37. ওসীয়্যত সম্পর্কিত

【1】

ওসীয়্যতের নির্দেশ

আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমানের নিকট কিছু সম্পদ থাকলে যার সম্বন্ধে ওসীয়্যত করা তার কর্তব্য, তবে সেই ক্ষেত্রে ওসীয়্যতের বিষয় না লিখে তার জন্য দুই রাত্রিও অতিবাহিত করা উচিত নায় (কেননা মৃত্যু আসার আশংকা রয়েছে)। (বুখারী ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭) মালিক (র) বলেন ইহা আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় যে, যদি কোন মুসলমান সুস্থ অথবা অসুস্থ অবস্থায় কোন ওসীয়্যত করে যায় যেমন গোলাম আযাদ করা কিংবা অন্যান্য বিষয়, তবে সে মারা যাওয়ার পূর্বে তার মধ্যে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে পারবে এবং ওসীয়্যতকে স্থগিতও করতে পারবে। অন্য কোন ওসীয়্যতও করতে পারবে। কিন্তু কোন গোলামকে যদি মুদাব্বার করে থাকে তবে তাতে আর কোন পরিবর্তন করতে পারবে না, কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমানের এমন কিছু থাকলে যা ওসীয়্যত করা কর্তব্য, তবে ওসীয়্যত করা ব্যতীত দুই রাত অতিবাহিত করা তার উচিত নয়। মালিক (র) বলেন যদি ওসীয়্যতকারীর নিজ ওসীয়্যতে পরিবর্তন করার ক্ষমতা না থাকত তবে তার ইখতিয়ার হতে বের হয়ে আটক থাকত। যেমন গোলাম আযাদের কথা অথচ মানুষ কোন সময় ভ্রমণে যাওয়ার সময় ওসীয়্যত করে আবার সুস্থ থাকাকালীন ওসীয়্যত করে। মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট প্রত্যেক ওসীয়্যতই বদলানো যায় কিন্তু গোলামকে মুদাব্বার করা হলে তা পরিবর্তনের ইখতিয়ার নাই।

【2】

দুর্বল, বালক, পাগল ও নির্বোধের ওসীয়্যত বৈধ

আবূ বাকর ইব্নু হাযম (র) আমর ইব্নু সুলায়ম যুরাকী বলেছেন, উমার (রা)-কে বলা হল, এখানে গাস্সান গোত্রের একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে আছে, তার ওয়ারিস সিরিয়াতে এবং তার সম্পত্তিও আছে মদীনাতে, এখানে তার এক চাচাতো বোন ব্যতীত আর কোন ওয়ারিস নেই। উমার (রা) বললেন, তার জন্যই ওসীয়্যত করা চাই। অবশেষে ঐ ছেলে নিজ মালের ওসীয়্যত চাচাতো বোনের জন্য করেছিল। তার সম্পত্তির নাম ছিল বীরে জুশাম। আমর (রা) বলেন যে, ঐ সম্পত্তি ত্রিশ হাজার দিরহামে বিক্রয় হয়েছিল। আর তার চাচাতো বোনের নাম ছিল উম্মে আমর ইব্নু সুলাইম যুরাকী ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ বাকর ইব্নু হাযম (র) মাদীনাতে গাসসান বংশের একটি ছেলের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হল, আর তার ওয়ারিস ছিল সিরিয়াতে । তার কথা উমার (রা)-এর কাছে বলা হল এবং জিজ্ঞেস করা হল যে, সে ওসীয়্যত করবে কি? তিনি বললেন হ্যাঁ, সে যেন ওসীয়্যত করে। আবূ বাকর বলেন, ঐ ছেলের বয়স দশ অথবা বার বৎসর ছিল। অতঃপর সে তার বীরে জুশাম নামক সম্পত্তি ওসীয়্যত করে গেল, যার বিক্রয়মূল্য বাবদ প্রাপ্ত হয়েছিল ত্রিশ হাজার দিরহাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন এটা আমাদের নিকট সর্বসম্মত বিষয় যে, দুর্বল বুদ্ধির লোক, নির্বোধ, পাগল যার মাঝে মাঝে হুশ ফিরে আসে এমন লোকদের ওসীয়্যত শুদ্ধ হবে যখন তার এতদূর আকল থাকে যে, সে যা কিছু ওসীয়্যত করছে তা সে বুঝে। আর যদি এতদুর আকলও না থাকে যে, সে কি ওসীয়্যত করল তা বুঝতে পারে না। তবে তার ওসীয়্যত শুদ্ধ হবে না।

【3】

এক-তৃতীয়াংশের অধিক ওসীয়াতের ফয়সালা

সা‘আদ ইব্নু আবি ওয়াক্কাস (রা) বিদায় হজ্জের বৎসর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার অসুখের সময় আমাকে দেখতে আসেন, আমার অসুখ খুব কঠিন ছিল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি দেখতেছেন যে, আমার অবস্থা কি এবং আমি খুব সম্পদশালী, আমার কোন ওয়ারিস নেই এক মেয়ে ব্যতীত। এখন আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সাদাকাহ্ করে দিতে পারব কি? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘না’। আমি বললাম, তা হলে অর্ধেক দান করে দেই? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, না। অতঃপর তিনি নিজেই বললেন এক-তৃতীয়াংশ দান কর। যদিও এটাও অনেক। মনে রেখ, তুমি তোমার ওয়ারিসদেরকে ধনী রেখে যাওয়া উত্তম তাদেরকে দরিদ্র এবং লোকের কাছে ভিক্ষা করুক এমন অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে। তুমি যা কিছু আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য খরচ করবে তার বিনিময় পাবে, চাই নিজ স্ত্রীর মুখে লোকমা উঠিয়ে দাও না কেন। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আমার সঙ্গীদের পিছনে থেকে যাব? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তুমি তাদের পেছনে থেকে যাও এবং সাওয়াবের কাজ করতে থাক তবে তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। এমনও হতে পারে যে, তুমি জীবিত থাকবে এবং তোমার দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলা বহু লোককে উপকৃত করবেন, আর এক দল তোমার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। (বুখারী ১২৯৬, মুসলিম ১৬২৮) হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীগণের হিজরত পূর্ণ কর এবং তাদেরকে পশ্চাদপসরণ করো না। কিন্তু বেচারা সা‘আদ ইব্নু খাওলা যার জন্য রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তর ব্যথিত হয়েছিল, কেননা তিনি মক্কায় ইন্তিকাল করেছিলেন। মালিক (র) বলেন যদি কেউ কারো জন্য এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ওসীয়্যত করে যায় এবং এটাও বলে যে, আমার অমুক গোলাম আজীবন অমুকের খেদমত করবে, অতঃপর সে আযাদ। তার পর যদি গোলামের মূল্য সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ হয় তবে গোলামের খেদমত গ্রহণ করা হবে এবং গোলামের ভাগ বন্টন করা হবে; যার জন্য সম্পদের ওসীয়্যত করা হয়েছে তার হিস্যা হবে এবং যার জন্য খেদমত করার ওসীয়্যত করা হয়েছে তারও হিস্যা খেদমতের মূল্য অনুযায়ী হবে এবং এই দুইজন লোকই ঐ গোলামের কামাই ও খেদমত হতে নিজ হিস্যা প্রাপ্ত হবে। যখন ঐ ব্যক্তি মারা যাবে যার খেদমতের কথা বলা হয়েছে, তখন গোলাম আযাদ হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন যদি কেউ কয়েক ব্যক্তির নাম নিয়ে বলে যে, অমুককে এত ‘অমুককে এত দিনার ওসীয়্যত করলাম; অতঃপর তার ওয়ারিসগণ বলে যে, ওসীয়্যত এক-তৃতীয়াংশের চাইতে অধিক হয়েছে তবে ওয়ারিসগণের ইখতিয়ার থাকবে, হয় তারা যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককেই ঐ পরিমাণ বিনিময় দেবে এবং পূর্ণ সম্পদ নিজেরা নিয়ে নিবে অথবা তাদেরকে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দিয়ে দেবে যেন তারা বন্টন করে নিতে পারে।

【4】

গর্ভবতী, রোগী ও মুজাহিদ সম্পর্কে হুকুম কতটুকু ওসীয়্যত করতে পারবে

মালিক (র) গর্ভবতীর হুকুম ও অসুস্থ মানুষের হুকুম একই। যখন সাধারণ অসুখ হয়, মৃত্যুর ভয় না থাকে তখন রোগী তার সম্পত্তির মধ্যে যা খুশী তাই করতে পারে। আর যদি অসুখ সাংঘাতিক ধরনের হয়, যার বাঁচবার আশা খুব কম, তবে সম্পত্তির মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি বিক্রয় করতে পারবে না। গর্ভবতীর হুকুমও অনুরূপ। গর্ভবতীর প্রথমাবস্থায় যখন সে খুব আনন্দে থাকে তখন তার সম্পত্তিতে যা ইচ্ছা সে তাই করতে পারে, কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, “আমি তাকে (বিবি সারাকে) ইসহাকের সুসংবাদ দিলাম, আর ইসহাকের পরে ইয়া‘কুবের সুসংবাদ দিলাম। আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন যে, “যখন আদম হাওয়ার সাথে সহবাস করল তখন হাওয়ার সামান্য গর্ভের সঞ্চার হল এবং চলাফেরা করতে লাগল। অতঃপর যখন গর্ভ অধিক ভারী হয়ে গেল তখন দুইজনেই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দু‘আ করলেন যে, যদি আমাদেরকে নেক সন্তান দেন তবে আপনার কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।” সুতরাং যখন গর্ভবতীর গর্ভ বেশি ভারী হয়ে যায় তখন সে তার সম্পদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশির মধ্যে কিছুই করতে পারবে না। এই অবস্থা ছয়মাস পরে হয়। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ কিতাবে বলেছেন যে, মাতাগণ সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বৎসরে দুগ্ধ পান করাবে। যে ব্যক্তি দুগ্ধপানকে পূর্ণ করাতে চায়। পুনরায় বলেন যে, গর্ভ ধারণ ও দুধ ছাড়ানো ত্রিশ মাস। সুতরাং যখন গর্ভবতী ছয়মাস অতিবাহিত হয়ে যায় গর্ভ সঞ্চারের দিন হতে, তখন সে তার সম্পত্তিতে এক-তৃতীয়াংশের বেশিতে কিছুই করতে পারবে না। মালিক (র) বলেন যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দানে (যোদ্ধাদের) কাতারের মধ্যে থাকে সেও তার মালের এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিছু করতে পারবে না। তার হুকুমও গর্ভবতী এবং রোগীর হুকুমের মতো।

【5】

ওয়ারিসদের জন্য ওসীয়্যত এবং সঞ্চয় করার হুকুম

মালিক (র) ওসীয়্যতের এই আয়াতটি ফারাইযের আয়াত দ্বারা মন্সুখ (রহিত) হয়ে গিয়েছে, আয়াতটি এই- إِنْ تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ মালিক (র) বলেন আমাদের কাছে এই নিয়ম (সুন্নাত) প্রমাণিত। তাতে কোন মতভেদ নেই, ওয়ারিসদের অনুমতি ব্যতীত ওসীয়্যত জায়েয নেই। যদি কোন ওয়ারিস অনুমতি দেয় আর কেউ অনুমতি না দেয় তবে যারা অনুমতি দিয়েছে তাদের মীরাস হতে তা আদায় করা হবে। মালিক (র) বলেন যদি কেউ অসুস্থ হয় এবং সে ওসীয়্যত করতে চায় এবং ওয়ারিসগণ হতে অনুমতি চায় তবে এই অসুস্থ অবস্থায় তার জন্য এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তিতে ওসীয়্যত জায়েয হবে না। হ্যাঁ, যদি তারা এক-তৃতীয়াংশের চাইতে বেশি ওসীয়্যতের অনুমতি দেয় তবে তাদের এই কথা হতে ফিরে যাওয়া জায়েয নেই। যদি তা জায়েয হত তবে প্রত্যেক ওয়ারিসই নিজ অংশ ফিরিয়ে নিত, যদি ওসীয়্যতকারী মারা যেত তবে ওসীয়্যতকৃত সম্পদ নিয়ে লইত। আর ওসীয়্যত এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে বন্ধ করে দিত, কিন্তু যদি কেউ সুস্থ থাকা অবস্থায় ওয়ারিসগণের নিকট কোন ওয়ারিসের জন্য ওসীয়্যতের অনুমতি চায় এবং তারা অনুমতি দিয়ে দেয় তবে তা হতে ফিরে যেতে পারে এবং তা কার্যকর নাও হতে দিতে পারে। কেননা সে সুস্থ অবস্থায় তার পূর্ণ সম্পদের উপরই এদিক-সেদিক করবার ক্ষমতা রাখে। তার ইখতিয়ার আছে, সে সমস্তই ওসীয়্যত করে দিতে পারে অথবা সমস্তই কাউকেও দিতে পারে তখন মালিকের অনুমতি চাওয়া ও ওয়ারিসদের অনুমতি দেয়া অনর্থক। আর যদি রোগী ওয়ারিসদেরকে তার মৃত্যুর সময় বলে যে, তোমাদের মীরাস আমাকে হেবা (দান) করে দাও, সে হেবাকারীদের প্রদত্ত সম্পদে কিন্তু রোগী কোন পরিবর্তন করেনি এবং মারা গিয়েছে তবে ঐ সকল অংশ ওয়ারিসগণ পাবে। কিন্তু যদি রোগী বলে যে, ঐ ওয়ারিস বড়ই দুর্বল। আমি ভাল মনে করি যে, তুমি তোমার অংশ তাকে হেবা করে দাও। যদি সে হেবা করে দেয়, তবে তা জায়েয হবে। যদি ওয়ারিস নিজ হিস্যা মৃত ব্যক্তিকে দান করে দেয় এবং মৃত ব্যক্তি সেখান হতে কাউকেও কিছু দেয় আর কিছু বাকী থাকে, ঐ বাকী অংশ ঐ ওয়ারিসই পাবে। মালিক (র) বলেন যদি কোন ব্যক্তি (ওয়ারিসের জন্য) ওসীয়্যতের পরে জানতে পারল যে, সে ওয়ারিসকে যা দিয়েছিল তা সে গ্রহণ করেনি এবং অন্য ওয়ারিসগণও তার অনুমতি দেয়নি তবে তা ওয়ারিসগণেরই হক, আল্লাহ্‌র নির্দেশ অনুযায়ী বন্টন হবে। কেননা মৃত ব্যক্তি এখানে এক তৃতীয়াংশের মধ্য থেকে কিছু দিতে চায়নি।

【6】

যে পুরুষ নপুংসক তার এবং বাচ্চার মালিক কে হবে?

হিশাম ইব্নু উরওয়া (র) তাঁর পিতা এক নপুংসক (হিজরা) ব্যক্তি উম্মুল মু‘মিনীন উম্মু সালমার নিকট বসা ছিল। সে আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ উমাইয়াকে বলিতেছিল, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কথা শুনিতে ছিলেন যদি আল্লাহ্ তা‘আলা তায়েফে তোমাদেরকে আগামীকাল বিজয়ী করেন, তবে তুমি গাইলানের মেয়েকে নিশ্চয় গ্রহণ করবে। কারণ যখন সে সম্মুখ দিয়ে আসে তখন তার পেটে চারটি (ভাঁজ) থাকে আর যখন প্রস্থান করে তখন আটটি ভাঁজ নিয়ে প্রস্থান করে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শুনে) বললেন এই সকল লোক যেন তোমাদের নিকট আর না আসে। (বুখারী ৪৩২৪, ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে ২১৮০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদটি মুরসাল) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সা‘ঈদ (র) একজন আনসারী মেয়েলোক উমার ইব্নু খাত্তাব (রা)-এর স্ত্রী ছিলেন। তাঁর গর্ভে একটি ছেলে সন্তান জন্মাল। তার নাম আসিম রাখা হয়েছিল। ইত্যবসরে উমার (রা) ঐ স্ত্রীকে তালাক দিলেন। একদা উমার (রা) মসজিদে কুবার বারান্দায় এ সন্তানকে অন্যান্য ছেলের সাথে খেলাধুলা করতে দেখতে পেলেন তিনি তার বাহুতে ধরে তাকে স্বীয় সাওয়ারীতে বসিয়ে নিলেন। আসিমের মাতামহী (নানী) তা দেখে উমারকে বাধা দিলেন এবং তার সাথে ঝগড়া করতে লাগলেন। অতঃপর উভয়ে আবূ বাকর সিদ্দীক (রা)-এর নিকট এসে সন্তানের দাবি জানালেন। আবূ বাকর সিদ্দীক (রা) বললেন সন্তানটিকে উভয়ের মধ্যে ছেড়ে দাও (সে যাকে গ্রহণ করে তারই হবে)। উমার (রা) এতে চুপ হয়ে গেলেন। মালিক (র) বলেন, এ ক্ষেত্রে আমিও এই অভিমত পোষণ করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【7】

মাল বিক্রয়ের পর তাতে ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে ভর্তুকী কে দিবে?

মালিক (র) কেউ যদি কোন জীব কিংবা কাপড় কিংবা অন্য কোন বস্তু খরিদ করল, অতঃপর তাতে ত্রুটি লক্ষ্য করা গেল যাতে বিক্রয় নাজায়েয সাব্যস্ত হল, তখন ক্রেতাকে বলা হবে, দোষী মাল বিক্রেতাকে ফিরিয়ে দাও। মালিক (র) বলেন, বিক্রেতার দোষী মালের ঐ দিনের মূল্য পাওয়ার অধিকার ছিল, যেই দিন তা বিক্রয় করা হয়েছিল, ফেরত দেয়ার দিনের মূল্য নয়। যেই দিন ক্রেতা তা ক্রয় করেছিল, সেই দিন হতে তা ক্রেতার অধীনে ছিল এবং বর্তমানে মাল দোষী সাব্যস্ত হলে তা ক্রেতার উপরই বর্তিবে। মালের মূল্য বৃদ্ধি হলেও ক্রেতাই মালিক হবে, কোন সময় এইরূপও হয় যে, মাল ক্রয় করার সময় বাজারে মালের খুবই চাহিদা থাকে অথচ মাল দোষী বলে ফেরত দেয়ার সময় উহার চাহিদা কমে যায়। বাজারে উহার চাহিদা থাকাকালে এক ব্যক্তি দশ দীনার দ্বারা কোন বস্তু ক্রয় করল এবং কিছু দিন তা আটকে রাখার পর যখন বাজারে চাহিদা কমে গেল এবং উহার মূল্য মাত্র এক দীনারে উপনীত হল তখন তা ফেরত দেয়ায় বিক্রেতার নয় দীনার ক্ষতি হল। তা হওয়া উচিত নয় বরং যেই দিন মাল বিক্রয় করেছিল সেই দিনের মূল্য বিক্রেতা পাবে। অর্থাৎ দশ দীনার।

【8】

প্রশাসন ও বিচার সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম এবং বিচারকের দায়িত্ব গ্রহণকে অপছন্দ করা

ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সা‘ঈদ (র) আবূ দারদা (রা) সালমান ফারসী (রা)-এর নিকট লিখেছেন যে, পবিত্র ভূমিতে চলে আস। উত্তরে সালমান লিখলেন, ভূমি কাউকেও পবিত্র করতে সক্ষম নয়, বরং মানুষকে তার আমলই পবিত্র করে। শুনতে পেলাম, তোমাকে ডাক্তার (বিচারপতি) নিযুক্ত করা হয়েছে এবং মানুষকে ঔষধপত্র দিয়ে চিকিৎসা করে থাক, যদি তুমি চিকিৎসাশাস্ত্র শিখে তা করে থাক এবং এতে রোগ নিরাময় হয় তবে তা উত্তম, আর যদি চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞান লাভ না করে তুমি চিকিৎসক সেজে থাক তবে সাবধান ও সতর্ক হও- এমন না হয় যে, তোমার ভুল সিদ্ধান্তের দ্বারা মানুষকে মেরে ফেলবে, ফলে তুমি দোযখে প্রবেশ করবে। অতঃপর তিনি যখন কোন দুই ব্যক্তির মধ্যে ফয়সালা করতেন এবং উভয়ে চলে যেতে শুরু করলে তখন উভয়কে বলতেন তোমরা পুনরায় তোমাদের ঘটনা বর্ণনা কর, আমি আবার বিবেচনা করি। কারণ আমি তোমাদের মূল উদ্দেশ্য জানি না, কেবল শুনে চিকিৎসা করি। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন যদি কেউ অন্যের গোলামকে মালিকের অনুমতি ব্যতীত কোন শুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত করে এবং সেই কাজ পারিশ্রমিকযোগ্য, তদ্দারা গোলামের কোন ক্ষতি হলে, কর্মে নিয়োগকারীকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আর ক্রীতদাস অক্ষত অবস্থায় কর্ম সম্পাদন করলে এবং তার কর্তা পারিশ্রমিক দাবি করলে তবে পারিশ্রমিক কর্তার প্রাপ্য হবে, এটাই আমাদের ফয়সালা। মালিক (র) বলেন গোলামের কিছু অংশ যদি স্বাধীন এবং কিছু অংশ পরাধীন থাকে তবে গোলামের মাল তার হাতেই থাকবে, তা সে কোন নতুন কাজে ব্যয় করতে পারবে না। কেবল নিজের ভরণপোষণে নিয়ম মুতাবিক ব্যয় করবে। তার মৃত্যুর পর যা অবশিষ্ট থাকে তা যে মালিক তার অংশ আযাদ করেনি সে পাবে। মালিক (র) বলেন আমাদের ফায়সালা হল, যে দিন সন্তান ধনবান হয়ে যায়, পিতা ইচ্ছা করেন যে, যা তার প্রতি খরচ করা হয়েছে তা ফেরত নিবে, তবে যেদিন হতে তার জন্য খরচ করা হয়েছে সেদিন হতে হিসাব করে খরচ আদায় করে নিবে, মাল নগদ অর্থই হোক বা অন্য কোন বস্তু হোক। উমার ইব্নু আবদির রহমান ইব্নু দালাফ মুযানী (র) জুহাইনা গোত্রের এক ব্যক্তি (উসাইফা) সকল হাজীর পূর্বে যেয়ে ভাল ভাল উট উচ্চমূল্যে খরিদ করে নিতে এবং তাড়াতাড়ি মক্কা শরীফ যেয়ে পৌঁছাত। এক সময় সে গরীব হয়ে পড়ল। পাওনাদারগণ স্বীয় টাকা আদায়ের জন্য উমার (রা) ইব্নু খাত্তাবের নিকট বিচার প্রার্থী হল। উমার (রা) হামদ ও সালাত পাঠ করার পর সকলকে সম্বোধন করে বললেন! উসাইফা “জুহাইনা গোত্রের উসাইফা” টাকা কর্জ করেছিল এবং আমানত হস্তক্ষেপ করেছিল। কারণ লোকেরা বলে থাকে যে, উসাইফা সকলের পূর্বে মক্কা শরীফ পৌঁছে যায়। তোমরা জেনে রাখ, সে কর্জ করে তা আদায় করার মনোবৃত্তি রাখেনি। বর্তমানে সে দরিদ্র হয়ে পড়েছে, অথচ কর্জ তার সমুদয় মাল গ্রাস করে ফেলেছে। পাওনাদারগণ আগামীকাল সকালে আমার কাছে উপস্থিত হবে। আমি তার সকল মাল পাওনাদারকে বন্টন করে দিব। তোমরা কর্জ নিতে হুঁশিয়ার থেক। কেননা, কর্জের প্রারম্ভ হচ্ছে দুশ্চিন্তা, পরিশেষ হচ্ছে কলহ-বিবাদ। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)

【9】

গোলাম যদি কারো ক্ষতি করে কিংবা কাউকেও আঘাত করে, এর হুকুম

মালিক (র) গোলাম অপরাধ করলে আমাদের নিকট স্বীকৃত নিয়ম এই গোলাম যদি কাউকেও আঘাত করে কিংবা কারো কোন বস্তু গোপনে নিয়ে নেয়, অথবা স্বীয় ঠিকানায় ফিরার পূর্বে চারণ ক্ষেত্র বা পর্বত হতে মেষ বা বকরী চুরি করে কিংবা কারো বৃক্ষের ফল কেটে আনে বা নষ্ট করে কিংবা অন্য বস্তু চুরি করে নেয়, এতে তার হাত কর্তন করার হুকুম জারি হবে না। তবে গোলাম এর জন্য দায়ী হবে। এমতাবস্থায় গোলামের মালিক ইচ্ছা করলে বর্ণিত বস্তুগুলোর মূল্য আদায় করে কিংবা আঘাতের ক্ষতিপূরণ আদায় করে গোলামকে মুক্ত করে নিজে গোলাম রেখে দিবে কিংবা উক্ত পণ্যের বিনিময়ে গোলাম তাদেরকে দিয়ে দিবে। কিন্তু গোলামের মূল্য যদি বিনিময় মূল্যের চাইতে কম হয় তবে বর্ধিত মূল্য দিতে হবে না।

【10】

যা সন্তানকে হেবা (দান) করা জায়েয হবে

সা‘ঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) উসমান ইব্নু আফফান (রা) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে কোন বস্তু দান করে, যে সন্তান এখনও উহা গ্রহণ করার উপযুক্ত হয়নি এবং এই দানের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে দেয় এবং তাতে সাক্ষী নিযুক্ত করে তবে এটা জায়েয হবে যদিও তার অভিভাবক পিতা থাকেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন আমাদের নিয়ম মতে যদি কোন ব্যক্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য দান করে, অতঃপর তার সন্তান মারা যায় এবং পিতাই অভিভাবক থাকে তবে ঐ মাল সন্তানের হবে না বরং পিতারই থাকবে। হ্যাঁ, যদি পিতা সেই মাল পৃথক করে দিয়ে থাকে কিংবা কারো কাছে আমানত রেখে থাকে তবে তা সন্তানের বলে সাব্যস্ত হবে।