22. মানত ও কসম সম্পর্কিত অধ্যায়
কোথাও হেঁটে যাওয়ার মানত করা
আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রা) সা’দ ইবনু উবাদা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আমার মাতার ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছে। তিনি একটা মানত করেছিলেন, কিন্তু পূর্ণ করে যেতে পারেননি। এখন কি করা যায়? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাঁর তরফ হতে তুমিই উহা আদায় করে দাও। (বুখারী ২৭৬১, মুসলিম ১৬৩৮) আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ বাকর (রা) তার ফুফু বর্ণনা করেছেন, তাঁর দাদী মসজিদ-ই কোবায় হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলেন, কিন্তু ইহা পূরণ করার পূর্বেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা) ঐ মানত [১] আদায় করে দেওয়ার জন্য তাঁর কন্যাকে নির্দেশ দেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, কারো তরফ হতে হেঁটে যাওয়ার মানত পূরণ করা জরুরী নয়। আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ হাবীবা (রা) আমার বয়স তখন অল্প। এক ব্যক্তিকে বললাম : “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার নযর বা মানত করলাম” কোন ব্যক্তি এই কথা না বলে “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া আমার উপর ওয়াজিব” এইরূপ বললে এতে কোন দোষ নেই। ঐ ব্যক্তি আমাকে তখন বলল, আমার হাতে এই শসাটি তুমি নিয়ে যাও, আর এইটুকু বল দেখি, “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া আমার উপর ওয়াজিব।” আমি বললাম। হ্যাঁ, বলতেছি এবং ঐ কথা বলে দিলাম। তখন আমি অল্প বয়ষ্ক ছিলাম। তাই প্রথমে কিছু চিন্তা করিনি। কিন্তু পরে বুঝ হওয়ার পর চিন্তা হল। অন্য লোকেরা বলতে লাগল : এখন তোমার উপর বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া ওয়াজিব হয়েছে। শেষে সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রা)-কে আমি এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে বললেন, হ্যাঁ, বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত তোমাকে হেঁটে যেতে হবে। শেষ পর্যন্ত আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যেয়ে এই নযর পুরা করলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমার মতেও হুকুম এটাই। ২২ - بَاب مَا جَاءَ فِيمَنْ نَذَرَ مَشْيًا إِلَى بَيْتِ اللهِ فَعَجَزَ
বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করা এবং পরে অক্ষম হওয়া
উরওয়াহ্ ইবনু ‘উযাইনী লাইসী (রা) আমার দাদী বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলেন। তিনি যখন মানত পূরণ করতে যাত্রা করেন আমিও তাঁর সাথে চললাম। শেষে হাঁটতে হাঁটতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি স্বীয় গোলামকে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে প্রেরণ করেন। আমিও তার সাথে গেলাম। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) জবাবে বললেন, এখন সে কিছুতে আরোহণ করে যাক। পরে যে স্থান হতে আরোহণ করেছিল সেই স্থান হতে পুনরায় তাঁকে হেঁটে যেতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, এই ধরনের ব্যক্তিকে এর সাথে একটি কুরবানীও করতে হবে। মালিক (র) জ্ঞাত হয়েছেন, সা’ঈদ ইবনুল মুসায়্যাব (রা) এবং আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমানও এই বিষয়ে আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর মতো অভিমত ব্যক্ত করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (রা) আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলাম, কিন্তু কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তাই বাহনে চড়ে আমাকে মক্কায় আসতে হল। আতা ইবনু আবূ রাবাহ (র) অন্যদেরকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বললেন, তোমাকে একটা কুরবানী দিতে হবে। মদীনায় এসে সেখানকার আলিমদের নিকটও এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা বললেন, যে স্থান হতে সওয়ার হয়েছিলে সেই স্থান হতে তোমাকে আবার হেঁটে যেতে হবে। শেষে আমি তাই করলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাওয়া আমার ওপর ওয়াজিব। এই কথা বলে যদি কেউ হেঁটে যাত্রা শুরু করে এবং পরে অপারগ হয়ে যায় তবে সে সওয়ার হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে যে স্থান হতে সে অপারগ হয়েছিল সেই স্থান হতে পুনরায় হেঁটে যাবে। হেঁটে না পারলে যতদূর সামর্থ্যে কুলায় হেঁটে যাবে আর বাকীটুকু সওয়ার হয়ে যাবে এবং একটি উট বা গরু কুরবানী করবে। সম্ভব না হলে একটি বকরী কুরবানী করবে। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যদি কেউ অন্য একজনকে বলে : তোমাকে আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাব, তবে কি হুকুম হবে? তিনি বললেন, যদি এই কথা বলার সময় কথকের এই নিয়্যত হয়ে থাকে যে, তার ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এবং এভাবে নিজেকে কষ্টে ফেলে তার উদ্দেশ্য হয়, তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না বরং সে পায়ে হেঁটে যাবে এবং একটি কুরবানী দিবে। আর বলার সময় যদি তার কিছু নিয়্যত না থাকে, তবে সে সওয়ার হয়ে যাবে এবং ঐ ব্যক্তিকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে। কারণ সে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। ঐ ব্যক্তি যদি সঙ্গে যেতে না চায় তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা সে আপন অঙ্গীকার রক্ষা করেছে। মালিক (র)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কেউ যদি নির্দিষ্ট কতিপয় মানতের শপথ করে যা প্রতি বৎসর চেষ্টা করলেও সারা জীবনে পূরণ করা অসম্ভব, যেমন সে বলল, পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ্ যাব বা এক হাজার বার হজ্জ করব, ভাই অথবা পিতার সাথে কথা বলব না ইত্যাদি। সে কি একটি মানতই পূরণ করবে না সবগুলোই তাকে পূরণ করতে হবে? মালিক (র) বললেন, আমার মতে সবগুলোই তাকে পূরণ করতে হবে, যতদিন এবং যতদূর পর্যন্ত সম্ভব হয় সে উহা পূরণ করতে থাকবে এবং নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে যাবে।
পায়ে হেঁটে কা’বা শরীফে যাওয়ার অঙ্গীকার করা
حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك أَنَّ أَحْسَنَ مَا سَمِعْتُ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي الرَّجُلِ يَحْلِفُ بِالْمَشْيِ إِلَى بَيْتِ اللهِ أَوْ الْمَرْأَةِ فَيَحْنَثُ أَوْ تَحْنَثُ أَنَّهُ إِنْ مَشَى الْحَالِفُ مِنْهُمَا فِي عُمْرَةٍ فَإِنَّهُ يَمْشِي حَتَّى يَسْعَى بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ فَإِذَا سَعَى فَقَدْ فَرَغَ وَأَنَّهُ إِنْ جَعَلَ عَلَى نَفْسِهِ مَشْيًا فِي الْحَجِّ فَإِنَّهُ يَمْشِي حَتَّى يَأْتِيَ مَكَّةَ ثُمَّ يَمْشِي حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ الْمَنَاسِكِ كُلِّهَا وَلَا يَزَالُ مَاشِيًا حَتَّى يُفِيضَ قَالَ مَالِك وَلَا يَكُونُ مَشْيٌ إِلَّا فِي حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ. মালিক (র) বলেন, পুরুষ বা মহিলা যদি পায়ে হেঁটে হজ্জ বা উমরা করার কসম করে, তবে ঐ পুরুষ বা মহিলার কসম ভেঙ্গে ফেলবে। কসম ভঙ্গ করার পর, উমরার বেলায় সায়ী করা পর্যন্ত এবং হজ্জের বেলায় তাওয়াফে যিয়ারত করা পর্যন্ত সে পায়ে হেঁটে চলবে। মালিক (র) বলেন, হজ্জ অথবা উমরা ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য এই ধরনের মানতে হাঁটতে হবে না। আমি এই বিষয়ে যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই উত্তম।
পাপকার্যে মানত বৈধ নয়
মালিক (র) হুমায়দ ইবনু কায়স (রা) এবং সাউর ইবন দীলী (রা) তাঁরা দু’জনে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তাঁর নিকট রেওয়ায়ত বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে একবার রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, এই ব্যক্তির কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, এই ব্যক্তি মানত করেছে যে, সে কারো সাথে কথা বলবে না, ছায়ায় দাঁড়াবে না, কোথাও বসবে না এবং সর্বদাই সে রোযা রাখবে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তাঁকে বলে দাও, সে যেন কথা বলে, ছায়ায় দাঁড়ায় ও বসে, আর যেন রোযা পুরা করে নেয়। (সহীহ, ইমাম বুখারী ইবনু আব্বাস থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, বুখারী ৬৭০৪, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মরসাল) মালিক (র) বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ব্যক্তিকে কোন কাফ্ফারার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি। তিনি তাঁকে যা ইবাদত তা পূরণ করা এবং যা নাফরমানী তা বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইয়াহইয়া ইবনু সাইদ (র) কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র)-কে বলতে শুনেছেন ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (র)-এর নিকট একজন মহিলা এসে বলল, আমার পুত্রকে কুরবানী দেওয়ার মানত করেছি। তিনি বললেন, পুত্রকে জবাই করো না এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দাও। এক ব্যক্তি তখন বলে উঠল : কাফ্ফারা কি করে হতে পারে? ইবনু ‘আব্বাস বললেন, স্ত্রীর সাথে যিহার করাও গুনাহ। উহাতেও আল্লাহ্ তা’আলা কাফ্ফারার বিধান রেখেছেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আয়িশা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে অবশ্যই তাঁর আনুগত্য করবে আর যে আল্লাহর নাফরমানী করবে সে তার নাফরমানী করবে না। (সহীহ, বুখারী ৬৬৯৬, ৬৭০০) মালিক (র) বলেন : গুনাহর কাজ করার মানত যদি কেউ করে তবে সে যেন ঐ গুনাহ না করে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই কথার মর্ম হল, যে সমস্ত কাজের সওয়াব নাই তেমন কাজে মানত করিয়া উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিলে তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হবে না। যেমন কেউ শাম বা মিসর বা রাবাযা যাওয়ার মানত করিল। তদ্রুপ কাহারও সঙ্গে কথা না বলার মানত করিল অথবা মন্দ কাজ করার কসম করিল, যেহেতু এইসব কাজে আল্লাহর ফরমানবরদারী নাই। এইগুলি পুরণ না করিলে কিছুই ওয়াজিব হবে না। যে কাজে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে সেই ধরনের কাজে মানত করিলে ইহা পুরণ করা জরুরী হয়।
নিরর্থক কসমের বিবরণ
হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) যে, উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রা) বলতেন : কথায় কথায় লা ওয়াল্লাহি, বালা ওয়াল্লাহি (না, আল্লাহর কসম, হ্যাঁ আল্লাহর কসম) ধরনের কসম করা য়ামীন লাগব হবে (অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে উহা কসম বলে ধর্তব্য হবে না)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : য়ামীনে লাগব হল সত্য মনে কয়ে কোন বিষয়ে কসম করা অথচ পরে তা বিপরীত বলে সাব্যস্ত হয়। এই বিষয়ে এটাই উত্তম যা আমি শুনেছি। মালিক (র) বলেন : ভবিষ্যতে কোন কাজ করা না করা সম্পর্কে কসম করা হলে তা পূরণ করা বাধ্যতামূলক, যেমন কেউ বলল : আল্লাহর কসম, এই কাপড়টি আমি দশ দীনারে বিক্রয় করব না। কিন্তু পরে দশ দীনারে তা বিক্রয় করে দিল বা কেউ বলল : আল্লাহর কসম, এই ব্যক্তির গোলামকে আমি মারব, পরে মারল না ইত্যাদি। এই ধরনের কসমের কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়। আর য়ামীনে লাগব-এর জন্য কাফ্ফারা নেই।
যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলতেন : যদি কেউ কসম করে ইনশাআল্লাহ (যদি আল্লাহ চাহেন) বলে তবে কসমকৃত কাজটি না করলে এই কসম ভঙ্গ হবে না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : ‘ইনশাআল্লাহ’ কসমের সঙ্গে সঙ্গে এবং কথার ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে বলতে হবে। কেউ কসম করে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যদি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে তবে আর উহা ধর্তব্য হবে না। মালিক (র) বলেন : কেউ বলল, আমি যদি এই কাজ করি তবে আমি কাফের বা মুশরিক। পরে যদি ঐ ব্যক্তি কাজটি করে ফেলে তবে তার কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কিন্তু অন্তরে শিরক কুফরীর আকীদা না হলে এতে কাফের বা মুশরিক হয়ে যাবে না। তবে গুনাহগার হবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের কিছু করবে না বলে তাকে তাওবা করতে হবে। এই ধরনের কসম অতি নিন্দনীয়।
যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত বিষয় যদি অধিক ভাল ও মঙ্গলজনক মনে হয়; তবে ঐ কসম ভেঙ্গে তার কাফ্ফারা দেবে এবং মঙ্গলজনক কাজটি করবে। (সহীহ, মুসলিম ১৬৫০)
কসমের কাফ্ফারা
নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বললেন : কেউ যদি কসম করে ও পরে আরও কসম দ্বারা উহাকে জোরালো করে এবং পরে উহা ভেঙ্গে ফেলে তবে তার উপর একটি গোলাম আযাদ করা অথবা দশজনকে কাপড় দেয়া জরুরী হবে। আর যদি তাকীদযুক্ত নয় এমন কসম করে ভেঙ্গে ফেলে তবে দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে এক মুদ পরিমাণ গম দিবে আর তা না পারলে তিন দিন রোযা রাখবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) যখন স্বীয় কসমের কাফ্ফারা দিতেন তখন দশজন মিসকীনকে আহার করাতেন এবং প্রতিজনকে এক মুদ পরিমাণ গম দিতেন, আর কসম যত তাকীদযুক্ত করতেন তত সংখ্যক গোলাম আযাদ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (র) হতে বর্ণিত, সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (র) বললেন : আমি লোকদেরকে পেয়েছি তারা যখন কসমের কাফ্ফারা দিতেন তখন প্রত্যেক মিসকীনকে ছোট মুদের এক মুদ পরিমাণ গম দিতেন এবং উহাই যথেষ্ট বলে মনে করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : কসমের কাফ্ফারা কাপড় দিতে চাইলে পুরুষ মিসকীনকে একটি কাপড় দিলেই চলবে, আর মিসকীন নারী হলে অন্তত দুটি করে কাপড় দিতে হবে। একটি জামা আরেকটি ওড়না। কেননা এতটুকুর কমে সালাত হয় না।
কসম সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম
নাফি’ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) একবার আরোহী হয়ে যাচ্ছিলেন এবং পিতার নামে কসম খাইতেছিলেন। এমন সময় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহিত তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তখন বললেন : আল্লাহ তা’আলা পিতার নামে কসম করতে নিষেধ করেছেন। কেউ কসম করলে আল্লাহর নামে করো, আর তা না হলে চুপ থেকো। (বুখারী ৬৬৪৬, মুসলিম ১৬৪৬) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন : লা ওয়া মুকাল্লিবাল কুলূব! এরূপ নয়, মনের গতি পরিবর্তনকারীর কসম। (সহীহ, বুখারী ৬৬২৮, ইমাম মালেকের নিকট পৌঁছেছে মর্মে তিনি বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) আবূ লুবাবা ইবনু আবদুল মুনজির (রা)-এর তাওবা যখন আল্লাহ তা’আলা কবূল করেন তখন তিনি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে আরয করলেন : হে আল্লাহর রসূল! আমার আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমি যেখানে বাস করি, আমার যে বাড়িটিতে আমি গুনাহ করেছিলাম, যেখানে আমার এ গুনাহ হয়েছিল, উহা ত্যাগ করে আপনার নিকট এসে থাকব কি? আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওয়াস্তে এই বাড়িটি সাদকা করব কি? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার ধন-সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সাদকা দিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে। [১] (সহীহ, আবূ দাঊদ ৩৩১৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [মিশকাত ৩৪৩৯, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]) উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা) এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে বলেছিল : আমার ধন-সম্পদ কা’বার দরজায় ওয়াক্ফ করলাম, তবে এর কি হুকুম হবে? আয়িশা (রা) বললেন : তাকে কসমের কাফ্ফারার মতো কাফ্ফারা দিতে হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যদি কেউ বলে : আমার ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে সদকা করে দিলাম। অতঃপর সে কসম ভঙ্গ করল; তবে তাকে সমস্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতে হবে। কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ লুবাবা (রা) সম্পর্কে এ হুকুমটি দিয়েছিলেন।