31. ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত
বায়নার বিক্রয়
আমার ইবন শু’আইব রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উরবান (বায়না) বিক্রয় হতে নিষেধ করেছেন। [যঈফ, আবূ দাঊদ ৩৫০২, ইবনু মাজাহ ২১৯২, ২১৯৩, আলবানী হাদীসটিকে যয়ীফ বলেছেন (যয়ীফ আল জামে) ৬০৬০] মালিক (রহঃ) বলেন, আমাদের মতে (আল্লাহ সর্বজ্ঞাত) যেমন (বায়না) এই, কোন ব্যক্তি ক্রীতদাস অথবা ক্রীতদাসী ক্রয় করলে অথবা কোন পশু ভাড়া নিল। অতঃপর ক্রেতা অথবা যার নিকট হইতে ভাড়া নিল তাকে বলল, আমি আপনাকে এক দীনার অথবা এক দিরহাম কিংবা উহার চাইতে কম বা বেশি, এই শর্তে দিলাম যে, যদি আমি (ক্রীত) দ্রব্য গ্রহণ করি, কিংবা আপনার নিকট হতে ভাড়া নেওয়া পশুর উপর আরোহণ করি, তবে যা আমি আপনাকে দিলাম, তা দ্রব্যের মূল্য অথবা পশুর ভাড়া হতে কর্তন করা হবে। আর যদি আমি দ্রব্য ক্রয় না করি কিংবা ভাড়ায় লওয়া পশুটি ব্যবহার না করে ফিরিয়ে দেই অর্থাৎ ভাড়া না নেই, তবে যা আমি আপনাকে দিয়েছি তা কোন বিনিময় ছাড়া আপনার হবে। মালিক (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট হুকুম এই, ব্যবসায়ী ও শুদ্ধভাষী গোলামকে হাবশী কয়েকজন গোলাম অথবা বিভিন্নজাত হতে অন্য কোন জাতের গোলামের বিনিময়ে যারা বাকপটুতায় ব্যবসায় কার্য সম্পাদনে এবং অভিজ্ঞতায় এর তুল্য নয়। [এইরূপ গোলামের বিনিময়ে] বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। একজন গোলামকে দুইজনের অথবা কয়েকজন গোলামের বিনিময়ে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত (বাকী) ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। যদি [উভয় প্রকার গোলামের মধ্যে] পার্থক্য থাকে এবং সেই পার্থক্য হয় স্পষ্ট, আর যদি [তাদের মধ্যে] এক গোলাম অপর গোলামের সদৃশ হয় (এমন কি একে অপরের) কাছাকাছি হয় তবে তা হতে এক গোলামের বিনিময়ে দুই গোলাম বাকী গ্রহণ করবে না, যদিও বা তাদের জাত ভিন্ন ভিন্ন হয়। মালিক (রহঃ) বলেন, তুমি উহা হতে যা ক্রয় করেছ তা কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করাতে কোন বাধা নেই যদি মূল্য নগদ আদায় কর এবং যার নিকট হতে উহাকে ক্রয় করেছ তাকে ছাড়া ভিন্ন লোকের নিকট বিক্রয় কর। মালিক (রহঃ) বলেন, [অন্তঃসত্ত্বা ক্রীতদাসীর] পেটের বাচ্চাকে বাদ দিয়ে [২] মাকে বিক্রয় করা বৈধ নয়, এটা ধোঁকা হবে, কারণ জানা নাই বাচ্চা ছেলে না মেয়ে, সুশ্রী না কুশ্রী, সম্পূর্ণ না অসম্পূর্ণ, জীবিত না মৃত। উপরিউক্ত গুণাবলির পার্থক্যের দ্বারা মূল্যের তারতম্য হয়ে থাকে। মালিক (রহঃ) বলেন, এক ব্যক্তি দাসী অথবা দাসকে বিক্রয় করল একশত দীনারে নির্ধারিত সময়ে আদায় করার বিনিময়ে, অতঃপর বিক্রেতা লজ্জিত হল এবং ক্রেতাকে অনুরোধ করল দশ দীনার গ্রহণ করে, যা বিক্রেতা ক্রেতাকে দিবে নগদ অথবা নির্ধারিত সময়ে বিক্রিত বস্তু ফেরত দিতে। তার নিকট বিক্রেতা (গোলামের মূল্য বাবদ) যে একশত দীনার পাবে তা সে আর গ্রহণ করল না। মালিক (রাঃ) বলেন- এইরূপ করাতে কোন দোষ নেই। যদি ক্রেতা লজ্জিত হয় এবং সে দাস-দাসীকে ফেরত নেওয়ার জন্য বিক্রেতার নিকট অনুরোধ করে এবং যেই নির্ধারিত সময়ে সে মূল্য পরিশোধ করিবে বলিয়া ধার্য করিয়া গোলাম বা বাঁদী ক্রয় করেছিল সে সময়ের অধিক সময়ে পরিশোধ করবে বলে সময় নির্ধারিত করে অথবা নগদ দশ দীনার বিক্রেতাকে বর্ধিত করে দেয়; তবে তা বৈধ নয়। এটা এজন্য মাকরূহ্ যে, বিক্রেতা যেন ক্রেতার নিকট এক বৎসর মেয়াদে একশত দীনার বিক্রয় করল ক্রীতদাসী ফেরত লওয়ার পূর্বে এবং দশ দীনার নগদ অথবা বাকী এক বৎসর হতে দূরবর্তী মেয়াদে লাভ করবে এই শর্তে। এইভাবে ইহা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ [নির্ধারিত সময়ে আদায় করার বিনিময়ে] ধারে বিক্রয় করার মতো হল। [যা বৈধ নয়, কাজেই এটাও বৈধ হবে না।] মালিক (রহঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদে একশত দীনার আদায়ের বিনিময়ে অন্য ব্যক্তির নিকট নিজ ক্রীতদাসী বিক্রয় করল, অতঃপর যে মেয়াদে বিক্রয় করেছিল তার চাইতে দূরবর্তী মেয়াদে এবং উহার নিকট যে মূল্যে বিক্রয় করেছিল সেই মূল্য হতে অধিক মূল্যে সেই ক্রীতদাসীকে উহা হতে খরিদ করল। এটা বৈধ নয়, এটা মাকরূহ্ হওয়ার ব্যাখ্যা হচ্ছে এই, এক ব্যক্তি নিজের দাসীকে বিক্রয় করল নির্দিষ্ট মেয়াদে [অর্থ আদায় করবে বলে ধার্য্য করে] অতঃপর উহাকে এই মেয়াদ হতে লম্বা মেয়াদে খরিদ করল। বিক্রয় করেছিল এক মাস মেয়াদে ত্রিশ দীনারের বিনিময়ে, অতঃপর ক্রয় করল এক বৎসর মেয়াদে অথবা অর্ধ বৎসর মেয়াদে ষাট দীনার মূল্যে। এটা এইরূপ হল যেন তার পণ্যদ্রব্য অবিকল তার দিকে প্রত্যাবর্তন করল এবং সে (ক্রেতা) বিক্রেতাকে দিল ত্রিশ দীনার এক মাসের মেয়াদে। অতঃপর ষাট দীনারের বিনিময়ে ক্রেতা উহাকে পুনরায় গ্রহণ করল এক বৎসরে অথবা অর্ধ বৎসর মেয়াদে। এটা বৈধ নয়।
দাসের মাল প্রসঙ্গে যখন উহাকে বিক্রয় করা হয়
‘আবদুল্লাহ্ ইবন ‘উমার (রাঃ) ‘উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দাসকে বিক্রয় করেছে, আর দাসের রয়েছে সম্পদ, তবে তার সম্পদ বিক্রেতার জন্য হবে। কিন্তু যদি ক্রেতা উহা শর্ত করে থাকে [তবে স্বতন্ত্র কথা-মাল ক্রেতা পাবে।] (বুখারী ২৩৭৯, মুসলিম ১৫৪৩) মালিক (রহঃ) বলেন, আমাদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই, ক্রেতা যদি গোলামের মালের (নিজের জন্য) শর্ত করে থাকে তবে মাল তার হবে, মাল নগদ অর্থ হোক বা ঋণ হোক কিংবা সামগ্রী হোক, জ্ঞাত হোক বা অজ্ঞাত, যদি তাকে যে মূল্যে খরিদ করেছে উহার চাইতে বেশি মালও হয়, তার মূল্য নগদ আদায় করা হোক বা ধারে বিক্রয় অথবা আসবাবপত্রের বিনিময়ে। [সর্বাবস্থায় একই প্রকার হুকুম অর্থাৎ শর্ত করলে মাল ক্রেতা পাবে]। এটা এজন্য যে, দাসের মালের জন্য কর্তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয় না। আর যদি গোলামের কোন ক্রীতদাসী থাকে যার সাথে সঙ্গম করেছে, উহার মালিক হওয়ার দরুন। আর যদি দাস কর্তৃক কোন গোলাম আযাদ করা হয়ে থাকে অথবা কোন গোলামকে মুকাতব করা হয়ে থাকে তবে উহার মাল তার জন্য থাকবে। আর যদি গোলাম কাঙ্গাল গরীব হয়ে যায় তবে ঋণদাতাগণ তার মাল কব্জা করবে, তার ঋণের জন্য কর্তাকে দায়ী করবে না।
বিক্রিত গোলাম ফেরত দেওয়ার সময়সীমা
আবান ইবন উসমান (রাঃ) আবান ইবন উসমান (রাঃ) ও হিশাম ইবন ইসমাঈল (রহঃ) তাঁরা উভয়ে খুতবাতে উল্লেখ করতেন দাস বা দাসীকে ক্রয় করার সময় হতে তিন দিনের দায়িত্বের কথা। তাঁরা স্মরণ করিয়ে দিতেন এক বৎসরের দায়িত্বের কথা। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেন, দাস বা দাসীকে ক্রয় করার সময় হতে তিন দিনের ভিতরে দাস বা দাসীর মধ্যে কোন দোষ পাওয়া গেলে উহা বিক্রেতার দায়িত্বের মধ্যে গণ্য হবে। আর এক বৎসর কালের দায়িত্ব (যেমন) উন্মাদনা, কুষ্ঠরোগ, ধবলকুষ্ঠ, [ইত্যাদি জটিল রোগ]-এর ব্যাপারে এক বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেলে বিক্রেতা সম্পূর্ণ দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। মালিক (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন দাস বা দাসীকে বিক্রয় করল, বিক্রেতা উত্তরাধিকারী হোক বা অন্য কেউ। বিক্রয়ের সময় দাস-দাসীর দোষের ব্যাপারে দায়িত্বমুক্ত হওয়ার কথা বিক্রেতা কর্তৃক উল্লেখ করলে তবে বিক্রেতা দাস-দাসীর যাবতীয় দোষের কথা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও গোপন করে তবে বিক্রয়ের সময় দায়িত্বমুক্ত হওয়ার শর্ত করলেও এই শর্ত তার উপকারে আসবে না। এই বিক্রয় বাতিল হয়ে যাবে। আর আমাদের নিকট একমাত্র দাস-দাসীর মধ্যেই বিক্রেতার দায়িত্ব থাকবে।
ক্রীতদাসের খুঁত
বর্ণণাকারী আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) তাঁর এক দাস বিক্রয় করলেন বারাআত [১] -এর শর্তে আটশত দিরহাম মূল্যে। অতঃপর ক্রেতা বললেন, আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-এর গোলামের মধ্যে একটি রোগ রয়েছে, আপনি আমার নিকট উহা চিহ্নিত করেননি। তারপর তারা উভয়ের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হলেন উসমান ইবন আফফান (রাঃ)-এর নিকট। ক্রেতা ব্যক্তি বললেন- তিনি আমার নিকট গোলাম বিক্রয় করলেন অথচ তার রয়েছে একটি রোগ যার কথা তিনি আমার নিকট বলেননি। আবদুল্লাহ্ বললেনঃ আমি গোলাম বিক্রয় করেছি বারাআত (দায়িত্বমুক্ত থাকা)-এর শর্তে। উসমান (রাঃ) ফয়সালা দিলেন, আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) শপথ করে বলবে- ক্রেতার নিকট তিনি যে গোলাম বিক্রয় করেছেন তার মধ্যে কোন রোগ আছে বলে তিনি জানতেন না। আবদুল্লাহ্ (রাঃ) এইরূপ শপথ করতে অস্বীকৃতি জানালেন এবং গোলাম তিনি ফেরত গ্রহণ করলেন। অতঃপর উক্ত গোলাম সুস্থ হয়ে গেল। তারপর আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তাকে দেড় হাজার দিরহাম মূল্যে বিক্রয় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত ফয়সালা হল এই, যে ব্যক্তি কোন দাসী ক্রয় করল এবং তার দ্বারা উহা অন্তঃসত্ত্বা হল, অথবা দাস ক্রয় করে উহাকে আযাদ করল এবং এই জাতীয় যে কোন প্রকার ক্ষমতা পরিচালনা [২] বা কার্য সম্পাদন করে যাতে সেই দাসী বা দাসকে আর ফেরত দেওয়া চলে না। অতঃপর (এই মর্মে) প্রমাণ উপস্থিত হয়েছে যে, বিক্রেতার কাছে থাকা কালে উহার মধ্যে খুঁত ছিল অথবা খুঁত প্রকাশিত হয়েছে বিক্রেতার স্বীকারোক্তির দ্বারা কিংবা অন্য কোন উপায়ে, [এইরূপ হয়ে থাকলে] তবে খুঁতসহ বিক্রয়ের দিন সেই দাস অথবা দাসীর কত মূল্য হতে পারে তা নির্ণয় করা হবে, তারপর ত্রুটি মুক্তাবস্থায় উহার যা মূল্য হবে এবং খুঁত অবস্থায় যা উহার মূল্য হতে পারে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধানিক মূল্যের অর্থটি ক্রেতাকে ফেরত দিবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে সর্বসম্মত ফয়সালা এই, সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে যে ব্যক্তি কোন ক্রীতদাস ক্রয় করেছে। অতঃপর উহা হতে এমন কোন খুঁত প্রকাশ পেয়েছে, [যে খুঁত প্রকাশ পাওয়ার দরুন] যাতে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ক্রেতার নিকট (থাকাবস্থায়) অন্য নতুন খুঁত সৃষ্টি হয়েছে। যদি নব্যসৃষ্ট খুঁত যা ক্রেতার নিকট পয়দা হয়েছে উহা নষ্টকারী হয় যেমন (কোন অংশ) কর্তন করা কিংবা কানা হওয়া অথবা এই জাতীয় নষ্টকারক খুঁতসমূহ হতে অন্য কোন খুঁত। তবে দুই বিষয়ের যে কোন উত্তম বিষয়কে গ্রহণ করার ইখতিয়ার ক্রেতার থাকবে। যদি দাসের ক্রটিসহ যে দিন উহাকে ক্রয় করেছে সেই দিন যা মূল্য হতে পারে [এবং নিখুঁতঅবস্থায় উহার মূল্য হয় উভয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধানিক মূল্য] তা হতে বাদ দেওয়াকে তিনি পছন্দ করেন তবে (যেই পরিমাণ) অর্থ উহা হতে বাদ দেয়া হবে অথবা সে যদি পছন্দ করে তবে ক্রীতদাসের যেই পরিমাণ ক্ষতি তার কাছে থাকতে হয়েছে উহার খেসারত প্রদান করবে, অতঃপর গোলাম ফেরত দেয়া হবে (তিনি ইচ্ছা করলে এরূপ করা যাবে)। আর যদি ক্রীতদাস ক্রেতার নিকট মারা যায় তবে খুঁতসহ যেই দিন উহাকে বিক্রয় করা হয়েছিল সেই দিন উহার মূল্য কত ছিল তা নির্ণয় করা হবে, যদি ক্রয়ের দিন দোষ মুক্তাবস্থায় উহার মূল্য একশত দীনার থাকে, আর দোষসহ উহার মূল্য ক্রয়ের দিন আশি দীনার হয়, তবে ক্রেতার উপর হতে উভয় মূল্যের মধ্যে ব্যবধানিক মূল্য বাদ দেয়া হবে। মূল্য ধার্য করা হবে ক্রয়ের দিনেরই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাসীকে উহাতে খুঁত পাওয়ার কারণে ফেরত দেয় (অথচ) সে উহার সাথে সহবাস করেছে। তবে দাসী যদি কুমারী হয় তবে (সহবাস করাতে) যতটুকু উহার মূল্য হতে কমেছে ততটুকু মূল্য তাকে আদায় করতে হবে আর যদি দাসী কুমারী না হয়, তবে উহার সাথে সঙ্গম করাতে ক্রেতাকে কিছু দিতে হবে না, কারণ সে উহার জামিনস্বরূপ ছিল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট ইহা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, যে ব্যক্তি কোন দাস বা দাসীকে অথবা কোন প্রাণীকে বিক্রয় করেছে বারাআতের শর্তে সে আহলে-মীরাস হোক বা আহলে-মীরাস ব্যতীত অন্য কেহ হোক, তবে সে বিক্রীত বস্তুতে যেকোন প্রকার দোষ পাওয়া যায় উহার দায়-দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যদি কোন দোষ জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও গোপন করে থাকে তবে তার দায়িত্ব মুক্তির শর্ত করা কোন কাজে লাগবে না এবং তার বিক্রীত বস্তু তার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যেই দাসীকে দুইজন দাসীর বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়েছে, অতঃপর দাসীদ্বয়ের একজনের মধ্যে এমন দোষ পাওয়া গিয়েছে যা সহ মালিকের নিকট ফেরত দেওয়া চলে। তবে সেই দাসীর মূল্য নির্ণয় করা হবে যেই ক্রীতদাসীকে দুই দাসীর বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়েছিল। তারপর দেখতে হবে উহার মূল্য কত। অতঃপর দাসীদ্বয়ের মূল্য নির্ণয় করতে হবে যাদের একজনের মধ্যে দোষ পাওয়া গিয়েছে। উভয়ে সুস্থ ও নিখুঁত থাকলে কি মূল্য দাসীদ্বয়ের হতে পারে তা নির্ণয় করবে। অতঃপর যেই দাসীকে এতদুভয়ের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছিল উহার মূল্যকে উভয় দাসীর মধ্যে উহাদের মূল্য অনুযায়ী বন্টন করে দেবে, যেন দাসীদ্বয়ের প্রত্যেকের উপর স্ব স্ব হিসসা বর্তিত হয়। নিখুঁত ও উত্তমার অংশে উহার মূল্য এবং অপর ত্রুটিযুক্ত অংশে তার মূল্য বর্তিত হবে। তারপর লক্ষ্য করা হবে ত্রুটিযুক্ত দাসীর দিকে এবং যেই পরিমাণ মূল্য উহার অংশে নির্ধারিত হল তা বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাকে ফেরত দিতে হবে। যেই দিন ক্রেতা দাসীদ্বয়ের নিজ দখলে এনেছে উভয়ের সেই দিনের মূল্য নির্ণয় করবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দাস ক্রয় করল অতঃপর উহাকে ইজারাতে কাজে লাগাল, বড় ইজারাতে কিংবা [৩] কর মারফতে। তারপর সেই দাসে খুঁত পাওয়া গেল, যে খুঁতের কারণে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া যায়। (এইরূপ অবস্থা হলে) তবে সেই দাসকে খুঁতসহ ফেরত দিবে, ইজারা (লব্ধ অর্থ) ও কর [মারফত আদায়কৃত বস্তু] তার [ক্রেতার] প্রাপ্য হবে। অনুরূপ মতই পোষণ করতেন আমাদের (পবিত্র) শহরের (মদীনার) উলামা সম্প্রদায়। ইহা এইজন্য যে, (যেমন) এক ব্যক্তি একটি দাস খরিদ করল। সে দাস তার (ক্রেতার) উদ্দেশ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করল। যে গৃহের নির্মাণ খরচ গোলামের মূল্য অপেক্ষা কয়েক গুণ বেশি হবে, অতঃপর সেই দাসের কোন দোষ পাওয়া গেল যে দোষের কারণে উহাকে বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া চলে। (এইরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে) তবে উহাকে (বিক্রেতার নিকট) ফেরত দিবে এবং গোলামের শ্রমের কারণে ক্রেতার উপর কোন মজুরী হিসাব করা হবে না। অনুরূপ দাসের ইজারালব্ধ অর্থ ক্রেতা পাবে যদি অন্যের নিকট উহাকে ইজারা দিয়ে থাকে কারণ ক্রেতাই উহার জামিন। মালিক (রহঃ) বলেন, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই, এক ব্যক্তি এক দফাতে একসঙ্গে কয়েক জন দাসকে বিক্রয় করেছে। অতঃপর সেইসব দাসের মধ্যে একজন পাওয়া গিয়েছে চোরাইকৃত দাস কিংবা উহাদের এক জনের মধ্যে খুঁত পাওয়া গিয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেন, এমতাবস্থায় দেখতে হবে- চোরাইকৃত দাস কিংবা যার মধ্যে খুঁত পাওয়া গিয়েছে সেই দাস যদি বিক্রীত দাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয় অথবা অধিক মূল্যের হয় এবং ক্রেতা উহার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সবাইকে ক্রয় করেছে, উহাতে রয়েছে শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণ, সাধারণ লোকের ধারণায়। তবে এইরূপ বিক্রয় সম্পূর্ণ রদ করে দেয়া হবে। মালিক (রহঃ) বলেন, চোরাইকৃত গোলাম কিংবা যার মধ্যে দোষ পাওয়া গিয়েছে মামুলী ধরনের [বড় রকমের দোষ নয়], আর দাসদের মধ্যে সেই গোলাম অতি শ্রেষ্ঠও নয় এবং উহার উদ্দেশ্যে সবাইকে ক্রয়ও করা হয়নি। আর লোক-দৃষ্টিতে উহার বিশেষ কোন গুণও নাই। তবে ত্রুটিযুক্ত কিংবা চোরাইকৃত সেই ক্রীতদাসকেই বিক্রেতার নিকট ফেরত দেওয়া হবে; ক্রীতদাসদেরকে যেই মূল্যে খরিদ করা হয়েছে, হারাহারিভাবে এই দাসের যা মূল্য হবে সেই মূল্য অনুপাতে (অর্থ বাদ দিয়ে)।
ক্রীতদাসীকে বিক্রয় করা হলে এবং তাতে শর্তারোপ করলে কি করা হবে
ইবন শিহাব (রহঃ) উবায়দুল্লাহ্ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন উতবা ইবন মাসঊদ (রাঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ (রাঃ) তদীয় স্ত্রী যায়নাব সাকাফিয়ার নিকট হতে একটি দাসী ক্রয় করলেন এবং সে (যয়নাব) তার উপর শর্তারোপ করেছে যে, যদি তিনি উহাকে বিক্রয় করেন, তবে যে মূল্যে বিক্রয় করা হবে সেই মূল্যে উহা তার (যয়নাবের) প্রাপ্য হবে। আবদুল্লাহ্ ইবন মাসঊদ (রাঃ) এই বিষয়ে উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন। তিনি (উত্তরে) বললেন- তুমি উহার কাছে যেও না [অর্থাৎ তার সাথে সঙ্গম করো না] যাতে কারো পক্ষে শর্তারোপ করা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) বলতেন, যেই দাসীকে ইচ্ছা করলে বিক্রয় করতে পারে কিংবা ইচ্ছা করলে দান করা যায় অথবা ইচ্ছা হলে নিজের কাছে রাখা যায় এবং উহার সাথে যা ইচ্ছা তা করা যায় সেইরূপ দাসী ব্যতীত অন্য কোন দাসীর সাথে কোন ব্যক্তি সঙ্গম করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন দাসীকে এই শর্তে ক্রয় করেছে যে, তাকে বিক্রয় করবে না এবং উহাকে দান করবে না কিংবা একই রকম অন্য কোন শর্তে, তবে সেই ক্রেতার জন্য উহার সাথে সঙ্গম করা জায়েয হবে না। কারণ তার জন্য উহাকে বিক্রয় করা এবং দান করা জায়েয নয়। যখন সে ইহা [বিক্রয় ও দান]-এর মালিক নয় তবে সে উহার পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেনি। কেননা (শর্তারোপ করে) ক্রেতার নিকট হতে উহার কর্তৃত্বকে বাদ দেয়া হয়েছে, যে কর্তৃত্ব রয়েছে অন্যের হাতে। যখন (ক্ষমতা খর্ব করার) এই শর্তারোপ করা হল তবে ইহার বিক্রয় জায়েয হবে না। এই ধরনের বিক্রয় মাকরূহ হবে।
যে ক্রীতদাসীর স্বামী রয়েছে সে ক্রীতদাসীর সাথে অন্য লোকের সঙ্গম নিষিদ্ধ হওয়া
ইবন শিহাব (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন আমির (রাঃ) একটি দাসী হাদিয়া স্বরূপ উসমান ইবন আফফান (রাঃ)-এর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করলেন; সেই দাসীর স্বামী (বর্তমান) ছিল, তিনি উহাকে বসরাতে ক্রয় করেছিলেন। উসমান (রাঃ) বললেনঃ উহার স্বামী উহাকে ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি এর কাছে [সঙ্গম উদ্দেশ্যে] গমন করব না। অতঃপর ইবন আমির তার স্বামীকে সম্মত করালেন, তার স্বামী তাকে ত্যাগ করল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) জনৈক ক্রীতদাসীকে খরিদ করলেন, পরে জানা গেল যে, তার স্বামী রয়েছে। তাই তিনি উহাকে ফেরত দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
খেজুর বৃক্ষের ফল, যার মূল্য বিক্রয় করা হয়েছে
আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তা’বীর [১] করা খেজুরের গাছ বিক্রয় করেছে, উহার ফল বিক্রেতা পাইবে, কিন্তু ক্রেতা যদি শর্ত করে থাকে (তবে ফল ক্রেতার জন্য হবে)। (বুখারী ২২০৩, ২২০৪, মুসলিম ১৫৪৩)
পরিপুষ্ট হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় নিষিদ্ধ
ইবন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিক্রেতা, ক্রেতা উভয়কে পরিপুষ্ট হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ২১৯৪, মুসলিম ১৫৩৪) আনাস ইবন মালিক (রাঃ) রঙীন হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। সাহাবীগণ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! রঙীন হওয়ার অর্থ কি? (রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, লাল কিংবা হলুদ রং-এর হওয়া। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লক্ষ্য করুন। যদি আল্লাহ্ (গাছে) ফল পয়দা না করেন, তবে তোমাদের কেউ আপন ভাইয়ের মাল কিসের বিনিময়ে গ্রহণ করবে? (বুখারী ২১৯৮, মুসলিম ১৫৫৫) ‘আমরাহ্ বিনত আবদির রহমান (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদমুক্ত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেছেন, বিপদমুক্তির পূর্বে ফল বিক্রয় করা ধোঁকার বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনু আবদুল বার হাদীসটিকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন) যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) তিনি সপ্তর্ষীমণ্ডলস্থ নক্ষত্র (সুরাইয়া) উদিত হওয়ার পূর্বে ফল বিক্রয় করতেন না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেন, তরবুজ, ক্ষিরাই, খরবুজ এবং গাজর বিক্রয়ের বিষয়ে আমাদের নিকট মাসআলা এইঃ পরিপুষ্ট হওয়ার পর এই সবের বিক্রয় হালাল ও বৈধ, তারপর যাহা উৎপাদিত হইবে [উৎপাদনকাল হইতে ফসল তোলা] শেষ হওয়া পর্যন্ত উহা ক্রেতার জন্য হইবে। ইহার জন্য কোন নির্ধারিত সময় নাই। কারণ উহার সময় লোকের নিকট পরিচিত। (তাহারা জানেন) কোন সময় এই সবের মধ্যে আপদ প্রবেশ করে। তাই সেই সময়ের পূর্বে উহার ফল কাটিয়া ফেলা হয়। যদি দুর্যোগের কারণে এইসবের মধ্যে কোন আপদ উপস্থিত হয় যাহার পরিমাণ পৌঁছে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কিংবা উহার অধিক তবে বিক্রেতার নিকট হইতে সেই পরিমাণ কমান হইবে [তারপর উহা ক্রেতাকে দেওয়া হইবে]।
আরিয়্যা [১] বিক্রয়
[১] বাগানের মালিক কয়েকটি খেজুর বা অন্য ফলের বৃক্ষ কাউকেও দান করলেন। দানগ্রহীতা গাছ দেখাশোনার জন্য বাগানে যাতায়াত করে থাকেন, এতে বাগানের মালিকের অসুবিধা হলে তিনি শুষ্ক ফলের বিনিময়ে দানগ্রহীতা হতে সেই বৃক্ষগুলোর ফল নিজের কর্তৃত্বে এনে পূর্ণ বাগানের কর্তৃত্ব নিজে গ্রহণ করেন। একে আরিয়্যাঃ এর বিক্রয় বলা হয়। যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরিয়্যা করেছেন এমন ব্যক্তির জন্য উহাকে অনুমান করে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী ২১৮৮, মুসলিম ১৫৩৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরিয়্যা স্বরূপ দেয়া হয়েছে এরূপ বৃক্ষের খেজুর অনুমান করে বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন পাঁচ ওয়াসকের [১] কম কিংবা (পূর্ণ) পাঁচ ওয়াসকের মধ্যে। দাউদ (রাবী) সন্দেহ প্রকাশ করেছেন; (তাঁর শায়খ আবূ সূফিয়ান) পাঁচ ওয়াসক বলেছেন না পাঁচ ওয়াসকের কম বলেছেন। (বুখারী ২১৯০, মুসলিম ২৫৪৯) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আরিয়্যা পন্থায় প্রদত্ত বৃক্ষসমূহের ফল খেজুরের বিনিময়ে আন্দাজ করে বিক্রয় করা যায়। চিন্তা-ভাবনা করে উহার পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে এবং গাছে থাকতে উহার আন্দাজ করা হবে। উহার জন্য ওজন করার প্রয়োজন নাই। এইরূপ করার অনুমতি এই জন্য দেয়া হয়েছে যে, ইহা খরিদ দামে বিক্রয়, খরিদ বাতিলকরণ এবং খরিদকৃত বস্তুতে অন্যকে শরীক নেওয়ার মতো। এটা যদি অন্যান্য বিক্রয়ের মতো হতো তবে খাদ্যদ্রব্যে অধিকার প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে কাউকেও শরীক করা জায়েয হত না এবং অধিকার প্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে খরিদ বাতিলকরণও জায়েয হত না এবং অধিকারে আসার পূর্বে খরিদমূল্যে ক্রয় করাও জায়েয হত না।
শস্য ও ফলাদির বিক্রয়ে বিপদাপদ উপস্থিত হওয়ার বিধান
মুহাম্মদ ইবন আবদির রহমান (রহঃ) মুহাম্মদ ইবন আবদির রহমান (রহঃ) তাঁর মাতা আ’মরা বিন্ত ‘আবদির রহমান (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে এক ব্যক্তি এক বাগানের ফল ক্রয় করলেন, তিনি তাতে মেহনত করলেন এবং বাগানের সংস্কার সাধনে ব্রতী হলেন। (এতে) তার লোকসান প্রকাশ পেল, তারপর তিনি বাগান মালিকের নিকট বাগানের দাম কমাবার অথবা বিক্রয় বাতিল করবার আবেদন জানালেন। কিন্তু বাগানের মালিক এইরূপ না-করার শপথ করলেন। তারপর ক্রেতার মাতা উপস্থিত হলেন রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে। অতঃপর তিনি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করলেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, সে পুণ্য কাজ না করার কসম খেয়েছে কি? বাগানের মালিক এটা শুনলেন, তারপর তিনি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাজির হয়ে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! [ক্রেতা যা চেয়েছেন] তাঁর জন্য এটা। (বুখারী ২৭০৫, অনুরূপ ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ১৫৫৭) মালিক (রহঃ) বলেনঃ উমার ইবন আবদিল আযীয (রহঃ) দুর্যোগ ঘটলে মূল্য লাঘব করার ফয়সালা দিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছেও মাসআলা অনুরূপ। মালিক (রহঃ) বলেনঃ দুর্যোগঘটিত কারণে, এক-তৃতীয়াংশ কিংবা ততোধিক ফসলের লোকসান হলেই, তবে ক্রেতা এতে মূল্য লাঘব করা হয়। এর কম হলে লোকসান হয়েছে বলে গণ্য করা হয় না।
কিছু ফল বা ফল-বৃক্ষের কিছু শাখা বিক্রয় হতে বাদ দিয়ে দেওয়া জায়েয হওয়া
বর্ণণাকারী কাসিম ইবন মুহাম্মাদ (রহঃ) তাঁর বাগানের ফল বিক্রয় করতেন এবং উহা হতে কিছু বৃক্ষ শাখা বাদ রেখে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবন আবি বাকর (রহঃ) তাঁর দাদা মুহাম্মাদ ইবন আমার হাযম (রহঃ) আফবাক নামক তার এক বাগানের ফল চার হাজার দিরহাম মূল্যে বিক্রয় করলেন এবং উহা হতে আট শত দিরহাম মূল্যের ফলের কিছু শাখা রেখে দিলেন [নিজের জন্য] । (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মুহাম্মাদ ইবন আবদির রহমান ইবন হারেছা (রহঃ) , তাঁর মাতা আ’মরা বিনত আবদির রহমান (রহঃ) তাঁর মালিকানার ফল বিক্রয় করতেন এবং উহা হতে ফলের কিছু শাখা নিজের জন্য রেখে দিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাসআলা এই যে, কোন ব্যক্তি বাগানের ফল বিক্রয় করবে তবে সেই বাগানের ফল হতে তৃতীয়াংশ পরিমাণ (নিজের জন্য) রাখা তার জন্য জায়েয আছে। উহার সীমা ছাড়িয়ে না যাওয়া চাই, এক-তৃতীয়াংশের কম হলে তাতে ক্ষতি নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি তার বাগানের ফল বিক্রয় করল এবং উহা হতে নিজের পছন্দসই এক বা একাধিক গাছের ফল অবিক্রিত রাখল, উহার সংখ্যাও উল্লেখ করল। আমি এইরূপ করাতে কোন দোষ মনে করি না। বাগানের মালিক নিজ বাগান হতে কিছু সংখ্যক বৃক্ষের ফল নিজের জন্য রাখল। আর এটা হচ্ছে এমন যেন কেউ নিজ বাগানের কিছু বৃক্ষ নিজের জন্য নির্ধারিত রাখল, উহাকে বিক্রয় না করে অবশিষ্ট বৃক্ষ বিক্রয় করে দিল।
খেজুর বিক্রির ক্ষেত্রে যা অপছন্দ করা হয়
আতা ইবন ইয়াসার (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, খেজুরের বিনিময়ে খেজুর [বিক্রয় করলে] সমান সমান (হতে হবে) । তাঁর নিকট আরজ করা হল, খায়বরে নিযুক্ত আপনার আমিল [কার্য সম্পাদক বা কালেকটর] দুই সা’-এর বিনিময়ে এক সা’ গ্রহণ করে থাকেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এটা শুনে) বললেন, তাকে আমার কাছে ডেকে আন। তাঁরা ডেকে আনলেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি দুই সা’-এর বিনিময়ে এক সা’ গ্রহণ কর! উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! উহারা নিকৃষ্ট খেজুরের বিনিময়ে বিশুদ্ধ খেজুর আমার নিকট এক সা’র বিনিময়ে এক সা’ বিক্রয় করে না। (ইমাম বুখারী অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ২২০১, মুসলিম ৪১৬৬, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা শুনে বললেন, অপ্রকৃষ্ট বা মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় কর, অতঃপর দিরহামের বিনিময়ে বিশুদ্ধ খেজুর ক্রয় করে নাও। আবূ সায়ীদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে খায়বরে আ’মিল [কার্য সম্পাদক বা প্রশাসক] নিযুক্ত করলেন। তিনি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে বিশুদ্ধ খেজুর উপস্থিত করলেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খায়বরের সকল খেজুর এইরূপ হয় কি? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আল্লাহর কসম, সকল খেজুর এইরূপ নয় । আমরা এই খেজুরের এক সা’ দুই সা’-এর বিনিময়ে এবং দুই সা’ তিন সা’-এর বিনিময়ে গ্রহণ করি। (এটা শুনে) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইরূপ করো না; অপ্রকৃষ্ট খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করে দাও, অতঃপর দিরহাম দ্বারা উৎকৃষ্ট খেজুর ক্রয় করে নাও। (বুখারী ২২০২, মুসলিম ১৫৯৩) বর্ণণাকারী যায়দ আবূ’ আয়্যাশ (রহঃ) সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন বেশি পেষা হয় নাই এমন যব (مسلت) [১] -এর বিনিময়ে সাদা বর্ণের যব বিক্রয় করা প্রসঙ্গে। সা’দ তার নিকট হতে জানতে চাইলেন, উভয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম? তিনি বললেন, সাদা যব উত্তম, সা’দ তাকে এইরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন, খুর্মার বিনিময়ে খেজুর বিক্রয় সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন, খুর্মা শুকালে কমে কি না? তারা বললেন, হ্যাঁ (কমে)। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন এইরূপ করতে বারণ করলেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৩৩৫৯, তিরমিযী ১২২৫, নাসাঈ ৪৫৪৫, ইবনু মাজাহ ২২৬৪, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [ইরওয়া] ১৩৫২)
মুযাবানা [১] এবং মুহাকালা [২]
[১] কারো মতে, খোসাবিহীন এক প্রকার যব যা হিজাযে উৎপন্ন হয়।মুযাবানা হচ্ছে সুপক্ব খুর্মার বিনিময়ে তাজা খেজুরকে আন্দাজ করে ক্রয় করা। [২] মুহাকালা হচ্ছে শুষ্ক শস্যের বিনিময়ে ক্ষেতের তাজা শস্য ক্রয় করা। আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন মুযাবানা এবং মুহাকালা হতে। মুযাবানা হচ্ছে তাজা খেজুর (যা বৃক্ষে ঝুলন্ত রয়েছে)-কে অনুমান করে সুপক্ব খেজুরের বিনিময়ে বিক্রয় করা। এবং তাজা আঙ্গুর ফলকে [লতাতে ঝুলন্তাবস্থায়] আন্দাজ করে শুষ্ক আঙ্গুর-এর বিনিময়ে বিক্রয় করা। (বুখারী ২১৭১, মুসলিম ১৫৪২) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন মুযাবানা এবং মুহাকালা হতে। মুযাবানা হচ্ছে সুপক্ব খুর্মার বিনিময়ে তাজা খেজুরকে আন্দাজ করে ক্রয় করা যা বৃক্ষচূড়ায় (ঝুলন্ত) রয়েছে। আর মুহাকালা হচ্ছে গমের বিনিময়ে ভূমি ভাড়াতে (ভাড়া) দেওয়া। (বুখারী ২১৮৬, মুসলিম ১৫৪৬) সায়ীদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানা ও মুহাকালা হতে নিষেধ করেছেন। মুযাবানা হচ্ছে সুপক্ব খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর ক্রয় করা। আর মুহাকালা হচ্ছে গমের বিনিময়ে ক্ষেত ক্রয় করা। এবং গমের বিনিময়ে শস্যক্ষেত্র ভাড়া (ভাগ) নেয়া। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবন শিহাব (রহঃ) বলেনঃ আমি সায়ীদ ইবন মুসায়্যাবের নিকট প্রশ্ন করলাম স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে ভূমি ভাড়া (ভাগ) গ্রহণ করা সম্পর্কে। তিনি (উত্তরে) বললেনঃ এতে কোন ক্ষতি নেই (অর্থাৎ জায়েয আছে)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানাকে নিষেধ করেছেন। আর মুযাবানার তাফসীর হচ্ছে এই যে, অনুমানের যে কোন বস্তু যার পরিমাণ, ওজন ও সংখ্যা অজ্ঞাত, উহাকে ক্রয় করা হয়েছে পরিমাণ, ওজন ও সংখ্যা দ্বারা সুনির্দিষ্ট বস্তুর বিনিময়ে। যেমন এক ব্যক্তির গাদা করা খাদ্যদ্রব্য রয়েছে; গম, খুরমা অথবা ইহার সদৃশ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য যেগুলোর পরিমাণ অজ্ঞাত কিংবা এক ব্যক্তির নিকট রয়েছে আসবাব-বৃক্ষপত্র ও ঘাস গুটলী [ফলের আঁটি] ডাল-পালা, কুমকুম, তুলা, কাতান বস্ত্র, কাঁচা রেশম, কিংবা এদের সদৃশ অন্য কোন সামগ্রী যেসবের কোন কিছুরই পরিমাণ, ওজন ও সংখ্যা জ্ঞাত নয়, (উপরিউক্ত) খাদ্যদ্রব্য কিংবা আসবাবের মালিককে এক ব্যক্তি বলল, আপনি কোন ব্যক্তিকে আপনার আসবাব পরিমাণ করার নির্দেশ দিন। কিংবা যা ওজন করার যোগ্য তাকে ওজন করুন, অথবা যা গণনা করার উপযোগী তাকে গণনা করুন। এত এত সা’ হতে [১] যা নির্ধারিত করা হয় উহা হতে যা কম হবে, কিংবা এত এত রতল [২] (অর্ধসের) ওজন হতে যা ঘটে যাবে অথবা এত এত [৩] সংখ্যা হতে যত কম হবে উহার ক্ষতিপূরণ আমি করব সেই পরিমাণ বা ওজন, কিংবা সংখ্যা যা নির্ধারিত হয়েছে তার। সেই পরিমাণ, ওজন কিংবা সংখ্যা পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ আমার দায়িত্ব থাকবে। আর নির্ধারিত পরিমাণ, ওজন কিংবা সংখ্যা হতে যা বাড়তি হবে তা হবে আমার প্রাপ্য। যে পরিমাণ কম হবে সে পরিমাণের ক্ষতিপূরণের আমি জিম্মাদার থাকব এই শর্তে যে, যা বাড়তি হবে তা পরিমাণ কম হবে সে পরিমাণ ক্ষতিপূরণের আমি জিম্মাদার থাকিব এই শর্তে যে, যাহা বাড়তি হবে তা আমার প্রাপ্য হবে। এটা কোন বিক্রয় নয়। বরং এতে রয়েছে ঝুঁকি ও প্রতারণা আর জুয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। মুযাবানার মতো এটাও নিষিদ্ধ। কারণ নিজ হতে কোন মূল্য প্রদান করে কোন বস্তু বিক্রেতা হতে ক্রয় করা হয়নি। কিন্তু সে আসবাবের মালিকের জন্য জামিন হয়েছে। যে পরিমাণ, ওজন এবং সংখ্যা সে নির্ধারণ করেছে তা হতে বাড়তি হলে উহা সে পাবে, আর নির্ধারিত পরিমাণ হতে সামান্য ঘাটতি হলে তবে ঘাটতি পূরণার্থে জামিনদারের মাল হতে ঘাটতি পরিমাণ মাল গ্রহণ করবে। অথচ ইহা মূল্যও নয় এমন দানও নয় যা হৃষ্টচিত্তে দান করা হয়েছে। তাই এটা জুয়া তুল্য, যেকোন (ক্রয়-বিক্রয় আদান-প্রদান) এইরূপ হবে, উহা জুয়ার মতো হবে (এবং মুযাবানার মতো নিষিদ্ধ হবে)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ মুযাবানার অন্তর্গত এটাও- যে ব্যক্তির নিকট কাপড় আছে তাকে আর এক ব্যক্তি বললঃ আপনার এই কাপড় হতে এত এত [ধরা যাক একশত কিংবা দুইশত] জামার বেষ্টনী ও টুপী তৈরীর দায়িত্ব নিচ্ছি। প্রতিটি বেষ্টনীর পরিমাণ এত এত হবে যা নির্দিষ্ট রূপে উল্লেখ করল। [৪] এই সংখ্যা হতে যা কম হবে তার জরিমানা আমার জিম্মায়। আমি উহা আপনাকে পূর্ণ করে দিব, আর যা বাড়তি হবে তা হবে আমার। কিংবা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, আপনার এই কাপড় হতে এত এত কামিজ তৈরির ব্যাপারে আমি জামিন আছি, প্রতিটি কামিজের আয়তন এত এত হবে, উহা হতে যতটুকু কমতি হবে উহার জরিমানা আমার উপর। আর যা বাড়তি হবে তা আমার প্রাপ্য হবে। কিংবা যার কাছে গরু অথবা উটের চামড়া রয়েছে তাকে কেউ বলল, আমি আপনার এইসব চামড়া হতে এই পরিমাণের যা দেখান হয়েছে জুতা তৈয়ার করব। একশত জোড়ার কম যা হবে তার ক্ষতিপূরণ আমি করব। এই ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব গ্রহণের বিনিময়ে যা বাড়তি হবে উহা আমার হবে। অনুরূপ এক ব্যক্তির নিকট রয়েছে হাব্বুল-বানা [এক প্রকারের গাছ যার পাতা নিম গাছের পাতার মত উহার ফলের বীজ দ্বারা তৈল প্রস্তুত করা হয়।] তাকে আর এক ব্যক্তি বলল, আপনার এই বীজ আমি নিঙরিয়ে [তৈল বের করে] দিব। এত এত রাতল [অর্ধসের ওজনের একটি পরিমাপ মাত্র] পরিমাণ হতে যা কমতি হবে উহার ক্ষতিপূরণ আমি আপনাকে আদায় করব। আর যা অতিরিক্ত হবে তা আমার প্রাপ্য হবে। এই সব (যা উল্লেখ হয়েছে) এবং উহার সদৃশ বস্তুসমূহ কিংবা যা এই সবের মতন হয় সব মুযাবানার অন্তর্ভুক্ত এবং তা অবৈধ। অনুরূপ এক ব্যক্তির নিকট রয়েছে ঘাস-পাতা, ফলের আঁটি, তুলা, কাতান বস্ত্র, ডাল পালা, কুমকুম ইত্যাদি। অন্য এক ব্যক্তি সেই ব্যক্তিকে বলল, আমি আপনার নিকট এই ঘাসপাতা এত এত সা’ অনুরূপ ঘাসের বিনিময়ে ক্রয় করলাম, কিংবা এই ফলের আঁটিগুলো এত এত সা’ অনুরূপ ফলের আঁটির বিনিময়ে ক্রয় করলাম। এইরূপভাবে কুমকুম, তুলা, কাতান এবং ডাল-পালার ব্যাপারেও বলা হল। এই সবই আমাদের (সাবেক) বর্ণিত মুযাবানার অন্তর্ভুক্ত হবে।
ফল বিক্রয় সম্পর্কীয় বিবিধ বর্ণনা
মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট খেজুর গাছের খেজুর খরিদ করেছে কিংবা নির্দিষ্ট বাগানের ফল খরিদ করেছে অথবা নির্দিষ্ট বকরীর দুধ ক্রয় করেছে, নগদ অর্থে গ্রহণ করা হলে এতে কোন নিষেধ নেই। ক্রেতা মূল্য যখন আদায় করবে তখন অধিকারেও আনবে। এর সদৃশ (বিষয়) এই, যেমন একটি তৈলপাত্র রয়েছে। উহা হতে এক ব্যক্তি এক দীনার কিংবা দুই দীনারের তৈল খরিদ করল এবং উহার মূল্য বিক্রেতাকে আদায় করল, তার উপর শর্তারোপ করল যে, এই তৈলপাত্র হতে ক্রেতাকে তৈল ওজন করে দেবে। এতে কোন নিষেধ নেই। তারপর যদি তৈলপাত্র ফেটে যায় এবং উহার তৈল নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে ক্রেতা শুধু মূল্য ফেরত পাবে। তাদের উভয়ের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হবে না। [১] মালিক (রহঃ) বলেনঃ যেকোন উপস্থিত দ্রব্য যাকে উহার রীতি অনুযায়ী ক্রয় করা হয়, যেমন-দুধ দোহন করার পর, খেজুর পরিপক্ব হওয়ার পর ক্রেতা দৈনিক উহা গ্রহণ করবে। এতে কোন ক্ষতি নেই। যদি বিক্রিত মাল পুরাপুরি কব্জা করার পূর্বে নিঃশেষ হয়ে যায়, তবে যেই পরিমাণ অবশিষ্ট রয়েছে হিসাব মতো উহার মূল্য বিক্রেতা ক্রেতাকে ফেরত দিবে, কিংবা উভয়ের সন্তুষ্টিতে অবশিষ্ট দ্রব্যের মূল্য বাবদ অন্য কোন বস্তু ক্রেতা গ্রহণ করবে এবং সেই বস্তু কব্জা না করে ক্রেতা পৃথক হবে না। পৃথক হলে মাকরূহ হবে, কারণ সে এক ঋণের মধ্যে অন্য এক ঋণ প্রবেশ করাল। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধারের বিনিময়ে ধার বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। উহাদের ক্রয়-বিক্রয়ে যদি সময় দেয়া থাকে তবে উহা মাকরূহ হবে। এতে কোন প্রকার বিলম্ব জায়েয হবে না এবং সময় দেয়া যাবে না। বিলম্বে বিক্রয়ে সময় এবং দ্রব্য নির্দিষ্ট হবে। বিক্রেতা সেই নির্দিষ্ট দ্রব্য ক্রেতাকে সোপর্দ করার জন্য দায়ী থাকবে। বিশেষ বাগান বা বিশেষ বকরী নির্দিষ্ট করা চলবে না। [২] মালিক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হল সেই ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তি কোন লোক হতে একটি বাগান ক্রয় করল যাতে রয়েছে বিভিন্ন জাতের খেজুর বৃক্ষ, ‘আজওয়াহ’ [৩], কবীস [৪] ‘আজক’ [৫] ইত্যাদি নানা রকমের খেজুরের গাছ। বিক্রেতা আপন বাগান হতে একটি কিংবা কয়েকটি খেজুর গাছ (নিজের জন্য) আলাদা করে রাখল। [এই কয়টি খেজুর বৃক্ষ নিজে রাখবে] মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা তার জন্য জায়েয হবে না। কারণ সে যদি এইরূপ করে তবে সে ‘আজওয়াহ’ খেজুর বৃক্ষ ছেড়ে দিল যার খেজুরের পরিমাণ হল পনের সা’ এবং উহার স্থলে কবীস গ্রহণ করল যার খেজুরের পরিমাণ হল দশ সা’ [৬]। আর যদি ‘আজওয়াহ্ গ্রহণ করল যার পরিমাণ পনের সা’ এবং যেই বৃক্ষে দশ সা’ কবীস রয়েছে উহা ছেড়ে দিল [ক্রেতার জন্য]। তবে সে যেন কবীসের বিনিময়ে ‘আজওয়াহ্ ক্রয় করল, এতে পরিমাণে বেশ-কম হয়ে গেল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর দৃষ্টান্ত এইরূপ, যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, যার সম্মুখে কয়েকটি খেজুরের স্তূপ রয়েছে; ‘আজওয়ার স্তূপ করেছে পনের সা’, আর কবীসের স্তূপ করেছে দশ সা’, ‘আজক-এর স্তূপ করেছে বার সা’-ক্রেতা খেজুরের মালিককে এক দীনার প্রদান করলেন এবং শর্ত করলেন যে, যেই স্তূপ তার ইচ্ছা সে পছন্দ করে নিবে। মালিক (রহঃ) বলেন, এটা জায়েয হবে না। [৭] মালিক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যে ব্যক্তি খেজুর ক্রয় করেছে বাগানের মালিকের নিকট হতে, অতঃপর উহাকে এক দীনার অগ্রিম দিল। যদি সেই বাগানের খেজুর নষ্ট হয়ে যায়, তবে ক্রেতা (তার দীনারের বিনিময়ে) কি পাবে? মালিক (রহঃ) উত্তরে বললেন- ক্রেতা বাগানের মালিকের সাথে হিসাব করবে, তারপর দীনার হতে যা প্রাপ্য থাকে তা বিক্রেতা হতে আদায় করবে। (দৃষ্টান্তস্বরূপ) ক্রেতা যদি (খেজুর নষ্ট হওয়ার পূর্বে) দীনারের দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ খেজুর আদায় করে থাকেন তবে (এখন নষ্ট হওয়ার পর) দীনারের অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ উশুল করবে। আর যদি দীনারের তিন-চতুর্থাংশ পরিমাণ খেজুর আদায় করে থাকে তবে অবশিষ্ট এক-চতুর্থাংশ [বিক্রেতা হতে] উশুল করবে। কিংবা তারা উভয়ে পরস্পরের সন্তুষ্টিতে (বিষয়) নিষ্পত্তি করে নিবে; ক্রেতা অবশিষ্ট দীনারের বিনিময়ে বাগানের মালিক হতে তার খুশীমত দ্রব্য গ্রহণ করবে; খেজুর পছন্দ হলে খেজুর গ্রহণ করবে অথবা খেজুর ব্যতীত অন্য কোন দ্রব্য অবশিষ্ট দীনারের বিনিময়ে উহা গ্রহণ করবে। ক্রেতা যদি খেজুর কিংবা অন্য দ্রব্য গ্রহণ করে তবে উহা পূর্ণ অধিকারে না আনা পর্যন্ত ক্রেতা বিক্রেতা হতে পৃথক হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা এইরূপ যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট ভারবাহী বা যাত্রীবাহী নির্দিষ্ট উট ভাড়াতে দিল অথবা নিজের দর্জি কিংবা ছুতার কিংবা শ্রমিক ক্রীতদাসকে ভিন্ন কাজের জন্য ভাড়ায় দিল। অথবা নিজের ঘর ভাড়ায় দিল এবং গোলাম ইজারাতে দেয়ার অর্থ কিংবা ঘরভাড়া কিংবা ভারবাহী বা যাত্রীবাহী সেই উটের ভাড়া অগ্রিম আদায় করল, তারপর এতে মৃত্যু বা অন্য কোন দুর্যোগ ঘটল। তবে উটের মালিক কিংবা গোলামের কর্তা অথবা বাড়ীর মালিক, উটের ভাড়া, কিংবা গোলামের ইজারা অথবা বাড়ি ভাড়ার অবশিষ্ট অর্থ অগ্রিমদাতাকে ফেরত দিবে। ভাড়াদাতা ভাড়া গ্রহীতার সাথে হিসাব করে দেখবে কি পরিমাণ সে গ্রহণ করেছে; যদি সে তার অর্ধেক হক গ্রহণ করিয়া থাকে তবে ভাড়াদাতা অবশিষ্ট অর্ধেক ভাড়া গ্রহীতাকে ফেরত দিবে। আর যদি অর্ধেক কিংবা বেশি হয় তবে সেই হিসাব মত যা অবশিষ্ট রয়েছে উহা ভাড়া গ্রহীতাকে ফেরত দিবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ উপরোল্লিখিত এই সবের কোনটিতে অগ্রিম দেয়া জায়েয নয়, নির্দিষ্ট কোন বস্তুতে অগ্রিম প্রদান করল (এটা জায়েয নয়) কিন্তু যে বস্তুর জন্য অগ্রিম দিচ্ছে অগ্রিম অর্থ দেয়ার সময় অগ্রিমদাতা যদি সেই বস্তু অধিকার করে থাকে; ক্রীতদাস, কিংবা ভারবাহী বা যাত্রীবাহী উট কিংবা বাড়ির দখল নেয় অথবা বিক্রেতার নিকট অর্থ দেয়ার সময় অগ্রিমদাতা যে খেজুর ক্রয় করেছে উহা অধিকার করে। এই সবের কোনটির ব্যাপারে বিলম্ব করা বা সময় দান করা জায়েয হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ (অগ্রিম প্রদানে) মাকরূহ, এর ব্যাখ্যা হল এই, একজন লোক অন্য একজনকে বলল, আপনার অমুক সাওয়ারীর উট বাবদ আমি আপনাকে (এত টাকা) অগ্রিম দিচ্ছি উদ্দেশ্য হচ্ছে হজ্জে যাওয়া। (তখন) হজ্জের সময় অনেক দূরে রয়েছে অথবা অনুরূপ বলল, ক্রীতদাস কিংবা ঘর সম্পর্কে। এইরূপ করলে সে ব্যক্তি যেন স্বর্ণ (অর্থ) অগ্রিম দিচ্ছে এই শর্তের উপর যদি সেই সওয়ারীর উট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিখুঁত থাকে তবে উহা অগ্রিমদাতার হবে সেই ভাড়াতে। আর যদি সেই সওয়ারীর মৃত্যু হয় বা অন্য কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তবে উহার মালিক অগ্রিমদাতার অর্থ ফেরত দিবে। এই অর্থ তার নিকট নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত ঋণস্বরূপ ছিল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ উপরিউক্ত অধিকার ও এই অধিকারের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান; তা হল ইজারায় গৃহীত বস্তু বা ভাড়াকৃত বস্তু (সাথে সাথে) কব্জা করে নেয়, এতে ধোঁকা হতে এবং অবৈধ ঋণ হতে নিরাপদে থাকা যায় এবং সে একটি নির্দিষ্ট বস্তু গ্রহণ করল। এর দৃষ্টান্ত এইরূপ- এক ব্যক্তি কোন ক্রীতদাস বা ক্রীতদাসী খরিদ করল এবং উভয়ে দখল নিল। (সাথে সাথে) উভয়ের মূল্য পরিশোধ করে দিল। (এর পর) যদি উভয়ের মধ্যে বার্ষিক জিম্মাদারী সংক্রান্ত কোন আপদ দেখা দেয়, তবে বিক্রেতা হতে অর্থ ফেরত নিবে। এতে কোন দোষ নেই। ক্রীতদাস বিক্রয়ের বিষয়ে এটাই প্রচলিত সুন্নাত (নিয়ম)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট ক্রীতদাস ইজারা নিয়েছে, অথবা কোন পশু ভাড়াতে গ্রহণ করেছে, কব্জার জন্য সময় নির্ধারিত করেছে, ইহা সে অবৈধ কার্য সম্পাদন করেছে, কারণ গ্রহীতা ইজারা নেওয়া ক্রীতদাস বা ভাড়া করা পশুকে দখলে আনেনি। আর সে এমন কোন ঋণও দেয়নি যে ঋণের জন্য ইজারা বা ভাড়াদাতা তাবৎ জামিন থাকে যাবত গ্রহীতা পূর্ণরূপে উহাকে অধিকারে না আনে।
ফল বিক্রয়
মালিক (রহঃ) এই বিষয়ে আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই, যে ব্যক্তি কোন ফল, তাজা হোক বা শুষ্ক হোক, ক্রয় করে, তবে উহাতে পূর্ণ কব্জা না করা পর্যন্ত উহা বিক্রয় করবে না। আর ফলের এক অংশকে অপর অংশের বিনিময়ে নগদ ছাড়া বিক্রয় করবে না। আর যেই ফলকে শুকানো হয়, শুকিয়ে শুষ্ক ফল হিসেবে সঞ্চয় করে রাখা হয় এবং খাওয়া হয়- সেই সব ফলের এক অংশকে অপর অংশের বিনিময়ে নগদ এবং সমপরিমাণ ছাড়া বিক্রয় করা যাবে না যদি একই জাতের হয়। তবে যদি পরস্পর ভিন্ন দুই জাতের ফল হয় তা হলে সেই ফলের একটির বিনিময়ে দুটি বিক্রয় করাতে নগদ হলে এতে কোন দোষ নেই। ধারে বিক্রয় করা জায়েয হবে না। আর যেই সব ফল শুকানো হয় না এবং সঞ্চয়ও করা হয় না বরং উহা তাজা খাওয়া হয়; যেমন তরমুজ, ক্ষিরাই, খরবুযা, লেবু, কলা, গাজর, আনার, আরও যা এই জাতীয় ফল আছে। এইসব ফল বেশি পাকলে (আহারযোগ্য) থাকে না এবং এইসব ফল শুষ্করূপে সঞ্চিতও রাখা হয় না। এই ফলের ব্যাপারে আমি এক জাতের হইলেও একের বিনিময়ে দুই গ্রহণ করা নগদ বৈধ বলে মনে করি, যদি ধারে না হয় তবে এতে কোন দোষ নেই।
রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রয় প্রসঙ্গ মুদ্রা হোক, ঢালাইবিহীন রৌপ্য বা স্বর্ণ হোক
ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় সা’দকে [১] গনীমতের স্বর্ণ কিংবা রৌপ্যের বাসন [২] বিক্রয় করার নির্দেশ দিলেন। তাঁরা উভয়ে তিনটি বাসন চার দীনারের বিনিময়ে অথবা [রাবী বলেছেন] প্রতি চারটি বাসন তিন দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করলেন। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমরা সুদের ব্যবসা করেছ। তাই তোমরা ইহা ফিরিয়ে দাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- দীনারের বিনিময়ে দীনার, দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম, এতদুভয়ের মধ্যে বাড়তি ক্রয়-বিক্রয় চলবে না। (সহীহ, মুসলিম ১৫৮৮) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্বর্ণকে স্বর্ণের বিনিময়ে সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না এবং স্বর্ণের এক অংশকে অন্য অংশের বিনিময়ে বাড়তি বিক্রয় করো না। (অনুরূপ) চাঁদির বিনিময়ে চাঁদি সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না এবং উহার এক অংশকে অপর অংশের বিনিময়ে বাড়তি বিক্রি করো না, আর উহা হতে নগদের বিনিময়ে বাকী বিক্রয় করো না। (বুখারী ২১৭৭, মুসলিম ১৫৮৪) মুজাহিদ (রহঃ) আমি (একবার) আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। একজন স্বর্ণকার তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল- হে আবূ আবদির রহমান! আমি স্বর্ণে কারুকার্যের কাজ করি, অতঃপর উহার ওজনের চাইতে অধিক ওজনে বিক্রয় করি; এতে আমি শ্রম অনুযায়ী বাড়তি গ্রহণ করতে পারি কি? আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) তাকে নিষেধ করলেন। স্বর্ণকার এই মাসআলা তাঁর কাছে বারবার পেশ করছিল আর আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তাকে নিষেধ করছিলেন। এইভাবে মসজিদের দ্বারপ্রান্তে কিংবা যে সওয়ারীতে আরোহণ করলেন উহার কাছে উপনীত হলেন। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) বললেন, দীনার দীনারের বিনিময়ে এবং দীরহাম দীরহামের বিনিময়ে, এতদুভয়ের মধ্যে বাড়তি (ক্রয়-বিক্রয়) বৈধ নয়। ইহা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীয়ত আমাদের প্রতি এবং আমাদের ওসীয়তও (ইহাই) তোমাদের প্রতি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উসমান ইবন আফফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা এক দীনারকে দুই দীনারের বিনিময়ে এবং এক দিরহামকে দুই দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করো না। (সহীহ, ইমাম মুসলিম অন্য মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ১৫৮৫, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটিতে ==== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।) আতা ইবন ইয়াসার (রহঃ মু’আবিয়া ইবন আবী সুফিয়ান (রাঃ) স্বর্ণ কিংবা চাঁদির একটি পানপাত্র [সিকায়া] ক্রয় করেছিলেন উহার চাইতে অধিক ওজনের (স্বর্ণ বা চাঁদির) বিনিময়ে। আবুদ্দর্দা (রাঃ) তাকে [উদ্দেশ্য করে] বললেন- আমি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এইরূপ (কার্য) হতে নিষেধ করতে শুনেছি। কিন্তু যদি সমান সমান হয় [তবে উহা বৈধ হবে] মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন- আমি এইরূপ কার্যে কোন দোষ মনে করি না, আবুদ্দর্দা (রাঃ) বললেন- [মু’আবিয়ার ব্যাপারে] আমাকে কে মদদ করবে? আমি তাঁকে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীসের সংবাদ দিতেছি আর তিনি আমার কাছে তাঁর মত বর্ণনা করছেন। (হে মু’আবিয়া) তুমি যেই স্থানে বসবাস কর, সেই স্থানে আমি তোমার সাথে বসবাস করব না। তারপর আবুদ্দর্দা (রাঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট আগমন করলেন এবং তার নিকট ঘটনা বর্ণনা করলেন। তারপর উমার (রাঃ) মু’আবিয়ার নিকট লিখলেন- এইরূপ বিক্রয় করবেন না, কিন্তু যদি সমান সমান হয় এবং একই পরিমাণের হয় (তবে বিক্রয় করা বৈধ হবে)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না। এবং একটিকে অপরটির উপর বৃদ্ধি করে বিক্রয় করো না। আর চাঁদির বিনিময়ে চাঁদি সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না। উহার এক অংশকে অপর অংশের উপর বাড়তি করে বিক্রয় করো না আর স্বর্ণের বিনিময়ে চাঁদি বিক্রয় করো না যে দুটির একটি অনুপস্থিত, আর অপরটি বর্তমানে মজুদ রয়েছে। (কব্জা করার পূর্বে) যদি মহাজন তার গৃহে প্রবেশ করা পর্যন্তের জন্য সময় চায় তবে সেই সময়ও তাকে দিও না। আমি তোমাদের বেলায় রামা’-এর আশঙ্কা করি। রামা’ হচ্ছে সুদ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবন দিনার (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না, এবং একটিকে অপরটির উপর বৃদ্ধি করে বিক্রয় করো না। আর চাঁদির সমান সমান ছাড়া বিক্রয় করো না। উহার এক অংশকে অপর অংশের উপর বাড়তি করে বিক্রয় করো না। আর স্বর্ণের বিনিময়ে চাঁদি বিক্রয় করো না, যে দুটির একটি অনুপস্থিত, আর অপরটি বর্তমানে মওজুদ রয়েছে। (কব্জা করার পূর্বে) যদি মহাজন তার গৃহে প্রবেশ করা পর্যন্তের জন্য সময় চায় তবে সেই সময়ও তাকে দিও না। আমি তোমাদের বেলায় রামা-এর আশঙ্কা করি। রামা’ হচ্ছে সুদ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) (ক্রয়-বিক্রয় হবে) দীনার দীনারের বিনিময়ে, দিরহাম দিরহামের বিনিময়ে, সা’ সা’র বিনিময়ে আর নগদকে ধারের বিনিময়ে বিক্রয় করা যাবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবু যিনাদ (রহঃ) সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন- সুদ হয় কেবলমাত্র স্বর্ণে, চাঁদিতে অথবা যেসব দ্রব্য পাত্র দ্বারা পরিমাপ করা হয় কিংবা ওজন করা হয় পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য হতে সেসব দ্রব্যে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইবন সাঈদ (রহঃ) সা’ঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন স্বর্ণ এবং চাঁদিকে কর্তন করা ধরাপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ চাঁদির বিনিময়ে স্বর্ণ এবং স্বর্ণের বিনিময়ে চাঁদি অনুমান করে বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই, যদি ঢালাইবিহীন স্বর্ণ বা তৈরি গহনা হয়। অবশ্য গণনাযোগ্য দিরহাম বা দীনার হলে সেইসবকে অনুমান করে ক্রয় করা কারো পক্ষে বৈধ নয়। যতক্ষণ যাবত উহার সংখ্যা জানা না যায় এবং উহাকে গণনা করা না হয়। উহাকে অনুমান করে ক্রয় করলে, উহার লক্ষ্য হবে প্রতারণা যখন গণনা করা হল না এবং অনুমান করে ক্রয় করা হইল। এটা মুসলমানদের ক্রয়-বিক্রয়ের অন্তভুক্ত নয়। আর ঢালাইবিহীন স্বর্ণ বা চাঁদি এবং (তৈরি) গহনা যেসব ওজনে বিক্রয় হয় সেই সবকে অনুমান করে বিক্রয় করাতে দোষ নেই। এইসবকে অনুমানে বিক্রয় করা এইরূপ যেমন গম, খুর্মা এবং উহাদের মতো অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য যাকে কেউ অনুমান করে বিক্রয় করে যদি উহা ওজন করে বিক্রয় করার মতো দ্রব্য হয়। তাই এইরূপ দ্রব্য অনুমান করে বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বর্ণখচিত কুরআন অথবা তলোয়ার অথবা আঙ্গুরীয়কে দীনার, দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করেছে। স্বর্ণখচিত যে বস্তু দীনারের বিনিময়ে ক্রয় করল সে বস্তুর মূল্যের প্রতি লক্ষ্য করতে হবে, যদি উক্ত বস্তুর মূল্য দুই-তৃতীয়াংশ (২/৩) হয় এবং উহাতে লাগানো স্বর্ণের মূল্য হয় এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) তবে উহা বৈধ হবে। এতে কোন দোষ নেই যদি নগদ আদান-প্রদান হয়। আমাদের শহরের লোকের মধ্যে এই নিয়মই প্রচলিত আছে।
স্বর্ণ-চাঁদির ক্রয়-বিক্রয় যথাক্রমে চাঁদি ও স্বর্ণের বিনিময়ে
মালিক ইবন আওস ইবনু হাদাসান নাসরী (রহঃ) তিনি একশত দীনারের পরিবর্তে দিরহাম সন্ধান করতেন। তিনি বলেনঃ (এটা শুনে) তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) আমাকে ডাকলেন। আমরা উভয়ে এই বিষয়ে পরস্পর কথাবার্তা বললাম, (এমনকি) তিনি আমার নিকট হতে দীনার গ্রহণ করলেন, [উহার পরিবর্তে দিরহাম দেওয়ার জন্য] এবং দীনার হাতে নিয়ে উহাকে উলট-পালট করতে লাগলেন। অতঃপর বললেন- (অপেক্ষা করুন) আমার খাজাঞ্চী গাবা নামক স্থান হতে আসুক। উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) এটা শুনছিলেন, তিনি বললেন, না, (এইরূপ করো না) আল্লাহর কসম! তুমি তা [তালহা (রহঃ)] হতে পৃথক হইও না যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর নিকট হতে দিরহাম গ্রহণ না কর। তারপর বললেন- রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- চাঁদির বিনিময়ে স্বর্ণ (গ্রহণ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত) অবশ্য যদি উভয়ে নগদ আদান-প্রদান করে। গমের বিনিময়ে গম (ক্রয়-বিক্রয় সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে) কিন্তু যদি নগদ আদান-প্রদান করে। খুর্মার পরিবর্তে খুর্মা (ক্রয়-বিক্রয় সুদ হবে) অবশ্য যদি নগদ আদান-প্রদান করে। যবের বিনিময়ে যব (ক্রয়-বিক্রয় সুদে গণ্য হবে), কিন্তু নগদ আদান-প্রদান করে। লবণের বিনিময়ে লবণ (ক্রয়-বিক্রয় সুদ হবে)। অবশ্য যদি উভয়ে নগদ আদান-প্রদান করে (তবে বৈধ হবে)। (বুখারী ২১৭৪, মুসলিম ১৫৮৬) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি দীনারকে বদলাইল দিরহাম দ্বারা, অতঃপর সে উহাতে একটি দোষযুক্ত দিরহাম পেল, যখন সেই দিরহাম ফেরত দিল তখন দীনারের বদলানোর ব্যাপারটি ভঙ্গ হয়ে গেল। (এখন তার কর্তব্য হল) সে চাঁদি ফেরত দিবে (চাঁদির মালিককে) এবং তার নিকট হতে নিজের দীনার ফেরত গ্রহণ করবে। এর ব্যাখ্যা হচ্ছে এই, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চাঁদির বিনিময়ে স্বর্ণ (গ্রহণ করা) সুদ হবে, অবশ্য (বৈধ হবে) যদি নগদ আদান-প্রদান করে। উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেনঃ যদি (অপর পক্ষ) গৃহে প্রবেশ করা পর্যন্ত তোমার নিকট সময় চায়, তবে তুমি তাকে সময় দিও না। বদলানো দিরহাম হতে দিরহামওয়ালার নিকট হতে আলাদা হওয়ার পর এক দিরহামও যদি রদ করা হয় তবে ইহা ঋণ বা পরবর্তী বস্তুর মতো হবে। এই জন্যই ইহা অবৈধ হয়েছে এবং বিনিময়ে ব্যবসা ভঙ্গ হয়ে গিয়েছে। উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) ইচ্ছা করেছেন যে, স্বর্ণ, চাঁদি ও খাদ্যশস্য এইসবের মধ্যে ধারের বিনিময়ে নগদ যেন বিক্রয় করা না হয়। কারণ এইসবের মধ্যে বিলম্ব ও সময় দান বৈধ নয়; এক জাতের হোক কিংবা বিভিন্ন জাতের বস্তু হোক।
মুরাতালা’[১]র বিধান
[১] মুরাতালা হচ্ছে ওজন করে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং চাঁদির ক্রয়-বিক্রয়। ইয়াযিদ ইবন আবদিল্লাহ্ ইবন কুসাইত (রহঃ) তিনি সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রহঃ)-কে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের মুরাতালা করতে দেখেছেন। তিনি দাঁড়িপাল্লার এক হাতে স্বর্ণ ঢালতেন, তার সাথে মুরাতালাকারী অপর পক্ষ তার স্বর্ণ ঢালতেন পাল্লার অপর হাতে। পাল্লার কাঁটা বরাবর হলে (পাল্লার এক হাত হতে) তিনি গ্রহণ করতেন এবং (অপর হাত হতে) সাথীকে দিতেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসাআলা এই, ওজন করে স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং চাঁদির বিনিময়ে চাঁদি বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। যদিও বা নগদ দশ দীনারের বিনিময়ে এগার দীনার গ্রহণ করা হয়। উভয় স্বর্ণের ওজন সমপরিমাণ হলে। মুদ্রার বিনিময়ে মুদ্রা। (ওজন করে বিক্রয় করা বৈধ) সংখ্যায় যদিও বাড়তি হয়। এই ব্যাপারে দিরহামও দীনারের মতো। [২] মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের মুরাতালা করেছে কিংবা চাঁদির বিনিময়ে চাঁদির মুরাতালা করেছে, উভয় স্বর্ণের মধ্যে একটিতে এক মিসকাল (স্বর্ণ) বাড়তি রয়েছে [৩], অতঃপর তার সাথী (যার অংশের স্বর্ণ ওজনে কম) চাঁদি অথবা অন্য বস্তুর দ্বারা উহার মূল্য আদায় করল। তবে সে (বর্ধিত স্বর্ণের মালিক) এই মূল্য কবুল করবে না। কারণ এটা ভাল নয় এবং এটা সুদের উসীলা মাত্র। কারণ (অতিরিক্ত) এক মিসকাল যদি উহার মূল্য আদায় করে গ্রহণ করা তার জন্য জায়েয হয়, তবে সে যেন এই এক মিসকাল স্বর্ণ পৃথকভাবে (নূতন) খরিদ করল। এইরূপে এক মিসকালকে উহার মূল্য আদায় করে কয়েকবার গ্রহণ করা হল। এইভাবে সেও তার সাথীর [৪] মধ্যে বিক্রয়কে জায়েয করার জন্য [এটা করা হল]। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি সেই ব্যক্তি [যে বর্ধিত এক মিসকাল বিক্রয় করল] সেই মিসকাল [৫] বিক্রয় করে পৃথকভাবে, যার সাথে অন্য কিছু না থাকে তা হলে (ক্রেতা) বিক্রয়কে হালাল করবার উদ্দেশ্যে যেই মূল্যে সে উহা ক্রয় করেছে সেই মূল্য ব্যতীত অন্য মূল্যে সে উহা ক্রয় করবে না, এটা হচ্ছে হারামকে হালাল করার একটি পন্থা বটে। আর এটা নিষিদ্ধ। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির সাথে মুরাতালা [৬] করিতেছে এবং উহাকে খাঁটি ও উন্নতমানের স্বর্ণ দিচ্ছে, তৎসঙ্গে দিচ্ছে কতকটা কৃত্রিম সোনা। এর বদলে তার সাথী হতে সে নিচ্ছে কুফী মধ্যম মানের সোনা। যে কুফী-স্বর্ণ লোকের নিকট অপছন্দনীয়। এবং তারা উভয়ে উহা বেচা-কেনা করিতেছে সমান সমান ওজনে। এইরূপ বেচা-কেনা জায়েয হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা মাকরূহ্ হওয়ার বিশ্লেষণ এই, বিশুদ্ধ স্বর্ণওয়ালা তার বিশুদ্ধ স্বর্ণের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করেছে যে কতকটা নিম্নমানের স্বর্ণ উহার সাথে মিশ্রিত করেছে তাতে। তার সাথী [কুফী স্বর্ণ ওয়ালা]-র স্বর্ণের তুলনায় তার স্বর্ণের মান উচ্চ না হত, তবে তার সাথী কুফী-স্বর্ণের বিনিময়ে তার নিম্নমানের স্বর্ণের সাথে মুরাতালা করত না। এর দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মতো যেই ব্যক্তি তিন সা’ আজওয়াহ্ খুর্মা ক্রয় করার ইচ্ছা করল দুই সা’ এবং দুই মুদ্ কাবীস খুর্মার বিনিময়ে। তাকে যখন বলা হলঃ এটা জায়েয নয়। তখন বিক্রয় বৈধ করার জন্য দুই সা’ কাবীস খুর্মার সাথে এক সা’ নিকৃষ্ট খুর্মা মিলিয়ে দিল। এটা জায়েয হবে না। কারণ ‘আজওয়াহ্ খুর্মাওয়ালা এক সা’ নিকৃষ্ট খুর্মার বিনিময়ে এক সা’ আজওয়াহ্ খুর্মা দিতে রাজী হবে না। তবুও তিনি (এইখানে) কাবীসের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রদান করলেন। কিংবা এর (দৃষ্টান্ত) এই যে, একজন লোক আর একজন লোককে বলল, আপনি আমার নিকট তিন সা’ গম বিক্রয় করুন আড়াই সা’ শামী গমের [৭] বিনিময়ে। সে লোক বলল, এটা বৈধ নয়। কিন্তু (বৈধ হবে) যদি (ওজনে) সমান সমান হয়। তখন দুই সা’ শামী (সিরীয়া) গমের সাথে এক সা’ যব মিলানো হল। উদ্দেশ্য এর দ্বারা উভয়ের মধ্যকার বিক্রয় বৈধ করা। এটা জায়েয হবে না। কারণ এক সা’ যবের বিনিময়ে এক সা’ গম সে উহাকে কখনো দিবে না, যদি পৃথকভাবে এক সা, বিক্রয় করা হয়। (এখানে) সে এ জন্য দিয়েছে যে, তা সাধারণ গমের তুলনায় শামী গম শ্রেষ্ঠ। এটা বৈধ নয়। নিম্নমানের স্বর্ণের বেলায় আমরা যেইরূপ বর্ণনা করেছি, এটাও সেইরূপ বৈধ নয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ সর্বপ্রকার স্বর্ণ চাঁদি এবং সব খাদ্যদ্রব্য যেই সব বস্তু বরাবর ছাড়া ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। সেই সবের উৎকৃষ্ট প্রকারের পছন্দীয় বস্তুর সাথে অপছন্দীয় রদ্দী [৮] প্রকারের বস্তু মিলিত করা যাতে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয করার উদ্দেশ্যে এবং অবৈধ নিষিদ্ধ ব্যাপারকে হালাল করার মতলবে। যেমন নিকৃষ্ট বস্তুকে উৎকৃষ্ট বস্তুর সাথে মিশ্রিত করা হল। এর দ্বারা সে [উৎকৃষ্টের সাথে নিকৃষ্ট মিশ্রয়কারী] যে উৎকৃষ্ট মাল বিক্রয় করছে উহার উৎকৃষ্টতার (অতিরিক্ত) মূল্য উশুল করে নিচ্ছে। তাই তিনি এমন নিকৃষ্ট বস্তু (অপর পক্ষকে) দিচ্ছে। যদি উহাকে আলাদা বিক্রয় করে তার অপর পক্ষ উহাকে গ্রহণ করবে না এবং এই দিকে খেয়ালও করবে না। এখন সে তা গ্রহণ করছে এই (নিকৃষ্ট মানের) মালের সাথে যে (উৎকৃষ্ট মানের) মাল সে পাচ্ছে উহার আকর্ষণে। কারণ তার মালের তুলনায় তার সাথীর মাল উৎকৃষ্ট, কাজেই স্বর্ণ বা চাঁদি কিংবা খাদ্যদ্রব্যে কোনটিতেই অন্য কোন (নিকৃষ্ট) বস্তু মিশ্রিত করা জায়েয হবে না; তবে যদি রদ্দী (খারাপ) খাদ্যদ্রব্যের মালিক উহাকে অন্য (উত্তম) খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ে বিক্রয় করতে চায় তবে পৃথকভাবে তা বিক্রয় করবে। এবং উহার সাথে (উৎকৃষ্ট) অন্য কোন দ্রব্য মিশ্রিত করবে না, এইরূপ করলে তবে এতে কোন দোষ নেই, যদি এইরূপ (পৃথকভাবে বিক্রয়) হয়ে থাকে।
ঈনা [১] এবং উহার সদৃশ [২] অন্যান্য বেচাকেনা এবং খাদ্যদ্রব্যকে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করা
[১] ‘ঈনা কোন বস্তু ধারে নির্দিষ্ট মূল্যে বিক্রয় করে পরে উহাকে কম মূল্যে নগদ ক্রয় করাকে ‘ঈনা বলা হয়। [২] যেসব বস্তু বিক্রেতার অধিকারে নেই সেইসব বস্তু বিক্রয় করে লাভের সন্ধান করা। প্রশাসকগণ নাগরিকদের জন্য খাদ্যশস্য কিংবা অন্যান্য দানের জন্য তমসুক লিখে দিতেন। তাকে আরবীতে صك বলা হয়, صكوك এর বহুবচন। সেই সময় খাদ্যশস্য বিতরণ করা হত জার নামক স্থান হতে। সেইখানে ছিল খাদ্যভাণ্ডার। জার মদীনা শরীফ হতে একদিন এক রাত্রির দূরত্বে অবস্থিত। স্থানটি সাগরপাড়ে অবস্থিত। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করেছে, সে তা কব্জা করার পূর্বে যেন এটা বিক্রয় না করে। (বুখারী ২১২৬, মুসলিম ১৫২৬) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে থাকে সে তাকে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করবে না। (সহীহ, মুসলিম ১৫২৬) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমরা খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করলে তিনি আমাদের নিকট লোক পাঠাতেন। প্রেরিত লোক আমাদেরকে ক্রয় স্থল হতে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয়ের পূর্বে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতেন। (সহীহ, মুসলিম ১৫২৭) নাফি’ (রহঃ) হাকিম ইবনু হিযাম (রাঃ) খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করলেন। উহা জনসাধারণের নিকট বিক্রয়ার্থে ক্রয় করার জন্য উমার (রাঃ) হুকুম দিয়েছিলেন। হাকিম ইবনু হিযাম কব্জা করার পূর্বে সে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করলেন। উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট সেই সংবাদ পৌঁছলে তিনি সেই বিক্রয় বাতিল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমার ক্রয়কৃত খাদ্যদ্রব্যকে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করো না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মারওয়ান ইবনু হাকাম (রাঃ)-এর শাসনকালে লোকের জন্য কিছু খাদ্যচেক ইস্যু করা হল জার -এর খাদ্য ভাণ্ডার হতে। লোকেরা সেই সকল চেক অন্যদের নিকট বিক্রয় করল খাদ্যশস্য কব্জা করার পূর্বে। তারপর যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী মারওয়ান ইবনু হাকামের নিকট গেলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, হে মারওয়ান! আপনি সুদী বিক্রয়কে হালাল জানেন? মারওয়ান বললেন, আউযুবিল্লাহ্! কি ব্যাপার! তারা বললেন, এই দলীলগুলো লোকেরা বিক্রয় করছে। অতঃপর (ক্রেতারা) উহা কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করে দিচ্ছে। অতঃপর মারওয়ান শান্তিরক্ষক প্রেরণ করলেন। তারা সব দলীল তালাশ করে লোকদের হাত হতে নিয়ে উহার মালিকদের নিকট ফেরত দিলেন। (অনুরূপ হাদীস ইমাম মুসলিম অন্য মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন ১৫২৮) মালিক (রহঃ) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি ইচ্ছা করল অন্য এক ব্যক্তি হতে খাদ্যশস্য ধারে ক্রয় করতে। যেই ব্যক্তি তার নিকট খাদ্যশস্য বিক্রয় করতে মনস্থ করেছে সে এই ব্যক্তিকে বাজারে নিয়ে গেল। তারপর তাকে স্তূপ দেখাতে লাগল এবং তাকে বলল, এই স্তুপসমূহের কোনটি হতে আপনার নিকট বিক্রয় করলে আপনি পছন্দ করবেন? ক্রেতা বলল, যে বস্তু আপনার নিকট মওজুদ নাই আপনি সেই বস্তু আমার কাছে বিক্রয় করবেন কি? তারপর তারা উভয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর নিকট এলেন। তার কাছে উভয়ে ঘটনা ব্যক্ত করলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ক্রেতাকে বললেন, তুমি উহা হতে তার নিকট মওজুদ নাই এরূপ বস্তু ক্রয় করো না, আর বিক্রেতাকে বললেন, তোমার নিকট যা মওজুদ নাই উহা বিক্রয় করো না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) জামিল ইবনু আবদির রহমান আল মুয়াযযিন (রহঃ)-কে সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ)-এর নিকট বলতে শুনেছেন, জার নামক স্থান হতে লোকদের জন্য (চেক মারফত) যেসব রসদ বন্টন করা হয়ে থাকে, (লোকদের নিকট হতে) আমি সেসব খরিদ করে নেই। যেই পরিমাণ আল্লাহ তৌফিক দেন। অতঃপর যেসব খাদ্যশস্যের মূল্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা আমার জিম্মায় রয়েছে সেইরূপ খাদ্যশস্য আমি বিক্রয় করতে প্রয়াস পাই। সা’ঈদ তাকে বললেন- (জার হতে) যে রসদ ক্রয় করেছ তুমি ক্রেতাদের তা হতে দিতে চাও কি? তিনি বললেন- হ্যাঁ, সা’ঈদ তাকে এটা করতে বারণ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যাতে কোন মতানৈক্য নাই তা এই, যে কোন খাদ্যশস্য খরিদ করে যেমন- গম, যব, সুরত [১], বাজরা, কংগনী [২], অথবা কলাই, মটর জাতীয় শস্য, কিংবা এগুলোর সদৃশ কোন শস্য যেগুলোর যাকাত দিতে হয়। অথবা ব্যঞ্জন জাতীয় যাবতীয় দ্রব্য-যেমন-যাইতুন তৈল, ঘি, মধু, সির্কা, পনির, দুধ, তিল, তৈল এবং এই জাতীয় এই সবের সদৃশ অন্যান্য ব্যঞ্জনা। ক্রেতা এইসব বস্তুকে কব্জা ও পূর্ণ দখলে আনার পূর্বে বিক্রয় করবে না।
যে যে অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য ধারে বিক্রয় করা মাকরূহ
আবু যিনাদ (রহঃ) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব ও সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন, কোন ব্যক্তি স্বর্ণের (অথবা চাঁদির) বিনিময়ে বাকী মূল্যে গম বিক্রয় করে পরে সেই বাকী মূল্য হস্তগত হওয়ার পূর্বে তার বিনিময়ে খুর্মা ক্রয় করল। তারা উভয়ে এই ধরনের ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) কাসীর ইবনু ফারকদ (রহঃ) আবূ বকর ইবনু মুহাম্মদ ইবনু ‘আমর ইবনু হাযম (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলেন এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে জনৈক ব্যক্তির নিকট খাদ্যদ্রব্য বাকী মূল্যে বিক্রয় করে অতঃপর সেই মূল্য হস্তগত হওয়ার পূর্বে (বাকী) মূল্যে খুর্মা ক্রয় করছে। তিনি একে মাকরূহ জানালেন এবং এটা করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেছেনঃ সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব সুলায়মান ইবনু ইয়াসার, আবূ বাকর ইবনু মুহাম্মদ ইবুন আমর ইবনু হাযম (রহঃ) এবং ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিত, কোন ব্যক্তি গম বিক্রয় করছে বাকী মূল্যে, অতঃপর তার নিকট হতে যে (বাকী মূল্যে) গম ক্রয় করেছে, সে ব্যক্তি হতে মূল্য হস্তগত করার পূর্বে সে খুর্মা ক্রয় করছে (অনাদায়ী) মূল্যের বিনিময়ে। তারা সকলে এটা নিষেধ করেছেন। তবে (বিক্রেতা) বাকী মূল্যে যে গম বিক্রয় করেছে, সে মূল্য দ্বারা উহা হস্তগত করার পূর্বে যার নিকট গম বিক্রয় করেছিল সে লোক ব্যতীত অন্য বিক্রেতার নিকট হতে খুর্মা ক্রয় করে এবং সেই খুর্মার মূল্য যার নিকট (পূর্বে) গম বিক্রয় করছিল তার দায়িত্বে ছাড়িয়ে দেয়, এতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমি এই বিষয়ে অনেক আলিমকে জিজ্ঞেস করেছি, তারা এতে কোন দোষ দেখতে পাননি। [অর্থাৎ এটা বৈধ মনে করেন]
অগ্রিম টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তগত করার শর্তে খাদ্যশস্য ক্রয় করা
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তিকে (অর্থাৎ ক্রেতা বিক্রেতাকে) নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্য নির্দিষ্ট মূল্যে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে অগ্রিম মূল্য আদায় করলে কোন দোষ নেই এই শর্তে যে, খেজুর ও শস্য যেন অপরিপুষ্ট না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই, যে ব্যক্তি ধার্যকৃত মূল্যে নির্ধারিত সময়ে খাদ্যশস্যে সলফ [১] করল, তারপর নির্ধারিত সময় উপস্থিত হল। কিন্তু বিক্রেতার নিকট হতে যা ক্রয় করা হয়েছিল ক্রেতা তার নিকট উহা পূর্ণরূপে পায়নি। তাই সে সলফ বাতিল করতে মনস্থ করল। (এইরূপ হলে) তার (ক্রেতার) পক্ষে বিক্রেতা হতে চাঁদি বা স্বর্ণ কিংবা যে মূল্য উহাকে আদায় করেছে অবিকল তা ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করা জায়েয হবে না। সে হস্তগত করার পূর্বে সেই মূল্যের বিনিময়ে অন্য কোন দ্রব্য তা হতে ক্রয় করবে না। কারণ সে যেই মূল্য উহাকে প্রদান করেছে তা ছাড়া যদি অন্য কিছু গ্রহণ করে অথবা খাদ্যদ্রব্য ছাড়া অন্য কোন বস্তুতে উহা ব্যয় করে, তবে খাদ্যদ্রব্য পূর্ণ হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় করা হবে (যা বৈধ নয়)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ণরূপে হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি ক্রেতা (মাল ক্রয় করার পর) লজ্জিত হয় এবং বিক্রেতাকে বলে এই (সলফ বিক্রয়) বাতিল করে দিন। আমি যে মূল্য আপনাকে দিয়েছি সেই মূল্য আদায়ের ব্যাপারে সময় প্রদান করব (অর্থাৎ বিলম্বে নিব)- এটা জায়েয হবে না। আলিমগণ এইরূপ করতে নিষেধ করেন। কারণ এই যে, যখন বিক্রেতার নিকট প্রাপ্ত খাদ্যদ্রব্য ক্রেতাকে দেওয়ার সময় উপস্থিত হয়েছে, তখন ক্রেতা তার (অগ্রিম দেয়া) হোক (মূল্য আদায় করাকে) এই শর্তে পিছিয়ে দিল যে বিক্রেতা এই বিক্রয় বাতিল করিয়ে দিবে। টো হল খাদ্যশস্য পূর্ণরূপে হস্তগত করার পূর্বে উহাকে ধারে বিক্রয় করা (যা অবৈধ)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর ব্যাখ্যা এই, যখন (ক্রয়কৃত শস্য) ক্রেতার নিকট অর্পণ করার নির্ধারিত সময় উপস্থিত হল, ক্রেতা খাদ্যশস্য অপছন্দ করল। তাই তিনি (বিক্রয় ফেরত চাইলেন) [সলম বিক্রয়ে যে খাদ্যদ্রব্য দেয়ার কথা ছিল] সেই খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ে দীনার ধারে গ্রহণ করলেন। এটা [আসলে কিন্তু] ইকালা [বিক্রয় ফেরত দেয়া] নয়। ইকালা তখন হয় যখন ক্রেতা বিক্রেতা কেউ এতে কোন কিছু বৃদ্ধি না করে। যখন উহাতে কিছু বর্ধিত করা হল, মূল্য আদায়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ প্রদান করে কিংবা অন্য কোন (টাকা-পয়সার মতো) বস্তু একে অপরের উপর বর্ধিত করে অথবা অন্য এমন কোন বস্তু বর্ধিত করে যদ্বারা (ক্রেতা-বিক্রেতা) উভয়ের একজন উপকৃত হয় তবে উহা ইকালা নয়। ইকালা হয় (কখন) যখন পূর্বে তারা উভয়ে বিনাশর্তে বেচাকেনা করে থাকে। ইকালা, শরীকানা এবং তওলিয়ত (খরিদ দামে) বিক্রয়কারী-এর অনুমতি দেয়া হয়েছে যাবত সেইসবে বর্ধন, কমকরণ কিংবা সময় প্রদান ইত্যাদি প্রবিষ্ট করান না হয়। যদি বর্ধন লোকসানকরণ, মেয়াদ বর্ধিতকরণ (ইত্যাদি) সেই সবে প্রবিষ্ট হয়, তবে উহা হবে (নূতনভাবে) বেচাকেনা, একে জায়েয করবে যা ক্রয়-বিক্রয়কে জায়েয করে থাকে এবং একে হারাম করবে যা ক্রয়-বিক্রয়কে হারাম করে দেয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সলফে সিরীয় গম ক্রয় করেছে (গম গ্রহণ করার) নির্ধারিত সময় আসার পর (তৎপরিবর্তে) ছোট দানার গম (মাহমুলা) গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেন- অনুরূপ যে ব্যক্তি বিশেষ রকমের বস্তুতে সলফ করেছে, নির্ধারিত মেয়াদ উপস্থিত হওয়ার পর তার পক্ষে সেই বিশেষ রকমের বস্তু হতে উত্তম কিংবা নিকৃষ্ট বস্তু গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। এর ব্যাখ্যা এইরূপ যেমন কোন ব্যক্তি মাহমুলা গম সলফে ক্রয়-করেছে, (উহা হতে নিকৃষ্ট শস্য) সব কিংবা (উৎকৃষ্ট শস্য) সিরীয় গম গ্রহণ করতে কোন দোষ নেই। আর যদি কেউ সলফ মারফত ‘আজওয়াহ খেজুর ক্রয় করে, তার পক্ষে (উহা হতে উত্তম খেজুর) সায়হানী কিংবা নিকৃষ্ট খেজুর জমা‘ গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই। আর যদি লাল কিশমিশ সলফ মারফত ক্রয় করেছে, তবে (উহার পরিবর্তে) কালো কিশমিশ গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই। যদি এইসব নির্ধারিত মেয়াদ উপস্থিত হওয়ার পর হয়ে থাকে। [সলফ মারফত ক্রয়কৃত দ্রব্যের পরিবর্তে যে দ্রব্য ক্রেতা গ্রহণ করেছে] যদি তা সলফ মারফত ক্রয়কৃত দ্রব্যের পরিমাপে সমান হতে হবে।
পরস্পরে বৃদ্ধি বতীত খাদ্যদ্রব্যের বিনিময়ে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করা
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর গাধার খাদ্য নিঃশেষ হয়ে গেলে তিনি স্বীয় খাদেমকে বললেন- তোমার পরিজনের নিকট হতে গম নাও, তারপর উহার বিনিময়ে যব খরিদ করে আন, পরিমাপে উহার সমান গ্রহণ করো। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী আবদুর রহমান ইবনু আসওয়াদ ইবনু ‘আবদ-ই ইয়াগুস-এর জানোয়ারের খাদ্য ফুরায়ে গেল। তিনি স্বীয় খাদেমকে বললেন- তোমার পরিজনের গম হতে কিছু গম নাও। তারপর তার বিনিময়ে যব খরিদ কর, পরিমাপে তার সমান নাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, কাসেম ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সূত্রে ইবনু মুয়াইকীব দাওসী (রহঃ) হতেও অনুরূপ রেওয়ায়ত বর্ণিত হয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকটও হুকুম অনুরূপ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাসআলা হল- গমের বিনিময়ে গম, খুর্মার বিনিময়ে খুর্মা, খুর্মার বিনিময়ে গম, কিশমিশের বিনিময়ে খুর্মা এবং যাবতীয় খাদ্যশস্য নগদ ছাড়া বিক্রয় করা বৈধ হবে না, (উল্লেখিত বস্তুর) কোন একটিতে যদি মেয়াদ প্রবেশ করে অর্থাৎ ধারে বিক্রয় করা হয় তবে এটা বৈধ হবে না (বরং) এটা হারাম হবে। (অনুরূপ) ব্যঞ্জনে ব্যবহৃত যাবতীয় বস্তুকেও নগদ ছাড়া বিক্রয় করা যাবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ খাদ্যদ্রব্য ব্যঞ্জনসমূহ হতে কোন খাদ্যদ্রব্য কিংবা ব্যঞ্জন যদি তা এক জাতীয় হয় তবে একের বিনিময়ে দুইটি বিক্রয় করা যাবে না এবং এক মুদ্ গমের বিনিময়ে দুই মুদ গম বিক্রয় করা যাবে না। (অনুরূপ) এক মুদ খুর্মা বিক্রয় করা যাবে না দুই মুদ খুর্মার বিনিময়ে, আর এক মুদ কিশমিশকে দুই মুদ কিশমিশের বিনিময়ে বিক্রয় করা যাবে না। (উপরে বর্ণিত বস্তুসমূহের) সদৃশ যাবতীয় শস্য ও ব্যঞ্জনাদি যদি এক জাতীয় হয় (উহাকেও) (অনুরূপ)-বিক্রয় করা যাবে না, নগদ বিক্রি হলেও। কারণ এটা হচ্ছে চাঁদির বিনিময়ে চাঁদির, স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রয় করার মতো, এইসব ব্যাপারে কমবেশ করা জায়েয নয়, একমাত্র সমান সমান ও নগদ হলেই এটা হালাল হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ পরিমাপ পাত্র দ্বারা মাপা হয় কিংবা ওজন করে দেয়া হয় এরূপ খাদ্য কিংবা পানীয় দ্রব্যের মধ্যে পার্থক্য পাওয়া গেলে এবং (জাতের) এই পার্থক্য প্রকাশ্য হলে, তবে নগদ বিক্রয় হলে উহার একটির বিনিময়ে দুইটি গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই। আর দুই সা’ গমের পরিবর্তে এক সা’ খুর্মা এবং দুই সা’ কিশমিশের বিনিময়ে এক সা’ খুর্মা এবং দুই সা’ ঘি-এর বিনিময়ে এক সা’ গম নেয়াতে কোন দোষ নেই। এই সবের মধ্য হতে পরস্পর দুই জাতের দুইটি বস্তু উভয়ে পরস্পর ভিন্ন জাতের হলে তবে সেই জাতীয় বস্তু হতে একের বিনিময়ে দুই কিংবা ততোধিক নগদ বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। কিন্তু ধারে হলে তা বৈধ হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ গমের স্তূপের বিনিময়ে গমের স্তূপ (ক্রয় করা) হালাল হবে না, খুর্মার স্তূপের বিনিময়ে গমের স্তূপ নগদ ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। কারণ খেজুরের বিনিময়ে গম অনুমানে ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে কোন খাদ্যদ্রব্য ও ব্যঞ্জনের জাত পরস্পর বিরোধী হলে এবং পার্থক্য স্পষ্ট হলে তবে (সেইরূপ দ্রব্যের) এক অংশকে আর এক অংশের বিনিময়ে আন্দাজে (কিন্তু) নগদে ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই, যদি উহাতে মেয়াদ (ধারে বিক্রয়) প্রবেশ করে তবে সেই বিক্রয়ে মঙ্গল নেই। ইহা আন্দাজে ক্রয় করা (এইরূপ) যেমন এহার কিছু অংশকে চাঁদি বা স্বর্ণের বিনিময়ে অনুমানে বিক্রয় করা। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি খাদ্যশস্যের স্তূপ করেছে এবং উহার পরিমাপ কার্য সম্পাদন করেছে, অতঃপর উহাকে অনুমানে বিক্রয় করেছে এবং ক্রেতার নিকট উহার পরিমাপ গোপন করেছে। এটা জাায়েয হবে না। তারপর ক্রেতা যদি ফেরত দিতে ইচ্ছা করে, তবে এই খাদ্যশস্য বিক্রেতাকে ফেরত দিবে, কেননা, বিক্রেতা তার নিকট উহার পরিমাপ গোপন করেছে, (এইভাবে) সে ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়েছে। অনুরূপ খাদ্যদ্রব্য হোক বা অন্য কিছু বিক্রেতা যে বস্তুর পরিমাপ ও সংখ্যা জানে অতঃপর উহাকে (ক্রেতার কাছে) আন্দাজে বিক্রয় করে, (অথচ) ক্রেতা উহা অবগত নয়, তবে ক্রেতা ইচ্ছা করলে উক্ত বস্তু বিক্রেতার নিকট ফেরত দিবে। এইরূপ বিক্রয় হতে আহলে ‘ইলম (‘উলামা) সর্বদা নিষেধ করতেন। মালিক (রহঃ) বলেনঃ দুই রুটির বিনিময়ে এক রুটি, ছোট রুটির বিনিময়ে বড় রুটি, যার একটি অপরটি হতে বড়, গ্রহণ করা জায়েয নয়। তবে যদি উভয়ে সমান সমান হবে বলে প্রবল ধারণা হয় তবে ওজন করা না হলেও উহাতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ দুই মুদ পনিরের বিনিময়ে এক মুদ পনির এবং এক মুদ দুধ গ্রহণ করা জায়েয নয়। এটা এইরূপ যেইরূপ আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছিঃ খেজুরের ব্যাপারে যার তিন সা’ আজওয়ার বিনিময়ে বিক্রয় করা হয়েছে দুই সা’ কাবীস আর এক সা’ রদ্দী খেজুর। যখন তাদের একজন অপর জনকে বলল তিন সা’ ‘আজওয়ার বিনিময়ে দুই সা’ কাবীস বিক্রয় করা জায়েয নয় তখন তিনি এটা [আর এক সা’ রদ্দী খেজুর মিশাইবার কাজ] করলেন বিক্রি শুদ্ধ করার জন্য। দুধওয়ালা পনিরের সঙ্গে দুধ মিশাইয়াছে। এহা এই জন্য যে, তার সাথীর পনিরের তুলনায় তার পনীরের বাড়তিটুকু উশুল করবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ গমের বিনিময়ে আটা সমান সমান হলে কোন দোষ নেই। আর যদি অর্ধ মুদ আটা এবং অর্ধ মুদ গম একত্র করে উহাকে এক মুদ গমের বিনিময়ে বিক্রয় করা হয় তবে এটা যেইরূপ আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি সেইরূপ হবে। ইহা জায়েয হবে না। কারণ সে গমের সাথে আটা মিশাইয়া উৎকৃষ্ট গমের বাড়তিটুকু [শ্রেষ্ঠত্বের মূল্য] আদায় করল। কাজেই ইহা জায়েয হবে না। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদিল্লাহ ইবনু আবি মারিয়াম (রহঃ) সা’ঈদ ইবনু মাসায়্যাব (রহঃ)-কে প্রশ্ন করেছেন। তিনি বললেন, (জার নামক স্থান) হতে চেক (লিখিত দলীল) মারফত যে সব খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হয় আমি সে সব খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে থাকি। অনেক সময় বিক্রেতা হতে এক দীনার এবং অর্ধ দিরহামের বিনিময়ে (খাদ্যদ্রব্য) ক্রয় করি। অর্ধ দিরহামের পরিবর্তে আমি খাদ্যশস্য দিতে পারি কি? সা’ঈদ (রহঃ) বললেন, না, (বরং) তুমি তাকে পূর্ণ দিরহাম দাও এবং অবশিষ্ট দিরহামের পরিবর্তে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ কর। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) বলতেন, শস্য উহার শীষে থাকা অবস্থায় বিক্রয় করো না, যতক্ষণ যাবত উহা পরিপুষ্ট না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্যে নির্দিষ্ট মেয়াদে কোন খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে, যখন মেয়াদ উপস্থিত হল, খাদ্যশস্য আদায় করা যার জিম্মায় (ওয়াজিব হয়েছে) সে তার সাথী (ক্রেতা)-কে বলল, আমার কাছে খাদ্যশস্য (মওজুদ) নেই, যে খাদ্যশস্য আপনাকে দেয়ার দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে, সে খাদ্যশস্য আপনি আমার নিকট বিক্রয় করুন নির্দিষ্ট মেয়াদে, যেন আপনাকে আমি উহা পরিশোধ করি। [১] ইহা জায়েয হবে না। কারণ সে [প্রথম ক্রেতার] প্রাপ্য ছিল সেই ব্যক্তির [প্রথম বিক্রেতার] খাদ্যশস্য দিতেছে। তারপর পুনরায় প্রথম বিক্রেতা প্রথম ক্রেতার নিকট তা ফেরত দিতেছে। [২] ফলে ব্যাপার এই দাঁড়াবে যে, (এই খাদ্যশস্যের) যে মূল্য প্রথম বিক্রেতা প্রথম ক্রেতাকে আদায় করল খাদ্যশস্যের দ্বিতীয় দফা যে ক্রয় করল উহার মূল্য বাবদ উহা (প্রকৃতপক্ষে) সেই খাদ্যশস্যের মূল্য হল। যে খাদ্যশস্য উহার [প্রথম ক্রেতার প্রাপ্য ছিল সেই ব্যক্তির [প্রথম বিক্রেতার] জিম্মায়। এই খাদ্যশস্য যা বিক্রি করল তাদের উভয়ের মধ্যে লেন-দেন হালাল করার জন্য একটি হিল্লা স্বরূপ হল। (উপরিউক্ত ব্যবস্থায়) তারা যা করল তা হতে খাদ্যশস্যকে হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় করা। [যা হালাল নয়] মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তির খাদ্যশস্য আর এক ব্যক্তির জিম্মায় ওয়াজিব রয়েছে, যা সে ক্রয় করেছিল তার নিকট হতে, (অপর দিকে) তার কর্জদারের অপর এক ব্যক্তির নিকট অনুরূপ খাদ্যদ্রব্য পাওনা রয়েছে। যে ব্যক্তির জিম্মায় খাদ্যদ্রব্য [আদায় করা ওয়াজিব] রয়েছে সে ঋণদাতাকে বলল- আমার নিকট আপনার প্রাপ্য খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমি আপনাকে আমার এক ঋণদারের হাওলা করিতেছি, যার নিকট আমি অনুরূপ খাদ্যদ্রব্য পাওনা আছি, যেইরূপ খাদ্যদ্রব্য আমার নিকট আপনার পাওনা রয়েছে। [অর্থাৎ খাতকের নিকট হতে আপনি সেই খাদ্যদ্রব্য আদায় করে নিন] মালিক (রহঃ) বলেনঃ যার জিম্মায় খাদ্যদ্রব্য [আদায় করা ওয়াজিব] রয়েছে, সে যদি সেই খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে থাকে এবং তার ঋণদাতাকে উহা হতে খরিদকৃত খাদ্যদ্রব্যের হাওলা করতে ইচ্ছা করে, তবে এই হাওলা করা জায়েয নয়। এবং এটা হচ্ছে হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করা। [যা বৈধ নয়] আর যদি উক্ত খাদ্যদ্রব্য সলফরূপে ক্রয় হয়ে থাকে যার আদায় করার সময় উপস্থিত হয়েছে, তবে তার ঋণদাতাকে তার খাতকের হাওলা করতে কোন দোষ নেই। [অর্থাৎ ইহা জায়েয হবে] কারণ ইহা [ঋণ], বিক্রয় নয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ হস্তগত করার পূর্বে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করা হালাল নয়। কারণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহা নিষেধ করেছেন। তবে আহলে ‘ইলম [‘উলামা] এই বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন যে, শরীক করে নেয়া, [৩] তাওলিয়ত [৪] ও ইকালাতে কোন দোষ নেই। খাদ্যদ্রব্য (হোক বা) অথবা খাদ্যদ্রব্য ব্যতীত অন্য কিছু হোক। মালিক (রহঃ) বলেনঃ [এটা জায়েয এইজন্য যে,] আহলে ‘ইলম [উলামা] এই সবকে অনুগ্রহের তুল্য বলে মত দিয়েছেন, এহা বেচাকেনার মতো বলে উল্লেখ করেননি। ইহা এইরূপ যেন কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে নাকিস (অসম্পূর্ণ ও কৃত্রিম) দিরহাম সলফ [ঋণ] প্রদান করেছে, তারপর ঋণ শোধ করা হল [অর্থাৎ সলফ গ্রহীতা (বিক্রেতা) ঋণদাতা [ক্রেতা]-কে ঋণ পরিশোধ করল পূর্ণ ওজনের দিরহাম দ্বারা যাতে বাড়তি রয়েছে। ইহা তার জন্য জায়েয হবে এবং হালাল হবে। পক্ষান্তরে যদি সেই ব্যক্তি পূর্ণ ওজনের দিরহামের বিনিময়ে নাকিস দিরহাম উহা হতে ক্রয় করে তবে ইহা তার জন্য হালাল [জায়েয] হবে না। অনুরূপ সলফ বিক্রয়ে যদি (বিক্রেতার নিকট) পূর্ণ ওজনের দিরহামের শর্ত করে অথচ সে তাকে পরিশোধ করেছে নাকিস দিরহাম, তবে ইহা জায়েয হবে না। মালিক (রহঃ) এরই সদৃশ দৃষ্টান্ত হচ্ছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযাবানাকে নিষেধ করেছেন, (অথচ) আরায়াতে উহার খেজুরের অনুমান করে বিক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন। এই পার্থক্যের কারণ এই, মুযাবানাতে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে পরস্পর বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ ও ব্যবসা করার প্রয়াসের ধারায়। আর আরায়ায় বিক্রয় হচ্ছে অনুগ্রহস্বরূপ, এতে পরস্পর বুদ্ধি খাটানোর কোন প্রতিযোগিতা নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করল দিরহামের এক-চতুর্থাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ কিংবা উহার যেকোন অংশের বিনিময়ে এই শর্তে যে, এই মূল্যের বিনিময়ে খাদ্যদ্রব্য দেয়া হবে মেয়াদে। [উদাহরণস্বরূপ যেমন-এক মাস পর] ইহা সঙ্গত (জায়েয) নয়। আর কোন ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করল দিরহামের এক অংশের বিনিময়ে মেয়াদে। তারপর সে (পূর্ণ) এক দিরহাম প্রদান করল এবং তার দিরহামের যেটুকু অবশিষ্ট রইল উহার বিনিময়ে সে অন্য কোন সামগ্রী ক্রয় করল, এতে কোন দোষ নেই। কারণ সে দিরহামের অংশ যা তার জিম্মায় (ওয়াজিব) ছিল তা প্রদান করেছে এবং অবশিষ্ট দিরহামের বিনিময়ে (অন্য) সামগ্রী ক্রয় করেছ, এতে কোন দোষ নেই [অর্থাৎ ইটা জায়েয আছে]। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তির নিকট একটি দিরহাম রাখল। অতঃপর সেই ব্যক্তির নিকট হতে দিরহামের এক-তৃতীয়াংশ অথবা এক-চতুর্থাংশ কিংবা নির্দিষ্ট কোন অংশে নির্দিষ্ট কোন সামগ্রী খরিদ করল, এতে কোন দোষ নেই। পক্ষান্তরে যদি উহাতে মূল্য জ্ঞাত না থাকে এবং (দিরহামওয়ালা) ব্যক্তি বলল- আমি প্রতিদিনকার যা মূল্য হবে তার বিনিময়ে ক্রয় করব। এটা জায়েয হবে না। কারণ এটা (এক প্রকার) ধোঁকা, দাম একবার কমবে, আবার একবার বাড়বে। তারা উভয়ে কোন সুনির্দিষ্ট ক্রয়-বিক্রয় হতে পরস্পর পৃথক হয়নি। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আন্দাজ করে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করেছে এবং উহা হতে কোন কিছু বাদ বা আলাদা করেনি। অতঃপর [বিক্রিত বস্তু হতে] কিছুটা ক্রেতা হতে খরিদ করতে সে ইচ্ছা করল, তবে বিক্রিত বস্তু হতে কিছুটা ক্রেতা হতে খরিদ করে রাখা তার জন্য জায়েয নয়। কিন্তু কেবলমাত্র সেই পরিমাণ ক্রয় করা জায়েয যেই পরিমাণ সেই বস্তু হতে বাদ করা বা পৃথক করে রাখা তহার জন্য জায়েয রয়েছে। আর সেই পরিমাণ হচ্ছে এক-তৃতীয়াংশ বা উহা হতে কম, এক-তৃতীয়াংশ হতে বেশি হলে তা মুযাবানার দিকে এবং মাকরূহ (বেচাকেনা)-এর দিকে যাবে। কাজেই (বিক্রেতার জন্য) উহা হতে কিছুটা ক্রয় করা সঙ্গত নয় কিন্তু যে পরিমাণ উহা হতে পৃথক করা (বাদ দেয়া) তার জন্য জায়েয আছে সেই পরিমাণ (ক্রয় করতে পারবে)। আর এক-তৃতীয়াংশ বা উহা হতে কম ছাড়া পৃথক করা তার জন্য জায়েয নয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই।
মজুতকরা এবং মুনাফার অপেক্ষায় থাকা
মালিক (রহঃ) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, আমাদের বাজারে কেউ ইহতিকার [১] করবে না। যেইসকল লোকের হাতে অতিরিক্ত মুদ্রা রয়েছে সেই সব লোক যেন আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাসমূহ; হতে কোন জীবিকা [খাদ্যশস্য] ক্রয় করে আমাদের উপর মজুতদারী করার ইচ্ছা না করে। আর যে ব্যক্তি শীত মৌসুমে ও গ্রীষ্মকালে নিজের পিঠে বোঝা বহন করে (খাদ্যশস্য) আনবে সে উমারের মেহমান, সে যেরূপ ইচছা বিক্রয় করুক, যেরূপ ইচ্ছা মজুত করুক। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) [একবার বাজারে] হাতিব ইবনু আমি বালতায়া (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে পথ অতিক্রম করিতেছিলেন। তিনি [হাতিব (রাঃ)] বাজারে তাঁর কিশমিশ বিক্রয় করিতেছিলেন। [বাজারদর হতে সস্তা মূল্যে] উমার (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ হয়তো মূল্য বাড়িয়ে বিক্রয় করুন, নচেৎ আমাদের বাজার হতে পণ্য গুটিয়ে নিন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী মালিক (রহঃ)-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) ইহতিকারকে নিষেধ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
পশুকে পশুর বিনিময়ে বিক্রয় করা এবং উহাকে ধারে বিক্রয় করা
হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী তালিব (রহঃ) আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) তাঁর একটি উটকে, যাকে বলা হত ‘উসাইফীর’, বিশটি (ছোট) উটের বিনিময়ে ধারে বিক্রয় করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) একটি রাহেলা [ভারবাহী বা সাওয়ারীর উট] ক্রয় করেছিলেন চারটি উটের বিনিময়ে। সে রাহেলা বিক্রেতার দায়িত্বে ও জামানতে ছিল। কথা এই ছিল যে, বিক্রেতা উহাকে ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করবে রাবাযা [১] নামক স্থানে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন একটি পশুর বিনিময়ে দুটি পশু ধারে বিক্রয় করা সম্বন্ধে। তিনি বললেন, এতে কোন ক্ষতি নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাসয়ালা এই যে, উটকে অনুরূপ উটের বিনিময়ে অতিরিক্ত কয়েক দিরহামসহ বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই নগদ আদান প্রদান হলে। আর উটকে অনুরূপ উটের বিনিময়ে কয়েক দিরহাম বাড়তিসহ বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। উটের বিনিময়ে উট নগদ এবং দিরহাম ধারে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ উট বিক্রয় করা অনুরূপ উটের বিনিময়ে অতিরিক্ত কতিপয় দিরহামসহঃ দিরহাম নগদ ও উট ধারে [বিক্রয়] এতে কোন মঙ্গল নেই। [অর্থাৎ উহা জায়েয নয়], আর যদি উট এবং দিরহাম উভয়ে ধারে বিক্রয় হয়, তবে এতেও মঙ্গল নাই। [অর্থাৎ এটাও জায়েয নয়] মালিক (রহঃ) বলেনঃ অভিজাত উট ছোট ভার বহনকারী দুই কিংবা কতিপয় উটের বিনিময়ে ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। যদিও উভয় উট এক দল এক বংশের হয়। এদের দুই উটকে এক উটের বিনিময়ে ধারে ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। যদি উভয়ে গুণাবলির দিক দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং তাদের পার্থক্য স্পষ্টত প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে তাদের একটি আর একটির সদৃশ হয়, কিন্তু জাত ভিন্ন হোক বা না হোক, তবে তাদের দুইটিকে একটির বিনিময়ে ধারে ক্রয় করা যাবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ মাকরূহ ক্রয়ের দৃষ্টান্তের ব্যাখ্যা এই, দুই উটের বিনিময়ে এক উট গ্রহণ করা, অথচ এতদুভয়ের [অর্থাৎ দুই বিনিময়কৃত উটের] মধ্যে ভারবহন ক্ষমতা এবং আভিজাত্যে কোন পার্থক্য নেই। যদি ইহা এইরূপ [সমপর্যায়ের] হয় যেরূপ আমরা বর্ণনা করেছি তবে উহা হতে দুটিকে একটির বিনিময়ে ধারে ক্রয় করা যাবে না। উহা হতে যা ক্রয় করা হল তা হস্তগত করার পূর্বে বিক্রেতা ছাড়া অন্যের হাতে উহাকে বিক্রয় জায়েয আছে। যদি উহার [ক্রয়কৃত পশুর] মূল্য নগদ পরিশোধ করা হয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন পশুকে মেয়াদে ক্রয় করলে, সেই পশুর গুণাগুণ ও আকৃতি খুলে বর্ণনা করা হলে এবং মূল্য নগদ পরিশোধ করা হলে তবে ইহা জায়েয হবে। এই বেচাকেনা বিক্রেতা এবং ক্রেতার পক্ষে তাদের উভয়ের বর্ণনা মুতাবিক [মানিয়া লওয়া] জরুরী হবে। এইরূপ বেচাকেনা লোকের মধ্যে বৈধ বেচাকেনা রূপে সর্বদা চলে এসেছে। আমাদের শহরের আহলে ‘ইলম [‘উলামা] সর্বদা এই মতের উপর স্থির রয়েছেন।
পশুর অবৈধ বিক্রয়
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) গর্ভবতী পশুর গর্ভস্থ বাচ্চা বিক্রয় করতে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। ইহা এক প্রকারের বিক্রয় যা জাহিলী যুগের লোকেরা পরস্পর এইরূপ বেচাকেনা করত; উষ্ট্রী উহার বাচ্চা প্রসব করা অতঃপর সেই বাচ্চা (গর্ভবতী হয়ে) উহার বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করেছে এক ব্যক্তি উট ক্রয় করত। (বুখারী ২১৪৩, মুসলিম ১৫১৪) সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) পশুতে সুদ নাই। তিন প্রকারের পশু [-এর ক্রয়-বিক্রয়] হতে নিষেধ করা হয়েছে “মাযামীন, মালাকীহ, হাবালুল হাবালা” [এই তিন প্রকারের ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ] । উষ্ট্রীদের উদরের বাচ্চারা হচ্ছে মাযামীন। আর উটদের টিপঠের বীর্য হচ্ছে মালাকী আর “হাবালুল-হাবালা” হচ্ছে জাহিলী যুগের লোকেরা পরস্পর [উষ্ট্রীর পেটের বাচ্চার] যে বেচাকেনা করত তা। মালিক (রহঃ) বলেনঃ নির্দিষ্ট কোন জানোয়ার কারো পক্ষে ক্রয় করা জায়েয নয় যদি উক্ত পশু তার মওজুদ না থাকে। যদিও ক্রেতা (পূর্বে) উহাকে দেখে থাকে এবং (দেখার সময়) নগদ মূল্য পরিশোধ করতে রাজী হয়ে থাকে। এই বিক্রয় জায়েয হবে না? বিক্রীত পশুর অনুপস্থিতি অল্পদিনে হোক কিংবা বেশি দিনের হোক। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা এজন্য মাকরূহ যে, বিক্রেতা তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হবে। অথচ সেই নির্দিষ্ট জানোয়ারটিকে ক্রেতা যেই অবস্থায় দেখেছিল সেই অবস্থায় পাওয়া যাবে কি যাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই কারণেই এটা মাকরূহ্ হয়েছে। তবে যদি বিক্রীত বস্তুর (ভালরূপে) গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে দেয়া হয় এবং যথাসময়ে ক্রেতার নিকট উহাকে সোপর্দ করার ব্যাপারে বিক্রেতা দায়ী থাকে, তা হলে এই বিক্রয় জায়েয হবে।
গোশতের বিনিময়ে পশু বিক্রয়
সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোশতের বিনিময়ে পশু বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ১৮২ [মুরসিল]) বর্ণণাকারী সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব বলতেনঃ গোশতের বিনিময়ে পশু বিক্রয় করা এবং একটি বকরী ও দুটি বকরীর বিনিময়ে বিক্রয় করা জাহেলিয়্যাত যুগের জুয়া সদৃশ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) গোশতের বিনিময়ে জানোয়ার বিক্রয় করা হতে নিষেধ করা হয়েছে। আবুয যিনাদ (রহঃ) বলেনঃ আমি সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ)-কে বললাম, এক ব্যক্তি দশটি বকরীর বিনিময়ে একটি উট ক্রয় করল, উহার হুকুম কি আমাকে বলুন। সাঈদ বললেন, যদি যবেহ করার জন্য উহাকে ক্রয় করে তবে উহাতে মঙ্গল নেই [অর্থাৎ ইহা জায়েয নয়] । আবুয যিনাদ বলেন- আমি যেসকল আহলে ইলম [উলামা]-কে পেয়েছি তারা প্রত্যেকে গোশতের বিনিময়ে জানোয়ার বিক্রয় করা হতে নিষেধ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আযুব যিনাদ আরও বললেন- বিভিন্ন জিলার শাসনকর্তাদের নিকট আবান ইবনু উসমান ও হিশাম ইবনু ইসমাঈল-এর শাসনকালে গোশতের বিনিময়ে জানোয়ার বিক্রয় নিষেধ করা হত।
গোশতের বিনিময়ে গোশত বিক্রয়
মালিক (রহঃ) উটের, গরুর ও ছাগলের গোশত এবং এই জাতীয় কিছু পরিমাণকে বন্য পশুদের গোশত সম্বন্ধে আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাসআলা এই- উহার কিছু পরিমাণের বিনিময়ে সমান সমান এবং সমওজনের এবং নগদ ছাড়া ক্রয় করা হবে না। (উহাকে) ওজন করা না হলেও কোন দোষ নেই- যদি অনুমান উহা সমান সমান হয় এবং নগদ বিক্রয় হয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ মাছের গোশতকে উটের, গরুর ও ছাগলের গোশত এবং উহাদের সদৃশ সকল প্রকার বন্য পশুর গোশতের বিনিময়ে বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। একের বিনিময়ে দুই বা ততোধিক [বিক্রয় করা] নগদ অর্থে। যদি এতে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় তবে আর উহাতে মঙ্গল নাই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমি মনে করি, যাবতীয় পাখির গোশত চতুষ্পদ জন্তু সকলের এবং (সকল রকম) মাছের গোশত হতে ভিন্ন। উহাদের কোন একটিকে অন্য আর একটির বিনিময়ে, কিছু বাড়তিতে নগদ ক্রয় করাতে কোন দোষ দেখি না (অর্থাৎ জায়েয আছে), কিন্তু এদের কোন কিছুকে ধারে বিক্রয় করা যাবে না।
কুকুরের মূল্য
আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারিণীর মাহর এবং ভবিষ্যদ্বক্তার উপার্জন হতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ এই ব্যভিচারিণীর মাহর যা তাকে ব্যভিচারের বিনিময়ে দেয়া হয় তা, আর (زبزه) ভবিষ্যদ্বক্তার [১] “হুলওয়ান” হচ্ছে তার উৎকোচ যা ভাগ্য গণনা করার জন্য তাকে দেয়া হয়। (বুখারী ২২৩৭, মুসলিম ১৫৬৭) মালিক (রহঃ) বলেনঃ শিকারী এবং অশিকারী উভয় প্রকারের কুকুরের মূল্য হারাম। কারণ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুকুরের মূল্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
সলফ এবং পণ্যাদির ক্রয়-বিক্রয় একটির বিনিময়ে অপরটির
মালিক (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিক্রয় এবং ঋণকে যুক্ত করা হতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৩৫০৪, তিরমিযী ১২৩৪) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর তফসীর (ব্যাখ্যা) এইঃ এক ব্যক্তি বলল অপর ব্যক্তিকে, আমি আপনার পণ্য ক্রয় করব এত এত (টাকা) মূল্যে এই শর্তে যে, আপনি আমাকে এত এত (টাকা) ঋণ দিবেন। যদি তাদের উভয়ের বেচাকেনা এর উপর সম্পাদিত হয় তবে এটা নাজায়েয হবে, আর যে ব্যক্তি ঋণের শর্ত করেছে সে যদি শর্ত পরিহার করে তবে এই বেচাকেনা জায়েয হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন দোষ নাই বস্ত্র ক্রয় করাতে (বিভিন্ন প্রকারের যেমন-) কাতান, সাতাবী [১] অথবা কাসারী [২] [ইত্যাদি] ইতরিবী [৩] বা কাসসী [৪], অথবা যীকো [৫] ইত্যাদি বস্ত্রের বিনিময়ে অথবা হারাভী [৬] কিংবা মারভী [৭] বস্ত্র (ক্রয় করা) ইয়ামনী এবং সাকায়িক [৮] ও এতদুভয়ের সদৃশ অন্য কোন বস্ত্রের বিনিময়ে একটিকে দুইটির বিনিময়ে অথবা তিনটির বিনিময়ে, নগদ বা বাকী (ক্রয় করতে কোন দোষ নেই), যদিও এক প্রকারের বস্ত্র হয়। যদি উহাতে [এক জাতের বস্ত্রে] ঋণ ধার প্রবেশ করে [অর্থাৎ ধারে বিক্রয় করা হয়] তবে তাতে মঙ্গল নেই [অর্থাৎ উহা নাজায়েয] । মালিক (রহঃ) বলেনঃ (ক্রীত ও বিক্রীত বস্তুর মধ্যে) জাতগত পার্থক্য না হলে এবং সেই পার্থক্য স্পষ্ট না হলে ধারে বিক্রয় জায়েয হবে না। আর যদি একটি অপরটির সদৃশ হয় তবে উহাদের নাম যদিও বিভিন্ন হয় তবুও উহা হতে এক বস্তুর বিনিময়ে দুই বস্তু ধারে গ্রহণ করবে না। এর দৃষ্টান্ত- যেমন হারাবী দুই বস্ত্র ধারে গ্রহণ করা মরবী কিংবা কুহী [৯] এক বস্ত্রের বিনিময়ে বা সাতাবী এক বস্ত্রের বিনিময়ে ফুরকবী [১০] দুই বস্ত্র গ্রহণ করা। এই সব রকমের বস্ত্র যদি এইরূপ (অর্থাৎ পরস্পর স্পষ্ট পার্থক্য না থাকে) হয় তবে উহা হতে একটির বিনিময়ে দুটি বস্ত্র ধারে ক্রয় করা জায়েয হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই জাতীয় বস্ত্র হতে কারো ক্রীত বস্ত্রকে উহা কব্জা করার পূর্বে যেই লোক হতে ক্রয় করা হয়েছে সেই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য লোকের নিকট বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। যদি উহার মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকে।
পণ্যদ্রব্যাদি সলফে বিক্রয় করা
কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আমি আবদুল্লাহ্ ইবুন আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তাঁকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করিতেছে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে যে ব্যক্তি কতিপয় কাতানের পাগড়ী সলফে ক্রয় করেছে। সে সেগুলোকে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করতে ইচ্ছা করল তবে [এটা জায়েয কি?] । ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন- এটা চাঁদির বিনিময়ে চাঁদি ক্রয় করার অনুরূপ। তিনি এটাকে মাকরূহ বললেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত আমাদের মতে ক্রেতা যেই মূল্যে তা ক্রয় করেছে সেই মূল্যের অধিক মূল্যে যার নিকট হতে ক্রয় করেছে তারই নিকট উহা বিক্রি করতে ইচ্ছা করলে তবে এই বিক্রয় মাকরূহ হবে। আর যদি যে ব্যক্তির নিকট হতে উহা ক্রয় করেছে সেই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করে তবে এতে কোন দোষ নাই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট সর্বসম্মত মাসআলা এই, যে ব্যক্তি সলফে ক্রয় করেছে দাস অথবা জানোয়ার কিংবা পণ্য দ্রব্য। এদের প্রত্যেকটির সঠিক গুণ বর্ণনা করা হয়েছে, এইসব বস্তুতে সলফ করা হয়েছে মেয়াদ পর্যন্ত। অতঃপর (সেই) মেয়াদ উপস্থিত হল, তবে যেই বস্তুতে সলফ করেছে সেই বস্তু কব্জা করার পূর্বে, যে মূল্যে সলফ করা হয়েছে সেই মূল্যের অধিক মূল্যে সেই বস্তু যার নিকট হতে (পূর্বে) ক্রয় করেছিল তার নিকট ক্রেতা পুনরায় বিক্রয় করবে না। কারণ যদি এইরূপ করা হয় তবে এটা সুদ [যা হারাম]। এটা যেন এইরূপ করা হল; যেমন ক্রেতা বিক্রেতাকে দিরহাম বা দীনার দিল, বিক্রেতা উহা দ্বারা উপকৃতও হল। তারপর যখন পণ্য ক্রেতার নিকট সোপর্দ করার সময় উপস্থিত হয়েছে তখন ক্রেতা সেই পণ্য কব্জা করল না। বরং সে উহাকে পণ্যের মালিকের নিকট যেই মূল্যে সলফ নির্ধারিত হয়েছিল সেই মূল্যের অধিক মূল্যে বিক্রয় করল। ফল এই দাঁড়াল যে, যে বস্তুকে সলফে ক্রয় করেছিল সেই বস্তু মালিকের নিকট ফেরত দিল এবং নিজের পক্ষ হতে (আরও কিছু) অতিরিক্ত প্রদান করল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি পশু কিংবা পণ্যের ব্যাপারে যার গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য স্বর্ণ কিংবা চাঁদির সলম করেছে। অতঃপর মেয়াদ উপস্থিত হয়েছে, তবে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে কিংবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরে ক্রেতার জন্য সেই সামগ্রীকে যেকোন পণ্যের বিনিময়ে বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করাতে কোন দোষ নাই। কিন্তু সেই পণ্য যেই পরিমাণই হোক না কেন উহা নগদ প্রদান করবে; মূল্য বা বিনিময়ে প্রদানে বিলম্ব করবে না। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য হলে তবে উহাকে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করা হালাল হবে না। আর সে সামগ্রী [পশু কিংবা অন্য কোন পণ্য]-কে যার নিকট হতে উহা ক্রয় করেছে সেই লোক ব্যতীত অন্য কারো নিকট স্বর্ণ বা চাঁদির কিংবা অন্য কোন পণ্যের বিনিময়ে বিক্রয় করা ক্রেতার জন্য জায়েয হবে উহাকে (সেই মুহূর্তে) কব্জা করবে। উহা কব্জা করতে বিলম্ব করবে না। কারণ বিলম্ব করলে খারাপ হবে এবং উহাতে মাকরূহ হবে। ইহা হবে যেন ধারকে ধারে বিক্রয় করা। ধারকে ধারে বিক্রয় করার অর্থ হচ্ছে কোন ব্যক্তি তার ঋণ যা অন্য ব্যক্তির জিম্মায় রয়েছে তা বিক্রয় করিতেছে, যেই ঋণ সে অন্য লোকের নিকট প্রাপ্য সেই ঋণের বিনিময়ে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন বস্তুতে সলম করেছে, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত আর সেই বস্তু খাদ্য বা পানীয় দ্রব্য নয়। তবে ক্রেতা উহাকে যার নিকট ইচ্ছা মুদ্রা কিংবা পণ্যের বিনিময়ে উহাকে পূর্ণ কব্জা করার পূর্বে যার নিকট হতে উক্ত বস্তু ক্রয় করেছে সে ব্যতীত অন্য লোকের নিকট বিক্রয় করতে পারবে। কিন্তু যে ব্যক্তির নিকট হতে ক্রয় করেছে সে ব্যক্তির নিকট বিক্রয় করা জায়েয হবে না। তবে (যায়েয হবে) এমন পণ্যের বিনিময়ে (বিক্রয় করা) যাকে (নগদ) কব্জা করবে, উহা কব্জা করতে বিলম্ব করবে না, (অর্থাৎ) ধারে বিক্রয় করবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি সেই (সলমকৃত) দ্রব্য ক্রেতার কব্জায় দেওয়ার সময় উপস্থিত হয় নিই, তবে উহাকে মালিক [বিক্রেতা]-এর নিকট ভিন্ন জাতের পণ্য যার পার্থক্য সুস্পষ্ট এইরূপ পণ্যের বিনিময়ে বিক্রয় করাতে কোন দোষ নেই, উহাকে [সঙ্গে সঙ্গে] কব্জা করবে। এতে বিলম্ব করবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি দীনার কিংবা দিরহাম দ্বারা চারটি গুণ ও পরিচয় বর্ণিত বস্ত্রের ব্যাপারে সলম করেছে- নির্দিষ্ট মেয়াদে, যখন মেয়াদ-এর (শেষ) সময় উপস্থিত হল তখন উহার মালিক [ক্রেতা] উহা তলব করল, তার নিকট সেই বস্ত্র পাওয়া গেল না। বরং (তদস্থলে) পাওয়া গেল সেই জাতীয় বস্ত্র হতে নিকৃষ্ট রকমের বস্ত্র। বস্ত্র আদায় করা যার জিম্মায় সে ক্রেতাকে বলল, “আপনাকে চার বস্ত্রের পরিবর্তে আমার এই বস্ত্র হতে আটটি বস্ত্র প্রদান করব।” এতে কোন দোষ নাই যদি তারা উভয়ে পরস্পর পৃথক হওয়ার পূর্বে সেই সব বস্ত্র কব্জা করে। মালিক (রহঃ) বলেন, যদি এতে মেয়াদ প্রবেশ করে [অর্থাৎ নগদ আদান-প্রদান না করে ধারে বিক্রয় হয়] তবে উহা জায়েয হবে না। আর যদি মেয়াদ [-এর শেষ সময়] আসার পূর্বে এইরূপ (চার বস্ত্রের পরিবর্তে আটটি বস্ত্র গ্রহণ করা]) হয়, তবে এটাও জায়েয হবে না। কিন্তু যদি যেই বস্ত্রে সলম করা হয়েছে সেই জাতের বস্ত্র হতে ভিন্ন জাতের বস্ত্র ক্রেতার নিকট বিক্রয় করা হয় [তবে জায়েয হবে] ।
তামা, লোহা এবং এতদুভয়ের সদৃশ ওজন করা যায় এই জাতীয় দ্রব্যাদি বিক্রয়
বর্ণণাকারী যে সব বস্তু ওজন করে ক্রয় বিক্রয় করা হয় স্বর্ণ ও চাঁদি ব্যতীত (যেমন) তামা, পিতল, রং সীসক, লোহা, কাজাব [১], তীন [২], তুলা এবং এর সদৃশ বস্তু যা ওজন করা হয়। মালিক (রহঃ) বলেন (এই বিষয়ে) আমাদের নিকট ফয়সালা এই, এইরূপ এক জাতের দ্রব্য হতে এক বস্তুর বিনিময় নগদ দুই বস্তুর গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই। এবং এক রতল লোহা দুই রতল লোহার বিনিময়ে আর দুই রতল উৎকৃষ্ট ধরনের তামার বিনিময়ে এক রতল উৎকৃষ্ট তামা গ্রহণ করাতেও কোন দোষ নেই। আর একই জাতের দ্রব্যে একটির বিনিময়ে দুটি বস্তু ধারে গ্রহণ করাতে কোন মঙ্গল নেই [অর্থাৎ উহা নাজায়েয]। আর যদি বস্তুদ্বয় একটি অপরটি হতে ভিন্ন জাতের হয় এবং উহাদের মধ্যে বিভিন্নতা স্পষ্ট হয়, তবে সেইরূপ বস্তু হতে এক বস্তুর বিনিময়ে দুই বস্তু ধারে গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই আর যদি একে অপরের সদৃশ হয় যদিও উহাদের নাম বিভিন্ন রয়েছে। যেমন-রাং, সীসক, ব্রোঞ্জ, উৎকৃষ্ট তামা, এতে এক বস্তুর বিনিময়ে দুই বস্তু ধারে গ্রহণ করাকে আমি মাকরূহ বলে মনে করি। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই সকল দ্রব্য হতে তুমি যা ক্রয় করেছ, উহাকে যার নিকট হতে তুমি ক্রয় করেছ সে ব্যক্তি ব্যতীত অন্য লোকের কাছে কব্জা করার পূর্বে বিক্রয় করলে কোন দোষ নেই। যদি উহার মূল্য নগদ গ্রহণ করে থাকে এবং যদি উহাকে পরিমাপ পাত্রের দ্বারা কিংবা ওজন করে ক্রয় করে থাকে। আর যদি আন্দাজে (স্তুপ) ক্রয় করে থাক, তবে উহাকে তুমি বিক্রয় করতে পার যার নিকট হতে ক্রয় করেছ তাকে ভিন্ন অন্য কারো নিকট, কিংবা ধারে। কারণ যখন আন্দাজে ক্রয় করেছ তখন উহা তোমার দায়িত্বে এসেছে, [উহার ওজন সম্পর্কে বিক্রেতার আর কোন দায়-দায়িত্ব রইল না।], পক্ষান্তরে যদিও ওজন করে উহা ক্রয় করেছ। তবে যাবত ওজন করে উহা নিজ কব্জায় না আনবে তাবত উহার প্রতি তোমার দায়িত্ব থাকবে না। এই সব দ্রব্য সম্পর্কে যা আমি শুনেছি, তন্মধ্যে এটাই আমার মনঃপুত। আর লোকের আমলও সর্বদা এর উপর রয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই, যে নতুন বস্তু পাত্র দ্বারা মাপা হয়, অথবা (বাটখারা ইত্যাদির দ্বারা) ওজন করা হয় এবং উহা খাদ্য বা পানীয় দ্রব্যের মধ্যে না হয়, যেমন-কুসুম [৩], ফলের আঁটি, গাছের পাতা [৪] কাতাম [৫] এবং উহার সাদৃশ বস্তু। এই সকল দ্রব্যের প্রত্যেক শ্রেণী হতে একটির বিনিময়ে দুটি নগদ গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যাবতীয় শ্রেণির দ্রব্যাদি হতে যে কোন দ্রব্যের দ্বারা লোক উপকৃত হয়, যদিও ছোট কংকর বা চুন হোক। এই শ্রেণীর দুই দ্রব্য হতে একটিকে দ্বিগুণ দ্রব্যের বিনিময়ে ধারে গ্রহণ করা সুদ এবং একটিকে একটি এবং তার সাথে অতিরিক্ত কোন বস্তুর বিনিময়ে ধারে গ্রহণ করলে উহা সুদ বলে গণ্য হবে।
এক বিক্রয়ে দুই বিক্রয় ঢুকান নিষিদ্ধ
বর্ণণাকারী মালিক (রহঃ)-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বিক্রিতে দুই বিক্রি চুকান করতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ, তিরমিযী ১২৩১, নাসাঈ ৪৬৩২, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন। [সহীহ আল-জামে] ৬৯৪৩, আর ইমাম মালিক এর নিকট পৌছেছে মর্মে তিনি বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে বলল, “তুমি এই উটটি ক্রয় কর নগদ মূল্যে আমার উদ্দেশ্যে, আমি উহাকে তোমা হতে বাকী ক্রয় করব [অধিক মূল্যে] ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হল। তিনি উহাকে মাকরূহ বললেন এবং এইরূপ করতে বারণ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) কাসিম ইবনু মুহাম্মদকে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি কোন পণ্য ক্রয় করল নগদ মূল্যে দশ দীনারের বিনিময়ে অথবা ধারে পনের দীনারের বিনিময়ে। তিনি উহাকে মাকরূহ মনে করলেন এবং এইরূপ করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি আর এক ব্যক্তি হতে পণ্য ক্রয় করেছে নগদ দশ দীনার মূল্যে কিংবা ধারে পনের দীনার মূল্যে, ক্রেতাকে দুই মূল্যের যেকোন একটি পরিশোধ করতে হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা জায়েয হবে না। কারণ সে যদি দশ দীনার নগদ আদায় না করে তবে পনের দীনার ধারে রইল। [১] আর যদি নগদ দশ দীনার আদায় করল তবে সে যেন এই দশ দীনারের বিনিময়ে ধারে বিক্রয়ের পনর দীনারকে ক্রয় করল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি হতে সামগ্রী ক্রয় করল নগদ এক দীনার মূল্যে, অথবা বাকী মূল্যে এক বকরীর বিনিময়ে যার গুণাগুণ খুলে বলা হয়েছে। সে ব্যক্তির উপর ক্রয় ওয়াজিব হয়েছে উভয় মূল্যের যে কোন এক মূল্যে। এটা মাকরূহ্ জায়েয নাই। কারণ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বিক্রয়ে দুই বিক্রয় ঢুকাতে নিষেধ করেছেন; উহা এক বিক্রয়ে দুই বিক্রয় ঢুকানোর অন্তর্ভুক্ত। [২] মালিক (রহঃ) বলেনঃ জনৈক ব্যক্তি সম্বন্ধে যে অপর এক ব্যক্তিকে বলল- আমি আপনার নিকট হতে এই ‘আজওয়া খেজুরের পনের সা’ কিংবা সায়হানীর দশ সা’ অথবা মাহমূলা’ [৩] গমের পনের সা’ অথবা সিরীয় গমের দশ সা’ এক দীনারের বিনিময়ে ক্রয় করলাম। বর্ণিত দুটি [৪] হতে একটি আমার প্রাপ্য হবে। এটা মাকরূহ, এটা হালাল হবে না। এক বিক্রয়ে দুই বিক্রয় ঢুকানো যে নিষিদ্ধ এই বিক্রয় উহারই সদৃশ। ইহা আরও সদৃশ সেই নিষিদ্ধ বেচাকেনার যাতে একই প্রকারের খাদ্যদ্রব্য একের বিনিময়ে দুটি বিক্রয় করা হয়।
ধোঁকার বিক্রয়
সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধোঁকার বিক্রয় নিষেধ করেছেন। (সহীহ, ইমাম মুসলিম অন্য সনদে আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেছেন ১৫১৩, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুরসাল) মালিক (রহঃ) বলেনঃ ধোঁকা ও সংশয়ের বিক্রয় হচ্ছে এইরূপ- যেমন, এক ব্যক্তির জানোয়ার হারানো গিয়েছে কিংবা তার দাস পালিয়েছে, [সে এই অবস্থাতে উহা বিক্রয় করতে ইচ্ছুক হল] উহার মূল্য হচ্ছে পঞ্চাশ দীনার। আর এক ব্যক্তি বলল, আমি আপনার নিকট হতে ইহা ক্রয় করলাম বিশ দীনারের মূল্যে। অতঃপর যদি ক্রেতা উহা পায় তবে ত্রিশ দীনার বিক্রেতা হতে চলে যাবে। আর না পেলে বিক্রেতা ক্রেতা হতে কুড়ি দীনার (পূর্বেই) পকেটস্থ করেছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এতে অপর একটি ত্রুটি রয়েছে, তা এই, হারানো জানোয়ার [বা পলাতক দাস] যদি পাওয়াও যায় (তবুও) জানা যায়নি যে, উহাতে (কিছু) বৃদ্ধি হয়েছে না ঘাটতি হয়েছে, কিংবা উহাতে কোন দোষ জন্মেছে। এটা বড় রকমের ঝুঁকি। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট ফায়সালা এই, মাদী জানোয়ার এবং স্ত্রীলোকের পেটের বাচ্চা ক্রয় করাও ঝুঁকি এবং ধোঁকার মধ্যে গণ্য। কারণ পেটের বাচ্চা বের হবে কি হবে না জানা নাই। যদি বের হয় তবে জানা নাই যে, উহা সুন্দর হবে না কুশ্রী হবে? পূর্ণ হবে না অসম্পূর্ণ হবে? নর হবে না নারী হবে? এর প্রত্যেকটিই মূল্যের ব্যাপারে তারতম্য হওয়ার কারণ হয়। এইরূপ হলে, উহার মূল্য এই হবে, এইরূপ হলে উহার মূল্য অন্যরূপ হবে। [ইত্যাদি ইত্যাদি] মালিক (রহঃ) বলেনঃ স্ত্রী জাতীয় পশুদেরকে বিক্রয় করে উহাদের গর্ভস্থ বাচ্চাদেরকে বিক্রয় হতে বাদ রাখা জায়েয নয়, ইহা এইরূপ- যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, আমার এই দুধাল বকরীর মূল্য হচ্ছে তিন দীনার, কিন্তু দুই দীনার মূল্যে তোমাকে প্রদান করিতেছি। উহার গর্ভস্থ বাচ্চা আমার জন্য থাকবে, ইহা মাকরূহ। কারণ ইহাতেও ধোঁকা রয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যাইতুন তৈলের বিনিময়ে যাইতুন ফল বিক্রয় করা এবং তিল নিঃসৃত তৈলের বিনিময়ে তিল শস্য বিক্রয় করা। ঘি-এর বিনিময়ে পনির বিক্রয় করা জায়েয নয়। কারণ এতে ‘মুযাবানা’ প্রবেশ করে থাকে, আর এই কারণেও এটা না-জায়েয যে, যে ব্যক্তি শস্য হতে নিঃসৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ বস্তুর বিনিময়ে শস্য ক্রয় করিতেছে এটা জানা নাই যে, উহা হতে সেই পরিমাণের কম উৎপন্ন হবে না বেশি উৎপন্ন হবে। কাজেই এটাও ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত হল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ হাব্বুল-বান [১] [বান বা বকায়ন বৃক্ষের শস্য]-কে উহা ‘সলীখা’-র বিনিময়ে ক্রয় করাও নাজায়েয। কারণ এতে ধোঁকা রয়েছে। কারণ ‘সলীখা’ হচ্ছে হাব্বুল-বান হতে নিঃসৃত তৈল। তবে সুগন্ধ বান তৈলের বিনিময়ে হাব্বুল-বান ক্রয় করাতে কোন দোষ নেই। কারণ সুগন্ধ বানে অন্য দ্রব্য মিশান হয়েছে, উহাকে সুগন্ধযুক্ত করা হয়েছে। তাই উহা কেবল মাত্র হাব্বুল-বান নিঃসৃত ‘সলীখা’ রূপে অবশিষ্ট নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির নিকট কোন সামগ্রী বিক্রয় করল এবং বলল যে, লোকসান সম্পর্কে ক্রেতার কোন দায়িত্ব নেই। [২] এটা জায়েয নয়। এটা ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত, এর ব্যাখ্যা এই, সে যেন এই সামগ্রীতে যে লাভ অর্জিত হয় উহা তাকে (ক্রেতাকে) বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে দিয়েছে। যদি এই মাল খরিদ মূল্যে বা লোকসানে বিক্রয় করে তবে সে (ক্রেতা) কিছু পাবে না এবং তার শ্রম বৃথা যাবে। ইহা জায়েয নয়। (জায়েয তখন হবে যখন) ক্রেতা তার শ্রমের মজুরি পাবে শ্রম পরিমাণ। আর এই বস্তুতে যা লাভ লোকসান হবে, উহা বিক্রেতার প্রাপ্য হবে। ইহা তখন যখন সেই সামগ্রী বিক্রয় হয়ে যায় কিংবা ধ্বংস হয়। যদি উহা নষ্ট না হয় তবে উভয়ের মধ্যকার বেচাকেনা বাতিল হয়ে যাবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট কোন মাল বিক্রয় করল স্পষ্টরূপে, অতঃপর ক্রেতা লজ্জিত হল অর্থাৎ খরিদ করে লজ্জিত এবং বিক্রেতার নিকট বলল- কিছু মূল্য কমিয়ে দিন। বিক্রেতা তা স্বীকার করল না এবং বলল- আপনি এই মাল বিক্রয় করুন, আপনার কোন লোকসান নাই। এটা জায়েয হবে। কারণ ইহা ধোঁকা নয় বরং এটা তার উপর হতে লাঘব করা হল। বেচাকেনা এই লাঘব করার শর্তের উপর অনুষ্ঠিত হয়নি। এটাই আমাদের নিকট ফয়সালা।
মুলামাসা ও মুনাবাযা
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাবাযা হতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ২১৪৬, মুসলিম ১৫১১) মালিক (রহঃ) বলেনঃ মুলামাসা হচ্ছে এই, এক ব্যক্তি বস্ত্র স্পর্শ করল সে উহা খুলে দেখল না এবং তাতে কি দোষ-গুণ রয়েছে তাও বর্ণনা করা হয়নি। কিংবা রাত্রিতে উহা ক্রয় করল তাতে কি আছে তা সে জ্ঞাত নয়। আর মুনাবাযা হল, এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির দিকে তার বস্ত্র ছুঁড়ে মারল, অপর ব্যক্তিও তার বস্ত্র ইহার দিকে ছুঁড়ে মারল, কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা না করে (এটা করল) এবং একে অপরকে বলল-ইহা উহার বিনিময়ে (বেচাকেনা হয়েছে) [১] হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে মুলামাসা ও মুনাবাযা হতে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ সাজ [২] যা ঝোলাতে আবদ্ধ রয়েছে কিংবা থানবন্দী কিবতী [৩] বস্ত্র এতদুভয়কে না খুলে এবং ভিতরে কি রয়েছে না দেখে বিক্রয় করা জায়েয নয়। কারণ [এই অবস্থায়] এতদুভয়ের বিক্রয় ধোঁকার বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত এবং এটা হচ্ছে নিষিদ্ধ মুলামাসার একটি রূপ। মালিক (রহঃ) বলেছেন- বস্তা বা গাঁইটবন্দী মাল ফর্দ সম্বলিত অবস্থায় বিক্রয় করা ঝোলাতে সাজ বস্ত্র বা থানে কাপড় বা এতদুভয়ের সদৃশ কোন বস্তু বিক্রয় করার মতো নয়। [এতদুভয়ের মধ্যে] পার্থক্য এই- ব্যবহারে এটার প্রচলন ও পরিচয় রয়েছে। [‘উলামা শ্রেণির] লোকের সীনাতে এটার অর্থাৎ বিষয়টি তাঁদের জানা আছে। পূর্বের মনীষী ও ‘উলামা এটার মতো কাজ করেছেন এবং লোকের মধ্যে বৈধ বিক্রয় হিসেবে সর্বদা এটা চালু রয়েছে। অন্যপক্ষে তারা এটাতে কোন দোষ মনে করেন না। কারণ গাঁইট বা বস্তা ফর্দ সম্বলিত অবস্থায় উহাকে না খুলে বিক্রয় করাতে ধোঁকার কোন ইচ্ছা করা হয় না। ইহা মুলামাসার অন্তর্ভুক্ত নয়।
লাভে বিক্রয়
মালিক (রহঃ) বায [বস্ত্র বা গৃহ সরঞ্জাম] সম্বন্ধে আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই, এক ব্যক্তি এ শহর হতে বস্ত্র বা গৃহ সরঞ্জাম বা গৃহ সরঞ্জাম ক্রয় করল। অতঃপর সেই সব সরঞ্জাম অন্য শহরে নিয়ে গেল। তথায় সেসব বস্তু লাভে বিক্রয় করল। তবে দ্রব্যমূল্যে দালালের মজুরি, কাপড় ভাঁজ করা, গাঁইট বাঁধা এবং অন্যান্য ব্যয় হিসেব করা হবে না এবং ঘর ভাড়াও উহাতে হিসেব করা হবে না। তবে বস্ত্র বা গৃহ সরঞ্জামের পরিবহন মজুরি আসল মূল্যে গণ্য করা হবে। বস্ত্র বিক্রেতা ক্রেতার নিকট যাবতীয় ভাড়া ও মজুরির বিবরণ জানিয়ে দিবে। এইসব অবগত হওয়ার পর ক্রেতাগণ যদি বিক্রেতাকে মুনাফা প্রদান করে তবে এতে কোন দোষ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ বস্ত্রের ধোলাই, সেলাই ও রং করার এবং এই জাতীয় আর যে কাজ করা হয়, সব বস্ত্রের স্থলে গণ্য করা হবে। উহাতে লাভ হিসেব করা হবে যেমন হিসেব করা হবে আসল বস্ত্রের, যদি বিক্রেতা বস্ত্র বিক্রয় করল (অথচ) আপনি যা (উপরের বর্ণনায়) শুনলেন তার কোন কিছুই ক্রেতার নিকট সে বর্ণনা করল না তবে সে বিক্রেতার জন্য এটাতে কোন মুনাফা ধরা হবে না। যদি বস্ত্র বিনষ্ট হয় তবে উহার উপর ভাড়া হিসেব করা হবে কিন্তু মুনাফা ধরা হবে না। আর যদি বস্ত্র বিনষ্ট না হয় তবে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যকার বেচাকেনা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি তারা উভয়ে জায়েয কিছুর উপর পরস্পর রাজী হয় [তবে জায়েয হবে]। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি স্বর্ণ (দীনার) কিংবা চাঁদি (দিরহাম)-এর বিনিময়ে কোন পণ্যদ্রব্য ক্রয় করল, আর ক্রয়ের দিন স্বর্ণমুদ্রার বাজারদর ছিল প্রতি দীনার দশ দিরহাম, অতঃপর ক্রেতা সেই পণ্য অন্য শহরে নিয়ে এল এবং উহাকে মুনাফায় বিক্রয় করতে লাগল কিংবা যেই শহরে উহা ক্রয় করেছে, সেই শহরেই ক্রয়ের দিনের বাজারদরে উহাকে লাভে বিক্রয় করতে লাগল। সে যদি উহাকে দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করেছিল এবং বিক্রয় করল দীনারের বিনিময়ে কিংবা ক্রয় করেছিল দীনারের বিনিময়ে এবং বিক্রয় করল দিরহামের বিনিময়ে, আর বিক্রীত পণ্য এখনও বিনষ্ট হয়নি, তবে ক্রেতার ইখতিয়ার থাকবে; ইচ্ছা করলে উহা গ্রহণ করবে, ইচ্ছা করলে প্রত্যাখ্যান করবে। আর যদি বিক্রীত পণ্য বিনষ্ট হয়ে যায় তবে বিক্রেতা সেই মূল্যে উহাকে ক্রয় করেছিল সেই মূল্যে পণ্য ক্রেতার প্রাপ্য হবে, বিক্রেতাকে দেয়া হবে বর্ধিত মুনাফা তার ক্রয় মূল্যের উপর, যে মুনাফা ক্রেতা তাকে প্রদান করবে [অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে যে মুনাফা নির্ধারিত হয়েছে]। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন পণ্য বিক্রয় করেছে যার পড়তা পড়েছে, একশত দীনার, (বিক্রয় করেছে) প্রতি দশ দীনারে এগার দীনার করে। [১] পরে সে (বিক্রেতা) জানতে পারল যে, উহা পড়েছে নব্বই দীনার। এইদিকে ক্রেতার নিকট পণ্য বিনষ্ট হয়েছে। [২] তবে বিক্রেতাকে ইখতিয়ার দেয়া হবে; পছন্দ করলে সে পণ্যের কব্জা করার দিনের মূল্য গ্রহণ করবে। কিন্তু যদি ক্রেতার নিকট বিক্রয় যেই দিন ধার্য হয়েছে সেই দিন হতে যেই মূল্যে বিক্রয় ঠিক হয়েছিল উহা প্রথম দিনের মূল্য হতে অধিক হয়, তবে সে এর অধিক পাবে না। (যেই মূল্যে বিক্রয় ঠিক হয়েছিল) সেই মূল্য হচ্ছে একশত দশ দীনার। কিংবা সে যদি পছন্দ করে নিরানব্বই-এর উপর তার জন্য (শতকরা দশ দীনার হারে) মুনাফা যোগ করা হবে। কিন্তু যদি পণ্যের পড়তা হতে কম হয়, তবে তাকে ইখতিয়ার দেয়া হবে। পণ্যের যে পড়তা পড়েছে সে পড়তা এবং মুনাফাসহ আসল দামের মধ্যে। তার হচ্ছে নিরানব্বই দীনার। যেটি ইচ্ছা সে গ্রহণ করবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি কোন পণ্য বিক্রয় করেছে মুনাফা করে। সে বললঃ আমার নিকট এর পড়তা পড়েছে একশত দীনার। পরে তার নিকট প্রকাশ হল যে, উক্ত পণ্যের পড়তা পড়েছে একশত বিশ দীনার করে, (এমতাবস্থায়) ক্রেতাকে ইখতিয়ার দেয়া হবে, যদি সে ইচ্ছা করে তবে বিক্রেতাকে যেই দিন সে এই পণ্য কব্জা করেছে সেই দিনকার মূল্য আদায় করিবে, অথবা ইচ্ছা করিলে বিক্রেতা যখন এই পণ্য ক্রয় করেছিল সেই সময়কার মূল্য (নির্ধারিত হারে) মুনাফা হিসেবে যা দাঁড়ায় তাসহ বিক্রেতার নিকট পরিশোধ করবে। কিন্তু যেই দিন কব্জা করেছে সেই দিনের মূল্য যদি ক্রেতা যেই দামে পণ্য ক্রয় করেছে সেই দাম হতে কম হয় তবে যেই দামে ক্রেতা পণ্য ক্রয় করেছে সেই দাম হতে পণ্যের মালিককে কম মূল্য দেয়ার ইখতিয়ার থাকবে না। কারণ সে (ক্রেতা) এতে (অসত্য মূল্য ও মুনাফাতে) রাজী হয়েছিল (এবং) পণ্যের মালিক (পূর্বে যে মূল্য বলেছিল উহার উপর) অতিরিক্ত দাবি করিতেছে, তাই বিল বা ফর্দ-এর উপর যেই মূল্যে উহা ক্রয় করেছে সেই মূল্য হতে কমানোর জন্য বিক্রেতাকে বাধ্য করার অধিকার ক্রেতার নেই।
‘বরনামজ’ [১] বা বিলের উপর বিক্রয় করা
[১] বরনামজ ফার্সীতে বরনামা- এমন কাগজখণ্ড যাতে বিক্রিত মালের বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। যাকে ব্যবসার পরিভাষায় বিল বা ইনভয়েস বলা হয়। কোন কোন স্থানের ভাষায় একে চোতাও বলা হয়। মালিক (রহঃ) আমাদের নিকট মাসআলা এই- একদল লোক পণ্য ক্রয় করল- কাপড় অথবা ক্রীতদাস, এই সংবাদ আর এক ব্যক্তি শুনল। সে ক্রেতাদের একজনকে বলল- আপনি অমুক হতে যে বস্ত্র ক্রয় করেছেন উহার অবস্থা ও গুণাগুণ আমি অবহিত আছি। আপনার অংশের পণ্যে আমি আপনাকে এত এত মুনাফা দিব, এতে আপনি আগ্রহী আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ, সে (দ্বিতীয়বারের ক্রেতা) উহাকে (বিক্রেতাকে) লাভ দিল এবং ক্রেতাদের দলে বিক্রেতার স্থলে শরীক হয়ে গেল, তারপর যখন সে বস্ত্র বা ক্রীতদাস নিরীক্ষা করে দেখল উহাকে খারাপ পেল এবং উহার মূল্য অতিরিক্ত মনে করল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই বেচাকেনা এবং উহা গ্রহণ (বিল দেখে যে ক্রয় করেছে) তার জন্য জরুরী হবে এবং (উহা রদ করার) ইখতিয়ার তার থাকবে না। যদি সে নির্দিষ্ট গুণাগুণ জেনে বিল দেখে ক্রয় করে থাকে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি বিভিন্ন জাতের বস্ত্র আমদানী করেছে। (সে সব বস্ত্র ক্রয় করার জন্য) তার কাছে ক্রেতাগণ উপস্থিত হতে লাগল। তিনি তাদেরকে বরনামা (বিল) পাঠ করে শোনালেন। তিনি বললেন, প্রতি গাঁইটে এত এত বসরীয় মিলতাফা রয়েছে এবং এত এত সারবীয় রাইতা রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির বস্ত্রের বিভিন্ন প্রকার দর নির্দিষ্ট করলেন। আরও সে বলল, আপনারা আমার নিকট হতে এই বর্ণিত গুণাগুণের বস্ত্রসমূহ ক্রয় করুন, তারা বর্ণিত গুণের উপর সেই বস্ত্রের গাঁইটসমূহ ক্রয় করলেন। অতঃপর গাঁইট খোলার পর তারা বস্ত্রসমূহের দাম অতিরিক্ত হয়েছে বলে মনে করলেন এবং (এই ক্রয়ের উপর) লজ্জিত হলেন। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে বিলের সপক্ষে তাদের নিকট মাল বিক্রয় করা হয়েছে সে বিল অনুযায়ী গাঁইটে মাল পাওয়া গেল এবং মাল বিলের বিপরীত না হলে তবে ইহা (ক্রয়) তাদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।
যে ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনের ইখতিয়ার থাকে (বায়’উল-খিয়ার)
আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে তার অপর পক্ষের উপর, যতক্ষণ যাবত তারা পৃথক না হয়ে যায়। কিন্তু “বায়-উল-খিয়ার” [১] -এর ব্যাপার স্বতন্ত্র। (বুখারী ২১১১, মুসলিম ১৫৩১) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই ব্যাপারে আমাদের নিকট কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, এই প্রকার সময়সীমা নির্ধারণ মদীনার আলিমগণও করেননি। মালিক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা বেচা-কেনাতে আবদ্ধ হয় (তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে) তবে বিক্রেতার কথাই গ্রাহ্য হবে অথবা উভয়ে রদ করে দিবে (বিক্রেতা মূল্য ফিরিয়ে দিবে এবং ক্রেতা বিক্রিত বস্তু ফিরিয়ে দিবে) (সহীহ, তিরমিযী ১২৭০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে] ২৮৮, আর ইমাম মালিক এর নিকট হাদীসটি পৌছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট কোন পণ্য বিক্রয় করেছে, বেচাকেনা সুনিশ্চিত করার সময় বিক্রেতা বললঃ আমি এই পণ্য আপনার নিকট এই শর্তে বিক্রয় করলাম-আমি অমুক লোকের সঙ্গে (এই বিষয়ে) পরামর্শ করব। আর যদি সে এতে রাজী না থাকে তাকে আমাদের মধ্যে কোন ক্রয়-বিক্রয় অবশিষ্ট থাকবে না। এই শর্ত মেনে উভয়ে পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করল। অতঃপর ক্রেতা অনুতপ্ত হল বিক্রেতা কর্তৃক পরামর্শ গ্রহণ করার পূর্বে। (এমতাবস্থায়) তাদের উভয়ের বর্ণনা মুতাবিক এই ক্রয়-বিক্রয় উভয়ের জন্য বাধ্যতামূলক হবে এবং ক্রেতার কোন ইখতিয়ার (এই ব্যাপারে) থাকবে না যে ইখতিয়ারের শর্তারোপ করেছিল নিজের জন্য (অর্থাৎ বিক্রেতা) সে যদি এই ক্রয়-বিক্রয় চালু ও বৈধ করতে পছন্দ [১] করে তবে ক্রেতার পক্ষে উহা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাসআলা এই- এক ব্যক্তি আর এক ব্যাক্তি হতে পণ্য ক্রয় করল তাদের উভয়ের মধ্যে পণ্যের দামের ব্যাপারে মতবিরোধ ঘটল। বিক্রেতা বলিতেছে, এই বস্তু আমি আপনার নিকট দশ দীনার মূল্যে বিক্রয় করেছি। ক্রেতা বলিতেছে- এই বস্তু আমি আপনার নিকট হতে পাঁচ দীনার মূল্যে ক্রয় করেছি। তখন বিক্রেতাকে বলা হবে আপনি ইচ্ছা করলে ক্রেতা যা বলেছে সেই দামে ক্রেতাকে দিয়ে দিন। আর যদি আপনি ইচ্ছা করেন আল্লাহর নামে হলফ করুন আমি যেই দাম বলেছি সেই দাম ব্যতীত (অন্য দামে) আপনার নিকট বিক্রয় করিনি। সে (বিক্রেতা) হলফ করলে পর ক্রেতাকে বলা হবে আপনি বিক্রেতা যে দাম বলেছে সেই দামে হয়ত পণ্য গ্রহণ করুন, নচেৎ আপনিও আল্লাহর নামে হলফ করুন- এই পণ্য আমি যে দাম বলেছি সেই দামেই ক্রয় করেছি। যদি সে হলফ করে তবে সে পণ্য (গ্রহণ করা) হতে মুক্তি পেল, ইহা (অর্থাৎ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের হলফ করা) এই জন্য যে, তাদের প্রত্যেকে অপর পক্ষের উপর দাবিদার রইল বটে।
ঋণে সুদ
সফফাহ-এর মাওলা উবাইদ আবী সালিহ (রহঃ) আমি কিছু বস্ত্র বিক্রয় করলাম মেয়াদের উপর দার-ই নাখলা [১] -এর বাসিন্দাদের নিকট। অতঃপর আমি কুফায় যাওয়ার মনস্থ করলাম। তারা আমাকে বলল, আমি তাদেরকে দাম কমিয়ে দিলে তার মূল্য নগদে আদায় করবে। আমি এই বিষয়ে যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- আমি তোমার জন্য এটা (মালের অর্থ) আহার করা জায়েয করব না এবং অন্যকে তা (আহার) করানোও ইহা জায়েয করব না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যার মেয়াদী ঋণ রয়েছে অন্য এক ব্যক্তির উপর, অতঃপর ঋণদাতা (কিছু পরিমাণ ঋণ) গ্রহীতা হতে কমিয়ে দিল এবং ঋণগ্রহীতা (মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ঋণের অর্থ) ঋণদাতাকে নগদ প্রদান করল। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) এটা মাকরূহ মনে করলেন এবং এটা করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) জাহিলি যুগে সুদ ছিল এইরূপ- এক ব্যক্তির অপর ব্যক্তির উপর মেয়াদী হক রয়েছে যখন হক আদায় করার মুহূর্ত উপস্থিত হত তখন ঋণগ্রহীতাকে বলা হত; আমার হক আদায় করবে, না ঋণ বৃদ্ধি করে সময় বাড়িয়ে নিবে? (এখন) ঋণগ্রহীতা যদি ঋণ শোধ করে (তবে ভাল কথা), অন্যথায় ঋণের হার বাড়িয়ে দেয়া হত এবং ঋণদাতা মেয়াদ আরও পিছিয়ে দিত (এটাই ছিল জাহিলিয়ার সুদ) । (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট মাকরূহ বিষয় যাতে কোন দ্বিমত নেই তা হচ্ছে এই, এক ব্যক্তির অপর ব্যক্তির উপর মেয়াদী ঋণ রয়েছে। ঋণদাতা কিছু পরিমাণ ঋণ কমিয়ে দিল, ঋণগ্রহীতা (মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে) ঋণ পরিশোধ করে দিল। মালিক (রহঃ) বলেন, এটা আমাদের নিকট এইরূপ যেমন কোন ব্যক্তি ঋণ আদায়ের সময় যখন উপস্থিত হল তখন ঋণগ্রহীতার জন্য মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিল (এর পরিবর্তে) ঋণগ্রহীতা ঋণদাতার জন্য ঋণ (পরিশোধ করার সময়) কিছু বাড়িয়ে দিল, এটাই প্রকৃত সুদ যাতে কোন সন্দেহ নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তির অপর এক ব্যক্তির উপর একশত দীনার (ঋণ) রয়েছে মেয়াদে পরিশোধযোগ্য। যখন মেয়াদ উত্তীর্ণ হল তখন ঋণদাতা ঋণগ্রহীতাকে বলল- আমার কাছে একটি পণ্য বিক্রয় কর, যার নগদ মূল্য একশত দীনার এবং বাকী মূল্য হচ্ছে দেড়শত দীনার। মালিক (রহঃ) বলেন, এই বিক্রয় জায়েয হবে না আহলে ‘ইলম (উলামা) সর্বদা এটা হতে নিষেধ করতেন। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এটা এজন্য মাকরূহ্ যে, সে (ক্রেতা) এটা (বিক্রেতা)-কে বিক্রীত বস্তুর মূল্য পরিশোধ করিতেছে, বিক্রেতা ক্রেতাকে দ্বিতীয়বার সেই সময় উল্লেখ করেছে সেই সময় পর্যন্ত ক্রেতার জন্য মেয়াদ পিছিয়ে দিতেছে এবং এই পিছিয়ে দেয়ার জন্য অতিরিক্ত পঞ্চাশ দীনার তার উপর বৃদ্ধি করল, এটা মাকরূহ, জায়েয নয়। যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ)-এর হাদীসের বর্ণিত জাহিলি যুগের বেচাকেনার ইহা সদৃশ; তার ঋণ আদায় করার যখন মেয়াদ উপস্থিত হত তখন তারা ঋণগ্রহীতাকে বলত, হয়ত ঋণ পরিশোধ কর, নচেৎ ঋণে কিছু বাড়তি দাও অতঃপর যদি (ঋণগ্রহীতা) ঋণ পরিশোধ করে, তারা উহা গ্রহণ করত, আর (যথাসময়ে) পরিশোধ না করত, তবে তার তাদের প্রাপ্য হকসমূহে কিছু পরিমাণ বৃদ্ধি করে দিত এবং ঋণগ্রহীতার জন্য মেয়াদ বাড়িয়ে দিত।
ঋণ এবং হাওল বা হাওয়ালা [১] -এর বিধান
[১] একজনের ঋণ পরিশোধের দায়-দায়িত্ব জিম্মায় ঋণ রয়েছে তাকে ব্যতীত অন্য ব্যক্তির হাওয়ালা বা সোপর্দ করা। -আওজায আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন (হক আদায় করতে) সক্ষম ব্যক্তির তালবাহানা অন্যায় বটে, আর তোমাদের কাউকেও যদি ধনবান ব্যক্তির হওয়ালা করা হয় তবে সেই হাওয়ালা গ্রহণ করিও। [১] (বুখারী ২২৮৭, মুসলিম ১৫৬৪) মূসা ইবনু মাইসারা (রহঃ) জনৈক ব্যক্তিকে সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছেন। তিনি বললেনঃ আমি ধারে বিক্রয় করে থাকি (নিজ আয়াত্তে আনার পূর্বে পণ্য বিক্রয় করি)। (উত্তরে) সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহঃ) বললেন- (পণ্য আয়ত্ত করার পর উহাকে) তোমার গৃহে না আনা পর্যন্ত তুমি উহা বিক্রয় করো না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তি হতে পণ্য ক্রয় করেছে এই শর্তে- বিক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের পর উহা পুরোপুরি ক্রেতার দখলে দিয়ে দিবে। হয়ত (মেয়াদ নির্দিষ্ট করেছে) বাজার পরিস্থিতির দরুন, (নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মাল তার কাছে হস্তান্তর করা হলে এবং তারপর মাল বাজারে ছাড়লে সে কিছু লাভ করবে বলে আশাবাদী কীংবা মেয়াদ পর্যন্ত সে যে শর্ত করেছে এই শর্ত করার প্রয়োজন ক্রেতার রয়েছে। অতঃপর বিক্রেতা ক্রেতার সাথে সেই মেয়াদের ব্যাপারে (শর্তের) খেলাফ করল (অর্থাৎ) মেয়াদ পূর্ণ করল না। তাই ক্রেতা সেই পণ্য বিক্রেতার নিকট ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছা করলে, এটা ক্রেতার পক্ষে জায়েজ হবে না। ক্রয় তার জন্য বাধ্যতামূলক হবে। আর যদি বিক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে সেই পণ্য ক্রেতার নিকট উপস্থিত করে তবে উহা গ্রহণ করার জন্য ক্রেতাকে বাধ্য করা যাবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করল, তারপর তাকে ওজন করে নিল। অতঃপর তার নিকট হতে ক্রয় করার জন্য অন্য একজন এল, যে ক্রয় করতে এসেছে উহাকে সে জানাল যে, সে এই খাদ্যদ্রব্য নিজের জন্য ওজন করে নিয়েছে এবং পূর্ণরূপে আয়ত্তাধীন করেছে। এটা শুনে ক্রেতা উহাকে বিশ্বাস করে তারই প্রকাশিত ওজনে উহাকে গ্রহণ করল। এইরূপে যা নগদ বিক্রয় করা হল এতে কোন দোষ নেই। আর অন্যের ওজনের উপর যদি ধারে বিক্রয় করা হয় তবে উহা মাকরূহ হবে। যতক্ষণ যাবত দ্বিতীয় ক্রেতা নিজের জন্য উহা ওজন করে না নেয়, ধারে বিক্রয় এই কারণে মাকরূহ যে, ইহা সুদের ওসীলা হয় এবং আশংকা রয়েছে সে মাপ ও ওজন ছাড়া এভাবে বারংবার এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তাই ধারে হলে উহা মাকরূহ্ হবে, এই বিষয়ে আমাদের মতানৈক্য নেই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ অনুপস্থিত ব্যক্তির জিম্মার ঋণ ক্রয় করা জায়েয নয়, উপস্থিত ব্যক্তির ঋণ ক্রয় করাও জায়েয নয়। তবে যার জিম্মায় ঋণ রয়েছে সে যদি স্বীকার করে। মৃত ব্যক্তির ঋণ ক্রয় করাও জায়েয নয়। যদিও সে যে সম্পদ রেখে গিয়েছে তা জানা থাকে। কারণ ইহা ক্রয় করাতে ধোঁকা রয়েছে। বলা যায় না এই বিক্রীত ঋণের অর্থ উশুল হবে, না উশুল হবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইহা মাকরূহ হওয়ার ব্যাখ্যা এই, যদি অনুপস্থিত ব্যক্তির কিংবা মৃত ব্যক্তির জিম্মায় ঋণ ক্রয় করা হয়, তবে সেই মৃত ব্যক্তির জিম্মায় কি পরিমাণ ঋণ নির্ধারিত হবে তা অজ্ঞাত, যদি মৃত ব্যক্তির জিম্মায় ঋণ নির্ধারিত হয় তবে ক্রেতা যে মূল্য পরিশোধ করেছে উহা বৃথা যাবে। মালিক (রহঃ) বলেন- এইরূপ ক্রয়ে আরও একটি ত্রুটি রয়েছে, তা এই ক্রেতা মুর্দা হতে এমন বস্তু ক্রয় করেছে যে বস্তুর প্রতি মুর্দার কোন দায়িত্ব বা জামানত নাই, যদি সেই বস্তু সে পূর্ণরূপে দখল করতে না পারে তবে তার মূল্য বৃথা যাবে, এটাই ধোঁকা, এটা না-জায়েয। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে বস্তু কারো আয়ত্তে না থাকে উহা বিক্রয় করা জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যেই বস্তু মূল্য বিক্রেতার আয়ত্তে নেই তার জন্য সলফ বিক্রয় বৈধ, এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য এই, ‘ঈনা বিক্রয়ের মধ্যে ‘ঈনার মালিক অর্থ বহন করে থাকে। যেই অর্থ দ্বারা সে ক্রয় করতে ইচ্ছুক, তাই সে যেমন এইরূপ বলিল, এই আমার নিকট দশ দীনার রয়েছে [‘যেমন খালিদের নিকট]। আপনার [যেমন দবীরের] ইচ্ছা আছে কি আমি আপনার পক্ষে দশ দীনার ক্রয় করি এবং আপনার পক্ষে উহাকে পনের দীনারের বিনিময়ে বিক্রয় করে। এভাবে সে [খালিদ] যেন নগদ দশ দীনার বিক্রয় করল বাকী পনের দীনারের বিনিময়ে। এই জন্য আমি উহাকে মাকরূহ্ বলি। ইহা সুদের ওসীলা এবং এটাও ধোঁকা।
শরীকানা [১] তাওলিয়া [২] ও ইকালা [৩]
[১] অধিকার বা ক্ষমতা প্রয়োগে একত্রিত হওয়াকে শিরকাত বা শরীকানা বলা হয়। শিরকাত কয়েক প্রকারের হয়, যেমন শিরকাতে ‘আনান, শিরকাতে আবদান, শিরকাতে মুফাওয়াযা, শিরকাতে উজূহ। [২] আসল মূল্যে ক্রয়কৃত বস্তুর কাউকেও মালিক করে দেয়ার নাম তাওলিয়া, যেমন রাসূলে করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের সময় আবূ বাকর সিদ্দীক (রা) তাঁর খরিদ মূল্যে উট রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বিক্রয় করেছিলেন। [৩] ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করা। মালিক (রহঃ) এক ব্যক্তি বিভিন্ন জাতের বস্ত্র বিক্রয় করিতেছে, তথা হইতে কয়েকটি বস্ত্র উহাদের চিহ্ন উল্লেখ করে বাদ দিয়ে দিল যদি সেই বর্ণিত চিহ্নের বস্ত্র অন্যান্য বস্ত্র হতে পছন্দ করার শর্ত করে থাকে তবে উহাতে কোন দোষ নাই, আর যদি ঐভাবে পছন্দ করে নির্ধারিত বস্ত্র হতে বস্ত্র লওয়ার বিক্রেতা শর্ত না করে থাকে, ইস্তিস্নার শর্ত করার সময়, তবে আমি মনে করি যে, ক্রেতা যেই বস্ত্র ক্রয় করেছে উহার সংখ্যাতে বিক্রেতা শরীক থাকবে। কারণ অনেক সময় এইরূপ হয় যে, দুটি বস্ত্রের (رقم) [১] নিশান বা চিহ্ন এক কিন্তু উহাদের মূল্যের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদিতে শরীকানা, তাওলিয়া ও ইকালাতে আমাদের মতে কোন দোষ নাই; উহা আয়ত্তে আনুক বা না আনুক। যদি শরীকানার মূলধন নগদ হয় এবং উহাতে (অতিরিক্ত কিছু না থাকে) পূর্ণ মূল্য হতে কমানো না হয় ও মূল্য পরিশোধে বিলম্ব না করা হয়। তবে যদি শরীকানাতে মূল্য বৃদ্ধি বা মূল্য কমানো কিংবা বিলম্ব করা বিক্রেতা বা ক্রেতার পক্ষ হতে যুক্ত হয়, তবে উহা নূতনরূপে বেচাকেনা বলে গণ্য হবে। যেই আহকাম বেচাকেনাকে হালাল করে ইহাকেও সেই বিধান হালাল করবে, আর যে আহকাম ক্রয়-বিক্রয়কে হারাম করে সেই বিধান ইহাকেও হারাম করবে। ইহা প্রকৃতপক্ষে অংশীদারিত্ব ও তাওলিয়া কিংবা ইকালা নয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি (যেমন খালিদ) পণ্য ক্রয় করেঃ (বকর হতে) বস্ত্র বা ক্রীতদাস (অথবা অন্য কোন পণ্য) এবং নিশ্চিতরূপে ক্রয় করে (কোন শর্ত উহাতে না থাকে) অতঃপর জনৈক ব্যক্তি (যেমন মাইমুনা) উক্ত পণ্যে তাকে শরীক করার অনুরোধ জানাল। সে (খালিদ) উহাকে (মায়মুনাকে) অংশীদারিত্ব প্রদান করল এবং তারা উভয়ে পণ্যের মালিককে মূল্য নগদ পরিশোধ করল। অতঃপর পণ্যে এমন কোন কারণ উদ্ভব হল যাতে উভয়ের মালিকানা হতে পণ্য বের হয়ে গেল। [২] তবে যে তাকে শরীক করেছিল সেই ব্যক্তি (খালিদ) হতে যাকে পণ্যে শরীক করা হয়েছিল সে (অর্থাৎ মায়মুনা) মূল্য ফেরত নিবে এবং যে পণ্য বিক্রয় করেছে তার নিকট (খালিদের নিকট) মূল্য দাবি করবে। তবে যে ব্যক্তি শরীক করেছে সে (খালিদ) যাকে শরীক করেছে তার নিকট (মায়মুনার নিকট) (প্রথম) বিক্রয়ের সময় এবং প্রথম বিক্রেতার বেচাকেনার সময়, বেচাকেনার মজলিশ পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে যদি এই মর্মে শর্তারোপ করে থাকে, “আপনার দায়িত্ব যার নিকট হতে আপনি ক্রয় করলেন তার [৩] উপর।” পক্ষান্তরে যদি ক্রয়-বিক্রয়ের মজলিশ বদল হয় এবং প্রথম বিক্রেতা (অর্থাৎ বকর) মৃত্যুবরণ করে, তবে ক্রেতা ব্যক্তির (অর্থাৎ খালিদের) শর্ত বাতিল বলে গণ্য হবে এবং যাবতীয় দায়িত্ব তার উপরই ন্যস্ত থাকবে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল- আপনি এই পণ্য ক্রয় করুন আপনার ও আমার মধ্যে শরীকানায়। আর আমার অংশের মূল্য আপনি নগদ পরিশোধ করুন, আমি আপনার অংশেরও বিক্রয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম, ইহা জায়েয নয়। যখন সে বলল, আমার পক্ষ হতে আপনি নগদ মূল্য পরিশোধ করুন আমি আপনার অংশের পণ্য বিক্রয় করে দিব। ইহা হচ্ছে ঋণ যা সে উহাকে সলফস্বরূপ প্রদান করল এই শর্তে যে, সে এই পণ্য তার জন্য বিক্রয় করে দিবে। যদি সেই পণ্য নষ্ট হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তবে নগদ মূল্য পরিশোধকারী তার শরীক হতে সেই মূল্য নগদ উশুল করবে, এটাই (অতিরিক্ত) মুনাফা আকর্ষণকারী সলফ বা ঋণ (যা হারাম)। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন পণ্য ক্রয় করেছে এবং উক্ত ক্রয় তার জন্য ওয়াজিব হয়েছে (অর্থাৎ বাধ্যতামূলক হয়েছে) তারপর অন্য এক ব্যক্তি বলল, আমাকে এই পণ্যের অর্ধেকের মধ্যে শরীক কর। আমি উহা পূর্ণ বিক্রয় করে দিব, উহা হালাল হবে। এতে কোন দোষ নেই। এর ব্যাখ্যা এই- এটা একটি নূতন ক্রয়-বিক্রয় বিক্রেতা উহার নিকট অর্ধেক পণ্য এই শর্তে বিক্রয় করেছে যে, ক্রেতা তার অংশের বাকী অর্ধেক পণ্য বিক্রয় করে দিবে।
ঋণ গ্রহীতার দরিদ্র হওয়া
আবূ বাকর ইবন আবদির রহমান ইবন হারিস ইবন হিশাম (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি (কারো নিকট) কোন পণ্য বিক্রয় করেছে। অতঃপর তার নিকট হতে যে ক্রয় করেছে সে দরিদ্র হয়ে গিয়েছে। আর বিক্রেতা ক্রেতার নিকট হতে পণ্যের মূল্যের কিছুই আয়ত্তে আনেনি। সে ব্যক্তি (বিক্রেতা) পণ্যদ্রব্য ক্রেতার নিকট যদি হুবহু পায় তবে সে-ই উহার হকদার হবে। আর যদি ক্রেতার মৃত্যু হয় তবে পণ্যের মালিক উক্ত পণ্যে অপর ঋণদাতাদের সমান হকদার হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দরিদ্র হয়েছে এবং কোন ব্যক্তি তার মাল হুবহু তার নিকট পায় তবে সে অন্যের তুলনায় সেই মালের অধিক হকদার হবে। (বুখারী ২৪০২, মুসলিম ১৫৯৯) মালিক (রহঃ) বলেনঃ এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির নিকট কোন পণ্য বা খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করেছে। অতঃপর ক্রেতা দরিদ্র হয়ে গিয়েছে, তবে বিক্রেতা তার পণ্যের হুবহু কিছু পেলে সে এই পণ্য গ্রহণ করবে। যদি ক্রেতা উহার কিছু অংশ বিক্রয় করে থাকে এবং উহাকে পৃথক করে দিয়ে থাকে তবে পণ্যের মালিক অন্যান্য ঋণদাতা বা মহাজনদের অপেক্ষা এই পণ্যের অধিক হকদার হবে। ক্রেতা কর্তৃক উহা হতে কিছু অংশ পৃথক করার কারণে তার পণ্যের যা হুবহু সে পেয়েছে তা আয়ত্তে আনতে কোন বাধা হবে না। আর যদি বিক্রেতা পণ্যের মূল্যের কিছু তলব করেছে অতঃপর বিক্রেতা পণ্যের যে মূল্য গ্রহণ করেছে উহা ফেরত দিতে এবং যে পণ্য পাওয়া গিয়েছে উহা আয়ত্তে আনতে পছন্দ করে এবং যা আদায় হয়নি তাতে অন্যান্য মহাজনের সমান হয়ে যায় তবে এটা জায়েয আছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কিছু পণ্য খরিদ করল উহা পশম হোক বা অন্য কোন ব্যবসায়ের মাল বা এক টুকরা জমি। অতঃপর যে খরিদ করেছে সে উহাতে নতুন কোন কাজ করল, যেমন জমিতে ঘর বানাল বা পশম দ্বারা কাপড় তৈয়ার করল। অতঃপর যে খরিদ করেছিল সে গরীব হয়ে গেল, জমিওয়ালা তাকে বলল, আমি ঐ জমি এবং উহাতে যা নির্মাণ করা হয়েছে তা সমস্তই নিয়ে নিব, তবে ইহা তার জন্য বৈধ হবে না বরং ঐ জমি এবং জমিতে যে ঘর ক্রেতা তৈয়ার করেছিল উহার মূল্য নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর দেখতে হবে ঐ জমির মূল্য কত পড়ে এবং ঘরের মূল্য কত হয়। অতঃপর ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে তাতে অংশীদার হবে। জমির মালিকের জন্য হবে তার জমির অংশ অনুযায়ী এবং ঋণগ্রস্তদের জন্য হবে নির্মিত গৃহাদির অংশ পরিমাণ। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এর ব্যাখ্যা এই যে, যেমন ঐ জমি ও ঘরের একত্রে মূল্য হবে এক হাজার পাঁচ শত দিরহাম। এমতাবস্থায় জমির মূল্য হবে পাঁচ শত দিরহাম এবং ঘরের মূল্য হবে এক হাজার দিরহাম। জমির মালিকের জন্য হবে এক-তৃতীয়াংশ এবং ঋণগ্রস্তদের জন্য হবে দুই-তৃতীয়াংশ। মালিক (রহঃ) বলেনঃ এইরূপেই পশম ইত্যাদি মূল্য ধরতে হবে যদি খরিদ্দার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে আর মূল্য আদায় করতে অপারগ হয়। মালিক (রহঃ) বলেনঃ আর ঐ সমস্ত ব্যবসায়ের মাল যাতে খরিদ্দার কোন কাজ করেনি বরং এমনি ঐ মালের যোগ্যতা তথা গুণাগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আর উহার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন ঐ মালওয়ালা উহা পেতে ইচ্ছা করিতেছে। কিন্তু খাতক উহা রাখতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় ঋণদাতাদের ইচ্ছানুযায়ী তারা মালওয়ালাকে উহার মূল্যও দিয়ে দিতে পারে, যে দামে উহা বিক্রয় হয়েছিল। উহা হতে কমাতে পারবে না বা তাকে তার মালও দিয়ে দিতে পারে। আর যদি ঐ মালের মূল্য কমে গিয়ে থাকে তবে যে বিক্রয় করেছে সে যদি ইচ্ছা করে তবে তার মাল নিয়ে নিতে পারে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কোন দাসী বা কোন পশু খরিদ করল এবং উহা তার নিকট বাচ্চা দিল অতঃপর ক্রেতা গরীব হয়ে গেল, ঐ দাসী বা পশু যে বাচ্চা প্রসব করেছে উহা বিক্রেতার হবে। যদি খাতকের উহা রাখবার ইচ্ছা হয়, তবে তার পূর্ণ প্রাপ্য দিয়ে উহা রাখতে পারে।
‘সালাফ’-এর যা বৈধ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আযাদকৃত দাস আবূ রাফি’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট উট নিয়েছিলেন, অতঃপর তার নিকট সাদকার উট আসে। আবূ রাফি’ বলেন, রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ঐ ব্যক্তির উটের বাচ্চা আদায় করে দিতে বললেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম! উহাদের মধ্যে তো বাচ্চা উট নাই, সমস্তই বয়স্ক উট। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, উহাই দিয়ে দাও। কেননা ঐ লোকই উত্তম যে উৎকৃষ্ট বস্তু দ্বারা ঋণ পরিশোধ করে। (সহীহ, মুসলিম ১৬০০) মুজাহিদ (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবন ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তির নিকট হতে কিছু দিরহাম কর্জ নিলেন। অতঃপর আদায় করবার সময় যে দিরহাম ঋণস্বরূপ নিয়েছিলেন উহা হতে উৎকৃষ্ট দিরহাম দিলেন। ঐ ব্যক্তি বলল, হে আবূ আবদুর রহমান! এই দিরহাম আমার দিরহাম হতে উৎকৃষ্ট যা আমি আপনাকে ধার দিয়েছিলাম। আবদুল্লাহ্ ইবন উমার বললেন, আমার তা জানা আছে তবুও আমি খুশী হয়ে উহা দিয়েছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কাউকেও স্বর্ণরৌপ্য বা কোন খাদ্যদ্রব্য ধার দেয় তবে ফেরত নেবার সময় যাকে ধার দিয়েছিল তা হতে উৎকৃষ্ট বস্তু গ্রহণ করাতে কোন দোষ নেই, যদি এইরূপ কোন শর্ত করে না থাকে বা ইহা নিয়মে পরিণত না হয়; যদি শর্ত করে বা এইরূপ দেওয়ার নিয়ম থাকে তবে উহা মাকরূহ্। মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইহা এইজন্য যে, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের বাচ্চা ধার নিয়ে বড় বয়স্ক উট দিয়েছিলেন আর আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) দিরহাম নিয়ে উহা হতে উৎকৃষ্ট দিরহাম দিয়েছিলেন। যদি এটা খাতকের সন্তুষ্ট মনে হয়ে থাকে আর এটার জন্য কোন শর্ত বা রীতি না থাকে তবে এটা হালাল, এতে কোন ক্ষতি নেই।
‘সালাফ’ বা ঋণে যা অবৈধ
মালিক (রহঃ) এক ব্যক্তি অপর একজনের নিকট কিছু খাদ্যদ্রব্য ধার দিয়েছিল এই শর্তে যে, অন্য শহরে সে উহা পরিশোধ করবে। উমার ইবন খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ঐ স্থানে বহন করবার খরচ কে বহন করবে? তাই উহা অপছন্দ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-এর নিকট এসে বলেন, হে আবূ আবদির রহমান! আমি এক ব্যক্তিকে কিছু ধার দিয়েছিলাম এবং উহা হতে উৎকৃষ্ট বস্তু দেওয়ার শর্ত করেছিলাম। আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন উহা সুদ হবে। ঐ ব্যক্তি বললেন, তবে আমাকে এখন কি করতে বলেন। তিনি বললেন, ঋণ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের ঋণ যাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হয়। তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টিই অর্জিত হয়ে থাকে। আর এক প্রকারের ঋণ যাতে গ্রহীতা ব্যক্তির সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাতে ঐ ব্যক্তির সন্তুষ্টি লাভ হয়ে থাকে। আর এক প্রকার ঋণ যাতে হালালের বিনিময়ে হারাম (সুদ) গ্রহণ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সে ব্যক্তি বলল তবে আমাকে এখন কি করতে বলেন? তিনি বললেন, আমার মতে তুমি তোমার সুদের দলীল ছিড়ে ফেল, যদি তুমি যা ঋণ দিয়েছিলে তোমাকে ঐ পরিমাণ দিয়ে দেয় তবে তা নিবে, তোমার সওয়াব হবে। আর যদি সে খুশী হয়ে তুমি যা দিয়েছ উহা হতে উৎকৃষ্ট বস্তু দেয় তবে উহার শোকর করবে। আর তুমি তাকে যে সময় দিয়েছ উহার সওয়াব পাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (রহঃ) তিনি আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যদি কেউ কাউকেও কোন ঋণ দেয় তবে যেন উহা আদায় করার শর্ত ছাড়া অন্য কোন শর্ত না করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলতেন, যদি কেউ কাউকেও ঋণ দেয় তবে উহা হতে উৎকৃষ্ট বস্তু বা অতিরিক্ত কিছুর শর্ত করবে না যদিও একমুষ্টি ঘাস হয়। কেননা উহা সুদ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট সর্বসম্মত মত এই যে, যদি কেউ কোন পশু ধার নেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই, তবে তাকে ঐরূপ পশুই পরিশোধ করতে হবে। তবে ক্রীতদাসীদের ব্যাপারে ইহা প্রযোজ্য হবে না, কারণ এতে যা নিষিদ্ধ তা হালাল করার আশংকা রয়েছে। এর ব্যাখ্যা এই, এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে ক্রীতদাসী ধার দিল, সে উহার সাথে সহবাস করল, অতঃপর মালিকের নিকট উহাকে ফেরত দিল, ইহা বৈধ নয়। আহলে-ইলম [উলামা] এইরূপ করতে বরাবর নিষেধ করতেন এবং কাউকেও এর অনুমতি দিতেন না।
ক্রয়-বিক্রয়ে যা নিষিদ্ধ
আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একে অন্যের বিক্রয়ের উপর বিক্রয় করো না। [১] (বুখারী ২১৩৯, মুসলিম ১৪১২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বণিকদের সাথে তাদের পণ্য খরিদ করার জন্য আগে আগে মিলিত হইও না। [১] আর কেউ যেন একজনের ক্রয়ের উপর ক্রয় না করে, আর একে অন্যের উপর নাজাশ [২] করো না। আর কোন শহরবাসী যেন কোন গ্রামবাসীর পক্ষ হতে বিক্রয় না করে। আর উট এবং বকরীর স্তনে দুধ জমা [৩] করে রেখো না যদি কেউ এইরূপ উট ও বকরী ক্রয় করে, যদি পরে উহার অবস্থা অবগত হয় তবে তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে, ইচ্ছা হলে রাখবে আর উহা ফেরত দেবার অধিকারও তার থাকবে। যদি ফেরত দেয়, তবে যেন দুধের পরিবর্তে এক সা’ [৪] খেজুর দিয়ে দেয়। (বুখারী ২১৫০, মুসলিম ১৫১৫) মালিক (রহঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একে অন্যের ক্রয়ের উপর ক্রয় করো না। উহার ব্যাখ্যা হল, একজন যেন অন্যজনের দাম বলার সময় দাম না করে। যখন বিক্রেতার ক্রেতার নিকট বিক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ পায় এবং পণ্যের দাম ঠিক করে পণ্যকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আরম্ভ করে অথবা এমন কোন কাজ করে যাতে মনে হয় যে, বিক্রেতা প্রথম ক্রেতার নিকট বিক্রয় করতে ইচ্ছুক। এমতাবস্থায় অন্য কাউকে দাম করতে নিষেধ করা হয়েছে। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি বিক্রেতা প্রথম ব্যক্তির দামে বিক্রয় করতে রাযী না হয় বরং মাল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা হয় তবে সকলেই উহার মূল্য বলতে পারে। যদি একজনের দাম বলার সাথে সাথে অন্যের দাম বলা নিষেধ হত, তবে নামমাত্র মূল্যের বিনিময়ে প্রথম ক্রেতা উহা গ্রহণ করতে পারত এবং বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে। মদীনায় বর্ধিত মূল্যে ক্রয় করার বরাবর রেওয়াজ ছিল। ইবন উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশ করতে নিষেধ করেছেন। নাজাশ বলা হয় মালের উপযুক্ত দামের চাইতে অধিক দাম বলা অথচ তার ক্রয়ের ইচ্ছা নেই। বরং এই অধিক দাম বলার উদ্দেশ্য যেন অন্য ব্যক্তি তার অনুসরণ করে ধোঁকায় পড়ে এই দামে উহা ক্রয় করে। (বুখারী ২১৪২, মুসলিম ১৫১৬)
ক্রয়-বিক্রয়ের বিভিন্ন বিধান
আবদুল্লাহ্ ইবন উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তাকে ধোঁকা দেয়া হয়ে থাকে। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বলে দেবে, যেন ধোঁকা দেওয়া না হয়। অবশেষে যখন ঐ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করত তখন বাক্যটি বলত। [১] (বুখারী ২১১৭, মুসলিম ১৫৩৩) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) তিনি সাঈদ ইবন মুসায়্যাব (রাঃ) [১] -কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলতেন, যখন তুমি এরূপ কোন শহরে যাবে যেখানকার অধিবাসিগণ পূর্ণরূপে ওজন করে তবে তথায় অনেক দিন থেকো। আর যখন এরূপ শহরে যাবে যেখানকার অধিবাসিগণ ওজনে ত্রুটি করে, তবে সেখানে অনেক দিন থেকো না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবন সাঈদ (রাঃ) তিনি মুহাম্মাদ ইবন মুনকাদির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ্ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে ভালবাসেন, যে ক্রয় করতে, বিক্রয় করতে, ঋণ আদায় করতে, ঋণ উশুল করতে নরম ব্যবহার করে। [১] (সহীহ মারফু, ইমাম বুখারী ২০৭৬, তিনি ইবনু মুনকাদির তিনি জাবির (রাঃ) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) বলেনঃ কোন ব্যক্তির উট, বকরী, কাপড়, গোলাম, দাসী ইত্যাদি গণনা না করে এক দলকে একত্রে খরিদ করে লওয়া ভাল নয়, যে বস্তু গণনা করে বিক্রি হয় উহা গণনা করে খরিদ করা ভাল। মালিক (রহঃ) বলেনঃ যদি কোন ব্যক্তি কাউকেও নিজের কোন বস্তু নির্ধারিত মূল্যে এই শর্তে বিক্রয় করতে দেয় যে, যদি তুমি এই মূল্যে বিক্রয় কর তবে তোমাকে এক দীনার অথবা অন্য কিছু দেয়া হবে যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং উভয়ে তাতে সম্মত হয়েছে তা না হলে কিছুই পাবে না। তবে এতে কোন ক্ষতি নেই, যদি বিক্রয় মূল্য ও বিক্রয়ের পরের প্রাপ্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিক্রয় করলে তা পাবে, না করলে পাবে না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ উহার উদাহরণ এই যে, কোন ব্যক্তি কাউকেও বলল, যদি তুমি আমার যে গোলাম বা উট পলিয়ে গিয়েছে উহাকে তালাশ করে এনে দাও তবে তোমাকে এত দিব, তবে তা বৈধ। কারণ এতে পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট করে কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। ইহা ইজারা নয়, যদি ইজারা হত তবে ইহা বৈধ হত না। মালিক (রহঃ) বলেনঃ কেউ এক ব্যক্তিকে কিছু মাল দিয়ে বলল, ইহা বিক্রয় করলে প্রতি দীনারে তোমাকে এত দিব; কত দিব তা উল্লেখ করল। এটাও বৈধ নয়। কেননা উক্ত পণ্যের দাম কম হলেই তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক কমে যাবে। এটাও এক প্রকার ধোঁকা, জানে না সে কত পাবে। মালিক (রহঃ) শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তাকে এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে একটি জন্তু ভাড়ায় নিয়ে উহা আবার অধিক ভাড়ায় অন্যকে দিয়ে দেয়। তিনি বললেন, উহাতে কোন ক্ষতি নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)