6. জানাযাহ
রোগীকে দেখতে যাওয়া
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের ছয়টি ‘হক’ রয়েছেঃ সে তার সাথে সাক্ষাতকালে তাকে সালাম দিবে, সে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করবে, সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে, সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাবে, সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশগ্রহন করবে এবং সে নিজের জন্য যা পছন্দ করবে, তার জন্যও তা পছন্দ করবে। [১৪৩৩] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) কথাটি অতিরিক্ত হওয়ায় দঈফ, তবে উক্ত বাক্যগুলো অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আবূ মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের চারটি অধিকার আছেঃ সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে, সে তাকে দাওয়াত দিলে তা কবুল করবে, সে মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে এবং সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে। [১৪৩৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার আছেঃ সালামের জবাব দেয়া, দাওয়াত কবুল করা, জানাযায় উপস্থিত হওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া এবং হাঁচিদাতা আলহামদু লিল্লাহ বললে তার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। [১৪৩৫] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) পদব্রজে আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বনু সালিমায় অবস্থান করছিলাম। [১৪৩৬] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিন পর রোগীকে দেখতে যেতেন। [১৪৩৭] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, বলেছেনঃ তোমরা রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার দীর্ঘায়ু কামনা করবে। যদিও তা কিছুই প্রতিরোধ করতে পারে না, তবুও তা রোগীর অন্তরে আনন্দের উদ্রেক করে। [১৪৩৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বলেন, তুমি কী চাও? সে বললো, আমি গমের রুটি খেতে চাই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কারো কাছে গমের রুটি থাকলে সে যেন তা তার ভাইয়ের জন্য পাঠায়। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কারো রোগী কিছু খেতে আকাঙক্ষা করবে সে তাকে যেন তা খাওয়ায়। [১৪৩৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে তার নিকট উপস্থিত হন। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কি কিছু খেতে আগ্রহী? তুমি কি কা‘কা (পারস্য দেশীয় রুটি) খেতে আগ্রহী? সে বললো, হ্যাঁ। অতএব তারা তার জন্য খুঁজে আনে। দঈফ। [১৪৪০] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি কোন রোগীকে দেখতে গেলে তাকে তোমার জন্য দুআ করতে বলো। কেননা তার দুআ ফেরেশতাদের দুআর মত। [১৪৪১]
যে ব্যক্তি রোগীকে দেখতে যায় তার সওয়াব।
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি তার রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে গেলে সে না বসা পর্যন্ত জান্নাতের খেজুর আহরণ করতে থাকে। অতঃপর সে বসলে রহমত তাকে ঢেকে ফেলে। সে ভোরবেলা তাকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দুআ করতে থাকে। সে সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য দুআ করতে থাকে। [১৪৪২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি রোগীকে দেখতে গেলে আকাশ থেকে একজন আহবানকারী তাকে ডেকে বলেন, তুমি উত্তম কাজ করেছো, তোমার পথ চলা কল্যাণময় হোক এবং তুমি জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্ধারণ করে নিলে। [১৪৪৩]
মুমূর্ষু ব্যক্তিকে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দেয়া।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ”-এর তালকীন দাও। [১৪৪৪] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু”-এর তালকীন দাও। [১৪৪৫] আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালীমুল কারীম, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন”-এর তালকীন দাও। তারা বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! জীবিত (সুস্থ) ব্যক্তিদের বেলায় এ দুআ কেমন হবে? তিনি বললেনঃ অধিক উত্তম, অধিক উত্তম। [১৪৪৬]
রোগীর নিকট উপস্থিত হয়ে যে দুআ পড়তে হয়।
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রোগী কিংবা মৃতের নিকট উপস্থিত হলে (তার সম্পর্কে) ভালো কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলবে, ফেরেশতারা তার উপর আমীন’ বলবেন। আবূ সালামাহ (রাঃ) ইনতিকাল করলে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আবূ সালামাহ ইন্তিকাল করেছেন। তিনি বলেন, তুমি বলো, “হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দাও।” রাবী বলেন, আমি তাই করলাম। আল্লাহ্ আমাকে তার চাইতেও উত্তম বিনিময় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করেছেন। [১৪৪৭] মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃতদের কাছে সূরা ইয়াসিন পড়ো। [১৪৪৮] আবদুর রহমান কা‘ব (রাঃ)-এর মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তার নিকট উম্মু বিশর বিনতুল বারা’ বিন মারূর (রাঃ) এসে বলেন, হে আবূ আবদুর রহমান! তুমি অমুকের সাক্ষাত পেলে আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম পৌঁছাবে। তিনি বলেন, হে উম্ম বিশর! আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করুন। আমি এখন তার চেয়ে জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি। তিনি বলেন, হে আবূ আবদুর রহমান! তুমি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনোনিঃ মু’মিন ব্যক্তির আত্মা সবুজ পাখির মতো অবস্থান করে জান্নাতের গাছের সাথে ঝুলে থাকে? তিনি বলেন, হাঁ। উম্ম বিশ (রাঃ) বলেন, প্রকৃত কথা এটাই। [১৪৪৯] মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির আমি মুমূর্ষু জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম পৌঁছে দিবেন। [১৪৫০]
মু’মিন ব্যক্তিকে মৃত্যুযন্ত্রনার কারণে প্রতিদান দেয়া হবে।
আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট উপস্থিত হন। তখন তার নিকট তার এক প্রতিবেশী মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চিন্তিত দেখে বলেন, তোমার প্রতিবেশির কারণে তুমি চিন্তিত হয়ো না। কেননা এটা সৎকর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত। [১৪৫১] বুরায়দাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কপালের ঘামসহ মু’মিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। [১৪৫২] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, বান্দার পরিচয় মানুষ থেকে কখন ছিন্ন হয়ে যায়? তিনি বলেন, যখন সে (মৃত্যুর ফেরেশতা ও বারযাখ) দেখতে পায়। [১৪৫৩]
মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করে দেয়া।
উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আবূ সালামাহ (রাঃ)–এর নিকট উপস্থিত হন, তখন তার চোখ খোল ছিল। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দেন, অতঃপর বলেন, যখন রূহ কবয করা হয়, তখন চোখ তার অনুসরণ করে। [১৪৫৪] শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃত ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হয়ে তার চোখ দু’টি বন্ধ করে দিও। কেননা চোখ রূহের অনুসরণ করে এবং তোমরা তার সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করবে। কারণ গৃহবাসীরা যা বলেন ফেরেশতারা তাতে আমীন’ বলেন। [১৪৫৫] তাহকীক আলবানীঃ মুসলিমে চোখ বন্ধ করে দেয়ার কথা ব্যতীত হাসান।
মৃত ব্যক্তিকে চুম্বন করা।
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসমান বিন মাযঊন (রাঃ)-এর লাশ চুম্বন করেন। আমি যেন এখনো তাঁর দু’ গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখেছি। [১৪৫৬] আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর লাশ চুম্বন করেন। [১৪৫৭]
মৃত ব্যাক্তিকে গোসল দেওয়া।
উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা উম্মু কুলসুমের গোসল দেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা তাকে তিন বা পাঁচ অথবা ততোধিক বার কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও। শেষবারে কর্পূর বা কিছু কর্পূর লাগিয়ে দাও। তোমরা গোসল দেওয়া শেষ করে আমাকে ডাকবে। অতএব আমরা তার গোসল দেওয়া শেষ করে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি তাঁর জামা আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে বলেন, এটি দিয়ে ভাল করে আবৃত করো। উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) থেকে এই সনদসূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। হাফসাহ (রাঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ "তোমরা তাকে বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও।" তার বর্ণনায় আরো আছে, "তোমরা তাকে তিন বা পাঁচবার গোসল দাও।" তার বর্ণনায় আরো আছেঃ তোমরা তার ডান দিক থেকে তার উযূর অঙ্গগুলো থেকে গোসল শুরু করো।" এই বর্ণনায় আরো আছেঃ উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) আরো বলেন, "আমরা তার মাথার চুল তিন গোছায় বিভক্ত করে আঁচড়ে দিলাম।" [১৪৫৮] উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা উম্মু কুলসুমের গোসল দেই। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা তাকে তিন বা পাঁচ অথবা ততোধিক বার কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও। শেষবারে কর্পূর বা কিছু কর্পূর লাগিয়ে দাও। তোমরা গোসল দেওয়া শেষ করে আমাকে ডাকবে। অতএব আমরা তার গোসল দেওয়া শেষ করে তাঁকে সংবাদ দিলাম। তিনি তাঁর জামা আমাদের দিকে নিক্ষেপ করে বলেন, এটি দিয়ে ভাল করে আবৃত করো। উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) থেকে এই সনদসূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। হাফসাহ (রাঃ) এর বর্ণনায় আছেঃ "তোমরা তাকে বেজোড় সংখ্যায় গোসল দাও।" তার বর্ণনায় আরো আছে, "তোমরা তাকে তিন বা পাঁচবার গোসল দাও।" তার বর্ণনায় আরো আছেঃ তোমরা তার ডান দিক থেকে তার উযূর অঙ্গগুলো থেকে গোসল শুরু করো।" এই বর্ণনায় আরো আছেঃ উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) আরো বলেন, "আমরা তার মাথার চুল তিন গোছায় বিভক্ত করে আঁচড়ে দিলাম।" [১৪৫৮] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি তোমার ঊরু খুলে রেখ না এবং জীবিত ও মৃত কারো ঊরুর প্রতি দৃষ্টিপাত করো না। [১৪৫৯] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মৃতদের আমানতের সাথে (গোপনীয় অঙ্গসমূহ যথাসম্ভব ঢেকে রেখে) গোসল দাও। [১৪৬০] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মৃতকে গোসল দিল, কাফন পরালো, সুগন্ধি মাখলো, বহন করে নিয়ে গেল, তার জানাজার সলাত পড়লো এবং তার গোচরীভূত হওয়া তার গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করল না, তার থেকে গুনাহসমূহ তার জন্মদিনের মত বের হয়ে যায়। [১৪৬১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মৃতকে গোসল দিলো, সে যেন গোসল করে। [১৪৬২]
স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে গোসল দেওয়া।
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যা আমি পরে অবগত হয়েছি, তা যদি পূর্বে অবহিত হতে পারতাম, তাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর স্ত্রীগণ ব্যতীত আর কেউ গোসল দিতে পারত না। [১৪৬৩] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাকী থেকে ফিরে এসে আমাকে মাথা ব্যাথায় যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় পেলেন। তখন আমি বলছিলাম, হে আমার মাথা! তিনি বলেন, হে আয়িশাহ! আমিও মাথা ব্যাথায় ভুগছি। হে আমার মাথা! অতঃপর তিনি বলেন, তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যেতে, তাহলে তোমার কোন ক্ষতি হতো না। কেননা আমি তোমাকে গোসল করাতাম, কাফন পরাতাম, তোমার জানাযার সলাত আদায় করতাম এবং তোমাকে দাফন করতাম। [১৪৬৪]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গোসল করানোর বিবরণ।
বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, গোসল দানকারীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গোসল দিতে শুরু করলে, তাদের মধ্যকার একজন ভিতর থেকে তাদেরকে জোর গলায় বলেন, তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরনের জামা খুলো না। [১৪৬৫] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গোসল দানকালে মৃতের থেকে যা (নাপাকী) অন্বেষন করা হয়, গোসলদানকারী তা তার মধ্যে অন্বেষন করেন, কিন্তু কিছুই পাননি। আলী (রাঃ) বলেন, আমার পিতার শপথ! হে তায়্যিব! ধন্য আপনার জীবন, ধন্য আপনার মৃত্যু। [১৪৬৬] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে গারস কূপের সাত মশ্ক পানি দিয়ে গোসল দিবে। [১৪৬৭]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাফন।
আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে তিনখানা সাদা ইয়ামানী কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়। এর মধ্যে কামিস ও পাগড়ি ছিলো না। আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলা হল, তারা (লোকেরা) ধারনা করে যে, তাঁকে কারুকার্য খচিত চাদর (হিবারা) দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছে। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারা কারুকার্য খচিত চাদর এনেছিল, কিন্তু তা দিয়ে তাঁকে কাফন দেয়নি। [১৪৬৮] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (ইয়ামানের) সাহূল এলাকার তৈরী তিনখন্ড সাদা মসৃণ কাপড়ে কাফন দেয়া হয়। [১৪৬৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনখানা কাপড়ে কাফন দেয়া হয়ঃ তার মধ্যে ছিল যে জামা পরিহিত অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন এবং নাজারানে তৈরী একটি চাদর। [১৪৭০]
মুস্তাহাব কাফন প্রসঙ্গে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাপড়সমূহের মধ্যে সাদা কাপড়ই অধিক উত্তম। অতএব তোমারা তোমাদের মৃতদের সাদা কাপড়ে কাফন দাও এবং তোমরাও সাদা কাপড় পরিধান করো। [১৪৭১] উবাদাহ ইবনুস-সামিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, উত্তম কাফন হলো হুল্লাহ (চাদর)। [১৪৭২] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের ওলী নিযুক্ত হলে সে যেন তার উত্তম কাফনের ব্যবস্থা করে। [১৪৭৩]
কাফনে আবৃত করার সময় লাশ দর্শন।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-তনয় ইবরাহীম ইন্তিকাল করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের বলেন, আমি না দেখা পর্যন্ত তোমরা তাকে কাফনে আবৃত করো না। অতঃপর তিনি এসে তার উপর ঝুঁকে পড়েন এবং কাঁদেন। [১৪৭৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, তা'লাক ইবনু মাজাহ।
মৃতের জন্য বিলাপ করা নিষেধ।
হুযায়ফাহ (রাঃ) হুযায়ফাহ (রাঃ) এর উপস্থিতিতে কেউ মারা গেলে তিনি বলতেন, তার (মৃত্যু) সম্পর্কে তোমরা কাউকে খবর দিওনা। কেননা আমি তার জন্য বিলাপের আশঙ্কা করছি। আমি আমার এই দু' কানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিলাপ করতে নিষেধ করতে শুনেছি। [১৪৭৫]
জানাযায় অংশগ্রহণ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা দ্রুত জানাযার ব্যবস্থা করবে। কেননা সে সত্যকর্মপরায়ণ লোক হলে তো উত্তম, তোমরা তাকে সেদিকে পৌঁছে দিলে। সে এর অন্যথা হলে তো তা বড়ই মন্দ, তোমরা তা তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখলে। [১৪৭৬] আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) যে ব্যক্তি লাশ বহন করে, সে যেন খাটের চারদিক ধারণ করে। কারণ এটা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর সে চাইলে আরো ধরতে পারে, আর চাইলে ত্যাগও করতে পারে। [১৪৭৭] আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লাশ তাড়াহুড়া করে নিয়ে যেতে দেখে বলেন, তোমরা যেন শান্তভাবে যাও। [১৪৭৮] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তদাস সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতক লোককে জন্তুযামে আরোহিত অবস্থায় লাশের সাথে যেতে দেখে বলেন, তোমাদের কি লজ্জা হয় না যে, আল্লাহ্র ফেরেশতাগণ পদব্রজে যাচ্ছেন আর তোমরা বাহনে উপবিষ্ট হয়ে যাচ্ছো! [১৪৭৯] মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, আরোহী ব্যক্তি লাশের পেছনে থাকবে এবং পদব্রজে গমনকারী যেমন ইচ্ছা চলতে পারে। [১৪৮০]
লাশের আগে আগে যাওয়া।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে লাশের আগে আগে হেঁটে যেতে দেখেছি। [১৪৮১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র, উমার ও উসমান (রাঃ) লাশের আগে আগে হেঁটে যেতেন। [১৪৮২] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লাশের অনুসরণ করতে হবে (পিছনে পিছনে যেতে হবে), লাশ অনুসরণ করবে না (পেছনে থাকবে না)। যে ব্যক্তি লাশের আগে আগে যায়, সে জানাযার সাথে শরীক নয়। [১৪৮৩]
উদলা শরীরে লাশের সাথে সাথে যাওয়া নিষেধ।
ইমরান ইবনুল হুসায়ন ও আবূ বারযাহ (রাঃ) তারা বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে একটি জানাযার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। তিনি একদল লোককে পরিধেয় বস্ত্র ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কেবল জামা পরিহিত অবস্থায় হেঁটে যেতে দেখেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা জাহিলী যুগের রীতিনীতি অবলম্বন করছো অথবা জাহিলী যুগের কাজ করছো? আমরা ইচ্ছা হয় যে, আমি তোমাদের বদদোয়া করি এবং তোমরা চেহারায় বিকৃত আকৃতিতে পরিবর্তিত হয়ে যাও। রাবী বলেন, তারা তাদের কাপড় পরিধান করলো এবং আর কখনও অনুরূপ করেনি। [১৪৮৪] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।
জানাযাহ হাযির হলে বিলম্ব করবে না এবং আগুন নিয়ে লাশের অনুসরণ করবে না।
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জানাযাহ উপস্থিত হলে তোমরা (দাফনে) বিলম্ব করো না। [১৪৮৫] আবূ বুরদাহ আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) এর মৃত্যু উপস্থিত হলে তিনি ওয়াসিয়াত করলেন, তোমরা আমার লাশের সাথে আগুন নিয়ে যেও না। তারা তাকে বলেন, আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বলেন, হাঁ, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। [১৪৮৬]
একদল মুসলিম যার জানাযার সালাত পড়লো।
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক শত মুসলমান কারো জানাযার সালাত পড়লে তাকে ক্ষমা করা হয়। [১৪৮৭] আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ)-এর মুক্তদাস কুরায়ব আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) এর এক ছেলে মারা গেলে তিনি আমাকে বলেন, হে কুরাইব! উঠে গিয়ে দেখো তো, আমার ছেলের জানাযায় কেউ এসেছে কিনা? আমি বললাম হাঁ। তিনি বলেন, তোমার অমঙ্গল হোক, তুমি তাদের কতজনকে দেখলে, চল্লিশজন? আমি বললাম, না, বরং তারা আরো অধিক। তিনি বলেন, তোমরা আমার ছেলের লাশ নিয়ে বের হও। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অন্তত চল্লিশজন মু’মিন অপর মু’মিন ব্যক্তির সুপারিশ করলে, আল্লাহ্ তাদের সুপারিশ কবুল করেন। [১৪৮৮] মারসাদ (রাঃ) কোন জানাযাহ উপস্থিত হলে এবং লোকসংখ্যা কম হলে, তিনি তাদের তিন সারিতে কাতারবন্দী করে সালাত পড়তেন। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মৃতের জানাযায় মুসলমানদের তিন সারি লোক হলেই তা (জান্নাত) অবধারিত করে। [১৪৮৯]
মৃত ব্যক্তির প্রতি প্রশংসা করা
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হলো এবং উচ্ছসিত প্রশংসা করা হলো। তিনি বলেন, অবধারিত হয়ে গেলো। তারপর আরেকটি লাশ তাঁর নিকট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো এবং কুৎসা বর্ণনা করা হলো। তিনি বলেন অবধারিত হয়ে গেলো। বলা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি এই লাশের জন্যে অবধারিত হয়ে গেলো এবং ঐ লাশের জন্যও অবধারিত হয়ে গেলো বললেন। তিনি বলেন, দলের সাক্ষ্য অনুপাতে। মু’মিনরা পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র সাক্ষীস্বরুপ। [১৪৯০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে একটি লাশ বয়ে নিয়ে যাওয়া হলো এবং তাঁর নানারূপ ভূয়সী প্রশংসা করা হলো। তিনি বলেনঃ অবধারিত হয়ে গেলো। অতঃপর তাঁর নিকট দিয়ে লোকেরা আরেকটি লাশ বয়ে নিয়ে গেলো এবং তাঁর বিভিন্নুপ কুৎসা বর্ণনা করা হলো, তিনি বলেনঃ অবধারিত হয়ে গেলো। কেননা তোমরা পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র সাক্ষীস্বরূপ। [১৪৯১]
জানাযার সলাতে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান।
আল-ফাযারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিফাসগ্রস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী এক মহিলার জানাযার সলাত পড়েন এবং তিনি তাঁর মাঝ বরাবর দাঁড়ান। [১৪৯২] আবু গালিব (হাযুর) (তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদীস বর্ণনায় ভুল করেন) আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ) কে এক ব্যক্তির জানাযার সলাত পড়তে দেখলাম। তিনি তাঁর মাথা বরাবর দাঁড়ান। আরেকটি মহিলার লাশ উপস্থিত করা হলে লোকেরা বললো, হে আবূ হামযাহ! তাঁর জানাযার সলাত পড়ুন। তিনি খাটের মাঝ বরাবর দাঁড়ান। আলা’ বিন যিয়াদ (রহঃ) তাকে বলেন, হে আবূ হামযা! আপনি পুরুষের জানাযায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন, মহিলার জানাযায় যেভাবে দাঁড়িয়েছেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও সেভাবে দাঁড়াতে দেখেছেন কি? তিনি বলেন, হাঁ। তিনি আমাদের দিকে ফিরে বলেন, তোমরা স্মরণ রেখো। [১৪৯৩]
জানাযার সলাতে কিরাআত পড়া।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পড়েন। [১৪৯৪] উম্মু শারীক আল-আনসারিয়্যাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে জানাযার সলাতে সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। [১৪৯৫]
জানাযার সলাতে দু’আ করা।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযার সলাত পড়াকালে তার জন্য একনিষ্ঠভাবে দুআ করো। [১৪৯৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সালাতে বলতেনঃ “ হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, উপস্থিত, অনুপস্থিত, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখ তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখো এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দান করো, তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যুদান করো। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এর প্রতিদান থেকে বঞ্ছিত করো না এবং এর পরে আমাদের পথভ্রষ্ট করো না”। [১৪৯৭] ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসলমানদের এক ব্যাক্তির জানাযার সালাত আদায় করলেন। আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক তোমার যিম্মায় এবং তোমার নিরাপত্তার বন্ধনে। তুমি তাকে কবরের বিপর্যয় ও দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করো এবং তাকে দয়া করো। কেননা তুমিই কেবল ক্ষমাকারী পরম দয়ালু”। [১৪৯৮] আওফ বিন মালিক (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক আনসারির জানাযার সলাতে শরীক ছিলাম। আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! তুমি তাকে দয়া করো, তাকে ক্ষমা করো এবং তার উপর করুণা বর্ষণ করো, তাকে ক্ষমা করো, তার পাপরাশি দূর করে দাও। তাকে ঠান্ডা পানি ও বরফ দ্বারা ধৌত করো এবং সাদা কাপড় থেকে যেভাবে ময়লা পরিষ্কার করা হয়, তদ্রূপ তাকে গুনাহ থেকে পরিচ্ছন্ন করো। তার ঘরের পরিবর্তে তাকে উত্তম আবাস দান করো, তার পরিবার থেকেও উত্তম পরিবার তাকে দান করো এবং তাকে কবরের বিপর্যয় ও দোযখের শাস্তি থেকে রক্ষা করো”। আওফ (রাঃ) বলেন, তখন আমার আকাংক্ষা হলো যে, আমি যদি ঐ ব্যক্তির স্থানে হতাম। [১৪৯৯] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাক্র ও উমার (রাঃ) আমাদের জন্য জানাযার সলাতে যে (কোন সময় পড়ার) অবকাশ রেখেছেন, তা অন্য কোন সলাতের বেলায় রাখেননি অর্থাৎ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করেননি। [১৫০০]
জানাযার সলাতে চার তাকবীর বলা।
উসমান বিন আফফান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসমান বিন মাযঊন (রাঃ)-এর জানাযার সলাত চার তাকবীর পড়েন। [১৫০১] আল-হাজারী (ইবরাহীম বিন মুসলিম) ([আরবী] হাদিস বর্ণনায় দুর্বল) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আবদুল্লাহ বিন আবু আওফা আল-আসলামী (রাঃ) এর সাথে তার এক কন্যার জানাযার সলাত আদায় করলাম। তিনি তাতে চার তাকবীর বলেন। চতুর্থ তাকবীরের পর তিনি ক্ষণিক নীরব থাকেন। রাবী বলেন, আমি কাতারবদ্ধ লোকদের সুবহানাল্লাহ বলতে শুনেছি। তিনি সালাম ফিরানোর পর বললেন, তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি পঞ্চম তাকবীর বলবো? তারা বললো, আমরা তাই অনুমান করেছিলাম। তিনি বলেন, আমি কখনো তা করতাম না। তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার তাকবীর বলতেন, তারপর ক্ষণিক চুপচাপ থাকতেন, তারপর আল্লাহ্র মর্জি কিছু পড়তেন, তারপর সালাম ফিরাতেন। [১৫০২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার তাকবীর বলেন। [১৫০৩]
যে ব্যক্তি জানাযার সলাতে পাঁচ তাকবীর বলে।
আবদুর রহমান বিন আবু লায়লা যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) আমাদের জানাযার সলাতে চার তাকবীর বলতেন। তিনি এক জানাযার সলাতে পাঁচ তাকবীর বলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীরও বলেছেন। [১৫০৪] আমর বিন আওফ (রাঃ) নিশ্চই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ তাকবীর বলেছেন। [১৫০৫]
শিশুর জানাযার সলাত।
মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ শিশুর জানাযাহ পড়তে হবে। [১৫০৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শিশু (ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর) চিৎকার করলে (অতঃপর মারা গেলে) তার জানাযাহ পড়তে হবে এবং তার উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। [১৫০৭] আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের শিশুদের জানাযার সালাত পড়ো। কারণ তারা তোমাদের অগ্রগামী সঞ্চয়। [১৫০৮]
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছেলের জানাযাহ এবং তার ইনতিকালের বিবরণ।
ইসমাঈল বিন আবু খালিদ আমি আবদুল্লাহ বিন আওফা (রাঃ) কে বললাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র ইবরাহীম কে দেখেছেন? তিনি বলেন, সে শিশুকালেই মারা যায়। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর যদি কারো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হওয়ার (আল্লাহ্র) সিদ্ধান্ত থাকতো তাহলে তাঁর পুত্র জীবিত থাকতো। কিন্তু তাঁর পরে কোন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাই। [১৫০৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র ইবরাহীম মৃত্যুবরণ করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত পড়েন এবং বলেন, তার জন্য জান্নাতে একজন ধাত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। সে জীবিত থাকলে অবশ্যি সত্যবাদী ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতো। সে জীবিত থাকলে তাঁর মাতৃকুল স্বাধীন হয়ে যেত এবং কিবতী থাকতো না। [১৫১০] তাহকীক আলবানীঃ স্বাধীন হওয়া বাক্য ব্যতীত সহীহ। হুসায়ন বিন আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পুত্র কাসিম ইনতিকাল করলে খাদীজা (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! কাসিমের জন্য পর্যাপ্ত দুধ রয়েছে, আল্লাহ যদি তাকে দুধ পানের মেয়াদ পর্যন্ত জীবিত রাখতেন! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার দুধ পানের মেয়াদ জান্নাতে পূর্ণ করা হবে। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি তা জানাতে পারলে তার ব্যাপারে সান্ত্বনা লাভ করতাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি চাইলে আমি আল্লাহ্র নিকট দুআ করি, তিনি তোমাকে তার শব্দ শুনাবেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! বরং আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে বিশ্বাস করি। [১৫১১] তাহকীক আলবানীঃ নিতান্ত দঈফ, তা’লীক ইবনু মাজাহ।
শহীদগণের জানাযার সালাত এবং তাদের দাফন-কাফন।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে শহীদদের লাশ উপস্থিত করা হলো। তিনি একসঙ্গে দশ দশজনের জানাযার সালাত আদায় করলেন। আর হামযা (রাঃ)-এর লাশ যেভাবে ছিল সেভাবেই রেখে দেয়া হলো। অন্যদের লাশ তুলে নেয়া হল এবং তাঁর লাশ স্বস্থানে পড়ে থাকলো। [১৫১২] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ যুদ্ধের শহীদের দু’ বা তিনজনকে এক কাপড়ে একত্র করে জড়িয়ে জিজ্ঞেস করতেনঃ তাদের মধ্যে কে কুরআনের অধিক জ্ঞানী? তাদের কারো প্রতি ইশারা করে তাঁকে জানানো হলে তিনি তাকে আগে কবরে রাখতেন এবং বলতেনঃ আমি তাদের সকলের পক্ষে সাক্ষী। তিনি তাদেরকে তাদের রক্তমাখা অবস্থায় দাফন করার নির্দেশ দেন এবং তাদের জানাযার সালাত ও পড়া হয়নি, গোসল ও দেয়া হয়নি। [১৫১৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদদের দেহ থেকে লৌহবর্ম, অস্ত্র ও চামড়ার জুতা খুলে নেয়ার এবং তাদেরকে তাদের রক্ত মাখা কাপড়ে দাফন করার নির্দেশ দেন। [১৫১৪] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদগণকে তাদের শাহাদাত লাভের স্থানে ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। তাদেরকে মদিনায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। [১৫১৫]
মসজিদে জানাযার সালাত পড়া।
আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মসজিদে জানাযার সালাত পড়লো, তাতে তার কোন সওয়াব হলো না। [১৫১৬] আয়িশাহ্ (রাঃ) আল্লাহ্র শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহায়ল বিন বাইদার জানাযার সালাত মসজিদেই পড়েছেন। ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি সনদের দিক থেকে অধিকতর শক্তিশালী। [১৫১৭]
যেসব ওয়াক্তে মৃতের জানাযাহ পড়বে না এবং দাফন করবে না।
উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তিন সময়ে আমাদের মৃতদের জানাযাহ পড়তে এবং তাদেরকে কবরস্থ করতে নিষেধ করেছেনঃ সূর্য সুস্পষ্টভাবে উদয়কালে, সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দুপুরের সময় এবং সূর্যাস্তের সময়, যতক্ষণ না তা অস্তমিত হয়। [১৫১৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে রাতের বেলা কবরে রাখেন এবং (লাশ ঠিকমতো রাখার সুবিধার্থে) কবরে আলোর ব্যবস্থা করেন। [১৫১৯] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অনন্যোপায় না হলে তোমাদের মৃতদের রাতের বেলা দাফন করো না। [১৫২০] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতের বেলা এবং দিনের বেলা তোমরা তোমাদের মৃতদের জানাযার সালাত পড়তে পারো। [১৫২১]
আহলে কিবলার জানাযার সালাত পড়া।
ইবনু উমার (রাঃ) (মুনাফিকদের দলপতি) আবদুল্লাহ বিন উবাই মারা গেলে তার পুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার জামাটি আমাকে দান করুন, আমি তার দ্বারা তাকে দাফন পরাবো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে তার দাফনের সময় খবর দিও। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত পড়ার ইচ্ছে করলে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে বলেন, তার ব্যাপারে আপনার কি হলো! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত পড়েন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ আমাকে দু’টি বিষয়ের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হয়েছেঃ “আপনি তখন মহান আল্লাহ নাযিল করেন, “তাদের কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পাশেও দাঁড়াবেন না” (সূরা তওবাঃ ৮৪)। [১৫২২] জাবির (রাঃ) মুনাফিক নেতা (উবাই) মদিনায় মারা গেলো। সে ওসিয়াত করলো যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন তার জানাযার সালাত আদায় করেন এবং তাঁর জামা দিয়ে যেন তাকে কাফন দেয়া হয়। তিনি তার জানাযার সালাত পড়েন, তাঁর জামা দিয়ে তাকে কাফন দেন এবং তার কবরের পাশে (দুআ করতে) দাঁড়ান। তখন আল্লাহ্ তাআলা নাযিল করেন, অনুবাদঃ “তাদের কারো মৃত্যু হলে কখনো তার জন্য জানাযার সালাত পড়বে না এবং তার কবরের পাশেও দাঁড়াবে না” (সূরা তওবাঃ ৮৪) [১৫২৩] ওয়াসিলাহ ইবনুল আসকা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা প্রত্যেক মৃতের জন্য জানাযার সালাত আদায় করো এবং প্রত্যেক আমীরের নেতৃত্বে জিহাদ করো। [১৫২৪] জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবী আহত হন। এর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি তার তীরের ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত পড়েননি। রাবী বলেন, তা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় (শাস্তিস্বরূপ)। [১৫২৫]
দাফনের পর জানাযার সলাত পড়া।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক কৃষ্ণকায় নারী মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখতে না পেয়ে কয়েকদিন পর তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁকে জানানো হল যে, সে মারা গেছে। তিনি বললেন, তোমরা কেন আমাকে অবহিত করোনি? অতঃপর তিনি তার কবরের পাশে আসেন এবং তার জানাযার সলাত আদায় করেন। [১৫২৬] ইয়াযীদ বিন সাবিত (রাঃ) (তিনি যায়দ (রাঃ) এর বড় ভাই) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বের হলাম। তিনি বাকী গোরস্থানে পৌঁছে একটি নতুন কবর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তারা বলে, অমুক মহিলার কবর। রাবী বলে, তিনি তাঁকে চিনতে পেরে বলেন, তোমরা কেন আমাকে তার সম্পর্কে জানালে না? তারা বললেন, আপনি রোযা অবস্থায় দুপুরের বিশ্রাম করছিলেন। তাই আমরা আপনাকে কষ্ট দেয়া পছন্দ করিনি। তিনি বলেন, তোমরা এরূপ করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে এবং আমি তোমাদের মাঝে উপস্থিত থাকলে তোমরা অবশ্যই আমাকে তার সম্পর্কে জানাবে। কেননা তার জন্য আমার সলাত তার রহমত লাভের উপায় হবে। অতঃপর তিনি কবরের নিকট আসলেন, এবং আমরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি চার তাকবীরে তাঁর জানাযার সলাত পড়েন। [১৫২৭] আমির বিন রাবী’আহ (রাঃ) এক কৃষ্ণকায় মহিলা মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করা হয়নি। পরে তাঁকে এ ব্যাপারে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, তোমরা কেন আমাকে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলে না? অতঃপর তিনি তাঁর সাহাবীগণকে বলেন, তোমরা তার (সলাতের জন্য) কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াও। তারপর তিনি তার জানাযার সলাত পড়েন। [১৫২৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন। সে মারা গেলে লোকেরা তাকে রাতে দাফন করে। সকাল বেলা তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি বলেনঃ আমাকে তা জানাতে কিসে তোমাদের বাধা দিল? তারা বলল, গভীর অন্ধকার রাত ছিল বিধায় আমরা আপনাকে কষ্ট দেয়া সমীচীন মনে করিনি। তিনি তার কবরের নিকট এসে জানাযার সলাত পড়েন। [১৫২৯] আনাস (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দাফন করার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত পড়েন। [১৫৩০] বুরায়দাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার জানাযার সলাত পড়েন। [১৫৩১] আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক কৃষ্ণকায় মহিলা মসজিদে নববীতে ঝাড়ু দিত। সে রাতের বেলা মারা গেল (এবং রাতেই দাফন করা হল) এবং ভোরবেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হল। তিনি বলেন, তোমরা কেন আমাকে তার সম্পর্কে জানাওনি? অতঃপর তিনি তার সাহাবীগণকে নিয়ে রওয়ানা হলেন এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাকবীর দিয়ে সলাত পড়েন এবং তার জন্য দু’আ করেন। লোকেরাও তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে (সলাতে অংশগ্রহণ করেন)। অতঃপর তিনি ফিরে আসেন। [১৫৩২]
নাজ্জাশীর জানাযার সলাত সম্পর্কে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাজ্জাশী ইন্তিকাল করেছেন। অতএব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে নিয়ে জান্নাতুল বাকীর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। আমরা তাঁর পিছনে কাতারবন্দী হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে চার তাকবীরের সাথে জানাযার সলাত পড়েন। [১৫৩৩] ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশী ইনতিকাল করেছেন। অতএব, তোমরা তার জানাযার সালাত পড়ো। রা’বী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং আমরা তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে জানাযার নামাজ পড়লাম। অবশ্য আমি ছিলাম দ্বিতীয় কাতারে। তিনি (মোক্তাদীদের) দু’ কাতারে সারিবদ্ধ করে তার জানাযার সলাত পড়েন। [১৫৩৪] মুজাম্মি’ বিন জারিয়াহ আল আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশী ইনতিকাল করেছেন। তোমরা দাঁড়িয়ে তার জানাযার সালাত পড়ো। অতএব, আমরা তাঁর পিছনে দু’ কাতারে সারিবদ্ধ হলাম। [১৫৩৫] হুযাইফাহ বিন উসাইদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সাথে নিয়ে বের হয়ে বলেন, অন্য দেশে মৃত্যুবরণকারী তোমাদের এক ভাইয়ের জানাযার সলাত পড়ো। তারা বলে, তিনি কে? তিনি বলেন, নাজ্জাশী। [১৫৩৬] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার তাকবীরে নাজ্জাশীর জানাযার সলাত পড়েন। [১৫৩৭]
জানাযায় অংশগ্রহণকারীর এবং তার দাফনের জন্য অপেক্ষমান ব্যক্তির সওয়াব।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জানাযার সলাত পড়ল, তার জন্য এক কীরাত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি দাফনকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তার জন্য দু’ কীরাত সওয়াব। লোকেরা বলল, দু’ কীরাত? তিনি বলেন, দুটি পাহাড়ের সমান। [১৫৩৮] সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি জানাযার সলাত পড়ল, তার জন্য এক কীরাত সওয়াব। আর যে ব্যক্তি দাফনেও অংশগ্রহন করল, তার জন্য দু’ কীরাত সওয়াব। রা’বী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এর কীরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তা উহুদ পাহাড় সমতুল্য। [১৫৩৯] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযার সলাত পড়ল, তার জন্য এক কীরাত সওয়াব এবং সে যে ব্যক্তি দাফনের কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকল, তার জন্য দু’ কীরাত সওয়াব। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! একটি কীরাত এই উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বিশাল। [১৫৪০]
লাশ বয়ে নিয়ে যেতে দেখে দাঁড়ানো।
আমির বিন রবী’আহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা যখন লাশ বয়ে নিয়ে যেতে দেখো, তখন তার জন্য দাঁড়াও, যাবত না তা তোমাদেরকে পেছনে ফেলে যায় অথবা লাশ নামিয়ে রাখা হয়। [১৫৪১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হলে তিনি দাঁড়ান এবং বলেন, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও। কেননা মৃত্যুর কারণে ভীত হওয়া উচিৎ। [১৫৪২] আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি লাশ বয়ে নিয়ে যেতে দেখে দাঁড়ালে আমরাও দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি বসলে আমরাও বসে পড়ি। [১৫৪৩] উবাদা ইবনুস-সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাশের সাথে গেলে লাশ কবরে না রাখা পর্যন্ত বসতেন না। জনৈক ইহুদী পন্ডিত তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরাও তাই করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৎক্ষণাৎ বসে পড়েন, এবং বলেন, তোমরা তাদের বিপরীত করো। [১৫৪৪]
কবরস্থানে গেলে যা বলতে হয়।
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হারিয়ে ফেললাম (বিছানায় পেলাম না)। তিনি জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে বলেন, “হে কবরবাসী মু’মিনগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের জন্য অগ্রগামী এবং নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! তাদের পুরস্কার থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না, এবং তাদের পরে আমাদের বিপদে ফেলো না।” [১৫৪৫] তাহকীক আলবানীঃ এ বাক্যে দ’ঈফ, ইরওয়াহ ৩/২৩৭, রাকা প্রথম অংশ সহীহ। বুরাইদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যে তারা যখন কবরস্থানে যেতেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের শিক্ষা দিতেনঃ “হে কবরবাসী, মু’মিন ও মুসলিমগণ! তোমাদেরকে সালাম। আমরাও ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি”। [১৫৪৬]
কবরস্থানে বসা
বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি জানাজায় বের হলাম। তিনি কেবলামুখী হয়ে বসে পড়েন। [১৫৪৭] বারা’ বিন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একটি জানাজায় বের হলাম। আমরা কবরস্থানে পৌঁছলে তিনি বসে পড়েন (এবং আমরাও নীরবে অনড় হয়ে বসে পড়লাম), যেন আমাদের মাথার উপর পাখি বসে আছে। [১৫৪৮]
লাশ কবরে রাখা।
ইবনু উমার (রাঃ) লাশ কবরে রাখার সময় নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “বিস্মিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ”। আবু খালিদ (রহঃ) বলেন, লাশকে তার কবরে রাখার সময় তিনি বলতেনঃ “বিস্মিল্লাহি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসূলিল্লাহ”। হিশাম (রহঃ) তার হাদীসে বলেন, “বিস্মিল্লাহি ওয়া ফী সাবীলিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ”। [১৫৪৯] আবূ রাফি’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খাটিয়া থেকে) সা’দ (রাঃ) এর লাশ পায়ের দিক থেকে কবরে নামান এবং তার কবরে পানি ছিটিয়ে দেন। [১৫৫০] আবূ সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর লাশ কিবলার দিক থেকে কবরে রাখার জন্য গ্রহণ করা হয়, তাঁর মুখমণ্ডল কিবলামুখী রাখা হয় এবং তাঁর পায়ের দিক থেকে রওযা মুবারকে নামানো হয়। [১৫৫১] সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে এক জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি কবরে লাশ রাখার সময় বলেন, “বিসমিল্লাহি ওয়া ফী সাবীলিল্লাহা আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ”। কবরের উপর মাটি সমান করে দেওয়ার সময় তিনি বলেন, “হে আল্লাহ! তাকে শয়তান ও কবরের আযাব থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ! তার পার্শ্বদেশ থেকে মাটি সরিয়ে দিন এবং তার রূহ উঠিয়ে নিন এবং সন্তুষ্টির সাথে তাকে সাক্ষাত দান করুন”। আমি বললাম, হে ইবনু উমার! আপনি কি এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন, না আপনার নিজের থেকে বলছেন? তিনি বলেন, আমি সামর্থ্য রাখি, তবে আমি একথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। [১৫৫২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, প্রথম দিকের কিছু অংশ সহীহ।
লাহ্দ কবর উত্তম ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের জন্য লাহ্দ এবং অন্যদের জন্য শ্বাক কবর। [১৫৫৩] জারীর বিন আবদুল্লাহ্ আল-বাজালী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের জন্য লাহ্দ অন্যদের জন্য শ্বাক কবর।[১৫৫৪] সা’দ (রাঃ) আমার জন্য তোমরা লাহ্দ কবর তৈরি করো এবং নিদর্শনস্বরূপ সেখানে ইট পুঁতে দিও, যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বেলায় করা হয়েছিল।[১৫৫৫]
শাক্ক কবর ।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করেন তখন মদিনায় এক ব্যক্তি লাহ্দ কবর খনন করতো এবং অপর ব্যক্তি শাক্ক কবর খনন করতো। সাহাবীগণ বলেন, আমরা আমাদের প্রভুর দরবারে ইস্তিখারা করবো এবং তাদের উভয়ের কাছেই সংবাদ পাঠাবো। তাদের মধ্যে যে আগে আসবে (তাকে রাখবো) এবং অন্যজনকে বাদ দিবো। অতএব তাদের দু’জনকেই ডেকে পাঠানো হল এবং লাহ্দ কবর খননকারী আগে পৌঁছে গেলো। অতএব সাহাবীগণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য লাহ্দ কবর খনন করেন। [১৫৫৬] আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন সাহাবীগণ তাঁকে লাহ্দ অথবা শাক্ক কবরে দাফন করার ব্যাপারে মতভেদ করেন, এমনকি তারা এ নিয়ে বাদানুবাদে লিপ্ত হন এবং তাদের কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে যায়। উমার (রাঃ) বলেন, তোমরা জীবিত ও মৃত কোন অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উচ্চ কণ্ঠে বিতণ্ডা করো না অথবা অনুরূপ কিছু বলেছেন। তোমরা শাক্ক ও লাহ্দ খননকারী সকলের নিকট খবর পাঠাও। অতএব লাহ্দ কবর খননকারী (আগে) আসলো এবং সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য লাহ্দ কবর খনন করলো, অতঃপর তাঁকে দাফন করা হলো। [১৫৫৭]
কবর খনন করা ।
আল-আদরা’ আস-সুলামী (রাঃ) আমি এক রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পাহারা দিতে আসলাম। এক ব্যক্তি উচ্চকণ্ঠে কুরআন পড়ছিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ঐ ব্যক্তি তো একজন রিয়াকার। রাবী বলেন, লোকটি মদিনায় মারা গেলে লোকজন তার দাফন-কাফনে শংকাগ্রস্ত হয়ে পড়লো। তারা তার লাশ বহন করে নিয়ে গেলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তার প্রতি সদয় হও, আল্লাহ তার প্রতি সদয় হয়েছেন। কারণ সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসতো। রাবী বলেন, তার কবর খনন করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তার কবর আরো প্রশস্ত করো। আল্লাহ তার প্রতি সদয় হয়েছেন। তাঁর কোন সাহাবী বলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি নিশ্চয় তাঁর ব্যাপারে চিন্তান্বিত। তিনি বলেন, হাঁ, নিশ্চয় সে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসতো। [১৫৫৮] হিশাম বিন আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা প্রশস্ত করে কবর খনন করো এবং সদয় হও। [১৫৫৯]
কবরে নিদর্শন স্থাপন করা ।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) এর কবর একটি পাথর দিয়ে চিহ্নিত করে রাখেন। [১৫৬০]
কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা, তা পাকা করা এবং তাতে কিছু লিপিবদ্ধ করা নিষেধ ।
জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। [১৫৬১] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের উপর কিছু লিখতে নিষেধ করেছেন। [১৫৬২] আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের উপর কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। [১৫৬৩]
কবরে মাটি বিছিয়ে দেয়া
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির জানাযার সালাত পড়লেন, অতঃপর মৃতের কবরের নিকট এসে তার মাথার দিকে তিনবার মাটি ছড়িয়ে দিলেন। [১৫৬৪]
কবর মাড়ানো এবং তাঁর উপর বসা নিষেধ ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবরের উপর তোমাদের কারো বসার চাইতে জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর বসা তার জন্য উত্তম। [১৫৬৫] উকবা বিন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মুসলমানের কবরের উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া অপেক্ষা জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে অথবা তরবারির উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া অথবা আমার জুতাজোড়া আমার পায়ের সাথে সেলাই করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। কবরস্থানে পায়খানা করা এবং বাজারের মাঝে পায়খানা করার মাঝে আমি কোন পার্থক্য দেখি না। [১৫৬৬]
জুতা খুলে কবরস্থান অতিক্রম করা
বাশীর ইবনুল খাসাসিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে পায়চারি করছিলাম। তিনি বলেন, হে ইবনুল খাসাসিয়া! তুমি আল্লাহর নিকট এর চাইতে বড় নিয়ামত কি আশা করো যে, তুমি তার রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সকালবেলা পায়চারি করছো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি আল্লাহ্র নিকট এর চেয়ে বেশী কিছু আশা করি না। কেননা আল্লাহ্ আমাকে সব ধরনের কল্যাণ দান করেছেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদের কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, এসব লোক বিপুল কল্যাণ লাভ করেছে। অতঃপর তিনি মুশরিকদের কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলেন, এসব লোক ইতোপূর্বে প্রচুর কল্যাণ লাভ করেছে। রাবী বলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে জুতা পরিহিত অবস্থায় কবরস্থান অতিক্রম করতে দেখে বলেন, হে জুতা পরিধানকারী! তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেলো। ১/১৫৬৮ (১). আব্দুর রহমান বিন মাহদী বলেন, আবদুল্লাহ বিন উসমান এমন বলতেন। হাদীসটি যাইয়েদ, এর রাবী সমূহ মজবুত। [১৫৬৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
কবর যিয়ারত করা।
আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। [১৫৬৮] আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর যিয়ারতের অনুমতি দিয়েছেন। [১৫৬৯] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা দুনিয়া বিমুখ বানায় এবং আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। [১৫৭০]
মুশরিকদের কবর যিয়ারত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ), তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মায়ের কবর যিয়ারত করেন। তিনি কান্নাকাটি করেন এবং তার সাথের লোকদেরও কাঁদান। অতঃপর তিনি বলেন, আমি আমার রবের নিকট তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেননি। আমি আমার রবের নিকট তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দেন। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দেয়। [১৫৭১] ইবনু উমার (রাঃ) এক বেদুইন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা আত্মীয়তার সম্পর্ক বহাল রাখতেন এবং তিনি এই এই কাজ করতেন। তিনি কোথায় আছেন? তিনি বলেন, জাহান্নামে। রাবী বলেন, এতে সে ব্যথিত হলো। সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার পিতা কোথায় আছে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি যখন কোন মুশরিকের কবর অতিক্রম করো, তখন তাঁকে জাহান্নামের দুঃসংবাদ দিও। রাবী বলেন, সেই বেদুইন পরে ইসলাম গ্রহন করে এবং বলে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চয়ই আমাকে একটি কাজের দায়িত্ব দিয়েছেনঃ আমি কোন কাফেরের কবর অতিক্রম করলেই তাঁকে দোযখের দুঃসংবাদ দিয়েছি। [১৫৭২]
মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতের ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে।
হাস্সান বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘন ঘন কবর যিয়ারতকারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন। [১৫৭৩] ইবনূ আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘন ঘন কবর যিয়ারতকারিণীদের অভিসম্পাত করেছেন। [১৫৭৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘন ঘন কবর যিয়ারতকারিণীদের বদদোয়া করেছেন। [১৫৭৫]
জানাযায় মহিলাদের অংশগ্রহন।
উম্মু আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে জানাযায় অংশগ্রহন করতে নিষেধ করা হয়েছে কিন্তু কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়নি। [১৫৭৬] আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এসে মহিলাদের বসা দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কেন বসে আছ? তারা বললেন, আমরা লাশের অপেক্ষা করছি। তিনি বললেন, তোমরা কি লাশের গোসল করাবে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, তোমরা কি লাশ বহন করবে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, যারা লাশ কবরে রাখবে তাদের সাথে তোমরাও কি লাশ কবরে রাখবে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, তোমরা ফিরে যাও, তোমাদের জন্য গুনাহ ব্যতীত কোন সওয়াব নাই।
বিলাপ করে কান্নাকাটি করা নিষেধ
উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বরাতে বলেন, “তারা উত্তম কাজে তোমাদের অমান্য করবে না।”(সূরা মুমতাহিনাঃ ১২) এর অর্থ ‘বিলাপ করবে না।’ [১৫৭৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান, তা’লীক ইবনু মাজাহ। মু’আবিয়া (রাঃ) হিমস নামক স্থানে ভাষণ দানকালে তার ভাষণে উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাপ করতে নিষেধ করেছেন। [১৫৭৮] আবূ মালিক আল-আশ’আরী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিলাপকারিণী তওবা না করে মারা গেলে আল্লাহ তা’আলা তাকে আলকাতরাযুক্ত কাপড় এবং লেলিহান শিখার বর্ম পরাবেন। [১৫৭৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা জাহিলী প্রথা। অতএব যে বিলাপকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা করেনি, কিয়ামাতের দিন তাকে আলকাতরাযুক্ত জামা পরিয়ে উঠানো হবে, অতঃপর তাকে লেলিহান বর্ম পরানো হবে। [১৫৮০] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কোন লাশের সাথে বিলাপকারিণী থাকলে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। [১৫৮১]
শোকে মুখমন্ডল ক্ষতবিক্ষত করা এবং জামা ছেঁড়া নিষেধ
আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত্যু শোকে) বুকের কাপড় ছিঁড়ে, মুখমন্ডলে আঘাত করে এবং জাহিলী যুগের ন্যায় চিৎকার করে কান্নাকাটি করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়। [১৫৮২] আবূ উমামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেহারা ক্ষতবিক্ষতকারিণী, বক্ষদেশের জামা ছিন্নকারিণী, ধবংস ও মৃত্যু কামনাকারিণী ও শোকগাথার আয়োজনকারিণীকে অভিসম্পাত করেছেন। [১৫৮৩] আব্দুর রহমান বিন ইয়াযীদ ও আবূ বুরদা তারা বলেন, আবূ মূসা (আশ’আরী) (রাঃ), যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর, তখন তার স্ত্রী উম্মু আবদুল্লাহ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে করতে আসে। তিনি চেতনা ফিরে পেয়ে তাকে বললেন, তুমি কি জানো না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যার প্রতি অসন্তুষ্ট, আমিও তার প্রতি অসন্তুষ্ট। তিনি তার নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (মৃত্যুশোকে মাথা মুন্ডন করে, চিৎকার করে কান্নাকাটি করে এবং জামা ছিঁড়ে, আমি তার থেকে দায়মুক্ত। [১৫৮৪]
মৃতের জন্য কান্নাকাটি করা
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক জানাযায় উপস্থিত ছিলেন। উমার (রাঃ) এক মহিলাকে কাঁদতে দেখে ধমকালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে উমার! তাকে ছেড়ে দাও। কেননা অশ্রুবর্ষণকারী, দেহ-মন বেদনাক্লিষ্ট এবং প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী। [১৫৮৫] ১/১৫৮৭(১). <আবূ বকর বিন আবূ শায়বাহ><আফফান><হাম্মাদ বিন সালামাহ><হিশাম বিন ‘উরওয়াহ><ওয়াহাব বিন কায়সান><মুহাম্মাদ বিন আমর বিন আতা><সালামাহ বিন আযরাক (মাকবূল)> <আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)> তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক কন্যার শিশু পুত্রের মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তার নিকট আসার জন্য লোক মারফত বলে পাঠান। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যাকে বলে পাঠান যে, সবই আল্লাহর যা তিনি নেন তাও তাঁর এবং যা তিনি দান করেন তাও তাঁর। প্রতিটি বস্তুর জন্য তাঁর নিকট একটি নির্ধারিত কাল রয়েছে। অতএব তোমার ধৈর্যধারণ ও সওয়াবের আশা করা উচিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা কসম খেয়ে পুনরায় তাঁর কাছে লোক পাঠান। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে রওয়ানা হন এবং আমিও তাঁর সাথে উঠে রওয়ানা হই। তাঁর সাথে আরো ছিলেন মু’আয বিন জাবাল, উবাদা বিন সামিত ও উবাই বিন কা’ব (রাঃ)। আমরা গিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলে শিশুটিকে যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে দিল, তখন তার রূহ তার বুকের মাঝে ধড়ফড় করছিল। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেন, এ যেন পুরাতন মশক। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেঁদে ফেললেন। উবাদা বিনস সামিত (রাঃ) তাঁকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! একী? তিনি বলেনঃ মায়া-মমতা, যা আল্লাহ আদম-সন্তানদের মধ্যে রেখে দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর দয়ালু বান্দাদের অবশ্য দয়া করেন। [১৫৮৬] আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শিশু পুত্র ইবরাহীম ইন্তিকাল করলে তিনি নীরবে কাঁদেন। তাঁকে সান্ত্বনা দানকারী আবূ বাকর অথবা উমার (রাঃ) বলেন, আপনি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব রক্ষার ব্যপারে অধিক যোগ্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ চোখ অশ্রু বর্ষণ করছে, হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে এবং আমরা এমন কিছু বলছিনা, যা আমাদের প্রভুকে অসন্তুষ্ট করে। যদি তা (মৃত্যু) অবধারিত না হতো, কিয়ামাতের দিন একত্র হওয়ার ওয়াদা না থাকত এবং পরবর্তীদের জন্য পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত না থাকতো, তাহলে হে ইবরাহীম! আমরা তোমার ব্যাপারে যে কষ্ট পেয়েছি, তার চেয়ে অধিক কষ্ট পেতাম। আমরা তোমার জন্য অবশ্যই দুঃখিত। [১৫৮৭] হামনাহ বিনতে জাহশ (রাঃ) তাকে বলা হলো যে, তার ভাইকে শহীদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হোন। “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” (আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিত তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)। তারা বললো, আপনার স্বামীকে শহীদ করা হয়েছে। তিনি বলেনঃ আফসোস! আমরা তার জন্য চিন্তিত। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয় স্বামীর সাথে মহিলাদের এমন ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে যা অন্য কিছুতে নেই। [১৫৮৮] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আবদুল আশহাল গোত্রের মহিলাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা উহুদ যুদ্ধে শহীদ তাদের আত্মীয়দের জন্য কান্নারত ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিন্তু হামযা! তার জন্য কান্নাকাটি করার কেউ নেই। ইতোমধ্যে কয়েকজন আনসার মহিলা এসে হামযা (রাঃ) এর জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠে বললেন, তাদের জন্য আফসোস! এতদিন পর কিসে তাদের কান্নার প্রেরণা যোগাল? তাদের নিকট গিয়ে বলো, তারা যেন ফিরে যায়। আজকের দিনের পর থেকে তারা যেন কোন শহীদের জন্য কান্নাকাটি না করে। [১৫৮৯] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ, তা’লীক ইবনু মাজাহ। ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মৃতের জন্য) বিলাপ করতে বা শোকগাঁথা গাইতে নিষেধ করেছেন। [১৫৯০]
মৃতের জন্য বিলাপ করলে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। [১৫৯১] আবূ মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জীবিতদের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়, যখন তারা বলেঃ হে আমাদের বাহুদয়, হে আমাদের ভরণপোষণের সংস্থানকারী, হে আমাদের সাহায্যকারী, হে আমাদের পাহাড়সম পরমাত্মীয় ইত্যাদি। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কি এরূপ ছিলে? তুমি কি এরূপ ছিলে? আসীদ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ মহাপবিত্র। নিশ্চয় আল্লাহ বলেছেনঃ ”কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না”(সূরা ফাতিরঃ ১৮)। রাবী বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়। আমি তোমার নিকট আবূ মূসা (রাঃ) এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করছি এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থেকে বর্ণনা করেছেন। তুমি কি মনে করো, আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর মিথ্যা আরোপ করছেন অথবা তুমি কি মনে করো, আমি আবূ মূসা (রাঃ) এর উপর মিথ্যারোপ করছি? [১৫৯২] আয়িশাহ (রাঃ) এক ইয়াহূদী নারী মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য তাদের কান্নাকাটি শুনতে পেয়ে বলেন, তার পরিবার-পরিজন তার জন্য ক্রন্দন করছে, অথচ তাকে তার কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। [১৫৯৩]
বিপদে ধৈর্য ধারণ করা
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিপদের প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণই হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য। [১৫৯৪] আবূ উমামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ হে বনী আদম! যদি তুমি সওয়াবের আশায় প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করো তাহলে আমি তোমাকে সওয়াবের বিনিময় হিসাবে জান্নাত দান না করে সন্তুষ্ট হবো না। [১৫৯৫] আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছেনঃ কোন মুসলমান যখন বিপদে পড়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহ্র নির্দেশিত “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” (আমরা আল্লাহ্র জন্য এবং নিশ্চিত আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী) পাঠ করে এবং বলে, হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট বিপদে সওয়াবের প্রত্যাশা করি, তুমি আমাকে এর পুরস্কার দান করো এবং আমাকে এর বিনিময় দান করো, তখন আল্লাহ্ তাকে পুরস্কৃত করেন এবং এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করেন। রাবী (উম্মু সালামাহ) বলেন, আবূ সালামাহ (রাঃ) ইনতিকাল করলে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হাদীস আমার কাছে বর্ণনা করেছিলেন তা স্মরণ করলাম। আমি বললাম “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। হে আল্লাহ্! আমার বিপদের পুরস্কার আপনার কাছেই আশা করি। অতএব আমাকে তার বিনিময়ে পুরস্কৃত করুন। অতঃপর আমি যখন বলতে চাইলাম, আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করুন, তখন আমি মনে মনে বললাম, আবূ সালামহ (রাঃ) অপেক্ষা আমাকে উত্তম কিছু দান করুন। তারপর আমি তা বললাম”। অতএব আল্লাহ আমাকে বিনিময়স্বরূপ মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দান করেন এবং আমার বিপদে তিনি আমাকে পুরস্কৃত করেন। [১৫৯৬] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ও লোকেদের মাঝখানের দরজা খুলে অথবা পর্দা তুলে দেখেন যে, লোকজন আবূ বকর (রাঃ) – এর পিছনে সলাত পড়ছে। তিনি তাদেরকে উক্ত অবস্থায় দেখে আল্লাহ্র প্রশংসা করেন এবং আশা করেন যে, আল্লাহ্ যেন আবূ বাক্রকে তাদের প্রতিনিধি নির্ধারণ করেন, যেভাবে তিনি তাদেরকে দেখতে পেয়েছেন। এরপর তিনি বলেনঃ হে লোকসকল! কোন লোকের উপর অথবা কোন মু’মিন ব্যক্তির উপর কোন বিপদ আসলে সে যেন অপরের উপর আপতিত বিপদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে, বরং আমার উপর আপতিত বিপদের কোন কথা স্মরণ করে প্রশান্তি লাভ করে। কেননা আমার পরে আমার কোন উম্মাতের উপর, আমার বিপদের তুলনায় কঠিন বিপদ আপতিত হবে না। [১৫৯৭] ফাতিমাহ বিনতুল হুসায়ন তার পিতা (হুসায়ন বিন আলী (রাঃ), বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো উপর বিপদ আসার পর তা স্মরণ করে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পাঠ করলে, আল্লাহ তার বিপদের দিন থেকে শুরু করে বিপদমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে সওয়াব দান করতে থাকেন। [১৫৯৮] তাহকীক আলবানীঃ অত্যন্ত দঈফ।
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়ার সওয়াব।
আমর বিন হাযম (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মু’মিন ভাইকে তার বিপদে সান্ত্বনা দিবে, আল্লাহ্ তা’য়ালা কিয়ামাতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরাবেন। [১৫৯৯] আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত লোককে সান্ত্বনা দেয় তার জন্য রয়েছে অনুরূপ সওয়াব। [১৬০০]
সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার সওয়াব।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তির তিনটি সন্তান মারা গেলে সে জাহান্নাম পার হয়ে যাবে, তবে শপথ পূর্ণ না করার জন্য (শাস্তি পাবে)। [১৬০১] উতবাহ বিন আবদ আস-সুলামী (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলিম ব্যক্তির তিনটি নাবালেগ সন্তান মারা গেলে, সে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করতে পারবে। [১৬০২] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন মুসলিম পিতা-মাতার তিনটি নাবালেগ সন্তান মারা গেলে, আল্লাহ্ তার বিশেষ অনুগ্রহে তাদরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [১৬০৩] আবদুল্লাহ্ বিন মাসউদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তিনটি নাবালেগ সন্তান আগাম পাঠায় (মারা যায়), তার জন্য তারা হবে জাহান্নামের মজবুত ঢালস্বরূপ। তখন আবূ যার (রাঃ) বলেন, আমি দু’টি সন্তান আগাম পাঠিয়েছি। নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’টি হলেও। সায়্যিদুল কুররা উবাই কা’ব (রাঃ) বলেন, আমি একটি সন্তান আগাম পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, একটি হলেও। [১৬০৪]
কোন মহিলার গর্ভপাত হলে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার নিকট গর্ভপাতজনিত সন্তান, যা আগে পাঠানো হয়, দুনিয়ায় রেখে যাওয়া অশ্বারোহী সন্তান অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয়। [১৬০৫] আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গর্ভপাত হওয়া সন্তানের রব তার পিতা-মাতাকে যখন জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন তখন সে তার প্রভুর সাথে বিতর্ক করবে। তাকে বলা হবে, ওহে প্রভুর সাথে বিতর্ককারী গর্ভপাত হওয়া সন্তান! তোমার পিতা-মাতাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। অতএব সে তাদেরকে নিজের নাভিরজ্জু দ্বারা টানতে টানতে শেষে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [১৬০৬] মুযান বিন জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! গর্ভপাত হওয়া সন্তানের মাতা তাতে সওয়াব আশা করলে ঐ সন্তান তার নাভিরজ্জু দ্বারা তাকে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবে। [১৬০৭]
মৃতের বাড়িতে খাদ্য পাঠানো।
আবদুল্লাহ্ বিন জা'ফার (রাঃ) জা'ফর (রাঃ) এর শহীদ হওয়ার সংবাদ এসে পৌছলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা জা'ফরের পরিবারের জন্য খাদ্য তৈরি করো। কেননা তাদের উপর এমন বিপদ অথবা বিষয় এসেছে যা তাদের ব্যস্ত রেখেছে। [১৬০৮] আসমা বিনত উমাইস (রাঃ) জা’ফর (রাঃ) শহীদ হওয়ার সংবাদ পৌঁছার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পরিবারের নিকট এসে বলেন, জা’ফরের পরিবার তাদের মৃতের কারণে ব্যস্ত রয়েছে। অতএব তোমরা তাদের জন্য খাদ্য তৈরী করো। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, এটা সুন্নাত হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে তা আলোচনার বিষয়ে পরিণত হলে বর্জন করা হয়। [১৬০৯]
মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো নিষেধ এবং খাদ্য তৈরি করাও নিষেধ।
জারীর বিন আবদুল্লাহ্ আল-বাজালী (রাঃ) মৃতের বাড়িতে ভীড় জমানো ও খাদ্য প্রস্তুত করে পাঠানোকে আমরা বিলাপের অন্তর্ভূক্ত মনে করতাম। [১৬১০]
যে ব্যক্তি সফররত অবস্থায় মারা গেলো ।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সফররত অবস্থায় মৃত্যু হলো শহীদী মৃত্যু। [১৬১১] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) মদিনায় জন্মগ্রহণকারী এক ব্যাক্তি মদিনায় মারা যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সলাত পড়েন, অতঃপর বলেন, আহ্! এ ব্যাক্তি যদি অন্যত্র মারা যেতো! উপস্থিত লোকেদের একজন বললো, হে আল্লাহর রসূল! তা কেন? তিনি বলেনঃ কোন ব্যাক্তি তার জন্মভূমি ব্যতীত অন্যত্র মারা গেলে তার মৃত্যুর স্থান থেকে জন্মস্থান পর্যন্ত দূরত্বের পরিমাপ করে তার ততখানি স্থান তার জন্য জান্নাতে নির্ধারিত করা হয়। [১৬১২]
যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত অবস্থায় মারা গেলো ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত অবস্থায় মারা যায়, সে শাহাদাত মৃত্যু লাভ করে। কবরের বিপর্যয় হতে তাকে রক্ষা করা হয় এবং সকাল-সন্ধ্যা তার জন্য জান্নাত থেকে রিযিক সরবরাহ করা হয়। [১৬১৩]
মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙ্গা নিষেধ।
আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যাক্তির হাড় ভাঙ্গা, তা তার জীবিত অবস্থায় ভাঙ্গার সমতুল্য। [১৬১৪] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মৃত ব্যাক্তির হাড় ভাঙ্গা, জীবিত ব্যাক্তির হাড় ভাঙ্গার মতই মারাত্মক গুনাহের কাজ। [১৬১৫] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। গুনাহের কথা ব্যতীত সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (অন্তিম) রোগ।
উবায়দুল্লাহ বিন আবদুল্লাহ আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আম্মা! আমকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (অন্তিম) রোগ সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তিনি রোগাক্রান্ত হলে আমরা অনুভব করলাম যে, তিনি কিশমিশ ভক্ষণকারীর ন্যায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। তখনও তিনি তার স্ত্রীদের কাছে পালাক্রমে যাতায়াত করেতেন। তার রোগ বেড়ে গেলে তিনি তাদের নিকট আয়িশাহর ঘরে অবস্থান করার অনুমিত চাইলেন এবং তারা যেন পালাক্রমে তার নিকট আসেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'ব্যাক্তির উপর ভর করে তার পদদয় হেচড়াতে হেচড়াতে আমার ঘরে আসেন। তাদের দু'জনের একজন ছিলেন আব্বাস (রাঃ)। আমি (উবাইদুল্লাহ) এ হাদীস ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তুমি কি জানো অপর ব্যাক্তি কে, যার নাম আয়িশাহ্ (রাঃ) উল্লেখ করেননি? তিনি হলেন আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ)। [১৬১৬] আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিন্মোক্ত বাক্যে আশ্রয় প্রার্থনা করতেনঃ হে মানুষের প্রভু! আপনি বিপদ দূর করুন এবং রোগমুক্তি দান করুন। আপনি ব্যতীত অপর কারো রোগ মুক্তি দানের ক্ষমতা নেই। আপনি এমন নিরাময় দান করুন যার পর আর কোন রোগ থাকবে না।" অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্তিম রোগ আরো বেড়ে গেলে আমি উক্ত দুআ পড়ে তারঁ হাত ধরে তার শরীরে মলে দিতাম। তিনি তাঁর হাত আমার হাত থেকে মুক্ত করে নিলেন এবং বললেনঃ "হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে আমার পরম বন্ধুর সাথে মিলিত করুন।" আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শেষ কথা যা শুনেছি তা এই। [১৬১৭] আয়িশাহ্ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: যখন কোন নবী রোগাক্রান্ত হন, তখন তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্য থেকে যে কোনটি গ্রহন করার এখতিয়ার দেয়া হয়। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি যখন অন্তিম রোগে আক্রান্ত হন তখন তার থেকে উচ্চ শব্দ বের হতো। আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ "নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)গণ, সত্যনিষ্ঠগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মপরায়ণ, যাদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন তাদের সঙ্গে "(সূরা নিসা : ৬৯)। তখন আমি বুঝতে পারলাম, তাকেও এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। [১৬১৮] আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ সকলে একত্র হলেন, তাদের একজন ও বাদ ছিলেন না। এরপর ফাতিমাহ (রাঃ) আসলেন। আর তার হাঁটাচলার ধরন ছিল যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুরূপ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ খোশ আমদেদ হে আমার প্রিয় কন্যা। তিনি তাকে নিজের বাম পাশে বসান, অতঃপর তার সাথে চুপেচুপে কিছু কথা বলেন। এতে ফাতিমাহ (রাঃ) কাঁদেন। তিনি পুনরায় তার সাথে গোপনে কিছু কথা বলেন। এতে তিনি হাসেন। পরে আমি ফাতিমাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন কাঁদলে? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোপন তথ্য প্রকাশ করবো না। আমি বললাম, দুশ্চিন্তার পরে আজকের মত খুশি আমি আর কখনো দেখিনি। তার কাঁদার সময় আমি তাকে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আমাদের বাদ দিয়ে তোমার সঙ্গে বিশেষ কোন আলাপ করেছেন, তারপর তুমি কাঁদলে? আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সঙ্গে যে বিষয়ে আলাপ করেছিলেন, আমি পুনরায় তা তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গোপন তথ্য ফাস করবো নাহ। তিনি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] ইনতিকাল করার পর আমি ফাতিমাহ (রাঃ)-কে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, জিবরাঈল (আঃ) প্রতি বছর আমাকে একবার কুরআন পড়ে শুনাতেন। এ বছর তিনি আমাকে দু'বার পড়ে শুনিয়েছেন। মনে হয় আমার মৃত্যু নিকটবর্তী হয়েছে। তুমিই আমার পরিবারের মধ্যে সবার আগে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। আমি তোমার জন্য কত উত্তম পূর্বসূরি। এ কথায় আমি কাঁদলাম। এরপর তিনি আমাকে গোপনে বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি মু'মিন নারীদের বা এ উম্মাতের নেত্রী হবে? এতে আমি হেসেছি। [১৬১৯] মাসরূক আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাইতে আর কারো অত কঠিন মৃত্যুযন্ত্রণা দেখিনি। [১৬২০] আয়িশাহ্ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুমূর্ষু অবস্থায় দেখলাম যে, তিনি তার নিকটস্থ পানির পাত্রে তার হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে তা তার মুখমণ্ডলে মলছেন, অতঃপর বলেন, "হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মৃত্যুযন্ত্রণায় সাহায্য করুন। [১৬২১] আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি সোমবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শেষবারের মত দেখেছি, যখন তিনি (জানালার) পর্দা সরালেন। আমি তার মুখমণ্ডলের দিকে তাকালাম, যেন কুর'আনের একটি পৃষ্ঠা। তখন লোকজন আবূ বকর (রাঃ) এর পিছনে সালারত ছিল। আবূ বকর (রাঃ) তার স্থান ত্যাগ করতে চাইলে, তিনি তাকে ইশারায় স্বস্থানে স্থির থাকতে বলেন এবং পর্দা নামিয়ে দেন। এ দিনের শেষ ভাগে তিনি ইন্তেকাল করেন। [১৬২২] উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় বলেছিলেনঃ "সলাত এবং তোমাদের অধীনস্থ দাস-দাসী"। বারবার একথা বলতে বলতে শেষে তার জবান মুবারক জড়িয়ে যায়। [১৬২৩] আসওয়াদ লোকেরা আয়িশাহ্ (রাঃ) এর নিকট উল্লেখ করে যে, আলী (রাঃ) ছিলেন (মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর) ওসী (প্রতিদিন)। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখন তাকে ওসী নিয়োগ করলেন? অবশ্যই আমি তাকে আমার বুকের সাথে বা কোলে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। তিনি একটি পাত্র চাইলেন। তিনি আমার কোলেই ঢলে পড়ে ইন্তেকাল করলেন। আমি তা বুঝতেই পারলাম না। তবে তিনি আবার কখন ওসিয়াত করলেন। [১৬২৪]
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকাল ও তার কাফন-দাফন।
আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন তখন আবূ বকর (রাঃ) আওয়ালী নামক স্থানে তার স্ত্রী বিনতে খারিজার ঘরে ছিলেন। লোকজন বলতে লাগলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেননি, বরং ওহী নাযিলের সময় তার যে অবস্থা হতো, এটা তাই। ইতোমধ্যে আবূ বকর (রাঃ) এসে তার মুখমণ্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে তার দু'চোখের মাঝখানে চুমু দিয়ে বলেন, আপনি দ্বিতীয়বার মারা যাবেন না। আপনি আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত। আল্লাহ্র শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই ইনতিকাল করেছেন। উমার (রাঃ) তখন মসজিদের এক কোণ থেকে বলছিলেন, আল্লাহ্র শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন নি। আর তিনি ব্যাপক ভাবে মুনাফিকদের শক্তি খর্ব না করা পর্যন্ত ইনতিকাল করবেন না। তখন আবূ বকর (রাঃ) মিম্বারে উঠে দাড়িয়ে বলেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহ ইবাদাত করতো সে যেন মনে রাখে, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি কখন মরবেন না। আর যে ব্যাক্তি মুহাম্মাদের ইবাদাত করতো সে জেনে রাখুক, মুহাম্মাদ তো ইনতিকাল করেছেন। "মুহাম্মাদ একজন রসূল মাত্র, তার পূর্বে অনেক রসূল গত হয়েছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে শহীদ হয়, তবে কি তোমরা পৃষ্ঠা প্রদর্শন করবে? কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহ্র ক্ষতি করতে পারবে না, বরং আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের পুরষ্কৃত করবেন" (সূরা আল ইমরান:১৪৪)। উমার (রাঃ) বলেন, আমার মনে হলো, আমি যেন এ আয়াত আজই পড়ছি। [১৬২৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) সাহাবায়ে কিরাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবর খননে সিদ্ধান্ত নিলে, তারা আবূ উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ) এর নিকট খবর পাঠান। তিনি মাক্কাহবাসীদের কবর খননের ন্যায় কবর খনন করতেন। তারা আবূ তালহা (রাঃ) এর নিকট ও খবর পাঠান। তিনি মদীনাবাসীদের জন্যে লাহাদ আকৃতির কবর খনন করতেন। তারা তাদের উভয়ের নিকট দু'জন লোক পাঠান। তারা বলেন, হে আল্লাহ! আপনার রসূলের জন্যে আপনি পছন্দ করুন। তারা আবু তালহা (রাঃ) কে পেয়ে গেলেন এবং তাকে নিয়ে আসা হলো, কিন্তু আবু উবাইদাহ (রাঃ) কে পাওয়া গেলো না। অতএব আবূ তালহা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্যে লাহদ কবর খনন করেন। রাবী বলেন, মঙ্গলবার তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাফনের কাজ সম্পন্ন করলে তাকে তার ঘরে খাটের উপর রাখা হয়। এরপর লোকজন দলে দলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট প্রবেশ করেন এবং তার জন্য দুআ করেন। পুরুষদের পালা শেষ হলে মহিলারা প্রবেশ করেন। তাদের পালা শেষ হলে বালকরা প্রবেশ করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জানাযায় কেউ ইমামতি করেননি। তাঁর করব কোথায় খনন করা হবে, এ নিয়ে একদল বলেন, তাকে তার মসজিদে দাফন করা হবে। অপরদল বলেন, তাকে তার সহাবীদের সাথে (একই গোরস্থানে) দাফন করা হবে। আবূ বকর (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন, সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। রাবী বলেন, যে বিছানায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন, তারা তা সরিয়ে নেন এবং তাঁর জন্য সেখানে কবর খনন করেন। অতঃপর তাকে বুধবার মধ্য রাতে দাফন করা হয়। আলী বিন আবূ তালিব, ফাদল বিন আব্বাস, তার ভাই কুসাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তাদাস শুক্রান (রাঃ) তাঁর কবরে নামেন। আবূ লায়লা আওস বিন খাওলী (রাঃ) আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) কে বলেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে আমাদেরও অংশ রয়েছে। আলী (রাঃ) তাকে বলেন তুমি ও নামো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তদাস শুক্রান রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিহিত চাঁদরটি সাথে নিয়েছিলেন। তিনি তাও কবরে দাফন করেন এবং বলেন, আল্লাহ্র শপথ! আপনার পরে তা আর কেউ কখনো পরবে না। অতএব তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে দাফন করা হয়। [১৬২৬] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, কিন্তু শাক্ক ও লাহাদ কবরের ঘটনা প্রমাণিত; এমনিভাবে যেখানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-গণ ইনতিকাল করেন সেখানেই তাকে দাফন করা হয় এটা প্রমাণিত। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মৃত্যু যন্ত্রণা তীব্রভাবে অনুভব করেন, তখন ফাতিমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বার কত কষ্ট। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আজকের দিনের পরে তোমার আব্বার আর কোন কষ্ট থাকবে নাহ। তোমার আব্বার নিকট এমন জিনিস উপস্থিত হয়েছে, যা কিয়ামত পর্যন্ত কাউকে ছাড়বে না। [১৬২৭] আনাস বিন মালিক (রাঃ) ফাতিমাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, হে আনাস! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর মাটি ঢেলে দিতে তোমাদের অন্তরাত্মা কিভাবে সায় দিতে পারলো। ৪/১৬৩০(১). আনাস (রাঃ), রসূলুল্লাহ (রাঃ) ইনতিকাল করলে ফাতিমাহ (রাঃ) বলেন, হায় আমার আব্বা! জিবরাঈল (আঃ) তার থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। হায় আমার আব্বা! তিনি তার রবের নিকটবর্তী হলেন। হায় আব্বা! জান্নাতুল ফিরদাওস তাঁর ঠিকানা। হায় আব্বা! তিনি তার রবের ডাকে সাড়া দিলেন। হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, আমি সাবিত (রহঃ) কে এ হাদীস বর্ণনা কালে দেখলাম যে, তিনি কাঁদছেন, এমনকি তার হাড়ের জোড়াগুলোও কাঁপছে। [১৬২৮] সাবিত আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিন মদিনায় উপনীত হন, তখন মাদীনাহ্র প্রতিটি বস্তু জ্যোতির্ময় হয়ে উঠে। আর যেদিইন তিনি ইন্তেকাল করেন, সেদিন মাদীনাহ্র প্রতিটি বস্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। [১৬২৯ ] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যমানায় আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে খোশালাপ করতে এবং মেলামেশা করতে এজন্য ভয় পেতাম যে, না জানি আমাদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত নাযিল হয়ে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পর থেকে আমরা তাদের সাথে খোলামেলাভাবে কথাবার্তা বলতে শুরু করি [ ১৬৩০] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে থাকা আবস্থায় আমাদের দৃষ্টি ছিলো একই দিকে (তার দিকে)। তাঁর ইন্তিকালের পর আমরা (আস্থির হয়ে) এদিক সেদিক দৃষ্টি দিতে লাগলাম (এখন কী করবো) [১৬৩১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, হাসান বাসরীর আনআনাহ বর্ণনা করার কারণে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ বিন আবূ উমাইয়া (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যমানায় লোকেদের অবস্থা এরূ ছিলো যে, সলাতী যখন সলাতে দাঁড়াতেন, তখন তাদের কারো দৃষ্টি তার পদদয়ের স্থান অতিক্রম করতো না। রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করার পর মানুষের অবস্থা এরূপ হয় যে, যখন তাদের কেউ সলাতে দাঁড়াতেন তখন তার দৃষ্টি সাজদাহর স্থান অতিক্রম করতো না। অতঃপর আবূ বাকর (রাঃ) ইনতিকাল করেন এবং উমার (রাঃ) খলীফা হন। তখন লোকেদের অবস্থা এরূপ হলো যে, তাদের কেউ যখন সলাতে দাঁড়াতেন তখন তার দৃষ্টি কিবলার দিক অতিক্রম করতো না। উসমান বিন আফফান (রাঃ) খলীফা হওয়ার পর থেকে বিশৃংখলার সূত্রপাত হয়। অতএব লোকজন (সলাতরত অবস্থায়) ডানে-বামে তাকাতে থাকে। [১৬৩২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। উক্ত হাদীসের রাবী মূসা বিন আবদুল্লাহ বিন আবূ উমায়্যাহ আল-মাখযূমী সম্পর্কে হাদীস বিশারদগণ বলেন, তিনি অপরিচিত। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইনতিকালের পর আবূ বকর (রাঃ) উমার (রাঃ)-কে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন উম্মু আয়মানের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করতে যেতেন, চলুন আমরাও তেমন তার সাথে দেখা করতে যাই। তিনি বলেন, আমরা তার নিকট গিয়ে উপস্থিত হলে তিনি কাঁদতে থাকেন। তারা দু’জন তাকে বলেন, আপনি কাঁদছেন কেন! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন আল্লাহর নিকট যা আছে তা তাঁর জন্য কল্যাণকর। কিন্তু আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান থেকে ওহী নাযিল হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, তার এ কথা তাদেরকে উভয়কে কাঁদতে উদ্বুদ্ধ করলো এবং তারাও তার সাখে কাঁদতে লাগলেন। [১৬৩৩] আওস বিন আওস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এদিনই শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে এবং এদিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে। অতএব তোমরা এদিন আমার প্রতি অধিক সংখ্যায় দুরূদ ও সালাম পেশ করো। কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সামনে পেশ করা হয়। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের দুরূদ আপনার নিকট কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনি তো মাটির সাথে মিশে যাবেন? তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)গণের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। [১৬৩৪] আবূ-দারদা’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জুমুআহ্র দিন আমার উপর অধিক দুরূদ পাঠ করবে। কেননা তা আমার নিকট পৌঁছানো হয়, ফেরেশতাগন তা পৌঁছে দেন। যে ব্যক্তিই আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা থেকে সে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তা আমার নিকট পৌঁছতে থাকে। রাবী বলেন, আমি বললাম, (আপনার) ইনতিকালের পরেও? তিনি বলেন, হাঁ, ইনতিকালের পরেও। আল্লাহ তা’আলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)গণের দেহ ভক্ষণ যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবিত এবং তাঁকে রিযিক দেয়া হয়। [১৬৩৫]