10. দুই ঈদ
উভয় ঈদে গোসল করা এবং আযান ও ইকামত
মালিক (র) তিনি অনেক আলিমকে বলতে শুনেছেন যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ হতে বর্তমান যুগ পর্যন্ত আযান ও ইকামত ছিল না। (বুখারী ৯৬০, মুসলিম ৮৮৬, মারফু সনদে ইবনু আব্বাস ও জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন) মালিক (র) বলেন, এটা এমন একটি সুন্নত যাতে আমাদের মতে কারো দ্বিমত নেই। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
উভয় ঈদে খুত্বার পূর্বে নামায আদায়ের নির্দেশ
ইবনু শিহাব (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ‘ঈদুল আযহাতে খুতবার পূর্বে নামায আদায় করতেন। (বুখারী ৯৬৩, মুসলিম ৮৮৮, তিনি ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মালিক (র) আবূ বাকর এবং উমার (রাঃ) তাঁরা দু’জনেই এরূপ করতেন। (মারফু, বুখারী ৯৬২, মুসলিম ৮৮৪, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মাওকুফ এবং মুনকাতে) ইবনু আযহারের মাওলা আবূ উবায়দ (র) আমি ঈদের নামাযে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে শরীক হয়েছি। তিনি ঈদের নামায আদায় করালেন, অতঃপর (মিম্বরে) প্রত্যাগমন করলেন এবং লোকের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করলেন। খুতবায় তিনি বললেন, এ দুটি [ঈদের] দিবস এমন যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় দিবসে রোযা রাখতে নিষেধ করেন, তোমাদের রোযা খোলার (অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের) দিন আর তোমাদের কুরবানীর গোশত আহার করার দিন। (বুখারী ১৯৯০, মুসলিম ১১৩৭) আবূ উবায়দ (র) বলেন, অতঃপর আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর সাথেও ঈদে হাযির হয়েছি। তিনি (ঈদগাহে) আসার পর নামায আদায় করলেন, তারপর (মুসল্লা হতে) ফিরে খুতবা করলেন, ‘আজকের এই দিনে তোমাদের জন্য দুটি ঈদ একত্র হয়েছে (শুক্রবার হওয়ার কারণে।) মদীনার বাহিরের লোকেরা ইচ্ছা করলে জুম’আর নামাযের জন্য অপেক্ষা করতে পারে অথবা ইচ্ছা করলে নিজেদের এলাকায় ফিরেও যেতে পারে, আমি তাদেরকে এ অনুমতি দিলাম। আবূ উবায়দ (র) বলেন, আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে আমি উপস্থিত ছিলাম, যখন উসমান (রাঃ) অবরুদ্ধ ছিলেন। আলী (রাঃ) আসলেন এবং নামায আদায় করলেন, তারপর লোকদের দিকে মুখ করলেন ও খুতবা দিলেন।
প্রভাতে ঈদের পূর্বে আহার গ্রহণের নির্দেশ
উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে আহার গ্রহণ করতেন। (সহীহ মারফু, বুখারী ৯৫৩, আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত) ইবনু শিহাব (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) তাঁকে অবগত করেন যে, (তাঁদের যুগে) ঈদুল ফিতরের দিন লোকজন সকালে ঈদে যাওয়ার পূর্বে কিছু আহার করার জন্য নির্দেশিত হত। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ঈদুল আযহাতে (কুরবানীর ঈদে) লোকের জন্য আমি এটা প্রয়োজন মনে করি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
উভয় ঈদের নামাযে কিরাআত ও তাকবীরের বর্ণনা
উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন ঈদুর ফিত্র ও ঈদুল আযহাতে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন সূরা পাঠ করতেন? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করতেন ق وَالْقُرُ اَنِ الْمَجِيْدِ. ةَاقْتَرَبَتِ السَّعَةُ وَالنْشَقَّ الْقَمَرُ. (সূরা কাফ্ ও ক্বামার), এই দুই সূরা। (সহীহ, মুসলিম ৮৯১) নাফি’ (র) আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে উপস্থিত হয়েছি। তিনি কিরাআতের পূর্বে প্রথম রাক’আতে সাতটি তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক’আতে পাঁচটি তাকবীর বলেছেন। (সহীহ মারফু, ইমাম আবূ দাঊদ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন আবূ দাঊদ (১১৪৯), আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ইরওয়া ৬৩৯) মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে এটাই হুকুম। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, তাঁর মতে যে ব্যক্তি ঈদের দিন লোকজনকে নামায আদায় করে ফিরবার কালে পায়, সে ব্যক্তির জন্য ঈদগাহ অথবা স্বগৃহে ঈদের নামায আদায়ের প্রয়োজন নেই। আর যদি সে ঈদগাহে বা নিজ ঘরে ঈদের নামায আদায় করে তাতেও কোন আপত্তি নাই। সে প্রথম রাক’আতে কিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক’আতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর পাঠ করবে।
উভয় ঈদের আগে ও পরে নামায না পড়া
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায় করতেন না, ঈদের পূর্বেও না এবং পরেও না। (মারফু, ইবনু আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, বুখারী ৯৮৯, ৯৬৪, মুসলিম ৮৮৪) মালিক (র) বলেন, তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্য উদয়ের পূর্বে প্রত্যুষে ঈদগাহে গমন করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
উভয় ঈদের পূর্বে ও পরে নামায আদায়ের অনুমতি
আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) কাসিম (র) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে চার রাক’আত নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উরওয়াহ (র) যুবায়র (রাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে মসজিদে নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
ইমামের প্রভাতে ঈদগাহে গমন করা ও খুতবার জন্য অপেক্ষা করা
মালিক (র) আমাদের মধ্যে এই সুন্নত প্রচলিত-যাতে দ্বিমত নেই যে, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম স্বীয় মনযিল হতে এমন সময় বের হবেন, যাতে তিনি নামাযের সময় ঈদগাহে পৌঁছাতে পারেন। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ঈদুল ফিতরের দিন ইমামের সাথে নামায আদায় করেছে। সে খুতবা শোনার পূর্বে প্রত্যাবর্তন করতে পারে কি? তিনি বললেন, ‘না। ইমাম প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত সে ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করবে না।