1. নামাযের সময়

【1】

পাঁচ ওয়াক্তের সময়

ইবনু শিহাব (র) উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) একদিন নামায দেরিতে আদায় করলেন। উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাঁর নিকট এসে খবর দিলেন যে, মুগীরা ইবনু শু’বা যখন কূফায় ছিলেন তখন তিনি একদিন নামায দেরিতে আদায় করলেন। তারপর আবূ মাসউদ আনসারী (র) তাঁর নিকট এসে বললেন, মুগীরা! এই দেরি কেন? আপনার জানা নেই কি জিবরাঈল (আ) অবতরণ করলেন, অতঃপর নামায আদায় করলেন? (তাঁর সাথে) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও নামায আদায় করলেন, অতঃপর জিবরাঈল (আ) নামায আদায় করলেন, (তাঁর সাথে) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নামায আদায় করলেন, তারপর জিবরাঈল (আ) নামায আদায় করলেন, (তাঁর সাথে) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করলেন। তারপর বললেন, আপনার প্রতি এরই (এভাবে নামায আদায় করার) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) বললেন, উরওয়াহ! তুমি কী বর্ণনা করছ ভেবে দেখ। জিবরাঈল (আ)-ই কি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য নামাযের সময় ঠিক করেন? উরওয়াহ বললেন, বাশীর ইবনু আবূ মাসঊদ আনসারী তাঁর পিতা হতে এরূপ হাদীস বর্ণনা করতেন। (বুখারী ৫২২, মুসলিম ৬১১) উরওয়াহ (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আসর নামায আদায় করতেন তখনও সূর্যের আলো আয়েশার ঘরে থাকত, আলো ঘরের মেঝে হতে প্রাচীরে উঠার পূর্বে। (বুখারী ৫২২, ৫৪৫, মুসলিম ৬১১) আতা ইবনু ইয়াসার (র) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল এবং ফজর নামাযের সময় সম্পর্কে জানতে চাইলো। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রশ্নের উত্তর দানে বিরত থাকলেন। দ্বিতীয় দিন ফজর (সূবহে সাদিক) হলে তিনি ফজরের নামায আদায় করলেন। তারপরের দিন ফজর আদায় করলেন (ভোরের আলো) পূর্ণাঙ্গ প্রকাশিত হওয়ার পর। অতঃপর তিনি বললেন, নামাযের সময় সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? (সেইলোক) বলল, আমিই সেই ব্যক্তি ইয়া রসূলাল্লাহ। তিনি বললেন, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী মুহূর্তগুলিই ফজর নামাযের সময়। (নাসাঈ, আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত ৬৪২, আলবানী সহীহ বলেছেন। ইমাম মালিক মুরসাল ভাবে বর্ণনা করেছেন) আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজর আদায় করতেন তখন মেয়েলোকেরা নামায আদায়ের পর তাদের চাদর গায়ে দিয়ে (ঘরের দিকে) ফিরতেন, অন্ধকারের জন্য তাঁদেরকে চেনা যেত না। (বুখারী ৩৭২ মুসলিম ৬৪৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্য ওঠার পূর্বে ফজরের এক রাকাত পেয়েছে সে ফজর নামায পেয়েছে। আর যে ব্যক্তি সূর্য ডুবার আগে আসরের এক রাক‘আত পেয়েছে সে আসর নামায পেয়েছে। (বুখারী ৫৭৯, মুসলিম ৬০৮) নাফি (র) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর (অধীনস্থ) কর্মকর্তাদের কাছে লিখেছেন, আমার মতে তোমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নামায, অতএব যে এটার রক্ষণাবেক্ষণ করল এবং (নিষ্ঠার সাথে) বরাবর পালন করল সে নিজের দ্বীনের হিফাজত করল, আর যে নামাযকে নষ্ট করিল, সে নামায ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় দীনি কাজেরও অধিক নষ্টকারী হবে। তিনি আরও লিখলেন, তোমরা যোহরের নামায আদায় করো যখন ফাই (সূর্য পশ্চিমে হেলিয়া পড়ার পর যে ছায়া হয় তা) এক হাত হয়। এই নামাযের সময় তোমাদের প্রত্যেকের ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আর আসরের নামায আদায় করো যখন সূর্য উর্ধ্বে উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন থাকে। (সেই সময় হতে) সূর্যাস্তের পূর্বে সওয়ারী ব্যক্তি দুই বা তিন ফরসখ চলতে পারে এতটুকু সময় পর্যন্ত। আর মাগরিব আদায় করো যখন সূর্য ডুবে যায়, আর ইশা আদায় করো (শফক) অদৃশ্য হওয়ার পর হতে এক-তৃতীয়াংশ রাত পর্যন্ত। আর যে (ইশা না আদায় করে) ঘুমাতে যায় তার চোখে যেন ঘুম না আসে, আর যে ঘুমাতে যায় তার চোখে যেন ঘুম না আসে, আর যে ঘুমাতে যায় তার চক্ষুর যেন ঘুম না আসে। আর ফজর (আদায় করো) যখন নক্ষত্রসমূহ পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয় এবং পরস্পর খাপিয়া যায়। (মুনকাতে ইমাঃ বাইহাকী, সুনানে কুবরা ১/৪৪৫, তাহাবী শরহে মানিল আসার ১/১৯৩, তিনি ইমাম মালেকের সনদে বর্ণনা করেন যা মুনকাতে সনদ) মালিক ইবনু আসবাহী (রাঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)-এর কাছে (পত্র) লিখেছেন, সূর্য ঢলিয়া পড়লে পর তুমি যোহর আদায় কর, আর আসর আদায় কর যখন সূর্য উজ্জ্বল ও পরিচ্ছন্ন থাকে, সেটাতে হলুদ বর্ণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে। সূর্যাস্তের পর মাগরিব আদায় কর। আর ইশা আদায় কর ঘুমানোর আগে। আর নক্ষত্রসমূহ যখন (ফজরের আলোতে) উদ্ভাসিত হয় এবং একে অপরের সাথে খাপিয়া যায় তখন ফজর আদায়। আর ফজর নামাযে মুফাছছল হতে দুইটি দীর্ঘ সূরা পাঠ কর। (নাফি ওমর (রাঃ) হতে হাদীস শুনেনি, মালিক (রঃ) একই বর্ণনা করেন তবে মুয়াত্তার ব্যাখ্যা গ্রন্থ শরহে যুরকানীতে ১/৩৬, এর সমর্থনে একাধিক মারফু ও মাওকুফ হাদীস রয়েছে, হাদীসটি ইমাম মালিক একাই বর্ণনা করেন, এই অধ্যায়ে শাহেদ মারফু ও মাওকুফ- হাদীস রয়েছে) উরওয়া ইবনু যুবায়র (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ)-এর কাছ লিখেছেন, তুমি আসর আদায় করো যখন সূর্য উজ্জ্বল ও পরিষ্কার থাকে; আরোহী তিন ফরসখ পথ যেতে পারে সেই পরিমাণ সময় পর্যন্ত। আর ইশা আদায় কর তোমার সম্মুখে যখন ইশা উপস্থিত হয় সেই সময় হতে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত। যদি তুমি আরও দেরি কর তবে অর্ধরাত্রি পর্যন্ত কর। তবে তুমি অলসদের অন্তর্ভুক্ত হইও না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেন, পূর্বে এর সমর্থনে হাদীস রয়েছে) আবদুল্লাহ ইবনু রাফি’ (র) আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর কাছে নামাযের সময় সম্পর্কে জানতে চাইলেন। উত্তরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি তোমাকে নামাযের সময়ের সংবাদ দিব, যোহর আদায় কর যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হয়। আর আসর আদায় কর যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হয়। মাগরিব আদায় কর যখন সূর্য অস্ত যায়। আর ইশা আদায় কর তোমার সম্মুখ (অর্থাৎ তোমার সামনে উপস্থিত ইশার প্রথম সময়) হতে এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত আর ফজর আদায় কর গাবস অর্থাৎ গলসে-রাত্রের অন্ধকার কিছুটা বাকি থাকিতে। (ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন, এ হাদীসের সমর্থনে আরো হাদীস রয়েছে) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমরা আসর সালাত আদায় করতাম, অতঃপর লোকজন বের হতেন (কুবায় অবস্থিত) বনি ‘আমর ইবনু আউফ-এর বস্তির দিকে, সেখানে তাদেরকে এ অবস্থায় পেতেন যে, তাঁরা আসরের নামায আদায় করতেছেন। (বুখারী ৫৪৮, মুসলিম, ৬২১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমরা আসর সালাত আদায় করতাম। অতঃপর গমনকারী কুবার দিকে গমন করতেন এবং তাঁদের (কুবাবাসীদের) কাছে এসে পৌঁছতেন (এমন সময় যে), সূর্য তখনও উঁচুতে। (বুখারী ৫৫০, ৫৫১, মুসলিম ৬২১) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (র) যোহরের নামায লোকদেরকে সূর্য ঢলার বেশ কিছুক্ষণ পর আদায় করতে আমি পেয়েছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【2】

জুম’আর সময়

আবূ সুহায়ল (র) তাঁর পিতা মালিক (র) বলেছেন, আমি জুম’আর দিন আকীল ইবনু আবূ তালিবের একটি ছোট চাটাই (অথবা চাদর) দেখতে পেতাম। এটা মসজিদের পশ্চিম প্রাচীরের দিকে ফেলে রাখা হত। প্রাচীরের ছায়া যখন চাটাইকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে ফেলত, তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বের হতেন এবং জুম’আ আদায় করাতেন। জুম’আর নামায শেষে আমরা ফিরে আসতাম এবং দুপুরের বিশ্রাম নিতাম। (মালিক (রঃ) একাই বর্ণনা করছেন) ইবনু আবী সালিত (র) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) জুম’আর সালাত মদীনায় আদায় করেছেন, আর আসরের সালাত ‘মলালা’ [১] নামক জায়গায়। মালিক (র) বলেন, ইহা তানজীর (সূর্য পশ্চিমে ঢলার পরপরই জুম’আ আদায় করা) ও দ্রুতগতিতে পথ অতিক্রমের জন্য। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

যে ব্যক্তি নামাযের এক রাকআত পায়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে নামাযের এক রাকাত পেয়েছে সে অবশ্য নামায পেয়েছে। (বুখারী ৫৮০, মুসলিম ৬০৭) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, যদি তোমার রুকূ ফাউত হয়ে গেল (পাওয়া গেল না) তবে তোমার সিজদাও ফাউত হয়ে গেল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার ও যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তাঁরা দু’জনে বলতেন, যে লোক রুকূ পেয়েছে সে সিজদাও পেয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) মালিক (র) বলেন, তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন, যে রুকূ পেয়েছে সে সিজদাও পেয়েছে। আর যাঁহার উম্মুল-কুরআন ফাউত হয়েছে (সূরা ফাতিহা চলে গেছে) তাঁর অনেক সওয়াব ফাউত হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【4】

‘দুলুকুশ শামস ও গাসাকুল লাইল’-এর বর্ণনা

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, ‘দুলুকুশ শাম্স’ হচ্ছে (মধ্যাকাশ হতে) সূর্য পশ্চিমে হেলিয়া পড়া। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) দুলুকুশ শাম্স’ যখন ছায়া (পশ্চিম দিকে) ঝুঁকে আর ‘গাসাকুল লাইল’ হচ্ছে রজনী ও তার অন্ধকার। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

নামাযের সময় সম্পর্কীয় বিবিধ রেওয়ায়ত

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তির আসরের নামায ফাউত হয়েছে তবে যেন তার পরিবার-পরিজন ও সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ হারালে যেমন ক্ষতি হয় তদ্রুপ ক্ষতি হয়েছে)। (বুখারী ৫৫২, মুসলিম ৬২৬) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) আসরের নামায হতে ফেরার পথে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর এমন এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হল যিনি আসরের নামাযে হাজির হন নাই। উমার (রাঃ) বললেন আসরের নামায হতে তোমাকে কোন বস্তু বিরত রাখল? লোকটি তাঁর (উমারের) নিকট কারণ জানালেন। কারণ শুনে উমার (রা) বললেন, (জামা’আতে হাযির না হওয়ায়) তোমার সওয়াব কমেছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, বলা হয়ে থাকে “প্রত্যেক বস্তুর পূর্ণতা এবং ক্ষতি বা লোকসান রয়েছে।” ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) মুসল্লি এমন সময়ে নামায আদায় করবে, যখন তাঁর নামাযের ওয়াক্ত ফাউত হয় নি, তাই খুবই উত্তম, কিন্তু মুসল্লির নামাযের যে সময় ফাউত হয়ে গিয়াছে (অর্থাৎ মুস্তাহাব সময় ফাউত হয়ে মাকরূহ ওয়াক্ত উপস্থিত হয়েছে) তবে সেই (ফাউত হওয়া মুস্তাহাব) সময় তাঁর পরিজন ও মাল অপেক্ষাও খুবই উত্তম। মালিক (র) বলেন, সফরকালে (যেই সফরে নামায কসর আদায় করতে হয় সেইরূপ সফর) যে ব্যক্তির নামাযের সময় উপস্থিত হয়েছে, সে যদি ভুলে অথবা ব্যস্ততাবশত নামায আদায়ে দেরি করে এবং এই অবস্থায় নিজের কাছে ফিরে আসে, তবে সে যদি নামাযের সময় থাকিতে পরিজনের কাছে ফিরে আসে সে মুকীমের নামায আদায় করবে, আর যদি নামাযের সময় চলে যাওয়ার পর ফিরে আসে, সে মুসাফিরের নামায আদায় করবে। কারণ যেরূপ তার উপর ফরয হয়েছিল সেইরূপ সে কাযা আদায় করবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের নগরীর লোকজন ও আহলে ইলমকে আমি এর উপরই পেয়েছি (অর্থাৎ তাঁদের আমল ও অভিমতও ঐরূপই ছিল)। মালিক (র) বলেন, অস্তাচলে যে লালিমা দৃষ্ট হয় তাই শফক। লালিমা চলে গেলে ইশার নামায ওয়াজিব হল এবং তুমি মাগরিবের সময় হতে বের হলে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। (হুঁশ ফিরে আসার পর) তিনি আর নামাযের কাযা আদায় করলেন না। মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে এটা এইজন্য যে, নামাযের সময় চলে গিয়েছিল। আর নামাযের সময় থাকতে যে জ্ঞান ফিরে পায় সে নামায আদায় করবে (আল্লাহ সর্বজ্ঞ)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【6】

নামায হতে নিদ্রায় থাকা

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর হতে ফিরে আসার সময় রাত্রিবেলা পথ চললেন; যখন রাত্রের শেষ সময় হল তিনি (নিদ্রার জন্য) অবতরণ করলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে বললেন, ‘তুমি প্রত্যুষের প্রতি লক্ষ রাখ (ভোর হলে আমাদেরকে জাগিয়ে দেবে)। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ ঘুমিয়ে পড়লেন। বিলাল (রাঃ) যথাসাধ্য লক্ষ রাখতে লাগলেন। অতঃপর উটের হাওদার সাথে ঠেস দিয়ে ভোরের আলোর উদয়ের স্থানকে সামনে রেখে বসলেন। হঠাৎ তাঁর উপর নিদ্রা ভর করল। এই অবস্থায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, বিলাল এবং কাফিলার অন্য কেউ উঠলেন না যতক্ষণ না সূর্যকিরণ তাঁদের উপর পতিত হল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘাবড়ে গেলেন; তারপর বললেন বিলাল! এটা কি? বিলাল বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনাকে যিনি ঘুম পাড়িয়েছেন তিনি আমাকেও ঘুম পাড়িয়েছেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উট চালিত কর (এবং স্থানান্তরিত হও)। তাঁরা উটগুলিকে উঠালেন এবং কিছুদূর চললেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে নির্দেশ দিলেন (ইকামত বলার জন্য)। তিনি ইকামত বললেন, তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে ফজরের নামায আদায় করালেন। নামায সমাপ্ত করার পর তিনি বললেন, যে নামাযকে ভুলিয়া যায় (অর্থাৎ নামায হতে গাফিল হয় নিদ্রা অথবা ভূলের কারণে) নামাযের কথা স্মরণ হওয়ার পর সে তা আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, أَقِمْ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي “আমার স্বরণার্থে নামায কায়েম কর।” (ছহীহ মুসলিম ৬৮০, আর ইমাম মালিক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) মক্কার পথে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার বিশ্রাম গ্রহণের জন্য) রাত্রিতে অবতরণ করলেন এবং বিলালকে নামাযের জন্য জাগিয়ে দেয়ার দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। তারপর বিলাল ঘুমালেন এবং অন্য সকলেও ঘুমালেন। এমন কি তাঁরা জেগে উঠলেন সূর্য ওঠার পর। হতচকিত অবস্থায় দলের লোকজন জাগ্রত হলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে সওয়ার হওয়ার এবং সেই উপত্যকা হতে বাহিরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আর তিনি বললেন, এই উপত্যকায় অবশ্যই শয়তান রয়েছে। তারপর তাঁরা সওয়ার হলেন এবং সেই উপত্যকা হতে বের হয়ে গেলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে অবতরণ এবং ওযূ করার নির্দেশ দিলেন। আর বিলালকে নামাযের জন্য আযান অথবা ইকামত বলার হুকুম করলেন। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনকে নামায আদায় করালেন। তারপর তাঁদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং তাঁদের ঘাবড়ানোর অবস্থা অনুধাবন করলেন। তখন তিনি বললেন, হে লোকসমাজ! আল্লাহ আমাদের আত্মাসমূহকে কাবু করেছিলেন, আর তিনি যদি ইচ্ছা করতেন এই সময় ব্যতীত ভিন্ন সময়ে আত্মাসমূহকে আমাদের নিকট ফেরত দিতে পারতেন। যদি তোমাদের কেউ নামায হতে ঘুমিয়ে পড় অথবা উহাকে ভুলে যাও, অতঃপর হঠাৎ নামাযের কথা স্মরণ হয়, তবে সেই নামাযকে উহার নির্ধারিত সময়ে যেভাবে আদায় করতে সেভাবে আদায় করবে। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রা)-এর দিকে দৃষ্টি করলেন। তারপর বললেন, বিলাল যখন দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতেছিল তখন তাঁর কাছে শয়তান আসিল এবং তাঁকে ঠেস দেওয়াইয়া বসাইল এবং শিশুকে যেভাবে (থাপি দিয়া) শান্ত করা হয় ও ঘুম পাড়ানো হয় সেইভাবে তাঁর সঙ্গে বারবার করতে থাকিল। এমন কি (শেষ পর্যন্ত) বিলাল ঘুমিয়ে পড়ল। তাঁরপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলালকে আহ্বান করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর (রাঃ)-কে যেরূপ বলেছিলেন বিলালও অনুরূপ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনা করলেন। উহা শুনে আবূ বকর (রা;) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল। (মালিক (রঃ) একাই বর্ণনা করেছেন তবে এই হাদীসকে পূর্বের হাদীস ছাড়াও অন্যান্য হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়)

【7】

দ্বিপ্রহরে (প্রখর রৌদ্রতাপে) নামায আদায় নিষেধ

আতা ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, জাহান্নামের মূল হতেই প্রখর গ্রীষ্মের উৎপত্তি। তাই প্রচণ্ড গ্রীষ্মের সময় নামায দেরিতে আদায় কর। তিনি আরও বললেন, (জাহান্নামের) অগ্নি তাঁর নিকট ফরিয়াদ জানিয়ে বলল, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলল। অতঃপর (আল্লাহ তা’আলা) উহাকে বছরে দু’বার শ্বাস ছাড়ার অনুমতি দিলেন-এক শ্বাস শীতকালে আর অপর শ্বাস গ্রীষ্মে। (মালিক (রঃ) একাই বর্ণনা করেছেন, এবং এই হাদীসের সমর্থনে মুয়াত্তা, বুখারী মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে হাদীস পাওয়া যায়) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন গ্রীষ্ম প্রখর হয় সেই সময় নামায দেরি করে (গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতা যখন কমে যায় তখন) আদায় কর। কারণ গরমের প্রখরতার উৎপত্তি জাহান্নামের মূল হতেই। তিনি (আরও) উল্লেখ করলেন জাহান্নাম (উহার আগুন) তার পরওয়ারদিগারের নিকট ফরিয়াদ জানাল। ফলে আল্লাহ তা’আলা উহার জন্য প্রতি বৎসর দুইটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন, একটি শ্বাস শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। (ছহীহ, মুসলিম ৬১৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন গ্রীষ্মের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায় তখন তোমরা নামায দেরি করে আদায় কর। কারণ গ্রীষ্মের প্রখরতার উৎপত্তি জাহান্নামের মূল হতেই। (বুখারী ৫৩৪, মুসলিম ৬১৫)

【8】

নামাযে মুখ ঢেকে রাখা ও পিয়াজের গন্ধসহ মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ

সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে এই উদ্ভিদ হতে আহার করে সে আমাদের মসজিদ সমূহের নিকটে যেন না আসে, পিয়াজের গন্ধ আমাদের কষ্ট দিবে। (সহীহ, মুসলিম ৫৬৩, তবে মালিক (রঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) ২و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْمُجَبَّرِ أَنَّهُ كَانَ يَرَى سَالِمَ بْنَ عَبْدِ اللهِ إِذَا رَأَى الْإِنْسَانَ يُغَطِّي فَاهُ وَهُوَ يُصَلِّي جَبَذَ الثَّوْبَ عَنْ فِيهِ جَبْذًا شَدِيدًا حَتَّى يَنْزِعَهُ عَنْ فِيهِ. সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) কোন লোককে নামাযে মুখাবৃত দেখলে খুব জোরে কাপড় (মুখ হতে) টেনে নিতেন। এমন কি মুখ হতে কাপড় ছিনিয়ে নিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)