23. কুরবানী সম্পর্কিত অধ্যায়
কি ধরনের পশু কুরবানী করা দুরস্ত নয়
বারা ইবনু আযিব (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : কি ধরনের পশু কুরবানী করা উচিত নয়। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন অঙ্গুলি দ্বারা গুণে বললেন : চার ধরনের পশু হতে বিরত থাকা উচিত। বারা ইবনু আযিব (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুকরণে অঙ্গুল গুণে এই হাদীস বর্ণনা করতেন। বলতেন : আমার হাত রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত হতে ছোট। এমন খোঁড়া যা হাঁটতে অক্ষম। এমন কানা যা সকলেই ধরতে পারে। স্পষ্ট রোগা। এমন কৃশ যার হাড্ডির মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ২৮০২, তিরমিযী ১৪৯৭, ইবনু মাজাহ ৩১৪৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ আলজামে ৮৮৬]) নাফি’ (র) মুসিন্না [১] নয় বা অঙ্গহীন এমন পশুর কুরবানী করা হতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বিরত থাকতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন: আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এই বিষয়টি আমার অধিক প্রিয়।
কি ধরনের পশু কুরবানী করা মুস্তাহাব
নাফি’ (র) একবার আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা) মদীনায় কুরবানী করেন। আমাকে বললেন : শিংওয়ালা একটি ছাগল খরিদ করে ঈদুল আযহার দিন ইদগাহে নিয়ে যবেহ কর। আমি তাই করলাম। যবেহকৃত ছাগলটি তাঁর নিকট পাঠিয়ে দেয়া হল। তিনি তখন তাঁর মাথার চুল কাটলেন। সে সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। ঈদের জামাতে হাজির হতে পারেননি। নাফি’ (র) বলেন : ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা) বলতেন কুরবানীদাতার উপর মাথা মুন্ডন ওয়াজিব নয়। তবে তিনি নিজে মাথা মুন্ডন করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
ঈদের জামাআত হতে ইমামের প্রত্যাবর্তনের পূর্বে কুরবানী করা দুরস্ত নয়
বুশাইর ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কুরবানী করবার আগেই কুরবানী করেছিলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পুনরায় কুরবানী করতে নির্দেশ দেন। আবূ বুরদা বললেন : আমার নিকট এক বৎসরের এক বকরী ব্যতীত আর কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : এটিকেই কুরবানী দিয়ে দাও। (বুখারী ৯৫১, ৯৫৫, মুসলিম ১৯৬১) আব্বাদ ইবনু তামীম (র) উয়াইমির ইবনু আশকর (রা) ইয়াউমুল আযহাতে (যিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে) ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করেছিলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এই কথা উল্লেখ করা হলে তিনি তাঁকে পুনরায় কুরবানী করতে নির্দেশ দেন। (সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩১৫৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ ও যয়ীফ ইবনু মাজাহ])
কুরবানীর গোশত রেখে দেয়া
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা) তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছিলেন। পরে বললেন : তোমরা নিজেরা তা খাও, পাথেয় হিসেবে ব্যবহার কর এবং (ভবিষ্যতের জন্য) রেখে দাও। (সহীহ, মুসলিম ১৯৭২) আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াকিদ (র) তিন দিনের পর কুরবানীর গোশত খেতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (র) বলেন : এই কথা আমি ‘আমরা বিন্ত আবদুর রহমানকে গিয়ে শুনালাম। তিনি বললেন : ‘আবদুল্লাহ সত্য বলেছেন। নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়িশা (রা)-এর কাছে শুনেছি : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় একবার ঈদুল আযহার দিন কিছু সংখ্যক বেদুঈন আসেন। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তিন দিনের মতো গোশত রেখে বাকীটা খয়রাত করে দাও। এর পর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বলা হল, পূর্বে লোকেরা কুরবানীর পশু দ্বারা ফায়দা লাভ করত। এর চর্বি রেখে দিত এবং চামড়া দ্বারা মশক বানিয়ে রাখত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমরা কি বলতে চাও? বলা হল : আপনি তিন দিনের অতিরিক্ত কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কিছু অভাবী লোক গ্রাম হতে এসে পড়েছিল, তাই তিন দিনের অতিরিক্ত গোশত রাখতে আমি নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা খাও, খয়রাত কর এবং জমা করে রেখে দাও। (সহীহ, মুসলিম ১৯৭১) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রা) একবার সফর হতে ফিরবার পর পরিবারের লোকেরা তাঁর সামনে গোশত পেশ করেন। তিনি এটা দেখে বললেন : এটা কুরবানীর গোশত নয় তো? তাঁরা বললেন; হ্যাঁ কুরবানীর। আবূ সা’ঈদ (রা) বললেন : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা নিষেধ করেন নাই কি? তাঁরা বললেন : আপনি যাওয়ার পর এই বিষয়ে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হুকুম প্রদান করেছেন। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রা) এই বিষয়টি ভাল করে অনুসন্ধান করে দেখার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। তখন তিনি জানতে পারেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তিন দিন পর কুরবানীর গোশত খেতে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম, এখন যে কোন পাত্রে ইচ্ছা তোমরা তা বানাতে পার, তবে (মনে রেখ) সকল নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। কবর যিয়ারত করতে তোমাদেরকে আমি নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে যেতে পারে, তবে মুখে যেন কোন মন্দ কথা উচ্চারিত না হয়। (সহীহ, বুখারী ৩৯৯৭)
কুরবানীর মধ্যে শরীক লওয়া এবং গরু ও উট কত জনের পক্ষ হতে যবেহ করা যাবে
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা) হুদায়বিয়ার বৎসর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে প্রতিটি উট সাতজনের এবং প্রতিটি গরু সাতজনের পক্ষে যবেহ করেছি (কুরবানীর উদ্দেশ্যে)। (সহীহ, মুসলিম ১৩১৮) উমারা ইবনু সাইয়্যাদ (র) আতা ইবনু ইয়াসার (র) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন : আবূ আইয়ুব [১] আনসারী (রা) তাঁকে বলেছেন, আমরা এক এক পরিবারের তরফ হতে এক একটি বকরী কুরবানী করতাম। পরে লোকজন গর্ব ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে পরিবারের প্রত্যেকের তরফ হতে এক একটি বকরী কুরবানী করা শুরু করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : এই বিষয়ে সবচাইতে ভাল বর্ণনা যা আমি শুনেছি, তা হল এক ব্যক্তি নিজের এবং পরিবারের অন্যদের তরফ হতে নিজস্ব একটি উট, গরু বা বকরী কুরবানী করতে পারবে এবং সওয়াবের মধ্যে অন্যদেরকেও শামিল করে নেবে। কিন্তু একটি উট, গরু বা বকরী খরিদ করে অন্য কাউকে এর কুরবানীতে শরীক করা অর্থাৎ শরীকদের নিকট হতে টাকা নিয়ে তদনুসারে তাদের গোশত দেয়া মাকরূহ। আমরা শুনেছি কুরবানীতে শরীক নেয়া যেতে পারে না বরং এক পরিবারের পক্ষ হতে এক একটি কুরবানী করতে হবে। মালিক (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পরিবারের পক্ষ হতে কখনো একটি উট বা গরুর অতিরিক্ত কিছু কুরবানী করেননি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : ইবনু শিহাব (র) একটি উটের কথা উল্লেখ করেছিলেন কিংবা একটি গরুর কথা উল্লেখ করেছিলেন তা স্পষ্ট আমার স্মরণ নাই।
গর্ভস্থ সন্তানের তরফ হতে কুরবানী
নাফি’ (র) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা) বলেছেন : ঈদুল আযহা দিবসের পর মাত্র দুই দিন কুরবানী করা দুরস্ত রয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রা) হতেও তাঁর কাছে অনুরূপ রেওয়ায়ত পৌঁছেছে। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) গর্ভস্থ সন্তানের পক্ষ হতে কুরবানী করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন : কুরবানী করা সুন্নাত (মুয়াক্কাদা)। ইহা ওয়াজিব নয়। যে কুরবানী ক্রয় করতে সামর্থ্য রাখে, তাঁর পক্ষে কুরবানী না করা আমি পছন্দ করি না।