13. বৃষ্টি প্রার্থনা
বৃষ্টি প্রার্থনার নামায
আববাদ ইবনু তামীম (র) আবদুল্লাহ ইবনু যায়দুল মাযনী (র)-কে আমি বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মুসাল্লা-র (নামাযের স্থান ইদগাহ) দিকে বের হলেন, তারপর বৃষ্টি প্রার্থনা করলেন, আর কিবলামুখী হওয়ার সময় আপন চাদর ঘুরিয়ে দিলেন। (বুখারী ১০১২, মুসলিম ৮৯৪) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল, ‘সালাতুল ইসতিসকা’ সম্পর্কে; উহা কত রাক’আত? তিনি (উত্তরে) বললেন, দু’ রাক’আত; কিন্তু ইমাম খুতবা পাঠের পূর্বে নামায আরম্ভ করবেন। অতঃপর দু’ রাক’আত আদায় করবেন, তারপর দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করবেন, এবং দু’আ করবেন। আর কিবলার দিকে যখন মুখ করবেন, তখন আপন চাদর ঘুরাবেন। আর উভয় রাক’আতে কিরা’আত সরবে পড়িবেন, আর যখন চাদর ঘুরাবেন, তখন ডান কাঁধের চাদরকে বাম কাঁধে এবং বাঁ কাঁধের চাদরকে ডান কাঁধে করবেন। ইমাম যখন আপন চাদর ঘুরিয়ে নিবেন। লোকজনও তাঁদের স্ব-স্ব চাদর ঘুরাবেন, আর তাঁরা কিবলামুখী হয়ে বসবেন।
বৃষ্টি প্রার্থনার বিবরণ
আমর ইবনু শুয়াইব (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন, তখন বলতেন, اَللهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهِيمَتَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَاَحْىِ بلَدَكَ الْمَيَّتَ. হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও জীব-জন্তুর পিপাসা নিবারণ করুন এবং আপনার রহমত বিস্তার করুন; আর পানির অভাবে মৃতপ্রায় শহরকে পুনরুজ্জীবিত করুন। (হাসানঃ আবূ দাঊদ ১১৭৬, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন [সহীহুল জামে’ ৪৬৬৬] এবং ইমাম মালিক কর্তৃক হাদীসটি মুরসাল) আনাস ইবনু মালিক (র) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে বলল, গৃহপালিত পশু ধ্বংস হয়েছে এবং পথঘাট বিনষ্ট হয়েছে, অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন, এতে জুম’আর দিন হতে আমাদের উপর বৃষ্টি হল। আনাস (রা) বলেন, অতঃপর এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, পথ-ঘাট রুদ্ধ হয়েছে এবং গৃহপালিত পশু মারা যাচ্ছে। তারপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেন আল্লাহ! পাহাড় ও টিলার পৃষ্ঠদেশ, উপত্যকার মধ্যভাগে এবং বৃক্ষের গোড়ায় বৃষ্টি হোক। আব্বাস (রা) বলেন, (দু’আর পর) মদীনার আকাশ হতে মেঘ চতুর্দিকে সরে গেল; যেমন পুরাতন কাপড় ছিড়ে বিভক্ত হয়ে যায়। (বুখারী ৯৩২, মুসলিম ৮৯৭) ইয়াহইয়া (র) বলেন, ইসতিসকার নামায যে ব্যক্তি পায়নি, অথচ সে খুতবায় শরীক হয়েছে, অতঃপর সে (ঈদগাহ হতে) প্রত্যাবর্তন করার পর তার গৃহে অথবা মসজিদে নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে তার সম্পর্কে কি হুকুম? এইমর্মে আমি প্রশ্ন করলে পর মালিক (র) বলেন, তার ইখতিয়ার রয়েছে, ইচ্ছা করলে আদায় করতে পারে, ইচ্ছা করলে নাও আদায় করতে পারে।
নক্ষত্রের সাহায্যে বৃষ্টি প্রার্থনা
যায়দ ইবনু খালিদ জুহানী (র) হুদায়বিয়ায় রাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল ও এর চিহ্ন সকালেও বিদ্যমান ছিল, সে অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ফজরের নামায পড়ালেন। যখন নামায সমাপ্ত করলেন, তখন পবিত্র মুখমণ্ডল লোকের দিকে করলেন এবং বললেন, তোমরা অবগত আছ কি তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক অবগত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (আল্লাহ) বলেছেন, আমার বান্দাদের মধ্য হতে কিছুসংখ্যক লোক প্রভাত করেছে আমার প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) রেখে, আর (কিছুসংখ্যক) প্রভাত করেছে আমার সাথে কুফরী করে। যে বলেছে, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, সে আমার প্রতি মু’মিন রয়েছে, আর নক্ষত্রের প্রতি অস্বীকারী হয়েছে। আর যে বলেছে, অমুক নক্ষত্রের দ্বারা বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, সে আমার প্রতি অস্বীকারকারী হয়েছে এবং নক্ষত্রের প্রতি বিশ্বাসী হয়েছে। (বুখারী ৮৪৬, মুসলিম ৭১) মলিক (র) সমুদ্রের দিক হতে মেঘ উঠিয়া শাম অভিমুখে গমন করল, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন عَيْنٌ غُدَيْقَة এটি ‘বর্ষণপূর্ণ প্রস্রবণ’। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) মালিক (র) বলেন, তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, যখন ফজর হয়, আর লোকের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তখন আবূ হুরায়রা (রা) বলতেন, আল্লাহর রহমতে আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হল। অতঃপর এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন- مَايَفْتَحِ اللهِ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلاَ مُمْسِكَ لَهَا. আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করলে কেহ নিবারণ করতে পারে না। (সূরা: আন-নজম, ২) (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)