8. যাকাত
যাকাত পরিশোধ করা ফরয্।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), মুআয বিন জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে পাঠাবার প্রাক্কালে বলেন, নিশ্চয়ই তুমি এমন একটি সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছো যারা আহলে কিতাব। তুমি সর্বপ্রথম তাদেরকে "আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই এবং আমি আল্লাহ্র রসূল" এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার আহ্বান জানাবে। তারা তা মেনে নিলে তুমি তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ্ তাদের উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সলাত ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদের আরও জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ্ তাদের সম্পদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। তারা যদিও এটিও মেনে নেয় তবে তাদের উত্তম সম্পদ (গ্রহণ) থেকে নিজেদের বিরত রাখবে। তুমি মযলুমের বদদোয়াকে ভয় করো। কেননা মযলুমের আহাজারি ও আল্লাহ্র মাঝে কোন পর্দা (প্রতিবন্ধক) নেই। [১৭৮৩]
যাকাত পরিশোধ না করার পরিণতি।
আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার মালের যাকাত আদায় করে না, তার মালকে কিয়ামাতের দিন বিষধর সাপে পরিণত করা হবে, এমনকি তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমর্থনে আল্লাহ্র কিতাবের নিম্নোক্ত আয়াত আমাদের তিলাওয়াত করে শুনান (অনুবাদ): "আর আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদের দিয়েছেন, এতে যারা কৃপণতা করে, তাদের জন্য তা মঙ্গলজনক একথা যেন তারা মনে না করে...” (৩: ১৮০)। [১৭৮৪] আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন উট, ছাগল ও গরুর মালিক যদি এর যাকাত আদায় না করে, তবে এগুলো কিয়ামাতের দিন বিরাটকায় ও মোটাতাজা হয়ে উপস্থিত হবে এবং মালিককে এদের শিং ও ক্ষুর দিয়ে আঘাত করতে থাকবে। শেষটির পালা শেষ হলে আবার প্রথমটি থেকে শুরু হবে এবং এভাবেই চলতে থাকবে, যে পর্যন্ত না বিচারকার্য শেষ হয়। [১৭৮৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে উটের যাকাত দেয়া হয়নি, তা কিয়ামাতের দিন তার মালিককে তার ক্ষুর দিয়ে মাড়াতে থাকবে। তদ্রূপ গরু ও ছাগল এসে এদের ক্ষুর ও শিং দিয়ে এদের মালিককে আঘাত করতে থাকবে। তার সঞ্চিত সম্পদও বিষধর সাপে পরিণত হয়ে তার মালিকের সামনে হাজির হবে। মালিক দু’বার তা দেখে পালাবে, কিন্তু সে আবার মালিকের সামনে এসে দাঁড়াবে। তখন মালিক পালাতে চেষ্টা করবে এবং বলবে, তোমার সাথে আমার কি সম্পর্ক? সে বলবে, আমি তোমার গচ্ছিত সম্পদ, আমি তোমার রক্ষিত ধন। মালিক তার হাত দিয়ে সাপ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে সে তার হাতটি গিলে ফেলবে। [১৭৮৬]
যে মালের যাকাত আদায় করা হয় তা পুঞ্জীভূত সম্পদ নয়।
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর মুক্ত দাস খালিদ বিন আসলাম আমি আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) এর সাথে বের হলাম। এক বেদুঈন এসে তাঁকে আল্লাহ্র বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলোঃ “যারা সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহ্র পথে ব্যয় করে না...”(সূরা তওবাঃ ৩৪)। ইবনু উমার (রাঃ) তাকে বলেন, যে ব্যক্তি সোনা-রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে, অথচ এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য। এ অবস্থা ছিল যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার আগের। পরবর্তীতে যাকাতের বিধান নাযিল হলে যাকাতকেই আল্লাহ্ মালের পবিত্রতাকারী সাব্যস্ত করেন। অতঃপর ইবনু উমার (রাঃ) লোকটির দিকে তাকিয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আমার পরোয়া নেই যে, উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনাও যদি আমার হাতে আসে, তবে আমি তার পরিমাণ নিরূপণ করে এর যাকাত পরিশোধ করবো এবং মহান আল্লাহ্র হুকুম পালনে তা ব্যয় করবো। [১৭৮৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন তুমি তোমার মালের যাকাত আদায় করলে, তখন তুমি তোমার দায়িত্ব সম্পন্ন করে ফেললে। [১৭৮৮] ফাতিমাহ বিনতু কায়স (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যাকাত ব্যতীত সম্পদের উপর অন্য কোন দাবী নেই। [১৭৮৯]
সোনা-রূপার যাকাত।
আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ঘোড়া ও গোলামের যাকাত থেকে তোমাদের নিষ্কৃত দিলাম। তবে তোমরা প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম (যাকাত) দিবে। [১৭৯০] ইবনু উমার (রাঃ) ও আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি বিশ দিনার বা তার চেয়ে কিছু বেশি হলে অর্ধ দিনার এবং চল্লিশ দিনারে এক দিনার (যাকাত) গ্রহণ করতেন। [১৭৯১]
কেউ বছরের মাঝখানে কোন সম্পদের মালিক হলে।
আয়িশাহ্ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন মালের যাকাত নেই। [১৭৯২]
যেসব মালের উপর যাকাত ধার্য হয়।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ পাঁচ ‘ওয়াসাক’ –এর কম পরিমাণ খেজুরে, পাঁচ উকিয়া’ -এর কম পরিমাণ মুদ্রায় এবং পাঁচের কম সংখ্যক উটে যাকাত নেই। [১৭৯৩] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উটের সংখ্যা পাঁচ এর কম হলে তাতে যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়া’-এর কম মুদ্রায় যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাক -এর কম ফসলে যাকাত নেই। [১৭৯৪]
বর্ষপূর্তির পূর্বে দ্রুত যাকাত আদায় করা।
আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) আব্বাস (রাঃ) তার মালের বর্ষপূর্তির পূর্বে যাকাত প্রদানের ব্যাপারে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেন। [১৭৯৫]
যাকাত আদায় করার সময় যে দুআ পড়বে।
আবদুল্লাহ্ বিন আবূ আওফা (রাঃ) কোন ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তার মালের যাকাত নিয়ে উপস্থিত হলে তিনি তার জন্য দুআ’ করলেনঃ “হে আল্লাহ্! আপনি আবূ আওফার পরিবারের প্রতি দয়া করুন”। [১৭৯৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন যাকাত দিবে তখন তার সওয়াবের কথা ভুলে যেও না এবং এ দুআ’ করোঃ “হে আল্লাহ্! আপনি এই যাকাতকে তওবা কবুলের উসীলা বানিয়ে দিন এবং একে ঋণ পরিশোধের (বা জরিমানার) পর্যায়ভুক্ত না করুন”। [১৭৯৭] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।
উটের যাকাত।
আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সালেম (রহঃ) আমাকে একটি পত্র পড়ে শোনান, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ইনতিকালের পূর্বে যাকাত সম্পর্কে লিখেছিলেন। আমি তাতে যে তথ্য পাই তা হলোঃ পাঁচ উটের যাকাত একটি বকরী, দশ উটে দু’টি বকরী, পনের উটে তিনটি বকরী, বিশ উটে চারটি বকরী এবং পচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ উটে একটি “বিনতু মাখাদ” (পূর্ণ এক বছর বয়সের উষ্ট্রী), আর “বিনতু মাখাদ” না পাওয়া গেলে একটি “বিন লাবূন” (পূর্ণ দু’ বছর বয়সের উট)। উটের সংখ্যা পঁয়ত্রিশ থেকে একটি বেশি হলে পঁয়তাল্লিশ সংখ্যক পর্যন্ত একটি “বিনতু লাবূন”। উটের সংখ্যা পঁয়তাল্লিশ-এর একটি বেশি হলে ষাট সংখ্যক পর্যন্ত একটি “হিক্কাহ” (পূর্ণ তিন বছর বয়সের উষ্ট্রী)। উটের সংখ্যা ষাট-এর একটি বেশি হলে পঁচাত্তর সংখ্যক পর্যন্ত একটি “জাযাআহ” (পূর্ণ চার বছর বয়সের উষ্ট্রী)। উটের সংখ্যা পঁচাত্তরের চেয়ে একটি বেশি হলে, নব্বই সংখ্যক পর্যন্ত দু’টি “বিনতু লাবূন”। উটের সংখ্যা নব্বই থেকে একটি বেশি হলে এক শত বিশ সংখ্যক পর্যন্ত দু’টি হিক্কাহ্ যাকাত স্বরূপ দিতে হবে। এক শত বিশের অধিক প্রতি পঞ্চাশ উটে একটি হিক্কাহ এবং প্রতি চল্লিশ উটে একটি “বিনতু লাবূন”। [১৭৯৮] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উটের সংখ্যা পাঁচ-এর কম হলে কোন যাকাত নাই। পাঁচ থেকে নয় পর্যন্ত উটে একটি বকরী, দশ থেকে চৌদ্দ পর্যন্ত উটে দু’টি বকরী, পনের থেকে উনিশ পর্যন্ত উটে তিনটি বকরী, বিশ থেকে চব্বিশ পর্যন্ত উটে চারটি বকরী, পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উটে একটি বিনতু মাখাদ। যদি বিনতু মাখাদ না পাওয়া যায়, তবে একটি বিন লাবূন আদায় করতে হবে। উটের সংখ্যা বেড়ে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত পৌঁছলে এতে একটি বিনতু লাবূন। উটের সংখ্যা বেড়ে পঁচাত্তর পৌঁছলে এতে দু’টি বিনতু লাবূন। উটের সংখ্যা বেড়ে এক শত বিশ পর্যন্ত পৌঁছলে এতে দু’টি হিক্কাহ। উটের সংখ্যা বেড়ে একশত বিশের অধিক হলে প্রতি পঞ্চাশ উটে একটি হিক্কাহ এবং প্রতি চল্লিশ উটে একটি বিনতু লাবূন আদায় করতে হবে। [১৭৯৯]
যাকাত আদায়কারী কম বয়সী অথবা বেশি বয়সী পশু গ্রহণ করলে। [আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ)-এর পত্র]।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) তাকে লিখে পাঠানঃ বিসমিল্লাহির রহ্মানির রাহীম। এটি যাকাতের বিধান, যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র নির্দেশে মুসলমানদের জন্য ফরয করেছেন। উটের যত সংখ্যকে (যাকাত বাবদ) বকরী প্রদান করতে হয়, তারপর থেকে তার নিকট একটি জাযাআহ যাকাত বাবদ প্রদানের সম-সংখ্যক উট আছে, কিন্তু জাযাআহ নাই, তবে হিক্কাহ্ আছে, তার নিকট থেকে হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে, উপরন্তু সহজলভ্য্ হলে তার থেকে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম নেয়া হবে। যার উটের সংখ্যা একটি হিক্কাহ্ প্রদানের পর্যায়ে পৌঁছেছে, কিন্তু তার নিকট হিক্কাহ্ নাই, তবে বিনতু লাবূন আছে, তার নিকট থেকে (যাকাত স্বরূপ) বিনতু লাবূন গ্রহণ করা হবে, উপরন্তু তার থেকে সহজলভ্য হলে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম আদায় করা হবে। যার উটের সংখ্যা একটি বিনতু লাবূন প্রদানের পর্যায়ে পৌঁছেছে, কিন্তু তার নিকট বিনতু লাবূন নাই, তবে হিক্কাহ্ আছে, তার নিকট থেকে হিক্কাহ্ গ্রহণ করা হবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম প্রদান করবে। যার যাকাত বিনতু লাবূন প্রদানের পর্যায়ে পৌঁছেছে কিন্তু তার নিকট বিনতু লাবূন নাই, তবে বিনতু মাখাদ আছে, তার থেকে বিনতু মাখাদ গ্রহণ করা হবে, উপরন্তু তার থেকে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম উসূল করা হবে। যার যাকাত বিনতু মাখাদ প্রদানের পর্যায়ে পৌঁছেছে, কিন্তু তার নিকট বিনতু মাখাদ নাই, তবে বিনতু লাবূন আছে, তার থেকে বিনতু লাবূন গ্রহণ করা হবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম ফেরত দিবে। বিনতু মাখাদ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে তা না থাকলে এবং বিনতু লাবূন থাকলে তাই গ্রহণ করা হবে এবং যাকাতদাতাকে অতিরিক্ত কিছু দিতে হবে না। [১৮০০]
যাকাত আদায়কারী যে ধরনের উট গ্রহণ করবে।
ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত যাকাত আদায়কারী কর্মচারী আমাদের নিকট আসলে আমি তার হাত ধরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই নির্দেশ পাঠ করে শুনালামঃ “যাকাতের ভয়ে বিচ্ছিন্ন মালকে একত্র করা এবং একত্রিত মালকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না”। ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি তার একটি বিরাট ও মোটাতাজা উষ্ট্রী নিয়ে আসলে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এরপর লোকটি আগেরটির চাইতে কম হৃষ্টপুষ্ট উট নিয়ে আসলে তিনি তা গ্রহণ করেন এবং বলেন, কোন্ মাটি আমাকে বহন করবে এবং কোন্ আকাশ আমাকে ছায়া দান করবে, যখন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন মুসলিম ব্যক্তির উৎকৃষ্ট উট নিয়ে হাজির হবো। [১৮০১] জারীর বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত আদায়কারী যেন সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে আসে। [১৮০২]
গরু-মহিষের যাকাত।
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামন পাঠালেন এবং আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন প্রতি চল্লিশ গরুতে পূর্ণ দু’ বছর বয়সের একটি মাদী বাছুর এবং প্রতি ত্রিশ গরুতে একটি নর বা মাদী বাছুর গ্রহণ করি। [১৮০৩] আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতি ত্রিশ গরুতে পূর্ণ এক বছর বয়সের একটি নর বা মাদী এবং প্রতি চল্লিশটিতে পূর্ণ দু’ বছর বয়সের একটি মাদী বাছুর (যাকাত বাবদ আদায় করতে হবে)। [১৮০৪]
ছাগল-ভেড়ার যাকাত।
আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) অধস্তন রাবী ইবনু শিহাব বলেন, সালিম (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁর ইন্তিকালের আগে যাকাত সম্পর্কে লিখিত পত্র আমাকে পড়ে শুনান। এতে আমি দেখতে পেলাম যে, চল্লিশ থেকে এক শত বিশ পর্যন্ত বকরীর যাকাত একটি বকরী। এক শত একুশ থেকে দু’ শত পর্যন্ত বকরীর যাকাত দু’টি বকরী। দু’ শত এক থেকে তিন শত পর্যন্ত বকরীর যাকাত তিনটি বকরী। বকরীর সংখ্যা এর চেয়ে অধিক হলে প্রতি এক শত বকরীতে একটি বকরী। আমি উক্ত পত্রে আরো দেখতে পেলাম যে, বিচ্ছিন্নকে একত্র এবং একত্রকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। আমি এতে আরও দেখতে পেলাম যে, পাঁঠা, অতি বৃদ্ধ ও ক্রুটিযুক্ত পশু যাকাত বাবদ গ্রহণ করা যাবে না। [১৮০৫] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানদের পশুর যাকাত তাদের পানি পানের স্থান থেকে গ্রহণ করতে হবে। [১৮০৬] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, চল্লিশ থেকে এক শত বিশ পর্যন্ত বকরীর যাকাত একটি বকরী। এক শত একুশ থেকে দু’ শত পর্যন্ত বকরীর যাকাত দু’ টি বকরী এবং দু’ শত এক থেকে তিন শত পর্যন্ত বকরীর যাকাত তিনটি বকরী। বকরীর সংখ্যা তার অধিক হলে প্রতি এক শত বকরীতে একটি বকরী যাকাত ধার্য হবে। যাকাত ফরয হওয়ার আশঙ্কায় একত্রকে বিচ্ছিন্ন এবং বিচ্ছিন্নকে একত্র করা যাবে না। শরীকানা মালের যাকাত আদায়ের বেলায় কারো অংশ থেকে অতিরিক্ত গ্রহণ করা হলে, সে অপর শরীকের অংশ থেকে তা ফেরত পাবে। যাকাত আদায়কারীকে অতি বৃদ্ধ, ত্রুটিযুক্ত বা অন্ধ ও নর পশু দেয়া যাবে না, তবে যাকাত আদায়কারী ইচ্ছা করলে তা গ্রহণ করতে পারে। [১৮০৭]
যাকাত আদায়কারী কর্মচারির আচরণ।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকাত আদায়ে বা প্রদানে অন্যায় পন্থা অবলম্বনকারী যাকাত বারণকারীর সমতুল্য। [১৮০৮] রাফি‘ বিন খাদীজ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ন্যায়নিষ্ঠার সাথে যাকাত আদায়কারী আল্লাহ্র পথে জিহাদকারীর সমতুল্য যাবত না সে নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। [১৮০৯] আবদুল্লাহ্ বিন উনাইস (রাঃ) ও উমার ইবনুল খাওাব (রাঃ) আবদুল্লাহ্ বিন উনাইস (রাঃ) ও উমার ইবনুল খাওাব (রাঃ) একদিন যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করেন। উমার (রাঃ) বলেন, তুমি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যাকাতের মাল আত্মসাৎ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলতে শুনোনিঃ কেউ যদি যাকাতের একটি উট বা একটি ছাগল আত্মসাৎ করে, তবে তাকে ক্বিয়ামতের দিন তা বহনরত অবস্থায় হাযির করা হবে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ্ বিন উনাইস (রাঃ) বললেন, হাঁ শুনেছি। [১৮১০] বর্ণনাকারী ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ) কে যাকাত আদায়কারী হিসেবে নিয়োগ করা হলো। তিনি ফিরে আসলে জিজ্ঞেস করা হলো, যাকাতের মাল কোথায়? তিনি বলেন, মাল নিয়ে আসার জন্য কি আপনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমরা যেখান থেকে যাকাত আদায় করার সেখান থেকেই যাকাত আদায় করতাম এবং যেখানে তা ব্যয় করার সেখানেই তা ব্যয় করতাম। [১৮১১]
ঘোড়া ও গোলামের যাকাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলমানদের উপর তাদের গোলাম ও ঘোড়ার জন্য যাকাত ধার্য হবে না। [১৮১২] আলী (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি ঘোড়া ও গোলামের যাকাত থেকে তোমাদের অব্যাহতি দিলাম। [১৮১৩]
যেসব মালের যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক।
মুআয বিন জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামানে পাঠান এবং বলেন, ফসলের যাকাত বাবদ ফসল, ছাগলের যাকাত বাবদ ছাগল, উটের যাকাত বাবদ উট এবং গরুর যাকাত বাবদ গরু আদায় করবে। [১৮১৪] আম্র বিন শুআয়ব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই পাঁচটি ফসলের উপর যাকাত আরোপ করেছেন, যব, গম, খেজুর, কিশমিশ ও ভুট্টা। [১৮১৫] তাহকীক আলবানীঃ অত্যন্ত দুর্বল, চারটির কথা সহীহ ভুট্টা ব্যতীত, ভুট্টার কথা মুনকার।
কৃষিজাত ফসল ও ফসলের যাকাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৃষ্টির পানি অথবা ঝর্ণার পানি সিক্ত জমিনের উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ এবং পানি সেচ দ্বারা সিক্ত জমিনের উৎপন্ন ফসলের এক-বিংশতি অংশ যাকাত দিতে হবে। [১৮১৬] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বৃষ্টি, নদী ও ঝর্ণার পানিতে সিক্ত জমিনের ফসলের উশর (এক-দশমাংশ) এবং পানিসেচ দ্বারা সিক্ত জমিনের উৎপন্ন ফসলে অর্ধ-উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) যাকাত দিতে হবে। [১৮১৭] মুআয বিন জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে পাঠান এবং নির্দেশ দেন যে, আমি যেন বৃষ্টি এবং ঝর্ণার পানির সাহায্যে উৎপন্ন ফসলে উশর (এক-দশমাংশ) এবং সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সিক্ত যমীনের ফসলের অর্ধ-উশর যাকাত হিসেবে গ্রহণ করি। ইয়াহ্ইয়া বিন আদাম (রহঃ) এ হাদীসে উল্লিখিত কয়েকটি শব্দের ব্যাখ্যায় বলেন, যে যমীন বৃষ্টির পানিতে সিক্ত হয়। যে যমীনে বিশেষভাবে মেঘ ও বৃষ্টির পানির সাহায্যে ফসল উৎপাদন করা হয়। বৃষ্টির পানি ব্যতীত অন্য কোন পানি তাতে পৌঁছে না। আঙ্গুর বা অনুরূপ শিকড় জাতীয় গাছ, যার শিকড় ভূগর্ভস্থ পানি পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত বাঁচার জন্য তাতে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। (আরবী) হলো মাঠের পানি যা ঢলের রূপ ধারণ করে। (আরবী) হলো ঢলের পানির চেয়ে পরিমাণে কম বেগে আসা পানি। [১৮১৮]
অনুমানে খেজুর ও আঙ্গুরের পরিমাণ নির্ধারণ।
আত্তাব বিন আসীদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের আঙ্গুর ও অন্যান্য ফলের পরিমাণ অনুমান করে নির্ধারণের জন্য লোক পাঠাতেন। [১৮১৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার জয় করে তথাকার (ইহূদী) আদিবাসীদের সাথে এ চুক্তি করেন যে, খায়বারের ভূমি ও সোনা-রূপা তাঁর [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সরকারের মালিকানাভুক্ত থাকবে। খায়বারবাসীগণ তাঁকে বললো, আমরা জমাজমি (কৃষিকার্য) সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। অতএব আপনি ভূমি (চাষাবাদের জন্য) এ শর্তে আমাদেরকে ছেড়ে দিন যে, ফল ও ফসলের অর্ধেক আমাদের এবং অর্ধেক আপনাদের। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত শর্তে খায়বারের ভূমি তাদেরকে (চাষাবাদের জন্য) দিলেন। খেজুর গাছের ফল কাটার সময় হলে তিনি আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা (রাঃ)-কে তাদের নিকট পাঠান। তিনি গিয়ে অনুমানে ফলের পরিমাণ নিরূপণ করলেন। মদীনাবাসীর নিকট এ অনুমানের পরিভাষা হলো ‘খারস’। তিনি বলেন, বাগানে এই এই পরিমাণ ফল হবে। ইহূদীরা বললো, হে বিন রাওয়াহা! আপনি আমাদের উপর অধিক ধার্য করেছেন। বিন রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, আমি তো অনুমান করছি এবং যা ধার্য করছি তার অর্ধেকই তো তোমাদের দিবো। তারা বললো, এটাই সঠিক (ইনসাফ) এবং এ কারণেই আসমান-যমীন প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর তারা বললো, আপনি যা বলেছেন, আমরা তাতে সম্মত হলাম। [১৮২০]
যাকাত বাবদ নিকৃষ্ট মাল দেয়া নিষেধ ।
আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইরে এসে দেখেন যে, এক ব্যক্তি মাসজিদে কয়েকটি খেজুরের ছড়া ঝুলিয়ে রেখেছে। তাঁর হাতে ছিল একটি ছড়ি। তিনি ছড়ি দিয়ে এগুলোতে টোকা দিলেন এবং বললেনঃ ইচ্ছা করলে এই দানকারী আরও উৎকৃষ্টগুলো দান করতে পারতো। এই দানের মালিক কিয়ামাতের দিন তার নিকৃষ্ট মালই খেতে পাবে। [১৮২১] বারা’ বিন আযিব (রাঃ), মহান আল্লাহ্র বাণী (অনুবাদ): “এবং আমি যা ভূমি থেকে উৎপাদন করে দেই তার মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় করো এবং তা থেকে নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার সংকল্প করো না” (২:২৬৭) সম্পর্কে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ আয়াত আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তাদের বাগানে উৎপন্ন খেজুর আধাপাকা হলে তারা খেজুরের কিছু ছড়া রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদের দু’ খুঁটির মাঝখানে বাঁধা রশিতে ঝুলিয়ে রাখতেন। গরীব মুহাজিরগণ উক্ত ছড়া থেকে খেজুর খেতেন। দানকারীদের ধারণা ছিলো যে, ভালো খেজুরের সাথে নিম্ন মানের খেজুরও থাকলে দোষের কিছু নেই। যারা এরূপ করতো তাদের সম্পর্কে এ আয়াত নাযীল হয় (অনুবাদ): “তোমরা তা থেকে নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার সংকল্প করো না। কেননা তোমরাও সন্তুষ্টচিত্তে এমন মাল গ্রহণ করবে না।” অর্থাৎ কেউ যদি তোমাদেরকে এমন নিকৃষ্ট জিনিস উপহারস্বরূপ দেয় তবে হয়তো তোমরা দাতার প্রতি চক্ষুলজ্জায় অসন্তুষ্ট চিত্তে তা গ্রহণ করবে আর বলবে, তোমাদের এরূপ উপহারের প্রয়োজন ছিল না। তোমরা জেনে রাখো! আল্লাহ্ তোমাদের দান-খয়রাত থেকে মুখাপেক্ষীহীন। (আল্লাহ্ তায়ালা প্রয়োজনের উর্ধ্বে, তিনি প্রশংসিত)। [১৮২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ, তা’লীক ইবনু মাজাহ।
মধুর যাকাত ।
আবূ সায়্যারাহ আল-মুতা-ঈ-য়্যু (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মধু আছে। তিনি বলেন, এক-দশমাংশ (উশর) আদায় করো। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রসূল! ভূমিটি আমাকে খাস জমি হিসাবে দান করুন। অতএব তিনি আমাকে তা খাস হিসাবে দান করলেন। [১৮২৩] আবদুল্লাহ্ বিন আম্র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধুর এক-দশমাংশ (উশর) আদায় করেছেন। [১৮২৪]
সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা)।
ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদকাতুল ফিতর (ফিতরা) বাবদ এক সা খেজুর অথবা এক সা‘ যব দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে লোকেরা দু’ মুদ্দ গমকে এক সা‘র সমান ধরে নিয়েছে। [১৮২৫] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক স্বাধীন-পরাধীন (দাস) এবং পুরুষ ও নারীর উপর সদাকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা‘ যব অথবা এক সা‘ খেজুর নির্ধারণ করেছেন। [১৮২৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযাদারের অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফ্ফারাস্বরূপ এবং গরীব-মিসকীনদের আহারের সংস্থান করার জন্য সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পূর্বে তা পরিশোধ করে (আল্লাহ্র নিকট)-তা গ্রহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পর তা পরিশোধ করে, তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান। [১৮২৭] কায়স বিন সা‘দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে সদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন। পরে যাকাতের হুকুম নাযিল হলে এ ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশও দেননি এবং নিষেধও করেননি। তবে আমরা পূর্বোক্ত নির্দেশ পালন করে যাচ্ছি। [১৮২৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। তা’লীক ইবনু মাজাহ। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা‘ খাদ্য (গম) বা এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ পনির অথবা এক সা‘ কিসমিস দান করতাম। আমরা অব্যাহতভাবে এ নিয়মই পালন করে আসছিলাম। অবশেষে মুআবিয়াহ (রাঃ) মদিনায় আমাদের নিকট আসেন এবং লোকেদের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি শাম দেশের উত্তম গমের দু’ মুদ্দ পরিমাণকে এখানকার এক সা‘র সমান মনে করি। তখন থেকে লোকেরা এ কথাটিকেই গ্রহণ করে নিলো। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি কিন্তু সারা জীবন ঐ হিসাবেই সদকাতুল ফিতর পরিশোধ করে যাবো, যে হিসাবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা পরিশোধ করতাম। [১৮২৯] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুআয্যিন উমার বিন সা‘দ (মাকবূল) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাকাতুল ফিতর হিসাবে এক সা‘ খেজুর বা এক সা‘ যব বা এক সা‘ সাদা যব আদায় করার নির্দেশ দেন। [১৮৩০]
উশর ও খাজনা।
আলা’ ইবনুল হাদরামী (রাঃ) রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বাহরায়ন বা হাজার এলাকায় পাঠান। আমি দু’ সহোদর মুসলমান ও মুশরিক ভাইয়ের শরীকানা বাগানে পৌঁছে মুসলমান ভাইয়ের নিকট থেকে উশর এবং মুশরিক ভাইয়ের নিকট থেকে খাজনা আদায় করতাম। [১৮৩১]
ষাট সা‘-এ এক ওয়াস্ক।
আবূ সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ষাট সা‘ এ এক ওয়াস্ক। [১৮৩২] জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ষাট সা‘-এ এক ওয়াস্ক। [১৮৩৩]
নিকটাত্মীয়কে দান-খয়রাত করা।
আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আমার যাকাত আমার স্বামী ও আমার তত্ত্বাবধানাধীন ইয়াতীমদের ভরণ-পোষণের জন্য দান করলে তা যথেষ্ট হবে কি? ১/১৮৩৪ (১). হাসান বিন মুহাম্মাদ ইবনুস-সাব্বাহ, আবূ মুয়াবিয়াহ, আ’মাশ, শাকীক, আবদুল্লাহ্র স্ত্রী যায়নাব এর ভাতিজা আমর ইবনুল হারিস, আবদুল্লাহ্ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)। [১৮৩৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দান-খয়রাত করার নির্দেশ দিলেন। আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) বললেন, আমার দরিদ্র স্বামী এবং আমার ভাইয়ের কয়েকটি ইয়াতীম সন্তান রয়েছে। আমি সব সময় তাদের জন্য আমার এই এই পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে আসছি। তাদেরকে আমার যাকাত দেয়া যাবে কি? তিনি বলেন, হাঁ। রাবী বলেন, যায়নাব (রাঃ) কুটিরশিল্প উৎপাদন করে উপার্জন করতেন। [১৮৩৫] তাহকীক আলবানীঃ ভিন্ন একটি সানাদে হাদীসটি সহীহ।
অপরের নিকট যাচ্ঞা করা নিন্দনীয়।
যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে পাহাড়ে গিয়ে এক বোঝা কাঠ সংগ্রহ করে তা নিজে পিঠে বহন করে নিয়ে এসে বিক্রয় করে তার মূল্য দ্বারা সামর্থ্যবান হয়, তবে তা তার জন্য লোকের কাছে হাত পেতে বেড়ানোর চেয়ে অবশ্যই উত্তম। লোকেরা তাকে দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। [১৮৩৬] সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কে আমার একটি কথা কবুল করবে, তাহলে আমি তার জান্নাতের জামিন হবো। আমি বললাম, আমি। তিনি বললেনঃ তুমি লোকদের নিকট কিছু প্রার্থনা করবে না। রাবী বলেন, সাওবান (রাঃ)-এর চাবুক আরোহিত অবস্থায় নিচে পড়ে যেতো, কিন্তু তিনি কাউকে বলতেন না, এটি আমাকে তুলে দাও। তিনি বাহন থেকে নেমে তা তুলে নিতেন। [১৮৩৭]
স্বচ্ছল হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি যাচ্ঞা করে।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মানুষের মাল চেয়ে বেড়ায়, সে মূলত জাহান্নামের অঙ্গার চেয়ে বেড়ায়। অতএব সে তা কম সংগ্রহ করুক বা বেশী সংগ্রহ করুক। [১৮৩৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সচ্ছল ও সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়। [১৮৩৯] আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার স্বনির্ভর থাকার মত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও (অন্যের কাছে কিছু) চায়, সে কিয়ামাতের দিন আহত মুখমন্ডলসহ হাজির হবে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্র রসূল! সচ্ছলতার সীমা কতটুকু? তিনি বলেন, পঞ্চাশ দিরহাম অথবা তার সমমূল্যের সোনা। এক ব্যক্তি সুফ্ইয়ানকে বললো, শু'বাহ তো হাকীম বিন জুবায়রের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন না। তখন সুফ্ইয়ান বললেন, আমার নিকট এ হাদীস যায়দ (রাঃ) মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমানের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। [১৮৪০]
যার জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়। তবে পাঁচজন ধনী ব্যক্তির জন্য তা হালালঃ যাকাত আদায়কারী কর্মচারী (বেতন বাবদ), আল্লাহ্র পথে জিহাদরত ব্যক্তি, যে ব্যক্তি তার নিজস্ব মাল দ্বারা যাকাতের মাল ক্রয় করে, কোন গরীব ব্যক্তি তার প্রাপ্ত যাকাত কোন সচ্ছল ব্যক্তিকে উপহারস্বরূপ দিলে এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়। তবে পাঁচজন ধনী ব্যক্তির জন্য তা হালালঃ যাকাত আদায়কারী কর্মচারী (বেতন বাবদ), আল্লাহ্র পথে জিহাদরত ব্যক্তি, যে ব্যক্তি তার নিজস্ব মাল দ্বারা যাকাতের মাল ক্রয় করে, কোন গরীব ব্যক্তি তার প্রাপ্ত যাকাত কোন সচ্ছল ব্যক্তিকে উপহারস্বরূপ দিলে এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। [১৮৪১]
যাকাত দানের ফাদীলাত।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ যদি কোন পবিত্র মাল দান করে, আর আল্লাহ্ পবিত্র মাল ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না, তবে দয়াময় আল্লাহ্ তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন, যদিও তা একটি খেজুর হয়। আল্লাহ্র হাতে তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পাহাড়ের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। আল্লাহ্ তা সে ব্যক্তির জন্য বৃদ্ধি করতে থাকেন, যেমন তোমাদের কেউ ঘোড়া অথবা উটের বাচ্চাকে লালন-পালন করে বড় করে। [১৮৪২] আদী বিন হাতিম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সাথেই তোমাদের রব কোন দোভাষীর মধ্যস্থতা ছাড়াই কথা বলবেন। সে তার সামনের দিকে তাকিয়ে কেবল আগুনই দেখতে পাবে। সে তার ডান দিকে তাকিয়ে কেবল তার পূর্বকৃত কার্যকলাপই দেখতে পাবে। সে তার বাম দিকে তাকিয়ে কেবল তার পূর্বকৃত কার্যকলাপই দেখবে। অতএব তোমাদের কেউ যদি আগুন থেকে বাঁচতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও তাই করে। [১৮৪৩] সালমান বিন আমির আদ-দাব্বী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (অনাত্নীয়) গরীব-মিসকিনকে যাকাত দান করলে তা যাকাতই (যাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়)। আর আত্নীয়-স্বজনকে যাকাত দিলে দ্বিগুন (যাকাতের সওয়াব এবং আত্নীয়তা সম্পর্ক রক্ষার সওয়াব) হয়। [১৮৪৪]