21. জিহাদ সম্পর্কিত
জিহাদের জন্য উৎসাহ প্রদান
وَاَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ. অর্থ: তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেবার জন্য যাহ তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে। (আল কুরআন ১৬ : ৪৪) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি যতদিন বাড়ি ফিরে না আসে ততদিন তার উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তি, যে ক্লান্তিহীনভাবে অনবতর রোযা রাখে এবং নামায পড়ে। (বুখারী ২৭৮৭, মুসলিম ১৮৭৫) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করে আর শুধুমাত্র জিহাদ এবং আল্লাহর কথার উপর অপরিসীম আস্থাই তাকে বাড়ি হতে বের করে নিয়ে আসে, আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির জিম্মাদার হয়ে যান। হয় তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সওয়াব ও গনীমতের সম্পদসহ তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন। (বুখারী ২৭৮৭, মুসলিম ১৮৭৬) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ঘোড়া তিন ধরনের। একজনের জন্য এটা সওয়াবের, আর একজনের জন্য এটা ঢালস্বরূপ এবং একজনের জন্য এটা গুনাহর কারণ হয়ে থাকে। এটা সওয়াবের কারণ হয় ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি এটাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের নিয়তে লালন-পালন করে। কোন চারণক্ষেত্রে বা বাগানে এটাকে দীর্ঘ রজ্জুর সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। যতদূর পর্যন্ত এই ঘোড়াটি ঘাস খাবে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে। কোন নদীর কাছে গিয়ে যদি এটা পানি পান করে, তবে মালিক ইচ্ছা করে পানি পান না করানো সত্ত্বেও এর সওয়াব লেখা হবে। আর এটা ঢালস্বরূপ হল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি এটাকে উপার্জনের এবং পরমুখাপেক্ষী না হওয়ার উদ্দেশ্যে লালন-পালন করে এবং এর যাকাত আদায় করে। আর পাপের কারণ হল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে অহংকার ও রিয়াকারী এবং মুসলমানদের সহিত শত্রুতা করার উদ্দেশ্যে এটাকে লালন-পালন করে। গাধা সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন : এই সম্পর্কে আমার উপর নিম্নের এই স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়াতটি ব্যতীত অন্য কোন হুকুম অবতীর্ণ হয়নি। আয়াতটি হল এই فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ . অর্থ : সামান্য পরিমাণ নেক আমল করলে তাতেও সে দেখতে পাবে আর সামান্য পরিমাণ মন্দ আমল করলে তাও সে দেখতে পাবে। (আল-কুরআন ৯৯ : ৭-৮) (বুখারী ২৩৭১, মুসলিম ৯৮৭) আতা ইবনু ইয়াসার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির কথা তোমাদেরকে বলব কি? যে ব্যক্তি স্বীয় ঘোড়ার লাগাম হাতে নিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদে লিপ্ত থাকে, সেই ব্যক্তি হল সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। অতঃপর সর্বোচ্চ মর্যাদা হল ঐ ব্যক্তির যে ব্যক্তি বকরীর এক পাল নিয়ে এক কোণে পড়ে থাকে, নামায পড়ে, যাকাত দেয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদতে লিপ্ত হয়ে থাকে আর কাউকেও তাঁর শরীক করেনি। (সহীহ, তিরমীযী ১৬৫২, নাসাঈ ২৫৬৯, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১২৯৮, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) উবাদা ইবনু সামিত (রা) সচ্ছল ও অসচ্ছল সকল অবস্থায় এবং সুখে ও দুঃখে কথা শোনার, আনুগত্য প্রদর্শন করার, উপযুক্ত মুসলিম প্রশাসকদের সাথে বিবাদ না করার, সকল স্থানে সত্য বলার এবং আল্লাহর কাজে নিন্দুকের নিন্দা গ্রাহ্য না করার উপরে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাতে আমরা বায়’আত করিয়াছি। (বুখারী ৭১৯৯, মুসলিম ১৭০৯) যাইদ ইবনু আসলাম (রা) আবূ উবায়দা ইবনুল জার্রাহ (রা) রোমক বাহিনীর শক্তিমত্তা ও নিজেদের আশংকাজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর কাছে চিঠি লিখলে উমার (রা) উত্তরে লিখেছিলেন, হামদ ও সালাতের পর। জেনে রাখুন, মু’মিনের উপর যখনই কোন বিপদ আসুক না কেন আল্লাহ তা দূরীভূত করে দেন। মনে রাখবেন, একবারের কষ্ট কখনো দুইবারের সুখ ও আরামের উপর প্রাধান্য লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ. ওহে মু’মিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং প্রতিরক্ষায় দৃঢ় হয়ে থাক, আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
শত্রুর দেশে কুরআনুল কারীম নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ
নাফি (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলেছেন, শত্রুর দেশে কুরআন নিয়ে যেতে রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন। (বুখারী ২৯৯০, মুসলিম ১৮৬৯) মালিক (রা) বলেন : এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হল, শত্রুরা যেন কুরআন শরীফের অবমাননা করার সুযোগ না পায়।
যুদ্ধে নারী ও শিশু হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা
আবদুর রহমান ইবনু কা’ব (রা) ইবনু আবুল হুকাইককে যারা হত্যা করতে গিয়েছিলেন, রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদেরকে নারী ও শিশু হত্যা করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। ইবনু কা’ব বলেন: ঐ কার্যে নিয়োজিতদের একজন বলেছেন : ইবনু আবুল হুকাইকের স্ত্রী চিৎকার করে আমাদের তৎপরতা ফাঁস করে দিয়েছিল। আমি তাকে হত্যা করার জন্য তলোয়ার উঠিয়েছিলাম। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিষেধাজ্ঞা মনে পড়তেই আবার নামিয়ে ফেলেছিলাম। আর তা না হলে তাকেও সেখানে শেষ করে আসতাম! [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন এক যুদ্ধে একজন স্ত্রীলোককে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পেয়ে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং যুদ্ধে নারী ও শিশুহত্যা নিষিদ্ধ করেন। (বুখারী ৩০১৫, মুসলিম ১৭৪৪) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রা) আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) সিরিয়ায় এক সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। উক্ত বাহিনীর এক-চতুর্থাংশের অধিনায়ক ছিলেন ইয়াযিদ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রা)। বিদায়ের সময় তিনি তাঁর সঙ্গে কিছুদূর পায়ে হেটে যান। তখন ইয়াযিদ (রা) বললেন : আমীরুল মু’মিনীন! হয় আপনি সওয়ারীতে আরোহণ করে চলুন, না হয় আমি নেমে পড়ি এবং আমিও হেঁটে চলি। আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) বললেন : তুমিও হেঁটে চলতে পার না আর আমিও সওয়ার হতে পারব না। আমার এই হাঁটাকে আমি আল্লাহর পথে কদম ফেলা বলে বিশ্বাস করি। অতঃপর তিনি আরো বললেন : সেখানে কিছু এমন ধরনের লোক তুমি দেখবে যারা নিজেদেরকে আল্লাহর ধ্যানে নিবেদিত বলে মনে করে (অর্থাৎ খৃস্টান পাদ্রী)। তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিও। কিন্তু এমন লোক দেখবে যারা মধ্যভাগে মাথা মুন্ডন করে (তৎকালে অগ্নি উপাসকদের এই রীতি ছিল।) তাদেরকে সেখানেই তালোয়ার দিয়ে উড়িয়ে দিবে। দশটি বিষয়ে তোমাকে আমি বিশেষ উপদেশ দিচ্ছি। উহার প্রতি লক্ষ্য রেখ। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরকে হত্যা করবে না। ফলন্ত বৃক্ষ কেটো না, আবাদ ভূমিকে ধ্বংস করো না, খাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিন্ন বকরী বা উট হত্যা করো না, মৌমাছির মৌচাক পোড়ায়ে দিও না অথবা পানিতে ডুবিয়ে দিও না, গনীমত বা যুদ্ধলদ্ধ মাল হতে কিছু চুরি করো না, হতোদ্যম বা ভীরু হইও না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রা) উমার ইবনু আবদুল আযীয (রা) তাঁর জনৈক শাসনকর্তাকে লিখেছিলেন : আমি জানতে পেরেছি রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোন দিকে সৈন্যদল প্রেরণ করতেন তখন তাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলতেন : তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহরই পথে জিহাদ করে যাও। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, কুফরী করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তোমরা এই জিহাদ করতেছ। খেয়ানত করো না, ওয়াদা ভঙ্গ করো না, কারো নাক-কান কেটে বিকৃত করো না, শিশু ও নারীদেরকে হত্যা করো না। অন্য সেনাদল ও বাহিনীকেও এই কথাগুলো শুনিয়ে দিও। আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি বর্ষণ করুন, তোমাদেরকে নিরাপদে রাখুন। (সহীহ, ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন, ১৮৩১)
নিরাপত্তা চুক্তি
মালিক (রা) কুফার জনৈক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন উমার ইবনু খাত্তাব (রা) জনৈক সেনাধ্যক্ষকে লিখেছিলেন : জানতে পারলাম, আনারব কাফেরদের মধ্যে কেউ যুদ্ধ বন্ধ করে পাহাড়ে আশ্রয় নিলে তোমাদের কেউ তাকে ডেকে বলে, “তোমাদের কোন ভয় নেই”, পরে হাতের মুঠোয় পেয়ে আবার তাকে হত্যা করে ফেলে। যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, সত্যই যদি কাউকেও আমি কোনদিন এমন (ওয়াদা ভঙ্গ) করতে দেখতে পাই, তবে তার গর্দান উড়িয়ে দেব। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন: এই হাদীসটি সম্পর্কে আলিমগণ একমত নন এবং এর উপর আমল নাই। [১] মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ইশারা ইঙ্গিতে যদি কেউ কাউকে আমান বা নিরাপত্তা প্রদান করে, তবে কি তা গ্রহণযোগ্য হবে? তিনি বললেন; হ্যাঁ, আমি মনে করি সৈন্যদেরকে যেন বলে দেওয়া হয় যে, ইশারা করে যাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে তাকে যেন হত্যা না করে। কারণ আমার মতে ইশারাও ভাষার মতোই্। আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) বলেছেন: যে জাতি চুক্তি ভঙ্গ করে, সেই জাতির উপর আল্লাহ তায়ালা শত্রু চাপিয়ে দেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করল তার কি হুকুম
নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) জিহাদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু দিতেন, তবে বলতেন: ওয়াদি কুরায় যখন পৌঁছাবে তখন এটা তোমার। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রা) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রা) বলতেন, কাউকেও যদি জিহাদের উদ্দেশ্যে কোন কিছু দেয়া হয় আর ঐ ব্যক্তি জিহাদের স্থানে পৌঁছে যায়, তবে উহা তার হয়ে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেউ যদি জিহাদ করার মানত করে আর তার পিতামাতা বা তাদের কোন একজন যদি তাকে জিহাদে যেতে নিষেধ করে তবে সে কি করবে? তিনি বলেন, আমার মতে মাতাপিতার অবাধ্যতা করা উচিত নয় এবং আপাতত জিহাদ আরেক বৎসর পর্যন্ত মওকুফ করে রাখবে, জিহাদের উপকরণসমূহও হেফাজত করে রাখবে। নষ্ট হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিলে সে এগুলো বিক্রি করে মূল্য সংরক্ষণ করে রাখবে, যাতে সে আগামী বৎসর এটা দ্বারা পুনরায় অস্ত্র ক্রয় করতে পারে। তবে সে যদি সম্পদশালী হয় এবং ইচ্ছা মত অস্ত্র ক্রয় করার শক্তি যদি তার থাকে তা হলে ঐ অস্ত্র যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
যুদ্ধে প্রাপ্ত নফল
নাফি’ (রা) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) হতে বর্ণনা করেন, নজদ এলাকার দিকে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি সেনাদল প্রেরণ করেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-ও এতে শরীক ছিলেন। গনীমত হিসেবে অনেক উট ধরা পড়ে। প্রত্যেকেই বারটি বা এগারটি করে উট প্রাপ্ত হন এবং প্রত্যেককেই আরো একটি করে নফল (হিস্যাতিরিক্ত) দেয়া হয়। [১] (বুখারী ৩১৩৪, মুসলিম ১৭৪৯) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তিনি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রা)-কে বলতে শুনেছেন, জিহাদের মালে গনীমত বণ্টন করার সময় একটি উট দশটি বকরীর সমান বলে গণ্য করা হত। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রা) বলেন: জিহাদে যদি কেউ মজুর হিসেবে শরীক হয় আর অন্য মুজাহিদের সাথে সেও যদি যুদ্ধে উপস্থিত থাকে ও যুদ্ধ করে, আর সে আযাদ ব্যক্তি হয়, তবে গনীমত হতে তাকেও হিস্যা প্রদান করা হবে। আর যদি সে যুদ্ধে শরীক না হয় তবে সে হিস্যা পাবে না। মালিক (রা) বলেন: আমি মনে করি, স্বাধীন ব্যক্তি যারা যুদ্ধে শরীক হয় তারা ব্যতীত অন্য কারো জন্য গনীমতের অংশ বরাদ্দ হবে না।
যে ধরনের সম্পদে এক-পঞ্চমাংশ আদায় করা ওয়াজিব নয়
এক-পঞ্চমাংশ আলাদা করার পূর্বে গনীমত হতে যে সমস্ত জিনিস আহার করা যায়
১৬৪৩-قَالَ مَالِك لَا أَرَى بَأْسًا أَنْ يَأْكُلَ الْمُسْلِمُونَ إِذَا دَخَلُوا أَرْضَ الْعَدُوِّ مِنْ طَعَامِهِمْ مَا وَجَدُوا مِنْ ذَلِكَ كُلِّهِ قَبْلَ أَنْ تَقَعَ الْمَقَاسِمُ ১৬৪৪-قَالَ مَالِك وَأَنَا أَرَى الْإِبِلَ وَالْبَقَرَ وَالْغَنَمَ بِمَنْزِلَةِ الطَّعَامِ يَأْكُلُ مِنْهُ الْمُسْلِمُونَ إِذَا دَخَلُوا أَرْضَ الْعَدُوِّ كَمَا يَأْكُلُونَ مِنْ الطَّعَامِ ১৬৪৫-وَلَوْ أَنَّ ذَلِكَ لَا يُؤْكَلُ حَتَّى يَحْضُرَ النَّاسُ الْمَقَاسِمَ وَيُقْسَمَ بَيْنَهُمْ أَضَرَّ ذَلِكَ بِالْجُيُوشِ فَلَا أَرَى بَأْسًا بِمَا أُكِلَ مِنْ ذَلِكَ كُلِّهِ عَلَى وَجْهِ الْمَعْرُوفِ وَلَا أَرَى أَنْ يَدَّخِرَ أَحَدٌ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا يَرْجِعُ بِهِ إِلَى أَهْلِهِ ১৬৪৬- و سُئِلَ مَالِك عَنْ الرَّجُلِ يُصِيبُ الطَّعَامَ فِي أَرْضِ الْعَدُوِّ فَيَأْكُلُ مِنْهُ وَيَتَزَوَّدُ فَيَفْضُلُ مِنْهُ شَيْءٌ أَيَصْلُحُ لَهُ أَنْ يَحْبِسَهُ فَيَأْكُلَهُ فِي أَهْلِهِ أَوْ يَبِيعَهُ قَبْلَ أَنْ يَقْدَمَ بِلَادَهُ فَيَنْتَفِعَ بِثَمَنِهِ قَالَ مَالِك إِنْ بَاعَهُ وَهُوَ فِي الْغَزْوِ فَإِنِّي أَرَى أَنْ يَجْعَلَ ثَمَنَهُ فِي غَنَائِمِ الْمُسْلِمِينَ وَإِنْ بَلَغَ بِهِ بَلَدَهُ فَلَا أَرَى بَأْسًا أَنْ يَأْكُلَهُ وَيَنْتَفِعَ بِهِ إِذَا كَانَ يَسِيرًا تَافِهًا. মালিক (র) বলেন : মুসলমানগণ শত্রুর দেশে খাদ্যদ্রব্য পেলে বণ্টনের পূর্বে তা আহার করতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই। মালিক (র) বলেন : উট, গরু, বকরীকে আমি খাদ্যসামগ্রীর অন্তর্গত মনে করি, দুশমনের দেশে প্রবেশ করলে মুসলিমগণ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের মতো এই সবও খেতে পারে। এমন বস্তু যা আহার না করে বণ্টনের জন্য একত্র করলে সেনাদের কষ্ট হয় তা প্রয়োজনানুসারে ন্যায়নীতির সহিত ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঞ্চয় করে রাখা জায়েয নয়। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেউ যদি কাফেরদের দেশে আহারযোগ্য কিছু পেয়ে তা খেয়ে ফেলে এবং অবশিষ্ট খাদ্য বাড়ি নিয়ে আসে বা পথে বিক্রয় করে পয়সা নিয়ে নেয় তবে কি হবে? তিনি বলেন : জিহাদে লিপ্ত থাকা অবস্থায় যদি বিক্রয় করে, তবে তা গনীমতের মালের সাথে সংযুক্ত হবে। বাড়ি চলে এলে তা খাওয়া বা তার মূল্য স্বীয় কাজে ব্যবহার করা জায়েয আছে যদি সামান্য এবং মামুলি ধরনের (যেমন গোশত, রুটি ইত্যাদি) জিনিস হয়।
গনীমতের মাল হতে বণ্টনের পূর্বে যা ফিরিয়ে দেওয়া হয়
মালিক (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর একজন গোলাম ঘোড়াসহ পালিয়ে কাফেরদের হাতে পড়ে গিয়েছিল। পরে তা গনীমতের মাল হিসেবে পুনরায় মুসলমানদের হস্তগত হয়। তখন বণ্টনের পূর্বেই ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা)-কে এগুলো ফিরিয়া দেয়া হয়েছিল। (বুখারী ৩০৬৮) ইয়াহইয়া মালিক (র)-কে বলতে শুনেছেন যে, কাফেরদের হাতে মুসলমানদের কোন কিছু পাওয়া গেলে বণ্টনের পূর্বে তা পূর্ব মালিকের নিকট প্রত্যার্পণ করা হবে। বণ্টন হয়ে গেলে আর উহা প্রত্যার্পণ করা হবে না। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোনো মুসলমানের উম্মু ওয়ালাদ [১] যদি কাফেররা নিয়ে যায়, পরে গনীমত হিসেবে যদি পুনরায় উহা মুসলমানদের হস্তগত হয়, তবে কি করা হবে? তিনি বললেন: বণ্টনের পূর্বে উহাকে কোনরূপে বিনিময় ব্যতিরেকে পূর্ব মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হবে। আমার মতে বণ্টনের পর মালিক ইচ্ছা করলে মূল্য দিয়ে উহাকে নিয়ে যেতে পারবে। মালিক (র) বলেন : কোনো মুসলমানের উম্মে ওয়ালাদ দাসীকেও যদি কাফেরগণ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, পরে সে গনীমতের মাল হিসেবে হস্তগত হয়, আর বণ্টন হয়ে যাওয়ার পরে যদি মালিক তাকে চিনতে পারে, তবুও তাকে দাসী বানান যাবে না। আমি মনে করি, তখন সরকারের কর্তব্য হবে তার ফিদ্আ আদায় করে তার মালিকের নিকট প্রত্যার্পণ করা। মালিক (র) বলেন : সরকার যদি এরূপ না করে তবে পূর্ব মালিক তার ফিদ্আ আদায় করে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। বণ্টনের পর যার ভাগে সে পড়েছিল তার জন্য তাকে দাসী বানান বা তার সাথে যৌন মিলন জায়েয নয়। উম্মে ওয়ালাদ আযাদ দাসীর মতো। উম্মে ওয়ালাদ যদি কাউকেও আঘাত করে যখমী করে ফেলে তবে মালিকের উপর ফিদয়া আদায় করে তাকে মুক্ত করে দেয়া মালিকের উপর জরুরী। তাকে মুক্ত না করে ঐ অবস্থায় রেখে দেয়া এবং তাকে পুনরায় দাসী বানান ও তার সাথে যৌন সম্ভোগ কোনক্রমেই জায়েয হবে না। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কেউ কোন মুসলমানকে মুক্ত করে আনার উদ্দেশ্যে বা ব্যবসা করতে কাফেরদের অঞ্চলে গেল আর সেখানে আযাদ ও ক্রীতদাস উভয় ধরনের মানুষ ক্রয় করে নিয়ে এল বা কাফেরগণ তাকে হেবা হিসেবে দান করল। এখন এ ব্যক্তির বিষয়ে কি হুকুম হবে? তিনি বললেন : আযাদ ব্যক্তিকে ক্রয় করে নিয়ে এলে তাকে ক্রীতদাস বানান যাবে না। আর তার মূল্য তখন ঋণ হিসেবে ধরা হবে। হেবা হিসেবে নিয়ে এসে থাকলে ঐ ব্যক্তি আযাদ হিসেবেই বহাল থাকবে আর আনয়নকারী ব্যক্তি কিছুই পাবে না। তবে হিবার বিনিময়ে সে সেখানে কোন কিছু আদায় করে থাকলে তৎপরিমাণ টাকা দিয়ে তাকে ক্রয় করে আনল। আর ঐ ব্যক্তি যদি কোন দাস ক্রয় করে আনে, তবে পূর্ব মালিকের ইখতিয়ার থাকবে। ইচ্ছা করলে মূল্য আদায় করে তাকে সে নিয়ে যেতে পারবে আর ইচ্ছা করলে তাকে ঐ ব্যক্তির কাছে ছেড়ে দিতে পারবে। হিবা হিসেবে পেয়ে থাকলে পূর্ব মালিক তাকে এমনিই নিয়ে যেতে পারবে। হিবার বিনিময়ে কিছু ব্যয় করে থাকলে তৎপরিমাণ টাকা আদায় করে তবে পূর্ব মালিক তাকে নিতে পারবে।
নফল হিসেবে কোন সৈনিককে অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করা
আবূ কাতাদা ইবনু রিব্য়ী (রা) হুনায়ন যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে আমরা বের হলাম। প্রচণ্ড চাপে মুসলমানগণ হেঁটে আসেন। কোন এক কাফের সৈন্যকে তখন জনৈক মুসলিম সৈন্যের উপর জয়ী হয়ে যাচ্ছে দেখে পিছন হতে আমি ঐ কাফের সৈন্যটির ঘাড়ে তলওয়ারের এক কোপ বসালাম। সে তখন দৌঁড়ে আমাকে ধরে এমন চাপ দিল যে, আমার মৃত্যুর স্বাদ অনুভূত হতে লাগল। শেষে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। পরে উমার (রা) ইবনু খাত্তাবের সাথে আমার সাক্ষাত হল। আমি বললাম; মানুষের একি হল! তিনি বললেন : আল্লাহর হুকুম। শেষে মুসলিম সৈন্যগণ আবার ময়দানে ফিরে এলেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে সময় ঘোষণা করলেন : সাক্ষী পেশ করতে পারলে যে তাকে হত্যা করেছেন তার আসবাবপত্র সে-ই পাবে। আবূ কাতাদা বলেন : এই ঘোষণা শুনে আমি দাঁড়ালাম এবং বললাম : আমার জন্য কে সাক্ষ্য দেবে? এ কথা বলে আমি বসে পড়লাম। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় ঐ কথা ঘোষণা করলেন। আমি আবার দাঁড়ালাম এবং বললাম : আমার জন্য কে সাক্ষ্য দেবে? এ কথা বলে আমি বসে পড়লাম। তৃতীয়বার রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কথা ঘোষণা করলেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন : আবূ কাতাদা, তোমার কি হল? সমস্ত ঘটনা তখন আমি তাঁকে বিবৃত করলাম। তখন এক ব্যক্তি উঠে বললেন : হে আল্লাহর রসূল, ইনি সত্যিই বলেছেন। ঐ নিহত কাফেরটির আসবাবপত্র আমার কাছে আছে। আপনি তাকে রাজী করিয়ে ঐ আসবাবপত্র আমাকে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। আবূ বক্র (রা) তখন বললেন : আল্লাহ্র কসম, কখনো নয়। আপনি এমন কাজ করার ইচ্ছা করবেন না। আল্লাহর ব্যাঘ্রসমূহ হতে কোন এক ব্যাঘ্র আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষে লড়াই করবে আর তুমি আসবাবপত্র নিয়ে যাবে, তা হতে পারে না। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন; আবূ বক্র যথার্থই বলেছেন। আবূ কাতাদাকে ঐ আসবাবপত্র দিয়ে দাও। শেষে ঐ ব্যক্তি উহা আমাকে দিয়ে দিলেন। উহা হতে একটি বর্ম বিক্রয় করে বনু সালিমা মহল্লায় একটা বাগান ক্রয় করে ফেললাম। ইসলাম গ্রহণ করার পর এ সম্পত্তিটুকু আমি লাভ করতে পেরেছিলাম। (বুখারী ৩১৪২, মুসলিম ১৭৫১) কাশিম ইবনু মুহাম্মদ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা)-এর কাছে আনফাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এক ব্যক্তিকে শুনেছিলাম। ইবনু আব্বাস (রা) তখন উত্তরে বলেছিলেন : ঘোড়া এবং অস্ত্রশস্ত্র আনফালের মধ্যে শামিল । ঐ ব্যক্তি ঐ প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে ইবনু আব্বাস (রা) পুনরায় ঐ উত্তর প্রদান করেন। তখন ঐ ব্যক্তি বলল : কুরআনুল কারীমে যে আনফালের আলোচনা করা হয়েছে, সে আনফাল সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি। কাশিম (র) বলেন : ঐ ব্যক্তি বার বার একই কথা বলতে লাগল। শেষে ইবনু আব্বাস (রা) বিরক্ত হয়ে বললেন; এই ব্যক্তি সবীগের মতো যাকে উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বেত্রদণ্ড দিয়েছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল মুসলিমদের কোন শত্রুকে হত্যা করতে পারলে মুসলিম রাষ্ট্রনায়কের অনুমতি ব্যতিরেকে তার আসবাবপত্র নিহতকারী পেতে পারে কি? তিনি বললেন : না। ইমাম বা রাষ্ট্রপ্রধান মুনাসিব মনে করলে এ ধরনের হুকুম জারি করতে পারেন। হুনায়ন যুদ্ধ ব্যতীত অন্য কোন যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঐ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমরা জ্ঞাত হইনি।
খুমুস হতে নফল প্রদান করা
সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) মালে গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ হতে (সাহাবা যুগের) লোকগণ ‘নফল দিতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই বর্ণনাটি আমার কাছে উত্তম। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল গনীমতের প্রথম ভাগ হতেই কি নফল দিতে হবে? তিনি বললেন, এটা রাষ্ট্রপ্রধানের বিবেচনার উপর নির্ভর করে। আমাদের নিকট এর নির্দিষ্ট রীতি নেই। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক জিহাদেই নফল দিয়েছেন বলে কোন রেওয়ায়ত আমাদের নিকট পৌঁছেনি বরং কতক সময় তা দিয়েছেন, তন্মধ্যে হুনায়ন একটি। এটা ইমামের ইচ্ছাধীন।
জিহাদে ঘোড়ার অংশ
মালিক (র) আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু আবদুল আযীয (র) বলেছেন, গনীমতের মধ্যে ঘোড়ার দুই অংশ এবং অশ্বারোহীর এক অংশ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে ইবনু মুসাইয্যের এর মন্তব্যটুকু ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন ২৮৬৩, মুসলিম ১৭৬২) মালিক (র) বলেন, আমি উক্ত ধরনের অভিমতই শুনে এসেছি। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল একজন যদি কয়েকটি ঘোড়া জিহাদে নিয়ে আসে তবে সে প্রত্যেকটিরই কি আলাদা অংশ পাবে? তিনি বললেন, না, আমি এরূপ শুনিনি, যে ঘোড়াটির উপর আহরণ করে যুদ্ধ করেছে সেটির হিস্যাই কেবল সে পাবে। মালিক (র) বলেন, আমার মতে তুর্কী ঘোড়া এবং সংকর জাতীয় ঘোড়াও সাধারণ ঘোড়ার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে : “ঘোড়া, গাধা ও খচ্চর তোমাদের আরোহণের জন্য আমি সৃষ্টি করেছি।” [১] আল্লাহ্ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন, “কাফেরদের মুকাবিলায় যথাশক্তি যুদ্ধাস্ত্র এবং ঘোড়া তৈরি রাখ যাতে এদের দ্বারা আল্লাহর শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে সন্ত্রস্ত রাখতে পার। “সুতরাং সরকার যখন গ্রহণ করে নেন তখন আমার মতে তুর্কী ও সংকর জাতীয় ঘোড়াও সাধারণ ঘোড়ার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। মালিক (র) বলেন, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে কেউ জিজ্ঞেস করেছিল : তুর্কী ঘোড়ারও কি যাকাত দিতে হবে? উত্তরে তিনি বলেছেন, ঘোড়ারও আবার যাকাত ওয়াজিব হয় নাকি?
গনীমতের সম্পদ হতে চুরি করা
আমর ইবনু শুয়াইব (র) হুনায়নের জিহাদ হতে যখন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যাবর্তন করে জিয়িরানা নামক স্থানের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর কাছে এসে লোকের গনীমতের হিস্যা চাইতে লাগল, এমনকি লোকের চাপে তাঁরা উট বৃক্ষের নিকট চলে গেল এবং তাঁর চাদর কাঁটায় আটকে পিঠ হতে পড়ে গেল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার চাদর আমাকে দাও। তোমরা কি মনে কর, যে জিনিস আল্লাহ্ তোমাদেরকে দিয়েছেন তা তোমাদেরকে আমি বেঁচে দেব না? যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, তিহামা প্রান্তরের বাবলা গাছের মতো এত অধিক সংখ্যক পশুও যদি আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদেরকে দান করেন তাও তোমাদের মাঝে আমি বণ্টন করে দেব। তোমরা আমাকে কৃপণ, ভীরু ও মিথ্যাবাদী হিসেবে দেখতে পাবে না। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উট হতে অবতরণ করে লোকের সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর বললেন, কেউ যদি একটি সুতা বা সুঁচ নিয়ে যায় তবে তাও দিয়ে দাও। গনীমত হতে কিছু চুরি করা লজ্জা ও জাহান্নামের কারণ হয় এবং কিয়ামতের দিনও ইহা লজ্জা এবং মহাদোষের কারণ হবে। অতঃপর তিনি মাটি হতে বকরী বা উটের একটা পশম হাতে নিয়ে বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ সে সত্তার কসম, আল্লাহ্ তা’আল্লা তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তাতে এতটুকু হিস্যাও আমার নেই। হ্যাঁ, গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আমি পাই। উহা তোমাদের নিকটই প্রত্যাবর্তিত হয়। (সহীহ, ইমাম নাসাঈ মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ৪১৩৮, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেন [ইরওয়া] ১২৪০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) যাইদ ইবনু খালিদ জুহানী (র) হুনায়নের জিহাদে এক ব্যক্তি মারা যায়। অন্যরা রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে এসে এ সংবাদ জানালে তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের এই সঙ্গীর জানাযা পড়ে নাও। এ কথা শুনে সকলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। [কারণ মৃত ব্যক্তির কোন দোষের কারণেই হয়ত রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামায পড়াতে অস্বীকার করতেছেন।] যাইদ (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বলেছিলেন : এ ব্যক্তি গনীমত হতে চুরি করে কিছু নিয়ে গিয়েছিল। যাঈদ (রা) বলেন, আমরা ঐ ব্যক্তির আসবাবপত্র খুলে তাতে ইহুদীদের পুতি হতে সামান্য কয়েকটি পুতি পেলাম, দুই দিরহাম পরিমাণ যার মূল্য হবে। (যয়ীফ, আবূ দাঊদ ২৭১০, নাসাঈ ১৯৫৮, ইবনু মাজাহ ২৮৪৮, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন [যয়ীফ আল-আনজামে] ৩৪৮১) আবদুল্লাহ্ ইবনু মুগীরা ইবনু আবূ বুরদা কেনানী (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সকল কবীলার লোকদের কাছে এসে তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন। কিন্তু একটি কবীলার জন্য দোয়া করেননি। এই কবীলার একটি লোকের বিছানার নিচে আকীক পাথরের তৈরি একটি চুরি করা হার পাওয়া গিয়েছিল। এই কবীলার নিকট এসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুর্দাদের বেলায় যেমন তাকবীর পড়া হয় তদ্রূপ তাকবীর পাঠ করেছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) তিনি বলেন, খায়বরের বৎসর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে আমরা রওয়ানা হয়েছিলাম। এ যুদ্ধে আমরা সোনা-রূপা হস্তগত করতে পারিনি, তবে অনেক আসবাবপত্র ও কাপড় আমাদের হস্তগত হয়েছিল। রিফা’আ ইবনু যাইদ (রা) মিদ’আম নামের একজন দাস রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে হাদিয়া দিয়েছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওয়াদি-এ কুরার দিকে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছার পর মিদ’আম রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উটের হাওদা নামাচ্ছিল এমন সময় কোথা হতে একটি তীর এসে তাঁর শরীরে বিদ্ধ হয় এবং সে মারা যায়। লোকেরা তখন বলাবলি করতে লাগল : মিদ’আমের জন্য জান্নাত মুবারক হোক। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কখনো নয়। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার কসম, খায়বরের যুদ্ধে গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে যে চাদর সে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল তা এখন তার গায়ে আগুন হয়ে জ্বলছে। এ কথা শুনে এক ব্যক্তি একটা কি দুটা ফিতা এনে হাযির করল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখন বললেন, এই একটি বা দুটি ফিতাও আগুনের ছিল। (বুখারী ৪২৩৪, মুসলিম ১১৫) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রা) যে জাতির মধ্যে গনীমতের মাল চুরি করার প্রবণতা প্রকাশ পায় আল্লাহ্ তাদের মনে দুশমনের ভয় ঢুকিয়ে দেন। যে জাতির মধ্যে যিনা বেশি হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যুর আধিক্য ঘটে। যে জাতি মাপে কম দেয় আল্লাহ্ তাদের রিযিক কমিয়ে দেন। যে জাতি ন্যায়বিচার করে না, তাদের মধ্যে রক্তপাত বেশি হবে। আর যে জাতি চুক্তির খেলাফ করে, আল্লাহ্ তাদের উপর দুশমনকে চাপিয়ে দেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহর পথের শহীদগণ
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, আমি চাই একবার আল্লাহর পথে শহীদ হই, আবার জীবিত হই; আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই; আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই। আবূ হুরায়রা (রা) তিনবার এ কথা উল্লেখ করে বলতেন, আমি সাক্ষী, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই ধরনের কথা বলেছিলেন। (বুখারী ৭২২৭, মুসলিম ১৮৭৬) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা দুই ব্যক্তিকে দেখে হাসবেন। তাঁরা ছিলেন একজন অন্যজনের হত্যাকারী। তাঁরা দু’জনে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। একজন তো আল্লাহর পথে জিহাদ করতে করতে শহীদ হন। পরে তাঁর হত্যাকারী ইসলাম গ্রহণ করে তিনিও আল্লাহর পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করেন। (বুখারী ২৮২৬, মুসলিম ১৮৯০) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে আহত বা যখমী হবে, আর কে আল্লাহর রাহে আহত হয়েছে তাকে তিনিই ভাল জানেন, সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার শরীর হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। এর রং রক্তের রঙের মতোই হবে, কিন্তু ইহা হতে মেশক আম্বরের মতো সুগদ্ধ ছড়াতে থাকবে। (বুখারী ২৮০৩, মুসলিম ১৮৭৬) যাইদ ইবনু আসলাম (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলতেন, হে আল্লাহ্! এমন ব্যক্তির হাতে আমাকে হত্যা করায়ো না যে ব্যক্তি তোমাকে একটি সিজদাও করেছে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ কাতাদা (র) তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে আরয করল : হে আল্লাহর রসূল! সওয়াবের আশায় পলায়ন না করে দুশমনদের মুকাবেলায় ধৈর্যের সঙ্গে লড়তে লড়তে আল্লাহর রাহে যদি শহীদ হতে পারি তবে আল্লাহ্ আমার গুনাহ মাফ করে দিবেন কি? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ডেকে আনতে বললেন। সে এলে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি আমার নিকট কি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলে? ঐ ব্যক্তি তার কথা পুনারায় ব্যক্ত করিলে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, ঋণ ব্যতীত অন্য ধরনের গুনাহসমূহ আল্লাহ্ তা’আলা মাফ করে দিবেন। জিবরাঈল (আ) এসে এ কথাই আমাকে জানিয়ে গেছেন। (সহীহ, মুসলিম ১৮৮৫) উমর ইবনু উবায়দুল্লাহ্ (র) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উহুদের যুদ্ধে শাহাদত বরণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন, আমি নিজে ইহাদের সাক্ষী। আবূ বকর সিদ্দীক (রা) তখন আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি এদের ভাই নই? আমরাও তাঁদের মতো ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং তাঁদের মতো আল্লাহর পথে জিহাদে রত রয়েছি। আপনি কি আমাদের পক্ষে সাক্ষী হবেন না? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, কিন্তু জানা নেই আমার মৃত্যুর পর তোমরা কি করতে শুরু করবে। এ কথা শুনে আবূ বকর (রা) কাঁদতে লাগলেন, তিনি বললেন, আপনার মৃত্যুর পরও আমরা জীবিত থাকব? (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। তখন মদীনায় একটি কবর খোঁড়া হচ্ছিল। এক ব্যক্তি কবরটি দেখে বলল, মুসলমানদের জন্য কত খারাপ এই জায়গা। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি গর্হিত কথা বলেছ। ঐ ব্যক্তি বলল, আমার এই কথা বলার উদ্দেশ্য ছিল যে, আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়া এই মৃত্যু হতে অনেক ভাল। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়ার চাইতে উত্তম অন্য কিছু নাই সত্য, কিন্তু মদীনা ব্যতীত এমন কোন স্থান নাই, যে স্থানে আমার কবর হতে আমি ভালবাসি। এই কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
শাহাদতের বর্ণনা
যাইদ ইবনু আসলাম (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলতেন, হে আল্লাহ্! তোমার রাহে শাহাদত আর তোমার রাসূলের এই নগরে (মদীনা শরীফে) আমার মৃত্যু তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি। [১] (সহীহ, বুখারী ১৮৯০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদের ==== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেন, মু’মিনের সম্মান হল তার তাকওয়া ও পরহেযগারী অর্জনে, আর দ্বীন হল তাঁর শরাফত ও ভদ্রতা। ভদ্রতা ও চক্ষুলজ্জা হল তার চরিত্র। বাহাদুরী ও ভীরুতা উভয়ই হল জন্মগত গুণ। যেখানে ইচ্ছা করেন আল্লাহ্ এগুলোর একটি সেখানে রাখেন। ভীরু ও কাপুরুষ ব্যক্তি মাতাপিতাকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে যায় আর বাহাদুর ব্যক্তি এমন ব্যক্তির সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয় যার সম্পর্কে সে জানে যে, এই ব্যক্তি তাকে আর বাড়ি ফিরে যেতে দিবে না (অর্থাৎ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে যুদ্ধে লিপ্ত হয়)। মৃত্যুর বিভিন্ন রূপের মধ্যে নিহত হওয়া একটি। শহীদ হল সেই ব্যক্তি, যে সন্তুষ্টচিত্তে নিজের প্রাণ আল্লাহর রাস্তায় সপে দেয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
শহীদ ব্যক্তির গোসল
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে গোসল করান হয়েছিল, কাফন পরান হয়েছিল এবং তাঁর জানাযাও পড়া হয়েছিল অথচ আল্লাহর মেহেরবানীতে আল্লাহর পথে তিনি শাহাদত বরণ করেছিলেন (আল্লাহ্ তাঁর উপর রহমত নাযিল করুন)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আহলে ইল্ম হতে তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, তাঁরা বলতেন। আল্লাহর রাহের শহীদগণকে গোসল করান বা তাঁদের করো জানাযা পড়া ঠিক নয়। বরং যে কাপড়ে শহীদ হয়েছেন সেই কাপড়েই তাঁদেরকে দাফন করা উচিত। মালিক (র) বলেন, এটা যুদ্ধের ময়দানে নিহত শহীদগণের হুকুম। আর যুদ্ধের ময়দান হতে জীবিত আনার পর বাড়ি এসে আল্লাহর ইচ্ছায় কিছুক্ষণ বা কিছু কাল পর যাদের মৃত্যু হয় তাঁদেরকে গোসল দেওয়া হবে এবং তাঁদের জানাযাও পড়া হবে। উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-এর বেলায়ও এরূপ করা হয়েছিল।
আল্লাহর রাহে মুজাহিদের জন্য যা, তা অন্য কোন কিছুর নামে বণ্টন করা হারাম
ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রা) মুজাহিদগণের আরোহণের জন্য উমার ইবনু খাত্তাব (রা) প্রতি বৎসর চল্লিশ হাজার উট প্রদান করতেন। তিনি সিরিয়াগামী সৈন্যদলের প্রতিজনকে একটি করে এবং ইরাকগামীদের প্রতি দু’জনকে একটি করে উট দিতেন। একদিন জনৈক ইরাকী এসে তাঁকে বলল, আমাকে এবং সুহাইমকে একটি উট দিন। উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বললেন, তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলতেছি, সুহাইম বলতে কি তুমি তোমারি পানির মশকটিকেই বুঝাচ্ছ? সে বলল, হ্যাঁ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
জিহাদে উৎসাহ প্রদান
আনাস ইবনু মালিক (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন কোবায় তশরীফ নিয়ে যেতেন তখন উম্মে হারাম বিনত মিলহান (রা)-এর বাড়িতে যেতেন। উম্মে হারাম (রা) তাঁকে সেখানে আহার করাতেন। উম্মে হারাম (রা) ছিলেন উবাদা ইবনু সামেত (রা)-এর স্ত্রী। একদিন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বাড়িতে গেলেন। উম্মে হারাম তাঁকে আহার করিয়ে মাথার চুল বাছতে বসে গেলেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন, হঠাৎ হাসতে হাসতে তিনি জাগ্রত হলেন। উম্মে হারাম (রা) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! হাসছেন কেন? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক আমাকে দেখানো হল বাদশাহগণ যেমন সিংহাসনে আসীন হন তদ্রূপ তারা জিহাদ করার জন্য সমুদ্রের বুকে আরোহণ করতেছে। উম্মে হারাম (রা) তখন আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দু‘আ করে দিন আমাকেও যেন আল্লাহ্ তা’আলা এদের মধ্যে শামিল করে নেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু‘আ করলেন এবং আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পুনরায় তিনি হেসে জাগ্রত হয়ে উঠলেন। উম্মে হারাম (রা) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! হাসছেন কেন? তিনি বললেন, আমাকে দেখানো হল আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক বাদশাহদের সিংহাসনারোহী হওয়ার মতো জিহাদের উদ্দেশ্যে সমুদ্রের বুকে বিচরণ করতেছে। উম্মে হারাম (রা) আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! দু‘আ করে দিন, আল্লাহ্ যেন আমাকে এদের অন্তুর্ভুক্ত করে দেন। রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন; তুমি তো প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছ। পরে এই উম্মে হারাম (রা) মু’আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রা)-এর সাথে জিহাদে সমুদ্রযাত্রায় শরীক হয়েছিলেন। ফিরবার পথে জাহাজ হতে অবতরণ করার পর সওয়ারী হতে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। (বুখারী ২৭৮৯, ২৮০০, মুসলিম ১৯১২) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর না হত তবে আল্লাহর রাহে গমনকারী প্রত্যেকটি সৈন্যদলের সঙ্গে যেতে আমি বিরত হতাম না। আমার নিকট এত অধিক বাহন নাই যে, প্রত্যেককেই-এক একটা দিতে পারি আর তাদের নিজেদের নিকট এমন কোন বাহন নাই যাতে আরোহণ করে তারা জিহাদে যেতে পারে। আমি নিজে যদি চলে যাই তবে তাদের এখানে থাকতে কষ্ট হয়। আমার তো ইচছা হয় আল্লাহর পথে লড়তে যেয়ে আমি শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই। (বুখারী ২৯৭২, মুসলিম ১৮৭৬) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (রা) উহুদ যুদ্ধের দিন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সা’দ ইবনু রবী ‘আনসারী (রা)-এর খবর আমাকে কে এনে দিতে পারবে? এক ব্যক্তি উঠে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি পারব। এই ব্যক্তি সা’দকে পড়ে থাকা লাশগুলোর মধ্যে খুঁজতে লাগলেন। এবং সেই স্থানে গিয়ে তাঁকে আহত হয়ে পড়ে থাকতে দেখতে পেলেন। সা’দ বললেন : কি ব্যাপার? লোকটি বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তালাশ করে আপনার খবর নিয়ে যেতে আমাকে পাঠিয়েছেন। সা’দ বললেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে আমার সালাম দিবে। আমার এই শরীরে বারটি আঘাত লেগেছে। প্রত্যেকটি আঘাতই মরাত্মক। তোমার সম্প্রদায়কে বলবে, তোমাদের একজন জীবিত থাকতেও যদি আল্লাহ্ না করুন রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শহীদ হয়ে যান, তবে আল্লাহর দরবারে তোমাদের কোন ওযর ও জবাবদিহি কবূল হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদেরকে জিহাদের উৎসাহ দিতে যেয়ে জান্নাতের অবস্থা বর্ণনা করেন। এমন সময় জনৈক আনসারী সাহাবী [১] যিনি কয়েকটি খেজুর হাতে নিয়ে তখন খাচ্ছিলেন, তিনি বলে উঠলেন : এই খেজুরগুলো খেয়েছি শেষ করা পর্যন্ত যদি আমি অপেক্ষা করি তবে সত্যি আমি দুনিয়া লোভী বলে প্রমাণিত হব। শেষ পর্যন্ত বাকি খেজুরগুলো দূরে ছুঁড়ে ফেললেন এবং তালোয়ার হাতে নিয়ে লড়াইয়ের ভিড়ে ঢুকে পড়লেন এবং লড়াই করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। (ইমাম বুখারী জাবের (রা) মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ৪০৪৬, মুসলিম ১৮৯৯, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মুআয ইবনু জাবাল (রা) জিহাদ দুই প্রকার। এক হল যাতে একজন সর্বোত্তম সম্পদ ব্যয় করে। সাথীদের সাথে প্রেম-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকে। সেনাধ্যক্ষের নির্দেশ পালন করে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে সে বেঁচে থাকে। এই ধরনের জিহাদ সম্পূর্ণভাবে সওয়াবের। আরেক ধরনের জিহাদ হল যাতে একজন উত্তম সম্পদ ব্যয় করে না, সঙ্গীদের সাথে প্রীতির সম্পর্ক রাখে না, সেনাধ্যক্ষের নির্দেশের অবাধ্যতা করে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকে না। এই ধরনের জিহাদে সওয়াব লাভ হওয়া তো দূরের কথা, গুনাহ না নিয়ে ফিরে আসতে পারাটাই অনেক মুশকিল। (হাসান মারফু, আবূ দাঊদ ২৫১৫, নাসাঈ ৩১৮৮, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সহীহ আল-জামে ৪১৭৪])
ঘোড়া, ঘোড়দৌড় এবং জিহাদে ব্যয় করার ফযীলত
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বরকত এবং মঙ্গল লিখে দেওয়া হয়েছে। (বুখারী ২৮৪৯, মুসলিম ১৮৭১) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ‘ইযমার’ [১] কৃত ঘোড়ার জন্য ‘হাফইয়া’ হতে সানিয়া তুলবিদা পর্যন্ত (পাঁচ মাইল) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আর সাধারণ ঘোড়ার জন্য সানিয়াতুল বিদা হতে মসজিদে বনী যুরাইক পর্যন্ত (এক মাইল) সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় শরীক ছিলেন। (বুখারী ৪২১, মুসলিম ১৮৭০) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) ঘোড়দৌড়ে কোন কিছুর শর্ত করায় দোষ নেই তবে শর্ত হল, এদের মধ্যে তৃতীয় এক ব্যক্তি হতে হবে। সে যদি সকলের আগে যেতে পারে শর্তকৃত বস্তু সেই নিয়ে যাবে। আর পেছনে পড়ে গেলে সে কিছুই পাবে না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (র) রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে স্বীয় চাদর দ্বারা ঘোড়ার মুখ মুছতে দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন : ঘোড়ার দেখাশুনা না করায় কাল রাতে আমাকে আল্লাহর তরফ হতে সতর্ক করা হয়েছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আনাস ইবনু মালিক (রা) জিহাদের উদ্দেশ্যে রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন খায়বার পৌঁছান তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর রীতি ছিল, জিহাদের উদ্দেশ্যে কোথাও রাত্রে গিয়ে পৌঁছালে সকাল পর্যন্ত যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করতেন (কোন আক্রমণ করতেন না)। ভোরে খায়বরবাসিগণ কোদাল, ঝুঁড়ি ইত্যাদি নিয়ে (কাজের উদ্দেশ্যে) স্বাভাবিকভাবেই বের হল। তখন হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে স্বসৈন্যে দেখতে পেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল : আরে, আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ এবং তাঁর সহিত পূর্ণ এক বহিনী! রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং তিনি তখন এই আয়াত পাঠ করলেন إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ অর্থাৎ যখন আমি কোন জাতির মুকাবিলায় অবতরণ করি তখন ভয় প্রদর্শিত জাতির ভোর বড় দুঃখজনক হয়। (বুখারী ২৯৪৫, মুসলিম ১৩৬৫) আবূ হুরায়রা (রা) যে ব্যক্তি এক জোড়া বস্তু আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, তবে কিয়ামতের দিন বেহেশতের দরজায় তাকে ডেকে বলা হবে। হে আল্লাহর বান্দা! তোমার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। অতঃপর নামাযীকে নামাযের দরজা দিয়ে এবং মুজাহিদকে জিহাদের দরজা দিয়ে, সদকাদাতাকে সদকার দরজা দিয়ে এবং রোযাদারকে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে ডাকা হবে। আবূ বক্র সিদ্দীক (রা) তখন বললেন, যে কোন এক দরজা দিয়ে ডাকলেই আর অন্য দরজা দিয়ে প্রবেশের প্রয়োজন পড়বে না। তবে এমনকি কেউ হবে যাকে সকল দরজা দিয়েই যাকে ডাকা হবে? রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ, আমার আশা আপনি তাঁদের মধ্যে হবেন। (বুখারী ১৮৯৭, মুসলিম ১০২৭)
যিম্মীদের মধ্যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার ভূসম্পত্তি কি করা হবে
سُئِلَ مَالِك عَنْ إِمَامٍ قَبِلَ الْجِزْيَةَ مِنْ قَوْمٍ فَكَانُوا يُعْطُونَهَا أَرَأَيْتَ مَنْ أَسْلَمَ مِنْهُمْ أَتَكُونُ لَهُ أَرْضُهُ أَوْ تَكُونُ لِلْمُسْلِمِينَ وَيَكُونُ لَهُمْ مَالُهُ فَقَالَ مَالِك ذَلِكَ يَخْتَلِفُ أَمَّا أَهْلُ الصُّلْحِ فَإِنَّ مَنْ أَسْلَمَ مِنْهُمْ فَهُوَ أَحَقُّ بِأَرْضِهِ وَمَالِهِ وَأَمَّا أَهْلُ الْعَنْوَةِ الَّذِينَ أُخِذُوا عَنْوَةً فَمَنْ أَسْلَمَ مِنْهُمْ فَإِنَّ أَرْضَهُ وَمَالَهُ لِلْمُسْلِمِينَ لِأَنَّ أَهْلَ الْعَنْوَةِ قَدْ غُلِبُوا عَلَى بِلَادِهِمْ وَصَارَتْ فَيْئًا لِلْمُسْلِمِينَ وَأَمَّا أَهْلُ الصُّلْحِ فَإِنَّهُمْ قَدْ مَنَعُوا أَمْوَالَهُمْ وَأَنْفُسَهُمْ حَتَّى صَالَحُوا عَلَيْهَا فَلَيْسَ عَلَيْهِمْ إِلَّا مَا صَالَحُوا عَلَيْهِ. মালিক (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : মুসলিম প্রশাসক কর্তৃক যদি কোন এলাকার কাফেরদের উপর জিযিয়া আরোপ করা হয়, আর তখন তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যদি ইসলাম গ্রহণ করে নেয় তখন তার ভূসম্পত্তি তারই থাকবে, না মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত হয়ে যাবে? মালিক (রা) বললেন, এটা দুই ধরনের হতে পারে, প্রথমত কুফরী অবস্থায় কোনরূপ যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত না হয়ে স্বেচ্ছায় সন্ধিশর্তে আবদ্ধ হয়ে জিযিয়া দিতে রাজী হয়ে থাকে, তবে ইসলাম গ্রহণের পর তার ভূমি ও সম্পদ তার মালিকানায় রয়ে যাবে। আর যুদ্ধ-বিগ্রহের পর পরাজিত হয়ে জিযিয়া কবূল করলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবার পরও ঐ সম্পত্তি মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত থাকবে। কারণ তাদের সম্পদ মুসলমানগণ ‘ফাই’-স্বরূপ প্রাপ্ত হয়েছে। আর যাদের সাথে সন্ধি স্থাপিত হয়েছে, সন্ধির শর্তানুযায়ী তাদের সম্পদ মুসলমানগণ পাবে।
প্রয়োজনে এক করবে একাধিক লাশ দাফন করা এবং আবূ বক্র (রা) কর্তৃক রসূলুল্লাহ্ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ওয়াদাসমূহ পূরণ করা
আবদুর রহমান ইবনু আবূ সা’সা’আ (রা) আমর ইবনু জামুহ (রা) এবং ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রা) দু’জনেই ছিলেন আনসার ও বনী সালমা গোত্রের। তাঁরা উহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁদের দুজনকে একটি কবরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। পানি নামার ঢালের মুখে তাঁদের কবর পড়ে গিয়েছিল। তাই পানির স্রোত ক্রমে তাঁদের কবর বিনষ্ট করে ফেলেছিল। তাঁদের লাশ স্থানান্তরিত করার উদ্দেশ্যে পরে তাঁদের কবর খোঁড়ান হলে দেখা গেল তাঁদের লাশ সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। মনে হচ্ছিল কালকেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন আহত হওয়ার সময় ক্ষত স্থানে হাত চেপে ধরেছিলেন। দাফন করার সময় তাঁর হাতটা সরিয়ে দিলে হাতটি আবার সেই স্থানেই এসে লেগে যায়। উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ছিচল্লিশ বৎসর পর তাঁদের লাশ স্থানান্তরিত করার সময় এই ঘটনা ঘটেছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, প্রয়োজনবশত এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করলে কোন দোষ নেই। তবে এদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে কিবলার দিকে শোয়াবে। রবী’আ ইবনু ‘আবদুর রহমান (র) আবূ বক্র সিদ্দীক (রা)-এর নিকট বাহরাইন হতে প্রচুর ধন-সম্পদ এসে পৌঁছালে তিনি ঘোষণা করিয়ে দিয়েছিলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবিতকালে কাউকেও কিছু দেওয়ার ওয়াদা করে থাকলে অথবা কেউ তাঁর নিকট কিছু পাওনা থাকলে সে আমার নিকট হতে যেন তা নিয়ে যায়। এই সময় জাবির ইবনু আবদুল্লাহ্ (রা) এগিয়ে এলেন। আবূ বক্র (রা) তাঁকে তখন তিন অঞ্জলি (দিরহাম) দিলেন। (বুখারী ২২৯৬, ইমাম বুখারী হাদীসটি সাহাবী জাবের (রা) বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন মুসলিম ২৩১৪, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটিতে ==== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।)