56. কথাবার্তা সম্পর্কিত অধ্যায়
অপছন্দনীয় কথাবার্তা প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি কেউ নিজের কোন ভাইকে কাফের বলে, তবে এতদুভয়ের মধ্যে একজন (নিশ্চয়ই) কাফের হল। [১] (বুখারী ৬১০৪, মুসলিম ৬০) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তুমি কাউকেও এই কথা বলতে শুনতে পাও যে, মানুষ ধ্বংস হয়েছে, তা হলে সে সবচাইতে অধিক ধ্বংস হয়েছে। [১] (সহীহ, মুসলিম ২৬২৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন দাহরকে (যুগ বা জমানাকে) মন্দ না বলে। কেননা আল্লাহই দাহর (যুগ)। [১] (বুখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আ)-এর সম্মুখে পথে একটি শূকর এল। তিনি তখন বললেন, নিরাপদে তুমি চলে যাও। লোকেরা তাঁকে বলল, আপনি শূকরকে এ কথা বলছেন ? (অথচ এটা সর্বনিকৃষ্ট অশুচি জীব। এটাকে তো মেরে এবং গালমন্দ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া দরকার!) অতঃপর তিনি বললেন, এতে আমার মুখ খারাপ কথায় অভ্যস্ত হবে বলে আমি ভয় করছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
বুঝেশুনে কথা বলা প্রসঙ্গে
বিলাল ইবনু হারিস মুযানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (অনেক সময়) মানুষ কথা বলে, কিন্তু সেই কথা কোথায় তাকে পৌঁছাবে, সে তা জানে না। অথচ সেই কথার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য স্বীয় সন্তুষ্টি কিয়ামত পর্যন্ত লিখে দেন। আবার কোন সময় আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক এমন কথা কেউ বলে, সেই কথা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে সে তা জানে না, অথচ সেই কথার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত স্বীয় অসন্তুষ্টি লিখে দেন। [১] (বুখারী ৬৪৭৭, মুসলিম ২৯৮৮, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন) আবূ সালেহ সাম্মান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, (অনেক সময়) মানুষ চিন্তা না করে কথা বলে, পরিণামে সে জাহান্নামে পতিত হয়; আবার চিন্তা না করে (এমন) কথা কেউ বলে, যার ফলে সে বেহেশতে গমন করে। (সহীহ মারফু, ইমাম বুখারী ৬৪৭৮, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন)
অনর্থক কথা বলার দোষ প্রসঙ্গ
যায়দ ইব্নু আসলাম আবদুল্লাহ ইব্নু উমার (রাঃ) পূর্বদিক হতে দুইজন লোক আগমন করল। তারা বক্তৃতা দান করল এবং তাদের বক্তৃতায় জনসাধারণ আশ্চর্যান্বিত হল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিঃসন্দেহে কোন কোন বক্তৃতা যাদুর মতো ক্রিয়া করে। (সহীহ, বুখারী ৫৭৬৭) মালিক (রহঃ) ঈসা ইব্নু মরিয়ম (আ) বলতেন, আল্লাহ্র যিকির ব্যতীত অনর্থক বেশি কথা বলিও না। এতে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে যাবে। আর কঠিন হৃদয়ের ব্যক্তি আল্লাহ্ হতে দূরে থাকে, অথচ তোমরা তা জান না। আর তোমরা অপরের গুনাহের দিকে (এইভাবে) তাকাইও না যেন তোমরা তাদের প্রভু! তোমরা নিজেদের গুনাহের দিকে (এইভাবে) তাকাও, যেন তোমরা গোলাম। কেননা মানুষ অনেক রকমের হয়। কেউ রোগী আর কেউ সুস্থ। অতএব, রোগীদের প্রতি সদয় হও এবং নিজের সুস্থতার জন্য আল্লাহ্র শোকর আদায় কর। [১] (বাইহাকী [শা’ব ] [শুয়াইবুন গ্রন্থে ৭/৭২] আলবানী হাদীসটি যয়ীফ বলেছেন [সিলসিলা যয়ীফা ৯০৮]) বর্ণণাকারী নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) ইশার নামাযের পর আপনজনদের কাছে বলে পাঠাতেন যে, লেখক ফেরেশতাদেরকে এখনও আরাম (অবসর) দিবে না ? [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
গীবত প্রসঙ্গে
মুত্তালিব ইব্নু আবদুল্লাহ্ মাখযুমী (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ গীবত কি (বা গীবত কাকে বলে)? এতদুত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কারো অবর্তমানে তার এমন কথা প্রকাশ করা যা সে শুনলে অসন্তুষ্ট হবে। অতঃপর লোকটি (আবার) বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কথা যদি সত্য হয় (অর্থাৎ যা বলা হচ্ছে তা যদি মিথ্যা না হয়, বরং সত্য হয় তা হলেও কি উহা গীবত হবে)? তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি মিথ্যা হয়, (তবে উহাকে গীবত বলা হয় না; বরং) উহা বুহতান (অপবাদ)। [১] (সহীহ, ইমাম মুসলিম আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন ২৫৮৯)
জিহ্বার গুনাহ প্রসঙ্গে
আ‘তা ইব্নু ইয়াসার (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে দুইটি জিনিসের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন সে বেহেশতে যাবে। (ইহা শুনে) এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সে দুটি জিনিস কি আপনি আমাদেরকে বলবেন না? অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব হয়ে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই প্রথম কথা পুনরাবৃত্তি করলেন। লোকটি আবার বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদেরকে উহা বলবেন না ? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব হয়ে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় সেই কথা বললেন। লোকটি আবার বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদেরকে বলবেন না? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার সেই কথা বললেন। লোকটিও আবারও একই কথা বলতে চাইলে লোকটির পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তি তাকে চুপ করাল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই বললেন, “আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে দুটি জিনিসের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন সে বেহেশতে যাবে। একটি হল দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহ্বা) অপরটি হল দুই রানের মধ্যবর্তী বস্তু” (লজ্জাস্থান)। এই কথাটি তিনবার বললেন। [১] (সহীহ, বুখারী ৬৪৭৪, সাহল বিন সাদ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন- তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) যাইদ ইব্নু আসলাম (রাঃ) তাঁর পিতা উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে দেখলেন যে, আবূ বাক্র (রাঃ) স্বীয় জিহ্বা ধরে টানছেন। উমার (রাঃ) বললেন, রাখুন (অর্থাৎ এই রকম করবেন না), আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, এই জিহ্বাই তো আমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
একজনকে বাদ দিয়ে দুইজন পরস্পরে কানে কানে কথা বলা প্রসঙ্গে
আবদুল্লাহ্ ইব্নু দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) খালিদ ইব্নু উকবা (রাঃ)-এর সেই ঘরের নিকটে ছিলাম যা বাজারে অবস্থিত ছিল। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে কানে কানে কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করল। আবদুল্লাহ্ (ইব্নু উমার)-এর সঙ্গে আমি ও সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে তার সাথে কানে কানে কথা বলতে চেয়েছিল, আর কেউ ছিল না। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) অপর এক ব্যক্তিকে ডেকে নিলেন। এখন আমরা চারজন হলাম এবং তিনি আমাকে ও সেই ব্যক্তিকে একটু সরে যেতে বললেন, যাকে ডেকে নিয়েছিলেন এবং বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন, দুইজন একজনকে একা ছেড়ে কানে কানে কথা বলবে না। (এতে তৃতীয় ব্যক্তি দুঃখিত হয়।) আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তিনজন এক সঙ্গে হয়, তবে একজনকে ছেড়ে অবশিষ্ট দুইজন কানে কানে কথা বলবে না। (বুখারী ৬২৮৮, মুসলিম ২১৮৩)
সত্য ও মিথ্যা কথা বলা প্রসঙ্গে
সাফওয়ান ইব্নু সুলাইম (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে মিথ্যা বলতে পারব কি? এতদুত্তরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মিথ্যা কথায় কোন উপকার নেই। লোকটি আবার বলল, আমি তার সাথে ওয়াদা তো করতে পারব যে, আমি তোমাকে এই জিনিস দিব। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এতে কোন দোষ নেই। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ (রাঃ) বলতেন, তোমরা সত্য বলা নিজের উপর ওয়াজিব (অনিবার্য) করে নাও। কেননা সত্য কথা নেকীর দিকে ধাবিত করে এবং নেকী বেহেশতের পথ সুগম করে। আর তোমরা মিথ্যা বলা হতে সংযত হও। কেননা মিথ্যা কথা গুনাহর দিকে পথ প্রদর্শন করে এবং গুনাহ দোযখের পথ সুগম করে। তুমি কি শোননি, ইহা বলা হয় যে, সত্য বলে নেকী করল এবং মিথ্যা বলে গুনাহ করল? (বুখারী ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৭, আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি ইমাম মালিক-এর নিকট ইবনু মাসঊদ থেকে পৌঁছেছে মর্মে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) লুকমান (আ)-এর নিকট কেউ জিজ্ঞেস করল, কিসের কারণে আপনি এই এত বুযুর্গী পেলেন? লুকমান (আ) বললেন, সত্য কথা বলা, আমানতদারী এবং অনর্থক কাজ পরিহার করার কারণে। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (রহঃ) আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ (রাঃ) বলতেন, মানুষ মিথ্যা কথা বলে। তার অন্তরে একটা কাল দাগ পড়ে শেষ পর্যন্ত তার গোটা অন্তরই কাল হয়ে যায়। অবশেষে আল্লাহ্র নিকট তার নাম মিথ্যাবাদীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) সাফওয়ান ইব্নু সুলাইম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করল, মু‘মিন সাহসহীন বা ভীরু হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, মু‘মিন কৃপণ (বখিল) হতে পারে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, মু‘মিন মিথ্যাবাদী হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
অপব্যয় ও দোমুখো মানুষ প্রসঙ্গে
আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যেসব কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন সেগুলো হলঃ (১) তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে আর কাউকেও শরীক করবে না। (২) আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ কুরআন) মজবুত করে ধরবে। (৩) আল্লাহ্ যাকে শাসনের ভার দিয়েছেন তাকে নসীহত করবে। যেসব কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন, সেগুলো হলঃ (১) কথা অধিক বলা, (২) অপব্যয় করা, (৩) অধিক যাচনা করা (ভিক্ষা করা)। (সহীহ, মুসলিম ১৭১৫) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দোমুখো মানুষই নিকৃষ্টতম মানুষ অর্থাৎ যে এক দলের সঙ্গে এক রকম কথা বলে এবং অপর দলের সঙ্গে আরেক রকম কথা বলে। (সহীহ, মুসলিম ২৫২৬, এই হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে অন্য সনদে আবূ হুরায়রা থেকে)
কয়েকজনের গুনাহের কারণে সকলের ভোগান্তি
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী উম্মে সালমা (রাঃ) ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদের মধ্যে সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাব কি? অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ গুনাহ যখন অধিক হয়, তখন (উহার শাস্তি সকলকেই ভোগ করতে হয়)। (বুখারী ৩৩৪৬, মুসলিম ২৮৮০, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) উমার ইব্নু আবদুল আযীয (রহঃ) বিশেষ লোকের গুনাহের কারণে আল্লাহ্ তা‘আলা জনসাধারণকে আযাব দেন না। তবে পাপাচার যদি প্রকাশ্যে হতে থাকে, তখন সকলেই আযাবের যোগ্য হয়। [১] (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
তাকওয়াত প্রসঙ্গ
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) আমি উমারের সঙ্গে ছিলাম। তিনি একটি বাগানে গেলেন। আমি ও তাঁর মধ্যে বাগানের একটি দেয়াল ছিল। আমি শ্রবণ করছিলাম, তিনি নিজেকেই সম্বোধন করে বলছিলেন, হে উমার! আমীরুল মু‘মিনীন! বাহ্বা! হে খাত্তাবের পুত্র, হয় তুমি আল্লাহ্কে ভয় কর, না হয় তিনি তোমাকে আযাব দিবেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন) কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদ (রাঃ) আমি দেখলাম যে, মানুষ কথায় মোহিত হয় না। মালিক (রহঃ) বলেন, এর অর্থ এই যে, তাঁরা কাজের (আমলের) দিকে তাকাতেন, কথার দিকে তাঁদের তেমন দৃষ্টি ছিল না। (হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করেছেন)
বজ্রপাতের সময় কি পড়তে হয়
আমির ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবাইর (রহঃ) তিনি বজ্রের শব্দ শুনলে কথা বলা বন্ধ করে এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ বজ্র নির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণও ভয়ে তার প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে। অতঃপর তিনি (আমির ইব্নু আবদুল্লাহ্) বলতেন, যমীনের অধিবাসীদের জন্য এই আওয়াজ অত্যন্ত কঠিন আযাবের সংবাদ। [১] (মাওকুফ, হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি
মু‘মিন জননী আয়িশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণ ইচ্ছা করলেন, উসমান ইব্নু আফফান (রাঃ)-কে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদের ওয়ারিস দাবি করবেন। আয়িশা (রাঃ) তাঁদেরকে বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এই কথা বলেননি আমাদের কেউ ওয়ারিস হয় না, আমরা যা কিছু মাল রেখে যাই, উহা সাদাকায় পরিণত হয়। [১] (বুখারী ৬৭৩০, মুসলিম ১৭৫৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার পরে আমার ওয়ারিসগণ আমার সম্পত্তি ভাগ করবে না। আমি যা কিছু রেখে যাব, উহা হতে আমার বিবিগণের খাওয়া-পরা ও কর্মচারীর খরচ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকবে, উহা সাদাকাহ্। (বুখারী ২৭৭৬, মুসলিম ১৭৬০)