40. মুদাব্বার অধ্যায়
মুদাব্বার-এর সন্তানদের ব্যাপারে ফয়সালা
মালিক (র) আমাদের নিকট সেই ব্যক্তি সম্পর্কে মাসআলা এই, যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসীকে “মুদাব্বারা” করেছে এবং কর্তা কর্তৃক উহাকে মুদাব্বারা করার পর সে সন্তান জন্মাইয়াছে। অতঃপর সে (কর্তা) যে উহাকে মুদাব্বারা করেছে তার পূর্বে ক্রীতদাসীর মৃত্যু হয়েছে, তবে উহার সন্তানদের ব্যাপারে উহার মতোই হবে, অর্থাৎ যেই শর্ত উহার (মুদাব্বারা ক্রীতদাসীর) জন্য ছিল সেই শর্ত এ সন্তানদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। এবং এদের মাতার মৃত্যুর কারণে এদের কোন ক্ষতি হবে না, অতঃপর যে (কর্তা) মুদাব্বার করেছে তার মৃত্যু হলে তবে তার এক-তৃতীয়াংশ (সম্পত্তিতে) সংকুলান হলে এরা আযাদ হয়ে যাবে। [১] মালিক (র) বলেন প্রত্যেক জননীর আওলাদ শর্ত ইত্যাদি ব্যাপারে উহাদের মাতার সমতুল্য হবে। জননী যদি আযাদী লাভ করে এবং আযাদী লাভের পর সন্তান জন্মায়, তবে উহার সন্তানরা আযাদ (গণ্য) হবে। আর জননী যদি মুদাব্বারা অথবা মুকাতাবা হয় কিংবা কয়েক বৎসরের খেদমতের শর্তে আযাদী প্রাপ্ত হয় অথবা উহার অংশবিশেষ আযাদ করা হয়, অথবা তাকে বন্ধক দেয়া হয়েছে এমন হয় অথবা সে উম্মে-ওয়ালাদ হয়, তবে উহাদের প্রত্যেকের সন্তান মাতার মতো মর্যাদা লাভ করবে। মাতা আযাদ হলে এরাও আযাদ (গণ্য) হবে। মাতা ক্রীতদাসী হলে এরাও ক্রীতদাস হবে। মালিক (র) বলেন যে ক্রীতদাসীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ‘মুদাব্বারা’ করা হয়েছে, কিন্তু উহার অন্তসত্ত্বা হওয়ার খবর রাখে না। তার সন্তান তারই মতো (গণ্য করা) হবে। ইহা যেন এইরূপ- যেমন কোন ব্যক্তি আপন ক্রীতদাসীকে আযাদ করেছে সে তখন অন্তঃসত্ত্বা, কর্তা উহার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর রাখে না। মালিক (র) বলেন, এই ব্যাপারে সুন্নত (রীতি) এই, উহার সন্তান উহাকে অনুসরণ করবে এবং উহার আযাদী লাভে সেও আযাদী লাভ করবে। মালিক (র) বলেন তদ্রুপ যদি কোন ব্যক্তি অন্তঃসত্ত্বা ক্রীতদাসীকে খরিদ করে, তবে ক্রীতদাসী এবং উহার গর্ভে যা রয়েছে, তা ক্রেতারই হবে। ক্রেতা উহাকে শর্ত করুক কিম্বা না করুক। মালিক (র) বলেন বিক্রেতার পক্ষে ক্রীতদাসীর গর্ভে সন্তানকে (বিক্রয় হতে) বাদ রাখা হালাল নয় ইহা প্রতারণা বটে। কারণ, সে ক্রীতদাসীর মূল্য হতে মূল্য কমাবার উদ্দেশ্যে ইহা করতে চায়, অথচ সে নিজেও জানে না এই সন্তান সে লাভ করবে কি, না? ইহা এইরূপ যেমন কেউ মাতার গর্ভস্থ সন্তান বিক্রয় করল, ইহা তার জন্য হালাল নয় কারণ ইহা প্রতারণা। মালিক (র) বলেন যেই মুকাতাব অথবা মুদাব্বারা তাদের একজন একটি ক্রীতদাসী খরিদ করেছে। অতঃপর উহার সহিত সঙ্গম করেছে, ফলে দাসীটি অন্তঃসত্ত্বা হয় এবং সন্তান জন্মায়। মালিক (র) বলেন, এমতাবস্থায় এই ক্রীতদাসীর গর্ভের সন্তান তার মতোই হবে [অর্থাৎ উহার মতো মর্যাদা লাভ করবে]। সে আযাদ হলে সন্তানেরাও আযাদ হবে। আর সে ক্রীতদাস হলে সন্তানেরাও ক্রীতদাস হবে। মালিক (র) বলেন, সে আযাদ হলে তার “উম্মে-ওয়ালাদ” তারই সম্পদ হবে। তার আযাদীর পর উহাকে তার নিকট সোপর্দ করা হবে।
মুদাব্বার করণের বিবিধ প্রসঙ্গ
মালিক (র) একজন মুদাব্বার তার কর্তাকে বলল, আমার আযাদী ত্বরান্বিত করুন। আমি (এর জন্য) আপনাকে কিস্তি কিস্তি করে পঞ্চাশ দীনার আদায় করব। তার কর্তা বলল, হ্যাঁ, তুমি আযাদ এবং তোমার উপর পঞ্চাশ দীনার আদায় করা জরুরী হল, প্রতি বৎসর দশ দীনার করে (কিস্তি আদায় করবে) ক্রীতদাস এতে সম্মত হল। অতঃপর এর এক অথবা দুই কিম্বা তিন দিন পর কর্তার মৃত্যু হল। মালিক (র) বলেন সে আযাদ হয়ে গিয়েছে এবং ঐ পঞ্চাশ দীনার তার জিম্মায় ঋণ রয়েছে এবং তার সাক্ষ্যদান গ্রহণযোগ্য হবে, তার ব্যক্তিমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হল। সে উত্তরাধিকার লাভ করবে এবং তার উপর শরীয়তের বিধান জারি হবে। আর কর্তার মৃত্যুর কারণে তার জিম্মায় যে ঋণ রয়েছে উহার কিছুই কমান হবে না। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার জনৈক গোলামকে মুদাব্বার করল। তারপর কর্তার মৃত্যু হল। আর তার সম্পদও রয়েছে নিকট ও দূরে। কিন্তু কর্তার নিকট যে মাল আছে উহা মুদাব্বার আযাদ হবার মতো যথেষ্ট নয়। তবে মুদাব্বারের আযাদী স্থগিত রাখা হবে। তার সম্পদও আটক থাকবে এবং ঐ সম্পদের খাজনা সঞ্চয় করা হবে। আর ইহা চালু থাকবে দূরবর্তী সম্পদ হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত। (এর পর বিবেচনা করা হবে) কর্তা যে মাল রেখে গিয়েছে যদি উহার এক-তৃতীয়াংশে (মুদাব্বারের মূল্যের) অর্থ যোগাড় হয় তবে সে তার সম্পদ ও সঞ্চিত খাজনাসহ আযাদ হয়ে যাবে। আর যদি কর্তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশে এর যোগাড় না হয় তবে কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ দ্বারা মুদাব্বার হতে যতটুকু আযাদ হওয়া যায় ততটুকু তার আযাদ হয়ে যাবে এবং তার সম্পদ ছেড়ে তারই হাতে দেয়া হবে।
তদবীর সম্পর্কে ওসীয়্যত
ইয়াহ্ইয়া (র) মালিক (র) বলেছেন, সর্বপ্রকার আযাদী প্রদান সম্বন্ধে আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই, যে ব্যক্তি গোলামকে ওসীয়্যত দ্বারা আযাদ করেছে, সেই ওসীয়্যত সুস্থাবস্থায় কিংবা পীড়িতাবস্থায় করে থাকুক, যদি সেই ওসীয়্যত মুদাব্বার করার ওসীয়্যত না হয় তবে সে যখন ইচ্ছা উহাকে রদ করতে পারে এবং যখন ইচ্ছা উহাকে পরিবর্তন করতে পারে। আর যদি মুদাব্বার করে থাকে, তবে উহা রদ করার ইখতিয়ার থাকবে না। মালিক (র) বলেন এক ক্রীতদাসীকে আযাদ করার ওসীয়্যত করা হয়েছে কিন্তু মুদাব্বারা করা হয়নি, সেই দাসী যে সন্তান জন্মাবে, ক্রীতদাসী যখন আযাদ হবে উহারা (সন্তানগণ) তার সাথে আযাদ হবে না। কারণ তার কর্তা ইচ্ছা করলে ওসীয়্যত পরিবর্তন করতে পারে, আর যখন ইচ্ছা উহাকে রদও করে দিতে পারে। আর দাসী (এখন পর্যন্ত) আযাদও হয়নি। (সন্তানেরা কিরূপে আযাদ হবে?) ইহা এইরূপ যেমন কোন লোক নিজের এক দাসীকে বলল, এই দাসী যদি আমার মৃত্যু পর্যন্ত আমার নিকট থাকে তবে সে আযাদ। মালিক (র) বলেন অতঃপর সে যদি মৃত্যু পর্যন্ত উহার নিকট থাকে তবে সে আযাদ হয়ে যাবে, আর কর্তা যদি ইচ্ছা করে তবে মৃত্যুর পূর্বে দাসী এবং উহার সন্তানকে বিক্রয় করতে পারবে। কারণ দাসীর জন্য যা করা হয়েছে সন্তান উহার কোন কিছুরই অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে, (দাসীকে) আযাদী দানের ওসীয়্যত এবং উহাকে মুদাব্বারা করা এই দুইটি ভিন্ন ব্যাপার। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য ও নীতিমালা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। মালিক (র) বলেন, ওসীয়্যত যদি তদবীরের মতো হত তবে কোন ওসীয়্যতকারী ওসীয়্যত পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখত না এবং আযাদী প্রদানের ওসীয়্যত যা উল্লেখিত হয়েছে উহাতেও পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকত না। (অথচ মাসআলা এইরূপ নয় বরং ওসীয়্যত পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে) ইহা এইরূপ যেমন- কোন কারণে কারো মাল আটক রাখা হয়েছে, অথচ উহা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না। মালিক (র) বলেন যে ব্যক্তি সুস্থাবস্থায় তার সকল ক্রীতদাসীকে মুদাব্বার করেছে, (অন্যদিকে) তার নিকট ঐ সব ক্রীতদাস ব্যতীত অন্য কোন সম্পদ নেই, সে যদি কতককে কতকের পূর্বে মুদাব্বার করে থাকে, তবে সর্বপ্রথম যাকে মুদাব্বার করা হয়েছে উহা হতে আযাদী আরম্ভ করা হবে। তারপর তার এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ যতজনের আযাদীর জন্য পর্যাপ্ত ততজন আযাদী পাবে। শর্ত এই, যাকে বা যাদেরকে প্রথম মুদাব্বার করা হয়েছে সে বা তারা প্রথমে আযাদী পাবে। আর যদি সকলকে কর্তার পীড়িতাবস্থায় মুদাব্বার করেছে এবং বলেছে যদি এই রোগে আমার মৃত্যু হয়, তবে অমুক আযাদ, অমুক আযাদ, এই উক্তিতে সকলকে মুদাব্বার করেছে তবে তার সম্পর্কে এক-তৃতীয়াংশে উহারা সকলে শরীক হবে, কেউ কারো আগে আযাদ হবে না। ইহা (মুদাব্বার হিসেবে আযাদ করবে) ওসীয়্যত বটে, উহাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ নির্ধারিত হবে যা হিস্সা অনুযায়ী উহাদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হবে। অতঃপর উহাদের মধ্য হতে এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হবে, যেই পর্যন্ত এ সম্পদ পর্যাপ্ত হয়। তাদের মধ্যে কাউকেও পূর্বে আযাদ করা হবে না। ইহা হল যদি সকলকে পীড়িতাবস্থায় মুদাব্বার করে থাকে। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি তার গোলামকে মুদাব্বার করেছে, অতঃপর তার মৃত্যু হয়েছে। আর এই মুদাব্বার গোলাম ব্যতীত তার অন্য কোন মাল নেই, কিন্তু গোলামের নিকট সম্পদ রয়েছে। মালিক (র) বলেন মুদাব্বারের এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হবে এবং তার মাল তার অধিকারে রাখা হবে। মালিক (র) বলেন যে মুদাব্বারের সাথে তার কর্তা কিতাবাত করেছে, অতঃপর কর্তার মৃত্যু হয়েছে এবং সে এই ক্রীতদাস ছাড়া অন্য কোন মাল রেখে যায়নি। মালিক (র) বলেন, গোলামের এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হবে এবং কিতাবাতের অর্থের এক-তৃতীয়াংশ উহা হতে মাফ করা হবে, (অবশিষ্ট) দুই-তৃতীয়াংশ উহার জিম্মায় থাকবে। মালিক (র) বলেন এক ব্যক্তি রোগশয্যায় আপন ক্রীতদাসের অর্ধেক অথবা পূর্ণ আযাদ করেছে। সে ইতিপূর্বে তার অন্য এক ক্রীতদাসকে মুদাব্বার করেছিল। মালিক (র) বলেছেন, রোগশয্যায় যাকে আযাদ করেছে, উহার পূর্বে মুদাব্বারকে আযাদ করা হবে। ইহা এইজন্য যে, মুদাব্বার করার পর কোন ব্যক্তির পক্ষে উহাকে রদ করার ইখতিয়ার থাকে না এবং উহাকে কোন কারণে পিছিয়েও দেয়া যায় না, যদ্দরুন উহা বাতিল হয়ে যায়। অতঃপর মুদাব্বার আযাদ হয়ে গেলে এক-তৃতীয়াংশ হতে যা অবশিষ্ট থাকে উহা যার অর্ধেক আযাদ করা হয়েছে উহার জন্য ব্যয় করা হবে, যেন এক-তৃতীয়াংশ দ্বারা উহার পূর্ণ আযাদীর ব্যবস্থা করতে পারে। আর যদি এক-তৃতীয়াংশ পূর্ণ আযাদী লাভের জন্য পর্যাপ্ত না হয় তবে প্রথম মুদাব্বারের আযাদীর পর (দ্বিতীয় ক্রীতদাস হতে) এক-তৃতীয়াংশের অবশিষ্ট দ্বারা যতটুকু কুলায় ততটুকু আযাদ হয়ে যাবে।
মুদাব্বার করার পর স্বীয় ক্রীতদাসীর সহিত সঙ্গম করা প্রসঙ্গে
নাফি‘ (র) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) তাঁর দুইজন ক্রীতদাসীকে মুদাব্বারা করেছিলেন, অতঃপর তিনি উভয়ের সাথে মিলিত হতেন অথচ তারা উভয়ে ছিল মুদাব্বারা। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) কোন ব্যক্তি নিজ ক্রীতদাসীকে মুদাব্বারা করলে তার জন্য এর সাথে সঙ্গম করা জায়েয আছে। কিন্তু উহাকে বিক্রয় করতে পারবে না এবং হেবাও (দান) করতে পারবে না; আর মুদাব্বারার সন্তান মুদাব্বারার মতো হবে (উহার বিক্রয় এবং দান জায়েয হবে না)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুদাব্বারকে বিক্রয় করা
মালিক (র) মুদাব্বারের ব্যাপারে আমাদের নিকট সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই- তার কর্তা তাকে বিক্রয় করবে না। উহাকে যেই স্থানে মুদাব্বার করেছে সেই স্থান হতে অন্যত্র নিয়ে যাবে না; এবং তার কর্তার উপর যদি ঋণের চাপ থাকে তবে তার কর্তা যতদিন জীবিত থাকবে ততদিন কর্তার ঋণদাতাগণ তাকে বিক্রয় করবে না। কর্তার যদি মৃত্যু হয় এবং তার জিম্মায় ঋণ না থাকে তবে মুদাব্বার কর্তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ হতে আযাদ হবে। কারণ সে তার জীবিতকাল পর্যন্ত ক্রীতদাসের আযাদী হতে তার খেদমতকে পৃথক করেছিল, তাই তার জন্য ক্রীতদাস হতে জীবদ্দশায় খেদমত গ্রহণ করা বৈধ নয়। অতঃপর মৃত্যুর সময উপস্থিত হলে (যখন উহা ওয়ারিসদের হক হবার সময় উপস্থিত তখন) তার সম্পূর্ণ সম্পদ হতে ওয়ারিসদের মীরাসের উপর হস্তক্ষেপ করে উহাকে আযাদ করে দিবে। আর যদি মুদাব্বারের কর্তার মৃত্যু হয় এই অবস্থায় যে মুদাব্বার ব্যতীত তার আর কোন সম্পদ নেই, তবে উহার এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হবে এবং ওয়ারিসদের জন্য হবে (অবশিষ্ট) দুই-তৃতীয়াংশ, আর যদি মুদাব্বারের কর্তার মৃত্যু হয় এমতাবস্থায় যে তার ঋণ রয়েছে, আর সেই ঋণ মুদাব্বারের (মূল্যের) সমপরিমাণ হয়, তবে উহাকে কর্তার ঋণ পরিশোধের জন্য বিক্রয় করা হবে। কারণ উহাকে আযাদ করা হয় এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ হতে, আর যদি ঋণ মুদাব্বারের অর্ধেক পরিমাণ হয়, তবে উহার অর্ধেক ঋণের জন্য বিক্রয় করা হবে। অতঃপর ঋণের পর যা অবশিষ্ট থাকবে উহার এক-তৃতীয়াংশ হতে তাকে আযাদ করা হবে। মালিক (র) বলেন মুদাব্বারকে বিক্রয় করা জায়েয নয় এবং কারো পক্ষে উহা খরিদ করাও জায়েয নয়, কিন্তু মুদাব্বার যদি নিজেকে কর্তা হতে ক্রয় করে নেয়, তবে উহা জায়েয হবে। অথবা কেউ মুদাব্বারের কর্তাকে অর্থ দিল, মুদাব্বারকারী কর্তা উহাকে আযাদ করে দিল, তবে ইহাও তার জন্য বৈধ হবে। মালিক (র) বলেন, উহার (অর্থাৎ মুদাব্বারের) উত্তরাধিকার হবে সেই কর্তার, যে কর্তা তাকে মুদাব্বার করেছে। মালিক (র) বলেন মুদাব্বারের খেদমত বিক্রয় জায়েয নয় এবং এটা এক প্রকার প্রতারণা। কারণ উহার কর্তা কতদিন জীবিত থাকবে তা অজানা, কাজেই উহা (এক প্রকার) প্রতারণা যা মঙ্গল নয়। মালিক (র) বলেন একটি ক্রীতদাস দুইজনের শরীকানায় রয়েছে। উহাদের একজন তার হিস্সাকে মুদাব্বার করে দিল। তবে তারা উভয়ে উহার মূল্য ধার্য করবে (এর পর) যে মুদাব্বার করেছে সে যদি (অপর অংশী হতে) ক্রয় করে নেয়, তবে উহা পূর্ণ মুদাব্বার হয়ে যাবে। আর যদি উহাকে ক্রয় না করে তবে মুদাব্বার করা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু যদি যে অংশীর মালিকানা অংশ উহাতে বহাল রয়েছে সে যদি তার যে শরীক মুদাব্বার করেছে সে শরীকের নিকট হতে তার অংশের মূল্য গ্রহণ করে তাকে (ক্রীতদাসকে পূর্ণরূপে) দিয়ে দেয় তবে তার (যে মুদাব্বার করেছে) জন্য উহা গ্রহণ করা জুরুরী হবে। ফলে ক্রীতদাস পূর্ণরূপে মুদাব্বার হয়ে যাবে। মালিক (র) বলেন কোন খ্রিস্টান স্বীয় খ্রিস্টান ক্রীতদাসকে মুদাব্বার করে, অতঃপর ক্রীতদাস ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মালিক (র) বলেন পৃথক করা হবে সেই খ্রিস্টান ও তার ক্রীতদাসকে, আর তার কর্তার পক্ষে ক্রীতদাসটি খাজনা আদায় করবে। কর্তার অবস্থা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তাকে (ক্রীতদাসকে) বিক্রয় করা হবে না। আর যদি তার কর্তার মৃত্যু হয় এবং তার ঋণ থাকে তবে তার ঋণ পরিশোধ করা হবে মুদাব্বারের মূল্য হতে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করবার মতো যদি তার সম্পদ থাকে তবে সম্পদ হতে ঋণ পরিশোধ করা হবে এবং মুদাব্বার আযাদ হয়ে যাবে (এক-তৃতীয়াংশ হতে)।
মুদাব্বারের (অন্যকে) জখম করা প্রসঙ্গে
মালিক (র)- উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) মুদাব্বারের ব্যাপারে ফয়সালা করেছেন যে, সে জখম করলে তার কর্তার জন্য ওয়াজিব হবে উহা হতে, সে যে বস্তুর মালিক [অর্থাৎ ক্রীতদাসের খেদমত] তা জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করে দেয়া। জখমী ব্যক্তি উহা (মুদাব্বার ক্রীতদাস) হতে আদায় করবে এবং উহাকে জখমের কিসাস গণ্য করবে জখমের দীয়্যত [খেসারত] বাবদ। অতঃপর খেদমত দ্বারা তার কর্তার মৃত্যুর পূর্বে যদি দীয়্যত পরিশোধ হয়ে যায় তবে (পরিশোধের পর) তার কর্তার দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন মুদাব্বারের ব্যাপারে আমাদের নিকট মাসআলা এই, মুদাব্বার যদি (কাউকেও) জখম করে তারপর তার কর্তা পরলোকগমন করে এবং তার কর্তার নিকট সে ব্যতীত অন্য কোন মাল নেই, তবে মুদাব্বারের এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হবে। অতঃপর জখমের দীয়্যতকে তিন অংশে ভাগ করা হবে। তারপর দীয়্যতের এক-তৃতীয়াংশ হবে মুদাব্বারের যে এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হয়েছে সেই অংশের ভাগে [অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ মুদাব্বার আদায় করবে] অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ হবে ওয়ারিসদের হস্তে যে দুই-তৃতীয়াংশ (মুদাব্বারের) রয়েছে সেই দুই-তৃতীয়াংশের ভাগে। তাদের ইচ্ছা হলে তারা তাদের অংশ জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করবে [সে দুই-তৃতীয়াংশ হতে দীয়্যত পরিমাণ খেদমত আদায় করবে] কিংবা ইচ্ছা করলে তারা দীয়্যতের দুই-তৃতীয়াংশ জখমী ব্যক্তিকে প্রদান করবে এবং ক্রীতদাস হতে নিজেদের অংশ ২/৩ নিজেদের দখলে রাখবে। ইহার কারণ এই, জখম করাটা অপরাধ ছিল ক্রীতদাসের, এই জখমের দীয়্যত গোলামের কর্তার উপর ঋণ হবে না (এই দীয়্যত গোলামকেই আদায় করতে হবে)। তাই তার কর্তা যে কার্য সম্পাদন করেছে তাকে মুদাব্বার করে ও তার আযাদীর ব্যবস্থা করে উহা মুদাব্বারের সদ্য অপরাধের ফলে বাতিল হয়ে যাবে না। যদি ক্রীতদাসের কর্তার জিম্মায় লোকের ঋণ থাকে- ক্রীতদাসের অপরাধের খেসারতসহ, তবে জখমের দীয়্যত ও (কর্তার) ঋণ পরিমাণ অংশ দাস হতে বিক্রয় করা হবে তারপর সর্বপ্রথম গোলামের অপরাধের খেসারত আদায় করা হবে গোলামের মূল্য হতে; তারপর তার কর্তার ঋণ পরিশোধ করা হবে। তারপর গোলাম হতে অবশিষ্ট যা রইল উহার ব্যবস্থা হবে এরূপ- উহা হতে এক-তৃতীয়াংশ আযাদ হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ হবে কর্তার ওয়ারিসদের জন্য। মোটকথা, গোলামের অপরাধের খেসারত কর্তার ঋণের আগে পরিশোধ করতে হবে, যেমন কোন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, সে একজন মুদাব্বার দাস রেখে গিয়েছে যার মূল্য দেড়শত দীনার। সে একজন আযাদ ব্যক্তিকে এইরূপ জখম করেছে যাতে হাড় দৃষ্ট হয়, উহার দীয়্যত হচ্ছে পঞ্চাশ দীনার, আর দাসের কর্তার ঋণ ছিল পঞ্চাশ দীনার। মালিক (র) বলেন, এই অবস্থায় সর্বপ্রথম জখমের দীয়্যত পঞ্চাশ দীনার পরিশোধ করা হবে গোলামের মূল্য হতে, অতঃপর তার কর্তার ঋণ শোধ করা হবে, তারপর গোলাম হতে (৫০ দীনার) যা অবশিষ্ট রইল উহার ব্যবস্থা করা হবে এইভাবে যে, উহা হতে গোলামের এক-তৃতীয়াংশ আযাদ করা হবে, অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ থাকবে কর্তার ওয়ারিসদের জন্য। দীয়্যত মুদাব্বারের জিম্বায় কর্তার ঋণের তুলনায় বেশি দরকারী, আর মুদাব্বারের কর্তার ঋণ মুদাব্বারের তদবীর (অর্থাৎ আযাদী) হতে বেশি জরুরী; যা মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশ মাল হতে ওসীয়্যত বটে, তাই মুদাব্বারের কর্তার জিম্মায় ঋণ অপরিশোধিত রেখে মুদাব্বারের তদবীর (আযাদী) কার্যকর করা জায়েয হবে না। কারণ আযাদী প্রদানের চুক্তি হচ্ছে ওসীয়্যত। এই সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَى بِهَا أَوْ دَيْنٍ ওসীয়্যত অথবা ঋণ পরিশোধের পর (ঋণ সর্বসম্মতভাবে ওসীয়্যতের উপর অগ্রাধিকার লাভ করে)। মালিক (র) বলেন যদি মৃত ব্যক্তির এক-তৃতীয়াংশে মুদাব্বারের সম্পূর্ণ আযাদ হওয়ার সংকুলান হয় তবে (মুদাব্বার সম্পূর্ণ) আযাদ হয়ে যাবে, তার অপরাধের খেসারত তার উপর ঋণ থাকবে। জখমী ব্যক্তি আযাদী লাভের পর (খেসারত আদায়ের জন্য) তাকে বাধ্য করবে, যদিওবা সেই খেসারত পূর্ণ দীয়্যত হয়ে থাকে। কিন্তু কর্তার জিম্মায় ঋণ না থাকলে তখন এই ব্যবস্থা (অন্যথায় ঋণ পরিশোধের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে)। মালিক (র) বলেন যে মুদাব্বার কোন ব্যক্তিকে জখম করেছে, অতঃপর তার কর্তা তাকে জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করেছে, তারপর তার কর্তার মৃত্যু হয়েছে। কর্তার উপর রয়েছে ঋণ আর সে এই দাস ব্যতীত অন্য কোন মাল রেখে যায়নি। অতঃপর ওয়ারিসগণ বলল- আমরা একে জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করব। ঋণদাতা বলল, আমি এর মূল্য বাড়িয়ে দিব। মালিক (র) বলেন, ঋণদাতা যখন মূল্য বাড়িয়ে দিল, তখন মুদাব্বারকে পাওয়ার অধিক উপযুক্ত পাত্র সেই। জখমের দীয়্যতের উপর ঋণদাতা যা বৃদ্ধি করল উহা যার উপর ঋণ রয়েছে [ঋণগ্রহীতা কর্তা] তার ঋণ হতে কমানো হবে। আর যদি মূল্য বৃদ্ধি না করে তবে সে দাস গ্রহণ করবে না। মালিক (র) বলেন মুদাব্বার যদি কাউকেও জখম করে এবং তার নিকট মাল থাকে, অতঃপর তার কর্তা তার খেসারত বহন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তবে জখমী ব্যক্তি জখমের দীয়্যত বাবদ মুদাব্বারের মাল কব্জা করবে। যদি সেই মালে খেসারত পূর্ণভাবে আদায় হয়ে যায় তবে জখমী ব্যক্তি (তথা হতে) জখমের দীয়্যত পূর্ণ গ্রহণ করবে এবং মুদাব্বারের মাল কব্জা করবে। এবং মুদাব্বারকে তার কর্তার নিকট ফিরিয়ে দিবে। আর যদি উহা খেসারত পূর্ণ আদায় হওয়ার মতো সম্পদ না হয় তবে যা উশুল হয় সেই পরিমাণ খেসারত বাবদ গ্রহণ করে অবশিষ্টের জন্য ক্রীতদাস হতে খেদমত নিবে।
উম্মে ওয়ালাদ কর্তৃক জখম প্রসঙ্গ
মালিক (র) উম্মে ওয়ালাদ যদি কাউকেও জখম করে তবে এই জখমের দীয়্যত কর্তাকে নিজ মাল হতে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু উম্মে ওয়ালাদের মূল্য হতে জখমের দীয়্যত যদি অধিক হয়, তবে কর্তার জিম্মায় উহার মূল্যের অধিক দেয়া জরুরী হবে না। কারণ ক্রীতদাস এবং দাসীর কর্তা উহাদের একজন কর্তৃক কাউকেও জখম করার দরুন যদি দাস বা দাসীকে জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করে দেয় তবে এর অতিরিক্ত তার উপর আর কিছু জরুরী হবে না। জখমের দীয়্যত বেশি হয়ে থাকলেও। কর্তা উম্মে ওয়ালাদকে জখমী ব্যক্তির নিকট সোপর্দ করতে পারবে না, এটাই নিয়ম। আর যখন সে উম্মে ওয়ালাদের মূল্য দিয়ে দিল, তবে যেন সে উম্মে ওয়ালাদকেই সোপর্দ করে দিল, তার উপর এর অধিক কিছু জরুরী নয়। এটাই সুন্দরতম যা (এই বিষয়ে) আমি শুনেছি। কর্তার জিম্মায় উম্মে ওয়ালাদের মূল্যের অধিক কোন খেসারত বহন করার দায়িত্ব নেই।