39. ক্রীতদাস আযাদীর জন্য অর্থ প্রদান করার চুক্তি করার অধ্যায়

【1】

মুকাতাব [১]-এর ব্যাপারে ফয়সালা

[১] মুকাতাব [নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কর্তার সাথে আযাদী লাভের চুক্তি করাকে কিতাবাত বলা হয়। যে ক্রীতদাস আযাদীর জন্য অর্থ প্রদান করার চুক্তি করল তাকে মুকাতাব এবং যে কর্তা আযাদী প্রদানের চুক্তি করল তাকে মুকাতিব বলা হয়। আর যে অর্থের বিনিময়ে আযাদীর চুক্তি হয়েছে উহাকে “বদল-এ কিতাবাত” বলা হয়। সালমান ফারসী (রা) ও বরীরা (রা) এইরূপে আযাদী লাভ করে ছিলেন। আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) কিতাবাত নির্ধারিত অর্থের (বা যাহার উপর কিতাবাত হইয়াছে) কিছু অংশও যতক্ষণ অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুকাতাব গোলামই থাকবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ অর্থে মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ ৩৯২৭, তিরমিযী ১২৬০, ইবনু মাজাহ ২৫১৯, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন [সহীহ আল জামে] ৬৭২২) মালিক (র) বলেন উরওয়াহ্ ইব্নু যুবাইর (র) সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (রা) উভয়ে বলতেন কিতাবাতের কিছু অংশ যতক্ষণ অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুকাতাব গোলামই থেকে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন আমার মতও তাই। মালিক (র) বলেন যদি মুকাতাবের মৃত্যু হয় এবং “বদল-এ কিতাবাত” হতে যে পরিমাণ (আদায় করা) তার জিম্মায় রয়েছে ততোধিক মাল সে রেখে যায়, আর তার সন্তানাদি থাকে যারা কিতাবাত হওয়ার পর জন্মেছে অথবা উহাদেরসহ কিতাবাত অনুষ্ঠিত হয়েছে তবে কিতাবাতের (নির্ধারিত) মাল শোধ করার পর যা অবশিষ্ট থাকবে উহার উত্তরাধিকারী তারা হবে। হুমায়দ ইব্নু কায়স মক্কী (র) “ইব্নুল মুতাওয়াক্কিল”-এর একজন মুকাতাব মক্কাতে মারা যায় এবং সে রেখে যায় তার বদল-এ কিতাবাত-এর অবশিষ্ট এবং লোকের অনেক ঋণ। আরও রেখে যায় তার এক কন্যাকে। মক্কার শাসনকর্তা এই ব্যাপারে ফয়সালা করতে যেয়ে মুশকিলে পড়েন। (কারণ হুকুম তার জানা ছিল না) তাই তিনি এই ব্যাপারে প্রশ্ন করে পত্র লিখলেন আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ানের নিকট। আবদুল মালিক ইব্নু মারওয়ান তার নিকট (উত্তরে) লিখলেন, প্রথমে লোকের ঋণ পরিশোধ কর, তারপর “বদল-এ কিতাবাত”-এর বাকী অংশ পরিশোধ কর। অতঃপর তার যা অবশিষ্ট রইল উহা তার কন্যা ও কর্তার মধ্যে বন্টন করে দাও। (মাকতু, হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন আমাদের মতে ক্রীতদাস কিতাবাতের প্রার্থনা জানালে কর্তার জন্য উহার সাথে কিতাবাতের চুক্তি করা জরুরী নয় এবং কোন ইমামকে ইহা জরুরী বলে মত প্রকাশ করতে আমি শুনিনি। কোন কোন আলেমকে যখন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হল এবং (কিতাবাত জরুরী হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ) তাঁকে বলা হল আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছে: فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا. অর্থাৎ তাদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা জান তাদের মুক্তিদানে কল্যাণ আছে। (২৪:৩৩) আমি শুনেছি তিনি (উত্তরে) তিনি (পরে উল্লেখিত) এই আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করলেন: وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا. অর্থাৎ যখন তোমরা ইহরাম মুক্ত হবে শিকার করতে পার। (৫:২) فَإِذَا قُضِيَتْ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللهِ. অর্থাৎ সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা বের হয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে। [১] (৬২:১০) মালিক (র) বলেন এটা একটি হুকুম, আল্লাহ্ তা‘আলা লোকদেরকে এর অনুমতি দিয়েছেন ইহা তাদের জন্য ওয়াজিব নয়। মালিক (র) বলেন, কোন কোন আলিম ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী, وَآتُوهُمْ مِنْ مَالِ اللهِ الَّذِي آتَاكُمْ. “আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা হতে তোমরা তাদেরকে দান করবে” (২৪ ৩৩) সম্পর্কে বলতে আমি শুনেছি, এটা এই যে, কোন ব্যক্তি গোলামের সাথে কিতাবাত করেছে কিতাবাতের সময় শেষ হয়ে এলে ক্রীতদাস হতে প্রাপ্য অংশের নির্দিষ্ট কিছু কমিয়ে দেয়া। মালিক (র) বলেন-“আহল ইলম”-এর নিকট হতে (এই ব্যাপারে) আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই অতি উত্তম। আমি মদীনার লোকদেরকে এইরূপ আমল করতে দেখেছি। মালিক (র) বলেন আমার কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) তাঁর এক ক্রীতদাসের সাথে পঁয়ত্রিশ হাজার দিরহামের বিনিময়ে মুকাতাবাত করেছিলেন, অতঃপর কিতাবাতের শেষের দিকে পাঁচ হাজার দিরহাম কমিয়ে দিলেন। মালিক (র) বলেন আমাদের কাছে মাস‘আলা এই, মুকাতাব গোলামের সাথে তার কর্তা কিতাবাত চুক্তি করলে গোলামের মাল তারই গোলামের থাকবে কিন্তু সন্তানগণ তার অধিকারে থাকবে না। যদি কিতাবাত করার সময় সন্তানগণ গোলামের অধিকারে থাকবে বলে শর্ত করে থাকে তবে অন্য কথা। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাবের সাথে তার কর্তা কিতাবাত চুক্তি করেছে চুক্তিকালে তার (ক্রীতদাসের) একটি দাসী ছিল, যে দাসী তার দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে। অথচ তখন ইহা গোলাম ও তাঁর কর্তা কারো জানা ছিল না। তবে সে সন্তান ক্রীতদাসের হবে না। কারণ কিতাবাত চুক্তিতে এই সন্তানের কথা শামিল ছিল না। ফলে এই সন্তান কর্তার অধিকারে থাকবে। পক্ষান্তরে ক্রীতদাসটি (সন্তানের জননী) গোলামের মালিকানায় থাকবে। কারণ উহা তারই সম্পদ। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর পক্ষ হতে মীরাস সূত্রে একটি মুকাতাব গোলাম লাভ করেছে, এবং স্বীয় এক ছেলেও আছে তবে সে এবং তারা উভয়ে “বদল-এ কিতাবাত” পরিশোধ করার পূর্বে যদি মুকাতাবের মৃত্যু হয় তবে তারা উভয়ে কুরআনে বর্ণিত মীরাস আইন অনুযায়ী পরস্পর মীরাস বন্টন করে নিবে। আর যদি “বদল-এ কিতাবাত” পরিশোধ করার পর উহার মৃত্যু হয় তবে উহার মীরাস লাভ করবে (স্ত্রীর) পুত্র, উহার মীরাসে স্বামীর কোন হক থাকবে না। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব তার ক্রীতদাসের সাথে কিতাবাত চুক্তি করেছে তার ব্যাপারে লক্ষ্য করতে হবে যে, যদি সে ক্রীতদাসের প্রতি উদারতা ও মমতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে এটা করে থাকে এবং উহা জানাও যায় এভাবে যে, সে ক্রীতদাসের কিতাবাত চুক্তির নির্ধারিত অর্থ হতে কিছু পরিমাণ অর্থ ছেড়ে দেয় তবে এটা বৈধ হবে না। আর যদি উৎসাহ, অর্থ উপার্জন ও অতিরিক্ত অনুসন্ধান এবং তার আযাদীর পথে মদদ লাভের উদ্দেশ্যে স্বীয় এক ক্রীতদাসের সাথে মুকাতাবাত করে থাকে তবে (তার জন্য) এটা বৈধ হবে। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি নিজের মুকাতাব ক্রীতদাসীর সাথে সঙ্গম করেছে, তাতে যদি সে অন্তঃসত্ত্বা হয়, তবে উহার ইখতিয়ার থাকবে, ইচ্ছা হলে (কর্তার) উম্মে ওয়ালাদ হিসেবে থাকবে, অথবা ইচ্ছা করলে (তার সাবেক) কিতাবাতের প্রতিশ্রুতি মুতাবিক অগ্রসর হতে থাকবে। আর যদি সে অন্তঃসত্ত্বা না হয়, তবে সে কিতাবাতের উপর বহাল থাকবে। মালিক (র) বলেন আমাদের কাছে যে সিদ্ধান্তে মতৈক্য স্থাপিত হয়েছে তা এই, যে ক্রীতদাস দুই ব্যক্তির মালিকানাতে থাকে, তাদের একজন ক্রীতদাস হতে নিজের অংশে কিতাবাত চুক্তি করতে পারবে না, তার অপর শরীক এর অনুমতি দিক বা না দিক। তবে যদি তারা উভয়ে একত্রে ক্রীতদাসের সহিত কিতাবাত চুক্তি করে (তা বৈধ হবে)। কারণ কিতাবাত হল ক্রীতদাসের জন্য আযাদ লাভের চুক্তি, যার উপর কিতাবাত নির্ধারিত হয়েছে-ক্রীতদাস যদি উহা পরিশোধ করে তবে ক্রীতদাস আযাদ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যে শরীক কিছু অংশের কিতাবাত করেছে তার পক্ষে ক্রীতদাসের আযাদী পূর্ণরূপে সম্পন্ন করা জরুরী নয়। এটা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন তার বিপরীত। (তিনি বলেছেন) যে ব্যক্তি ক্রীতদাসে তার যে অংশ রয়েছে তা আযাদ করে দেয় ন্যায়সঙ্গতভাবে তার উপর (অবশিষ্ট অংশের) মূল্য নির্ধারণ করা হবে (ইহা আযাদীর ব্যাপারে প্রযোজ্য কিন্তু কিতাবাতের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়)। মালিক (র) বলেন যদি এক অংশীদার কিতাবাত করেছে, উহা সম্পর্কে অন্য অংশীদার জ্ঞাত নয়, মুকাতাব হতে সে সম্পূর্ণ বদল-এ কিতাবাত (বিনিময়ের মূল্য) আদায় করেছে অথবা বদল-এ কিতাবাত আদায় করেনি, অথচ অন্য শরীক তখনও ইহা জানে না-এই অবস্থায় সেই শরীক কিতাবাতের অর্থ হতে যা গ্রহণ করেছে উহা ফিরিয়ে দিবে। তারপর সে এবং তার শরীক হিস্সা মুতাবিক উহা ভাগ করে নিবে এবং তার কিতাবাত বাতিল হয়ে যাবে। ক্রীতদাস প্রথম অবস্থায় যেমন ক্রীতদাস ছিল এখনও উভয়ের ক্রীতদাস থাকবে। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব ক্রীতদাস দুই কর্তার মালিকানায় রয়েছে। এক কর্তা ক্রীতদাসকে তার হকের ব্যাপারে কিছু অবকাশ দিল। অপর কর্তা অবকাশ দিতে অস্বীকার করল। অতঃপর যে অবকাশ প্রদান করতে অস্বীকার করেছে সে তার কিছু হক (ক্রীতদাস হতে) আদায় করেছে। তারপর মুতাকাব-এর মৃত্যু হল। সে যা মাল রেখে গিয়েছে উহাতে “বদল-এক কিতাবাত” পূর্ণ হওয়ার নয়। মালিক (র) বলেন তারা (দুই শরীক) উভয়ে ভাগ করবে তাদের উভয়ের হিস্সা মুতাবিক। (অর্থাৎ) তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পরিমাণ গ্রহণ করবে, আর যদি মুকাতাব “বদল-এ কিতাবাত” হতে অতিরিক্ত মাল রেখে যায়, তবে তাদের প্রত্যেকে ‘বদল-এ কিতাবাত”-এর স্ব-স্ব হিস্সা গ্রহণ করবে, অবশিষ্ট যা থাকে উহা উভয়ের মধ্যে সমভাবে বন্টন করে নিবে। আর যদি মুকাতাব অপারগ হয়, (অপর দিকে) যে অংশীদার অবকাশ দেয়নি সে তার অপর অংশীদার অপেক্ষা অধিক (অর্থ) গ্রহণ করেছে, তবে তাদের উভয়ের মধ্যে ক্রীতদাসের অংশ থাকবে অর্ধেক অর্ধেক। যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেছে সে তার অংশীদারকে উহা ফেরত দিবে না। কারণ সে অংশীদারের অনুমতি নিয়ে তার প্রাপ্য হক গ্রহণ করেছে। আর যদি এক অংশীদার তার প্রাপ্য অংশ মাফ করে দেয় অতঃপর তার অপর অংশীদার ক্রীতদাস হতে (তার প্রাপ্য হতে) কিছু অংশ গ্রহণ করেছে। তারপর মুকাতাব গোলাম অপারগ হয়েছে। তবে গোলাম উভয়ের মধ্যে (সমান সমান) হবে। আর যে শরীকদার কিছু অর্থ গ্রহণ করেছে সে আপন অংশীদারকে কিছুই ফেরত দিবে না। কারণ সে ক্রীতদাসের উপর তার যা প্রাপ্য ছিল উহা গ্রহণ করেছে। এর দৃষ্টান্ত এইরূপ, দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তির উপর ঋণ রয়েছে একই সূত্রে, তাদের একজন (খাতককে) অবকাশ দিল, অপর ব্যক্তি কৃপণতা করল এবং তার কিছু প্রাপ্য উশুল করল, তারপর খাতক রিক্ত হস্ত হয়ে গেল। (এই অবস্থাতে) যে ব্যক্তি তার হক গ্রহণ করেছে তাকে যা গ্রহণ করেছে উহা হতে (অপর ঋণ তার জন্য) কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে না।

【2】

“কিতাবাত” (চুক্তির অর্থ আদায়ের)-এর ব্যাপারে জামিন [১]

[১] হামীল বলা হয় জামিনকে, হামীল যে বোঝা বহন করে, জামিনদার যার জামিন হয়ে উহার বোঝা বহন করে, কয়েকজন ক্রীতদাসের সহিত একত্রে আযাদীর চুক্তি হলে তবে উহাদের একজন অক্ষম হলে দলের অন্যান্য ক্রীতদাস অপারগের পক্ষে অর্থ আদায়ের জামিন হবে, অন্য কোন ব্যক্তি জামিন হলে তা বৈধ নয়। মালিক (র) আমাদের কাছে এ ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত হল এই- কয়েকজন ক্রীতদাসের সাথে একই চুক্তিতে কিতাবাত করা হলে তবে তাদের একজন অপরজনের জামিন হবে, তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণে তাদের উপর হতে কিছু কমানো হবে না। উহাদের একজন যদি বলে, আমি অপারগ হয়েছি এবং হাত ছেড়ে দেয়, তবে তার সাথীগণের অধিকার থাকবে তাকে সাধ্যমতে কাজে লাগানো এবং তার দ্বারা তারা তাদের কিতাবাতের (বিনিময় মূল্য পরিশোধ) ব্যাপারে সহযোগিতা করবে যেন তারা আযাদ হলে সেও আযাদ হয়ে যায়। আর তারা গোলাম থেকে গেলে সেও গোলাম থাকবে। মালিক (র) বলেন এই ব্যাপারে আমাদের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত অভিমত হল, কর্তা ক্রীতদাসের সহিত কিতাবাত চুক্তি করলে তবে ক্রীতদাসের কিতাবাতের ব্যাপারে কর্তা অন্য কাউকেও জামিন করবে না। এমন কি গোলাম মারা গেলেও অথবা অপারগ হলেও। ইহা মুসলমানদের তরীকা নয়। কারণ যদি কোন ব্যক্তি ‘বদল-এ কিতাবাতের” ব্যাপারে মুকাতাব-এর পক্ষে কর্তার নিকট জামিন হয়, তারপর মুকাতাব-এর কর্তা সেই মাল জামিনদারের নিকট হতে আদায় করে তবে এই মাল অন্যায়ভাবে সে গ্রহণ করল। যেহেতু সে ব্যক্তি মুকাতাবকে খরিদও করেনি, খরিদ করলে তা মূল্য হতে গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধরা যেত। পক্ষান্তরে মুকাতাব আযাদও হয়নি, আযাদ হলে যা জামিনদার হতে গ্রহণ করা হয়েছে উহা ক্রীতদাসের আযাদীর বিনিময় হিসাবে ধরা যেত, মুকাতাব অক্ষম হলে সে কর্তার দিকে ফিরবে এবং সে কর্তার মালিকানায় দাস থেকে যাবে। এটা এইজন্য যে, কিতাবাত কোন দরকারী ঋণ নয় যার জন্য মুকাতাবের কর্তাকে কিতাবাতের জামানত দেয়া যায়, বরং কিতাবাত হচ্ছে এমন একটি বস্তু মুকাতাব তা আদায় করলে আযাদ হয়ে যাবে। আর যদি মুকাতাব-এর মৃত্যু হয় এবং তার জিম্বায় ঋণ থাকে তবে ঋণদাতাগণ মুকাতাব-এর কর্তার জন্য কিতাবাতের কারণে কোন হিস্সা বরাদ্দ করবে না। ঋণদাতাগণ কর্তা অপেক্ষা মুকাতাবের মালের অধিক হকদার, আর যদি মুকাতাব অপারগ হয় এবং তার উপর লোকের ঋণ থাকে তবে উহাকে, কর্তার গোলামির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। লোকদের ঋণসমূহ মুকাতাব-এর জিম্মায় থাকবে। ঋণদাতাগণ ক্রীতদাসের কর্তার সাথে তাঁর মূল্যের মধ্যে অংশীদার হবে না। মালিক (র) বলেন যখন কোন ব্যক্তি (ক্রীতদাসদের) এক দলের সাথে মুকাতাবাত করে (সকলের সাথে) একই কিতাবাতের মাধ্যমে এবং তাদের মধ্যে আত্মীয়তার কোন বন্ধন না থাকে, যদ্দরুন তারা পরস্পর মীরাসের অধিকারী হয়, তবে তারা একে অপরের জামিন হবে, একজনকে ছেড়ে অন্যজন আযাদ হবে না, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ “বদল-এ কিতাবাত” সকলে পরিশোধ না করে। যদি তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হয় এবং সে মাল রেখে যায়, যে মাল তাদের সকলের জিম্মায় যে “বদল-এ কিতাবাত” রয়েছে তা তার কর্তা পাবে। মৃত ব্যক্তির সাথে কিতাবাতে যারা শরীক ছিল তারা অবশিষ্ট মালের কোন অংশ পাবে না। কর্তা তাদের নিকট হতে “বদল-এ কিতাবাতে” তাদের যে হিস্সাসমূহ রয়েছে সেই সব উশুল করবে। তাদের নিকট হতে যে সব মাল মৃত (মুকাতাব) ব্যক্তির মাল হতে শোধ করা হয়েছিল। কারণ মৃত ব্যক্তি তাদের দায়িত্ব উঠিয়েছে (কিতাবাত এক হওয়ার দরুন) উহাদের দায়িত্ব হবে উহারা সকলে উহার (মৃত ব্যক্তির) মাল পরিশোধ করে দেয়া যদ্ধারা তারা আযাদী লাভ করেছে। আর যদি মৃত মুকাতাবেরে কোন আযাদ সন্তান থাকে যে কিতাবাতকালীন সময়ে পয়দা হয়নি এবং উহাকে অন্তর্ভুক্ত করে কিতাবাত করা হয়নি, তবে এই ছেলে তার মৃত পিতার মীরাসের কোন কিছু পাবে না। কারণ মুকাতাব (তার পিতা) মৃত্যুর সময় আযাদী লাভ করেনি।

【3】

বদল-এ কিতাবাত (বিনিময় মূল্য) হতে (কিতা‘আ [১]) কর্তণ করা

[১] কিতা’আ অর্থ কর্তণ করা, এর দ্বারা ক্রীতদাস কর্তার তাগাদাকে কেটে দেয়, অথবা কর্তা গোলামির রজ্জু কেটে দিয়ে গোলামকে আযাদ করে দেয়। ইহা এইরূপঃ কর্তা চুক্তি করেছে মুকাতাবের সাথে, এক বৎসরে দুই কিস্তিতে এক হাজার টাকা দিলে কর্তা মুকাতাবকে আযাদ করে দিবে। অতঃপর কর্তা বলল, আমাকে নগদ পাঁচ শত টাকা দাও, অবশিষ্ট পাঁচ শত টাকার দাবি আমি ছেড়ে দিলাম, তুমি পাঁচ শত টাকা শোধ করলে আযাদ হয়ে যাবে। একে কিতা’আঃ বলা হয়। মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়াত পৌঁছেছে যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মু সালামাহ (রা) স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে তাঁর মুকাতাবদের সঙ্গে মুকাতা‘আহ্ (কমানোর চুক্তি) করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন আমাদের কাছে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল এই- যে মুকাতাব দুই শরীকের মালিকানাতে রয়েছে, অপর শরীকের অনুমতি ছাড়া এক শরীকের জন্য তার হিস্সাতে মুকাতা‘আহ্ করা বৈধ নয়। এটা এইজন্য যে, ক্রীতদাস এবং তার মাল উভয়ের মধ্যে মিলিত, কাজেই তাদের একজনের জন্য উহার মাল হতে কিছু অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়, কিন্তু অপর শরীক যদি অনুমতি দেয় (তবে বৈধ হবে)। আর যদি তাদের একজন মুকাতাবের সাথে মুকাতা‘আহ্ (“বদল-এ কিতাবাত হতে কমাবার চুক্তি”) করে অপর শরীক ছাড়া, অতঃপর উহা সে গ্রহণ করে। তারপর মুকাতাবের মৃত্যু হয় এবং উহার নিকট মাল থাকে অথবা সে (অর্থ আদায়ে) অক্ষম হয়ে যায়, তবে যে (শরীক) মুকাতা‘আহ্ করেছে সে মুকাতাবের মাল হতে কিছুই পাবে না। আর বিনিময় অর্থের যে অংশ সে মুকাতা‘আহ্ করেছে অর্থাৎ কমিয়ে দিয়েছে সে উহা ফেরত দিয়ে মুকাতাবের রাকাবা (গর্দান অর্থাৎ দাসত্বের অধিকারী হওয়া)-তে তার (সাবেক) হকের দিকে ফিরে যাওয়ার করার ইখতিয়ারও তার থাকবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার শরীকের অনুমতি নিয়ে মুকাতাবের সাথে মুকাতা‘আহ্ করেছে, অতঃপর মুকাতাব অপারগ হয়েছে, তবে যে মুকাতা‘আহ্ (কমাবার চুক্তি) করেছে সে মুকাতা‘আহ্ অনুযায়ী যে অর্থ মুকাতাব হতে গ্রহণ করেছে সে অর্থ ফেরত দিয়ে পুনরায় মুকাতাবের মধ্যে তার অংশের অধিকারী হতে পছন্দ করলে এটা তার জন্য বৈধ হবে। আর যদি মুকাতাব মাল রেখে মারা যায় তবে যার কিতাবাত অবশিষ্ট রয়েছে (অর্থাৎ যে মুকাতা‘আহ্ করেনিই সে) মুকাতাব-এর উপর তার যে হক রয়েছে তা মুকাতাবের মাল হতে পূর্ণভাবে উশুল করবে। অতঃপর মুকাতাবের যে মাল অবশিষ্ট থাকে উহা যে মুকাতা‘আহ্ করেছে তার এবং তার অপর শরীকের মধ্যে বন্টন করা হবে মুকাতাবের উভয়ের মধ্যে হিস্সা অনুযায়ী। আর যদি দুই জনের এক জন মুকাতাবের সাথে মুতাকা‘আহ্ করে, অন্য শরীক তার সাথী কিতাবাতের উপর স্থির থাকে, অতঃপর মুকাতাব অর্থ আদায়ে অপারগ হয়, তবে যে মুকাতা‘আহ্ করেছে তাকে বলা হবে যে, আপনি ইচ্ছা করলে যা আপনি গ্রহণ করেছেন উহার অর্ধেক আপনার সাথীকে দিয়ে দিতে পারেন, গোলাম আপনাদের উভয়ের মধ্যে থাকবে অর্ধেক অর্ধেক। আর যদি আপনি এটা অস্বীকার করেন তবে গোলাম সম্পূর্ণ সেই শরীকের হবে, যে শরীক মুকাতা‘আহ্ না করে মুকাতাবকে যেমন ছিল তেমনি রেখে দিয়েছে। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব দুই ব্যক্তির শরীকানাতে রয়েছে, তাদের একজন তার সাথীর (শরীক) অনুমতি নিয়ে মুকাতাবের সাথে মুকাতা‘আহ্ করেছে, অতঃপর যে শরীক দাস রেখে দিয়েছে সে গ্রহণ করল (মুকাতাব হতে) ততটুকু যতটুকুর উপর তার সাথী শরীক মুকাতা‘আহ্ করেছে অথবা ততোধিক। তারপর মুকাতাব অক্ষম হল, মালিক (র) বলেন গোলাম তাদের উভয়ের মধ্যে থাকবে। কারণ সে মুকাতাবের উপর তার যে হক রয়েছে উহা গ্রহণ করেছে, [কাজেই মুকাতা‘আহ্ যে করেনি সে, মুকুতা‘আহ্ যে করেছে তার নিকট হতে কিছুই পাবে না] আর যে মুকাতা‘আহ্ করেনি সে যদি মুকাতাআ‘কারী অপেক্ষা কম গ্রহণ করে থাকে, অতঃপর মুকাতাব অপারগ হয়ে পড়ে, আর যে মুকাতা‘আহ্ করেছে সে যা অতিরিক্ত পেয়েছে উহা হতে তার সাথী (শরীক)-কে অর্ধেক ফিরিয়ে দেয়াকে পছন্দ করে, এতে গোলাম উভয়ের মধ্যে হবে অর্ধেক অর্ধেক, তবে তার জন্য এর ইখতিয়ার রয়েছে। আর সে যদি এটা অস্বীকার করে তবে মুকাতা‘আহ্ যে (শরীক) করে নি গোলাম সম্পূর্ণ সে শরীকের জন্য হবে। আর যদি মুকাতাবের মৃত্যু হয় এবং সে মাল রেখে যায় এবং যে (শরীক) মুকাতা‘আহ্ করেছে সে যা বেশি পেয়েছে এটা হতে তার সাথী (শরীক)-কে অর্ধেক ফিরিয়ে দিতে পছন্দ করে তবে মীরাস তাদের উভয়ের মধ্যে মুশতারাক বা সমান অংশ থাকবে, তবে ইহা করবার ইখতিয়ার রয়েছে। আর যে মুকাতা‘আহ্ করেনি কিতাবাতকে বহাল রেখেছে সে যদি তার শরীক মুকাতা‘আকারী যতটুকুর উপর মুকাতা‘আহ্ করেছে ততটুকু গ্রহণ করে বা তার চাইতে বেশি। তবে মীরাস তাদের উভয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। কারণ সে তার প্রাপ্য গ্রহণ করেছে। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব দুই ব্যক্তির মধ্যে (মিলিত মালিকানায়) রয়েছে। অতঃপর তাদের একজন তার অর্ধেক হকের উপর তার সাথীর অনুমতি নিয়ে মুকাতা‘আহ্ করেছে। অতঃপর যে শরীক দাসত্ব বহাল রাখার উপর অটল রয়েছে সে তার সাথী যতটুকুর উপর মুকাতা‘আহ্ করেছে ততটুকু হতে কম (অর্থ) গ্রহণ করেছে। তারপর গোলাম হয়েছে অপারক। মালিক (র) বলেন যে শরীক গোলামের সাথে মুকাতা‘আহ্ করেছে সে যা অতিরিক্ত নিয়েছে উহার অর্ধেক যদি তার সাথী (শরীক)-কে ফিরিয়ে দেয়া ভাল মনে করে তবে গোলাম তাদের উভয়ের মধ্যে সমভাবে বহাল থাকবে। আর যদি ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করে তবে মুকাতাবের সাথে তার যে সাথী (শরীক) মুকাতা‘আত করেছে তার হিস্সা পাবে দাসত্বকে যে বহাল রেখেছে সে। মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা হচ্ছে এই, (দৃষ্টান্তস্বরূপ) ক্রীতদাস দুই কর্তার মালিকানায় রয়েছে অর্ধেক অর্ধেক ভাগে। তারা উভয়ে উহার সাথে মুকাতা‘আহ্ করেছে। অতঃপর তাদের একজন তার হকের অর্ধেকের উপর মুকাতাবের সাথে মুকাতা‘আহ্ করেছে সাথীর অনুমতি নিয়ে আর এই অংশ হচ্ছে ক্রীতদাসের পূর্ণ মূল্যের এক-চতুর্থাংশ। অতঃপর মুকাতাব অপারগ হলে (এই অবস্থায়) মুকাতা‘আকারী শরীককে বলা হবে, তুমি যদি ইচ্ছা কর যা তুমি অতিরিক্ত গ্রহণ করেছ মুকাতা‘আহ্ দ্বারা উহার অর্ধেক তোমার সাথীকে ফিরিয়ে দাও, গোলাম তোমাদের উভয়ের মধ্যে থাকবে দুই ভাগে (অর্ধেক অর্ধেক)। আর সে ইহা না মানলে তবে যে শরীক কিতাবাতকে ধারণ করে রেখেছে (অর্থাৎ কিতাবাত চুক্তির উপর বহাল রয়েছে, মুকাতা‘আহ্ করেনি) সে তার সাথীর যেই অংশের উপর মুকাতা‘আহ্ করেনি, সে তার সাথীর যেই অংশের উপর মুকাতাবের সঙ্গে মুকাতা‘আহ্ করেছে উহার এক-চতুর্থাংশ পাবে, (পূর্বে) তার (মালিকানায়) ছিল গোলামের অর্ধেকাংশ, এইরূপে তার (মালিকানায়) এসে যাবে তিন-চতুর্থাংশ, আর মুকাতা‘আকারী শরীকের থাকবে গোলামের এক -চতুর্থাংশ। কারণ সে, যেই চতুর্থাংশের উপর মুকাতা‘আহ্ করেছিল উহার মূল্য ফেরত দিতে অস্বীকার করেছে। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাবের সাথে তার কর্তা মুকাতা‘আহ্ করেছে এবং উহাকে আযাদ করে দিয়েছে এবং কিতা‘আঃ বাবদ অবশিষ্ট যা অনাদায়ী রয়েছে উহা ক্রীতদাসের উপর ঋণ স্বরূপ লিখে দিয়েছে, তারপর মুকাতাবের মৃত্যু হয়েছে এবং তার উপর আরও লোকের ঋণ রয়েছে। মালিক (র) বলেন ক্রীতদাসের উপর কিতা‘আত বাবদ কর্তা যা পাবে উহার জন্য তার কর্তা অন্যান্য ঋণদাতাদের সঙ্গে শরীক হয়ে অংশ ভাগ করতে পারবে না, বরং ঋণদাতাগণ আগে তাদের হক উশুল করে নিবে সেই অধিকার তাদের রয়েছে। মালিক (র) বলেন মুকাতাবের উপর লোকের ঋণ থাকলে তার জন্য কর্তার সাথে মুকাতা‘আহ্ করা ঠিক নয়, (এইরূপ করলে) সে আযাদ হয়ে যাবে, অথচ তার কোন মাল নাই। (কারণ তার যাবতীয় মাল ঋণদাতাদের প্রাপ্য হয়েছে)। কারণ ঋণদাতাগণ তার কর্তা অপেক্ষা তার মালের বেশি হকদার, তাই এইরূপ করা মুকাতাবের জন্য জায়েয নয়। মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট মাসআলা এই, যে ব্যক্তি গোলামের সাথে মুকাতাবাত করেছে, অতঃপর স্বর্ণের বিনিময়ে উহার সাথে মুকাতা‘আহ্ করল এবং ক্রীতদাসের জিম্মায় যে “বদল-এ কিতাবাত” (আদায়যোগ্য অর্থ) রয়েছে তা মাফ করে দিল এই শর্তে যে, যে স্বর্ণের উপর মুকাতা‘আহ্ হয়েছে উহা সে কর্তাকে নগদ পরিশোধ করবে এইরূপ করাতে কোন দোষনেই। একে যিনি মাকরূহ্ বলেছেন, তিনি এই জন্য মাকরূহ বলেছেন যে, তিনি একে ঋণের মতো গণ্য করেছেন। এক ব্যক্তির উপর অন্য ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ে আদায়যোগ্য ঋণ রয়েছে, ঋণদাতা ঋণের কিছু অংশ মাফ করে দিল নগদ অর্থ নিয়ে (এটা জায়েয নয়, কাজেই মুকাতা‘আতেও নগদ অর্থের শর্তে কিছু মাফ করে দিলে উহা জায়েয হবে না)। মালিক (র) বলেন এটা ঋণের মতো নয়, কারণ কর্তার সাথে মুকাতাবের কিতা‘আত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কর্তাকে কিছু মাল সে দিবে যেন সে আযাদী ত্বরান্বিত করে। ফলে তার জন্য মীরাস এবং সাক্ষ্যদান ও হুদূদের অধিকার ওয়াজিব হবে এবং সাব্যস্ত হবে তার জন্য আযাদী ও সম্মান। সে কোন দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম বা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ খরিদ করেনি। এর দৃষ্টান্ত এইরূপ যেমন এক ব্যক্তি তার গোলামকে বলল- তুমি এত দীনার যদি নিয়ে আস, তবে তুমি আযাদ, তারপর ইহা হতে কিছু কমিয়ে দিল এবং বলল, আমার নিকট নির্ধারিত অর্থ হতে কিছু কম উপস্থিত করলেও তুমি আযাদ। ইহা গোলামের জিম্মায় জরুরী হয়েছে এমন কোন ঋণ নয়, যদি উহা (মুকাতা‘আহ্) ঋণ হত তবে মুকাতাব মারা গেলে অথবা মুফলিস (রিক্ত হস্ত) হলে কর্তা অন্যান্য ঋণদাতার সাথে মিলিত হয়ে তার অংশ আদায় করত এবং তাদের সাথে “বদল-এ কিতাবাত” আদায়ের ব্যাপারে শামিল হয়ে যেত।

【4】

মুকাতাব কর্তৃক কাউকে আঘাত করা

মালিক (র) এই বিষয়ে অতি উত্তম কথা যা শুনেছি তা এই যে, মুকাতাব কোন ব্যক্তিকে আঘাত করেছে যাতে দীয়্যত (খেসারত) ওয়াজিব। মুকাতাব যদি “বদল-এ কিতাবাত”-সহ এই জখমের ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম থাকে তবে উহা আদায় করবে এবং সে কিতাবাতের উপর (বহাল) থাকবে। আর যদি সে সমর্থ না হয়, তবে সে কিতাবাত বহাল রাখতে অক্ষম হল। কারণ কিতাবাতের (অর্থ পরিশোধের) পূর্বে এই আঘাতের দীয়্যত পরিশোধ করা ওয়াজিব। সে যদি আঘাতের দীয়্যত পরিশোধ করতে অক্ষম হয় তবে তার কর্তাকে ইখতিয়ার দেয়া হবে, যদি সে পছন্দ করে তবে আঘাতের ক্ষতিপূরণ দিবে এবং গোলাম তার দাস হিসেবেই থাকবে। আর যদি ইচ্ছা করে গোলামকে জখমি ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করবে তাহলে তাই করবে। আর কর্তার উপর গোলামকে সোপার্দ করে দেয়া ছাড়া অন্য কোন দায়িত্বনেই। মালিক (র) বলেন ক্রীতদাসদের একদল সকলে একত্রে মুকাতাবাত করেছে। তারপর তাদের একজন কাউকেও এমন আঘাত করেছে যাতে দীয়্যত ওয়াজিব হয়। মালিক (র) বলেন ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হয় এমন আঘাত এদের মধ্যে যে ক্রীতদাস করেছে সে ক্রীতদাসকে এবং কিতাবাত চুক্তিতে উহার সাথে আর যারা রয়েছে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা সকলে এই আঘাতের ক্ষতিপূরণ দাও, তারা যদি ক্ষতিপূরণ আদায় করে তবে সকলে কিতাবাতের উপর বহাল থাকবে। আর তারা তা আদায় না করলে তারা অপারগ বলে প্রমাণিত হল। তাদের কর্তাকে ইখতিয়ার দেয়া হবে। যদি সে ইচ্ছা করে এই আঘাতের ক্ষতিপূরণ দিবে, ক্রীতদাস সকলেই তার গোলাম থাকবে। আর সে যদি ইচ্ছা করে কেবলমাত্র আঘাতকারীকে জখমি ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করবে। তাদের সাথী যে আঘাত করেছিল সেই আঘাতের ক্ষতিপূরণ দিতে তারা অক্ষম হওয়ায় তাদের সকলেই কর্তার ক্রীতদাসরূপে থাকবে। মালিক (র) বলেন যে মাসআলাতে আমাদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই, তা এই মুকাতাব নিজে যদি এমন কোন আঘাত অন্যের দ্বারা পায় যাতে ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। অথবা মুকাতাবের সন্তানদের কেউ এইরূপ আঘাত পায় যারা কিতাবাতে মুকাতাবের সাথে শামিল রয়েছে। তবে উহাদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য হবে ক্রীতদাসের ক্ষতিপূরণ তাদের মূল্য অনুসারে, আর তাদের জন্য গৃহীত ক্ষতিপূরণ হবে তাদের কর্তার জন্য যিনি কিতাবাত করেছেন। আর মুকাতাব যে মাল (কর্তাকে) দিয়েছে উহা কিতাবাতের শেষে হিসাব করা হবে, অতঃপর আঘাতের ক্ষতিপূরণ হতে কর্তা যা গ্রহণ করেছে উহা মুকাতাব হতে বাদ দেয়া হবে। মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা এই যে, কর্তা ক্রীতদাসের সাথে মুকাতাবাত করেছে তিন হাজার দিরহামের বিনিময়ে, আর ক্রীতদাসের আঘাতের খেসারত হচ্ছে এক হাজার দিরহাম যা তার কর্তা গ্রহণ করেছে। অতঃপর মুকাতাব যদি তার কর্তাকে দুই হাজার দিরহাম আদায় করে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে। আর যদি এমন হয় যে, তার কিতাবাতের অবশিষ্ট রয়েছে এক হাজার দিরহাম, পক্ষান্তরে তার আঘাতের দীয়্যত যা গ্রহণ করেছিল উহা ছিল দুই হাজার দিরহাম তবে মুকাতাব আযাদ হয়ে গিয়েছে। কিতাবাত-এর অর্থ পরিশোধ করার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা মুকাতাব ফেরত পাবে। আর মুকাতাবকে তার আঘাতের দীয়্যত হতে কোন কিছু দেয়া জায়েয নয়। কারণ সে উহা ব্যয় করে ফেলবে, বরবাদ করে ফেলবে; যখন অপারগ হবে তখন তার কর্তার দিকে ফিরবে টেরা চক্ষু, হাত কাটা, ক্ষত দেহ অবস্থায়। কারণ কর্তা তার সাথে মুকাতাবাত করেছে তার মাল ও উপার্জনের উপর। কর্তা তার সাথে এই ব্যাপারে মুকাতাবাত করেনি, সন্তানের মূল্য গ্রহণ করবে এবং সে তার দেহের আঘাতের যে খেসারত পেয়েছে ও উহা ব্যয় করেছে এবং বরবাদ করে ফেলেছে তার উপরও মুকাতাবাত করা হয়নি। তবে খেসারত দেয়া হবে মুকাতাবের জখমের এবং মুকাতাবের সন্তানদের জখমের ও সেই সন্তানদের যারা কিতাবাত কার্যকর হওয়াকালীন জন্মগ্রহণ করেছে অথবা যেই সন্তানদের উল্লেখ করে কিতাবাত হয়েছিল। সেই দীয়্যত কর্তাকে দেয়া হবে বটে তবে কিতাবাতের শেষ দিকে উহা হিসাব করা হবে।

【5】

মুকাতাব গোলাম বিক্রয়

মালিক (র) সার্বোত্তম যা আমি শুনেছি সে ব্যক্তি সম্পর্কে- যে কোন লোকের মুকাতাবকে খরিদ করে। সেই মুকাতাব-এর সাথে দিরহাম বা দীনারের বিনিময়ে কিতাবাত করা হলে তবে উহাকে (দিরহাম বা দীনার ব্যতীত) অন্য কোন পণ্যের বিনিময়ে বাকীতে নয় নগদ বিক্রি করতে পারবে। কারণ বাকী বিক্রি করা হলে তবে তা ঋণের বিনিময়ে বিক্রয় করা হবে। আর ঋণের বিনিময়ে ঋণ বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। মালিক (র) বলেন মুকাতাবের কর্তা যদি উহার সাথে কোন মালের যথা উট, গরু, ছাগল অথবা ক্রীতদাসের উপর মুকাতাবাত করে থাকে, তবে ক্রেতা মুকাতাবকে স্বর্ণ কিংবা রৌপ্য অথবা যে পণ্যের দ্রব্যের বিনিময়ে কর্তা উহার সাথে মুকাতাবাত করেছে সে পণ্যের বিপরীত পণ্যের বিনিময়ে ক্রয় করতে পারবে, তবে মূল্য নগদ পরিশোধ করতে হবে, বাকী নয়। মালিক (র) বলেন মুকাতাবের ব্যাপারে অতি ভাল অভিমত আমি যা শুনেছি তা এই- যদি উহাকে বিক্রয় করা হয়, তবে যে উহাকে খরিদ করেছে তার অপেক্ষা মুকাতাবই আপন কিতাবাত ক্রয় করার অধিক হকদার, যে মূল্যে উহাকে তার কর্তা বিক্রয় করেছে সেই মূল্য নগদ পরিশোধ করতে মুকাতাব যদি সক্ষম হয়, কারণ মুকাতাব কর্তৃক তার নিজেকে ক্রয় করা আযাদী বটে, (মুকাতাব ক্রয় করলে সাথে সাথে আযাদ হয়ে যাবে, অন্য কেউ খরিদ করলে হয়ত গোলাম বানিয়ে রাখবে) [আরও এই জন্য যে,] কিতাবাতের সঙ্গে অন্যান্য যে সব ওসীয়ত থাকে সেই সবের যারা কিতাবাত করেছে তাদের কোন শরীক যদি নিজের অংশ বিক্রি করে যথা- মুকাতাবের অর্ধেকাংশ অথবা এক-তৃতীয়াংশ অথবা এক-চতুর্থাংশ অথবা মুকতাবের অংশসমূহ হতে যেকোন অংশ তবে বিক্রীত অংশে মুকাতাবের জন্য শুফ‘আ-এর দাবি করার হক থাকবে না। কারণ (অংশ বিক্রয় করা) ইহা কিতা‘আতের মত। আর মুকাতাবের কিছু অংশে কিতা‘আত করা অন্যান্য শরীকদের অনুমতি ব্যতীত জায়েয নয়। আর মুকাতারের যে অংশ বিক্রি করা হয়েছে উহার দ্বারা তার জন্য সম্পূর্ণ হুরমত [আযাদ ব্যক্তির মর্যাদা লাভ] প্রতিষ্ঠিত হবে না। মুকাতাবের মালে তিনি অধিকার বর্জিত। পক্ষান্তরে আংশিক খরিদের পর তার অপারগ হওয়ার আশংকাও করা যেতে পারে, যদ্দরুন যে অংশ সে খরিদ করেছিল তার অপারগ হওয়াতে সেই অর্থও বিফলে যেতে পারে। ইহা মুকাতাব কর্তৃক নিজেকে সম্পূর্ণ ক্রয় করার মতো (ব্যাপার) নয়। তবে যদি তার কিতাবাতে যার অংশ অবশিষ্ট রয়েছে সে যদি অনুমতি দেয় (তা হলে বৈধ হবে) শরীকদারগণ যদি তার অংশ (যা বিক্রয় করা হবে) খরিদ করার তাকে অনুমতি দেয় তবে সে ইহার অধিক হকদার হবে। মালিক (র) বলেন মুকাতাব-এর কিস্তিসমূহের কোন কিস্তির বিক্রয় জায়েয নয়, কারণ এতে ধোঁকা আছে। মুকাতাব অপারগ হয়ে গেলে উহার জিম্মায় যে অর্থ (বদলে-কিতাবাতের) রয়েছে তা বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি মুকাতাব-এর মৃত্যু হয় অথবা সে মুফলিস (রিক্তহস্ত) হয়ে যায় এবং তার উপর লোকের ঋণ থাকে তবে যে কিস্তি খরিদ করেছে তার জন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে শামিল হয়ে তার অংশ আদায় করা জায়েয হবে না। পক্ষান্তরে যে মুকাতাবের কোন কিস্তি খরিদ করেছে সে মুকাতাবের কর্তার মতো হবে। মুকাতাবের কর্তা ক্রীতদাসের কিতাবাতের অর্থের জন্য মুকাতাবের ঋণদাতাদের সাথে শামিল বা শরীক হবে না (তদ্রুপ যে কিস্তি খরিদ করেছে সেও না)। অনুরূপ (কর্তার) খাজনা যা গোলামের উপর (অনাদায়ের কারণে) একত্র হয়েছে এই খাজনা একত্র হওয়ার দরুন মুকাতাবের কর্তা উহার ঋনদাতাদের সাথে শামিল বা শরীক হবে না। মালিক (র) বলেন যদি মুকাতাব স্বর্ণমুদ্রা অথবা রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে নিজের কিতাবাতকে খরিদ করে অথবা পণ্যের বিনিময়ে। আর কিতাবাত যে স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রার অথবা পণ্যের বিনিময়ে হয়েছে, সে মুদ্রা বা পণ্য হতে ভিন্ন পণ্য দ্বারা অথবা অভিন্ন পণ্য দ্বারা নগদ অথবা বাকী উহা ক্রয় করতে কোন দোষ নেই। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব উম্মু ওয়ালাদ এবং ছোট সন্তান রেখে মারা যায় ঐ সন্তান এ উম্মুওয়ালাদের গর্ভের হোক অথবা অন্যের গর্ভের হোক আর ঐ সন্তানগণ কিতাবাতের বিনিময় পরিশোধ করতে অপারগ হয় তবে তাদের পিতার উম্মে ওয়ালাদকে বিক্রয় করা হবে, যদি তার মূল্য এই পরিমাণ হয় যদ্দারা তাদের সকলের “বদলে কিতাবাত” পূর্ণরূপে শোধ করা যায়। এই “উম্মে-ওয়ালাদ” উক্ত সন্তানদের হোক অথবা ভিন্ন কেউ হোক (উহাকে বিক্রি করে) সকলের “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করা হবে এবং তারা সকলে আযাদ হয়ে যাবে। কারণ তাদের পিতা নিজের “বদলে-কিতাবাত” আযাদ করতে অপারগ হলে উম্মে-ওয়ালাদকে বিক্রি করতে নিষেধ করত না। তাই এরা “বদলে কিতাবাত” আদায় করতে যখন তাদের অপারগতার আশংকা করা হবে তখন তাদের পিতার “উম্মে ওয়ালাদ”-কে বিক্রয় করা হবে এবং তাদের (কিতাবাতের) মূল্য পরিশোধ করা হবে। আর যদি তাদের পক্ষে “বদলে কিতাবাত” আদায় করা যায় এমন কিছু না থাকে এবং “উম্মে ওয়ালাদ” ও উহারা (সন্তানগণ) পরিশ্রম করতেও সামর্থ্য না রাখে, তবে তারা সকলে উহাদের কর্তার দাস হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন আমাদের সর্বসম্মত অভিমত এই, যে ব্যক্তি মুকাতাবের কিতাবাতকে খরিদ করে, অতঃপর “বদলে-কিতাবাত” পরিশোধ করার পূর্বে মুকাতাবের মৃত্যু হয়, তবে যে, “কিতাবাত” ক্রয় করেছে সে (মৃত) মুকাতাবের মীরাস পাবে। আর যদি মুকাতাব অক্ষম হয়, তার ক্রেতা উহার মালিক হবে (অর্থাৎ সে ক্রেতার দাসরূপে থাকবে)। আর মুকাতাব যদি “বদলে কিতাবাত” উহার ক্রেতার নিকট আদায় করেছে এবং এতে সে আযাদ হয়ে গিয়েছে তখন তার মুকাতাব যে আযাদী লাভ করেছে। উত্তরাধিকার কিতাবাত চুক্তি যে করেছিল সে পাবে। যে কিতাবাত ক্রয় করেছে সে উহার কোন প্রকার উত্তরাধিকার লাভ করবে না।

【6】

মুকাতাবের প্রচেষ্টা

মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উরওয়াহ ইব্নু যুবায়র ও সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার তাঁদের উভয়কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি সম্বন্ধে, যে ব্যক্তি নিজের এবং তার ছেলেদের মুক্তির জন্য মুকাতাবাত করেছে। তারপর তার মৃত্যু হয়েছে এমতাবস্থায় মুকাতাবের ছেলেরা তাদের পিতার কিতাবাতে-এর অর্থ আদায় করার জন্য চেষ্টা করবে কি? না তারা ক্রীতদাস থেকে যাবে? তাঁরা (উত্তরে) বললেন, তারা (মুকাতাবের ছেলেরা) তাদের পিতার কিতাবাতের অর্থ পরিশোধের জন্য চেষ্টা করবে। তাদের উপর হতে পিতার মৃত্যু “বদলে কিতাবাত”-এর পরিমাণ বা মূল্য হতে কিছু কমান হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন (মৃত) মুকাতাবের সন্তানগণ যদি ছোট বয়সের থাকে যারা (“বদলে-কিতাবাত আদায় করার”) চেষ্টা করার সামর্থ্য রাখে না, তবে তাদের (বড় হওয়ার) জন্য অপেক্ষা করা হবে না। তারা তাদের পিতার কর্তার ক্রীতদাস থাকবে; কিন্তু মুকাতাব যদি এই পরিমাণ মাল রেখে যায় ছেলেরা চেষ্টা করার উপযোগী হওয়া পর্যন্ত সেই পরিমাণ মালের দ্বারা তাদের (কিতাবাতের) কিস্তি আদায় করা যেতে পারে। যদি তাদের পিতা যে মাল রেখে গিয়েছে তাতে তাদের কিস্তি আদায় করা যায়, তবে (তাদের ছোট থাকাকালে) তাদের কিস্তি আদায় করা হবে; এবং তাদেরকে চেষ্টার উপযোগী বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত এইভাবে থাকতে দেয়া হবে। যদি তারা “বদলে কিতাবাত” আদায় করে তবে সকলেই আযাদ হয়ে যাবে। আর তারা তা করতে অক্ষম হলে গোলাম থেকে যাবে। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাবের মৃত্যু হয়েছে এবং সে রেখে গিয়েছে সন্তান যারা তার সাথে কিতাবাতে শামিল রয়েছে আর (রেখে গিয়েছে) “উম্মে-ওয়ালাদ” আর (সে রেখে গিয়েছে) মাল যা “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। “উম্মে ওয়ালাদ” যদি তাদের আযাদীর নিমিত্তে চেষ্টা চালাতে ইচ্ছা করে, যদি সে চেষ্টা করার উপযুক্ত হয় এবং নির্ভরযোগ্যও হয়, তবে (মৃত মুকাতাবের) মাল তার নিকট সোপর্দ করা হবে। আর সে যদি চেষ্টা চালাবার উপযুক্ত না হয় এবং নির্ভরযোগ্যও নয় তবে মালের কিছুই উহার নিকট সোপর্দ করা হবে না। বরং উম্মু ওয়ালাদ এবং সেই মুকাতাবের সন্তানগণ মুকাতাবের কর্তার ক্রীতদাস থেকে যাবে। মালিক (র) বলেন ক্রীতদাসের একদল যদি একত্রে মুকাতাবাত করে এবং তাদের মধ্যে পরস্পর আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকে, অতঃপর কিছু সংখ্যক অপারগ হয়। আর কিছু লোক চেষ্টা চালায়। ফলে সকলেই আযাদ হয়ে যায়। তাহলে, যারা (আযাদীর জন্য) চেষ্টা করেছে তারা প্রত্যাবর্তন করবে, উহাদের দিকে যারা অক্ষম হয়েছিল সেই অংশ অনুযায়ী যেই অংশ উহাদের তরফ হতে পরিশোধ করা হয়েছে। কারণ উহারা একে অপরের জামিন।

【7】

মুকাতাবের আযাদী যখন সে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করে

মালিক (র) তিনি রবী‘আ ইব্নু আবি ‘আবদির রহমান এবং আরও কিছু ‘আলিমকে বলতে শুনেছেন ফুরাফিসা ইব্নু উমাইর আল হানাফী (র)-এর একজন মুকাতাব ছিল। সে “বদলে কিতাবাতের” সম্পূর্ণ অর্থ যা তাহার জিম্মায় রয়েছে, তা এক সঙ্গে তার নিকট পেশ করল। ফুরাফিসা উহা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। মুকাতাব লোকটি আমীরে মদীনা মারওয়ান ইব্নু হাকামের কাছে উপস্থিত হল এবং বিষয়টি তাঁকে জানাল। মারওয়ান ফুরাফিসা ইব্নু উমাইরকে ডেকে পাঠালেন। তিনি উপস্থিত হলে তাঁকে উহা গ্রহণ করার কথা বললেন, কিন্তু ফুরাফিসা অস্বীকার করল, মারওয়ান সেই মাল মুকাতাব হতে গ্রহণ করে বায়তুলমালে রাখার নির্দেশ দিলেন; এবং (সাথে সাথে) মুকাতাবকে বলে দিলেন যাও, তুমি আযাদ হয়ে গিয়েছ। ফুরাফিসা ইহা লক্ষ্য করে মাল (নিজে) গ্রহণ করল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট এর মীমাংসা এই- মুকাতাব যদি তার জিম্মার সব কিস্তি উহার (নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে) আদায় করে দেয় তা তার জন্য জায়েয হবে, তার কর্তার পক্ষে তা অস্বীকার করবার অধিকার নাই। ইহা এইজন্য যে, কর্তা এর দ্বারা মুকাতাবকে সর্বপ্রকার শর্ত অথবা খেদমত অথবা সফর হতে অব্যাহতি প্রদান করিতেছে। কারণ সামান্য দাসত্ব বহাল থাকলেও কোন ব্যক্তির আযাদী পূর্ণ হয় না এবং (এমতাবস্থায়) উহার ব্যক্তিমর্যাদা পূর্ণতা লাভ করে না, আর উহার সাক্ষ্যও বৈধ হয় না, উহার জন্য মীরাস ওয়াজিব হয় না এবং এই জাতীয় আরও অন্যান্য আহকাম যা মুকাতাব সম্পর্কে রয়েছে। পক্ষান্তরে (ইহার পর) মুকাতাবের কর্তা কর্তৃক মুকাতাবের উপর কোন শর্ত আরোপ করা এবং আযাদীর পর কোন খেদমত গ্রহণ করা সঙ্গত নয়। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব গুরুতর অসুস্থ হয়েছে সে তার যাবতীয় কিস্তি একত্রে কর্তাকে দেবার ইচ্ছা করল, যেন তার আযাদ উত্তরাধিকারিগণ তার মীরাস লাভ করে এবং তার কোন সন্তান কিতাবাতে তার সঙ্গে শামিল নাই। মালিক (র) বলেন ইহা তার জন্য জায়েয হবে। কেননা এর দ্বারা তার ব্যক্তিমর্যাদা পূর্ণত্ব লাভ করবে এবং তার সাক্ষ্য জায়েয হবে, আর তার উপর লোকের যে সকল ঋণ রয়েছে সেই সকল ঋণের স্বীকারোক্তি করাও জায়েজ হবে এবং তার পক্ষে ওসীয়ত করাও জায়েয হবে তার কর্তার পক্ষে ইহা অস্বীকার করার অধিকার নাই “এ দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে যে, (মুকাতাব) তার মাল বাঁচাবার প্রচেষ্টা করেছে।”

【8】

মুকাতাবের মীরাস প্রসঙ্গ যদি আযাদী প্রাপ্ত হয়

মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র)-কে প্রশ্ন করা হল জনৈক মুকাতাব সম্বন্ধে, যে (মুকাতাব) দুই ব্যক্তির যুক্ত মালিকানায় রয়েছে, অতঃপর এক শরীক তার অংশ আযাদ করে দিল। তারপর মুকাতাব মারা গেল এবং সে প্রচুর সম্পদ রেখে গেল, সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) বললেন যেই শরীক কিতাবাতের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে (অর্থাৎ আযাদ করেনি) সেই শরীকের অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধ করা হবে। তারপর যা থেকে যায় উহা উভয়ে ভাগ করে নিবে সমান সমান। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন মুকাতাব কিতাবাত চুক্তি করেছে। তারপর আযাদ হয়েছে ও মারা গিয়েছে। যেই কর্তা কিতাবাত করেছে মুকাতাবের মৃত্যুর দিন সেই কর্তার ছেলে অথবা কর্তার পুরুষ আত্মীয়দের মধ্যে আসাবার ভিতর আত্মীয়তার দিক দিয়ে যে নিকটতম সেই উক্ত মুকাতাবের মীরাস পাবে। [১] মালিক (র) বলেন এই হুকুম আরো জারি হবে সেই সকল ক্রীতদাসের ব্যাপারে যাদেরকে আযাদ করা হয়েছে, উহাদের মীরাস আযাদী দাতার সন্তান অথবা আসাবাদের হতে পুরুষের মধ্যে আযাদী দাতার নিকটতম ব্যক্তি পাবে। এই আত্মীয়তা নির্ধারিত হবে যেই দিন আযাদীপ্রাপ্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে সেই দিন আযাদী পাওয়ার এবং উত্তরাধিকারসূত্রে মাওরূস [২] হওয়ার পর। মালিক (র) বলেন কিতাবাতে শরীক ভাইয়েরা সন্তানের মতো, যদি তারা একই কিতাবাতের মাধ্যমে মুকাতাব করে থাকে, তাদের কারো কিতাবাতের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে সন্তান পয়দা হয়েছে, এইরূপ সন্তান না থাকলে অথবা সন্তানকে কিতাবাতের অন্তর্ভুক্ত না করে থাকলে (তবে উপরিউক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে) কারণ ভাইয়েরা পরস্পর একে অপরের মীরাস পাবে। পক্ষান্তরে যদি তাদের কোন একজনের সন্তান থাকে যে সন্তান পয়দা হয়েছে কিতাবাতের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে অথবা উহাদেরকে কিতাবাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, তারপর তার মৃত্যু হয়েছে এবং মাল রেখে গিয়েছে, তবে (সেই মাল হতে) সকলের তরফ হতে কিতাবাতের (অনাদায়ী) অর্থ পরিশোধ করা হবে। এর পর অবশিষ্ট যে মাল থাকবে সে মাল (মৃত ব্যক্তির) সন্তানেরা পাবে, ভাইগণ পাবে না।

【9】

মুকাতাবের ব্যাপারে শর্ত আরোপ করা

মালিক (র) যে ব্যক্তি স্বর্ণ অথবা রৌপ্যের [১] বিনিময়ে আপন ক্রীতদাসের সাথে মুকাতাবাত করেছে এবং ক্রীতদাসের উপর তার কিতাবাতের মধ্যে শর্তারোপ করেছে, সফরের অথবা খেদমতের অথবা কুরবানীর, আর এর প্রত্যেকটির নাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে (যার শর্ত করেছে কিতাবাতের মধ্যে)। অতঃপর মুকাতাব নির্দিষ্ট সময় আসার পূর্বে তার সকল কিস্তি পরিশোধ করতে সমর্থ হয়েছে। মালিক (র) বলেন যখন উহার সকল কিস্তি পরিশোধ করেছে, উহার উপর এই শর্ত (আরোপিত) রয়েছে, সে আযাদ হয়ে যাবে এবং উহার সম্মান পূর্ণ হয়েছে। এখন লক্ষ্য করতে হবে, উহার উপর যে শর্তারোপ করা হয়েছে খেদমত করা অথবা সফর করা অথবা এই জাতীয় অন্য কিছু যা উহাকে নিজেই করতে হবে। তবে এই জাতীয় শর্তাদি উহা হতে সে নিষ্কৃতি পাবে এবং তার কর্তার এই জাতীয় কিছুতে অধিকার থাকবে না। পক্ষান্তরে যে শর্ত হয় কুরবানী; পোশাক অথবা অন্য কোন কিছুর যা আদায় করা হয় (এই জাতীয় শর্ত করে থাকলে) উহা হবে দীনার, দিরহামের মতো। মুকাতাবের উপর উহার মূল্য নির্ধারিত করা হবে। অতঃপর সেই অর্থ কিস্তির মাধ্যমে কর্তাকে পরিশোধ করবে। যতক্ষণ কিস্তির সহিত ইহা আদায় না করবে ততক্ষণ সে আযাদ হবে না। মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যাতে কোন মতভেদ নেই, তা এই- মুকাতাব সেই ক্রীতদাসের মতো যার উপর তার কর্তা শর্তারোপ করেছে যে, দশ বৎসর খেদমত করার পর সে আযাদ হয়ে যাবে। অতঃপর তার কর্তা মৃত্যুবরণ করেছে দশ বৎসর (অতিবাহিত হওয়ার) পূর্বে। তবে যে (কয় বৎসর বা মাসের) খেদমত অবশিষ্ট রয়েছে সে খেদমত কর্তার ওয়ারিসগণের প্রাপ্য হবে; আর (আযাদীর) পর উহার উত্তরাধিকার পাবে যে আযাদীর চুক্তি করেছিল সে এবং তার পুরুষ সন্তানগণ অথবা আসাবাগণ। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার মুকাতাবের উপর শর্তারোপ করেছে, তুমি সফরে যাবে না, বিবাহ করবে না এবং আমার ভূমি (দেশ) হতে আমার অনুমতি ছাড়া বাহিরে যাবে না, যদি আমার অনুমতি ছাড়া এর কোন একটি কর, তবে তোমার কিতাবাত বাতিল করার ক্ষমতা আমার হাতে। মালিক (র) বলেন মুকাতাবের কিতাবাত বাতিল করার ক্ষমতা সেই ব্যক্তির হাতে নয়। বরং যদি মুকাতাব এই রকম কোন কর্ম করে থাকে তবে উহার কর্তা বিষয়টি হাকিম-এর নিকট উত্থাপন করবে এবং সে বিবাহ করবে না প্রবাসে যাবে না; এবং কর্তার দেশ হতে বাহিরে যাবে না কর্তার অনুমতি ব্যতীত কর্তা শর্তারোপ করুক বা না করুক। ইহা এইজন্য- এক ব্যক্তি তার দাসের সহিত মুকাতাবাত করেছে একশত দীনারের বিনিময়ে। মুকাতাবের নিকট রয়েছে এক হাজার দীনার বা ততোধিক। অতঃপর সে যেয়ে কোন নারীকে বিবাহ করলে এবং উহাকে মহর দিলে যা তার মালকে অনেক কমিয়ে দিবে এবং উহাতে “বদলে কিতাবাত” আদায় করতে যে অপারগ হবে, ফলে তার কর্তার দিকে ফিরবে দাসরূপে। যার নিকট কোন মাল নেই, অথবা সে প্রবাসে যাবে (ইতিমধ্যে) তার কিস্তি আদায়ের সময় উপস্থিত হবে, অথচ সে অনুপস্থিত, এইরূপ করার ইখতিয়ার মুকাতাবের নেই এবং উহার উপর মুকাতাবাত সংঘটিত হয়নি। এই সব ইখতিয়ার তার কর্তার হাতে, সে ইচ্ছা করলে তাকে অনুমতি দিবে যখন, আর ইচ্ছা করলে সে ইহা হতে বারণ করবে।

【10】

মুকাতাব-এর উত্তরাধিকার যখন যদি সে ক্রীতদাসকে আযাদ করে

মালিক (র) মুকাতাবের পক্ষে আপন গোলামকে কর্তার অনুমতি ব্যতীত আযাদ করা জায়েয নয়। অতঃপর কর্তা যদি তাকে এই কার্যের অনুমতি দান করে তারপর মুকাতাব আযাদ হয়ে যায়, তবে উহার (মুকাতাব কর্তৃক আযাদকৃত গোলামের) উত্তরাধিকারিত্ব হবে মুকাতাবের জন্য। আর মুকাতাব যদি আযাদী লাভের পূর্বে মারা যায় মু‘তাক (- যাকে কিতাবাত চুক্তির মাধ্যমে আযাদ করা হয়েছে)-এর স্বত্বাধিকারিত্ব মুকাতাব (প্রথম)-এর কর্তার জন্য হবে। আর যদি মুকাতাব-এর মৃত্যু হয় (তার কর্তা) মুকাতাবের আযাদী লাভের পূর্বে তবে মুকাতাবের কর্তা উহার মীরাস পাবে। [মুকাতাব পাবে না। কারণ গোলাম উত্তরাধিকার লাভ করে না।] মালিক (র) বলেন অনুরূপ মুকাতাব তার গোলামের সাথে যদি কিতাবাত চুক্তি করে এবং পরবর্তী মুকাতাব উহার সাথে কিতাবাত চুক্তি সম্পাদনকারী কর্তার পূর্বে আযাদী লাভ করে, তবে উহার স্বত্বাধিকার وَلَاءُ হবে তার মুকাতাবের কর্তার জন্য যাবত প্রথম মুকাতাব (যে উহার সাথে কিতাবাত করেছে) আযাদী লাভ না করে। অতঃপর উহার কিতাবাত সম্পাদনকারী যদি আযাদ হয়ে যায় তার পূর্বে আযাদী লাভকারী তার মুকাতাব-এর স্বত্বাধিকার “ وَلَاءُ ” তার দিকে রুজু করা হবে। আর যদি প্রথম মুকাতাবের মৃত্যু হয় “বদলে কিতাবাত” আদায়ের পূর্বে অথবা “বদলে-কিতাবাত” পরিশোধ করতে অপারগ হয় এবং তার আযাদ সন্তান রয়েছে তবে উহারা তাদের পিতার মুকাতাবের স্বত্বাধিকার “ وَلَاءُ ”-এর অধিকারী হবে না। কারণ উহাদের পিতার জন্য স্বত্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর স্বত্বাধিকার লাভ করা হয় না আযাদী লাভ না করা পর্যন্ত। মালিক (র) বলেন যে মুকাতাব দুই ব্যক্তির মালিকানায় থাকে তাদের দুইজনের একজন মুকাতাবের উপর তার যে “বদলে কিতাবাত” প্রাপ্য রয়েছে উহা মাফ করে দিল, অপরজন ইহা করতে কার্পণ্য প্রদর্শন করল। অতঃপর মুকাতাব-এর মৃত্যু হল এবং সে সম্পদ রেখে গেল। মালিক (র) বলেন যে শরীক তার প্রাপ্য “বদলে কিতাবাত” ত্যাগ করেনি মুকাতাবের রেখে যাওয়া সম্পদ হতে তার প্রাপ্য “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করা হবে। তারপর ক্রীতদাস অবস্থায় মারা গেলে যেইভাবে উহার সম্পদ উভয়ের মধ্যে বন্টন করা হত, সেইভাবে উভয়ের মধ্যে অবশিষ্ট সম্পদ বন্টন করা হবে। কারণ যে শরীক প্রাপ্য ছেড়েছে উহা আযাদ করা নয়, বরং তার প্রাপ্য হক মাফ করেছে। মালিক (র) বলেন উপরিউক্ত মাসআলার বিশদ ব্যাখ্যা এইরূপ এক ব্যক্তির মৃত্যু হইল। সে রেখে গেল একজন মুকাতাব এবং কয়েকজন ছেলে ও মেয়ে, অতঃপর সন্তানদের একজন মুকাতাবের নিকট (প্রাপ্য) অংশ আযাদ করে দিল, এতে তার জন্য উত্তরাধিকার “ وَلَاءُ ” প্রতিষ্ঠিত হবে না। পক্ষান্তরে উহা যদি আযাদকৃত বলে গণ্য হত তবে নারী-পুরুষের মধ্যে যে সন্তান মুকাতাবকে আযাদ করেছে সে সন্তানের স্বত্বাধিকারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে। মালিক (র) বলেন এর আরেক বর্ণনা এই, তাদের একজন নিজের অংশ আযাদ করে দিল, তারপর মুকাতাব অপারগ হল তবে মুকাতাবের উপর যে “বদলে-কিতাবাত” অবশিষ্ট রয়েছে উহার জন্য যে (মুকাতাবের মধ্য হতে) তার প্রাপ্য অংশ আযাদ করেছে তার উপর মূল্য নির্ধারিত করা হবে না (অংশ আযাদ করে দেয়ার জন্য)। যদি আযাদী প্রদান বলে গণ্য হত তবে তার উপর উহার মূল্য নির্ধারণ করা হত এবং তার মাল হতে মুকাতাব আযাদ হয়ে যেত। যেমন বলেছেন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যে গোলামের নিকট হতে তার প্রাপ্য অংশ ছেড়ে দেয়, ন্যায়সঙ্গতভাবে অবশিষ্ট অংশের মূল্য নির্ধারণ করে তার উপর উহা আরোপ করা হবে। যদি তার মাল না থাকে তবে যতটুকু আযাদ করেছে ততটুকু আযাদ হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন এর অপর ব্যাখ্যা এই মুসলমানদের সুন্নত (পদ্ধতি) এই যে, যাতে কোন দ্বিমত নেই, যে ব্যক্তি মুকাতাব হতে তার অংশ আযাদ করে দেয়, তবে তার মাল হতে বাকী “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করে মুকাতাবকে পূর্ণরূপে আযাদী দেয়া হবে না, যদি উহার মাল হতে আযাদ করা হত তবে উত্তরাধিকার (وَلَاءُ) তারই প্রাপ্য হত, তার অংশিদারগণের প্রাপ্য হত না। মালিক (র) বলেন ইহার আর এক ব্যাখ্যা এই- মুসলমানদের নিয়ম হচ্ছে, উত্তরাধিকার (وَلَاءُ) সেই ব্যক্তির জন্য হবে, যে ব্যক্তি কিতাবাত চুক্তি করেছে। আর স্ত্রীলোকদের মধ্যে যে মহিলা মুকাতাবের কর্তার মীরাসের অধিকারী তার জন্য মুকাতাবের উত্তরাধিকারের কিছুই সাব্যস্থ হবে না যদিও সে নিজের অংশ আযাদ করে দেয়। মুকাতাবের উত্তরাধিকার লাভ করবে মুকাতাবের পুত্র সন্তানগণ কিংবা পুরুষ আসাবা।

【11】

মুকাতাবের আযাদী প্রদানের যে যে পন্থা বৈধ নয়

মালিক (র) ক্রীতদাসদের একদল যদি একই কিতাবাতে সংযুক্ত থাকে, তবে কিতাবাতে শামিল অন্যান্য সাথীর পরামর্শ ও সম্মতি ব্যতীত তাদের একজনকে কর্তা আযাদী দিতে পারবে না, আর উহারা যদি অল্প বয়সের হয়, তবে উহাদের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য নয় এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা বৈধ নয়। মালিক (র) বলেন, ইহা এইজন্য যে, কোন ব্যক্তি হয়ত সকলের পক্ষে চেষ্টা বা পরিশ্রম করতে পারে এবং (চেষ্টা করে) সকলের পক্ষ হতে “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করতে পারে যেন সকলের আযাদী এর দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে। আর যে ব্যক্তি সকলের পক্ষ হতে “বদলে কিতাবাত” পরিশোধ করবে এবং গোলামি হতে উহাদের মুক্তি পাওয়া যার উপর নির্ভরশীল কর্তা সেই ব্যক্তিকে আযাদ করে দিচ্ছে যেন অন্যান্য ক্রীতদাস অপারগ হয়ে পড়ে (ফলে যেন উহারা গোলাম থেকে যায়)। কর্তা এইরূপ করে নিজের জন্য কিছু অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করতে প্রয়াসী। তাই যারা অবশিষ্ট রয়েছে উহাদের স্বার্থে এইরূপ করা জায়েয হবে না। কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলামে কারো ক্ষতি সাধন বৈধ নয়। (এমনকি) প্রতিশোধমূলক কারো ক্ষতি সাধনও বৈধ নয়। (অন্যদেরকে ক্রীতদাস রাখার জন্য দলের একজনকে আযাদ করে দেয়া) এতে অন্যদের উপর জঘন্য ধরনের ক্ষতি করা হল। মালিক (র) বলেন কয়েকজন ক্রীতদাস একত্রে কিতাবাত করেছে (তাদের মধ্য হতে) অশীতিপর বৃদ্ধ এবং বালককে আযাদ করে দেয়ার ইখতিয়ার কর্তার রয়েছে যারা কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং উহাদের কিতাবাতের মূল্য আদায়ের ব্যাপারে কোন সহযোগী বা সাহায্যকারীও তাদের নেই, তবে (এইরূপ ব্যক্তিকে) আযাদ করা কর্তার জন্য জায়েয আছে।

【12】

মুকাতাব এবং উম্মে-ওয়ালাদকে আযাদী প্রদানের বিবিধ প্রসঙ্গ

মালিক (র) এক ব্যক্তি নিজের ক্রীতদাসের সাথে মুকাতাব করেছে, অতঃপর মুকাতাবের মৃত্যু হয়েছে এবং রেখে গিয়েছে তার উম্মে-ওয়ালাদ। আর তার কিতাবাতের কিছু অবশিষ্ট (অনাদায়ী) রয়েছে এবং সে (বদলে কিতাবাতের বাকী কিস্তি) যা তার জিম্মায় রয়েছে উহা পরিশোধ করা যায় এমন মালও রেখে গিয়েছে। মালিক (র) বলেন আযাদী লাভের পূর্বে যখন মুকাতাবের মৃত্যু হয়েছে এবং সন্তানও রেখে যায়নি যারা “বদলে কিতাবাত”-এর বকেয়া পরিশোধ করে নিজেরাও আযাদী লাভ করত এবং (সাথে সাথে) তাদের পিতার “উম্মে-ওয়ালাদ”ও এর ফলে আযাদী লাভ করত (কাজেই) মুকাতাবের “উম্মে-ওয়ালাদ” ক্রীতদাসী থেকে যাবে। মালিক (র) বলেন মুকাতাব তার গোলামকে আযাদ করে দিয়েছে অথবা তার মালের কিছু অংশ সাদাকাহ্ করে দিয়েছে এবং তার কর্তাকে সে উহা জানায়নি (এই অবস্থাতে) মুকাতাব আযাদী লাভ করেছে। মালিক (র) বলেন ইহা তার পক্ষে কার্যকর করা হবে, মুকাতাবের জন্য উহা হতে রুজূ করারও ইখতিয়ার থাকবে না, পক্ষান্তরে যদি মুকাতাবের আযাদী লাভের পূর্বে কর্তা উহা জানতে পারে এবং (জানার পর) সে উহা রদ করে দেয় উহাকে চালু না করে তবে মুকাতাব আযাদ হওয়ার পর, মাল ও ক্রীতদাস তার আয়ত্বে থাকলে তার জন্য গোলাম আযাদ করা অথবা বের করা আবশ্যক নয়। তবে তা স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে করতে পারবে।

【13】

মুকাতাবের ব্যাপারে ওসীয়্যত করা প্রসঙ্গে

মালিক (র) মুকাতাবের ব্যাপারে অতি উত্তম কথা যা আমি শুনেছি তা এই যে মুকাতাবকে তার কর্তা মৃত্যু মুহূর্তে আযাদ করেছে তবে সেই অবস্থাতে (সেই মুহূর্তে) উহার মূল্য যা হয় তাই ধার্য করা হবে। অর্থাৎ যদি উহাকে বিক্রি করা হয় তবে কত মূল্য দাঁড়াবে তাই ধার্য মূল্য “বদলে কিতাবাত”-এর যা বাকী রয়েছে তার কম হয়, তবে উহা মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ মুতাবিক ধার্য করা হবে। মুকাতাবের জিম্মায় যে পরিমাণ দিরহাম অবশিষ্ট রয়েছে উহার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে না। ইহা এইজন্য যে, মুকাতাবকে যদি হত্যা করা হয় তবে হত্যাকারী সেই হত্যার দিনের মূল্যই আদায় করবে। (অনুরূপ) মুকাতাবকে কেউ জখম করলে সে জখমের দিনের খেসারতই আঘাতকারী আদায় করবে। এই সব ব্যাপারে উহার কিতাবাত কত দিরহাম বা কতদিনের উপর হয়েছে সেদিকে লক্ষ্যে করা হবেনা। কারণ যতক্ষণ কিতাবাতের কিছু অর্থ অনাদায়ী থাকে ততক্ষণ সে ক্রীতদাস থাকে। আর “বদলে কিতাবাত” যা উহার জিম্মায় রয়েছে উহা যদি তার মূল্য হতে কম হয় তবে মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে “বদলে কিতাবাত”-এর ব্যাপারে উহার জিম্মায় যে বকেয়া রয়েছে মাত্র সে পরিমাণই আদায় করা হবে। কারণ মৃত ব্যক্তি তার জন্য তার “বদলে কিতাবাত”-এর বকেয়া পরিমাণই রেখে গিয়েছে। ফলে উহা এমন ওসীয়্যতের মতো হয়েছে, যে ওসীয়্যত সেই (মৃত ব্যক্তি) উহার মুকাতাবের জন্য করেছে। মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা এই, যদি মুকাতাবের মূল্য হয় এক হাজার দিরহাম এবং উহার কিতাবাত হতে বাকী রয়েছে মাত্র একশত দিরহাম, এমতাবস্থায় তার কর্তা তার জন্য একশত দিরহামের ওসীয়াত করেছে। উহা তার কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে আদায় করা হবে। এই ওসীয়্যতের দরুন মুকাতাব আযাদ হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার গোলামকে মৃত্যুর সময় মুকাতাব করল, তবে ক্রীতদাসের মূল্য ধার্য করা হবে। তারপর কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ যদি ক্রীতদাসের মূল্য পরিশোধের জন্য যথেষ্ট হয় তবে উহা জায়েয হবে। মালিক (র) বলেন এর ব্যাখ্যা এই যে, (দৃষ্টান্তস্বরূপ) ক্রীতদাসের মূল্য হচ্ছে এক হাজার দীনার, তার কর্তা মৃত্যুর সময় তার সাথে মুকাতাব করল দুইশত দীনারের উপর, (অপর দিকে) তার কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে এক হাজার দীনার, তবে ইহা বৈধ। ইহা (এক প্রকারের) ওসীয়্যত যা তার (মুকাতাবের) জন্য (সম্পদের) এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে। আর যদি (মুকাতাবের) কর্তা অন্য কোন সম্প্রদায়ের জন্য ভিন্ন ধরনের ওসীয়্যত করে থাকে, (অপরদিকে) এক-তৃতীয়াংশ সম্পদের মুকাতাবের মূল্যের অধিক মাল নাই, তবে মুকাতাবকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কারণ কিতাবাত হচ্ছে আযাদী প্রদান করা। সুতরাং কিতাবাতের ওসীয়্যতকে ওসীয়্যতসমূহের মধ্যে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অতঃপর অন্য সকল ওসীয়্যতকে মুকাতাবের “বদলে কিতাবাদ”-এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে পছন্দ করলে যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে তাদের পক্ষে ওসীয়্যত পূর্ণ করবে এবং মুকাতাবের কিতাবাতের অর্থ তাদের প্রাপ্য হবে। তারা চাইলে এইরূপ করতে পারবে। আর তারা যদি এইরূপ করতে অস্বীকার করে এবং মুকাতাব ও মুকাতাবের সম্পদকে ওসীয়্যত যাদের জন্য করা হয়েছে তাদের নিকট সোপর্দ করে দেয়, এটাও তাদের জন্য বৈধ। কারণ এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ সেই মুকাতাবের মধ্যেই (অর্থাৎ তার নিকটই) রয়েছে। আর এটা এই জন্য যে, কোন ওসীয়্যত যা কোন ব্যক্তি করেছে তা সম্পর্কে তার ওয়ারিসগণ বলতে পারে, আমাদের মু’রিস [১] (কর্তা-ব্যক্তি-পরিবারের প্রধান) যা ওসীয়্যত করেছে উহা এক-তৃতীয়াংশের অধিক। এই ওসীয়্যতের দ্বারা তিনি তার অধিকার বহির্ভূত অতিরিক্ত সম্পদ গ্রহণ করেছেন। মালিক (র) বলেন- (এই অবস্থাতে) তার ওয়ারিসগণকে ইখতিয়ার দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমাদের মুরুব্বী বা মু’রিস যে ওসীয়্যত করেছে, তোমরা সে বিষয়ে অবগত হয়েছ, (এখন) তোমরা যদি মৃত ব্যক্তির ওসীয়্যতকে যার জন্য তিনি ওসীয়্যত করেছেন সেই মতে কার্যকর করতে পছন্দ কর, (তবে ভাল কথা) নতুবা যাদের জন্য ওসীয়্যত করা হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ পূর্ণ ছেড়ে দাও। মালিক (র) বলেন মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ ওসীয়্যত যাদের জন্য করা হয়েছে তাদের নিকট মুকাতাবকে সোপর্দ করে দেয় তবে “বদলে কিতাবাত” তাদের প্রাপ্য হবে, মুকাতাব যদি তার জিম্মায় কিতাবাতের অর্থ তাদের নিকট পরিশোধ করে তবে তারা ওসীয়্যত বাবদ তাদের অংশ অনুযায়ী বন্টন করে নিবে। আর মুকাতাব যদি অর্থ আদায়ে অপারগ হয় তবে সে উহাদের নিকট ক্রীতদাসরূপে থাকবে, ওয়ারিসগণের নিকট ফিরে যাবে না। কারণ তারা তাকে ছেড়ে দিয়েছে যখন ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে তখন। আর এইজন্যও যে ওয়ারিসগণ যখন ওসীয়্যত গ্রহীতাদের নিকট মুকাতাবকে সোপর্দ করে তখন ওসীয়্যত গ্রহীতারা তাকে জামিন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই ওসীয়্যত গ্রহীতাদের জন্য মুকাতাবের মৃত্যু হলে ওয়ারিসগণের কোন দায়িত্ব থাকবে না। আর যদি মুকাতাবের মৃত্যুর হয় কিতাবাতের অর্থ পরিশোধ করার পূর্বে এবং উহার জিম্মায় যে অর্থ রয়েছে তার অধিক মাল রেখে যায় তবে উহার মাল ওসীয়্যত গ্রহীতাদের জন্য হবে। আর যদি মুকাতাব কিতাবাতের অর্থ পরিশোধ করে থাকে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে এবং তার উত্তরাধিকারিত্ব রুজূ করবে মু‘রিস-এর ‘আসাবা’-এর দিকে যিনি কিতাবাত সম্পাদন করেছিলেন। মালিক (র) বলেন জনৈক মুকাতাবের নিকট “বদলে কিতাবাত” বাবদ তার কর্তা দশ হাজার দিরহাম পাবে। সে মৃত্যুর সময় মুকাতাবের জিম্মা হতে এক হাজার দিরহাম কমিয়ে দিল। মালিক (র) বলেন, মুকাতাবের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। অতঃপর লক্ষ্য করা হবে এর মূল্য কত? যদি উহার মূল্য এক হাজার দিরহাম হয় তবে মুকাতাব হতে যা কমান হয়েছে উহা “বদলে কিতাবাত”-এর এক দশমাংশ [২] আর উহা মূল্যের দিক দিয়ে একশত দিরহাম [এর মতো [৩] ] এবং উহা (একশত দিরহাম হচ্ছে মূল্যের এক দশমাংশ, তাই উহা (মুকাতাব) হতে এক-দশমাংশ কমান হল যা মূল্যের হবে এক-দশমাংশ (১/১০) নগদ মূল্যে। এটা হচ্ছে এইরূপ যেমন মুকাতাব হতে সম্পূর্ণ “বদলে কিতাবাত” মাফ করে দেয়া হয়, যদি (কর্তা) এইরূপ করে তবে মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে মুকাতাবের মূল্য এক হাজার দিরহাম ছাড়া আর কিছু হিসাব করা হবে না। [৪] আর যদি মুকাতাব হতে “বদলে কিতাবাতের” অর্ধেক মাফ করা হয় তবে মৃত ব্যক্তি সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ (মুকাতাবের) মূল্যের অর্ধেক হিসাব করা হবে। আর ইহা হতে কম বা অধিক হলে তবে সেই অনুপাতেই হিসাব করা হবে। মালিক (র) বলেন কোন ব্যক্তি তার মুকাতাবের (বদলে কিতাবাত) দশ হাজার দিরহাম হতে এক হাজার দিরহাম তার মৃত্যুর সময় কমিয়ে দিয়ে থাকে, আর সে ইহা নির্দিষ্ট করেনি যে, এটা কিতাবাতের (কিস্তির) প্রথম ভাগে কমান হবে, কিম্বা শেষের দিকে কমান হবে। তবে প্রতিটি কিস্তি হতে “বদলে কিতাবাত”-এর এক-দশমাংশ করে কমাবে। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার মৃত্যুকালে তার মুকাতাব হতে এক হাজার দিরহাম কমিয়ে দিল। কিতাবাতের প্রথম ভাগ হতে কিম্বা শেষের দিক হতে। আর আসল কিতাবাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন হাজার দিরহামের উপর, তবে নগদ মূল্যে মুকাতাবের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। অতঃপর সেই মূল্যকে (কিস্তিতে) বিভক্ত করা হবে। তারপর সেই মূল্য হতে কিতাবাতের প্রারম্ভের এক হাজারের জন্য উহার হিস্সা নির্ধারিত হবে উহার নির্ধারিত সময়ের যতটা নিকটে তা এবং উহার মূল্যের পার্থক্য বিবেচনা করে, অতঃপর দ্বিতীয় হাজারের জন্য (হিস্সা) (ঠিক করা হবে) যা প্রথম হাজারের সংলগ্ন রয়েছে উহার মূল্যের পার্থক্য অনুযায়ী, অতঃপর উহার সংলগ্ন হাজারের জন্য উহার মুল্যের পার্থক্য অনুযায়ী। সব শেষ অংশ প্রদান করা পর্যন্ত মুহূর্তের অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারকে ত্বরান্বিত বা দেরী করার বিষয়টির বিবেচনায় কিস্তির প্রতি হাজার উহার পরবর্তী হাজারের তুলনায় উত্তম ও শ্রেষ্ট বলে সাব্যস্ত হবে। কারণ পরবর্তী কিস্তির মূল্য মূল্যের দিক দিয়ে কম হবে। অতঃপর (কর্তা কর্তৃক যে এক হাজার দিরহাম কমান হয়েছে) মূল্য হতে সেই এক হাজারের পরিমাণ মৃত ব্যক্তির মালের এক-তৃতীয়াংশ হতে বাদ দেয়া হবে। উহার বৃদ্ধি অথবা ঘাটতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। যদি উহা কমে কিম্বা বৃদ্ধি পায় তবে উহা সেই অনুপাতেই হিসাব করা হবে। মালিক (র) বলেন জনৈক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তির জন্য তার মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করেছে এবং উহার এক-চতুর্থাংশ আযাদ করেছে। অতঃপর সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তারপর মুকাতাবও মারা যায়। তার জিম্মায় যে “বদলে কিতাবাত” বাকী রয়েছে, তা হতে অধিক মাল রেখে যায়। মালিক (র) বলেন, মুকাতাবের উপর ওয়ারিসগণের যা প্রাপ্য রয়েছে উহা দেয়া হবে ওয়ারিসগণকে এবং তাকে যার জন্য মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করা হয়েছে। ইহার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা ইহারা ভাগ করে নিবে। এই অনুপাতে যার জন্য মুকাতাবের এক-চতুর্থাংশের ওসীয়্যত করা হয়েছিল সে পাবে অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ, আর মুকাতাবের কর্তার ওয়ারিসগণের হবে দুই-তৃতীয়াংশ। কারণ মুকাতাবের উপর যতক্ষণ বদলে কিতাবাত বাকী ততক্ষণ পর্যন্ত সে গোলামই থাকে। মালিক (র) বলেন, যে মুকাতাবকে তার কর্তা মৃত্যুকালে আযাদ করেছে, যদি মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ উহার জন্য যথেষ্ট না হয় তবে এক-তৃতীয়াংশে যতটুকু সংকুলান হয় ততটুকু মুকাতাব হতে আযাদ হয়ে যাবে এবং মুকাতাব-এর “বদলে কিতাবাত” হতে সেই পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হবে। যদি মুকাতাবের জিম্মায় থাকে পাঁচ হাজার দিরহাম আর উহার মূল্য হয় দুই হাজার দিরহাম নগদ মূল্যে। মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হয় এক হাজার দিরহাম তবে উহার অর্ধেক আযাদ হবে এবং উহার কারণে কিতাবাতের অর্থের অর্ধেকও কমিয়ে দেয়া হবে। মালিক (র) বলেন যে ব্যক্তি তার ওসীয়্যতে বলেছে আমার অমুক গোলাম আযাদ এবং অমুককে মুকাতাব করে দিও, মালিক (র) বলেন, আযাদীকে কিতাবাতের উপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে।