5. জুম’আ
জুম’আ দিবসের গোসল
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম’আর দিন জানাবতের (ফরয) গোসলের মত গোসল করেছে, অতঃপর সূর্য ঢলার পর প্রথম মুহূর্তে (মসজিদের দিকে) চলেছে, সে যেন একটি উট আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে খয়রাত করেছে; আর যে দ্বিতীয় মুহূর্তে একটু পরে চলেছে, সে যেন একটি গাভী খয়রাত করেছে; আর যে তৃতীয় মুহূর্তে আরও পরে চলেছে, সে যেন শিংযুক্ত মেষ খয়রাত করেছে; আর যে চতুর্থ মুহুর্তে অর্থাৎ আরও পরে চলেছে, সে যেন একটি মুরগী খয়রাত করেছে; আর যে পঞ্চম মুহূর্তে চলিয়াছে, সে যেন ডিম খয়রাত করিয়াছে। যখন ইমাম বের হন তখন ফেরেশতাগণ হাজির হন, যিকর (খুতবা) শোনার জন্য। (বুখারী ৮৮১, মুসলিম ৮৫০) মালিক (র) তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলতেন, জুম’আর দিনের গোসল জানাবত (ফরয) গোসলের মত, প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণের একজন (সাহাবী) জুম’আর দিন মসজিদে প্রবেশ করলেন, উমার (রা:) খুতবা প্রদান করছিলেন। তিনি [উমার (রাঃ)] বললেন, এটা কোন সময়? উত্তরে তিনি (প্রবেশকারী সাহাবী) বললেন, হে আমিরুল মু’মিনীন, আমি বাজার হতে ফিরেছি, (ফেরার পূর্বেই) আযান শুনলাম। অতঃপর কেবল ওযূ করেছি। (এটা শুনে) উমার (রাঃ) বললেন, আপনি শুধু ওযূ করেন? অথচ অবগত আছেন যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের হুকুম করতেন! (বুখারী ৮৭৮, মুসলিম ৮৪৫) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুম’আর দিনের গোসল প্রত্যেক সাবালক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। (বুখারী ৮৭৯, মুসলিম ৮৪৬) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ জুম’আর নামাযে আসতে ইচ্ছা করলে সে অবশ্য গোসল করবে। (বুখারী ৮৭৭, মুসলিম ৮৪৪) মালিক (র) বলেছেন, জুম’আর দিন যে ব্যক্তি দিনের প্রারম্ভে গোসল করেছে, সে ঐ গোসলে জুম’আর গোসলের নিয়ত করেছে, তাঁর জন্য সেই গোসল জুম’আর জন্য যথেষ্ট হবে না যদি না সে জুম’আয় যাওয়ার জন্য পুনরায় গোসল করে; কারণ ইবনু উমার (রা)-এর হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ জুম’আয় আসার ইচ্ছা করলে সে অবশ্যই গোসল করবে।
জুম’আ দিবসে ইমামের খুতবা পাঠ করার সময় চুপ থাকার বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জুম’আর দিন ইমাম যখন খুতবা প্রদান করেন, তুমি তোমার সাথীকে (পার্শ্ববর্তী লোক) যদি বল, ‘চুপ থাকুন!’ তবে তুমি অলাভজনক কথা বললে। (বুখারী ৯৩৪, মুসলিম ৮৫১) ইবনু শিহাব (র) তিনি (সা’লাবা) তাঁর নিকট বর্ণনা করেন যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর খিলাফতকালে জুম’আর দিন তাঁরা উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আগমন করা পর্যন্ত নামায আদায় করতেন। উমার (রাঃ) আগমন করতেন এবং মিম্বরে বসতেন এবং মুয়াযযিনগণ আযান দিতেন। সা’লাবা (র) বলেছেন, আমরা তখনও পরস্পর কথাবার্তা বলতাম, মুয়াযযিনগণ যখন আযান শেষ করতেন এবং উমার (রাঃ) খুতবা পাঠ করার জন্য দাঁড়াতেন, তখন আমরা চুপ হয়ে যেতাম। অতঃপর পরে কেউ কোন কথা বলত না। ইবনু শিহাব (র) বলেছেন, (এতে বোঝা গেল) ইমামের আগমন নামাযকে নিষিদ্ধ করে দেয় এবং তাঁর কালাম (খুতবা) কথাবার্তাকে নিষিদ্ধ করে দেয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক ইবনু আবি ‘আমীর (র) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তাঁর খুতবায় বলতেন এবং তিনি যখনই খুতবা দিতেন, তখন প্রায় এটা বলতেন, জুম’আর দিন ইমাম খুতবার উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়ান, তখন তোমরা মনোযোগী হয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে। কেননা খুতবা শুনতে না পেয়েও যিনি নীরব রয়েছেন তাঁর জন্য সওয়াব হবে শুনতে পেয়ে নীরবতা অবলম্বনকারীর সমান।’ অতঃপর যখন নামাযের ইকামত বলা হয়, কাতার বরাবর করে নাও এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। কেননা কাতার বরাবর করা নামাযের পূর্ণতার অংশবিশেষ। তারপর যতক্ষণ কাতার সোজা করার জন্য নিযুক্ত লোকজন এসে ‘সফ’ সোজা হয়েছে বলে সংবাদ না দিতেন, ততক্ষণ তিনি (নামাযের) তাকবীর বলতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) দুই ব্যক্তিকে আলাপরত দেখলেন, তখন জুম’আর দিন এবং ইমাম খুতবা প্রদান করতেছিলেন। এটা দেখে তিনি দু’জনের দিকে কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, এই মর্মে তোমরা চুপ হয়ে যাও। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র)- একবার) জুম’আর দিন এক ব্যক্তি হাঁচি দিয়েছে, তখন ইমাম খুতবা পড়ছিলেন, তাঁর পাশ্ববর্তী এক ব্যক্তি হাঁচির উত্তরে ‘ইয়ারহামুকুল্লাহ’ বলল, তখন সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তাকে নিষেধ করলেন এবং ভবিষ্যতে এইরূপ না করার জন্য বলে দিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (র) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, জুম’আর দিন (তাকবীর বলার পূর্বে) যখন ইমাম মিম্বর হতে অবতরণ করেন, তখন কথা বলা সম্পর্কে তিনি ইবনু শিহাব (র)-কে প্রশ্ন করলেন, (উত্তরে) ইবনু শিহাব (র) বললেন, এতে কোন দোষ নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (র) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
যে ব্যক্তি জুম’আর দিনে এক রাক’আত পায় তার কি করা কর্তব্য
মালিক (র) ইবনু শিহাব (র) বললেন, যে ব্যক্তি জুম’আর নামায এক রাক’আত পেল, সে উক্ত রাক’আতের সাথে আর এক রাক’আত মিলিয়ে নিবে। মালিক (র) বলেন, ইবনু শিহাব (র) বলেছেন, এইরূপ করাই সুন্নত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে ======= অংশ ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন ৫৮০, মুসলিম ৬০৭) ইয়াহইয়া (র) বলেন মালিক (র) বলেছেন আমি আমাদের শহরের (অর্থাৎ মদীনা মুনাওয়ারাহ্) উলামাদের অভিমতও অনুরূপ পেয়েছি; তা এই রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি নামাযের এক রাক‘আত পেয়েছে, সে (পূর্ণ) নামায পেয়েছে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম’আর দিন অত্যাধিক ভিড়ের সম্মুখীন হয় এবং রুকূ করে, অতঃপর ইমাম (সিজদা হতে) দাঁড়ানোর পর অথবা নামায সমাপ্ত করার পর সিজদা করতে সক্ষম হয়, তার হুকুম হল সে যদি সিজদা করতে সক্ষম হয় তবে সিজদা করার পর মুসল্লিগণ দাঁড়িয়ে গেলে তখন সে সিজদা করবে, আর যদি ইমাম কর্তৃক নামায শেষ করার পূর্বে সে সিজদা করতে না পারে, তবে আমার মতে যোহরের চার রাক’আত আরম্ভ করাই তার পক্ষে শ্রেয়।
জুম’আর দিনে যার নকসীর হয় তার সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
ইয়াহইয়া (র) জুম’আর দিন ইমামের খুতবা প্রদানের সময় যার ‘নকসীর’ [১] হয়েছে, তারপর সে (মসজিদ হতে) বের হয়ে গিয়েছে এবং সে ফিরে এসেছে এমন সময় যখন ইমাম নামায সমাপ্ত করেন, তবে সে চার রাক’আত আদায় করবে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম’আর দিন ইমামের সাথে এক রাক’আত আদায় করে, তারপর তার নকসীর হয়, (সে কারণে) সে বের হয়ে যায়, অতঃপর ইমাম কর্তৃক দু’ রাক’আত সমাপ্ত করার পর সে ফিরে আসে তবে সে ব্যক্তি আর এক রাক’আত আদায় করে নেবে, যদি কোন কথা না বলে থাকে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যার নকসীর হয়েছে অথবা মসজিদ হতে বের হওয়ার জন্য কোন কারণ উপস্থিত হয়েছে, তবে তাকে বের হওয়ার জন্য ইমামের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে না।
জুম’আর দিন ‘সা’ঈ’ বা চেষ্টা করা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
মালিক (র) তিনি ইবনু শিহাব (র)-কে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন, يَايَهُّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اِذَا نُو دِىَ لِلصَّلوٰةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ قَاسْعَوْ اِلَى ذِكْرِ الله . ‘হে মু’মিনগণ। জুম’আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও। (৬২/৯) জবাবে ইবনু শিহাব (র) বলেছেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) উক্ত আয়াতকে এইরূপ পড়তেন, إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَامْضُوا إِلَى ذِكْرِ اللهِ. ‘যখন জুম’আর নামাযের আযান দেওয়া হয় তখন খুতবা ও নামাযের জন্য গমন কর।’ (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন তবে সনদে উল্লেখিত রাবী ইবনু শিহাব ইবনু ওমরের সাথে সাক্ষাত হয়নি) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, কিতাবুল্লাহতে উল্লিখিত ‘সা‘ঈ’-এর অর্থ হল আমল ও কাজ (দৃষ্টান্তস্বরূপ তিনি উল্লেখ করেছেন যেমন) আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন [১] , وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ আরও ইরশাদ করা হয়েছে [২] , وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَى وَهُوَ يَخْشَى আরও ইরশাদ করেন, ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَى – [৩] ইরশাদ করা হয়েছে [৪] , إِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা স্বীয় কিতাবে যে ‘সা’ঈ’ -এর কথা উল্লেখ করেন তা দ্বারা পায়ে দৌড়ান, দ্রুত গমন অথবা হাঁটা উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে কাজ ও বাস্তবায়ন।
জুম’আর দিন প্রবাসে ইমাম কোন গ্রামে পদার্পণ করলে
মালিক (র) ইমাম যদি সফরে এমন কোন লোকালয়ে অবতরণ করেন, যে লোকালয়ের নিবাসীদের উপর জুম’আ ওয়াজিব হয়, তারপর তিনি সেখানে খুতবা প্রদান করেন এবং লোকালয়ের লোকজনকে নিয়ে জুম’আ আদায় করেন, তবে সে জনপদের এবং তাদের বাহিরের লোকজন সে ইমামের সাথে ‘জুম’আ’ আদায় করবে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যদি মুসাফির ইমাম এইরূপ জনপদে জুম’আ কায়েম করেন, যে জনপদে জুম’আ ওয়াজিব নয়, তবে সে ইমাম, উক্ত জনপদের বাসিন্দাগণ এবং তাদের বাহিরের লোকজন যাদের সাথে তিনি জুম’আ আদায় করেছেন, করো ‘জুম’আ আদায় হবে না। সে লোকালয়ের লোকজন এবং অন্যান্যের (মুসল্লিদের) মধ্যে যারা মুসাফির নন তাঁরা তাঁদের নামায পুরা আদায় করবেন। ইমাম মালিক (র) বলেছেন, মুসাফিরের উপর জুমু‘আ ওয়াজিব নয়।
জুম’আ দিবসের (দু’আ কবুলিয়াতের) মুহূর্তটির বর্ণনা
আবূ হুরাইরা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম’আ দিবসের উল্লেখ করলেন, (সে প্রসঙ্গে) তিনি বলেছেন, এই দিবসে এমন এক মুহূর্ত রয়েছে কোন মুসলিম বান্দা নামাযে দণ্ডায়মান অবস্থায়, সে মুহূর্তটির সদ্ব্যবহার করলে তখন যদি সে আল্লাহ তা’আলা হতে কোন বস্তুর সওয়াল করে, তবে আল্লাহ তাকে সে বস্তু প্রদান করবেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন সে সময়টির স্বল্পতা বুঝাবার জন্য। (বুখারী ৯৩৫, মুসলিম ৮৫২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি (সিনাই) পর্বতের দিকে গমন করলাম, সেখানে কা’ব আহবার (র)-এর সাথে দেখা করলাম এবং তার সাথে বসলাম। তারপর তিনি ‘তাওরাত’ হতে আমার কাছে বর্ণনা করলেন, আমি তাঁকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বর্ণনা করলাম। আমি তাঁর কাছে যা বর্ণনা করলাম তাতে এটাও ছিল যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দিবসগুলোর (মধ্যে যাতে সূর্যের উদয় হয়) জুম’আর দিনই সর্বোত্তম। সেদিনই আদম (আ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেদিনই তাঁকে (বেহেশত হতে) বের করা হয়েছে, সে দিবসেই তাঁর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে, সে দিবসেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং সে (জুম’আর) দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। এমন কোন প্রাণী নাই, যে প্রাণী জুম’আর দিন ভোরবেলা হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে চিৎকার না করে। সে দিবসে একটি মুহূর্ত রয়েছে কোন মুসলিম বান্দা সে মুহূর্তটিতে নামায পড়া অবস্থায় আল্লাহর নিকট কোন বস্তুর প্রার্থনা করলে অবশ্যই তিনি তাকে উহা প্রদান করবেন। কা’ব (র) বললেন, এটা প্রতি বৎসরে একদিন। তখন আমি বললাম বরং প্রতি জুম’আয়। অতঃপর কা’ব (র) তাওরাত পাঠ করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠিক বলেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি অতঃপর বসরায় ইবনু আবি বাসরা গিফারীর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলেছেন, কোথা হতে আগমন করলে? (উত্তরে) আমি বললাম ‘তূর’ হতে। তারপর তিনি বললেন, সেখানে যাওয়ার পূর্বে যদি আমি তোমাকে পেতাম, তবে তোমার যাওয়াই হত না। আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনটি মসজিদ ব্যতীত (অন্য কোন স্থানের জন্য) সওয়ারীর আয়োজন করা যায় না (১) মসজিদুল হারাম, কাবাগৃহ, (২) আমার এই মসজিদ ও (৩) ‘মসজিদ ইলিয়া’ বা বায়তুল মুকাদ্দাস। বর্ণনাকারী সংশয় প্রকাশ করেন (অর্থাৎ তৃতীয়টি) তিনি ইলিয়ার মসজিদ অথবা বায়তুল মুকাদ্দাস বলেছেন (ইলিয়া শহরেই বায়তুল মুকাদ্দাস অবস্থিত)। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন, অতঃপর আমি আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (র)-এর সাথে মিলিত হলাম এবং কা’ব আহবার (র)-এর সাথে আমার বৈঠকের কথা বর্ণনা করলাম, আর জুম‘আর দিন’ সম্পর্কে যে হাদীস তাঁর কাছে বর্ণনা করেছি তাও বললাম। (কথা প্রসঙ্গে) আমি বললাম, কা’ব (র) বলেছেন, এটা (কবুলিয়াতের মুহূর্ত) বৎসরে একদিন। (এটা শুনে) আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, কা’ব (র) ঠিক বলেন নি। অতঃপর আমি বললাম কা’ব (র) তাওরাত পাঠ করে বললেন, “হ্যাঁ, উহা প্রতি জুম’আর দিন।” আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, কা’ব (এইবার) সত্য বলেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন সে মুহূর্তটি কোন মুহূর্ত তুমি জান কি? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি তাঁকে বললাম আপনি আমাকে সে মুহূর্তটির কথা বলে দিন। এই বিষয়ে আপনি কৃপণতা করবেন না। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, এটা জুম’আর দিনের শেষ সময়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেন, আমি বললাম, উহা জুম’আ দিবসের শেষ মুহূর্তে কিভাবে হতে পারে? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নামাযের হালতে কোন মুসলিম বান্দা উক্ত মুহূর্তের সাক্ষাৎ লাভ করলে...।” অথচ দিবসের শেষ মুহূর্তে নামায পড়া যায় না। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি, যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসে নামাযের অপেক্ষা করবে সে যেমন নামাযেই রয়েছে, যতক্ষণ সে নামায সমাপ্ত না করে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে এটা তাই। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১০৪৬, তিরমিযী ৪৯১, নাসাঈ ১৪৩০, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, মিশকাত ১৩৫৯)
জুম’আর দিনের পোশাক-পরিচ্ছেদঃ, ঘাড়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করা, ইমামের দিকে মুখ করে বসা সম্পর্কীয় আহকাম
মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ তার নিত্যব্যবহার্য কাপড় ব্যতীত জুম’আর জন্য দুটি কাপড় তৈরীর করে রাখলে এতে কোন দোষ নাই। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১০৭৮, ইবনু মাজাহ ১০৯৫, হাদীসটি আল্লামা আল বানী সহীহ বলেছেন, “সহীহ আল জামে” ৫৬৩৫, তার ইমাম মালিক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) নাফি’ (র) হতে বর্ণিত; ইহরাম অবস্থায় না থাকলে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তেল ও খুশবু না লাগিয়ে জুম’আয় যেতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরাইরা (রাঃ) জনৈক রাবী হতে বর্ণনা করেন তিনি (আবূ হুরায়রা) বলতেন, তোমাদের কারো ‘যাহরুল হাররা’ [১] তে নামায আদায় করা এটা হতে ভাল যে, সে বসে থাকবে অর্থাৎ সময় থাকতে নামাযের জন্য মসজিদে যাবে না। অতঃপর ইমাম যখন জুম’আর দিন খুতবা দিতে দাঁড়াবেন তখন (তাড়াহুড়া করে যাওয়ার সময়) সে মানুষের ঘাড়ে পা রেখে যাবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ইমাম যে সময় খুতবা পাঠ করতে ইচ্ছা করেন সে সময় লোকজনের ইমামের দিকে মুখ করে বসাটাই আমাদের নিকট সুন্নত, তাদের মধ্যে যারা কিবলার দিকে মুখ করে আছে অথবা যারা কিবলার দিকে মুখ করে বসেনি, সকলেই ইমামের দিকে মুখ করবে। [২]
জুম’আর নামাযে কিরাআত, হাঁটু উঠিয়ে পাছার উপর বসা এবং কোন প্রকার ওযর ব্যতীত জুম’আ আদায় না করা সম্পকীয় আহকাম
যাহহাক ইবনু কায়স (র) নু’মান ইবনু বশীর (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করেছেন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জুম’আর দিন ‘সূরা জুম’আ’র পর কোন সূরা তিলাওয়াত করতেন? তিনি বললেন, هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ পাঠ করতেন। (সহীহ, মুসলিম ৮৭৭) মালিক (র) সাফওয়ান (র) ইহা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন কিনা তা আমার জানা নাই। সাফওয়ান (র) বলেছেন, কোন প্রকার ওযর অথবা রোগ ছাড়া যে ব্যক্তি তিন দফা জুম’আ আদায় করেনি, আল্লাহ তার হৃদয়ে মোহর ছাপ মেরে দিবেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১০৫২, তিরমিযী ৫০০, নাসাঈ ১৩৬৯, ইবনু মাজাহ ১১২৫, আহমাদ ১৪৫৯৯, আবূ জায়াদ যমরী থেকে আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল জামে ৬১৪৩) জা’ফর ইবনু মুহাম্মদ (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম’আর দিন দুই খুতবা প্রদান করেন এবং দুই খুতবার মাঝখানে বসেছেন। (বুখারী, ৯২০, ৯২৮) ইমাম মুসলিম ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৮৬১, তবে ইমাম মালিক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল)