53. সালাম সম্পর্কিত অধ্যায়
সালাম প্রসঙ্গ
যায়দ ইব্নু আসলাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, সওয়ার ব্যক্তি পথচারীকে সালাম করবে। আর যখন দলের কোন এক ব্যক্তি সালাম করে, উহা সকলের পক্ষ হতে যথেষ্ট হবে। [১] (বুখারী ৬২৩২, মুসলিম ২১৬০, ইমাম মুসলিম অনুরূপ হাদীস আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মুহাম্মাদ ইব্নু আমর ইব্নু আতা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট এসে ছিলাম; এমন সময় ইয়ামানের অধিবাসী এক ব্যক্তি এসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” আরও কয়েকটি শব্দ এর সাথে সংযোজন করল। তখন ইব্নু আব্বাসের দৃষ্টিশক্তি ছিল না। তাই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? উপস্থিত সকলে বলল, ইনি সেই ইয়ামানী লোক, যে আপনার কাছে (সর্বদা) আসা-যাওয়া করে। এই বলে তারা লোকটির পরিচয় করিয়ে দিল। তখন ইব্নু আব্বাস (রাঃ) লোকটিকে চিনতে পারলেন। অতঃপর ইব্নু আব্বাস লোকটিকে বললেন, “বরকত” পর্যন্ত সালাম শেষ হয়।” [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন, মালিক (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হল যে, পুরুষ স্ত্রীলোককে (কিংবা স্ত্রীলোক পুরুষকে) সালাম করবে কি? তিনি উত্তর দিলেন যে, বৃদ্ধের জন্য তো ইহা খারাপ নয়, তবে যুবক (যুবতী)-এর জন্য ভাল নয়। [২]
ইহুদী ও খৃস্টানকে সালাম দেয়া প্রসঙ্গ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইহুদীদের কেউ তোমাদেরকে সালাম দিলে তারা বলে “আসসাম আলাইকুম” (অর্থাৎ তোমার মৃত্যু হোক)। এতদুত্তরে তোমার কেবল “ওয়ালাইকুম” বলবে (অর্থাৎ মৃত্যু তোমাদের হোক)। (বুখারী ৬২৫৭, মুসলিম ২১৬৪) ইয়াহইয়া বলেন, মালিক (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, কেউ যদি ইয়াহুদী অথবা খ্রীষ্টানকে সালাম দেয় তা হলে সেও কি ঐরূপ বলবে? মালিক (রহঃ) বললেন, না (ঐরূপ বলবে না)।
সালাম সম্বন্ধীয় বিভিন্ন হাদীস
আবূ ওয়াকিদ লাইসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে বসে ছিলেন, আরও বহু লোক তাঁর সাথে ছিলেন। ইত্যবসরে তিন ব্যক্তিবিশিষ্ট একটি দল সেখানে আগমন করল। এদের মধ্যে দুইজন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে অগ্রসর হল এবং একজন চলে গেল (প্রত্যাবর্তন করল)। অতঃপর ঐ দুইজন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে সালাম করল। তাদের একজন (সাহাবীগণের) হালকায় ফাঁকা স্থান পেয়ে সেখানে বসল এবং অপরজন তাঁদের পেছনে বসল। তৃতীয়জন তো আগেই চলে গিয়েছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা‘লীম হতে ফারিগ হলেন এবং বললেন আমি তোমাদেরকে এই (আগন্তুক) তিনজনের অবস্থা বলব কি? (অর্থাৎ নিশ্চয়ই বলব)। উহাদের একজন আল্লাহ্র কাছে আগমন করেছে। আল্লাহও তাকে স্থান দান করেছেন আর একজন লজ্জা করেছে (এবং মানুষকে কষ্ট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেনি, বরং পিছনে রয়েছে) আল্লাহ্ তা‘আলাও লজ্জা করেছেন (এবং তার প্রতি রহম নাযিল করেছেন)। আর একজন ফিরে গিয়েছে অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলাও তার দিক হতে ফিরে গিয়েছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) উমার (রাঃ) হতে শুনেছেন যে, এক ব্যক্তি তাঁকে (উমারকে) সালাম করলে পর তিনি সালামের জাওয়াব দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেমন আছ? লোকটি বলল, আল্লাহ্র শোকর (ভাল আছি)। উমার (রাঃ) বললেন, আমি তোমার কাছে ইহাই কামনা করেছিলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইসহাক ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ তালহা (রহঃ) তুফাইল ইব্নু উবাই ইব্নু কা‘ব (রহঃ) সকালে সকালে আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করতেন। তুফাইল (রাঃ) বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছালে ইব্নু উমার (রাঃ) যে কোন মামুলী জিনিস বিক্রেতাকে যেকোন দোকানদারকে, যেকোন মিসকীনকে, এমন কি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে যেয়ে কি করবেন? বেচাকেনার নিকটে আপনি যান না, কোন বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোন জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না কিংবা বাজারের কোন মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) বললেন হে ভুঁড়িওয়ালা! (তুফাইলের পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বললেন) আমি সালাম করবার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমারকে এই বলে সালাম করল, “আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ওয়াল গাদিয়াতু ওয়ার রায়িহাতু।” (অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি হোক, আল্লাহ্র রহমত এবং বরকতসমূহ ও সকালে-বিকালে আগত ও বিগত নিয়ামতরাশি)। এতদুত্তরে আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) বললেন, “ওয়া আলাইকা আলফান” (অর্থাৎ তোমার উপর ইহার এক হাজার গুণ)। তিনি উহাকে (অর্থাৎ সেই ব্যক্তির দেয়া সালামকে) খারাপ মনে করেছিলেন। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) বর্ণণাকারী মালিক (রহঃ)-এর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছিয়াছে যে, যদি কেহ কোন খালি ঘরে যায়, তবে “আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহি সালিহীন” বলবে অর্থাৎ আমাদের উপর এবং আল্লাহ্র নেক বান্দাদের উপর সালাম। [১]