষের উপর) বিজয়ী। [৯৪৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কালো বর্ণের কুকুর ও ঋতুবর্তী নারী সালাত নষ্ট করে। [৯৪৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নারী, কুকুর ও গাধা সালাত নষ্ট করে। [৯৫০] আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নারী, কুকুর ও গাধা সালাত নষ্ট করে। [৯৫১] আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সলাতীর সামনে শিবিকার খুঁটির ন্যায় কোন জিনিস না থাকলে নারী, গাধা ও কালো বর্ণের কুকুর তার সালাত নষ্ট করে। অধস্তন রাবী বলেন, আমি বললাম, লাল বর্ণের কুকুর থেকে কালো বর্ণের কুকুরের পার্থক্য কি? তিনি বলেন, তুমি আমাকে যেরূপ জিজ্ঞেস করলে আমিও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তদ্রূপ জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেন, কালো কুকুর হলো শয়তান। [৯৫২]
সলাতীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে যথাসাধ্য বাধা দাও।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) (আল-হাসান আল-উরানী) বলেন, কিসে সালাত নষ্ট করে তা ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর উপস্থিতিতে আলোচিত হলো। লোকেরা কুকুর, গাধা ও স্ত্রীলোকের কথা উল্লেখ করলো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ছয়-সাত মাসের বকরীর বাচ্চা সম্পর্কে আপনারা কী বলেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সালাত পড়ছিলেন। তাঁর সামনে দিয়ে ছয়-সাত মাসের একটি বকরীর বাচ্চা অতিক্রম করে যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটিকে কিবলার দিক থেকে হটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। [৯৫৩] আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের যে কেউ সালাত আদায় করতে চাইলে যেন সুতরা সামনে রেখে সালাত পড়ে এবং তার নিকটবর্তী হয়। সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। অতএব যদি কেউ সামনে দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কারণ সে একটা শয়তান। [৯৫৪] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত পড়ে, তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। যদি সে অস্বীকার করে তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে। কেননা তার সাথে তার সহযোগী (শয়তান) রয়েছে। আল-হাসান বিন দাঊদ আল-মুনকাদিরী (রহঃ) বলেন, নিশ্চয় তার সাথে উয্যা (প্রতিমা) রয়েছে। [৯৫৫]
কোন ব্যক্তি তার ও কিবলার মাঝখানে কিছু থাকা অবস্থায় সালাত পড়লে।
আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সালাত আদায় করতো এবং আমি তখন তাঁর ও কিবলার মাঝখানে জানাযাহর লাশের ন্যায় আড়াআড়িভাবে শোয়া থাকতাম। [৯৫৬] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন যে, তার বিছানা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সিজদার স্থানের দিকে ছিল। [৯৫৭] মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করতো এবং আমি তাঁর সামনে থাকতাম। তিনি সিজদায় গেলে কখনো কখনো তাঁর পরিধেয় বস্ত্র (কাপড়) আমারা শরীরে লাগতো। [৯৫৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাক্যালাপে রত ব্যক্তি ও ঘুমন্ত ব্যাক্তির পেছনে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। [৯৫৯]
ইমামের আগে রুকু’ ও সিজদায় যাওয়া নিষিদ্ধ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, আমরা যেন ইমামের আগে রুকূ’ ও সিজদায় না যাই। তিনি আরো বলেন, ইমাম যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলো এবং তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও তখন সিজদা করো। [৯৬০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের আগে (রুকূ’-সিজদা থেকে) মাথা তোলে সে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় পরিবর্তিত করে দিবেন? [৯৬১] আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি এখন ভারী হয়ে গেছি। অতএব আমি যখন রুকূ’ করি, তোমরাও তখন রুকূ’ করো এবং আমি যখন মাথা উঠাই, তোমরাও তখন মাথা উঠাও। আমি যখন সাজদাহ্ করি, তোমরাও তখন সাজদাহ্ করো। আমি যেন কোন ব্যাক্তিকে আমার আগে রুকূ’ ও সিজদায় যেতে না দেখি। মুআবিয়াহ বিন আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার আগে রুকূ’-সিজদায় যাবে না। যখনই আমি তোমাদের আগে রুকূ’তে যাই, তোমরা আমাকে মাথা তোলার পূর্বেই পেয়ে যাও। আবার যখনই আমি তোমাদের আগে সিজদায় যাই, তোমরা আমাকে মাথা তোলার পূর্বেই পেয়ে যাও। নিশ্চয় এখন আমি (বয়সের কারনে) ভারী হয়ে গেছি। [৯৬৩]
সলাতের মাকরূহসমুহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন ব্যাক্তির তাঁর সালাত থেকে অবসর না হয়েই অধিক বার তাঁর কপাল মোছা রূঢ় আচরনের অন্তর্ভুক্ত। [৯৬৪] আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি সালাতরত অবস্থায় তোমার আঙ্গুলগুলো মটকাবে না। [৯৬৫] আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কোন ব্যক্তিকে সালাতরত অবস্থায় তার মুখমণ্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন। [৯৬৬] কা’ব বিন ‘উজরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যাক্তিকে সালাতরত অবস্থায় তার এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অপর হাতের আঙ্গুলসমূহের মধ্যে প্রবেশ করাতে দেখলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার আঙ্গুলসমূহ ফাঁকা (পৃথক) করে দিলেন। [৯৬৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো হাই আসলে সে যেন তার হাত মুখের উপর রাখে এবং সজোরে শব্দ না কোরে। কেননা তাতে শয়তান হাসে। [৯৬৮] তাহকীক আলবানী : সজোরে শব্দ না করে এ অতিরিক্তসহ মাওযূ বা জাল তাছাড়া সহীহ। উবায়দুল্লাহ বিন আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সালাতরত অবস্থায় থুথু, নাকের শ্লেষ্মা, হায়িয বা তন্দ্রা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। [৯৬৯]
লোকজন অপছন্দ করা সত্ত্বেও যে ব্যাক্তি তাদের ইমামতি করে।
আব্দুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যাক্তির সালাত কবূল হয় না : যে ব্যাক্তি লোকেদের ইমামতি করে তাকে তারা অপচ্ছন্দ করা সত্ত্বেও, যে ব্যাক্তি সলাতের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর সালাত পরে এবং যে ব্যাক্তি কোন স্বাধীন ব্যাক্তিকে দাস বানায়। [৯৭০] তাহকীক আলবানী : প্রথম ব্যক্তির বর্ণনা পর্যন্ত সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিন ব্যাক্তির সালাত তাদের মাথার এক বিঘত উপরেও উঠে না : যে ব্যাক্তি জনগণের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করে, যে নারী তাঁর স্বামীর অসন্তুষ্টিসহ রাত যাপন করে এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’ ভাই। [৯৭১] তাহকীক আলবানী : এ শব্দে বর্ণনা মুনকার।
দু’ ব্যক্তির জামাআত।
আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু’ বা ততোধিক ব্যাক্তি সমন্বয়ে একটি জামাআত হতে পারে। [৯৭২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনা (রাঃ) -এর এখানে রাত কাটালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সালাত পড়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন। আমি তাঁর বাঁ পাশে দাঁড়ালে তিনি আমার হাত ধরে আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করান। [৯৭৩] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সালাত পড়ছিলেন। আমি এসে তাঁর বাঁ পাশে দাঁড়ালে তিনি আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করান।[৯৭৪] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক স্ত্রী ও আমাকে নিয়ে সালাত পড়েন। তিনি আমাকে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করান এবং মহিলাটি আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে সালাত পড়েন।[৯৭৫]
যে ব্যাক্তি ইমামের কাছাকাছি দাঁড়াতে পছন্দ করে।
আবূ মাসউদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের মধ্যে আমাদের কাঁধে হাত বুলিয়ে বলতেন : তোমরা (কাতারে আঁকাবাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে) বিশৃংখল হয়ো না, অন্যথায় তোমাদের অন্তরসমূহ বিশৃংখল হয়ে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান তারা (কাতারে) আমার কাছাকাছি দাঁড়াবে, অতঃপর (যোগ্যতায়) তাদের নিকটতর লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটতর লোকেরা দাঁড়াবে। [৯৭৬] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের (সলাতে) তাঁর কাছে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন, যাতে তারা তাঁর নিকট থেকে শিখে নিতে পারেন। [৯৭৭] আবু সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের পেছনে হটতে দেখে বললেন, তোমরা সামনের কাতারে এগিয়ে আসো এবং আমার অনুসরন করো, যাতে তোমাদের পরবর্তী লোকেরা তোমাদের অনুসরন করতে পারে। লোকেরা যখন পেছনেই হটতে থাকে, তখন আল্লাহও তাদের পেছনেই হটিয়ে দেন। [৯৭৮]
যোগ্যতর ব্যক্তি ইমাম হবে।
মালিক ইবনুল হুওয়ায়রিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও আমার এক সংগী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। যখন আমরা ফিরে যেতে মনস্থ করলাম, তখন তিনি আমাদের বললেন, সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হলে তোমরা আযান দিবে, অতঃপর ইকামাত দিবে এবং তোমাদের দুজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ জন তোমাদের ইমামতি করবে। [৯৭৯] আবু মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন অধিক জানে সে লোকদের ইমামতি করবে। তারা যদি কুরআনে সমকক্ষ হয়, তবে তাদের মধ্যে হিজরতে অগ্রগামী ব্যক্তি তাদের ইমামতি করবে। যদি হিজরাতেও তারা সমান হয়, তবে তাদের মধ্যকার বয়োজ্যেষ্ঠ্ ব্যক্তি তাদের ইমামতি করবে। কোন ব্যক্তি যেন অপর ব্যক্তির বাড়িতে বা তার প্রভাবাধীন এলাকায় তার সম্মতি ছাড়া ইমামতি না করে এবং তার বাড়িতে তার জন্য নির্দিষ্ট আসনে তার সম্মতি ছাড়া না বসে। [৯৮০]
ইমামের যা কর্তব্য।
সাহল বিন সা’দ আস-সাঈদি (রাঃ) তার গোত্রের যুবকদেরকে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে দিতেন। তারা তাদের ইমামতিতে সালাত আদায় করতো। তাকে বলা হল, আপনি এরুপ করছেন, অথচ আপনি (ইসলাম গ্রহনে) প্রবীন। আপনার তা করার কারন কি? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ইমাম হলেন, যিম্মাদার। তিনি উত্তম করলে (সুচারুরুপে সালাত আদায় করলে) তার জন্য উত্তম, মুক্তাদীদের জন্যও উত্তম (পুরুষ্কার)। তিনি খারাপ করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে, মোক্তাদীদের উপর নয়। [৯৮১] খারাশাহ (রাঃ) এর বোন সালামাহ বিনতুল হুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ লোকের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তারা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তাদের (সলাতে) ইমামতি করার যোগ্য লোক খুজে পাবে না। [৯৮২] উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) (আবু আলী) , নৌ ভ্রমনে বের হন, তাতে উকবাহ বিন আমির আল জুহানীও ছিলেন। কোন এক সলাতের ওয়াক্ত উপস্থিত হলে আমরা তাকে আমাদের ইমামতি করতে অনুরোধ করলাম এবং তাকে বললাম, নিশ্চয় আমাদের মধ্যে আপনিই এর যোগ্য। আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী। কিন্তু তিনি (ইমামতি করতে) অস্বীকার করেন এবং বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করলো এবং সঠিকভাবে সালাত পড়লো, তাতে তার ও মোক্তাদীদের সালাত হয়ে গেল। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে কোন ত্রুটি করলো, তার দায় তার উপর বর্তাবে, তাদের উপর নয়। [৯৮৩]
যে ব্যক্তি লোকদের ইমামতি করে সে যেন (সালাত) সহজ (সংক্ষিপ্ত) করে।
আবু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লহর রসূল! আমি ফজরের সলাতের জামাআতে অমুকের কারনে দেরীতে উপস্থিত হই। কারন তিনি আমাদের সলাতে দীর্ঘ কিরাআত পড়েন। রাবী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সে দিনের চাইতে আর কোন দিন অধিক রাগান্বিত হয়ে খুতবাহ দিতে দেখিনি “হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে লোকদের ঘৃনা উদ্রেককারী ব্যক্তিও আছে। অতএব তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে সালাত পড়ে তখন সে যেন সংক্ষিপ্ত কিরাআত পড়ে। কেননা তাদের মধ্যে দুর্বল, বৃদ্ধ ও কর্মব্যস্ত লোকও রয়েছে।” [৯৮৪] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংক্ষেপে অথচ পূর্ণরূপে সালাত আদায় করতেন। [৯৮৫] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মুআয বিন জাবাল আল আনসারী (রাঃ) তার সাথীদের নিয়ে ইশার সালাত পড়লেন। তিনি তাদের সালাত দীর্ঘ করলেন। ফলে আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি (সালাত থেকে) পৃথক হয়ে একাকী সালাত পড়ে। মুআয (রাঃ) কে তার সম্পর্কে অবহীত করা হলে তিনি বলেন, নিশ্চয় সে মুনাফিক। লোকটি তা জানতে পেরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার সম্পর্কে মুআয (রাঃ) এর মন্তব্য তাঁকে অবহিত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে মুআয! তুমি কি বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী হতে চাও? তুমি যখন লোকদের নিয়ে সালাত পড়বে, তখন সুরাহ আস-শামসি অয়া যুহাহা, সুরাহ আল-আলা, সুরাহ ওয়াল-লাইল ও সুরাহ ইকরা বিসমি রব্বিকা পাঠ করবে। [৯৮৬] মুতাররিফ বিন আব্দুল্লাহ ইবনুস শিখখীর আমি উসমান বিন আবূল আস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তায়েফের আমীর নিয়োগ করাকালে আমার থেকে সর্বশেষ প্রতিশ্রুতি গ্রহন করে বলেন, হে উসমান! তুমি সালাত সংক্ষেপ করবে এবং লোকদের মধ্যকার দুর্বলদের সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। কেননা তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, নাবালেগ, রোগাক্রান্ত ব্যাক্তি, দূরের পথের পথিক এবং কর্মব্যস্ত লোক আছে। [৯৮৭] উসমান বিন আবূল আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বশেষ আমাকে যা বলেছেন তা হলোঃ যখন তুমি লোকদের ইমামতি করবে, তখন তাদের সালাত সংক্ষেপ করবে। [৯৮৮]
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ইমামের সালাত সংক্ষিপ্ত করা।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি সালাত শুরু করে তা দীর্ঘায়িত করার সংকল্প করি। কিন্তু আমি শিশুদের কান্না শুনতে পাই এবং তাতে তার মায়ের বিচলিত হওয়ার কথা চিন্তা করে আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি। [৯৮৯] উসমান বিন আবুল আস তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আমি শিশুর কান্না শুনতে পাই এবং আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আমি সলাতে দাঁড়িয়ে তা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা করি। কিন্তু আমি শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে সালাত সংক্ষিপ্ত করি, তার মায়ের কষ্ট হওয়ার আশংকায়। [৯৯১]
সলাতের কাতার ঠিকঠাক করা।
জাবির বিন সামুরা আস-সুওয়ায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সাবধান! তোমরা এমনভাবে কাতারবন্দী হও যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের প্রভুর নিকট কাতারবন্দী হন। রাবী বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ফেরেশতারা তাদের প্রভুর সামনে কিভাবে কাতারবন্দী হন? তিনি বলেন, তারা প্রথম সারিগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং সারিতে গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ান। [৯৯২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করো। কারণ কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণ করার অন্তর্ভুক্ত। [৯৯৩] নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্শা অথবা তীরের মত স্বলাতের কাতার সোজা করতেন। রাবী বলেন, তিনি এক ব্যক্তির বুক একটু বাইরে অগ্রসর দেখতে পান। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মুখমন্ডলে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। [৯৯৪] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যারা কাতারগুলো মিলিয়ে রাখে তাদের প্রতি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতাগন রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। [৯৯৫]
সামনের কাতারের ফযীলত।
ইরবাদ বিন সারিয়া (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম কাতারের লোকের জন্য তিনবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দ্বিতীয় কাতারের লোকের জন্য একবার। [৯৯৬] বারা’ বিন আযিব (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের লোকের উপর রহমত বর্ষণ করেন। [৯৯৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লোকেরা যদি জানতো যে, প্রথম কাতারে কী (মর্যাদা) আছে, তাহলে (প্রথম কাতারে দাঁড়াতে) লটারীর ব্যবস্থা করতে হতো। [৯৯৮] আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ প্রথম কাতারের লোকদের উপর রহমত নাযিল করেন।[৯৯৯]
মহিলাদের কাতার।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে (নেকীর দিক থেকে) উত্তম হলো শেষ কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ কাতার (কম নেকীর) হলো তাদের প্রথম কাতার। পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো প্রথম কাতার এবং তাদের জন্য মন্দ হলো তাদের শেষ কাতার। [১০০০] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পুরুষদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো তাদের সামনের (প্রথম) কাতার এবং মন্দ হলো তাদের পেছনের (শেষ) কাতার। মহিলাদের কাতারগুলোর মধ্যে উত্তম হলো তাদের পেছনের (সর্বশেষ) কাতার এবং মন্দ হলো তাদের সামনের কাতার। [১০০১]
দু’ খুঁটি বা খামের মাঝখানের কাতারে সালাত পড়া।
মুআবিয়াহ বিন কুররাহ তার পিতা (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যমানায় আমাদেরকে দু’ খুঁটির মাঝখানে কাতারবন্দী হতে নিষেধ করা হতো এবং আমাদেরকে কঠোরভাবে বিরত রাখা হতো।[১০০২]
কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত পড়া।
আলী বিন শায়বান (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক প্রতিনিধি দল রওয়ানা হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দরবারে উপস্থিত হলাম। আমরা তাঁর নিকট বাইআত (ইসলাম) গ্রহণ করলাম এবং তাঁর পিছনে সালাত পড়লাম, অতঃপর তাঁর পিছনে আরো এক ওয়াক্তের সালাত পড়লাম। তিনি সালাত শেষে এক ব্যক্তিকে কাতারের পেছনে একাকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখলেন। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট থামলেন এবং সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে বলেন তুমি পুনরায় সালাত পড়ো। কারণ যে ব্যক্তি কাতারের পেছনে এককী দাঁড়ায় তার সালাত হয় না। [১০০৩] ওয়াবিসাহ বিন মা‘বাদ (রাঃ) হিলাল বলেন, যিয়াদ বিন আবূল জা‘দ আমার হাত ধরে আর-রাক্কা নামক স্থানে ওয়াবিসাহ বিন মা‘বাদ (রাঃ) নামক প্রবীণ ব্যক্তির নিকট নিয়ে যান। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কাতারের পিছনে এককী সালাত পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তা পুনর্বার পড়ার নিদের্শ দেন। [১০০৪]
কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর ফযীলত।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাকগণ কাতারসমূহের ডান দিকের (মুসল্লিদের) উপর রহমত বর্ষণ করেন।[১০০৫] আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে সালাত পড়তাম তখন কাতারের ডান দিকে দাঁড়াতে পছন্দ করতাম।[১০০৬] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলা হলো, মাসজিদের বাম দিক খালি হয়ে গেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মাসজিদের বাম দিকের খালি জায়গা পূর্ণ করবে, তার জন্য দ্বিগুণ পুরস্কার লিপিবদ্ধ করা হয়।[১০০৭]
কিবলার বর্ণনা।
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ (কা‘বা ঘর) তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমে আসেন। তখন উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা তো আমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) -এর মাকাম, যে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন (অনুবাদ) : “তোমারা মাকামে ইবরাহীমকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো” (সূরা বাকারাঃ ১২৫)। ওলীদ বিন মুসলিম (রাঃ) বলেন, আমি ইমাম মালিক (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এভাবে “ওয়াত্তাখিযু” পড়েছেন? তিনি বলেন, হাঁ।[১০০৮] আনাস বিন মালিক উমার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনি মাকামে ইবরাহীমকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ করতেন! তখন নাযিল হলোঃ “তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ করো” (সূরা বাকারাঃ ১২৫)।[১০০৯] আল-বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আঠার মাস যাবত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত পড়ি। তাঁর হিজরত করে মদীনাহ্য় আসার দু’মাস পর কাবা শরীফের দিকে কিবলা পরিবর্তিত করা হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বাইতুল মাকদিসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতেন, তখন অধিকাংশ সময় তিনি তাঁর মুখমণ্ডল আকাশের দিকে ফিরাতেন। আল্লাহ তাঁর নবীর মনের আকাঙ্খা জানতেন যে, তিনি কাবাকে পছন্দ করেন। জিবরাঈল (আঃ) আরোহণ করেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দৃষ্টি তাঁর অনুসরণ করে। তিনি আসমান ও যমীনের মাঝখান দিয়ে অগ্রসর হন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লক্ষ্য করেন, তিনি কী হুকুম নিয়ে আসেন তাঁর জন্য। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “আকাশের দিকে তোমর বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি ….” (সূরা বাকারাঃ ১৪৪)। এরপর আমাদের কাছে একজন আগন্তুক এসে বলেন, নিশ্চয় কিবলা তো কাবার দিকে পরিবর্তিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বায়তুল মাকদিসকে কিবলা করে আমাদের দু’রাকআত সালাত পড়া হয়েছে। আমরা রুকূ‘তে থাকা অবস্থায় (নতুন) কিবলার দিকে ঘুরে গেলাম এবং আমাদের অবশিষ্ট সালাত বাইতুল্লাহর দিকে ফিরে পড়লাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে জিবরাঈল! আমাদের বাইতুল মাকদিসের সলাতের অবস্থা কী? তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “আল্লাহ এরূপ নন যে, তোমদের ঈমান নষ্ট করবেন” (সূরা বাকারাঃ ১৪৩)। [১০১০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝখানে কিবলা অবস্থিত। [১০১১]
যে ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো, সে সালাত না পড়া পর্যন্ত বসবে না।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন দু’ রাকআত সালাত না পড়া পর্যন্ত না বসে।[১০১২] হারিস বিন রিবঈ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’ রাকআত সালাত পড়ে।[১০১৩]
যে ব্যক্তি রসুন খেয়েছে সে যেন মাসজিদে প্রবেশ না করে।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জুমুআহর খুতবাহ দিতে দাঁড়ান অথবা তিনি জুমুআহর দিন খুতবাহ দেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা দু’টি গাছ খেয়ে থাকো, আমার দৃষ্টিতে তা নিকৃষ্টঃ এই রসুন ও এই পিয়াজ। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে দেখতাম, যার মুখ থেকে এর দুর্গন্ধ পাওয়া যেতো, তার হাত ধরে তাকে আল-বাকী নামক স্থানের দিকে বের করে দেয়া হতো। অতএব যে ব্যক্তি তা খেতেই চায়, সে যেন তা রান্না করে খায়। [১০১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই গাছ অর্থাৎ রসুন খায়, সে যেন তার দ্বারা আমাদের এই মাসজিদে (এসে) আমাদের কষ্ট না দেয়। ইবরাহীম বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমার পিতা এর সাথে দুর্গন্ধযুক্ত তরকারী ও পিঁয়াজকে শামিল করতেন। অর্থাৎ তিনি রসুন সম্পর্কিত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের সাথে ঐগুলোকেও যোগ করতেন।[১০১৫] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই গাছের কিছু খায়, সে যেন মাসজিদে না আসে। [১০১৬]
সালাতরত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হলে সে কিভাবে উত্তর দিবে।
আবদুল্লাহ ইন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়ার জন্য কুবা মাসজিদে আসেন। তখন একদল আনসারী তাঁকে সালাম দিতে আসেন। আমি তাঁর সঙ্গী সুহাইব (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে তাদের সালামের জবাব দিতেন? তিনি বলেন, তিনি তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করতেন।[১০১৭] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বিশেষ কাজে আমাকে পাঠান। আমি ফিরে এসে তাঁকে সালাতরত অবস্থায় পেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলে তিনি আমার দিকে ইশারা করেন। তিনি সালাত শেষ করে আমাকে ডেকে বলেন, তুমি এইমাত্র আমাকে সালাম দিয়েছো এবং আমি তখন সালাত পড়ছিলাম? [১০১৮] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সালাতরত অবস্থায় সালাম দিতাম। আমাদের বলা হলোঃ সলাতের মধ্যে অবশ্যই একটা ব্যস্ততা আছে।[১০১৯]
যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত কিবলার ভিন্ন দিকে সালাত পড়ে।
রবীআহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম) -এর সাথে ছিলাম। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় কিবলা নির্ণয় করা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়লো। আমরা সালাত পড়লাম এবং একটি চিহ্ন রাখলাম। এরপর সূর্য উদ্ভাসিত হলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমরা কিবলা ছাড়া অন্যদিকে সালাত আদায় করেছি। আমরা বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উত্থাপন করলাম। তখন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকই আল্লাহ্র দিক” (সূরা বাকারাঃ ১১৫)। [১০২০]
সালাতরত ব্যক্তির থুথু ফেলা।
তারিক বিন আবদুল্লাহ আল-মুহারিবী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি সালাতরত অবস্থায় তোমার সামনে ও ডানে থুথু ফেলবে না, বরং তোমরা বামে অথবা তোমার পায়ের নিচে থুথু ফেলবে। [১০২১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে কিবলার দিকে থুথু পতিত দেখতে পেয়ে লোকেদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, তোমাদের কারো কী হলো যে, তার রবের সামনে দাঁড়ায় এবং তার সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করে? তোমাদের কেউ কি তার সামনে থেকে তার মুখে থুথু নিক্ষিপ্ত হওয়া পছন্দ করে? অতএব তোমাদের কেউ যখন থুথু ফেলবে, তখন সে যেন তা তার বাম দিকে ফেলে অথবা এভাবে কাপড়ে ফেলে। অতঃপর ইসমাঈল বিন উলাইয়্যা তার থুথু নিক্ষেপ করে তা রগড়িয়ে আমাকে দেখান।[১০২২] হুযায়ফাহ (রাঃ) তিনি শাবাস বিন রিবঈকে তার সামনে থুথু ফেলতে দেখে বলেন, হে শাবাছ! তোমার সামনের দিকে থুথু ফেলো না। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেনঃ কোন ব্যক্তি যখন সলাতে দাঁড়ায় তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন, যতক্ষণ না সে সালাত শেষ করে ফিরে যায় অথবা কোন নিকৃষ্ট আচরণ করে।[১০২৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতরত অবস্থায় তাঁর কাপড়ে থুথু ফেলেন, অতঃপর তা ঘষে ফেলেন। [১০২৪]
সালাতরত অবস্থায় কাঁকড় স্পর্শ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (সালাতরত অবস্থায়) কাঁকড় স্পর্শ করলো সে বাজে কাজ করলো।[১০২৫] মুআইকীব (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতরত অবস্থায় পাথর স্পর্শ করা সম্পর্কে বলেছেন, তোমার যদি তা করতেই হয় তবে মাত্র একবার। [১০২৬] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ সলাতে দাঁড়ানোর পর যেন আর কাঁকর না সরায়। কেননা তখন রহমাত তার অভিমুখী হয়। [১০২৭]
চাটাইয়ের উপর সালাত পড়া।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন। [১০২৮] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাটাইয়ের উপর সালাত আদায় করতেন।[১০২৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) বসরায় অবস্থানকালে তার বিছানার উপর সালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি তাঁর সঙ্গীদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিছানার উপর সালাত আদায় করতেন। [১০৩০]
ঠাণ্ডা বা গরমের কারণে কাপড়ের উপর সিজদা করা।
আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান (মাকবূল) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসেন এবং আমাদেরকে সাথে নিয়ে আবদুল আশহাল গোত্রের মাসজিদে সালাত পড়েন। সিজদা করাকালে আমি তাঁকে তাঁর উভয় হাত তাঁর কাপড়ের উপর রাখতে দেখেছি। [১০৩১] সাবিত ইবনুস-সামিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল আশহাল গোত্রে সালাত পড়েন। তাঁর গায়ে জড়ানো ছিল একখানা চাদর। পাথরের ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য তিনি তাঁর দু’হাত ঐ চাদরের উপর রাখেন।[১০৩২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা প্রচণ্ড গরমের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সালাত পড়তাম। আমাদের কেউ (মাটিতে) তাঁর কপাল রাখতে অসমর্থ হলে তার কাপড় বিছিয়ে তার উপর সিজদা করতো। [১০৩৩]
সলাতে পুরুষদের জন্য তাসবীহ এবং নারীদের জন্য হাততালি।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পুরুষদের জন্য তাসবীহ এবং নারীদের জন্য হাততালি। [১০৩৪] সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পুরুষদের জন্য তাসবীহ এবং নারীদের জন্য হাততালি। [১০৩৫] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীদের জন্য হাততালি এবং পুরুষদের জন্য তাসবীহ পাঠের অনুমতি দিয়েছেন।
জুতা পরে সালাত আদায়।
আওস (রাঃ) কখনো কখনো সালাতরত অবস্থায় আমার দিকে ইশারা করতেন। আমি তার জুতা জোড়া এগিয়ে দিতাম। তিনি বলতেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর জুতাজোড়া পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখেছি।[১০৩৭] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খালি পায়েও এবং জুতা পরিহিত অবস্থায়ও সালাত আদায় করতে দেখেছি।[১০৩৮] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জুতা পরিহিত অবস্থায় এবং মোজা পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখেছি।[১০৩৯]
সালাতরত অবস্থায় চুল ও কাপড় গুটানো।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন (সালাতরত অবস্থায়) চুল বা পরিধেয় বস্ত্র না গুটাই। [১০৪০] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আদিষ্ট হয়েছি যে আমরা যেন চুল ও কাপড় না গুটাই এবং আবর্জনার স্থান অতিক্রম করলে উযু না করি। [১০৪১] আবূ সা’দ শুরাইবীল (ইব্নু সা’দ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্ত করা দাস আবূ রাফি’ (আসলাম) (রাঃ) -কে দেখলাম যে, তিনি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে চুল বাঁধা অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখে তা খুলে দিলেন বা তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহব (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুলের খোঁপা বেঁধে পুরুষদের সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন।[১০৪২]
সলাতে বিনয়ভাব জাগ্রত করা।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সালাতরত অবস্থায় তোমাদের দৃষ্টি আকাশের দিকে উঠাবে না, অন্যথায় তোমাদের দৃষ্টি ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে। [১০৪৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে সালাত পড়েন। তিনি সালাত শেষ করে লোকেদের দিকে তাঁর মুখ ফিরিয়ে বলেন, লোকেদের কী হলো যে, তারা আকাশের দিকে তাকায়। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মন্তব্য করেন। অবশ্যই তারা যেন তা থেকে বিরত থাকে, অন্যথায় আল্লাহ নিশ্চয় তাদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিবেন। [১০৪৪] জাবির বিন সামুরা (রাঃ) , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, লোকেরা যেন আকাশের দিকে তাদের চোখ তোলা থেকে অবশ্যই বিরত থাকে, অন্যথায় তারা তাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে না।[১০৪৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক পরমা সুন্দরী মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সলাহ আদায় করতো। কতক লোক সামনের কাতারে এগিয়ে যেতো যাতে তার প্রতি তার দৃষ্টি না পড়ে এবং কতক লোক পেছনের শেষ কাতারে সরে যেতো। সে রুকু’তে গিয়ে নিজ বগলের নিচ দিয়ে (তার প্রতি) তাকাতো। তখন আল্লাহ সেই মহিলাটি সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “আমি তোমাদের মধ্যকার অগ্রগামীদেরকেও জানি এবং পশ্চাদগামীদেরকেও জানি”- (সূরা হিজরঃ ২৪)। [১০৪৬]
এক কাপড়ে সালাত পড়া।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমাদের কেউ কেউ এক কাপড়ে সালাত পড়ে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’টি করে পরিধেয় বস্ত্র আছে? [১০৪৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তিনি এক কাপড় পরিহিত অবস্থায় তার দু’ প্রান্ত কাঁধের সাথে বেঁধে সালাত পড়ছিলেন। [১০৪৮] উমার বিন আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি কাপড় জড়িয়ে তার দু’প্রান্ত তাঁর দু’ কাঁধে বেঁধে সালাত আদায় করতে দেখেছি। [১০৪৯] কায়সান বিন জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিরে উলিয়া নামক কূপের নিকট এক কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি। [১০৫০] কায়সান বিন জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে একটি কাপড় পড়ে যোহর ও আসরের সালাত আদায় করতে দেখেছি।[১০৫১]
কুরআন তিলাওয়াতের সিজদাসমূহ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বনী আদম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদা দেয় তখন শায়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে যায় আর বলেঃ আফসোস! বনী আদমকে সিজদা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং সে সিজদা করছে। তাই তার প্রতিদান জান্নাত। আর আমাকে সিজদা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, আমি তা অমান্য করেছি। তাই আমার প্রতিদান হলো জাহান্নাম।[১০৫২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) , এর সুত্রে আমাকে অবহিত করেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বললো, আমি গতরাতে স্বপ্নে দেখলাম যে আমি একটি গাছের গোড়ায় সালাত পরছি এবং তাতে আমি সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করছি। আমি সিজদা করলাম এবং গাছটিও আমার অনুরূপ সিজদা করলো। আমি গাছটিকে বলতে শুনলাম, “হে আল্লাহ! এই সিজদার দ্বারা আমার গুনাহ অপসারিত করুন, আমার জন্য পুরস্কার নির্ধারণ করুন এবং এটাকে আপনার নিকট সঞ্চয় হিসাবে জমা রাখুন”। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর সিজদা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে তাঁর সিজদায় সেই দুআ’ করতে শুনলাম, গাছটির যে দুআ’ ঐ ব্যক্তি তাঁকে অবহিত করেছিল। [১০৫৩] আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর তিলাওয়াতের সিজদায় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য সিজদা করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম, তোমার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং তুমিই আমার প্রভু। আমার মুখমণ্ডল সেই মহান সত্তাকে সিজদা করলো, যিনি এর কানের শ্রবণশক্তি ও চোখের দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান।”[১০৫৪]
কুরআন মাজীদে তিলাওয়াতের সিজদার সংখ্যা।
হুজায়মাহ বিনতু হুওয়ায় (রাঃ) তিনি বলেন, আবূদ-দারদা (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এগারটি সিজদা করেছেন। সূরা নাজম-এর সিজদাও তার অন্তর্ভুক্ত। [১০৫৫] উইয়াইমির বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এগারটি সিজদা করেছি, তার মধ্যে মুফাসসাল সূরা ছিল না (সিজদার সূরাসমূহ) : সূরা আ’রাফ, রাদ, নাহল, বানূ ইসরাঈল, মারয়াম, হজ্জ , ফুরকান, নাম্ল, আস-সাজদা, সা’দ ও হ’মীম সংযুক্ত সূরাসমূহ। [১০৫৬] আম্র ইবনুল আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কুরআনের পনেরোটি সাজদাহ্ পড়িয়েছেন। তন্মধ্যে মুফাসসাল সূরায় তিনটি এবং সূরা হাজ্জে দুটি সাজদাহ্ রয়েছে। [১০৫৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সূরা ইযাসা্মাউন শাক্কাত ও সূরা ইক্রা বিস্মে রব্বিকায় সিজদা করেছি। [১০৫৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইযাস সামাউন শাক্কাত সূরাতে সিজদা করেছেন। আবূ বকর বিন আবূ শায়বা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি ইয়াহইয়া বিন সাঈদ (রহঃ) সুত্রে বর্ণিত। আমি তাকে ছাড়া আর কাউকে হাদীসটি উল্লেখ করতে শুনিনি। [১০৫৯]
সালাতকে পুর্নাঙ্গ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে সালাত পড়লো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মাসজিদের এক পাশে অবস্থান করছিলেন। সে এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি বলেন, তোমার প্রতিও, তুমি ফিরে যাও, আবার সালাত পড়ো। কেননা তুমি সালাত পড়োনি। সে ফিরে যেয়ে সালাত পড়লো, তারপর এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সালাম দিল। তিনি বললেন তোমার প্রতিও, ফিরে যাও এবং সালাত পড়ো। কেননা তুমি সালাত পড়োনি। তৃতীয়বারে সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বলেন, তুমি সালাত পড়ার ইচ্ছা করলে উত্তমরূপে উযু করো, তারপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর (তাহরীমা) বলো, এরপর কুরআনের যে অংশ তোমার কাছে সহজ সেখান থেকে কিরাআত পাঠ করো, তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকূ’ করো, অতঃপর রুকূ’ থেকে দাঁড়িয়ে সোজা হও, তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করো, অতঃপর মাথা তুলে সোজা হয়ে বসো। তুমি তোমার গোটা সালাত এভাবে পড়ো। [১০৬০] হারিস বিন রিবঈ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দশ জন সাহাবীর উপস্থিতিতে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সলাতের ব্যপারে আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞাত। তারা বলেন, তা কিভাবে? আল্লাহ্র শপথ! আপনি আমাদের চেয়ে অধিক কাল তাঁর অনুসারণকারী নন এবং তাঁর সাহচর্য লাভের দিক থেকেও আমাদের অগ্রগামী নন। তিনি বলেন, হ্যাঁ। তারা বলেন, তাহলে আপনার বক্তব্য পেশ করুন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর (তাহরীমা) বলতেন, তারপর তাঁর উভয় হাত তাঁর দু’ কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্ব স্ব স্থানে স্থির থাকতো। অতঃপর তিনি কিরাআত পড়তেন, অতঃপর তাকবীর বলে তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর তাঁর উভয় হাত উঠাতেন। তারপর তিনি রুকূ’ করতেন এবং রুকূ’তে তাঁর উভয় হাত যথাযথভাবে দু’ হাঁটুর উপর রাখতেন, তাঁর মাথা অধিক উঁচু বা নিচু না করে সমানভাবে রাখতেন। অতঃপর তিনি ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে উভয় হাত উভয় কাঁধ বরাবর উঠাতেন, এমনকি তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্ব স্ব স্থানে স্থির হয়ে যেত। অতঃপর তিনি যমীনের দিকে (সিজদায়) ঝুঁকে যেতেন এবং পার্শ্বদেশ থেকে উভয় হাত আলাদা রাখতেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসতেন এবং সিজদার সময় উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলো ভাঁজ করে খাড়া রাখতেন, তারপর সিজদা করতেন, অতঃপর তাকবীর বলে (সিজদা থেকে উঠে) বাম পায়ের উপর বসতেন, এমনকি তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বস্থানে স্থির হয়ে যেত। অতঃপর তিনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকাআতেও প্রথম রাকাআতের অনুরূপ করতেন। তিনি দ্বিতীয় রাকাআত থেকে দাঁড়ানোর সময় তাঁর উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন, যেমন উঠাতেন সালাত শুরু করার সময়। তিনি অবশিষ্ট সালাত এভাবে পড়তেন। শেষ সিজদা করে তিনি সালাম ফিরিয়ে এক পা আগে-পিছে করে, বাম দিকের পাছার উপর ভর করে বসতেন। তারা বলেন, আপনি যথার্থই বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সালাত আদায় করতেন। [১০৬১] আমরাহ (বিনতু আবদুর রাহমান) তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বলেন, তিনি উযু করার সময় বিসমিল্লাহ বলে পাত্রে তাঁর দু’হাত রেখে পূর্ণরূপে উযু করতেন, অতঃপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন এবং তাঁর উভয় হাত তাঁর উভয় কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন, অতঃপর কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন এবং তাঁর উভয় হাত উভয় কাঁধ পর্যন্ত উত্তোলন করতেন অতঃপর (কিরাআত শেষে) রুকূ’ করতেন এবং তাঁর উভয় হাত উভয় হাঁটুতে রাখতেন এবং হাত দুটোকে পৃথক করে রাখতেন। তারপর মাথা উত্তোলন করে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তোমাদের চাইতে সামান্য বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। অতঃপর তিনি সিজদা করতেন এবং তাঁর হাত দু’টি কিবলামুখী করে রাখতেন। আমি যতটা দেখেছি, তিনি যথাসাধ্য তাঁর হাত দুটি (পাঁজর থেকে) পৃথক রাখতেন। অতঃপর তিনি তাঁর মাথা তুলে তাঁর বা পায়ের উপর বসতেন এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখতেন। তিনি বাঁদিকে ঝুঁকে বসতে অপছন্দ করতেন। [১০৬২] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
সফরে সালাত কসর (হ্রাস) করা।
উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যবানীতে সফরের সালাত দু’ রাকাআত, জুমুআহ্র সালাত দু’ রাকাআত এবং ঈদের সালাত দু’ রাকাআত। এগুল পূর্ণ সালাত, এগুলোর কসর নাই। [১০৬৩] উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যবানীতে সফরের সালাত দু’ রাকাআত, জুমুআহ্র সালাত দু’ রাকাআত, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাত দু’ রাকাআত করে, এগুল কসর ব্যতীত পূর্ণ সালাত। [১০৬৪] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট এই আয়াত উল্লেখপূর্বক (অনুবাদ) : “যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, কাফেররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে সালাত সংক্ষিপ্ত করলে এতে তোমাদের কোন দোষ নেই” জিজ্ঞেস করলাম যে, মানুষ তো এখন নিরাপদে আছে? তিনি বলেন, তুমি যে বিষয়ে বিস্ময় বোধ করছো, আমিও সে বিষয়ে বিস্ময় বোধ করেছিলাম। এ বিষয়ে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এতো একটি দানবিশেষ, যা আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের দিয়েছেন। কাজেই তোমরা তাঁর দান গ্রহন করো। [১০৬৫] উমাইয়্যাহ বিন আবদুল্লাহ বিন খালিদ আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) কে বলেন, আমরা কুরআনুল কারীমে মুকীম ব্যক্তির সালাত ও ভীতির সালাত (সলাতুল খাউফ) সম্পর্কে বর্ণনা পাই, অথচ মুসাফিরের সলাতের বর্ণনা পাই না। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের নিকট মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রেরণ করেছেন এবং আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যেরূপ করতে দেখেছি, আমরাও অবশ্যি তদ্রূপ করি। [১০৬৬] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ মাদীনাহ শহর থেকে কোথাও রওয়ানা হয়ে গেলে, এখানে ফিরে না আসা পর্যন্ত দু’ রাকাআতের অধিক সালাত আদায় করতেন না। [১০৬৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যবনীতে (তাঁর বান্দাদের উপর) মুকীম অবস্থায় চার রাকাআত এবং মুসাফির অবস্থায় দু’ রাকাআত সালাত ফার্দ করেছেন। [১০৬৮]
সফরে দু’ ওয়াক্তের সালাত একত্রে পড়া।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি অবহিত করেন যে, ব্যতিব্যস্ততা, শত্রুর আক্রমণাশঙ্কা এবং অন্য কিছুর ভয়ভীতিমুক্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে পড়তেন। [১০৬৯] মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক যুদ্ধের সফরে যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করেন। [১০৭০]
সফরে নফল সালাত।
হাফস বিন আসিম হাফস বিন আসিম বলেন আমরা এক সফরে ইবনু উমার (রাঃ) -এর সাথে ছিলাম। তিনি আমাদের নিয়ে সালাত পড়েন। অতঃপর আমরা সেখান থেকে তার সাথে ফিরে আসি। রাবী বলেন, তিনি একদল লোককে সালাত আদায় করতে দেখে বলেন, ঐ সকল লোক কি করছে? আমি বললাম, তারা নফল সালাত পড়ছে। তিনি বলেন, সফরে নফল সালাত পড়া জরুরী মনে করলে, আমি আমার ফার্দ সালাত পুরটাই পড়তাম। হে ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সফরসঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত সফরে দু’ রাকআতের অধিক সালাত পড়েননি। তারপর আমি আবূ বকর (রাঃ) -এর সফরসঙ্গী ছিলাম, তিনিও দু’ রাকআতের অধিক সালাত পড়েননি। এরপর আমি উমার (রাঃ) -এর সফরসঙ্গী ছিলাম এবং তিনিও দু’ রাকআতের অধিক সালাত পড়েননি। অতঃপর আমি উসমান (রাঃ) -এর সফরসঙ্গী ছিলাম, তিনিও দু’ রাকআতের অধিক সালাত পড়েননি। এই অবস্থায় তারা ইন্তিকাল করেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মধ্যে অবশ্যি তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ” (সূরা আহ্যাব : ২১)। [১০৭১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) (উসামাহ) বলেন, আমি তাঊসকে সফরে নফল সালাত পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। তখন হাসান বিন মুসলিম বিন ইয়ানাকও তার নিকট বসা ছিল। তিনি বলেন, তাঊস (রহ:) আমাকে বললেন যে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুকীম অবস্থার ও সফরকালের সালাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অতএব আমরা মুকীম ও মুসাফির অবস্থায় ফার্দ সলাতের আগে-পরে নফল সালাত পড়তাম। [১০৭২]
মুসাফির কোন জনপদে অবস্থান করলে কত দিন সালাত কসর করবে?
সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করলাম, মক্কায় অবস্থানকারীর সম্পর্কে আপনি কি শুনেছেন? তিনি বলেন আমি আলা’ ইবনুল হাদরামি (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তাওয়াফে সদরের পর মুহাজির তিন দিন সালাত কসর করবে। [১০৭৩] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহাজ্জ মাসের চার তারিখ ভোরে মক্কায় উপনীত হন। [১০৭৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মক্কায়) ঊনিশ দিন অবস্থান করেন এবং দু’ রাকআত করে (ফার্দ) সালাত পড়েন। অতএব আমরা যখন ঊনিশ দিন অবস্থান করতাম, তখন দু’ রাকআত করে (ফার্দ) সালাত পড়তাম এবং তার অধিক দিন অবস্থান করলে পূর্ণ চার রাকআতই পড়তাম। [১০৭৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের বছর তথায় পনেরো দিন অবস্থান করেন এবং সালাত কসর করেন। [১০৭৬] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে মাদীনাহ থেকে মাক্কাহয় রওয়ানা হলাম। আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত দু’ রাকআত করে (ফার্দ) সালাত আদায় করেছি। রাবী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কত দিন মক্কায় অবস্থান করেন? আনাস (রাঃ) বলেন, দশ দিন। [১০৭৭]
সালাত ত্যাগকারীর বিধান।
জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বান্দা ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত বর্জন। [১০৭৮] বুরায়দাহ (ইবনুল হুসায়ব বিন আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস) (রাঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফেরদের) মধ্যে যে অংগীকার রয়েছে তা হলো সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে কুফরী করলো। [১০৭৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মু’মিন বান্দা ও শিরক-এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সালাত বর্জন করা। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো, সে অবশ্যই শিরক করলো। [১০৮০]
জুমাআহ্র সালাত ফার্দ।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই আল্লাহ নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিক্রের মাধ্যেমে তোমাদের রবের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে। তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআহ্র সালাত ফার্দ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার জীবদ্দশায় বা আমার ইনতিকালের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআহ্র সালাত তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, আল্লাহ তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না এবং তার কাজে বরকত দান করবেন না। সাবধান! তা সালাত, যাকাত, হাজ্জ, সওম এবং অন্য কোন নেক আমার গ্রহণ করা হবে না যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে আল্লাহর তাআলা তার তওবা কবুল করেন। সাবধান! নবী পুরুষের, বেদুইন মুহাজিরের এবং পাপাচারী মু’মিন ব্যক্তির ইমামতি করবে না। তবে স্বৈরাচারী শাসক তাকে বাধ্য করলে এবং তার তরবারি ও চাবুকের ভয় থাকলে স্বতন্ত্র কথা। [১০৮১] আবদুর রহমান বিন কা‘ব বিন মালিক তিনি বলেন, আমার পিতা (কা‘ব বিন মালিক) (রাঃ) অন্ধ হয়ে গেলে আমি ছিলাম তার পরিচালক। আমি তাকে নিয়ে যখন জুমুআহ্র সালাত আদায় করতে বের হতাম, তিনি আযান শুনলেই আবূ উমামাহ আসআদ বিন যুরারাহ্ (রাঃ) এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং দুআ’ করতেন। আমি তাকে ক্ষমা প্রার্থনা ও দুআ’ করতে শুনে কিছুক্ষণ থামলাম, অতঃপর মনে মনে বললাম, আল্লাহর শপথ! কি বোকামী! তিনি জুমুআহ্র আযান শুনলেই আমি তাকে আবূ উমামাহ (রাঃ) -এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দুআ’ করতে শুনি, অথচ আমি তাকে তার কারণ জিজ্ঞেস করিনি? আমি তাকে নিয়ে যেমন বের হতাম, তদ্রুপ একদিন তাঁকে নিয়ে জুমুআহ্র উদ্দেশে বের হলাম। তিনি যখন আযান শুনলেন তখন তা অভ্যাস মাফিক ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে পিতা! জুমুআহ্র আযান শুনলেই আমি কি আপনাকে দেখি না যে, আপনি আসআদ বিন যুরারাহ্ (রাঃ) এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তা কেন? তিনি বলেন, প্রিয় বৎস! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাক্কাহ থেকে (মাদীনাহয়) আসার পূর্বে তিনিই সর্বপ্রথম বনূ বাইয়াদার প্রস্তরম সমতল ভূমিতে অবস্থিত নাকীউল খাযামাত-এ আমাদের নিয়ে জুমুআহ্র সালাত পড়েন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা তখন কতজন ছিলেন? তিনি বলেন, চল্লিশজন পুরুষ। [১০৮২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমুআহ্র সলাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ববর্তীদের পথভ্রষ্ট করেছেন। ইহূদীদের জন্য ছিল শনিবার এবং খ্রিস্টানদের জন্য রবিবার। কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত তারা হবে আমাদের পশ্চাদগামী। আমরা পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে সর্বশেষ আগমনকারী, কিন্তু সৃষ্টিকুলের বিচার অনুষ্ঠানের দিক থেকে হবো সর্বপ্রথম। [১৯৮৩]
জুমুআহর সলাতের ফাদীলাত।
আবূ লুবাবাহ বিন আবদুল মুনযির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমুআহ্র দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের নেতা এবং তা আল্লাহ্র নিকট অধিক সম্মানিত। এ দিনটি আল্লাহর নিকট কুরবানীর দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে অধিক সম্মানিত। এ দিনে রয়েছে। এ দিনে রয়েছে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যঃ এ দিন আল্লাহ আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করেন, এ দিনই আল্লাহ তাঁকে পৃথিবীতে পাঠান এবং এ দিনই আল্লাহ তাঁর মৃত্যু দান করেন। এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন বান্দা তখন আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন, যদি না সে হারাম জিনিসের প্রার্থনা করে এবং এ দিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে। নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, আসমান-যমীন, বায়ু, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সবই জুমুআহ্র দিন শংকিত হয়। [১০৮৪] আওস বিন আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমাআহর দিন। এ দিন আদম (আ.) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং তাতে বিকট শব্দ হবে। অতএব তোমরা এ দিন আমার উপর প্রচুর পরিমানে দুরূদ পাঠ করো। তোমাদের দুরূদ অবশ্যই আমার নিকট পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! কিভাবে আমাদের দুরূদ আপনার নিকট পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো অচিরেই মাটির সাথে একাকার হয়ে যাবেন? তিনি বলেন, আল্লাহ নবীগণের দেহ ভক্ষণ মাটির জন্য হারাম করেছেন। [১০৮৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক জুমুআহ পরবর্তী জুমাআহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ, যদি না কবীরা গুনাহ করা হয়। [১০৮৬]
জুমুআহ্র দিন গোসল করা।
আওস বিন আওস আস-সাকাফী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমাআহ্র দিন (স্ত্রী সহবাসজনিত) গোসল করলো এবং নিজে গোসল করলো এবং সকাল সকাল যানবাহন ছাড়া পদব্রজে মাসজিদে এসে ইমামের কাছিাকাছি বসলো, মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে খুতবাহ শুনলো এবং অনর্থক কিছু করলো না, তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের সওম রাখ ও তার রাত জেগে সালাত পড়ার সমান নেকী রয়েছে। [১০৮৭] ইবনু ইমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ্র সালাত আদায় করতে আসে সে যেন গোসল করে। [১০৮৮] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমুআহ্র দিন প্রত্যেক বালেগ ব্যক্তির গোসল করা কর্তব্য। [১০৮৯]
জুমুআহ্র দিনের গোসল ঐচ্ছিক।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযু করে জুমুআহ্র সলাতে এসে ইমামের নিকটবর্তী হয়ে বসলো এবং নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনলো, তার এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহ্র মধ্যবর্তী সময়ের এবং আরও তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। আর যে ব্যক্তি কংকর স্পর্শ করলো, সে অনর্থক কাজ করলো। [১০৯০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআহ্র দিন উযু করলো, সে উত্তম কাজই করলো এবং ফরয আদায়ের জন্য তা তার পক্ষে যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি গোসল করে, তবে গোসলই অধিক উত্তম। [১০৯১] তাহকীক আলবানীঃ ‘ফরয আদায়ের জন্য যথেষ্ট’- এ কথা ব্যতীত সহীহ।
সকাল সকাল জুমাআহ্র সালাত আদায় করতে যাওয়ার ফাদীলাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমুআহ্র দিন হলে মাসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতাগণ অবস্থান করেন এবং লোকেদের আগমনের ক্রমানুসারে তাদের নাম লিখেন। যেমন প্রথম আগমনকারীর নাম প্রথমে। ইমাম যখন খুতবাহ দিতে বের হন, তখন তারা তাদের নথি গুটিয়ে নেন এবং মনোযোগ সহাকারে খুতবাহ শোনেন। সলাতে প্রথম আগমনকারীর সাওয়াব একটি উট কুরবানীকারীর সমান, তারপরে আগমনকারীর নেকী একটি গরুর কুরবানীকারীর সমান, তারপর আগমনকারীর নেকী একটি মেষ কুরবানীকারীর সমান, একনকি তিনি মুরগী ও ডিমের কথা উল্লেখ করেন। সাহ্ল বিন আবূ সাহ্লের রিওয়ায়তে আরো আছেঃ এরপর যে ব্যক্তি আসে, সে কেবল সালাত পড়ার নেকী পায়। [১০৯২] সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র সলাতে সকাল সকাল আগমনের একটি উদাহরণ দেনঃ যেমন উট কুরবানীকারী, গরু কুরবানীকারী, বকরী কুরবানীকারী, এমনকি তিনি মুরগী পর্যন্ত উল্লেখ করেন। [১০৯৩] আলকামাহ আমি আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর সাথে জুমুআহ্র সালাত আদায় করতে বের হলাম। তিনি মাসজিদে গিয়ে তিন ব্যক্তিকে দেখেন যে, তারা তার আগে এসেছে। তিনি বলেন, চারজনের মধ্যে (আমি) চতুর্থ। তবে চারজনের মধ্যে চতুর্থ ব্যক্তি খুব দূরে নয়। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকেরা আল্লাহর সামনে বসবে জুমুআহ্র সলাতে তাদের আগমনের ক্রমানুসারেঃ প্রথম আগন্তুক, দ্বিতীয় আগন্তুক, তৃতীয় আগন্তুক, চতুর্থ আগন্তুক এভাবে। তিনি বলেন, চারজনের চতুর্থ। আর চারজনের মধ্যে চতুর্থজন খুব দূরে নয়। [১০৯৪]
জুমুআহ্র দিন বেশভূষা অবলম্বন করা।
আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) তিনি জুমুআহ্র দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিম্বারের উপর বলতে শুনছেনঃ তোমরা যদি তোমাদের কাজকর্মের পেশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহ্র দিনের জন্য আরো দুটি পরিধেয় বস্ত্র ক্রয় করতে। ১/১০৯৫ (১) . আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন ...... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [১০৯৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমাআহ্র দিন লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি তাদেরকে দৈনন্দিনের পোশাক পরিহিত দেখেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে কি তার কামকর্মের পোশাকদ্বয় ছাড়া জুমুআহ্র সলাতের জন্য আরো একজোড়া পোশাক গ্রহণ করতে পারে না? [১০৯৬] আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআহ্র দিন উত্তমরূপে গোসল করে, উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তার উৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করে এবং আল্লাহ তার পরিবারের জন্য যে সুগন্ধির ব্যবস্থা করেছেন, তা শরীরে লাগায়, এরপর জুমুআহ্র সলাতে এসে অনর্থক আচরণ না করে এবং দু’জনের মাঝে ফাঁক করে অগ্রসর না হয়, তার এক জুমুআহ থেকে পরবর্তী জুমুআহ্র মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহমসূহ ক্ষমা করা হয়। [১০৯৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ এই দিনকে মুসলিমদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমুআহ্র সালাত আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। [১০৯৮]
জুমুআহ্র সলাতের ওয়াক্ত।
সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জুমুআহ্র সালাত পড়ার পরেই দুপুরের আহার করতাম এবং বিশ্রাম নিতাম। [১০৯৯] সালামাহ বিন আমর ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে জুমুআহ্র সালাত পড়ে ফেরার সময় দেয়ালের এতটুকু ছায়াও দেখতাম না যার ছায়া আমরা গ্রহণ করতে পারি। [১১০০] সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে সূর্য পশ্চিমাকাশে জুতার ফিতার ন্যায় ঢলে পড়ার পর আযান দিতেন। [১১০১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জুমুআহ্র সালাত পড়ে ফিরে আসার পর দুপুরের বিশ্রাম করতাম। [১১০২]
জুমুআহ্র দিনে খুতবা।
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জুমুআহ্র সলাতের) দু’টি খুতবাহ দিতেন এবং দু’ খুতবাহ্র মাঝখানে কিছুক্ষণ বসতেন। বিশর (রাঃ) -এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তিনি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন। [১১০৩] আমর বিন হুরায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে দেখেছি। [১১০৪] জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন। তবে তিনি একবার কিছুক্ষণ বসতেন, অতঃপর (দ্বিতীয় খুতবাহ দিতে) দাঁড়াতেন। [১১০৫] জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন, তারপর (প্রথম খুতবাহ শেষে) বসতেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে কুরআনের আয়াত পড়তেন এবং আল্লাহ্র যিকির করতেন। তাঁর খুতবাহ ও সালাত দু’টোই ছিল নাতিদীর্ঘ। [১১০৬] সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধক্ষেত্রে খুতবাহ দিলে ধনুকে ভর করে খুতবাহ দিতেন এবং জুমুআহ্র খুতবাহ দিলে লাঠিতে ভর দিয়ে খুতবাহ দিতেন। [১১০৭] আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন, না বসে? তিনি বলেন, তুমি কি এ আয়াত পাঠ করোনিঃ “এবং তারা তোমাকে রেখে গেল দাঁড়ানো অবস্থায়” (সূরা জুমুআহঃ ১১)? [১১০৮] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উঠে সালাম দিতেন। হাসান। [১১০৯]
নীরবে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনতে হবে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমুআহ্র দিন ইমামের খুতবাহ দানকালে যখন তুমি তোমার সাথীকে বললে, ‘চুপ করো’ তখন তুমি অনর্থক কাজ করলে। [১১১০] উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র সলাতে (খুতবাহ দিতে) দাঁড়িয়ে সূরা তাবারাকা (মূল্ক) পাঠ করেন এবং আমাদের উদ্দেশে আল্লাহ্র দিনসমূহের ইতিহাস বর্ণনা করেন। আবূদ-দারদা’ অথবা আবূ যার (রাঃ) আমাকে খোঁচা মেরে বলেন, সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে? আমি তো তা এখনই শুনলাম। তিনি তার দিকে ইশারা করে বলেন, চুপ করুন। সাহাবীরা চলে গেলে তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম সূরাটি কখন নাযিল হয়েছে, অথচ আপনি আমাকে তা অবহিত করেননি? উবাই (রাঃ) বলেন, আজকে আপনার সালাত হয়নি, অনর্থক কাজই হয়েছে। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে বর্ণনা করেন এবং উবাই (রাঃ) যা বলেছেন, তাঁকে তাও অবহিত করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, উবাই ঠিকই বলেছেন। [১১১১]
ইমামের খুতবাহ দানকালে কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খুতবাহ দানকালে সুলাইক আল-গাতাফানী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করেন। তিনি বলেন, তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি দু’রাকাআত পড়ে নাও। রাবী আম্র বিন দীনারের বর্ণনায় সুলাইক (রাঃ) -এর নাম উল্লেখিত হয়নি। [১১১২] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খুতবাহ দানকালে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হলো। তিনি বলেন, তুমি কি সালাত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি দু’ রাকআত পড়ে নাও। [১১১৩] জাবির (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খুতবারত অবস্থায় সুলাইক আল-গাতফানী (রাঃ) এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, তুমি কি এখানে আসার পূর্বে দু’ রাকআত পড়েছ? সে বললো, না। তিনি বলেন, তুমি সংক্ষেপে দু’ রাকআত পড়ে নাও। [১১১৪] তাহকীক আলবানীঃ 'তুমি আসার পূর্বে' এ কথা ব্যতীত সহীহ্। এ কথাটি শায।
জুমুআহ্র দিন লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া নিষেধ।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) জুমুআহ্র দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। সে লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে দিকে যাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি বসো, তুমি (অন্যকে) কষ্ট দিয়েছ এবং অনর্থক কাজ করেছ। [১১১৫] মুআয বিন আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, বসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআহ্র দিন লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হয়েছে, (কিয়ামাতের দিন) তাকে জাহান্নামের পুল বানানো হবে। [১১১৬]
ইমামের মিম্বার থেকে নামার পর কথা বলা।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র দিন মিম্বার থেকে নেমে প্রয়োজনীয় কথা বলতেন। [১১১৭]
জুমুআহ্র সলাতের কিরাআত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) (উবায়দুল্লাহ) বলেন, মারওয়ান ইবনুল হাকাম, আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে মদিনায় তার স্থলাভিষিক্ত করে মাক্কাহয় যান। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাদের নিয়ে জুমুআহ্র দিন সালাত পড়লেন। তিনি প্রথম রাকআতে সূরা জুমুআহ এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইযা জাআকাল মুনাফিকূন’ পড়েন। উবায়দুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাত থেকে অবসর হলে আমি তাকে বললাম, আপনি এমন দু’টি সূরা পড়লেন, যা আলী (রাঃ) কূফায় পড়েছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ দু’টি সুরাহ পড়তে শুনেছি। [১১১৮] নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) (উবায়দুল্লাহ) বলেন, দহ্হাক বিন কায়স (রাঃ) নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) -কে লিখে পাঠান যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র সলাতে সূরা জুমুআহ্র সাথে আর কোন্ সূরা পড়তেন তা আপনি আমাদের অবহিত করুন। তিনি বলেন, তিনি বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ’ সূরা পড়তেন। [১১১৯] আবূ ইনাবাহ (আবদুল্লাহ বিন ইনাবাহ) আল-খাওলানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআহ্র সলাতে “সাব্বিহ ইসমা রব্বিকাল আলা” সূরা এবং ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ’ সূরা পড়তেন। [১১২০]
যে ব্যক্তি জুমুআর সলাতের এক রাকআত পেলো।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআর সলাতের এক রাকআত পেলো, সে যেন তার সাথে আরো এক রাকআত মিলায় (পড়ে)। [১১২১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সলাতের এক রাকআত পেলো, সে সালাত পেয়ে গেলো। [১১২২] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআর সলাতের বা অন্য সলাতের এক রাক’আত পেলো, সে (পূর্ণ) সালাত পেয়ে গেলো। [১১২৩]
জুমুআর সলাতের জন্য দূর থেকে আগমন।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কুবাবাসীগণ জুমুআর দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জুমুআর সালাত আদায় করতো। [১১২৪]
যে ব্যক্তি বিনা ওজরে জুমুআর সালাত ত্যাগ করলো।
আবূল জা’দ আদদমরী (রাঃ) তিনি সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অবহেলা করে একাধারে তিন জুমুআহ্ ত্যাগ করলো, তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়। [১১২৫] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অপ্রয়োজনে পরপর তিন জুমুআহ ত্যাগ করলো, আল্লাহ তার অন্তুরে মোহর মেরে দেন। [১১২৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শোন! তোমাদের কেউ বকরী চরাবার জন্য এক বা দু’ মাইল দূরে চলে গেল, অতঃপর সেখানে ঘাস না পেয়ে আরও দূরে চলে গেল, তারপর জুমুআর দিন এলো, কিন্তু সে এসে জুমুআর সলাতে উপস্থিত হলো না। তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, শেষে তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়। [১১২৭] সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় জুমুআর সালাত ত্যাগ করলো, সে যেন এক দীনার দান-খয়রাত করে। যদি সে তা না পায়, তাহলে যেন অর্ধ দীনার দান-খয়রাত করে। [১১২৮]
জুমুআর ফরয সলাতের পূর্বের সালাত (কাবলাল জুমুআহ্)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআর (ফরয) সলাতের পূর্বে চার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং তাতে মাঝখানে সালাম ফিরাতেন না। [১১২৯] তাহাকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
জুমুআর ফরয সলাতের পরের সালাত (বা’দাল জুমুআহ্)।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি জুমুআর (ফরয) সালাত পড়ার পর তার ঘরে এসে দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করতেন। [১১৩০] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআর (ফরয) সালাত পড়ার পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১১৩১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জুমুআর (ফরয) সলাতের পর আরো সালাত আদায় করতে চাইলে চার রাকআত (সুন্নাত) পড়বে। [১১৩২]
জুমুআর দিন সলাতের পূর্বে গোলাকার হয়ে বসা এবং ইমামের খুতবাহ দানকালে নিতম্বের উপর বসা।
আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআর দিন (ফরয) সালাত পড়ার পূর্বে মাসজিদে গোলাকার হয়ে বসতে নিষেধ করেছেন। [১১৩৩] আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, জুমুআর দিন ইমামের খুতবাহ দানকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিতম্বের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। [১১৩৪]
জুমুআর দিনের আযান।
সায়িব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে মাত্র একজন মুযাযযিন ছিল। তিনি যখন (খুতবাহ দিতে) বের হতেন, তখন সে আযান দিতো এবং তিনি যখন (মিম্বার থেকে) নামতেন, তখন সে ইকামাত দিতো। আবূ বাক্র ও উমার (রাঃ)-এর আমলেও এ নিয়মই চালু থাকে। উসমান (রাঃ)-এর আমলে মুসলিমদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি বাজারে অবস্থিত আয-যাওরা নামক স্থান থেকে তৃতীয় আযান দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর তিনি যখন বের হতেন, তখন মুয়াযযিন আযান দিতো এবং তিনি মিম্বার থেকে নামলে সে ইকামাত দিতো। [১১৩৫]
ইমামের খুতবাহ দানকালে তার দিকে মুখ করে বসা।
আদী বিন সাবিত, তার পিতা (সাবিত) [(আরবী) বা তার অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি] তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খুতবাহ দেয়ার জন্য) মিম্বারে উঠে দাঁড়ালে তাঁর সহাবীগন তাঁর দিকে তাদের মুখ ঘুরিয়ে বসতেন। [১১৩৬]
জুমুআর দিন দুআ’ কবূল হওয়ার একটি মুহূর্ত আছে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমুআর দিন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, কোন মুসলিম বান্দা সেই মুহূর্তে সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কল্যান প্রার্থনা করলে নিশ্চয়ই তিনি তাকে তা দান করেন। তিনি হাতের ইশারায় বলেন যে, সেই মুহূর্তটি খুবই সীমিত। [১১৩৭] আম্র বিন আওফ আল-মুযানী (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : জুমুআর দিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোন বান্দাহ আল্লাহ্র কাছে কিছু প্রার্থনা করলে তিনি তার প্রার্থিত বস্তু তাকে দান করেন। জিজ্ঞেস করা হলো : কোন মুহূর্ত? তিনি বলেন, সালাত শুরু হওয়ার মুহূর্ত থেকে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে (সেই মুহূর্তটি)। [১১৩৮] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান। আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, আমরা আল্লাহ্র কিতাবে জুমুআর দিনের এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মু’মিন বান্দা সালাতরত আবস্থায় আল্লাহ্র নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরন করেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃএক ঘন্টার সামান্য সময় মাত্র। আমি বললাম, আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘন্টার সামান্য সময়ই। আমি বললাম, সেটি কোন মুহূর্ত? তিনি বলেন, সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত। আমি বললাম, তা সলাতের সময় নয়? তিনি বললেন, হাঁ। মু’মিন বান্দা এক সালাত শেষ করে বসে বসে অন্য সলাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সলাতের মধ্যেই থাকে। [১১৩৯]
বারো রাকআত সুন্নাতের বর্ণনা।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত বারো রাকআত সুন্নাত সালাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। যোহরের (ফরজের) আগে চার রাকআত ও (ফরজের) পরে দু’ রাকআত, মাগরিবের (ফরজের) পরে দু’ রাকআত, ইশার (ফরজের) পর দু’ রাকআত এবং ফজরের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাকআত। [১১৪০] উম্মু হাবীবাহ বিনতু আবূ সুফইয়ান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দিনে বারো রাকআত (সুন্নাত) সালাত পড়লো, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়। [১১৪১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দৈনিক বারো রাকআত (সুন্নাত) সালাত পড়লো, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মান করা হয়। ফজরের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাকআত, যোহরের (ফরজের) পূর্বে দু’ রাকআত এবং পরে দু’ রাকআত। রাবী বলেন আমার ধারণা মতে তিনি বলেছেন, আসরের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাকআত, মাগরিবের (ফরযের) পরে দু’ রাকআত এবং আমার ধারণা মতে তিনি বলেছেন, ইশার (ফরযের) পরে দু’ রাক’আত। [১১৪২] তাহকীক আলবানী : হাদীসটি দঈফ; যুহরের পূর্বে ৪ রাকআত এই শব্দে সহীহ।
ফজরের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত সম্পর্কে।
ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুবহে সাদেক স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হওয়ার পর দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। [১১৪৩] তাহকীক আলবানী : সহীহ তবে হাদীসটি ইবনু উমার হাফসাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের আযান শোনামাত্র দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। [১১৪৪] উমার (রাঃ)-এর কন্যা হাফসাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতের আযান হওয়ার পরে এবং ফজর সালাত আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে হালকাভাবে (স্বল্প সময়ে) দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। [১১৪৫] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করার পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন, তারপর (ফারয্) সালাত পড়ার জন্য চলে যেতেন। [১১৪৬] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইকামতের কাছাকাছি সময় দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১১৪৭]
ফজরের ফরয সলাতের পূর্বের দু’ রাকআত সুন্নাত সলাতের কিরআত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ফরয সলাতের পূর্বেই দু’ রাকআত সুন্নাত সলাতে সূরাহ কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস পড়তেন। [১১৪৮] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একমাস যাবত ফজরের ফরয সলাতের পূর্বেকার দু’ রাকআত সুন্নাত সলাতে সূরাহ কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস তিলাওয়াত করতে দেখেছি (শুনেছি)। [১১৪৯] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের (ফরযের) পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতেন। তিনি বলতেন : এ দু’ রাকআত সলাতে কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস পড়া কতই না উত্তম! [১১৫০]
ইকামাত দেয়ার পর ফরয সালাত ব্যতীত অন্য সালাত পড়া যাবে না।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন ইকামাত দেয়া হয়, তখন ফরয সালাত ছাড়া অন্য কোন সালাত পড়া যাবে না। ১/১১৫১ (১). আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। [১১৫১] তাহকীক আলবানী : সহীহ। আবদুল্লাহ বিন সারজিস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফজরের) ফরয সালাত আদায়রত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে ফজরের সলাতের পূর্বে দু’ রাকআত সালাত আদায় করতে দেখেন। তিনি সালাত শেষে তাকে বলেন, তোমার দু’ সলাতের কোনটি হিসাব করলে? [১১৫২] আবদুল্লাহ বিন মালিক বিন বুহাইনাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতরত এক ব্যক্তিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তখন ফজরের সলাতের ইকামাত হয়ে গেছে। তিনি তাকে কী যেন বললেন যা আমি বুঝে উঠতে পারিনি। সে সালাত শেষ করলে আমরা তাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে কি বলেছেন? লোকটি বললো, তিনি আমাকে বললেনঃ অচিরেই তোমাদের কেউ ফজরে চার রাকআত (ফরয) পড়বে। [১১৫৩]
কারো ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত ছুটে গেলে সে তা কখন কাযা করবে?
কায়স বিন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে ফজরের সলাতের পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতে দেখে বলেন, ফজরের সালাত কি দু’বার? লোকটি তাঁকে বললো, আমি ফজরের পূর্বের দু’ রাকআত পড়তে পারিনি, সেই দু’ রাকআত পড়লাম। রাবী বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। [১১৫৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাকআত সুন্নাত না পরে ঘুমিয়ে রইলেন। তিনি সূর্যোদয়ের পর তা পড়লেন। [১১৫৫]
যোহরের ফরয সলাতের পূর্বের চার রাকআত সম্পর্কে।
কাবূস আমার পিতা আমাকে আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট জানতে পাঠান যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সালাত নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়তে পছন্দ করতেন? তিনি বলেন, তিনি যোহরের পূর্বে চার রাক’আত সালাত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়তেন এবং তার রুকূ‘-সাজদাহসমূহ উত্তমরূপে আদায় করতেন। [১১৫৬] আবূ আয়্যূব (খালিদ বিন যায়দ বিন কুলায়ব আনসারী) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে গেলে যোহরের (ফরযের) পূর্বে এক সালামে চার রাকআত (সুন্নাত) সালাত আদায় করতেন। তার মাঝে সালাম দিয়ে পার্থক্য করতেন না। তিনি বলতেন : সূর্য ঢলে গেলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [১১৫৭] তাহকীক আলবানী : ফসলের বাক্য ছাড়া সহীহ। [উক্ত হাদিসের মানের ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিন]
কারো যোহরের চার রাকআত সুন্নাত ছুটে গেলে।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের চার রাকআত সুন্নাত ছুটে গেলে, তিনি তা যোহরের দু’ রাকআত সুন্নাতের পর পড়তেন। [১১৫৮]
কারো যোহরের পরের দু’ রাকআত সুন্নাত ছুটে গেলে।
উম্মু সালামাহ (রাঃ) (আবদুল্লাহ) মুয়াবিয়া (রাঃ) এক ব্যক্তিকে উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। আমিও এই ব্যক্তির সাথে গেলাম। তিনি উম্মু সালামাহ (রাঃ)–কে (যোহরের দু’ রাকআত সুন্নাত সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে যোহরের সলাতের উযু করছিলেন। তিনি এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তার কাছে বহু সংখ্যক মুহাজির উপস্থিত হন। তাদের অবস্থা তাঁকে চিন্তান্বিত করেছিলেন। হঠাত ঘরের দরজায় আঘাত করা হলো। তিনি বেরিয়ে গেলেন এবং যোহরের সালাত পড়লেন। অতঃপর তিনি বসে আগত মাল বন্টন করতে লাগলেন। রাবী বলেন, এ অবস্থায় আসরের সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি আমার ঘরে প্রবেশ করে দু’ রাকআত সালাত পড়লেন, অতঃপর বললেনঃ যাকাত আদায়কারীর বিষয় আমাকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে যোহরের পরের দু’ রাকআত পড়া থেকে। আসরের পর সেই দু’ রাকআত পড়লাম। [১১৫৯]
যোহরের ফরয সলাতের আগে ও পরে যে ব্যক্তি চার রাকআত করে সুন্নাত সালাত পড়লো।
উম্মু হাবীবা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি যোহরের (ফারদের) আগে চার রাকআত এবং পরে চার রাকআত সালাত পড়লো, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। [১১৬০]
দিনের বেলা নফল সালাত পড়া উত্তম।
আসিম বিন দমরাহ আস-সালূলী তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিনের বেলার নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমরা তা করতে সমর্থ নও। আমরা বললাম, আপনি আমাদের সেই সম্পর্কে অবহিত করুন, আমরা তা থেকে আমাদের সাধ্যমত গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত পড়ার পর কিছুক্ষণ অবসর থাকতেন। অবশেষে সূর্য আসরের সময় পশ্চিমাকাশে যত উপরে থাকে, পূর্বাকাশে ঠিক ততটা উপরে উঠলে তিনি দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন, অতঃপর অবসর থাকতেন। অবশেষে পশ্চিম আকাশে সূর্য যতটা উপরে থাকলে যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে, পূর্বাকাশে সূর্য ঠিক ততখানি উপরে উঠলে তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করতো। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ার পর তিনি যোহরের (ফরয) সলাতের পূর্বে চার রাকআত এবং পরে দু’ রাকআত পড়তেন। তিনি আসরের পূর্বেও দু’ সালাম চার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং তার মাঝখানে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ, আম্বিয়া (আঃ) এবং তাদের অনুগত মু’মিন মুসলিমদের জন্য শান্তি ও স্বস্তি কামনা করতেন (তাশাহ্হুদ পড়তেন)। আলী (রাঃ) বলেন, এই হলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম)-এর দিনের বেলার ষোল রাকআত নফল সালাত। খুব কম লোকই তার উপর স্থায়ীভাবে আমাল করতে পারে। ওয়াকী (রহঃ) বলেন, আমার পিতা এতে আরো বলেছেন, হাবীব বিন আবূ সাবিত (রহঃ) বলেছেন, হে আবূ ইসহাক! আপনার এই হাদীসের পরিবর্তে এই মাসজিদ ভর্তি সোনা আমার মালিকানাভুক্ত হলে তাও আমার প্রিয় হতো না। [১১৬১]
মাগরিবের (ফরয সলাতের) পূর্বে দু’ রাকআত সালাত।
আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতি দু’ আযানের মধ্যবর্তী সময়ে একটা সালাত আছে। তিনি এই কথা তিনবার বলেন এবং তৃতীয়বারে বলেন, তবে যে চায় তার জন্য। [১১৬২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যমানায় মুআযযিন (মাগরিবের) আযান দিলে মনে হতো তা যেন ইকামাত। কারণ প্রচুর সংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে মাগরিবের আগে দু’ রাকআত সালাত আদায় করতো। [১১৬৩]
মাগরিবের ফরয সলাতের পরে দু’ রাকআত সালাত।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের (ফরয) সালাত পড়ার পর আমার ঘরে ফিরে এসে দু’ রাকআত সুন্নাত সালাত আদায় করতো। [১১৬৪] রাফি’ বিন খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আবদুল আশহাল গোত্রে আসলেন এবং আমাদেরসহ আমাদের মাসজিদে মাগরিবের সালাত পড়লেন। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা এই দু’ রাকআত তোমাদের বাড়িতে গিয়ে পড়বে। [১১৬৫]
মাগরিবের ফরয সলাতের পরের দু’ রাকআত (সুন্নাত) সলাতের কিরাআত।
আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের (ফরয) সলাতের পরের দু’ রাকআতে সূরাহ কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস পড়তেন। [১১৬৬]
মাগরিবের সলাতের পর ছয় রাকআত (আওয়াবীন) সালাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের সলাতের পর ছয় রাকআত নফল সালাত পড়লো এবং তার মাঝখানে কোন মন্দ কথা বলেনি, তাকে বারো বছরের ইবাদাতের সম-পরিমাণ নেকী দান করা হলো। [১১৬৭] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
বিত্রের সালাত।
খারিজা বিন হুযায়ফাহ আল-আদাবী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে এসে বলেন, নিশ্চই আল্লাহ একটি সালাত দ্বারা তোমাদের সাহায্য করেছেন। এটা তোমাদের জন্য অনেক লাল উটের চেয়েও উত্তম। তা হলো বিত্রের সালাত। আল্লাহ তোমাদের জন্য এটা ইশা ও ফজরের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [১১৬৮] তাহকীক আলবানী : ‘লাল উটের চেয়ে উত্তম’ কথাটি ছাড়া সহীহ। আসিম বিন দমরাহ আস-সালূলী তিনি বলেন, আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ), বলেছেন, নিশ্চই বিত্র বাধ্যতামূলক সালাত নয় এবং তোমাদের ফরয সলাতের সম-পর্যায়ভূক্তও নয়। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত আদায় করেছেন, অতঃপর বলেছেন, হে আহলে কুরআন! তোমরা বিত্রের সালাত পড়ো। নিশ্চই আল্লাহ বিত্র (বেজোড়), তিনি বিত্রকে ভালবাসেন। [১১৬৯] আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড় ভালোবাসেন। হে কুরআনের বাহকগণ! তোমরা বিত্র সালাত পড়ো। এক বেদুইন বললো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বললেন? রাবী বলেন, (তা) তোমার জন্য নয় এবং তোমার সাথীদের জন্যও নয়। [১১৭০]
বিত্র সলাতের কিরাআত।
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতে সূরাহ আলা, সূরাহ কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস পড়তেন। [১১৭১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতে সূরাহ আলা, সূরাহ কাফিরূন ও সূরাহ ইখলাস পড়তেন। ২/১১৭২ (১). ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [১১৭২] আবদুল আযীয বিন জুরায়জ [(আরবী) অর্থাৎ হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে দুর্বল] তিনি বলেন, আমরা আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতে কি (সূরা) পড়তেন? তিনি বলেন প্রথম রাকআতে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকআতে সূরাহ কাফিরূন, তৃতীয় রাকআতে সূরাহ ইখলাস ও মুআব্বিয়াতাইন (সূরাহ ফালাক ও নাস) পড়তেন। [১১৭৩]
বিত্রের সালাত এক রাকআত।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের সালাত দু’ দু’ রাকআত পড়তেন এবং এক রাকআত বিত্র পড়তেন। [১১৭৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের সালাত দু’ দু’ রাকআত করে এবং বিত্র সালাত এক রাকআত। (রাবী বলেন) আমি বললাম, আপনার কি মত, যদি আমার চোখকে (ঘুম) পরাভূত করে এবং আমি ঘুমিয়ে যাই? তিনি বলেন, তুমি এই তারকার দিকে লক্ষ্য করো। তখন আমি মাথা তুলে সিমাক (মৎস) তারকা দেখতে পেলাম। এরপর তিনি হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের সালাত দু’ দু’ রাকআত করে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বে বিত্র সালাত এক রাকআত পড়বে। [১১৭৫] মুত্তালিব বিন আবদুল্লাহ্ (তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদীস বর্ণনায় অধিক তাদলীস ও ইরসাল করেছেন) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলো, আমি কিভাবে বিত্র পড়বো? তিনি বললেন, তুমি এক রাকআত বিতর পড়বে। সে বলল, আমি আশংকা করি যে লোকেরা আমাকে শিকড় কাটা বলবে। তিনি বলেন, আল্লাহর সুন্নাত ও তাঁর রাসূলেরও। তিনি মনে করেন, এটাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত। [১১৭৬] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দু’ রাকআতে সালাম ফিরাতেন এবং বিতর এক রাকআত পড়তেন। [১১৭৭]
বিত্র সলাতে দুআ’ কুনূত।
হাসান বিন আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার নানা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিত্র সলাতের কুনূত পড়ার জন্য কতগুলো বাক্য শিক্ষা দিয়েছে : (আরবী) (আল্লাহুম্মা আফিনী ফীমান আফায়ত ওয়াতাওল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়ত, ওয়াহদীনী ফীমান হাদায়ত, ওয়াকীনী শাররা মা কদায়ত, ওয়া বারিকলী ফীমান আ’তায়ত, ইন্নাকা লা তাকদী আলায়ক, ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়ত, সুবহানাকা রব্বানা তাবারাকতা ওয়া তাআলায়ত।) অর্থ্যাৎ “হে আল্লাহ! যাদের প্রতি তোমার উদারতা প্রদর্শন করেছো, তাদের সাথে আমাকেও উদারতা প্রদর্শন করো, যাদের তুমি অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো, তাদের সাথে আমার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করো, যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছো তাদের সাথে আমাকেও হিদায়াত দান করো। তোমার নির্ধারিত অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমি আমাকে যা দান করেছো তাতে বরকত দাও। কেবল তুমিই নির্দেশ দিতে পারো, তোমার উপর কারো নির্দেশ চলে না। তুমি যার পৃষ্ঠপোষকতা দাও, সে কখনও অপমানিত হয় না। হে আমাদের রব! তুমি পবিত্র ,কল্যাণময় ও সুউচ্চ”। [১১৭৮] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতের শেষে বলতেন : (আরবী) (আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবি রিদাকা মিন সুখতিক, ওয়া আউযুবি মুআফাতিকা মিন উকূবাতিক, ওয়া আউযুবিকা মিনকা লা উহসী সানাআ আলায়ক, আনতা কামা আসনায়তা আলা নাফসিক) অর্থ্যাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির উসীলায় আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই, আপনার ক্ষমার উসীলায় আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাই, আপনার সৌন্দর্যময় গুনাবলীর উসীলায় আপনার মহিমময় গুণাবলী থেকে আশ্রয় পাই, আমি আপনার প্রশংসা গণনা করে শেষ করতে পারি না, আপনি আপনার প্রশংসারই অনুরূপ”। [১১৭৯]
যে ব্যক্তি দুআ’ কুনুতে তার হস্তদ্বয় উঠায় না।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিসকার সালাত ব্যতিত তাঁর অন্য কোন দুআয় তাঁর দু’হাত উঠাতেন না (হাত তুলে মোনাজাত করতেন না)। তিনি ইস্তিসকার সলাতে এতটা উপরে হাত উঠাতেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দৃষ্টিগোচর হতো। [১১৮০]
যে ব্যক্তি দুআয় নিজের হাত উঠায় এবং তার মুখমন্ডলে মাসহ করে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি আল্লাহর নিকট দুআ’ করলে তোমার দু’ হাতের তালু উপরে তুলে দুআ’ করবে, তার পিঠ তুলে দুআ’ করবে না এবং দুআ’ শেষে উভয় হাত তোমার মুখমন্ডলে মাসহ করবে। [১১৮১]
রুকূর আগে বা পরে দুআ কুনূত পড়া।
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সালাত আদায় করতেন এবং রুকূর আগে দুআ’ কুনূত পড়তেন। [১১৮২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, ফজরের সলাতে দুআ’ কুনূত পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, আমরা (কখনো) রুকূ‘র আগে বা (কখনো) রুকূ‘র পরে দুআ’ কুনূত পড়তাম। [১১৮৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) আনাস বিন মালিক (রাঃ)-কে দুআ’ কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ‘র পরে দুআ’ কুনূত পড়েছেন। [১১৮৪]
শেষ রাতে বিত্র সালাত পড়া।
মাসরূক তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্রের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তিনি প্রতি রাতেই বিত্র সালাত আদায় করতেন, কখনো রাতের প্রথম ভাগে, কখনো রাতের মধ্যভাগে, কখনো শেষভাগে। ইনতিকালের পূর্বে তিনি রাতের শেষভাগ পর্যন্ত তা বিলম্বিত করতেন। [১১৮৫] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে বিত্র সালাত আদায় করতেন, কখনো রাতের প্রথমভাগে, কখনো রাতের মধ্যভাগে এবং কখনো শেষভাগে তাঁর বিত্র পড়তেন। [১১৮৬] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ শেষরাতে জাগতে পারবে না বলে আশংকা করলে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিত্র পড়ে নেয়, অতঃপর ঘুমায়। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রাতের শেষভাগে সালাত পড়ার আশা করে সে যেন শেষরাতে বিত্র পড়ে। কেননা শেষ রাতের কিরআত (শুনার জন্যে ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়। তাই তা অধিক উত্তম। [১১৮৭]
যে ব্যক্তি বিত্র সালাত না পড়ে ঘুমালো অথবা ভুলে গেলো।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিত্র সালাত না পড়ে ঘুমিয়ে গেলো বা তা পড়তে ভুলে গেলো, সে যেন ভোরবেলা অথবা যখন তার স্মরণ হয় তখন তা পড়ে নেয়। [১১৮৮] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ভোরে উপনীত হওয়ার আগেই বিত্র সালাত পড়ো। মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, এই হাদীস প্রমাণ করে যে আবদুর রহমানের রিওয়ায়াত (১১৮৮) দুর্বল বিধায় আমালযোগ্য নয়। [১১৮৯]
বিত্র সালাত তিন, পাঁচ, সাত বা নয় রাকআত।
আবূ আয়্যূব আল-আনসারী (রাঃ) রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিত্র সালাত সত্য। অতএব কেউ চাইলে তা পাঁচ রাকআতও পড়তে পারে, তিন রাকআতও পড়তে পারে এবং এক রাকআতও পড়তে পারে। [১১৯০] সা‘দ বিন হিশাম তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞস করলাম, হে মু’মিনগণের মাতা! আপনি আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্র সালাত সম্পর্কে ফতোয়া দিন। তিনি বলেন, আমরা তাঁর জন্য মিসওয়াক ও উযুর পানি প্রস্তুত রাখতাম। আল্লাহ যখন চাইতেন তখন তাঁকে রাতের ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি ওঠে মিসওয়াক করতেন ও উযু করতেন, অতঃপর নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাতে তিনি কেবল অষ্টম রাকআতেই বসতেন এবং তাঁর প্রতিপালকের নিকট দুআ’ করতেন, আল্লাহর যিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তাঁকে ডাকতেন, অতঃপর বসতেন এবং আল্লাহর যিকির করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন, তাঁর প্রভুর নিকট দুআ’ করতেন এবং তাঁর নবীর উপর দরূদ পড়তেন, অতঃপর আমাদের শুনিয়ে সালাম ফিরাতেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি বসা অবস্থায় দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। এভাবে এগারো রাকআত সালাত হতো। অতঃপর রসূলুল্লাহর বয়স বেড়ে গেলে এবং তাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাকআত বিত্র পড়তেন এবং সালাম ফিরানোর পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১১৯১] উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাত বা পাঁচ রাকআত বিত্র সালাত আদায় করতো এবং এর মাঝখানে সালাম ফিরাতেন না, কথাও বলতেন না। [১১৯২]
সফরে বিত্রের সালাত পড়া।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে দু’ রাকআত (ফরয) সালাত আদায় করতেন তার চেয়ে বেশী পড়তেন না। আর তিনি তাহাজ্জুদ সালাতও পড়তেন। আমি বললাম, তিনি কি বিত্র সালাত আদায় করতেন? তিনি বলেন, হাঁ। [১১৯৩] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান। ইবনু আব্বাস ও ইবনু উমার (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে দু’ রাকআত সালাত প্রবর্তন করেন। এই দুই রাকআতই পূর্ণ সালাত, কসর নয়। সফরে বিত্রের সালাত সুন্নাত। [১১৯৪] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
বিত্রের সলাতের পর বসে দু’ রাকআত নামায পড়া।
উম্মু সলামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্রের সলাতের পর বসা অবস্থায় হালকাভাবে দু’ রাকআত (নফল) সালাত আদায় করতেন। [১১৯৫] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাকআত বিত্র পড়তেন। অতঃপর তিনি বসা অবস্থায় দু’ রাকআত নফল সালাত আদায় করতেন, তাতে কিরআতও বসে পড়তেন। তিনি রুকূ‘ করতে ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে যেতেন, তারপর রুকূ‘ করতেন। [১১৯৬]
বিত্র ও ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত পড়ার পর কাত হয়ে শুয়ে থাকা।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের শেষভাগে আমার পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় পেয়েছি। ওয়াকী‘ (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ বিত্রের সালাত পড়ার পর। [১১৯৭] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাকআত (সুন্নাত) পড়ার পর তাঁর ডান কাতে ভর করে শুয়ে থাকতেন। [১১৯৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাকআত (সুন্নাত) সালাত পড়ার পর কাত হয়ে শুয়ে থাকতেন। [১১৯৯]
বাহনের উপর বিত্র সালাত পড়া।
সাঈদ বিন ইয়াসার তিনি বলেন, আমি (সফরে) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। আমি পিছনে পড়ে বিত্র সালাত পড়ে নিলাম। তিনি বলেন, তোমাকে কিসে পেছনে ফেলেছে? আমি বললাম, আমি বিত্রের সালাত আদায় করেছি। তিনি বলেন, তোমার জন্য কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে অনুসরণীয় আদর্শ নেই? আমি বললাম, হাঁ, আছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের পিঠে বিত্রের সালাত আদায় করতেন। [১২০০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাহনের উপর বিত্রের সালাত আদায় করতেন। [১২০১]
রাতের প্রথম ভাগে বিত্র সালাত পড়া।
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন : তুমি কখন বিত্রের সালাত পড়ো? তিনি বলেন, ইশার সলাতের পরে, রাতের প্রথম ভাগে। তিনি বলেন, হে উমার! তুমি কখন? তিনি বলেন, রাতের শেষ ভাগে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে আবূ বাক্র! তুমি তো মজবুত নীতির উপর আছো। আর হে উমার! তুমি দৃঢ় সংকল্পের উপর আছো। ১/১২০২ (১). ইবনু উমার (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে বলেন, ........ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [১২০২] তাহকীক আলবানী : হাসান সহীহ।
সলাতের মধ্যে ভুল হলে (সাহু সাজদাহ)।
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়লেন এবং তাতে বেশী অথবা কম করলেন (ইবরাহীম বলেন, সন্দেহ আমার হয়েছে)। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! সলাতে কি কিছু বাড়ানো হয়েছে? তিনি বলেন, আমি তো একজন মানুষই, আমিও বিস্মৃত হই, যেমন তোমরা বিস্মৃত হও। অতএব তোমাদের কেউ (সলাতে) বিস্মৃত হলে সে যেন বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ করে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোড় ঘুরে দু’টি সাজদাহ করলেন। [১২০৩] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে বলেন, আমাদের কেউ সালাত পড়লো কিন্তু সে যে কত রাকআত পড়লো তা মনে করতে পারছে না। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাত পড়লো কিন্তু সে যে কতো রাকআত পড়লো তা মনে করতে না পারলে বসা অবস্থায় যেন দু’টি সাজদাহ করে। [১২০৪]
যে ব্যক্তি ভুলবশত যোহরের সালাত পাঁচ রাকআত পড়লো।
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের সালাত পাঁচ রাকআত পড়লেন। তাঁকে বলা হলো, সলাতে কি বাড়ানো হয়েছে? তিনি বলেন, তা কিভাবে? অতএব তাঁকে (বুঝিয়ে) বলা হলে তিনি পা ঘুরিয়ে নিয়ে দু’টি সাজদাহ করেন। [১২০৫]
যে ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকআতে (না বসে) ভুলে দাঁড়িয়ে গেলো।
বিন বুহায়নাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়লেন। (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তা ছিল যোহরের (বা আসরের) সালাত। দ্বিতীয় রাকআতে না বসে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। শেষে তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টি সাজদাহ করলেন। [১২০৬] ইবনু বুহায়নাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যোহরের দ্বিতীয় রাকআতে বসতে ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যান। সলাত শেষে তিনি সালাম ফিরানোর আগে দু’টি সাহু সাজদাহ করেন এবং সালাম ফিরান। [১২০৭] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ দ্বিতীয় রাকাতের পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে এবং তখনও যদি তার দাঁড়ানো সম্পূর্ণ না হয়, তবে সে যেন বসে যায়। আর যদি সে পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে যায় তবে সে যেন না বসে এবং (শেষে) দুটি সাহু সাজদাহ করে। [১২০৮]
কোন ব্যক্তির সলাতে সন্দেহ হলে সে ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিবে।
আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো সলাতের এক ও দু’ রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে এক রাকআত গণ্য করে। তার দু’ ও তিন রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে দু’ রাকআত গণ্য করে। আর তিন ও চার রাকআতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন তাকে তিন রাকআত গণ্য করে, তারপর অবশিষ্ট সলাত পূর্ণ করে, যাতে সন্দেহটা অতিরিক্ত সলাতে হয়। অতঃপর সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে, বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ করে। [১২০৯] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো সলাতের মধ্যে তার সন্দেহ হলে সে যেন সন্দেহ পরিহার করে প্রবল ধারণার উপর ভিত্তি করে। প্রবল ধারণার ভিত্তিতে সলাত শেষ করার পর দু’টি (সাহু) সাজদাহ করবে। এই অবস্থায় যদি তার সলাত আগেই পূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে (ধারণার ভিত্তিতে পড়া) অতিরিক্ত রাকআতটি হবে নফল। আর যদি সলাত (আগেই) অপূর্ণ থেকে থাকে তাহলে ঐ রাকআতটি হবে তার সলাত পূর্ণ করার সহায়ক এবং সাজদাহ দু’টি হবে শয়তানের জন্য নাকে খত দেয়ার মত অপ্রীতিকর। [১২১০]
সলাতের মধ্যে কোন ব্যক্তির সন্দেহ হলে সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চিন্তা করবে।
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ওয়াক্তের সলাত পড়লেন। আমরা বুঝতে পারলাম না যে, তিনি বেশি পড়লেন নাকি কম পড়লেন। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা তাঁকে (অনুমানে) বললাম। তিনি তাঁর পা ঘুরিয়ে কিবলামুখী হয়ে দুটি সাজ়দাহ করেন, অতঃপর সালাম ফিরান। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে (বসে) বলেন, সলাতে নতুন কিছু ঘটলে অবশ্যই আমি তা তোমাদের অবহিত করতাম। অবশ্যই আমি একজন মানুষ; আমিও বিস্মৃত হই, যেমন তোমরা বিস্মৃত হও। অতএব আমি বিস্মৃত হলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে। তোমাদের কারো সলাতের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হলে সে যেন চিন্তা করে। আর এটাই যথার্থতার অধিক নিকটবর্তী। সে তার ভিত্তিতে সলাত পূর্ণ করবে, সালাম ফিরাবে এবং দু’টি সাজদাহ করবে। [১২১১] আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো সলাতের মধ্যে সন্দেহ হলে সে যেন সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চিন্তা করে (ভেবে দেখে), অতঃপর দু’টি সাজদাহ করে। আত-তানাফিসী (রহঃ) বলেন, এটি একটি মূলনীতি যা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কেউ রাখে না। [১২১২]
ভুল করে কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাকআতে সালাম ফিরালে।
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুলবশত দ্বিতীয় রাকআতে সালাম ফিরালে যুল-ইয়াদাইন (রাঃ) নামক এক ব্যক্তি তাঁকে বলেন,হে আল্লাহর রসূল! সলাত কি কমানো হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? তিনি বলেন, কমানোও হয়নি এবং আমি ভুলেও যাইনি। তিনি (যুল-ইয়াদাইন) বলেন, তাহলে আপনি দু’ রাকআত পড়েছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ যুল-ইয়াদায়ন যা বলেছে ঘটনা কি তাই? সাহাবীগণ বলেন, হাঁ। অতএব তিনি অগ্রসর হয়ে দু’ রাকআত সলাত পড়ে সালাম ফিরালেন, অতঃপর দু’টি সাহু সাজদাহ করলেন। [১২১৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে রাতের কোন এক ওয়াক্তের সলাত দু’ রাকআত পড়লেন, অতঃপর সালাম ফিরালেন, অতঃপর উঠে গিয়ে মাসজিদের একটি কাঠের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। লোকেরা এই বলতে বলতে দ্রুত বেরিয়ে গেলো যে, সলাত হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। লোকেদের মধ্যে আবূ বকর ও উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। কিন্তু তারা এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করতে সংকোচবোধ করেন। লোকেদের মধ্যে যুল-ইয়াদাইন নামে লম্বা হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! সলাত কি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে, না আপনি বিস্মৃত হয়েছেন? তিনি বলেন, সলাত হ্রাসপ্রাপ্তও হয়নি এবং আমি ভুল করিনি। যুল-ইয়াদাইন বলেন, আপনি যে দু’ রাকআত পড়েছেন! তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ যুল-ইয়াদাইন যা বলেছে তা কি ঠিক? তারা বলেন, হাঁ, রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে দু; রাকআত সলাত পড়ে সালাম ফিরালেন, অতঃপর দুতি সাজদাহ করলেন এবং পুনরায় সালাম ফিরালেন। [১২১৪] ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সলাত তিন রাকআত পড়ার পর সালাম ফিরান, অতঃপর উঠে গিয়ে হুজরায় প্রবেশ করেন। খিরবাক নামক লম্বা হাতবিশিষ্ট এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেন, হে আল্লাহর রসূল! সলাত কি কমানো হয়েছে? তিনি বিসন্ন অবস্থায় তাঁর পরিধেয় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বেরিয়ে এসে (বিষয়টি সম্পর্কে) জিজ্ঞেস করেন। তাঁকে অবহিত করা হলে তিনি (ভুলে) পরিত্যক্ত রাকআতটি পড়েন, অতঃপর সালাম ফিরান, অতঃপর দু’টি সাজদাহ করে পুনরায় সালাম ফিরান। [১২১৫]
সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টি সাজদাহ সাহু সম্পর্কে
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো সলাতে রত থাকা অবস্থায় তার নিকট নিশ্চই শয়তান আসে, অতঃপর তার ও তার অন্তরের মধ্যখানে প্রবেশ করে। অবশেষে সে স্মরণ করতে পারে না যে, সে (সলাত) বেশি পড়েছে না কম পড়েছে। এরূপ অবস্থা হলে সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সাজ়দাহ করে অতঃপর সালাম ফিরায়। [১২১৬] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী বলেন, নিশ্চয় শয়তান আদম সন্তান ও তার অন্তরের মধ্যখানে প্রবেশ করে। ফলে সে স্মরণ করতে পারে না যে, সে কত রাকআত পড়েছে। তার এরূপ অবস্থা হলে সে যেন সালাম ফিরানোর পূর্বে দু’টি সাজদাহ করে। [১২১৭]
যে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাহু সাজদাহ করে।
ইবনু মাসাঊদ (রাঃ) সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাহু সাজদাহ করেছেন এবং তিনি বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করেছেন।[১২১৮] সাওবান (বিন বুজাদ্দাদ আল-হাশিমী) (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রতিটি ভুলের জন্য সালাম ফিরানোর পর দু’টি সাজদাহ করতে হবে।[১২১৯]
শুরু করা সলাতের ভিত্তি ঠিক রাখা।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে বের হয়ে এসে তাকবীরে তাহরীমা করার পর তাদের প্রতি ইশারা করলে তারা স্বঅবস্থায় অপেক্ষা করেন। অতঃপর তিনি চলে গিয়ে গোসল করেন। তিনি তাঁর মাথা থেকে পানি টপকানো অবস্থায় ফিরে এসে তাদের সাথে সলাত পড়েন। সলাতশেষে তিনি বলেন, আমি তোমাদের নিকট নাপাক অবস্থায় বের হয়ে এসেছিলাম, আমি তা ভুলে গিয়েছিলাম, এমনকি সলাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম। [১২২০] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সলাতরত অবস্থায় কারো বমি হলে, নাক দিয়ে রক্ত বের হলে, খাদ্য বা পানীয় পেট থেকে মুখে চলে এলে অথবা বীর্যরস নির্গত হলে, সে যেন বাইরে এসে ওজু করে, অতঃপর পূর্বোক্ত সলাতের অবশিষ্টাংশ পূর্ণ করে, উক্ত অবস্থায় যদি সে কথা না বলে থাকে। [১২২১]
সলাতরত অবস্থায় কারো ওজু ছুটে গেলে সে কিভাবে বের হয়ে যাবে।
আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো সালাতরত অবস্থায় ওজু ছুটে গেলে সে যেন তার নাক ধরে বের হয়ে যায়। [১২২২] ১/১২২২ (১). আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [১২২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
রুগ্ন ব্যক্তির সলাত
ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ভগন্দর রোগে আক্রান্ত ছিলাম। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ অবস্থায় সলাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তুমি দাঁড়ানো অবস্থায় সলাত পড়ো,তাতে সমর্থ না হলে বসে পড়ো, তাতেও সমর্থ না হলে কাত হয়ে শুয়ে সলাত পড়। [১২২৩] ওয়ায়িল বিন হুজুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর ডান পায়ের উপর বসে সলাত আদায় করতে দেখেছি। [১২২৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ জিদ্দান।
বসা অবস্থায় নফল সলাত পড়া।
উম্মু সালামাহ (হিন্দ বিনতু আবূ উমায়্যাহ ইবনুল মুগীরাহ) (রাঃ) তিনি বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ যিনি তাঁর জান নিয়েছেন, তিনি ( (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) মৃত্যুর কাছাকাছি সময়ে তাঁর অধিকাংশ (নফল) সলাত বসা অবস্থায় পড়তেন। তাঁর কাছে অধিক পছন্দনীয় আমল ছিল তাই যা বান্দা নিয়মিত করতে পারে তা পরিমাণে কম করে হলেও। [১২২৫] আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নফল সলাতের কিরাআত বসা অবস্থায় পড়তেন। অতঃপর তিনি যখন রুকূ‘ করার ইচ্ছা করতেন তখন কোন লোকের চল্লিশ আয়াত পরিমাণ পড়ার মত সময় কিয়াম করতেন (দাঁড়িয়ে থাকতেন)। [১২২৬] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বয়স ভারী না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাতের সালাত দাঁড়িয়েই পড়তেন। অতঃপর তিনি বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতে থাকেন। শেষে যখন তাঁর চল্লিশ বা তিরিশ আয়াত পরিমাণ বাকি থাকতো তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন, অতঃপর তা পড়া শেষ করে সাজদাহয় যেতেন। [১২২৭] আয়িশা (রাঃ) (আবদুল্লাহ্) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের সালাত সম্পর্কে আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তিনি কখনও দীর্ঘ রাত ধরে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতো, আবার কখনও দীর্ঘ রাত ধরে বসে সালাত আদায় করতো। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় কিরাআত পাঠ করলে রুকূ‘ ও দাঁড়ানো অবস্থায় করতেন এবং বসা অবস্থায় কিরাআত পড়লে রুকূ‘ও বসা অবস্থায় করতেন। [১২২৮]
বসা অবস্থায় পড়া সলাতের নেকী দাঁড়ানো অবস্থায় পড়া সলাতের অর্ধেক।
আবদুল্লাহ বিন আম্র (ইবনুল আস) (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় তিনি বসা অবস্থায় সালাত পড়ছিলেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বসে সালাত পড়ে তার নেকী, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত পড়ে তার অর্ধেক। [১২২৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এসে কিছু সংখ্যক লোককে বসা অবস্থায় সালাত আদায় করতে দেখেন। তিনি বলেন, বসে সালাত আদায়কারির সলাতের নেকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর সলাতের অর্ধেক। [১২৩০] ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) যে ব্যক্তি বসে সালাত পড়ে তার সম্পর্কে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাস করেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত পড়ে সে অধিক উত্তম। আর যে ব্যক্তি বসে সালাত পড়ে তার নেকী দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক। আর যে ব্যক্তি শোয়া অবস্থায় সালাত পড়ে তার নেকী বসা অবস্থায় সালাত আদায়কারীর অর্ধেক। [১২৩১]
রোগাক্রান্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মৃত্যুব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায় বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সলাতের কথা অবহিত করেন। তিনি বলেন, তোমরা আবূ বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকদের সালাত পড়ান। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আবূ বাকর (রাঃ) নরম দিলের লোক। যখনই তিনি আপনার স্থানে দাঁড়াবেন তখনই কেঁদে ফেলবেন এবং (সালাত পড়াতে) সক্ষম হবেন না। অতএব আপনি যদি উমার (রাঃ)-কে নির্দেশ দিতেন তাহলে তিনি লোকেদের সালাত পড়াতেন। তিনি বলেন, তোমরা আবূ বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকেদের সালাত পড়ান। তোমরা (মু’মিন জননীগণ) যেন ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গিনীগনের অনুরূপ। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠালে তিনি লোকেদের নিয়ে সালাত পড়া শুরু করেন। ইত্যবসরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকে একটু হালকা (সুস্থ) বোধ করলে দু’ ব্যক্তির কাঁধে ভর করে মাটিতে তাঁর পদদ্বয় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে সালাত আদায় করতে রওয়ানা হন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর আগমন টের পেয়ে পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশারা করে তাকে স্বস্থানে স্থির থাকতে বলেন। রাবী বলেন, তিনি (মাসজিদে) এসে পৌঁছলে সাহায্যকারীদ্বয় তাঁকে আবূ বাকর (রাঃ) এর পাশে বসিয়ে দেন। আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইকতিদা করলেন এবং লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-এর ইকতিদা করে। [১২৩২] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রোগগ্রস্ত অবস্থায় আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন লোকেদের সালাত পড়ান। অতএব তিনি তাদের সালাত পড়াচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা হালকা (সুস্থতা) বোধ করলেন। অতএব তিনি বের হলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) লোকেদের ইমামতি করছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে পেছনে হটতে উদ্যোগী হন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারা করে স্বস্থানে থাকতে বলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-এর ঠিক বামে বসলেন। আবূ বকর (রাঃ) তাঁর ইমামতিতে সালাত পড়েন এবং লোকেরা আবূ বকর (রাঃ)-এর ইমামতিতে সালাত পড়ে। [১২৩৩] সালিম বিন উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর অসুস্থ অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে পড়লেন, অতঃপর হুঁশ ফিরে পেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন : সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে কি? তারা বললেন, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে নির্দেশ দাও এবং আবূ বাক্রকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দাও। তিনি আবার সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন, অতঃপর সংজ্ঞা ফিরে পেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন : সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে কি? লোকেরা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবূ বাক্রকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দাও। তিনি পুনরায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। তিনি সংজ্ঞা ফিরে পেলে জিজ্ঞেস করেন : সলাতের ওয়াক্ত হয়েছে কি? লোকেরা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবূ বাক্রকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দাও। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার পিতা নরম দিলের মানুষ। তিনি যখন ঐ স্থানে দাঁড়াবেন তখন কেঁদে দিবেন এবং (কিরাআত পড়তে) সক্ষম হবেন না। অতএব আপনি যদি অপর কাউকে নির্দেশ দিতেন। তিনি পুনরায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। অতঃপর সংজ্ঞা ফিরে পেলে তিনি বলেন, বিলালকে আযান দিতে এবং আবূ বাক্রকে লোকেদের নিয়ে সালাত আদায় করতে নির্দেশ দাও। তোমরা হলে ইউসুফ (আঃ)-এর সঙ্গী বা সঙ্গিনী। রাবী বলেন, বিলাল (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি আযান দেন এবং আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দেয়া হলে তিনি লোকেদের নিয়ে সালাত পড়েন। ইত্যবসরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুটা হালকা বোধ করলে বলেন, দেখো তো আমার ভর দিয়ে যাওয়ার মত কাউকে পাওয়া যায় কিনা। বারীরা (রাঃ) ও অপর এক ব্যক্তি এলে তিনি তাদের উপর ভর করে (মাসজিদে যান)। আবূ বকর (রাঃ) তাঁকে দেখতে পেয়ে পিছনে সরতে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁকে ইশারায় স্বস্থানে স্থির থাকতে বলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আবূ বকর (রাঃ)-এর পাশে বসেন। আবূ বাকর (রাঃ) তার সালাত শেষ করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন। আবূ আবদুল্লাহ্ (ইমাম ইবনু মাজাহ) বলেন, এ হাদীসটি গরীব। নাস্র বিন আলী ব্যতীত আর কেউ এটি বর্ণনা করেননি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, তোমরা আলীকে আমার নিকট ডেকে আনো। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আবূ বাক্রকেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, তাকেও ডেকে আনো। হাফসা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা উমারকেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, তাকেও ডাকো। উম্মুল ফাদল (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আব্বাস (রাঃ)-কেও আপনার নিকট ডেকে আনি? তিনি বলেন, হাঁ। তারা একত্র হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা উত্তোলন করে তাকান এবং নিশ্চুপ থাকেন উমার (রাঃ) বলেন, তোমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে উঠে যাও। অতঃপর বিলাল (রাঃ) এসে তাঁকে সালাত সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আবূ বাক্রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকদের নিয়ে সালাত পড়েন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আবূ বকর (রাঃ) নরম দিলের লোক, তিনি কিরাআত পড়তে সক্ষম হবেন না, তিনি আপনাকে দেখতে না পেলেই কেঁদে ফেলবেন এবং লোকেরাও কেঁদে ফেলবে। অতএব আপনি যদি উমার (রাঃ)-কে লোকেদের সালাত পড়াবার নির্দেশ দিতেন! আবূ বকর (রাঃ) বেরিয়ে এসে লোকেদের সাথে নিয়ে সালাত শুরু করলেন। ইত্যবসরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হালকা বোধ করলেন এবং দু’জন লোকের উপর ভর করে তাঁর দু’ পা মাটিতে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন। লোকেরা তাকে দেখতে পেয়ে সুবহানাল্লাহ বলে আবূ বকর (রাঃ)-কে সতর্ক করলো। তিনি পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারা করে স্বস্থানে থাকতে বলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে তার ডান পাশে বসলেন এবং আবূ বকর (রাঃ) দাঁড়ালেন। আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইকতিদা করলেন এবং লোকেরা আবূ বাকর (রাঃ)-এর ইকতিদা করলো। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবূ বকর (রাঃ) যে পর্যন্ত কিরাআত পড়েছিলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারপর থেকে কিরাআত শুরু করেন। ওয়াকী‘ (রাঃ) বলেন, এটাই সুন্নাত। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এই রোগেই ইনতিকাল করেন। [১২৩৫]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতেরই একজনের পিছনে সালাত পড়েন।
মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুপস্থিত ছিলেন। আমরা সম্প্রদায়ের নিকট যখন পৌঁছলাম তখন আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) লোকেদের এক রাকআত পড়ানো শেষ করেছেন মাত্র। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত অনুভব করে তিনি পেছনে সরে যেতে উদ্যোগী হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সালাত পড়ে শেষ করতে ইশারা করেন। (সালাত শেষে) তিনি বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছো। তুমি এমনটিই করবে। [১২৩৬]
ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগাক্রান্ত হলে তাঁর কতক সহাবী তাঁকে দেখতে এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা অবস্থায় সালাত পড়লেন, কিন্তু তারা তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে সালাত পড়লেন। তিনি তাদেরকে ইশারা করে বসতে বলেন। তিনি সালাত শেষে বলেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরন করার জন্য। অতএব তিনি রুকূ‘তে গেলে তোমরাও রুকূ‘তে যাও, তিনি মাথা তুললে তোমরাও মাথা তোল এবং তিনি বসে সালাত পড়লে তোমরাও বসে সালাত পড়ো (বুখারী, নং ৩৫৪)। [১২৩৭] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়ার পিঠ থেকে নিক্ষিপ্ত হলে তাঁর ডান পার্শ্বদেশ আহত হয়। আমরা তাঁকে দেখতে গেলাম। সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেলে তিনি বসা অবস্থায় আমাদের সালাত পড়ান এবং আমরাও তাঁর পেছনে বসা অবস্থায় সালাত পড়ি। তিনি সালাত শেষ করে বলেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো, তিনি যখন রুকূ‘ করেন, তোমরাও রুকূ‘ করো, তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তোমরা বলো, ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্দ’। তিনি যখন সাজদাহ করেন, তোমরাও সাজদাহ করো এবং তিনি যখন বসা অবস্থায় সালাত পড়েন, তোমরাও সকলে বসা অবস্থায় সালাত পড়ো। [১২৩৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয় তাকে অনুসরণ করার জন্য। অতএব তিনি যখন তাকবীর বলেন, তোমরাও তাকবীর বলো, তিনি যখন রুকূ‘তে যান, তোমরাও রুকূ‘তে যাও, তিনি যখন সামিআল্লাহু লিমান হামিদা বলেন, তোমরা তখন ‘রাব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ’ বলো, তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় সালাত পড়লে তোমরাও দাঁড়ানো অবস্থায় সালাত পড়ো এবং তিনি বসা অবস্থায় সালাত পড়লে তোমরাও বসা অবস্থায় সালাত পড়ো। [১২৩৯] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি বসা অবস্থায় (ইমামতি করেন), আমরা তাঁর পিছনে সলাত পড়লাম, আবূ বকর (রাঃ) লোকদের শুনানোর জন্য উচ্চকন্ঠে তাঁর তাকবীরের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি আমাদের দিকে লক্ষ্য করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি ইশারা করলে আমরা বসে পড়লাম এবং বসা অবস্থায় তাঁর সাথে সলাত পড়লাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে বললেনঃ তোমরা প্রায় পারস্য ও রোমবাসীদের মত কাজ করে ফেলেছিলে। তাদের নেতারা বসা থাকতো এবং তারা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো, কিন্তু তোমরা তা করো না। তোমরা তোমাদের ইমামদের অনুসরণ করো। তিনি দাঁড়িয়ে সলাত পড়লে তোমরাও দাঁড়িয়ে সলাত পড়ো এবং তিনি বসে সলাত পড়লে তোমরাও বসে সলাত পড়ো। [১২৪০]
ফজরের সলাতে দুআ’ কুনুত পড়া প্রসঙ্গে।
আবূ মালিক আল-আশজাঈ সা’দ বিন তারিক আমি আমার পিতা তারিক বিন আশইয়াম বিন মাস্ঊদ (রাঃ) কে বললাম, হে পিতা! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ), উমার (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)-এর পিছনে সলাত আদায় করেছেন। তাঁরা কি ফজরের সলাতে দুআ’ কুনূত পড়তেন? তিনি বললেন, হে বৎস! এটা তো বিদয়াত। [১২৪১] উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতে দুআ’ কুনূত পড়তে নিষেধ করেছেন। [১২৪২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সলাতে দুআ’ কুনূত পড়তেন। এতে তিনি আরবের কতক গোত্রকে এক মাস ধরে অভিসম্পাত করেছিলেন, অতঃপর তা ত্যাগ করেন। [১২৪৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সলাতে (রুকূ’ থেকে) মাথা তুলে বললেনঃ “হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনুল ওয়ালীদ, সালামাহ বিন হিশাম, আইয়াশ বিন আবূ রবীআ ও মাক্কাহর অসহায় মুসলিমদের নাজাত দিন। হে আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর আপনার নিপীড়ন জোরদার করুন এবং তাদের উপর ইউসুফ (আঃ)-এর সময়কার দুর্ভিক্ষের মত কয়েক বছরের দুর্ভিক্ষ কার্যকর করুন”। [১২৪৪]
সলাতের অবস্থায় সাপ ও বিছা হত্যা করা।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতরত অবস্থায় ও দু’টি কালো প্রানী হত্যার নির্দেশ দিয়েছেনঃ বিছা ও সাপ। [১২৪৫] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সলাতরত অবস্থায় একটি বিছা দংশন করে। তিনি বলেন, আল্লাহ বিছাকে অভিশপ্ত করুন, সে সলাতী ও অসলাতী কাউকেই ছাড়ে না। তোমরা একে হারাম শরীফে ও তার বাইরে সর্বত্র হত্যা করো। [১২৪৬] আবূ রাফি (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত অবস্থায় একটি বিছা হত্যা করেন। [১২৪৭]
ফাজর ও আসর সলাতের পর কোন সালাত পড়া নিষিদ্ধ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন : ফজরের সলাতের পর সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত এবং আসরের সলাতের পর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। [১২৪৮] আবূ সাঈদ আল-খুদরি (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আসরের সলাতের পর সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন সালাত নাই এবং ফজরের সলাতের পর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন সালাত নাই। [১২৪৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে কয়েকজন সন্তোষভাজন ব্যক্তি বলেছেন, উমার (রাঃ)-ও তাদের অন্তর্ভুক্ত এবং উমার (রাঃ)-ই আমার অধিক সন্তোষভাজন ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফজরের সলাতের পড় থেকে সূর্য উঠার পূর্ব পর্যন্ত কোন সালাত নাই এবং আসরের সলাতের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কোন সালাত নাই। [১২৫০]
যে সকল সময় সালাত পড়া মাকরূহ।
আম্র বিন আবাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম, এমন কোন সময় আছে কি, যা আল্লাহর নিকট অন্য সময়ের তুলনায় অধিক প্রিয়? তিনি বলেন, হাঁ, মধ্যরাত। অতএব তুমি পারলে তখন থেকে ভোর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সালাত পড়ো; অতঃপর (ফজরের সালাত পড়ে) সূর্য উদিত হয়ে তা কিছুটা উপরে না উঠা পর্যন্ত বিরত থাক। অতপর তুমি পারলে খুঁটি তার ছায়ার উপর স্থির হওয়ার পূর্ব (দ্বিপ্রহর)পর্যন্ত সালাত আদায় করতে পার। অতঃপর সূর্য ঢলে না পড়া পর্যন্ত (সালাত পড়া থেকে) বিরত থাক। কেননা ঠিক দুপুরে জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। অতঃপর তুমি পারলে তোমার আসরের সালাত পড়ার পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করতে পারো। অতঃপর সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিরত থাকো। কেননা তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্য দিয়ে অস্ত যায় এবং উদিত হয়। [১২৫১] তাহকীক আলবানী : ‘মধ্য রাতের কথা’ কথাটি ছাড়া সহীহ, কারন মুনকার। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, সাফওয়ান বিন মুআত্তাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞাসা সুরে বলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি এমন একটি বিষয় আপনার নিকট জিজ্ঞেস করতে চাই যে সম্পর্কে আপনি জ্ঞাত কিন্তু আমি অজ্ঞ। তিনি বলেন, তা কি? তিনি বলেন, রাত ও দিনের সময়সমূহের মধ্যে এমন সময়ও কি আছে যখন সালাত পড়া মাকরূহ? তিনি বলেন, হাঁ। তুমি ফজরের সালাত পড়ার পর থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্য্ন্ত (নফল) সালাত পড়া ত্যাগ করো। কারণ তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদিত হয়। অতঃপর তুমি সালাত পড়ো। এই সলাতে (ফেরেশতাগণ) উপস্থিত হয় এবং (ইবাদাত) কবূল করা হয়, (তা পড়তে পারো) যাবত না সূর্য তীরের মত তোমার মাথার উপরে এসে সোজা হয়। যখন সূর্য তীরের মত তোমার মাথার উপর স্থির হয় তখন সালাত পড়া ত্যাগ করো। কারন এসময় জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয় এবং দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, যাবত না সূর্য তোমার ডান ভ্রূ দিয়ে ঢলে পড়ে। তা ঢলে পড়ার পর থেকে তোমার আসরের সালাত পড়ার পূর্ব পর্যন্ত (সময়ে নফল) সলাতে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন এবং তা কবূল করা হয়। অতঃপর তুমি সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্য্ন্ত সালাত ত্যাগ কর। [১২৫২] আবূ আবদুল্লাহ আস-সুনাবিহী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, নিশ্চয় সূর্য শায়তানের দু’ শিং-এর মধ্যখান দিয়ে উদিত হয় অথবা তার সাথে শায়তানের দু’ শিং ও উদিত হয়। সূর্য উপরে উঠলে তা থেকে সে পৃথক হয়ে যায়। আবার সূর্য যখন আসমানের মধ্যখানে আসে তখন সে তার সামনে আসে। সূর্য যখন ঢলে যায় তখন সে পৃথক হয়ে যায়। আবার যখন তা অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি আসে তখন সে তার সামনে এসে যায়। অতঃপর তা অস্তমিত হলে সে আবার পৃথক হয়ে যায়। অতএব তোমরা এ তিন সময়ে (নফল) সালাত পড়ো না। [১২৫৩]
যে কোন সময়ে মাক্কাহ শরীফে সালাত পড়ার অনুমতি আছে।
যুবায়র বিন মুতইম (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবদে মানাফের বংশধর! কোন ব্যক্তি দিনের অথবা রাতের যে কোন সময় ইচ্ছা এই ঘর তাওয়াফ করলে বা এখানে সালাত পড়লে তোমরা তাকে বাধা দিও না। [১২৫৪]
নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্ব করে সালাত পড়া সর্ম্পকে।
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অচিরেই হয়ত তোমরা এমন সব লোকের সাক্ষাত পাবে যারা নির্দিষ্ট ওয়াক্তে সালাত না পড়ে ভিন্ন ওয়াক্তে তা পড়বে। তোমরা তাদের সাক্ষাৎ পেলে নিজেদের ঘরে তোমাদের প্রসিদ্ধ ওয়াক্তে সালাত পড়ে নিও, অতঃপর তাদের সাথে (জামাআতে) তা পড়ে নিও এবং একে নফলরূপে গণ্য করো। [১২৫৫] আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি সলাতের নির্দিষ্ট ওয়াক্তে তা পড়ে নাও। অতঃপর ইমামকে লোকেদের নিয়ে সালাতরত পেলে তুমিও তাদের সাথে সালাত পড়ো। তুমি আগে সালাত না পড়ে থাকলে এটা তোমার সেই সালাত হবে, অন্যথায় তা হবে তোমার জন্য নফল। [১২৫৬] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অচিরেই এমন সব শাসকের আবির্ভাব হবে যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে সালাতকে তার ওয়াক্ত থেকে বিলম্বিত করবে। অতএব তোমরা তাদের সাথে (জামাআতে) তোমাদের নফল সালাত পড়ো। [১২৫৭]
সলাতুল খাওফ বা (শংকাকালীন) সালাত।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওফ (শংকাকালীন সালাত) সম্পর্কে বলেছেন, ইমাম তার সাথের একদল লোকসহ সালাত পড়বে, তারা (তার সাথে) এক রাকআত সালাত পড়বে এবং অপর দল তাদের ও তাদের শত্রুদের মধ্যে প্রতিরোধ বজায় রাখবে। অতঃপর আমীরের সাথে এক রাকআত পড়া দলটি (প্রতিরক্ষা ব্যূহে) চলে যাবে এবং যে দলটি সালাত পড়েনি তাদের স্থানে অবস্থান নিবে এবং সালাত না পড়া দলটি অগ্রসর হয়ে তাদের আমীরের সাথে এক রাকআত সালাত পড়বে। অতঃপর তাদের আমীর তার সালাত পূর্ণ করে চলে যাবে এবং পূর্বোক্ত দু’টি দল পৃথক পৃথকভাবে আরো এক রাকআত সালাত পড়ে নিবে। যদি অধিক সন্ত্রস্ত অবস্থা বিরাজ করে তবে পদাতিক অবস্থায় বা অশ্বারোহী অবস্থায় (যেভাবে সম্ভব) সালাত পড়ে নিবে। রাবী বলেন, এখানে সাজদাহ দ্বারা রাকআত বুঝানো হয়েছে। [১২৫৮] সাহল বিন আবূ হাসমা (রাঃ) তিনি সলাতুল খাওফ সম্পর্কে বলেন, ইমাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন, তাদের একদলও তার সাথে (সলাতে) দাঁড়াবে এবং অপর দল শত্রুর প্রতিরোধে থাকবে এবং তাদের দৃষ্টি থাকবে কাতারের দিকে। তিনি তাদেরকে নিয়ে এক রাকআত পড়বেন, অতঃপর তারা স্বতন্ত্রভাবে দু’ সাজদাহয় এক রাকআত পড়বেন তাদের স্থানে। অতঃপর তারা পূর্বোক্ত দলের স্থানে ফিরে যাবে এবং তারা এসে গেলে তিনি তাদেরকে নিয়ে দু’ সাজদাহয় আরো এক রাকআত পড়বেন। এতে তার হবে দু’ রাকআত আর লোকেদের হবে এক রাকআত। অতঃপর তারা দু’ সাজদাহয় এক রাকআত পড়বেন। ২/১২৫৯ (১). সাহল বিন আবূ হাসমা (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে ইয়াহইয়া বিন সা‘ঈদের হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। রাবী (মুহাম্মাদ বিন বাশ্শার) বলেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আমাকে বললেন, এ হাদীস ও এক কোণায় লিখে নাও। আমি হাদীসটি মুখস্ত রাখতে পারিনি কিন্তু তা ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল-আনসারীর হাদীসের অনুরূপ। [১২৫৯] তাহকীক আলবানী : সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায় করেন। তিনি তাঁর নিকটস্থ সকলকে নিয়ে রুকূ‘ করেন এবং অন্যরা দাঁড়িয়ে থাকে। প্রথম দল সাজদাহ করে অবসর হলে দ্বিতীয় দল স্বতন্ত্রভাবে দু’ টি সাজদাহ করে। অতঃপর প্রথম দল পিছনে সরে গিয়ে পূর্বোক্ত দলের স্থানে অবস্থান নেয় এবং শেষোক্ত দল সামনে অগ্রসর হয়ে (জামাআতে) প্রথম দলের স্থানে এসে দাঁড়ায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকটস্থ সকলকে নিয়ে রুকূ‘ করেন এবং সাজদাহ করেন। তারা সাজদাহ থেকে অবসর হলে দ্বিতীয় দল দু’টি সাজদাহ করে। তাদের প্রতিটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক রাকআত সালাত পড়ে এবং পৃথকভাবে এক রাকআত পড়ে, তখন শত্রুবাহিনী তাদের সম্মুখভাগে ছিল। [১২৬০]
সলাতুল কুসূফ (সূর্যগ্রহণের সালাত)
আবূ মাসউদ (উকবাহ বিন আমর বিন সা’লাবাহ) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানবজাতির মধ্যে কারো মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। অতএব তোমরা তা দেখলে সলাতে দাঁড়িয়ে যাও। [১২৬১] নু’মান বিন বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে সূর্যগ্রহণ হয়। তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর পরিধেয় বস্ত্র হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে মাসজিদে এসে পৌঁছেন। গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সলাতে রত থাকেন অতঃপর তিনি বলেন, এক দল লোক ধারণা করে যে, কোন মহান নেতার মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে। আসলে তা নয়। কারো মৃত্যু অথবা জীবিত থাকার কারণে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোন সৃষ্টির উপর তাজাল্লী বিস্তার করেন তখন তা তাঁর ভয়ে ভীত হয়। [১২৬২] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ হলে তিনি বের হয়ে মাসজিদে চলে যান। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমা বলেন এবং লোকজন তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ কিরাআত পড়েন, অতঃপর তাকবীর বলে দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, অতঃপর মাথা তুলে “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ” বলেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে দীর্ঘ কিরাআত পড়েন, তবে তা ছিল পূর্বের কিরাআতের তুলনায় কম দীর্ঘ। অতঃপর তাকবীর বলে রুকূ‘তে গিয়ে দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে তা পূর্বের রুকূ‘র চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রব্বানা ওয়ালাকাল হাম্দ” বলেন। তিনি দ্বিতীয় রাকআতেও তাই করেন। তিনি মোট চার রাকআত সালাত পড়েন এবং তাঁর সালাত শেষ করার পূর্বেই সূর্যগ্রহণ সমাপ্ত হয়। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে লোকেদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি আল্লাহ তাআলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করার পর বলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নির্দেশসমূহের অন্তর্ভূক্ত দু’টি নিদর্শন। কারো জীবন-মৃত্যুতে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা তা দেখলে ভীত-সম্ভস্ত হয়ে সলাতে রত হও। [১২৬৩] সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে নিয়ে সূর্যগ্রহণের সালাত পড়লেন। আমরা তাঁর (কিরাআতের) কোন শব্দ শুনতে পাইনি। [১২৬৪] আসমা’ বিনতু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণের সালাত পড়েন। তাতে তিনি দীর্ঘ কিয়াম করেন, দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, রুকূ‘ থেকে উঠেও দীর্ঘ কিয়াম করেন, পুনরায় দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, অতঃপর মাথা তোলেন, অতঃপর সাজদাহয় গিয়ে দীর্ঘ সাজদাহ করেন, অতঃপর মাথা তোলেন, আবার দীর্ঘ সাজদাহ করেন, অতঃপর উঠে দীর্ঘ কিয়াম করেন, অতঃপর রুকূ‘তে গিয়েও দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘তে থাকেন, অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় সাজদাহ্য় গিয়ে দীর্ঘক্ষণ সাজদাহ্য় থাকেন। অতঃপর সালাত শেষ করে বলেন, জান্নাত আমার নিকটবর্তী হলো, এমনকি আমি ইচ্ছা করলে হাত বাড়িয়ে তার ফলগুচ্ছ আহরণ করে তোমাদের জন্য নিয়ে আসতে পারতাম। অনুরূপভাবে জাহান্নাম আমার নিকটবর্তী হলো, এমনকি আমি বললাম, হে প্রভু! আমি তাদের মধ্যে থাকতেও (কি তাদের শাস্তি দেয়া হবে)? নাফি‘ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি একথাও বলেছেন, আমি এক নারীকে দেখলাম যে, তার একটি বিড়াল তাকে নখর দ্বার আঁচড় কাটছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তার এ অবস্থা কেন? ফেরেশতারা বলেন, সে একে আটক করে রেখেছিল, অবশেষে অনাহারে এটি মারা যায়। সে একে আহারও দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি, যাতে জমিনের কীট-পত্যঙ্গ খেতে পারতো। [১২৬৫]
ইস্তিস্কার (বৃষ্টি প্রার্থনার) সালাত
ইবনু আব্বাস (রাঃ) (ইসহাক) বলেন, কোন এক শাসক ইসতিসকার সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য আমাকে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পাঠান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, সরাসরি আমার নিকট জিজ্ঞেস করতে তাকে কিসে বাধা দিলো। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিনয়ী ও নম্রভাবে, সাধারণ পোশাক পরে ভীত বিহাল হয়ে রওয়ানা করে ধীর পদে (মাঠে) পৌঁছে দু’ রাকআত সালাত পড়লনে, যে ভাবে তিনি ঈদের সালাত পড়েন। কিন্তু তিনি তোমাদের এই খুতবাহ্র ন্যায় খুতবাহ দেননি। [১২৬৬] আবদুল্লাহ বিন যায়দ বিন আসিম (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ইসতিসকার সালাত পড়ার জন্য মাঠে রওয়ানা হলেন। তিনি (মাঠে পৌঁছে) কিবলামুখী হন, তাঁর চাদর উল্টিয়ে পরেন এবং দু’ রাকআত সালাত পড়েন। ২/১২৬৭ (১). আবদুল্লাহ বিন যায়দ বিন আসিম (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। সুফ্ইয়ান মাসঊদী (রাঃ) বলেন, আমি আবূ বাক্র বিন মুহাম্মাদকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি তাঁর পোশাকের উপরিভাগ নিচে করেছিলেন, না ডান দিক বাঁ দিকে করেছিলেন? তিনি বলেন, না, বরং ডান দিক বাঁ দিকে করেছিলেন। [১২৬৭] তাহকীক আলবানী : মাসঊদীর (আরবী) কথা ব্যতীত সহীহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিন বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য রওয়ানা হলেন। তিনি আমাদেরকে সাথে নিয়ে আযান ও ইকামাত ব্যতীত দু’ রাকআত সালাত পড়েন, অতঃপর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবাহ দিলেন, তাঁর মুখমণ্ডল কিবলামুখী করে তাঁর উভয় হাত উপরে তুলে আল্লাহর নিকট দুআ’ করেন এবং তাঁর চাদর উলোটপালট করে পরেন, চাদরের ডান দিক বামে এবং বাম দিন ডানে আনেন। [১২৬৮]
ইসতিসকার সলাতের দুআ’।
শুরাহবীল ইবনুস সিমত তিনি কা‘ব বিন মুররাহ (রাঃ)-কে বলেন, হে কা‘ব বিন মুররাহ! আমাদের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করুন এবং সতর্কতা অবলম্বন করুন। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্র নিকট বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু’হাত তুলে দুআ’ করেন : “আল্লাহুম্মা আসকিনা গাইছান মারী’আন মারী’আন তবাকান আজিলান গাইরা রাইছিন নাফিআন গাইরা দাররিন” (হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বৃষ্টির পানি দান করুন যা সুপেয়, ফসল উৎপাদক, পর্যাপ্ত, বিলম্ব নয়, অবিলম্বে, উপকারী এবং ক্ষতিকর নয়)। কা‘ব (রাঃ) বলেন, জুমুআর সালাত শেষ না হতেই বৃষ্টি হয়ে গেলো। পড়ে লোকেরা তাঁর নিকট এসে অতিবৃষ্টির অভিযোগ করলো এবং বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! বাড়িঘর ধ্বসে যাচ্ছে। তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের উপর নয়, আমাদের আশেপাশে বর্ষিত হোক। রাবী বলেন, তৎক্ষণাৎ মেঘমালা টুকরা টুকরা হয়ে ডানে-বামে সরে গেলো। [১২৬৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক বেদুইন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি অবশ্যি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট থেকে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছি যাদের রাখালদের পর্যাপ্ত আহারের সংস্থান নেই, এমনকি তারা তাদের চতুস্পদ জন্তুর বেঁচে থাকার আশাও ত্যাগ করেছে। তিনি সালাত পড়লেন অতঃপর মিম্বারে উঠে আল্লাহ্র প্রশংসা করলেন, অতঃপর দুআ’ বললেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদেরকে সাহায্যকারী বৃষ্টির পানি দান করুন যা সুপেয়, পর্যাপ্ত, ফসল উৎপাদক, প্রচুর, অবিলম্বে, বিলম্বে নয়”। অতঃপর তিনি মিম্বার থেকে নামলেন। অতঃপর যে সকল লোকই তাঁর নিকট এসেছে তারাই বলেছেন, আমাদের এখানে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে। [১২৭০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃষ্টিপাতের জন্য দুআ’ করলেন, এমনি আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা (উপরে হাত তোলার কারণে) দেখতে পাই। অধস্তন রাবী মু’তামির (রাঃ) বলেন, আমার মতে তিনি ইসতিসকার সলাতে এভাবে দুআ’ করেন। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কখনও কখনও আমার কবির কবিতা স্মরণ হতো এবং আমি মিম্বারের উপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা মোবারকের দিকে লক্ষ্য নিবদ্ধ করে রাখতাম। তিনি মিম্বার থেকে অবতরণ না করতেই মাদীনাহ্র বাড়িঘরের ছাদের পানিবাহী নল দিয়ে (বৃষ্টির) পানি পড়তে শুরু করে (পানি অপসারী নালা দিয়ে পানি বয়ে যেতে শুরু করতো)। তখন কবির কবিতা আমার মনে পড়ে যেতো : “কত সুন্দর সৌন্দর্যময় সত্তা, যাঁর উসীলায় বৃষ্টি বর্ষণের প্রার্থনা করা যায়, যিনি ইয়াতীম ও বিধবাদের আশ্রয়স্থল”। এটা আবূ তালিবের কবিতা। [১২৭২]
দু’ ঈদের সালাত সম্পর্কে
আতা তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি খুতবা দানের পূর্বে সালাত আদায় করেছেন, অতঃপর খুতবাহ দিয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তিনি মহিলাদের তাঁর ভাষণ শুনাতে পারেননি। (তাঁর কণ্ঠস্বর তাদের পর্যন্ত পৌঁছেনি)। অতএব তিনি তাদের নিকট এসে তাদেরকে উপদেশ দেন, ওয়াজ-নাসীহাত করেন এবং তাদেরকে দান-খয়রাত করার নির্দেশ দেন। আর বিলাল (রাঃ) তার হাতের কাপড় এভাবে ধরেন। মহিলারা তাদের স্বর্ণের বালা, আংটি ও অন্যান্য জিনিস (সেই কাপড়ের মধ্যে) ঢেলে দিতে থাকেন। [১২৭৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন আযান ও ইকামাত ব্যতীত (ঈদের) সালাত পড়েন। [১২৭৪] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদের দিন মারওয়ান (ঈদের মাঠে) মিম্বার বের করে আনে এবং ঈদের সালাত পড়ার আগে খুতবাহ দেয়। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ করেছো। তুমি ঈদের দিন (মাঠে) মিম্বার বের করে এনেছো, অথচা তা ঈদের মাঠে বের করে আনা হতো না। আবার তুমি ঈদের সালাত পড়ার পূর্বে খুতবা দিতে শুরু করলে, অথচ সলাতের আগে খুতবাহ দিয়ে শুরু করা হতো না। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, এই ব্যক্তি অবশ্যি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে এবং তার হাত দিয়ে তা প্রতিহত করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন মুখের ভাষায় তা প্রতিহত (বা প্রতিবাদ) করে। যদি মুখের ভাষায় প্রতিহত করার সামর্থ্য তার না থাকে তবে সে যেন তার অন্তরে তা প্রতিহত করে। এটা ঈমানের খুবই নিম্নস্তর। [১২৭৫] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), অতঃপর আবূ বকর (রাঃ), অতঃপর উমার (রাঃ) খুতবাদানের পূর্বে ঈদের সালাত আদায় করতেন। [১২৭৬]
দু’ ঈদের সলাতে ইমাম কত তাকবীর দিবেন?
সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ ঈদের সলাতের প্রথম রাকআতে কুরআন পাঠের পূর্বে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকআতেও কুরআন পাঠের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন। [১২৭৭] আবদুল্লাহ্ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতে পর্যায়ক্রমে (প্রথম ও দ্বিতীয় রাকআতে) সাত ও পাঁচ তাকবীর দিতেন। [১২৭৮] আম্র বিন আওফ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ ঈদের সলাতে প্রথম রাকআতে সাত তাকবীর এবং শেষের রাকআতে পাঁচ তাকবীর দিতেন। [১২৭৯] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহার সলাতে রুকূ‘-সাজদাহর তাকবীর ব্যতীত অতিরিক্ত সাত ও পাঁচ তাকবীর দিতেন। [১২৮০]
দু’ ঈদের সলাতের কিরাআত।
নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ ঈদের সলাতে সূরাহ “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আলা” ও সূরা “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়া” পড়তেন। [১২৮১] উবায়দুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ তিনি বলেন, উমার (রাঃ), ঈদের সালাত আদায় করতে রওয়ানা হলেন। তিনি আবূ ওয়াকিদ আল-লায়সী (রাঃ)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আজকের মত এ দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী তিলাওয়াত করতেন? তিনি জানান যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ “কাফ” ও সূরা “ইকতারাবাতিস সাআহ” দ্বারা ক্বিরাআত পড়তেন। [১২৮২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতে সুরা আলা’ ও সূরাহ গাশিয়া পড়তেন। [১২৮৩]
দু’ ঈদের সলাতে খুতবা।
আবূ কাহিল (কায়স বিন আয়িয) (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেন। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় খুতবাহ দিতে দেখেছি। এক হাবশী গোলাম উষ্ট্রীর লাগাম ধরে রেখেছিল। [১২৮৪] আবূ কাহিল (কায়স বিন আয়িয) (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি সুন্দর উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় খুতবা দিতে দেখেছি। এক হাবশী গোলাম তার লাগাম ধরে রেখেছিল। [১২৮৫] নুবায়ত বিন শারীত (রাঃ) তিনি হাজ্জ করেন এবং বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায় খুতবাহ দিতে দেখেছি। [১২৮৬] সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ খুতবাহ্য় বেশি বেশি তাকবীর বলতেন এবং তিনি দু’ ঈদের খুতবাহয় আরো অধিক সংখ্যায় তাকবীর বলতেন। [১২৮৭] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন বের হতেন এবং লোকদের নিয়ে দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন, তারপর সালাম ফিরাতেন। এরপর তিনি তার উভয় পায়ের উপর দাঁড়িয়ে উপবিষ্ট লোকদের দিকে মুখ করে বলতেন : তোমরা দান-খয়রাত করো, তোমরা দান-খয়রাত করো। দান-খয়রাতকারীদের অধিকাংশই ছিল মহিলা। তারা কানবালা, আংটি ও অন্যান্য জিনিস দান করেন। তিনি যদি কোথাও সামরিক বাহিনী প্রেরণ করা জরুরী মনে করতেন, তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে সে সম্পর্কে আলোচনা করতেন, অন্যথায় ফিরে আসতেন। [১২৮৮] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন অথবা ঈদুল আযহার দিন বের হলেন। অতঃপর তিনি (সালাত শেষে) দাঁড়িয়ে খুতবাহ দেন, তারপর কিছুক্ষণ বসার পর পুনরায় আবার দাঁড়িয়ে খুতবাহ দেন। [১২৮৯]
সলাতের পর খুতবাহ্র জন্য অপেক্ষা করা।
আবদুল্লাহ্ ইবনুস সাইব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঈদের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আমাদের নিয়ে ঈদের সালাত পড়েন, অতঃপর বলেন, আমরা সালাত আদায় করেছি। অতএব যে পছন্দ করে সে খুতবাহ্র জন্য বসুক এবং যে চলে যেতে পছন্দ করে সে চলে যাক। [১২৯০]
ঈদের সলাতের আগে ও পরে (নফল) সালাত পড়া।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এসে লোকদের সাথে সালাত পরেন। তিনি ঈদের সলাতের পূর্বে বা পরে (নফল) সালাত পড়েননি। [১২৯১] আবদুল্লাহ বিন আম্র বিন শুআইব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতের আগে ও পরে (নফল) সালাত পড়েননি। [১২৯২] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাতের আগে কোন সালাত আদায় করতেন না। তবে তিনি তার বাড়িতে ফিরে আসার পর দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১২৯৩]
পদব্রজে ঈদগাহে যাওয়া।
সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজে ঈদগাহে যেতেন এবং পদব্রজে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসতেন। [১২৯৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজেই ঈদগাহে যেতেন এবং পদব্রজেই ফিরে আসতেন। [১২৯৫] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। [১২৯৬] আবূ রাফি‘ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজে ঈদগাহে আসতেন। [১২৯৭]
ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে গমন এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন।
সা‘দ বিন আয়িয (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দু’ ঈদের সলাতের জন্য বের হতেন, তখন সাঈদ বিন আবুল আস (রাঃ)-এর ঘরের নিকট দিয়ে আসহাবে ফাসাতীত-এর দিক থেকে ঈদগাহে যেতেন। ফেরার পথে তিনি বনূ যরাইহকের পথ ধরে, আম্মার বিন ইয়াসির ও আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর ঘরের সম্মুখ দিয়ে বালাত নামক স্থানের দিকে আসতেন। [১২৯৮] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে যেতেন এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। তার মতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন। [১২৯৯] আবূ রাফি‘ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়ে হেঁটে ঈদের মাঠে আসতেন এবং ভিন্ন পথে প্রত্যাবর্তন করতেন। [১৩০০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের মাঠে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করতেন। [১৩০১]
ঈদের দিন দফ বাজানো।
আমির (বিন শুরাহীল) তিনি বলেন, ইয়াদ আল-আশআরী (রাঃ) আম্বার নামক এলাকায় ঈদের সলাতে উপস্থিত হন। তিনি বলেন, আমি তোমাদের দফ বাজাতে দেখছি না কেন, যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে তা বাজানো হত? [১৩০২] কায়স বিন সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যমানায় যা কিছু ঘটেছে তা আমি দেখেছি। একটি বিষয় আমি অবশ্যই দেখেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে ঈদুল ফিতরের দিন ‘দফ’ বাজানো হতো। [১৩০৩] ২/১৩০৩ (১). কায়স বিন সা‘দ (রাঃ)। [১৩০৩] তাহকীক আলবানী : দঈফ।
ঈদের সলাতে বল্লম নিয়ে যাওয়া (সুতরা হিসেবে ব্যবহারের জন্য)
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন ভোরবেলা ঈদগাহে যেতেন এবং তাঁর আগে আগে একটি বর্শা বহন করা হতো। তিনি ঈদগাহে পৌছলে তাঁর সামনে বর্শাটি পুতে দেয়া হতো। তিনি সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন। এ ছিলো সেই সময়কার ঘটনা, যখন ঈদগাহ ছিলো খোলা মাঠ। তাতে এমন কিছু ছিলো না যাকে সুতরা বানানো যেত। [১৩০৪] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদের সালাত অথবা অন্য কোন সালাত আদায়কালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে একটি বল্লম পুতে দেয়া হতো। তিনি সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করতেন, লোকেরা তাঁর পেছনে থাকতো। নাফি (রাঃ) বলেন, তাঁর অনুসরনে শাসকগণ এ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। [১৩০৫] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে বর্শা দ্বারা সুতরা করে সালাত আদায় করতেন। [১৩০৬]
দু’ ঈদের সলাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ
উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন (ঈদের মাঠে) মহিলাদের নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, তাদের কারও যদি চাদর না থাকে, তার ব্যাপারে আপনার কি মত? তিনি বলেন, তার বোন নিজ চাদর থেকে তাকে পরাবে। [১৩০৭] উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নাবালেগা ও বালেগা সকল মহিলাকে ঈদের মাঠে নিয়ে আসবে, যাতে তারা ঈদের নামাজে এবং মুসলিমদের দু’আতে শরীক হতে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলারা যেন ঈদের মাঠে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। [১৩০৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যাদের ও স্ত্রীদের দু’ ঈদের সলাতে নিয়ে যেতেন। [১৩০৯]
একই দিনে দু’ ঈদ একত্র হলে
ইয়াস বিন আবূ রামলা আশ-শামী (মাজহুল বা অপরিচিত) তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে যায়দ বিন আকরাম (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করতে শুনেছি : একই দিনে দু’ ঈদে আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হাঁ। সে বললো, তিনি কিভাবে কী করতেন? যায়দ (রাঃ) বলেন, তিনি ঈদের সালাত পড়ার পর জুমুআর সলাতের ব্যাপারে অবকাশ দিতেন। অতঃপর যার ইচ্ছে হত সে জুমুআর সালাত আদায় করতো। [১৩১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের আজকের এই দিন দু’ ঈদ একত্র হয়েছে। অতএব যার ইচ্ছা জুমুআর সালাত ছেড়ে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই জুমুআর সালাত পড়বো। ২/১৩১১ (১). আবু হুরায়রা (রাঃ), রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের আজকের এই দিন দু’ ঈদ একত্র হয়েছে। অতএব যার ইচ্ছা সে জুমুআর সালাত ছেড়ে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই জুমু’আহর সালাত আদায় করবো। [১৩১১] তাহকীক আলবানী : সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় একবার দু’ ঈদ একত্র হল। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত পড়ার পর বলেন, যে ব্যক্তি জুমুআর সলাতে আসতে চায় সে আসুক এবং যে চলে যেতে চায় সে চলে যাক (এবং যোহরের সালাত পড়ুক)। [১৩১২]
বৃষ্টির কারণে মাসজিদে সালাত পড়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় ঈদের দিন বৃষ্টি হলে তিনি লোকেদের নিয়ে মাসজিদে সালাত পড়তেন। [১৩১৩]
ঈদের দিন অস্ত্রসজ্জিত হওয়া।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ ঈদের দিন দেশের কোন শহরে অস্ত্রসজ্জিত হতে নিষেধ করেছেন, তবে শত্রুর উপস্থিতিতে তা করা যেতে পারে। [১৩১৪] তাহকীক আলবানী : দইফ জিদ্দান।
দু’ ঈদের দিন গোসল করা।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদহার দিন গোসল করতেন। [১৩১৫] তাহকীক আলবানী : দইফ জিদ্দান। ফাকিহ বিন সা‘দ (রাঃ) তিনি সহাবী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর, ঈদুল আয্হা ও আরাফার দিন গোসল করতেন। ফাকিহ (রাঃ) তার পরিবার-পরিজনদের ঐ দিনগুলোতে গোসল করার নির্দেশ দিতেন। [১৩১৬] তাহকীক আলবানী : মাওযু।
দু’ ঈদের সলাতের ওয়াক্ত।
আবদুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) তিনি লোকদের সাথে ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহার দিন বের হলেন। ইমামের বিলম্বে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, আমরা তো এ সময়ে ঈদের সালাত শেষ করতাম। আর তখন চাশতের সলাতের সময়। [১৩১৭]
রাতে সালাত দু’ রাকাত করে পড়বে।
ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের (তাহাজ্জুদ) সালাত দু’ দু’ রাকআত করে পড়তেন। [১৩১৮] তাহকীক আলবানী : লাম তা’তি। ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতের (নফল) সালাত দু’ রাকআত করে পড়বে। [১৩১৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তা দু’ দু’ রাকআত করে পড়বে। ভোর হওয়ার আশঙ্কা হলে, এক রাকআত বিতর পড়বে। [১৩২০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের (তাহাজ্জুদ) সালাত দু’ রাকআত দু’ রাকআত করে পড়তেন। [১৩২১]
রাতের ও দিনের সালাত দু’ রাকআত করে।
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাত ও দিনের সালাত দু’ দু’ রাকআত করে। [১৩২২] ঊম্মূ হানী (ফাখিতাহ) বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন আট রাক'য়াত চাশতের সালাত পড়েন এবং প্রতি দু’ রাকআত অন্তর সালাম ফিরান। আট রাকআত যুহার সালাত পড়ার কথা' সহীহ যা বুখারী, মুসলিমে রয়েছে, সহীহ আবী দাউদ ১১৬৮, কিন্তু প্রতি দু’ রাকআত অন্তর সালামের কথা মুনকার। [১৩২৩] তাহকীক আলবানী : (সাল্লামা) কথাটি বেশী হওয়ায় মুনকার তবে কথাটি ছাড়া হাদীসটি সহীহ। আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতি দু’ রাকআত অন্তর একবার সালাম ফিরাবে। [১৩২৪] মুত্তালিব বিন আবূ ওয়াদাআহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের সালাত দু’ দু’ রাকআত করে। প্রতি দু’ রাকআতের শেষে রয়েছে তাশাহহুদ। অত্যন্ত বিনয়-নম্রতা সহকারে, শান্তভাবে ও একাগ্রতার সাথে সালাত পড়বে এবং বলবে : "হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন।" যে ব্যক্তি তা করেনি তার নামায ত্রুটিপূর্ণ। [১৩২৫]
রমাযান মাসের কিয়ামুল লাইল (তারাবীহ সালাত)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও নেকীর আশায় রমাদান মাসের সাওম রাখে (এবং রাতে) দণ্ডায়মান হয় (সালাত পড়ে) তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করা হয়। [১৩২৬] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রমযানে সওম রাখলাম। তিনি আমাদের নিয়ে এ মাসে (নফল সলাতে) দাঁড়াননি, এমনকি রমযানের মাত্র সাতটি রাত বাকী রইল। সপ্তম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে প্রায় একতৃতীয়াংশ রাত সালাত পড়লেন। এরপর ষষ্ঠ রাতে তিনি (নফল) সালাত পড়েননি। অতঃপর পঞ্চম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে প্রায় অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত পড়লেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এই রাতের অবশিষ্ট অংশও যদি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাত পড়ে ফিরে আসে সে সারারাত সালাত পড়ার সমান নেকী পায়। অতঃপর তিনি চতুর্থ রাতে সালাত পড়েননি। তৃতীয় রাত এলে তিনি তাঁর স্ত্রীদের, পরিজনদের একত্র করেন এবং লোকেরাও একত্র হয়। রাবী বলেন, তিনি আমাদের নিয়ে এত দীর্ঘক্ষণ সালাত পড়লেন যে, আমরা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করলাম। আবূ যার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কল্যাণ কী? তিনি বলেন, সাহরী। অতঃপর তিনি আমাদের নিয়ে মাসের অবশিষ্ট রাতগুলোতে আর কোন নফল সালাত পড়েননি। [১৩২৭] নাদর আমি আবূ সালামাহ বিন আবদুর রহমান-এর সাথে সাক্ষাত করে বললাম, আপনি আপনার পিতাকে রমাদান মাস সম্পর্কে যে হাদীস বলতে শুনেছেন তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, হাঁ, আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাদান মাস সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, এমন একটি মাস, আল্লাহ তোমাদের উপর তার সাওম ফরয করেছেন এবং আমি তোমাদের উপর এর দণ্ডায়মান হওয়া (রাত জেগে ইবাদত করা) সুন্নাত করেছি। অতএব যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেকীর আশায় এ মাসে সাওম রাখে ও (রাতে ইবাদতে) দণ্ডায়মান হয় সে তার জন্মদিনের মত পাপমুক্ত হয়ে যায়। [১৩২৮] তাহকীক আলবানী : ‘দণ্ডায়মান হওয়া সুন্নাত করেছি’ এ পর্যন্ত দইফ। বাকী অংশ সহীহ।
রাতে ইবাদাতে দণ্ডায়মান হওয়া (কিয়ামুল লাইল)
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের বেলা শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথায় একটি দড়ি দিয়ে তিনটি গিরা দেয়। সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহ্কে স্মরণ করলে একটি গিরা খুলে যায়। সে উঠে উযু করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর সে যখন সলাতে দাঁড়ায় তখন সমস্ত গিরা খুলে যায়। ফলে সে প্রসস্ত মনে হৃষ্টচিত্তে ভোরে উপনীত হয় এবং কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। আর সে যদি এরূপ না করে, তবে তার ভোর হয় অলসতা এবং অপবিত্র মন নিয়ে। ফলে সে কল্যাণ লাভ করতে পারে না। [১৩২৯] আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ বিন গাফিল বিন হাবীব) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা হল যে, সে এক ঘুমে রাত কাটিয়ে ভোরে উপনীত হয়। তিনি বলেন, এ ব্যক্তির দু’কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে। [১৩৩০] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, যে রাতে উঠতো (নফল ইবাদত করতো), পরে তা ছেড়ে দিয়েছে। [১৩৩১] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সুলায়মান (আঃ)-এর মা তাঁকে বললেন, হে বৎস! তুমি রাতে অধিক ঘুমিও না। কেননা রাতের অধিক ঘুম মানুষকে কিয়ামাতের দিন নিঃস্ব অবস্থায় ত্যাগ করে। [১৩৩২] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে অধিক পরিমাণ সালাত পড়ে, দিনে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়। [১৩৩৩] আবদুল্লাহ্ বিন সালাম (রাঃ) তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় পদার্পণ করলে লোকেরা তাঁকে দেখার জন্যে ভীড় জমায় এবং বলাবলি হয় যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। আমিও লোকেদের সাথে তাঁকে দেখতে গেলাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, এ চেহারা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা হলো : হে লোকসকল! তোমারা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত পড়ো। তাহলে তোমারা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। [১৩৩৪]
যে ব্যক্তি রাতে নিজের পরিজনকে (ইবাদাতের জন্যে) ঘুম থেকে জাগায়।
আবু সাঈদ ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে নিজ স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগ্রত করে উভয়ে দু’ রাকআত (নফল) সালাত পড়ে, তাদের উভয়কে আল্লাহ্র পর্যাপ্ত যিক্রকারী পুরুষ ও পর্যাপ্ত যিক্রকারী স্ত্রীলোকদের তালিকাভুক্ত করা হয়। [১৩৩৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে অনুগ্রহ ধন্য করুন, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়, তারপর সেও সালাত পড়ে। আর যদি সে (স্ত্রী) জাগতে অস্বীকার করে, তাহলে স্বামী তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ সেই মহিলাকে অনুগ্রহ ধন্য করুন, যে রাতে উঠে সালাত পড়ে এবং তার স্বামীকেও জাগায়, আর সেও সালাত পড়ে। স্বামী জাগতে অস্বীকার করলে, সে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। [১৩৩৬]
সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা।
আবদুর রহমান ইবনুস সায়িব (মাকবূল) তিনি বলেন, সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) আমাদের নিকট এলেন। তখন তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল। আমি তাকে সালাম দিলে তিনি বলেন, তুমি কে? আমি তাকে আমার পরিচয় দিলে তিনি বলেন, মারহাবা, হে ভাতিজা! আমি জানতে পেরেছি যে, তুমি সুকন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : নিশ্চয় এই কুরআন দুশ্চিন্তার সাথে নাযিল হয়েছে। অতএব তোমরা যখন কুরআন তিলাওয়াত করো, তখন কাঁদো। যদি তোমরা কাঁদতে না পারো, তাহলে কান্নার ভাব জাগ্রত করো এবং সুমধুর স্বরে কুরআন তিলাওয়াত করো। যে ব্যক্তি সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে না, সে আমাদের নয়। [১৩৩৭] আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে এক রাতে আমি ইশার পর খানিকটা বিলম্বে ঘরে আসি। তিনি বলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি আপনার সহাবীদের একজনের কুরআন তিলাওয়াত শুনছিলাম। আমি কখনো তার মত সুকন্ঠ কারো তিলাওয়াত শুনিনি। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি কুরআন তিলাওয়াত শুনতেই উঠে গেলেন এবং আমিও তাঁর সাথে উঠে গেলাম। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, এতো আবূ হুযাইফাহর মুক্তদাস সালিম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমার উম্মাতের মধ্যে এরূপ ব্যক্তি সৃষ্টি করেছেন। [১৩৩৮] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের মধ্যে সুকন্ঠে কুরআন তিলাওয়াতকারী সেই ব্যক্তি যার তিলাওয়াত শুনে তোমাদের ধারণা হয় যে, সে আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত। [১৩৩৯] ফাযালাহ্ বিন উবায়দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন গায়িকা তার গানের প্রতি যতটা একাগ্র থাকে, আল্লাহ তা'আলা সুকন্ঠে ও সশব্দে কুরআন তিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াত তার চেয়ে অধিক কান লাগিয়ে শোনেন। [১৩৪০] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে এক ব্যক্তির কুরআন তিলাওয়াত শোনেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ কে এই ব্যক্তি? বলা হলো, আবদুল্লাহ বিন কায়স। তিনি বলেন, তাকে দাঊদ (আঃ) এর সুমধুর কন্ঠস্বর দান করা হয়েছে। [১৩৪১] আল-বারাআ বিন আযিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের সুকন্ঠী আওয়াজ দ্বারা কুরআনকে সুসজ্জিত করো। [১৩৪২]
যে ব্যক্তি রাতে তার নিয়মিত তিলাওয়াত না করে ঘুমিয়ে যায়।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার রাতের নিয়মিত তিলাওয়াত বা তার অংশবিশেষের তিলাওয়াত বাদ রেখে ঘুমিয়ে পড়লো, অতঃপর তা ফাজর থেকে যোহরের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে পড়ে নিলো, সে যেন তা রাতেই পড়েছে বলে (তার আমালনামায়) লিপিবদ্ধ হয়। [১৩৪৩] আবূদ-দারদা’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি (ঘুমাতে) তার বিছানায় এসে রাতে উঠে সলাত পড়ার নিয়ত করলো, কিন্তু ঘুমের আধিক্যের কারণে তার ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো, তাকে তার নিয়ত অনুযায়ী নেকী দেয়া হবে। তার এ ঘুম তার প্রভুর পক্ষ থেকে তার জন্য দান-খয়রাত হিসাবে গণ্য। [১৩৪৪]
কত দিনে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব।
আওস বিন হুযাইফাহ (রাঃ) আমরা ছাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসলাম। তারা তাদের মিত্র বনু মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ)-এর মেহমান হলেন। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ মালেকের তাবুতে অবস্থান করেন। তিনি প্রতি রাতে ইশা সলাতের পর আমাদের নিকট আসতেন এবং তাঁর দু’ পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতেন। তিনি কখনো এক পায়ের উপর ভর করে আবার কখনো উভয় পায়ের উপর ভর করে কথাবার্তা বলতেন। তিনি অধিকাংশই আমাদের কাছে তাঁর নিজ গোত্র কুরায়শদের নির্মম আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করতেন এবং বলতেনঃ এ কথা বলতে কোন দোষ নেই যে, আমরা ছিলাম দুর্বল ও লাঞ্ছিত। আমরা যখন মাদীনাহ্র দিকে বেরিয়ে এলাম, তখন আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। কখনো আমরা তাদের উপর বিজয়ী হতাম, আবার কখনো তারা আমাদের উপর জয়লাভ করতো। একরাতে তিনি তাঁর পূর্ব নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে আমাদের নিকট এলেন। আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আজ রাতে আপনি আমাদের নিকট বিলম্বে এসেছেন! তিনি বলেন, আমার কুরআনের কিছু তিলাওয়াত বাকী থাকায়, তা তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত বের হওয়া অপছন্দ করলাম। আওস (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কিভাবে কুরআনের অংশ নির্দিষ্ট করে তিলাওয়াত করেন? তারা বলেন, প্রথম দিন তিন সূরা, দ্বিতীয় দিন পাঁচ সূরা, তৃতীয় দিন সাত সূরা, চতুর্থ দিন নয় সূরা, পঞ্চম দিন এগারো সূরা, ষষ্ঠ দিন তের সূরা এবং সপ্তম দিন হিযবুল মুফাসসাল হতে শেষ অংশ। [১৩৪৫] আবদুল্লাহ বিন আম্র (ইবনুল আস) (রাঃ) আমি কুরআন মুখস্থ করেছি এবং তা প্রতি রাতে সম্পূর্ণ তিলাওয়াত করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার আশংকা যে, তুমি দীর্ঘজীবী হবে এবং বার্ধক্যে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই তুমি এক মাস অন্তর কুরআন খতম করো। আমি বললাম, আমাকে আমার শক্তিমত্তা ও যৌবন দ্বারা উপকৃত হতে দিন। তিনি বলেন, তাহলে তুমি সাতদিন অন্তর খতম করো। আমি বললাম, আমার শক্তিমত্তা ও যৌবন দ্বারা আমাকে উপকৃত হতে দিন। তখন তিনি তা অস্বীকার করে। [১৩৪৬] আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিন দিনের কম সময়ে যে ব্যক্তি কুরআন খতম করে, সে কুরআনের কিছুই বুঝতে পারে না। [১৩৪৭] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে কুরআন খতম করেছেন বলে আমার জানা নেই। [১৩৪৮]
রাতের সলাতের কিরাআত।
উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার ঘরের ছাদে শোয়া অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের কিরাআত শুনতে পেলাম। [১৩৪৯] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে দাঁড়িয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতে থাকেন : “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”- (সূরাহ মায়িদা : ১১৮)। [১৩৫০] হুযাইফাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে (সলাতে) কুরআন পড়ে রহমতের আয়াতে পৌছে রহমত কামনা করতেন এবং আযাবের আয়াতে পৌছে আযাব থেকে আশ্রয় চাইতেন এবং আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষনাকারী আয়াতে পৌছে তাঁর তাসবীহ পাঠ করতেন। [১৩৫১] আবূ লাইলা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে নফল সালাত পড়েন, আমি তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে নফল সালাত পড়লাম। তিনি আযাবের আয়াত তিলাওয়াত করে বলেন, আমি জাহান্নামের আগুন থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর জাহান্নামের অধিবাসীদের জন্য ধ্বংস। [১৩৫২] কাতাদাহ তিনি বলেন, আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ) এর নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, তিনি সশব্দে কিরাআত পড়তেন। [১৩৫৩] গুদইফ ইবনুল হারিস তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সশব্দে কুরআন পড়তেন, না অস্পষ্ট শব্দে? তিনি বলেন, কখনো তিনি সশব্দে আবার কখনো অস্পষ্ট শব্দে কিরাআত পড়তেন। আমি বললাম, আল্লাহু আকবার, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি এ বিষয়ে (উভয়টির) অবকাশ রেখেছেন। [১৩৫৪]
কোন ব্যক্তি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে উঠে যে দুআ’ পড়বে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে উঠে বলতেন : “হে আল্লাহ্! সমস্ত প্রশংসা তোমার, তুমি আসমান-যমীন ও এগুলোর মধ্যস্থ সকল কিছুর জ্যোতি। সমস্ত প্রশংসা তোমার, তুমিই আসমান-যমীন এবং এগুলোর মধ্যস্থ সকল কিছুর ধারক। সমস্ত প্রশংসা তোমার। তুমি আসমান-যমীন এবং এগুলোর মধ্যস্থ সবকিছুর অধিপতি। সমস্ত প্রশংসা তোমার। তুমি সত্য, তোমার অঙ্গীকার সত্য, তোমার সাক্ষাত লাভ সত্য, তোমার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামাত সত্য, আম্বিয়া কিরাম সত্য এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য। হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট আত্মসমর্পন করেছি, তোমার উপর ইমান এনেছি, তোমার উপর ভরসা করেছি, তোমার দিকে ফিরে এসেছি, তোমার জন্য বিতর্ক করি এবং তোমার কাছেই বিচারপ্রার্থী। অতএব তুমি আমার পূর্বাপর পাপরাশি ক্ষমা করে দাও, যা আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে করেছি। তুমিই আদি, তুমিই অন্ত, তুমিই একমাত্র ইলাহ এবং তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তোমার শক্তি ব্যতীত ক্ষতি রোধ করার এবং কল্যাণ লাভ করার কোন শক্তি নেই”। ১/১৩৫৫ (১). ইবনু আব্বাস (রাঃ), তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে উঠে বলতেন........ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [১৩৫৫] তাহকীক আলবানী : সহীহ। আসিম বিন হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সালাত আদায় করতে উঠে প্রথমে কি পড়তেন? তিনি বলেন, তুমি আমার নিকট যে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো, তোমার আগে সে সম্পর্কে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি। তিনি দশবার আল্লাহু আকবার, দশবার আলহামদু লিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ ও দশবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন : “হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে হিদায়াত দান করো, আমাকে রিযিক দাও এবং আমাকে নিরাপত্তা দান করো”। তিনি কিয়ামাত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। [১৩৫৬] আবু সালামাহ বিন আবদুর রহমান তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে জাগ্রত হয়ে তাঁর (তাহাজ্জুদ) সলাতের শুরুতে কী বলতেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি বলতেন : “হে আল্লাহ জিবরাঈল, মীকাঈল ও ইসরাফীল (আঃ)-এর প্রভু, আসমান ও জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা! আপনার বান্দারা যে বিষয় নিয়ে মতভেদ করে, আপনি তার মীমাংসাকারী। যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়ে থাকে, আপনি মেহেরবাণী করে সে বিষয়ে আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। আপনিই সরল সঠিক পথে হিদয়াত দান করেন। আবদুর রহমান বিন উমার (রাঃ) বলেন, তোমরা জিবরাঈল শব্দটি হামযা অক্ষরযোগে পাঠ করো। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এরূপই বর্ণিত আছে। [১৩৫৭]
রাতে কত রাকআত সালাত আদায় করবে?
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সলাতের পর থেকে ফজরের সলাতের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এগারো রাকআত সালাত আদায় করতেন। তিনি প্রতি দু’ রাকআত পর সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকআত বিত্র পড়তেন। তিনি এ সলাতে এতো দীর্ঘ সাজদাহ করতেন যে, তাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের যে কেউ পঞ্চাশ আয়াত পরিমান তিলাওয়াত করতে পারতো। মুআয্যিন যখন ফজরের সলাতের প্রথম আযান শেষ করে নীরব হতো, তখন তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হালকাভাবে দু’ রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১৩৫৮] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে তেরো রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১৩৫৯] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে নয় রাকআত সালাত আদায় করতেন। [১৩৬০] আমির আশ্-শাবী তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বলেন, তেরো রাকআত, এর মধ্যে আট রাকআত তাহাজ্জুদ, তিন রাকআত বিত্র এবং ফজরের ওয়াক্ত হলে পর দু’ রাকআত (সুন্নাত)। [১৩৬১] যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (মনে মনে) বললাম, আমি অবশ্যি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আজকের রাত এর সালাত দেখবো। তিনি বলেন, আমি তাঁর ঘরের বা তাঁর তাবুর দরজার কাঠের সাথে ঠেস দিয়ে বসে থাকলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে হালকাভাবে দু’ রাকআত সালাত পড়েন, অতঃপর দীর্ঘ দু’ রাকআত পড়েন, তারপর আরো দু’ রাকআত পড়েন, যা পূর্ববর্তী দু’ রাকআত এর চেয়ে কম দীর্ঘ, তারপর দু’ রাকআত পড়েন, যা ছিল তাঁর পূর্ববর্তী দু’ রাকআত অপেক্ষা কম দীর্ঘ, তারপর আরো দু’ রাকআত পড়েন, যা ছিল তার পূর্ববর্তী দু’ রাকআত অপেক্ষা স্বল্প দীর্ঘ, এরপর আরো দু’ রাকআত পড়েন, তারপর বিত্র পড়েন। এভাবে মোট তেরো রাকআত হলো। [১৩৬২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি তার খালা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মূনা (রাঃ)-এর ঘরে ঘুমালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশে আড়াআড়িভাবে শুয়ে পড়লাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রী লম্বালম্বি শুয়ে পড়েন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়েন। অর্ধরাত বা তার চেয়ে কম কিছু অথবা বেশি অতিবাহিত হলে তিনি জেগে তার দু’ হাত দিয়ে ঘুমের রেশ তাঁর চেহারা থেকে দূর করেন, অতঃপর সূরাহ আল-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে গিয়ে তা থেকে পানি নিয়ে উত্তমরূপে উযু করেন, তারপর সলাতে দাঁড়িয়ে যান। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমিও উঠে গেলাম এবং তিনি যা করলেন আমিও তদ্রূপ করলাম, তারপর তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে মললেন। তারপর তিনি দু’ রাকআত সালাত পড়েন, তারপর দু’ রাকআত, তারপর দু’ রাকআত, তারপর দু’ রাকআত, তারপর দু’ রাকআত, তারপর দু’ রাকআত, তারপর বিত্র সালাত পড়েন। তারপর তিনি আরাম করেন, যাবত না তাঁর নিকট মুআযযিন আসে। অতঃপর তিনি হালকাভাবে দু’ রাকআত (ফজরের সুন্নাত) সালাত পড়েন, অতঃপর (ফজরের ফরয) সালাত আদায় করতে বেরিয়ে যান। [১৩৬৩]
রাতের কোন্ সময় অধিক উত্তম?
আম্র বিন আবাসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার সাথে কে কে ইসলাম গ্রহণ করেছেন? তিনি বলেন, স্বাধীন ও ক্রীতদাস। আমি বললাম, এমন কোন সময় আছে কি যা অপর সময়ের তুলনায় আল্লাহ্র নিকটতর (নৈকট্য লাভের উত্তম সময়)? তিনি বলেন, হাঁ। রাতের মধ্যভাগ। [১৩৬৪] তাহকীক আলবানী : শায, মাহযূয ইশার রাকআত। আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন এবং শেষভাগে জাগ্রত থাকতেন। [১৩৬৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের মহান প্রতিপালক (পৃথিবীর নিকটতম আকাশে) অবতরণ করেন এবং ফাজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বলতে থাকেন : আমার কাছে যে চাইবে আমি তাকে দান করবো, আমার নিকট যে দুআ’ করবে আমি তাঁর দুআ’ কবুল করবো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো। এ কারনেই সাহাবীগণ রাতের প্রথমাংশ অপেক্ষা শেষাংশে সালাত পড়া পছন্দ করতেন। [১৩৬৬] রিফাআহ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রাতের অর্ধেক বা দু’ তৃতীয়াংশ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা (বান্দাকে) অবকাশ দেন। ফাজর উদিত হওয়ার পূ্র্ব পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন : আমার বান্দা আমাকে ছাড়া আর কারো কাছে চাইবে না। যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দিবো, যে আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দান করবো, যে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। [১৩৬৭]
কোন্ জিনিস রাতের ইবাদাতের পরিপূরক হতে পারে।
আবূ মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’ আয়াত তিলাওয়াত করলে তা তার জন্য যথেষ্ট। হাফস (রাঃ) তার হাদীসে উল্লেখ করেন যে, আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি আবূ মাসউদ (রাঃ)-এর সাথে তার তাওয়াফরত অবস্থায় সাক্ষাত করি। তখন তিনি আমার নিকট এ হাদীস বর্ণনা করেন। [১৩৬৮] আবূ মাসউদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি রাতে সূরাহ বাকারার শেষ দু’ আয়াত তিলাওয়াত করে, তা তার জন্য যথেষ্ট। [১৩৬৯]
সালাতরত ব্যাক্তি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সালাতরত অবস্থায় তোমাদের কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন শুয়ে যায়, যাবত না তার ঘুম দূরীভূত হয়। কেননা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সালাত পড়লে, কী বলা হচ্ছে, তা সে জানে না। হয়তো সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। [১৩৭০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে দুটি খুঁটির মাঝখানে একটি রশি বাধাঁ দেখলেন। তিনি বলেন, এ রশি কিসের? তারা বলেন যয়নবের জন্য। তিনি সালাত আদায় করতে করতে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে এই রশিতে ঝুলে পড়েন। তিনি বলেন, এটি খুলে ফেলো, এটি খুলে ফেলো। তোমাদের কারো সামর্থ্য থাকা পর্যন্ত সালাত পড়বে। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন যেন শুয়ে পড়ে। [১৩৭১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন রাতে সলাতে দাঁড়ায় এবং কিরাআত পাঠে তার জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে আসে (তন্দ্রার কারনে), সে কী বলে তা বুঝে না, তখন সে শুয়ে পড়বে। [১৩৭২]
মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের সালাত।
আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে বিশ রাকআত সালাত পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। [১৩৭৩] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের সলাতের পর ছয় রাকআত সালাত পড়লো এবং এ সলাতের মাঝখানে কোন অশিষ্ট কথা বলেনি, তাকে বারো বছরের ইবাদাতের নেকী দেওয়া হয়। [১৩৭৪] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান।
বাড়িতে নফল সালাত পড়া।
আসিম বিন আমর (তিনি সত্যবাদী কিন্তু শীয়া মতাবলম্বী) তিনি বলেন, ইরাকের একটি প্রতিনিধি দল উমার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য রওয়ানা হলেন। তারা তার নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদের বলেন, তোমরা কারা? তারা বললো, তারা ইরাকীদের পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, তোমরা অনুমতি নিয়ে এসেছো কী? তারা বললো, হাঁ। রাবী বলেন, তারা তাকে কোন ব্যক্তি তার ঘরে (নফল) সালাত পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। উমার (রাঃ) বলেন, আমি রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির ঘরে সালাত পড়া হলো নূর (আলো)। অতএব তোমরা তোমাদের ঘরকে আলোকিত করো। ১/১৩৭৫ (১). উমার (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [১৩৭৫] তাহকীক আলবানী : দঈফ। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ সালাত পড়লে তার কিছু অংশ সে যেন তার ঘরে পড়ে। কারন তার সলাতের উসীলায় আল্লাহ তার ঘরে প্রাচুর্য দান করেন। [১৩৭৬] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরগুলো কবরে পরিণত করো না (ঘরেও কিছু সুন্নাত বা নফল সালাত পড়ো)। [১৩৭৭] আবদুল্লাহ বিন সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম, কোনটি উত্তম- আমার ঘরের সালাত অথবা মাসজিদের সালাত? তিনি বলেন, তুমি কি আমার ঘর দেখো না, তা মাসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও আমার মাসজিদে সালাত পড়া অপেক্ষা আমার ঘরে সালাত পড়া আমার নিকট অধিক প্রিয়। কিন্তু ফরয সালাত হলে (তাe মাসজিদে পড়বে)। [১৩৭৮]
চাশতের সালাত।
আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ)-এর আমলে বহু লোকের উপস্থিতিতে আমি চাশতের সালাত (সলাতুদ দুহা) সম্পর্কে জিজ্ঞস করলাম। কিন্তু মায়মূনা (রাঃ) ব্যতীত আর কেউ বলতে পারেননি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সালাত আদায় করেছেন কি না। তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সালাত আট রাকআত পড়েছেন। [১৩৭৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি বার রাকআত চাশতের সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি স্বর্ণের ইমারত নির্মাণ করেন। [১৩৮০] মুআযাহ আল-আদাবীয়্যাহ তিনি বলেন, আমি আয়িশা (রাঃ), কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি চাশতের সালাত আদায় করতো? তিনি বলেন, হাঁ, চার রাকআত, আবার আল্লাহর মর্জি হলে তার বেশিও পড়তেন। [১৩৮১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি চাশতের দু’ রাকআত সলাতের হেফাজত করলো, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হলো, তা সমুদ্রের ফেনারাশির ন্যায় অধিক হলেও। [১৩৮২]
ইস্তিখারার সালাত
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ইসতিখারার নিয়ম শিক্ষা দিতেন, যেমন (গুরুত্ব সহকারে) তিনি আমাদের কুরআনের সূরাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন : তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন দু’ রাকআত নফল সালাত পড়ে, অতঃপর বলে, “হে আল্লাহ! আমি তোমার ইল্ম অনুযায়ী তোমার নিকট কল্যাণের দিকে পরিচালিত করার প্রার্থনা করি এবং তোমার শক্তি থেকে শক্তি চাই, আমি তোমার মহান অনুগ্রহ প্রত্যাশা করি। কেননা তুমি ক্ষমতা রাখো এবং আমি ক্ষমতা রাখি না। তুমিই জানো, আমি জানি না, তুমি অদৃশ্য বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো, আমার এ কাজ (উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে) আমার দীন-দুনিয়া এবং পরিণাম হিসেবে কল্যাণকর (অথবা বর্তমান ও ভবিষ্যতে আমার জন্য মংগলময়) মনে করো তবে আমাকে সে কাজের ক্ষমতা দাও এবং তা আমার জন্য সহজ করো এবং এতে আমায় বরকত দান করো। আর তুমি যদি মনে করো যে, (প্রথম বারের মত বলবে) আমার ধর্ম, আমার জীবন ও পরিণাম হিসেবে এটা অকল্যাণকর, তবে আমার থেকে তা দূরে রাখো এবং তা থেকে আমাকেও দূরে রাখো, আর আমার জন্য যা কল্যাণকর, সে কাজে আমাকে সন্তুষ্ট রাখো”। [১৩৮৩]
সলাতুল হাজাত (প্রয়োজন পূরণের সালাত)।
আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বের হয়ে এসে বলেন, আল্লাহ্র নিকট অথবা তাঁর কোন মাখলুকের নিকট কারো কোন প্রয়োজন থাকলে, সে যেন উযু করে দু’ রাকআত সালাত পড়ে, অতঃপর বলে : “পরম সহনশীল ও দয়ালু আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। মহান আরশের রব আল্লাহ অতীব পবিত্র। সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ্র জন্যই যাবতীয় প্রশংসা। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অবধারিত রহমাত, তোমার অফুরন্ত ক্ষমা, সকল সদাচারের ভান্ডার এবং প্রতিটি পাপাচার থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। আমি তোমার নিকট আরো প্রার্থনা করি যে, তুমি আমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দাও, আমার দুশ্চিন্তা দূর করে দাও, তোমার সন্তুষ্টিমূলক প্রতিটি প্রয়োজন পূরণ করে দাও।” অতঃপর সে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য যা চাওয়ার আছে তা প্রার্থনা করবে। কারণ তা আল্লাহ্ই নির্ধারিত করেন। [১৩৮৪] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান। উসমান বিন হুনায়ফ (রাঃ) এক অন্ধ লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আপনি আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দুআ’ করুন। তিনি যেন আমাকে রোগমুক্তি দান করেন। তিনি বলেন, তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য দুআ’ করতে বিলম্ব করবো, আর তা হবে কল্যাণকর। আর তুমি চাইলে আমি দুআ’ করবো। সে বললো, তাঁর নিকট দুআ’ করুন। তিনি তাকে উত্তমরূপে উযু করার পর দু’ রাকআত সালাত পড়ে এ দুআ’ করতে বলেন, “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উসীলা দিয়ে, আমি তোমার প্রতি নিবিষ্ট হলাম। হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার চাহিদা পুরণের জন্য আমি আপনার উসীলা দিয়ে আমার রবের প্রতি মনোযোগী হলাম, যাতে আমার প্রয়োজন মিটে। হে আল্লাহ! আমার জন্য তাঁর সুপারিশ কবূল করো”। [১৩৮৫]
সলাতুত তাসবীহ
আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ হে চাচাজান! আমি কি আপনার অবাধ্য হতে বিরত থাকব না, আমি কি আপনার উপকার করবো না, আমি কি আপনার সাথে আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবো না? তিনি বলেন, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলেন, তাহলে আপনি চার রাকআত সালাত পড়ুন। আপনি প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাও পড়ুন। আপনি কিরাআত পাঠ শেষ করে রুকূ‘ করার আগে পনের বার বলুন : "আল্লাহ পুতঃ পবিত্র, সকল প্রসংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান"। আতঃপর রুকূ‘তে গিয়ে ঐ দুআ’ দশবার পড়ুন, অতঃপর রুকূ‘ থেকে আপনার মাথা তুলে ঐ দুআ’ দশবার পড়ুন, অতঃপর সাজদাহয় গিয়ে ঐ দুআ’ দশবার পড়ুন, অতঃপর আপনার মাথা তুলে দশবার ঐ দুআ’ পড়ুন, পুনরায় সাজদাহয় গিয়ে তা দশবার পড়ুন, পুনরায় সাজদাহ থেকে আপনার মাথা তুলে উঠে দাঁড়ানোর আগে তা দশবার পড়ুন। এভাবে প্রতি রাকআতে তা পঁচাত্তর বার এবং চার রাকআতে তিনশত বার হবে। আপনার পাপরাশি বালুর স্তুপের সমপরিমান হলেও আল্লাহ তা মাফ করবেন। আব্বাস (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! প্রতিদিন এ সালাত পড়ার সামর্থ কার আছে? তিনি বলেন, তাহলে প্রতি জুমুআর দিন তা পড়ুন। তাতেও সমর্থ না হলে প্রতি মাসে একবার পড়ুন। অবশেষে তিনি বলেন, তাহলে অন্তত বছরে একবার তা পড়ুন। [১৩৮৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আব্বাস! হে প্রিয় চাচাজান! আমি কি আপনাকে কিছু দান করবো না, আমি কি আপনার সাথে আত্নীয় সম্পর্ক বজায় রাখবো না, আমি কি আপনার অবাধ্য হতে বিরত থাকবো না, আমি কি আপনাকে এমন কলেমা বলে দিব না, যা পড়লে আল্লাহ আপনার আগের-পরের, নতুন-পুরান, ভুলক্রমে, স্বেচ্ছায়, ছোট-বড়, গোপন-প্রকাশ্য সব ধরনের গুনাহ মাফ করে দিবেন? সেই দশটি কলেমা হলো : আপনি চার রাকআত সালাত পড়ুন এবং প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরাহ পড়ুন। প্রথম রাকআতের কিরাআত পাঠ শেষ হলে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনি পনের বার বলুন : "আল্লাহ পবিত্র, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান"। অতঃপর আপনি রুকূ‘ করুন এবং রুকূ‘ অবস্থায় তা দশবার বলুন, অতঃপর রুকূ‘ থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন। অতঃপর আপনি সাজদাহয় যান এবং সাজদাহবনত অবস্থায় তা দশবার বলুন, অতঃপর সাজদাহ থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন, অতঃপর সাজদাহয় গিয়ে আবার তা দশবার বলুন, অতঃপর সাজদাহ থেকে আপনার মাথা তুলে তা দশবার বলুন। এভাবে তা প্রতি রাকআতে পঁচাত্তর বার হল। এ নিয়মে আপনি চার রাকআত সালাত পড়ুন। আপনি প্রতিদিন একবার এ সালাত আদায় করতে সক্ষম হলে তাই করুন। আপনি তাতে সক্ষম না হলে প্রতি সপ্তাহে তা একবার পড়ুন। আপনি তাতেও সক্ষম না হলে প্রতি মাসে তা একবার পড়ুন। আপনি তাতেও সক্ষম না হলে অন্তত জীবনে তা একবার পড়ুন। [১৩৮৭]
শা‘বান মাসের ১৫ তারিখের রাত সম্পর্কে
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে সালাত পড় এবং এর দিনে সওম রাখ। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)। [১৩৮৮] তাহকীক আলবানী : দঈফ জিদ্দান অথবা মাওযু। আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন। [১৩৮৯] আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। ৩/১৩৯০ (১). আবূ মূসা আশআরী (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। [১৩৯০] তাহকীক আলবানী : হাসান।
কৃতজ্ঞতাসূচক সালাত ও সাজদাহ
আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ জাহলের শিরচ্ছেদের সুসংবাদ প্রাপ্তি দিবসে দু’ রাকআত শোকরানা সালাত পড়েন। [১৩৯১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন প্রয়োজন বা কাজ পূর্ণ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হলে তিনি (কৃতজ্ঞতার) সাজদাহয় লুটিয়ে পড়েন। [১৩৯২] কা’ব বিন মালিক (রাঃ) আল্লাহ যখন তার তাওবা কবুল করেন তখন, তিনি (কৃতজ্ঞতার) সাজদাহয় লুটিয়ে পড়েন। [১৩৯৩] আবূ বাক্রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন খুশির খবর আসলে তিনি মহামহিম আল্লাহর সমীপে কৃতজ্ঞতার সাজদাহ্য় লুটিয়ে পড়তেন। [১৩৯৪]
সালাত গুনাহের কাফফারা স্বরূপ।
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) যখন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাদীস শুনতাম, তখন আল্লাহ তার দ্বারা আমার যতটুকু উপকার করতে চাইতেন করতেন। আর অন্য কেউ তাঁর থেকে আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করলে আমি তাকে শপথ করাতাম। সে শপথ করার পর আমি তাকে বিশ্বাস করতাম। আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করতেন এবং তিনি সত্য বলতেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি গুনাহ করার পর উত্তমরূপে উযু করে দু’ রাকআত সালাত পড়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। মিসআর (রাঃ)-এর বর্ণনায় শুধু সালাত উল্লেখ আছে (রাকআত সংখ্যা উল্লেখ নেই)। [১৩৯৫] আবূ আয়্যুব ও উকবাহ বিন আমির (রাঃ) (আসিম) বলেন, তারা সালাসিল যুদ্ধ আভিযানে অংশগ্রহন করতে রওয়ানা হন। এরপর তারা সীমান্ত এলাকায় সারিবদ্ধভাবে ঘোড়া বিন্যস্ত করেন। পরে তারা মুআবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট ফিরে আসেন। তখন তার নিকট উপস্থিত ছিলেন আবূ আয়্যুব ও উকবাহ বিন আমির (রাঃ)। আসিম (রাঃ) বলেন, হে আবূ আয়্যুব! এ বছরের যুদ্ধাভিযানে আমরা অংশগ্রহন করতে পারিনি। আমরা অবহিত হয়েছি যে, যে ব্যক্তি চারটি মাসজিদে সালাত পড়বে, তার গুনাহ মাফ করা হবে। আবূ আয়্যুব (রাঃ) বলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমাকে এর চেয়েও সহজ পথ বলে দিচ্ছি। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তি যথাবিধি উযু করে যথাবিধি সালাত পড়লে, তার পূর্বেকার গুনাহ ক্ষমা করা হয়। হে উক্বা! হাদীসটি কি এরূপ? তিনি বলেন, হাঁ। [১৩৯৬] উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তুমি কি মনে করো, কারো বাড়ির আঙ্গিনায় যদি প্রবাহমান নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শারীরে কি কোন ময়লা থাকে? তিনি বলেন, কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, পানি যেভাবে ময়লা দূর করে দেয়, তদ্রূপ সালাত ও গুনাহ দূর করে দেয়। [১৩৯৭] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) এক ব্যক্তি এক নারীর সাথে অপকর্ম করে, তবে যেনা নয়। আমি জানি না, আসলে কি ঘটেছিল। সম্ভবত যিনা ব্যতীত অন্য কিছু। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ব্যাপারটি তাঁর কাছে বর্ণনা করে। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) “সালাত আদায় করো দিনের দু’প্রান্তভাগে ও রাতের প্রথমাংশে, সৎকর্ম অবশ্যই অসৎ কর্ম মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এতো তাদের জন্য উপদেশ” (সূরাহ হূদ : ১১৪) সেই ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! এ আয়াত কি আমার জন্যই? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এর উপর আমাল করবে (তার জন্যও)। [১৩৯৮]
পাঁচ ওয়াক্তের ফরয সালাত ও তার হিফাযাত করা।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ আমার উম্মাতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছিলেন। আমি তা নিয়ে ফেরার পথে মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম। তখন মূসা (আঃ) বলেন, আপনার প্রভু আপনার উম্মাতের জন্য কি ফরয করেছেন? আমি বললামঃ তিনি আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তিনি বলেন, আপনি আপনার প্রভুর নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাত তা পড়তে সক্ষম হবে না। অতএব আমি আমার প্রভুর নিকট ফিরে গেলে তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দেন। অতঃপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে তা অবহিত করলাম। তিনি বলেন, আপনি আপনার প্রভুর কাছে ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাত তা পড়তে সক্ষম হবে না। আমি আমার প্রভুর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বললেনঃ তা পাঁচ ওয়াক্ত, পঞ্চাশের সমান। আর আমার কথা কখনো পরিবর্তন হয় না। তারপর আমি মূসা (আঃ) এর নিকট ফিরে আসলে তিনি আবার বলেন, আপনি আপনার প্রভুর নিকট ফিরে যান। আমি বললাম, আমি আমার প্রভুর নিকট পুনরায় ফিরে যেতে লজ্জাবোধ করছি। [১৩৯৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সলাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এরপর তোমাদের রব তা পাঁচ ওয়াক্তে পরিণত করেন। [১৪০০] উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি সলাতের কোন হক নষ্ট না করে তা যথাযতভাবে আদায় করবে, নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট কিয়ামাতের দিন তার জন্য এই প্রতিশ্রুতি আছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি সলাতের হক নষ্ট করবে এবং যথাযতভাবে সালাত পড়বে না, তার জন্য আল্লাহ্র কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন, অন্যথায় মাফ করবেন। [১৪০১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) একদা আমরা মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি উঠের পিঠে আরোহিত অবস্থায় এসে তার উটটিকে মাসজিদের নিকট বসিয়ে সেটিকে বাঁধলো, অতঃপর জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। রাবী বলেন, তারা বললেন, হেলান দিয়ে বসা এই সুন্দর ব্যক্তি। লোকটি তাঁকে বললো, হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছি। লোকটি তাঁকে বললো, হে মুহাম্মাদ! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং আমার প্রশ্নগুলো আপনার জন্য হবে কঠোর। এতে আপনি কিছু মনে করবেন না। তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছামত প্রশ্ন করো। লোকটি তাঁকে বললো, আমি আপনাকে আপনার প্রভুর এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রভুর শপথ দিচ্ছি, আল্লাহ কি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট প্রেরণ করেছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়া আল্লাহ! হাঁ। সে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, আল্লাহ কি আপনাকে দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়া আল্লাহ! হাঁ। সে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, আল্লাহ কি আপনাকে বছরের এই মাসে সওম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়া আল্লাহ! হাঁ। সে বললো, আমি আপনাকে আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, আল্লাহ কি আপনাকে আমাদের ধনাঢ্যদের নিকট থেকে যাকাত আদায় করে তা আমাদের গরীবদের মধ্যে বিত্রণের নির্দেশ দিয়েছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইয়া আল্লাহ! হাঁ। লোকটি বললো, আপনি যা নিয়ে এসেছেন আমি তার উপর ঈমান আনলাম। আর আমার সম্প্রদায়ের যেসব লোক আমার পেছনে রয়েছে, আমি তাদের প্রতিনিধি এবং আমি হলাম সা‘দ বিন বাক্র গোত্রের সদস্য দিমাম বিন সা’লাবাহ। [১৪০২] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব কাতাদাহ বিন রিবঈ (রাঃ) তাকে অবহিত করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মহামহিম আল্লাহ বলেছেন, আমি আপনার উম্মাতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছি এবং আমি আমার নিকট এ অঙ্গীকার করছি যে, যে ব্যক্তি যথাযতভাবে ওয়াক্তমত এসব সলাতের হেফাজত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর যে ব্যক্তি তা যথাযতভাবে হেফাজত করবে না, তার জন্য আমার পক্ষ থেকে কোন অঙ্গীকার নাই। [১৪০৩]
মাসজিদুল হারাম আর মাসজিদে নাববীতে সালাত পড়ার ফাযীলাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাসজিদুল হারাম ব্যতীত, অন্যান্য মাসজিদে পড়া সলাতের তুলনায় আমার এ মাসজিদে পড়া সালাত হাজার গুন শ্রেষ্ঠ। ১/১৪০৪ (১). আবূ হুরায়রা (রাঃ)। [১৪০৪] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অন্যান্য মাসজিদে পড়া সালাত অপেক্ষা আমার এ মাসজিদে পড়া সালাত হাজার গুন উত্তম (ফাযীলাতপূর্ণ) মাসজিদুল হারাম ব্যতীত। [১৪০৫] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অপরাপর মাসজিদের সালাত অপেক্ষা আমার মাসজিদের সালাত হাজার গুন শ্রেষ্ঠ (ফাদীলাতপূর্ণ)। অন্যান্য মাসজিদের সলাতের তুলনায় মাসজিদুল হারামের সালাত এক লক্ষ গুণ উত্তম (ফাদীলাতপূর্ণ)। [১৪০৬]
বাইতুল মাকদিস মাসজিদে সালাত পড়ার ফাযীলাত।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তদাসী মায়মূনাহ (বিনতু সা‘দ) (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে আমাকে ফাতওয়া দিন। তিনি বলেন, এটা হাশরের মাঠ এবং সকলের একত্র হওয়ার ময়দান। তোমরা তাতে সালাত পড়ো। কেননা সেখানে এক ওয়াক্ত সালাত পড়া অন্যান্য স্থানের তুলনায় এক হাজার গুণ উত্তম। আমি বললাম, আপনি কি মনে করেন, যদি আমি সেখানে যেতে সমর্থ না হই? তিনি বলেন, তুমি তাতে বাতি জ্বালানোর জন্য যায়তুন তৈল হাদিয়া পাঠাও। যে ব্যক্তি তা করলো, সে যেন সেখানে উপস্থিত হলো। [১৪০৭] তাহকীক আলবানী : মুনকার। আবদুল্লাহ বিন আম্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সুলায়মান বিন দাঊদ (আঃ) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন, আল্লাহ্র হুকুমমত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিসে কেবলমাত্র সালাত পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রথম দু’টি তাঁকে দান করা হয়েছে, এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে। [১৪০৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, (আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে) তিনটি মাসজিদ ব্যতীত আর কোথাও সফর করা যাবে না : মাসজিদুল হারাম, আমার এই মাসজিদ এবং মাসজিদুল আক্সা। [১৪০৯] আবূ সাঈদ ও আবদুল্লাহ বিন আম্র ইবনুল আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি মাসজিদ ব্যতীত আর কোথাও (আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়) সফর করা যাবে না। মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুল আক্সা এবং আমার এই মাসজিদের দিকে। [১৪১০]
কুবা মাসজিদে সালাত পড়ার ফাযীলাত।
উসাইদ বিন যুহায়র আল-আনসারী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বলেন, কুবা মাসজিদে এক ওয়াক্ত সালাত পড়া একটি উমরার সমতুল্য। [১৪১১] সাহ্ল বিন হুনাইফ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করলো, অতঃপর কুবা মাসজিদে এসে এক ওয়াক্ত সালাত পড়লো, তার জন্য একটি উমরাহ্র সমান সাওয়াব রয়েছে। [১৪১২]
জামে মাসজিদে সালাত পড়ার ফাদীলাত।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তির নিজ ঘরে এক ওয়াক্ত সালাত পড়ার নেকী এক ওয়াক্ত সলাতেরই সমান, তার পাড়ার বা গোত্রের মাসজিদে তার এক সালাত পঁচিশ সলাতের সমতুল্য, জুমুআহ মাসজিদে তার এক সালাত পাঁচ শত সলাতের সমান। মাসজিদুল আকসায় তার এক সালাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমতুল্য, আমার মাসজিদে তার এক সালাত পঞ্চাশ হাজার সলাতের সমতুল্য এবং মাসজিদুল হারামে তার এক সালাত এক লাখ সলাতের সমতুল্য। [১৪১৩]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বারের সূচনা।
উবাই বিন কা’ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাপড়ার মাসজিদে থাকা অবস্থায় একটি খেজুর গাছের খুঁটির পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি ঐ খেজুর গাছের খুঁটি ঘেঁষে খুতবাহ দিতেন। তাঁর সহাবীদের একজন বলেন, আমরা কি আপনার জন্য এমন একটি জিনিসের ব্যবস্থা করবো, যার উপর আপনি জুমুআর দিন দাঁড়াবেন। যাতে লোকেরা আপনাকে দেখতে পায় এবং আপনার খুতবাহ তাদের শুনাতে পারেন। তিনি বলেন, হাঁ। তখন ঐ ব্যক্তি তাঁর জন্য তিন ধাপবিশিষ্ট একটি মিম্বার তৈরি করেন। এটি ছিল সবচাইতে উঁচু মিম্বার। মিম্বারটি বানানো হলে তারা তা যথাস্থানে স্থাপন করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উঠে খুতবাহ দেয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি ঐ খুঁটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে। ফলে তা ফেটে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনো খেজুর গাছের কান্নার শব্দ শুনে নেমে আসেন এবং তাতে নিজ হাত বুলিয়ে দেন। ফলে তা শান্ত হয়ে যায়। তারপর তিনি মিম্বারে ফিরে যান। এরপর যখন তিনি সালাত আদায় করতেন তখন ঐ খুঁটির দিকে রোখ করে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর মাসজিদ যখন (সংস্কারের জন্য) ভাঙ্গা হলো, তখন উবাই বিন কা’ব (রাঃ) খুঁটিটি নিয়ে তার ঘরে রাখেন। অবশেষে উইপোকা তা খেয়ে ফেলে এবং ফলে তা ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। [১৪১৪] আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর গাছের একটি শুকনো খুঁটি ঘেঁষে খুতবাহ দিতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের ব্যবস্থা করলে, তিনি (খুতবাহ দেয়ার জন্য) মিম্বারে গিয়ে উঠলে খেজুর গাছের খুঁটিটি কেঁদে উঠে। তিনি তার কাছে এসে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দেন এবং তা শান্ত হয়। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তার গায়ে হাত না বুলালে তা কিয়ামত পর্যন্ত রোনাজারি করতো। [১৪১৫] আবূ হাযিম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বার কিসের দ্বারা নির্মিত ছিল সে বিষয়ে লোকেরা মতভেদ করে। তারা সাহল বিন সা‘দ (রাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত আর কেউ বেঁচে নেই। এটি ছিল আল-গাবা বনভূমির আছল নামীয় গাছের তৈরি। অমুক মহিলার মুক্তদাস কাঠমিস্ত্রী তা তৈরি করেছিল। সেটি এনে স্থাপন করা হলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উপর দাঁড়ান। অতঃপর তিনি কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালে লোকেরাও তাঁর পিছনে দাঁড়ায়, অতঃপর তিনি কিরাআত পড়েন, তারপর রুকূ‘ করেন, অতঃপর মাথা উঠান, অতঃপর কিবলামুখী অবস্থায় পেছনে সরে এসে যমীনে সাজদাহ করেন, অতঃপর আবার মিম্বারের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিরাআত পড়েন, তারপর রুকূ‘ করে দাঁড়িয়ে যান, অতঃপর আগের মত পেছনে সরে এসে মাটিতে সাজদাহ করেন। [১৪১৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি গাছের মূলে অথবা খেজুর গাছের কাণ্ডে ঠেস দিয়ে দাড়াতেন। অতঃপর তিনি একটি মিম্বার গ্রহণ করেন। রাবী বলেন, খেজুর কাণ্ডটি কেঁদে দিলো। জাবির (রাঃ) বলেন, এমনকি মাসজিদের লোকেরা এর কান্না শুনতে পায়। অবশেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গাছের নিকট এসে তাতে হাত বুলান, ফলে তা শান্ত হয়। তাদের কতক বললেন, তিনি এর কাছে না এলে এটা কিয়ামাত পর্যন্ত কাঁদতো। [১৪১৭]
(নফল) সালাতসমূহে দীর্ঘ কিয়াম করা।
আবদুল্লাহ্ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) এক রাতে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ান যে, শেষে আমি একটি অসমীচীন কাজের ইচ্ছা করলাম। আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) বলেন, আমি বললাম, সেটি কী? তিনি বলেন, আমি তাঁকে একাকী সালাতরত অবস্থায় ত্যাগ করে বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলাম। [১৪১৮] মুগীরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত পড়েন যে, তাঁর পদদ্বয় ফুলে যায়। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্ তো আপনার পূর্বাপার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? [১৪১৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (দীর্ঘক্ষণ ধরে) সালাত আদায় করতে থাকতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় ফুলে যেতো। তাঁকে বলা হলো, আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না? [১৪২০] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্ সালাত উত্তম? তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়া সালাত। [১৪২১]
অধিক সাজদাহ সম্পর্কে।
আবূ ফাতিমা (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে এমন একটি আমাল বলে দিন, যা আমি অবিচলভাবে অনবরত করতে পারি। তিনি বলেন, তুমি সাজদাহ করো। কেননা তুমি যখনই আল্লাহ্র জন্য একটি সাজদাহ করবে, আল্লাহ তার বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ সমুন্নত করবেন এবং তোমার একটি গুণাহ মাফ করবেন। [১৪২২] মা‘দান বিন আবূ তালহাহ আল-ইয়া‘মারী আমি সাওবান (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে বললাম, আপনি আমার নিকট একটি হাদীস বর্ণনা করুন, আশা করি তার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। রাবী বলেন, তিনি নীরব থাকলেন। আমি বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করলাম, এবারও তিনি নীরব থাকলেন। এভাবে তিনবার নীরব থাকলেন। অবশেষে তিনি আমাকে বলেন, তুমি অবশ্যই আল্লাহ্র জন্য সাজদাহ করো। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : যে কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি সাজদাহ করলেই আল্লাহ এর বিনিময়ে তার একধাপ মর্যাদা বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেন। মা‘দান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আবূদ-দারদা’ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও একই কথা বলেন। [১৪২৩] উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : যখন কোন বান্দা আল্লাহ্র জন্য একটি সাজদাহ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে একটি নেকী দান করেন, তার একটি গুনাহ মাফ করেন এবং তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নত করেন। অতএব তোমরা অধিক সংখ্যায় সাজদাহ করো। [১৪২৪]
সর্বপ্রথম বান্দার সলাতের হিসাব নেয়া হবে।
আনাস বিন হাকীম আদ-দব্বী (মাসতূর বা অপরিচিত) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি তোমার শহরে পৌছে তার বাসিন্দাদের অবহিত করবে যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : কিয়ামাতের দিন মুসলিম বান্দার নিকট থেকে সর্বপ্রথম ফরয সলাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি সে তা পূর্ণরূপে আদায় করে থাকে (তবে তো ভালো), অন্যথায় বলা হবে : দেখো তো তার কোন নফল সালাত আছে কি না? যদি তার নফল সালাত থেকে থাকে, তবে তা দিয়ে তার ফরয সালাত পূর্ণ করা হবে। অতঃপর অন্যান্য সব ফরয আমালের ব্যাপারেও অনুরূপ ব্যবস্থা করা হবে। [১৪২৫] তামীম আদ-দারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামাতের দিন বান্দার নিকট থেকে সর্বপ্রথম তার সলাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি সে তা যথাযথভাবে পড়ে থাকে, তখন তার নফল সালাত তার জন্য অতিরিক্ত হিসাবে গণ্য করা হবে। সে তা পূর্ণরূপে না পড়ে থাকলে মহান আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের বলবেন : দেখো তো আমার বান্দার জন্য নফল কিছু পাও কিনা। সে তার ফরযে যা ঘাটতি করেছে, তোমরা তা নফল দ্বারা পূরণ করো। তারপর অপরাপর আমালের হিসাবও অনুরূপভাবে নেয়া হবে। [১৪২৬]
ফরয সলাতের স্থানে দাঁড়িয়ে নফল সালাত পড়া সম্পর্কে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ (ফরয) সালাত পড়ার পর একটু সামনে এগিয়ে বা পিছনে সরে অথবা তার ডানে বা বাঁমে সরে (নফল) সালাত আদায় করতে কি অপরাগ হবে? [১৪২৭] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ইমাম যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয সালাত পড়ে, সেই স্থান থেকে না সরে সে যেন (নফল) সালাত না পড়ে। ২/১৪২৮ (১). মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। [১৪২৮] তাহকীক আলবানী : সহীহ।
মাসজিদে সালাত পড়ার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নেয়া।
আবদুর রহমান বিন শিব্ল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন : সলাতের সাজদাহয় কাকের মত ঠোকর মারতে, হিংস্র জন্তুর ন্যায় বাহুদ্বয় যমীনের উপর বিছিয়ে দিতে এবং (মাসজিদে) কোন লোকের সালাত পড়ার স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে, যেমন উট আস্তাবলে স্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। [১৪২৯] সালামাহ ইবনুল আক্ওয়া’ (রাঃ) তিনি একটি খুঁটির নিকটে দাঁড়িয়ে দুপুরের সালাত আদায় করতেন, তবে সারিতে নয়। আমি(ইয়াযীদ) তাকে মাসজিদের কোন স্থানের দিকে ইশারা করে বললাম, আপনি এখানে সালাত পড়েন না কেন? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ স্থানে সালাত আদায় করার চেষ্টা করতে দেখলাম। [১৪৩০]
তুমি সালাত পড়ার সময় জুতা খুললে তা কোথায় রাখবে?
আবদুল্লাহ ইবনুস সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাত আদায় করতে দেখলাম। তিনি তাঁর জুতাজোড়া তাঁর বাম পাশে রাখলেন। [১৪৩১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তুমি তোমার পদদ্বয়ে জুতা পরে থাকবে। তুমি তা খুলে ফেললে তোমার দু’ পায়ের মাঝখানে তা রাখো, তা তোমার ডান পাশেও রেখো না এবং তোমার সাথীর ডানে বা তোমার পেছনেও রেখো না। অন্যথায় তাতে তোমার পেছনের লোক কষ্ট পাবে। [১৪৩২] তাহকীক আলবানী : নিতান্ত দঈফ, দু’প্রান্তের অংশ সহীহ।