11. (কা‘বাগৃহের) হজ্জ পালন
হজ্জ্বের অপরিহার্যতা ও তার ফযীলত
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ইসলামের ভিত পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত আছে। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) বায়তুল্লাহর হজ্জ করা এবং (৫) মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করা।” আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে ভাষণ দানকালে বললেন, “হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর (বায়তুল্লাহর) হজ্জ ফরয করেছেন, অতএব তোমরা হজ্জ পালন কর।” একটি লোক বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! প্রতি বছর তা করতে হবে কি?’ তিনি নিরুত্তর থাকলেন এবং লোকটি শেষ পর্যন্ত তিনবার জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ। তাহলে (প্রতি বছরে) হজ্জ ফরয হয়ে যেত। আর তোমরা তা পালন করতে অক্ষম হতে।” অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা আমাকে (আমার অবস্থায়) ছেড়ে দাও, যতক্ষণ আমি তোমাদেরকে (তোমাদের স্ব স্ব অবস্থায়) ছেড়ে রাখব। কেননা, তোমাদের পূর্বেকার জাতিরা অতি মাত্রায় জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের পয়গম্বরদের বিরোধিতা করার দরুন ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন কিছু করার আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন করবে। আর যা করতে নিষেধ করব, তা থেকে বিরত থাকবে।” উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সর্বোত্তম কাজ কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান রাখা।” পুনরায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘অতঃপর কি?’ তিনি বললেন, “মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।” উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি হজ্জ পালন করল এবং (তাতে) কোন অশ্লীল কাজ করল না ও পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক ঐ দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।” উক্ত রাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “একটি উমরাহ পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত ঐ দুয়ের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপরাশির জন্য কাফফারা (মোচনকারী) হয়। আর ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।” আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে সর্বোত্তম কাজ মনে করি, তাহলে কি আমরা জিহাদ করব না?’ তিনি বললেন, “কিন্তু (মহিলাদের জন্য) সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।” উক্ত রাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ সর্বাধিক বেশী সংখ্যায় বান্দাকে দোযখমুক্ত করেন।” ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মাহে রমযানের উমরাহ একটি হজ্জের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ্জ করার সমতুল্য।” উক্ত রাবী (রাঃ) একজন মহিলা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর স্বীয় বান্দাদের উপর হজ্জের ফরয আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমতাবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, তিনি বাহনের উপর চড়ে বসে থাকতে অক্ষম। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ পালন করব?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” লাক্বীত ইবনে আমের (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আমার পিতা এত বেশী বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি না হজ্জ করতে সক্ষম, না উমরা করতে সক্ষম, আর না সফর করতে পারবেন।’ তিনি বললেন, “তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ ও উমরা সম্পাদন কর।” সায়েব ইবনে য়্যাযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘বিদায় হজ্জে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাকে নিয়ে হজ্জ করা হয়েছে। আমি তখন সাত বছরের শিশু।’ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘রাওহা’ নামক স্থানে একটি যাত্রীদলের সাথে সাক্ষাৎকারে বললেন, “তোমরা কোন্ জাতি?” তারা বলল, ‘আমরা মুসলমান।’ তারা বলল, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রসূল।” এই সময়ে একজন মহিলা একটি শিশুকে তুলে ধরে বলল, ‘এর কি হজ্জ হবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর (ওকে হজ্জ করানো বাবত) তোমারও সওয়াব হবে।” আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনে চড়ে হজ্জ সমাধা করেন। আর ঐ বাহনটিই ছিল প্রয়োজনীয় যাবতীয় সাজ-সরঞ্জামের বাহক। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, উকায, মাজিন্নাহ ও যুল-মাজায নামক স্থানগুলিতে (ইসলাম আসার পূর্বে) জাহেলী যুগের বাজার ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরাম হজ্জের মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্যমূলক কাজ-কর্মকে পাপ মনে করলেন। তার জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হল, যার অর্থ, “(হজ্জের সময়) তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ কামনায় (ব্যবসা-বাণিজ্যে) কোন দোষ নেই।”