9. সফরে নামায কসর আদায় করা

【1】

মুসাফির ও মুকীম থাকা অবস্থায় দুই নামায একত্রে আদায় করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তাবুক সফরকালে যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছিলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে উল্লেখিত সনদে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া কর্তৃক সনদ মুত্তাসিল নাকি মুরসাল তা নিয়ে ওলামাগণ মতভেদ করেছেন) আবুত তুফায়েল ‘আমির ইবনু ওয়াসিলা (রাঃ মু’আয ইবনু জবর (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, তাঁরা তাবুকের যুদ্ধের বৎসর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে বের হলেন। (সে সফরে) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, আসর, মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। (মু’আয) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন নামাযে দেরি করলেন, অতঃপর তিনি আসলেন এবং যোহর ও আসর একত্রে আদায় করলেন। আবার ভেতরে গেলেন, পুনরায় বের হলেন, তারপর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা আগামীকাল ইনশাআল্লাহ তাবুকের ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবে। তোমরা দিনের প্রথমাংশেই সেখানে পৌঁছাবে। যে আগে সে জায়গায় পৌঁছে, আমি না আসা পর্যন্ত সে ব্যক্তি যেন উহার সামান্যতম পানিও স্পর্শ না করে। অতঃপর আমরা সেখানে পৌঁছালাম। কিন্তু আমাদের আগেভাগে সেখানে দুজন লোক পৌঁছে গিয়েছিল। আর ঝর্ণা হতে অতি সামান্য পানি নির্গত হচ্ছিল। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত ব্যক্তিদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি এর পানি হতে কিছু স্পর্শ করেছ? তাঁরা দু’জনে হ্যাঁসূচক উত্তর দিলেন। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনেক তিরস্কার করলেন এবং আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু তাঁদের সম্পর্কে বললেন। তারপর তাঁরা আঁজলা ভরে অল্প অল্প করে কিছু পানি কোন এক পাত্রে জমা করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পানিতে তাঁর উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুলেন এবং সে পানি ঝর্ণায় নিক্ষেপ করলেন যদ্দরুন ঝর্ণা হতে ফল্গুধারার মত অনেক পানি উঠতে লাগল। লোকজন ঝর্ণা হতে পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করলেন। তারপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হে মু’আয, সম্ভবত তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে এবং তুমি এ ঝর্ণার পানি দ্বারা এই স্থানের অনেক বাগবাগিচায় পূর্ণভাবে পানি সেচ হতে দেখবে। (সহীহ, মুসলিম ৭০৬) নাফি’ (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেছেন, যদি (কোন কারণবশত) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্রুত ভ্রমণ করতে হত, তবে তিনি মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। (বুখারী, ১০৯১, মুসলিম ৭০৩) আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) ভয় ভীতিজনিত কোন কারণ ছাড়া এবং সফর ব্যতিরেকে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যোহর ও আসর একসাথে এবং মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায় করিয়েছেন। (সহীহ, মুসলিম ৭০৫) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, আমার মতে ইহা বৃষ্টির জন্য ছিল। নাফি’ (রাঃ) আমীরগণ বর্ষণকালে মাগরিব ও ইশার নামাযকে একত্রে আদায় করলে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁদের সাথে (উক্ত দুই ওয়াক্তের) নামায একত্রে আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র)-কে প্রশ্ন করলেন সফরে যোহর ও আসরকে পর্যায়ক্রমে একত্রে আদায় করা যায় কিনা? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এতে কোন সমস্যা নেই, আরাফাতে লোকজনের নামাযের প্রতি (যা এক সাথে আদায় করা হয়) তুমি কি লক্ষ করনি? (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আলী ইবনু হুসায়ন (রাঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে সফরের ইচ্ছা করলে যোহর ও আসর একযোগে আদায় করতেন। আর রাত্রে সফরের ইচ্ছা করলে মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। (মুয়াজবিন জাবাল ও ইবনু ওমর সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে সনদ সহ অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে)

【2】

সফরে নামায ‘কসর’ আদায় করা

খালিদ্ ইবনু আসীদ (র)- বংশের জনৈক ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন হে আবূ আবদুর রহমান! আমরা সালাতুল খাওফ (ভয়জনিত অবস্থায় নামায) ও সালাতুল হাযর (মুকীম অবস্থায় নামায)-এর উল্লেখ কুরআনে পাই, কিন্তু সালাতুস সফর (সফরের নামাযের কথা তো কুরআনে) পাইনি? আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, হে আমার ভাতিজা! আল্লাহ তা’আলা আমাদের নিকট যখন মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রেরণ করেন, তখন আমরা কিছু জানতাম না, ফলে আমরা তাঁকে যেরূপ করতে দেখেছি সেরূপ করে থাকি। (সহীহ, নাসাঈ ৪৫৭, ইবনু মাজাহ ১০৬৬, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন সহীহ ওযয়ীফ সুনানে ইবনু মাজাহ। আর ইমাম মালিক (রঃ) কর্তক উল্লেখিত সনদে একজন সন্দেহ যুক্ত রাবী রয়েছেন।) আয়েশা (রাঃ) সফরে এবং হাযরে (মুকীম থাকাকালীন) দুই-দুই রাক’আতই ফরয করা হয়, অতঃপর সফরের নামায পূর্বাবস্থায় বাকি রাখা হয়, আবাসের নামাযে বৃদ্ধি করা হয়। (বুখারী ৩৫০, মুসলিম ৬৮৫) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন আপনি আপনার পিতাকে সফরে মাগরিবের নামায সর্বাধিক কতটুকু বিলম্বে আদায় করতে দেখেছেন? তখন সালিম (র) বললেন, আমরা যখন ‘যাতুল-জায়শ’ নামক স্থানে, তখন সূর্যাস্ত হয়, তিনি মাগরিবের নামায ‘আকীক’ নামক স্থানে গিয়ে আদায় করেছেন। (দুই স্থানের দূরত্ব ৭ মাইল) (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

কত দূরের সফরে নামায কসর আদায় করা ওয়াজিব হয়

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হজ্জ অথবা উমরার উদ্দেশ্যে বের হলে ‘যুল-হুলায়ফা’ [১] নামক স্থানে নামায কসর করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) [১] যুল-হুলায়ফা মদীনা শরীফ হতে ছয় মাইল দূরবর্তী একটি জায়গার নাম। সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) তাঁর পিতা সওয়ারীতে আরোহণ করে ‘রীম’ [১] নামক স্থানে যান এবং তিনি এতটুকু পথ ভ্রমণে নামায কসর আদায় করেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন মালিক (র) বলেছেন, উক্ত স্থানটির দূরত্ব অন্তত চার বরীদ [২] হবে। সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সওয়ার হয়ে ‘যাতুন-নুসুব নামক স্থানের দিকে গমন করলেন। তিনি তাঁর এই পরিমাণ যাত্রায় নামায ‘কসর’ আদায় করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ‘যাতুন-নুসুব’ ও মদীনার ও মদীনার মধ্যে ব্যবধান হল চার বরীদ। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) খায়বরের দিকে সফর করতেন এবং নামায কসর আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) পূর্ণ একদিনের সফরে কসর আদায় করতেন। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর সাথে এক বরীদ সফর করতেন কিন্তু নামায কসর আদায় করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) মক্কা হতে তায়েফ অথবা মক্কা হতে উসফান বা মক্কা হতে জিদ্দার সমান দূরত্বের স্থানে সফরে বের হলে কসর আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বর্ণনা করেন, মালিক (র) বলেছেন, উক্ত পথের দূরত্ব চার বরীদ পরিমাণ। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি সফরের নিয়ত করে, সে যতক্ষণ নিজের পল্লীর গৃহাদি ছেড়ে না যাবে, ততক্ষণ নামায কসর আদায় করবে না। অনুরূপ ফেরার পথেও যতক্ষণ নিজ গ্রামের সর্বপ্রথম গৃহ বা উহার নিকটতম স্থান পর্যন্ত না পৌঁছিব নামায পূর্ণ আদায় করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【4】

কোন স্থানে অবস্থানের নিয়ত না করলে মুসাফির নামায কত রাক’আত আদায় করবে

সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, আমি যতক্ষণ অবস্থান করার নিয়ত না করি ততক্ষণ মুসাফিরের মত নামায আদায় করতে থাকি, যদিও বা এই অবস্থায় বার রাত্রি পর্যন্ত আবদ্ধ থাকি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) ইবনু উমার (র) মক্কা শরীফে দশ রাত্রি পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন এবং নামায কসর আদায় করেছিলেন। কেবল ইমামের সাথে নামায আদায় করলে তখন ইমামের নামাযের মতই আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

মুসাফির ইকামতের নিয়ত করলে তখনকার নামায

আতা খোরাসানী (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে বলতে শুনেছেন যে ব্যক্তি চার রাত্রি পর্যন্ত ইকামতের নিয়ত করবে মুসাফির হওয়া সত্ত্বেও সে নামায পূর্ণই আদায় করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেছেন, আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটা আমার পছন্দনীয় বটে। মালিক (র)-কে কয়েদীদের নামায সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বললেন, মুকীমের মতই নামায আদায় করবে, কিন্তু যদি সে মুসাফির হয় (তবে কসর আদায় করবে)।

【6】

মুসাফিরের নামায যখন তিনি ইমাম হন অথবা অন্য ইমামের পিছনে নামায পড়েন

সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) তাঁর পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) যখন মক্কায় আসতেন তখন তাঁদেরকে দু’রাক’আত নামায আদায় করাতেন। (নামায শেষে) বলতেন, হে মক্কাবাসীরা! তোমরা তোমাদের নামায পূর্ণ কর, কেননা আমরা মুসাফির। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আসলাম তাঁর পিতা হতে, তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হতে অনুরূপ রেওয়ায়ত বর্ণনা করেন। নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) ইমামের ইকতিদা করে নামায পড়লে মিনাতে চার রাক’আত আদায় করতেন। আর একা আদায় করলে তখন দু’রাক’আতই আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) আবদুল্লাহ্ ইবনু সাফওয়ানকে দেখতে আসলেন যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমাদের দুই রাক’আত নামায আদায় করালেন। অতঃপর তিনি প্রস্থান করলেন আর আমরা নামায পূর্ণ করলাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【7】

সওয়ারীর উপর নামায আদায় করা এবং সফরে দিনে ও রাত্রিতে নফল আদায় করা

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সফরে ফরয নামাযের সাথে অন্য কোন নামায আদায় করতেন না, আগেও না, পরেও না। অবশ্য তিনি মধ্যরাত্রে মৃত্তিকার উপর নামায আদায় করতেন, আর আদায় করতেন তাঁর উটের হাওদার উপর, উট যে দিকেই মুখ করে থাকুক না কেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ, উরওয়াহ ইবনু যুবায়র, আবূ বাকর ইবনু আবদুর রহমান (র) তাঁরা সকলেই সফরে নফল নামায আদায় করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে সফরে নফল আদায় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, দিনে হোক বা রাত্রে হোক, নফল নামায আদায় করাতে কোন ক্ষতি নেই। তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, কতিপয় আহলে ইলম সফরে নফল আদায় করতেন। মালিক (র) আমার নিকট নাফি’ (র) হতে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর ছেলে উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (র)-কে সফরে নফল আদায় করতে দেখতেন, অথচ তিনি নিষেধ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি গাধার উপর নামায আদায় করতে দেখেছি, তখন গাধাটির মুখ ছিল খায়বরের দিকে। (সহীহ, মুসলিম ৭০০) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে তাঁর সওয়ারীর উপর নামায আদায় করতেন সওয়ারী যে দিকেই মুখ করুক না কেন। (বুখারী ১০৯৬, মুসলিম ৭০০) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) বলেছেন; আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-ও তা করতেন। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) বলেছেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে সফরে গাধার পিঠে নামায আদায় করতে দেখেছি অথচ গাধাটির মুখ কিবলার দিকে ছিল না, তিনি রুকূ সিজদা করতেন ইশারায়, তাঁর ললাট কোন কিছুর উপর রাখতেন না। (বুখারী ১১০০, মুসলিম ৭০২)

【8】

সালাতুয যুহা (চাশ্ত ও ইশরাকের নামায)

আকীল ইবনু আবি তালিব (র) উম্মুহানী বিন্ত আবি তালিব (রাঃ) আবূ মুররার নিকট বর্ণনা করেন যে, মক্কা বিজয়ের বৎসর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আট রাক’আত নামায আদায় করেছেন। তখন তাঁর পরিধানে (সর্বাঙ্গে জড়ানো অবস্থায়) একটি মাত্র কাপড় ছিল। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) উম্মুহানী বিনতে আবি তালিব (রাঃ) আমি মক্কা বিজয়ের সালে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে গমন করলাম। আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গোসল করতে দেখলাম। তাঁর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) একটি কাপড় দিয়ে তাঁর জন্য পর্দা করেছেন। তিনি বললেন, আমি গিয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বললাম। তিনি ফরমালেন ইনি কে? আমি বললাম আবূ তালিবের কন্যা উম্মুহানী। তখন তিনি বললেন, উম্মুহানীর জন্য মারহাবা (খোশ আমদেদ)। তিনি যখন গোসল সমাপ্ত করলেন, একটি মাত্র কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত নামায আদায় করলেন। নামায হতে প্রত্যাবর্তন করলে আমি বললাম আমার ভাই আলী (রাঃ) বলেছেন, সে এমন এক ব্যক্তিকে কতল করবে, যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি। সে হচ্ছে হুবায়রার সন্তান ‘অমুক’ (তাবরানীর মতে সে হুবাইরার চাচাত ভাই)। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘উম্মুহানী, তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মুহানী বলেন, সময়টি ছিল চাশতের। (বুখারী ৩৫৭, মুসলিম ৩৩৬) আয়েশা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনও চাশতের নামায আদায় করতে দেখিনি, আমি কিন্তু চাশতের নামায আদায় করি। ব্যাপার হল এই যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক আমলকে পছন্দ করা সত্ত্বেও বর্জন করতেন এই ভয়ে যে, লোকেরা তাঁর উপর আমল করতে থাকবে, পরে তা ফরয হয়ে যাবে। (বুখারী ১১২৮, মুসলিম ৭১৮) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) তিনি চাশতের নামায আট রাক’আত আদায় করতেন ও বলতেন, আমার মা-বাবাকে জিন্দা করে পাঠানো হলেও আমি এই আট রাক’আতকে ছাড়ব না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【9】

চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) মুলায়কা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাওয়ার দাওয়াত করেছিলেন। তিনি তা হতে খেলেন, তারপর ফরমালেন তোমরা দাঁড়াও, আমি তোমাদের জন্য (কল্যাণ ও বরকতের উদ্দেশ্যে) নামায আদায় করব। আনাস (রাঃ) বললেন, আমি আমাদের একটি চাটাই-এর দিকে গেলাম, যা দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে একেবারে কাল হয়ে গিয়েছিল। আমি তাতে পানি ছিটিয়ে তা পরিষ্কার করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আমি এবং ইয়াতিম তাঁর পিছনের সারিতে দাঁড়ালাম। আর বৃদ্ধা (নানী) দাঁড়ালেন আমাদের পিছনের সারিতে। তিনি আমাদের জন্য (দু’আর উদ্দেশ্যে) দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন; অতঃপর আমাদের গৃহ ত্যাগ করলেন। (বুখারী ৮৬০, মুসলিম ৬৫৮) উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উতবা ইবনু মাস্উদ (র) তিনি বলেছেন; আমি উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলাম, সময়টা ছিল দুপুর। আমি তখন তাঁকে নফল নামায অবস্থায় পেলাম, তাই আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাকে কাছে আনলেন এবং তাঁর ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবর আমাকে দাঁড় করালেন। তারপর ইয়ারফা (উমারের খাদেম) আসলে আমি পেছনে সরে আসলাম। তারপর আমরা দু’জনেই তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【10】

মুসল্লিদের সম্মুখ দিয়ে কারো চলার ব্যাপারে কড়া নিষেধাজ্ঞা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ নামায আদায় করে, তবে সে সময় তার সামনে দিয়ে কাউকেও হাঁটতে দেবে না যথাসাধ্য তাকে বারণ করবে। এতদসত্ত্বেও যদি সে বিরত না হয়, তবে শক্তি প্রয়োগ করবে। কেননা সে অবশ্যই দুষ্ট লোক। (বুখারী ৫০৯, মুসলিম ৫০৫) বুসর ইবনু সাঈদ (র) যায়দ ইবনু খালিদ জুহনী (রাঃ) তাঁকে আবূ জুহায়ম (রাঃ)-এর নিকট এটা জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যে পাঠালেন যে, তিনি মুসল্লির সামনে দিয়ে চলাচলকারী সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কি শুনেছেন। আবূ জুহায়ম (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচলকারী জানত যে, এর জন্য তার কি পরিণাম হবে, তবে সে নিশ্চিত মনে করত যে, মুসল্লি ব্যক্তির সামনে দিয়া চলাচল করা অপেক্ষা সঠিকভাবে চল্লিশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা অধিক শ্রেয়। আবূন নায্র বলেন, আমি বলতে পারছি না, তিনি চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বৎসর বলেছিলেন। (বুখারী ৫১০, মুসলিম ৫০৭) আতা ইবনু ইয়াসার (র) কা’ব-এ আহ্বার (র) বলেছেন, মুসল্লির সামনে দিয়ে চলাচলকারী যদি জানত যে, তার পরিণাম কি, তবে সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার চাইতে মাটিতে বসে যাওয়া তার পক্ষে উত্তম হত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মেয়েরা যখন নামায আদায় করে তখন তাদের সামনে দিয়ে চলাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) অপছন্দ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) (তিনি নিজে) করো সামনে দিয়ে চলাচল করতেন না এবং অন্য কাউকে তাঁর সামনে দিয়ে চলতে দিতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【11】

মুসল্লির সামনে দিয়ে চলার অনুমতি

আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমি একটি গাধীর উপর সওয়ার হয়ে আসলাম। আমি সে সময় সাবালগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে উপনীত হয়েছি। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মিনাতে লোকদের নামায আদায় করাচ্ছিলেন। আমি কোন একটি কাতারের মাঝ দিয়ে চললাম, তারপর (সওয়ারী হতে) অবতরণ করে গাধীকে চরাবার জন্য ছেড়ে দিলাম এবং আমি কাতারে শামিল হলাম। এর জন্য আমাকে কেউ কোন তিরস্কার করেননি। (বুখারী ৭৬, মুসলিম ৫০৪) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নামায কায়েম আছে, এমন অবস্থায় সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) কোন কোন সময় কাতারের মাঝ দিয়ে চলাচল করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, যদি নামায আদায় হয়ে যায় এবং ইমাম নিয়ত করে ফেলেন, তখন কোন ব্যক্তি কাতারের মাঝ দিয়ে ব্যতীত অন্য কোন রাস্তায় মসজিদে প্রবেশ করতে (নামাযে শামিল হওয়ার জন্য) না পড়লে, তার জন্য এ ব্যাপারে (কাতারের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করার) অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি। মালিক (র) তার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, মুসল্লির সম্মুখ দিয়ে যা কিছু চলাচল করে, তা নামায নষ্ট করে না। এইরূপ বলেছেন আলী ইবনু আবি তালিব (রাঃ)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (র) হতে বর্ণিত; আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, মুসল্লির সামনে দিয়ে যা কিছু চলাচল করে তার কোনটাই নামাযকে নষ্ট করে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【12】

সফরে মুসল্লি কর্তৃক সুতরা বা আড় ব্যবহার

মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) উটের পিঠের হাড় দ্বারা সুতরা করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি সুতরা সামনে না করে মরুভূমিতে নামায আদায় করতেন। (কারণ সেখানে লোকজনের চলাচল তেমন ছিল না।) (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【13】

নামাযে হাত দিয়ে কাঁকর সরানো

আবূ জাফর কারী’ (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি সিজদার জন্য যখন নত হতেন, তখন তাঁর কপাল রাখার স্থান হতে খুব হালকাভাবে হাত বুলিয়ে কাঁকর সরাতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবূ যর (রাঃ) বলতেন, কাঁকর সরাবার জন্য মাত্র একবার হাত বুলানো যায়। তবে উহা হতে বিরত থাকাটা লাল বর্ণের উট অপেক্ষাও উত্তম। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【14】

সফ্ সোজা রাখা

নাফি’ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) ‘সফ’ (কাতারসমূহ) বরাবর করার নির্দেশ দিতেন। যখন এই কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর কাছে আসত এবং সফসমূহ বরাবর হয়েছে বলে তাঁকে জানাত, তখন তিনি তাকবীর বলতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ সুহায়ল ইবনু মালিক (র) তিনি বলেছেন, আমি উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। অতঃপর নামাযের ইকামত শুরু হল, আমি তখন তাঁর সাথে আমার জন্য ভাতা নির্দিষ্ট করার ব্যাপারে আলাপ করতেছিলাম। আমি বিরতি ছাড়াই তাঁর সাথে আলাপরত ছিলাম। তিনি তাঁর উভয় জুতার সাহায্যে কাঁকর (সরিয়ে) জায়গা সমান করছিলেন। এমন সময় কতিপয় লোক তাঁর কাছে আসলেন, যাদেরকে তিনি ‘সফ’ বরাবর করার কাজে নিযুক্ত করেছিলেন এবং তাঁকে জানালেন যে, ‘সফ’সমূহ বরাবর হয়েছে। তিনি আমাকে বললেন, কাতারে বরাবর হয়ে দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর তিনি اللهُ اَكْبَرُ বললেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【15】

নামাযে এক হাত অপর হাতের উপর রাখা

আবদুল করীম ইবনু আবুল মুখারিক (র) নবুয়তের কালাম হচ্ছে এই কালাম, যখন তুমি লজ্জা পরিহার কর, তবে তুমি যা ইচ্ছা তা করতে পার। নামাযে উভয় হাতের একটিকে অপরটির উপর রাখা (এইভাবে) যে, ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে, ইফতারে ত্বরা করা ও সাহ্রী (খাওয়া) তে বিলম্ব করা। (সনদে উল্লেখিত আবদুল কারীম একজন যঈফ রাবী, আর ইমাম বুখারী প্রথমের মাঝ খানের অংশটুকু মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন) সাহল ইবনু সা’দ আস-সাঈদী (রাঃ) লোকদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হত যেন নামাযে প্রত্যেকে তাঁর ডান হাত বাম হাতের যিরার (যিরা বলা হয় হাতের কুনুই হতে শুরু করে মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত) উপর রাখে। (সহীহ, বুখারী ৭৪০) আবূ হাযিম (র) বলেন, আমি জানি যে তিনি এই বাক্যের সনদ রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছাতেন।

【16】

ফজরে কুনূত পড়া

নাফি’ (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) কোন নামাযেই কুনূত পাঠ করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【17】

যে সময় (পায়খানা-প্রশ্রাব ইত্যাদি) আবশ্যক পূরণের ইচ্ছা করে সে সময় নামায আদায় নিষেধ

আবদুল্লাহ ইবনু আরকাম (রাঃ) সহচরদের ইমামতি করতেন। একদিন নামায শুরু হল। সে মুহূর্তে তিনি নিজ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে বাহিরে গেলেন। অনন্তর (তথা হতে) ফিরলেন। তারপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ফরমাতে শুনেছি তোমাদের কেউ (পায়খানা-পেশাবের জন্য) ঢালু জায়গায় যাওয়ার মনস্থ করলে তবে নামাযের পূর্বে তা সেরে নিবে। (সহীহ, আবূ দাঊদ ৮৮, তিরমিযী ১৪২, নাসাঈ ৮৫২, ইবনু মাজাহ ৬১৬, আল্লামা আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ এবং যঈফ সুনানে নাসাঈ) যায়দ ইবনু আসলাম (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এমন সময় কখনও নামায না পড়ে, যখন (পায়খানা-প্রসাবের বেগবশত) তার পাছাদ্বয় মিলিয়ে (চাপ দিয়ে) রাখে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【18】

নামাযের অপেক্ষা করা এবং নামাযের জন্য গমন করা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে ব্যক্তি যে মুসল্লায় নামাজ আদায় করেছে , সে মুসল্লায় যতক্ষণ বসা থাকে এবং ওযূ ছুটে যায় মত কোন কাজ না করে ততক্ষণ ফেরেশতাগণ এই বলে দোয়া করতে থাকেন, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ "হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দার গুনাহ মাফ করো, হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করো।" (বুখারি ৪৪৫, মুসলিম ৬৪৯) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, হাদিসে বর্ণিত, مَا لَمْ يُحْدِثْ (মালাম য়ুহদিস) বাক্যটির অর্থ আমার মতে, (মুসল্লি কতৃক) এমন কোন কাজ করা যাতে ওযূ ভেঙে যায়, এটা অন্য কিছু নয় । আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের এক ব্যক্তি, যতক্ষণ নামায তাহাকে আবদ্ধ রাখিবে নামায ছাড়া অন্য কোন বস্তু নিজ পরিবারবর্গের দিকে ফিরে যেতে তাকে বাধা প্রদান করেনি, ততক্ষণ সে নামাযে থাকবে। (বুখারী ৬৫৯, মুসলিম ৬৪৯) আবূ বাকর ইবনু আবদুর রহমান (র) যে ব্যক্তি সকালে ও বিকালে মসজিদের দিকে গমন করে এবং সে মসজিদে কোন ভাল কথা শিক্ষা করার জন্য অথবা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই গমন করে, সে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদদের মত (গণ্য) হয়ে, এমন মুজাহিদ যে গনীমতের মালসহকারে (গৃহে) ফিরেছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নুয়ায়ম ইবনু আবদুল্লাহ (র) তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন তোমাদের একজন যখন নামায আদায় করে, তারপর জায়নামাযে বসে থাকে, তবে ফেরেশতারা তার জন্য اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُ (হে আল্লাহ! একে ক্ষমা কর) اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُ (হে আল্লাহ! একে দয়া কর) বলে দোআ করতে থাকেন। অতঃপর সে যদি জায়নামায হতে দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, তবে সে যেন নামাযেই রয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, এই হাদীসটি বুখারী এবং মুসলিমে মারফু সনদে বর্ণিত হয়েছে) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের খবর দিব না ঐ বস্তুর, যে বস্তু দ্বারা আল্লাহ (বান্দার) গুনাহসমূহ মুছে দেন এবং তা দ্বারা তার অনেক মর্তবা বুলন্দ করে দেন? (তা হচ্ছে এই) পূর্ণরূপে ওযূ করা কষ্টবোধের সময়, মসজিদের দিকে নামাযের উদ্দেশ্যে গমনাগমন এবং এক নামাযের পর আর এক নামাযের অপেক্ষায় থাকা। আর এটা (হল) ‘রিবাত’ এটাই রিবাত, এটাই রিবাত (সীমান্ত প্রহরায় সর্বদা সজাগ ও প্রস্তুত থাকা)। (সহীহ, মুসলিম ২৫১) মালিক (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলেছেন, বলা হয়, আযানের পর একমাত্র মুনাফিক ব্যতীত কোন ব্যক্তি মসজিদ হতে বের হয় না, অবশ্য যে ব্যক্তি পুনরায় ফিরে আসার ইচ্ছা রাখে (সে বের হতে পারে)। (হাদীসটি আবূ হুরায়রা বরাত দিয়ে মারফু সনদে বর্ণনা করা হয়েছে, ইবনু ----- হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক’আত নামায আদায় করে নেয়। (বুখারী ৪৪৪, মুসলিম ৭১৪) উমার ইবনু উবায়দুল্লাহ (র) আবুন নাযর বলেন, আবূ সালমা ইবনু আব্দুর রহমান (র) তাঁকে বলেছেন, আমি তোমার মনিবকে অর্থাৎ আজাদীদাতাকে কখনও দেখিনি যে, তিনি মসজিদে এসে (বসার পূর্বে) নামায অর্থাৎ (তাহিয়্যাতুল মসজিদ) না আদায় করে বসেছেন। আবুন নাযর (র) বলেন, তিনি উমার ইবনু উবায়দুল্লাহ (র)-কে অভিযোগস্বরূপ এটা বলেছেন, কারণ তিনি মসজিদে প্রবেশ করে নামাযের পূর্বে বসে যেতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, এইরূপ করা ভাল, তবে ওয়াজিব নয়।

【19】

সিজদায় হস্তদ্বয় মুখমণ্ডলের পাশাপাশি রাখা

নাফি’ (র) আব্দুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) সিজদায় যে স্থানে তাঁর মুখমণ্ডল রাখতেন, সে স্থানেই (অর্থাৎ তার পার্শ্বে) তাঁর উভয় হাতের তালু রাখতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) বলেন, আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি অতি শীতের সময়ও তাঁর দু’হাত জুব্বা (লম্বা পোশাক বিশেষ) হতে বের করে কঙ্করময় ভূমিতে রাখতেন। নাফি’ (র) আব্দুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি তাঁর ললাট যমীনে রাখে, সে যে তার দু’হাত ও সে জায়গায় রাখে, যে জায়গায় ললাট রেখেছে। অতঃপর যখন (সিজদা হতে) ললাট উঠায় তখন যেন উভয় হাতকে উঠিয়েনেয়। কারণ মুখমণ্ডল যেমন সিজদা করে, হস্তদয়ও তেমনিভাবে সিজদা করে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【20】

প্রয়োজনবশত নামাযে অন্যদিকে দেখা এবং দস্তক বা তালি দেয়া

সাহ্ল ইবনু সা’দ সাঈদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ‘আমর ইবনু ‘আউফ কাবীলার দিকে তাঁদের একটি বিষয় মীমাংসা করার উদ্দেশ্যে গমন করেন, তখন নামাযের সময় উপস্থিত হয়। মুয়াযযিন আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিদমতে এসে বললেন, আপনি নামাযে লোকের ইমামতি করতে সম্মত আছেন কি? তা হলে আমি ইকামত বলতাম। আবূ বাকর (রাঃ) আচ্ছা বলে সম্মতি দিলেন। অতঃপর আবূ বাকর (রাঃ) নামায আদায় করালেন। লোকজন যখন নামাযে, তখন হঠাৎ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তশরীফ আনলেন। তিনি কাতারে ফাঁক করে একেবারে প্রথম কাতারে গিয়ে দাঁড়ালেন। এতে লোকেরা তালি দিতে শুরু করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) (তাঁর অভ্যাস ছিল) নামাযে অন্যদিকে মনোযোগ দিতেন না। কিন্তু যখন লোকদের তালি দেওয়া বেড়ে গেল, তখন তিনি পেছনের দিকে ফিরে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেলেন। তারপর আবূ বাকর (রাঃ) পিছনে যেতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিতে তাঁকে নির্দেশ দিলেন আপন জায়গায় স্থির থাক। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ইমামতিতে বহাল থাকার নির্দেশ দিলেন বলে আবূ বাকর (রাঃ) স্বীয় হাতদুটি তুলে আল্লাহর হামদ বা শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর পেছনে সরে সফের বরাবর এসে দাঁড়ালেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে বেড়ে নামায আদায় করালেন। নামায সমাপ্ত করার পর তিনি বললেন, হে আবূ বকর! তোমাকে যখন আমি নির্দেশ দিলাম, তখন (ইমামতিতে) স্থির থাকতে তোমাকে কোন জিনিস বাধা প্রদান করল ? (উত্তরে) আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে (উপস্থিতিতে) আবূ কোহাফার সন্তানের জন্য নামাযের ইমামতি করা সাজে না। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমাদেরকে অনেক হাততালি দিতে দেখে অবাক হয়েছি। কারো নামাযে কোন বিষয়ে প্রয়োজন দেখা দিলে সে যেন তসবীহ (সুবহানাল্লাহ্) বা (আল্লাহু আকবার) উচ্চারণ করে। কেননা সে তসবীহ্ উচ্চারণ করলেই তার দিকে মনোযোগ দেয়া হবে। হাততালি দেয়া অবশ্য নারীর জন্য। (বুখারী ৬৮৪, মুসলিম ৪২১) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) নামাযে অন্য দিকে ফিরে দেখতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ জাফর কারী’ (র) (এমনও হত) আমি নামায আদায় করেছি, আর আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আমার পশ্চাতে (এসে দাঁড়িয়েছেন), অথচ আমি খবর রাখি না। পরে আমি ফিরে দেখলে তিনি আমাকে ইশারা করলেন (আমাকে ইঙ্গিতে ফিরে না দেখতে বললেন)। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【21】

ইমামকে রুকূতে পেলে কি করবে

আবূ উমামা ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) (একবার) মসজিদে প্রবেশ করলেন এবং লোকজনকে রুকূতে পেলেন। তিনিও রুকূ করলেন, অতঃপর (সে অবস্থায়ই) আস্তে আস্তে চলতে চলতে ‘সফ’ বা কাতার পর্যন্ত পৌঁছলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) রুকূতে আস্তে আস্তে হাঁটতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【22】

নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠ করা

আমর ইবনু সুলায়ম যুরাকী (র) , আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, তাঁরা [রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট] বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব ? তিনি বললেন, তোমরা এইরূপ বলবে-, আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) তাঁকে বলেছেন, তাঁরা [রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট] বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব ? তিনি বললেন, তোমরা এইরূপ বলবে- اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ . (বুখারী ৩৩৬৯, মুসলিম ৪০৭) আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ)-এর মজলিসে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট শুভাগমন করলেন। বশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ আমাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আপনার উপর দরূদ পাঠ করার জন্য। আমরা আপনার প্রতি কিভাবে দরূদ পাঠ করব ? আবূ মাসউদ আনসারী বলেন, এ প্রশ্ন শোনার পর, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। এমন কি (তাঁর নীরবতা দেখিয়া) আকাঙ্ক্ষা করলাম, যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না-ই করত (তা হলে ভাল হত)। অতঃপর তিনি বললেন, এইরূপ বল اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيْدٌ. (এটা হচ্ছে ‘সালাত’ বা দরূদ) আর সালাম যেরূপ তোমরা অবগত হয়েছ। (সহীহ, মুসলিম ৪০৫) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) আমি আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরের নিকট দাঁড়াতেন, তারপর তার উপর দরূদ পাঠ করতেন এবং আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-এর জন্য দো’আ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【23】

নামাযের বিভিন্ন আমল

ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ গৃহে নামায আদায় করতেন, যোহরের পূর্বে দু’রাক’আত ও পরে দু’রাক’আত এবং মাগরিবের পর দু’রাক’আত। আর ইশার পর আদায় করতেন দু’রাক’আত। আর জুমআর পর তিনি ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত নামায আদায় করতেন না। (ঘরে ফিরলে) অতঃপর দু’রাক’আত আদায় করতেন। (বুখারী ৯৩৭, মুসলিম ৮৮২) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি ধারণা কর যে, আমার কিবলা শুধু এই স্থানেই (আমি শুধু সামনের দিকেই দেখি, যেদিকে আমার কিবলা) ? আল্লাহর কসম, তোমাদের একাগ্রতা ও মনোযোগ এবং তোমাদের রুকূ (কোনটাই) আমার কাছে গোপন নয়। অবশ্যই আমি আমার পশ্চাৎ দিক হতেও তোমাদেরকে দেখি। (বুখারী ৪১৮, মুসলিম ৪২৪) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পদব্রজে এবং সওয়ার হয়ে কুবা’তে তশরীফ আনতেন। (বুখারী ১১৯৪, মুসলিম ১৩৯৯) নু’মান ইবনু মুররা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শারাবী, চোর এবং ব্যভিচারী সম্পর্কে তোমাদের কি মত ? আর এই প্রশ্ন করা হয় এদের সম্পর্কে কোন হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে। তাঁরা উত্তর দিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জ্ঞাত। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন এটা ঘৃণা ও জঘন্য পাপ কাজ, এই সবের সাজা রয়েছে। আর যে ব্যক্তি নিজের নামায চুরি করে, সে চুরি হচ্ছে সর্বাপেক্ষা বড় চুরি। তাঁরা (সাহাবীগণ) বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপন নামায চুরি করে কিভাবে ? তিনি বললেন, সে নামাযের রুকূ এবং সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না। (আবূ হুরায়রা ও আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে সনদ সহ বর্ণনা করেছেন) উরওয়াহ ইবনুশ যুবায়র (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কিছু নামায ঘরে আদায় করো। (বুখারী ৪৩২, ইমাম মুসলিম ইবনু ওমর থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ৭৭৭, তবে ইমাম মালিক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) নাফি’ (র) রুগ্ন ব্যক্তি সিজদা করতে না পারলে মাথা দ্বারা শুধু ইশারা করবে, আর কপালের দিকে কোন বস্তু উত্তোলন করবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) রবী’আ ইবনু আবূ আবদুর রহমান (র) লোকজন নামায সমাপ্ত করেন, এই অবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) মসজিদে পৌঁছালে তিনি ফরয নামায আদায় আরম্ভ করতেন এবং উহার পূর্বে অন্য কোন নামায আদায় করতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) একবার এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে ব্যক্তি নামায আদায় করছিলো। তিনি সে ব্যক্তিকে সালাম করলেন। সে ব্যক্তি وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ বাক্য দ্বারা সালামের উত্তর দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর কাছে ফিরে এসে বললেন, নামাযরত অবস্থায় যদি তোমাদের কাউকেও সালাম করা হয়, তবে সে সালাম করবে না বরং হাতের ইশারায় উত্তর দেবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) নাফি’ (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি কোন নামায ভুলে যায়, তারপর সে নামাযের কথা আর স্মরণ হয়নি, কিন্তু স্মরণ হয়েছে এমন সময় যখন ইমামের সাথে, তবে ইমাম সালাম ফিরালে পর সে (প্রথমে) যে নামায ভুলেছে তা আদায় করে নিবে, তারপর অন্য নামায (যা ইমামের সাথে আদায় করেছিলো) আদায় করবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ওয়াসি’ ইবনু হাব্বান (র) আমি নামায আদায় করতেছিলাম, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) কিবলার প্রাচীরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসে ছিলেন। আমি নামায সমাপ্ত করার পর তাঁর কাছে গেলাম, আমার বাম দিকে ফিরে। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (র) বললেন, তোমাকে ডানদিক হয়ে ফিরতে কিসে বাধা দিল? ওয়াসি’ (র) উত্তরে বললেন, আমি আপনাকে আমার বাম দিকে বসা দেখে আপনার দিকে ফিরলাম। আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তুমি ঠিক করেছ। হয়ত এক ব্যক্তি বলবে তুমি ডান দিক হয়ে ফির। অতঃপর তুমি যখন নামায আদায় কর, যেদিক দিয়ে তোমার ইচ্ছা হয় সেদিক দিয়ে ফিরো, ডানদিক দিয়ে হোক বা বামদিক দিয়ে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) জনৈক মুহাজির আবদুল্লাহ ইবনু আমার ইবনু আস (রাঃ) এর নিকট প্রশ্ন করলেন, উটের বিশ্রামগারে (যা সাধারণত পানির কাছে হয়) নামায আদায় করতে পারি কি ? তিনি বললেন, না, তবে ছাগলের বসার স্থানে নামায আদায় করতে পার। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইবনু শিহাব (র) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলেছেন, কোন নামায এরূপ যার প্রতি রাক’আতে বসতে হয় ? অতঃপর (উত্তরে) সাঈদ বললেন, সেটা মাগরিবের নামায, যখন তোমার উহা হতে এক রাক’আত ছুটে যায় অর্থাৎ ইমামের সাথে এক রাক’আত না পেল তাকে সে রাক’আত আদায় করতে হবে, তখন প্রতি রাক’আতেই বসতে হয়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) বলেন, সব নামাযেই এরূপ নিয়ম।

【24】

নামায সম্পর্কিত বিবিধ আহ্কাম

আবূ কাতাদা আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কন্যা যয়নব (রাঃ)-এর মেয়ে উমামাকে উঠিয়ে নামায আদায় করতেন। উমামার পিতা হচ্ছেন আবুল আস ইবনু রবিআ ইবনু আবদ শামস। হযরত সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করার সময় তাঁকে রেখে দিতেন, আবার উঠার সময় তাঁকে উঠিয়ে নিতেন। (বুখারী ৫১৬, মুসলিম ৫৪৩) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ফেরেশতাগণ পালাবদল করে আসা যাওয়া করেন। একদল ফেরেশতা রাত্রে এবং আর একদল দিনে, আর আসর ও ফজরের নামাযে তাঁরা একত্র হন। অতঃপর যাঁরা রাত্রে তোমাদের মধ্যে ছিলেন, তাঁরা ঊর্ধ্বলোকে চলে যান। আল্লাহ তা’আলা আপন বান্দাদের অবস্থা অধিক জ্ঞাত, তবুও তিনি ফেরেশতাগণকে প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দাগণকে কি অবস্থায় রেখে এসেছ ? উত্তরে ফেরেশতাগণ বলেন, আমরা তাঁদেরকে নামাযরত অবস্থায় রেখে এসেছি এবং আমরা যখন তাঁদের কাছে গিয়েছিলাম তখনও তাঁর নামাযেরত ছিলেন। (বুখারী ৫৫৫, মুসলিম ৬৩২) আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আবূ বাকরকে বলে দাও, তিনি যেন লোকের ইমামতি করেন। তখন আয়েশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আবূ বাকর আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নার জন্য লোকে তাঁর আওয়াযই শুনতে পাবে না। কাজেই আপনি লোকের ইমামতি করার জন্য উমার (রাঃ)-কে নির্দেশ প্রদান করুন। তিনি বললেন, আবূ বাকরকে বলে দাও তিনি যেন লোকের ইমামতি করেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি হাফ্সাকে বললাম তুমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বল, আবূ বকর (রাঃ) যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, কান্নার জন্য লোকে তাঁর আওয়ায শুনতে পাবে না, কাজেই লোকের ইমামতি করার জন্য উমার (রাঃ)-কে বলুন। হাফসা (রাঃ) উহা করলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উত্তরে বললেন, তোমরা অবশ্যই ইউসুফ (আ)-এর সঙ্গিনী নারীদের মত। আবূ বাকরকেই বলে দাও তিনি যেন লোকের ইমামতি করেন। (এই উত্তর শুনে) হাফসা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি তোমার নিকট হতে কোন মঙ্গল লাভ করিনি। (সহীহ, বুখারী ৬৭৯) উবায়দুল্লাহ ইবনু আদী ইবনু খিয়ার (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকের (সাহাবীগণের) মধ্যে বিরাজমান ছিলেন। এমন সময় একজন লোক তাঁর খিদমতে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর সাথে চুপে চুপে কথা বললেন। সে ব্যক্তি চুপে চুপে কি যে বললেন তা আমরা জানতে পারলাম না। ইতিমধ্যে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু উচ্চঃস্বরে আলাপ করতে শুরু করলেন, তখন আমরা জানতে পারলাম যে উক্ত ব্যক্তি মুনাফিকদের মধ্য হতে জনৈক মুনাফিককে কতল করার অনুমতি প্রার্থনা করছেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটু জোরে কথা বলতে শুরু করলেন এবং আগন্তুককে প্রশ্ন করলেন সে মুনাফিক ব্যক্তিটি কি এই কথার সাক্ষ্য দেয়নি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর [প্রেরিত] রসূল ? সে ব্যক্তি বললেন, হ্যাঁ কিন্তু তার শাহাদত বিশ্বাসযোগ্য নয়। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন সে কি নামায আদায় করে না ? আগন্তুক বললেন, হ্যাঁ, তবে তার নামায নির্ভরযোগ্য নয়। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরাই সে লোক, যাদের (হত্যা করা) হতে আল্লাহ্ আমাকে বিরত রেখেছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আতা ইবনু ইয়াসার (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে পূজা মূর্তি বানাইও না। সে সম্প্রদায়ের উপর আল্লাহর ক্ষোভ প্রবল হয়েছে, যে সম্প্রদায় তাদের নবীগণের কবরকে মসজিদ বা সিজদার জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, তবে এই হাদীসের অর্থে আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে।) মাহমুদ ইবনু রাবী আনসারী (রাঃ) উতবান ইবনু মালিক (রাঃ) আপন সম্প্রদায়ের লোকদের ইমামতি করতেন, তিনি ছিলেন অন্ধ। তিনি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আরজ করলেন আমাকে অনেক সময় আন্ধকার, বৃষ্টি ও স্রোতের সম্মুখীন হতে হয়, আর আমি হলাম দুর্বল দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন লোক, তাই হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার গৃহের কোন স্থানে নামায আদায় করুন, আমি উহাকে নামাযের স্থান নির্ধারণ করব। তাঁর আবেদন রক্ষার্থে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে পদার্পণ করলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কোন স্থানে নামায আদায় করা তুমি পছন্দ কর ? তিনি ইশারায় রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি নির্দিষ্ট স্থান তাঁর গৃহ হতে দেখালেন অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থানে নামায আদায় করলেন। (বুখারী ৬৬৭, মুসলিম ৩৩) আব্বাস ইবনু তামীম (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে চিৎ হয়ে শায়িত দেখেছিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পা অপর পায়ের উপর রেখেছিলেন। (বুখারী ৪৭৫, মুসলিম ২১০০) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলেন, উমার ইবনু খাত্তাব ও উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) দু’জনে অনুরূপ করতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ অনেক আলিম রয়েছেন, কারী আছেন কম (অর্থাৎ আমল ও জ্ঞান ছাড়া কেবল কুরআন পাঠকারীদের সংখ্যা অতি অল্প)। এই যুগে কুরআনের আদেশ নিষেধ প্রভৃতি হিফাযত করা হয়, শব্দের দিকে মনোযোগ দেয়া হয় কম, ভিক্ষুকের সংখ্যা কম, দাতার সংখ্যা বেশি, নামায আদায় করেন দীর্ঘ আর খুতবা পাঠ করেন ছোট। সে যুগে প্রবৃত্তি বা খাহেশাতের তাঁবেদারীর পূর্বে তাঁরা আমল শুরু করে দেন। অদূর ভবিষ্যতে মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, সে যুগে বিজ্ঞ উলামা হবেন অল্প। কারিগণ হবেন অনেক, কুরআনের শব্দসমূহের হিফাযত করা হবে, অপরদিকে আহকামে কুরআনকে বরবাদ করা হবে (আমলের প্রতি নযর দেবে কম)। ভিক্ষুক হবে অনেক, দাতার সংখ্যা হবে অল্প। খুতবা লম্বা প্রদান করবে আর নামায আদায় করবে মুখতাসার, আমলের নয়, খাহেশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা হবে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, বান্দার আমল হতে সর্বপ্রথম যে আমলেন প্রতি নযর করা হবে, তা হচ্ছে নামায, অতঃপর তার নামায যদি কবুল করা হয়, তবে অন্যান্য আমলের প্রতি নযর দেয়া হবে। আর যদি নামায তার গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে তার আমলের কোন কিছুর প্রতি নযর দেয়া হবে না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন, ইমাম আবূ দাঊদ আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন, আবূ দাঊদ ৮৬৪, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন সহীহ ও যঈফ সুনানে আবূ দাঊদ) আয়েশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম্-এর কাছে সে আমল ছিল সর্বাধিক প্রিয়, যে আমল উহার সম্পাদনকারী সর্বদা সম্পাদন করে থাকে। (সহীহ, বুখারী ৬৪৬২) সা’দ ইবনু আবি ওয়াককাস (রাঃ) দু’জন লোক পরস্পর ভাই ভাই, (ঘটনাক্রমে) তাঁদের মধ্যে এক ভাই মৃত্যুবরণ করেন অপর ভাইয়ের চল্লিশ রাত্রি পূর্বে। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে প্রথম (মৃত্যুবরণকারী) ভাইয়ের ফযীলত আলোচিত হয়। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দ্বিতীয় ভাই কি মুসলমান ছিলেন না ? (উপস্থিত) সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ (তিনিও মুসলমান ছিলেন), ইয়া রসূলুল্লাহ্! আর তিনি মন্দলোক ছিলেন না। (এটা শ্রবণ করার পর) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা জান না, তাঁর নামায তাকে কোন স্তরে পৌঁছিয়েছে। অবশ্য নামাযের দৃষ্টান্ত হল তোমাদের একজনের দ্বারে অবস্থিত গভীর, পরিপূর্ণ সুমিষ্ট পানির নহরের মত। উক্ত নহরে দৈনিক পাঁচবার যে অবগাহন করে এতে তোমার কি ধারণা, তার দেহে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে ? অবশ্য তোমরা জান না যে, তার নামায তাঁকে মর্যাদার কোন স্তরে নিয়ে পৌঁছিয়েছে। (হাদীসে বর্ণিত ঘটনাটি -------- ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন। বুখারী ৫২৮, আর ইমাম মুসলিম, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ৬৬৭) মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, ‘আতা ইবনু ইয়াসার (র)-এর (অভ্যাস ছিল) মসজিদে ক্রয়-বিক্রয়কারী কেউ তাঁর কাছ দিয়ে যাতায়াত করলে সে ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞেস করতেন তোমার সাথে কি এবং তোমার উদ্দেশ্য কি ? যদি সে তার নিকট বলত যে, সে এটা বিক্রয় করতে চায়, তবে তিনি বলতেন, তুমি দুনিয়ার বাজারে গমন কর, কারণ এটি হল আখিরাতের বাজার। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর কাছে রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদের পার্শ্বে একটি চত্বর তৈরী করেছিলেন, যাকে বলা হত বুতায়হা তিনি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, যে ব্যক্তি অনর্থক কথা বলতে অথবা কবিতা আবৃত্তি করতে অথবা উচ্চঃস্বরে কথা বলতে চায়, সে যেন সেই চত্বরে চলে যায়। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【25】

নামাযের উৎসাহ প্রদান

তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাঃ) একজন নযদবাসী লোক এলোমেলো কেশে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলেন। আমরা তাঁর স্বরের গুঞ্জন শুনছিলাম। কিন্তু তিনি কি বলছিলেন তা বুঝা যাচ্ছিল না। আবশেষে তিনি নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খুব কাছে এলেন। তখন তিনি ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর প্রশ্নের উত্তরে) বললেন, দিন-রাতে পাঁচবার নামায। সে বলল, এটা ছাড়া আমার উপর আর কোন কিছু (নামায) আছে কি ? তিনি বললেন, না, অবশ্য তুমি যদি স্বেচ্ছায় (নফল) আদায় কর। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এবং রমযান মাসের রোযা। সে বলল, এটা ছাড়া আমার উপর (আর কোন রোযা) আছে কি ? তিনি বললেন, না, তুমি যদি স্বেচ্ছায় রাখ। তালহা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের উল্লেখ করেন। সে ব্যক্তি বলল, এটা ছাড়া আমার উপর আর কোন কিছু আছে কি ? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে যদি তুমি নফলরূপে দাও। তালহা (রাঃ) বলেন, অতঃপর সে ব্যক্তি এই বলতে বলতে ফিরে গেল কসম আল্লাহর আমি এর উপর বেশিও করব না এবং এটা হতে কমও করব না। তারপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই ব্যক্তি সফলকাম হল, যদি সে সত্য বলে থাকে। (বুখারী ১১৪২, মুসলিম ৭৭৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের একজন যখন ঘুমায়, তখন শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি গিট লাগায়। প্রতিটি গিঁটের স্থলে সে এই বলে মন্ত্রণা দেয় عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ (তোমার জন্য দীর্ঘ রাত্রি রয়েছে, তাই ঘুমাতে থাক।) যদি সে ব্যক্তি জাগ্রত হয় এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তবে একটি গিঁট খুলিয়া যায়, অতঃপর সে যদি ওযূ করে তবে আর একটি গিঁট খুলে যায়, তারপর সে যদি নামায আদায় করে আর একটি গিঁট খুলে যায়, ফলে সে প্রভাত করে উৎফুল্ল ও কলুষমুক্ত আত্মা নিয়ে। অন্যথায় সে প্রভাত করে কলুষিত আত্মা নিয়ে আলসতা সহকারে। (বুখারী ৪৬, মুসলিম ১১)