20. ক্ষমাপ্রার্থনামূলক নির্দেশাবলী

【1】

ক্ষমা প্রার্থনা করার আদেশ ও তার মাহাত্ম্য

আগার্র মুযানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘আমার অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে নিমেষভর বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেহেতু আমি দিনে একশত বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাই।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে সত্তর বারেরও বেশি ইস্তিগফার [ক্ষমাপ্রার্থনা] ও তাওবাহ করে থাকি।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে [তোমাদের পরিবর্তে] এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহ তা'আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’ ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একই মজলিসে বসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর [এই ইস্তিগফারটি] পাঠ করা অবস্থায় একশো বার পর্যন্ত গুনতাম, ‘রাব্বিগ্ফির লী অতুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আন্তাত তাউওয়াবুর রাহীম।’ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর, আমার তওবা কবুল কর, নিশ্চয় তুমি অতিশয় তওবাহ কবূলকারী দয়াবান। [আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ গারীব] আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক সবসময় গুনাহ মাফ চাইতে থাকে [আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকে] আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকীর্ণতা অথবা কষ্টকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দেন, প্রতিটি দুশ্চিন্তা থেকে তাকে মুক্ত করেন এবং তিনি তাকে এমন সব উৎস থেকে রিযক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। [আবূ দাঊদ] (আমি [আলবানী) বলছি: কিন্তু হাদীসটির সনদে মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী রয়েছেন যেমনটি আমি ‘‘য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (৭০৬) আলোচনা করেছি। তিনি হচ্ছেন বর্ণনাকারী হাকাম ইবনু মুস‘য়াব মাজহূল (অপরিচিত) বর্ণনাকারী। তাকে আবূ হাতিম মাজহূল আখ্যা দিয়েছেন। ইবনু হিব্বানও তাকে দুর্বলদের অন্তর্ভুক্ত উল্লেখ করেছেন। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এ দো‘আ পড়বে, ‘আস্তাগ্‌ফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু অ আতূবু ইলাইহ্।’ অর্থাৎ, আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর। এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি। শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সায়্যিদুল ইস্তিগফার [শ্রেষ্ঠতম ক্ষমা প্রার্থনার দো‘আ] হল বান্দার এই বলা যে, ‘আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা খালাক্বতানী, অ আনা আব্দুকা অ আনা আলা আহদিকা অ অ’দিকা মাসতাত্বা’তু, আঊযুবিকা মিন শার্রি মা স্বানা‘তু, আবূউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা অ আবূউ বিযামবী ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়্যাগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্ত্।’ অর্থ- হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি তোমার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর যথাসাধ্য প্রতিষ্ঠিত আছি। আমি যা করেছি তার মন্দ থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার উপর তোমার যে সম্পদ রয়েছে তা আমি স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও আমি স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ মার্জনা করতে পারে না। যে ব্যক্তি দিনে [সকাল] বেলায় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এ দুআটি পড়বে অতঃপর সে সেই দিনে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে [সন্ধ্যায়] এ দুআটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে অতঃপর সে সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যাবে, তাহলে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযান্তে সালাম ফিরে তিনবার ইস্তিগফার করে এই দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লা-হুম্মা আন্তাস সালা-মু অমিন্কাস সালা-ম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল জালা-লি অল ইকরা-ম।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি শান্তি [সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র] এবং তোমার নিকট থেকেই শান্তি। তুমি বরকতময় হে মহিমময়, মহানুভব! এ হাদিসের অন্যতম বর্ণনাকারী ইমাম আওযায়ীকে প্রশ্ন করা হল, ইস্তিগফার কিভাবে হবে? তিনি বললেন, ‘বলবে, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ [আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।] আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর আগে এই দুআটি অধিকমাত্রায় পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ্।’ অর্থাৎ, আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর নিকট তওবাহ করছি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে ডাকবে ও আমার ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন; আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব; আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ পাপ নিয়ে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর; কিন্তু আমার সঙ্গে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে আমি তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে) ইবনে উমার (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [মহিলাদেরকে সম্বোধন করে] বললেন, ‘‘হে মহিলা সকল! তোমরা সাদকাহ-খয়রাত করতে থাক ও অধিকমাত্রায় ইস্তিগফার কর। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীরূপে দেখলাম।’’ একজন মহিলা নিবেদন করল, ‘আমাদের অধিকাংশ জাহান্নামী হওয়ার কারণ কী? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা অভিশাপ বেশি কর এবং নিজ স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর। বুদ্ধি ও ধর্মে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিচক্ষণ ব্যক্তির উপর তোমাদের চাইতে আর কাউকে বেশি প্রভাব খাটাতে দেখিনি।’’ মহিলাটি আবার নিবেদন করল, ‘বুদ্ধি ও ধর্মের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দু’জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্য সমতুল্য। আর [প্রসবোত্তর খুন ও মাসিক আসার] দিনগুলিতে মহিলা নামায পড়া বন্ধ রাখে।’’

【2】

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের জন্য জান্নাতের মধ্যে যা প্রস্তুত রেখেছেন

জাবের (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতের মধ্যে পানাহার করবে; কিন্তু পেশাব-পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝাড়বে না, পেশাবও করবে না। বরং তাদের ঐ খাবার ঢেকুর ও কস্তুরীবৎ সুগন্ধময় ঘাম [হয়ে দেহ থেকে বের হয়ে যাবে]। তাদের মধ্যে তাসবীহ ও তাকবীর পড়ার স্বয়ংক্রিয় শক্তি প্রক্ষিপ্ত হবে, যেমন শ্বাসক্রিয়ার শক্তি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে।’’ আবূ হুরাইরা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, ‘‘কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ (সূরা সাজদাহ ১৭ আয়াত, বুখারী-মুসলিম) উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতে প্রথম প্রবেশকারী দলটির আকৃতি পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত হবে। অতঃপর তাদের পরবর্তী দলটি আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় জ্যোতির্ময় হবে। তারা [জান্নাতে] পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, থুথু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের ঘাম হবে কস্তুরীর ন্যায় সুগন্ধময়। তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধ কাঠ। তাদের স্ত্রী হবে আয়তলোচনা হুরগণ। তারা সকলেই একটি মানব কাঠামো, আদি পিতা আদমের আকৃতিতে হবে [যাদের উচ্চতা হবে] ষাট হাত পর্যন্ত।’’ মুগীরা ইবনে শু‘বা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মুসা (আঃ) স্বীয় প্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জান্নাতীদের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতি কে হবে?’ আল্লাহ তা‘আলা উত্তর দিলেন, সে হবে এমন একটি লোক, যে সমস্ত জান্নাতিগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর [সর্বশেষে] আসবে। তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! আমি কিভাবে [কোথায়] প্রবেশ করব? অথচ সমস্ত লোক নিজ নিজ জায়গা দখল করেছে এবং নিজ নিজ অংশ নিয়ে ফেলেছে।’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যে, পৃথিবীর রাজাদের মধ্যে কোন রাজার মত তোমার রাজত্ব হবে?’ সে বলবে, ‘প্রভু! আমি এতেই সন্তুষ্ট।’ তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য তাই দেওয়া হল। আর ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য, ওর সমতুল্য [অর্থাৎ ওর চার গুণ রাজত্ব দেওয়া হল]।’ সে পঞ্চমবারে বলবে, ‘হে আমার প্রভু! আমি [ওতেই] সন্তুষ্ট।’ তখন আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার জন্য এটা এবং এর দশগুণ [রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হল]। এ ছাড়াও তোমার জন্য রইল সে সব বস্তু, যা তোমার অন্তর কামনা করবে এবং তোমার চক্ষু তৃপ্তি উপভোগ করবে।’ তখন সে বলবে, ‘আমি ওতেই সন্তুষ্ট, হে প্রভু!’ [মুসা (আঃ)] বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আর সর্বোচ্চ স্তরের জান্নাতি কারা হবে?’ আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘তারা হবে সেই সব বান্দা, যাদেরকে আমি চাই। আমি স্বহস্তে যাদের জন্য সম্মান-বৃক্ষ রোপণ করেছি এবং তার উপর সীল-মোহর অংকিত করে দিয়েছি [যাতে তারা ব্যতিরেকে অন্য কেউ তা দেখতে না পায়] । সুতরাং কোন চক্ষু তা দর্শন করেনি, কোন কর্ণ তা শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তা কল্পিতও হয়নি।’’ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘সর্বশেষে যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার সম্পর্কে অবশ্যই আমার জানা আছে। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে [বা বুকে ভর দিয়ে] চলে জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সুতরাং সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সে ফিরে এসে বলবে, ‘হে প্রভু! জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত তো ভরে গেছে। তাই সে আবার ফিরে এসে বলবে, ‘হে প্রভু! জান্নাত তো ভরতি দেখলাম।’ তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তোমার জন্য থাকল পৃথিবীর সমতুল্য এবং তার দশগুণ [পরিমাণ বিশাল জান্নাত]! অথবা তোমার জন্য পৃথিবীর দশগুণ [পরিমাণ বিশাল জান্নাত রইল]!’ তখন সে বলবে, ‘হে প্রভু! তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ? অথবা আমার সাথে হাসি-মজাক করছ অথচ তুমি বাদশাহ [হাসি-ঠাট্টা তোমাকে শোভা দেয় না]।’’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমনভাবে হাসতে দেখলাম যে, তাঁর চোয়ালের দাঁতগুলি প্রকাশিত হয়ে গেল। তিনি বললেন, ‘‘এ হল সর্বনিম্ন মানের জান্নাতি।’’ আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় জান্নাতে মু’মিনদের জন্য একটি শূন্যগর্ভ মোতির তাঁবু থাকবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। এর মধ্যে মু’মিনদের জন্য একাধিক স্ত্রী থাকবে। যাদের সকলের সাথে মু’মিন সহবাস করবে। কিন্তু তাদের কেউ কাউকে দেখতে পাবে না।’’ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী উৎকৃষ্ট, বিশেষভাবে প্রতিপালিত হালকা দেহের দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশো বছর চললেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।’’ উক্ত রাবী [আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘অবশ্যই জান্নাতিগণ তাদের উপরের বালাখানার অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জ্বল অস্তগামী তারকা গভীর দৃষ্টিতে দেখতে পাও। এটি হবে তাদের মর্যাদার ব্যবধানের জন্য।’’ [সাহাবীগণ] বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ তো নবীগণের স্থান; তাঁরা ছাড়া অন্যরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না।’ তিনি বললেন, ‘‘অবশ্যই, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! সেই লোকরাও [পৌঁছতে পারবে] যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে রসূলগণকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে।’’ আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতে ধনুক পরিমাণ স্থান [দুনিয়ার] যেসব বস্তুর উপর সূর্য উদিত কিংবা অস্তমিত হচ্ছে সেসব বস্তু চেয়েও উত্তম।’’ আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতিগণ প্রত্যেক শুক্রবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা তাদের চেহারায় ও কাপড়ে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা-সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, ‘আল্লাহর কসম! আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’ তারাও বলে উঠবে, ‘আল্লাহর শপথ! আমাদের যাবার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে!’’ সাহ্ল ইবনে সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতিগণ জান্নাতের বালাখানাগুলিকে এমন গভীরভাবে দেখবে, যেভাবে তোমরা আকাশের তারকা দেখে থাক।’’ উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম, যেখানে তিনি জান্নাত সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তা সমাপ্ত করলেন এবং আলোচনার শেষে বললেন, ‘‘জান্নাতে এমন নিয়ামত [সুখ-সামগ্রী] বিদ্যমান আছে যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের মনে তার ধারণার উদ্রেকও হয়নি. তারপর তিনি এই আয়াত পাঠ করলেন, যার অর্থ হল, ‘তারা শয্যাত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি তা হতে তারা দান করে। কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কি পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।’’ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, তোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবন; তোমরা আর কখনো মরবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুস্বাস্থ্য; তোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির যৌবন; তোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দ; তোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদা এই হবে যে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘তুমি কামনা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর [আমি অমুক জিনিস চাই, অমুক বস্তু চাই ইত্যাদি]।’ সুতরাং সে কামনা করবে আর কামনা করতেই থাকবে। তিনি বলবেন, ‘তুমি কামনা করলে কি?’ সে উত্তর দেবে, ‘হ্যাঁ।’ তিনি তাকে বলবেন, ‘তোমার জন্য সেই পরিমাণ রইল, যে পরিমাণ তুমি কামনা করেছ এবং তার সাথে সাথে তার সমতুল্য আরও কিছু রইল।’’ আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘মহান প্রভু জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবেন, ‘হে জান্নাতের অধিবাসীগণ!’ তারা উত্তরে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা হাযির আছি, যাবতীয় সুখ ও কল্যাণ তোমার হাতে আছে।’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট হয়েছ?’ তারা বলবে, ‘আমাদের কী হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছ, যা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি।’ তখন তিনি বলবেন, ‘এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি?’ তারা বলবে, ‘এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, ‘তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।’’ জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতের চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘শোন! নিশ্চয় তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে তেমনি স্পষ্ট দেখতে পাবে, যেমন স্পষ্ট ঐ চাঁদকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভিড়ের সম্মুখীন হবে না।’’ সুহাইব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, তখন মহান বরকতময় আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের জন্য আরও কিছু বেশি দিই?’ তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জ্বল করে দাওনি? আমাদেরকে তুমি জান্নাতে প্রবিষ্ট করনি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাওনি?’ অতঃপর আল্লাহ [হঠাৎ] পর্দা সরিয়ে দেবেন [এবং তারা তাঁর চেহারা দর্শন লাভ করবে]। সুতরাং জান্নাতের লব্ধ যাবতীয় সুখ-সামগ্রীর মধ্যে জান্নাতিদের নিকট তাদের প্রভুর দর্শন [দীদার]ই হবে সবচেয়ে বেশী প্রিয়।’’