41. হুদুদের অধ্যায়
প্রস্তরাঘাত করা
আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) ইহুদীদের একদল রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, তাদের একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক ব্যভিচার করেছে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ রজম বা প্রস্তরাঘাতের ব্যাপারে তাওরাতে কি আদেশ রয়েছে? তারা বললঃ আমরা ব্যভিচারকারীকে লজ্জিত করি এবং তাদেরকে বেত্রাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইব্নু সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলতেছ। তাওরাতে প্রস্তরাঘাতের শাস্তি রয়েছে। অতঃপর তারা তাওরাত এনে তা খুলল। এক ব্যক্তি রজমের বক্তব্যের উপর হাত রেখে পূর্বাপর অবশিষ্ট আয়াত পড়ে শুনাল। আবদুল্লাহ্ ইব্নু সালাম তাকে বলল, তোমার হাত উঠাও তো। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল উহাতে প্রস্তরাঘাতের আয়াত রয়েছে। অতঃপর সকল ইহুদীই স্বীকার করল যে, আবদুল্লাহ্ ইব্নু সালাম ঠিকই বলেছেন, তাওরাতে প্রস্তরাঘাতের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে প্রস্তরাঘাতের আদেশ করলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে উভয়কে প্রস্তরাঘাত করা হল। আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) বলেন, আমি দেখলাম, পুরুষটি ঐ নারীকে আঘাত হতে রক্ষা করতে তার উপর ঝুঁকে পড়ছিল। (বুখারী ৩৬৩৫, মুসলিম ১৬৯৯) মালিক (র) বলেন, উহার উপর ঝুঁকে পড়ছিল অর্থ পুরুষ নিজে প্রস্তরাঘাত সহ্য করেও ঐ নারীকে প্রস্তারাঘাত হতে রক্ষা করতে যেয়ে তার উপর উপুড় হয়ে পড়েছিল। সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তিকে যার নাম হাযযাল ছিল, বললেন, “হে হাযযাল, যদি তুমি এ খবরটি (মা‘ইযের ব্যভিচারের খবর) গোপন রাখতে, তা হলে উহা তোমার জন্য ভালই হত।” ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র) বলেন, আমি এক সময় এক সভাস্থলে এই ঘটনা বর্ণনা করলাম। তথায় ইয়াযীদ ইব্নু নু‘য়াইম ইব্নু হাযযালও উপস্থিত ছিল। তখন ইয়াযীদ বলল, হাযযাল আমার পিতামহ ছিলেন। এই হাদীস সত্য। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪৩৭৭, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সিলমিলা সহীহা] ৩৪৬০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি আবূ বাকর (রা)-এর নিকট এসে বলল, এই অধম ব্যক্তি [১] ব্যভিচার করেছে। আবূ বাকর (রা) তাকে বললেন, আমাকে ব্যতীত অন্য করো নিকট ইহা প্রকাশ করনি তো ? সে ব্যক্তি বলল, না। তিনি বললেন, আল্লাহ্র নিকট তাওবা কর আর আল্লাহ্র পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাক। কেননা আল্লাহ্ পাক স্বীয় বান্দাদের তাওবা গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু এতে তার প্রবোধ হল না। অতঃপর সে উমার ইব্নু খাত্তাব (রা)-এর নিকট উপস্থিত হল এবং আবূ বাকর (রা)-এর নিকট যেরূপ বর্ণনা করেছিল তদ্রুপ বর্ণনা করল। উমারও তাকে ঐরূপই বললেন, যেরূপ আবূ বাকর (রা) বলেছিলেন। এতেও তার মনে প্রবোধ মানল না। অগত্যা সে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, এই হতভাগা ব্যভিচার করেছে। সাঈদ বলেন, ইহা শ্রবণে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে ব্যক্তি তাঁর নিকট তিনবার এইরূপ বলল। তিনবারই রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন সে বলতেই থাকল, তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি কি রোগাক্রান্ত? এ ব্যক্তি উন্মাদ তো হয়ে যায়নি ? তাঁরা বললেন, এই ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, সে কি কুমার না কি বিবাহ করেছে ? রাবী বলেন, উপস্থিত লোকগণ বলল, সে বিবাহ করেছে, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অতঃপর তার সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তরাঘাতের আদেশ করলে তাকে প্রস্তরাঘাত করা হল। (বুখারী ৬৮১৫, ইমাম মুসলিম ১৬৯১, আবূ হুরাইরা (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) ইব্নু শিহাব যুহরী (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এক ব্যক্তি নিজে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার কথা চারবার স্বীকার করল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে তাকে প্রস্তরাঘাত করা হল। ইব্নু শিহাব বলেন, এজন্যই কোন ব্যক্তি নিজ অপরাধ স্বীকার করলে উহা দ্বারা তার শাস্তি হয়ে থাকে। (বুখারী ৫২৭২, ইমাম মুসলিম ১৬৯১, আবূ হুরাইরা থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবী মুলাইকা (র) এক স্ত্রীলোক রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে ব্যভিচারের কথা স্বীকার করল। সে মহিলা তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার সন্তান প্রসবের পর এসো। অতঃপর ঐ স্ত্রীলোকটি প্রসবের পর এল। এবার রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, এখন যাও, সন্তানের দুধ ছাড়া হলে এসো। সন্তানের দুধ ছাড়ানোর পর ঐ মহিলাটি আবার এল। এবার রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও, এই সন্তানকে কারো তত্ত্বাবধানে রেখে আস। সে তাকে কারো তত্ত্বাবধানে রেখে আসল। অতঃপর তাঁর আদেশে তাকে প্রস্তরাঘাত করা হল। (সহীহ, মুসলিম ১৬৯৫, বুরাইবদা (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবূ হুরায়রা (রা) ও যাইদ ইবনু খালিদ জুহানী (রা) দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া হয়ে তারা উভয়ে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হল। তাদের একজন বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আল্লাহ্র কিতাবের আইন অনুসারেই আমাদের মীমাংসা করে দিন। দ্বিতীয় ব্যক্তি খুব চতুর ছিল, বলতে লাগল, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহর কিতাব অনুসারে মীমাংসা করুন এবং আমাকে কথা বলতে দিন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি বলতে চাও বল। সে বলল, আমার ছেলে এই ব্যক্তির নিকট চাকর ছিল। সে এ ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করেছে। অনেকে বলল, তোমার ছেলেকে প্রস্তরাঘাত করা হবে। আমি তার পক্ষ হতে একশত বকরী এবং একটি দাসী ক্ষতিপূরণ হিসেবে দান করলাম। অতঃপর আমি আলিমদের নিকট জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা বললেন, তোমার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত করা হবে এবং এক বৎসরের জন্য নির্বাসন দেয়া হবে। আর তার স্ত্রীকে প্রস্তরাঘাত করা হবে। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্র কিতাব অনুসারেই আমি তোমাদের ফয়সালা করব। তোমার বকরী ও দাসী তুমি ফেরত নিয়ে যাও। অতঃপর তার ছেলেকে একশত বেত্রাঘাত লাগালেন আর এক বৎসরের জন্য দেশ ত্যাগের আদেশ দিলেন এবং উনাইস আসলামীকে দ্বিতীয় ব্যক্তির স্ত্রীর নিকট হাযির হতে নির্দেশ দিলেন। সেই স্ত্রীলোক অপরাধ স্বীকার করলে তাকে প্রস্তরাঘাত করতে বলা হল। স্ত্রীলোকটি অপরাধ স্বীকার করায় তাকে প্রস্তরাঘাত করা হল। (বুখারী ৬৬৩৩, মুসলিম ১৬৯৮) মালিক (র) বলেন, উক্ত হাদীসে যে ‘আসীফ’ শব্দ রয়েছে, উহার অর্থ ভৃত্য। আবূ হুরায়রা (রা) সা‘দ ইব্নু উবাদা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি আমি আমার স্ত্রীর নিকট কোন ব্যক্তিকে পাই, তবে কি চারজন সাক্ষী আনা পর্যন্ত তাকে সময় দিব ? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। (সহীহ, মুসলিম ১৪৯৮) আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রা) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা)-কে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ্র কিতাবে প্রস্তরাঘাতের যে বিধান রয়েছে উহা বাস্তব সত্য। যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় সে পুরুষ হোক অথবা নারী, যদি বিবাহিতা হয় আর চারজন সাক্ষী পাওয়া যায় অথবা তার পেটে বাচ্চা হয় বা স্বীকার করে, তবে প্রস্তরাঘাত করা হবে। (বুখারী ৬৮২৯, ৬৮৩০, মুসলিম ১৬৯১) আবূ ওয়াকিদ লাইসী (র) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) যখন সিরিয়ায় ছিলেন, তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে উল্লেখ করল যে, সে তার স্ত্রীর নিকট এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। উমার (রা) আবূ ওয়াকিদ লাইসীকে ঐ স্ত্রীলোকটির নিকট জিজ্ঞেস করতে পাঠালেন। আবূ ওয়াকিদ তার কাছে যেয়ে দেখলেন তার পাশে আরও কয়েকজন নারী বসে আছে। আবূ ওয়াকিদ স্ত্রীলোকটির নিকট তার স্বামী উমার (রা)-এর কাছে যা বর্ণনা করেছে তা বললেন। তিনি ইহাও বললেন, তোমার স্বামীর কথায় তোমাকে শাস্তি দেয়া হবে না, যদি না তুমি স্বীকার কর। অতঃপর আরও এই জাতীয় নানা কথা তাকে শিখাতে লাগলেন, যাতে সে স্বীকার না করে। কিন্তু সে ইহা মানল না, বরং ব্যভিচারের কথা স্বীকার করল। অতঃপর উমার (রা)-এর আদেশে তাকে প্রস্তরাঘাত করা হল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যিব (র) উমার (রা) যখন মিনা হতে প্রত্যাবর্তন (২৩ হিজরী) করলেন, তখন তিনি (মক্কার অনতিদূরে) আবতাহ্ নামক স্থানে তাঁর উট বসালেন। আর এদিকে কতগুলো পাথর একত্র করলেন। উহার উপর একখানা চাদর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লেন। অতঃপর আকাশের দিকে স্বীয় হস্তদ্বয় উত্তোলন করে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ্! আমার অনেক বয়স হয়েছে। শক্তি রহিত হয়ে গিয়েছে, প্রজাবৃন্দ অনেক হয়ে গিয়েছে। এ সময় আপনি আমাকে আপনার সন্নিধানে নিয়ে নিন, যাতে আমার দ্বারা আপনার কোন আদেশ অমান্য না হয়ে যায় এবং আপনার ইবাদতে অনিচ্ছা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। অতঃপর তিনি মদীনা চলে এলেন, মদীনার লোকদের সম্মুখে খুতবা দিতে যেয়ে বললেন, হে লোক সকল! তোমাদের সম্মুখে সমস্ত পথই প্রকাশ হয়ে পড়েছে; যত রকম ফরয কাজ ছিল, সমস্তই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। তোমরা পরিষ্কার সোজা পথে চালিত হয়েছ। এখন তোমরা পথ ভুলে যেন এদিক-ওদিক বিপথগামী না হয়ে যাও। তিনি তাঁর এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে বললেন, দেখ, তোমরা প্রস্তরাঘাতের আয়াতটি ভুলে যেও না। কেউ যেন না বলে, আমরা আল্লাহর কিতাবে দু’রকমের শাস্তি দেখছি না। দেখ, আল্লাহ্র রসূল রজম করেছেন এবং আমরাও রজম করেছি। ঐ আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যদি মানুষ এ কথা না বলত যে, উমার আল্লাহর কিতাবে অতিরিক্ত করেছে, তা হলে আমি الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ فَارْجُمُوهُمَا أَلْبَتَّةَ (অর্থাৎ যখন বিবাহিত পুরুষ অথবা নারী ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রস্তরাঘাত কর) আয়াতটি কুরআনে লিখে দিতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) কারণ আমরা এ আয়াত পাঠ করেছি। অতঃপর উহার তিলাওয়াত রহিত হয়ে গিয়েছে (কিন্তু এর হুকুম কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে)। সাঈদ বলেন, অতঃপর যিলহজ্জ মাস শেষ না হতেই উমার (রা) নিহত হলেন। মালিক (র)- উসমান (রা)-এর নিকট একটি স্ত্রীলোককে আনা হয়েছিল, ছয় মাসেই যার সন্তান প্রসব হয়েছে। উসমান (রা) তাকে প্রস্তরাঘাত করার আদেশ দিয়ে দিলেন। আলী (রা) তাঁকে বললেন, তার উপর প্রস্তরাঘাত করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেছেনঃ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا “সন্তানের মাতৃগর্ভে অবস্থান এবং মাতৃস্তন ছাড়াবার সময় ৩০ মাস।” অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “মা তার সন্তানকে পূর্ণ দুই বৎসর দুধ দান করবে। (অতএব ৩০ মাস হতে ২৪ মাস বাদ দিলে ৬ মাস থাকে) তা হলে সন্তানের মাতৃগর্ভে অবস্থানকাল ৬ মাস হল। অতএব তাকে প্রস্তরাঘাত করা যেতে পারে না। এটা শুনে উসমান (রা) তার নিকট লোক পাঠিয়ে দিলেন। তারা যেয়ে দেখল, ততক্ষণে তাকে প্রস্তরাঘাত করা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) ইব্নু শিহাবকে জিজ্ঞেস করলেন, পুরুষে পুরুষে সমকামিতা করলে তার শাস্তি কি ? তিনি বললেন, তাকেও প্রস্তরাঘাত করতে হবে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
ব্যভিচার স্বীকারকারীর বিধান
যায়দ ইব্নু আসলাম (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে এক ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে বলে স্বীকার করল। রসূলুল্লাহ্ তার জন্য একটি চাবুক আনতে বলা হলে তাঁর নিকট একটি ভাঙ্গা চাবুক আনা হল। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চাইতে ভাল চাবুক আনতে, তখন একটি নতুন চাবুক আনা হল, যার মাথা এখনও কাটা হয়নি। তিনি বললেন, ইহা হতে নরম একটি লও। অতঃপর এমন একটি চাবুক আনা হল, যা বাহনে ব্যবহার করা হয়েছে, তজ্জন্য নরম হয়ে গিয়েছে। অতঃপর তাঁর আদেশে তাকে বেত্রাঘাত করা হল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখন সময় এসেছে তোমরা আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করা হতে ফিরে আসবে। যদি কেউ এইরূপ কোন কিছু করে বসে, তবে তাকে আল্লাহর পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকা উচিত। যে ব্যক্তি স্বীয় পর্দা উন্মোচন করবে, তবে আমরা তার উপর আল্লাহর কিতাবের নির্ধারিত শাস্তি জারি করব। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সফীয় বিনত আবূ উরায়দ (রা) আবূ বাকর (রা)-এর কাছে এক ব্যক্তিকে আনা হল। সে একটি কুমারী বালিকার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে তাকে গর্ভবতী করেছিল। অতঃপর সে ব্যভিচারের কথা স্বীকার করল। সে বিবাহিত ছিল না। আবূ বাকর (রা) তাকে কোড়া লাগাবার আদেশ করলেন। এর পর ঐ লোকটিকে ফদক নামক স্থানে নির্বাসনে পাঠানো হলো। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি ব্যভিচারের কথা স্বীকার করার পর আবার অস্বীকার করে বলে যে, আমি ব্যভিচার করিনি, তা হলে তা হতে শাস্তি বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ব্যভিচারের শাস্তির জন্য হয় চারজন উপযুক্ত সাক্ষী হবে, না হয় তার স্বীকারোক্তি হতে হবে যার উপর সে শাস্তির সময় পর্যন্ত স্থির থাকে। মালিক (র) বলেন, আমার দেশের উলামার মত হল যে, যদি গোলাম ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তবে তাকে দেশান্তরিত করা হবে না।
ব্যভিচারের শাস্তির বিভিন্ন হাদীস
আবূ হুরায়রা (রা) ও যায়দ ইব্নু খালিদ জুহানী (রা) কেউ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অবিবাহিতা দাসী সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করল যে, যদি সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তবে তার বিধান কি? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে তাকে বেত্রাঘাত করবে। তিনবার তিনি এইরূপ বললেন। অতঃপর তাকে বিক্রয় করে ফেল, যদি তার মূল্য একটি রশির তুল্যও হয়। (বুখারী ২১৫২, ২৫২৪, মুসলিম ১৭০৪) মালিক (র) বলেন, ইব্নু শিহাব বলেন, তিনি কি তিনবারের পর এ কথা বলেছেন, না চারবারের পর, তা আমার স্মরণ নেই। ইয়াহইয়া বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি যাফীর অর্থ রশি। নাফি‘ (র) একজন গোলাম গনীমতের এক-পঞ্চমাংশের মালের মধ্যে যে সকল দাসদাসী ছিল তাদের দেখাশুনার দায়িত্বে ছিল। অতঃপর এক দাসীর সাথে বলপূর্বক ব্যভিচার করেছিল। উমার (রা) তাকে বেত্রাঘাত করে নির্বাসনে দিলেন, (কিন্তু) তিনি দাসীকে প্রহার করলেন না। কারণ তার উপর বল প্রয়োগ করা হয়েছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আইয়্যাস ইব্নু আবি রবি‘য়া মাখযুমী (র) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) আমাকে এবং আরও কতিপয় কুরাইশী যুবককে ব্যভিচারের দায়ে প্রহার করতে আদেশ দিলে আমরা ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে বায়তুলমালের দাসীদেরকে পঞ্চাশ পঞ্চাশ বেত্রাঘাত করতাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
কোন নারীকে হরণ করে বল প্রয়োগে সহবাস করা হলে তার হুকুম
মালিক (র) যে সমস্ত রমণী গর্ভবতী হয়, অথচ তাদের কোন স্বামী না থাকে আর তাদের কেউ বলে, তার সাথে বলপূর্বক ব্যভিচার করা হয়েছে অথবা বলে, আমি বিবাহ করেছি, তবে তার এই কথা ধর্তব্য নয়, বরং তার উপর শাস্তির কার্যকর করা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত সে বিবাহের কোন সাক্ষী উপস্থিত করতে অসমর্থ হবে অথবা তার উপর বল প্রয়োগের জন্য সাক্ষী না আনবে। যেমন এক অবিবাহিতা রমণী এই অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে আসবে যে, তার লজ্জাস্থান হতে রক্ত নির্গত হচ্ছে, আর সে কুমারী ছিল (ব্যভিচারের সময়) অথবা চিৎকার করবে আর লোক একত্র হয়ে তার এই অবস্থা দেখবে অথবা এই ধরনের অন্য কোন নিদর্শন। এই সব কিছুই সে না করলে তাকে শাস্তি দেয়া হবে, আর তার কথা বিশ্বাস করা হবে না। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ কোন রমণীর সাথে বলপূর্বক সহবাস করে, তবে তিন হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে সে বিবাহ করবে না। যদি গর্ভ হওয়ার সন্দেহ হয়, তবে গর্ভের সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করবে না।
অপবাদের শাস্তি, নসব অস্বীকার, ইশারায় কাউকে গালি দেয়া সম্পর্কিত মাস‘আলা
আবূ যিনাদ (রা) উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) এক দাসকে অপবাদের শাস্তি হিসাবে আশিটি বেত্রাঘাত করেছিলেন। আবূ যিনাদ বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আমির (রা)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমি উমার ও উসমান (রা)-কে এবং তাদের পর অপর দুই খলীফাকে দেখেছি, কেউই কোন দাসকে অপবাদের শাস্তি হিসেবে চল্লিশ বেত্রাঘাতের বেশি মারেননি। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) যুরাইক ইব্নু হাকিম আইলী (র) এক ব্যক্তি, যার নাম মিসবাহ, স্বীয় ছেলেকে কোন কাজে ডাকলেন। সে আসতে বিলম্ব করল। সে যখন এল, তখন মিসবাহ তাকে বলল, হে ব্যভিচারী! যুরাইক বলেন, এ ছেলেটি আমার কাছে ফরিয়াদ করল। আমি যখন তার পিতাকে শাস্তি দিতে চাইলাম, সে বলতে লাগল, যদি তুমি আমার পিতাকে বেত্রাঘাত কর, তা হলে আমি ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করব। এটা শুনে আমি মুশকিলে পড়ে গেলাম আর এই ঝগড়ার ফয়সালা করা কষ্টকর হয়ে পড়ল। বিষয়টি আমি উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র)-কে লিখে জানালাম। ঐ সময় তিনি মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন। উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র) উত্তরে লিখলেন, ছেলেকে ক্ষমা কর। যুরাইক বলেন, আমি উমারকে ইহাও লিখলাম, যদি কোন ব্যক্তি কাউকে অথবা তার পিতাকে অথবা তার মাতাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় আর তার মাতাপিতা মৃত্যুবরণ করে অথবা তাদের একজন মৃত্যুবরণ করে থাকে (তা হলে এর বিধান কি?), তখন উমার (রা) উত্তরে লিখলেন, যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে, যদি সে ক্ষমা করে, তবে ক্ষমা ঠিকই হবে। হ্যাঁ, যদি তার মাতাপিতা উভয়ে অথবা কোন একজন মৃত্যুবরণ করে থাকে, তবে আল্লাহ্র কিতাবের বিধান মতে তার শাস্তি হবে। হ্যাঁ, যদি ছেলে স্বীয় পিতার অবস্থা লুকাবার জন্য ক্ষমা করে তবে ক্ষমা বৈধ হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া বলেন, আমি মালিক (র)-কে বলতে শুনেছি ইহা এজন্য যে, যাকে অপবাদ দেয়া হয়েছে, যদি অপবাদের কথা প্রকাশ পায় শাস্তি দেয়ার কারণে এবং আশংকা করা হয় যে, এতে ব্যভিচারের সাক্ষী প্রকাশ পেয়ে যাবে আর ছেলে তা লুকাতে চাইবে। তাকে ক্ষমা করে দেয়া বৈধ। উরওয়া ইব্নু যুবাইর (র) যে ব্যক্তি এক কথায়ই অনেক লোকের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, যেমন বলল, তোমরা সকলে ব্যভিচারী অথবা হে ব্যভিচারীর দল, তা হলে তার উপর অপবাদের এক শাস্তিই হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যদি তারা পৃথকও হয়ে যায়, তবুও একই শাস্তি হবে। আমারা বিন্তে আবদুর রহমান (র) বলেন, উমার (রা)-এর সময় দুই ব্যক্তির মধ্যে গালমন্দ হল। একজন অপরজনকে বলল,, আল্লাহ্র কসম, আমার পিতা বদকার ছিল না, আমার মাও বদকার ছিল না। উমার (রা) এ ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। এক ব্যক্তি বলল, এতে সে মন্দ কি বলল। সে তো স্বীয় মাতাপিতার ভালই বর্ণনা করল। অন্যরা বলল, তার পিতার কি এই গুণ ছাড়া অন্যকোন গুণ অবশিষ্ট ছিল না? আমাদের মতে তাকে অপবাদের শাস্তি দিতে হবে। অবশেষে উমার (রা) তাকে আশি বেত্রাঘাত লাগালেন। মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে অপবাদ, অস্বীকার ও ইশারায় গালি ছাড়া অন্য কোন কথায় শাস্তি অনিবার্য হয় না। মালিক (র) বলেন, আমার মতে যদি কেউ কাউকে তার পিতার বংশের বলে অস্বীকার করে, তা হলে শাস্তি ওয়াজিব হবে, তার মা দাসী হলেও।
যে সমস্ত ব্যাপারে কোন শাস্তি নেই
মালিক (র) যদি কেউ এমন দাসীর সাথে সহবাস করে, যাতে সে অংশীদার রয়েছে, তবে তাতে শাস্তি নেই। এতে যে সন্তান জন্মলাভ করবে, সে সন্তান এই সহবাসকারীর বলে ধরা হবে। আর ঐ দাসীর মূল্য নির্ধারিত করে অন্যান্য অংশীদারের অংশ অনুপাতে তাদের মূল্য আদায় করে দিবে। অতঃপর সে দাসীর সে একাই মালিক হয়ে যাবে। এটাই আমাদের মত। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ কাউকে স্বীয় দাসী হালাল করে দেয় (সহবাস করবার অনুমতি দিয়ে দেয়, অথচ তা অবৈধ) আর ঐ ব্যক্তি ঐ দাসীর সাথে সহবাস করে, তা হলে ঐ দাসীর মূল্য দিতে হবে, গর্ভবতী হোক অথবা না হোক। হ্যাঁ, এতে কোন শাস্তি বর্তাবে না। যদি দাসী গর্ভ ধারণ করে, তবে ঐ সন্তানের বংশ এ সহবাসকারীর সাথে সাব্যস্ত হবে। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ স্বীয় ছেলের অথবা কন্যার দাসীর সাথে সহবাস করে তা হলে তাকে ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া হবে না। তবে এই দাসীর দাম দিতে হবে, গর্ভবতী হোক অথবা না হোক। রবীআ ইব্নু আবদুর রহমান (র) এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর দাসীকে সাথে নিয়ে সফরে যাত্রা করল। তথায় সে তার সাথে সহবাস করে বসল। স্ত্রী হিংসার বশবর্তী হয়ে উমার (রা)-এর কাছে বলে দিল। উমার (রা) তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সে বলল, আমার স্ত্রী এই দাসীটি আমাকে দান করেছে। উমার (রা) বললেন, তুমি দানের সাক্ষী নিয়ে এসো, না হয় তোমাকে প্রস্তরাঘাত করা হবে। তখন স্ত্রীলোকটি বলল, আমি তাকে দান করেছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
কোন্ প্রকারের বস্তু চুরি করলে হাত কাটা ওয়াজিব হয়
আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঢালের মূল্যের বিনিময়ে, যার মূল্য তিন দিরহাম ছিল, হাত কাটার আদেশ করেছেন। (বুখারী ৬৭৯৫, মুসলিম ১৬৮৬) আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবদুর রহমান মক্কী (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গাছে যে ফল ঝুলিতেছে অথবা যে ছাগল পাহাড়ে উঠে আছে উহা চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। যখন ছাগল ঘরে আসে অথবা ফল শুকাবার জায়গায় রাখা হয়, অতঃপর উহাকে কেউ চুরি করে, তখন হাত কাটা যাবে, যদি উহার মূল্য ঢালের মূল্যের সমান হয়। (হাসান, হাদীসটি আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করা হয়েছে, নাসাঈ ৪৭৫৭, ৪৯৫৯, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সহীহ, আল জ্বামে] ৭৩৯৮, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) (ইহা ঐ সময়ে প্রযোজ্য, যখন ছাগলের কোন রক্ষক না থাকে এবং উহাদের নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে)। আমরাহ্ বিন্তে আবদুর রহমান (র) উসমান (রা)-এর সময় এক ব্যক্তি একটি উতরজ (স্বর্ণনির্মিত শিশুদের গলার জাব) চুরি করেছিল। উসমান (রা) তার মূল্য তিন দিরহাম ধার্য করলেন, যা এক দীনারের এক চতুর্থাংশ ছিল। উসমান (রা) এর জন্য হাত কেটেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) এখনও এত বেশি দিন হয়নি, আমিও ভুলিনি। চোরের হাত এক-চতুর্থাংশ দীনার বা তদূর্ধ্বের জন্য কাটা যাবে। [১] (মারফু, বুখারী ৬৭৮৯, মুসলিম ১৬৮৪) আমরাহ্ বিনতে আবদুর রহমান (র) উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) মক্কাভিমুখে যাত্রা করলেন। তাঁর সাথে তাঁর দুইটি দাসীও ছিল, যাদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। আর আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকরের একজন দাসও তাঁর সাথে ছিল। তিনি ঐ দাসীদের হাতে মক্কা হতে একখানা চাদর পাঠালেন, যাতে পুরুষের ছবি অঙ্কিত ছিল এবং উহাকে একখানা সবুজ কাপড়ে জড়িয়ে সেলাই করে দেয়া হয়েছিল। ঐ দাসটি ঐ সেলাই খুলে তা হতে চাদর বের করে নিল আর তদস্থলে একটা চামড়া রেখে উহাকে পুনরায় সেলাই করে দিল। দাসীদ্বয় মদীনায় এসে উহার মালিকের নিকট উহা অর্পণ করল। তারা উহা খুলে দেখল চাদরের পরিবর্তে একখানা চামড়া, পরে ঐ দাসীদের নিকট জিজ্ঞেস করা হলে তারা আয়িশা (রা)-এর নিকট লিখে দিল যে, উহা ঐ দাস নিয়ে গিয়েছে। ঐ দাসকে প্রশ্ন করা হল, সে স্বীকার করল। অতঃপর আয়িশা (রা)-এর আদেশে তার হাত কাটা হল। আয়িশা (রা) বলেন, দীনারের চতুর্থাংশ বা তদূর্ধ্বের পরিবর্তে হাত কর্তন করা হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে যদি চোর তিন দিরহাম বা তদূর্ধ্ব মূল্যের মাল চুরি করে, তখন তার হাত কর্তন করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। যদিও দীনারের তুলনায় বেড়ে অথবা কমে যায়। কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঢালের বিনিময়ে হাত কর্তনের আদেশ দিয়েছেন, যার মূল্য তিন দিরহাম ছিল। উসমান (রা) একটি সাতরানজের বিনিময়ে হাত কেটেছিলেন যার মূল্য তিন দিরহাম ছিল। আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এই মতই উত্তম বলে গণ্য।
পলাতক দাস ও চোরের হাত কাটা সম্পর্কিত মাস‘আলা
নাফি‘ (র) ইবনু উমার (রা)-এর একটি দাস পলিয়ে গেল, সে চুরি করেছিল। ইব্নু উমার (রা) তাকে মদীনার গভর্নর সাঈদ ইব্নু আসের নিকট হাত কর্তনের জন্য পাঠিয়ে দিলেন। সাঈদ এটা মানলেন না। তিনি বললেন, চুরি করে পালিয়ে গেলে পলাতক দাসের হাত কর্তন করা হবে না। ইব্নু উমার (রা) বললেন, তুমি আল্লাহর কোন কিতাবে ইহা পেয়েছ ? অতঃপর ইব্নু উমারের আদেশে তার হাত কাটা হল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) যুরায়ক ইব্নু হাকিম (র) তিনি একজন পলাতক গোলামকে ধরে ফেললেন যে চুরি করেছিল। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিচার করা আমার জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। আমি তজ্জন্য উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র)-কে লিখলাম, আমি শুনিতেছি যখন পলাতক কোন দাস চুরি করে, তখন তার হাত কাটা যাবে না। তিনি বলেন, উমার (রা) আমার লেখার হাওলা দিয়ে উত্তরে লিখলেন, তুমি লিখেছ, তুমি শুনেছ, পলাতক দাস চুরি করলে তার হাত কাটা যাবে না, অথচ আল্লাহ্ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন, চোর পুরুষ হোক বা নারী হোক, তার হাত কাট। ইহা তার ঐ কাজের শাস্তি আর আল্লাহ্র পক্ষ হতে আযাব। আল্লাহ্ ক্ষমতাবান হেকমতওয়ালা। যদি ঐ দাস এক দীনারের চতুর্থাংশ বা তদূর্ধ্ব চুরি করে, তবে তার হাত কেটে ফেল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) কেননা আল্লাহ পাক বলেন, وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنْ কাসেম ইব্নু মুহাম্মাদ, সালেম ইব্নু আবদুল্লাহ ও উরওয়া ইব্নু যুবায়ের (র) বলেন, যদি পলাতক দাস সেই পরিমাণ মাল চুরি করে যাতে হাত কাটা ওয়াজিব হয়, তবে তার হাত কাটা যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের মধ্যে এতে কোন মতপার্থক্য নেই যে, পলাতক দাস যদি চুরি করে এবং তার মূল্য যদি সেই পরিমাণ হয় যাতে হাত কাটা ওয়াজিব, তবে তার হাত কাটা যাবে।
যখন চোর বিচারকের নিকট উপস্থিত হয়ে যায়, তখন তার জন্য সুপারিশ করা অবৈধ
সাফওয়ান ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু সাফওয়ান (র) কেউ সাফওয়ান ইব্নু উমাইয়া (রা)-কে বলল, যে ব্যক্তি হিজরত করেনি সে ধ্বংস হোক। অতঃপর সাফওয়ান হিজরত করে মদীনাতে আগমন করে স্বীয় চাদর মাথার নিচে রেখে মসজিদে নববীতে শুয়ে পড়ল। ইত্যবসরে এক চোর তার চাদর চুরি করল। সাফওয়ান চোরকে ধরে, তাকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে নিয়ে গেলে অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কাটার আদেশ দিলেন। সাফওয়াল বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমার এই ইচ্ছা ছিল না। আমি তাকে চাদরখানা সদকা করলাম। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কাছে তাকে আনার পূর্বে তোমার এ কথা বলা উচিত ছিল। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪৩৯৪, নাসাঈ ৪৮৭৯, ইবনু মাজাহ ২৫৯৫, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [ইরওয়া] ২৩১৭, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) রবীআ ইব্নু আবূ আবদুর রহমান (র) যুবাইর ইব্নু আওয়াম এক ব্যক্তিকে দেখল, সে চোরকে ধরে বিচারকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। যুবাইর বলল, তাকে ছেড়ে দাও। সে বলল, বিচারকের নিকট না নিয়ে আমি তাকে ছাড়ব না। যুবাইর বলল, তুমি তাকে বিচারকের কাছে নিয়ে গেলে সুপারিশকারী ও সুপারিশ মান্যকারীর উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
হাত কাটার বিভিন্ন মাসায়েল
কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদ (র) এক ব্যক্তি ইয়ামান হতে মদীনায় আগমন করল, যার এক হাত, এক পা কাটা ছিল। [১] আবূ বাকর (রা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে সে বলতে লাগল, ইয়ামানের বিচারক আমার উপর অত্যাচার করেছে। এই ইয়ামানী ব্যক্তি রাত্রে নামায পড়ত। আবূ বাকর (রা) তাকে বললেন, আল্লাহর কসম, তোমার রাত চোরের রাত নয়। ঘটনাক্রমে আবূ বাকর (রা)-এর স্ত্রী আসমা বিনতু উমাইস (রা)-এর একখানা হার হারিয়ে গেল, অন্যান্য লোকের সাথে ঐ পঙ্গু লোকটিও উহা তালাশ করছিল আর বলিতেছিল, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি এই সম্ভ্রান্ত পরিবারের হার চুরি করেছে, তাকে ধ্বংস কর। অবশেষে এক স্বর্ণকারের দোকানে উক্ত হার পাওয়া গেল। স্বর্ণকার বলল, ইহা তো আমাকে ঐ পঙ্গু লোকটি দিয়েছে। অতঃপর ঐ পঙ্গু লোকটি হয় স্বীকার করেছে অথবা সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, এ কাজ ঐ ব্যক্তিরই। আবূ বাকর (রা)-এর আদেশে ঐ পঙ্গু লোকটির বাম হাত কাটা গেল। [২] আবূ বাকর (রা) বললেন, আল্লাহ্র কসম, এই লোকটি যে নিজের উপর বদ দু‘আ করছিল উহা তার চুরি হতেও আমার নিকট কঠিন মনে হচ্ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি কয়েকবার চুরি করে, তৎপর সে ধৃত হয়, তবে এই কয়েক বারের পরিবর্তে শুধু এক হাতই কাটা যাবে। যদি ইতোপূর্বে তার শাস্তি না হয়ে থাকে। আর শাস্তি হয়ে থাকলে পুনরায় চুরি করার অপরাধে আবার তার ডান পা কাটা হবে। আবূ যিনাদ (রা) উমার ইব্নু আবদুল আযীয (র)-এর একজন কর্মচারী ডাকাতির দায়ে এমন কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেন, যারা কাউকেও হত্যা করেনি। কর্মচারী তাদের হাত কেটে ফেলতে অথবা তাদেরকে হত্যা করতে ইচ্ছা করলেন। কিন্তু কোনটি করা ঠিক হবে সাব্যস্ত করতে না পেরে অবশেষে এ ব্যাপারটি উমার ইবনু আঃ আযীয-এর নিকট লিখে জানালেন। উমার ইবনু আঃ আযীয উত্তরে লিখলেন, যদি তুমি সহজ শাস্তি প্রদান কর, তবে তাই উত্তম হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে যদি কোন ব্যক্তি বাজারের সামগ্রী হতে এক-চতুর্থাংশ দীনারের সমমানের মাল চুরি করে, যা উহার মালিক একটি পাত্রে রেখেছে এবং একটিকে অন্যটির সাথে মিলিয়ে রেখেছে, তবে চোরের হাত কাটা যাবে, ঐ মালের মালিক তথায় উপস্থিত থাকুক অথবা না থাকুক, দিনে চুরি হয়ে থাকুক অথবা রাতে। মালিক (র) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি চুরি করে এমন কিছু, যার মূল্য দীনারের এক-চতুর্থাংশ। অতঃপর সে ধরা পড়ে, উহা মালের প্রকৃত মালিককে প্রত্যর্পণ করে, তবুও তার হাত কাটা যাবে। কেউ যদি বলে কেন তার হাত কাটা হবে? তার নিকট হতে মাল ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাহলে বলা হবে কেননা এর উদাহরণ এইরূপ যেমন কোন ব্যক্তি কোন মাদক দ্রব্য পান করল, যার গন্ধ তার মুখ হতে নিঃসৃত হচ্ছে, কিন্তু মাতাল হচ্ছে না, তবে তার উপর শাস্তির আদেশ জারি হবে। কেননা সে ব্যক্তি উহা মাদকতার জন্যই খেয়েছিল যদিও সে মাতাল হয়নি। তদ্রুপ চোরও মাল নিয়ে যাওয়ার জন্যই চুরি করেছিল, যদিও নিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। মালিক (র) বলেছেন, যদি কতিপয় ব্যক্তি কোন ঘরে চুরি করার নিমিত্তে প্রবেশ করে আর তথা হতে একটি বাক্স বা কাষ্ঠ অথবা টুকরি সকলে মিলে উঠিয়ে নেয়, যদি উহার মূল্য এক দীনারের এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ হয় তা হলে ঐ সকল ব্যক্তির হাত কাটতে হবে। আর যদি প্রত্যেকে পৃথক পৃথক মাল নিয়ে বের হয়, তবে যার মালের মূল্য এক-চতুর্থাংশ দীনারের পরিমাণ হয় তার হাত কাটা যাবে। আর যার মাল এই পরিমাণের না হবে, তার হাত কাটা যাবে না। মালিক (রা) বলেন, আমাদের মত এই যে, যদি কোন ঘরে শুধু একজন লোকই থাকে আর ঐ ঘর হতে চোর কোন দ্রব্য চুরি করে, কিন্তু ঘরের বাহিরে নিয়ে যেতে সক্ষম না হয়, তবে তার হাত কর্তন করা হবে না, যতক্ষণ না ঐ মাল ঘরের বাহিরে নিয়ে যায়। যদি ঘরে পৃথক পৃথক কয়েকটি কামরা থাকে আর প্রতি কামরায় লোক থাকে, এমতাবস্থায় যদি চোর কোন কামরা হতে কারো মাল চুরি করে কামরার বাহিরে নিয়ে যায়, কিন্তু ঘরের বাহিরে নিয়ে যায়নি, তবুও তার হাত কাটা হবে। মালিক (র) বলেন, আমাদের মতে যে দাস-দাসী ঘরে যাতায়াত করে আর তার প্রভু তার উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, যদি সে স্বীয় প্রভুর কোন মাল চুরি করে তা হলে তার হাত কাটতে হবে না। এইরূপে যে দাস বা দাসী ঘরে যাতায়াত করে না, আর প্রভু তার উপর নির্ভরও করে না, সেও যদি স্বীয় প্রভুর মাল চুরি করে থাকে তবে তার হাত কাটতে হবে না। যদি ঐ দাস বা দাসী স্বীয় প্রভুর স্ত্রীর মাল অথবা স্বীয় প্রভুর স্বামীর মাল চুরি করে, তা হলে তার হাত কাটতে হবে। মালিক (র) বলেন, অনুরূপভাবে যদি স্বামী স্ত্রীর এমন মাল চুরি কর্ যা যেই ঘরে তারা উভয়ে অবস্থান করে সেই ঘরে রক্ষিত নয়, বরং অন্য কোন ঘরে রক্ষিত অথবা স্ত্রী স্বীয় স্বামীর এমন মাল চুরি করে যা অন্য ঘরে রয়েছে, তা হলে হাত কাটতে হবে। মালিক (র) বলেন, বালক-বালিকা অথবা কোন বিদেশী ব্যক্তি যে এই দেশের কথা বলতে পারে না যদি কোন চোর তাদেরকে ঘর হতে চুরি করে, তা হলে হাত কাটতে হবে। যদি রাস্তা হতে অথবা ঘরের বাহির হতে নিয়ে যায় তা হলে হাত কাটতে হবে না। এদের হুকুম পাহাড়ের ছাগল ও গাছের লটকানো ফলের মতো হবে। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ কবর খুঁড়ে দীনারের চতুর্থাংশ পরিমাণ মাল চুরি করে নেয়, তবে চোরের হাত কাটা হবে। কেননা কবরও ঘরের মতো একটি রক্ষিত স্থান। কিন্তু যতক্ষণ না কাফন কবর হতে বের করে আনবে ততক্ষণ হাত কাটতে হবে না।
যে অবস্থায় হাত কাটা হবে না
মুহাম্মাদ ইব্নু ইয়াহ্ইয়া ইব্নু হিব্বান (র) এক দাস একটি বাগান হতে একটি খেজুরের চারা চুরি করে স্বীয় প্রভুর বাগানে রোপণ করল। পরে ঐ বাগানের মালিক তার চারার অন্বেষণে বের হল এবং ঐ বাগানে এসে তার চারা পেল। সেই ব্যক্তি ঐ দাসের ব্যাপারে মারওয়ানের নিকট নালিশ করল। মারওয়ান ঐ দাসকে ডেকে বন্দী করল এবং তার হাত কেটে ফেলার ইচ্ছা করল। ঐ দাসের প্রভু রাফি ইব্নু খাদীজের নিকট উপস্থিত হয়ে তার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইল। রাফি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনে, তিনি বলেছেন, ফল কিংবা গাছের মাথির জন্য হাত কাটা হবে না। সে বলল, মারওয়ান আমার দাসকে বন্দী করে রেখেছে এবং তার হাত কাটতে চায়। আমার ইচ্ছা, আপনি আমার সাথে মারওয়ানের নিকট যেয়ে তাকে এই হাদীসটি শুনিয়ে দিন। অবশেষে রাফি তাঁর সাথে মারওয়ানের নিকট গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তার দাসকে বন্দী করে রেখেছ? মারওয়ান বলল, হ্যাঁ। রাফি বললেন, কি করবে ? মারওয়ান বলল, তার হাত কেটে ফেলব। রাফি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ফল ও গাছের মাথির জন্য হাত কাটা যাবে না। এটা শুনে মারওয়ান ঐ গোলামকে ছেড়ে দিতে আদেশ দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হল। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪২২৩, তিরমিযী ১৪৪৯, নাসাঈ ৪৯৬০, ইবনু মাজাহ ২৫৯৪, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল জামে] ৭৫৪৫) সায়িব ইব্নু ইয়াযীদ আবদুল্লাহ ইব্নু আমর ইব্নু হাযরামী (রা) স্বীয় দাসকে উমার (রা)-এর নিকট নিয়ে এসে বলল, আপনি আমার এই দাসের হাত কেটে ফেলুন। কেননা সে চুরি করেছে। উমার (রা) বললেন, কি চুরি করেছে? তিনি বললেন, সে আমার স্ত্রীর আয়না চুরি করেছে, যার মূল্য হবে ষাট দিরহাম। উমার (রা) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, তার হাত কাটা যাবে না। সে তোমার চাকর ছিল, তোমার মাল চুরি করেছে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (রহঃ) মারওয়ানের নিকট এক ব্যক্তিকে আনা হল, যে ব্যক্তি কারো মাল অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। মারওয়ান তার হাত কাটতে মনস্থ করলেন। অতঃপর এর বিধান জিজ্ঞেস করবার জন্য যায়দ ইব্নু সাবিত (র)-এর নিকট এক ব্যক্তিকে পাঠালেন। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি কারো মাল অপহরণ করে, তার হাত কাটা হবে না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) তিনি বলেন, আবূ বাকর ইব্নু মুহাম্মাদ ইব্নু আমর ইব্নু হাযম এক নিবাতী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল, যে লোহার আংটি চুরি করেছে। তাকে হাত কাটতে ধরে রাখল। ‘আমরা বিনতে আবদুর রহমান (রা) তাঁর উমাইয়া নামক মুক্ত দাসীকে আবূ বাকর (র)-এর নিকট পাঠালেন। আবূ বাকর (র) বললেন, আমি কয়েকজন লোকের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম। ইত্যবসরে ঐ দাসী আমার নিকট এসে বলতে লাগল, আপনার খালা ‘আমরা বলেছেন, ভাগনে! তুমি অল্প কিছু মালের জন্য একজন গ্রাম্য লোককে আটকিয়ে রেখেছ আর তার হাত কাটতে চাচ্ছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, ‘আমরা বলেছেন যে, এক-চতুর্থাংশ দীনারের বিনিময়েই হাত কাটা হয়ে থাকে। অতঃপর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, যদি কোন দাস এইরূপ কোন অন্যায় স্বীকার করে, যাতে তার উপর হাদ্দ জারি হয় অথবা শাস্তি বর্তায় যা তার দৈহিক ক্ষতি সাধন করে, (যথা, হাত কাটা যায়) তবে তা বৈধ। তাকে এই দোষারোপ করা হবে না যে, সে তার মালিকের অনিষ্ট সাধনের নিমিত্তে এই ধরনের অপরাধ স্বীকার করেছে, প্রকৃতপক্ষে সে উহা করেনি। মালিক (র) বলেন, কোন দাস যদি এইরূপ কোন অন্যায় স্বীকার করে যার জন্য তার মালিককে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় এইভাবে যে, মালিককে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তবে তার এই স্বীকারোক্তি বৈধ ধরা যাবে না। মালিক (র) বলেন, যদি কোন শ্রমিক অথবা অন্য কোন ব্যক্তি যে এমন সব লোকের মধ্যে থাকে, যাদের সে খিদমত করে সে তাদের কোন বস্তু চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। কেননা সে খেয়ানতকারীর মতো হল। আর খেয়ানতকারী ব্যক্তির হাত কাটা হয় না। মালিক (র) বলেন, যদি কেউ কারো কোন দ্রব্য চেয়ে নেয়, অতঃপর তা অস্বীকার করে, তবে তার হাত কাটা হবে না। এর উদাহরণ এইরূপ, যেমন কেউ কারো নিকট হতে ঋণ নিয়ে তা অস্বীকার করল তখন তার হাত কাটা হবে না। মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে ইহা একটি সর্বসম্মত বিধান যে, যদি চোর ঘরে ঢুকে মাল একত্র করে নেয় কিন্তু উহা ঘর হতে বের করল না, তা হলে তার হাত কাটা হবে না। এর উদাহরণ এইরূপ, যেমন কারো সম্মুখে পান করবার জন্য মদ রাখা আছে, কিন্তু সে এখনও উহা পান করেনি; এমতাবস্থায় তাকে মদ্য পানের শাস্তি দেয়া হবে না। উহার উদাহরণ এরূপও হতে পারে, যেমন কেউ কোন স্ত্রীলোকের নিকট সহবাস করতে উপবেশন করল, কিন্তু তার লজ্জাস্থানে স্বীয় লজ্জাস্থান প্রবেশ করায়নি, এমতাবস্থায় তার উপর ব্যভিচারের শাস্তি বর্তাবে না। মালিক (র) বলেন, আমাদের কাছে একটি সর্বসম্মত বিধান এই যে, ছিনিয়ে নিলে হাত কাটা হবে না, ঐ দ্রব্যের মূল্য এক দীনারের চতুর্থাংশ হোক বা তার চাইতে কম হোক।