12. সালাতুল-কুসূফ

【1】

সালাতুল কুসূফ-এর (সূর্যগ্রহণের নামায) বিবরণ

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে একবার ‘সূর্যগ্রহণ’ হল। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে নামায আদায় করলেন, তিনি নামাযে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। অতঃপর রুকূ করলেন অনেক দীর্ঘ রুকূ। তারপর দাঁড়ালেন দীর্ঘক্ষণ; কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম, তারপর রুকূ করলেন; রুকূকে দীর্ঘ করলেন; তবে এটা ছিল পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর পবিত্র শির উঠালেন এবং সিজদা করলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক’আতেও প্রথম রাক’আতের মত কার্যাদি সম্পন্ন করলেন; তারপর নামায সমাপ্ত করলেন। অতক্ষণে সূর্য দীপ্যমান ও উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করলেন। তিনি (খুতবার প্রথমে) আল্লাহর প্রশংসা ও হামদ বর্ণনা করলেন এবং বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কোন ব্যক্তির মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে উহাদের গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখতে পাও, তখন আল্লাহর কাছে দু’আ করবে এবং আল্লাহর তাকবীর উচ্চারণ করবে আর সদকা প্রদান করবে। অতঃপর ফরমালেন হে উম্মতে মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, তিনি অপেক্ষা অধিক অভিমানী বা ঘৃণাকারী আর কেউ নেই। মুহাম্মদী! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা অবগত হতে, যা আমি অবগত আছি, তা হলে নিশ্চয় তোমরা কম হাসতে ও অধিক কাঁদতে। (বুখারী ১০৪৪, মুসলিম ৯০১) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) একবার সূর্যগ্রহণ হল, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করলেন এবং তিনি তাঁর নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। রাবী বলেন, সূরা বাকারা পাঠ করার কাছাকাছি সময় (দাঁড়ালেন)। তিনি বলেন, অতঃপর লম্বা রুকূ করলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর লম্বা রুকূ করলেন, প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম। অতঃপর তিনি সিজদা করলেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন। কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর রুকূ করলেন, দীর্ঘ রুকূ কিন্তু পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। আবার মাথা তুললেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম, তারপর দীর্ঘ রুকূ করলেন, তবে পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম, তারপর সিজদা করলেন। এর পর নামায সমাপ্ত করলেন। আর ততক্ষণে সূর্য দীপ্যমান ও উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। তারপর তিনি বললেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন, কোন লোকের মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে এর গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা উহা দেখতে পাও, তখন সকলে আল্লাহকে স্মরণ করো। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এই জায়গায় আপনাকে আমরা কোন কিছু গ্রহণ করতে দেখতে পেলাম, আবার আপনাকে পেছনে সরিতে দেখলাম (এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিন)। উত্তরে তিনি বললেন, আমি বেহেশত দেখতে পেলাম এবং সেখান হতে একটি আঙ্গুরের ছড়া গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম, আমি উহা গ্রহণ করলে পৃথিবী কায়েম থাকা পর্যন্ত তোমরা উহা হতে আহার করতে পারতে। আর আমি দোযখকেও দেখতে পেলাম, যার মত ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। আর আমি দেখতে পেলাম যে, উহার অধিকাংশ অধিবাসীই নারী। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন এর কারণ কি? হে আল্লাহর রসূল! াতিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। প্রশ্ন করা হল তারা কি আল্লাহ তা’আলার সাথে কুফরী করে থাকে? তিনি বললেন, (না, বরং) স্বামীর অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে বসে। তুমি যদি তাদের কারো সাথে যুগ যুগ ধরে ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে যদি কোন একদিন তোমার নিকট হতে তার অপছন্দনীয় কিছু দেখে, তবে বলবে, ‘আমি কোন মঙ্গল তোমার কাছ থেকে লাভ করিনি।’ (বুখারী ১০৫২, মুসলিম ৯০৭) আয়িশা (রাঃ) একজন ইহুদী রমণী তাঁর কাছে ভিক্ষা করতে এলে এবং তাঁকে أَعَاذَكِ اللهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ (আল্লাহ আপনাকে কবরের আযাব হতে রক্ষা করুন) বলে দু’আ করল। তারপর আয়েশা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রশ্ন করলেন কবরে লোকদেরকে আযাব দেওয়া হবে কি? (উত্তরে) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি উহা হতে আল্লাহর শরণ নিচ্ছি। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সওয়ারীর পৃষ্ঠে আরোহণ করলেন। তারপর সূর্যগ্রহণ লেগেছে; তিনি চাশতের সময় প্রত্যাবর্তন করলেন এবং উম্মাহাতুল মু’মিনীনের হুজরাসমূহের পেছন দিকে গাঁড়ালেন, তারপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন, লোকজনও তাঁর পেছনে দাড়িয়ে গেল। তারপর তিনি নামাযে দীর্ঘ সময় দাঁড়ালেন, অতঃপর রুকূ করলেন, দীর্ঘ রুকূ, তারপর মাথা তুললেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু ইহা ছিল প্রথমবার দাঁড়ানো হতে কম দীর্ঘ। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করলেন অনেক দীর্ঘ, কিন্তু প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর রুকূ হতে মাথা তুললেন এবং সিজদা করলেন, তারপর দীর্ঘসময় দাঁড়ালেন; কিন্তু ইহা ছিল পূর্বের দাঁড়ানো অপেক্ষা কম দীর্ঘ। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করলেন, কিন্তু সাবেক রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালেন, কিন্তু প্রথম দাঁড়ানো অপেক্ষা কম। তারপর লম্বা রুকূ করলেন, আর এটা ছিল পূর্বের রুকূ অপেক্ষা কম। তারপর মাথা তুললেন এবং সিজদা করলেন, তারপর নামায সমাপ্ত করলেন। তারপর যা ইচ্ছা নসীহত করলেন। অতঃপর সকলকে কবর আযাব হতে আল্লাহর শরণ নেবার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ১০৫০, মুসলিম ৯০৩)

【2】

সালাতুল-কুসূফ-এর বিশেষ বর্ণনা

আসমা বিনত আবূ বাকর (রা) আমি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা)-এর কাছে গেলাম, তখন সূর্যগ্রহণ লেগেছে এবং লোকজন দাঁড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন। আয়েশা (রা)-ও তখন নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন আমি প্রশ্ন করলাম লোকের কি হল? (উত্তরে) তিনি আসমানের দিকে ইশারা করলেন এবং سُبْحَانَ اللهِ বললেন। আমি বললাম এটা কি একটি নিদর্শন? তিনি শির দ্বারা ইঙ্গিতে বললেন, ‘হ্যাঁ’। আসমা বলেন, অতঃপর আমি দাঁড়ালাম এমন অবস্থায় যে, সংজ্ঞাহীনতা আমাকে আবৃত করে ফেলেছে এবং আমি মাথায় পানি ঢালতে শুরু করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সানা ও হামদ আদায় করলেন। তারপর বললেন, এমন কোন বস্তু নাই যা আমি এই মুহূর্তে এই স্থানে দেখিনি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নামও এখন দেখেছি। ওহী মারফত আমাকে জানানো হয়েছে তোমরা কবরে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে দাজ্জালের ফেতনার সদৃশ কিংবা উহার ফেতনার কাছাকাছি। (রাবীর এই বিষয়ে সন্দেহ হয়েছে) আসমা বলেন, তিনি কোনটি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই। তোমাদের একজনের কাছে ফেরেশতা আসবেন এবং তাকে বলা হবে এই ব্যক্তি [অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর ব্যাপারে তোমার কি জানা আছে? অতঃপর মু’মিন অথবা মুকিন (ইয়াকীনওয়ালা) [আসমা (রা) বলেন] কোনটি বলেছেন সদৃশ বলেছেন, না কাছাকাছি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই ফেরেশতার (প্রশ্নের উত্তরে) বলবেন ইনি ‘মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি আমাদের কাছে হিদায়েত ও নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করেন, তখন আমরা তাঁর হিদায়েত ও নিদর্শনসমূহকে মেনে নিয়েছি এবং তাঁর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর পায়রবী করেছি। তখন তাঁকে বলা হবে তুমি সৎলোক, তুমি ভালভাবে ঘুমাও। আমাদের জানা ছিল যে, তুমি ঈমানদার। আর মুনাফিক অথবা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) ব্যক্তি। আসমা (রা) বলেন, কোনটি বলেছেন তা আমার স্মরণ নাই। সে বলবে আমি কিছু জানি না, লোকজনকে যা বলতে শুনেছি তাই বলেছি। (বুখারী ১৮৪, মুসলিম ৯০৫)