19. বিবিধ চিত্তকর্ষী হাদিসসমূহ

【1】

দাজ্জাল ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী সম্পর্কে

নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তাতে তিনি একবার নিম্ন স্বরে এবং একবার উচ্চ স্বরে বাক ভঙ্গিমা অবলম্বন করলেন। শেষ পর্যন্ত আমরা (প্রভাবিত হয়ে) মনে মনে ভাবলাম যে, সে যেন সামনের এই খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে। তারপর আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি আমাদের উদ্বিগ্নতা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমাদের কি হয়েছে?’’ আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আজ সকালে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে এমন নিম্ন ও উচ্চ কণ্ঠে বর্ণনা করলেন, যার ফলে আমরা ধারণা করে বসি যে, সে যেন খেজুর বাগানের মধ্যেই রয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের ব্যাপারে অন্যান্য জিনিসকে আমার আরও বেশী ভয় হয়। আমি তোমাদের মাঝে থাকাকালে দাজ্জাল যদি আত্মপ্রকাশ করে, তাহলে আমি স্বয়ং তোমাদের পক্ষ থেকে তার প্রতিরোধ করব। আর যদি তার আত্মপ্রকাশ হয় এবং আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে (তোমরা) প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ আত্মরক্ষা করবে। আর আল্লাহ স্বয়ং প্রতিটি মুসলিমের জন্য (আমার) প্রতিনিধিত্ব করবেন। সে দাজ্জাল নব-যুবক হবে, তার মাথার কেশরাশি হবে খুব বেশি কোঁচকানো। তার একটি চোখ (আঙ্গুরের ন্যায়) ফোলা থাকবে। যেন সে আব্দুল উয্-যা ইবনে ক্বাত্বানের মত দেখতে হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তাকে পাবে, সে যেন তার সামনে সূরা কাহ্-ফের শুরুর (দশ পর্যন্ত) আয়াতগুলি পড়ে। সে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে আবির্ভূত হবে। আর তার ডাইনে-বামে (এদিকে ওদিকে) ফিতনা ছড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা। (ঐ সময়) তোমরা অবিচল থাকবে।’’ আমরা বললাম, ‘পৃথিবীতে তার অবস্থান কতদিন থাকবে?’ তিনি বললেন, ‘‘চল্লিশ দিন পর্যন্ত। আর তার একটি দিন এক বছরের সমান দীর্ঘ হবে। একটি দিন হবে এক মাসের সমান লম্বা। একটা দিন এক সপ্তাহের সমান হবে এবং বাকি দিনগুলি প্রায় তোমাদের দিনগুলির সম পরিমাণ হবে।’’ আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যেদিনটি এক বছরের সমান লম্বা হবে, তাতে আমাদের একদিনের (পাঁচ ওয়াক্তের) নামাযই কি যথেষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা (দিন রাতের ২৪ ঘণ্টা হিসাবে) অনুমান ক’রে নামায আদায় করতে থাকবে।’’ আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ভূপৃষ্ঠে তার দ্রুত গতির অবস্থা কিরূপ হবে? তিনি বললেন, তীব্র বায়ু তাড়িত মেঘের ন্যায় (দ্রুত বেগে ভ্রমণ করে অশান্তি ও বিপর্যয় ছড়াবে।) সুতরাং সে কিছু লোকের নিকট আসবে ও তাদেরকে তার দিকে আহ্বান জানাবে এবং তারা তার প্রতি ঈমান আনবে ও তার আদেশ পালন করবে। সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ করবে, আকাশ আদেশক্রমে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। আর যমিনকে (গাছ-পালা) উদ্গত করার নির্দেশ দেবে। যমিন তার নির্দেশক্রমে তাই উদ্গত করবে। সুতরাং (সে সব গাছ-পালা ভক্ষণ ক’রে) সন্ধ্যায় তাদের গবাদি পশুদের কুঁজ (ও ঝুঁটি) অধিক উঁচু হবে ও তাদের পালানে অধিক পরিমাণে দুধ ভরে থাকবে। উদর পূর্ণ আহার জনিত তাদের পেট টান হয়ে থাকবে। অতঃপর দাজ্জাল (অন্য) লোকের নিকট যাবে ও তার দিকে (আসার জন্য) তাদেরকে আহ্বান জানাবে। তারা কিন্তু তার ডাকে সাড়া দেবে না। ফলে সে তাদের নিকট থেকে ফিরে যাবে। সে সময় তারা চরম দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে পড়বে ও সর্বস্বান্ত হবে। তারপর সে কোন প্রাচীন ধ্বংসস্তূপের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় সেটাকে সম্বোধন ক’রে বলবে, ‘তুই তোর গচ্ছিত রত্নভাণ্ডার বের ক’রে দে।’ তখন সেখানকার গুপ্ত রত্নভাণ্ডার মৌমাছিদের নিজ রাণী মৌমাছির অনুসরণ করার মতো (মাটি থেকে বেরিয়ে) তার পিছন ধরবে। তারপর এক পূর্ণ যুবককে ডেকে তাকে অস্ত্রাঘাতে দ্বিখণ্ডিত ক’রে তীর নিক্ষেপের লক্ষ্যমাত্রার দূরত্বে নিক্ষেপ ক’রে দেবে। তারপর তাকে ডাক দেবে। আর সে উজ্জ্বল সহাস্যবদনে তার দিকে (অক্ষত শরীরে) এগিয়ে আসবে। দাজ্জাল এরূপ কর্ম-কাণ্ডে মগ্ন থাকবে। ইত্যবসরে মহান আল্লাহ তা‘আলা মসীহ বিন মারয়্যাম আলাইহিস সালাম-কে পৃথিবীতে পাঠাবেন। তিনি দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত শ্বেত মিনারের নিকট অর্স ও জাফরান মিশ্রিত রঙের দুই বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় দু’জন ফিরিশ্-তার ডানাতে হাত রেখে অবতরণ করবেন। তিনি যখন মাথা নীচু করবেন, তখন মাথা থেকে বিন্দু বিন্দু পানি ঝরবে এবং যখন মাথা উঁচু করবেন, তখনও মতির আকারে তা গড়িয়ে পড়বে। যে কাফেরই তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের নাগালে আসবে, সে সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারাবে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস তাঁর দৃষ্টি যত দূর যাবে, তত দূর পৌঁছবে। অতঃপর তিনি দাজ্জালের সন্ধান চালাবেন। শেষ পর্যন্ত (জেরুজালেমের) ‘লুদ’ প্রবেশ দ্বারে তাকে ধরে ফেলবেন এবং অনতিবিলম্বে তাকে হত্যা ক’রে দেবেন। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এমন এক জনগোষ্ঠীর নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের চক্রান্ত ও ফিৎনা থেকে মুক্ত রেখেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন (বিপদমুক্ত করবেন) এবং জান্নাতে তাদের মর্যাদাসমূহ সম্পর্কে তাদেরকে জানাবেন। এসব কাজে তিনি ব্যস্ত থাকবেন এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট অহী পাঠাবেন যে, ‘‘আমি আমার কিছু বান্দার আবির্ভাব ঘটিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে কারো লড়ার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার প্রিয় বান্দাদের নিয়ে ‘ত্বূর’ পর্বতে আশ্রয় নাও।’’ আল্লাহ তা‘আলা য়্যা’জুজ-মা’জুজ জাতিকে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেক উচ্চস্থান থেকে দ্রুত বেগে ছুটে যাবে। তাদের প্রথম দলটি ত্বাবারী হ্রদ পার হবার সময় তার সম্পূর্ণ পানি এমনভাবে পান ক’রে ফেলবে যে, তাদের সর্বশেষ দলটি সেখান দিয়ে পার হবার সময় বলবে, এখানে এক সময় পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাঁদের কাছে একটি গরুর মাথা, বর্তমানে তোমাদের একশ’টি স্বর্ণমুদ্রা অপেক্ষা অধিক উত্তম হবে। সুতরাং আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর সঙ্গীগণ আল্লাহর কাছে দুআ করবেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের (য়্যা’জূজ-মা’জূজ জাতির) ঘাড়সমূহে এক প্রকার কীট সৃষ্টি ক’রে দেবেন। যার শিকারে পরিণত হয়ে তারা এক সঙ্গে সবাই মারা যাবে। তারপর আল্লাহ তা'আলার নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথীগণ নিচে নেমে আসবেন। তারপর (এমন অবস্থা ঘটবে যে,) সেই অঞ্চল তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধে ভরে থাকবে; এক বিঘত জায়গাও তা থেকে খালি থাকবে না। সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর কাছে দুআ করবেন। ফলে তিনি বুখতী উটের ঘাড়ের ন্যায় বৃহদকায় এক প্রকার পাখি পাঠাবেন। তারা উক্ত লাশগুলিকে তুলে নিয়ে গিয়ে আল্লাহ যেখানে চাইবেন সেখানে নিয়ে গিয়ে নিক্ষেপ করবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এমন প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যে, কোন ঘর ও শিবির বাদ পড়বে না। সুতরাং সমস্ত জমিন ধুয়ে মসৃণ পাথরের ন্যায় অথবা স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। তারপর জমিনকে আদেশ করা হবে যে, ‘তুমি আপন ফল-মূল যথারীতি উৎপন্ন কর ও নিজ বরকত পুনরায় ফিরিয়ে আন।’ সুতরাং (বরকতের এত ছড়াছড়ি হবে যে,) একদল লোক একটি মাত্র ডালিম ফল ভক্ষণ করে পরিতৃপ্ত হবে এবং তার খোসার নীচে ছায়া অবলম্বন করবে। পশুর দুধে এত প্রাচুর্য প্রদান করা হবে যে, একটি মাত্র দুগ্ধবতী উটনী একটি সম্প্রদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে। একটি দুগ্ধবতী গাভী একটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে। আর একটি দুগ্ধবতী ছাগী কয়েকটি পরিবারের জন্য যথেষ্ট হবে। তারা ঐ অবস্থায় থাকবে, এমন সময় আল্লাহ তা‘আলা এক প্রকার পবিত্র বাতাস পাঠাবেন, যা তাদের বগলের নীচে দিয়ে প্রবাহিত হবে। ফলে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জীবন হরণ করবে। তারপর স্রেফ দুর্বৃত্ত ও অসৎ মানুষজন বেঁচে থাকবে, যারা এই ধরার বুকে গাধার ন্যায় প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর সামনে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে। সুতরাং এদের উপরেই সংঘটিত হবে মহাপ্রলয় (কিয়ামত)।’’ রিবঈ ইবনে হিরাশ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ)-এর সঙ্গে আমি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ মাসঊদ তাঁকে বললেন, ‘দাজ্জাল সম্পর্কে যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে শুনেছেন, তা আমাকে বর্ণনা করুন।’ তিনি বলতে লাগলেন, ‘দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। তার সঙ্গে থাকবে পানি ও আগুন। যাকে লোক পানি মনে করবে, বাস্তবে তা দগ্ধ-কারী আগুন এবং লোকে যাকে আগুন বলে মনে করবে, তা বাস্তবে সুমিষ্ট শীতল পানি হবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাকে (দেখতে) পাবে, সে যেন তাতে পতিত হয় যাকে আগুন মনে করে। কেননা, তা বাস্তবে মিষ্ট উত্তম পানি।’ আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেন, এ হাদিসটি আমিও (স্বয়ং) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আ’স (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারয়্যাম -কে পাঠাবেন। তিনি তাকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করবেন। অতঃপর লোকেরা (দীর্ঘ) সাত বছর ব্যাপী (এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে) কাল উদযাপন করবে, যাতে দুজনের পারস্পরিক কোন প্রকার শত্রুতা থাকবে না। তারপর মহান আল্লাহ শাম দেশ থেকে শীতল বায়ু চালু করবেন যা জমিনের বুকে এমন কোন ব্যক্তিকে জীবিত ছাড়বে না, যার অন্তরে অণু পরিমাণ মঙ্গল অথবা ঈমান থাকবে। এমনকি তোমাদের কেউ যদি পর্বত-গর্ভে প্রবেশ করে, তাহলে সেখানেও প্রবেশ করে তার জীবন নাশ করবে। (তারপর ভূপৃষ্ঠে) দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোক থেকে যাবে, যারা কাম-প্রবৃত্তি চরিতার্থের ব্যাপারে ক্ষিপ্ত গতিমান পাখির মত হবে, একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও রক্তপাত করার ক্ষেত্রে হিংস্র পশুর ন্যায় হবে। যারা কখনো ভাল কাজের আদেশ করবে না এবং কোন মন্দ কাজে বাধা দেবে না। শয়তান তাদের সামনে মানবরূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করবে ও বলবে, ‘তোমরা আমার আহবানে সাড়া দেবে না?’ তারা বলবে, ‘আমাদেরকে আপনি কি আদেশ করছেন?’ সে তখন তাদেরকে মূর্তি পূজার আদেশ দেবে। আর এসব কর্মকাণ্ডে তাদের জীবিকা সচ্ছল হবে এবং জীবন সুখের হবে। অতঃপর শিঙ্গায় (প্রলয় বীণায়) ফুঁৎকার দেওয়া হবে। যে ব্যক্তিই সে শব্দ শুনবে, সেই তার ঘাড়ের একদিক কাত ক’রে দেবে ও অপর দিক উঁচু ক’রে দেবে। সর্বাগ্রে এমন এক ব্যক্তি তা শুনতে পাবে, যে তার উটের (জন্য পানি রাখার) হওয লেপায় ব্যস্ত থাকবে। সে শিঙ্গার শব্দ শোনামাত্র অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাবে। তার সাথে সাথে তার আশে-পাশের লোকরাও অজ্ঞান হয়ে (ধরাশায়ী হয়ে) যাবে। অতঃপর আল্লাহ শিশিরের ন্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পাঠাবেন। যার ফলে পুনরায় মানবদেহ (উদ্ভিদের ন্যায়) গজিয়ে উঠবে। তারপর যখন দ্বিতীয়বার শিঙ্গা বাজানো হবে, তখন তারা উঠে দেখতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে, ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে এগিয়ে এসো।’ (অন্য দিকে ফিরিশতাদেরকে হুকুম করা হবে যে,) ‘তোমরা ওদেরকে থামাও। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তারপর বলা হবে, ‘ওদের মধ্য থেকে জাহান্নামে প্রেরিতব্য দল বের করে নাও।’ জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘কত থেকে কত?’ বলা হবে, ‘প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানববই জন।’ বস্তুতঃ এ দিনটি এত ভয়ংকর হবে যে, শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে এবং এ দিনেই (মহান আল্লাহ নিজ) পায়ের গোছা অনাবৃত করবেন।’’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মক্কা ও মদীনা ব্যতীত অন্য সব শহরেই দাজ্জাল প্রবেশ করবে। মক্কা ও মদীনার গিরিপথে ফিরিশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে উক্ত শহরদ্বয়ের প্রহরায় রত থাকবেন। দাজ্জাল (মদীনার নিকটস্থ) বালুময় লোনা জমিতে অবতরণ করবে। সে সময় মদীনা তিনবার কেঁপে উঠবে। মহান আল্লাহ সেখান থেকে প্রত্যেক কাফের ও মুনাফিককে বের ক’রে দেবেন।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আসফাহান (ইরানের একটি প্রসিদ্ধ শহরে)র সত্তর হাজার ইয়াহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে; তাদের কাঁধে থাকবে ত্বাইলেসী রুমাল।’’ উম্মে শারীক রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘অবশ্যই লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে ভীত হয়ে পালিয়ে গিয়ে পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করবে।’’ ইমরান ইবনে হুস্বাইন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আদমের জন্মলগ্ন থেকে নিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের (ফিতনা-ফ্যাসাদ) অপেক্ষা অন্য কোন বিষয় (বড় বিপজ্জনক) হবে না।’’ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দাজ্জালের আবির্ভাব হলে মু’মিনদের মধ্য থেকে একজন মু’মিন তার দিকে অগ্রসর হবে। তখন (পথিমধ্যে) দাজ্জালের সশস্ত্র প্রহরীদের সাথে তার দেখা হবে। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘কোন্ দিকে যাবার ইচ্ছা করছ?’ সে উত্তরে বলবে, ‘যে ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে, তার কাছে যেতে চাচ্ছি।’ তারা তাকে বলবে, ‘তুমি কি আমাদের প্রভুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর না?’ সে উত্তর দেবে, ‘আমাদের প্রভু (আল্লাহ তো) গুপ্ত নন যে, (অন্য কাউকে প্রভু বানিয়ে মানতে লাগব)।’ (এরূপ শুনে) তারা বলবে, ‘একে হত্যা ক’রে দাও।’ তখন তারা নিজেদের মধ্যে একে অপরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রভু কি তোমাদেরকে নিষেধ করেননি যে, তোমরা তার বিনা অনুমতিতে কাউকে হত্যা করবে না?’ ফলে তারা ঐ মু’মিনকে ধরে দাজ্জালের কাছে নিয়ে যাবে। যখন মু’মিন দাজ্জালকে দেখতে পাবে, তখন সে (স্বতঃস্ফূর্তভাবে) বলে উঠবে, ‘হে লোক সকল! এই সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা করতেন।’ তখন দাজ্জাল তার জন্য আদেশ দেবে যে, ‘ওকে উপুড় করে শোয়ানো হোক।’ তারপর বলবে, ‘ওকে ধরে ওর মুখে-মাথায় প্রচন্ডভাবে আঘাত কর।’ সুতরাং তাকে মেরে মেরে তার পেট ও পিঠ চওড়া করে দেওয়া হবে। তখন সে (দাজ্জাল) প্রশ্ন করবে, ‘তুমি আমার প্রতি বিশ্বাস রাখ?’ সে উত্তর দেবে, ‘তুই তো মহা মিথ্যাবাদী মসীহ।’ সুতরাং তার সম্পর্কে আবার আদেশ দেওয়া হবে, ফলে তার মাথার সিঁথির উপর করাত রেখে তাকে দ্বিখন্ড ক’রে দেওয়া হবে; এমনকি তার পা-দুটোকে আলাদা ক’রে দেওয়া হবে। তারপর দাজ্জাল তার দেহ খন্ডদ্বয়ের মাঝখানে হাঁটতে থাকবে এবং বলবে, ‘উঠ।’ সুতরাং সে (মু’মিন) উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে! দাজ্জাল আবার তাকে প্রশ্ন করবে, ‘তুমি কি আমার প্রতি ঈমান আনছ?’ সে জবাব দেবে, ‘তোর সম্পর্কে তো আমার ধারণা আরও দৃঢ় হয়ে গেল।’ তারপর মু’মিন বলবে, ‘হে লোক সকল! আমার পরে ও অন্য কারো সাথে এরূপ (নির্মম) আচরণ করতে পারবে না।’ সুতরাং দাজ্জাল তাকে যবেহ করার মানসে ধরবে। কিন্তু আল্লাহ তার ঘাড় থেকে কণ্ঠাস্থি পর্যন্ত তামায় পরিণত ক’রে দেবেন। ফলে দাজ্জাল তাকে যবেহ করার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। তারপর তার হাত-পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তখন লোকে ধারণা করবে যে, সে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করল। কিন্তু (বাস্তবে) তাকে জান্নাতে নিক্ষেপ করা হবে।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘বিশ্বচরাচরের পালনকর্তার নিকট ঐ ব্যক্তিই সবার চেয়ে বড় শহীদ।’’ মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দাজ্জাল সম্পর্কে যত জিজ্ঞাসা করেছি, তার চেয়ে বেশি আর কেউ করেনি। তিনি আমাকে বললেন, ‘‘ও তোমার কি ক্ষতি করবে?’’ আমি বললাম, ‘লোকেরা বলে যে, তার সাথে রুটির পাহাড় ও পানির নহর থাকবে।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কাছে তা অতি সহজ।’’ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এমন কোন নবী নেই, যিনি নিজ উম্মতকে মহা-মিথ্যাবাদী কানা (দাজ্জাল) সম্পর্কে সতর্ক করেননি। কিন্তু (মনে রাখবে,) সে (এক চোখের) কানা হবে। আর নিশ্চয় তোমাদের মহামহিমান্বিত প্রতিপালক কানা নন। তার কপালে ‘কাফ-ফা-রা’ (কাফের) শব্দ লেখা থাকবে।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘শোন! তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে আমি কি এমন কথা বলব না, যা কোন নবীই তাঁর জাতিকে বলেননি? তা হল এই যে, সে হবে কানা। আর সে নিজের সাথে নিয়ে আসবে জান্নাত ও জাহান্নামের মত কিছু। যাকে সে জান্নাত বলবে, বাস্তবে সেটাই জাহান্নাম হবে।’’ ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের সামনে দাজ্জাল সংক্রান্ত আলোচনা ক’রে বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কানা নন। সাবধান! মসীহ দাজ্জালের ডান চোখ কানা এবং তার চোখটি যেন [গুচ্ছ থেকে] ভেসে ওঠা আঙ্গুর।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, ‘‘কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যে পর্যন্ত মুসলিমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করবে। এমনকি ইহুদী পাথর ও গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলে পাথর ও গাছ বলবে ‘হে মুসলিম! আমার পিছনে ইহুদী রয়েছে। এসো, ওকে হত্যা কর।’ কিন্তু গারক্বাদ গাছ [এরূপ বলবে] না। কেননা এটা ইহুদীদের গাছ।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! ততক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়া বিনাশ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন ব্যক্তি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে উক্ত কবরের উপর গড়াগড়ি দেবে আর বলবে, ‘হায়! হায়! যদি আমি এই কবরবাসীর স্থানে হতাম!’ এরূপ উক্তি সে দ্বীন রক্ষার মানসে বলবে না। বরং তা বলবে পার্থিব বালা-মুসীবতে অতিষ্ঠ হওয়ার কারণে।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘ততদিন পর্যন্ত মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে না, যতদিন পর্যন্ত ফুরাত নদী [তার গর্ভস্থ] একটি সোনার পাহাড় বের না করে দেবে; যা নিয়ে যুদ্ধ চলবে। তাতে নিরানববই শতাংশ মানুষ নিহত হবে! তাদের প্রত্যেকেই বলবে যে, ‘সম্ভবতঃ আমি বেঁচে যাব।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে ফুরাত নদী তার গর্ভস্থ স্বর্ণের খনি বের করে দেবে। সুতরাং সে সময় যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে যেন তা থেকে কিছুই গ্রহণ না করে।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মদীনার অবস্থা উত্তম থাকা সত্ত্বেও তার অধিবাসীরা মদীনা ত্যাগ করে চলে যাবে। [সে সময়] সেখানে কেবল বন্য হিংস্র পশু-পক্ষীতে ভরে যাবে। সব শেষে যাদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে, তারা মুযাইনাহ গোত্রীয় দু’জন রাখাল, যারা নিজেদের ছাগলের পাল হাঁকাতে হাঁকাতে মদীনা অভিমুখে নিয়ে যাবে। তারা মদীনাকে হিংস্র জীব-জন্তুতে ঠাসা অবস্থায় পাবে। তারপর যখন তারা [মদীনার উপকণ্ঠে অবস্থিত] ‘সানিয়্যাতুল্ অদা’ নামক স্থানে পৌঁছবে, তখন তারা মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যাবে।’’ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘শেষ যুগে তোমাদের একজন খলীফা হবে, যে দু’ হাতে করে ধন-সম্পদ দান করবে এবং গুনবেও না।’’ আবূ মুসা আশআরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘লোকদের উপর এমন একটি সময় অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ সোনার যাকাত নিয়ে ঘোরাঘুরি করবে; কিন্তু সে এমন কাউকে পাবে না যে, তার নিকট হতে তা গ্রহণ করবে। আর দেখা যাবে যে, পুরুষের সংখ্যা কম ও মহিলার সংখ্যা বেশী হওয়ার দরুন একটি পুরুষের দায়িত্বে চল্লিশজন মহিলা হবে, যারা তার আশ্রিতা হয়ে থাকবে।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘[প্রাচীনকালে] একটি লোক অন্য ব্যক্তির কাছ হতে কিছু জায়গা ক্রয় করল। ক্রেতা ঐ জায়গায় [প্রোথিত] একটি কলসী পেল, যাতে স্বর্ণ ছিল। জায়গার ক্রেতা বিক্রেতাকে বলল, ‘তোমার স্বর্ণ নিয়ে নাও। আমি তো তোমার জায়গা খরিদ করেছি, স্বর্ণ তো খরিদ করিনি।’ জায়গার বিক্রেতা বলল, ‘আমি তোমাকে জায়গা এবং তাতে যা কিছু আছে সবই বিক্রি করেছি।’ অতঃপর তারা উভয়েই এক ব্যক্তির নিকট বিচার প্রার্থী হল। বিচারক ব্যক্তি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের সন্তান আছে কি?’ তাদের একজন বলল, ‘আমার একটি ছেলে আছে।’ অপরজন বলল, ‘আমার একটি মেয়ে আছে।’ বিচারক বললেন, ‘তোমরা ছেলেটির সাথে মেয়েটির বিয়ে দিয়ে দাও এবং ঐ স্বর্ণ থেকে তাদের জন্য খরচ কর এবং দান কর।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘দু’জন মহিলার সাথে তাদের দু’টি ছেলে ছিল। একদা একটি নেকড়ে বাঘ এসে তাদের মধ্যে একজনের ছেলেকে নিয়ে গেল। একজন মহিলা তার সঙ্গিনীকে বলল, ‘বাঘে তোমার ছেলেকেই নিয়ে গেছে।’ অপরজন বলল, ‘তোমার ছেলেকেই বাঘে নিয়ে গেছে।’ সুতরাং তারা দাঊদ (‘আলাইহিস সালাম)-এর নিকট বিচারপ্রার্থিনী হল। তিনি [অবশিষ্ট ছেলেটি] বড় মহিলাটির ছেলে বলে ফায়সালা করে দিলেন। অতঃপর তারা দাঊদ (‘আলাইহিস সালাম)-এর পুত্র সুলায়মান (‘আলাইহিস সালাম)-এর নিকট বের হয়ে গিয়ে উভয়েই আনুপূর্বিক ঘটনাটি বর্ণনা করল। তখন তিনি বললেন, ‘আমাকে একটি চাকু দাও। আমি একে দু টুকরো করে দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেব।’ তখন ছোট মহিলাটি বলল, ‘আপনি এরূপ করবেন না। আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। ছেলেটি ওরই।’ তখন তিনি ছেলেটি ছোট মহিলার [নিশ্চিত জেনে] ফায়সালা দিলেন।’’ মিরদাস আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সৎ লোকেরা একের পর এক [ক্রমান্বয়ে] মৃত্যুবরণ করবে। আর অবশিষ্ট লোকেরা নিকৃষ্ট মানের যব অথবা খেজুরের মত পড়ে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা এদের প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করবেন না।’’ রিফাআহ ইবনে রাফে’ যুরাক্বী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিবরীল এসে বললেন, ‘বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদেরকে আপনাদের মাঝে কিরূপ গণ্য করেন?’ তিনি বললেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিমদের শ্রেণীভুক্ত গণ্য করি।’’ অথবা অনুরূপ কোন বাক্যই তিনি বললেন। [জিবরীল] বললেন, ‘বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ফিরিশতাগণও অনুরূপ [সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতাগণের শ্রেণীভুক্ত] ।’ ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যখন কোন জাতির উপর মহান আল্লাহ আযাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লোককে তা গ্রাস করে ফেলে। তারপর [বিচারের দিনে] তাদেরকে স্ব স্ব কৃতকর্মের ভিত্তিতে পুনরুত্থিত করা হবে।’’ জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, ‘একটি খেজুর গাছের গুঁড়ি [খুঁটি] ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ দানকালে দাঁড়িয়ে তাতে হেলান দিতেন। তারপর যখন [কাঠের] মিম্বর [তৈরি করে] রাখা হল, তখন আমরা দশ মাসের গাভিন উটনীর শব্দের ন্যায় গুঁড়িটির [কান্নার] শব্দ শুনতে পেলাম। পরিশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মিম্বর হতে] নেমে নিজ হাত তার উপর রাখলে সে শান্ত হল।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যখন জুমআর দিন এলো এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের উপর বসলেন, তখন খেজুরের যে গুঁড়ির পাশে তিনি খুতবা দিতেন, তা এমন চিল্লিয়ে কেঁদে উঠল যে, তা ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে পড়ল!’ অপর বর্ণনায় আছে, ‘শিশুর মত চিল্লিয়ে উঠল। সুতরাং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মিম্বর থেকে] নেমে তাকে ধরে নিজ বুকে জড়ালেন। তখন সে সেই শিশুর মত কাঁদতে লাগল, যে শিশুকে [আদর করে] চুপ করানো হয়, [তাকে চুপ করানো হল এবং] পরিশেষে সে প্রকৃতিস্থ হল।’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘এর কান্নার কারণ হচ্ছে এই যে, এ [কাছে থেকে] খুতবা শুনত [যা থেকে সে এখন বঞ্চিত হয়ে পড়েছে]।’’ আবূ সা’লাবাহ খুশানী জুরসূম ইবনে নাশের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ অনেক জিনিস ফরয করেছেন তা নষ্ট করো না, অনেক সীমা নির্ধারিত করেছেন তা লঙ্ঘন করো না, অনেক জিনিসকে হারাম করেছেন, তাতে লিপ্ত হয়ে তার [মর্যাদার পর্দা] ছিন্ন করো না। আর তোমাদের প্রতি দয়া করে---ভুল করে নয়---বহু জিনিসের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন, সে ব্যাপারে তোমরা অনুসন্ধান করো না।’’ আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে থেকে সাতটি যুদ্ধ করেছি, তাতে আমরা পঙ্গপাল খেয়েছি।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমরা তাঁর সাথে পঙ্গপাল খেয়েছি।’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিন একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।’’ উক্ত রাবী তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কিয়ামতের দিনে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে [দয়ার দৃষ্টিতে] তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য হবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [১] যে মরু প্রান্তরে অতিরিক্ত পানির মালিক, কিন্তু সে মুসাফিরকে তা থেকে পান করতে দেয় না। [২] যে আসরের পর অন্য লোকের নিকট সামগ্রী বিক্রয় করতে গিয়ে কসম খেয়ে এই বলে যে, আল্লাহর কসম! এটা আমি এত দিয়ে নিয়েছি। ফলে ক্রেতা তাকে বিশ্বাস করে অথচ সে তার বিপরীত [অর্থাৎ মিথ্যাবাদী]। আর [৩] যে কেবলমাত্র পার্থিব স্বার্থে রাষ্ট্রনেতার হাতে বায়আত করে। সুতরাং সে যদি তাকে পার্থিব সম্পদ প্রদান করে, তাহলে সে [তার বায়আত] পূর্ণ করে। আর যদি প্রদান না করে, তাহলে বায়আত পূর্ণ করে না।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘[কিয়ামতের পূর্বে] শিঙ্গায় দু’বার ফুঁৎকার দেওয়ার মধ্যবর্তী ব্যবধান হবে চল্লিশ।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আবূ হুরাইরা! চল্লিশ দিন?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ তারা প্রশ্ন করল, ‘তবে কি চল্লিশ বছর?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে কি চল্লিশ মাস?’ তিনি বললেন, ‘উঁহুঁ।’ ‘‘মেরুদণ্ডের নিম্নভাগের অস্থি ব্যতীত মানবদেহের সমস্ত হাড় পচে যাবে। তারপর উক্ত অস্থি থেকে মানুষকে পুনর্গঠিত করা হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যার ফলে শাক-সবজী গজিয়ে উঠার মত মানুষ গজিয়ে উঠবে।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মসজিদে] লোকদের নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে এক বেদুঈন এসে প্রশ্ন করল, ‘কিয়ামত কখন হবে?’ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্ণপাত না করে আলোচনায় রত থাকলেন। এতে কেউ কেউ বলল যে, ‘তার কথা তিনি শুনেছেন এবং তার কথা তিনি অপছন্দ করেছেন।’ কেউ কেউ বলল, ‘বরং তিনি শুনতে পাননি।’ অতঃপর তিনি যখন কথা শেষ করলেন, তখন বললেন, ‘‘কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়?’’ সে বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই যে, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’’ সে বলল, ‘কিভাবে আমানত বিনষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘অনুপযুক্ত লোকের প্রতি যখন নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘ইমামগণ তোমাদের নামায পড়ায়। সুতরাং তারা যদি নামায সঠিকভাবে পড়ায়, তাহলে তোমাদের নেকী অর্জিত হবে। আর যদি ভুল করে, তাহলে তোমাদের নেকী [যথারীতি] অর্জিত হবে এবং ভুলের খেসারত তাদের উপরেই বর্তাবে।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) [মহান আল্লাহ বলেছেন,] ‘‘তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদেরকে মানবজাতির কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে।’’ (সূরা আলে ইমরান ১১০ আয়াত) এর ব্যাখ্যায় তিনি [আবূ হুরাইরা] বলেছেন যে, ‘মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা, যারা তাদের গর্দানে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসে এবং পরিশেষে তারা ইসলামে প্রবেশ করে।’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্ল সেই সম্প্রদায়ের ব্যাপারে বিস্মিত হন, যারা শিকল পরিহিত অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান হল মসজিদ। আর সবচেয়ে ঘৃণ্য স্থান হল বাজার।’’ সালমান ফারেসী (রাঃ) - তিনি বলেন, ‘তুমি যদি পার, তাহলে সর্বপ্রথম বাজারে প্রবেশকারী হবে না এবং সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থানকারী হবে না। কারণ, বাজার শয়তানের আড্ডাস্থল; সেখানে সে আপন ঝাণ্ডা গাড়ে।’ আস্বেম আহওয়াল আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য দু‘আ করে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘আর তোমাকেও [আল্লাহ ক্ষমা করুন]।’’ আস্বেম বলেন, আমি আব্দুল্লাহকে প্রশ্ন করলাম, ‘আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আর তোমার জন্যও তো।’ অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ: ‘‘[হে নবী!] তুমি নিজের জন্য ও মু’মিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’’ আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের বাণীসমূহের মধ্যে যে বাণীসমূহ লোকেরা পেয়েছে তার মধ্যে একটি এই যে, যদি তুমি লজ্জা-শরম না কর, তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই কর।’’ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন [মানবিক অধিকারের বিষয়] সর্বপ্রথমে লোকদের মধ্যে যে বিচার করা হবে তা রক্ত সম্পর্কিত হবে।’’ আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘ফিরিশতাদেরকে জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে অগ্নিশিখা হতে। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই বস্তু থেকে, যা তোমাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে। [অর্থাৎ মাটি থেকে]।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র ছিল কুরআন।’ [মুসলিম, এটি একটি দীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ] উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’’ এ কথা শুনে আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তার মানে কি মরণকে অপছন্দ করা? আমরা তো সকলেই মরণকে অপছন্দ করি।’ তিনি বললেন, ‘‘ব্যাপারটি এরূপ নয়। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, [মৃত্যুর সময়] মু’মিনকে যখন আল্লাহর করুণা, তাঁর সন্তুষ্টি তথা জান্নাতের সুসংবাদ শুনানো হয়, তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভকেই পছন্দ করে, আর আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর কাফেরের [অন্তিমকালে] যখন তাকে আল্লাহর আযাব ও তাঁর অসন্তুষ্টির সংবাদ দেওয়া হয়, তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ অপছন্দ করে। আর আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।’’ মুমিন জননী সাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মসজিদে] ই’তিকাফ থাকা অবস্থায় তাঁর সাথে রাত্রি বেলায় দেখা করতে গেলাম। তাঁর সাথে কথাবার্তার পর ফিরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। সুতরাং তিনিও আমাকে [বাসায়] ফিরিয়ে দেবার জন্য আমার সাথে উঠে দাঁড়ালেন। [অতঃপর যখন আমরা মসজিদের দরজার কাছে এলাম] তখন আনসারদের দু’জন লোক (রাঃ) [সেদিক দিয়ে] চলে যাচ্ছিলেন। যখন তাঁরা উভয়েই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন, তখন দ্রুত বেগে চলতে লাগলেন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে বললেন, ‘‘ধীরে চল। এ হল সাফিয়্যাহ বিন্তে হুয়াই।’’ তাঁরা বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! ইয়া রাসূলুল্লাহ! [আপনার ব্যাপারেও কি আমরা কোন সন্দেহ করতে পারি?]’ তিনি [তাঁদেরকে] বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের দেহে রক্ত চলাচলের ন্যায় চলাফিরা করে। তাই আমার আশংকা হল যে, সম্ভবতঃ সে তোমাদের অন্তরে মন্দ---অথবা তিনি বললেন---কোন কিছু [সন্দেহ] প্রক্ষেপ করতে পারে।’’ আবূল ফায্ল আব্বাস বিন মুত্তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হুনাইন যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। আমি ও আবূ সুফয়ান ইবনে হারেস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাথে থাকতে লাগলাম। আমরা তাঁর নিকট থেকে পৃথক হলাম না। [সে সময়] রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সাদা খচ্চরের উপর সওয়ার ছিলেন। তারপর যখন মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হল এবং [প্রথমতঃ] মুসলমানরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে [রণভূমি ছেড়ে] চলে গেল, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় খচ্চরকে কাফেরদের দিকে নিয়ে যাবার জন্য পায়ের আঘাত হানলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খচ্চরের লাগাম ধরে ছিলাম। তাকে ধরে থামাচ্ছিলাম যাতে দ্রুত বেগে না চলে। অন্য দিকে আবূ সুফ্য়ান আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর [সওয়ারীর] পা-দান ধরে ছিল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘হে আব্বাস! বাবলা গাছ তলে ‘রিযওয়ান’ বায়‘আতকারীদেরকে ডাক দাও।’’ আব্বাস (রাঃ) উচ্চকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, সুতরাং আমি উচ্চ স্বরে হেঁকে বললাম, ‘বাবলা গাছ তলে বায়আতকারীরা কোথায়?’ আল্লাহর কসম! যখন তারা আমার কণ্ঠধ্বনি শুনতে পেল, তখন গাভী যেমন তার বাচ্চার শব্দ শুনে তার দিকে দ্রুত গতিতে ফিরে যায়, ঠিক তেমনি তারা দ্রুত গতিতে ফিরে এলো। তারা বলে উঠল, ‘আমরা হাজির আছি, আমরা হাজির আছি।’ তারপর আবার তাদের ও কাফেরদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলতে থাকল। সে সময় আনসারদেরকে সাধারণভাবে ডাক দেওয়া হল, ‘হে আনসারগণ! হে আনসারগণ!’ তারপর আহবান কেবল হারেস ইবনে খাযরাজ গোত্রের লোকদের মাঝে সীমিত হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খচ্চরের উপর থেকেই রণক্ষেত্রের দিকে তাকালেন। তিনি যেন সামরিক সংঘর্ষের কলাকৌশল ও বীরত্বের দৃশ্য গর্দান বাড়িয়ে অবলোকন করছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘যুদ্ধ তুঙ্গে উঠার ও সাংঘাতিক রূপ ধারণ করার এটাই সময়।’’ অতঃপর তিনি কিছু কাঁকর হাতে নিয়ে কাফেরদের মুখের দিকে নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের রবের শপথ! ওরা [কাফেররা] পরাজিত হয়ে গেছে।’’ আমিও দেখলাম যে, যুদ্ধ পূর্ণতা ও উত্তেজনার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আল্লাহর কসম! যখনি তিনি ঐ কাঁকরগুলি কাফেরদের দিকে নিক্ষেপ করলেন, তখনি আমি নিষ্পলক নেত্রে দেখতে থাকলাম যে, তাদের শক্তি ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারটা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ মু’মিনদেরকে সেই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন, যার নির্দেশ পয়গম্বরদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর।’ (সূরা মু’মিনূন ৫১ আয়াত) তিনি আরও বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি তোমরা শুধু তাঁরই উপাসনা করে থাক।’’ (সূরা বাক্বারাহ ১৭২ আয়াত) অতঃপর তিনি সেই লোকের কথা উল্লেখ করে বললেন, যে এলোমেলো চুলে, ধূলামলিন পায়ে সুদীর্ঘ সফরে থেকে আকাশ পানে দু’ হাত তুলে ‘ইয়া রব্ব্! ‘ইয়া রব্ব্!’ বলে দো‘আ করে। অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক-পরিচ্ছদ হারাম এবং হারাম বস্তু দিয়েই তার শরীর পুষ্ট হয়েছে। তবে তার দো‘আ কিভাবে কবুল করা হবে?’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের দিকে [দয়ার দৃষ্টিতে] তাকাবেনও না। অধিকন্তু তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি; [তারা হচ্ছে,] বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী রাজা এবং অহংকারী গরীব।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘[শামের] সাইহান ও জাইহান, [ইরাকের] ফুরাত এবং [মিসরের] নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [একদা] আমার হাত ধরে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা শনিবার জমিন সৃষ্টি করেছেন, রবিবার তার মধ্যে পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন। সোমবার সৃষ্টি করেছেন গাছ-পালা। মঙ্গলবার মন্দ বস্তু সৃষ্টি করেছেন। বুধবার আলো সৃষ্টি করেছেন। তাতে [জমিনে] জীবজন্তু ছড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার। আর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করার পর পরিশেষে জুমার দিন আসরের পর দিনের শেষভাগে আসর ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে [আদি পিতা] আদম (আঃ)--কে সৃষ্টি করেছেন।’’ আবূ সুলায়মান খালেদ ইবনে অলীদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘‘মু’তাহ যুদ্ধে আমার হাতে নয় খানা তরবারি ভেঙ্গেছে। কেবলমাত্র একটি ইয়ামানী ক্ষুদ্র তলোয়ার আমার হাতে অবশিষ্ট ছিল।’’ আমর ইবনে ‘আস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ‘‘যখন কোন বিচারক [বিচার করার সময়] চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে বিচার করবে এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাবে, তখন তার দু’টি নেকী হবে। আর যখন চেষ্টা সত্ত্বেও বিচারে ভুল করে ফেলবে, তখনও তার একটি নেকী হবে।’’ আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জ্বর জাহান্নামের তীব্র উত্তাপের অংশ বিশেষ। অতএব তোমরা তা পানি দ্বারা ঠাণ্ডা কর।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তি যদি মারা যায়, আর তার [মানত] রোযা বাকি থাকে, তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ থেকে [ঐ মানতের] রোযা পূরণ করবে।’’ আওফ ইবনে মালিক ইবনে তুফাইল হতে বর্ণিত, আয়েশা (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) যে [নিজ বাড়ি] বিক্রয় বা দান করেছেন, সে সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেছেন যে, ‘হয় [খালাজান] আয়েশা [অবাধে দান-খয়রাত করা হতে] অবশ্যই বিরত থাকুন, নচেৎ তাঁর উপর [আর্থিক] অবরোধ প্রয়োগ করবই।’ আয়েশা (রাঃ) এই বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সত্যিই কি সে এ কথা বলেছে?’ লোকেরা বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে আমি আল্লাহর নামে মানত করলাম যে, এখন থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে কখনোও কথা বলব না।’ তারপর যখন বাক্যালাপ ত্যাগ দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর আয়েশার নিকট [এ ব্যাপারে] সুপারিশ করালেন। আয়েশা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি ইবনে যুবাইরের সম্পর্কে কোন সুপারিশ গ্রহণ করব না, আর আপন মানত ভঙ্গও করব না।’ বস্তুতঃ যখন ব্যাপারটা ইবনে যুবাইরের উপর অতীব দীর্ঘ হয়ে পড়ল, তখন তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আসওয়াদ ইবনে আব্দে ইয়াগুস সাহাবীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং তাঁদেরকে বললেন, ‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি যে, তোমরা [আমার স্নেহময়ী খালা] আয়েশার কাছে আমাকে নিয়ে চল। কেননা, আমার সাথে বাক্যালাপ বন্ধ রাখার মানতে অটল থাকা তাঁর জন্য আদৌ বৈধ নয়।’ সুতরাং মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়ে ইবনে যুবাইর (রাঃ) -কে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত ভিতরে প্রবেশ করার জন্য আয়েশার নিকট অনুমতিও চাইলেন এবং বললেন, ‘আসসালামু আলাইকি অরাহমাতুল্লাহি অবারাকা-তুহ! আমরা কি ভিতরে আসতে পারি?’ আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ এসো।’ বললেন, ‘আমরা সকলেই কি?’ আয়েশা (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, সকলেই প্রবেশ কর।’ কিন্তু তিনি জানতেন না যে, ওই দু’জনের সঙ্গে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও উপস্থিত আছেন। সুতরাং এঁরা যখন ভিতরে ঢুকলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর পর্দার ভিতরে চলে গেলেন এবং [খালা] আয়েশা (রাঃ) কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহর শপথ দিতে লাগলেন। এ দিকে পর্দার বাইরে থেকে মিসওয়ার ও আব্দুর রহমান উভয়েই আয়েশাকে কসম দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে ও তাঁর ওজর গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন এবং বললেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাক্যালাপ বন্ধ রাখতে নিষেধ করেছেন---যে সম্বন্ধে আপনি অবহিত। আর কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশী কথাবার্তা বন্ধ রাখে।’ সুতরাং যখন তাঁরা আয়েশা (রাঃ) র সামনে উপদেশ ও সম্পর্ক ছিন্ন করা যে গুনাহ---তা বারবার বলতে লাগলেন, তখন তিনিও উপদেশ আরম্ভ করলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমি তো মানত মেনেছি। আর মানতের ব্যাপারটা বড় শক্ত।’ কিন্তু তাঁরা তাঁকে অব্যাহত-ভাবে বুঝাতে থাকলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি (রাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সাথে কথা বললেন এবং স্বীয় মানত ভঙ্গ করার কাফফারা স্বরূপ চল্লিশটি গোলাম মুক্ত করলেন। তারপর থেকে তিনি যখনই উক্ত মানতের কথা স্মরণ করতেন, তখনই এত বেশী কাঁদতেন যে, চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত। উক্ববাহ ইবনে আমের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [একবার] উহুদের শহীদদের [কবরস্থানের] দিকে বের হলেন এবং যেন জীবিত ও মৃত ব্যক্তিদেরকে বিদায় জানাবার উদ্দেশ্যে আট বছর পর তাঁদের উপর জানাজা পড়লেন [অর্থাৎ তাঁদের জন্য দো‘আ করলেন]। তারপর মিম্বরে চড়ে বললেন, ‘‘আমি পূর্বে গমনকারী তোমাদের জন্য সু-ব্যবস্থাপক এবং সাক্ষীও। তোমাদের প্রতিশ্রুত স্থান হওযে [কাউসার]। আমি অবশ্যই ওটাকে আমার এই স্থান থেকে দেখতে পাচ্ছি। শোনো! তোমাদের ব্যাপারে আমার এ আশংকা নেই যে, তোমরা শির্ক করবে। তবে তোমাদের জন্য আমার আশংকা এই যে, তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে আপোসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’’ [রাবী বলেন,] ‘এটাই আমার শেষ দৃষ্টি ছিল যা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি নিবদ্ধ করেছিলাম [অর্থাৎ এরপর তিনি দেহত্যাগ করেন]।’ আবূ যায়েদ আম্‌র ইবনে আখত্বাব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়লেন, অতঃপর মিম্বরে চড়ে ভাষণ দিলেন। শেষ পর্যন্ত যোহরের সময় হয়ে গেল। সুতরাং তিনি নীচে নামলেন ও নামায পড়লেন। তারপর আবার মিম্বরে চাপলেন [ও ভাষণ দানে প্রবৃত্ত হলেন] শেষ পর্যন্ত আসরের সময় হয়ে গেল। তিনি পুনরায় নীচে অবতরণ করলেন ও নামায পড়লেন। অতঃপর তিনি আবার মিম্বরে উঠলেন এবং খুতবা পরিবেশনে ব্রতী হলেন, শেষ পর্যন্ত সূর্য অস্ত গেল। সুতরাং অতীতে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে সে সমস্ত বিষয়গুলি তিনি আমাদেরকে জানালেন। অতএব আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বড় জ্ঞানী, যিনি এসব কথাগুলি সবার চাইতে বেশি মনে রেখেছেন।’ আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে আল্লাহর আনুগত্য করবে, সে যেন তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি এরূপ মানত করে যে, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করবে, সে যেন তাঁর অবাধ্যতা না করে।’’ উম্মে শারীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) টিকটিকি মারতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ‘‘এ ইব্‌রাহীম (আঃ)-এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দিয়েছিল।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই টিকটিকি হত্যা করে ফেলে, তার জন্য এত এত নেকী হয়, আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে মেরে ফেলে, তার জন্য প্রথম ব্যক্তি অপেক্ষা কম এত এত নেকী হয়। আর যদি তৃতীয় আঘাতে তাকে হত্যা করে, তাহলে তার জন্য [অপেক্ষাকৃত কম] এত এত নেকী হয়।’’ অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই টিকটিকি হত্যা করে, তার জন্য একশত নেকী, দ্বিতীয় আঘাতে তার চাইতে কম [নেকী] এবং তৃতীয় আঘাতে তার চাইতে কম [নেকী] হয়।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘একটি লোক বলল, ‘[আজ রাতে] আমি অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং সে আপন সাদকার বস্তু নিয়ে বের হল এবং [অজান্তে] এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিল। লোকে সকালে উঠে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক চোরের হাতে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সাদকাকারী বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই যাবতীয় প্রশংসা! [আজ রাতে] অবশ্যই আবার সাদকা করব।’ সুতরাং সে নিজ সাদকা নিয়ে বের হল এবং [অজান্তে] এক বেশ্যার হাতে তা দিয়ে দিল। সকাল বেলায় লোকে বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ রাতে এক বেশ্যাকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ সে তা শুনে আবার বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই প্রশংসা যে, বেশ্যাকে সাদকা করা হল। আজ রাতে পুনরায় অবশ্যই সাদকাহ করব।’ সুতরাং তার সাদকা নিয়ে বের হয়ে গেল এবং [অজান্তে] এক ধনী ব্যক্তির হাতে সাদকা দিল। সকাল বেলায় লোকেরা আবার বলাবলি করতে লাগল যে, ‘আজ এক ধনী ব্যক্তিকে সাদকা দেওয়া হয়েছে।’ লোকটি শুনে বলল, ‘হে আল্লাহ! তোমারই সমস্ত প্রশংসা যে, চোর, বেশ্যা তথা ধনী ব্যক্তিকে সাদকা করা হয়েছে।’ সুতরাং [নবী অথবা স্বপ্নযোগে] তাকে বলা হল যে, ‘[তোমার সাদকা ব্যর্থ যায়নি; বরং] তোমার যে সাদকা চোরের হাতে পড়েছে তার দরুন হয়তো চোর তার চৌর্যবৃত্তি ত্যাগ করে দেবে। বেশ্যা হয়তো তার দরুন তার বেশ্যাবৃত্তি ত্যাগ করবে। আর ধনী; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে এবং সে তার আল্লাহ প্রদত্ত ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে ব্যয় করবে।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক দাওয়াতে ছিলাম। তাঁকে সামনের পায়ের একটি রান তুলে দেওয়া হল। তিনি এই রান বড় পছন্দ করতেন। তা থেকে তিনি [দাঁতে কেটে] খেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আমি হব সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান, কি কারণে? কিয়ামতের দিন পূর্বাপর সমগ্র মানবজাতি একই ময়দানে সমবেত হবে। [সে ময়দানটি এমন হবে যে,] সেখানে দর্শক তাদেরকে দেখতে পাবে এবং আহ্বানকারী [নিজ আহবান] তাদেরকে শুনাতে পারবে। সূর্য একেবারে কাছে এসে যাবে। মানুষ এতই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিপতিত হবে যে, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতাই তাদের থাকবে না। তারা বলবে, ‘দেখ, তোমাদের সবার কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, তোমাদের কী বিপদ এসে পৌঁছেছে! এমন কোন ব্যক্তির খোঁজ কর, যিনি পরওয়ারদেগারের কাছে সুপারিশ করতে পারেন।’ লোকেরা বলবে, ‘চল আদমের কাছে যাই।’ সে মতে তারা আদমের কাছে এসে বলবে, ‘আপনি মানব জাতির পিতা, আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাতে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং ফুঁক দিয়ে তাঁর ‘রূহ’ আপনার মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন। তাঁর নির্দেশে ফিরিশতাগণ আপনাকে সিজদা করেছিলেন। আপনাকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী কষ্টের মধ্যে আছি? আমরা কী যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ আদম (আঃ) বলবেন, ‘আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তার নির্দেশ অমান্য করেছিলাম। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে যাও।’ সুতরাং তারা সকলে নূহ (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে নূহ! আপনি পৃথিবীর প্রতি প্রথম প্রেরিত রসূল। আল্লাহ আপনাকে শোকর-গুজার বান্দা হিসাবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি কি আপনার পালনকর্তার দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী কষ্টের মধ্যে আছি? আমরা কী যন্ত্রণা ভোগ করছি?’ নূহ (আঃ) বলবেন, আমার প্রতিপালক আজ ভীষণ ক্রুদ্ধ আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া আমার একটি দো‘আ ছিল, যার দ্বারা আমার জাতির উপর বদ্দুআ করেছি। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা ইব্রাহীমের কাছে যাও।’ সুতরাং তারা সবাই ইব্রাহীম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে ইব্রাহীম! আপনি আল্লাহর নবী ও পৃথিবীবাসীদের মধ্য থেকে আপনিই তাঁর বন্ধু। আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী যন্ত্রণার মধ্যে আছি?’ তিনি তাদেরকে বলবেন, ‘আমার পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। তাছাড়া [দুনিয়াতে] আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি। সুতরাং আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা মূসার কাছে যাও।’ অতঃপর তারা মূসা (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে মূসা! আপনি আল্লাহর রসূল। আল্লাহ আপনাকে তাঁর রিসালাত দিয়ে এবং আপনার সাথে [সরাসরি] কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী দুর্ভোগ পোহাচ্ছি?’ তিনি বলবেন, ‘আজ আমার প্রতিপালক এত ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন, এমন ক্রুদ্ধ তিনি আর আগে কখনো হননি এবং আগামীতেও আর কোনদিন হবেন না। তাছাড়া আমি তো [পৃথিবীতে] একটি প্রাণ হত্যা করেছিলাম, যাকে হত্যা করার কোন নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা ঈসার কাছে যাও।’ অতঃপর তারা সবাই ঈসা (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, ‘হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রাসূল। আপনি আল্লাহর সেই কালেমা, যা তিনি মারয়্যামের প্রতি প্রক্ষেপ করেছিলেন। আপনি হচ্ছেন তাঁর রূহ, আপনি [জন্ম নেওয়ার পর] শিশুকালে দোলনায় শুয়েই মানুষের সাথে কথা বলেছিলেন। অতএব আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী যন্ত্রণার মধ্যে আছি?’ তিনি তাদেরকে বলবেন, ‘আমার পালনকর্তা আজ ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন, এমন রাগান্বিত তিনি আর কোনদিন হননি আর কখনো হবেনও না। [এখানে তিনি তাঁর কোন অপরাধ উল্লেখ করেননি।] আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তিত আছি! তোমরা বরং আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাও।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, সুতরাং তারা সবাই আমার কাছে এসে বলবে, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল। আপনি আখেরী নবী। আল্লাহ আপনার পূর্বাপর যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। অতএব আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রতিপালকের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী [ভয়াবহ] দুঃখ ও যন্ত্রণা ভোগ করছি।’ তখন আমি চলে যাব এবং আরশের নীচে আমার প্রতিপালকের জন্য সিজদাবনত হব। অতঃপর আল্লাহ তাঁর প্রশংসা ও গুণগানের জন্য আমার হৃদয়কে এমন উন্মুক্ত করে দেবেন, যেমন ইতোপূর্বে আর কারো জন্য করেননি। অতঃপর তিনি বলবেন, ‘হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও, চাও, তোমাকে দেওয়া হবে। সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ তখন আমি মাথা উঠিয়ে বলব, আমার উম্মতকে [রক্ষা করুন] হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মতকে [রক্ষা করুন] হে প্রতিপালক! আমার উম্মতকে [রক্ষা করুন] হে প্রতিপালক!’ এর প্রত্যুত্তরে [আল্লাহর পক্ষ থেকে] বলা হবে, ‘হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদেরকে ডান দিকের দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাও। এই দরজা ছাড়া তারা অন্য সব দরজাতেও সকল মানুষের শরীক।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে, তাঁর কসম! জান্নাতের একটি দরজার প্রশস্ততা হচ্ছে মক্কা ও [বাহরাইনের] হাজারের মধ্যবর্তী দূরত্ব অথবা মক্কা ও [সিরিয়ার] বুসরার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান।’’ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ইব্রাহীম (আঃ) ইসমাঈলের মা [হাজার; যা বাংলায় প্রসিদ্ধ হাজেরা] ও তাঁর দুধের শিশু ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কা‘বা ঘরের নিকট এবং যমযমের উপরে একটি বড় গাছের তলে [বর্তমান] মসজিদের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় তাঁদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল জনমানব, না ছিল কোন পানি। সুতরাং সেখানেই তাদেরকে রেখে গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে গেলেন। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) ফিরে যেতে লাগলেন। তখন ইসমাঈলের মা তাঁর পিছু পিছু ছুটে এসে বললেন, ‘হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে অন্য কিছু?’ তিনি বারংবার এ কথা বলতে থাকলেন। কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে এর হুকুম দিয়েছেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ।’ উত্তর শুনে হাজেরা বললেন, ‘তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস ও বরবাদ করবেন না।’ অতঃপর হাজেরা ফিরে এলেন। ইব্রাহীম (আঃ) চলে গেলেন। পরিশেষে যখন তিনি [হাজূনের কাছে] সানিয়্যাহ নামক স্থানে এসে পৌঁছলেন, যেখানে স্ত্রী-পুত্র আর তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, তখন তিনি কা‘বা ঘরের দিকে মুখ করে দু’হাত তুলে এই দো‘আ করলেন, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার কিছু বংশধরকে ফল-ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট বসবাস করালাম; হে আমাদের প্রতিপালক! যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং তুমি কিছু লোকের অন্তরকে ওদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা তাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর; যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’’ (সূরা ইব্রাহীম ৩৭ আয়াত) [অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) চলে গেলেন।] ইসমাঈলের মা শিশুকে দুধ পান করাতেন আর নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। পরিশেষে ঐ মশকের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি নিজেও পিপাসিত হলেন এবং [ঐ কারণে বুকের দুধ শুকিয়ে যাওয়ায়] তাঁর শিশুপুত্রটিও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখলেন, [পিপাসায়] শিশু মাটির উপর ছটফট্ করছে। শিশু পুত্রের [এ করুণ অবস্থার] দিকে তাকানো তার পক্ষে সহ্য হচ্ছিল না। তিনি সরে পড়লেন এবং তাঁর অবস্থান ক্ষেত্রের নিকটতম পর্বত হিসাবে ‘স্বাফা’কে পেলেন। তিনি তার উপর উঠে দাঁড়িয়ে উপত্যকার দিকে মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলেন, কাউকে দেখা যায় কি না। কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন স্বাফা পর্বত থেকে নেমে আসলেন। অতঃপর যখন তিনি উপত্যকায় পৌঁছলেন, তখন আপন পিরানের [ম্যাক্সির] নিচের দিক তুলে একজন শ্রান্তক্লান্ত মানুষের মত দৌড়ে উপত্যকা পার হলেন। অতঃপর ‘মারওয়া’ পাহাড়ে এসে তার উপরে উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর চারিদিকে দৃষ্টিপাত করে কাউকে দেখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কাউকে দেখতে পেলেন না। [এইভাবে তিনি পাহাড়দ্বয়ের মাঝখানে] সাতবার [আসা-যাওয়া] করলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘এ কারণে [হজ্জের সময়] হাজীগণের এই পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার সায়ী বা দৌড়াদৌড়ি করতে হয়।’’ এভাবে শেষবার যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি নিজেকেই বললেন, ‘চুপ!’ অতঃপর তিনি কান খাড়া করে ঐ আওয়াজ শুনতে লাগলেন। আবারও সেই আওয়ায শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার আওয়াজ তো শুনতে পেলাম। এখন যদি তোমার কাছে সাহায্যের কিছু থাকে, তবে আমাকে সাহায্য কর।’ হঠাৎ তিনি যমযম যেখানে অবস্থিত সেখানে [জিব্রীল] ফিরিশতাকে দেখতে পেলেন। ফিরিশতা তাঁর পায়ের গোড়ালি দিয়ে অথবা নিজ ডানা দিয়ে আঘাত করলেন। ফলে [আঘাতের স্থান থেকে] পানি প্রকাশ পেল। হাজেরা এর চার পাশে নিজ হাত দ্বারা বাঁধ দিয়ে তাকে হওযের রূপদান করলেন এবং অঞ্জলি ভরে তার মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। হাজেরার ভরা শেষ হলেও পানি উথলে উঠতে থাকল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ইসমাঈলের মায়ের উপর করুণা বর্ষণ করুন। যদি তিনি যমযমকে [বাঁধ না দিয়ে ঐভাবে] ছেড়ে দিতেন। অথবা যদি তিনি অঞ্জলি দিয়ে মশক না ভরতেন, তবে যমযম [কূপ না হয়ে] একটি প্রবহমান ঝর্ণা হত।’’ বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর হাজেরা নিজে পানি পান করলেন এবং শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন। তখন ফেরেশতা তাঁকে বললেন, ‘ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই মহান আল্লাহর ঘর রয়েছে। এই শিশু তার পিতার সাথে মিলে এটি পুনর্নির্মাণ করবেন। আর আল্লাহ তাঁর খাস লোককে ধ্বংস করেন না।’ ঐ সময় বায়তুল্লাহ [আল্লাহর ঘরের পরিত্যক্ত স্থানটি] যমীন থেকে টিলার মত উঁচু হয়ে ছিল। স্রোতের পানি এলে তার ডান-বাম দিয়ে বয়ে যেত। হাজেরা এইভাবে দিন যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুরহুম গোত্রের কিছু লোক ‘কাদা’ নামক স্থানের পথ বেয়ে পার হয়ে যাচ্ছিল। তারা মক্কার নীচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল কতকগুলো পাখী চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, ‘নিশ্চয় এই পাখিগুলি পানির উপরই ঘুরছে। অথচ আমরা এ ময়দানে বহুকাল কাটিয়েছি। কিন্তু কখনো এখানে কোন পানি দেখিনি।’ অতঃপর তারা একজন বা দু’জন দূত সেখানে পাঠাল। তারা গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির খবর দিল। খবর পেয়ে সবাই সেদিকে এসে দেখল, ইসমাঈলের মা পানির নিকট বসে আছেন। তারা তাঁকে বলল, ‘আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দেবেন কি?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ। তবে এ পানির উপর তোমাদের কোন স্বত্বাধিকার থাকবে না।’ তারা বলল, ‘ঠিক আছে।’ ইবনে (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘এ ঘটনা ইসমাঈলের মায়ের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিল। যেহেতু তিনি তো সঙ্গী-সাথীই চাচ্ছিলেন। সুতরাং তারা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও খবর পাঠাল। তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের অনেক ঘর-বাড়ি হল। ইসমাঈলও বড় হলেন। তাদের নিকট থেকে [তাদের ভাষা] আরবী শিখলেন। বড় হলে তারা তাঁকে পছন্দ করল এবং তাঁর প্রতি মুগ্ধ হল। অতঃপর তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলে তারা তাদেরই এক মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহ দিলেন। এরপর ইসমাঈলের মা মৃত্যুবরণ করলেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনকে দেখার জন্য এখানে এলেন। কিন্তু এসে ইসমাঈলকে পেলেন না। পরে তাঁর স্ত্রীর নিকট তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। স্ত্রী বললেন, ‘তিনি আমাদের রুযীর সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন।’ এক বর্ণনা অনুযায়ী -‘আমাদের জন্য শিকার করতে গেছেন।’ আবার তিনি পুত্রবধূর কাছে তাঁদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বধূ বললেন, ‘আমরা অতিশয় দুর্দশা, দুরবস্থা, টানাটানি এবং ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছি।’ তিনি ইব্রাহীম (আঃ)-এর নিকট নানা অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁর পুত্রবধূকে বললেন, ‘তোমার স্বামী বাড়ি এলে তাঁকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলে নেয়।’ এই বলে তিনি চলে গেলেন। ইসমাঈল যখন বাড়ি ফিরে এলেন, তখন তিনি ইব্রাহীমের আগমন সম্পর্কে একটা কিছু ইঙ্গিত পেয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের নিকট কেউ কি এসেছিলেন?’ স্ত্রী বললেন, ‘হ্যাঁ, এই এই আকৃতির একজন বয়স্ক লোক এসেছিলেন। আপনার সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার খবর দিলাম। পুনরায় আমাকে আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তাঁকে জানালাম যে, আমরা খুবই দুঃখ-কষ্ট ও অভাবে আছি।’ ইসমাঈল বললেন, ‘তিনি তোমাকে কোন কিছু অসিয়ত করে গেছেন কি?’ স্ত্রী জানালেন, ‘হ্যাঁ, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আপনাকে তার সালাম পৌঁছাতে এবং আরও বলেছেন, আপনি যেন আপনার দরজার চৌকাঠ বদলে ফেলেন।’ ইসমাঈল (আঃ) বললেন, ‘তিনি ছিলেন আমার পিতা এবং তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, যেন তোমাকে আমি তালাক দিয়ে দিই। কাজেই তুমি তোমার বাপের বাড়ি চলে যাও।’ সুতরাং ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ‘জুরহুম’ গোত্রের অন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। অতঃপর যতদিন আল্লাহ চাইলেন ইব্রাহীম (আঃ) ততদিন এঁদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবার দেখতে এলেন। কিন্তু ইসমাঈল (আঃ) সেদিনও বাড়িতে ছিলেন না। তিনি পুত্রবধূর ঘরে প্রবেশ করলেন এবং ইসমাঈল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী জানালেন তিনি আমাদের খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমরা কেমন আছ?’ তিনি তাঁর নিকট তাঁদের জীবনযাত্রা ও সাংসারিক অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাইলেন? পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, ‘আমরা ভাল অবস্থায় এবং সচ্ছলতার মধ্যে আছি।’ এ বলে তিনি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইব্রাহীম (আঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের প্রধান খাদ্য কি?’ পুত্রবধূ উত্তরে বললেন, ‘গোশত।’ বললেন, ‘তোমাদের পানীয় কি?’ বধূ বললেন, ‘পানি।’ ইব্রাহীম (আঃ) দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে বরকত দাও।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, ‘‘ঐ সময় তাদের এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত না। যদি হত, তাহলে ইব্রাহীম (আঃ) সে ব্যাপারে তাঁদের জন্য দো‘আ করে যেতেন।’’ বর্ণনাকারী বলেন, মক্কার বাইরে কোন লোকই শুধু গোশত এবং পানি দ্বারা জীবন-যাপন করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশত ও পানি [সর্বদা] তার স্বাস্থ্যের অনুকূল হতে পারে না। আলাপ শেষে ইব্রাহীম (আঃ) পুত্রবধূকে বললেন, ‘তোমার স্বামীকে আমার সালাম বলবে এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ বহাল রাখে।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম (আঃ) এসে বললেন, ‘ইসমাঈল কোথায়?’ পুত্রবধূ বললেন, ‘তিনি শিকার করতে গেছেন।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘আপনি কি নামবেন না, কিছু পানাহার করবেন না।’ তিনি বললেন, ‘তোমাদের খাদ্য ও পানীয় কি?’ বধূ বললেন, ‘আমাদের খাদ্য গোশত এবং পানীয় পানি।’ তিনি দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে বরকত দাও।’’ আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘ইব্রাহীমের দো‘আর বরকত, [মক্কায় প্রকাশ পেয়েছে]।’’ ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, ‘তোমার স্বামী এলে তাকে সালাম বলে দিয়ো এবং আদেশ করো, সে যেন তার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখে।’ অতঃপর ইসমাঈল (আঃ) যখন বাড়ি এসে স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি?’ স্ত্রী বললেন, ‘হ্যাঁ, একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ এসেছিলেন। [অতঃপর স্ত্রী তাঁর প্রশংসা করলেন ও বললেন,] তারপর তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চাইলেন, আমি তখন তাঁকে আপনার খবর বললাম। অতঃপর তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে খবর দিলাম যে, আমরা ভালই আছি।’ স্বামী বললেন, ‘আর তিনি তোমাকে কোন অসিয়ত করেছেন কি?’ স্ত্রী বললেন, ‘তিনি আপনাকে সালাম বলেছেন এবং আপনার দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।’ ইসমাঈল (আঃ) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তিনি আমার আব্বা, আর তুমি হলে চৌকাঠ। তিনি নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি।’ অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুদিন তাঁদের থেকে দূরে থাকলেন। পরে আবারো তাঁদের নিকট এলেন। ইসমাঈল (আঃ) তখন যমযমের নিকটস্থ একটি বড় গাছের নীচে বসে নিজের তীর ছুলছিলেন। পিতাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর উভয়ে পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎকালীন যথাযথ আচরণ প্রদর্শন করলেন। তারপর ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, ‘হে ইসমাঈল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের হুকুম দিয়েছেন।’ ইসমাঈল (আঃ) বললেন, ‘আপনার প্রতিপালক যা আদেশ দিয়েছেন, তা সম্পাদন করে ফেলুন।’ ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, ‘তুমি আমার সহযোগিতা করবে কি?’ ইসমাঈল (আঃ) বললেন, ‘[হ্যাঁ, অবশ্যই] আমি আপনার সহযোগিতা করব।’ ইব্রাহীম (আঃ) পার্শ্ববর্তী জমিনের তুলনায় উঁচু একটি টিলার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘এখানে একটি ঘর বানাতে আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।’ অতঃপর ইব্রাহীম (আঃ) কা‘বা ঘরের ভিত উঠাতে লেগে গেলেন। পুত্র ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকলেন। আর তিনি দেওয়াল গাঁথতে লাগলেন। অতঃপর যখন দেওয়াল উঁচু হল, তখন ইসমাঈল এই পাথর [মাক্বামে ইব্রাহীম] নিয়ে এসে তাঁর সামনে রাখলেন। তিনি তার উপর খাড়া হয়ে পাথর গাঁথতে লাগলেন। আর ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর তুলে দিতে থাকলেন। সেই সময় উভয়েই এই দো‘আ করতে থাকলেন ‘হে আমাদের মহান প্রতিপালক! আমাদের নিকট থেকে এ কাজটুকু গ্রহণ কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।’ (সূরা বাক্বারাহ ১২৭ আয়াত) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইব্রাহীম ইসমাঈল ও তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল একটি মশক; তাতে পানি ছিল। ইসমাঈলের মা সেই পানি পান করতেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠত। পরিশেষে মক্কায় পৌঁছে ইব্রাহীম তাঁদেরকে বড় গাছের নিচে রেখে নিজ [অন্যান্য] পরিজনের নিকট ফিরে যেতে লাগলেন। ইসমাঈলের মা তাঁর পিছন ধরলেন। অতঃপর যখন তাঁরা কাদা’ নামক স্থানে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি তাঁর পিছন থেকে ডাক দিলেন, ‘হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার ভরসায় ছেড়ে যাচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর ভরসায়।’ [হাজেরা] বললেন, ‘আল্লাহকে নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’ তারপর তিনি ফিরে এলেন। তিনি সেই পানি পান করতে লাগলেন ও তাতেই তাঁর শিশুর জন্য দুধ জমে উঠতে লাগল। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি [মনে মনে] বললেন, ‘অন্যত্র গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘‘সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে চড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। অতএব [স্বাফা থেকে নেমে অন্যত্র হাঁটতে লাগলেন এবং] যখন উপত্যকায় এসে পৌঁছলেন, তখন ছুটতে লাগলেন। অতঃপর মারওয়াতে এসে পৌঁছলেন। এইভাবে তিনি কয়েক চক্র করলেন। তারপর [মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ সুতরাং তিনি গিয়ে দেখলেন, সে পূর্বের অবস্থায় আছে। সে যেন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছট্ফট্ করছে। তা দেখে তিনি অস্থির হয়ে উঠলেন। তিনি [মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে দেখি, যদি কারো সন্ধান পাই।’ সুতরাং তিনি গিয়ে স্বাফা পর্বতে চড়লেন। অতঃপর তিনি চারিদিকে নজর ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন, কেউ কোথাও আছে কি না? কিন্তু কেউ কোথাও আছে বলে তিনি অনুভব করলেন না। এইভাবে তিনি সাতবার [আসা-যাওয়া] পূর্ণ করলেন। তারপর [মনে মনে] বললেন, ‘গিয়ে দেখি আবার ছেলে কি করছে?’ এমন সময় এক [গায়বী] আওয়াজ শুনলেন। তিনি বললেন, ‘আপনার নিকট যদি কোন মঙ্গল থাকে, তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করুন।’ দেখলেন, তিনি জিব্রীল (আঃ)। তিনি তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এইভাবে আঘাত করলেন। আর অমনি পানির ঝর্ণাধারা বের হয়ে এলো। তা দেখে ইসমাঈলের মা বিস্ময়াবিষ্টা হলেন এবং অঞ্জলি ভরে মশকে ভরতে লাগলেন----।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী বাকী দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করলেন। সাঈদ ইবনে যায়েদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘‘ছত্রাক ‘মান্ন্’-এর অন্তর্ভুক্ত আর এর রস চক্ষুরোগ নিরাময়কারী।’’