5. নিদ্রার আদব

【1】

ঘুমানো, শোয়া, বসা, বৈঠক, সাথী এবং স্বপ্ন সংক্রান্ত আদব কায়দা - শয়নকালে যা বলতে হয়

বারা’ ইবনে ‘আযেব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন এবং এই দো‘আ পড়তেনঃ- ‘আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইকা অ অজ্জাহতু অজহিয়া ইলাইক, অফাউওয়াদ্বতু আমরী ইলাইক, অ আলজা’তু যাহরী ইলাইক, রাগ্‌বাতাঁঊ অরাহবাতান্ ইলাইক্, লা মাল্জাআ অলা মান্‌জা মিনকা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা অ নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসাল্ত্‌।’ অর্থ - হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণ তোমার প্রতি সমর্পণ করেছি, আমার মুখমন্ডল তোমার প্রতি ফিরিয়েছি, আমার সকল কর্মের দায়িত্ব তোমাকে সোপর্দ করেছি, আমার পিঠকে তোমার দিকে লাগিয়েছি (তোমার উপরেই সকল ভরসা রেখেছি), এসব কিছু তোমার সওয়াবের আশায় ও তোমার আযাবের ভয়ে করেছি। তোমার নিকট ছাড়া তোমার আযাব থেকে বাঁচতে কোন আশ্রয়স্থল নেই। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার উপর এবং তুমি যে নবী প্রেরণ করেছ তার উপর ঈমান এনেছি। (বুখারী এই শব্দমালায়, আদব অধ্যায়) উক্ত রাবী তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি যখন তোমার বিছানায় (ঘুমাবার জন্য) আসবে, তখন তুমি নামাযের ওযূর মত ওযূ কর। অতঃপর ডান পার্শ্বে শুয়ে (পূর্বোক্ত দুআটি) দো‘আ পাঠ কর....।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী ঐ দো‘আটি উল্লেখ করলেন। আর এ বর্ণনায় আছে যে, ‘‘ওই দো‘আটিকেই সবশেষে পাঠ কর।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকআত নামায পড়তেন। যখন ফজর উদয় হত, তখন তিনি দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায পড়তেন, তারপর তাঁর ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন; শেষ পর্যন্ত মুআয্‌যিন এসে তাঁকে (জামাআতের সময় হওয়ার) খবর জানাত।’ হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন তিনি গালের নীচে হাত রেখে এই দো‘আ পড়তেনঃ ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু অ আহয়্যা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি। আর যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহয়্যা-না বা’দা মা আমা-তানা অ ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থাৎ সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে মৃত্যু (নিদ্রা) দেওয়ার পর জীবিত করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনর্জীবন। য়্যা‘ঈশ ইবনে ত্বিখফাহ্ গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা বলেন, একদা আমি মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় একটি লোক আমাকে পা দিয়ে নড়িয়ে বলল, ‘‘এ ধরনের শোয়াকে আল্লাহ অপছন্দ করেন।’’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকিয়ে দেখলাম তো তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন মজলিসে বসে, যেখানে সে আল্লাহর যিকর করে না, (এর জন্য) আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর পরিতাপ ও কমি আসবে। আর যে ব্যক্তি এমন জায়গায় শয়ন করে, যেখানে সে আল্লাহর যিকির করে না, (এর জন্য) আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর পরিতাপ ও কমি আসবে।’’ (আবু দাঊদ, হাসান)

【2】

গুপ্তাঙ্গ খুলে যাওয়ার আশংকা না থাকলে একটি পায়ের উপর অন্য পা চাপিয়ে চিৎ হয়ে শোয়া বৈধ এবং দুই পা গুটিয়ে (বাবু হয়ে) বসা ও হাঁটু দু’টিকে বুকে লাগিয়ে কাপড় বা কোন কিছু দিয়ে পিঠের সাথে বেঁধে বসা বৈধ

আব্দুল্লাহ ইবনে য়্যাযীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে এমনভাবে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছেন যে, তিনি একটি পা অন্য পায়ের উপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। জাবের ইবনে সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামায সমাপ্ত করতেন তখন ভালোভাবে সূর্যোদয় না হওয়া অবধি নামায পড়ার জায়গাতেই দুই পা গুটিয়ে (বাবু হয়ে) বসে থাকতেন।’ (সহীহ হাদীস, এটি আবূ দাউদ প্রমুখ বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা করেছেন) ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা‘বা প্রাঙ্গনে বুকে হাঁটু লাগিয়ে হাত দিয়ে ধরে এভাবে বসে থাকতে দেখেছি।’ আর তিনি নিজের হাত দুখানা ধরে উক্ত (ইহতিবা) বসার ধরন বর্ণনা করলেন। ওটাকেই আরবীতে ‘কুরফুসা’ও বলা হয়। ক্বাইলা বিনতে মাখরামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুকে হাঁটু লাগিয়ে হাত দিয়ে দুটোকে জড়িয়ে উঁচু হয়ে বসে থাকতে দেখেছি। যখন তাকে বিনীতভাবে বসে থাকতে দেখলাম, তখন ভয়ে আমি কাঁপতে লাগলাম।’ শারীদ ইবনে সুয়াইদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আর আমি এভাবে অর্থাৎ বাঁম হাতটিকে পিঠের পিছনে রেখে হাতের চেটোতে ভর দিয়ে বসেছিলাম। তা দেখে তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি অভিশপ্ত (ইয়াহুদী)দের বসার মত বসছ?’’

【3】

মজলিস ও বসার সাথীর নানা আদব-কায়দা

ইবনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তি অন্য কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে যেন অবশ্যই না বসে। বরং তোমরা জায়গা প্রশস্ত করে ও নড়ে-সরে জায়গা করে বসো।’’ ইবনে উমারের জন্য মজলিস থেকে কেউ উঠে গেলে সেখানে তিনি বসতেন না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মজলিস থেকে কেউ উঠে গিয়ে আবার সেখানে ফিরে এলে সেই ঐ জায়গার বেশি হকদার।’’ জাবের ইবনে সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসতাম, তখন যেখানে মজলিস শেষ হত সেখানে বসে যেতাম।’ আবূ আব্দুল্লাহ সালমান ফারেসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমআর দিনে গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরের সুগন্ধি নিয়ে লাগায়। অতঃপর জুমআর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে প্রবেশ করে দু’জনের মধ্যে পৃথক করে না। তারপর তার ভাগ্যে যতটা লেখা হয়েছে, ততটা নামায আদায় করে, তারপর যখন ইমাম খুৎবা দেয় তখন সে চুপ থাকে, তাহলে তার জন্য এক জুমআহ থেকে অন্য জুমআহ পর্যন্ত কৃত পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’’ আমর ইবনে শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু স্বীয় পিতা থেকে তিনি স্বীয় দাদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে দু’জনের মধ্যে তাদের বিনা অনুমতিতে তফাৎ সৃষ্টি করবে। হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) এমন লোককে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন, যে লোক মাজলিশের মধ্যখানে গিয়ে বসে পড়ে। হাদীসটি আবূ দাউদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী আবূ মিজলায (রাহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এক মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফাহ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কাজটির উপর) অভিশাপ বর্ষণ করেছেন অথবা সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ দিয়ে অভিশাপ বর্ষণ করেন যে মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়ে। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে সভা সবচেয়ে বেশি প্রশস্ত সেটা সবচেয়ে উত্তম সভা।’’ আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশি হৈ-হল্লা হয়, অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে এই দো‘আ পড়ে, ‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক্।’’ (অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি।) তাহলে উক্ত মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবূ বার্যাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সভা থেকে উঠে চলে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন শেষের বেলায় এই দো‘আ পড়তেন ‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইক।’’ অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি। একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে দো‘আ পড়লেন অতীতে তো তা পড়তেন না।’ তিনি বললেন, ‘‘এই দো‘আটি মজলিসে (সংঘটিত ভুল-ত্রুটি)র কাফ্‌ফারাস্বরূপ।’’ (আবূ দাঊদ, আবূ আব্দুল্লাহ হাকেম আয়েশা রাযি্‌বয়াল্লাহ আনহা হতে তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ নামক গ্রন্থে এই হাদীসটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।) বনে উমার (রাঃ) তিনি বলেন, খুব কম মজলিসই এমন হতো, যেখান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ না পড়ে উঠতেন, (অর্থাৎ অধিকাংশ মজলিস থেকে উঠার আগে এই দো‘আ পড়তেন,) ‘‘আল্লা-হুম্মাক্বসিম লানা মিন খাশয়্যাতিকা মা তাহূলু বিহী বাইনানা অবাইনা মা‘আ-স্বীক, অমিন ত্বা-‘আতিকা মা তুবাল্লিগুনা বিহী জান্নাতাক, অমিনাল য়্যাক্বীনি মা তুহাউবিনু বিহী আলাইনা মাস্বা-ইবাদ দুন্য়্যা। আল্লাহুম্মা মাত্তি‘না বিআসমা-‘ইনা অ আবস্বা-রিনা অ ক্বুউওয়াতিনা মা আহয়্যাইতানা, অজ্‘আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না। অজ‘আল সা’রানা আলা মান যালামানা, অনস্বুরনা ‘আলা মান ‘আ-দা-না, অলা তাজ‘আল মুস্বীবাতানা ফী দ্বীনিনা। অলা তাজ‘আলিদ্দুন্য়্যা আকবারা হাম্মিনা অলা মাবলাগা ‘ইলমিনা, অলা তুসাল্লিত্ব ‘আলাইনা মাল লা য়্যারহামুনা।’’ অর্থাৎ আল্লাহ গো! আমাদের জন্য তোমার ভীতি বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের ও তোমার অবাধ্যাচরণের মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি কর। তোমার আনুগত্য বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছাও। আমাদের জন্য এমন একীন (প্রত্যয়) বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের উপর দুনিয়ার বিপদসমূহকে সহজ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কর্ণ, চক্ষু ও শক্তি দবারা যতদিন আমাদেরকে জীবিত রাখ, ততদিন আমাদেরকে উপকৃত কর এবং তা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখ। যারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের নিকট আমাদের প্রতিশোধ নাও। যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। আমাদের দ্বীনে আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করো না। দুনিয়াকে আমাদের বৃহত্তম চিন্তার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা করো না, আর যারা আমাদের উপর রহম করে না, তাদেরকে আমাদের উপর ক্ষমতাসীন করো না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে জনগোষ্ঠীই কোন সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকির না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। (অর্থাৎ যেন মৃত গাধার গোশ্ত ভক্ষণান্তে উঠে চলে যায়।) আর তাদের জন্য অনুতাপ হবে।’’ (আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে) [১] উক্ত রাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে কোন জনগোষ্ঠী কোন মজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকির না করে এবং তাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ না করে, তাদেরই নোকসান (দুর্ভোগ) হবে; আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তো তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং যদি চান তো তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। উক্ত রাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন বৈঠকে বসে তাতে আল্লাহর যিকির করল না, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ক্ষতি হবে। আর যে ব্যক্তি কোন শয্যায় শয়ন করে তাতে আল্লাহর যিকির করে না, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে তার ক্ষতি হবে।’’

【4】

স্বপ্ন ও তার আনুষঙ্গিক বিবরণ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘সুসংবাদ ছাড়া নবুঅতের কিছু বাকি থাকবে না।’’ লোকেরা প্রশ্ন করল, ‘সুসংবাদ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সুস্বপ্ন।’’ উক্ত রাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘(কিয়ামতের) নিকটবর্তী যুগে মু’মিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। আর মু’মিনের স্বপ্ন নবুঅতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।’’ (অর্থাৎ মু’মিন স্বপ্ন যোগে ভবিষ্যতের খবর জানতে পারে। যেমন, অহীর দ্বারা নবীদেরকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবহিত করা হত।) উক্ত রাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দর্শন করল, সে আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দর্শন করবে অথবা সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখল। কেননা, শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।’’ আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘ তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি এমন স্বপ্ন দর্শন করে যা তার কাছে প্রীতিকর, তখন তা নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। সুতরাং সে যেন তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে এবং সে তা (স্বপ্ন) ব্যক্ত করে।’’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘‘সে যেন তা তার প্রিয়জন ছাড়া অন্য কারো কাছে ব্যক্ত না করে। আর যখন তাছাড়া কোন অপ্রীতিকর স্বপ্ন দর্শন করে, তখন তা নিঃসন্দেহে শয়তানের পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। সুতরাং সে যেন তার অনিষ্ট থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং কাউকে তা ব্যক্ত না করে। কেননা, (তাহলে) তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’ আবূ কাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সুস্বপ্ন (অন্য এক বর্ণনায় আছে) সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং কুস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। অতএব যে অপ্রীতিকর কিছু দেখবে, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার হাল্কাভাবে থুতু মারে ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’ জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ তার অপছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখবে, তখন সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু মারে এবং শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পার্শ্বে সে শুয়ে থাকে, সে পার্শ্ব যেন বদল করে নেয়।’’ আবুল আসক্বা‘ ওয়াসিলাহ ইবনে আসক্বা‘ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে বড় মিথ্যারোপ হল সেই ব্যক্তির কাজ, যে অপরের বাপকে নিজ বাপ বলে দাবি করে অথবা তার চক্ষুকে তা দেখায় যা সে (বাস্তবে) দেখেনি। (অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার মিথ্যা দাবি করে।) অথবা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপ করে।’’