47. সৎস্বভাব বিষয়ক অধ্যায়
সৎস্বভাব প্রসঙ্গ
মু‘আয ইব্নু জাবাল (রা) তিনি বলেন, সর্বশেষ ওসীয়্যত নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে করেছেন যখন আমি ঘোড়ার রেকাবে পা রাখছিলাম। তা এই যে, হে মু‘আয! মানুষের সাথে সৎ ব্যবহার করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) তিনি বলেছেন, যখনই রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুইটি কাজের মধ্যে একটি গ্রহণের অনুমতি দেয়া হত তিনি সহজটি গ্রহণ করতেন, যদি উহা গুনাহর কাজ না হত। যদি উহা গুনাহর কাজ হত, তবে তিনিই সর্বাধিক উহা বর্জন করে চলতেন। তিনি নিজের জন্য কারো উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু যখন আল্লাহ্র হারামের মর্যাদা বিনষ্ট করা হত তখন তিনি প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারী ৩৫৬০, মুসলিম ২৩২৭) আলী ইব্নু হুসাইন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের সৌন্দর্যের মধ্যে এটাও রয়েছে যে, মানুষ অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ ত্যাগ করবে। (সহীহ, তিরমিযী ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনু মাজাহ ৩৯৭৬, আবূ হুরায়রা (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ আল-জামে] ৫৯১১, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) উম্মুল মু‘মিনীন আয়িশা (রা) কেউ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সাক্ষাৎ করতে অনুমতি চাইল। আমি তখন রসূলুল্লাহ্র ঘরে ছিলাম। তিনি বললেন, এই লোকটি মন্দ। অতঃপর তিনি তাকে আসতে অনুমতি দান করলেন। আয়িশা (রা) বলেন, বেশিক্ষণ না যেতেই আমি ঐ লোকটির সাথে রসূলুল্লাহ্কে হাসতে শুনতে পেলাম। তার প্রস্থানের পর আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এইমাত্র আপনি তাকে মন্দ বললেন, আর এখনই আপনি তার সাথে হাসতেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকলের চাইতে মন্দ ঐ ব্যক্তি, যার অনিষ্টকারিতার জন্য লোকে তাকে ভয় করে। [১] (বুখারী ৬০৩২, ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন ২৫৯১, আর ইমাম মালিকের নিকট হাদীসটি পৌছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন) কা‘ব আহবার (র) তিনি বলেছেন, কোন বান্দার মর্যাদা তার প্রভুর কাছে কিরূপ তা জানতে ইচ্ছা করলে দেখ, অন্যান্য লোক তার সম্বন্ধে কি ধারণা পোষণ করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ তিনি বলেছেন, আমার কাছে এই রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মানুষ তার সৎ চরিত্রের জন্য সারা রাত্রি ইবাদতকারী ও সর্বদা রোযা রাখে, এমন ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করে থাকে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (র) তিনি বয়েছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজের সন্ধান দিব, যা বহু নামায ও অনেক সাদকা হতেও উৎকৃষ্ট ? লোকেরা বলল, নিশ্চয়ই, বলুন। তিনি বললেন, পরস্পর আপস করিয়ে দেয়া। আর তোমরা শত্রুতা ও দুশমনী হতে দূরে থাক। কারণ এই স্বভাব নেকীকে বিনষ্ট করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর কাছে এই খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নৈতিকতাকে পূর্ণতা দান করবার জন্য নবী হয়ে আগমন করেছি। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
শরম ও লজ্জা সম্বন্ধীয় বর্ণনা
যায়েদ ইব্নু তালহা ইব্নু রুকানা (র) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতিটি ধর্মেরই একটা স্বভাব রয়েছে, আর ইসলামের স্বভাব হল লজ্জা। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার ভাইকে বেশি লজ্জা না করার জন্য নসীহত করছিল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই বিষয়ে তাকে নসীহত করা হতে বিরত থাক। কেননা এই লজ্জা ঈমানের অঙ্গস্বরূপ। [১] (বুখারী ২৪, মুসলিম ৩৬)
ক্রোধ প্রসঙ্গ
হুমাইদ ইব্নু আবদুর রহমান ইব্নু আউফ (রা) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ্! আমাকে এমন কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিন, যা দ্বারা উপকার লাভ করতে পারি। আর অনেক কথা বলবেন না, আমি ভুলে যাব। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করো না। (সহীহ, ইমাম বুখারী ৬১১১৬, আবূ সালেহ আবূ হুরায়রা (রা) থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঐ ব্যক্তি বীর নয় যে অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়, বরং বীর ঐ ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। (বুখারী ৬১১৪, মুসলিম ২৬০৯)
কাউকে ত্যাগ করা প্রসঙ্গে
আবূ আয়্যুব আনসারী (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তিন দিনের বেশি ত্যাগ করা বৈধ নয়। এটা এইরূপে যে, তাদের একজন মিলতে আসে, তো অন্যজন তাকিয়ে দেখে না বা একজন মিলতে আসে তো অন্যজন লক্ষ্য করে না; এই উভয়ের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই উত্তম, যে প্রথমে সালাম করে। (বুখারী ৬০৭৭, মুসলিম ২৫৬০) আনাস ইবনু মালিক (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করো না এবং একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরাইয়া থেক না, বরং তোমরা আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থাক; কোন মুসলমানের জন্য তার কোন মুসলমান ভাইকে তিন রাতের অধিক ত্যাগ করা বৈধ নয়। মালিক (র) বলেন, মুসলিম ভাই হতে মুখ ফিরায়ে নেওয়াকেই তাদাবুর বলা হয়। (বুখারী ৬০৭৬, মুসিলম ২৫৫৯) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অনুমান করা হতে বেঁচে থাকে। নিশ্চয়ই অনুমান বড় মিথ্যা। কারো ছিদ্রান্বেষণ করো না, কারো সম্বন্ধে অনুমানভিত্তিক কথা বলো না। দুনিয়ার জন্য পরস্পর প্রতিযোগিতা করো না। একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং অন্যের প্রতি পিঠ ফিরিয়ে থেকো না। আল্লাহ্র বান্দা সকলে ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারী ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৩) আতা ইবনু আবদুল্লাহ্ খুরাসানী (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা পরস্পর মুসাফাহা (কর মর্দন) কর, তা হলে তোমাদের মধ্যকার শত্রুতা দূর হয়ে যাবে। পরস্পর হাদিয়া তোহ্ফা আদান-প্রদান কর, তা হলে পরস্পর ভালবাসা সৃষ্টি হবে এবং বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেহেশতের দ্বার খুলে দেয়া হয় এবং যে মুসলমান বান্দা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তবে এ ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজ ভাইয়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। বলা হতে থাকে, তাদের পরস্পর মেলামেশা না হওয়ার পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে অপেক্ষা কর অর্থাৎ যতক্ষণ তারা আপস না করে তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না। (সহীহ, মুসলিম ২৫৬৫) আবূ হুরায়রা (রা) তিনি বললেন, সপ্তাহে দুইবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ও সোমবার বান্দাদের আমল লেখা হয়ে থাকে। তখন প্রত্যেক মু‘মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়ে থাকে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে স্বীয় ভাই-এর সাথে শত্রুতা পোষণ করে। বলা হয়, এই উভয়কে তাদের আপস না হওয়া পর্যন্ত ত্যাগ কর (ক্ষমা করো না)। (সহীহ, মুসলিম ২৫৬৫)