17. যাকাত
কি ধরনের এবং কি পরিমাণ সম্পদে যাকাত দেয়া ওয়াজিব
আবূ সাঈদ খুদরী (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটির কম উটে যাকাত ওয়াজিব হয় না। পাঁচ উকিয়া হতে কম রৌপ্য এবং পাঁচ অছক হতে কম পরিমাণ শস্যেও যাকাত (উশর) ফরয হয় না। [১] (বুখারী ১৪৪৭, মুসলিম ৯৭৯) আবূ সাঈদ খুদরী (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ অছক হতে কম পরিমাণ খেজুরে যাকাত (উশর) নাই। পাঁচ উকিয়া হতে কম পরিমাণ রৌপ্য এবং পাঁচটির কম উটে যাকাত ফরজ হয় না। (সহীহ, বুখারী ১৪৫৯) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু আবদুল আযীয্ (র) দামেশকে নিযুক্ত শাসনকর্তাকে লিখে পাঠালেন স্বর্ণ, রৌপ্য, শস্য এবং পশুপালে যাকাত ধার্য করা হয়ে থাকে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, তিন প্রকার বস্তুতে যাকাত ধার্য হয় ক্ষেতের শস্য, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং পশুপালে।
স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত
বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনু উকবা (র) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আমার মুকাতাব (কোন কিছুর বিনিময়ে আযাদ হওয়ার চুক্তি সম্পাদনকারী ক্রীতদাসকে ‘মুকাতাব’ বলা হয়) চুক্তিকৃত দাসের সঙ্গে একটি বিরাট অংকের টাকার বিনিময়ে ‘মুকতাআ’ [১] করে ফেলেছি। এতেও কি যাকাত দিতে হবে ? কাসিম (র) উত্তরে বললেন, পূর্ণ এক বৎসর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত আবূ বক্র (রা) কোন মালের যাকাত নিতেন না। কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র) বলেন, কাউকেও সরকারী ভাতা প্রদানের সময় আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) জিজ্ঞেস করে নিতেন, আপনার এমন ধন-সম্পদ আছে কি যাতে যাকাত দেয়া ওয়াজিব হয় ? ঐ ব্যক্তি স্বীকারোক্তি করলে তিনি দেয় ভাতা হতে এটা কেটে রাখতেন। স্বীকার না করলে ভাতা সম্পূর্ণটাই দিয়ে যেতেন। কিছুই রেখে দিতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আয়েশা বিনতে কোদামা (রা) আয়েশা বিনতে কোদামা (রা) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, বাৎসরিক ভাতা নেওয়ার জন্য উসমান ইবনু আফ্ফান (রা)-এর নিকট যখন আসতাম তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন যাকাত ধার্য হওয়ার মত কোন সম্পদ আপনার কাছে রয়েছে কি ? আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব প্রদান করলে তিনি এই ভাতা হতে যাকাত পরিমাণ অংক কেটে রাখতেন, আর না বললে সম্পূর্ণ ভাতা দিয়ে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন, সম্পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সম্পদে যাকাত ফরয হয় না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) সর্বপ্রথম মুয়াবিয়া (রা)-ই বেতন যাকাত আদায় করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত প্রচলিত পদ্ধতি হল দুই শত দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) পরিমাণ অংকে যেমন যাকাত ধার্য করা হয়ে থাকে তেমনি বিশ দীনার [১] (স্বর্ণমুদ্রা) পরিমাণ অংকেও যাকাত ফরয হবে। মালিক (র) বলেন, দীনার ওজনে কম হলে এবং প্রকৃত মূল্য বিশ দীনার না হলে এতে যাকাত ধার্য হবে না। অনুরূপ বিশ দীনারের বেশি হলে এবং প্রকৃত মূল্য বিশ দীনার পরিমাণ হলে এতে যাকাত ধার্য হবে। মালিক (র) বলেন, বিশ দীনার হতে কম পরিমাণ অংকে যাকাত ফরয হয় না। মালিক (র) বলেন, দুই শত দিরহাম পরিমাণ অংক ওজনে হালকা হলে এবং প্রকৃত মূল্য দুইশত দিরহাম না হলে তাতে যাকাত ধার্য হবে না। সংখ্যায় দুই শতের বেশি হলেও যদি প্রকৃত মূল্য দুইশত দিরহামের হয়, তবে তাতে যাকাত ধার্য হবে। মালিক (র) বলেন, কারো নিকট যদি এক শত ষাট দিরহাম থাকে এবং সে যে অঞ্চলে বসবাস করে সে শহরে এক দীনার সমান আট দিরহাম হিসেবে হলেও (যদি সে অনুপাতে একশত ষাট দিরহাম সমান বিশ দীনার হয়ে যায় তবুও) এতে যাকাত ধার্য হবে না। কেননা যাকাত ফরয হওয়ার জন্য কারো নিকট বিশ দীনার বা দুইশত দিরহাম থাকতে হবে। [২] মালিক (র) বলেন, পাঁচ দীনার পরিমাণ অর্থ নিয়ে একজন ব্যবসা শুরু করল। বৎসর শেষ হতে না হতেই সে যাকাত পরিমাণ দীনারের মালিক হয়ে পড়লে তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। বৎসর সম্পূর্ণ হওয়ার একদিন পূর্বে বা পরে ঐ পরিমাণ দীনারের মালিক হলেও যাকাত দিতে হবে। পরে এই যাকাত প্রদানের দিন হতে দ্বিতীয় এক বৎসর পূর্ণ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আর তাকে যাকাত দিতে হবে না। মালিক (র) বলেন, কেউ দশ দীনার নিয়ে ব্যবসা শুরু করল, পূর্ণ বৎসর অতিক্রান্ত হতে না হতে সে বিশ দীনারের মালিক হল। তার উপর যাকাত ধার্য করা হবে। যেদিন বিশ দীনারের মালিক হল সেদিন হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হতে হবে, এরূপ নয়। কেননা বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার সময় সে বিশ দীনারের মালিক। পরে দ্বিতীয় এক বৎসর পূর্ণ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আর তার উপর যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, আমাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ক্রীতদাস কর্তৃক উপার্জিত মজুরি, ভাড়া এবং কিতাবত-চুক্তির বিনিময়ে প্রদত্ত অর্থ বা সম্পদে কম হোক বা বেশি হোক যাকাত ধার্য হবে না, যতদিন মালিক কর্তৃক অর্থপ্রাপ্তির দিন হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হবে। মালিক (র) বলেন, স্বর্ণ বা রৌপ্যে যদি কয়েকজনের হিস্যা থাকে তবে যার হিস্যা বিশ দীনার (স্বর্ণ হলে) বা দুইশত দিরহাম (রৌপ্য হলে) পরিমাণ হবে তার উপর যাকাত ধার্য হবে। যার হিস্যা এর চেয়ে কম হবে তার উপর যাকাত ফরয হবে না। সকলের হিস্যাই যদি নিসাব পরিমাণ হয় কিন্তু কারো কম আর কারো বেশি হয় তবে প্রত্যেকের উপরই নিজ নিজ হিস্যানুসারে যাকাত ফরয হবে। উহা এ জন্য যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রৌপ্য পাঁচ উকিয়ার কম হলে যাকাত ওয়াজিব নয়। মালিক (র) বলেন, আমি এ বিষয়ে যা কিছু শুনেছি তাদের মধ্যে উল্লেখিত ফয়সালাটি আমার পছন্দনীয়। মালিক (র) বলেন, কারো মালিকানাধীন স্বর্ণ ও রৌপ্য বিভিন্নজনের নিকট বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে থাকলে সাকল্য টাকা হিসেব করে যাকাত দিতে হবে। মালিক (র) বলেন, স্বর্ণ বা রৌপ্য যদি কেউ প্রাপ্ত হয়, তবে প্রাপ্তির দিন হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এতে যাকাত ধার্য হবে না।
খনিজ দ্রব্যের যাকাত
রবীআ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) রবীআ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) হতে একাধিকজন বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘ফুরআ’ অঞ্চলে অবস্থিত কাবালিয়্যা খনিসমূহ বিলাল ইবনু হারিস মুযানীকে জায়গীর হিসেবে দিয়েছিলেন। এগুলো হতে আজ পর্যন্ত যাকাত ব্যতীত আর কিছুই নেয়া হয় না। [১] (যয়ীফ, আবূ দাঊদ ৩০৬১, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন [আল-ইরওয়া ৮৩০]) মালিক (র) বলেন, খনি হতে উত্তোলিত দ্রব্যের মূল্য দুইশত দিরহাম বা বিশ দীনারের পরিমাণ না হওয়া পর্যন্ত উহাতে যাকাত ধার্য হবে না। কিন্তু ঐ পরিমাণ হলে উহাতে যাকাত ধার্য করা হবে। এর বেশি হলে সে অনুপাতে যাকাত নেওয়া হবে। খনি মাঝখানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর যদি আবার চালু হয় তবে সর্বপ্রথম চালু হওয়ার সময় যেমন যাকাত ধার্য করা হয়েছিল তেমনি এতে পুনরায় যাকাত ধার্য করা হবে। মালিক (র) বলেন, খনি শস্যক্ষেত্রের মতই, শস্যক্ষেত্রে যেমন ফসল উৎপন্ন হলে তাতে যাকাত ধার্য হয়, তেমনি খনি হতে খনিজদ্রব্য উত্তোলিত হলে এটা হতে যাকাত নেওয়া হবে। পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষা করা হবে না।
রিকায বা ভূগর্ভে প্রোথিত গুপ্তধনের যাকাত
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ভূগর্ভে প্রোথিত সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ যাকাত ধার্য হবে। (বুখারী ১৪৯৯, মুসলিম ১৭১০) মালিক (র) বলেন, বিজ্ঞ আলিমদের কাছে যা শুনেছি এবং যাতে কোন দ্বিমত নেই তা এই তাঁরা বলতেন, রিকায হল পরিশ্রম ও টাকা ব্যয় ব্যতিরেকে হস্তগত অমুসলিম কর্তৃক ভূগর্ভে প্রোথিত সম্পদ। এটা হস্তগত করতে বিরাট শ্রম ও টাকার প্রয়োজন হলে এবং কখনও কৃতকার্য কখনও অকৃতকার্য হলে আর এটা রিকায বলে গণ্য হবে না। এটাতে তখন হিসাবানুসারে কেবল যাকাত ধার্য হবে।
যে ধরনের দ্রব্যে যাকাত ধার্য করা হয় না
আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্নী আয়েশা (রা) তাঁর ভ্রাতা মুহাম্মদ ইবনু আবূ বক্র (রা)-এর ইয়াতীম ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন করতেন। এদের অনেকেরই অলংকার ছিল। কিন্তু আয়েশা (রা) এগুলোর যাকাত আদায় করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) স্বীয় কন্যা ও ক্রীতদাসীদেরকে স্বর্ণের অলংকার পরাতেন। তিনি এ সমস্ত অলংকারের যাকাত দিতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, কারো নিকট যদি স্বর্ণ বা রৌপ্যের পিণ্ড থাকে এবং এটা কাজে না লাগায় তবে নিসাব পরিমাণ হলে এটাতে বাৎসরিক চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হারে যাকাত ধার্য হবে। অলংকার তৈয়ারের উদ্দেশ্যে রক্ষিত পিণ্ড বা মেরামতের উদ্দেশ্যে রক্ষিত ভগ্ন অলংকার গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় মাল আসবাবের মত। এটাতে যাকাত ফরয হবে না। মালিক (র) বলেন, মোতি, কস্তুরী, আম্বর ইত্যাদি সুগন্ধি দ্রব্যে যাকাত ফরয হয় না।
ইয়াতীমদের সম্পত্তির যাকাত এবং ইহা ব্যবসায়ে খাটান
মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, ইয়াতীম পিতৃহারাদের ধন-সম্পত্তি ব্যবসায়ে খাটাও। যাকাত যেন একে গ্রাস না করে ফেলে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (রা) আয়েশা (রা) আমার ও আমার ভ্রাতাকে লালন-পালন করতেন। আমরা দু’জনের ছিলাম ইয়াতীম। আয়েশা (রা) আমাদের ধন-সম্পত্তিরও যাকাত প্রদান করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আয়েশা (রা) ব্যবসায়ীদেরকে তেজারতের জন্য ইয়াতীমদের মাল দিয়ে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তাঁর ইয়াতীম ভ্রাতুষ্পুত্রদের নিমিত্ত কিছু ক্রয় করেছিলেন। পরে অতি উচ্চ মূল্যে এটা বিক্রয় করা হয়েছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ইয়াতীমদের ওলী বা তত্ত্বাবধায়ক যদি আস্থাভাজন এবং আমানতদার হন তবে ইয়াতীমদের সম্পত্তি দ্বারা ব্যবসা করায় খারাপ কিছু নাই। ব্যবসায়ে ঘাটতি দেখা দিলে ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব তার উপর বর্তাবে না।
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের যাকাত
মালিক (র) কেউ যদি যাকাত ফরয হওয়া সত্ত্বেও তা আদায় না করে মারা যায় তবে তার সাকল্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ হতে ঐ যাকাত উসুল করা হবে। মৃতের অসীয়ত পূরণের উপরও এই যাকাত উসুলকে প্রাধান্য দেয়া হবে। কেননা এটা ঋণের মতই। আর ঋণ অসীয়ত পূরণের পূর্বে আদায় হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তি যাকাত আদায় করা অসীয়ত করে গেলেই কেবল উল্লিখিত হুকুম হবে। অসীয়ত না করে গেলেও ওয়ারিসান যদি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তা আদায় করে দেয় তবে ভালই। কিন্তু তাদের জন্য এটা করা জরুরী নয়। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাস’আলা হল, ওয়ারাসাত সূত্রে প্রাপ্ত ধন-সম্পত্তি, দাস-দাসী, ঘর-বাড়ি কোন কিছুরই যাকাত ওয়ারিসের উপর ধার্য হবে না। কিন্তু কেউ যদি ঐ সম্পত্তি বিক্রয় করে দেয়, তবে বিক্রয়ের মূল্য হস্তগত হওয়ার পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পর এর মূল্যে যাকাত ধার্য হবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট গৃহীত পদ্ধতি এই যে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধন-সম্পত্তিতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ওয়াজিব হবে না।
ঋণের যাকাত
সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) উসমান ইবনু আফফান (রা) বলতেন, এ মাস (মাহে রমযান) যাকাত আদায়ের মাস। ঋণগ্রস্তদের উচিত তাদের ঋণ শোধ করে দেয়া. যাতে অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত আদায় করে নেওয়া যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আইয়ূব ইবনু আবি তামীমা মুখতিয়ানী (র) উমাইয়া শাসকগণ অবৈধভাবে যে সমস্ত মাল কবজা করে নিয়েছিলেন সে সম্পর্কে নির্দেশ দিতে যেয়ে উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) লিখেছেন প্রকৃত মালিকদের নিকট ঐগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং যে কয় বৎসর অতিবাহিত হয়েছে হিসাব করে সে কয় বৎসরের যাকাত এটা হতে আদায় করে নেওয়া হোক। পরে আরেকটি পত্রে লিখেন এ কয় বৎসরের যাকাত যেন উসুল না করা হয়, কেননা ইহা মাল-ই-যিমারের অন্তর্ভুক্ত। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী ইয়াযিদ ইবনু খুসায়ফা (র) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র)-কে বলেন, এক ব্যক্তি, যার মাল আছে বটে কিন্তু তার সকল কিছুই ঋণে আবদ্ধ, তার কি যাকাত দিতে হবে ? সুলায়মান (র) জবাব দিলেন তার উপর যাকাত ধার্য হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, উসুল না হওয়া পর্যন্ত কর্জের মধ্যে যাকাত আসে না। কয়েক বৎসর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর যদি কর্জ আদায় হয়ে আসে, তবে এতে শুধু এক বৎসরের যাকাত ওয়াজিব হবে। আদায়কৃত টাকা নিসাব পরিমাণ হতে কম হলে এতে যাকাত ধার্য হবে না। তবে যাকাতযোগ্য অন্য ধরনের কোন মাল-সম্পত্তি যদি তার থাকে তবে উহার সঙ্গে মিলিত হয়ে এতেও যাকাত আসবে। যাকাতযোগ্য অন্য কোন মাল তার কাছে থাকলে আদায়কৃত টাকার হিসাব রাখা হবে এবং দ্বিতীয়বার যা আদায় হবে উহার সঙ্গে মিলিয়ে যদি নিসাব পরিমাণ হয় তবে তাতে যাকাত ধার্য হবে। প্রথমবারে আদায়কৃত টাকা যদি বিনষ্ট হয়ে যায় আর পরে নিসাব পরিমাণ টাকা যদি উসুল হয়ে আসে তবে তাতেও যাকাত ধার্য হবে। এর পর কম বেশি যাই আদায় হবে সে অনুপাতে যাকাতের পরিমাণও বাড়তে থাকবে। মালিক (র) বলেন, কয়েক বৎসরে যতটুকু পরিমাণ কর্জ উসুল হয় এতে শুধু এক বৎসরেরই যাকাত দিতে হবে। কারণ একজনের নিকট তার ব্যবসায়ের মাল অনেক দিন পর্যন্ত থাকে, কিন্তু যখন উহা বিক্রয় করে তখন উহার মূল্যে একবারই যাকাত ধার্য হয়। কেননা সম্পদের মালিক বা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য অন্য সম্পদ হতে যাকাত দিতে হয় না। এই ব্যাপারে মূলনীতি হল, যে ধরনের সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয়েছে সে ধরনের সম্পদ যাকাতে প্রদান করা। মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে এটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, কারো ঋণ শোধ হয়ে যাওয়ার মত সম্পদ ছাড়াও যদি অতিরিক্ত আরও নগদ টাকা-পয়সা থাকে তবে তাকে উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে। টাকা এবং আসবাবপত্র মিলিয়ে যদি শুধু ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হয় তবে এতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। ঋণ পরিশোধের অর্থের পর যদি অতিরিক্ত আরও নগদ টাকা-পয়সা এই পরিমাণ থাকে, যে পরিমাণে যাকাত ওয়াজিব হয় তবে যাকাত দিতে হবে।
বাণিজ্যিক সম্পদের যাকাত
যুরায়ক ইবনু হাইয়ান (র) যুরায়ক ছিলেন মিসরের পথে গমনকারী যাত্রীদের নিকট হতে কর আদায়কারী কর্মচারী। উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) তাঁকে লিখেছিলেন, তোমার এই এলাকা দিয়ে কোন মুসলিম ব্যবসায়ী পথ অতিক্রম করলে, তাঁর বাণিজ্যিক সম্পদ হতে প্রতি চল্লিশ দীনারে এক দীনার আদায় করে নিও। চল্লিশ দীনার হতে কম হলে সে অনুপাতে বিশ দীনার পর্যন্ত হতে আদায় করবে। বিশ দীনার হতে এক-তৃতীয়াংশ দীনারও যদি কম হয় তবে তা ছেড়ে দিও। আর কোন যিম্মী বাসিন্দা ঐ পথ অতিক্রম করলে তার বাণিজ্যিক সম্পদ হতে প্রতি বিশ দীনারে এক দীনার উসুল করবে। বিশের কম দশ দীনার পর্যন্ত হতে সে অনুপাতে উসুল করবে। দশ দীনার হতে এক-তৃতীয়াংশ দীনারও কম হলে তা ছেড়ে দিবে। সম্পূর্ণ বৎসরের জন্য উসুলকৃত পরিমাণের একটা রসিদ করদাতাকে লিখে দিবে যাতে এ কর এক বৎসরের মধ্যে তাকে পুনরায় দিতে না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট হুকুম হল, কোন ব্যবসায়ী একবার যাকাত প্রদান করার পর এটা দ্বারা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে কোন বস্তু অথবা গোলাম অথবা তদ্রুপ কিছু খরিদ করে যাকাত প্রদান করার তারিখ হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে উহা বিক্রয় করে দিলে, পূর্ণ বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। কয়েক বৎসর পর্যন্ত যদি এই মাল বিক্রয় না করে রেখে দেয় তবে যখন বিক্রয় করবে তখন শুধু এতে এক বৎসরের যাকাত দিতে হবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট মাস’আলা এই কেউ যদি ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে গম বা খেজুর খরিদ করে রেখে দেয় এবং এতে এক বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে যায়, তবে যখন মাল বিক্রয় হবে তখন নিসাব পরিমাণ হলে এতে যাকাত ওয়াজিব হবে। ফল বা ফসলের মত এর হুকুম হবে না। [১] মালিক (র) বলেন, কোন ব্যবসায়ীর কাছে বাণিজ্যিক মাল আছে বটে কিন্তু নগদ এত পরিমাণ টাকা তার হয় না যাতে যাকাত ধার্য হতে পারে, বাণিজ্যিক মালের মূল্য ও নগদ অর্থ মিলে নিসাব পরিমাণ হলে এতে যাকাত ধার্য হবে নতূবা ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, ব্যবসায়ে খাটান হোক বা না হোক সম্পদে বৎসরে একবারই যাকাত ধার্য হয়ে থাকে।
কানযের বর্ণনা
আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) কানয সম্পর্কে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, কানয হল এমন ধরনের সম্পদ, যার যাকাত আদায় করা হয়নি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) আবূ হুরায়রা (রা) বলতেন যে সম্পদের যাকাত আদায় করা হয়নি, কিয়ামতের দিন সে সম্পদ এক সাদা বর্ণের মাথাওয়ালা সাপের রূপ ধারণ করবে। উহার চোখের উপর কাল দাগ হবে এবং আপন মালিককে খুঁজতে থাকবে। শেষে তাকে তালাশ করে বের করবে এবং বলবে, আমি তোমারই সম্পত্তি, যার যাকাত তুমি আদায় করনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
চতুষ্পদ পশুর যাকাত
বর্ণনাকারী মালিক (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর যাকাত সম্পর্কীয় পত্রটি পাঠ করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) এতে নিম্নরূপ বিবরণ লিখিত ছিল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। যাকাত সম্পর্কে এই পত্রটি লিখিত (পাঁচ হতে) চব্বিশ পর্যন্ত উটে প্রতি পাঁচটিতে একটি ছাগল ধার্য হবে। চব্বিশ হতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত উটে একটি এক বৎসর বয়সী উষ্ট্রী ধার্য হবে। এক বৎসর বয়সের উষ্ট্রী না থাকলে দুই বৎসর বয়সের একটি উষ্ট্রী গ্রহণ করা যাবে। পঁয়ত্রিশ হতে পঁয়তাল্লিশটি পর্যন্ত দুই বৎসর বয়সের একটি উষ্ট্রী ধার্য হবে। পঁয়তাল্লিশ হতে ষাট পর্যন্ত তিন বৎসর বয়সের একটি উষ্ট্রী ধার্য হবে। ষাট হতে পঁচাত্তর পর্যন্ত সংখ্যায় চার বৎসর বয়সের একটি উষ্ট্রী ধার্য হবে। পঁচাত্তর হতে নব্বই পর্যন্ত সংখ্যায় দুই বছর বয়সের দুটি উষ্ট্রী ধার্য হবে। নব্বই হতে একশত বিশটি পর্যন্ত উটে তিন বৎসর বয়সের দুটি উষ্ট্রী ধার্য হবে। একশত বিশের উর্ধ্বে প্রতি চল্লিশটিতে দুই বৎসর বয়সের একটি উষ্ট্রী এবং প্রতি পঞ্চাশটিতে তিন বৎসর বয়সের একটি করে উষ্ট্রী ধার্য হবে। চারণভূমিতে বিচরণরত ছাগলের সংখ্যা চল্লিশটি হলে চল্লিশ হতে একশত বিশ পর্যন্ত একটি বকরী ধার্য হবে। একশত বিশ হতে দুইশত পর্যন্ত দুটি বকরী এবং দুইশত হতে তিনশত পর্যন্ত তিনটি বকরী ধার্য হবে। পরে প্রতি শতে একটি করে বকরী আদায় করতে হবে। যাকাতের ক্ষেত্রে ছাগল গ্রহণ করা হবে না। এমনিভাবে দোষযুক্ত এবং বৃদ্ধ পশুও এতে গ্রহণ করা হবে না। যাকাত উসুলকারী ব্যক্তি যদি ভাল মনে করেন তবে তা নিতে পারেন। যাকাত ধার্য হওয়ার ভয়ে পশুর বিভিন্ন দলকে একত্র বা দলকে বিভক্ত যেন করা না হয়। [১] একদল পশুতে যারা শরীক আছেন তাঁরা যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বরাবর হিসাব ভাগী হবেন। রৌপ্য পাঁচ উকিয়া পরিমাণ হলে তাতে এক-চত্তারিংশ যাকাত দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
গরু-মহিষাদির যাকাত
তাউস ইয়ামানী (র) মুয়ায ইবনু জাবল (রা) ত্রিশটি গাভীতে এক একটি বৎসরের বাছুর এবং চল্লিশটি গাভীতে দুই বছর বয়সের একটি গাভী গ্রহণ করেছিলেন। ত্রিশের কম সংখ্যায় কিছুই তিনি নেননি। তখন তিনি বলেছিলেন, এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কোন নির্দেশ আমি শুনি নাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে যদি পুনরায় সাক্ষাৎ ঘটে তবে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিব। কিন্তু মুয়ায (রা) (ইয়ামন হতে ফিরে) আসার পূর্বেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গিয়েছিলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৫৭৭, তিরমিযী ৬২৩, নাসাঈ ২৪৫০, ইবনু মাজাহ ১৮০৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ]) মালিক (র) বলেন, কারো বকরীসমূহ দুই বা ততোধিক একত্র করার পর যে সংখ্যায় হবে সেই অনুসারে এর যাকাত ধার্য হবে। তদ্রুপ কারো স্বর্ণ বা রৌপ্য যদি বিভিন্ন লোকের হাতে থাকে তবে সবগুলোকে একত্র করার পর যে পরিমাণ হবে সে হিসাবে এতে যাকাত ধার্য করা হবে। মালিক (র) বলেন, কারো নিকট যদি ভেড়া অথবা বকরী একই পালে মিশ্রিত হয়ে থাকে তবে সবগুলো গণনা করে দেখা হবে। সবগুলো একত্রে যাকাত ধার্য হয় এমন সংখ্যায় উপনীত হলে যাকাত ধার্য হবে। কারণ এগুলো ‘গনম’ (বকরী) জাতীয় পশু। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাঁর পূর্বে উল্লেখিত পত্রে উল্লেখ করেছেন, বকরীর সংখ্যা চল্লিশ হলে একটি বকরী যাকাত দিবে। সংখ্যায় ভেড়া অধিক হলে আর বকরী কম হলে যাকাতের বেলায় ভেড়া গ্রহণ করা হবে। আর বিপরীত হলে বকরী নেওয়া হবে। সংখ্যায় সমান হলে যাকাতগ্রহীতার ইখতিয়ার থাকবে যা ভাল মনে করে তাই গ্রহণ করবে। মালিক (র) বলেন, তদ্রুপ আরবি বা বুখতী উট একত্রে মিলিয়ে যাকাত নেওয়া হবে। সংখ্যায় যা অধিক হবে তা হতেই যাকাত গ্রহণ করা হবে। আর সমসংখ্যক হলে এটা যাকাতগ্রহীতার ইখতিয়ারাধীন থাকবে। মালিক (র) বলেন, গরু ও মহিষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত বলে গণ্য। এতে উভয় জাতীয়কে একত্র করে যাকাত নেয়া উচিত। যে জাতীয় পশু সংখ্যায় অধিক হবে যাকাতে তাই গ্রহণ করা হবে। সমসংখ্যক হলে যাকাত গ্রহীতার ইখতিয়ারাধীন থাকবে। গাভী ও মহিষ উভয় দলই যদি নিসাব পরিমাণ থাকে তবে উভয় হতে আলাদা যাকাত লওয়া হবে। মালিক (র) বলেন, নতুনভাবে যদি কেউ পশুর মালিক হয় তবে ঐ দিন পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ধার্য হবে না। তবে পূর্ব হতে যদি নিসাব পরিমাণ পশু (পাঁচটি উট বা ত্রিশটি গাভী বা চল্লিশটি বকরী) তার নিকট থাকে আর পরে সে ক্রয় বা হেবা বা উত্তরাধিকার সূত্রে আর কিছু পশুর মালিক হয় তবে পূর্বস্থিত পশুগুলির সহিত মিশ্রণ করে এগুলো যাকাত আদায় করতে হবে যদিও এগুলোতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত হয়নি। পূর্বস্থিত পশুগুলির যাকাত আদায় করে দেওয়ার পর যদি এগুলো তার মালিকানায় এসে থাকে তবে পূর্বস্থিত পশুগুলোর পুনরায় যখন যাকাত দেবে তখন সেই সঙ্গে এগুলোরও যাকাত দেবে। মালিক (র) বলেন, মাস’আলাটির উপমা হল, কেউ তার মালিকানাধীন রৌপ্যের যাকাত আদায় করে বাকি রৌপ্য দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হতে পণ্যদ্রব্য কিনে নিল। বিক্রেতার উপর উক্ত পণ্যদ্রব্যের যাকাত প্রদান করা ওয়াজিব। কাজেই এই দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকাত দেবে। এই অবস্থায় ক্রয়কারী লোকটি যেন অদ্য তার যাকাত আদায় করল আর বিক্রেতা যেন গতকাল তার যাকাত আদায় করেছে। মালিক (র) বলেন, নিসাব পরিমাণ হতে কম বকরী কারো কাছে ছিল এবং পরে সে আরও কিছু বকরীর মালিক হল, এতে নিসাব পরিমাণের চাইতেও যদি তার বকরীর সংখ্যা অধিক হয়ে যায় তবুও পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ধার্য হবে না। কারণ যাকাতের বেলায় নিসাব পরিমাণ হতে কম দ্রব্য ধর্তব্য বলে গণ্য হয় না। নিসাব পরিমাণ হয়ে যাওয়ার পর ঐ জাতীয় যত পশু তার মালিকানায় আসবে, কম হোক বা বেশি হোক, সবগুলিরই যাকাত দিতে হবে। মালিক (র) বলেন, নিসাব পরিমাণ পশু (উট, গরু, ছাগল) কারো কাছে ছিল, পরে আরও কিছু পশু যদি তার অধিকারে আসে তবে পূর্ণ নিসাবের সহিত এগুলোরও যাকাত প্রদান করতে হবে। আর এ ব্যাপারে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এ মতটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। মালিক (র) বলেন, যে ধরনের পশু যাকাতে ধার্য করা হয়েছে সে ধরনের পশু যদি নিসাবের অধিকারী ব্যক্তির পশুপালে না থাকে, যেমন ধার্য হয়েছে এক বৎসর বয়সের উট আর ঐ ব্যক্তির পালে তা নেই, তবে দুই বৎসর বয়সের উট প্রদান করা হবে। আর দুই, তিন বা চার বৎসর বয়সের যাকাতে ধার্যকৃত উট পশুপালে পাওয়া না গেলে, সে ধরনের ক্রয় করে তা আদায় করা হবে। এটার জন্য মূল্য দ্বারা যাকাত প্রদান করা আমি পছন্দ করি না। মালিক (র) বলেন, সেচ কার্যের বা হালের উট বা মহিষ নিসাব পরিমাণ হলে তাতেও যাকাত ওয়াজিব হবে।
শরীকানা সম্পদের যাকাত
মালিক (র) দুই ব্যক্তির অংশীদারিত্বে যদি কিছু পশু থাকে এবং রাখাল, চারণক্ষেত্র, পানি পান করাবার বালতি, নর জাতীয় পশুও যদি দু’জনেরই থাকে, আর উভয়েই স্ব-স্ব হিস্যার পশুগুলি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়, তবে এই দুই শরীককে খলীতান বলা হয়। আর শনাক্ত করতে সক্ষম না হলে তাদেরকে শরীয়তের পরিভাষায় শরীকান বলা হয়। মালিক (র) বলেন, খলীতানের প্রত্যেকেই নিসাব পরিমাণ পশুর মালিক না হলে তাদের কারো উপর যাকাত ধার্য হবে না। যেমন একজনের যদি চল্লিশটি বা তদুর্ধ বকরী থাকে, আরেকজনের যদি কম হয়, তবে প্রথমজনের উপর যাকাত ওয়াজিব হবে, দ্বিতীয়জনের উপর ওয়াজিব হবে না। আর প্রত্যেক জনেরই যদি নিসাব পরিমাণ থাকে তবে দু’জনের মালিকানাধীন পশুসমূহ একত্র করে যাকাত আদায় করা হবে। সুতরাং একজনের যদি এক হাজার বা তদূর্ধ্ব বকরী হয় আর অপরজনের থাকে চল্লিশ বা তদূর্ধ্ব, তবে উভয় খলীত পরস্পরে হিসাব সম্পন্ন করে স্ব-স্ব হিস্যানুসারে যাকাত প্রদান করবে। মালিক (র) বলেন, উটের মধ্যে খলীত হওয়ার হুকুম বকরীর মধ্যে খলীত হওয়ার মতই। যদি উভয় খলীতের প্রত্যেকের কাছে নিসাব পরিমাণ উট থাকে তবে দু’জনের নিকট হতে একত্রে যাকাত আদায় করা হবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটির কম উটে যাকাত ওয়াজিব হয় না। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, মাঠে বিচরণরত বকরীর সংখ্যা চল্লিশে পৌঁছালে এতে একটি বকরী ধার্য হয়। মালিক (র) বলেন, এই বক্তব্যটি আমার পছন্দনীয়। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, যাকাত ধার্য হওয়ার ভয়ে বিভক্ত সম্পদ একত্র বা একীভূত সম্পদ বিভক্ত করা যাবে না। মালিক (র) বলেন, এই বক্তব্যটির অর্থ হল, পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত দল একত্র করা হবে না, যেমন তিন ব্যক্তির প্রত্যেকেরই চল্লিশটি করে বকরী ছিল। তাতে প্রত্যেকের উপরই একটি করে বকরী যাকাত ধার্য হত। কিন্তু তারা নিজের মালিকানাধীন বকরীসমূহ একত্র করে ফেলল। ফলে এতে সকলের উপর মাত্র একটি বকরী ওয়াজিব হয়। এমনিভাবে একত্রে যে পশুর দল রক্ষিত হয় সেগুলোকে আলাদা করা হবে না। তার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ- দুই খলীতের একশত একটি করে বকরী ছিল। তাদের উপর তিনটি বকরী যাকাত ধার্য হবে। কিন্তু যাকাত আদায়কারী আসলে তারা তাদের বকরীগুলো পৃথক করে নিল। এতে তাদের প্রত্যেকের একটি করে বকরী যাকাত ধার্য হয়। মোদ্দা কথা, যাকাতের ভয়ে পৃথক পৃথক দলকে একত্র করা হবে না, অথবা একীভূত দলকে পৃথক করা হবে না। মালিক (র) বলেন, এ বিষয়ে আমি এটাই শুনেছি।
বকরী গণনার বেলায় বকরীর বাচ্চাও এতে শামিল হবে
সুফইয়ান ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) যাকাত উসুলকারী হিসেবে নিযুক্ত করে তাঁকে এক অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন। বকরী গণনা করার সময় তিনি বাচ্চাগুলোকেও গণনায় শামিল করে নিতেন। এতে এলাকাবাসিগণ তাঁকে বললেন, বাচ্চাগুলোকে আপনি গণনায় শামিল করেন কিন্তু যাকাতের মধ্যে একে গ্রহণ করেন না কেন ? যাই হোক, যাকাত উসুল করে ফিরে আসার পর উমার (রা)-এর কাছে এলাকাবাসীদের প্রশ্নের কথা উল্লেখ করলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, বকরীর বাচ্চা এমনকি যে সমস্ত বাচ্চা রাখালগণকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে হয় সেই ধরনের বাচ্চাগুলোকে পর্যন্ত গণনায় শামিল করা হবে। কিন্তু যাকাতের বেলায় এগুলো আমরা গ্রহণ করি না। খাওয়ার উদ্দেশ্যে পালিত মোটাতাজা বকরী, বাচ্চারা যার দুধের উপর নির্ভরশীল তেমন বাচ্চাওয়ালা বকরী, ছাগল, গর্ভবতী বকরীও আমরা যাকাতে গ্রহণ করি না। এক বৎসর দুই বৎসর বয়সের যা একেবারে বাচ্চা নহে বা একেবারে বৃদ্ধ নহে এমন ধরনের বকরীই আমরা এতে গ্রহণ করে থাকি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, কারো কাছে যদি নিসাব পরিমাণ হতে কম বকরী থাকে আর যাকাত উসুলকারীর আগমনের একদিন পূর্বেও যদি এই বকরীগুলোর বাচ্চা জন্মে এবং এতে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তবে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। কারণ গণনার বেলায় বকরীর বাচ্চাও বকরীর মধ্যে শামিল হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে কারো কাছে যদি নিসাব পরিমাণের কম বকরী হয়, পরে ক্রয় বা হেবা বা ওয়ারিস সূত্রে সে যদি আরও কিছু বকরীর মালিক হয় এবং এতে তার নিকট নিসাব পরিমাণ বকরী হয়ে যায়, তবে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। প্রথমোল্লিখিত মাস’আলাটির উপমা হল কারো কাছে যদি নিসাব পরিমাণ হতে কম মূল্যের সম্পদ থাকে, আর যদি এমন লাভে এটা বিক্রয় করে যাতে নিসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তবে পুঁজির সাথে লাভের উপরও যাকাত ধার্য হবে। কিন্তু ঐ লাভ যদি হেবা বা মিরাস আকারের হয় তবে হেবা বা ওয়ারিস সূত্রে প্রাপ্তির দিন হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত এতে যাকাত ওয়াজিব হবে না। মালিক (রা) বলেন, সুতরাং লাভ যেমন পুঁজি ও সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে তদ্রুপ বকরীর সঙ্গে শামিল বলে গণ্য হবে। মালিক (র) বলেন, অন্য একটি দিক হতে এই পূর্বোল্লিখিত বিষয় দুটির মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতাও রয়েছে। তা হল কারো কাছে যদি এতটুকু পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য থাকে যতটুকুর উপর যাকাত ওয়াজিব হয়, পরে যদি ঐ ব্যক্তি অন্য আরও কোন সম্পদ অর্জন করে তবে পূর্বস্থ নিসাবের সঙ্গে এটা সম্পৃক্ত হবে না এবং যেদিন হতে এটা অর্জিত হয়েছে সেদিন হতে পূর্ণ এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাতে যাকাত ধার্য হবে না। পক্ষান্তরে কারো নিকট যদি উট, গাভী ও বকরী ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ পশু থাকে এবং পরে যদি আরও কিছু পশু তার অধিকারে আসে তবে পূর্বস্থ নিসাবের সমজাতীয় পশুর সঙ্গে এগুলোর উপরও যাকাত আদায় করতে হবে। মালিক (র) বলেন, এ মাস’আলাটির বিষয়ে আমি যা শুনেছি উক্ত ভাষ্যটিই তন্মধ্যে অধিক উত্তম।
দুই বৎসরের যাকাত একত্র হয়ে পড়লে তা আদায়ের পন্থা
মালিক (র) কারো নিকট একশত উট ছিল। যাকাত উসুলকারী তার কাছে এল না, এমনকি দ্বিতীয় বৎসরও অতিক্রান্ত হয়ে গেল। আর এই দিকে মাত্র পাঁচটি উট ছাড়া তার বাকি সমস্ত উট মারা গেল। এই অবস্থায় যাকাত উসুলকারী তার কাছ থেকে পাঁচটি উটের দুই বৎসরের যাকাত প্রতি বৎসরের একটি করে বকরী দুই বৎসরের দুটি বকরী আদায় করবে। কারণ যাকাত আদায় করার দিন যে সম্পদ মালিকের নিকট অবশিষ্ট থাকে কেবল এরই যাকাত করতে হয়। সুতরাং তার মালিকানাধীন পশু যদি মারা যায় বা তা বৃদ্ধি পায় তবে সে অনুসারেই তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। যদি কয়েক বৎসরের যাকাত বকেয়া হয়ে যায় তবে যাকাত উসুলকারী ঐ ব্যক্তির নিকট মওজুদ পশুগুলির যাকাত উসুল করবে। যদি সমস্ত পশু বিনষ্ট হয়ে যায় বা বিনষ্ট হওয়ার পর যা অবশিষ্ট রইল তা যদি নিসাব পরিমাণ না হয় তবে আর তাতে যাকাত ধার্য হবে না। এবং বিগত বৎসরগুলোর বকেয়াও তাকে আদায় করতে হবে না।
যাকাত উসুল করতে মানুষকে অসুবিধায় ফেলা নিষেধ
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর সম্মুখে একবার উসুলকৃত যাকাতের বকরী পেশ করা হল। তিনি এর মধ্যে বড় স্তনওয়ালা একটি দুধাল বকরী দেখতে পেয়ে বললেন, এটি কোথা হতে এল ? জবাবে বলা হল, এটিও যাকাতের। উমার (রা) বললেন, এর মালিক নিশ্চয়ই সন্তুষ্টচিত্তে এটা দেয়নি। মানুষকে তোমরা অসুবিধায় ফেলবে না। সর্বোত্তম জিনিস কখনও যাকাতে উসুল করবে না, আর মানুষের রিযিক ছিনিয়ে নেওয়া হতে বিরত থাক। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ২৬و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ أَنَّهُ قَالَ أَخْبَرَنِي رَجُلَانِ مِنْ أَشْجَعَ أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ مَسْلَمَةَ الْأَنْصَارِيَّ كَانَ يَأْتِيهِمْ مُصَدِّقًا فَيَقُولُ لِرَبِّ الْمَالِ أَخْرِجْ إِلَيَّ صَدَقَةَ مَالِكَ فَلَا يَقُودُ إِلَيْهِ شَاةً فِيهَا وَفَاءٌ مِنْ حَقِّهِ إِلَّا قَبِلَهَا ৯১৭قَالَ مَالِك السُّنَّةُ عِنْدَنَا وَالَّذِي أَدْرَكْتُ عَلَيْهِ أَهْلَ الْعِلْمِ بِبَلَدِنَا أَنَّهُ لَا يُضَيَّقُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ فِي زَكَاتِهِمْ وَأَنْ يُقْبَلَ مِنْهُمْ مَا دَفَعُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ. মুহাম্ম্দ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাব্বান (র) বলেন, আশজা’ কবীলার দুই ব্যক্তি আমাকে বলেছেন মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা আনসারী (রা) তাঁদের কবীলায় যাকাত উসুল করতে আসতেন এবং যাদের উপর যাকাত ফরয তাদেরকে নিজ নিজ যাকাত হাজির করতে বলতেন। যাকাত আদায়ে উপযুক্ত কোন বকরী হলে তাই তিনি গ্রহণ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে এটাই সুন্নত। আমাদের মদীনার আলেমগণকে এর উপরই আমল করতে দেখেছি যে, যাকাত উসুলের বেলায় মানুষের উপর কোনরূপ অসুবিধার সৃষ্টি করা উচিত নয়, বরং যাকাত প্রদানকারীগণ যা পেশ করে তা যাকাতে লওয়ার মত হলেই কবুল করে নেওয়া উচিত।
কোন কোন ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয
আতা ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, পাঁচ ধরনের ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়। উক্ত পাঁচ ব্যক্তি হলেন, (এক) আল্লাহ্র পথে যুদ্ধরত মুজাহিদ, (দুই) সরকার কর্তৃক নিযুক্ত যাকাত উসুলকারী কর্মচারী, (তিন) ঋণগ্রস্ত, (চার) যে ব্যক্তি এটা দরিদ্র ব্যক্তি হতে খরিদ করে নেয়, (পাঁচ) প্রতিবেশী কোন দরিদ্র ব্যক্তি যদি তাকে এটা হাদিয়া হিসেবে প্রদান করে তবে সে ব্যক্তি ধনী হলেও এটা গ্রহণ করা তার জন্য যায়েয হবে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৬৩৫, ইবনু মাজাহ ১৮৪১, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে’ ৭২৫০] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে যাকাতের মাল বণ্টনের বিষয়টি ইসলামী সরকারের বিবেচনার উপর নির্ভরশীল। যারা বেশি অভাবী বা সংখ্যায় বেশি সরকার যতদিন প্রয়োজন মনে করবেন তাদেরকে দিবেন। কিছুদিন পর অন্য কোন ধরনের লোক বেশি অভাবগ্রস্থ বা সংখ্যায় বেশি হলে তাদেরকেও দিতে পারেন। মোট কথা, এ বিষয়টি হচ্ছে অভাব ও সংখ্যার উপর নির্ভরশীল। আস্থাভাজন আলিমগণের নিকট হতে আমি উল্লিখিত বক্তব্যই শুনতে পেয়েছি।
যথাযথভাবে যাকাত আদায় করা এবং এ বিষয়ে কঠোরতা প্রদর্শন করা
মালিক (র) আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) বলেছেন, যাকাতের বেলায় উট বাঁধার দড়িটি দিতেও যদি কেউ অস্বীকৃতি জানায় তবে তার বিরুদ্ধে আমি লড়াই করব। [১] (বুখারী ১৪০০, মুসলিম ২০) যায়দ ইবনু আসলাম (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) একবার কিছু দুগ্ধ পান করেন। এটা তাঁর কাছে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং ভাল বলে মনে হল। তিনি তখন যে ব্যক্তি দুধ পান করেছিল তাকে বললেন, এ দুধ কোথা হতে এনেছ ? সে বলল, আমি একটি জলাশয়ে গিয়েছিলাম, সেখানে যাকাতের কিছু পশু পানি পান করতেছিল। উপস্থিত লোকেরা তাদেরকে দুগ্ধ দোহন করে আমাকেও কিছু দিল। আমি আমার পানপাত্রে উহা সংরক্ষণ করে রেখে দিয়েছিলাম। আপনি যা পান করলেন ইহা তাই। উমার (রা) তখন গলদেশে আঙুল প্রবেশপূর্বক উহা বমি করে ফেলে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত কোন একটি ফরযকে যদি কেউ অস্বীকার করে আর মুসলমানগণ যদি তার দ্বারা এটা আদায় করাতে না পারে তবে আদায় না করা পর্যন্ত তার সঙ্গে জিহাদ করা কর্তব্য। মালিক (র) উমার ইবনু আবদুল আযীয (র)-এর জনৈক কর্মচারী তাঁকে লিখে জানাল যে, এক ব্যক্তি স্বীয় সম্পদের যাকাত আদায় করতে অস্বীকার করে। উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) তখন তাকে বললেন, ছেড়ে দাও। অন্যান্য মুসলিম ব্যক্তির সাথে তার যাকাত নিও না। যাকাত প্রদানে অনিচ্ছুক এ ব্যক্তি এটা জানতে পেরে অত্যন্ত দুঃখিত হল এবং তার সম্পদের যাকাত প্রদান করার জন্য ঐ কর্মচারীর কাছে নিয়ে এল। তখন ঐ কর্মচারী এই বিষয়ে ফয়সালা জানতে চেয়ে পুনরায় উমার ইবনু আবদুল আযীয (র)-এর কাছে পত্র লিখলে তিনি উত্তর দিলেন তার যাকাত গ্রহণ করে নাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
খেজুর, আঙ্গুর: যেসব ফল অনুমান করে বিক্রয় করা হয় সেসব ফলের যাকাত
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) এবং বুসর ইবনু সাঈদ (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে সমস্ত যমীনে বৃষ্টি বা ঝর্ণার পানি সিঞ্চিত হয় বা মূলস্থ রসই যথেষ্ট হয়, সেচের প্রয়োজন পড়ে না, সে সমস্ত যমীনে উৎপন্ন ফসলের উশর বা এক-দশমাংশ, আর সেচ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে সমস্ত যমীন চাষ করা হয়, সে যমীনে উৎপন্ন ফসলের নিসফে উশর বা এক-বিংশতিতমাংশ (১/২০) হারে যাকাত দিতে হয়। (সহীহ, বুখারী ১৪৮৩, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে এবং তথা সন্দেহযুক্ত রাবী রয়েছে) ইবনু শিহাব (র) খেজুরের যাকাতে জো’রুর, মুসরানুলফার ও আজক ইবনু খুবায়ক (এক ধরনের অতি নিকৃষ্ট খেজুর) গ্রহণ করা যাবে না। তিনি বললেন, এটা বকরীর যাকাতের মত। নিকৃষ্ট ধরনের বকরী গণনায় শামিল হয় বটে কিন্তু যাকাতে গ্রহণ করা যায় না। এই ক্ষেত্রেও নিকৃষ্ট ধরনের খেজুর পরিমাণের বেলায় শামিল করা হবে বটে কিন্তু যাকাত গ্রহণ করা যাবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এটা বকরীর যাকাত সদৃশ। বকরীর বাচ্চা গণনায় শামিল হয় কিন্তু যাকাতে গ্রহণ করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে কোন দ্রব্য বেশি ভাল হওয়ার কারণেও যাকাতে গ্রহণ করা যায় না। যেমন বুরদী (উত্তম) জাতীয় খেজুর। মোট কথা, বেশি ভাল বা অতি নিকৃষ্ট উভয় ধরনের দ্রব্যই যাকাতে গ্রহণ করা যায় না, বরং মধ্যম ধরনের জিনিসই কেবল গ্রহণ করা যায়। মালিক (র) বলেন, খেজুর ও আঙ্গুর ব্যতীত অন্য কোন ফলের বেলায় খারস বা বৃক্ষস্থ ফলের পরিমাণ অনুমান করে তদানুযায়ী যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে না। খেজুর ও আঙ্গুর প্রায় পরিপক্ব হয়ে উঠলে এবং বিক্রয় করা যায় এমন অবস্থায় পৌঁছলে তাতে অনুমান করা যায়, কারণ খেজুর ও আঙ্গুর উভয় ধরনের ফল কাঁচা অশুষ্ক অবস্থায়ও খাওয়া যায়। সুতরাং পাকা ও শুষ্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হলে এতে মানুষের অসুবিধার সৃষ্টি হবে। অতএব সাধারণ মানুষের সুবিধার প্রতি লক্ষ করে বৃক্ষস্থ খেজুর ও আঙ্গুরের পরিমাণ অনুমান করার পর মালিককে তার ফলের অধিকার সহ ছেড়ে দেওয়া হবে। যেভাবে মনে করে সে তা ভোগ করবে এবং পরে পূর্বের অনুমানকৃত পরিমাণানুসারে যাকাত প্রদান করবে। মালিক (র) বলেন, যে সমস্ত ফল কাঁচা ভক্ষণ হয় না, বরং কর্তনের পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভক্ষণ করা হয়, যেমন- ধান, গম ইত্যাদি যাবতীয় শস্যের বেলায় ক্ষেতে শস্য রেখে ক্ষেত্রস্থ শস্যের পরিমাণ অনুমান করে নির্ণয় করার পর যাকাত নির্ধারণ করা যাবে না। শস্য কর্তনের পর মাড়ানো এবং পরিষ্কার করা হলে তাতে যাকাত আদায় করতে হয়। যাকাত ধার্য করার মত না হওয়া পর্যন্ত তা মালিকের হাতে আমানত হিসেবে থাকে। মালিক (র) বলেন, উক্ত বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাস’আলা হল, ফল প্রায় পরিপক্ব অবস্থায় যখন বিক্রয়ের উপযুক্ত হবে তখন তাতে অনুমান করে বৃক্ষস্থ ফলের পরিমাণ নির্ণয় করা হবে এবং কর্তনের পর উহার যাকাতের পরিমাণ অনুসারে বিশুদ্ধ খেজুর নেয়া হবে। অনুমান করে পরিমাণ নির্ধারণের পর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যদি বৃক্ষস্থ সমস্ত খেজুর বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে আর তাতে যাকাত ধার্য হবে না। বিনষ্ট হওয়ার পরও যদি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যবহৃত ছা’য়ে পাঁচ অছক (ষাট ছা’) পরিমাণ খেজুর অবশিষ্ট থাকে তবে এতে যাকাত ধার্য হবে, আর যতটুকু পরিমাণ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে তাতে যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, আঙ্গুরের বেলায়ও উক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে। মালিক (র) বলেন, বিভিন্ন স্থানে যদি কারো জায়গীর বা অংশ থাকে আর সবগুলোকে একত্র করলে যাকাত পরিমাণ হয় তবে আলাদা আলাদাভাবে যাকাত পরিমাণ না হলেও তাতে যাকাত ধার্য করা হবে।
শস্য ও যায়তুন তৈলের যাকাত
মালিক (র) যায়তুনের যাকাত সম্পর্কে ইবনু শিহাব (র)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এতে উশর বা উৎপন্ন শস্যের এক-দশমাংশ যাকাত ধার্য হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যায়তুন দানা পিষানোর পর পাঁচ অছক পরিমাণ তৈল হলে তাতে ‘উশর’ হবে। পরিমাণে পাঁচ অছক হতে কম হলে তাতে আর যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, যায়তুনের (যাকাতের) হুকুম খেজুরে প্রযোজ্য হুকুমের মতই। বৃষ্টি, ঝর্ণা ও শিকড় দ্বারা সংগৃহীত পানি দ্বারা উৎপন্ন যায়তুন শস্যে ‘উশর’ বা এক-দশমাংশ, আর সেচ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শস্যে ‘নিসফে উশর’ বা এক-বিংশতিতমাংশ যাকাত ধার্য হবে। যায়তুনের অনুমান করে বৃক্ষস্থ শস্যের পরিমাণ নির্ধারণ করে ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, যে সমস্ত শস্য মানুষ সংরক্ষণ করে এবং ভক্ষণ করে, সে সমস্ত শস্য যদি বৃষ্টি, ঝর্ণা বা কেবল মূলের সাহায্যে সংগৃহীত পানি দ্বারা উৎপন্ন হয়, তবে পাঁচ অছক পরিমাণ হইলে তাতে উশর বা এক-দশমাংশ, আর সেচ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হলে এক-বিংশতিতমাংশ যাকাত ধার্য হবে; পাঁচ অছক হতে বেশি হলে বর্ধিত হার অনুপাতে তার যাকাত প্রদান করতে হবে। মালিক (র) বলেন, গম, যব, ভুট্টা, বুট, ধান মসুরি, মাষ, সিম, তিল ইত্যাদি শস্য যা ভোজ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তার সব কিছুতেই শস্য-কর্তন ও মাড়াইয়ের পর যাকাত ধার্য হয়ে থাকে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে শস্য মালিকের ভাষ্য সত্য বলে বিবেচ্য হবে এবং মালিক যাই প্রদান করে তাই যাকাতে গ্রহণ করা হবে। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যায়তুন তৈলের যাকাত (উশর) পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা হতে আদায় করা হবে, না ব্যয়ের পূর্বের সর্বমোট পরিমাণ হতে আদায় করা হবে ? তিনি তখন উত্তরে বললেন, ব্যয়ের দিকে দৃষ্টি দেয়া হবে না। খাদ্য-শস্যের বেলায় যেমন মালিককে পরিমাণ জিজ্ঞেস করা হয়, এখানেও তদ্রুপ মালিককে উৎপন্ন যায়তুনের মোট পরিমাণ জিজ্ঞেস করে নেওয়া হবে এবং তাকে সত্যবাদী বলে গণ্য করা হবে। মোট কথা, পাঁচ অছক পরিমাণ যায়তুন উৎপন্ন হলে যায়তুন দানা পিষার পর তা হতে ‘উশর’ বা এক-দশমাংশ যাকাত উসুল করা হবে, আর পাঁচ অছক পরিমাণ না হলে তাাতে যাকাত ধার্য হবে না। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, শস্য পক্ব ও থোড় শুষ্ক হওয়ার পর কেউ যদি তা বিক্রয় করে তবে বিক্রেতার উপর যাকাত ধার্য হবে, ক্রেতার উপর ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, শস্য, থোড় শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত এবং পানির প্রয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন [১] : وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে মালিক (র) বলেছেন, এখানে হক অর্থ হল উহার যাকাত প্রদান করে দেয়া। বিজ্ঞ আলিমগণকে আমি উক্ত অনুরূপ তফসীর করতে শুনেছি। মালিক (র) বলেন, ‘বদয়িসালাহ্’ বা পরিপক্ব হওয়ার পূবেই যদি কেউ স্বীয় বাগান বা শস্যক্ষেত্রের মূল বৃক্ষ বিক্রয় করে দেয় তবে উহার যাকাত ক্রেতার উপর ধার্য হবে। আর পরিপক্ব হওয়ার পর যদি বিক্রয় করে তবে ঐ শস্য বা ফলের যাকাত বিক্রেতার উপর ধার্য হবে। তবে বিক্রয়ের সময় যদি বিক্রেতা শর্ত করে যে, যাকাত ক্রেতাকে আদায় করতে হবে তবে তা ক্রেতার উপরই ধার্য হবে।
যে ধরনের ফলে যাকাত ওয়াজিব হয় না
মালিক (র) কারো যদি চার অছক পরিমাণ খেজুর, চার অছক পরিমাণ কিসমিস, চার অছক পরিমাণ গম, চার অছক পরিমাণ কিতনিয়্যা বা ডাল জাতীয় শস্য উৎপন্ন হয় তবে এগুলোকে একত্র করা হবে না এবং একটিও নিসাব পরিমাণ (পাঁচ অছক) না হওয়ায় ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত ধার্য হবে না। হ্যাঁ, কোন একটি যদি নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছা’-এর মাপে পাঁচ অছকই হত, তবে ঐটিতে শুধু যাকাত ধার্য হত। রসূলুল্লাহ (স.) বলেন, পাঁচ অছকের কম পরিমাণ খেজুরের যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, এক জাতীয় বস্তু হলে নাম বা রকমের তারতম্য হলেও তাকে একই জিনিস বলে ধরা হবে এবং সবগুলোকে একত্র করার পর নিসাব পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ধার্য হবে, আর নিসাব পরিমাণ না হলে তাতে যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, তেমনিভাবে গম জাতীয় সকল বস্তু, যেমন ময়দা, যব, ছাতু সবগুলোকে একই শ্রেণীভূক্ত বলে গণ্য করা হবে। শস্য কর্তনের পর সবগুলো একত্র করে নিসাব পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ধার্য করা হবে, আর নিসাব পরিমাণ না হলে যাকাত ধার্য করা হবে না। মালিক (র) বলেন, তেমনিভাবে লাল বা কাল সকল কিসমিস একই জাতিতুক্ত বলে গণ্য করা হবে। কারো বাগানে পাঁচ অছক পরিমাণ উৎপন্ন হলে তাতে যাকাত ধার্য হবে আর উক্ত পরিমাণ হতে কম উৎপন্ন হলে যাকাত ধার্য হবে না। মালিক (র) বলেন, নাম বা রকমের তারমত্য সত্ত্বেও খেজুর, কিসমিসের মত সকল প্রকার কিত্নিয়্যা বা ডাল জাতীয় শস্যকেও একই জাতিভুক্ত বলে গণ্য করা হবে। (যে সমস্ত শস্যদানা সরাসরি পাক করে ভক্ষণ করা হয়, তাদেরকে কিত্ন বলা হয়, যেমন চানাবুট, মাষ, সিম ইত্যাদি) এদের প্রজাতিসমূহ ভিন্ন ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও একত্র করে পাঁচ অছক পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ধার্য হবে। মালিক (র) বলেন, নবতী খৃস্টানদের কর নেয়ার সময় উমার (রা) কিত্নিয়্যা এবং গমের মধ্যে তারতম্য করেছেন। সকল প্রকার কিত্নিয়্যাকে এক শ্রেণীভুক্ত বলে তিনি গণ্য করেছিলেন এবং তাতে উশর বা এক-দশমাংশ কর ধার্য করেছিলেন। অন্যপক্ষে গম ও কিসমিসের উপর এক-বিংশতিতমাংশ কর গ্রহণ করেছিলেন। মালিক (র) বলেন, কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন কিত্নিয়্যা বা ডাল জাতীয় সকল বস্তুকে অভিন্ন জাতি বলে গণ্য করা হয়েছে অথচ এক সের মাষকলাইয়ের সঙ্গে দুই সের মসুরির বিনিময় জায়েয আছে। একই জাতীয় যদি হত তবে তা জায়েয হত না। কারণ তা সুদের পর্যায়ে পড়ে যেত। যেমন এক সের গমের বিনিময়ে দুই সের গম গ্রহণ করা যায় না। কারণ একই জাতিভুক্ত হওয়ায় তা সুদের অন্ততুক্ত হবে। উক্ত প্রশ্নের জবাবে বলা যেতে পারে যে, স্বর্ণ এবং রৌপ্য যাকাতের বেলায় একত্র করে ধরা যায় অথচ এক দীনার বা স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে বেশি সংখ্যক রৌপ্য মুদ্রা গ্রহণ করা জায়েয। তা সুদ হয় না। এাতে বোঝা গেল, জাতি নির্ণয়ের বেলায় যাকাত ও সুদের একই হুকুম নয়। মালিক (র) বলেন, কিছু পরিমাণ খেজুর বৃক্ষ যদি দুই ব্যক্তির শরীকানাভুক্ত থাকে আর তাতে আট অছক পরিমাণ (অর্থাৎ প্রত্যেকের নিসাব পরিমাণ হতে কম খেজুর) উৎপন্ন হয় তবে তাতে যাকাত ধার্য হবে না। একজনের হিস্যায় যদি পাঁচ অছক পরিমাণ (অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ) উৎপন্ন হয় আর অন্যজনের হিস্যায় চার অছক পরিমাণ অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ হতে কম উৎপন্ন হয় তবে যার নিসাব পরিমাণ হয়েছে তার উপরই শুধু যাকাত ধার্য হবে। এমনভাবে সকল প্রকার শস্যক্ষেত্রের শরীকানার বেলায় উক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে। নিসাব পরিমাণের কম হলে যাকাত ধার্য হবে না। আর যার হিস্যায় নিসাব পরিমাণ হবে তার উপরই কেবল যাকাত ধার্য হবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট স্বীকৃত পদ্ধতি হল, শস্যের যাকাত আদায় করার পর মালিক যদি ঐ শস্য কয়েক বৎসর গুদামজাত করে রাখে এবং পরে তা বিক্রয় করে তবে বিক্রয় করার দিন হতে এক বৎসর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত ঐ বিক্রয়লব্ধ টাকার উপর কোন যাকাত ধার্য হবে না। যদি ঐ শস্য হেবা, মৌরসী বা মালিকানাস্বত্বে পেয়ে থাকে তখনই কেবল উক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে। কারো নিকট খোরাকী বাবদ কিছু শস্য বা তৈজসপত্র কয়েক বৎসর পর্যন্ত মওজুদ থাকে, পরে তা বিক্রয় করে দেয়, তবে তাতে যেমন যাকাত ধার্য হয় না, এখানেও তদ্রƒপ যাকাত ধার্য হয় না। উক্ত শস্য যদি ব্যবসায়ের হয়ে থাকে আর উক্ত শস্যের যাকাত আদায় করার এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পর উহা বিক্রয় করে, তবে বিক্রয়ের দিনই যাকাত ধার্য হবে।
যে সকল ফল ও রবিশস্যে যাকাত ধার্য হয় না
মালিক (র) বলেন, এই বিষয়ে আমাদের নিকট সর্বসম্মত সুন্নত এবং আহলে ইলমদের কাছে যা শুনেছি তা এই, ফল-ফলাড়ি যথা পীচ, ডুমুর অথবা তদ্রুপ অন্যান্য ফল অথবা এগুলোর মত না হলেও যা ফল বলে গণ্য, এদের উপর যাকাত ধার্য হয় না। একইভাবে শাক-সবজি, তরিতরকারি ইত্যাদির উপর যাকাত ধার্য হয় না এবং এগুলোর বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপরও যাকাত নেই। তবে বিক্রয়লব্ধ অর্থ মালিকের হাতে আসার পর তার নিকট এক বৎসর থাকলে তার উপর যাকাত ধার্য হবে।
দাস-দাসী, ঘোড়া ও মধুর যাকাত
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমান ব্যক্তির দাস-দাসী এবং ঘোড়ার যাকাত ধার্য হয় না। (বুখারী ১৪৬৪, মুসলিম ৯৮২) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) সিরিয়াবাসিগণ আবূ উবায়দা ইবনু জাররাহ (রা)-এর নিকট তাদের ঘোড়া বা দাস-দাসীদের যাকাত নেওয়ার কথা বললে তিনি তাগ্রহণ না করে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে জানালেন। উমার (রা)-ও তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালেন। পরে তারা আবূ উবায়দা (রা)-এর নিকট তাদের ঘোড়া ও দাস-দাসীদের যাকাত গ্রহণ করতে পুনরায় অনুরোধ জানালে তিনি আবার উমার (রা)-এর নিকট এই সম্পর্কে লিখে জানালেন। উমার (রা) তাঁকে উত্তরে লিখলেন, স্বেচ্ছায় যদি তারা এগুলোর যাকাত দিতে চায় তবে তা গ্রহণ করুন এবং তা দরিদ্র ও দাস-দাসীদের মধ্যে বণ্টন করে দিন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বক্র ইবনু হায্ম (র) মীনায় অবস্থানকালে আমার পিতা আবূ বক্র ইবনু হাযমের কাছে উমার ইবনু আবদুল আযীয (র)-এর একটি পত্র এসেছিল। এর মর্ম ছিল মধু এবং ঘোড়ার যাকাত আপনি গ্রহণ করবেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু দীনার (র) আমি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে ঘোড়ার যাকাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ঘোড়ায়ও আবার যাকাত হয় নাকি ? (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
আহলে কিতাবের উপর ধার্য জিযইয়া
ইবনু শিহাব (র) আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাহরাইনের অগ্নিপূজকদের উপর, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) পারস্যের অগ্নিপূজকদের উপর এবং উসমান ইবনু আফফান (রা) বর্বর মুশরিকদের উপর জিযইয়া ধার্য করেছিলেন। (সহীহ, বুখারী ৩১৫৬, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মুহাম্মদ বাকির (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) অগ্নি উপাসকদের জিযইয়ার কথা আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, বুঝতে পারছি না, এদের ব্যাপারে কি করা যায়। এ সময় আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি যে, অগ্নি-উপাসকদের সাথে তোমরা কিতাবীদের মত ব্যবহার করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আসলাম (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) অমুসলিম স্বর্ণ মালিকদের উপর বাৎসরিক চার দীনার এবং রৌপ্য-মালিকদের উপর বাৎসরিক দশ দিরহাম জিযইয়া ধার্য করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত মুসলিমদের খাদ্য প্রদান এবং মুসাফিরদের তিনদিন পর্যন্ত মেহমানদারী করাও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আসলাম (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে একবার জানালাম, সরকারী উটসমূহের মধ্যে একটা অন্ধ উটও রয়েছে। উমার (রা) বললেন, অভাবী কাউকেও দিয়ে দিও। এটা হতে সে উপকার লাভ করতে পারবে। আমি বললাম, উটটি তো অন্ধ। তিনি বললেন, একে উটের দলে বেঁধে দিবে। এদের সাথে চলাফেরা করবে। আমি বললাম, কেমন করে এটা ঘাস খাবে ? তিনি বললেন, এটা জিযইয়া না যাকাতের? আমি বললাম, জিযইয়ার। তিনি বললেন, তুমি এটাকে যবেহ করার ইচ্ছা করেছ নাকি? আমি বললাম, না, এতে জিযইয়া চিহ্ন বিদ্যমান। শেষে উমার (রা)-এর নির্দেশে ঐ উটকে নাহ্র (যাবেহ) করা হল। উমার (রা)-এর নিকট নয়টি পেয়ালা ছিল। ফল বা ভাল কোন জিনিস তাঁর কাছে এলে ঐ পেয়ালাগুলো ভরে উম্মুল মু’মিনীনদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। সকলের শেষে তদীয় কন্যা উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা)-এর নিকট পাঠাতেন। কম পড়লে হাফসা (রা)-এর হিস্যাতেই পড়ত। যা হোক, উক্ত অন্ধ উটটিকে ‘নাহর’ করার পর প্রথম উল্লেখিত পেয়ালাসমূহ ভরে উম্মুল মু’মিনীনদের কাছে পাঠানো হল। বাকি যা রইল তা রান্না করে মুহাজির ও আনসারদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ালেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (র) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, অমুসলিম জিযইয়া প্রদানকারীদের নিকট হতে জিযইয়া হিসাবে পশু আদায় করা হবে না। তবে মূল্য ধার্য করে নগদ অর্থের বদলে পশু নিয়া যেতে পারে। মালিক (র) আমি জানতে পেরেছি যে, উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) তাঁর কর্মচারীদের কাছে একই মর্মে চিঠি লিখেছেন যে, জিযইয়া প্রদানকারীদের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে তাদের জিযইয়া মওকুফ হয়ে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, প্রচলিত সুন্নত হল, অমুসলিম আহলে কিতাব নারী ও শিশুদের উপর জিযইয়া ধার্য হবে না। যুবকদের নিকট হতেই কেবল জিযইয়া আদায় করা হবে। মালিক (র) বললেন, যিম্মী ও অগ্নিপূজকদের খেজুর বা অঙ্গুরের বাগান, কৃষিক্ষেত্র এবং পশুসমূহ হতে যাকাত গ্রহণ করা হবে না। কারণ সম্পদ পবিত্রকরণ উদ্দেশ্যে এবং মুসলিম দরিদ্র ব্যক্তিগণকে প্রদানের জন্য যাকাত শুধু মুসলমানদের উপর ধার্য হয়। জিযইয়া অমুসলিম বাসিন্দাদেরকে অধঃস্থ দেখাবার জন্য কেবল তাদের উপর ধার্য করা হয়েছে। সুতরাং যতদিন তারা সন্ধিকৃত এলাকায় বসবাস করবে, তাদের উপর জিযইয়া ব্যতীত আর কিছুই ধার্য হবে না। তবে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসা-যাওয়া করলে তাদের ব্যবসায়ের মাল হতে এক-দশমাংশ আদায় করা হবে। কারণ স্বীয় অঞ্চলে বসবাস করার এবং শত্র“ হতে রক্ষা করার ভিত্তিতেই তাদের উপর জিযইয়া ধার্য করা হয়েছিল। সুতরাং স্বীয় অঞ্চলের বাহিরে গিয়ে ব্যবসায়ে লিপ্ত হলে ব্যবসায়ের মাল হতে এক-দশমাংশ আদায় করা হবে। যেমন মিসরে বসবাসকারী অমুসলিম বাসিন্দা সিরিয়ায়, সিরিয়ার যিম্মী ইরাকে, ইরাকের যিম্মী অধিবাসী মদীনায় ব্যবসা করতে গেলে তার ব্যবসায়ের মালে এক-দশমাংশ কর ধার্য করা হবে। আহলে কিতাব এবং অগ্নি-উপাসক (অর্থাৎ অমুসলিম যিম্মী) বাসিন্দাদের পশুপাল, ফল এবং কৃষিক্ষেত্রে কোনরূপ যাকাত ধার্য করা যাবে না। এমনিভাবে অমুসলিম যিম্মী নাগরিকদেরকে তাদের পৈতৃক ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকতে দেওয়া হবে এবং তাদের ধর্মীয় বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কিন্তু দারুল ইসলামে যতবার তারা ব্যবসা করতে আসবে তাদের নিকট হতে ততবার এক-দশমাংশ কর আদায় করা হবে। অর্থাৎ বাণিজ্য উদ্দেশ্যে বৎসরে কয়েকবার আসলে প্রত্যেকবারই উক্ত কর দিবে। কারণ তাদের ব্যবসায়ের মধ্যে কর ধার্য করা যাবে না বলে কোনরূপ চুক্তি তাদের সাথে হয়নি। আমাদের শহরবাসী (মদীনাবাসী) আলিমগণকে উক্তরূপ আমল করতে আমি দেখেছি।
যিম্মী বাসিন্দাদের নিকট হতে উশর গ্রহণ করা
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) নবতী অমুসলিম বাসিন্দাদের নিকট হতে গম ও তৈলে এক-বিংশতিতমাংশ কর গ্রহণ করতেন। উদ্দেশ্য ছিল, মদীনায় যেন এই ধরনের জিনিসের আমদানি বেশি হয়। আর ডাল জাতীয় দ্রব্যে তাদের নিকট হতে এক-দশমাংশ কর গ্রহণ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর খিলাফতকালে আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাসউদ (রা)-এর সাথে আমিও মদীনার বাজারে কর আদায়কারী কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম। আমরা তখন নবতী অমুসলিম বাসিন্দাদের নিকট হতে এক-দশমাংশ কর আদায় করতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী নবতী অমুসলিম বাসিন্দাদের নিকট হতে উমার (রা) কিসের ভিত্তিতে এক-দশমাংশ কর আদায় করতেন, এ সম্পর্কে মালিক (র) একবার ইবনু শিহাব (র)-এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন জাহিলী যুগেও এদের নিকট হতে এক-দশমাংশ কর আদায় করা হত। উমার (রা) পরে এটাই বহাল রাখেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
সাদকাদাতা কর্তৃক সাদকা হিসেবে আদায়কৃত বস্তু ক্রয় করা বা ফিরিয়ে আনা
যায়দ ইবনু আসলাম (র) যায়দ ইবনু আসলাম (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাস্তায় কাজে লাগাবার জন্য আমি একবার একটা ভাল ধরনের ঘোড়া এক ব্যক্তিকে দান করেছিলাম। কিন্তু সে ব্যক্তি ঘোড়াটিকে অযতেœ একেবারে কাহিল বানিয়ে ফেলেছিল। সে হয় এটা সস্তাদরে বিক্রয় করে দিবে ধারণা করে আমি তা ক্রয় করতে মনস্থ করলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এক দিরহামের বিনিময়েও যদি তোমাকে দেয় তবুও এটা ক্রয় করো না। কারণ সাদকা করে তা ফিরিয়ে আনা বমি করে পুনরায় কুকুরের মত ভক্ষণ করার মত। (বুখারী ১৪৯০, মুসলিম ১৬২০) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) আল্লাহ্র রাস্তায় একটি ঘোড়া দান করেছেন, পরে তা ক্রয় করতে চেষ্টা করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, এটা ক্রয় করো না, তোমার সাদকা তুমি ফেরত নিও না। (বুখারী ২৯৭১, মুসলিম ১৬২১) ইয়াহ্ইয়া (রা) বলেন, মালিক (র)-কে একবার জিজ্ঞেস করা হল, যাকাত আদায়কৃত বস্তু যাকাত গ্রহণকারী ব্যতীত অন্য কাউকেও বিক্রয় করতে দেখা গেলে যাকাতদাতা তা ক্রয় করতে পারবে কি ? মালিক (র) উত্তরে বললেন, আমার মতে তা ক্রয় না করাই উত্তম।
যাদের উপর সাদকা-ই ফিতর ওয়াজিব
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (র) তাঁর ওয়াদিউল-কুরা ও খায়বার নামক স্থানে অবস্থানরত দাসদেরও ফিতরা আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এ বিষয়ে আমি সর্বোত্তম যা শুনেছি তা হল, যাদের খোরপোশ প্রদান করা জরুরী তাদের পক্ষ হতেও ফিতরা আদায় করতে হবে। মুকাতাব গোলাম, মুদাব্বার গোলাম এবং দাস, তারা উপস্থিত থাকুক বা অনুপস্থিত থাকুক, ব্যবসার উদ্দেশ্যে হোক বা না হোক, সকলের পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করতে হবে। তবে শর্ত হল মুসলমান হতে হবে। আর অমুসলিম গোলামের ফিতরা আদায় করতে হয় না। [১] মালিক (র) বলেন, গোলাম পালিয়ে গেলে সে কোথায় আছে তা মালিকের জানা থাকলে অথবা জানা না থাকলে এবং গোলামের অনুপস্থিতকাল মাত্র কিছুদিনের মধ্যে সীমিত হলে এবং তার বেঁচে থাকা ও ফিরে আসার ভরসা থাকলে মালিককে তার পক্ষে সাদকা-ই-ফিতর দিতে হবে। যদি সে পলাতক অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকে এবং তাকে ফিরে পাওয়া সম্পর্কে নিরাশ হয় তবে আমার মতে, তার জন্য মালিককে ফিতরা দিতে হবে না। মালিক (র) বলেন, শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলের লোকের উপরই ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। কারণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নর-নারী, আযাদ, গোলাম প্রত্যেক মুসলমানের উপরই রমযানের কারণে সাদকা-ই-ফিতর ওয়াজিব করেছেন। (গোলামের তরফ হতে তার মালিক তা প্রদান করবে।)
সাদকা-ই-ফিতরের পরিমাণ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে সাদকা-ই-ফিতর হিসেবে নরনারী আযাদ গোলাম প্রতিটি মুসলমানের উপর এক ছা’ করে খেজুর কিংবা যব ধার্য করেছিলেন। (বুখারী ১৫০৪, মুসলিম ৯৮৪) ‘ইয়ায ইবনু আবদুল্লাহ্ ইবনু সা’দ ইবনু আবি র্সাহ আমিরী (র) তিনি আবূ সাঈদ খুদরী (রা)- কে বলতে শুনেছেন আমরা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছা’র মাপে এক ছা’ গম বা যব বা খেজুর বা পনীর বা মুনাক্কা সাদকা-ই-ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। (বুখারী ১৫০৬, মুসলিম ৯৮৫) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) খেজুর দ্বারাই সাদকা-ই-ফিতর আদায় করতেন। একবার যব দিয়েও ফিতরা আদায় করেছিলেন। (বুখারী ১৫১১, মুসলিম ৯৮৫) মালিক (রা) বলেন, সাদকা, কাফফারা, যাকাত ছোট মুদের হিসেবে অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুদে আদায় করতে হবে, আর যিহারের কাফফারা হিশাম [১] প্রবর্তিত মুদে (যা পরিমাণে একটু বড়) আদায় করতে হবে।
ফিতরা কখন আদায় করতে হবে
নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ঈদের দুই-তিন দিন পূর্বে সাদকা-ই-ফিতর জমাকারী কর্মচারীর নিকট স্বীয় ফিত্রা পাঠিয়ে দিতেন। (অনুরূপ হাদীস ইমাম বুখারী ইবনু উমার থেকে বর্ণনা করেছেন, বুখারী ১৫১১) মালিক (রা) বলেন, আমি বিজ্ঞ আলিমগণকে দেখেছি যে, তাঁরা ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই ফিত্রা আদায় করে দেওয়া মুস্তাহাব মনে করতেন। মালিক (রা) বলেন, ফিতরা ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে বা পরে উভয় সময়েই আদায় করা যায়।
কার উপর সাদকা-ই-ফিতরা ওয়াজিব হয় না
মালিক (রা) দাসের দাস, চাকর, মজুর এবং স্ত্রীর গোলামের তরফ হতে ফিতরা দেয়া ওয়াজিব নয়। তবে যে গোলাম খেদমতে রত রয়েছে তার ফিত্রা দিতে হবে। ব্যবসার মাল হোক বা না হোক মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত অমুসলিম গোলামের ফিতরা আদায় করতে হবে না।