9. বিবাহ

【1】

বিবাহ করার ফযীলাত

আলকামাহ বিন কায়স আমি আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) -এর সাথে মিনায় উপস্থিত ছিলাম। উসমান (রাঃ) এসে তাঁর সাথে একান্তে কথা বলেন। আমিও তাঁর নিকটেই বসলাম। উসমান (রাঃ) তাঁকে বলেন, আমি কি তোমার সাথে এক কুমারী মেয়ের বিবাহ দিবো, যে তোমার অতীত যৌবনের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে? আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন দেখলেন যে, তার উদ্দেশ্য কেবল বিবাহ করার উৎসাহ প্রদান করা, তখন তিনি আমাকে হাতের ইশারায় ডাকলেন। আমি তার নিকটে গেলাম এবং তিনি তখন বলছিলেন, তুমি যদি এ কথায় রাযী হয়ে যেতে। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা তা দৃষ্টিশক্তিকে সংযতকারী এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী। আর যাত এ সামর্থ্য নেই, সে যেন সিয়াম রাখে। কেননা এটি তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী। [১৮৪৫] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বিবাহ করা আমার সুন্নাত। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত মুতাবিক কাজ করলো না সে আমার নয়। তোমরা বিবাহ কর, কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের সামনে গর্ব করবো। অতএব যার সামর্থ্য আছে সে যেন বিবাহ করে এবং যার সামর্থ্য নেই সে যেন সিয়াম রাখে। কারন সাওম তার জন্য জৈবিক উত্তেজনা প্রশমনকারী। [১৮৪৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু'জনের পারস্পরিক ভালবাসা স্থাপনের জন্য বিবাহের বিকল্প নেই। [১৮৪৭]

【2】

স্ত্রীসঙ্গ ত্যাগ নিষিদ্ধ।

সা'দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) -এর স্ত্রী সংসর্গ ত্যাগ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলে আমরা অবশ্যই নপুংসক হয়ে যেতাম। [১৮৪৮] সামুরাহ (বিন জুনদুব) (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী সংসর্গ ত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। যায়দ বিন আখযামের বর্ণনায় আরো আছেঃ কাতাদাহ (রাঃ) এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) : "আর আমি তোমার আগে রসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম" (সূরা রাদঃ ৩৮)। [১৮৪৯]

【3】

স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার।

মুআবিয়াহ (বিন হায়দার) (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, স্বামীর উপর স্ত্রীর কি অধিকার রয়েছে? তিনি বলেন, সে আহার করলে তাকেও (একই মানের) আহার করাবে, সে পরিধান করলে তাকেও একই মানের পোষাক পরিধান করাবে (অথবা তোমাদের ভরণপোষণের সাথে তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে এবং তোমাদের পোষাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করার সাথে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদের ও ব্যবস্থা করবে)। কখন ও তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না, অশ্লীল গালমন্দ করবে না এবং নিজ বাড়ী ছাড়া অন্যত্র তাকে একাকী ত্যাগ করবে না। [১৮৫০] আমর ইবনুল আহওয়াস (রাঃ) তিনি বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান করেন এবং ওয়াজ-নসীহত করেন। এরপর তিনি বলেন, তোমরা নারীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ শুনে নাও। কেননা তারা তোমাদের নিকট আবদ্ধ আছে। এর অধিক তাদের উপর তোমাদের কর্তৃত্ব নাই যে, তারা যদি প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়, সত্যিই যদি তারা তাই করে, তবে তোমরা তাদেরকে পৃথক বিছানায় রাখবে এবং আহত হয় না এরূপ হালকা মারধর করবে। অতঃপর তারা তোমাদের অনুগত হয়ে গেলে তাদের উপর আর বাড়াবাড়ি করো না। স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তোমাদের উপর ও তাদের অধিকার আছে। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের শয্যা তোমাদের অপছন্দনীয় লোকেদের দ্বারা মাড়াবে না এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোকেদেরকে তোমাদের ঘরে প্রবেশানুমতি দিবে না। সাবধান! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদের ভরণপোষণ, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সজ্জার ব্যাপারে তোমরা তাদের প্রতি শোভনীয় আচরণ করবে। [১৮৫১]

【4】

স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার।

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে অবশ্যই স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে লাল পাহাড় থেকে কালো পাহাড়ে অথবা কালো পাহাড় থেকে লাল পাহাড়ে পাথর স্থানান্তরের নির্দেশ দিলে তা পালন করা তার জন্য অপরিহার্য হতো। [১৮৫২] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, কিন্তু প্রথম অংশ তাকে স্বামীর জন্য সাজদার নির্দেশের সম্ভাবনার কথা সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সিজদা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে মুআয! এ কী? তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পাই যে, তথাকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদেরকে সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে। সেই স্বত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না। স্ত্রী শিবিকার মধ্যে থাকা অবস্থায় স্বামী তার সাথে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে চাইলে স্ত্রীর তা প্রত্যাখ্যান করা অনুচিত। [১৮৫৩] মুসাবির আল-হিমাইয়ারী (মাজহুল বা অপরিচিত) তার মাতা (ইসমু মুবহাব বা নাম অজ্ঞাত) , বলেন, আমি উম্মু সালামাহকে (রাঃ) , বলতে শুনেছি, স্বামী খুশি থাকা অবস্থায় কোন স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতি। [১৮৫৪]

【5】

সর্বোত্তম মহিলা।

আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গোটা দুনিয়াই হলো সম্পদ। আর দুনিয়ার মধ্যে পুণ্যবতী স্ত্রীলোকের চেয়ে অধিক উত্তম কোন সম্পদ নাই। [১৮৫৫] সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, সোনা-রূপা (মূল্যবান সম্পদ) পুঞ্জীভূত করে রাখার সমালোচনায় কুরআনের আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কিরাম বলেন, তাহলে আমরা কোন সম্পদ ধরে রাখবো? উমার (রাঃ) বলেন, আমি তা জেনে তোমাদের বলে দিবো। অতঃপর তিনি তাঁর উটকে দ্রুত হাঁকিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাক্ষাত পেয়ে গেলেন। আমিও তার পিছনে পিছনে গেলাম। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কোন সম্পদ সঞ্চয় করবো? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন অর্জন করে কৃতজ্ঞ অন্তর, যিকিরকারী জিহবা এবং আখরাতের কাজে তাকে সহায়তাকারী ঈমানদার স্ত্রী। [১৮৫৬] আবূ উমামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ " কোন মু'মিন ব্যক্তি আল্লাহভীতির পর উত্তম যা লাভ করে তা হলো পূণ্যময়ী স্ত্রী। স্বামী তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা পালন করে; সে তার দিকে তাকালে (তার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রফুল্লতা) তাকে আনন্দিত করে এবং সে তাকে শপথ করে কিছু বললে সে তা পূর্ণ করে। আর স্বামীর অনুপস্হিতিতে সে তার সম্ভ্রম ও সম্পদের হেফাযত করে। " [১৮৫৭]

【6】

ধর্মপরায়ণা নারীকে বিবাহ করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে মহিলার বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশ-মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য্য এবং তার ধর্ম-পরায়ণতা। অতএব তুমি ধর্ম-পরায়ণা নারীর সন্ধান করো। অন্যথায় তোমার দু'হাত ধূলি ধুসরিত হোক। " [১৮৫৮] আব্দুল্লাহ্‌ বিন আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমরা শুধু রুপ-সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে মহিলাদের বিবাহ করো না। এ রুপ-সৌন্দর্য্য হয়তো তাদের ধ্বংসের কারণও হতে পারে। হয়তো এই সম্পদই তাদের অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। অতএব ধর্মপরায়ণতা বিবেচনায় তোমরা তাদের বিবাহ করো। চেপ্টা নাকবিশিষ্ট কুৎসিৎ দাসীও অধিক উত্তম যদি সে হয় ধর্ম-পরায়ণা। " [১৮৫৯] তাহক্বীক আলবানীঃ অত্যন্ত দঈফ। তবে ইবনু হিব্বান তার সহীহায় হাদীসটি ভিন্ন একটি সানাদে সহীহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

【7】

কুমারী মহিলা বিবাহ করা।

জাবির বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে এক মহিলাকে বিবাহ করলাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সাক্ষাত করলে তিনি বলেনঃ "হে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছো?" আমি বললাম, 'হ্যাঁ'। তিনি বললেন, "কুমারী না বিধবা?" আমি বললাম, 'বিধবা'। তিনি বলেন, "কেন তুমি কুমারী মেয়ে বিবাহ করলে না, তাহলে তার সাথে তুমি রসিকতা ও কৌতুক করতে পারতে?" আমি বললাম, আমার কয়েকটি বোন আছে। তাই আমি আমার ও আমার বোনদের মধ্যে একটি কুমারী মেয়ের প্রবেশ করাকে সংকটজনক বোধ করলাম। তিনি বলেনঃ "তাতো ভালো কথা"। [১৮৬০] উতবাহ বিন উওয়ায়ম আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমাদের কুমারী মেয়ে বিবাহ করা উচিত। কেননা তারা মিষ্টমুখী, নির্মল জরায়ুধারী এবং অল্পতেই তুষ্ট হয়। " [১৮৬১]

【8】

স্বাধীন ও অধিক সন্তানদানে সক্ষম নারী বিবাহ করা।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ "যে ব্যক্তি পাক-পবিত্র অবস্হায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে চায় সে যেন স্বাধীন নারী বিবাহ করে। " [১৮৬২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমরা বিবাহ করো, আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গৌরব করবো। " [১৮৬৩]

【9】

বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখা।

মুহাম্মাদ বিন সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক মহিলাকে বিবাহের পয়গাম পাঠালাম। আমি তাকে দেখার জন্যে চুপিসারে তার বাগানে যাতায়াত করতাম এবং সেখানে তাকে দেখে ফেললাম। তাকে বলা হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী হয়ে তুমি এই কাজ করলে? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ "যখন আল্লাহ কারো অন্তরে কোন মহিলাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দানের আগ্রহ পয়দা করেন, তখন তাকে দেখে নেয়াতে দোষের কিছু নেই। " [১৮৬৪] আনাস বিন মালিক (রাঃ) মুগীরাহ বিন শু'বাহ (রাঃ) এক মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, "তুমি গিয়ে তাকে দেখে নাও। কেননা তা তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। " অতঃপর তিনি তাই করলেন এবং তাকে বিবাহ করলেন। পরে তাঁর নিকট তাদের দাম্পত্য সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করা হয়। [১৮৬৫] মুগীরাহ বিন শু'বাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে এক মহিলাকে বিবাহ করার ব্যাপারে তাঁর সাথে আলাপ করলাম। তিনি বলেনঃ " তুমি যাও এবং তাকে দেখে নাও। হয়তো তাতে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। " অতএব আমি এক আনসার মহিলার নিকটে এসে তার পিতা-মাতার নিকট তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম এবং সাথে সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাদীসও তাদের অবহিত করলাম। কিন্তু মনে হলো তার পিতা-মাতা এটা অপছন্দ করলো। রাবী বলেন, মেয়েটি পর্দার আড়াল থেকে উক্ত হাদীস শুনে বললোঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে পাত্রী দেখার আদেশ দিয়ে থাকলে আপনি দেখে নিন। অন্যথায় আমি আপনাকে শপথ দিচ্ছি (না দেখার জন্যে)। সে যেন ব্যাপারটিকে অভিনব মনে করলো। রাবী বলেন, আমি তাকে দেখে নিলাম এবং তাকে বিবাহ করলাম। পরে মুগীরাহ (রাঃ) তার সাথে সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। [১৮৬৬]

【10】

কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। " [১৮৬৭] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। " [১৮৬৮] ফাতিমাহ বিনতু কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেন, "তোমার ইদ্দত পূর্ণ হলে আমাকে জানাবে। " ইদ্দত শেষ হলে আমি তাঁকে অবহিত করলাম। এরপর মুআবিয়া, আবুল জাহম বিন সুখায়র ও উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাকে) বলেনঃ " মুআবিয়া গরীব লোক, তার কোন সম্পদ নেই। আর আবুল জাহম স্ত্রীদের অধিক মারধর করে। তবে উসামাহ। ফাতিমাহ (রাঃ) দু'বার হাত দিয়ে এভাবে ইশারা করে বলেন, উসামাহ, উসামাহ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ "আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যই তোমার জন্যে কল্যাণকর। "ফাতিমাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বিবাহ করলাম এবং তার নেক আমল আমার জন্যে ঈর্ষণীয় ছিলে। " [১৮৬৯]

【11】

কুমারী ও বিধবা মেয়ের মত গ্রহণ প্রসঙ্গে।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "বিধবা নারী নিজের ব্যাপারে তার অভিভাবক অপেক্ষা অধিক কর্তৃত্বশীল এবং কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে তার সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। " বলা হলো, ইয়া রসূলুল্লাহ! কুমারী তো বিবাহের ব্যাপারে কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। তিনি বলেন, "তার নীরবতাই তার সম্মতি। " [১৮৭০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "বিধবাকে তার নির্দেশ গ্রহণ ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকেও তার সম্মতি গ্রহণ ব্যতীত বিবাহ দেয়া যাবে না। নীরবতাই তার সম্মতির লক্ষণ। " [১৮৭১] আদী বিন উমায়রাহ আল কিন্দী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ " বিধবা মহিলা তার ব্যাপারে সুস্পষ্ট মত প্রকাশ করবে। আর কুমারী মেয়ের নীরবতা তার সম্মতির লক্ষণ। " [১৮৭২]

【12】

কেউ নিজের মেয়েকে তার অমতে বিবাহ দিলে।

আবদুর রহমান বিন ইয়াযীদ ও মুজাম্মি' বিন ইয়াযীদ আল-আনসারী (রঃ) সংবাদ দেন যে, খিযাম নামক এক ব্যক্তি তার মেয়েকে বিবাহ দেন। সে তার পিতার এই বিবাহ অপছন্দ করে। মেয়েটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্হিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পিতার দেয়া এই বিবাহ রদ করে দেন। পরে সেই মেয়ে আবূ লুবাবা বিন আব্দুল মুনযির (রাঃ)-কে বিবাহ করে। ইয়াহহিয়া (রঃ) বলেন, সে ছিল সায়্যিবা (বিধবা)। [১৮৭৩] বুরায়দাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক যুবতী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্হিত হয়ে বললো, আমার পিতা তার ভ্রাতুষ্পুত্রকে তার দুর্দশাগ্রস্ত অবস্হা থেকে উদ্ধারের জন্য আমাকে তার সাথে বিবাহ দিয়েছেন। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি মেয়েটির এখতিয়ারে ছেড়ে দেন। মেয়েটি বললো, আমার পিতা যা করেছেন তা আমি বহাল রাখলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো, মেয়েরা জেনে নিক যে, বিবাহের ব্যাপারে পিতাদের কোন এখতিয়ার নেই। [১৮৭৪] তাহক্বীক আলবানীঃ দঈফ শায। ইবনু আব্বাস (রাঃ) একটি কুমারী মেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তাঁকে জানায় যে, তার পিতা তার অমতে তাকে বিবাহ দিয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে (বিবাহ রদের) এখতিয়ার দিলেন। [১৮৭৫] ৩/১৮৭৫ (১). <মুহাম্মাদ ইবনুস সাব্বাহ><মুআম্মার বিন সুলায়মান আর-রাক্কী><যায়দ বিন হিব্বান (তিনি সত্যবাদী কিন্তু হাদীস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন) ><আয়্যূব সাখতিয়ানী><ইকরিমাহ><ইবনু আব্বাস (রাঃ) > [১৮৭৫] তাহক্বীক আলবানীঃ সহীহ।

【13】

নাবালেগ মেয়েকে তার পিতা বিবাহ দিলে।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ছয় বছর বয়সে আমাকে বিবাহ করেন। অতঃপর আমরা (হিজরত করে) মাদীনায় চলে এলাম এবং হারিস ইবনুল খাযরাজ গোত্রে আশ্রয় নিলাম। এখানে আমি জ্বরে আক্রান্ত হলে আমার মাথার চুল উঠে যায় এবং অল্প কিছু চুল অবশিষ্ট থাকে। আমি আমার বান্ধবীদের সাথে দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম, তখন আমার মা উম্মু রুমান এসে আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন। আমি তার নিকট আসলাম, কিন্তু আমি তার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে ঘরের দরজায় দাঁড় করিয়ে দেন। আমি তখন সজোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। তিনি পানি নিয়ে তা দ্বারা আমার মুখ ও মাথা মুছে দিলেন, অতঃপর আমাকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যান, তখন ঘরের মধ্যে কিছু সংখ্যক আনসারী মহিলা ছিলেন। তারা বললেন, কল্যাণ ও বরকত হোক, ভাগ্য প্রসন্ন হোক। তিনি আমাকে তাদের নিকট সোপর্দ করলেন। তারা আমাকে সুসজ্জিত করেন। দুপুর বেলা হঠাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপস্হিতি আমাকে সচকিত করে। আমার মা আমাকে তাঁর নিকট অর্পণ করেন। তখন আমার বয়স ছিল নয় বছর। " [১৮৭৬] আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ) (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাহ (রাঃ) কে তার সাত বছর বয়সে বিবাহ করেন এবং তার সাথে তার নয় বছর বয়সে বাসর যাপন করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের সময় তার বয়স ছিল আঠার বছর।”

【14】

পিতা ব্যতীত অপর কেউ নাবালেগ মেয়েকে বিবাহ দিলে।

ইবনু উমার (রাঃ) উনসান বিন মাযউন (রাঃ) ইন্তিকালের সময় তার একটি কন্যা সন্তান রেখে যান। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমার মামা এবং ঐ মেয়ের চাচা কুদামাহ মেয়েটির পিতার মৃত্যুর পর মেয়েটির সাথে পরামর্শ না করেই তাকে আমার সাথে বিবাহ দেন। সে তার দেয়া এ বিবাহ অপছন্দ করে এবং মুগীরাহ বিন শুবাহর সাথে বিবাহিত হতে পছন্দ করে। অতএব কুদামাহ মুগীরার সাথে তার বিবাহ দেন।” [১৮৭৮]

【15】

অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হয় না।

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক। [১৮৭৯] আয়িশাহ (রাঃ) ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হয় না। আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আরও আছেঃ যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক”। [১৮৮০] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হয় না। [১৮৮১] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিবাহ দিবে না। কেননা যে নারী স্বউদ্যোগে বিবাহ করে সে যেনাকারিণী। [১৮৮২] তাহকীক আলবানীঃ যিনার বাক্য ব্যতীত সহীহ।

【16】

শিগার বিবাহ নিষিদ্ধ

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। রাবী বলেন, শিগার বিবাহ এই যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিলো, তুমি আমার সাথে তোমার মেয়েকে অথবা বোনকে বিবাহ দাও এবং তার পরিবর্তে আমি আমার মেয়েকে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিবাহ দিবো, আর এতে কোন মাহর থাকে না। [১৮৮৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। [১৮৮৪] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে শিগার বিবাহের কোন সুযোগ নাই। [১৮৮৫]

【17】

মহিলাদের মাহর (মোহরানা)

আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের মাহর কতো ছিলো? তিনি বলেন, তার স্ত্রীদের মাহরের পরিমাণ ছিলো বার উকিয়া ও এক নাশ। তুমি কি জানো, নাশ কী? তাহলো অর্ধ উকিয়া। আর তাহলো পাঁচশত দিরহামের সমান। [১৮৮৬] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেছেন, মহিলাদের মাহরের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তা যদি পার্থিব জীবনে সম্মান অথবা আল্লাহর কাছে তাকওয়ার প্রতীক হতো, তাহলে তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে অধিক যোগ্য ও অগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি তার স্ত্রী ও কন্যাদের মাহর বারো উকিয়ার বেশি ধার্য করেননি। কখনও অধিক মাহর স্বামীর উপর বোঝা হয়ে দাড়ায়। ফলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মনে শক্রতা সৃষ্টি হয়, এমনকি সে বলতে থাকে, আমি তোমার জন্য পানির মশক বহনে বাধ্য হয়েছি অথবা তোমার জন্য ঘর্মাক্ত হয়ে পড়েছি। (রাবী বলেন), আমি একজন বেদুইন অতএব আমি “আলাকাল কিরবা” বা “আলাকাল কিরবা”-এর অর্থ কি তা জানি না।”[১৮৮৭] আমির বিন রাবীআহ (রাঃ) ফাযারাহ গোত্রের এক ব্যাক্তি এক জোড়া পাদুকার বিনিময়ে বিবাহ করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বিবাহ অনুমোদন করেন। [১৮৮৮] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বলেনঃ কে তাকে বিবাহ করবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাকে একটি লোহার আংটি হলেও তা (মাহরস্বরূপ) দাও। সে বললো, আমার কাছে কিছুই নাই। তিনি বলেনঃ তোমার কাছে কুরআনের যে আছে, তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম।” [১৮৮৯] আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশাহ (রাঃ)-কে একটি ঘরের আসবাবপত্রের বিনিময়ে বিবাহ করেন, যার মূল্য ছিল পঞ্চাশ দিরহাম। [১৮৯০]

【18】

কোন ব্যক্তি বিবাহ করার পর মাহর ধার্য করার পূর্বে মারা গেলে।

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) ও মাকিল বিন সিনান (রাঃ) (আবদুল্লাহ্‌) তাকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সে এক মহিলাকে বিবাহ করার পর তার সাথে সহবাস ও মাহর ধার্য কার পূর্বে মারা গেছে। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) বললেন, সেই মহিলা মাহর পাবে, মীরাসও পাবে এবং তাকে ইদ্দাতও পালন করতে হবে। মাকিল বিন সিনান আল-আশজাঈ (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি বিরওয়া‘ বিনতু ওয়াশিকের ক্ষেত্রেও এরূপ ফয়সালা দিয়েছেন। [১৮৯১]

【19】

বিবাহের খুতবাহ (ভাষণ)

আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কল্যাণসমূহের উৎস, তার সমষ্টি এবং তার সমাপ্তি দান করা হয়েছে। তিনি আমাদের সলাতের খুত্‌বা এবং প্রয়োজনের (বিবাহের) খুত্‌বা শিক্ষা দিয়েছেন। সলাতের খুতবা (তাশাহহুদ) হলোঃ সমস্ত সম্মান, ইবাদাত ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর রাহমাত ও বারাকাতও। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাহদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দাহ ও তার রসূল। আর বিবাহের খুত্‌বা হলোঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি, তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও আমাদের কাজের নিকৃষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, তিনি এক এবং তার কোন শরীক নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দেই যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দা ও রসূল”। এরপর তোমরা তোমাদের খুতবার সাথে কুরআনের এ তিনটি আয়াত যোগ করবেঃ “হে ঈমানদারগণ। আল্লাহকে যেরূপ ভয় করা উচিত তোমরা তাকে তদ্রুপ ভয় করো এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না” (সূরা আল ইমরানঃ ১০২)। “হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিণীকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে অসংখ্য পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞা করে থাকো এবং জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক” (সূরা নিসাঃ ১)। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তিনি তোমাদের কার্যাবলি সংশোধন করে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে” (সূরা আহ্‌যাবঃ ৭০-৭১)। [১৮৯২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নোক্ত খুতবাহ পড়েছেনঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করি এবং তার কাছে সাহায্য চাই। আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের অনিষ্ট হতে এবং আমাদের কার্যকলাপের নিকৃষ্টতা হতে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নাই। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নাই, তিনি এক, তার কোন শরীক নাই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও তাঁর রসূল। অতঃপর...” [১৮৯৩] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি কাজ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রশংসা ছাড়া শুরু করা হলে, তা হয় বরকতশূন্য। [১৮৯৪]

【20】

বিবাহের ঘোষণা।

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা এই বিবাহের ঘোষণা দাও এবং তাতে ঢোল (দফ) বাজাও। [১৮৯৫] তাহকীক আলবানীঃ প্রথম অংশ, হাসান, দ্বিতীয় অংশ, মুনকার। মুহাম্মাদ বিন হাতিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হালাল ও হারাম বিবাহের মধ্যে পার্থক্য হলো- ঢোল (দফ) বাজানো এবং শব্দ করা বা ঘোষণা প্রচার। [১৮৯৬]

【21】

গান গাওয়া এবং ঢোল বাজানো।

রাবী‘ বিনতু মুআব্বিয বিন আফরা (রাঃ) (খালিদ) বলেন, আমরা এক আশূরার দিন মদিনায় ছিলাম। বালিকারা দফ বাজাচ্ছিল এবং গান গাচ্ছিল। এরপর আমরা রুবায়‘ বিনতু মুআব্বিয (রাঃ)-এর নিকট উপস্তিত হলাম এবং ঘটনাটি তাকে জানালাম। তিনি বলেন, আমার বিবাহ বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- আমার নিকট আসেন। তখন আমার নিকট দু’টি বালিকা গান গাচ্ছিল। এবং বদর যুদ্ধে নিহত আমার পিতৃপুরুষদের কীর্তিগাঁথা গাইছিল। তারা এও বলছিল, আমাদের মধ্যে এমন একজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আছেন, যিনি আগামী কালের খবরও জানেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা একথা বলো না। আগামীকালের খবর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।” [১৮৯৭] আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আবু বাকর (রাঃ) আমার নিকট আসেন। তখন আমার নিকট দু’টি আনসার বালিকা উপস্থিত ছিল। তারা বুআস যুদ্ধে আনসারদের মুখে উচ্চারিত কবিতাগুলো গানের সুরে আবৃত্তি করছিল। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারা পেশাদার গায়িকা ছিল না। আবু বাকর (রাঃ) বললেন, শায়তানের বাঁশী (বাদ্যযন্ত্র) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরে? এ ঘটনাটি ছিল ঈদুল ফিতরের দিনের। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আবূ বাক্‌র! প্রত্যেক জাতিরই ঈদ (আনন্দ উৎসব) রয়েছে। আর এটাই হচ্ছে আমাদের ঈদ। [১৮৯৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনাহ্‌র গলিপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকটি বালিকা দফ বাজিয়ে গান গেয়ে বলছিল, “আমরা বনু নাজ্জারের বালিকার দল। কত খোশনসীব! মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মহৎ প্রতিবেশী”। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্ অবগত আছেন, আমি তো তোমাদের ভালোবাসি। [১৮৯৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তার এক আত্মীয়ের এক আনসার মেয়ের সাথে বিবাহ দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেনঃ তোমরা কি মেয়েটিকে স্বামীর বাড়ি) পাঠিয়ে দিয়েছ? তারা বলেন, হাঁ। তিনি বলেনঃ তোমরা কি তার সাথে এমন কাউকে পাঠিয়েছ, যে গান গাইতে পারে? আয়িশাহ্‌ (রাঃ)বলেন, না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আনসার সম্প্রদায় গানের ভক্ত। অতএব তোমরা যদি তার সাথে কাউকে পাঠাতে, যে গিয়ে এরূপ বলতোঃ “আমরা এসেছি তোমাদের কাছে, আমরা এসেছি তোমাদের কাছে, আল্লাহ আমাদের দীর্ঘজীবী করুন এবং দীর্ঘজীবী করুন তোমাদের। [১৯০০] মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি তবলার আওয়াজ শুনতে পান। তিনি তার উভয় কানে তার দু’ আঙ্গুল ঢুকিয়ে সরে পড়েন। তিনি তিনবার এরূপ করলেন। অতঃপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। [১৯০১] তাহকীক আলবানীঃ তবলার কথা মুনকার তবে রাখালের যামারাহ বাশীর শব্দে সহীহ।

【22】

নপুংসকদের প্রসঙ্গে।

যায়নাব বিনতু উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে প্রবেশ করে এক নুপুংসককে আবদুল্লাহ বিন আবু উমাইয়্যাকে লক্ষ্য করে বলতে শুনলেনঃ আগামীকাল যদি আল্লাহ তায়িফ বিজয় দান করেন, তাহলে আমি তোমাকে এমন এক নারীর সন্ধান দিবো, যে চার ভাঁজে আগমন করে এবং আট ভাঁজে প্রস্থান করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ একে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও।” [১৯০২] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষের বেশধারিণী নারীকে এবং নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। [১৯০৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারিণী নারীদেরকে”। [১৯০৪]

【23】

নব দম্পতিকে মুবারকবাদ জানানো।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ উপলক্ষে কাউকে মুবারকবাদ জানিয়ে বলতেনঃ (আরবী) “আল্লাহ তোমাদের বরকত দান করুন, তোমাদের উপর বরকত নাযিল করুন এবং কল্যাণের সাথে তোমাদের একত্র করুন। [১৯০৫] আকীল বিন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বনু জুশম গোত্রের এক মহিলাকে বিবাহ করলে লোকেরা (মুবারকবাদ দিয়ে) বললো, সুখী হও এবং অধিক সন্তান হোক। তিনি বলেন, তোমরা এরূপ বলো না, বরং যেরূপ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তদ্রুপ বলোঃ اللهُمَّ بارك لَهُمْ وَبَارك عليهم “হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন এবং তাদের উপর বরকত নাযিল করুন।” [১৯০৬]

【24】

ওলীমা (বিবাহ ভোজ) প্রসঙ্গে।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) -এর চেহারায় হলুদের রং দেখে তাকে বলেনঃ একী? আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক মহিলাকে সামান্য সোনার বিনিময়ে বিবাহ করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্‌ তোমাকে বরকত দান করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও বিবাহ ভোজের আয়োজন করো। [১৯০৭] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর কোন স্ত্রীর বেলায় এমন বিবাহ ভোজের আয়োজন করতে দেখিনি, যেরূপ তিনি যায়নব (রাঃ) -এর বিবাহ ভোজের আয়োজন করেন। তিনি তাতে একটি বকরী যবহ করেছিলেন। [১৯০৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) -এর বিবাহে ছাতু ও খোরমা দিয়ে বিবাহ ভোজের আয়োজন করেন। [১৯০৯] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক বিবাহ ভোজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। এতে না গোশত ছিল, না রুটি। [১৯১০] আয়িশা ও উম্মু সালামাহ (রাঃ) তারা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ফাতিমাহকে আলীর নিকট পৌছানোর জন্য তাকে সাজসজ্জা করিয়ে তৈরি করার নির্দেশ দেন। আমরা (আলীর) ঘরে বাতহা উপত্যকার নরম মাটি বিছিয়ে দিলাম, অতঃপর দু’টি বালিশে খেজুর গাছের ছাল ভরে তা পরিষ্কার করে রেখে দিলাম। এরপর আমরা খোরমা, কিশমিশ ও মিঠা পানির দ্বারা পানাহারের ব্যবস্থা করলাম, কাপড় ও পানির মশক ঝুলিয়ে রাখার জন্য একটি কাঠের খুঁটি ঘরের কোণে দাঁড় করিয়ে দিলাম। আমরা ফাতিমাহর বিবাহের চেয়ে অধিক পরিপাটি ব্যবস্থা আর দেখিনি। [১৯১১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, তা’লীক ইবনু মাজাহ্। সাহল বিন সা’দ আস-সাইদী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ উসাইদ আস-সাইদী (রাঃ) তার বিবাহ ভোজে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াত করেন। কনেই তাঁদের আহার পরিবেশন করেন। তিনি (কনে) বলেন, তুমি কি জানো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী পান করিয়েছিলাম? তিনি বলেন, আমি রাতে কিছু শুকনো খেজুর পানিতে ভিজিয়ে রেখেছিলাম, সকালবেলা এগুলো নিংড়িয়ে তাঁকে শরবত পান করিয়েছিলাম। [১৯১২]

【25】

দাওয়াতকারীর দাওয়াত কবুল করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, যে বিবাহ ভোজে ধনীদের দাওয়াত দেয়া হয় এবং গরীবদের উপেক্ষা করা হয় তা হলো সর্বাধিক নিকৃষ্ট ভোজ। যে ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করে না, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যাচারণ করলো। [১৯১৩] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কাউকে বিবাহ ভোজের দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তা কবুল করে। [১৯১৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রথম দিনের ওলীমা (বিবাহ ভোজ) আয়োজন করা কর্তব্য, দ্বিতীয় দিনের ওলীমাও ভালো এবং তৃতীয় দিনের ওলীমা হলো প্রদর্শনী এবং যশের জন্য। [১৯১৫]

【26】

তরুণী স্ত্রী এবং বয়স্কা স্ত্রীর নিকট অবস্থানের পালা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বয়স্কা স্ত্রীর পালা হচ্ছে তিন দিন এবং তরুণী স্ত্রীর পালা সাত দিন। [১৯১৬] উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করার পর তার নিকট তিন দিন অবস্থান করেন এবং বলেন, তোমার ব্যাপারে তোমার স্বামীর কোন অনীহা নেই। তুমি যদি চাও, তবে আমি তোমার সঙ্গে সাত দিন অবস্থান করবো। যদি আমি তোমার নিকট সাত দিন কাটাই তবে আমার অন্য স্ত্রীদের নিকটও সাত দিন করে কাটাবো। [১৯১৭]

【27】

স্ত্রী স্বামীর নিকট এলে স্বামী যে দুয়া পড়বে।

আবদুল্লাহ্ বিন আম্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কেউ স্ত্রী, খাদেম অথবা আরোহণের পশু লাভ করে তখন সে যেন তার কপালে হাত রেখে বলেঃ “হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ প্রার্থনা করি এবং যে কল্যাণ এর মধ্যে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। আমি তোমার নিকট এর অনিষ্ট হতে এবং যে অনিষ্টসহ একে সৃষ্টি করা হয়েছে তা হতে আশ্রয় চাই”। [১৯১৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর কাছে আসে, তখন সে যেন বলেঃ (আরবি) (আল্লাহুম্মা জান্নিবনীশ শায়তান, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রযাকতানী) “হে আল্লাহ্ ! আমাকে শয়তান থেকে দূরে রাখো এবং যে সন্তান আমাদের দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখো”। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর সেই মিলনে যদি কোন সন্তান হয়, তবে আল্লাহ্ তার উপর শয়তানকে কোন প্রভাব বিস্তার করতে দিবেন না অথবা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। [১৯১৯]

【28】

সহবাসের সময় পর্দা করা।

মুআবিয়াহ আল-কুশায়রী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আমাদের লজ্জাস্থানের কতখানি ঢেকে রাখবো, আর কতখানি খুলে রাখবো? তিনি বলেনঃ তোমার লজ্জাস্থান আপন স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যদের থেকে হেফাজত করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার অভিমত কী যে, লোকেরা যদি একত্রে বসবাস করে? তিনি বলেনঃ যদি তুমি কাউকে না দেখিয়ে পারো, তবে অবশ্যই তা দেখাবে না। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের কেউ যদি নির্জনে থাকে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ অধিক অগ্রগণ্য যে, মানুষের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি লজ্জাশীল হতে হবে। [১৯২০] উতবাহ বিন আবদ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর নিকট এসে যেন (নির্জনে মিলনে) পর্দা (গোপনীয়তা) রক্ষা করে এবং গর্দভের ন্যায় বিবস্ত্র না হয়। [১৯২১] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কখনও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর লজ্জাস্থানের দিকে তাকাইনি বা তা দেখিনি। [১৯২২]

【29】

স্ত্রীর মলদ্বারে সংগম করা নিষেধ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্‌ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। [১৯২৩] খুযায়মাহ বিন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। (অতঃপর বলেন) তোমরা মহিলাদের মলদ্বারে সঙ্গম করো না। [১৯২৪] জাবির বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ইহূদীরা বলতো, কোন ব্যক্তি পশ্চাৎদিক থেকে স্ত্রী অঙ্গে সঙ্গম করলে তাতে সন্তান টেরা চোখবিশিষ্ট হয়। এরপর আল্লাহ্‌ তা’আলা এই আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত। অতএব তোমরা তোমাদের শষ্যক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা আসো”। (২:২২৩)। [১৯২৫]

【30】

আযল প্রসঙ্গ।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ তোমরা কি তা করো? তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা যে প্রাণের উদ্ভব হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন তা হবেই। [১৯২৬] জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জীবদ্দশায় এবং কুরআন নাযিল হওয়া অব্যাহত থাকা অবস্থায় আযল করতাম। [১৯২৭] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বাধীন স্ত্রীর বেলায় তার সম্মতি ছাড়া আযল করতে নিষেধ করেছেন। [১৯২৮]

【31】

কোন মহিলাকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে একত্রে বিবাহ করা যাবে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন মহিলাকে তার ফুফু বা তার খালার সাথে একত্রে বিবাহ করা যাবে না। [১৯২৯] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দু’ধরনের বিবাহ নিষিদ্ধ করতে শুনেছিঃ কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে অথবা কোন স্ত্রীলোক ও তার ফুফুকে কোন ব্যক্তির বিবাহাধীনে একত্র করা (নিষিদ্ধ)। [১৯৩০] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মহিলাকে তার ফুফু অথবা তার খালার সাথে একত্রে বিবাহ করা যাবে না। [১৯৩১]

【32】

কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলো, অতঃপর সে অন্য স্বামী গ্রহণ করলো। সেও তাকে সহবাসের পূর্বে তালাক দিলো। এ অবস্থায় সে কি তার প্রথম স্বামীর সাথে পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে?

আয়িশা (রাঃ) রিফাআহ আল-কুরাযী (রাঃ) -এর স্ত্রী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, আমি রিফাআর বিবাহাধীন ছিলাম। সে আমাকে তিন তালাক দিলে পর আমি আবদুর রহমান ইবনুয যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ করি। কিন্তু তার সাথে কাপড়ের পোটলাবৎ বস্তু ছাড়া কিছু নাই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বললেনঃ তুমি কি রিফাআর নিকট ফিরে যেতে চাও? তা হবে না, যতক্ষণ না তুমি তার মধু পান করো এবং সে তোমার মধু পান করে। [১৯৩২] ইবনু উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর অপর এক ব্যক্তি বিবাহ করে। সে তার সহবাসের পূর্বে পুনরায় তাকে তালাক দেয়। উক্ত স্ত্রীলোকটি কি প্রথম স্বামীর সাথে পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ না, যতক্ষণ না সে তার মধু পান করে (তার সাথে সহবাস করে)। [১৯৩৩]

【33】

হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহ্‌লীলকারী এবং যার জন্য তাহ্‌লীল করা হয় তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। [১৯৩৪] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহ্‌লীলকারী এবং যার জন্য তাহ্‌লীল করা হয়, তাদের (উভয়কে) অভিসম্পাত করেছেন। [১৯৩৫] উকবাহ বিন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি কি তোমাদের ভাড়াটে পাঁঠা সম্পর্কে অবহিত করবো না? তারা বললেন, হাঁ, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলেনঃ সে হলো তাহ্‌লীলকারী। আল্লাহ তাহ্‌লীলকারী এবং যার জন্য তাহ্‌লীল করা হয় তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। [১৯৩৬]

【34】

বংশীয় সম্পর্কের দরুন যারা হারাম হয়, দুধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হয়।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বংশীয় সম্পর্কের দরুন যারা হারাম হয়, দুধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হয়। [১৯৩৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) -এর মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি বলেনঃ সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। বংশীয় সম্পর্কের দরুন যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম, দুধপান জনিত সম্পর্কের দরুণও অনুরূপ মহিলাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম। [১৯৩৮] উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন, আপনি আমার বোন আয্‌যাকে বিবাহ করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি পছন্দ করো? তিনি বলেলেন, হাঁ হে আল্লাহর রসূল! আর আমি তো আপনার জন্যে একক নই। কল্যাণ লাভে আমার শরীক হওয়ার ব্যাপারে আমার বোন আমার নিকট অধিক অগ্রগণ্য। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে আমার জন্য হালাল নয়। তিনি বলেন, আমরা তো পরস্পর আলোচনা করছিলাম যে, আপনি আবূ সালামাহ (রাঃ) -এর কন্যা দুররাকে বিবাহ করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেনঃ উম্মু সালামাহর কন্যা? উম্মু হাবীবা (রাঃ) বলেন, হাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে যদি আমার প্রতিপালনাধীন আমার স্ত্রীর পূর্ব-স্বামীর কন্যা নাও হতো, তবুও সে আমার জন্যে হালাল হতো না। কারণ সে আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। সুয়াইবা (রাঃ) আমাকে এবং তাঁর পিতাকে দুধ পান করিয়েছে। অতএব তোমরা তোমাদের বোনদের ও মেয়েদের আমার সাথে বিবাহ দেয়ার প্রস্তাব করো না। [উপরোক্ত হাদীসে মোট দুইটি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ৩/১৯৩৯ (১) . উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [১৯৩৯]

【35】

এক ঢোক অথবা দু’ ঢোক দুধপানে হুরমত সাব্যস্ত হয় না।

উম্মুল ফাদল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক ঢোক অথবা দু’ ঢোক দুধপান (দুধপানজনিত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) হারাম করে না। [১৯৪০] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এক ঢোক বা দু’ ঢোক দুধপানে (দুধপানজনিত) বৈবাহিক নিষিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। [১৯৪১] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রথমদিকে কুরআনে এই বিধান ছিলো, যা পরে রহিত হয়ে যায়; দশ ঢোক বা পাঁচ ঢোক দুধ পানের কমে নিষিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। [১৯৪২]

【36】

বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, সাহ্‌লাহ বিনতু সুহায়ল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমার নিকট সালেমের যাতায়াতের কারণে আমি (আমার স্বামী) আবূ হুযাইফাহর চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তাকে দুধ পান করিয়ে দাও। সে বললো, আমি তাকে কিভাবে দুধ পান করাবো, সে যে বয়স্ক পুরুষ? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হেসে বলেন, আমিও অবশ্য জানি যে, সে বয়স্ক পুরুষ। সে তাই করলো, দুধ পান করানোর পর আবূ হুযাইফাহর চেহারায় আমি কোন অপছন্দের ভাব লক্ষ্য করিনি। (রাবী বলেন) , তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। [১৯৪৩] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে। [১৯৪৪]

【37】

দুধপানের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরের দুধপান সম্পর্কে।

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে প্রবেশ করেন, তখন তার নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ এ ব্যক্তি কে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার ভাই। তিনি বলেনঃ তোমরা লক্ষ্য রাখবে যে, কাকে তোমরা অন্দর মহলে প্রবেশ করাচ্ছো। কেননা সেই দুধপানই ধর্তব্য যা ক্ষুধা নিবারণ করে (অর্থাৎ দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধপানই ধর্তব্য)। [১৯৪৫] আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দুধপান সেটাই গ্রহণযোগ্য (যা খাদ্যনালী ভেদ করে) পাকস্থলী পূর্ণ করে (অর্থাৎ শিশুর দুধপানই ধর্তব্য)। [১৯৪৬] যায়নাব বিনতু আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সকল স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) -এর সাথে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন এবং তার মত প্রত্যাখান করেন যে, সালেমের মত বয়স্ক পুরুষ দুধপান করলে তাতে দুধপানজনিত নিষিদ্ধতা প্রতিষ্টিত হবে এবং সে তাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবে (তাদের মতে তা কর্যকর হবে না)। তারা আরও বলেন, এটা হয়তো কেবল সালেমের একার জন্য প্রযোজ্য (খাস) ছিলো। [১৯৪৭]

【38】

পুরুষের দুধ ।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কীয় চাচা আফ্‌লাহ বিন আবূ কুআয়স পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর ভেতর বাড়িতে আমার কাছে আসতে অনুমতি চাইলেন। কিন্তু আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। ইত্যবসরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এসে বলেনঃ সে তোমার চাচা তাকে আসতে অনুমতি দাও। আমি বললাম, আমাকে তো স্ত্রীলোকটি দুধপান করিয়েছে, পুরুষ লোকটি তো দুধপান করায়নি! তিনি বলেনঃ তোমার উভয় হাত বা তোমার ডান হাত ধুলি ধুসরিত হোক। [১৯৪৮] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার দুধ সম্পর্কীয় চাচা আমার ভেতর বাড়িতে আসার অনুমতি চাইলেন, কিন্তু আমি তাকে অনুমতি দিতে অস্বীকার করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার চাচাকে তোমার নিকট আসার অনুমতি দাও। আমি বললাম, আমাকে তো স্ত্রীলোকটি দুধপান করিয়েছে, পুরুষ লোকটি তো দুধপান করায়নি! তিনি আবার বললেনঃ তাকে তোমার নিকট আসার অনুমতি দাও। [১৯৪৯]

【39】

কারো বিবাহ বন্ধনে দু’ (সহোদর) বোন থাকা অবস্থায় সে ইসলাম গ্রহণ করলে।

আদ-দায়লামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার নিকট দু’ (সহোদর) বোন ছিলো, যাদেরকে আমি জাহিলী যুগে একত্রে বিবাহ করেছিলাম। তিনি বলেনঃ তুমি ফিরে গিয়ে তাদের একজনকে তালাক দিয়ে পৃথক করে দাও। [১৯৫০] ফায়রূয আদ-দায়লামী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আমার বিবাহে দু’ (সহোদর) বোন রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তোমার ইচ্ছেমত এদের একজনকে তালাক দিয়ে পৃথক করে দাও। [১৯৫১]

【40】

চারের অধিক সংখ্যক স্ত্রী থাকা অবস্থায় কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে ।

কায়স ইবনুল হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম এবং তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিল। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে বিষয়টি তাঁকে জানালাম। তিনি বলেনঃ তাদের মধ্যে তোমার পছন্দমত চারজনকে রেখে দাও। [১৯৫২] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, গায়লান বিন সালামাহ যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন তার দশজন স্ত্রী ছিলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেনঃ তুমি তাদের মধ্যে চারজনকে রাখো। [১৯৫৩]

【41】

বিবাহের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে ।

উকবা বিন আমির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে শর্ত পূরণ করা অধিক সংগত তা হলো, যার বিনিময়ে তোমরা (নারীর) লজ্জাস্থান হালাল করেছো। [১৯৫৪] আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, অনুষ্ঠানের পূর্বে যে উপঢৌকন, হাদিয়া (উপহার) ইত্যাদি দেয়া হয় তা নারীর প্রাপ্য এবং বিবাহের পর দেয় বস্তুসমূহ সেই পাবে, যাকে তা দান করা হয় বা যার জন্য তা আনা হয়। কোন ব্যক্তির সর্বাধিক অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকারী হলো তার বোন অথবা তার কন্যা। [১৯৫৫]

【42】

যে ব্যক্তি নিজের দাসীকে আযাদ করার পর বিবাহ করে ।

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার একটি দাসী আছে, সে তাকে উত্তমরূপে আদব-কায়দা শেখায় এবং শিক্ষা-দীক্ষা দান করে, অতঃপর আযাদ করে বিবাহ করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর আহলে কিতাবের কোন ব্যক্তি তার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঈমান আনার পর মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর ঈমান আনলে, তার জন্যও রয়েছে দু’টি পুরস্কার। তদ্রুপ কোন ক্রীতদাস তার উপর ধার্য আল্লাহর হক ও তার মনিবের হক আদায় করলে, তার জন্যও রয়েছে দু’টি পুরস্কার। অধস্তন রাবী সালেহ (রঃ) বলেন, শাবী (রঃ) বলেছেন, আমি কোন বিনিময় ছাড়াই তোমাকে এ হাদীসটি জানিয়ে দিলাম। অথচ এর চেয়ে ক্ষুদ্র একটি হাদীসের জন্য অনেকেই মাদীনাহ পর্যন্ত সফর করতো। [১৯৫৬] আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, সাফিয়্যা (রাঃ) প্রথমে দিহ্‌য়া আল-কালবী (রাঃ) -এর ভাগে পড়েছিলেন। পরে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অধীনে আসেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করেন এবং তাকে দাসত্বমুক্ত করাকে তার মাহর গণ্য করেন। অধস্তন রাবী হাম্মাদ বলেন, আবদুল আযীয (রাঃ) ছাবিত (রাঃ)-কে বললেন, হে আবূ মুহাম্মাদ! আপনি কি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে কী মাহর দিয়েছিলেন? আনাস (রাঃ) বলেন, তার দাসত্ব মুক্তিই ছিল তার মাহর। [১৯৫৭] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে আযাদ করেন এবং তাঁর দাসত্বমুক্তকে তার মাহর নির্ধারণ করে তাকে বিবাহ করেন। [১৯৫৮]

【43】

মনিবের অনুমতি ব্যতীত গোলামের বিবাহ করা ।

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, গোলাম তাঁর মনিবের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করলে সে ব্যভিচারী। [১৯৫৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে গোলামই তাঁর মনিবদের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করে, সে যেনাকারী। [১৯৬০]

【44】

মুতআ বিবাহ নিষিদ্ধ ।

আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার এলাকা বিজয়ের দিন মহিলাদের সাথে মুতআ (বিবাহ) করতে এবং গৃহপালিত গাধার গোসত খেতে নিষেধ করেছেন। [১৯৬১] সাবরাহ বিন মা’বাদ (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীহীন অবস্থায় থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা এসব মহিলার সাথে মুতআ করো (সাময়িকভাবে উপকৃত হও)। অতএব আমরা তাদের সান্নিধ্যে পৌঁছলাম, কিন্তু তারা আমাদের এবং তাদের মাঝে নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ ব্যতিত আমাদের সঙ্গে বিবাহ বসতে অস্বীকার করলো। সাহাবীগণ বিষয়টি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তাহলে তোমাদের ও তাদের মাঝে মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নাও। অতএব আমি ও আমার এক চাচাত ভাই (এই উদ্দেশে) বের হলাম। তাঁর সাথে ছিল একটি চাদর এবং আমার সাথেও ছিল একটি চাদর। তার চাদরটি ছিল আমার চাদর থেকে বেশি সুন্দর। আর আমি ছিলাম তার চাইতে অধিক যুবক। আমরা দু’জন এক নারীর নিকট আসলাম। সে বললো, চাদর দু’টি তো একই মানের। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম এবং তার কাছেই ঐ রাত কাটালাম। ভোরে আমি ফিরে এলাম, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বা ঘরের দরজা ও রুকনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলছিলেনঃ হে লোক সকল! আমি তোমাদের মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন তোমরা শুনে নাও যে, আল্লাহ্‌ কিয়ামাত পর্যন্ত এই প্রকার বিবাহ হারাম করেছেন। অতএব তোমাদের কারো কাছে এ ধরণের কোন নারী থাকলে সে যেন তাকে ছেড়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে যা কিছু দিয়েছো তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। [১৯৬২] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) শব্দ ছাড়া সহীহ, তবে সঠিক হলোঃ (আরবি)। ইবনু উমার (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর লোকেদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে মাত্র তিন দিন মুতআ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন। এরপর তিনি তা হারাম ঘোষণা করেন। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি যদি কোন বিবাহিত পুরুষের ব্যাপারে জানতে পারি যে সে মুতআ বিবাহ করে তবে আমি প্রস্তরাঘাতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিবো। তবে সে যদি আমার সামনে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে, যারা সাক্ষ্য দিবে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুতআ বিবাহ হারাম ঘোষণার পর তা আবার হালাল করেছেন। [১৯৬৩]

【45】

ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তির বিবাহ করা ।

মায়মূনাহ বিনতুল হারিস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হালাল (ইহরামমুক্ত) অবস্থায় বিবাহ করেন। রাবী ইয়াযীদ বিন আসাম্ম বলেন, মায়মূনাহ (রাঃ) ছিলেন আমার ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) -এর খালা। [১৯৬৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় বিবাহ করেন। [১৯৬৫] উসমান বিন আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি নিজে বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। [১৯৬৬]

【46】

বিবাহের বর ও কনের সমতা (কুফু) ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলের চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট,তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে। [১৯৬৭] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ্য রাখো। [১৯৬৮]

【47】

স্ত্রীদের সাথে সম আচরণ এবং পালা বণ্টন।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার দু’জন স্ত্রী আছে, আর সে তাদের একজনের চেয়ে অপরজনের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়ে, সে কিয়ামাতের দিন তার (দেহের) এক পার্শ্ব পতিত অবস্থায় উপস্থিত হবে। [১৯৬৯] আয়িশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে রওয়ানা হলে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে (কে তাঁর সাথে যাবেন তা নির্ধারণের জন্য) লটারির ব্যবস্থা করতেন। [১৯৭০] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপন স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফের সাথে (সব কিছু) সমানভাবে বণ্টন করতেন, অতঃপর বলতেনঃ হে আল্লাহ! এ হলো আমার সামর্থ্য অনুযায়ী আমার কাজ। যে বিষয়ে তোমার ক্ষমতা আছে, আমার সামর্থ্য নাই, সে বিষয়ে আমাকে তিরস্কার করো না। [১৯৭১] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ তবে প্রথম অংশটি হাসান।

【48】

যে মহিলা তার পালার দিনটি তার সতীনকে দান করে।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, সাওদা বিনতু যামআহ (রাঃ) বার্ধক্যগ্রস্ত হয়ে পড়লে তিনি তার নির্ধারিত পালার দিনটি আয়িশা (রাঃ)-কে হেবা করেন। অতএব রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওদা (রাঃ) -এর দিনটি আয়িশা (রাঃ) এর ভাগে ফেলতেন। [১৯৭২] আয়িশা (রাঃ) কোন কারণে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই (রাঃ) এর উপর অসন্তুষ্ট হলে তিনি (সাফিয়্যা) বলেন, হে আয়িশা! তুমি কি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিবে? আমি আমার পালার দিনটি তোমাকে দিবো। আয়িশা (রাঃ) বলেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি যাফরান রংয়ে রঞ্জিত তার একটি ওড়না নিলেন এবং তাতে পানি ছিটিয়ে দিলেন, যাতে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশে বসলে তিনি বলেনঃ হে আয়িশা! তুমি আমার নিকট থেকে সরে যাও। এটা তোমার পালার দিন নয়। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এটি হচ্ছে আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। তিনি তাঁকে ব্যাপারটি খুলে বলেন। তাতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) এর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। [১৯৭৩] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, “আপোষ-নিষ্পত্তিই উত্তম” (৪:১২৮) ) আয়াত এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে নাযিল হয়, যার বিবাহধীনে এক মহিলা দীর্ঘদিন যাবত ছিল এবং সে তার স্বামীর ঔরসে কয়েকটি সন্তানও প্রসব করেছিল। স্বামী তাঁকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করতে চাইলে মহিলাটি এ শর্তে স্বামীকে সম্মত করলো যে, সে তার বিবাহ বন্ধনে থাকবে এবং তাকে কোন পালার দিন দিবে না। [১৯৭৪]

【49】

বিবাহ দেয়ার জন্য সুপারিশ করা।

আবূ রুহ্‌ম (রাঃ) তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’জনের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের সুপারিশই হলো সর্বোত্তম সুপারিশ। [১৯৭৫] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, উসামাহ (রাঃ) পা পিছলে ঘরের দরজার চৌকাঠে পড়ে গেলে তার মুখমণ্ডল আহত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাকে) বলেনঃ তার চেহারা থেকে রক্ত পরিস্কার করে দাও। আমি তা অপছন্দ করলে তিনি নিজেই তার মুখমণ্ডল থেকে রক্ত মুছে পরিস্কার করে দিলেন, অতঃপর বলেনঃ উসামাহ মেয়ে হলে আমি অবশ্যই তাঁকে অলঙ্কার ও পোশাকে এতটা সজ্জিত করতাম যেমন বিবাহে পর্যাপ্ত খরচ করা হয়। [১৯৭৬]

【50】

স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ করা।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। [১৯৭৭] আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম। [১৯৭৮] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলে তাঁকে অতিক্রম করে যাই। [১৯৭৯] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ)-কে বিবাহ করে মদিনায় নিয়ে এলে আনসারী মহিলাগণ এসে তার ব্যাপারে (আমাকে) অবহিত করে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বেশভূষা পরিবর্তন করে এবং মুখমণ্ডল আবৃত করে তাকে দেখতে গেলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে চিনে ফেলেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে লক্ষ্য করলে আমি দ্রুত সরে যেতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তিনি আমাকে ধরে ফেলে কোলে তুলে নেন এবং বলেনঃ কেমন দেখলে? আমি বললাম,আমাকে ছেড়ে দিন, ইয়াহূদী নারীদের মধ্যকার এক ইয়াহূদিনী। [১৯৮০] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার অজ্ঞাতে হঠাৎ যায়নব (রাঃ) অনুমতি ছাড়াই রাগান্বিত অবস্থায় আমার ঘরে আসলেন, অতঃপর বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আবূ বকর (রাঃ) -এর এই ছোট্ট মেয়েটি যখন আপনার সামনে তার দু’হাত নাড়াচাড়া করে, তখন তাই কি আপনার জন্য যথেষ্ট? অতঃপর যায়নাব (রাঃ) আমার দিকে ফিরলে আমি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম। অবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লও এবং তাঁর থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করো। অতএব আমি তাঁর মুখোমুখী হয়ে তাঁকে জব্দ করলাম, এমনকি আমি দেখলাম যে,তার মুখ শুকিয়ে গেছে। তিনি আমার কোন কথা প্রতিউত্তর করতে পারলেন না। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তাঁর চেহারা ঝলমল করছে। [১৯৮১] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে পুতুল নিয়ে খেলা করতাম। তিনি আমার বান্ধবীদেরকে আমার সাথে খেলা করার জন্য আমার নিকট পাঠিয়ে দিতেন। [১৯৮২]

【51】

স্ত্রীদের প্রহার করা নিকৃষ্ট কাজ।

আবদুল্লাহ বিন যামআহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দিলেন, অতঃপর মহিলাদের উল্লেখ করে তাদের ব্যাপারে লোকজনকে উপদেশ দিলেন। তিনি বলেনঃ তোমাদের কেউ কেন তার স্ত্রীকে দাসীর মত বেত্রাঘাত করে? অথচ দিনের শেষেই সে আবার তাঁর শয্যাসংগী হয়! [১৯৮৩] আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও তাঁর কোন খাদেমকে অথবা তাঁর কোন স্ত্রীকে মারপিট করেননি এবং নিজ হাতে অপর কাউকেও প্রহার করেননি। [১৯৮৪] আবদুল্লাহ বিন আবু যূবাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌র দাসীদের প্রহার করো না। অতঃপর উমার (রাঃ) নবী (রাঃ) -এর কাছে এসে বলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল! নারীরা তো তাদের স্বামীদের অবাধ্যাচরণ করছে। তাই তাদেরকে মারার অনুমতি দিলেন এবং তারা প্রহিত হলো। পরে অনেক নারী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বাড়িতে সমবেত হলো। সকাল বেলা তিনি বলেনঃ আজ রাতে মুহাম্মদের পরিবারের সত্তুরজন মহিলা এসে তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তোমরা মারপিটকারীদেরকে তোমাদের মধ্যে উত্তম হিসাবে পাবে না। [১৯৮৫] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (আশ‘আস) বলেন, আমি এক রাতে উমার (রাঃ) -এর বাড়িতে মেহমান হলাম। মধ্যরাতে উমার (রাঃ) তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করতে উঠলেন। আমি তাদের দু’জনের মাঝে প্রতিবন্ধক হলাম। অতঃপর উমার (রাঃ) শয্যা গ্রহণ করে আমাকে বলেন, হে আশ‘আস! তুমি আমার থেকে একটা বিষয় মনে রাখবে যা আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট শুনেছি। স্বামী তার স্ত্রীকে প্রহার করলে এ ব্যাপারে জওয়াবদিহি করতে হবে না, বিতর সালাত না পড়ে ঘুমাবে না। রাবী বলেন, আমি তৃতীয় কথাটি ভুলে গেছি। [১৯৮৬]

【52】

পরচুলা সংযোগকারিণী ও উল্কি অংকনকারিণী ।

ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যে কৃত্রিম চুল সংযোজন করে এবং যে তা করায় এবং যে দেহে উল্কি অংকন করে এবং যে তা করায়। [১৯৮৭] আসমা' (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, আমার মেয়ের সদ্য বিবাহ হয়েছে, কিন্তু রোগের কারণে তার মাথার চুল ঝরে গেছে। আমি কি তার মাথায় কৃত্রিম চুল জোড়া দিবো? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে নারী পরচুলা সংযোজন করে এবং যে সংযোজন করায়, আল্লাহ্ তাদের উভয়কে অভিসম্পাত করেন। [১৯৮৮] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই সব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা অন্যের দেহে আঁকে এবং যারা নিজেদের দেহে উল্কি অংকন করায়, যারা ভ্রুর চুল উপড়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে, তারা আল্লাহ্‌র সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে। আসাদ গোত্রের উম্মু ইয়া'কূব নাম্নী মহিলার কাছে এ হাদিস পৌঁছলে, তিনি আবদুল্লাহ্ (রাঃ) -এর কাছে এসে বলেন, আমি অবগত হয়েছি যে, আপনি এমন এমন কথা বলেছেন। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাদেরকে কেন অভিসম্পাত করবো না যাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন এবং বিষয়টি আল্লাহ্‌র কিতাবে উক্ত আছে! মহিলা বলেন, আমি সম্পূর্ণ কুরআ'ন পডেছি, কিন্তু কোথাও তো তা পাইনি। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তুমি খেয়াল করে তা পড়লে, অবশ্যই পেতে। তুমি কি এ আয়াত পড়োনি (অনুবাদ) : "রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে তোমরা বিরত থাকো" (সূরা হাশরঃ ৭)? মহিলা বললেন, হাঁ। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন। মহিলা বলেন, আমার মনে হয় আপনার পরিবার (স্ত্রী) এরূপ করে থাকে। তিনি বলেন, তাহলে তুমি গিয়ে লক্ষ্য করে দেখো। অতএব সে গিয়ে লক্ষ্য করলো, কিন্তু তার কোন লক্ষণই দেখতে পেলো না। শেষে সে বললো, আমি এমন কিছু দেখতে পাইনি। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমার কথা ঠিক হলে সে আমাদের সাথে একত্রে থাকতে পারতো না। [১৯৮৯]

【53】

যে সময় স্ত্রীদের সাথে বাসর যাপন করা উত্তম।

আ'য়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসে আমার সাথে বাসর যাপন করেন। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোন স্ত্রী তাঁর কাছে আমার চেয়ে অধিক প্রিয় ছিল! আ'য়িশাহ্ (রাঃ) নব বিবাহিতার সাথে তার স্বামীর শাওয়াল মাসেই বাসর যাপন পছন্দ করতেন। [১৯৯০] হারিস বিন হিশাম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে শাওয়াল মাসে বিবাহ করেন এবং শাওয়াল মাসেই তাকে তাঁর সহবাসে একত্র করেন। আবূ বকর বিন আবদির রহমান বর্ণনায় মুরসাল। [১৯৯১] তাহকীক আলবানীঃ মুরসাল।

【54】

স্ত্রীকে কিছু দেয়ার পূর্বে তার সাথে নির্জনে মিলন।

আ'য়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কনেকে স্বামীর কিছু (মাহ্র, উপহার ইত্যাদি) দেয়ার পূর্বেই তার সাথে বাসর যাপনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দেন। [১৯৯২]

【55】

শুভ ও অশুভ আলামাত।

মিখ্মার বিন মুআবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: অশুভ আলামাত বলতে কিছু নেই। অবশ্য তিনটি জিনিসে শুভ আলামাত আছেঃ স্ত্রীলোক, ঘোড়া ও বাড়ি। [১৯৯৩] সাহ্ল বিন সা'দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অশুভ আলামাত বলতে কিছু থাকলে তা ঘোড়া, স্ত্রীলোক ও ঘরেই থাকতো। [১৯৯৪] আবদুল্লাহ্ বিন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অশুভ আলামাত তিন জিনিসের মধ্যে থাকতে পারে, ঘোড়া, স্ত্রীলোক ও ঘর। যুহ্রী (রঃ) বলেন, আবূ উবায়দাহ বিন আবদুল্লাহ্ বিন যামআহ আমাকে বলেছেন যে, তার দাদী যায়নাব (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি এই তিনটির সাথে তরবারিও যোগ করতেন, উম্মু সালামাহ'র কথা ব্যতীত, তাদের শব্দ হলো- অশুভ আলামাত যে বস্তুর মধ্যে তাহল… অতঃপর তরবারী ব্যতীত তিনটি উল্লেখ করেন। [১৯৯৫]

【56】

আত্মমর্যাদাবোধ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ আত্মমর্যাদাবোধ পছন্দ করেন এবং অপছন্দও করেন। যা থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা থাকে তা ত্যাগ করার আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহ্ পছন্দ করেন এবং যাতে বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা নেই তা ত্যাগের আত্মমর্যাদাবোধ আল্লাহ্ অপছন্দ করেন। [১৯৯৬] আ'য়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি খাদিজা (রাঃ) -এর ক্ষেত্রে যে আত্মমর্যাদাবোধ উপলব্ধি করতাম, তদ্রূপ অপর কোন নারীর ক্ষেত্রে অনুভব করতাম না। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রায়ই তার কথা উল্লেখ করতে দেখেছি। আল্লাহ্ তাআলা তার রসূলকে খাদীজা (রাঃ) -এর জন্য জান্নাতে স্বর্ণ নির্মিত একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইবনু মাজাহ (রঃ) তা বলেছেন (অর্থাৎ কাসাব-এর অর্থ সোনা বলেছেন)। [১৯৯৭] মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ বনূ হিশাম ইবনুল মুগীরাহ তাদের কন্যাকে আলী বিন আবূ তালিবের নিকট বিবাহ দিতে আমার নিকট অনুমতি চেয়েছে। আমি তাদেরকে অনুমতি দিবো না, আমি তাদেরকে অনুমতি দিবো না, আমি অনুমতি দিবো না, আমি তাদেরকে অনুমতি দিবো না। তবে আলী বিন আবূ তালিব আমার কন্যাকে তালাক দিলে তা করতে পারে। কেননা ফাতিমা অবশ্যি আমার দেহের একটি টুকরা। যা তার মনঃকষ্টের কারণ হয় তা আমারও মনঃকষ্টের কারণ হয় এবং যা তাকে কষ্ট দেয় তা আমাকেও কষ্ট দেয়। [১৯৯৮] মিসওয়ার বিন মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) আবূ জাহলের কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কন্যা ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁর বিবাহাধীন ছিলেন। ফাতিমাহ (রাঃ) তা শুনতে পেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলেন, আপনার সম্প্রদায়ের লোক বলাবলি করছে যে, আপনি আপনার কন্যাদের ব্যাপারে কোন কথায় রাগান্বিত হন না। এই আলী আবূ জাহলের কন্যাকে বিবাহ করতে যাচ্ছে। মিসওয়ার (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন, আমি তাঁকে কালিমা শাহাদাত পাঠ করার পর বলতে শুনলামঃ আমি আবূল আস ইবনুল রাবী' এর নিকট আমার এক কন্যার (যায়নব) বিবাহ দিয়েছিলাম। সে আমাকে যে কথা দিয়েছিল তা রক্ষা করেছে। নিশ্চয় ফাতিমাহ বিনতু মুহাম্মাদ আমার দেহের একটি অংশ। তোমরা তাকে গুনাহে নিক্ষেপ করবে তা আমি পছন্দ করি না। আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্‌র রসূলের কন্যা এবং আল্লাহ্‌র দুশমনের কন্যা এক ব্যক্তির অধীন কখনো একত্র হতে পারে না। [১৯৯৯]

【57】

যে মহিলা নিজেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য হেবা করে।

আ'য়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলতেন, যে নারী নিজেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য পেশ করে তার কি লজ্জা হয় না? অবশেষে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ (অর্থানুবাদ) : "তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট থেকে দূরে রাখতে পারো এবং যাকে ইচ্ছা তোমার নিকট স্থান দিতে পারো" (সূরা আহযাবঃ ৫১)। আ'য়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তখন আমি বললাম, আপনার প্রভু তো আপনার ইচ্ছা পূরণে আপনার চেয়েও অগ্রগামী। [২০০০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) (সাবিত) বলেন, আমরা আনাস বিন মা'লিক (রাঃ) -এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তার সাথে তার এক কন্যাও ছিলো। আনাস (রাঃ) বলেন, এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে নিজেকে তাঁর জন্য পেশ করে। সে বলে, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার কি আমাকে প্রয়োজন আছে? (এ হাদীস শুনে) আনাস (রাঃ) -এর মেয়ে বললো, মহিলাটি কত নির্লজ্জ! আনাস (রাঃ) বলেন, সে তোমার চেয়ে অনেক উত্তম। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর প্রতি অনুরক্ত হওয়ার কারণেই নিজেকে তাঁর জন্য পেশ করেছে। [২০০১]

【58】

যে ব্যক্তি তার সন্তান সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, ফাযা'রাহ গোত্রের এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার স্ত্রী কৃষ্ণ বর্ণের একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ এগুলো কী বর্ণের? সে বললো, লাল। তিনি বলেন এগুলোর মধ্যে ছাই বর্ণের উট আছে কি? সে বললো, হাঁ, এর মধ্যে অবশ্যই ছাই রং-এর উটও আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এগুলো কোথা থেকে এলো? সে বললো, সম্ভবত এটি তার পূর্বপুরুষের কারো রং ধারণ করেছে। তিনি বলেনঃ এখানেও হয়ত পূর্বপুরুষের কালো রং ধারণ করে থাকবে। [২০০২] ইবনু উমার (রাঃ) এক গ্রাম্য বেদুইন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার স্ত্রী আমার ঘরে একটি কালো রং-এর পুত্র সন্তান প্রসব করেছে, অথচ আমাদের পরিবারে কালো রং-এর কেউ কখনো ছিলো না। তিনি বলেনঃ তোমার কি উট আছে? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেনঃ এগুলোর রং কী? সে বললো, লাল। তিনি বলেনঃ এগুলোর মধ্যে কি কালো বর্ণের উট আছে? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললো, হাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন এটা কিরূপে হলো? সে বললো, হয়ত পূর্বপুরুষের রক্ত ধারায় এমনটি হয়ে থাকবে। তিনি বলেনঃ হয়তো তোমার পুত্রের বেলায়ও এমনটি হয়ে থাকবে। [২০০৩]

【59】

সন্তান বিছানার মালিকের এবং ব্যভিচারির জন্য পাথর।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু যামআহ ও সা'দ (রাঃ) যামআহ'র দাসী-পুত্রকে কেন্দ্র করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বিবাদে লিপ্ত হন। সা'দ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার ভাই আমাকে বলেছেন যে, আমি মাক্কাহ্য় গেলে আমি যেন যাম্আর দাসী-পুত্রকে খুঁজে বের করি। আর আব্দ বিন যামআহ বললো, সে আমার ভাই, আমার পিতার দাসী-পুত্র, সে আমার পিতার শয্যায় জন্মগ্রহণ করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেলেটিকে উতবার সাথে (গঠনাকৃতিতে) সাদৃশ্যপূর্ণ লক্ষ্য করেন। তিনি বলেনঃ হে আব্দ বিন যামআহ! এটি তোমারই প্রাপ্য। সন্তান বিছানার মালিকের (স্বামীর) এবং ব্যভিচারির জন্য রয়েছে পাথর। আর হে সাওদা! তুমি তার থেকে পর্দা করবে। [২০০৪] উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দিয়েছেন যে, সন্তান বৈধ শয্যাধারীর (স্বামীর)। [২০০৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সন্তান বৈধ শয্যাধারীর (স্বামীর) এবং ব্যভিচারির জন্য রয়েছে পাথর। [২০০৬] আবু উমামা আল বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: সন্তান বৈধ শয্যাধারীর (স্বামীর) এবং ব্যভীচারীর জন্য রয়েছে পাথর। [২০০৭]

【60】

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন অপরজনের আগে ইসলাম গ্রহণ করলে ।

ইকরিমা ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করার পর এক ব্যক্তি তাকে বিবাহ করলো। রাবী বলেন, তখন পূর্ব স্বামী এসে বললো, “হে আল্লাহর রসূল! আমি তো তার সাথেই ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং সে আমার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জানে। রাবী বলেন; রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাটিকে তার দ্বিতীয় স্বামীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে তার প্রথম স্বামীকে ফেরত দেন। [২০০৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যাকে প্রথম বিবাহের সুবাদে প্রথম দু’বছর পর আবুল আস ইবনুর রবী’ (রাঃ) -এর নিকট ফেরত পাঠান। [২০০৯] আব্দুল্লাহ বিন আমর্ ইবনুল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যা যায়নাব (রাঃ) কে নতুন বিবাহের মাধ্যমে আবুল আস ইবনুর রবী (রাঃ) এর নিকট ফেরত পাঠান। [২০১০]

【61】

দুগ্ধপোষ্য সন্তানের মাতার সাথে সহবাস।

জুদামাহ বিনতে ওয়াহাব আল আসাদিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনিয়াছি: আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, দুগ্ধদানের মুদ্দতে মহিলাদের সাথে সহবাস করতে নিষেধ করাবো। কিন্তু আমি দেখলাম যে, পারস্য ও রোমের অধিবাসীরা এমনটি করে, অথচ তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয়না। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আযল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি: এটি হচ্ছে গোপন হত্যার একটি পদ্ধতি। [২০১১] আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনুস সাকান (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা গোপনে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করোনা। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! দুধপানের মেয়াদে স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে আরোহীকে ঘোড়া তার পিঠ থেকে ভূলুন্ঠিত করে। [২০১২]

【62】

যে স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়।

আবু উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা তার দুটি সন্তানসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসে। সে একটি সন্তানকে কোলে এবং অপরটিকে হাতে ধরে নিয়ে আসে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: গর্ভধারিনী (বহনকারিণী) , সন্তান জন্মদানকারীণী এবং মমতাময়ী বা তারা তাদের স্বামীদের কষ্ট না দিলে তাদের মধ্যে যারা সলাতী তারা জান্নাতে যাবে। [২০১৩] মুআয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন স্ত্রী তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখন জান্নাতে তার আয়তালোচনা হুর স্ত্রীগণ বলতে থাকেঃ ওহে! আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন। তুমি তাকে কষ্ট দিওনা। সে তো তোমার নিকট অল্পদিনের মেহমান অচিরেই সে তোমাকে ত্যাগ করে আমাদের নিকট চলে আসবে। [২০১৪]

【63】

হারাম বস্তু হালাল বস্তুকে হারাম করতে পারে না।

নাফি ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হারাম বস্তু হালাল বস্তুকে হারাম করে না। [২০১৫]