10. সূর্য গ্রহণের সলাত
সূর্য গ্রহণের সলাত।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ হল। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করেন। তিনি দীর্ঘ সময় কিয়াম করেন, অতঃপর দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘ করেন। অতঃপর পুনরায় (সালাতে) তিনি উঠে দাঁড়ান এবং দীর্ঘ কিয়াম করেন। অবশ্য তা প্রথম কিয়াম চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি রুকূ‘ করেন এবং এ রুকূ‘ও দীর্ঘ করেন। তবে তা প্রথম রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করেন এবং সাজদাহ্ও দীর্ঘক্ষণ করেন। অতঃপর তিনি প্রথম রাকা‘আতে যা করেছিলেন তার অনুরূপ দ্বিতীয় রাকা‘আতে করেন এবং যখন সূর্য প্রকাশিত হয় তখন সলাত শেষ করেন। অতঃপর তিনি লোকজনের উদ্দেশে খুত্বা দান করেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা তা দেখবে তখন তোমরা আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করবে। তাঁর মহত্ব ঘোষণা করবে এবং সলাত আদায় করবে ও সাদাকা প্রদান করবে। অতঃপর তিনি আরো বললেনঃ হে উম্মাতে মুহাম্মদী! আল্লাহ্র কসম, আল্লাহ্র কোন বান্দা যিনা করলে কিংবা কোন নারী যিনা করলে, আল্লাহ্র চেয়ে অধিক অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহ্র কসম, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে এবং বেশী করে কাঁদতে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /২ হাঃ ১০৪৪, মুসলিম ১০/১, হাঃ ৯০১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবৎকালে একবার সূর্যগ্রহণ হয়। তখন তিনি মাসজিদে গমন করেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকেরা তাঁর পিছনে সারিবদ্ধ হলো। তিনি তাক্বীর বললেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ কিরা‘আত পাঠ করলেন। অতঃপর তাক্বীর বললেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘তে থাকলেন। অতঃপর .............. বলে দাঁড়ালেন এবং সাজদাহ্য় না গিয়েই আবার দীর্ঘক্ষণ কিরা‘আত পাঠ করলেন। তবে তা প্রথম কিরা‘আতের চেয়ে অল্পস্থায়ী। অতঃপর তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন এবং দীর্ঘ রুকূ‘ করলেন, তবে তা প্রথম রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি বললেনঃ .............. অতঃপর সাজদাহ্য় গেলেন। অতঃপর তিনি পরবর্তী রাকা‘আতেও অনুরূপ করলেন এবং এভাবে চার সাজদাহ্’র সাথে চার রাক‘আত পূর্ণ করলেন। তাঁর সলাত শেষ করার পূর্বেই সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন এবং বললেনঃ সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন মাত্র। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে গ্রহণ হয় না। কাজেই যখনই তোমরা গ্রহণ হতে দেখবে, তখনই ভীত হয়ে সলাতের দিকে গমন করবে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /৪ হাঃ ১০৪৬, মুসলিম ১০/১ হাঃ ৯০১)
সূর্য গ্রহণের সলাতে ক্ববরের ‘আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনার দু‘আ।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হলো। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সালাতে) দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ সূরা পাঠ করলেন, অতঃপর রুকূ‘ করলেন, আর তা দীর্ঘ করলেন। অতঃপর রুকূ‘ হতে মাথা তুলেন এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করতে শুরু করলেন। পরে রুকূ‘ সমাপ্ত করে সাজদাহ্ করলেন। দ্বিতীয় রাকা‘আতেও এরূপ করলেন। অতঃপর বললেনঃ এ দু’টি (চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ) আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্যতম। তোমরা তা দেখলে গ্রহণ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সলাত আদায় করবে। আমি আমার এ স্থানে দাঁড়িয়ে, আমাকে যা ওয়া‘দা করা হয়েছে তা সবই দেখতে পেয়েছি। এমনকি যখন তোমরা আমাকে সামনে এগিয়ে যেতে দেখেছিলে তখন আমি দেখলাম যে, জান্নাতের একটি (আঙ্গুর) গুচ্ছ নেয়ার ইচ্ছে করছি এবং জাহান্নামে দেখতে পেলাম যে, তার একাংশ অন্য অংশকে ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছে। আর যখন তোমরা আমাকে পিছনে সরে আসতে দেখেছিলে আমি দেখলাম সেখানে আম্র ইব্নু লুহাইকে যে সায়িবাহ (এর অর্থ বিমুক্ত, পরিত্যক্ত, বাঁধনমুক্ত। জাহিলী যুগে দেব-দেবীর নামে উট ছেড়ে দেয়ার প্রথা ছিল। এসব উটের দুধ পান করা এবং তাকে বাহনরূপে ব্যবহার করা অবৈধ মনে করা হত।) প্রথা প্রবর্তন করেছিল। (বুখারী পর্ব ২১ : /১১ হাঃ ১২১২, মুসলিম ১০/ ২ হাঃ ৯০১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এক ইয়াহুদী মহিলা তাঁর নিকট কিছু জিজ্ঞেস করতে এলো। সে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে বলল, আল্লাহ্ তা‘আলা আপনাকে কবর আযাব হতে রক্ষা করুন। অতঃপর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেন, কবরে কি মানুষকে আযাব দেয়া হবে? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হতে আল্লাহ্র নিকট পানাহ চাই। পরে কোন এক সকালে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীতে আরোহণ করেন। তখন সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হয়। তিনি সূর্যোদয় ও দুপুরের মাঝামাঝি সময় ফিরে আসেন এবং কামরাগুলোর মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করেন। অতঃপর তিনি সলাতে দাঁড়ালেন এবং লোকেরা তাঁর পিছনে দাঁড়াল। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করেন পরে মাথা তুলে দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে এ কিয়াম পূর্বের কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে এ রুকূ‘ পূর্বের রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং সাজদাহ্য় গেলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ‘ করলেন। এ রুকূ‘ প্রথম রাক‘আতের রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার রুকূ‘ করলেন এবং তা প্রথম রাক‘আতের রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। পরে মাথা তুললেন এবং সাজদাহ্য় গেলেন। অতঃপর সলাত শেষ করলেন। আল্লাহ্র যা ইচ্ছে তিনি তা বললেন এবং কবর আযাব হতে পানাহ চাওয়ার জন্য উপস্থিত লোকদের নির্দেশ দেন। (বুখারী পর্ব ১৬ : /৭ হাঃ ১০৪৯-১০৫০, মুসলিম ১০/২, হাঃ ৯০৩)
সূর্য গ্রহণের সলাতে নাবী (স)-কে জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে যা দেখানো হয়।
আসমা (রাঃ) আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-র নিকট আসলাম, তিনি তখন সলাত রত ছিলেন। আমি বললাম, ‘মানুষের কী হয়েছে?’ তিনি আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন (সূর্য গ্রহণ লেগেছে)। তখন সকল লোক (সলাতুল কুসূফ এর জন্য) দাঁড়িয়ে রয়েছে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোন নিদর্শন ? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করলেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর আমি (সলাতে) দাঁড়িয়ে গেলাম। এমনকি (দীর্ঘতার কারণে) আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হল। তাই আমি মাথায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। পরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্র হামদ ও সানা পাঠ করলেন। অতঃপর বললেনঃ যা কিছু আমাকে ইতোপূর্বে দেখানো হয়নি, তা আমি আমার এ স্থানেই দেখতে পেয়েছি। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামও। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমার নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেন, ‘দাজ্জালের ন্যায় (কঠিন) পরীক্ষা অথবা তার কাছাকাছি বিপদ দিয়ে তোমাদেরকে কবরে পরীক্ষায় ফেলা হবে।’ ফাতিমাহ (রাঃ) বলেন, আসমা (রাঃ) مثل (অনুরূপ) শব্দ বলেছিলেন, না قريب (কাছাকাছি) শব্দ, তা ঠিক আমার স্মরণ নেই। (কবরের মধ্যে) বলা হবে, ‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি জান?’ তখন মু‘মিন ব্যক্তি বা মু‘কিন (বিশ্বাসী) ব্যক্তি [ফাতিমাহ (রাঃ) বলেন] আসমা (রাঃ) এর কোন্ শব্দটি বলেছিলেন আমি জানিনা], বলবে, ‘তিনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তিনি আল্লাহ্র রাসূল। আমাদের নিকট মু‘জিযা ও হিদায়াত নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তা গ্রহণ করেছিলাম এবং তাঁর ইত্তেবা করেছিলাম। তিনি মুহাম্মদ।’ তিনবার এরূপ বলবে। তখন তাকে বলা হবে, আরামে ঘুমিয়ে থাক, আমরা জানতে পারলাম যে, তুমি (দুনিয়ায়) তাঁর উপর বিশ্বাসী ছিলে। আর মুনাফিক অথবা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) ফাতিমাহ বলেন, আসমা কোন্টি বলেছিলেন, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না- বলবে, আমি কিছুই জানি না। মানুষকে (তাঁর সম্পর্কে) যা বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলেছি। (বুখারী পর্ব ৩ : /২৪ হাঃ ৮৬, মুসলিম ১০/২ হাঃ ৯০৫) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন সলাত আদায় করেন এবং তিনি সূরা ‘আল-বাকারাহ পাঠ করতে যত সময় লাগে সে পরিমাণ দীর্ঘ কিয়াম করেন। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ‘ করেন। অতঃপর মাথা তুলে পুনরায় দীর্ঘ কিয়াম করেন। তবে তা প্রথম কিয়ামের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করলেন। তবে তা প্রথম রুকূ‘র চেয়ে অস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করেন। আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ কিয়াম করলেন। তবে তা প্রথম কিয়ামাতের চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে তা পূর্বের রুকূ‘র চেয়ে অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি মাথা তুললেন এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কিয়াম করেন, তবে তা প্রথম কিয়াম অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। আবার তিনি দীর্ঘ রুকূ‘ করেন, তবে তা প্রথম রুকূ‘ অপেক্ষা অল্পস্থায়ী ছিল। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করেন এবং সলাত শেষ করেন। ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তারপর তিনি বললেনঃ নিঃসন্দেহে সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে এ দু’টির গ্রহণ হয় না। কাজেই যখন তোমরা গ্রহণ দেখবে তখনই আল্লাহ্কে স্মরণ করবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কী যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেনঃ আমিতো জান্নাত দেখেছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে, দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেনঃ তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহ্সান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচরণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তা হলে বলে ফেলে, তোমার হতে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না। (বুখারী পর্ব ১৬ : /৯ হাঃ ১০৫২, মুসলিম ১০/৩, হাঃ ৯০৭)
সূর্য গ্রহণের সলাতের জন্য আহ্বান হচ্ছেঃ আস্ সলাতু জামি‘আহ।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ হয় তখন ‘আস্-সালাতু জামিআতুন’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। নাবী তখন এক রাকা‘আতে দু’বার রুকূ‘ করেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় রাকা‘আতেও দু’বার রুকূ‘ করেন অতঃপর বসেন আর ততক্ষণে সূর্যগ্রহণ মুক্ত হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেছেন, এ সলাত ব্যতীত এত দীর্ঘ সাজদাহ্ আমি কখনও করিনি। (বুখারী পর্ব ১৬ : /৮ হাঃ ১০৫১, মুসলিম ১০/৫ হাঃ ৯১০) আবূ মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোকের মৃত্যুর কারণে কখনো সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তবে তা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। তাই তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হতে দেখবে, তখন দাঁড়িয়ে যাবে এবং সলাত আদায় করবে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /১ হাঃ ১০৪১, মুসলিম ১০/৫, হাঃ ৯১১) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হল, তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় উঠলেন এবং কিয়ামাত সংঘটিত হবার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মাসজিদে আসেন এবং এর পূর্বে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকূ‘ ও সাজদাহ্ সহকারে সলাত আদায় করলেন। আর তিনি বললেনঃ এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত বিহ্বল অবস্থায় আল্লাহ্র যিক্র, দু‘আ এবং ইস্তিগ্ফারের দিকে অগ্রসর হবে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /১৪ হাঃ ১০৫৯, মুসলিম ১০/৫, হাঃ ৯১২) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। তবে তা আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের মধ্যে দু’টি নিদর্শন। কাজেই তোমরা যখনই গ্রহণ হতে দেখবে তখনই সলাত আদায় করবে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /১ হাঃ ১০৪২, মুসলিম ১০/৫ হাঃ ৯১৪) মুগীরাহ ইব্নু শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইবরাহীম (রাঃ) ইন্তিকাল করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগল, ইব্রাহীম (রাঃ) এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন সলাত আদায় করবে এবং আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করবে। (বুখারী পর্ব ১৬ : /১ হাঃ ১০৪৩, মুসলিম ১০/৫, হাঃ ৯১৫)