7. রাত্রে নফল নামায
রাত্রে নফল নামায আদায় করা
আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে কোন নফল নামায আদায়ে অভ্যস্ত কিন্তু তার উপর ঘুমের প্রভাববশত সে নামায আদায় করতে পারেনি, তবে আল্লাহ তা’আলা তাকে তার নামাযের সওয়াব প্রদান করবেন, আর নিদ্রা হবে তার জন্য সদকা (অর্থাৎ নামাযের জন্য তাকে হিসাব দিতে হবে না, উপরন্তু নিয়ত করার সওয়াবও পাবে)। (সহীহ, আবূ দাঊদ ১৩১৪, নাসাঈ ১৭৮৪, হাদীসটি আল্লামা আলবানী সহীহ বলেছেন সহীহ আল জামে’ ৫৬৯১) আয়িশা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে ঘুমিয়ে থাকতাম, আমার দু’পা তাঁর কিবলার স্থলে থাকত। (অবস্থা এই ছিল) তিনি যখন সিজদায় যেতেন আমাকে চাপ দিতেন, তখন আমি আমার পা দুটিকে গুটিয়ে নিতাম; যখন তিনি দাঁড়াতেন আমার পা দুটিকে আবার লম্বা করে দিতাম। তিনি আয়েশা (রাঃ) বলেন, সেকালে ঘরগুলোতে বাতি ছিল না। (বুখারী ৩৮২, মুসলিম ৫১২) আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ নামাযে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে সে যেন বসে পড়ে, যতক্ষণ তন্দ্রা ছুটে না যায়। কেননা তোমাদের কেউ তন্দ্রাবস্থায় নামায আদায় করলে, বলা যায় না, হয়তো সে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে গিয়ে নিজের নফসকে মন্দ বলে ফেলবে। (বুখারী ২১২, মুসলিম ৭৮৬) ইসমাইল ইবনু আবী হাকিম (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈকা স্ত্রীলোককে রাত্রিবেলা নামায আদায় করতে শুনলেন। তিনি বলেন, ইনি (স্ত্রীলোকটি) কে? (উত্তরে) তাঁকে বলা হল স্ত্রীলোকটি হাওলা বিনতে তুয়াইত। সে সারারাত্রি ঘুমায় না। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে অসন্তুষ্ট হলেন, এমন কি তাঁর চেহারা (মুবারক)-এর উপর নারাজি ভাব প্রকাশ পেল। অতঃপর তিনি ফরমালেন নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা পরিশ্রান্ত হন না, যতক্ষণ তোমরা পরিশ্রান্ত না হও। ততটুকু আমলই কর যতটুকু করার সামর্থ্য রাখ। (বুখারী ৪৩, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, মুসলিম ৭৮৫) যায়েদ বিন আসলাম (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাত্রে ‘যতক্ষণ আল্লাহ তাওফীক দিতেন’ নামায আদায় করতেন। অতঃপর যখন প্রত্যুষের সময় হত তিনি ঘরের লোকজনকে জাগিয়ে দিতেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, الصَّلَاةَ الصَّلَاةَ (নামায, নামায)। অতঃপর কুরআন মজীদের এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও উহাতে অবিচলিত থাক, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা: ত্বোয়াহা, ১৩২) মালিক (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলতেন, ইশা (নামায)-এর পূর্বে নিদ্রা এবং পরে আলাপ করা মাকরূহ। (ইমাম বুখারী মারফু সনদে আবূ বারযা থেকে বর্ণনা করেন ৫৬৮, মুসলিম ৬৪৫) মালিক (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলতেন, দিনের কি রাত্রের (নফল) নামায দুই-দুই রাক’আতই। প্রতি দুই রাক’আত পর সালাম ফিরাবে। (সহীহ, তিরমিযী ৪৩৭, আল্লামা আল বানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ আল জামে, ৩৮২৯, তবে ইমাম মালিক (রঃ) কর্তৃক উল্লেখিত সনদটির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, এই বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তও অনুরূপ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিতরের নামাযের বর্ণনা
আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রে এগার রাক’আত নামায আদায় করতেন, তন্মধ্যে এক রাক’আত বিতর আদায় করতেন, নামায শেষ করলে তিনি ডান কাতে শয়ন করে বিশ্রাম করতেন। (বুখারী ৬৩১০, মুসলিম ৭৩৬) আবূ সালমা ইব্নু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করেন, রমাযানে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাত্রের নামায) এগার রাক’আতের উপর বর্ধিত করতেন না। তিনি চার রাক’আত আদায় করতেন, তুমি সেটার দৈর্ঘ ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিন রাক’আত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বললেন, অতঃপর আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রসূল, আপনি যে বিতরের পূর্বে ঘুমান? (উত্তরে) তিনি ফরমালেন হে আয়েশা, (মনে রেখো) আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমায় বটে কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না। (বুখারী ১১৪৭, মুসলিম ৭৩৮) আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রেবেলা তের রাক’আত নামায আদায় করতেন। অতঃপর যখন ফজরের আযান শুনতেন, তখন হালকা দু’রাক’আত নামায আদায় করতেন। (বুখারী ১১৬৪, মুসলিম ৭৩৭) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি তাঁর খালা নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিনী মায়মুনা (রাঃ)-এর নিকট রাত্রি যাপন করতেছিলেন। তিনি বলেছেন, আমি বিছানার প্রস্থে শুয়েছিলাম আর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবার শুয়েছিলেন বিছানার দৈর্ঘ্য। অতঃপর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমিয়ে পড়লেন। তারপর অর্ধ রাত্র অতিবাহিত হওয়ার কিছু পূর্বে অথবা পরে নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন এবং বসলেন, তারপর চেহারা (মুবারক)-এ হাত সঞ্চালন করে ঘুমের আমেজ দূর করলেন। অতঃপর সূরা আল্-ইমরানের শেষের দশটি আয়াত তিলাওয়াত করলেন। পরে একটি ঝুলানো পুরাতন মশক বা পাত্রের দিকে দণ্ডায়মান হলেন, সেখান থেকে পানি নিয়ে ওযূ করলেন। এবং উত্তমরূপে ওযূ করলেন, অতঃপর নামায আদায় করতে দাঁড়ালেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, (এটা দেখে) আমিও দাঁড়াইলাম এবং নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে (রকম) ওযূ করিয়াছিলেন সেই (রকম) ওযূ করলান। অতঃপর তাঁর পার্শ্বে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে তাকে মলিতে শুরু করলেন, অতঃপর তিনি দু’রাক’আত আদায় করলেন, তারপর দু’রাক’আত, আবার দু’রাক’আত, আবার দু’রাক’আত, আবার দু’রাক’আত, আবার দু’রাক’আত, আদায় করলেন। তারপর বিতর আদায় করে বিশ্রাম করলেন মুয়াযযিন আসা পর্যন্ত। (মুয়াযযিন আযান দিলেন) তিনি সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত (নামায) আদায় করলেন, তারপর বের হয়ে ফজরের নামায আদায় করলেন। (বুখারী ১৮৩, মুসলিম ৭৬৩) যায়দ ইবনু খালিদ জুহানি (রাঃ) (একবার মনে মনে ইচ্ছা পোষণ করলাম) অবশ্যই রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায কেমন হয় অন্য রাত্রে আমি তা অবলোকন করব। আমি তাঁর দরজায় অথবা তাঁবুতে ঠেস দিয়ে বসে রইলাম; অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন, আর দীর্ঘ- অনেক দীর্ঘ দু’রাক’আত নামায আদায় করলেন, তারপর পূর্বের দু’রাক’আতের তুলনায় সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত আদায় করলেন। তারপর দু’রাক’আত আদায় করলেন দু’রাক’আত হতে সংক্ষিপ্ত, তারপর দু’রাক’আত আদায় করলেন, এই দু’রাক’আত পূর্বের দু’রাক’আত অপেক্ষা সংক্ষিপ্ত (সর্বশেষ বিতর আদায় করলেন এই হল তের রাক’আত)। তারপর পূর্বের দু’রাক’আতের তুলনায় সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত আদায় করলেন। (সহীহ, মুসলিম ১৮৩)
বিতর (নামায)-এর নির্দেশ
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাতুল লায়ল (তাহাজ্জুদের নামায) সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন ‘সালাতুল-লায়ল’ দুই-দুই রাক’আত। অতঃপর যদি প্রভাত হওয়ার আশংকা হয় তবে এক রাক’আত আদায় করবে, এটা আদায়কৃত নামাযগুলোকে তার জন্য বিতর-এ (বিজোড়) পরিণত করবে। (বুখারী ৯৯১, মুসলিম ৭৪৯) আবদুল্লাহ ইবনু মুহায়রীয (র) কেনানা গোত্রের এক ব্যক্তি, যাকে মুখদাজী বলা হত, তিনি শাম দেশের এক ব্যক্তিকে (যার উপনাম আবূ মুহাম্মাদ) বলতে শুনেছেন যে, বিতর-এর নামায ওয়াজিব। মুখদাজী বললেন, আমি উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ)-এর কাছে গেলাম, তিনি তখন মসজিদে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁর পথ ‘আটকে’ দাঁড়ালাম। অতঃপর আবূ মুহাম্মাদ যা বলেছেন তাঁকে উহার খবর দিলাম। উবাদা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেন। যে ব্যক্তি তা আদায় করবে এবং তুচ্ছ ধারণা করে তার কোন প্রকার হক নষ্ট করবে না, তাঁর জন্য আল্লাহর নিকট এই প্রতিজ্ঞা রইল যে, তিনি তাঁকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। আর যে তা আদায় করবে না, তাঁর প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গীকার থাকবে না। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে জান্নাতেও দাখিল করতে পারেন। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৪২৫, নাসাঈ ৪৬১, ইবনু মাজাহ ১৪০১, আহমাদ ২২৭৪৫, আল্লামা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ আল জামে, ৩২৪৩) সাঈদ ইবনু ইয়াসার (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে মক্কার পথে ভ্রমণ করছিলাম। সাঈদ (র) বর্ণনা করলেন যখন প্রভাত হওয়ার আশংকা করলাম, তখন বিতর আদায় করলাম এবং (তাড়াতাড়ি) এসে তাঁর সাথে একত্র হলাম। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) প্রশ্ন করলেন তুমি (এতক্ষণ) কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে বললাম ভোর হচ্ছে আশংকা করে নিচে নেমে বিতর আদায় করেছি। এটা (শুনে) আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তোমার জন্য রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (কাজের মধ্যে) আদর্শ নাই কি? আমি বললাম আল্লাহর কসম, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, (মনে রেখ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের উপর বিতর আদায় করতেন। (বুখারী, ৯৯৯, মুসলিম ৭০০) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) শয্যা গ্রহণের ইচ্ছা করলে বিতর আদায় করে নিতেন। আর উমার (রাঃ) শেষ রাত্রে বিতর আদায় করতেন। সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব বলেন, (আমার অভ্যাস হল এই) আমি যখন শয্যা গ্রহণ করতে আসি তখন বিতর আদায় করে নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট বর্ণনা পৌঁছেছে যে, এক ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ ইবনু উমর (রাঃ)-কে বিতর (নামায) ওয়াজিব কিনা জানতে চাইলেন। (উত্তরে) তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন এবং মুসলমানগণও বিতর আদায় করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, (প্রশ্নকারী) সে ব্যক্তিটি বারবার তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন বিতর ওয়াজিব কি না? (উত্তরে) আবদুল্লাহ (রা) বারবার বলেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, যার এ আশংকা থাকে যে, সে ভোর হওয়া পর্যন্ত ঘুমাবে, তবে সে ঘুমের পূর্বেই বিতর আদায় করে নিবে। আর যে ব্যক্তি শেষ রাত্রে উঠবার ভরসা রাখে সে বিতর পরে (শেষ রাত্রে) আদায় করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) নাফি’ (র) বলেছেন, তিনি মক্কার পথে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। তখন আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। তাই আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) (রা) ভোর হওয়ার আশংকা করলেন এবং এক রাক’আত বিতর আদায় করে নিলেন। অতঃপর মেঘ দূরীভূত হলে তিনি দেখলেন এখনও রাত্র কিছু অবশিষ্ট আছে। তখন তিনি আর এক রাক’আত দ্বারা জোড় (নামায) করে নিলেন। অতঃপর দুই-দুই রাক’আত করে আরও নামায আদায় করলেন। যখন প্রভাত নিকটবর্তী মনে করলেন তখন এক রাক’আত বিতর আদায় করে নিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বিতর-এর এক রাক’আত এবং তৎপূর্বের দু’ রাক’আতের মাঝখানে সালাম ফিরাতেন। এমন কি তাঁর প্রয়োজনীয় বিষয়ে নির্দেশও প্রদান করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) সাদ ইবনু আবি ওয়াককাস (রাঃ) ইশার পর এক রাক’আত বিতর আদায় করতেন। মালিক (র) বলেন, এর (এক রাক’আত বিতরের) উপর আমাদের আমল নাই। বরং সর্বনিম্ন বিতর-এর সংখ্যা তিন রাক’আত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, মাগরিবের নামায হল দিনের বিতর। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রের প্রথমভাগে বিতর আদায় করে ঘুমিয়েছেন, অতঃপর জেগেছেন, তখন তাঁর নামায পড়বার ইচ্ছা হল। তবে তিনি দুই দুই রাক’আত করে আদায় করবেন। আমি (এই নামায সম্বন্ধে) যা শুনেছি তন্মধ্যে এটাই আমার পছন্দনীয়।
ফজর-এর (সুবহে সাদিক) পর বিতর আদায় করা
সাঈদ ইবনু যুবায়র (র) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক রাত্রে ঘুমালেন। জাগ্রত হওয়ার পর খাদিমকে বললেন, দেখে আস লোকজন কি করেছে। সে সময় তাঁর দৃষ্টিশক্তি চলে গিয়েছিল। খাদিম গেল এবং ফিরে এসে বলল, লোকজন ফজরের নামায হতে প্রত্যাবর্তন করেছে। তারপর আবদুল্লাহ (রা) দাঁড়িয়ে বিতর আদায় করলেন, তারপর ফজর-এর নামায আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস, উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ), কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনু আমির ইবনু রাবীআ (র) (তাঁরা প্রত্যেকেই) ভোর হওয়ার পর বিতর আদায় করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ (রাঃ) যদি ফজরের নামায আরম্ভ হয়ে যায় এবং আমি তখন বিতর আদায় করতেছি, এতে আমি উৎকণ্ঠা বোধ করি না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) উবাদা ইবনু সামিত (র) এক সম্প্রদায়ের ইমামতি করতেন। একদিন ফজর আদায়ের জন্য গেলেন, তখন মুয়াযযিন ফজরের নামায-এর ইকামত বলতে শুরু করলেন, উবাদা তাকে বিরত করলেন, অতঃপর (প্রথমে) বিতর নামায আদায় করলেন। (তারপর) তাদের ফজরের নামায আদায় করালেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আমি আবদুল্লাহ্ ইবনু আমীর ইবনু রবী’আ (র)-কে বলতে শুনেছি, (অনেক সময় এমনও হয়) আমি বিতর আদায় করি, এমতাবস্থায় আমি ইকামত শুনতে পাচ্ছি অথবা (তিনি বলেছেন) ফজরের পর। আবদুর রহমান (র) কোনটি বলেছেন সে বিষয়ে রবী’আ (র) দ্বিধা প্রকাশ করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুর রহমান ইবনু কাসিম (র) আমি ফজরের পর বিতর আদায় করি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমের কারণে বিতর আদায় করতে পারেনি, সে-ই ফজরের পর বিতর আদায় করতে পারে। ইচ্ছাপূর্বক কারো পক্ষে এরূপ করা ঠিক নয় যে, সে বিতরের নামায রেখে দেবে এবং ফজরের পরে আদায় করবে।
ফজরের দুই রাক’আত (সুন্নত নামায)-এর বর্ণনা
হাফসা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-এর নিকট বর্ণনা করেন যে, যখন মুয়াযযিন ফজরের নামাযের জন্য আযান দিয়ে নীরব হতেন, তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষিপ্ত দু’রাক’আত নামায আদায় করতেন। আর এটা হতো ফজরের নামায শুরু হবার পূর্বে। (বুখারী ৬১৮, মুসলিম ৭২৩) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাক’আত (সুন্নত) খুবই সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন, এমন কি আমি (মনে মনে) বলতাম, তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন, না পাঠ করেননি। (বুখারী ১১৬৫, মুসলিম ৭২৪, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের সনদে ====== বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (র) এক সম্প্রদায় ইকামত শুনলেন, (শোনার পর) তাঁরা (ফজরের সুন্নত) নামায আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন। এমন সময় তাঁদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। তিনি (এটা দেখে) বললেন, দুই নামায এক সাথে! দুই নামায এক সাথে! এটা ফজরের নামাযের ঘটনা, ফজরের পূর্বের দুই রাক’আত সম্পর্কে এটা বলা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) ফজরের দু’রাক’আত (সুন্নত) আদায় করতে পারেননি। তিনি উক্ত দুই রাক’আত নামায সূর্যোদয়ের পর কাযা আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু উমার (রা) যেরূপ (দুই রাক’আত সুন্নত কাযা) করেছেন কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রাঃ)-ও সেরূপ কাযা আদায় করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)