49. রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৈহিক গঠন সম্পর্কে
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৈহিক গঠনের বিবরণ
আনাস ইবনু মালিক (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক লম্বা বা অধিক বেঁটে ছিলেন না। আর না তিনি চুনের মতো সাদা ছিলেন, না একেবারে শ্যামল বর্ণ ছিলেন (বরং সাদা লাল মিশান রং ছিল)। তাঁর চুল (হাবশীদের মতো) খুব কোঁকড়ানও ছিল না আর একেবারে সোজাও ছিল না। যখন তিনি চল্লিশ বৎসর বয়সে উপনীত হলেন তখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে নবী করলেন। নবী হওয়ার পর তিনি দশ বৎসর মক্কায় এবং দশ বৎসর মদীনায় অবস্থান করলেন। ষাট বৎসর বয়সে ইনতিকাল করেন। [১] ঐ সময় তাঁর চুল ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা হয়নি। (বুখারী ৩৫৪৮, মুসলিম ২৩৪৭)
‘ঈসা (আ) ও দজ্জালের বিবরণ
আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি কাবার কাছে রয়েছি এবং সেই অবস্থায় আমি মেটে রঙের একজন লোক দেখলাম যেরূপ মেটে রঙের সুশ্রী লোক হয়ে থাকে। তার কাঁধ পর্যন্ত চুল লম্বা ছিল। তার চুলে তিনি চিরুনী দিয়ে আঁচড়িয়েছেন এবং উহা হতে তখনও পানি ঝরছে। তিনি দুইজন লোকের উপর ভর করে অথবা তিনি বলেছেন দুইজন লোকের কাঁধে ভর করে কা‘বার তাওয়াফ করছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে ? আমাকে উত্তর দেয়া হল, ইনি মসীহ ইব্নু মরিয়াম। [১] অতঃপর আমি অন্য একজন লোককে দেখলাম (যার) চুল খুব কোঁকড়ান। ডান চোখ তার কানা যেন ঐ চক্ষু ফোলা আঙ্গুর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তি কে ? কেউ উত্তর দিল, এ হল মসীহ্ দাজ্জাল। (বুখারী ৫৯০২, মুসলিম ১৬৯)
ফিতরাত বা স্বভাব প্রসঙ্গ
আবূ হুরায়রা (রা) প্রকৃতিগত সুন্নত পাঁচটি (১) নখ কাটা, (২) গোঁফ ছাঁটা, (৩) বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, (৪) নাভীর নিচের চুল কামান, (৫) খাতনা করা। (মারফু, বুখারী ৫৮৮৯, মুসলিম ২৫৭) সাঈদ ইবনু মুসায়্যার (র) ইবরাহীম (আ) সর্বপ্রথম মেহমানদারী করেছেন, সর্বপ্রথম খাতনা করেছেন, সর্বপ্রথম গোঁফ কেটেছেন, আর সর্বপ্রথম সাদা চুল দেখে বলেছেন, ইয়া আল্লাহ্, ইহা কি ? আল্লাহ্ তা‘আলা বললেন ইহা ইজ্জত ও সম্মান। ইবরাহীম (আ) বললেন হে প্রভু, আমার সম্মান বাড়িয়ে দাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, গোঁফ এমনভাবে কাটা উচিত যেন ঠোঁটের কিনারা দেখা যায়। একেবারে কামিয়ে ফেলবে না। [১]
বাম হাতে খাওয়া নিষেধ প্রসঙ্গ
জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাম হাতে খেতে নিষেধ করেছেন। তিনি এক জুতা পরিধান করে চলতে, এক কাপড়ে নিজেকে ঢেকে নিতে নিষেধ করেছেন যাতে লজ্জাস্থানে কোন কাপড় না থাকে । (সহীহ, মুসলিম ২০৯৯) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের মধ্যে কেহ খেতে বসে তখন ডান হাতে তার খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা উচিত। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় এবং পান করে। (সহীহ, মুসলিম ২০২০)
মিসকীন সম্পর্কে বিবরণ
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে সে মিসকীন নয়, যাকে এক লোকমা, দুই লোকমা একটি খেজুর বা দুটি খেজুর দান করা হয়। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! তা হলে মিসকীন কারা ? তিনি বললেন, যার নিকট এই পরিমাণ মাল নাই, যা দিয়ে সে নিজের প্রয়োজন মিটাতে পারে আর তার অবস্থা কারো জানা নাই যে, তাকে সাদকা দেয়া যেতে পারে, আর না সে লোকের নিকট চেয়ে বেড়ায়। (বুখারী ১৪৭৯, মুসলিম ১০৩৯) যায়দ ইব্নু আসলাম (র) তিনি ইব্নু বুজাইদ আনসারী আল হারেসী (রা) হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, মিসকীনদেরকে (যা কিছু সম্ভব হয়) দাও, যদিও পোড়া খুর হোক না কেন। [১] (সহীহ, নাসাঈ ২৫৬৩, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন [সহীহ আল জামে] ৩৫০২)
কাফিরের অন্ত্র প্রসঙ্গ
আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলমান এক অন্ত্রে খায় এবং কাফির সাত অন্ত্রে খায়। [১] (বুখারী ৫৩৯৬, মুসলিম ২০৬২) আবূ হুরায়রা (রা) জনৈক কাফির (জাহজা ইব্নু সা‘ঈদ গেফারী) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমান হল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছাগলের দুধ দোহন করতে নির্দেশ দান করলেন। (কাফির) মেহমান সমস্ত দুধ পান করল। আবার দ্বিতীয় ছাগলের দুধ দোহন করা হলে পর লোকটি উহাও সব পান করল। অতঃপর তৃতীয় ছাগলের দুধও সব পান করল। এইভাবে একে একে সাতটি ছাগলের দুধ সে (একাই) পান করল। পরদিন সকালে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একটি ছাগলের দুধ পান করতে দিলেন। তিনি তা পান করলেন, পরে আরো একটি ছাগলের দুধপান করতে দিলেন। কিন্তু তিনি তা পান করতে সক্ষম হলেন না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন, মুসলমান এক পেটে পান করে, কিন্তু কাফির সাত পেটে পান করে। (বুখারী ৫৩৯৬, মুসলিম ২০৬৩)
রৌপ্য পাত্রে পান করা এবং পানীয় বস্তুতে নিঃশ্বাস ফেলা নিষেধ
উম্মে সালমা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রৌপ্যের (অথবা স্বর্ণের) পাত্রে করে পানাহার করে, সে স্বীয় পেটে ঘটাঘট জাহান্নামের আগুন ভরে নেয়। (বুখারী ৫৬৩৪, মুসলিম ২০৬৫) আবূ মুসান্না জুহনী (র) আমি মারওয়ান ইব্নু হাকাম (রা)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় তার নিকট আবূ সাঈদ খুদরী (রা) আগমন করলেন, তখন মারওয়ান তাঁকে বললেন, আপনি কি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছেন যে, তিনি পানিতে (কিংবা পানীয় বস্তুতে) শ্বাস ফেলতে (ফুঁ দিতে) নিষেধ করেছেন? আবূ সাঈদ (রা) উত্তর দিলেন, জি হ্যাঁ। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি এক নিশ্বাসে (পানি পান করে) তৃপ্ত হই না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাত্রটিকে মুখ হতে পৃথক করে নিশ্বাস গ্রহণ কর। সেই ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, পানিতে কোন ময়লা (জাতীয় কিছু ভাসতে) দেখলে তখন কি করব? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (কিছু পানিসহ) সেটা বাহিরে ফেলে দাও। [১] (হাসান, তিরমিযী ১৮৮৭, আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন, [আস সিলসিলাহ আস সহীহাহ ৩৮৫])
দাঁড়িয়ে পান করা প্রসঙ্গ
মালিক (র) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা), আলী ইব্নু আবী তালিব (রা) ও উসমান ইব্নু আফফান (রা) দাঁড়িয়ে পানি পান করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইব্নু শিহাব (র)- উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা) ও সা‘দ ইব্নু আবী ওয়াক্কাস (রা) দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে খারাপ মনে করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ জাফর কারী (র) তিনি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা)-কে দাঁড়িয়ে পানি পান করতে দেখেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আমির ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবাইর (রা) তাঁর পিতা দাঁড়িয়ে পানি পান করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
পানীয় বস্তু ডান দিক হতে বিতরণ আরম্ভ করা সুন্নত
আনাস ইব্নু মালিক (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে দুগ্ধ আনা হল। তাতে কুয়ার পানি মিশ্রিত ছিল। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ডান দিকে বসা ছিলেন জনৈক মরুবাসী এবং বাম দিকে ছিলেন আবূ বাকর সিদ্দীক (রা)। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুগ্ধ পান করলেন এবং সেই মরুবাসী লোকটিকে পান করতে দিলেন আর বললেন, ডান দিক হতে পরিবেশন কর। [১] (বুখারী ৫৬১৯, মুসলিম ২০২৯) সাহল ইব্নু সা‘দ আনসারী (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দুধ আনা হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। তখন তাঁর ডান দিকে একটি বালক এবং বাম দিকে কয়েকজন বৃদ্ধ লোক ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালকটিকে বললেন, তুমি অনুমতি দিলে আমি আগে এই (বাম দিকের) বৃদ্ধ লোকদেরকে দেই ? বালকটি বলল, না, আল্লাহর কসম! ইয়া রসূলাল্লাহ্, আপনার উচ্ছিষ্ট হতে আমার অংশ আমি কাউকে দিতে চাই না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে তাকেই দিলেন। (বুখারী ৫৬২০, মুসলিম ২০৩০)
পানাহার সম্বন্ধীয় বিবিধ বর্ণনা
আনাস ইব্নু মালিক (রা) আবূ তালহা (আনাস ইব্নু মালিকের মাতা-উম্মে সুলাইম-এর দ্বিতীয় স্বামী) উম্মে সুলাইমকে বললেন যে, আমি দেখলাম, ক্ষুধার কারণে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আওয়ায বের হচ্ছে না। তোমার কাছে কিছু খাবার আছে কি ? (এটা শুনে) উম্মে সুলাইম বলল, হ্যাঁ আছে। অতঃপর যবের তৈরি কিছু রুটি সে বের করল এবং একখানা কাপড়ের এক অংশ দিয়ে তা আবৃত করে আমার (আনাসের) হাতে দিয়ে দিল। কাপড়ের অন্য অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে পাঠিয়ে দিল। আমি উহা নিয়ে যখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাযির হলাম, তখন তিনি মসজিদে বসা ছিলেন। অনেক লোক তাঁর কাছে বসা ছিল। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে আবূ তালহা পাঠিয়েছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি (আবার) জিজ্ঞেস করলেন, খাবারের জন্য পাঠিয়েছে ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত) সকলকে বললেন, তোমরা সকলেই উঠ। অতএব সকলেই উঠল। আমি আগে আগে ছিলাম (আর তারা আমার পেছনে পেছনে আসছিলেন)। আমি (আনাস) আবূ তালহাকে গিয়ে খবর দিলাম। আবূ তালহা উম্মে সুলাইমকে বললেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষজন সঙ্গে নিয়ে আসতেছেন। অথচ আমাদের কাছে এই পরিমাণ খাবার নাই যে, তাঁদের সকলকে খাওয়াতে পারি! উম্মে সুলাইম বললেন, আল্লাহ্ ও আল্লাহর রসূল খুব ভাল অবগত আছেন। আবূ তালহা বের হয়ে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ তালহার সাথে অগ্রসর হলেন এবং তাঁরা উভয়ে গৃহে প্রবেশ করলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উম্মে সুলাইম! তোমার কাছে যা কিছু আছে আমার কাছে নিয়ে আস। উম্মে সুলাইম সেই রুটি নিয়ে এলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহাকে টুকরা টুকরা (খণ্ড খণ্ড) করার নির্দেশ দিলেন। উম্মে সুলাইম রুটির সেই খণ্ডগুলোতে এক কৌটা ঘী ছিটিয়ে দিলেন তখন উহা মলীদা হয়ে গেল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আল্লাহ্ যা চাহেন তা’ বললেন, (পড়লেন)। তৎপর ইরশাদ করলেন, দশজনকে ডাক। অতএব দশজনকে ডাকা হল। তাঁরা সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর দশজনকে ডাকতে বললেন। সেই দশজন এসে তৃপ্ত হয়ে খেলেন এবং চলে গেলেন। এইভাবে আরও দশজনকে ডাকতে বললেন। তাঁরাও তৃপ্ত হয়ে খেলেন এবং চলে গেলেন। এমন কি যতজন মানুষ সঙ্গে এসেছিলেন সত্তর কিংবা আশিজন সকলেই তৃপ্ত হয়ে খেলেন। (বুখারী ৩৫৭৮, মুসলিম ২০৪০) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুইজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বুখারী ৫৩৯২, মুসলিম ২০৫৮) জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, (ঘরের) দরজা বন্ধ কর, মশকের মুখ বন্ধ কর, পাত্র ঢেকে রাখ এবং বাতি নিভিয়ে দাও। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খোলে না, (মশকের মুখে দেয়া) ছিপি খোলে না, ঢাকা পাত্র খুলে না। আর ইঁদুর লোকদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। [১] (বুখারী ৩২৮০, মুসলিম ২০১২) আবূ শুরাইহ আল কা‘বী (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও কিয়ামতের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা নীরব থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান এনেছে, সে যেন তার মেহমানের সম্মান করে। একদিন এক রাত ভাল মতো মেহমানদারী করবে এবং তিন দিন পর্যন্ত যা আছে, তা দিয়েই মেহমানদারী করবে। এর পরও মেহমানদারী করতে পারলে সাদাকা করার সাওয়াব পাবে। আর মেহমানের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে, মেযবানকে (যার কাছে মেহমান হয়েছে তাকে) কষ্ট দিয়ে বেশি দিন তার কাছে অবস্থান করবে। [১] (বুখারী ৬০১৯, মুসলিম ৪৮) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক ব্যক্তি পথ চলতেছিল। সে খুব বেশি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। একটি কূপ দেখে উহাতে নেমে পানি পান করল। এরপর কূপ হতে বেরিয়ে এসে দেখল যে, একটি কুকুর পিপাসায় কাতর হয়ে হাঁপাচ্ছে এবং কাদা লেহন করতেছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, আমার মতো এই কুকুরটিও পিপাসায় কাতর হয়েছে। অতঃপর লোকটি (পুনরায়) কূপে নেমে তার মোজায় পানি ভর্তি করে মুখ দিয়ে ধরে নিয়ে বের হয়ে এল। [১] অতঃপর লোকটি কুকুরটিকে পানি পান করাল। (তার এই কাজে) আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে মাফ করে দিলেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! জানোয়ারকে (জীবজন্তুকে) পানি খাওয়ালে আমাদের সওয়াব হবে কি ? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই! প্রাণী মাত্রকেই পানি পান করানোর মধ্যে সওয়াব আছে। [২] (বুখারী ২৩৬৩, মুসলিম ২২৪৪) জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাবাহিনী সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় প্রেরণ করলেন। আবূ উবায়দা ইব্নুল জাররাহ (রা)-কে সে বাহিনীর নেতা বানালেন। সে বাহিনীতে তিন শত সৈনিক ছিল। আমিও (অর্থাৎ জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ) সে দলে শামিল ছিলাম। পথিমধ্যে (আমাদের) আহার্য ফুরিয়ে গেল। আবূ উবায়দা (রা) যে পরিমাণ খাদ্য অবশিষ্ট আছে, উহা একত্র করার আদেশ দিলেন। অতএব তা একত্র করা হলে পর দেখা গেল যে, দুই বস্তা খেজুর মাত্র আছে। আবূ উবায়দা (রা) আমাদেরকে প্রতিদিন অল্প অল্প দিতেন। শেষ পর্যন্ত জনপ্রতি (মাত্র) একটি করে খেজুর পাওয়া যেতে লাগল। অতঃপর তাও নিঃশেষ হয়ে গেল। ওয়াহাব ইব্নু কায়সান (রা) বলেন, আমি জাবির (রা)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, একটি করে খেজুরে কি হত ? (কিছুই তো হয় না)। তিনি বলেন, তাও যখন শেষ হয়ে গেল, তখন সেইটার কদর বুঝতে পারলাম। অতঃপর আমরা যখন সমুদ্র তীরে পৌঁছালাম, তখন সেখানে পাহাড়সম এক বিরাট মাছ পাওয়া গেল। গোটা বাহিনী আঠার দিন পর্যন্ত সেই মাছ খেল। অতঃপর আবূ উবায়দা সেই মাছের হাড় (কাঁটা) দাঁড় করাবার নির্দেশ দিলেন। পাঁজরের দুইটি হাড় মুখোমুখি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হল। উহার নিচে দিয়ে উষ্ট্র চলে গেল, উষ্ট্রের গায়ে হাড় লাগল না। [১] (বুখারী ২৪৮৩, মুসলিম ১৯৩৫) ইমাম মালিক (র) বলেন, الظَّرِبُ অর্থ পাহাড়। সা‘দ ইব্নু মু‘আযের দাদী রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! তোমাদের কেউই যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে তুচ্ছ মনে না করে, যদিও সে ছাগলের পোড়া খুর পাঠায় না কেন। [১] (বুখারী ৬০১৭, মুসলিম ১০২৯, আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেন) আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবী বাকর (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ইহুদীগণকে আল্লাহ্ ধ্বংস করুন, তাদের উপর চর্বি খাওয়া হারাম করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা উহা বিক্রয় করে মূল্য খেয়েছে। [১] (বুখারী ২২২৪, মুসলিম ১৫৮৩, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মালিক (র) তার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, ঈসা ইব্নু মরিয়ম (আ.) বলতেন, হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্বচ্ছ পানি, শাকপাতা ও যবের রুটি খাও; গমের রুটি খেও না। কেননা তোমরা উহার শোকরিয়া আদায় করতে পারবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি আবূ বাকর সিদ্দীক এবং উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে উপস্থিত পেলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে মসজিদে আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা বললেন, ক্ষুধার তাড়না আমাদেরকে বের করে এনেছে। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকেও ক্ষুধায় এখানে নিয়ে এসেছে। অতঃপর তাঁরা [রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর ও উমার (রা)] আবুল হাইসাম ইবনু তাইহান আনসারী (রা)-এর নিকট গেলেন। তিনি যবের রুটি তৈরি করার আদেশ দিলেন এবং নিজে একটি ছাগল জবাই করার জন্য উদ্যত হলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুধের ছাগল জবাই করো না। অতঃপর তিনি (আবুল হাইসাম) আর একটি ছাগল জবাই করলেন এবং মশকে মিষ্ট পানি ভরে (ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য) একটি খেজুর গাছে ঝুলায়ে রাখলেন। অতঃপর খাবার পরিবেশিত হলে সকলে খেলেন এবং সেই পানি পান করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা সেই নিয়ামত রোজ কিয়ামতে যার সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। [১] (সহীহ, ইমাম মুসলিম মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন ২০৩৮, ইমাম মালিক এর নিকট হাদীসটি পৌঁছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) একদা রুটিতে ঘী মেখে খাচ্ছিলেন। এমন সময় জনৈক গ্রাম্য লোক এল। তিনি তাকেও ডাকলেন। গ্রাম্য লোকটিও রুটি খেতে লাগল এবং রুটির সাথে সেই ময়লাও খেতে লাগল, যা ঘী-এর পাত্রে লেগেছিল। উমার (রা) তাকে বললেন, তুমি কোনদিন কিছু খাওনি মনে হচেছ! লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আমি অনেক দিন ধরে ঘী খাইনি এবং ঘী লেগে আছে এমন রুটি মুখে দেইনি। অতঃপর উমার (রা) বললেন, যতদিন পর্যন্ত জনসাধারণের আর্থিক অবস্থা পূর্বে যেমন ছিল তেমন না হয়, ততদিন পর্যন্ত আমিও ঘৃত খাব না। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আনাস ইব্নু মালিক (রা) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) যখন আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন, তখন তাঁর সম্মুখে এক সা’ খেজুর রাখা হত; আর তিনি উহা খেতেন। এমন কি খারাপ ও শুকনা খেজুরও খেতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রা) বলেন, উমার ইব্নু খাত্তাব (রা)-কে যখন ফড়িং সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হল (ইহা কি হালাল, না হারাম) তিনি বললেন, আমি পছন্দ করি যে, যদি আমার কাছে এক থলি ফড়িং হত, তবে আমি উহা খেতাম (অর্থাৎ ফড়িং খাওয়া হালাল এবং উহা বেশ ভাল খাদ্য)। (ইহা পঙ্গপাল, এক বিশেষ ধরনের ফড়িং।) (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) হুমাইদ ইব্নু মালিক (রা) আমি আবূ হুরায়রা (রা)-এর নিকট তাঁর আকীকস্থ (জায়গার নাম) যমীনের খামারে বসেছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট কিছু সংখ্যক মদীনাবাসী সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে এসে তার নিকট নামল। হুমাইদ বলেন, আবূ হুরায়রা (রা) আমাকে বললেন, আমার আম্মার নিকট গিয়ে আমার সালাম বল এবং আমাদের কিছু খাওয়াইতে বল। হুমাইদ বলেন, (আমি তাঁর আম্মার কাছে গিয়ে উক্ত সংবাদ জানালাম)। তিনি তিনটি রুটি, কিছু যাইতুনের তেল এবং সামান্য লবণ পাত্রে রেখে উহা আমার মাথার উপর রাখলেন। উহা নিয়ে আমি তাঁদের (আবূ হুরায়রা প্রমুখের) কাছে পৌঁছালাম এবং তাঁদের সম্মুখে উহা রাখলাম। আবূ হুরায়রা (রা) উহা দেখে ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন এবং বললেন, আল্লাহর শোকর, যিনি পেট ভরে রুটি খাইয়েছেন। ইতোপূর্বে আমাদের অবস্থা এই ছিল যে, খেজুর ও পানি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। উক্ত খাবার আগন্তুকদের জন্য যথেষ্ট হয়নি। অতঃপর তারা চলে গেল, আবূ হুরায়রা (রা) আমাকে বললেন, ভাতিজা! ছাগলগুলোকে ভালমতে যত্ন করো, উহাদের নাক মুছে দিও, উহাদের থাকার স্থানটা পরিষ্কার রেখো এবং সেখানেই এক কোণে নামায পড়িও। কেননা উহা বেহেশতী জীব। সেই জাতের কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে জনসাধারণের উপর এমনই এক সময় আসবে, যখন মারওয়ানের (আড়ম্বরপূর্ণ) ঘরের চেয়ে ছাগলের ছোট একটি পাল অধিক প্রিয় হবে। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ নাঈম ওয়াহব ইব্নু কাইসান (রা) জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট খাবার নিয়ে আসা হল। তাঁর সাথে তাঁর পালক ছেলে উমার ইব্নু আবী সালমাও ছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, বিসমিল্লাহ্ বলে তোমার সামনের দিক হতে খাও। (সহীহ, ইমাম বুখারী ৫৩৭৮, ওমর বিন আবূ সালামাহ থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন, আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র) আমি কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদকে বলতে শুনেছি যে, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (র)-এর নিকট এসে বলল, আমার নিকট একটি ইয়াতীম বালক আছে। তার উট আছে। আমি উহার দুধ পান করব কি ? ইব্নু আব্বাস (রা) বললেন, যদি তুমি তার হারিয়ে যাওয়া উট তালাশ কর এবং উটের অসুখে-বিসুখে ঔষধ সেবন করাও, উহার (খড়-কুড়া ও পানির) হাউজ লেপন কর এবং পানের সময় পানি দাও তবে তুমি উহার দুধ এইভাবে পান করতে পার যে, উটের বাচ্চার যেন ক্ষতি না হয় কিংবা উটের বংশ বৃদ্ধির জন্য উহা ক্ষতিকর না হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী উরওয়া ইব্নু যুবাইর (রা)-এর কাছে যখন কোন খাবার কিংবা পানীয় বস্তু আসত, এমন কি ঔষধও আসত, তবে তিনি উহা খেতেন এবং পান করতেন আর বলতেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং নিয়ামত দান করেছেন। তিনি সর্বাপেক্ষা বড়। হে পরওয়ারদিগার! তোমার নিয়ামত আমরা তখন পেয়েছি, যখন আমরা পাপাচারে লিপ্ত ছিলাম। সেই নিয়ামতেই সকাল-সন্ধ্যা অতিবাহিত করেছি। আমরা তোমার কাছে সেই নিয়ামত আমাদের জন্য পূর্ণ করে দিতে এবং আমাদেরকে শোকর আদায় করার তৌফিক দানের প্রার্থনা করছি। তোমার উত্তম (দানের) চাইতে আর কিছুই উত্তম নাই এবং তুমি ব্যতীত কোনই মাবুদ নেই। হে নেক বান্দাদের এবং সারা জাহানের প্রতিপালক! সমস্ত প্রশংসা (তুমি) আল্লাহর জন্যই, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনই মা’বুদ নেই। আল্লাহ্ যা চান তাই হয়, আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নেই। হে পরওয়ারদিগার! আমাদের রুজি-রোজগারে বরকত দাও এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে রক্ষা কর। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী মালিক (র)-এর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করল, যদি কোন স্ত্রীলোক গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে (অর্থাৎ যার সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া শরীয়তসম্মত, তার সাথে) কিংবা স্বয়ং তার গোলামের সাথে খাবার খায়, তবে কি উহা জায়েয আছে ? অতঃপর তিনি (ইমাম মালিক) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ, যদি প্রচলিত প্রথানুযায়ী হয় এবং সেখানে অপরাপর মানুষও থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই। মহিলা কখনও তারা স্বামীর সাথে খায় এবং সেই সমস্ত লোকের সাথেও খায়, যাদেরকে তার স্বামী খাওয়ায়, আবার কখনও স্বীয় ভ্রাতার সাথে খায়। তবে স্ত্রীলোকের জন্য গায়রে মাহরামের সাথে নির্জনে থাকা মকরূহ (তাহরীমা)।
গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে
ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (র) উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) বলেছেন, গোশত খাওয়া হতে বিরত থাক। কেননা শরাবের (মদের) মতো গোশত খাওয়ারও একটা নেশা হয়। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইব্নু সাঈদ (র) বলেন, উমার ইব্নু খাত্তাব (রা) জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ আনসারী (রা)-কে এমন অবস্থায় দেখলেন যে, তখন তার (জাবিরের) সাথে গোশতের একটা পূর্ণ থলি ছিল। উমার (রা) জিজ্ঞেস করলেন, ইহা কি? জাবির (রা) জওয়াব দিলেন, ইয়া আমীরুল মু‘মিনীন! আমার গোশত খাওয়ার ইচ্ছা হল, তাই এক দিরহামের গোশত ক্রয় করলাম। উমার (রা) বললেন, তোমাদের কেউই ইহা চায় না যে, নিজে না খেয়ে প্রতিবেশীকে খাওয়াবে কিংবা তার চাচাত ভাইকে দিবে। তোমাদের নিকট হতে এই আয়াতটি কোথায় গেল (যেখানে বলা হয়েছে যে) أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ তোমরা পার্থিব জীবনে দুনিয়ার স্বাদ উপভোগ করলে এবং বেশ উপকৃত হলে (অতএব আজ উহার পরিণাম ভোগ কর)। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
আংটি পরিধান প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি পরিধান করতেন। একদা তিনি দাঁড়িয়ে উক্ত আংটি ফেলে দিলেন এবং বললেন, আর কখনও ইহা পরিধান করব না। (ইহা দেখে) অন্যান্য সকলেই নিজ নিজ আংটি খুলে ফেললেন। [১] (বুখারী ৫৮৬৯, মুসলিম ২০৭১) সাদাকা ইবনু ইয়াসার (র) আমি সাঈদ ইব্নু মুসায়্যাব (রা)-এর কাছে আংটি পরিধান করার বৈধতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, পরিধান কর এবং লোকজনকে জানিয়ে দাও যে, আমি তোমাকে আংটি পরিধান করার পক্ষে ফাতাওয়া দিয়েছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
জন্তুর গলার হার ও ঘন্টা খুলে ফেলা
আবূ বাসীর আনসারী আব্বাদ ইবনু তামীমকে তিনি (আবূ বাসীর) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনও একা সফরে ছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে কাজে পাঠালেন, আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকর (রা) বলেন, আমার বিশ্বাস যে, তখন সমস্ত লোক ঘুমিয়েছিল। কাজটি ছিল কোন উটের গলায় কোন হার, তাবীয কিংবা ঘন্টা যেন না থাকে। থাকলে কেটে ফেলতে বলেন। [১] (বুখারী ৩০০৫, মুসলিম ২১১৫) মালিক (র) বলেন, আমার মনে হয় চোখ লাগবে এই ভয়ে তা লটকানো হয়েছিল।