20. হজ্জ
ইহরামকালীন গোসল
আসমা বিনত উমাইস (রা) বায়দা নামক স্থানে মুহাম্মদ ইবনু আবূ বক্র (রা)-এর জন্ম হয়। আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আসমাকে বলে দিন সে যেন গোসল করে ইহরাম বেঁধে নেয়। (সহীহ, মুসলিম ১২০৯) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) জুল-হুলায়ফা নামক স্থানে আসমা বিনত উমাইসের গর্ভে আবূ বক্র (রা)-এর পুত্র মুহাম্মদের জন্ম হয়। আবূ বক্র (রা) তখন আসমাকে গোসল করে ইহরাম বেঁধে নিতে নির্দেশ দেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ইহরাম বাঁধার উদ্দেশ্যে গোসল করতেন। মক্কায় প্রবেশের পূর্বে এবং যিলহজ্জ মাসের নবম তারিখে আরাফাতে অবস্থানের জন্যও গোসল করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুহরিমের গোসল
ইবরাহীম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (র) ইবরাহীম ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামার মধ্যে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে বিতর্ক হয়। ইবনু আব্বাস (রা)-এর অভিমত ছিল মুহরিম অর্থাৎ ইহরামরত ব্যক্তি মাথা ধুতে পারে আর মিসওয়ারের অভিমত ছিল যে, মুহ্রিম মাথা ধুতে পারে না। আবদুল্লাহ্ ইবনু হুনায়ন বলেন, শেষে আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) আমাকে এই বিষয়ের মীমাংসার জন্য আবূ আইয়ূব আনসারী (রা)-এর কাছে প্রেরণ করেন। তখন তিনি একটি কুয়ার ধারে পর্দা টাঙ্গিয়ে গোসল করতেছিলেন। আমি পর্দার বাহির হতে তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, কে ? আমি বললাম আবদুল্লাহ্ ইবনু হুনায়ন। আমাকে আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) পাঠিয়েছেন, ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কিভাবে মাথা ধুতেন তা জানবার জন্য। আবূ আইয়ূব (রা) মাথায় হাত রেখে মাথার কাপড় সরিয়ে দিলেন, আমি তাঁর মাথাটি তখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। যে ব্যক্তি তাঁর গায়ে পানি ঢালতেছিল তাকে বললেন, পানি ঢাল। ঐ ব্যক্তি তাঁর মাথায় পানি ঢালতে লাগল আর তিনি তাঁর দুই হাত মাথার সামনে এবং পিছনে মর্দন করে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এইরূপ করতে দেখেছি। (বুখারী ১৮৪০, মুসলিম ১২০৫) ‘আতা ইবনু আবি রাবাহ (র) নিশ্চয় উমার ইবনু খাত্তাব (রা) গোসল করতেছিলেন এবং ই’য়ালা ইবনু মুনইয়া (র) পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। উমার (রা) ই’য়ালাকে বললেন, আমার মাথায় পানি ঢেলে দাও। তখন তিনি বললেন, আপনি কি আমার দ্বারা এ কাজ করাতে চান ? (অর্থাৎ পানি মাথায় ঢালা সম্পর্কে ই’য়ালার ভিন্নমত ছিল।) যদি হুকুম করেন তবে পানি ঢালতে পারি। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, পানি ঢাল, কারণ পানি চুলের রুক্ষতাই বাড়াবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যখন মক্কার নিকটবর্তী হতেন তখন দুই গিরিপথের মধ্যবর্তী যি-তুওয়া নামক স্থানে রাত্রিযাপন করতেন। পরে ফজরেই নামাযের পর উপরের গিরিপথ বেয়ে মক্কায় প্রবেশ করতেন। আর হজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে আসলে যি-তুওয়ায় গোসল না করে সেখানে প্রবেশ করতেন না। সঙ্গীগণকে মক্কা প্রবেশের পূর্বে গোসল করতে তিনি নির্দেশ দিতেন। (সহীহ, বুখারী ১৫৭৩) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ইহরামের অবস্থায় মাথা ধুতেন না। তবে স্বপ্নদোষ হলে বাধ্যতামূলক ধুতে হত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, বিজ্ঞ আলিমদের কাছে শুনেছি যে, জমরা-এ-‘আকাবার রমি করার পর মাথা কামাবার পূর্বেই সাবান ইত্যাদি দ্বারা মাথা ধৌত করা যায়। কেননা জমরা-এ-‘আকবার প্রস্তর নিক্ষেপের পর উকুন মারা, মাথা কামানো, ময়লা বিদূরিত করা, কাপড় পরা ইত্যাদি কাজ মুহরিমের জন্য হালাল হয়ে যায়।
ইহরাম অবস্থায় কাপড় পরা নিষিদ্ধ হওয়া
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, ইহরাম অবস্থায় মুহরিম ব্যক্তি কি ধরনের কাপড় পরিধান করতে পারে ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বললেন, কোর্তা পরবে না, পাগড়ি বাঁধবে না, টুপি পাজামা এবং মোজা পরবে না। তবে কারো চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরতে পারে বটে কিন্তু তা এমনভাবে কেটে পরবে যাতে পায়ের টাখনা বের হয়ে থাকে। জা’ফরান বা ওয়ারস (এক প্রকার সুগন্ধযুক্ত রঙিন ঘাস) রঞ্জিত কাপড়ও পরতে পারবে না। (বুখারী ১৫৪২, মুসলিম ১১৭৭) ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-এর নিকট একবার জিজ্ঞেস করা হল, একটি হাদীস হতে জানা যায় যে, লুঙ্গি না পেলে সে পায়জামা পরতে পারবে। মুহরিমের জন্য পায়জামা পরা কি জায়েয হবে ? মালিক (র) উত্তরে বললেন, এই ধরনের কোন হাদীস আমি শুনি নাই। আমার মতে মুহরিমের জন্য পায়জামা পরিধান করা উচিত হবে না। কারণ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুহরিমকে পায়জামা পরতে নিষেধ করেছেন এবং মোজার ব্যাপারে যেমন অনুমতি প্রদান করা হয়েছে পায়জামার ব্যাপারে তদ্রূপ অনুমতি প্রদান করা হয়নি।
ইহরাম অবস্থায় রঙিন কাপড় পরিধান করা
আবদুল্লাহ্ ইবনু দীনার (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় জাফরান এবং ওয়ারস রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, যার জুতা নাই সে মোজা (চামড়ার) পরতে পারবে, কিন্তু টাখনার নিচ পর্যন্ত তা কেটে নিবে। (সহীহ, বুখারী ৫৮৫২, মুসলিম ১১৭৭) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাল্হা ইবনু উবায়দুল্লাহ্ (রা)-কে ইহরাম অবস্থায় রঙিন কাপড় পরতে দেখে তাঁকে বললেন, তাল্হা, এ রঙিন কাপড় কেন ? তিনি বললেন, আমীরুল মু’মিনীন, এটা তো মাটির রঙ। এতে দোষ কি ? উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, দেখ, তোমরা হলে নেতা। অন্যরা তোমাদের অনুসরণ করে চলে। স্বল্প বুদ্ধির কেউ তোমাকে দেখলে মনে করবে, তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহও ইহরাম অবস্থায় রঙিন কাপড় পরেন। সুতরাং তোমাদের কোন প্রকারের রঙিন কাপড় পরা উচিত নয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী আসমা বিনত আবূ বক্র (রা) ইহরাম অবস্থায় গাঢ় কুসুম রঙের কাপড় পরতেন। তবে এতে জাফরান মিশ্রিত হত না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, সুগন্ধি বিদূরিত হয়ে গেলে ঐ ধরনের কাপড় ইহরাম অবস্থায় পরিধান করা জায়েয কিনা এই সম্পর্কে মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, পরতে পারে। তবে শর্ত হল জাফরান এবং ওয়ার্স-এর রঙ যেন তাতে না থাকে।
ইহরামকালে কোমরবন্ধ বাঁধা
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ইহরাম অবস্থায় কোমরবন্ধ বাঁধা মাকরূহ বলে মনে করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) বলেন, উভয় পার্শ্বে ফিতাযুক্ত কোমরবন্ধ কাপড়ের নিচে ইহরাম অবস্থায় পরলে কোন অসুবিধা নাই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এ বিষয়ে উল্লিখিত বর্ণনাটি সর্বোত্তম, যাহ আমি শুনেছি।
ইহরাম অবস্থায় মুখমণ্ডল ঢাকা
বর্ণনাকারী ফারাফিসা ইবনু উমায়র আল-হানাফী (র) আরজ্ নামক স্থানে উসমান ইবনু আফফান (রা)-কে ইহরাম অবস্থায় মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করতে দেখেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, থুতনির উপরিভাগ মাথার হুকুমের শামিল। ইহরাম অবস্থায় উহা ঢাকা দুরস্ত নহে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর পুত্র ওয়াকিদ ইবনু আবদুল্লাহ্ (র) জুহফা নামক স্থানে ইহরাম অবস্থায় ইন্তিকাল করেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) নিজে তাঁকে কাফন পরান। তিনি তখন বলেছিলেন আমরা ইহরাম অবস্থায় না হলে তাঁকে সুগন্ধি লাগাতাম। তিনি তাঁর মাথা এবং মুখমণ্ডল ঢেকে দিয়েছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, জীবিত থাকাকালীন মানুষ শরীয়তের উপর আমল করতে পারে। মৃত্যুর পরে মানুষের আমল বন্ধ হয়ে যায়। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, ইহরাম অবস্থায় মহিলাগণ চেহারায় নেকাব ফেলবে না বা হাতে হাতমোজা পরবে না। [১] (সহীহ মারফু, ইমাম বুখারী মারফু সনদে ইবনু উমার (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, বুখারী ১৮৩৮) ফাতিমা বিনতে মুনযির (র) আমরা আসমা বিনতে আবূ বক্র (রা)-এর সঙ্গী ছিলাম। আমরা ইহরাম অবস্থায় মুখ ঢেকে ফেলতাম, কিন্তু তিনি আমাদের কিছুই বলতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হজ্জের সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং ইহরাম খোলার সময় তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে আমি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম। (বুখারী ১৫৩৯, মুসলিম ১১৮৯) ‘আতা ইবনু আবি রাবাহ (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন হুনাইনে আবস্থান করতেছিলেন তখন হলুদ চিহ্ন আছে এমন জামা পরিহিত এক বেদুঈন ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে বলল, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমি উমরার নিয়ত করেছি। এখন আপনি আমাকে কি করতে নির্দেশ করেন? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জামাটি খুলে হলুদ দাগগুলো ধুয়ে ফেল এবং হজ্জের বেলায় যা করতে এখন তাই কর। (বুখারী ১৭৮৯, মুসলিম ১১৮০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আসলাম (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) শাজারায় (মদীনা হতে ছয় মাইল দূরবর্তী একটি স্থান) ছিলেন। তখন তাঁর নাকে সুগন্ধি অনুভূত হল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই সুগন্ধি কোথা হতে আসছে ? মু’আবিয়া ইবনু আবূ সুফইয়ান (রা) বললেন, আমার নিকট হে আমীরুল মু’মিনীন। [১] উমার (রা) বললেন, আল্লাহর কসম, এই সুগন্ধি তোমার হতে! অতঃপর মু’আবিয়া বললেন, উম্মে হাবীবা (রা) আমাকে এই সুগন্ধি লাগিয়ে দিয়েছিলেন। উমার (রা) বললেন, তোমাকে বলতেছি, তুমি ফিরে যাও (উম্মে হাবীবার নিকট), তিনি নিশ্চয় এটা ধুয়ে দিবেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালত ইবনু যুয়াইদ (র) সালত ইবনু যুয়াইদ (র) তাঁর পরিবারের একাধিক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) শাজারায় সুগন্ধ দ্রব্যের ঘ্রাণ পেলেন, তাঁর পার্শ্বে ছিলেন কসীর ইবনু সালত। উমার (রা) বললেন, এই সুগন্ধি কার নিকট হতে ? কাসীর বললেন, আমার নিকট হতে। আমার মাথায় তলবীদ করেছি এবং আমি মাথায় চুল মুণ্ডাবার ইরাদা করেছি। উমার (রা) বললেন, তুমি শারাবাতের দিকে গমন কর এবং তোমার মাথা মালিশ কর উহাকে পরিষ্কার করা পর্যন্ত। কসীর ইবনু সালত (র) উহা করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, শারাবাত খেজুর গাছের গোড়ার গর্ত যাতে পানি জমে থাকে। ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র), আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ বক্র (র) এবং রবীআ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) অলিদ ইবনু আবদুল মালিক সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ ও খারিজা ইবনু যায়দ (র)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রমীয়ে জামরা (প্রস্তর নিক্ষেপ) এবং মাথা কামাবার পর তওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা কেমন ? সালিম (র) ইহাকে নিষিদ্ধ বলে মত দিলেন, আর খারিজা ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত (র) বললেন, ইহা জায়েয। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ইহরামের পূর্বে বা তাওয়াফের যিয়ারতের পূর্বে রমীয়ে জামরার পর মিনা হতে প্রত্যাবর্তনকালে গন্ধবিহীন সাধারণ তৈল ব্যবহার করায় কোন অসুবিধা নেই। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল, জাফরান মিশ্রিত খাদ্য মুহরিম ব্যক্তি খেতে পারবে কি? তখন তিনি বললেন, আগুনে পরিপাক করা হয়ে থাকলে খেতে পারবে। আর তা না হলে খেতে পারবে না।
ইহরামের মীকাত বা স্থানসমূহ
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মদীনাবাসিগণ যুল-হুলায়ফা হতে, সিরিয়াবাসিগণ জুহফা আর নজ্দবাসিগণ কর্ন হতে ইহরাম বাঁধবে। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার বলেন, আমার নিকট আরও রেওয়ায়ত পৌঁছেছে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ইয়ামানবাসিগণ ইয়ালাম্লাম্ হতে ইহরাম বাঁধবে। [১] (বুখারী ১৫২৫, মুসলিম ১১৮২) আবদুল্লাহ্ ইবনু দিনার (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদীনাবাসীদের যুল-হুলায়ফা এবং সিরিয়াবাসীদের জুহ্ফা ন্জদবাসিদের করণ হতে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়াছেন। (বুখারী ৭৩৪৪, মুসলিম ১১৮২) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উল্লেখিত তিনটি কথা আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে শুনেছি। আর আমাকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ইয়ামনবাসী ইয়ালামলাম হতে ইহ্রাম বাঁধবে। (বুখারী ৭৩৪৪, মুসলিম ১১৮২) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ফুরু’ নামক স্থান হতে ইহরাম বেঁধেছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) মালিক (র) জনৈক নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছে শুনেছেন যে, আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) এলিয়া (বায়তুল মুকাদ্দাস) হতে ইহরাম বেঁধেছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জি’ইরানা নামক স্থান হতে ওমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৯৯৬, তিরমিযী ৯৩৫, নাসাঈ ২৮৬৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ])
ইহরাম বাঁধার ও সেই সময় তালবিয়া পাঠ করার পদ্ধতি
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তালবিয়া এইরূপ لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ [১] নাফি’ (র) বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) তৎসঙ্গে এটাও বৃদ্ধি করতেন لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ بِيَدَيْكَ لَبَّيْكَ وَالرَّغْبَاءُ إِلَيْكَ وَالْعَمَلُ [২] (বুখারী ১৫৪৯, মুসলিম ১১৮৪) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে অবস্থিত মসজিদে দুই রাক’আত নামায আদায় করতেন। অতঃপর যখন উষ্ট্রে আরোহণ করতেন তখন উচ্চঃস্বরে তালবিয়া বা লাব্বায়কা পাঠ করতেন। (বুখারী ১৫১৪, ইমাম মুসলিম ইবনু উমার থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন মুসলিম ১১৮৭, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ (র) তাঁর পিতা আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট শুনেছেন, তিনি বলেন, এই স্থানটিতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম বেঁধেছিলেন বলে তোমরা ভুল ধারণা করে থাক। অথচ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুল-হুলাইফাস্থ মসজিদের নিকট হতে লাব্বায়কা বলেছেন। (বুখারী ১৫৪১, মুসলিম ১১৮৬) বর্ণনাকারী উবায়দ ইবনু জুরায়জ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-কে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান! এমন একটি বিষয় আপনার মধ্যে দেখতে পাই যা আপনার অন্যান্য সাথীর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় না। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বললেন, সেগুলো কি ? বলত শুনি। ইবনু জুরায়জ বললেন, তাওয়াফের সময় আপনাকে রুকনে ইয়্যামানী এবং হাজরে আসওয়াদই কেবল ছুঁতে দেখা যায়, লোমশূন্য চামড়ার জুতা আপনি পরিধান করে থাকেন, আপনি হলুদ রঙের খেজাব ব্যবহার করেন, মক্কায় অবস্থান করলে আপনি যিলহজ্জ মাসের আট তারিখে ইহরাম বেঁধে থাকেন অথচ অন্যরা চাঁদ দেখামাত্র ইহরাম বেঁধে নেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) জবাবে বললেন, রুকনে ইয়্যামানী ও হাজরে আসওয়াদ ব্যতীত অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে আমি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখিনি। লোমশূন্য জুতা পরতেও রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখেছি এবং সে জুতা পরিধান করা অবস্থায় তিনি ওযূও করতেন। তাই উহা পরতে আমার ভাল লাগে। হলুদ রঙের খেজাবও রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে ব্যবহার করতে দেখেছি তাই আমার তা ভাল লাগে। আর ইহরাম সম্বন্ধে আমি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে দেখেছি যতক্ষণ তাঁকে নিয়ে যাত্রার জন্য উট্ না দাঁড়াত ততক্ষণ তিনি তালবিয়া পড়তেন না। (সহীহ, বুখারী ১৬৬, মুসলিম ১১৮৭) নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যুল-হুলায়ফাস্থ মসজিদে নামায পড়ে বের হতেন, পরে উটে আরোহণ করে ইহরাম বাঁধতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান [১] (র) যুল-হুলায়ফার মসজিদ হতে উট যখন সোজা হয়ে দাঁড়াত তখন তালবিয়া পড়েছিলেন। আবান ইবনু উসমান (র) তাঁকে তদ্রূপ করতে বলেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
উচ্চস্বরে লাব্বায়কা বলা
খাল্লাদ ইবনু সায়িব আনসারী (র) খাল্লাদ ইবনু সায়িব আনসারী (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, জিবরাঈল (আ) এসে আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেলেন আমার সঙ্গীদের যেন উচ্চৈঃস্বরে ‘লাব্বায়কা’ বলার নির্দেশ দেই। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৮১৪, তিরমিযী ৮২৯, নাসাঈ ২৭৫৩, ইবনু মাজাহ ২৯২২, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে’ ৬২]) মালিক (র) বিজ্ঞ আলিমগণের নিকট শুনেছি, তাঁরা বলতেন, উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা মহিলাদের বেলায় প্রযোজ্য নয়। মহিলাগণ আস্তে পড়িবেন যেন কেবল নিজেরাই আওয়ায শুনতে পান। মালিক (র) বলেন, মসজিদের ভিতরে তালবিয়ার আওয়ায খুব বেশি উঁচু করবে না। বরং এতটুকু শব্দে পড়িবে যেন নিজে এবং পাশের লোকটি কেবল শুনতে পায়। তবে মিনা মসজিদ এবং মসজিদুল হারামে উচ্চৈঃস্বরে ‘লাব্বায়কা’ পাঠ করবে। মালিক (র) বলেন, কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছি, প্রত্যেক নামাযের পর এবং চড়াই উতরাই-এর সময় লাব্বায়কা পাঠ করা মুস্তাহাব।
হজ্জে ইফরাদ
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) (হাজ্জাতুল বিদা) বিদায় হজ্জের সময় আমরা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে রওয়ানা হলাম। আমাদের মধ্যে কেউ শুধু উমরার, আর কেউ কেউ উমরা ও হজ্জ উভয়ের, আর কেউ শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে বেঁধেছিলেন শুধু হজ্জের ইহরাম। সুতরাং যারা শুধু উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা উমরা করেই ইহরাম খুলে ফেলেছেন। আর যাঁরা হজ্জ ও উমরা উভয়ের বা শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা দশ তারিখ পর্যন্ত আর ইহরাম খুলেননি। (বুখারী ১৫৬২, মুসলিম ১২১১) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জে ইফরাদ আদায় করেছিলেন। [১] (সহীহ, মুসিলম ১২১১) উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র উম্মুল মু’মিনীর আয়েশা (রা) নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জে-ইফরাদ’ আদায় করেছেন। (সহীহ, হাদীসটি মূলত মুত্তাফাক আলাইহি, ইতি পূর্বে এরূপ বর্ণনা অতিবাহিত হয়েছে) মালিক (র) বিজ্ঞ আলিমগণের নিকট শুনেছি, তাঁরা বলতেন কেউ হজ্জের ইফরাদের ইহরাম করলে তার জন্য উমরার ইহরাম বাঁধা জায়েয নয়। মালিক (র) বলেন, আমি এই শহরের (মদীনা শরীফ) আলিমগণকে উক্তরূপ অভিমত পোষণ করতে দেখেছি।
হজ্জে কিরান
জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন মিকদাদ ইব্নু আসওয়াদ (রা) সুক্ইয়াতে [১] আলী ইবনু আবূ তালিব (রা)-এর নিকট আসলেন। আলী (রা) তখন উটের বাচ্চাগুলোকে পানিতে গোলা আটা এবং ঘাস খাওয়াচ্ছিলেন। মিকদাদ (রা) বললেন, উসমান ইবনু আফফান (রা) হজ্জে কিরান করতে নিষেধ করতেছেন। এটা শুনে আলী (রা) ঐ অবস্থায়ই উসমান ইবনু আফফান (রা)-এর সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তখনও তাঁর হাতে আটা লেগেছিল। আজ পর্যন্ত আমি তাঁর হাতের আটার দাগ ভুলতে পারিনি। তিনি উসমান (রা)-এর নিকট গিয়ে বললেন, আপনি হজ্জে কিরান নিষেধ করেন ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এটা আমার মত। আলী (রা) ক্রোধান্বিত হয়ে বের হয়ে গেলেন এবং বললেন, لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ بِحَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ مَعًا. ‘হে আল্লাহ্, আমি হজ্জ ও উমরা উভয়ের এক সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করলাম। [২] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, হজ্জে কিরানের ইহরামকারী ব্যক্তি দশ তারিখে কুরবানীর পশু যবেহ না করা (তার সঙ্গে পশু هَدْيً থাকলে) এবং মিনায় গিয়ে ইহরাম না খোলা পর্যন্ত নিজের চুল কাটবে না। এবং ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ তা করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের উদ্দেশ্যে যখন রওয়ানা হন তখন সাহাবীদের মধ্যে কেউ কেউ কেবল হজ্জের, আর কেউ কেউ হজ্জ ও উমরা উভয়ের, আর কেউ কেউ কেবল উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। যাঁরা হজ্জ ও উমরা উভয়ের বা কেবল হজ্জের নিয়ত করেছিলেন, তাঁরা ইহরাম খোলেননি, আর যারা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরা উমরা আদায় করে ইহরাম খুলে ফেলেছিলেন। (হাদীসটি পূর্বে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনু উমার (রা) থেকে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন ১৮০৬, মুসলিম ১২৩০, আর রসূল এর বাণী ==== অত্র অংশ ইমাম বুখারী ১৫৫৬ নং হাদীসে ইমাম মুসলিম ১২১১, নং হাদীস বর্ণনা করেন) মালিক (র) মালিক (র) কতিপয় বিজ্ঞ আলিমের কাছে শুনেছেন, তাঁরা বলেন, কেউ প্রথমে কেবল উমরার ইহরাম বাঁধল, পরে সে যদি উমরার সাথে হজ্জেরও ইহরাম বাঁধতে চায় তবে তাওয়াফ ও সায়ী বায়নাস্-সাফা ওয়াল মারওয়ার (সাফা ও মারওয়ার পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী নির্দিষ্ট দৌড়ান) পূর্ব পর্যন্ত তা পারে। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (র) তাই করেছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন যদি বায়তুল্লাহ্ পৌঁছাতে বাধাপ্রাপ্ত হই তবে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় যা করেছিলেন আমিও তাই করব। মালিক (র) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাহাবীগণ উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। পরে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদেরকে বললেন, যাদের সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে তারা এই সাথে হজ্জের ইহরামও বেঁধে নেবে। অতঃপর একত্রে ইহরাম খুলবে। (মাওসুল, ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণিত হাদীস রয়েছে বুখারীতে ১৮০৬, মুসলিম ১২৩০)
তালবীয়া (লাব্বায়কা) মওকুফ করার সময়
বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনু আবূ বক্র সাকাফী (র) আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর সাথে মিনা হতে আরাফাত ময়দানের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি আনাস (রা)-কে বললেন, আজকের দিনে আপনারা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কি ধরনের আমল করতেন ? আনাস (রা) বললেন, কেউ কেউ উচ্চৈঃস্বরে ‘লাব্বায়কা’ বলতেন, কেউ বা ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে থাকতেন। অথচ কেউ কাউকেও নিষেধ করতেন না। (বুখারী ১৬৫৯, মুসলিম ১২৮৫) জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন আলী ইবনু আবি তালিব (রা) হজ্জের সময় উচ্চৈঃস্বরে লাব্বায়কা বলতে থাকতেন। তবে আরাফাতের দিন সূর্য যখন হেলে পড়ত তখন লাব্বায়কা বলা মওকুফ করে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা) যখন আরাফাতের দিকে যাত্রা করতেন, তখন লাব্বায়কা বলা বন্ধ করে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) হারাম শরীফে তাওয়াফ ও সায়ী করে ‘লাব্বায়কা’ মওকুফ করে দিতেন। পরে আবার লাব্বায়কা বলা শুরু করতেন এবং মিনা হতে সকালে আরাফাত যাত্রার সময় পর্যন্ত তা পাঠ করতেন। আরাফাতের যাত্রার সময় তিনি তা পুনরায় বন্ধ করতেন। উমরার বেলায় হারাম শরীফে প্রবেশ করেই ‘লাব্বায়কা’ বলা বন্ধ করে দিতেন। (বুখারী ১৫৭৩, মুসলিম ১২৫৯) ইবনু শিহাব (র) তাওয়াফ করার সময় আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (র) ‘লাব্বায়কা’ বলতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) তিনি আরাফাত ময়দানে প্রথমে ‘নামিরা’ নামক স্থানে অবস্থান করতেন, পরে ‘আরাক’ নামক স্থানে অবস্থান করা শুরু করেন। আয়েশা (রা) যতক্ষণ মনযিলে অবস্থান করতেন ততক্ষণ তিনি ও তাঁর সঙ্গীগণ ‘লাব্বায়কা’ পাঠ করতে থাকতেন। যখন আরাফাতের দিকে যাত্রার জন্য সওয়ার হতেন তখন উহা বন্ধ করে দিতেন। আয়েশা (রা) প্রথমে হজ্জের পর যিলহজ্জ মাসেই মক্কা হতে ইহরাম বেঁধে উমরা করতেন, পরে উহা ত্যাগ করে মুহাররম মাসের চাঁদ দেখার পূর্বে জুহফা এসে অবস্থান করতেন এবং মুহাররম মাসের চাঁদ উঠলে উমরার ইহরাম বাঁধতেন। [২] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) যিলহজ্জ মাসের নবম তারিখ মিনা হতে সকালে আরাফাত ময়দানের দিকে যাত্রা করার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি কতিপয় সিপাহীকে এ কথা ঘোষণা করতে নির্দেশ দিলেন যে, এখনই ‘লাব্বায়কা’ পাঠ করার সময়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মক্কাবাসী এবং মক্কায় অবস্থানকারী বহিরাগত লোকদের ইহরাম
আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) মক্কাবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে মক্কাবাসী! অন্যান্য মানুষ এই সময় উষ্কখুষ্ক চুল ও অপরিপাটি অবস্থায় এখানে আগমন করে, আর তোমরা চুলের তেল মর্দন করে পরিপাটি হয়ে থাক। যিলহজ্জের চাঁদ উঠলে তোমরাও ইহরাম বেঁধে নিও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রা) নয় বৎসর মক্কায় ছিলেন। যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি ইহরাম বেঁধে নিতেন। উরওয়াহ্ও তদ্রূপ করতেন। মালিক (র) বলেন, মক্কাবাসী এবং মক্কায় অবস্থানরত অন্যান্য স্থানের বাসিন্দাগণ হারাম শরীফ হতেই ইহরাম বাঁধবে। মালিক (র) বলেন, মক্কা হতে যারা ইহরাম বাঁধবে তারা মিনা হতে ঘুরে না আসা পর্যন্ত তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করবে না। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-ও তদ্রূপ করেছিলেন। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল মদীনাবাসী এবং মক্কার বাহিরের কোন লোক যদি মক্কায় অবস্থান কালে মক্কা হতে যিলহজ্জ মাসে ইহরাম বাঁধে তবে তাওয়াফে যিয়ারত সম্পর্কে কি করবে? তিনি বললেন, তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারত তখন করবে না। নফল তাওয়াফ যত ইচ্ছা তত করতে পারে। তবে প্রতি তাওয়াফের পর দুই রাক’আত নামায পড়ে নিবে। যে সকল সাহাবী মক্কা হতে ইহরাম বেঁধেছিলেন তাঁরাও তদ্রূপ করেছিলেন। তাঁরা মিনা হতে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাওয়াফ ও সায়ী করেননি। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-ও তাই করতেন। যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর তিনি মক্কা হতে ইহরাম বাঁধতেন এবং মিনা হতে ঘুরে না আসা পর্যন্ত তিনি তাওয়াফ ও সায়ী করতেন না। মালিক (র)-কে মক্কাবাসী কোন ব্যক্তি উমরার জন্য ইহরাম কোথা হতে বাঁধবে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হারাম শরীফ হতে উমরার ইহরাম বাঁধা মক্কাবাসীদের জন্য জায়েয নয়। তারা হারামের বাহির হতে ইহরাম বেঁধে আসবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হাদ্য়ী-র গলায় কিছু লটকালেই কেউ মুহরিম হয়ে যায় না
‘আমরা বিনত আবদুর রহমান (র) যিয়াদ ইবনু আবূ সুফইয়ান নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা)-এর নিকট চিঠি লিখলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, যবেহ না হওয়া পর্যন্ত কুরবানীর উদ্দেশ্যে মক্কায় পশু প্রেরণকারীর উপর ইহরাম পালনরত ব্যক্তির মত সকল জিনিস হারাম হয়ে যায়। আমি আপনার নিকট পশু [১] (হাদ্য়ী) প্রেরণ করলাম। আশা করি, উক্ত পশুর সাথে প্রেরিত ব্যক্তির নিকট অথবা পত্রযোগে আমাকে উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ফতওয়া জানাবেন। ‘আমরা বলেন, আয়েশা (রা) বললেন, ইবনু আব্বাস (রা) যা বলেছেন তা ঠিক নয়। আমি নিজের হাতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক প্রেরিত পশুর রশি পাকিয়েছিলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে তা উহার গলায় পরিয়ে আমার পিতার সাথে উহা মক্কায় প্রেরণ করেছিলেন। অথচ উক্ত পশুটি যবেহ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও কোন হালাল জিনিস রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য হারাম হয়নি। (বুখারী ১৭০০, মুসলিম ১৩২১) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) ‘আমরা বিনত আবদুর রহমান (র)-কে জিজ্ঞেস করলাম যদি কেউ মক্কায় হাদয়ী বা কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু প্রেরণ করে কিন্তু নিজে সঙ্গে না যায় তবে তার উপরও কি কোন বিষয় হারাম হবে ? তিনি বললেন, আমি আয়েশা (রা)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ইহরাম বেঁধেছে এবং লাব্বায়কা পাঠ করেছে কেবল তাকেই মুহরিম বলা যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী রবী’আ ইবনু আবদুল্লাহ্ ইব্নু হুদায়র (র) একবার ইরাকে এক ব্যক্তিকে সেলাইবিহীন কাপড় পরিহিত দেখে জানতে পারলেন যে, এই ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্যে মক্কায় প্রেরিত পশুর গলায় হাড় লটকিয়ে দিয়েছে। তাই সে সেলাইযুক্ত কাপড় খুলে ফেলেছে। রবী’আ বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে এই ঘটনা তাঁকে জানালে তিনি বললেন, কা’বার মালিকের কসম, উহা বিদআত (উহা ঠিক নয়)। ইয়হইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল এক ব্যক্তি নিজে কুরবানীর পশু নিয়ে ঘর হতে বের হল, নিজে তা ইশ্’আর [১] করে যুল-হুলায়ফায় উহার গলায় হাড় লটকাল; কিন্তু জুহফায় গিয়ে সে ইহরাম বাঁধল। ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন, তিনি বললেন, তার জন্য এটা ঠিক হয়নি। নিজে ইহরাম বেঁধে ইশ্’আর ও তাকলীদ করা তার উচিত ছিল। যে ব্যক্তি পশুর সাথে নিজে যেতে না চায় বরং বাড়িতে থাকতে চায়, সে ইহরাম না বেঁধেই তা পাঠিয়ে দেবে। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল ইহরাম না বেঁধে কেউ হাদয়ী বা মক্কায় প্রেরিতব্য কুরবানী পশু নিয়ে বের হতে পারবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এতে দোষের কিছু নেই। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল কুরবানীর পশুর গলায় কিলাদা বা হাড় পরিয়ে মক্কায় পাঠিয়ে দিলে ঐ পশুর মালিক কি মুহরিম গণ্য হবে এই বিষয়ে আলিমগণের মতপার্থক্য রয়েছে। আপনার কি মত ? তিনি বললেন, এই বিষয়ে আমি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসটি গ্রহণ করে থাকি। আয়েশা (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় কুরবানীর পশু প্রেরণ করেছিলেন, কিন্তু নিজে যাননি অথচ কোন জিনিস তাঁর জন্য হারাম হয়নি। আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্য হালাল করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হজ্জ পালনরত অবস্থায় কোন মহিলা যদি ঋতুমতী হয় তবে সে কি করবে
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধার পর কোন মহিলার যদি হায়েয হয় তবে (এতে তার ইহরাম, বিনষ্ট হবে না) সে যতদিন ইচ্ছা ‘লাব্বায়কা’ বলতে পারবে। তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী সে করবে না। বাকি আমলসমূহ অন্যদের মতই করে যাবে। পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ, সা’য়ী এবং মসজিদে যাওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হজ্জের মাসসমূহে উমরা করা
মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার উমরা করেছেন, একবার হুদায়বিয়ার বৎসর, আরেকবার উমরাতুল কাযা, আরেকবার উমরা-ই-জি ‘ইররানা। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনবার উমরা করেছেন। এক উমরা শাওয়ালে আর দুই উমরা যিলকদে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু হারমালা আসলামী (র) আবদুর রহমান ইবনু হারমালা আসলামী (র) বর্ণনা করেন এক ব্যক্তি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে জিজ্ঞেস করল হজ্জের পূর্বে উমরা আদায় করব কি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও হজ্জের পূর্বে উমরা করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) নিশ্চয় উমার ইবনু আবী সালমা (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট শাওয়াল মাসে উমরা করার অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি দেন। অতঃপর তিনি উমরা আদায় করে হজ্জ না করে বাড়ি ফিরে আসেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
উমরার মধ্যে কোন সময় লাব্বায়কা বলা বন্ধ করা যাবে
হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি উমরাতে হারাম শরীফে প্রবেশ করার পর ‘লাব্বায়কা’ বলা বন্ধ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ‘তান’য়ীম’ (মক্কার অদূরবর্তী হারাম শরীফ বহির্ভূত একটি স্থান) হতে যে ব্যক্তি উমরায় ইহরাম বাঁধবে, বায়তুল্লাহ্ শরীফ দৃষ্টিগোচর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন ‘লাব্বায়কা’ বলা বন্ধ না করে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল মক্কার বাহিরে বসবাসকারী ব্যক্তি ‘মীকাত’ হতে উমরার ইহরাম বেঁধে আসলে কখন তাকে ‘লাব্বায়কা’ বলা বন্ধ করতে হবে ? তিনি বললেন, হারাম শরীফে প্রবেশ করার পর সে উহা বন্ধ করে দেবে। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-ও তদ্রূপ করতেন বলে জানা গিয়েছে।
হজ্জে তামাত্তু’
মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ্ ইবনু হারিস (র) সা’দ ইবনু আবি ওককাস (রা) ও যাহ্হাক ইবনু কায়েস (রা)-এর মধ্যে হজ্জে তামাত্তু’ সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। যাহ্হাক (রা) বললেন : আল্লাহ তা’আলার হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরাই হজ্জে তামাত্তু’ করে। সা’দ বললেন, ভ্রাতুষ্পত্র, তোমার কথাটা ঠিক হয়নি। যাহ্হাক (রা) বললেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হজ্জে তামাত্তু’ করা নিষেধ করেছেন। সা’দ (রা) বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে হজ্জে তামাত্তু’ করেছেন আর আমরাও তাঁর সঙ্গে উহা করেছি। (তিরমিযী ৮২২, নাসাঈ ২৭৩৪, উমার (রা) তামাত্তু নিষেধ করেছেন বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত রয়েছে আবূ মূসা (রা) হতে,) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) আল্লাহর কসম, হজ্জের পূর্বে উমরা করা এবং কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যিলহজ্জ মাসে হজ্জ করে আবার উমরা করা হতে আমার কাছে বেশি প্রিয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যদি কেউ হজ্জের মাসে অর্থাৎ শাওয়াল, যিলকা’দা, যিলহজ্জ মাসে হজ্জের পূর্বে উমরা আদায় করে মক্কায় এতদিন অবস্থান করে, যতদিনে সে হজ্জই আদায় করতে পারে, তার এই হজ্জ তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তার উপর কুরবানী করা জরুরী হবে। যদি কুরবানী করার সামর্থ্য তার না থাকে তবে মক্কায় অবস্থানকালে তিনদিন এবং বাড়ি ফিরে আর সাতদিন তাকে রোযা রাখতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উক্ত হুকুম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন উমরা সমাপন করে হজ্জ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থানরত থাকবে এবং হজ্জও করবে। মালিক (র) বলেন, মক্কার বাসিন্দা কোন ব্যক্তি অন্য কোথাও গিয়ে বসতি স্থাপন করল। হজ্জের মাসে সে উমরা করতে এসে মক্কা শরীফে অবস্থান করে হজ্জ সমাধা করল। তার এই হজ্জ হজ্জে তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে। এই ব্যক্তির উপর কুরবানী করা জরুরী হবে। কুরবানী করতে না পারলে তাকে রোযা রাখতে হবে। মক্কায় অপরাপর স্থায়ী বাসিন্দার মত তার হুকুম হবে না। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল হজ্জের মাসে মক্কার বাহিরের অধিবাসী এক ব্যক্তি উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় এল এবং উমরা করে হজ্জ সমাধা করার নিয়তে মক্কায় রয়ে গেল। তার এই হজ্জ তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে কি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, মক্কাবাসীদের মত তার হুকুম হবে না। মক্কায় থাকবার নিয়ত যদিও সে করেছে, কিন্তু সে মক্কায় যখন প্রথম পদাপর্ণ করেছিল তখন সে মক্কার বাসিন্দা ছিল না। সুতরাং কুরবানী দেওয়া এবং কুরবানী দিতে হলে রোযা রাখা এইরূপ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হবে। এই ব্যক্তি মক্কায় কেবল অবস্থান করার নিয়ত করেছে এবং সামনের ব্যাপার কি হবে তাও সে জানে না। এমতাবস্থায় সে মক্কাবাসী বলে গণ্য হবে না। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে বলতে শুনেছেন শাওয়াল, যিলকা’দা ও যিলহজ্জ মাসে উমরা করে যদি কেউ হজ্জ পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করে এবং হজ্জ করে নেয় তবে তার এই হজ্জ হজ্জে তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে। সামর্থ্য থাকলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। অসমর্থ হলে হজ্জের সময় তিনদিন এবং হজ্জের পর বাড়ি ফিরে সাত দিন তাকে রোযা রাখতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
যে অবস্থায় তামাত্তু’ হয় না
মালিক (র) যে ব্যক্তি হজ্জের মাসে উমরা করে বাড়ি ফিরে গেল, আবার সে বৎসরেই হজ্জ করল, ঐ ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কারণ তার হজ্জ তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে না। মালিক (র) বলেন, মক্কার বাহিরের কোন ব্যক্তি যদি মক্কায় এসে সেখানে স্থায়িভাবে বসবাস করতে শুরু করে এবং হজ্জের মাসে উমরা করে সেই বৎসরেই হজ্জ করে তবে তার হজ্জ তামাত্তু’ হবে না। তার উপর কুরবানী বা রোযা কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা মক্কার নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় সে মক্কাবাসীদের মত হয়ে গেল। আর মক্কায় স্থায়ী বাসিন্দাদের হজ্জে তামাত্তু’ হয় না। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল, মক্কায় কোন স্থায়ী বাসিন্দা জিহাদ বা অন্য কোন সফরে বাহিরে চলে গিয়েছিল, পরে সে মক্কায় বসবাস করার উদ্দেশ্যে আবার সেখানে ফিরে এল, সে হজ্জের মাসে উমরার নিয়তে মক্কায় এসে উমরা সমাধা করার পর ঐ বৎসর হজ্জও করল, ঐ ব্যক্তির হজ্জ কি হজ্জে তামাত্তু’ হবে ? মালিক (র) বললেন, না, তার হজ্জ তামাত্তু’ বলে গণ্য হবে না এবং তার উপর কুরবানী বা রোযা কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন ذَلِكَ لِمَنْ لَمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ. এটা তাদের জন্য যাদের পরিজনবর্গ মসজিদুল হারামের বাসিন্দা নয়। ২ ১৯৬
উমরা সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, এক উমরা আরেক উমরার মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের জন্য কাফফারাস্বরূপ। জান্নাতই মকবুল হজ্জের প্রতিবাদ। (বুখারী ১৭৭৩, মুসলিম ১৩৪৯) সুমাই (র) সুমাই (র) আবূ বক্র ইবনু আবদুর রহমান (র)-কে বলতে শুনেছেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে এসে আরয করল হজ্জের সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করা সত্ত্বেও একটি বাধার কারণে আমি হজ্জ করতে পারিনি, এখন কি করব ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, রমযান মাসে উমরা করে নাও। রমযান মাসের উমরাতে হজ্জের সমান সওয়াব রয়েছে। (আবূ দাঊদ ১৯৮৮, আল বানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনান আবূ দাঊদ] আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, হজ্জ ও উমরার মাসে তোমরা ব্যবধান রেখো যাতে হজ্জ ও উমরা উভয়ই সম্পূর্ণরূপে আদায় হতে পারে। এর উপায় হল, হজ্জের মাসে তোমরা উমরা করো না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়াত পৌঁছিছে যে, উসমান ইবনু আফফান (রা) যখন উমরা করতেন, মদীনায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত উট হতে অবতরণ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উমরা করা সুন্নত। এমন কোন মুসলমান দেখা যায়নি যিনি এটা পরিত্যাগ করার অনুমতি দেন। মালিক (র) বলেন, একই বৎসরে একাধিক উমরা করা জায়েয নয়। মালিক (র) বলেন, উমরার ইহরাম বেঁধে স্ত্রী সহবাস করলে উমরা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তাঁর উপর আরেকটি উমরা কাযা ও একটি কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। তাই সত্বর তাকে উহার কাযা আদায় করে নেওয়া উচিত। যে স্থান হতে প্রথম উমরার ইহরাম বেঁধেছিল সেই স্থান হতেই তাকে এই কাযা উমরার ইহরাম বাঁধতে হবে, তবে প্রথম উমরার ইহরাম নির্দিষ্ট মীকাতের পূর্বে বেঁধে থাকলে কাযা উমরার ইহরাম মীকাত হতে বাঁধবে। মালিক (র) বলেন, উমরার ইহরাম বেঁধে কোন ব্যক্তি মক্কায় এল এবং জানাবত (গোসল ফরয হওয়া) অবস্থায় বা ওযূ ব্যতিরেকে সে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করল। পরে ভুলবশত স্ত্রীসহবাস করল। অতঃপর উমরার কথা তার মনে পড়ল। তখন সে গোসল বা ওযূ করে পুনরায় তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করবে এবং তদস্থলে অন্য একটি উমরা কাযা করবে ও একটি কুরবানী দেবে। মহিলাও ইহরামরত অবস্থায় তদ্রূপ কিছু করলে তাকেও (পুরুষদের মত) আমল করতে হবে। তান’য়ীম নামক স্থান হতে উমরার ইহরাম বাঁধার ব্যাপারে মালিক (র) বলেন, হারাম শরীফ হতে বের হয়ে যে কোন স্থান হতে উমরার ইহরাম বাঁধতে পারবে। আল্লাহর ইচ্ছায় এই ইহরামই মুহরিমের জন্য যথেষ্ট। তবে মীকাত হতে ইহরাম বাঁধা উত্তম। কারণ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত স্থান হতে ইহরাম বাঁধা নিঃসন্দেহে উত্তম এবং তান’য়ীম হতে দূরে অবস্থিত।
ইহরাম থাকা অবস্থায় বিবাহ করা
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর আযাদকৃত গোলাম আবূ রাফি’ এবং জনৈক আনসারী ব্যক্তিকে পাঠালেন। তাঁরা দুজনে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পক্ষে মায়মুনা বিনতে হারিসের কাছে বিবাহের পয়গাম দিলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন মদীনা হতে মক্কার পথে যাত্রা করেননি। (সহীহ, ইমাম তিরমিযী ৮৪১, আবূ রাফি’ থেকে বর্ণনা করেন। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে তিরমিযী] তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) নুবাইহ্ ইবনু ওহাব (র) তাঁকে উমার ইবনু উবায়দুল্লাহ্ (র)-এর এবং আবান ইবনু উসমান (র)-এর নিকট বলে পাঠালেন, (তাঁরা দু’জনে তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন) শায়বাহ্ ইবনু যুবায়রের মেয়ের সহিত আমার পুত্র তালহা ইবনু উমারের বিবাহ প্রদান করতে ইচ্ছা করেছি। আপনিও এতে শামিল হবেন বলে আশা করি। এই সংবাদ পেয়ে আবান ইবনু উসমান (র) আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বললেন, উসমান ইবনু আফফান (রা)-এর নিকট আমি শুনেছি, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুহরিম (ইহরামরত ব্যক্তি) নিজেও বিবাহ করবে না এবং অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের পয়গামও দিবে না। (সহীহ, মুসলিম ১৪০৯) আবূ গাতফান ইবনু তরীফ মূররী (র) আবূ গাতফান ইবনু তরীফ মূররী (র) বর্ণনা করেন তাঁর পিতা তরীফ ইহরাম অবস্থায় মক্কায় এক মহিলাকে বিবাহ করেন, কিন্তু উমার ইবনু খাত্তাব (রা) এটা বাতিল বলে ঘোষণা করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, মুহরিম ব্যক্তি বিবাহ করবে না বা বিবাহের পয়গাম দেবে না, নিজের হোক বা অন্যের, সকল অবস্থায়ই তা নিষিদ্ধ। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) মালিক (র) জ্ঞাত হয়েছেন যে, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র), সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ (র) এবং সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র)-কে মুহরিম ব্যক্তির বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা সকলেই বলেছিলেন মুহরিম ব্যক্তি নিজে বিবাহ করবে না বা বিবাহ করাবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি ইচ্ছা করলে এবং ইদ্দতের ভিতর হইলে তার স্ত্রীর প্রতি রুজু করতে পারে। (রজয়ী তালাক দেয়া স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারে।)
মুহরিম ব্যক্তির শিঙ্গা লাগানো
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) ইহরাম অবস্থায় মাথায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সেদিন তিনি মক্কাগামী পথের উপর উপস্থিত ‘লাহ্ইয়া জামাল’ নামক স্থানে ছিলেন। (বুখারী ১৮৩৬, ইমাম মুসলিম ইবনু ওয়াইনার বরাত দিয়ে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ১২০৩, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি [মুরসাল]) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, বাধ্য না হলে মুহরিমের জন্য শিঙ্গা লাগানো উচিত নয়। মালিক (র)-ও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কোন ধরনের শিকারকৃত বস্তু মুহরিম খেতে পারে
উমার ইবনু আবদুল্লাহ্ মাওলা আবূন নাযর (র) উমার ইবনু আবদুল্লাহ্ মাওলা আবূন নাযর (র) নাফি’ (র) হতে বর্ণনা করেন তিনি ছিলেন আবূ কাতাদার মাওলা। নাফি’ (র) বলেছেন, আবূ কাতাদা আনসারী (রা) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এক সফরে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলেন। কতিপয় মুহরিম সঙ্গীসহ তিনি পেছনে থেকে যান। তিনি নিজে অবশ্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিলেন না। হঠাৎ একটা বন্য গাধা দৃষ্টিগোচর হল, তৎক্ষণাৎ একটি ঘোড়ায় আরোহণ করে তিনি উহা শিকার করতে ছুটলেন। সঙ্গীদের নিকট চাবুক চাইলেন; কিন্তু কেউই দিলেন না, বর্শাখানা চাইলে তাও কেউ দিলেন না। শেষে তিনি নিজে ঘোড়া হতে নেমে এসে বর্শা সংগ্রহ করলেন এবং উক্ত গাধাটিকে শিকার করলেন। সঙ্গিগণের কেউ কেউ এর গোশত খেলেন, আর কেউ কেউ খেতে অস্বীকৃতি জানালেন। পরে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে যখন সাক্ষাৎ হল তখন উক্ত ঘটনা তাঁকে জানালে তিনি বললেন, উহা এমন এক খাদ্য ছিল যা আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে খাওয়াইছেন। [১] (বুখারী ৫৪৯১, মুসলিম ১১৯৬) উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র) যুবায়র ইবনু আওয়াম (রা) ইহরাম অবস্থায় পাথেয় হিসেবে হরিণের ভুনা গোশত সঙ্গে নিতেন। মালিক (র) বলেন, সফীফ অর্থ হল ‘কাদীদ’ অর্থাৎ শুকনা গোশত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী ‘আতা ইবনু ইয়াসার (র) আবূ কাতাদা (রা)-র বন্য গাধা শিকার সম্পর্কে আবূন্ নাযরের হাদীসটির মতই বর্ণনা করেছেন। তবে যায়দ ইবনু আসলাম (র) বর্ণিত হাদীসে শিকার সংক্রান্ত ঘটনায় নিম্নোক্ত বাক্যটি রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বলেছেন, উহার কোন গোশত অবশিষ্ট আছে কি? (বুখারী ৫৪৯১, মুসলিম ১১৯৬) ঈসা ইবনু তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ্ (র) ঈসা ইবনু তালহা ইবনু ওবায়দুল্লাহ্ (র) উমায়র ইবনু সালমা জমরী (র) হতে বর্ণনা করেন উমায়র তাঁকে খবর দিয়েছেন যে, বাহযী [১] (রা) বর্ণনা করেন ইহরাম বেঁধে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, রওহা নামক স্থানে পৌঁছে একটি বন্য গাধা দেখতে পাওয়া গেল। এটা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে আলোচনা করলে তিনি বললেন, ছেড়ে দাও. এখন হয়তো উহার মালিক আসবে। ততক্ষণে বাহযী এসে পৌঁছালেন, আর তিনিই উহার মালিক ছিলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা আপনার, সকল ইখতিয়ার আপনারই। শেষে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশে আবূ বক্র (রা) সঙ্গীদের মধ্যে উহার গোশত বণ্টন করে দেন। পরে সকলেই সম্মুখে অগ্রসর হলেন। রুয়াইসা ও ‘আরজ নামক স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী উসায়া নামক স্থানে যখন পৌঁছালেন তখন একটি গাছের ছায়ায় একটি তীরবিদ্ধ হরিণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। বর্ণনাকারী ধারণা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন এক ব্যক্তিকে হরিণটির নিকট দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে নির্দেশ দিলেন, যাতে সকলেই তাকে অতিক্রম করে সম্মুখে চলে না যাওয়া পর্যন্ত কেউ উহার কোন কিছু করতে না পারে। (সহীহ, নাসাঈ ২৮১৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ]) আবূ হুরায়রা (রা) তিনি বাহরাইন হতে আসতেছিলেন। রবাজা নামক স্থানে ইহরাম বাঁধা অবস্থায় কতিপয় ইরাকী আরোহীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল। তারা তাঁকে শিকারের গোশত খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। উক্ত শিকার রবাজাবাসীদের ছিল। আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, পরে এই ফতওয়া সম্পর্কে আমার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। মদীনায় এসে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে তা জানালাম। তিনি বললেন, তুমি তাদেরকে এ সম্পর্কে কি বলেছিলে ? আমি বললাম তাদেরকে উহা খেতে পারে বলে মত দিয়েছিলাম। তখন তিনি বললেন, এট না বলে অন্য কিছু যদি বলতে তবে তোমাকে আমি শায়েস্তা করতাম অর্থাৎ তিনি তাকে ভয় দেখালেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ (র) আবূ হুরায়রা (রা)-কে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। আবূ হুরায়রা (রা) বলতেছিলেন, যে রবাজা নামক স্থানে ইহরাম অবস্থায় কতিপয় লোকের সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। ইহরামবিহীন লোকের শিকারকৃত পশু যা তারা খাচ্ছে সে পশুর গোশত তারা খেতে পারবে কিনা এই সম্পর্কে তাঁর ফতওয়া জিজ্ঞেস করা হল। তিনি তাদেরকে তা খেতে পারে বলে ফতওয়া দেন। তিনি বলেন, পরে মদীনায় এসে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তুমি কি ফতওয়া দিয়েছিলে ? আমি বললাম ঐ গোশত খেতে পারে বলে ফতওয়া দিয়েছিলাম। তিনি বললেন, এই ফতওয়া না দিয়ে যদি অন্য কোন ফতওয়া তুমি দিতে তবে তোমাকে আমি শাস্তি দিতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী কা’ব আহবার (র) যখন সিরিয়া হতে আসেন কতিপয় ইহরাম বাঁধা আরোহীও তখন তাঁর সঙ্গী হয়। পথে তাঁরা কিছু শিকারের গোশত পেলেন। কা’ব (র) তাদেরকে তা খেতে অনুমতি দিলেন। ঐ আরোহী দল মদীনায় এসে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে উক্ত ঘটনা জানালেন। তিনি বললেন, তোমাদেরকে উক্ত গোশত খেতে কে ফতওয়া দিয়েছিলেন ? তাঁরা বললেন, কা’ব (র)। তিনি বললেন, ফিরে না আসা পর্যন্ত কা’বকে আমি তোমাদের আমীর বানিয়ে দিলাম। পরে মক্কার পথে তাঁরা অনেক পঙ্গপাল দেখতে পেলেন। কা’ব তাদেরকে তা খেতে বলে দিলেন। তাঁরা ফিরে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে তা জানালেন। তিনি কা’বকে বললেন, কি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তুমি এই ধরনের ফতওয়া দিলে ? কা’ব বললেন, এ জাতীয় পঙ্গপাল (টিড্ডী) সামুদ্র্রিক প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত (আর মুহরিমের জন্য সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়া জায়েয)। উমার (রা) বললেন, এটা কেমন করে কা’ব বললেন, আমীরুল মু’মিনীন ! সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, এ জাতীয় পঙ্গপাল এক প্রকার সামুদ্রিক মাছের হাঁচি হতে জন্ম হয়ে থাকে। উহা বৎসরে মাত্র দু’বারই হাঁচি দিয়া থাকে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল পথে শিকারের গোশত পাওয়া গেলে মুহরিম ব্যক্তি তা ক্রয় করতে পারে কি? তিনি বললেন, হজ্জযাত্রীদের নিয়তে শিকার করে থাকলে তা আমার কাছে মাকরূহ বলে মনে হয়, তবে সাধারণভাবে বিশেষ কোন নিয়ত ব্যতিরেকে শিকার করা হয়ে থাকলে উহা ক্রয় করায় দোষের কিছুই নেই। মালিক (র) বলেন, ইহরাম বাঁধার সময় কোন ব্যক্তির নিকট তৎকর্তৃক শিকারকৃত কোন পশু ছিল অথবা শিকারকৃত কোন পশু ক্রয় করল। তবে তা ছেড়ে দেয়া তার জন্য জরুরী নয়, বরং বাড়িতে তা রেখে যাবে। মালিক (র) বলেন, সমুদ্র, নদী-নালা এবং পুকুর ইত্যাদির মাছ মুহরিমগণ শিকার করতে পারবে।
যে ধরনের শিকার মুহরিম খেতে পারে না
সা’ব ইবনু জাসসামা লায়সী (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থান করতেছিলেন। তখন তিনি (রাবী) একটা বন্য গাধা হাদিয়া হিসেবে তাঁর খেদমতে পেশ করেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা ফিরিয়ে দিলেন। সা’ব (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতে আমার চেহারায় দুঃখের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেতে দেখে বললেন, আমরা মুহরিম, (ইহরাম) অবস্থায় আছি। কেবল এজন্য এটা ফিরিয়ে দিয়েছি। (বুখারী ১৮২৫, মুসলিম ১১৯৩) আবদুল্লাহ্ ইবনু রবী’আ (র) গরমের সময় আরজ নামক স্থানে উসমান ইবনু আফফান (রা)-কে ইহরামের হালতে একটি লাল কম্বল দ্বারা মুখ ঢেকে বসে থাকতে দেখলাম। সে সময় শিকার করা জন্তুর কিছু গোশত তাঁর কাছে পেশ করা হয়। তিনি সঙ্গীদেরকে তা খেয়ে নিতে বললেন। সঙ্গীরা বললেন, আপনি নিজে খাচ্ছেন না ? উসমান (রা) বললেন, আমি তোমাদের মত নই, এটা আমার জন্য শিকার করা হয়েছে, সুতরাং আমি খেতে পারি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) তাঁকে বলেছেন, ভ্রাতুষ্পুত্র, ইহরামের মাত্র দশটা দিন বাকি। মনে যদি দ্বিধা-সন্দেহের সৃষ্টি হয়, তবে শিকারের গোশত খাওয়া এই কয়দিন একেবারেই ছেড়ে দাও। মালিক (র) বলেন, মুহরিম ব্যক্তির নিয়তে কোন প্রাণী শিকার করা হয়ে থাকলে, আর ঐ ব্যক্তি তা জানা থাকা সত্ত্বেও যদি উক্ত শিকার ভক্ষণ করে, তবে তাকে উহার পরিবর্তে বদলা আদায় করতে হবে। মালিক (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল যদি খাদ্যাভাবের দরুন মুহরিম ব্যক্তির জন্য মৃত পশু খাওয়া জায়েয হয়, এমতাবস্থায় সে মৃত প্রাণী খাবে, না শিকারকৃত প্রাণী খাবে ? তিনি বললেন, সে মৃত প্রাণী খাবে। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা কালামে পাকে উপায়হীন অবস্থায় মৃত প্রাণী খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, পক্ষান্তরে মুহরিমের জন্য কোন অবস্থায়ই শিকারকৃত প্রাণী আহারের অনুমতি প্রদান করেননি। মালিক (র) বলেন, মুহরিম যদি কোন প্রাণী শিকার করে বা ঐ জাতীয় প্রাণী যবেহ করে, তবে তা খাওয়া মুহরিম বা হালাল (যিনি ইহরাম অবস্থায় নাই) কোন ব্যক্তির জন্যই জায়েয নয়। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে তা যবেহ বলে গণ্য হয় না। মালিক (র) বলেন, শিকার সে নিজে আহার করুক বা শিকার করার পর নিজে আহার না করুক, উভয় অবস্থায়ই তাকে একই ধরনের কাফফারা দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হারাম শরীফের এলাকায় শিকার করা
মালিক (র) হারাম শরীফের এলাকায় যদি কোন প্রাণী শিকার করা হয় বা হারাম শরীফের এলাকায় কোন প্রাণীকে লক্ষ করে শিকারী কুকুর ছাড়া হয় আর তা যদি হারাম শরীফের বাইরে নিয়েও তাকে শিকার করে তবু উক্ত পশু খাওয়া হালাল নয়। যে ব্যক্তি ঐ ধরনের কাজ করবে তাকে কাফফারা হিসেবে তার বদলা দিতে হবে। আর যদি হারাম শরীফের বাহিরে কোন প্রাণীকে লক্ষ করে শিকারী কুকুর ছাড়া হয় আর তা হারাম শরীফের ভেতর এনে শিকার করে, তবে তাও খাওয়া জায়েয নয়, কিন্তু উক্ত ব্যক্তির উপর কাফ্ফারা আসবে না। তবে হারাম শরীফের অতি নিকট সীমানায় যদি কুকুর ছেড়ে থাকে তবে তাকেও কাফ্ফারা দিতে হবে।
শিকার করার প্রতিফল
মালিক (র) আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন হে মু’মিনগণ, ইহরাম অবস্থায় তোমরা কোন প্রাণী শিকার করো না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার করে তবে যা শিকার করল তদ্রূপ একটি গৃহপালিত পশু তাকে বদলা দিতে হবে। এর ফয়সালা তোমাদের মধ্যে দুজন তাকওয়ার অধিকারী লোক করে দেবে। এইরূপ ধার্যকৃত পশু কুরবানী হিসেবে মক্কায় প্রেরিত হবে অথবা উহার কাফফারা হবে মিসকীনকে আহার্য দান করা বা সমপরিমাণ রোযা রাখা যাতে সে স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে পারে। মালিক (র) বলেন, কোন ইহরামবিহীন ব্যক্তি যদি কোন প্রাণী শিকার করে পরে ইহরাম বেঁধে উক্ত শিকার বধ করে তবে সে ঐ মুহরিম ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি শিকারকৃত প্রাণী খরিদ করে বধ করে। আল্লাহ্ উহা হতে নিষেধ করেছেন, সুতরাং উক্ত ব্যক্তির উপরও উহার বিনিময় প্রদান ওয়াজিব হবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হল, মুহরিম একা বা দলবদ্ধভাবে যেভাবেই শিকার করুন না কেন তাঁর উপর বদলা দেওয়ার হুকুম প্রযোজ্য হবে। মালিক (র) বলেন, এই বিষয়ে সর্বোত্তম যে কথা আমি শুনেছি তা হল শিকারকৃত প্রাণীটির মূল্য হিসেব করে দেখা হবে যে, ঐ মূল্যের বিনিময়ে কত পরিমাণ শস্য বাজারে পাওয়া যায়। পরে এক এক ‘মুদ’ পরিমাণ শস্য এক একজন মিসকীনদের দিয়ে দেওয়া হবে বা এক এক মুদ হিসেবে যত পরিমাণ মুদ হবে তত সংখ্যক রোযা রাখবে। মিসকীনদের সংখ্যা হিসেবে তা হবে। দশজন মিসকীন হলে দশ রোযা, বিশজন হলে বিশ রোযা, এইভাবে সংখ্যা ষাটের অধিকও যদি হয়ে যায় তবে তত পরিমাণ রোযা তাকে রাখতে হবে। মালিক (র) বলেন, আমি শুনেছি যে, ইহরামবিহীন ব্যক্তি হারাম শরীফের অভ্যন্তরে কোন প্রাণী শিকার করলে তার উপর ইহরাম বেঁধে হারমের ভিতর বধ করার মত হুকুম হবে।
ইহরাম অবস্থায় কোন্ ধরনের প্রাণী হত্যা করা জায়েয
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী মুহরিম ব্যক্তি যদি হত্যা করে তবে তার কোন গুনাহ হবে না কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর (বা হিংস্র জন্তু, যথা বাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদি)। (বুখারী ১৮২৮, মুসলিম ১১৯৯) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, পাঁচ ধরনের প্রাণী ইহরাম অবস্থায় যদি কেউ হত্যা করে, তবে তার কোন গুনাহ্ হবে না, যথা বিচ্ছু, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর, চিল ও কাক। (বুখারী ৩৩১৫, মুসলিম ১২০০) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ প্রকার প্রাণী ফাসিক। এগুলো হারাম শরীফের ভিতর ও বাহিরে যেকোন স্থানে পাওয়া গেলে মেরে ফেলা উচিত; যথা ইঁদুর, বিচ্ছু, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর। (সহীহ, মুসলিম ১১৯৮) ইবনু শিহাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হারাম শরীফে সাপ মারার হুকুম দিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, হিংস্র কুকুর বলতে যাকে হারাম শরীফে হত্যার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা এই ধরনের পশুকে বুঝায় যা মানুষকে কামড়ায় বা হামলা করে বা ভয় প্রদর্শন করে, যেমন সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ ইত্যাদি। কিন্তু যে সমস্ত পশু হিংস্র বটে, তবে হামলা করে না, যেমন হায়েনা, শিয়াল, বিড়াল ইত্যাদি পশু- মুহরিম ব্যক্তির এগুলো মারা উচিত নয়। মারলে তার উপর ফিদইয়া দেওয়া ওয়াজিব। আর যে সমস্ত পাখির উল্লেখ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করেছেন (যেমন কাক ও চিল), এগুলো ব্যতীত অন্যান্য ক্ষতিকারক পাখিও মুহরিম ব্যক্তির জন্য হত্যা করলে তাকে ফিদইয়া দিতে হবে।
ইহরাম অবস্থায় কি ধরনের কাজ করা জায়েয
বর্ণনাকারী রবী’আ ইবনু আবদুল্লাহ্ ইবনু হুদায়র (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে সুক্ইয়া নামক জনপদে স্বীয় উটের উকুন বের করে কাদায় ফেলতে দেখেছেন, অথচ তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমি একে অপছন্দ করি। আলকামা ইবনু আবি আলকামা (র) আলকামা ইবনু আবি আলকামা (র) তাঁর মাতা হতে বর্ণনা করেন নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পত্নী আয়েশা (রা)- কে বলতে শুনেছি, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইহরাম অবস্থায় শরীর চুলকাতে পারবে কি ? তিনি (আয়েশা রা.) বলেন, হ্যাঁ, চুলকাতে পারবে, ভালভাবে চুলকাতে পারবে। কেউ আমার হাত বেঁধে রাখলে তবে পা দ্বারা যদি সম্ভব হয়, প্রয়োজন হলে তা দিয়েই আমি চুলকাব। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আইয়ূব ইবনু মূসা (র) চোখে অসুখ হওয়ায় আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ইহরাম অবস্থায়ও আয়না দেখেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) মুহরিম ব্যক্তির জন্য উটের উকুন ইত্যাদি বের করা মাকরূহ বলে মনে করতেন। মালিক (র) বলেন, আমার নিকট এই মতটিই অধিক প্রিয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ মরইয়াম (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, ইহরামকালে আমার একটা নখ ভেঙে গিয়েছে, এখন কি করব ? সাঈদ (র) বললেন, এটা কেটে ফেল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল মুহরিম ব্যক্তির কানে ব্যথা হলে সে কানে গন্ধবিহীন তেল ব্যবহার করতে পারবে কি ? তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। যদি মুখেও ঢালে, তবুও আমি দোষ মনে করি না। মালিক (র) বলেন, মুহরিম ব্যক্তি যদি ফোঁড়া বা ফোস্কা ফাটিয়ে দেয় বা প্রয়োজনে শিঙ্গা লাগায় তবে কোন গুনাহ হবে না।
হজ্জে-বদল
আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) ফযল ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে তাঁর পেছনে আরোহী ছিলেন। এমন সময় খাস’আম কবীলার এক মহিলা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট মাসআলা জানতে এলেন। ফযল তার দিকে তাকাতে লাগলেন আর সে মহিলাটিও ফযলকে দেখতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফযলের চেহারা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। মহিলাটি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতার উপর হজ্জ এমন সময় ফরয হল যে, বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি এত দুর্বল যে, উটের পিঠে বসতে সক্ষম নন। তাঁর পক্ষ হতে হজ্জ করা আমার জন্য বৈধ হবে কি ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, করে নাও। এই ঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের। (বুখারী ১৫১৩, মুসলিম ১৩৩৪)
শত্রু দ্বারা পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে হজ্জ সম্পাদনে ইচ্ছুক ব্যক্তি কি করবে
মালিক (র) শত্রু যদি কারো যাত্রাপথে বাধার সৃষ্টি করে এবং বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সে যদি পৌঁছাতে না পারে তবে যে স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হবে সে স্থানেই সে ইহরাম খুলে ফেলবে ও কুরবানী দিবে এবং মাথা কামাবে। তাকে আর দ্বিতীয়বার এই হজ্জ কাযা করতে হবে না। ৯৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَلَّ هُوَ وَأَصْحَابُهُ بِالْحُدَيْبِيَةِ فَنَحَرُوا الْهَدْيَ وَحَلَقُوا رُءُوسَهُمْ وَحَلُّوا مِنْ كُلِّ شَيْءٍ قَبْلَ أَنْ يَطُوفُوا بِالْبَيْتِ وَقَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَيْهِ الْهَدْيُ ثُمَّ لَمْ يُعْلَمْ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِهِ وَلَا مِمَّنْ كَانَ مَعَهُ أَنْ يَقْضُوا شَيْئًا وَلَا يَعُودُوا لِشَيْءٍ. মালিক (র) বলেন, তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মক্কার কাফিরগণ হুদায়বিয়ার ময়দানে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণকে মক্কায় যেতে বাধা দিল। তখন তাঁরা সেখানেই ইহরাম খুলে ফেলেছিলেন, হাদয়ী কুরবানী দিয়েছিলেন এবং মাথা কামায়ে ছিলেন। বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ এবং কুরবানীর পশু মক্কায় পৌঁছার পূর্বেই তাঁরা হালাল হয়ে গিয়েছিলেন। পরে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন সঙ্গী বা সাহাবীকে দ্বিতীয়বার এই হজ্জ কাযা করার বা পুনরায় করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে আমাদের জানা নাই। [১] (হাদীসটি মুরসাল, হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে এই ঘটনাটি বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে) নাফি’ (র) বিশৃংখলার বৎসর আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমরা করার নিয়তে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার সময় বলেছিলেন বায়তুল্লায় যাওয়ার পথে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই, তবে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে থাকাকালীন এই অবস্থায় আমরা যা করেছিলাম আজও তাই করব। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হুদায়বিয়ার বৎসর শুধু উমরার নিয়তেই মক্কা যাত্রা করেছিলেন এই কথা খেয়াল করে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-ও শুধু উমরার ইহরাম বাঁধলেন। পরে চিন্তা করে দেখলেন, বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার বেলায় হজ্জ ও উমরার হুকুম একই ধরনের। তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি এখন হজ্জ ও উমরা উভয়ই আমার উপর ওয়াজিব করে নিলাম। এই বলে তিনি যাত্রা শুরু করলেন এবং বায়তুল্লাহ্ এসে তাওয়াফ সমাধা করলেন, আর এইটুকুই নিজের জন্য যথেষ্ট মনে করলেন। কুরবানীর যে পশু ছিল তাও নাহর করলেন। [১] (বুখারী ১৬৩৯, মুসলিম ১২৩০) মালিক (র) বলেন, আমার মতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ যা করেছিলেন হজ্জের পথে বাধাপ্রাপ্ত হলে তাই করা উচিত। তবে শত্রুর দ্বারা নয়, অন্য কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে বায়তুল্লাহ্ না যাওয়া পর্যন্ত আর সে হালাল হবে না।
শত্রু ব্যতীত অন্য কোন কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে কি করণীয়
আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) অসুস্থতার কারণে যদি কারো যাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হয় তবে তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সা’য়ী করা ব্যতীত সে হালাল হবে না। কোন কাপড় বা ঔষধ ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে (যা ইহরাম অবস্থায় জায়েয নয়) তা ব্যবহার করবে এবং উহার ফিদইয়া দেবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিনী আয়েশা (রা) বলতেন, ইহরামকে শুধু বায়তুল্লাহই হালাল করতে পারে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আইয়ূব ইবনু আবি তামীমা সাখতীয়ানী (র) আইয়ূব ইবনু আবি তামীমা সাখতীয়ানী (র) বসরার জনৈক প্রবীণ [১] ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন, মক্কার উদ্দেশ্যে একবার রওয়ানা হলাম। পথে উট হতে পড়ে আমার উরু ভেঙে যায়। মক্কায় আমি একজনকে পাঠালাম। তখন সেখানে আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা), আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) এবং আরও অনেক বিজ্ঞ লোক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কেউই আমাকে এই অবস্থায় ইহ্রাম খুলতে অনুমতি দিলেন না। ফলে সাত মাস পর্যন্ত সেখানে আমি পড়ে রইলাম। শেষে সুস্থ হয়ে উমরা আদায় করে ইহরাম খুললাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণনাকারী আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, অসুস্থতার কারণে যদি কেউ যাত্রা করেও কাবায় পৌঁছাতে না পারে তবে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সা’য়ী না করা পর্যন্ত সে আর হালাল হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ حُزَابَةَ الْمَخْزُومِيَّ صُرِعَ بِبَعْضِ طَرِيقِ مَكَّةَ وَهُوَ مُحْرِمٌ فَسَأَلَ عَلَى الْمَاءِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ عَنْ الْعُلَمَاءِ فَوَجَدَ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَمَرْوَانَ بْنَ الْحَكَمِ فَذَكَرَ لَهُمْ الَّذِي عَرَضَ لَهُ فَكُلُّهُمْ أَمَرَهُ أَنْ يَتَدَاوَى بِمَا لَا بُدَّ لَهُ مِنْهُ وَيَفْتَدِيَ فَإِذَا صَحَّ اعْتَمَرَ فَحَلَّ مِنْ إِحْرَامِهِ ثُمَّ عَلَيْهِ حَجُّ قَابِلٍ وَيُهْدِي مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ ১৩২৯-قَالَ مَالِك وَعَلَى هَذَا الْأَمْرُ عِنْدَنَا فِيمَنْ أُحْصِرَ بِغَيْرِ عَدُوٍّ وَقَدْ أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أَبَا أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيَّ وَهَبَّارَ بْنَ الْأَسْوَدِ حِينَ فَاتَهُمَا الْحَجُّ وَأَتَيَا يَوْمَ النَّحْرِ أَنْ يَحِلَّا بِعُمْرَةٍ ثُمَّ يَرْجِعَا حَلَالًا ثُمَّ يَحُجَّانِ عَامًا قَابِلًا وَيُهْدِيَانِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ. قَالَ مَالِك وَكُلُّ مَنْ حُبِسَ عَنْ الْحَجِّ بَعْدَ مَا يُحْرِمُ إِمَّا بِمَرَضٍ أَوْ بِغَيْرِهِ أَوْ بِخَطَإٍ مِنْ الْعَدَدِ أَوْ خَفِيَ عَلَيْهِ الْهِلَالُ فَهُوَ مُحْصَرٌ عَلَيْهِ مَا عَلَى الْمُحْصَرِ. ১৩৩১-قَالَ يَحْيَى سُئِلَ مَالِك عَمَّنْ أَهَلَّ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ بِالْحَجِّ ثُمَّ أَصَابَهُ كَسْرٌ أَوْ بَطْنٌ مُتَحَرِّقٌ أَوْ امْرَأَةٌ تُطْلَقُ قَالَ مَنْ أَصَابَهُ هَذَا مِنْهُمْ فَهُوَ مُحْصَرٌ يَكُونُ عَلَيْهِ مِثْلُ مَا عَلَى أَهْلِ الْآفَاقِ إِذَا هُمْ أُحْصِرُوْ. ১৩৩২-قَالَ مَالِك فِي رَجُلٍ قَدِمَ مُعْتَمِرًا فِي أَشْهُرِ الْحَجِّ حَتَّى إِذَا قَضَى عُمْرَتَهُ أَهَلَّ بِالْحَجِّ مِنْ مَكَّةَ ثُمَّ كُسِرَ أَوْ أَصَابَهُ أَمْرٌ لَا يَقْدِرُ عَلَى أَنْ يَحْضُرَ مَعَ النَّاسِ الْمَوْقِفَ قَالَ مَالِك أَرَى أَنْ يُقِيمَ حَتَّى إِذَا بَرَأَ خَرَجَ إِلَى الْحِلِّ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى مَكَّةَ فَيَطُوفُ بِالْبَيْتِ وَيَسْعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ يَحِلُّ ثُمَّ عَلَيْهِ حَجُّ قَابِلٍ وَالْهَدْيُ ১৩৩৩-قَالَ مَالِك فِيمَنْ أَهَلَّ بِالْحَجِّ مِنْ مَكَّةَ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ وَسَعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ ثُمَّ مَرِضَ فَلَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يَحْضُرَ مَعَ النَّاسِ الْمَوْقِفَ قَالَ مَالِك إِذَا فَاتَهُ الْحَجُّ فَإِنْ اسْتَطَاعَ خَرَجَ إِلَى الْحِلِّ فَدَخَلَ بِعُمْرَةٍ فَطَافَ بِالْبَيْتِ وَسَعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ لِأَنَّ الطَّوَافَ الْأَوَّلَ لَمْ يَكُنْ اااا نَوَاهُ لِلْعُمْرَةِ فَلِذَلِكَ يَعْمَلُ بِهَذَا وَعَلَيْهِ حَجُّ قَابِلٍ وَالْهَدْيُ فَإِنْ كَانَ مِنْ غَيْرِ أَهْلِ مَكَّةَ فَأَصَابَهُ مَرَضٌ حَالَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْحَجِّ فَطَافَ بِالْبَيْتِ وَسَعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ حَلَّ بِعُمْرَةٍ وَطَافَ بِالْبَيْتِ طَوَافًا آخَرَ وَسَعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ لِأَنَّ طَوَافَهُ الْأَوَّلَ وَسَعْيَهُ إِنَّمَا كَانَ نَوَاهُ لِلْحَجِّ وَعَلَيْهِ حَجُّ قَابِلٍ وَالْهَدْيُ. সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রা) হতে বর্ণিত; মা’বদ ইবনু হুযাবা মাখযুমী (র) মক্কা আসার পথে তাঁর বাহন হতে পড়ে গিয়ে আহত হন। তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। অতঃপর একটি কূপের নিকট যাত্রা বিরতি করলেন এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন যে, সেখানে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা), আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রা) এবং মারওয়ান ইবনুল হাকাম (রা) আছেন। তাঁদের নিকট উক্ত ঘটনা বর্ণনা করলে তাঁরা বললেন, প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহার কর আর উহার ফিদইয়া আদায় করে দিও। সুস্থ হওয়ার পর উমরা আদায় করে ইহরাম খুলে ফেলো। আগামী বৎসর পুনরায় এই হজ্জ আদায় করে নিও এবং সামর্থ্যানুযায়ী কুরবানী দিও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, শত্রু ছাড়া অন্য কোন কারণে হজ্জে বাধ্যপ্রাপ্ত হলে আমাদের নিকটও মাসআলা অনুরূপ। মালিক (র) বলেন, আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) এবং হাব্বান ইবনু আসওয়াদ (রা) যখন হজ্জের নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে পারলেন না এবং নাহরের দিন উপস্থিত হলেন, সেই বৎসর দশ তারিখে মক্কায় গিয়ে পৌঁছালেন, তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাদেরকে বলেছিলেন উমরা করে ইহরাম খুলে নিন এবং এই বৎসর ফিরে যান। আগামী বৎসর হজ্জ করবেন এবং কুরবানী দিবেন। কুরবানীর সামর্থ্য না হলে আপনাদেরকে হজ্জের সময় তিনদিন এবং বাড়ি ফিরে সাতদিন রোযা রাখতে হবে। মালিক (র) বলেন, ইহরাম বাঁধার পর অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে যেমন তারিখে ভুল করার দরুন, যদি হজ্জ করতে না পারে তবে তার হুকুম মুহসারের মত হবে। [১] ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল মক্কাবাসী কোন ব্যক্তি হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধার পর তার পা ভেঙে গেল বা দাস্ত শুরু হল, এখন সে কি করবে ? তিনি বললেন, তার হুকুম মুহসারের মত। মক্কার বাহিরের অধিবাসী কোন ব্যক্তির ইহসার বা বাধ্যপ্রাপ্ত হলে যে হুকুম, এখানেও সে হুকুম প্রযোজ্য হবে। মালিক (র) বলেন, হজ্জের মাসে কোন ব্যক্তি উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কা এল এবং উমরা সমাধা করে মক্কা হতে পুনরায় হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর তার পা ভেঙে গেল বা এমন কোন কষ্ট পেল যাতে সে আরাফাতে যেতে আর সক্ষম হল না। তখন সে যখন সুস্থ হবে হারাম শরীফের বারে গিয়ে মক্কায় ফিরে আসবে এবং তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে ইহরাম খুলে ফেলবে। পরে আগামী বৎসর পুনরায় হজ্জ করবে এবং কুরবানী দিবে। মালিক (র) বলেন, কোন ব্যক্তি হজ্জের মওসুমে উমরার ইহরাম বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করল। অতঃপর উমরা পূর্ণ করে মক্কা হতে হজ্জের ইহরাম বাঁধল। অতঃপর (দুর্ঘটনায় হাত পা) ভাঙল অথবা অন্য কোন বাধার সম্মুখীন হল। ফলে অন্য লোকদের সঙ্গে আরাফাতে উপস্থিত হতে পারেনি। মালিক (র) বলেন, উক্ত ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় থাকবে। যখন সে সুস্থ হবে, হিলের (হারাম শরীফের বারে) দিকে যাবে। অতঃপর মক্কার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। তাওয়াফ করবে ও সাফা-মারওয় সা’য়ী করবে এবং হালাল হবে। তার উপর আগামী বৎসর হাদ্য়ী ও হজ্জ ওয়াজিব হবে। মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি মক্কা হতে হজ্জের ইহ্রাম বেঁধেছে, তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সা’য়ী করেছে, অতঃপর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং লোকের সঙ্গে আরাফাতে উপস্থিত হতে পারেনি। তিনি বলেন, যদি সে হজ্জ করতে না পারে যখন সম্ভব হবে তখন সে হিলের দিকে যাবে এবং উমরার নিয়ত করে মক্কায় প্রবেশ করবে। এর কারণ, প্রথমে সে তাওয়াফ ও উমরার নিয়ত করেনি। এইজন্য সে পুনরায় তাওয়াফ ও সা’য়ী করবে এবং তার উপর আগামী বৎসর হাদ্য়ী ও হজ্জ ওয়াজিব হবে। মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে সে যদি মক্কার বাহিরের লোক হয়, সে অসুস্থতার দরুন যদি হজ্জ করতে না পারে, অথচ এর পূর্বে সে তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ী করেছিল, সেই ব্যক্তি উমরা করে হালাল হবে এবং আরেকবার বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করবে। কারণ তার পূর্বের তাওয়াফ ও সায়ী ছিল হজ্জের নিয়তে। তার উপর আগামী বৎসর হাদ্য়ী ও হজ্জ ওয়াজিব হবে।
কা’বা শরীফ নির্মাণ
আয়েশা (রা) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তুমি কি লক্ষ করনি, তোমার কওম কুরাইশগণ যখন কাবা শরীফ পুনঃনির্মাণ করে তখন ইবরাহীম (আ) যে চৌহদ্দি নিয়ে এটা নির্মাণ করেছিলেন ইহা হতে কিছু কমিয়ে ফেলেছিল ? আয়েশা (রা) বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! ইবরাহীম (আ) যেমন বানিয়ে ছিলেন তদ্রূপ আপনি বানিয়ে দিচ্ছেন না কেন ? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কওমের কুফরির অবস্থা যদি অতি নিকট না হত তবে নিশ্চয়ই আমি তদ্রূপ বানিয়ে দিতাম। [১] আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, আয়েশা (রা) যদি এটা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট হতে শুনে থাকেন, আমার ধারণা এই কারণেই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাওয়াফের সময় হাতীম সংলগ্ন রুকনে শামী এবং রুকনে ইরাকী ইস্তিলাম করতেন না, ছুঁতেন না। কেননা ইবরাহীম (আ)-এর বুনিয়াদের উপর কা’বা শরীফের নির্মাণ হয়নি। (বুখারী ১৫৮৩, মুসলিম ১৩৩৩) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) বলেছেন, আমি পরওয়া করি না, নামায হাতীমে আদায় করি বা কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে আদায় করি। (অর্থাৎ এই দুই স্থানের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না কেননা হাতীমও কা’বার অংশ)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তিনি ইবনু শিহাব (র)-কে বলতে শুনেছেন কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছি, তাঁরা বলেন, হাতীমের পাশে দেয়াল উঠানোর এবং তাওয়াফের মধ্যে শামিল করার কারণ হল এতে সম্পূর্ণ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ যেন আদায় হয়ে যায়। (কেননা এটাও বায়তুল্লাহর অংশ)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
তাওয়াফের সময় রমল করা (কিছুটা দ্রুত হাঁটা)
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে দেখেছি, হাজরে আসওয়াদ হতে আরম্ভ করে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফে (চক্করে) তিনি রমল করেছেন। [১] (সহীহ, মুসলিম ১২৬৩) মালিক (র) বলেন, আমাদের শহরস্থ আলিমদের অভিমত এটাই। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) হাজরে আসওয়াদ হতে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন তাওয়াফে রমল করতেন আর বাকি তাওয়াফগুলোতে সাধারণভাবে চলতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা যখন বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ করতেন তখন তিন তাওয়াফে দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে চলতেন এবং এই দু’আ পড়তেন اَللّٰهُمَّ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَا وَأَنْتَ تُحْيِ بَعْدَ مَا أَمَتَّا [২] হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রা)-কে তান’য়ীম নামক স্থান হতে উমরার ইহ্রাম বাঁধতে দেখেছেন এবং বায়তুল্লাহ্র চতুষ্পার্শ্বে প্রথম তিন তাওয়াফে রমল করতে দেখেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যখন মক্কা হতে ইহরাম বাঁধতেন তখন মীনা হতে ফিরে না আসা পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সায়ী করতেন না, রমলও করতেন না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
তাওয়াফ করার সময় ‘ইস্তিলাম’ [১] করা
মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাওয়াফ করার পর দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সাফা-মারওয়াব দিকে রওয়ানা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি হাজরে আসওয়াদ ইস্তিলাম (স্পর্শ) করলেন। (সহীহ, মুসলিম ১২১৮, ইমাম মুসলিম হাদীসটিকে জাবের (র)-এর বরাত দিয়ে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল।) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা)-কে বললেন, হে আবূ মুহাম্মদ, কিরূপে তুমি হাজরে আসওয়াদে ইস্তিলাম কর? তিনি বললেন, কখনও ইস্তিলাম করেছি আর কখনও করিনি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি ঠিক করেছ। (হাকিম ৩/৩০৬, ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) বর্ণনা করেন তাঁর পিতা উরওয়া বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার সময় সকল রুকনই ছুঁতেন। বিশেষত একান্ত বাধ্য না হলে রুকনে ইয়ামানীর ইস্তিলাম পরিত্যাগ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
ইস্তিলামের সময় হাজরে আসওয়াদে চুমা দেওয়া
হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফের সময় উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হাজরে আসওয়াদকে লক্ষ করে বলতেন, ‘তুমি শুধু একখানা পাথর, লাভ-লোকসানের কোন ক্ষমতা তোমার নেই। রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে যদি তোমাকে চুমা দিতে না দেখতাম তবে আমিও তোমাকে চুমা দিতাম না।’ অতঃপর তিনি হাজরে আসওয়াদ চুমা দিলেন। [১] (বুখারী ১৬০৫, মুসলিম ১২৭০, মুত্তাসিল ভাবে) মালিক (র) বলেন, কতিপয় আলিমকে বলতে শুনেছি, রুকনে ইয়ামানী ইস্তিলাম করে হাত দ্বারা মুখ স্পর্শ করা মুস্তাহাব, সরাসরি উহাকে চুমা দিবে না।
তাওয়াফের দুই রাক’আত নামায
হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি দুই সাব্আর মাঝখানে নামায না পড়ে উভয়কে একত্র করতেন না, বরং তিনি প্রত্যেক সাব্আর পর দুই রাক’আত নামায আদায় করতেন মাকামে ইবরাহীমের নিকট, আর কখনও পড়তেন অন্যত্র। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল কেউ যদি কয়েক সাবআর পর একত্রে সবগুলোর নামায আদায় করে তবে তা জায়েয হবে কি ? তিনি বললেন, জায়েয হবে না। প্রতি সাবআর (সাত তাওয়াফ) সঙ্গে সঙ্গেই দুই রাক’আত নামায পড়া সুন্নত। মালিক (র) বলেন, ভুল করে যদি কেউ আট বা নয় চক্কর (তাওয়াফ) দিয়ে ফেলে তবে যখনই মনে পড়বে তাওয়াফ ছেড়ে দিবে এবং দুই রাক’আত নামায আদায় করে নিবে। অতিরিক্ত তাওয়াফগুলো ধর্তব্যের বলে মনে করবে না এবং দুই সাবআ সমাধা করে পরে একত্রে নামায আদায় করা সঙ্গত নয়। প্রতি সাব্আর (সাত তাওয়াফ) সঙ্গে সঙ্গেই দুই রাক’আত নামায পড়া সুন্নত। মালিক (র) বলেন, তাওয়াফ করে দুই রাক’আত নামায আদার করার পর সাত তাওয়াফ (চক্কর) পুরা হয়নি বলে যদি কারো মনে সন্দেহ হয় তবে তাকে য়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)-এর উপর ভিত্তি করে তাওয়াফ পুরো করে আবার দুই রাক’আত নামায আদায় করতে হবে। কারণ সাত চক্কর পূর্ণ করার পরই তাওয়াফের নামায পড়তে হয়। মালিক (র) বলেন, তাওয়াফ বা সায়ী করার সময় যদি কারো ওযূ নষ্ট হয়ে যায়, তবে ওযূ করে পুনরায় নতুন করে তাওয়াফ করবে এবং সায়ীর যে কয় চক্কর অবশিষ্ট ছিল তা পুরা করবে।
ফজর ও আসরের পর তাওয়াফের নামায আদায় করা
বর্ণনাকারী আবদুর রহমান ইবনু আবদ আল-কারিয়্যে (র) ফজরের নামাযের পর উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর সঙ্গে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যখন তাওয়াফ শেষ করেন তখনও সূর্যোদয় হয়নি। তিনি উটে আরোহণ করে বাহিরে গেলেন এবং যী-তুয়া নামক স্থানে পৌঁছে উট হতে অবতরণ করে দুই রাক‘আত নামায আদায় করেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবু যুবায়র মক্কী (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা)-কে আসরের পর তাওয়াফ করতে দেখতে পেলাম। তাওয়াফের পর হুজরায় চলে গেলেন। জানি না সেখানে তিনি কি করেছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবু যুবায়র মক্কী (র) আমি দেখেছি আসর ও ফজরের পর বায়তুল্লাহ্ খালি হয়ে পড়ত। ঐ সময় কোন তাওয়াফকারী থাকত না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, তাওয়াফ শুরু করার পর ফজর বা আসরের জামাতের তাকবীর শুরু হলে ইহা ত্যাগ করে ইমামের সাথে নামাযে শামিল হওয়া উচিত। নামায পড়ার পর অবশিষ্ট তাওয়াফ পুরা করবে। কিন্তু তাওয়াফের দুই রাক’আত নামায ফজরের সময় সূর্যোদয় এবং আসরের সময় সূর্য অস্থ না যাওয়া পর্যন্ত আদায় করবে না। মাগরিবের পর যদি উহা পড়ে তবে উহাতেও কোন দোষ নাই। মালিক (র) বলেন, সাত চক্করের উপর বৃদ্ধি না করে যদি কোন ব্যক্তি ফজর ও আসরের পর তাওয়াফ করে এবং তাওয়াফের দুই রাক’আত নামায সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়, যেরূপ উমার ইবনু খাত্তাব (রা) করেছিলেন, তাতে কোন দোষ নেই। আর যদি আসরের পর তাওয়াফ করে থাকে তবে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে তাওয়াফের নামায আদায় করবে না। সূর্যাস্তের পর ইচ্ছা করলে তাওয়াফের দুই রাক’আত নামায আদায় করে নিবে অথবা ইচ্ছা করলে মাগরিবের নামায সমাপ্ত করার পর আদায় করবে, এতে কোন ক্ষতি নেই।
বিদায়ী তাওয়াফ
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফ না করে হাজীগণের কেউ যেন মক্কা হতে না ফিরে। কারণ হজ্জের শেষ আমল হল বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ‘শেষ আমল বায়তুল্লাহর তাওয়াফ’ উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর উক্তির অর্থ হল, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মর্যাদা দেবে উহা তার আল্লাহভীতি হতেই উৎসারিত।’ এ সবকিছুরই সম্পর্ক বায়তুল্লাহর সঙ্গে । সুতরাং হজ্জের সমস্ত রুকন ও আমল বায়তুল্লাহ্তে যেয়েই শেষ হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) এক ব্যক্তিকে মাররুয-যাহরান (মক্কা শরীফ হতে ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত একটি স্থান) হতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ সে ‘তাওয়াফুল বিদা’ করে আসেনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, তাওয়াফে ইফাযা (তাওয়াফে যিয়ারত) যে ব্যক্তি করতে পেরেছে আল্লাহ্ তার হজ্জ পুরা করে দিয়েছেন। পরে বিশেষ অসুবিধা দেখা না দিলে সে যেন তাওয়াফূল-বিদা’ও করে নেয়। যদি কোন অসুবিধা দেখা দেয় এবং এই কারণে বিদায়ী তাওয়াফ করতে না পারে তবে তাওয়াফে ইফাযা আদায় করায় হজ্জ তার পুরো হয়ে গিয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত করার পর তাওয়াফুল বিদা’ জানা না থাকার কারণে যদি কেউ তা না করে মক্কা হতে চলে আসে তবে আর তার জন্য ফিরে যাওয়া জরুরী নয়। তবে মক্কার নিকটবর্তী স্থানে থাকলে পুনরায় গিয়ে বিদায়ী-তাওয়াফ করে নেওয়া উচিত।
তাওয়াফের বিবিধ রেওয়ায়ত
নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহধর্মিনী উম্মে সালমা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেন, পুরুষদের পেছনে থেকে কোন বাহনে আরোহণ করে তোমার তাওয়াফ আদায় করে নাও। উম্মে সালমা (রা) বলেন, আমি তাওয়াফ করলাম, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন কা’বা শরীফের এক কোণায় নামাযে দাঁড়িয়ে সূরা তূর পড়িতেছিলেন। (বুখারী ৪৬৪, মুসলিম ১২৭৬) আবূয যুবায়র মক্কী (র) আবা মায়িয আসলামী আবদুল্লাহ্ ইবনু সুফইয়ান (র) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট বসা ছিলেন। তখন এক মহিলা এসে বলল, আমি বায়তুল্লাহ্র তাওয়াফের ইচ্ছা করেছিলাম। মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে আমার ঋতুস্রাব আরম্ভ হল। এমতাবস্থায় আমি ফিরে যাই। পরে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে আবার তাওয়াফের জন্য আসি, কিন্তু মসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছতেই আবার ঋতুস্রাব শুরু হল। ফলে আবার ফিরে গেলাম। শেষে ঋতুস্রাব বন্ধ হলে আবার তাওয়াফ করতে গেলাম। কিন্তু এইবারও দরজা পর্যন্ত যেতে না যেতে পুনরায় রক্ত দেখা দেয়। এখন কি করব ? আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বললেন, ইহা শয়তানের কাণ্ড! গোসল করে লজ্জাস্থানে কাপড়ের পট্রি দিয়ে তাওয়াফ সেরে নাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সা’দ ইবনু আবি ওয়াককাস (রা) মক্কায় পৌঁছে যদি দেখতেন নয় তারিখ অতি নিকটবর্তী (সময় অতি অল্প), তবে তাওয়াফ ও সায়ী করার পূর্বেই আরাফাতে চলে যেতেন এবং সেখান হতে ফিরবার পর তাওয়াফ করতেন। মালিক (র) বলেন, সময় সংকীর্ণ হলে এইরূপ করা (আরাফাতে প্রথমে যাওয়া) জায়েয। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল ওয়াজিব তাওয়াফ আদায় করার সময় কারো সাথে কথা বলার জন্য কি থেমে যাওয়া বৈধ ? তিনি বললেন, আমি তা পছন্দ করি না। মালিক (র) বলেন, তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী পবিত্রতার সহিত করা উচিত।
সা’য়ী সাফা হতে শুরু হবে
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মসজিদ হতে সাফার উদ্দেশ্যে যখন বের হলেন তখন শুনেছি, তিনি বলতেছেন, আল্লাহ্ যে স্থানটির উল্লেখ প্রথমে করেছিলেন আমরাও সে স্থান হতে শুরু করব। অতঃপর তিনি সাফা হতে সা’য়ী করা শুরু করেন। [১] (সহীহ, মুসলিম ১২১৮) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সাফায় গিয়ে দাঁড়াতেন তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং এ দু’আ পড়তেন لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ [১] . তিনবার এটা পড়ে পরে দু’আ করতেন। মারওয়া পাহাড়েও তিনি এরূপ করতেন। (সহীহ, মুসলিম ১২১৮, পূর্বের হাদীসেরই অংশ) নাফি’ (র) তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-কে সাফার উপর দাঁড়িয়ে এই দু’আ পড়তে শুনেছেন اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ قُلْتَ { ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ } وَإِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ وَإِنِّي أَسْأَلُكَ كَمَا هَدَيْتَنِي لِلْإِسْلَامِ أَنْ لَا تَنْزِعَهُ مِنِّي حَتَّى تَتَوَفَّانِي وَأَنَا مُسْلِمٌ. (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
সা’য়ী সম্পর্কে বিবিধ হাদীস
হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা)-কে বললাম (তখন আমি অল্প বয়ষ্ক), দেখুন, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন [১] إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ সুতরাং যে কেউ বায়তুল্লাহ্র হজ্জ বা উমরা করবে তার জন্য এই দুটির মধ্যে সা’য়ী করায় কোন গুনাহ্ নেই’ তাই কেউ যদি সা‘য়ী না করে তবে তাতে তার গুনাহ হবে কি ? তিনি বললেন, সাবধান, তুমি যা বুঝেছ তা ঠিক নয়। তাই যদি হত তবে আয়াতে বলার ভঙ্গী হত ‘এই দুইয়ের মধ্যে সায়ী না করায় কোন গুনাহ্ নেই।’ (অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন, সা’য়ী করায় কোন গুনাহ্ নেই।) এই আয়াতটি মূলত আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছিল। এরা জাহিলী যুগে মানাতের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়তে আসত। মক্কার পথে কুদায়দ নামক স্থানের বিপরীতে ছিল ওদের দেবী মানাত। সাফা-মারওয়ায় সা’য়ী করা তারা মনে করত গুনাহ্’র কাজ। ইসলাম আসার পর তারা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তখন নাযিল হয় এই আয়াত إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوْ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا [২] (বুখারী ১৭৯০, মুসলিম ১২৭৭) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) বর্ণনা করেন আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর কন্যা সাওদা (র) ছিলেন উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র)-এর স্ত্রী। একবার হজ্জ বা উমরার সময় তিনি সাফা-মারওয়ার সা’য়ীর জন্য বের হন। তিনি মোটা ধরনের মহিলা ছিলেন। ইশার নামায পড়ে মানুষ যখন বের হয়েছিল তখন তিনি হেঁটে হেঁটে হজ্জ অথবা উমরার তাওয়াফ ও সা’য়ী শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখনও সা’য়ী শেষ হতে পারেনি, আর এইদিকে ফজরের আযান হয়ে যায়। সা’য়ী শেষ করতে তাঁর ইশা হতে ফজর পর্যন্ত সময় লেগেছিল। উরওয়াহ্ কাউকেও কোন কিছুতে আরোহণ করে সায়ী করতে দেখলে কঠোরভাবে নিষেধ করতেন। [১] লোকেরা তাঁকে দেখলে অসুস্থতার বাহানা করত। তিনি পরে আমাদের নিকট আলাপে বলতেন, এরা (যারা সওয়ার হয়ে সা’য়ী করে) ক্ষতিগ্রস্থ, তারা স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উমরা করার সময় সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করতে যদি ভুলে যায় এবং মক্কা হতে দূরে চলে যাওয়ার পর এটা স্মরণ হলে তাকে পুনরায় মক্কায় এসে সা’য়ী করতে হবে। আর এর মধ্যে স্ত্রী সহবাস করে থাকলে তবে ফিরে এসে সা’য়ী করবে এবং দ্বিতীয়বার উমরা করবে এবং হাদয়ী কুরবানী দেবে। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল সা’য়ী করার সময় যদি কেউ কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করে তবে কেমন হবে ? তিনি বললেন, আমি এটাকে পছন্দ করি না। মালিক (র) বলেন, কেউ যদি তাওয়াফ করতে গিয়ে কোন চক্কর ভুলে যায় বা এই সম্পর্কে তার সন্দেহ হয়, পরে সা’য়ী করার সময় যদি তার উহা খেয়াল হয় তবে সা’য়ী মওকুফ করে দেবে এবং প্রথমে য়াকীনের উপর ভিত্তি করে তাওয়াফ পুরা করে দুই রাক’আত তাওয়াফের নামায আদায় করে নূতনভাবে সা’য়ী করবে। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাফা ও মারওয়াতে সা’য়ী করতে এলে সাধারণভাবে হাঁটতেন, মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে (বাতনে ওয়াদী) যখন চলতেন তখন ইহা হতে বের না হওয়া পর্যন্ত দ্রুত চলতেন। (সহীহ, মুসলিম ১২১৮) মালিক (র) বলেন, যে ব্যক্তি অজ্ঞতার কারণে তাওয়াফের পূর্বে সা’য়ী করে ফেলে তবে সে ফিরে এসে তাওয়াফ করার পর পুনরায় সা’য়ী করবে। তাওয়াফের কথা ভুলে মক্কা হতে দূরে চলে গেলে যত দূরেই যাক তাকে ফিরে আসতে হবে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করতে হবে। আর স্ত্রী সহবাস করে থাকলে তবে ফিরে এসে তাওয়াফ ও সা’য়ী করতে হবে এবং উমরার বাকি কার্যাদি সমাধা করবে। তার পক্ষে পুনরায় উমরা করা এবং হাদ্য়ী কুরবানী করা ওয়াজিব।
আরাফাত দিবসে রোযা
হারিস তনয়া উম্মুল ফযল (রা) আরাফাত দিবসে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোযাদার কিনা এই সম্পর্কে কতিপয় সাহাবী আমার কাছে এসে তাঁদের সন্দেহ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি রোযা রেখেছেন, কেউ কেউ বললেন, আজ রোযা রাখেননি। উম্মুল ফযল (রা) তখন রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে একটি দুধভর্তি পেয়ালা পাঠালেন। তিনি তা পান করলেন। তখন তিনি আরাফাতে একটি উটের উপর আসীন ছিলেন। (বুখারী ১৯৮৮, মুসলিম ১১২৩) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) আরাফাত দিবসে রোযা রাখতেন। কাসিম ইবনু মুহাম্মদ বলেন, আমি তাঁকে (আয়েশা রা.)-কে আরাফাত দিবসে সন্ধ্যায় দেখেছি, ইমামের (আমীরুল মু’মিনীন) প্রত্যাবর্তনের পরও তিনি (আয়েশা রা) আপেক্ষা করলেন এবং পরে ভিড় কমে পথ পরিষ্কার হলে পানি এনে ইফতার করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মিনা’র দিবসগুলোর রোযা
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) মিনার দিবসগুলোতে আবদুল্লাহ্ ইবনু হুযাফা (রা)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুরে ফিরে ঘোষণা প্রচার করতে বললেন, খাওয়া, পান করা আর আল্লাহর স্মরণের জন্য এই দিনগুলো। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুইদিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন ঈদুল ফিতরের দিন আর ঈদুল আযহার দিন। (সহীহ, মুসলিম ১১৩৮) আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (র) আমর ইবনু ‘আস (রা)-এর নিকট গেলেন। দেখতে পেলেন তিনি আহার করতেছেন, আবদুল্লাহকেও তিনি ডাকলেন। আমি বললাম আমি আজ রোযা আছি। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন সে দিনগুলোতে তুমি রোযা রাখলে! পরে তিনি আবদুল্লাহকে রোযা ভেঙে ফেলতে হুকুম করলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৪১৮, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ]) মালিক (র) বলেন, এই দিনগুলো হচ্ছে আইয়্যামে তাশরীক, (যিলহজ্জ মাসের) ১১, ১২ এবং ১৩ তারিখ) যেগুলোতে আমর ইবনু আস (রা) তাঁর পুত্রকে রোযা রাখতে নিষেধ করলেন।
কোন্ ধরনের পশু হাদ্য়ীর উপযুক্ত
আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ বক্র ইবনু হাযম (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জ বা উমরাতে একটি উট যাহা পূর্বে (আবূ জাহ্ল ইবনু হিশামের ছিল) হাদ্য়ী হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। [১] (হাসান আবূ দাঊদ ১৭৪৯, ইমাম আবূ দাঊদ সাহাবী ইবনু আব্বাস এর বরাতে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন [সহীহ, সুনানে আবূ দাঊদ] আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একটি কুরবানীর উট হাকিয়ে নিয়ে যেতে দেখতে পেয়ে বললেন, এর উপর আরোহণ কর। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল, এটা তো কুরবানীর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার অনিষ্ট হোক, আরোহণ কর। এই কথা তিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে বলেছিলেন। [১] (বুখারী ১৬৮৯, মুসলিম ১৩২২) আবদুল্লাহ্ ইবনু দীনার (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) হজ্জের সময় দুটি করে আর উমরার সময় একটি করে কুরবানী দিতেন। আমি তাঁকে খালিদ ইবনু উসাইদের ঘরে বাঁধা তাঁর উমরার কুরবানীর উটটিকে নাহর করতে দেখেছি। আমি উমরার সময় দেখেছি তাঁর কুরবানীর উটের উপর এমন জোরে বর্শা মেরেছিলেন (নাহর করার জন্য) যে, উহা ভেদ করে অপরদিকে গিয়ে ঘাড়ের নিচ দিকে বের হয়ে গিয়েছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) হজ্জ কিংবা উমরার সময় একটি উট হাদ্য়ী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ জা’ফর কারী (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আইয়াশ ইবনু আবি রবী’আ মাখযুমী দুটি উটের কুরবানী করেছিলেন। এর মধ্যে একটি বুখতী ধরনের উষ্ট্রীও ছিল। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, কুরবানীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত উষ্ট্রীর যদি বাচ্চা পয়দা হয় তবে মার সঙ্গে বাচ্চাটিকেও কুরবানীর জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। লইয়া যাওয়ার জন্য যদি কোন যানবাহন না পাওয়া যায় তবে বাচ্চাটিকে মার উপর চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে মার সাথে বাচ্চাটিকে নাহর করা যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) কুরবানীর উদ্দেশ্যে নীত কুরবানীর পশুর উপর প্রয়োজন হলে আরোহণ করতে পার। তবে এভাবে ব্যবহার করবে না যে, উহার কোমর ভেঙে যায়। দুধের প্রয়োজন হলে এর বাচ্চা পরিতৃপ্ত হয়ে খাওয়ার পর (অবশিষ্ট দুধ) পান করতে পার, আর একে নাহর করার সময় বাচ্চাটিকেও নাহর করতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হাদ্য়ী হাঁকিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) মদীনা হতে যখন কুরবানীর পশু (হাদ্য়ী) নিয়ে যেতেন তখন যুল-হুলায়ফা পৌঁছে এর গলায় চিহ্নের জন্য কিছু একটা লটকিয়ে দিতেন এবং সেখানেই উহার ইশআর (কাঁধের চামড়া যখম করে রক্ত মাখিয়ে দেওয়া) করতেন। প্রথমে ঐ পশুটির মুখ কিবলার দিকে করে এর গলায় দুটি জুতা লটকিয়ে দিতেন, পরে বাম দিকের কাঁধের চামড়া চিরে তা রক্তাক্ত করতেন এবং নিজের সঙ্গে তা হাঁকিয়ে নিয়ে চলতেন। আরাফাতে পৌঁছে সকলে যেখানে অবস্থান করতেন, তিনিও সেখানে অবস্থান করতেন। সকলেই যখন ফিরে আসত কুরবানীর পশুটিও সঙ্গে ফিরত। ইয়াওমুন নাহরের সকালে মিনায় পৌঁছে মাথা কামানো বা চুল ছাঁটার পূর্বেই কুরবানীর পশুটি নাহর করতেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) স্বীয় কুরবানীর পশুটি স্বহস্তে নাহর করতেন। কিবলামুখ করে প্রথমে কুরবানীর পশুগুলো কাতার করে দাঁড় করাতেন, পরে এগুলো নাহর করতেন এবং এই গোশত নিজেও খেতেন এবং অন্যদেরকেও খাওয়াইতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ইশআর করার উদ্দেশ্যে যখন কুরবানীর উটের কুঁজে যখম করতেন তখন ‘বিসমিল্লাহি্ ওয়াল্লাহু আকবার’ বলতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৪৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يَقُوْلُ: الْهَدْيُ مَا قُلِّدَ وَأُشْعِرَ وَوُقِفَ بِهِ بِعَرَفَةَ. নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, কাদয়ী হল সেই পশু যার গলায় হার লটকানো হয়েছে, যার কুঁজ চিরে যখম করা হয়েছে এবং আরাফাতের ময়দানে নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৪৬و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ يُجَلِّلُ بُدْنَهُ الْقُبَاطِيَّ وَالْأَنْمَاطَ وَالْحُلَلَ ثُمَّ يَبْعَثُ بِهَا إِلَى الْكَعْبَةِ فَيَكْسُوهَا إِيَّاهَا. নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) কুরবানীর উটসমূহকে মিসরীয় কুবাতি ও আনমাত কাপড় পরাতেন। কুরবানীর পর কাপড়সমূহ বায়তুল্লাহর গিলাফ হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৪৭و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَأَلَ عَبْدَ اللهِ بْنَ دِينَارٍ مَا كَانَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ يَصْنَعُ بِجِلَالِ بُدْنِهِ حِينَ كُسِيَتْ الْكَعْبَةُ هَذِهِ الْكِسْوَةَ قَالَ كَانَ يَتَصَدَّقُ بِهَا. মালিক (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু দীনার (রা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন পরে বায়তুল্লাহ্র জন্য যখন আলাদা গিলাফ বানিয়ে নেওয়া হল তখন আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) কুরবানীর উটসমূহের এই কাপড়-চোপড় কি করতেন? তিনি বললেন, এইগুলো তিনি তখন খয়রাত করে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলতেন, কুরবানীর উট পাঁচ বা ততোধিক বৎসর বয়সের হতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৪৯و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ لَا يَشُقُّ جِلَالَ بُدْنِهِ وَلَا يُجَلِّلُهَا حَتَّى يَغْدُوَ مِنْ مِنًى إِلَى عَرَفَةَ. নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) তাঁর কুরবানীর উটের কাপড়-চোপড় মিনা হতে আরাফাতে না যাওয়া পর্যন্ত ছিড়তেন না বা পরাতেন না। (মাওকুফ, হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ لِبَنِيهِ يَا بَنِيَّ لَا يُهْدِيَنَّ أَحَدُكُمْ مِنْ الْبُدْنِ شَيْئًا يَسْتَحْيِي أَنْ يُهْدِيَهُ لِكَرِيمِهِ فَإِنَّ اللهَ أَكْرَمُ الْكُرَمَاءِ وَأَحَقُّ مَنْ اخْتِيرَ لَهُ. হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন তিনি স্বীয় পুত্রগণকে বলতেন, বৎসগণ আল্লাহর নামে তোমরা এমন উট কুরবানী দিও না একজন দোস্তকে যা দিতে লজ্জা কর। আল্লাহ তা’আলা সবচাইতে সম্মানিত। সুতরাং সর্বোত্তম বস্তুই তাঁর জন্য নির্বাচন করা উচিত।
হাদ্য়ীর পশু যদি ক্লান্ত হয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তবে কি করতে হবে
হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদ্য়ী নিয়ে যাচ্ছিলেন সে ব্যক্তি তাঁকে বলল, পথে যদি হাদ্য়ীর কোন একটি মারা যাওয়ার উপক্রম হয় তবে কি করবে? তিনি বললেন, এমন হতে দেখলে ঐ পশুটিকে ‘নাহর’ করে গলায় বাঁধা হারটি রক্ত মেখে রেখে দেবে। এতে লোকগণ এর গোশত খেয়ে নিতে পারবে। [১] (সহীহ, আবূ দাঊদ মুত্তাসিল সনদে নাজিয়ার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন, [আবূ দাঊদ ১৭৬২, তিরমিযী ৯১০, ইবনু মাজাহ ৩১০৬] আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ সুনানে আবূ দাঊদ] এবং ইমাম মুসলিম মারফু ও মুত্তাসিল সনদে আবূ আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন ১৯২৫) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) যে ব্যক্তি হাদ্য়ী নিয়ে রওয়ানা হয়েছে, সে যদি এটাকে পথে মারা যেতে দেখে, তবে ‘নাহর’ করে রেখে দেবে, যাতে লোকজন উহা খেয়ে নিতে পারে। ঐ ব্যক্তির কোন বদলা দিতে হবে না। কিন্তু এর গোশত নিজে খেলে বা অন্য কাউকেও খেতে বললে বদলা দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ثَوْرِ بْنِ زَيْدٍ الدِّيلِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ مِثْلَ ذَلِكَ. মালিক (র) সাওর ইবনু যায়দ দীলি (র) হতে বর্ণনা করেন, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা)-ও উপরিউক্ত মত ব্যক্ত করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) তিনি বলেছেন, কাফফারা, মানত বা হজ্জে তামাত্তু’র কুরবানীর উট নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পর পথে যদি মারা যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে এর পরিবর্তে আরেকটি উট কুরবানী দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৫৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ: مَنْ أَهْدَى بَدَنَةً ثُمَّ ضَلَّتْ أَوْ مَاتَتْ فَإِنَّهَا إِنْ كَانَتْ نَذْرًا أَبْدَلَهَا وَإِنْ كَانَتْ تَطَوُّعًا فَإِنْ شَاءَ أَبْدَلَهَا وَإِنْ شَاءَ تَرَكَهَا. ১৪১৯-و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَمِعَ أَهْلَ الْعِلْمِ يَقُولُونَ لَا يَأْكُلُ صَاحِبُ الْهَدْيِ مِنْ الْجَزَاءِ وَالنُّسُكِ. নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলেছেন, কুরবানীর পশু পথে মারা গেলে বা হারিয়ে গেলে তা মানতের হয়ে থাকলে এর পরিবর্তে আরেকটি কুরবানী দিতে হবে, আর নফলী হয়ে থাকলে আরেকটি কুরবানী দেওয়া না দেওয়া মালিকের ইচ্ছাধীন থাকবে। মালিক (র) বলেন, তিনি বিজ্ঞ আলিমগণকে বলতে শুনেছেন, শাস্তিস্বরূপ অথবা ইহরামের পরিপন্থী পরিচ্ছন্নতা ও আরাম-আয়েশ গ্রহণ করার দরুন যে হাদ্য়ী (কুরবানী) ওয়াজিব তা হতে কুরবানী প্রদানকারী আহার করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুহরিম ব্যক্তি স্ত্রী সহবাস করলে তার কুরবানী
মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রা), আলী ইবনু আবি তালিব (রা) ও আবূ হুরায়রা (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইহরাম অবস্থায় কেউ যদি স্ত্রীর সহিত সহবাস করে তবে সে কি করবে? তাঁরা বললেন, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই হজ্জের অবশিষ্ট রুকনগুলো আদায় করে হজ্জ পুরা করবে। আগামী বৎসর তাদেরকে পুনরায় হজ্জ করতে হবে এবং কুরবানী দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আলী ইবনু আবি তালিব (রা) বলেছেন, আগামী বৎসর পুনরায় হজ্জের ইহরাম বাঁধলে হজ্জ পুরা না হওয়া পর্যন্ত তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনে আলাদা আলাদা থাকবে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তিনি সমবেত লোকদেরকে লক্ষ করে বলতেছিলেন ইহরাম অবস্থায় যে ব্যক্তি স্ত্রী-সহবাস করে তার সম্পর্কে তোমরা কি বল? উপস্থিত সকলেই চুপ হয়ে রইলেন। শেষে সাঈদ (রা) নিজেই বললেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করেছিল। পরে সে এই সম্পর্কে মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য এক ব্যক্তিকে মদীনা শরীফে প্রেরণ করে। কেউ কেউ জবাব দিলেন স্বামী-স্ত্রী এক বৎসর পর্যন্ত দু’জনেই আলাদা হয়ে থাকবে। কিন্তু সাঈদ (র) বললেন, এই বৎসর তারা হজ্জে অবশিষ্ট কাজসমূহ পুরা করবে। পরের বৎসর জীবিত থাকলে পুনরায় হজ্জ করবে এবং কুরবানী দিবে। প্রথম হজ্জের ইহরাম যে স্থান হতে বেঁধেছিল এই হজ্জের ইহরামও সেই স্থান হতে বাঁধবে। আর কাযা হজ্জ করতে যখন আসবে তখন দু’জনেই তারা হজ্জ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আলাদা আলাদা থাকবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উভয়কেই এক একটি করে কুরবানী করতে হবে। মালিক (র) বলেন, আরাফাতে অবস্থানের পর এবং প্রস্তর নিক্ষেপের পূর্বে যদি কেউ স্ত্রী সহবাস করে তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে এবং আগামী বৎসর পুনরায় তাকে হজ্জ করতে হবে। রমিয়ে হাজর বা প্রস্তর নিক্ষেপের পর যদি স্ত্রী সহবাস করে, তবে তাকে একটি উমরা এবং একটি কুরবানী করতে হবে। পরেরবার পুনরায় হজ্জ করতে হবে না। মালিক (র) বলেন, স্খলন না হয়ে শুধু পুরুষাঙ্গ প্রবিষ্ট হলেও হজ্জ ও উমরা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং হাদ্য়ী ওয়াজিব হবে। প্রবিষ্ট না হয়েও যদি রতিলীলায় স্খলন হয়ে যায় তবুও হজ্জ বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর কল্পনা করার দরুন যদি কারো স্খলন হয়ে যায় তবে এতে কিছুই ওয়াজিব হবে না। মালিক (র) বলেন, কেউ স্ত্রীকে চুমা খেলে স্খলন না হলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। মালিক (র) বলেন, কোন মুহরিম মহিলার স্বামী যদি তার সম্মতিক্রমে তার সঙ্গে হজ্জ ও উমরার মধ্যে কয়েকবার সহবাস করে তবে ঐ মহিলাকে পরের বৎসর এই হজ্জের কাযা আদায় করতে হবে এবং কুরবানী দিতে হবে। আর এইরূপ সহবাস উমরার মধ্যে হলেও অতি সত্বর উমরা কাযা করতে হবে ও কুরবানী দিতে হবে।
যে ব্যক্তি হজ্জ পেল না তার কুরবানী
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) আবূ আইয়ুব আনসারী (রা) হজ্জের নিয়তে রওয়ানা হয়েছিলেন। মক্কার পথে নাযিয়া নামক স্থানে পৌঁছার পর তাঁর উটটি হারিয়ে যায়। নাহর দিবস অর্থাৎ দশ তারিখে তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনা বিবৃত করলেন। তখন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, এখন উমরা করে ইহরাম খুলে ফেল। আগামী বৎসর হজ্জ করে নিও এবং সামর্থ্যানুসারে একটি কুরবানী করো। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) ইয়াওমুন-নাহারে অর্থাৎ দশ তারিখে হাব্বার ইবনু আসওয়াদ (রা) হজ্জের জন্য এসে পৌঁছেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তখন তাঁর কুরবানীর পশুগুলো ‘নাহর’ করতেছিলেন। হাব্বার বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! তারিখের ব্যাপারে আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম আজ আরাফাতের দিন। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, তুমি সঙ্গিগণসহ মক্কায় চলে যাও এবং তাওয়াফ করে নাও। কোন কুরবানীর পশু সঙ্গে থাকলে উহার কুরবানী করে ফেল। পরে মাথা কামায়ে বা চুল ছেঁটে বাড়ি ফিরে যাও। আগামী বৎসর পুনরায় হজ্জ করবে এবং কুরবানী দিবে। যার কুরবানী করার সমর্থ্য নেই সে তিনদিন হজ্জের সময় এবং বাড়ি ফিরে সাতদিন রোযা রাখবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, হজ্জে কিরানের ইহরাম বাঁধার পর যদি হজ্জ পায়, তবে পরের বৎসরও হজ্জে কিরান করবে এবং তাকে দুটি কুরবানী দিতে হবে একটি হজ্জে কিরানের আর একটি গত বৎসর হজ্জ না পাওয়ার।
তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে তার কুরবানী
আতা ইবনু রাবাহ (র) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা)-এর নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হল, যে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় মিনাতে তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করেছে, তিনি তাকে একটি উট কুরবানী করতে হুকুম দেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইকরামা (রা) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত করার পূর্বে কেউ যদি স্ত্রীসহবাস করে তবে তাকে উমরা এবং কুরবানী করতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইকরামা (র) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) হতে যেরূপ বর্ণনা করেছেন মালিক (র) রবী’আ ইবনু আবূ আবদুর রহমানকে এ সম্পর্কে অনুরূপ বলতে শুনেছেন। মালিক (র) বলেন, এই বিষয়ে যা শুনেছি তন্মধ্যে ইটাই আমার পছন্দনীয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ১৬২و سُئِلَ مَالِك عَنْ رَجُلٍ نَسِيَ الْإِفَاضَةَ حَتَّى خَرَجَ مِنْ مَكَّةَ وَرَجَعَ إِلَى بِلَادِهِ فَقَالَ أَرَى إِنْ لَمْ يَكُنْ أَصَابَ النِّسَاءَ فَلْيَرْجِعْ فَلْيُفِضْ وَإِنْ كَانَ أَصَابَ النِّسَاءَ فَلْيَرْجِعْ فَلْيُفِضْ ثُمَّ لْيَعْتَمِرْ وَلْيُهْدِ وَلَا يَنْبَغِي لَهُ أَنْ يَشْتَرِيَ هَدْيَهُ مِنْ مَكَّةَ وَيَنْحَرَهُ بِهَا وَلَكِنْ إِنْ لَمْ يَكُنْ سَاقَهُ مَعَهُ مِنْ حَيْثُ اعْتَمَرَ فَلْيَشْتَرِهِ بِمَكَّةَ ثُمَّ لْيُخْرِجْهُ إِلَى الْحِلِّ فَلْيَسُقْهُ مِنْهُ إِلَى مَكَّةَ ثُمَّ يَنْحَرُهُ بِهَا. ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল তাওয়াফে যিয়ারত ভুলে গিয়ে যদি বাড়ি ফিরে আসে তবে সে কি করবে? তিনি বললেন, স্ত্রীসম্ভোগ না করে থাকলে মক্কায় ফিরে যাবে এবং তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করবে। আর স্ত্রীসম্ভোগ করে থাকলে মক্কায় ফিরে গিয়ে তাওয়াফ আদায় করবে এবং উমরা করে একটি কুরবানী দিবে। মক্কা হতে উট ক্রয় করে কুরবানী দিলে হবে না। সঙ্গে যদি কুরবানীর পশু এনে না থাকে তবে মক্কা হতে কুরবানীর পশু কিনে এটাসহ হারাম শরীফের বাহিরে চলে যাবে এবং সে স্থান হতে এটাকে মক্কায় হাঁকিয়ে নিয়া আসবে এবং পশু সেখানে ‘নাহর’ করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
সামর্থ্যানুসারে কুরবানী করা
জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) আলী ইবনু আবি তালিব (রা) বলতেন, [১] مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ এই কথার অর্থ হল, অন্তত একটি বকরী কুরবানী করা। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন, مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ এর অর্থ হল, অন্তত একটি বকরী কুরবানী করা। (হাদীসটি ইমাম মালিক (র) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই বর্ণনাটি আমার নিকট খুবই প্রিয়। কেননা কুরআনুল করীমে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে মু’মিনগণ, তোমরা যখন ইহরাম অবস্থায় থাক তখন তোমরা কোন প্রাণী বধ করো না। কেউ যদি কোনকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে বধ করে তবে যে ধরনের পশু সে বধ করেছে সেই ধরনের কোন পশু তাকে প্রতিদান (জরিমানা) দিতে হবে। তোমাদের দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ লোক এর ফয়সালা করে দেবে। এই প্রতিদান বায়তুল্লাহতে প্রেরিত হাদ্য়ী হবে অথবা কাফ্ফারা হিসেবে হবে যা মিসকীনদেরকে আহার করানো হবে অথবা তাকে তৎপরিমাণ রোযা রাখতে হবে যাতে সে তার কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করে নেয়। যা হোক, শিকারকৃত পশুর পরিবর্তে কোন সময়ে বকরীও ওয়াজিব হতে পারে। উক্ত আয়াতে উহাকেও হাদ্য়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কথায় একজন কি করে সন্দেহ করতে পারে? কারণ যে পশু উট বা গরুর সমতুল্য নয় উহার প্রতিদানে (জরিমানা) একটি বকরীই ওয়াজিব হতে পারে। একটি বকরীর সমতুল্যও যেখানে হবে না সেখানে কাফফারা ওয়াজিব হবে। সে রোযার মাধ্যমে উহা আদায় করুক বা মিসকীনদেরকে আহার করিয়ে তা আদায় করুক, উভয় অবস্থায় ইহা কাফফারা হিসেবেই গণ্য হবে। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন, مَا اسْتَيْسَرَ مِنْ الْهَدْيِ আয়াতটির অর্থ হল অন্ততপক্ষে একটি উট বা গাভী কুরবানী করতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ বক্র (র) আম্রাহ বিন্ত আবদুর রহমানের আদায়কৃত দাসী রুকাইয়া (র) খবর দিয়েছেন তিনি একবার ‘আমরাহ্ বিন্ত আবদুর রহমানের সঙ্গে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। তিনি বলেন, যিলহজ্জ মাসের অষ্টম তারিখে তিনি (আমরাহ) মক্কায় গিয়ে উপনীত হন। আমি তাঁর সাথে সাথেই ছিলাম। তিনি কা’বা শরীফের তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে মসজিদে গেলেন। আমাকে বললেন, তোমার নিকট কাঁচি আছে কি? আমি বললাম নাই। তিনি বললেন, একটি কাঁচি খুঁজে আন। আমি তাই করলাম। তিনি উহা দ্বারা তাঁর চুলের কিছু অংশ কাটলেন। পরে কুরবানীর দিন (ইয়াওমুন-নাহরে) তিনি একটি বকরী যবেহ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কুরবানী হাদ্য়ী-র বিভিন্ন আহকাম
সাদাকাহ ইবনু ইয়াসার মক্কী (র) ইয়ামনের অধিবাসী এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট আসে। চুলগুলো তার জটপাকানো ছিল। সে বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! আমি শুধু উমরার হইরাম বেঁধে এসেছি। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বললেন, তুমি যদি আমার সঙ্গে থাকতে বা আমার নিকট পূর্বে জিজ্ঞেস করতে তবে তোমাকে আমি হজ্জে কিরান করার কথা বলতাম। লোকটি বললঃ উহার সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বললেন, তোমরা এই লম্বা চুলগুলো কেটে ফেল এবং কুরবানী কর। ইরাকের অধিবাসী একজন মহিলা তখন বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! এই লোকটির হাদয়ী (কুরবানী) কি হবে? তিনি বললেন, উত্তম হাদয়ী সে দিবে। মহিলাটি পুনরায় বলল, ইহা কি হবে? আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বললেন, যবেহ করবার জন্য বকরী ব্যতীত অন্য কিছু যদি না পায় বা দিতে অসমর্থ হয়, তবে আমার কাছে রোযা রাখা অপেক্ষা বকরী হাদয়ী দেওয়াই উত্তম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন, ইহরামরত স্ত্রীলোক তার চুলের গোছা না কাটা পর্যন্ত সে চুল আচঁড়াবে না। সঙ্গে হাদ্য়ী থাকলে তা যবেহ না করা পর্যন্ত সে চুল কাটবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) কতিপয় আলিমের কাছে শুনেছেন স্বামী-স্ত্রী কুরবানীতে একই উটে শরীক হবে না। প্রত্যেকেরই আলাদা উট কুরবানী করা উচিত। মালিক (র)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, হজ্জের সময় ‘নাহর’ করার জন্য যদি কারো সঙ্গে মক্কায় হাদ্য়ী পাঠিয়ে দেয় আর সে নিজে উমরার ইহরাম বেঁধে আসে তবে উমরা শেষ হতেই সে ঐ হাদ্য়ীটি ‘নাহর’ করতে পারবে কি অথবা উহা ‘নাহর’ করার জন্য হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে কি অপেক্ষা করবে? তিনি উত্তরে বললেন, উমরা করে সে ইহরাম খুলে ফেলবে এবং কুরবানীর জন্য হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এবং ‘ইয়াওমুন-নাহরের সময় উহাকে সে ‘নাহর’ করবে এবং এই কুরবানীকে তার উমরারই অংশবিশেষ জানবে। মালিক (র) বলেন, ইহরাম অবস্থায় শিকার করার কারণে বা অন্য কোন কারণে যদি কারো উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়, তবে উহাকে মক্কায় নিয়ে আসা উচিত। কারণ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ এমন হাদ্য়ী যা কা’বায় পৌঁছায়।’ শিকার করার কারণে বা কুরবানীর পরিবর্তে রোযা বা সাদকা করতে হলে তার ইখতিয়ার থাকবে হারাম্ বা হারাম্ শরীফের বাহিরে যেকোন স্থানে ইচ্ছা সে উহা করতে পারবে। আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফর (র) তিনি আবদুর রহমান ইবনু জা’ফর (র)-এর সহিত মদীনা হতে যাত্রা করেন, পথে সুক্ইয়া নামক স্থানে হুসায়ন ইবনু আলী (রা)-এর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। তিনি [হুসায়ন (রা)] সেখানে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফরও সেখানে রয়ে গেলেন। হজ্জের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি পুনরায় রওয়ানা হয়ে পড়েন এবং একজন লোককে খবর দিয়ে আলী ইবনু আবি তালিব (রা) ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিন্ত উমাইসের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা ঐ সময় মদীনায় ছিলেন। তাঁরা খবর পেয়ে সুকইয়ায় অসুস্থ পুত্রের নিকট এলেন। তিনি (হুসায়ন রা.) নিজের মাথার দিকে ইশারা করে দেখালেন। আলী (রা)-এর নির্দেশে তখন সেখানেই তাঁর মাথা কামান হল এবং একটি উট কুরবানী দেওয়া হল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) বলেন, হুসায়ন (রা) ঐ সময় উসমান ইবনু আফফান (রা)-এর সহিত হজ্জ করতে রাওয়ানা হয়েছেন।
আরাফাত ও মুযদালিফায় অবস্থান
মালিক (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আরাফাতের সারা ময়দানে অবস্থান করা যায়, তবে তোমরা ‘বাতনে উরানায়’ অবস্থান করো না। এমনিভাবে মুযদালিফার সারা ময়দানে অবস্থান করা যায় তবে তোমরা ‘বাতনে মুহাস্সিরে’ অবস্থান করো না। (সহীহ, ইমাম মুসলিম জাবের (রা) থেকে বর্ণনা করেন ১২১৮, আর ইমাম মলিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি, মুরসাল) আবদুল্লাহ্ ইবনু যুবায়র (রা) তোমরা বিশ্বাস কর ‘বাতনে উরানা’ ব্যতীত সমগ্র আরাফাতের ময়দানই অবস্থান করার স্থান, এমনভাবে বাতনে মুহাসসির ব্যতীত মুযদালিফার সারাটা ময়দানেই অবস্থান করা যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ [১] ‘রাফাস’ অর্থ হল স্ত্রীসম্ভোগ। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ [২] মালিক (র) বলেন, ফুসুক অর্থ হল, দেব- দেবীর নামে পশু উৎসর্গ করা, আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ [৩] মালিক (র) বলেন, হজ্জে জিদাল বা ঝগড়া-বিবাদ হল, কুরাইশ গোত্রের লোকজন তৎকালে হজ্জের সময় মুযদালিফার কুযাহ্ নামক স্থানে অবস্থান করত। আর অন্যরা আরাফাতে অবস্থান করত। উভয় দল তখন পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত হত, একদল বলত, আমরাই সত্যপথের অনুসারী; অপর দল বলত, আমরাই কেবল সত্যপথের অনুসারী। আল্লাহ্ তা’আলা আয়াত নাযিল করে ইরশাদ করলেন, لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ [৪] হজ্জের সময় ঝগড়া-বিবাদ বলতে এই কথাই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ্ অধিক জ্ঞাত। আলিমগণের নিকটও আমি এই ব্যাখ্যা শুনেছি।
অপবিত্র অবস্থায় ওয়াকুফ (অবস্থান) করা এবং আরোহী অবস্থায় ওয়াকুফ করা
ইয়াহইয়া (র) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল অপবিত্র কোন ব্যক্তি আরাফাত বা মুযদালিফায় অবস্থান বা প্রস্তর নিক্ষেপ বা সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করতে পারবে কি? তিনি বললেন, ঋতুমতী স্ত্রীলোক হজ্জের যে সমস্ত আহকাম-আরকান আদায় করতে পারে তার ওযূবিহীন অবস্থায় তাকে আদায় করতে হয়। তদ্রূপ ওযূ ছাড়া পুরুষ ও স্ত্রীলোক এইগুলো করতে পারে। এতে দোষের কিছু হয় না। তবে ওযূসহ ঐ সমস্ত বিষয় আদায় করা উত্তম। স্বেচ্ছায় ওযূবিহীন অবস্থায় এইসব কাজ করা ঠিক নয় । মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল কোন ব্যক্তি আরোহী হলে আরাফাতে অবস্থানকালে সে আরোহী অবস্থায় থাকবে কিনা। তিনি বললেন, আরোহী অবস্থায় ওয়াকুফ করবে। তবে তার বা তার ভারবাহী পশুর কোন অসুবিধা থাকলে আল্লাহ্ তা’আলা কবূল করবেন।
যার হজ্জ ছুটে গিয়েছে তার আরাফাতে অবস্থান করা
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, মুযদালিফার রাত্রির (১০ তারিখের রাত্রি) কিছু অংশ হতে আরাফাতে অবস্থান না করলে হজ্জ হবে না। আর যে ব্যক্তি ইয়াওমুন-নাহরের ফজর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আরাফাতে অবস্থান করতে পারবে তার হজ্জ হয়ে যাবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) তিনি বলেছেন, মুযদালিফার রাত ফজর হওয়া পর্যন্তও যদি কেউ (কিছু সময়ের জন্য) আরাফাতে অবস্থান না করে থাকে তবে তার হজ্জ বিনষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ইহরাম বেঁধে (কিছু সময়) আরাফাতে অবস্থান করতে পারবে তার হজ্জ হয়ে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আরাফাতে অবস্থানকালে যদি কোন ক্রীতদাস আযাদ হয়ে যায় তবে এই হজ্জ দ্বারা তার ফরয হজ্জ আদায় হবে না। কিন্তু আযাদ হওয়ার পূর্বে সে যদি ইহরাম না বেঁধে থাকে এবং আযাদ হওয়ার পর ইয়াওমুন-নাহরের ফজরের পূর্বে ইহরাম বেঁধে আরাফাতে অবস্থান করে নিতে পারে তবে তার ফরয হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। আর ইয়াওমুন-নাহরের ফজর পর্যন্ত সে যদি ইহরাম না বাঁধে তবে তার অবস্থা ঐ ব্যক্তির মত হবে যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাত্রের ফজর পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করে নাই, ফলে তার হজ্জ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। সুতরাং ঐ আযাদ ক্রীতদাসেরও পুনরায় ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে।
মহিলা ও শিশুদেরকে প্রথমে রওয়ানা করে দেওয়া
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) শিশু ও মহিলাদেরকে প্রথম মুযদালিফা হতে মিনায় পাঠিয়ে দিতেন, মিনায় ফজরের নামায আদায় করার পরপরই অন্যান্য লোক আসার পূর্বে যেন তারা প্রস্তর নিক্ষেপ করে নিতে পারেন। (বুখারী ১৬৭৬, মুসলিম ১২৯৫) আতা ইবনু রাবা’ (র) আসমা বিন্ত আবি বক্র (রা)-এর আযাদ দাসী বর্ণনা করেন, অন্ধকার থাকতেই আসমা বিন্ত আবি বক্র (রা)-এর সাথে আমরা মিনায় চলে এলাম। আসমাকে তখন আমি বললাম অন্ধকার থাকতেই যে মিনায় আমরা চলে এলাম? তিনি বললেন, তোমাদের হতে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাঁর আমলেও আমরা এই ধরনের আমল করেছি। (বুখারী ১৬৭৯, মুসলিম ১২১৯) মালিক (র) আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্ (র) তাঁর পরিবারের মহিলা ও শিশুদেরকে মুযদালিফা হতে মিনায় আগেই পাঠিয়ে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছেন যে, তাঁরা ইয়াওমুন-নাহরের ফজর হওয়ার পূর্বে প্রস্তর নিক্ষেপ করা মাকরূহ বলে মনে করতেন। যে ব্যক্তি প্রস্তর নিক্ষেপ করেছে তার জন্য নাহর করা হালাল হয়ে গিয়েছে। হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) মুযদালিফা অবস্থানকালে আসমা বিন্তে আবি বাক্র (রা)-কে দেখেছি, যে ব্যক্তি তাঁদের নামায পড়াতেন তাঁকে তিনি বলতেন, সুবহে সাদিক হওয়ামাত্রই যেন নামায পড়িয়ে দেন। পরে নামায পড়ামাত্র আর বিলম্ব না করে তিনি মিনায় চলে আসতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তনের সময় কিরূপে এবং কি গতিতে চলা উচিত
হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) উসামা ইবনু যায়দ (রা)-এর নিকট বসা ছিলাম। তাঁকে তখন জিজ্ঞেস করা হল বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরাফাতের ময়দান হতে প্রত্যাবর্তনের সময় কিরূপ গতিতে উট চালাচ্ছিলেন? তিনি বললেন, দ্রুত চালিয়ে ফিরছিলেন। একটু ফাঁক পাইলে তখন খুবই দ্রুতগতিতে চালাতেন। (বুখারী ১৬৬৬, মুসলিম ১২৮৬) মালিক (র) বলেন, হিশাম (র) বলেছেন, ‘নস’ জাতীয় গতি ‘আনাক’ জাতীয় গতি হতে দ্রুততর। [১] নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বাতনে-মুহাস্সির হতে প্রস্তর নিক্ষেপ করার স্থান পর্যন্ত তাঁর উটের গতি দ্রুত করে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
হজ্জের সময় নাহ্র করা
মালিক (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিনা সম্পর্কে বলেছেন, মিনার সারাটা ময়দানই ‘নাহর’ করার স্থান। আর উমরার সম্পর্কে বলেছেন, এর জন্য মারওয়াহ্ উত্তম স্থান। মক্কার প্রতিটি পথ এবং গলিও ‘নাহর’ করার স্থান। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৯৩৭, তিরমিযী ৮৮৫, ইবনু মাজাহ ৩০১০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে ৬৯৯৭]) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) তখন যিলকা’দ মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট ছিল, যখন আমরা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সহিত রওয়ানা হলাম। আমাদের এই ধারণাই ছিল যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজ্জের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছেন। যখন আমরা মক্কার নিকটবর্তী হলাম তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাদের নিকট হাদ্য়ী ছিল না তাদেরকে তাওয়াফ ও সা’য়ী করে ইহরাম খুলে ফেলতে বলেন। আয়েশা (রা) বলেন, ইয়াওমুন্নাহরের দিন আমাদের কাছে গরুর গোশত আনা হল। এটা দেখে বললাম এটা কোথা হতে এসেছে? লোকে বলল, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্ত্রীগণের তরফ হতে কুরবানী দিয়েছেন। ইয়াহইয়া (রা) বলেন, আমি কাসিম ইবনু মুহাম্মদের নিকট উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, ‘আম্রাহ্ বিন্ত আবদুর রহমান এই হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ১৭০৯, মুসলিম ১২১১) উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা) তিনি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে বললেন, অন্যরা তো উমরা করে ইহ্রাম খুলে ফেলেছে, কিন্তু আপনি খুললেন না? তিনি বললেন, আমি আমার চুল জমাট করে নিয়েছি আর হাদ্য়ীর গলায় হার লটকিয়ে দিয়েছি। সুতরাং ‘নাহর’ না করা পর্যন্ত আমি ইহ্রাম খুলব না। (বুখারী ১৫৬৬, মুসলিম ১২২৯)
নাহ্র-এর বর্ণনা
আলী ইবনু আবি তালিব (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বীয় কুরবানীর কিছুসংখ্যক পশু নিজের হাতে ‘নাহর’ করেন আর বাকিগুলো অন্যরা ‘নাহর’ করেন। (সহীহ, ইমাম মুসলিম জাবের (রা) থেকে বর্ণনা করেন ১২১৮) নাফি’ (রঃ) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেছেন, হাদয়ীর কুরবানী করার মানত করলে উহার গলায় একজোড়া জুতা লটকিয়ে দিবে এবং উহার কুঁজ যখমী করে দিবে। পরে দশ তারিখে কা’বা শরীফের নিকট বা মিনা ময়দানে উহা ‘নাহর’ করবে, এটা দ্বারা ‘নাহর’ করার আর কোন স্থান নেই। আর যদি কেউ উট বা গরু ইত্যাদি কুরবানী করার মানত করে, তবে সে যে স্থানে ইচ্ছা কুরবানী করতে পারে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) পিতা উটগুলোকে দাঁড় করিয়ে ঐগুলোর ‘নাহ্র’ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, কুরবানী করার পূর্বে মাথা কামানো জায়েয নয়। দশ তারিখের সুবহে সাদিকের পূর্বে কুরবানী করাও জায়েয নয়। কুরবানী করা, কাপড় বদলান, শরীরের ময়লা সাফ করা, মাথা কামান ইত্যাদি বিষয় যিলহজ্জের দশ তারিখে করতে হবে। উহার পূর্বে এই সমস্ত করা জায়েয নয়।
মাথা মুণ্ডান
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’আ করছিলেন হে আল্লাহ্, মাথা মুণ্ডনকারীদের উপর আপনি রহম করুন। [১] সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের জন্যও আল্লাহর রহমতের দু’আ করুন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আল্লাহ্! মাথা মুণ্ডনকারীদের রহম করুন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের জন্য আল্লাহ্র রহমতের দু’আ করুন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে আল্লাহ্ ! চুল যারা ছাঁটাবে তাদের প্রতিও রহমত করুন। (বুখারী ১৭২৭, মুসলিম ১৩০১) আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) তিনি (কাসিম ইবনু মুহাম্মদ) উমরার ইহরাম বেঁধে রাত্রে মক্কায় আসতেন, তাওয়াফ ও সায়ী করার পর ভোর পর্যন্ত মাথা মুণ্ডন করার জন্য অপেক্ষা করতেন। মাথা না কামানো পর্যন্ত বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতেন না। নিকটবর্তী মসজিদে এসে কখনও কখনও বিতরের নামায আদায় করতেন বটে তবে বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী হতেন না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, ‘তাফাস’ অর্থ হল, হজ্জের পর মাথা কামানো এবং কাপড়-চোপড় বদলান ইত্যাদি। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয় হজ্জের সময় একজন মাথা কামাতে ভুলে গেলে কি মক্কায় এসে মাথা মুণ্ডন করতে পারবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, পারবে। তবে মিনাতে অবস্থানকালে উহা করা ভাল। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় এই যতক্ষণ পর্যন্ত হাদয়ী যবেহ করেনি ততক্ষণ কেউ মাথা মুণ্ডন করবে না বা চুল ছাঁটাবে না। আর যতক্ষণ মিনায় পোঁছিয়া যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে ইহরাম না খুলবে, ততক্ষণ তার হারাম বিষয়সমূহ হালাল হবে না। কারণ আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন কুরবানী যতক্ষণ তার নিজ স্থলে না পৌঁছাবে ততক্ষণ তোমরা মাথা মুণ্ডন করো না।
চুল ছাঁটা
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যখন রমযানের রোযা সমাপ্ত করতেন আর ঐ বৎসর হজ্জ করার ইচ্ছা করতেন তখন হজ্জ সমাধা না করা পর্যন্ত মাথার চুল কাটতেন না ও দাড়ি ছাঁটতেন না। মালিক (র) বলেন, এ বিষয়টি ওয়াজিব নয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) হজ্জ ও উমরার পরে যখন মাথা মুণ্ডন করতেন তখন দাড়ি ও গোঁফ ছেঁটে নিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) রবী’আ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) এক ব্যক্তি কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র)-এর নিকট এসে বলল, আমি ও আমার স্ত্রী তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করার পর সহবাস করার ইচ্ছায় আমার স্ত্রীকে এক নির্জন স্থানে নিয়ে গেলাম। আমার স্ত্রী তখন বলল, হজ্জের পর আমি এখনও আমার চুল ছাঁটাইনি। আমি তখন দাঁত দিয়ে তার চুল কেটে তার সাথে মিলিত হই। এখন কি করব? কাসিম (র) হেসে বললেন, যাও, স্ত্রীকে কাঁচির সাহায্যে চুল ছেঁটে নিতে বল। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই অবস্থায় স্বামী যদি একটি কুরবানী দেয় তবে উহা ভাল। কেননা আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন, যে কেউ কোন আমল বা রুকন ভুলে বসলে সে এর পরিবর্তে একটি কুরবানী দিবে। নাফি’ (র) মুজাব্বার নামক কোন এক নিকট-আত্মীয়ের সঙ্গে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর সাক্ষাৎ হয়। সে তাওয়াফে যিয়ারত করে গিয়েছিল বটে তবে অজ্ঞতার দরুন মাথার চুল ছাঁটায়নি বা কামায়নি। তাকে তখন আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) পুনরায় মক্কায় গিয়ে চুল কামাতে বা ছাঁটাতে এবং পুনরায় তাওয়াফে যিয়ারত করতে নির্দেশ দেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ্ যখন ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করতেন তখন উটে আরোহণ এবং ইহরাম বেঁধে ‘তালবিয়া’ পাঠ করার পূর্বেই কাঁচি এনে মোচ এবং দাড়ি ছেঁটে নিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
চুল জমাট বাঁধানো
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, (ইহরাম বাঁধার সময়) যে ব্যক্তি মাথার চুল বেণী করে নিবে সে (ইহ্রাম খোলার সময়) যেন এটা কামায়ে ফেলে। ‘তালবীদ’ (আঠাল কোন পদার্থ দ্বারা মাথার চুল জমাট করা) সদৃশ যেন কেউ চুল জমাট না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, (ইহ্রাম বাঁধার সময়) যে চুল খোঁপা বানিয়ে নেয় বা বেণী গেঁথে নেয় বা আঠালো কিছু দ্বারা জমিয়ে নেয় তার জন্য (ইহ্রাম খোলার সময়) মুণ্ডন করা ওয়াজিব। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কা’বা ঘরের অভ্যন্তরে নামায আদায় করা, নামায কসর পড়া এবং আরাফাতে তাড়াতাড়ি খুতবা পাঠ করা
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উসামা ইবনু যায়দ (রা) বিলাল ইবনু রাবাহ্ (রা) এবং উসমান ইবনু তালহা হাযাবী (রা)-কে নিয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কা’বা শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে কিছুক্ষণ রয়ে গেলেন। আবদুল্লাহ বলেন, বিলাল যখন বের হয়ে এলেন তখন তাঁকে আমি জিজ্ঞেস করলাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে কি করেছেন? তিনি বললেন, একটি স্তম্ভ ডানে এবং তিনটি স্তম্ভ পেছনে রেখে তিনি সেখানে নামায আদায় করেছেন। তখনকার সময়ে কা’বা শরীফের ভিতর মোট ছয়টি স্তম্ভ ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান তদীয় গভর্নর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফকে নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন হজ্জে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর কোন কাজে বিরোধিতা করবে না। সালিম (র) বলেন, আরাফাতের দিন সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ামাত্রই আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের তাঁবুতে আসেন। আমিও তাঁর সাথে ছিলাম। তিনি বললেন হাজ্জাজ কোথায়? হাজ্জাজ তখন কুসুম রঙের চাদর শরীরে ছেড়ে বের হয়ে এসে বললেন, হে আবূ আবদুর রহমান, ব্যাপার কি? ইবনু উমার (রা) বললেন পবিত্র সুন্নতের অনুসরণ করে যদি চলার ইচ্ছা থাকে তবে জলদি চল। হাজ্জাজ বললেন, এখনই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এখনই। হাজ্জাজ বললেন, একটু সময় দিন, গোসল করে নেই। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) তখন সাওয়ারী হতে নেমে এলেন। কিছুক্ষণ পরেই হাজ্জাজও এলেন এবং আমার ও আমার পিতার (ইবনু উমার) মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন। আমি তখন তাঁকে বললামঃ পবিত্র সুন্নতের অনুসরণ করে চলার ইচ্ছা থাকলে আজ খুতবাটা একটু হালকা করে পড়ো এবং নামায বেশি বিলম্ব করো না, জলদি করে পড়ে নিও। এই কথা শুনে হাজ্জাজ আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর মুখ হতে এটা শোনার জন্য তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি তখন বললেন, হ্যাঁ, সালিম সত্য কথাই বলেছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
আট তারিখে মিনাতে নামায পড়া, মিনা এবং আরাফাতে জুম’আর নামায পড়া
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ফজরের নামায মিনা ময়দানে পড়তেন এবং সকালে সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের দিকে যাত্রা করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, আরাফাত দিবসে ইমাম যুহরের নামাযে ‘কিরাআত’ জোরে পড়বেন না। হ্যাঁ, আরাফাতের দিন খুতবা দিবেন। মূলত আরাফাতের নামায যুহরেরই নামায। তবে সফরের কারণে উহা কসর বা সংক্ষিপ্ত করে দেয়া হয়েছে। [১] মালিক (র) বলেন, ইয়াওমে-আরাফা বা ইয়াওমুননাহার বা আইয়্যামে তাশরীকের দিন যদি জুম’আর দিন হয় তবে ঐ সমস্ত দিনে ইমামুল-হজ্জ জুম’আর নামায পড়াবেন না।
মুযদালিফায় নামায
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার নামায একত্রে আদায় করেছেন। (বুখারী ১০৯২, মুসলিম ১২৮৮) উসামা ইবনু যায়দ (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) গিরিপথে পৌঁছে প্রস্রাব করার জন্য নামলেন এবং পরে ওযূ করলেন, কিন্তু পূর্ণভাবে করলেন না। [১] আমি তাঁকে বললাম হে আল্লাহর রসূল, নামাযের কি হবে? তিনি বললেন, আরও এগিয়ে আমরা নামায আদায় করব। তিনি মুযদালিফায় পৌঁছে পূর্ণভাবে ওযূ করলেন। তখন নামাযের তকবীর হল। তিনি মাগরিবের নামায আদায় করলেন। প্রত্যেকেই স্ব স্ব উট স্ব স্ব স্থানে বেঁধে রাখলেন। অতঃপর আবার ইশার নামাযের তকবীর হল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইশার নামায আদায় করলেন। তখন এই উভয় নামাযের মধ্যে আর কোন (নফল) নামায তিনি পড়েননি। (বুখারী ১৩৯, মুসলিম ১২৮০) আবূ আইয়ূব আনসারী (র) তিনি বিদায় হজ্জের সময় রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করেছিলেন। (বুখারী ১৬৭৪, মুসলিম ১২৮৭) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ উমার (রা) মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার নামায একত্রে আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মিনা’য় নামায
মালিক (র) মক্কার অধিবাসী কোন ব্যক্তি হজ্জ করলে মিনায় সে নামায কসর আদায় করবে এবং মক্কায় পুনরায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত সে কসরই আদায় করতে থাকবে। হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিনায় দুই রাক’আত কসর নামায আদায় করেছিলেন। আবূ বক্র (রা) এবং উমার ইবনু খাত্তাব (রা) তাঁদের আমলে দুই রাক’আত করে আদায় করেছিলেন। এমন কি উসমান ইবনু আফফান (রা)-ও তাঁর খিলাফতের কিছুকাল দুই রাক’আত করে আদায় করেছেন, কিন্তু পরে তিনি চার রাক’আত করে পড়তে শুরু করেন। (বুখারী ১০৮২, উমার (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে, মুসলিম ৬৯৪) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) যখন মক্কায় আসেন তখন দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, হে মাক্কাবাসিগণ, তোমরা স্ব স্ব নামায পূর্ণ করে নাও। কারণ আমরা মুসাফির (তাই আমাদেরকে কসর আদায় করতে হয়েছে)। পরে তিনি মিনায় গিয়ে দুই রাক’আতই আদায় করলেন। তবে সেখানেও তিনি নামাযের পর কিছু বলেছিলেন বলে আমরা সংবাদ পাইনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) যায়দ ইবনু আসলাম (র) মক্কায় উমার ইবনু খাত্তাব (রা) দুই রাক’আত নামায আদায় করে বলেছিলেন হে মক্কাবাসিগণ! আমরা মুসাফির। তোমরা তোমাদের নামায পূর্ণ করে নাও। পরে মিনায়ও তিনি দুই রাক’আত নামায পড়েন। কিন্তু সেখানেও কিছু বলেছিলেন বলে আমরা সংবাদ পাইনি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মক্কাবাসিগণ আরাফাতের ময়দানে চার রাক’আত আদায় করবে, না দুই রাক’আত আদায় করবে? অনুরূপভাবে আমীরে হজ্জ যদি মক্কাবাসী হন তবে তিনি এই ব্যাপারে কি করবেন? মক্কাবাসীগণ মিনায় থাকাকালে কসর (দুই আক’আত) আদায় করবে কিনা? উত্তরে তিনি বললেন, মক্কাবাসিগণ যতক্ষণ মিনা ও আরাফাতে অবস্থান করবে মক্কায় প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত কসরই আদায় করবে। আমীরে-হজ্জও যদি মক্কাবাসী হন তিনিও কসর আদায় করবেন। মালিক (র) বলেন, মিনা এবং আরাফাতের বাসিন্দাগণ কসর আদায় করবে না, পূর্ণ নামায আদায় করবে।
মিনা এবং মক্কায় ‘মুকীম’ ব্যক্তির নামায
মালিক (র) যিলহজ্জের চাঁদ উদয় হওয়ামাত্র যদি কেউ মক্কায় এসে হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেয় তবে যতদিন সে মক্কায় অবস্থান করবে ততদিন নামায পূর্ণ আদায় করবে (কসর আদায় করবে না)। কেননা সে চার দিনেরও অতিরিক্ত দিন এখানে অবস্থান করার নিয়ত করেছে।
আইয়্যামে তাশরীকের তাকবীর
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) ১০ তারিখ একটু বেলা হয়ে এলে তাকবীর পড়া শুরু করেন। তাঁর সঙ্গিগণও তাকবীর বলতে শুরু করেন। পরের দিন তিনি একটু বেলা হয়ে এলে তাকবীর পড়া শুরু করেন। এবং সঙ্গিগণও তখন পড়া শুরু করেন। তৃতীয় দিন সূর্য হেলে যাওয়ার পর তিনি তাকবীর বললেন। সঙ্গিগণও তখন তাকবীর বললেন। সমস্বরে তাকবীর বলার এই আওয়ায মক্কা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। অন্যান্য মানুষ তখন বুঝতে পারে যে, উমার (রা) প্রস্তর নিক্ষেপের (রমীয়ে জামরাহ্) জন্য রওয়ানা হয়ে গিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট হুকুম হল, আইয়্যামে তাশরীকের সময় প্রত্যেক নামাযের পর তাকবীর পড়তে হবে। ইমাম প্রথমে তাকবীর বলবেন, মুকতাদি গণ তাঁর অনুসরণ করবেন। যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখের যুহর হতে তাকবীর বলা শুরু করবেন এবং ১৩ তারিখ ফজরের সময় তা শেষ করবে। ইমাম-মুকতাদি সকলেই এই তাকবীর পাঠ করবেন। নারী-পুরুষ সকলের উপরই পাঠ করা ওয়াজিব। জামাতে নামায পড়ুক বা একাকী, মিনায় অবস্থানরত থাকুক বা অন্য কোনখানে, সকল অবস্থায়ই উহা পাঠ করতে হবে। ইমামুল-হজ্জ এবং মিনার ময়দানে অবস্থিত হাজীগণের অনুসরণ করবে অন্যান্য লোক। তাকবীরের বেলায় তারা যখন মিনা হতে প্রত্যাবর্তন করবে ও ইহরাম ভঙ্গ করবে, তখন মুহলিদের (ইহরাম অবস্থায় যারা নেই) অনুসরণ করবে যাতে তাদেরই মত হয় অর্থাৎ মুহরিম ও মুহিল দুই দলের মধ্যে তাকবীর বলার ব্যাপারে পার্থক্য নেই। আর যারা হজ্জ সম্পাদনকারী নয়, তারা কেবল আইয়্যামে তাশরীকের বেলায় হাজীদের অনুসরণ করবে। মালিক (র) বলেন, কুরআনে উল্লেখিত ‘আইয়্যামে মা’দুদাত’ হল আইয়্যামে তাশরীক। [১]
মুআররাস ও মাহাসসাবের নামায
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুল-হুলায়ফা ময়দানের প্রস্তরাকীর্ণ স্থানে স্বীয় উট বসিয়ে নামায আদায় করেছিলেন। (বুখারী ১৫৩২, মুসলিম ১২৫৭) নাফি’ (র) বলেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) তদ্রূপ করতেন। মালিক (র) বলেন, হজ্জ সমাধা করে মদীনা ফেরার পথে ‘মাআররাস’ নামক স্থানে প্রত্যেকে যেন নামায আদায় করে। আর নামাযের ওয়াক্ত না হলে ওয়াক্ত হওয়া পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করে এবং যত রাক’আত পড়া সহজ তা যেন আদায় করে নেয়। কারণ আমার নিকট রেওয়ায়াত পৌঁছেছে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে শেষরাতে অবস্থান করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-ও সেখানে স্বীয় উট বসাতেন এবং অবস্থান করতেন। [১] নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যুহর, আসর, মাগরিব এবং ইশার নামায মুহাস্সাব নামক স্থানে আদায় করতেন। অতঃপর রাত্রে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মিনার রাত্রিগুলোতে মক্কায় রাত্রি যাপন করা
মালিক (র) লোকেরা আমার নিকট বলেছেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) জামরা-এ-আকাবা বা প্রস্তর নিক্ষেপের স্থানের পশ্চাৎ হতেই লোকদেরকে মিনার দিকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কিছুসংখ্যক লোক নিযুক্ত করে রাখতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেছেন, মিনার রাত্রিসমূহে কেউ যেন জামরা-এ-আকাবার পেছনে অবস্থান না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তিনি বলেছেন মিনায় অবস্থানের রাত্রিসমূহে কেউ যেন মিনা ব্যতীত অন্যত্র রাত্রি যাপন না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কঙ্কর নিক্ষেপ করা
মালিক (র) জামরা-ই-উলার (প্রথম কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান) ও জামরা-ই-বুস্তার (মধ্যবর্তী কঙ্কর নিক্ষেপের স্থান) নিকট উমার (রা) (দু’আর জন্য) এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, দণ্ডায়মান অন্য লোকজন বিরক্ত হয়ে যেত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) দীর্ঘক্ষণ জামরা-ই-উলা এবং জামরা-ই-বুসতার নিকট দাঁড়িয়ে থাকতেন। তাকবীর-এ-তাশরীক ও হাম্দ পড়তেন এবং দু’আ করতে থাকতেন। জামরা-ই-আকাবা শেষ কঙ্কর নিক্ষেপের কাছে তিনি দাঁড়াতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) কোন কোন আহলে-ইলমের নিকট তিনি শুনেছেন যে, কঙ্কর এত ছোট হওয়া উচিত যাতে দুই আঙ্গুল দ্বারা নিক্ষেপ করা যায়। মালিক (র) বলেন, আমার মতে উহা হতে কঙ্কর সামান্য বড় হওয়া উচিত। নাফি’ (র) হতে বর্ণিত আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) বলেন, ১২ তারিখের সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে ব্যক্তি মিনায় অবস্থান করবে ১৩ তারিখে কঙ্কর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত সে যেন ফিরে না যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইব্নু কাসিম (র) কঙ্কর নিক্ষেপের জন্য সাধারণত পায়ে হেঁটে লোকজন আসা-যাওয়া করত। সর্বপ্রথম মুয়াবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রা) আরোহী অবস্থায় কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র) কোথা হতে জামরা-ই-আকাবার কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন? তিনি বললেন, যে স্থান হতে সুবিধা এবং সহজ হত সেই স্থান হতেই তিনি উক্ত সময় কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল অসুস্থ ও শিশুদের তরফ হতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা যায় কিনা? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, ইহা জায়েয। তবে অসুস্থ ব্যক্তির কঙ্কর নিক্ষেপের সময় অনুমান করে স্বীয় স্থানে থেকেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং একটি কুরবানী করবে। আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যে যদি সুস্থ হয়ে পড়ে তবে নিজে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে এবং একটি কুরবানী দিবে। মালিক (র) বলেন, ওযূ ব্যতীত কঙ্কর নিক্ষেপ করলে বা সা’য়ী করলে উহা পুনরায় আদায় করতে হবে না বটে কিন্তু জেনে শুনে এইরূপ করা উচিত নয়। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন, তিন দিনের প্রত্যেক দিনই সূর্য হেলে পড়ার পর কঙ্কর নিক্ষেপ করা উচিত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কঙ্কর নিক্ষেপের ব্যাপারে রুখসত
আবুল বাদ্দা বাদ্দাহ ইবনু আসিম ইবনু আদী (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উটের রাখালগণকে মিনা ব্যতীত অন্য স্থানেও রাত্রি যাপন করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন। দশ তারিখ এবং উহার পরদিন ও উহার পরবর্তী দিন (১১ ও ১২ তারিখে) সে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। চতুর্থ দিন অর্থাৎ ১৩ তারিখেও যদি সে সেখানে অবস্থান করে তবে কঙ্কর নিক্ষেপ করবে। [১] (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৯৭৫, তিরমিযী ৯৫৫, নাসাঈ ৩০৭৮, ৩০৬৯, ইবনু মাজাহ ৩০৩৬, ৩০৩৭, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [আল ইরওয়া ১০৮]) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উটের রাখালদেরকে কঙ্কর নিক্ষেপের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আতা ইবনু রাবাহ বলেন, এই অনুমতি প্রথম যুগ হতে প্রচলিত ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আবুল বাদদা ইবনু আসিম ইব্নু আদী বর্ণিত উপরিউক্ত হাদীসটির মর্মার্থ হল, সে দশ তারিখে রমী করার পর এগার তারিখ অতিবাহিত হয়ে গেলে বার তারিখে এসে এগার এবং বার উভয় তারিখের রমী করবে। কারণ ওয়াজিব হওয়ার পূর্বে কোন বস্তুর কাযা হয় না; যখন তার উপর ওয়াজিব হল এবং সেদিন অতিবাহিত হল তখন সেদিনের রমী কাযা করতে হবে। আবূ বক্র ইবনু নাফি’ (র) সফিয়া বিন্ত আবি উবায়দের ভ্রাতৃকন্যার মুযদালিফায় নিফাস শুরু হয়। শেষে তিনি এবং তাঁর ভ্রাতৃকন্যা সেখানেই থেকে যান। দশ তারিখ যখন তাঁরা মিনায় পৌঁছালেন তখন সূর্য উঠে গিয়েছিল। মিনায় পৌঁছার পর আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) উভয়কে কঙ্কর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। তবে তাঁদের উপর কোন বদলার হুকুম দেননি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেউ যদি মিনার দিবসগুলোর কোন তারিখের রমী করতে ভুলে যায় আর এইদিকে সূর্যও অস্তমিত হয়ে যায় তবে সে কি করবে? তিনি বললেন, রাতে বা দিনে যখনই স্বরণ হবে রমী করে নিবে। নামাযের কথা ভুলে গেলে যেমন রাত্রে বা দিনে যখনই স্মরণ হয় তখনই আদায় করে নিতে হয়, এখানেও তাই করবে। তবে মিনা হতে চলে যাওয়ার পর যদি স্মরণ হয় তবে তার উপর কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব হবে।
তাওয়াফে যিয়ারত
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) আরাফাতের ময়দানের সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। হজ্জের আরকান ও আহকাম সম্পর্কে তাদেরকে শিক্ষা দেন। অন্যান্য কথার মধ্যে তিনি এটাও বলেন যে, মিনা আগমন এবং কঙ্কর নিক্ষেপের পর স্ত্রীসহবাস এবং সুগন্ধি দ্রব্য ব্যতীত তোমাদের জন্য সবকিছুই হালাল হয়ে যাবে। বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফ (তাওয়াফে যিয়ারত বা ইফাযা) না করা পর্যন্ত তোমাদের কেউ যেন সুগন্ধি দ্রব্য ও স্ত্রী স্পর্শ না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) যে ব্যক্তি কঙ্কর নিক্ষেপ, মাথা কামান বা ছাঁটান এবং কুরবানী ওয়াজিব থাকলে উহা আদায় করেছেন, তার জন্য সুগন্ধি দ্রব্য এবং স্ত্রীসম্ভোগ ব্যতীত আর সকল কিছুই হালাল হয়ে গিয়েছে। বায়তুল্লাহ্ তাওয়াফের পর তার জন্য এ দুটিও হালাল হয়ে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
ঋতুমতী স্ত্রীলোকের মক্কায় প্রবেশ করা
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) বিদায় হজ্জের সময় আমরা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে যাত্রা করি আমরা উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কুরবানীর পশু যার আছে সে যেন হজ্জ ও উমরা উভয়টিরই ইহরাম বেঁধে নেয় এবং কাজ সমাধা না করা পর্যন্ত যেন ইহরাম না খোলে। আয়েশা (রা) বলেন, মক্কায় যখন প্রবেশ করি তখন আমি ঋতুমতী হয়ে পড়ি। ফলে আমি তাওয়াফ এবং সা’য়ী করতে পারলাম না। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আরয করলে তিনি বললেন, বিনুনি খুলে আঁচড়িয়ে নাও আর উমরা পরিত্যাগ করে হজ্জে ইহরাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। আমার হজ্জ আদায়ের পর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবদুর রহমান ইবনু আবূ বক্র (রা)-এর সাথে আমাকে তান’য়ীম প্রেরণ করেন। তখন সেই স্থান হতে আমি উমরা আদায় করি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, পূর্বে পরিত্যক্ত উমরার বদল হল তোমার এই উমরা। যারা কেবল উমরার ইহরাম বেঁধেছিল তারা তাওয়াফ ও সা’য়ী করার পর হালাল হয়ে যায় এবং মিনা হতে ফিরে এসে তারা হজ্জের জন্য দ্বিতীয় তাওয়াফ আদায় করবে। আর যারা কেবল হজ্জের বা হজ্জ ও উমরা উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিল তারা শুধু একবারই তাওয়াফ আদায় করবে। (বুখারী ২৯৪, মুসলিম ১২১১) ২২৪و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ عَائِشَةَ بِمِثْلِ ذَلِكَ. উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র) আয়েশা (রা) হতে অনুরূপ রেওয়ায়ত করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আয়েশা (রা) ঋতুমতী অবস্থায় আমি মক্কায় এসেছিলাম। ফলে আমি তাওয়াফ ও সা’য়ী করিনি। এই কথা রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট পেশ করলে তিনি বলেছেন, একজন হাজী যে সমস্ত কাজ করে তুমি তাই করে যাও। তবে পাক না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফ ও সা’য়ী স্থগিত রাখ। (বুখারী ২৯৪, মুসলিম ১২১১) মালিক (র) বলেন, উমরার ইহরাম বেঁধে কোন মহিলা মক্কায় এলে আর হজ্জের সময় তার ঋতুস্রাব আরম্ভ হওয়ার দরুন সে যদি তাওয়াফ করতে না পারে, পাক হতে হতে হজ্জের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আশষ্কা হলে, সে হজ্জের ইহরাম বেঁধে নিবে এবং একটা কুরবানী করবে। কিরান হজ্জকারীর মত তাকেও একবার তাওয়াফ করলেই হবে। তাওয়াফ করে দুই রাক’আত তাওয়াফের নামায আদায় করার পর যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে সে হজ্জের অন্যান্য আহকাম, যথা সা’য়ী, আরাফাতে মুযদালিফায় অবস্থান এবং প্রস্তর নিক্ষেপ এই অবস্থায়ই চালিয়ে যেতে পারবে। তবে হায়য হতে পাক না হওয়া পর্যন্ত তাওয়াফে যিয়ারত করতে পারবে না।
ঋতুমতী মহিলার তাওয়াফে যিয়ারত (ইফাযা)
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা) (হজ্জের সময়) সফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রা)-এর ঋতুস্রাব আরম্ভ হয়। রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এটা ব্যক্ত করলে তিনি বললেন, সফিয়্যা যেন আমাদেরকে এখানেই আটকিয়ে রাখবে। তখন তাঁকে বলা হল, ইনি তাওয়াফে যিয়ারত (ইফাযা) আদায় করে নিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আর আটকাবে না। [১] (সহীহ, বুখারী ১৭৫৭) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! সফিয়্যারতো ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। তিনি বললেন, মনে হয় সে আমাদের আটকিয়ে রাখবে। সে কি তোমাদের সাথে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেনি? মহিলাগণ বললেন, হ্যাঁ, করেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আর কি, তা হলে এখন চল। (বুখারী ২৯৪, মুসলিম ১২১১) আমরাহ্ বিন্ত আবদুর রহমান (র) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) অন্য মহিলাদেরকে নিয়ে হজ্জ করতেন এবং যদি তাঁদের কারো ঋতুস্রাবের আশষ্কা দেখা দিত তবে দশ তারিখেই তাঁকে তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে আসার জন্য পাঠিয়ে দিতেন। তাওয়াফে যিয়ারত করে নেওয়ার পর কারো ঋতুস্রাব হলে তার পাক হওয়ার আর অপেক্ষা করতেন না, গন্তব্যস্থলে রওয়ানা হয়ে পড়তেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যা (রা)-এর কথা জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বললেন, তাঁর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন হয়তো সে আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে। অন্যরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তিনি তাওয়াফ করে নিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আর আটকাবে না। হিশাম ইবনু উরওয়াহ্ (র) হতে বর্ণিত; তিনি বলেছেন, আমরা উপরিউক্ত বিষয় আলোচনা করেছিলাম। তখন আয়েশা (রা) বলেন, মহিলাগণকে যদি পূর্বে তাওয়াফের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া উপকারী না হয়, তবে মানুষ কেন পাঠায়? মানুষের এই ধারণা যদি ঠিক হত, তবে ছয় হাজারেরও অধিক মহিলাকে ঋতুমতী অবস্থায় বিদায়ী তাওয়াফের অপেক্ষায় মিনায় পড়ে থাকতে হত। আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ বক্র (র) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান (র) খবর দিয়েছেন উম্মে সুলায়ম বিন্ত মিলহান (রা)-এর তাওয়াফে যিয়ারতে ঋতুস্রাব শুরু হলে অথবা তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তিনি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে চলে যেতে অনুমতি দিলেন। পরে তিনি চলে গেলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, মিনায় অবস্থানকালে কারো ঋতুস্রাব শুরু হলে তাওয়াফে যিয়ারত না করা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করবে। তাওয়াফে যিয়ারত করার পর যদি কারো ঋতুস্রাব শুরু হয় তবে সে তার দেশে ফিরে যেতে পারে। কারণ এমন ঋতুমতী মহিলা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর তরফ হতে অনুমতি প্রদানের রেওয়ায়ত আমাদের নিকট পৌঁছেছে। তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বেই যদি ঋতুস্রাব শুরু হয় এবং তা বন্ধ না হয় তবে ঋতুস্রাবের জন্য নির্ধারিত পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত সে অবস্থান করবে।
বন্য পশু-পাখি হত্যার ফিদ্য়া
আবূয্ যুবায়র মক্কী (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) হায়েনার বেলায় একটি মেষ, হরিণের বেলায় একটি ছাগল এবং খরগোশ হত্যার বেলায় এক বৎসর বয়সের ছাগলছানা, বন্য ইঁদুর হত্যার বেলায় চার মাস বয়সের ছাগলছানা প্রদানের বিধান দিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (র) এক ব্যক্তি উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট এসে বলল, আমি ও আমার সঙ্গী একটি গিরিপথে আমাদের ঘোড়া দৌড়িয়ে ইহরাম অবস্থায় একটি হরিণ শিকার করে ফেলেছি। উমার (রা) তখন পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে বললেন, চলুন, আমরা দু’জনে এর একটি ফয়সালা করে দেই। শেষে তাঁরা দু’জনে ঐ ব্যক্তির উপর একটা বকরী ফিদ্য়া প্রদানের বিধান দেন। ঐ ব্যক্তি ফিরে যেতে যেতে বলতেছিল ইনি আমিরুল মু’মিনীন যিনি অন্যের সহযোগিতা ভিন্ন একটি হরিণের ফয়সালা দিতে পারলেন না। উমার (রা) তার উক্তি শুনে ফেললেন। তাকে ডেকে বললেন, তুমি কুরআনুল কারীমের সূরা- মায়িদা পড়েছ কি? সে বলল, জি, না। তিনি বললেন, যিনি আমার সঙ্গে ফয়সালা দিয়েছেন তাঁকে চিন? সে বলল, জি, না। উমার (রা) তখন বললেন, যদি সূরা-ই-মায়িদা পড়েছ বলতে তবে তোমাকে আমি আজ শাস্তি দিতাম। আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর কিতাবে (সূরা- মায়িদায়) ইরশাদ করেছেন “তোমাদের দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সত্যবাদী ব্যক্তি ফিদ্য়া সম্পর্কে ফয়সালা করে দেবে। উহা কুরবানীর জন্য হবে যা মক্কায় পৌঁছাবে।” আর যিনি আমার সাথে ফয়সালা প্রদানে সহযোগিতা করেছেন ইনি হচ্ছেন আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রা)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়া (র) একটি বন্য গাভী হত্যা করলে একটি গরু এবং হরিণ হত্যা করলে একটি বকরী ফিদ্য়া দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) মক্কার কোন কবুতর শিকার করলে একটি বকরী ফিদ্য়া দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, মক্কার আধিবাসী কোন ব্যক্তি যদি হজ্জ বা উমরার ইহরাম বাঁধে আর তার ঘরে যদি মক্কার কবুতরের বাচ্চা থাকে আর ঐ ব্যক্তি কবুতরের বাসার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যদি ঐ ছানা মারা যায়, তবে প্রতিটি ছানার পরিবর্তে এক একটি বকরী ফিদ্য়া দিতে হবে। মালিক (র) ইহরামরত ব্যক্তি যদি একটি উটপাখি মেরে ফেলে, তবে তার বদলে একটি উট ফিদ্য়া দিতে হবে। এটাই আমি হামেশা শুনে এসেছি। মালিক (র) বলেন, উটপাখির ডিম নষ্ট করলে প্রতিটি ডিমের পরিবর্তে একটি উটের মূল্যের এক-দশমাংস হিসেবে ফিদ্য়া দিতে হবে। যেমন, আযাদ কোন মহিলার গর্ভস্থ সন্তান যদি কেউ মেরে ফেলে তবে এর কাফ্ফারায় (মালিক র. বলেছেন) একটি দাসী বা দাস আযাদ করতে হয়। মালিক (র) বলেন, পঞ্চাশ দীনার হচ্ছে একটি মানুষের পূর্ণাঙ্গ দিয়্যতের (রক্তপণ) এক-দশমাংশ। মালিক (র) বলেন, শকুন, বাজ, ঈগল, রখম (এক প্রকার শকুন জাতীয় প্রাণী) শিকার বলে গণ্য। মুহরিম ব্যক্তি এগুলো হত্যা করলেও বদলা আদায় করতে হবে। মালিক (র) বলেন, প্রাণী ছোট হোক বা বড় হোক যার যে ফিদ্য়ার বিধান করা হয়েছে তাই আদায় করতে হবে। দিয়্যতের মধ্যে যেমন বড়- ছোটর তারতম্য হয় না, এইখানেও কোন তারতম্য করা হবে না।
ইহরাম অবস্থায় পঙ্গপাল হত্যার ফিদ্য়া
যায়দ ইবনু আসলাম (র) এক ব্যক্তি উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর নিকট এসে বলল, আমীরুল মু’মিনীন! আমি ইহরাম অবস্থায় লাঠি দ্বারা কয়েকটি পঙ্গপাল মেরে ফেলেছি। উমার (রা) তখন বললেন, মুষ্টি পরিমাণ খাদ্য কাউকেও দিয়ে দাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কিছু পঙ্গপাল মেরে ফেলেছিল। উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর কাছে সে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি কা’ব (রা)-কে ডেকে বললেন, চলুন, আমরা দু’জনে মিলে এর একটা ফয়সালা করি। কা’ব (রা) বললেন, এতে এক দিরহাম কাফফারা দিতে হবে। উমার (রা) কা’ব (রা)-কে বললেন, আপনার নিকট অনেক দিরহাম রয়েছে (তাই এই ধরনের বিধান দিতে পেরেছেন), আমার নিকট একটি পঙ্গপাল হতে একটা খেজুর অনেক শ্রেয়। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
কুরবানী করার পূর্বে মাথার চুল কামিয়ে ফেললে উহার ফিদ্য়া
কা’ব ইবনু ‘উজরা (রা) তিনি ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে ছিলেন। তাঁর মাথায় উকুন তাঁকে কষ্ট দিচ্ছিল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন তাঁকে মাথার চুল কামায়ে ফেলতে হুকুম করে বললেন, এর পরিবর্তে তিনদিন রোযা বা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে দুই মুদ পরিমাণ খাদ্য কিংবা একটি বকরী কুরবানী দিয়ে দাও। উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের যেকোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট। (বুখারী ১৮১৫, মুসলিম ১২০১) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, মনে হয় উকুন তাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম হ্যাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ্! তিনি তখন বললেন, চুল কামায়ে ফেল এবং তিনদিন রোযা রাখ বা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও বা একটি বকরী কুরবানী দিয়ে দিও। (বুখারী ১৮১৪) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাছে এলেন। আমি চুলায় আগুন ধরিয়ে সঙ্গীদের জন্য রান্ন-বান্নায় ব্যস্ত ছিলাম। আমার মাথা ও দাড়ি উকুনে ভরা ছিল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার পেরেশানী অনুভব করে আমার ললাটে হাত রাখলেন এবং বললেন, চুল কেটে ফেল এবং তিনদিন রোযা রাখ বা ছয় জন মিসকীনকে খাদ্য দিয়ে দাও। আর আমার নিকট কুরবানী করার মত কিছু ছিল না, এ কথা তিনি জানতেন। (বুখারী ৪১৯০, মুসলিম ১২০১, ইমাম মালিক (র)-এর সনদে মুবহাম রয়েছে) মালিক (র) বলেন, অপরাধ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কিছু ফিদ্য়া দিবে না। কারণ অপরাধ করার পরই শুধু কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়ে থাকে। কাফ্ফারার বেলায় কুরবানী বা রোযা বা মিসকীনকে খাদ্য প্রদান, এই তিনটির যেকোন একটি এবং মক্কা বা মক্কার বাহিরে যেকোন শহরে উহা আদায় করার ইখতিয়ার রয়েছে। মালিক (র) বলেন, ইহরাম না খোলা পর্যন্ত মুহরিমের জন্য চুল উপড়ান বা কামানো বা ছাঁটা কিছুই জায়েয নয়। চুলে উকুন ইত্যাদি হয়ে গেলে তা জায়েয। কিন্তু উহার পরিবর্তে আল্লাহর নির্দেশমত ফিদ্য়া দিতে হবে। মুহরিমের জন্য নখ কাটা, উকুন মারা বা মাথার চুল হতে উকুন বের করে মাটিতে ফেলে দেওয়া বা শরীর ও কাপড়ের উকুন বের করা জায়েয নয়। এইরূপ করলে এক মুষ্টি খাদ্য খয়রাত করবে। মালিক (র) বলেন, যদি ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি নাকের চুল বা বগলতলা বা নাভীর নিচের লোম চিমটি দ্বারা উপড়ায় অথবা মাথায় যখম হওয়ার দরুন প্রয়োজনের খাতিরে চুল কামায় বা শিঙ্গা লাগাবার উদ্দেশ্যে গর্দানের চুল কাটে, এসব জেনে করুক বা ভুলবশত করুক, সকল অবস্থায়ই তার জন্য ফিদ্য়া দেওয়া ওয়াজিব। শিঙ্গা লাগানো স্থানের চুল কামানো মুহরিমের জন্য জায়েয নয়। মালিক (র) বলেন, অজ্ঞতার দরুন যদি কেউ কঙ্কর নিক্ষেপের পূর্বেই মাথার চুল কামায়ে ফেলে তবে তাকে ফিদ্য়া দিতে হবে।
হজ্জের কোন রুকনে ভুল করলে কি করতে হবে
সাঈদ ইবনু যুবায়র (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন, যদি কেউ হজ্জে কোন রুকন আদায় করতে ভুলে যায় বা তা ছেড়ে দেয় তবে তাকে কুরবানী দিতে হবে। আইয়ূব (আইয়ূব ইবনু আবি তমীমা সখতিয়ানী) (র) বলেন, আমার মনে নাই সাঈদ (র) ভুলে গেলে বলেছেন, না ছেড়ে দিলে বলেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, উক্ত কুরবানী মক্কায় পৌঁছাতে হবে। অন্য কোন ইবাদত হলে যেকোন স্থানেই তা আদায় করা যায়।
ফিদ্য়া সম্পর্কিত বিবিধ আহকাম
মালিক (র) ফিদ্য়া দেওয়া সহজ মনে করে যদি কেউ ইহরাম অবস্থায় পড়া নাজায়েয এমন ধরনের কাপড় পরে বা চুল কেটে ফেলে বা বিনা প্রয়োজনে সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করে, তবে এটা তার জন্য অনুচিত হবে। একান্ত প্রয়োজনের খাতিরেই একজন ঐ সমস্ত কাজ করতে পারে তা করলে তাকে অবশ্যই ফিদ্য়া দিতে হবে। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি ফিদ্য়া দিবে তার পক্ষে রোযা বা সদকা বা নুসুক’ এই তিনটির যেকোন একটি দ্বারা ফিদ্য়া দেওয়ার ইখতিয়ার আছে কিনা? নুসুক অর্থ কি? সদকা বা মিসকীনদের কতটুকু খাদ্য প্রদান করতে হবে এবং কোন ধরনের ‘মুদের’ (এক প্রকার মাপ) মাপে উহা আদায় করতে হবে? রোযা কয়টি রাখতে হবে? সঙ্গে সঙ্গে রাখতে হবে, না বিলম্ব করলেও চলবে? মালিক (রা) উত্তরে বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা যত জায়গায় কাফফারা সম্পর্কে ‘ইহা’ বা ‘উহা’ এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন সকল স্থানেই উল্লিখিত বিষয়সমূহের যেকোন একটি আদায় করার ইখতিয়ার থাকে। ‘নুসুক’ অর্থ এইখানে একটি বকরী কুরবানী করা। রোযা তিনটি রাখতে হবে। ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক মিসকীনকেই নাবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুদে দুই মুদ পরিমাণ খাদ্য প্রদান করতে হবে। মালিক (র) বলেন, কতিপয় আলিমের নিকট শুনেছি তাঁরা বলেন, কোন বস্তুকে লক্ষ করে মুহরিম ব্যক্তি যদি কিছু নিক্ষেপ করে আর উহা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোন পশু বা পাখির গায়ে আঘাত করার ফলে যদি তা মারা যায়, তবে উক্ত প্রাণী হত্যা করার ইচছা না থাকা সত্ত্বেও ঐ ব্যক্তিকে ফিদ্য়া দিতে হবে। এমনিভাবে মুহরিম নয় এরূপ কোন ব্যক্তি হারমের ভিতর কোন বস্তুর প্রতি লক্ষ করে কিছু ছুঁড়লে আর উহা কোন প্রাণীর গায়ে লেগে যদি তা মারা যায়, তবে উহার উপরও ফিদ্য়া ধার্য হবে। এই বিষয়টির ইচ্ছাকৃতভাবে মারা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে মারা যাওয়া উভয় অবস্থার হুকুমই এক। মালিক (র) বলেন, কয়েকজন ব্যক্তি মিলে যদি একটি শিকার হত্যা করে আর সকলেই যদি মুহরিম হয় অথবা হারাম শরীফে থাকে তবে প্রত্যেককেই সম্পূর্ণভাবে এক একটি ফিদ্য়া আদায় করতে হবে। কুরবানী দিতে হলে প্রত্যেককেই একটি করে দিতে হবে। আর রোযা রাখতে হলে প্রত্যেককেই রোযা রাখতে হবে। যেমন কয়েক ব্যক্তি যদি ভুলক্রমে একজনকে হত্যা করে ফেলে, তবে হত্যার কাফফারা (অর্থাৎ একটি গোলাম আযাদ করা) প্রত্যেকের উপর আলাদাভাবে ওয়াজিব হয় বা প্রত্যেককেই একাধারে দুই মাস রোযা রাখতে হয়। এইখানেও তদ্রূপ হুকুম হবে। মালিক (র) বলেন, কেউ যদি তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে এবং কঙ্কর নিক্ষেপ ও মাথার চুল কাটার পর কোন কিছু শিকার করে তবে তাকেও ফিদ্য়া দিতে হবে। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন,وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا ‘ তোমরা ইহরাম হতে যখন হালাল হও তখন শিকার করতে পার।’ আর তাওয়াফে যিয়ারত না করা পর্যন্ত মুহরিম থাকে, পুরাপুরি হালাল হয় না। তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে স্ত্রীসহবাস ও সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করা বৈধ নয়। মালিক (র) বলেন, হারাম শরীফের গাছপালা উপড়ান মুহরিমের জন্য ভাল নয়। তবে এর জন্য কোন ফিদ্য়া দিতে হবে না। কেউ এই কাজের জন্য ফিদ্য়া দিতে বলেছেন এমন কথা আমরা শুনি নাই। মালিক (র) বলেন, হজ্জের সময় যদি তিনদিন রোযা রাখতে কেউ (যার উপর উহা রাখা ওয়াজিব) ভুলে যায় বা অসুস্থতার দরুন রাখতে না পারে আর সে নিজ বাড়ি চলে আসে, তবে সম্ভব হলে সে কুরবানী করবে। আর তা না পারলে বাড়িতে প্রথমে তিনদিন রোযা রেখে পরে সাতদিন রোযা রাখবে।
হজ্জ সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম
আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রা) বিদায় হজ্জের (হাজ্জাতুল বিদা) সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষের খাতিরে মিনায় দাঁড়ান। বিভিন্ন লোক এসে তাঁর কাছে বিভিন্ন মাসআলা জিজ্ঞেস করতে লাগল। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার পূর্বেই মাথা কামায়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন কুরবানী করে নাও। কোন অসুবিধা নাই। অন্য এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি কঙ্কর নিক্ষেপ করার পূর্বেই কুরবানী দিয়ে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এখন কঙ্কর নিক্ষেপ করে নাও; কোন অসুবিধা হবে না। আবদুল্লাহ্ (রা) বলেন, আগে বা পরে ফেলা সম্পর্কে সেই দিন রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে যত প্রশ্ন করা হয়েছে সকলের বেলায়ই তিনি বলেছেন, এখন করে নাও। কোন অসুবিধা হবে না। (বুখারী ১২৪, মুসলিম ১৩০৬) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জিহাদ বা হজ্জ বা উমরা হতে প্রত্যাবর্তন করতেন, তখন প্রতিটি উচুস্থান অতিক্রম করার সময় তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিম্নোক্ত দু’আ পাঠ করতেন لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ سَاجِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ. ‘আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ বা মাবূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁর সকল সাম্রাজ্য এবং তাঁরই সকল প্রশংসা এবং তিনি সকল জিনিসের উপর ক্ষমতাশীল। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদত-গুজার, সিজদা আদায়কারী এবং প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছেন, তার বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই তিনি পরাজিত করেছেন সকল শত্রু বাহিনী। (বুখারী ১৭৯৭, মুসলিম ১৩৪৪) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) হাওদাজে আরোহিণী এক মহিলার নিকট দিয়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পথ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। মহিলাটিকে কেউ তখন বলল, ইনি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। মহিলাটি তখন স্বীয় শিশু সন্তানটির হাত ধারণ করে বলল, হে আল্লাহর রসূল! এই শিশুটিও হজ্জ আমার সাথে আদায় হবে কি? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আদায় হবে। আর এর সওয়াব তুমি পাবে। (সহীহ, মুসলিম ১৩৩৬) তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্ ইবনু কারীয (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আরাফাতের দিন হতে বেশি আর কোনদিন শয়তানকে লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং রাগান্বিত হতে দেখা যায়নি। কারণ এই দিন সে আল্লাহ্ তা’আলার অপার রহমত নাযিল হতে এবং বড় বড় গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যেতে দেখতে পায়। বদর যুদ্ধের দিনও তার ঐ অবস্থা হতে দেখা গিয়েছিল। কেউ জিজ্ঞেস করল বদরের দিন সে কি দেখেছিল? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ঐ দিন সে জিবরাঈল (আ)-কে ফেরেশতা বাহিনীকে কাতারবন্দী করতে দেখেছিল। (যয়ীফ, ইমাম হাকিম বর্ণনা করেছেন মুসতাদরাকে, ইবনু আব্বাস (রা) ও আবূ দারদা (রা) হতে। আল্লামা আলবানী জয়ীফ বলেছেন, [মিশকাত ২৬০০]) তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্ ইবন্ কারীয (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সর্বোত্তম দু’আ হল আরাফাতের দু’আ। আর আরাফাতের সর্বোত্তম দু’আ হল ঐ দু’আ যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণ করেছিলেন। দু’আটি এই لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ. আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ ইলাহ্ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। (ইমাম মালিক (র) বলেছেন, সনদ মুরসাল সহীহ, ইমাম বাইহাকী আবূ হুরাইরা হতে মারফু বলেছেন [সিলসিলাতুস সহীহা ৭/৪]) আনাস ইবনু মালিক (র) মক্কা বিজয়ের সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তিনি মাথায় লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত ছিলেন। মাথা হতে উহা যখন খুলে রাখলেন, তখন এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! ইবনু খতল কা’বার গিলাফ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে হত্যা কর। ইমাম মালিক (র) বলেন, ইবনু শিহাব (র) বলেছেন, ঐদিন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিলেন না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। (বুখারী ১৮৪৬, মুসলিম ১৩৫৭) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছে তিনি মদীনার বিশৃংখলা [১] সম্পর্কে সংবাদ শুনেন। শেষে তিনি পুনরায় মক্কা ফিরে যান এবং ইহরাম ছাড়াই মক্কায় প্রবেশ করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ২৪৮/৯৪৯-و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ بِمِثْلِ ذَلِكَ. মালিক (র) এইরূপ রেওয়ায়ত ইবনু শিহাব হতেও বর্ণনা করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মদ ইমরান আনসারী (র) মক্কার পথে একটি বড় গাছের নিচে আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) তখন আমার নিকট এসে বললেন, এই গাছটির নিচে এসে কেন নেমে পড়লে? আমি বললাম একটু ছায়া লাভের জন্য। তিনি বললেন, আর কোন উদ্দেশ্য নয়তো? আমি বললাম না, ছায়ার জন্যই। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বললেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন তুমি মিনায় বড় বড় দুটি পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে হবে, এই বলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বদিকে হস্ত দ্বারা ইশারা করলেন, তখন (জানিও যে,) ঐ উপত্যকায় যাকে সিরার বলা হয়, উহার একটি বড় গাছের নিচে সত্তর জন নবীর (জন্মের পর) নাড়ী কর্তন করা হয়েছিল। (যয়ীফ, নাসায়ী ২৯৫৫, আহমাদ ৬২৩৩, আলবানী যয়ীফ বলেছেন, [সিলসিলাতুয যয়ীফা ২৭০১]) ইবনু আবি মুলায়কা (র) বায়তুল্লাহর তাওয়াফরত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত এক মহিলার নিকট দিয়ে উমার ইবনু খাত্তাব (রা) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর দাসী, অন্য মানুষকে কষ্ট দিও না। হায়, তুমি যদি তোমার বাড়িতেই বসে থাকতে। পরে উক্ত মেয়েলোকটি নিজের বাড়িতেই বসে থাকত। একদিন একটি লোক তাকে বললঃ যিনি তোমাকে বাড়ির বাহিরে যেতে নিষেধ করেছেন, তিনি ইন্তিকাল করেছেন। এখন তুমি বের হয়ে আসতে পার। মেয়েটি বলল, জীবদ্দশায় তাঁকে মানব, আর মৃত্যুর পর অবাধ্য হব, আমি এমন স্ত্রীলোক নই; (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আমি জেনেছি, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) বলতেন, হাজরে আসওয়াদ এবং কা’বা শরীফের দরজার মধ্যবর্তী স্থানটি হল মুলতাযাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (র) রবাযা নামক স্থানে আবূযার (রা)-এর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তি পথ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তাঁকে দেখে তিনি বললেন, কোথায় যাচ্ছ? তিনি বললেন, হজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। তিনি বললেন, অন্য কোন উদ্দেশ্য তো নেই? তিনি বললেন, না। আবূযার (রা) বললেন, আচ্ছা যাও, তোমার কাজ তুমি কর। ঐ ব্যক্তি বলেন, আমি মক্কায় চলে গেলাম। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা হল আমি সেখানে রয়ে গেলাম। একদিন দেখি এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে মানুষ খুবই ভিড় করে আছে। ভিড়ের ভিতরে যেয়ে দেখি, রবাযায় যাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল (আবূযর রা.) তিনি বসে আছেন। তিনি আমাকে দেখে চিনে ফেললেন এবং বললেন, তুমি সেই ব্যক্তি না, যাকে আমি হাদীস বর্ণনা করে শুনেছিলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) শিহাব (র)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন হজ্জের মধ্যে কোন কিছুর শর্ত আরোপ করা কিরূপ? তিনি বললেন, এমনও কেউ করে নাকি? এবং তিনি উক্ত বিষয়টির বিপক্ষে মতপ্রকাশ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল স্বীয় পশুর (খাদ্যের) নিমিত্তে হারাম শরীফের ঘাস কাটা যেতে পারে কি? তিনি বললেন, না।
মাহরাম [১] ব্যতিরেকে স্ত্রীলোকের হজ্জ করা
মালিক (র) যে সকল মহিলার স্বামী বর্তমান নাই এবং সে হজ্জও করেনি, যদি তার কোন মাহরাম আত্মীয় না থাকে বা সফরে সঙ্গী হতে না পারে তবুও সে ফরয হজ্জ পরিত্যাগ করবে না। সে মহিলা হজ্জযাত্রীদের সাথে হজ্জে বের হবে।
তামাত্তু’ হজ্জ সমাপনকারীর রোযা
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) যে ব্যক্তি হজ্জে তামাত্তু’ করবে আর তার সাথে যদি কুরবানীর পশু জোগাড় না থাকে তবে সে হজ্জের ইহরামের সময় হতে আরাফাতের দিন পর্যন্ত রোযা রাখবে। আর এই দিনগুলোতে যদি সে রোযা রাখতে না পারে তবে মিনা-র দিনগুলোতে সে উহা আদায় করে নিবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ২৫৫و حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فِي ذَلِكَ مِثْلَ قَوْلِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهَا. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর মতও উল্লিখিত বিষয়ে আয়েশা (রা)-এর মতের অনুরূপ। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন)