46. তকদীর অধ্যায়
তকদীরের ব্যাপারে বিতর্ক করা নিষেধ
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম ও মূসা (আ)-এর মধ্যে তর্ক হয়েছিল। অবশেষে আদম (আ) মূসা (আ)-এর উপর তর্কে জয়ী হয়েছিলেন। মূসা (আ) বলেছিলেন, আপনি ঐ আদম যিনি বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছেন। আর তাদেরকে বেহেশত হতে বের করেছেন। আদম (আ) বললেন, তুমি তো ঐ মূসা যাকে আল্লাহ্ সর্বপ্রকার ইলম দান করেছিলেন, এবং লোকদের মাঝ থেকে তাকে চয়ন করে নবী বানিয়ে ছিলেন। মূসা (আ) বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর আদম (আ) বললেন, তা সত্ত্বেও তুমি আমাকে এমন কাজের ব্যাপারে দোষারোপ করছ, যা আমার সৃষ্টির পূর্বেই আমার তকদীরে লেখা ছিল। (বুখারী ৩৪০৯, মুসলিম ২৬৫২) মুসলিম ইব্নু ইয়াসার জুহানী (র) উমার (রা)-এর নিকট وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ আয়াত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেন, আমি শুনেছি, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আদম (আ)-কে সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর পৃষ্ঠে স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা মাসেহ করলেন, অতঃপর আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করলেন এবং বললেন, আমি এদেরকে বেহেশ্তের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা বেহেশতের কাজ করবে। অতঃপর পুনরায় তাঁর পৃষ্ঠদেশে স্বীয় হাত বুলালেন এবং তাঁর আর কিছু সংখ্যক সন্তান বের করলেন এবং বললেন, আমি এদেরকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেছি। এরা দোযখের কাজ করবে। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! তা হলে আমল করায় লাভ কি ? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে বেহেশ্তের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা বেহেশতীদের কাজ করান আর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত সে নেক কাজ করে মৃত্যুবরণ করে, ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে বেহেশ্তে প্রবেশ করিয়ে থাকেন। আর যখন কোন বান্দাকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তার দ্বারা দোযখীদের কাজ করিয়ে থাকেন। অতঃপর মৃত্যুর সময়েও তাকে খারাপ কাজ করিয়েই মৃত্যুবরণ করান। আর আল্লাহ্ তখন তাকে দোযখে প্রবেশ করিয়ে থাকেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪৭০৩, তিরমিযী ৩০৭৫, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন ====== শব্দটুকু ব্যতীত, সহীহ ওযয়ীফ সুনানে আবূ দাঊদ) মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের কাছে দুইটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ উহাকে ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। উহা হল আল্লাহ্র কিতাব ও তাঁর নাবীর সুন্নাত। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) তাউস ইয়ামানী (র) আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবীকে পেয়েছি যাঁরা বলতেন, প্রতিটি বস্তুই তকদীরের লিখন অনুসারে হয়ে থাকে। তাউস বলেন, আর আমি ইব্নু উমার (রা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি ব্যাপারই তকদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে, এমন কি মানুষের দুর্বল হওয়া এবং বুদ্ধিমান হওয়াও। (সহীহ, মুসলিম ২৬৫৫) আমর ইব্নু দীনার (র) আমি আব্দুল্লাহ ইব্নু যুবাইর (র)-এর কাছে শুনেছি, তিনি স্বীয় খুৎবা দেয়ার সময় বলতেন, আল্লাহ্ তা‘আলাই মানুষকে সৎপথ প্রদর্শনকারী, আর তিনিই পথভ্রষ্টকারী। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) (কুরআন মাজীদেও বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা হিদায়ত দান করেন, যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। সুতরাং ভাল-মন্দ সমস্ত কাজ আল্লাহ্ই সৃষ্টি করে থাকেন, কিন্তু মানুষকে ভাল-মন্দ কাজ বলে দেয়া হয়েছে এবং উহা হতে বেছে নেয়ার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এই স্বাধীনতার উপরই তার সওয়াব ও আযাব হবে। কদরীয়া [১] ও শীয়া দলের মতে মানুষ নিজের কাজের নিজেই সৃষ্টিকর্তা। এই মতবাদ কুরআন ও হাদীসের বিপরীত) আবূ সুহাইল ইব্নু মালিক (র) তিনি উমার আবদুল আযীয (র)-এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলেন। তিনি আবূ সুহাইলকে বললেন, কদরিয়া সম্বন্ধে তোমার মত কি ? আমি বললাম, আমার মত এই যে, তাদেরকে তাওবা করানো উচিত। যদি তারা তাওবা করে ফেলে, তবে তো ভাল, না হয় তাদেরকে হত্যা করা যেতে পারে। উমার (র) বলেন, তাদের সম্বন্ধে আমার মতও ইহাই। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, তাদের সম্বন্ধে আমারও মত এটাই।
তকদীর সম্বন্ধে বিভিন্ন রেওয়ায়ত
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের তালাক কামনা না করে এই উদ্দেশ্যে যে, তার পাত্র খালি করে দিবে, এবং তাকে বিবাহ করবে। কারণ যা তার ভাগ্যে রয়েছে উহাই সে পাবে। (সহীহ, বুখারী ৬৬০১) মুহম্মাদ ইব্নু কাব কুরাযী (র) মুয়াবিয়া (রা) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেছেন, হে মানুষ! তোমরা জেনে রাখ, যা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে দান করবেন কেউই তা বাধা দিতে পারবে না। আর তিনি যা দান না করবেন, তা কেউই দান করতে পারবে না। আর কোন মালদারকে তার মাল আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ্ তা‘আলা যার ভাল চান তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। অতঃপর বললেন, আমি এই কথাগুলো এই কাঠের (মিম্বর) উপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আমার কাছে এই মর্মে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, সাহাবীদের যুগে বলা হত, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি প্রতিটি বস্তু যেভাবে ইচ্ছা সৃষ্টি করেছেন, তা দ্বারা যে সময় নির্দিষ্ট হয়েছে উহার পূর্বে কিছুই হতে পারে না। আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকে, আল্লাহ্ তার কথা শুনে থাকেন। আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কেউ নেই যার নিকট দু‘আ করা যেতে পারে, যার কাছে কিছু আশা করা যেতে পারে। মালিক (র) সাহাবীদের যুগে বলা হত, স্বীয় রিযিক পূর্ণ করার পূর্বে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে না। অতএব ধৈর্য সহকারে জীবিকা অন্বেষণ কর অর্থাৎ এই ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। (জীবিকা অন্বেষণে এত লেগে যেও না, যাতে আল্লাহকেও ভুলে যেতে হয়, হালাল হারামের পার্থক্য থাকে না। যা নির্দিষ্ট আছে তাই পাবে)