18. রোযা
রোযার চাঁদ দেখা ও রমযানের রোযা খোলার বর্ণনা
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোযার উল্লেখ করে বলেছেন, তোমরা চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রেখো না। আর চাঁদ না দেখে রোযা খুলো না। যদি তোমাদের উপর (আকাশ) মেঘাচ্ছন্ন হয়, তবে রোযা খোলার জন্য অন্য দিন হিসাব করো নিও। (বুখারী ১৭০৬, মুসলিম ১০৮০) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মাস উনত্রিশ দিনেরও হয়, যদি (আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে) তোমাদের উপর চাঁদ পর্দাবৃত করা হয়, তবে তার জন্য দিন গণনা করো। (বুখারী ১৯০৭, মুসলিম ১০৮০) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমযানের উল্লেখ করলেন। (এই প্রসঙ্গে) তিনি বললেন, তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রেখো না। এবং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা খুলো না। আর যদি আকাশ তোমাদের উপর মেঘাচ্ছাদিত হয়, তবে সংখ্যা ত্রিশ পূর্ণ করো। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৩২৭, তিরমিযী ৬৮৮, নাসাঈ ২১২৪, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে’ ১৭৯০] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) মালিক (রা) তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, উসমান ইবনু আফফান (রা)-এর আমলে বিকালে চাঁদ দৃষ্ট হয়। কিন্তু উসমান (রা) সন্ধ্যা হওয়া ও সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত ইফতার করেননি। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের চাঁদ একাই দেখেছে সে নিজে রোযা রাখবে, তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা সমীচীন নয় । কারণ সে জানে যে, উহা রমযান মাস। আর যে শাওয়ালের চাঁদ একা দেখেছে. সে রোযা ভঙ্গ করবে না, কারণ লোকে (এ বলে) অপবাদ দিবে যে, আমাদের একজন রোযা রাখেনি। পক্ষান্তরে যারা নির্ভরযোগ্য নয় তেমন ব্যক্তিদের খেয়াল হলে তবে তারা বলবে, ‘আমরা অবশ্য চাঁদ দেখেছি’। আর যে ব্যক্তি দিনে শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পায়, সে রোযা ইফতার করবে না বরং সে দিনের রোযা পূর্ণ করবে, কারণ তা আগামী রাতের চাঁদ। ইয়াহইয়া (র) বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, যদি লোকে ঈদের দিন রোযা রাখে এবং তারা উহাকে রোযার দিন বলে মনে করে, তৎপর একজন বিশ্বস্ত লোক এসে তাদেরকে বলে, রমযানের চাঁদ তাদের রোযার একদিন পূর্বে দেখা গিয়েছে, আর তাদের এ দিবস হচ্ছে একত্রিশের, তবে যে মুহূর্তে তাদের কাছে খবর পৌঁছে সে মুহূর্তেই তারা রোযা ভেঙে ফেলবে। অবশ্য তারা সে খবর সূর্য হেলিবার পর হলে সে দিন তারা ঈদের নামায আদায় করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
ফজরের পূর্বে যে রোযার নিয়ত করেছে
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, যে ফজরের পূর্বে নিয়ত করেনি, সে রোযা রাখবে না। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৪৫৪, তিরমিযী ৭৩০, নাসাঈ ২৩৪১, ইবনু মাজাহ ১৭০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে’ ৬৫৩৮]) ইবনু শিহাব (র) কর্তৃক নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) ও হাফসা (রা) হতে অনুরূপ (মত) বর্ণনা করা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
বিলম্ব না করে ইফতার করা
সাহল ইবনু সা’দ সাঈদী (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বদা লোক মঙ্গলের উপর থাকবে যতদিন ইফতার সত্বর করবে। (বুখারী ১৯৫৭, মুসলিম ১০৯৮) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মানুষ সর্বদা মঙ্গলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যতদিন ইফতার সত্বর করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) এবং উসমান ইবনু আফফান (রা) দু’জনে মাগরিবের নামায আদায় করতেন, এমন সময় তখন তাঁরা রাত্রির অন্ধকার দেখতে পেতেন। (আর এটা হত) ইফতার করার পূর্বে। অতঃপর তাঁরা (দু’জনে) ইফতার করতেন। আর এটা হতো রমযান মাসে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
যে ব্যক্তির জানাবত (গোসল ফরয হওয়া) অবস্থায় ফজর হয় সে ব্যক্তির রোযা
আয়েশা (রা) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, তখন তিনি দরজায় দণ্ডায়মান ছিলেন, আর আমি শুনতেছিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ্! জানাবত অবস্থায় আমার ফজর হয় অথচ আমি রোযা রাখতে ইচ্ছা করি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমারও জানাবত অবস্থায় ফজর হয়, অথচ আমি রোযা রাখবার ইচ্ছা করি। তাই আমি গোসল করি এবং রোযা রাখি! তখন লোকটি তাঁর নিকট আরয করল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আপনি অবশ্য আমাদের মত নন। আল্লাহ্ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেছেন। এতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি আর আমি তাক্ওয়ার বিষয়ে তোমাদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত। (সহীহ, মুসলিম ১১১০) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্নদোষে নয় স্ত্রী সহবাসের কারণে রমযানে জানাবত অবস্থায় ফজর হত, অতঃপর তিনি রোযা রাখতেন। (বুখারী ১৯২৬, ১৯৩০, মুসলিম ১১০৯) আবূ বক্র ইবনু আবদুর রহমান (র) আমি ও আমার পিতা মারওয়ানের নিকট ছিলাম, মারওয়ান তখন মদীনার শাসনকর্তা। তাঁর কাছে উল্লেখ করা হয় যে, আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, যে ব্যক্তির জানাবত অবস্থায় ফজর হয়, তার সেই দিনের রোযা নষ্ট হয়েছে। মারওয়ান বললেন, হে আবদুর রহমান। আমি তোমাদের কসম দিচ্ছি যে, তুমি অবশ্যই উম্মুল মুমিনীনদ্বয় আয়েশা (রা) ও উম্মে সালমা (রা)-এর কাছে গমন কর এবং এ বিষয়ে উভয়কে প্রশ্ন কর। অতঃপর আবদুর রহমান গেলেন, আমিও সাথে ছিলাম। আবদুর রহমান তাঁকে ‘সালাম’ জানালেন এবং বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আমরা মারওয়ান ইবনু হাকামের কাছে ছিলাম, তাঁর নিকট আলোচিত হয় যে, আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন যে ব্যক্তির জানাবত অবস্থায় ফজর হয়েছে সে সেই দিনের রোযা ভঙ্গ করেছে। আয়েশা (রা) বললেন, আবূ হুরায়রা যেমন বলেছেন, (মাস’আলা) তেমন নয়। হে আবদুর রহমান! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা করেছেন তুমি কি তা হতে বিমুখ হতে চাও ? আবদুর রহমান বললেন, না, আল্লাহ্র কসম, (তা হয় না)। আয়েশা (রা) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি স্বপ্নদোষে নয়, সহবাসের কারণে জানাবত অবস্থায় ফজর করতেন। অতঃপর সেই দিনের রোযা রাখতেন। (রাবী) বলেন, তারপর আমরা আয়েশা (রা)-এর নিকট হতে বের হলাম এবং উম্মে সালমা (রা)-এর কাছে গেলাম এবং এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলাম। আয়েশা (রা) যেমন বলেছেন তিনিও তেমন বললেন। অতঃপর আমরা প্রস্থান করলাম এবং মারওয়ান ইবনু হাকামের কাছে উপস্থিত হলাম। তাঁরা দু’জনে যা বর্ণনা করেছেন আবদুর রহমান মারওয়ানের কাছে তা উল্লেখ করলেন। অতঃপর মারওয়ান বললেন, আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, হে আবূ মুহাম্মদ, আমার সওয়ারী দরজায় (উপস্থিত) রয়েছে, তুমি উহার উপর সওয়ার হয়ে অবশ্যই আবূ হুরায়রা (রা)-এর নিকট গমন কর। তিনি তাঁর (নিজস্ব) ভূমিতে আকীক নামক স্থানে অবস্থান করতেছেন। নিশ্চয়ই এ খবরটি তাঁকে পৌঁছিয়ে দাও। আবদুর রহমান সওয়ার হলেন, আমি তাঁর সাথে আরোহণ করলাম। অতঃপর আমরা আবূ হুরায়রা (রা)-এর কাছে এলাম। আবূ হুরায়রা (রা)-এর সহিত আবদুর রহমান কিছুক্ষণ কথা বললেন। তারপর এই বিষয়ে তাঁর সাথে আলোচনা করলেন। এরপর আবূ হুরায়রা (রা) বললেন, এই বিষয়ে আমার জানা নাই, আমাকে খবরদাতা খবর দিয়েছেন। [১] (সহীহ, মুসলিম ১১০৯) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা ও উম্মে সালমা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বপ্নদোষ ব্যতীত সহবাসের কারণে জানাবত অবস্থায় ফজর হত, অতঃপর তিনি রোযা রাখতেন। (বুখারী ১৯২৬, ১৯৩০, মুসলিম ১১০৯)
রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়ার অনুমতি
আতা ইবনু ইয়াসার (রা) এক ব্যক্তি রমযান মাসে রোযা অবস্থায় তাঁর স্ত্রীকে চুমু খেলেন এবং এতে খুবই অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর এই বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য তাঁর স্ত্রীকে পাঠালেন। সে নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী উম্মে সালমা (রা)-এর কাছে গেল এবং সেই বিষয় তাঁর কাছে উল্লেখ করল। উম্মে সালমা (রা) তাকে বললেন, রোযা অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও চুমা দিয়ে থাকেন। সে তার স্বামীর কাছে ফিরে এসে এই খবর তাকে জানাল। কিন্তু তাঁর পেরেশানী আরো বৃদ্ধি পেল। তিনি বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত নই। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের জন্য যা ইচ্ছা হালাল করেন। তারপর তাঁর স্ত্রী পুনরায় উম্মে সালমা (রা)-এর কাছে গেল। (এবার) উম্মে সালমা (রা)-এর নিকট রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই স্ত্রীলোকটির ব্যাপার কি ? উম্মে সালমা (রা) তাকে বিষয়টি জানালেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমিও এটা করি, তুমি এই স্ত্রীলোককে এই খবর দাওনি কেন ? উম্মে সালমা (রা) বললেন, আমি তাকে এই খবর দিয়েছি। অতঃপর তার স্বামীর কাছে গিয়ে সেই খবর বলেছে। এতে তাঁর চিন্তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তিনি বলেছেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মত নই। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের জন্য ইচছা হালাল করেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাগান্বিত হলেন এবং বললেন, আমি অবশ্য তোমাদের অপেক্ষা আল্লাহকে অধিক ভয় করি এবং তাঁর সীমানাসমূহকে তোমাদের অপেক্ষা অধিক জানি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কোন এক সহধর্মিনীকে চুমু খেতেন, অথচ তিনি রোযাদার। তারপর তিনি হাসলেন। (বুখারী ১৯২৮, মুসলিম ১১০৬) বর্ণনাকারী উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর স্ত্রী আতিকা বিনত সাঈদ (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর মাথায় চুমু খেতেন, অথচ তিনি রোযাদার। তবুও তিনি তাঁকে নিষেধ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আয়েশা বিন্ত তালহা (র) তিনি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা)-এর নিকট ছিলেন। সেখানে তাঁর স্বামী প্রবেশ করলেন। তিনি হলেন আবদুল্লাহ্ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আবূ বক্র সিদ্দীক (রা)। তিনি রোযাদার ছিলেন। আয়েশা (রা) তাঁকে বললেন, তোমাকে তোমার পরিবারের কাছে যেতে এবং তাকে চুমু খেতে ও তার সাথে খেল-তামাশা করতে কিসে বাধা দিয়েছে ? তিনি বললেন, আমি তাঁকে চুমু খাই কিভাবে, আমি যে রোযাদার! তিনি (আয়েশা রা.) বলেন, হ্যাঁ (রোযাদার হয়েও তা করতে পার)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রা ও সা’দ আবি ওয়াক্কাস (রা) রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়ার অনুমতি দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
রোযাদারের চুমু খাওয়ার ব্যাপারে কঠোরতা
বর্ণনাকারী মালিক (র)-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) যখন উল্লেখ করতেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চুমু খেতেন, তখন (তিনি আয়েশা রা.) বলতেন, তোমাদের চাইতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অধিক ক্ষমতা রাখেন নিজের নফসের উপর। [১] (বুখারী ১৯২৭, মুসলিম ১১০৬, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে انقطاع তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) ১৭قَالَ يَحْيَى قَالَ مَالِك قَالَ هِشَامُ بْنُ عُرْوَةَ قَالَ عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْر لَمْ أَرَ الْقُبْلَةَ لِلصَّائِمِ تَدْعُو إِلَى خَيْرٍ. উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (র) বলেন, রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়া কোন মঙ্গলের দিকে আহ্বান করে বলে আমি মনে করি না। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা)-কে রোযাদারের চুমু খাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বৃদ্ধের জন্য অনুমতি দেন। আর যুবকের জন্য মাকরূহ বলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রোযাদারের জন্য চুমু খাওয়া এবং স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়াকে নিষেধ করতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
প্রবাসে রোযা রাখা
আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বিজয় বৎসরে রমযান মাসে মক্কার দিকে সফরে বের হলেন এবং রোযা রাখলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছালে পর তিনি রোযা ভঙ্গ করলেন এবং তাঁর সাথে অন্যরাও রোযা ভঙ্গ করলেন। আর তাঁরা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হুকুম হতে যা সদ্য অতঃপর যা অতি সদ্য তা গ্রহণ করতেন। (অর্থাৎ যে কোন নূতন হুকুম পাওয়া বা শোনামাত্রই গ্রহণ করতেন)। (বুখারী ১৯৪৪, মুসলিম ১১৩) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিজয় বৎসর তাঁর সফরে সাহাবীগণকে রোযা খুলতে নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, তোমরা তোমাদের শত্রুদের জন্য শক্তি সঞ্চয় কর, আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে রোযা রাখলেন। আবূ বক্র ইবনু আবদুর রহমান (র) বলেন, যে ব্যক্তি আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন তিনি বলেছেন, আমি ‘আরজ’ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজের মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি, পিপাসায় অথবা প্রচণ্ড গরমের কারণে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হল, আপনি রোযা রেখেছেন বলে একদল লোক (এখনও) রোযা রেখেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কাদীদে পৌঁছালেন, তখন তিনি পেয়ালা চাইলেন এবং (পানি অথবা দুধ) পান করলেন, তারপর সাহাবীগণ রোযা ভঙ্গ করলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৩৬৫, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ, সুনানে আবূ দাঊদ]) আনাস ইবনু মালিক (রা) আমরা রমযানে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফর করেছি। অতঃপর কোন রোযাদার রোযাভঙ্গকারীর উপর দোষারোপ করেননি এবং কোন রোযাভঙ্গকারীও কোন রোযাদারের উপর দোষারোপ করেননি। (বুখারী ১৯৪৭, মুসলিম ১১১৮) হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রা) হামযা ইবনু ‘আমর আসলামী (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ ! আমি প্রায়ই রোযা রাখি। আমি কি সফরে রোযা রাখব ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে রোযা রাখ, আর ইচ্ছা করলে রোযা ছাড়। (বুখারী ১৯৪৩, মুসলিম ১১২১, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদ মুরসাল) নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রমযানে সফরে রোযা রাখতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) উরওয়াহ্ (র) রমযানে সফর করতেন, আমরাও তাঁর সাথে সফর করতাম। অতঃপর উরওয়াহ্ (র) রোযা রাখতেন কিন্তু আমরা রোযা রাখতাম না, তিনি আমাদেরকে রোযা রাখতে বলতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
যে ব্যক্তি রমযানে সফর হতে প্রত্যাবর্তন করে অথবা রমযানে সফরের ইচ্ছা করে সে কি করবে?
মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) রমযানে যদি সফরে থাকতেন, তবে তিনি যদি জানতেন যে, তিনি মদীনায় দিনের প্রথম দিকে প্রবেশ করবেন তবে তিনি রোযা অবস্থায় (মদীনায়) প্রবেশ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি রমযানে সফরে থাকে অতঃপর জানতে পারে যে, সে নিজের পরিবার পরিজনের মধ্যে দিনের প্রথমদিকে প্রবেশ করবে এবং প্রবেশের পূর্বে ফজর হয়, তবে সে রোযা অবস্থায় প্রবেশ করবে। মালিক (র) বলেন, আর যে ব্যক্তি রমযানে সফরে বের হতে ইচ্ছা করে এবং স্বীয় (আবাস) ভূমিতে থাকতেই ফজর হয়, তার বের হওয়ার পূর্বে সেই দিনের রোযা রাখবে। মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি রোযা না রাখা অবস্থায় সফর হতে ফিরেছে, আর তার স্ত্রীও রোযা রাখেনি (ঋতুমতী বলে), এখন রমযানের মধ্যে ঋতু হতে পাক হয়েছে, তবে তার স্বামী ইচ্ছা করলে (রোযার দিনে) তার সাথে সহবাস করতে পারে (কারণ দু’জনে রোযা অবস্থায় নয়)।
রমযানের রোযা ভঙ্গ করার কাফ্ফারা
আবূ হুরায়রা (রা) এক ব্যক্তি রমযানের রোযা ভঙ্গ করেছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে একটি ক্রীতদাস আযাদ করার নির্দেশ দিলেন অথবা একনাগাড়ে দুই মাস রোযা রাখার অথবা ষাটজন মিসকিনকে আহার দেয়ার জন্য বললেন। লোকটি বলল, আমি সামর্থ্য রাখি না। তারপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হয়। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা গ্রহণ কর এবং সদকা কর। লোকটি বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমার হতে অধিক মুহতাজ আমি পাইনি। (এই কথা শুনে) হাসলেন. এমনকি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনের দন্ত মুবারক প্রকাশিত হল। অতঃপর বললেন। এটা তুমি খাও। (বুখারী ১৯৩৬, মুসলিম ১১১১) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) জনৈক বেদুঈন বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এবং চুল টানতে টানতে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এল। সে বলতেছিল (পূণ্য হতে) দূরবর্তী ধ্বংস হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে কি ? সে বলল, আমি স্ত্রীর সাথে রমযানে সহবাস করেছি অথচ আমি রোযাদার। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এটা শুনে) বললেন, তুমি একটি গোলাম আযাদ করার শক্তি রাখ কি ? সে বলল, না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, একটি উট হাদয়ি স্বরূপ পাঠাইবার সামর্থ্য রাখ কি ? সে বলল, না। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি বস। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক টুকরি খেজুর আনা হল। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা নাও এবং সদকা কর। লোকটি বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার অপেক্ষা অধিক মুহতাজ কাউকেও আমি পাইনি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এটা তুমি খাও এবং স্ত্রী সহবাসের কাফফারাস্বরূপ একদিন রোযা রাখ। (বাইহাকী বর্ণনা করেন [সুনানে কুবরা ৪/২২৭] মালিক (র) বলেন, আতা খোরাসানী (র) বলেছেন, আমি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে প্রশ্ন করলাম, সেই টুকরিতে কত খেজুর ছিল ? তিনি বললেন, পনের صَاعًا হতে বিশ صَاعًا পর্যন্ত। [১] ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, আমি আহলে ইলমকে (বিজ্ঞ উলামা) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের কাযা (করতে গিয়ে) দিনে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস অথবা অন্য কারণে রোযা ভঙ্গ করে ফেলে, তার উপর কাফফারা (ওয়াজিব) হবে না। যে কাফফারার কথা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, তা সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে যে ব্যক্তি রমযান মাসে আপন স্ত্রীর সাথে দিনে সহবাস করেছে। অবশ্য সেই ব্যক্তির উপর সেই দিনের কাযা (ওয়াজিব) হবে। মালিক (র) বলেন, এটাই সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় যা আমি এই ব্যাপারে শুনেছি।
রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তিনি রোযাদার । তিনি বলেন, অতঃপর তিনি তা ছেড়ে দেন। তৎপর তিনি যখন রোযা রাখতেন, ইফতার না করা পর্যন্ত শিঙ্গা লাগাতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস ও আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) দু’জনে শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তাঁরা রোযাদার। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি শিঙ্গা লাগাতেন অথচ তিনি রোযাদার। অতঃপর এই কারণে রোযা ভঙ্গ করতেন না। হিশাম বলেন, আমি তাঁকে রোযাদার অবস্থা ছাড়া কখনো শিঙ্গা লাগাতে দেখিনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, রোযাদারের শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ নয় কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় হলে মাকরূহ, দুর্বল না হলে এটা মাকরূহ হবে না। আর যদি কোন ব্যক্তি রমযানে শিঙ্গা লাগায়, অতঃপর রোযা ভঙ্গ করা হতে বিরত থাকে, আমি তার জন্য কোন কিছু (লাগবে বলে) মনে করি না এবং যেদিন শিঙ্গা লাগিয়েছে সেই দিনের রোযা কাযা করার হুকুমও করি না। কেননা রোযার ক্ষতির আশংকায় রোযাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানো মাকরূহ করা হয়েছে। ফলে যে ব্যক্তি লাগিয়েছে, সন্ধ্যা পর্যন্ত রোযা ইফতার করা হতে বিরত রয়েছে আমি তার জন্য কোন দোষ মনে করি না এবং তার উপর সেই দিনের (রোযার) কাযাও প্রয়োজন হবে না।
আশুরা দিবসে রোযা
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) আশুরা দিবস এমন একটি দিবস ছিল, যে দিবসে জাহিলিয়া যুগে কুরাইশগণ রোযা রাখত। জাহিলিয়া যুগে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও সে দিবসে রোযা রাখতেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনায় এলে পরে তিনি সেই রোযা রাখলেন এবং লোকদেরকেও সেই দিনের রোযা রাখতে হুকুম করলেন। অতঃপর যখন রমযানের রোযা ফরয হল, উহাই ফরয হিসেবে রইল। আশুরা দিবসের রোযা ছেড়ে দেয়া হল। অতঃপর যে ইচ্ছা করত ঐ দিবসে রোযা রাখত, আর যে ইচ্ছা করত না সে তা ছেড়ে দিত। (বুখারী ২০০২, মুসলিম ১১২৫) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (র) তিনি হজ্জের সালে [১] আশুরা দিবসে মুয়াবিয়া ইবনু আবূ সুফইয়ান (রা)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছেন, হে মদীনাবাসী! তোমাদের আলেমগণ কোথায় ? আমি এই দিবস সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি এটা আশুরা দিবস; তোমাদের উপর এই (দিবসের) রোযা ফরয করা হয়নি। আমি রোযা রেখেছি, তোমরা যে ইচ্ছা কর রোযা রাখতে পার, আর যার ইচছা রোযা ছেড়ে দাও। (বুখারী ২০০৩, মুসলিম ১১২৯) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হারিস ইবনু হিশাম (রা)-এর নিকট খবর পাঠিয়েছেন, কাল আশুরা দিবস, তুমি নিজেও রোযা রাখ এবং পরিবার-পরিজনকেও রোযা রাখতে বল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দিবসে এবং সারা বৎসর রোযা রাখা
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুই দিবসে রোযা নিষেধ করেছেন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন। (সহীহ, মুসলিম ১১৩৮) মালিক (র) তিনি আহলে ইলমকে (বিজ্ঞ উলামা) বলতে শুনেছেন, সর্বদা রোযা রাখতে কোন দোষ নেই, যদি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে দিবসে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন সেই সব দিবসে রোযা রাখা হতে বিরত থাকে। সেই সব দিবস হল মিনা-এর দিনগুলো, ফিতর ও আযহা দিবস। আমাদের কাছে এই বিষয়ে যা পৌঁছেছে এবং এই ব্যাপারে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটা হচ্ছে সর্বাপেক্ষা আমার পছন্দনীয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
অনবরত রোযা রাখার (সওমে বেসাল) প্রতি নিষেধাজ্ঞা
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনবরত রাত্রেও কিছু না খেয়ে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আপনি যে অনবরত রোযা রাখেন! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি অবশ্য তোমাদের মত নয়। আমাকে আহার ও পানীয় দেওয়া হয়। (বুখারী ১৯৬২, মুসলিম ১১০২) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা অনবরত রোযা রাখা হতে নিজেদেরকে বাঁচাও। তোমরা অনবরত রোযা রাখা হতে নিজেদেরকে বাঁচাও। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! তবে আপনি যে অনবরত রোযা রাখেন ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদের মত নই। আমি রাত্রি যাপন করি (এই অবস্থায়) যে, আমার প্রভু আমাকে আহার দান করেন এবং পানীয় দান করেন। (বুখারী ১৯৬৬, মুসলিম ১১০৩)
ভুলে হত্যা ও যিহার [১] -এর রোযা
ইয়াহইয়া (র) আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তির উপর ধারাবাহিকভাবে দুই মাসের রোযা ফরয হয়েছে ভুলে হত্যা অথবা যিহার করা বাবদ। অতঃপর তার কোন কঠিন পীড়া হয়েছে যদ্দরুন রোযা ভাঙতে হয়েছে। সে যদি আরোগ্য লাভ করে এবং রোযা রাখতে সক্ষম হয়, তবে আমি (এই ব্যাপারে) যা শুনেয়ছ, তন্মধ্যে উত্তম হল সেই ব্যক্তির জন্য এতে বিলম্ব করা জায়েয নয়। তার যে রোযা পূর্বে গত হয়েছে, উহার ভিত্তি করে সে অবশিষ্ট রোযা রাখবে। তদ্রূপ ভুলে হত্যার কারণে যে নারীর উপর রোযা ওয়াজিব হয়েছে, সে তার রোযার মাঝখানে ঋতুমতী হলে রোযা রাখবে না। তবে পাক হলে পর সে রোযা রাখতে বিলম্ব করবে না এবং যে রোযা পূর্বে রেখেছে তার উপর ভিত্তি করে অবশিষ্ট রোযা রাখবে। আল্লাহর কিতাবের বিধান মুতাবিক যার উপর দুই মাসের রোযা ধারাবাহিকভাবে রাখা ওয়াজিব হয়েছে, তার জন্য পীড়াজনিত ব্যাপার ও ঋতুস্রাব ব্যতীত রোযা ভঙ্গ করা জায়েয নয়। এইরূপ ব্যক্তির জন্য সফর আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ করারও অনুমতি নেই। যেরূপ কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রুগ্ন থাকে কিংবা সফরে থাকে, তবে সে অন্য দিন রোযা রাখবে।’ ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, এই ব্যাপারে যা শুনেছি, তার মধ্যে এটাই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা উত্তম।
রোযার রুগ্ন ব্যক্তির করণীয়
ইয়াহইয়া (র) আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, আমি আহলে ইলম-এর কাছে যা শুনেছি তা হচ্ছে এই পীড়িত ব্যক্তির যদি এমন রোগ হয় যাতে রোযা রাখা তার জন্য দুষ্কর এবং কষ্টদায়ক হয়, যখন রোগ এই স্তরে পৌঁছে তখন তার জন্য রোযা ইফতার (রাখিয়া ভাঙিয়া ফেলা বা শুরুতেই না রাখা) করা জায়েয আছে। তদ্রূপ পীড়িত ব্যক্তির যদি নামাযে দাঁড়াতে মুশকিল হয় অর্থাৎ পীড়ার কারণে তার ওযর (অপারগতা) সেই দরজায় পৌঁছায়, আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার ওযর সম্পর্কে বান্দা অপেক্ষা অধিক জ্ঞাত। আবার কোন কোন রোগ সেই দরজার হয় না, যখন ওযর এই স্তরে পৌঁছে, তখন সে বসে নামায আদায় করবে। আর আল্লাহর দ্বীন সহজ। তিনি মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা ভাঙার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ মুসাফির পীড়িত ব্যক্তির তুলনায় রোযা রাখতে অধিক সক্ষম। আল্লাহ্ তা’আলা কিতাবে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রুগ্ন থাকে অথবা সফরে থাকে, সে অন্যদিন রোযা করবে।’ আল্লাহ্ তা’আলা (এই আয়াতে) মুসাফিরের জন্য সফরে রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। অথচ সে রোযার উপর পীড়িতের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। এই ব্যাপারে যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই আমার কাছে পছন্দনীয়। আমাদের নিকট এটাই ঐকমত্যে গৃহীত।
রোযার মানত করা এবং মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে রোযা রাখা
মালিক (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল সেই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি মাসের রোযার মানত করেছে, তার জন্য নফল রোযা রাখা জায়েয কিনা? সাঈদ (র) বললেন, নফলের পূর্বে মানতের (রোযা) আরম্ভ করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) হতেও আমার নিকট এইরূপ রেওয়ায়ত পৌঁছেছে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে অথচ তার উপর মানত রয়েছে গোলাম আযাদ করার অথবা সদকা প্রদানের অথবা কুরবানী করার। ফলে সে তার সম্পদ হতে সেই মানত পূর্ণ করার অসিয়ত করেছে। তবে সদকা এবং কুরবানী তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে পূর্ণ করা হবে। মানতকে অন্যান্য নফল অসিয়তের উপর অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। তবে যদি অন্য অসিয়ত ও মানতের মত (ওয়াজিব) হয়। কারণ নফল কাজ বা নফল কাজের অসিয়ত ওয়াজিব অসিয়ত ও মানতের সমতুল্য নয়। মানত ইত্যাদি মৃত ব্যক্তির সকল সম্পদ হতে আদায় না করে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ হতে আদায় করা হবে। যদি তাঁর জন্য এটা বৈধ হয়, তবে মুতাওয়াফ্ফী (মৃত্যুর সন্নিকটে পৌঁছেছে এমন ব্যক্তি) তার উপর ওয়াজিব বিষয়গুলোকে পিছিয়ে রাখবে। এমতাবস্থায় যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হবে, তখন তার সম্পদের মালিক হবে তার ওয়ারিসগণ, বিশেষত ঐ সকল বিষয় যেসব বিষয়ে তার পক্ষ হতে তাকীদ করবার জন্য তেমন কোন ব্যক্তি না থাকে। (স্বভাবতই ওয়ারিসগণ ঐসব মানত বা অসিয়ত পূর্ণ করতে আগ্রহী হবে না)। সকল সম্পদ হতে ঐসব আদায় করা তার জন্য জায়েয হলে সে এই সকল ব্যাপারে বিলম্ব করবে। যখন মৃত্যুর সময় উপস্থিত হবে তখন সে উহা প্রকাশ করবে। হয়তো ঐ সকল (প্রকাশিত দাবি-দাওয়া) পূরণে তার সমস্ত সম্পত্তিই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তার জন্য এটা জায়েয নয়। বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-কে প্রশ্ন করা হল একজন আর একজনের পক্ষে রোযা রাখবে কি ? অথবা একজন অন্যজনের পক্ষে নামায আদায় করবে কি ? তিনি উত্তরে বললেন, একজন আর একজনের পক্ষে রোযা রাখবে না এবং অপরের পক্ষে নামাযও আদায় করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
রমযানের কাযা ও কাফ্ফারা
খালিদ ইবনু আসলাম (র) খালিদ ইবনু আসলাম (র) বর্ণনা করেন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) রমযান মাসে মেঘাচ্ছন্ন এক দিনে ইফতার করলেন। তিনি মনে করলেন যে, সন্ধ্যা হয়েছে এবং সূর্য ডুবেছে। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আমিরুল মুমিনীন! সূর্য উদিত হয়েছে। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, বিষয়টির সমাধান হচ্ছে, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উমার (রা) এটার দ্বারা আমাদের মতে কাযা মুরাদ নিয়েছেন। (আল্লাহ্ সর্বজ্ঞানী) তার উক্তি ‘বিষয়টির সমাধান সহজ’ এতে মেহনতের স্বল্পতা ও এটা সহজ হওয়াই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, এর পরিবর্তে আর একদিন রোযা রাখব। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, যে ব্যক্তি সফর অথবা পীড়ার কারণে রোযা রাখেনি, সে রমযানের রোযা রাখবে একাধারে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস ও আবূ হুরায়রা (রা) তাঁরা দু’জনে রমযানের কাযা সম্পর্কে ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) করেছেন। একজন বলেছেন, কাযা রোযা পৃথক পৃথক রাখা হবে। আর একজন বলেছেন, পৃথক পৃথক রাখা যাবে না (অর্থাৎ একাধারে রাখতে হবে)। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কে বলেছেন পৃথক করা যাবে, কে বলেছেন পৃথক করা যাবে না, তা আমার (নির্দিষ্ট) জানা নাই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন, যে রোযা অবস্থায় স্বেচ্ছায় বমি করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে। আর যার অনিচ্ছাকৃত বমি হয়, তাকে করতে হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) শুনেছেন সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে রমযানের কাযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন, আমার কাছে পছন্দনীয় হচ্ছে রমযানের কাযাকে পৃথক না করে একাধারে রাখা। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের কাযা পৃথক পৃথক করে রেখেছে সেই ব্যক্তিকে রোযা পুনরায় রাখতে হবে না। সে রোযাই তার পক্ষে যথেষ্ট হবে। কিন্তু আমার নিকট একাধারে রাখাই পছন্দনীয়। ইয়াহইয়া (র) বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমযানের রোযা অথবা অন্য কোন ওয়াজিব রোযায় ভুলবসত আহার করে অথবা পান করে তাকে সে দিনের পরিবর্তে অন্য একদিন কাযা করতে হবে। মালিক (র) হুমায়দ ইবনু কায়েস মক্কী (র) বলেছেন যে, আমি মুজাহিদ (র)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বায়তুল্লাহ্ তওয়াফ করতেছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে একজন লোক এল এবং কাফফারার রোযা সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করল। উহা একাধারে রাখতে হবে, না আলাদা আলাদা রাখতে পারবে। মুজাহিদ (র) বললেন, আলাদা আলাদা রাখবে না, কারণ উবাই ইবনু কা’ব (রা)-এর কিরাআতে রয়েছে ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مُتَتَابِعَاتٍََََ [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, আমার নিকট পছন্দনীয় হল, আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনে যেরূপ নির্ধারিত করেছেন সেরূপ একাধারে রোযা রাখ। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক স্ত্রীলোক সম্পর্কে, যে স্ত্রীলোকের রমযানে ফজর হয়েছে রোযাবস্থায়। হঠাৎ তার তাজা রক্ত বের হল, ঋতুর নির্দিষ্ট সময় ছাড়া। অতঃপর সে লক্ষ্য রাখবে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেরূপ রক্ত দেখার জন্য কিন্তু কিছুই দেখল না। অন্য একদিন ফজরে হঠাৎ আর এক দফা রক্ত বের হল কিন্তু এটা পূর্বের তুলনায় কম। অতঃপর কয়েক দিন তার হায়েযের পূর্ব পর্যন্ত তা বন্ধ রইল। সেই স্ত্রীলোক নিজের নামায ও রোযার বিষয়ে কি করবে ? এর উত্তরে মালিক (র) বলেন, সেই রক্ত হায়েযে গণ্য হবে। যখন তা দেখবে রোযা ছেড়ে দিবে এবং সেই রোযা পরে কাযা করবে। তার রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে সে গোসল করবে এবং রোযা রাখবে। মালিক (র)-এর নিকট প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি রমযানের শেষ দিন মুসলমান হল, তাকে রমযানের সকল রোযা করতে হবে কি ? এবং যেদিন মুসলমান হয়েছে সে দিনের (রোযার) কাযা তার উপর ওয়াজিব হবে কি ? মালিক (র) প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তাকে বিগত রোযা কাযা করতে হবে না। সে আগামীতে রোযা আরম্ভ করবে, যেদিন মুসলমান হয়েছে সে দিনের রোযা রাখাটা আমার কাছে পছন্দনীয়।
নফল রোযার কাযা
ইবনু শিহাব (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধমির্ণী আয়েশা ও হাফসা (রা)-এর নফল রোযার নিয়তে ফজর হল এবং তাঁদের দু’জনের জন্য খাদ্যদ্রব্য হাদিয়াস্বরূপ প্রেরণ করা হয়। তাঁরা উহা দ্বারা রোযা ভেঙে ফেলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রবেশ করলেন। ইবনু শিহাব (র) বলেন, আয়েশা (রা) বলেছেন, হাফসা (রা) ছিলেন পিতার মত সাহসী। আর তিনি আমার আগে কথা বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি এবং আয়েশা আমরা উভয়ের নফল রোযা অবস্থায় ফজর হল। অতঃপর আমাদের উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্য হাদিয়ারূপে প্রেরণ করা হয়। আমরা তা দ্বারা রোযা ভেঙে ফেলি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বক্তব্য শোনার পর বললেন, তোমরা এই রোযার পরিবর্তে অন্য একদিন (রোযা) কাযা করবে। (যয়ীফ, আবূ দাঊদ ২৪৫৭, তিরমিযী ৭৩৫, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন, [যয়ীফ আল-জামে’ ৬৩০৩] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) ইয়াহইয়া (রা) বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছে, যে ভুলবশত নফল রোযা অবস্থায় আহার অথবা পান করে, তার উপর কাযা ওয়াজিব নয়। নফল রোযা অবস্থায় যেই দিন আহার বা পান করেছে সেই দিনের রোযা পূর্ণ করবে এবং রোযা ভঙ্গ করবে না। আর নফল রোযাদার যদি এমন কোন অসুবিধার সম্মুখীন হয়, যার কারণে রোযা ভাঙতে হয়, তবে তাকে কাযা করতে হবে না, যদি কোন ওযরবশত রোযা ভেঙে থাকে এবং ইচ্ছা করে রোযা ভঙ্গ না করে। আর আমি সেই ব্যক্তির জন্য নফল নামাযের কাযা জরুরী মনে করি না, যে ব্যক্তি এমন কোন হাদাস্-এর (পেশাব-পায়খানার আবেগ, বায়ু নির্গত হওয়ার আবেগ) কারণে নামায ভেঙেছে, যাকে বাধা দিয়ে রাখা যায় না, যাতে ওযূর প্রয়োজন হয়। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, কোন ব্যক্তি নেক আমলসমূহের মধ্যে কোন নেক আমলে প্রবৃত্ত হলে (নেক আমল বলতে) যথা নামায, রোযা, হজ্জ বা অনুরূপ কোন নেক আমল, যা লোকে নফলস্বরূপ করে থাকে, সেই ব্যক্তির জন্য উহা ছেড়ে দেওয়া সমীচীন নয়, যতক্ষণ উহা সুন্নত মুতাবিক পূর্ণ না করে। যদি নামাযের নিয়তে তকবীর বলে তবে দুই রাক’আত না পড়া পর্যন্ত উহা ছাড়বে না। রোযা রাখলে সেই দিনের রোযা পূর্ণ না করা পর্যন্ত ইফতার করবে না। ইহরাম বাঁধলে তার হজ্জ পূর্ণ না করা পর্যন্ত ইহরাম ছাড়বে না। যখন তাওয়াফে প্রবেশ করবে সাত তাওয়াফ পূর্ণ না করা পর্যন্ত উহা ছাড়বে না। এই সকলের মধ্যে কোন ইবাদতই আরম্ভ করে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, যতক্ষণ উহা পূর্ণ না করে। তবে কোন ওযরবশত যা তার জন্য প্রকাশ পায়, যেরূপ লোকের ওযর প্রকাশ পেয়ে থাকে, যেমন পীড়াসমূহ যার কারণে মাযূর (অক্ষম) হয়ে যায় অথবা অন্য কোন কারণে অক্ষম বলে গণ্য হয়। এটা এজন্য যে, আল্লাহ্ তা’আলা কিতাবে ইরশাদ করেছেন ‘পানাহার করতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত সাদা বর্ণের সুতা (সুবহে সাদিক) কালবর্ণের সুতা (সুবহে কাযিব) হতে প্রকাশিত না হয়। অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর।’ ফলে তার উপর রোযা পূর্ণ করা ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন ‘তোমরা আল্লাহ্র জন্য হজ্জ ও উমরাহ্ পূর্ণ কর।’ অতঃপর যদি কোন ব্যক্তি নফল হজ্জের ইহরাম বাঁধে যে ইতিপূর্বে ফরয হজ্জ আদায় করেছে, সেই ব্যক্তির জন্য হজ্জ আরম্ভ করার পর তা ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি নেই। মাঝপথে ইহরাম ছেড়ে দিয়ে হালাল হওয়া চলবে না। যদি কোন ব্যক্তি কোন নফল কাজে প্রবৃত্ত হয়, তার জন্য উহা পূর্ণ করা ওয়াজিব, যেমন ফরযকে পূর্ণ করা হয়। আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটা অতি উত্তম।
ওযরের কারণে রমযানের রোযা ভঙ্গের ফিদইয়া
মালিক (র) তিনি জানতে পেরেছেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রা) যখন অতি বৃদ্ধ হন, তখন তিনি রোযা রাখতে পারতেন না, তাই তিনি ফিদইয়া দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমি ফিদইয়া দেওয়াকে জরুরী মনে করি না। তবে দেওয়া আমার মতে উত্তম, যদি সামর্থ্য থাকে। যে ব্যক্তি ফিদইয়া দিবে সে প্রতিদিনের পরিবর্তে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুদ-এর (এক সের পরিমাণ ওজনের একটি পরিমাপ) সমপরিমাণ এক মুদ আহার করাবে। মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-কে গর্ভবতী স্ত্রীলোক সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল সে যদি সন্তান সম্বন্ধে আশংকা করে এবং রোযা রাখা তার জন্য দুষ্কর হয় (তবে কি করবে) ? তিনি বললেন, সে রোযা রাখবে না এবং প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার দিবে এক মুদ গম, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুদ পরিমাপে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, আহলে ইল্ম গর্ভবতীর জন্য রোযার কাযা ওয়াজিব মনে করেন না, যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ [১] গর্ভবতী অবস্থাকে তাঁরা রোগের মধ্যে একটি রোগ বলে মনে করেন যার সঙ্গে রয়েছে সন্তানের জীবনের আশংকা। আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) তাঁর পিতা বলতেন, যার উপর রমযানের কাযা রয়েছে, সে রোযা রাখতে সক্ষম, তবু কাযা (রোযা) রাখে নি, এইভাবে পরবর্তী রমযান এসে গিয়েছে, তবে সে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে এক মুদ করে গম দিবে, তদুপরি তার উপর কাযাও জরুরী হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, সাঈদ ইবনু যুবায়র (র) হতেও অনুরূপ বর্ণনা তাঁর কাছে পৌঁছেছে।
রোযার কাযা
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) আমার জিম্মায় রমযানের রোযা (কাযা) থাকত। আমি তা রাখতে সক্ষম হতাম না, শা’বান মাস না আসা পর্যন্ত। (বুখারী ১৯৫০, মুসলিম ১১৪৬)
সন্দেহের দিনে রোযা রাখা
মালিক (র) তিনি আহলে ইলমকে যেই দিনে সন্দেহ হয় সেই দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করতে শুনেছেন, যদি উহাতে রমযানের রোযার নিয়ত করা হয়। আর তাঁরা মনে করেন, যে ব্যক্তি এরূপ (সন্দেহের) দিনে রোযা রেখেছে চাঁদ না দেখে, অতঃপর সেই দিন রমযান বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার উপর সেই রোযার কাযা ওয়াজিব হবে। তবে (সন্দেহের দিনে) নফল রোযা রাখতে তাঁরা কোন দোষ মনে করেন না। মালিক (র) বলেন, মাসআলা আমাদের নিকট এইরূপই এবং আমি এর উপর আমাদের শহরের আহলে ইলমকে একমতাবলম্বী পেয়েছি। (ইমাম মালিক (রঃ)-এর উক্তি)
রোযার বিবিধ আহকাম
নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোযা রাখতেন একাধারে, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি আর রোযা ছাড়বেন না, আর যখন তিনি রোযা রাখতেন না, আমরা তখন বলতাম, তিনি আর রোযা রাখবেন না। রমযান ব্যতীত কোন পূর্ণ মাসের রোযা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রাখেননি এবং শা’বান মাসের চাইতে বেশি অন্য কোন মাসে রোযা রাখতেও তাঁকে দেখিনি। (বুখারী ১৯৬৯, মুসলিম ১১৫৬) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রোযা (একটি) ঢাল, কাজেই তোমাদের যে কেউ রোযাদার হও, সে বাজে কথা বলবে না এবং বর্বরতার কাজ করবে না। যদি কোন ব্যক্তি তাকে গালি দেয় অথবা কাটাকাটি-মারামারি করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। (বুখারী ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মৃগনাভীর ঘ্রাণ হতেও উত্তম; নিঃসন্দেহে রোযাদার তার প্রবৃত্তি ও পানাহারকে ত্যাগ করে আমার জন্য। তাই রোযা আমারই এবং আমি তার প্রতিদান দেব। প্রতিটি নেকীর প্রতিদান দশ হতে সাত শত পর্যন্ত, আর রোযা আমার জন্য, আমিই উহার প্রতিদান দেব। (বুখারী ১৮৯৪, মুসলিম ১১৫১) আবূ হুরায়রা (রা) রমযান মাস যখন প্রবেশ করে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করা হয়। (সহীহ মারফু, বুখারী ১৮৯৮) মালিক (র) তিনি আহলে ইলমদের কাছে শুনেছেন যে, তাঁরা দিনের কোন মুহূর্তে রোযাদারের জন্য মেছওয়াক করাকে মাকরূহ জানতেন না দিনের শুরুর দিকে হোক বা শেষভাগে হোক। তিনি বলেন, আমি কাউকেও শুনিনি, উহাকে মাকরূহ জানতে অথবা উহা হতে বারণ করতে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, ঈদুল ফিতরের পর ছয় দিনের রোযা সম্পর্কে মালিক (র)-কে আমি বলতে শুনেছি, তিনি আহলে ইলম এবং আহলে ফিক্হ, কউকেও সেই (ছয় দিনের) রোযা রাখতে দেখেননি এবং তিনি বলেন, প্রাচীনদের কারো নিকট হতে (উহা রাখার ব্যাপারে) আমার কাছে কোন কিছু পৌঁছেনি। আর আহলে ইলম উহাকে মাকরূহ জানতেন এবং উহা বিদআত হওয়ার আশংকা করতেন। আরো ভয় ছিল, অজ্ঞরা সহজকে কঠিন করা যাদের অভ্যাস তারা রমযানের মধ্যে যা গণ্য নয় উহাকে রমযানের সাথে মিলিয়ে দিবে, যদি তারা আহলে ইলমকে উহা রাখতে দেখে এবং তাঁদের নিকট হতে এই ব্যাপারে অনুমতি লাভ করে। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি, আহলে ইলম ও আহলে ফিকহ এবং লোকে যাদেরকে স্মরণ করে থাকে, তাঁদের কাউকেও জুম’আ দিবসের রোযা হতে নিষেধ করতে শুনিনি। জুম’আর দিনে রোযা রাখা ভাল। আমি কোন কোন আহলে ইলমকে তা পালন করতে দেখেছি। আর আমি মনে করি, তাঁরা (জুম’আ দিবসের প্রতি) লক্ষ্য রাখতেন (এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে)।