11. জানাযা
মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা।
উসামাহ ইব্নু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈকা কন্যা (যায়নাব) তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট লোক পাঠালেন যে, আমার এক পুত্র মরণাপন্ন অবস্থায় রয়েছে, তাই আপনি আমাদের নিকট আসুন। তিনি বলে পাঠালেন, (তাঁকে) সালাম দিবে এবং বলবেঃ আল্লাহ্রই অধিকারে যা কিছু তিনি নিয়ে যান আর তাঁরই অধিকারে যা কিছু তিনি দান করেন। তাঁর নিকট সকল কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সাওয়াবের অপেক্ষায় থাকে। তখন তিনি তাঁর কাছে কসম দিয়ে পাঠালেন, তিনি যেন অবশ্যই আগমন করেন। তখন তিনি দণ্ডায়মান হলেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন সা‘দ ইব্নু উবাদাহ, মু‘আয ইব্নু জাবাল, উবাই ইব্নু কা‘ব, যাইদ ইব্নু সাবিত (রাঃ) এবং আরও কয়েকজন। তখন শিশুটিকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তুলে দেয়া হল। তখন সে ছটফট করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি এ কথা বলেছিলেন, যেন তার শ্বাস মশকের মত (শব্দ হচ্ছিল)। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু’ চক্ষু বেয়ে অশ্রু ঝরছিল। সা’দ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! একী? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে রাহমাত, যা আল্লাহ্ তাঁর বান্দার অন্তরে গচ্ছিত রেখেছেন। আর আল্লাহ্ তো তাঁর দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করেন। (বুখারী পর্ব ৩২ : /৩৩ হাঃ ১২৮৪, মুসলিম ১১/৬, হাঃ ৯২৩) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলে, সা‘দ ইব্নু ‘উবাদাহ (রাঃ) রোগাক্রান্ত হলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইব্নু ‘আওফ, সা‘দ ইব্নু আবূ ওয়াক্কাস এবং ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে দেখতে আসলেন। তিনি তাঁর ঘরে প্রবেশ করে তাঁকে পরিজনের মাঝে দেখতে পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তার কি মৃত্যু হয়েছে! তাঁরা বললেন, না। হে আল্লাহর রাসূল! তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেঁদে ফেললেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কান্না দেখে উপস্থিত লোকেরা কাঁদতে লাগলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেনঃ শুনে রাখ! নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা চোখের পানি ও অন্তরের শোক-ব্যথার কারণে ‘আযাব দিবেন না। তিনি ‘আযাব দিবেন এর কারণে (এ ব’লে) জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করলেন। অথবা এর কারণেই তিনি রহম করে থাকেন। আর নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনের বিলাপের কারণে ‘আযাব দেয়া হয়। ‘উমার (রাঃ) এ (ধরনের কান্নার) কারণে লাঠি দ্বারা আঘাত করতেন, কঙ্কর নিক্ষেপ করতেন বা মুখে মাটি পুরে দিতেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৫৪ হাঃ ১৩০৪, মুসলিম ১১/৬, হাঃ ৯২৪)
ধৈর্য ধারণ বিপদের প্রথম ধাক্কাতেই।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলার পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি ক্ববরের পার্শ্বে ক্রন্দন করছিলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আল্লাহ্কে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। মহিলাটি বললেন, আমার নিকট থেকে প্রস্থান করুন। আপনার উপর তো আমার মত বিপদ উপস্থিত হয়নি। তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চিনতে পারেননি। পরে তাকে বলা হল, তিনি তো নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় উপস্থিত হলেন, তাঁর কাছে কোন প্রহরী ছিল না। তিনি নিবেদন করলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। তিনি বললেনঃ ধৈর্য তো বিপদের প্রাথমিক অবস্থাতেই (ধারণ করতে হয়)। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩২ হাঃ ১২৮৩, মুসলিম ১১/৮ হাঃ ৯২৬)
মৃতের উপর পরিবার-পরিজনের ক্রন্দনের কারণে ‘আযাব হয়ে থাকে।
‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে ‘আযাব দেয়া হয়।’ (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩৪ হাঃ ১২৮৬, মুসলিম ১১/৯ হাঃ ৯২৭) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাঃ) হায়! আমার ভাই! বলতে লাগলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি কি অবহিত নও যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জীবিতদের কান্নার কারণে অবশ্যই মৃতদের ‘আযাব দেয়া হয়? (বুখারী পর্ব ২৩: /৩২ হাঃ ১২৯০, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯২৭) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উবাইদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ মুলাইকাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহয় উসমান (রাঃ)-এর জনৈকা কন্যার মৃত্যু হল। আমরা সেখানে (জানাযায়) অংশগ্রহণ করার জন্য গেলাম। ইব্নু ‘উমার এবং ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-ও সেখানে উপস্থিত হলেন। আমি তাঁদের দু’জনের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম, অথবা তিনি বলেছেন, আমি তাঁদের একজনের পার্শ্বে গিয়ে উপবেশন করলাম, পরে অন্যজন আগমন করে আমার পার্শ্বে উপবেশন করলেন। (ক্রন্দনের শব্দ শুনে) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) ‘আমর ইব্নু ‘উসমানকে বললেন, তুমি কেন ক্রন্দন করতে নিষেধ করছ না? কেননা, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মৃত ব্যক্তিকে তার পরিজনদের কান্নার কারণে ‘আযাব দেয়া হয়।’ তখন ইব্নু ‘আব্বাস(রাঃ)বললেন, ‘উমার(রাঃ)ও এমন কিছু বলতেন। অতঃপর ইব্নু ‘আব্বাস(রাঃ)বর্ণনা করলেন, ‘উমার(রাঃ)-এর সাথে মাক্কাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করছিলাম। আমরা বাইদা (নামক স্থানে) উপস্থিত হলে ‘উমার(রাঃ)বাবলা বৃক্ষের ছায়ায় একটি কাফিলা দর্শন করতঃ আমাকে বললেন, গিয়ে দেখো এ কাফিলা কার? ইব্নু ‘আব্বাস(রাঃ)বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম সেখানে সুহাইব (রাঃ)আছেন। আমি তাঁকে তা অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তাঁকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। আমি সুহাইব (রাঃ)-এর নিকটে আবার গেলাম এবং বললাম, চলুন, আমীরুল মু’মিনীনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন। অতঃপর যখন ‘উমার(রাঃ)(ঘাতকের আঘাতে) আহত হলেন, তখন সুহাইব (রাঃ)তাঁর কাছে আগমন করতঃ এ বলে ক্রন্দন করতে লাগলেন, হায় আমার ভাই! হায় আমার বন্ধু! এতে ‘উমার(রাঃ)তাঁকে বললেন, তুমি আমার জন্য ক্রন্দন করছো? অথচ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার আপন জনের কোন কোন কান্নার কারণে অবশ্যই তাকে ‘আযাব দেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩৩ হাঃ ১২৯০, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯২৭) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট আমি ‘উমার (রাঃ)-এর এ উক্তি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ্ ‘উমার (রাঃ)-কে রহম করুন। আল্লাহ্র কসম! আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেননি যে, আল্লাহ্ ঈমানদার (মৃত) ব্যক্তিকে তার পরিজনের কান্নার কারণে আযাব দিবেন। তবে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা কাফিরদের আযাব বাড়িয়ে দেন তার পরিজনের কান্নার কারণে। অতঃপর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, (এ ব্যাপারে) আল্লাহ্র কুরআনই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। (ইরশাদ হয়েছে): ‘বোঝা বহনকারী কোন ব্যক্তি অপরের বোঝা বহন করবে না’- (আন‘আমঃ ১৬৪)। তখন ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ই (বান্দাকে) হাসান এবং কাঁদান। রাবী ইব্নু আবূ মুলাইকাহ (রহ.) বলেন, আল্লাহ্র কসম! (এ কথা শুনে) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) কোন মন্তব্য করলেন না। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩২ হাঃ ১২৮৬, ১২৮৭, ১২৮৮, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯২৭, ৯২৮, ৯২৯) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এ কথাটি ঐ কথাটিরই মত যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ কূপের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে কূপে বাদ্র যুদ্ধে নিহত মুশরিকদের নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তিনি তাদেরকে যা বলার বললেন (এবং জানালেন) যে, আমি যা বলছি তারা তা সবই শুনতে পাচ্ছে। তিনি বললেন, এখন তারা ভালভাবে জানতে পারছে যে, আমি তাদেরকে যা বলেছিলাম তা ছিল সঠিক। এরপর ‘আয়িশাহ (রাঃ) == (তুমি তো মৃতকে শুনাতে পারবে না) (সূরাহ নামল ২৭/৮০) (এবং তুমি শুনাতে সমর্থ হবে না তাদেরকে যারা কবরে রয়েছে) (সূরাহ ফাতির ৩৫/২২) আয়াতাংশ দু’টো তিলাওয়াত করলেন। ‘উরওয়াহ (রহ.) বলেন, এর মানে হচ্ছে জাহান্নামে যখন তারা তাদের আসন গ্রহণ করে নেবে। (বুখারী পর্ব ৬৪: /৮ হাঃ ৩৯৭৬-৩৯৭৯, মুসলিম ১১/৯ হাঃ ৯৩১ ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহুদী স্ত্রীলোকের (ক্ববরের) পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যার পরিবারের লোকেরা তার জন্য ক্রন্দন করছিল। তখন তিনি বললেনঃ তারা তো তার জন্য ক্রন্দন করছে। অথচ তাকে ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হচ্ছে। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩৪ হাঃ ১২৮৯, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯৩২) মুগীরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে (মৃত) ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা হয়, তাকে বিলাপকৃত বিষয়ের উপর ‘আযাব দেয়া হবে। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩৪ হাঃ ১২৯১, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯৩২)
অধিক আর্তনাদ করা।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন (মুতা-র যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে (যায়দ) ইব্নু হারিসা, জা‘ফর ও ইব্নু রাওয়াহা (রাঃ)-এর শাহাদাতের খবর পৌঁছল, তখন তিনি (এমনভাবে) বসে পড়লেন যে, তাঁর মধ্যে দুঃখের চিহ্ন ফুটে উঠেছিল। আমি (‘আয়িশাহ (রাঃ)] দরজার ফাঁক দিয়ে তা প্রত্যক্ষ করছিলাম। এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে জা‘ফর (রাঃ)-এর পরিবারের মহিলাদের কান্নাকাটির কথা উল্লেখ করলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাঁদেরকে (কান্নাকাটি করতে) নিষেধ করেন, লোকটি চলে গেলো এবং দ্বিতীয়বার এসে (বলল) তারা তাঁর কথা মানেনি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাঁদেরকে নিষেধ করো। ঐ ব্যক্তি তৃতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহ্র কসম! হে আল্লাহ্র রাসূল! তাঁরা আমাদের হার মানিয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির সাথে বললেনঃ তাহলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ কর। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ্ তোমার নাকে ধূলি মিলিয়ে দেন। তুমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ পালন করতে পারনি। অথচ তুমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিরক্ত করতেও দ্বিধা করোনি। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪১ হাঃ ১২৯১, মুসলিম ১১/৯, হাঃ ৯৩৩) উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়‘আত গ্রহণকালে আমাদের কাছ থেকে এ অংগীকার নিয়েছিলেন যে আমরা (কোন মৃতের জন্য) বিলাপ করব না।....... আমাদের মধ্য হতে পাঁচজন মহিলা উম্মু সুলাইম, উম্মুল ‘আলা, আবু সাবরাহর কন্যা মু’আযের স্ত্রী, আরো দু’জন মহিলা বা মু’আযের স্ত্রী ও আরেকজন মহিলা ব্যতীত কোন নারীই সে ওয়াদা রক্ষা করেনি। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪৬ হাঃ ১৩০৬, মুসলিম ১১/১০, হাঃ ৯৩৬) উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বায়‘আত গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি আমাদের সামনে পাঠ করলেন, “তারা আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে শরীক স্থির করবে না।” এরপর তিনি আমাদেরকে মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করলেন। এ সময় এক মহিলা তার হাত টেনে নিয়ে বলল, অমুক মহিলা আমাকে বিলাপে সহযোগিতা করেছে, আমি তাকে এর বিনিময় দিতে ইচ্ছে করেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কিছুই বলেননি। এরপর মহিলাটি উঠে চলে গেল এবং পুনরায় ফিরে আসলো, তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বায়‘আত করলেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /৬০ হাঃ ৪৮৯২, মুসলিম ১১/১০ হাঃ ৯৩৬)
জানাযার পিছনে নারীদের অনুগমন নিষিদ্ধ।
উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে জানাযার পশ্চাদানুগমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে আমাদের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়নি। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৩০ হাঃ ১২৭৮, মুসলিম ১১/১১ হাঃ ৯৩৮)
মৃতের গোসল।
উম্মু আতিয়্যাহ্ আনসারী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) ইন্তিকাল করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেনঃ তোমরা তাকে তিনবার বা পাঁচবার বা প্রয়োজন মনে করলে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পুর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে খবর দাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানি আমাদেরকে দিয়ে বললেনঃ এটি তাঁর শরীরের সঙ্গে জড়িয়ে দাও। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৮ হাঃ ১২৫৩, মুসলিম ১১/১২, হাঃ ৯৩৯) উম্মু আতিয়্যাহ্ আনসারীয়্যাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) ইন্তিকাল করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বললেনঃ তোমরা তাঁকে তিনবার বা পাঁচবার বা প্রয়োজন মনে করলে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দ্বারা গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর বা (তিনি বলেছেন) কিছু কর্পুর ব্যবহার করবে। তোমরা শেষ করে আমাকে জানাও। আমরা শেষ করার পর তাঁকে জানালাম। তখন তিনি তাঁর চাদরখানি আমাদের দিকে দিয়ে বললেনঃ এটি তাঁর ভিতরের কাপড় হিসেবে পরিয়ে দাও। আইয়ুব (রহ.) বলেছেন, হাফ্সাহ (রহ.) আমাকে মুহাম্মাদ বর্ণিত হাদীসের ন্যায় হাদীস শুনিয়েছেন। তবে তাঁর হাদীসে আছে যে, তাকে বিজোড় সংখ্যায় গোসল দিবে। আরও আছে, তিনবার, পাঁচবার অথবা সাতবার করে; তাতে আরো আছে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা তার ডান দিক হতে এবং তার উযূর স্থানগুলো থেকে আরম্ভ করবে।” তাতে এ কথাও আছে। (বর্ণনাকারিণী) উম্মু আতিয়্যাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমরা তার চুলগুলো আঁচড়ে তিনটি গোছা করে দিলাম। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৯ হাঃ ১২৫৪, মুসলিম ১১/১২ হাঃ ৯৩৯) উম্মু আতিয়্যাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কন্যার গোসলের ব্যাপারে ইরশাদ করেনঃ তোমরা তাঁর ডান দিক হতে এবং উযূর অঙ্গসমূহ হতে শুরু করবে। (বুখারী পর্ব ৩৩ : /১১ হাঃ ১২৫৫, মুসলিম ১১/১২ হাঃ ৯৩৯)
মৃতের কাফন।
খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাদীনায় হিজরত করেছিলাম, এতে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি কামনা করেছিলাম। আমাদের প্রতিদান আল্লাহ্র দরবারে নির্ধারিত হয়ে আছে। অতঃপর আমাদের মধ্যে অনেকে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের বিনিময়ের কিছুই ভোগ করে যাননি। তাঁদেরই একজন মুস‘আব ইব্নু উমাইর (রাঃ) আর আমাদের মধ্যে অনেকে এমনও আছেন যাঁদের প্রতিদানের ফল পরিপক্ক হয়েছে। আর তাঁরা তা ভোগ করছেন। মুস‘আব (রাঃ) উহুদের দিন শহীদ হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে কাফন দেয়ার জন্য এমন একটি চাদর ব্যতীত আর কিছুই পেলাম না; যা দিয়ে তাঁর মস্তক আবৃত করলে তাঁর দু’ পা বাইরে থাকে আর তাঁর দু’ পা আবৃত করলে তাঁর মস্তক বাইরে থাকে। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মস্তক আবৃত করতে এবং তাঁর দু’খানা পায়ের উপর ইয্খির (ঘাস) দিয়ে দিতে আমাদের নির্দেশ দিলেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /২৮ হাঃ ১২৭৬, মুসলিম ১১/১৩, হাঃ ৯৪০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনটি ইয়ামানী সাহুলী সাদা সূতী বস্ত্র দ্বারা কাফন দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কামীস এবং পাগড়ী ছিল না। (বুখারী পর্ব ২৩ : /১৯ হাঃ ১২৬৪, মুসলিম ১১/১৩, হাঃ ৯৪১)
মাইয়্যিতকে আবৃত করা।
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন ইয়ামনী চাদর দ্বারা তাঁকে ঢেকে রাখা হয়। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /১৮ হাঃ ৫৮১৪, মুসলিম ১১/১৪ হাঃ ৯৪২)
জানাযাহ দ্রুতসম্পন্ন করা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা জানাযা নিয়ে দ্রুতগতিতে চলবে। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তবে এটা উত্তম, যার দিকে তোমরা তাকে এগিয়ে দিচ্ছ, আর যদি সে অন্য কিছু হয়, তবে সে একটি আপদ, যাকে তোমরা তোমাদের ঘাড় হতে জলদি নামিয়ে ফেলছ। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৫২ হাঃ ১৩১৫, মুসলিম ১১/১৬, হাঃ ৯৪৪)
জানাযার সলাত ও তার পিছে অনুগমনের ফাযীলাত।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মৃতের জন্য সলাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত, আর যে ব্যক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত। জিজ্ঞেস করা হল দু’ কীরাত কী? তিনি বললেন, দু’টি বিশাল পর্বত সমতুল্য (সাওয়াব)। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৫৯ হাঃ ১৩২৫, মুসলিম ১১/১৭, হাঃ ৯৪৫) আবূ হুরায়রাহ ও ‘আয়িশাহ (রাযি) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি জানাযার অনুসরণ করলো তার জন্য এক কীরাত। তিনি অতিরিক্ত বলেছেন এ বিষয়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমিও আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ হাদীস বলতে শুনেছি। ইব্নু ‘উমার (রাঃ) বললেন, তা হলে তো আমরা অনেক কীরাত (সাওয়াব) হারিয়ে ফেলেছি। .............. এর অর্থ আল্লাহ্র আদেশ খুইয়েছি। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৫৮ হাঃ ১৩২৪, মুসলিম ১১/১৭ হাঃ ৯৪৫)
যে মৃত সম্পর্কে প্রশংসা করা হয়েছে অথবা মন্দ বলা হয়েছে।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক সাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়াজিব হয়ে গেল। তখন ‘উমার ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) আরয করলেন, (হে আল্লাহর রাসূল!) কী ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেনঃ এ (প্রথম) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীতে আল্লাহ্র সাক্ষী। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৮৬ হাঃ ১৩৬৭, মুসলিম ১১/১৯, হাঃ ৯৪৯)
যারা নিস্কৃতি পেয়েছে অথবা নিস্কৃতি দিয়েছে তাদের সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে।
ক্বাতাদাহ ইব্নু রিবঈ আনসারী (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি তা দেখে বললেনঃ সে শান্তি প্রাপ্ত অথবা তার থেকে শান্তিপ্রাপ্ত। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! ‘মুস্তারিহ’ ও ‘মুস্তারাহ মিনহু’-এর অর্থ কী? তিনি বললেনঃ মু’মিন বান্দা মরে যাবার পর দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহ্র রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দা মরে যাবার পর তার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, গাছ-পালা ও প্রাণীকুল শান্তিপ্রাপ্ত হয়। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৪২ হাঃ ৬৫১২, মুসলিম ১১/২১ হাঃ ৯৫০)
জানাযাহ্র তাকবীর সংক্রান্ত।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাজাশী যেদিন মারা যান সেদিন-ই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মৃত্যুর খবর দেন এবং জানাযাহ্’র স্থানে গিয়ে লোকদের কাতারবন্দী করে চার তাক্বীর আদায় করলেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪ হাঃ ১২৪৫, মুসলিম ১১/২২, হাঃ ৯৫১) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)নাজাশীর মৃত্যুর দিনই আমাদের তাঁর মৃত্যুর খবর জানান এবং ইরশাদ করেনঃ তোমরা তোমাদের ভাই-এর (নাজাশীর) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৬১ হাঃ ১৩২৭, মুসলিম ১১/২২ হাঃ ৯৫১) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসহামা নাজাশীর জানাযার সলাত আদায় করলেন, তাতে তিনি চার তাক্বীর দিলেন। ইয়াযীদ ইব্নু হারূন ও আবদুস্ সামাদ (রহ.) সালীম (রহ.) হতে ====== শব্দটি উল্লেখ করেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৬৫ হাঃ ১৩৩৪, মুসলিম ১১/২২ হাঃ ৯৫২) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজ হাবাশা দেশের (আবিসিনিয়ার) একজন পুণ্যবান লোকের মৃত্যু হয়েছে, তোমরা এসো তাঁর জন্য (জানাযার) সলাত আদায় কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তখন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (জানাযার) সলাত আদায় করলেন, আমরা ছিলাম কয়েক কাতার। আবূ যুবাইর (রহ.) জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, জাবির (রাঃ) বলেছেন, আমি দ্বিতীয় কাতারে ছিলাম। (বুখারী পর্ব২৩ : /৫৫ হাঃ ১৩২০, মুসলিম ১১/২২ হাঃ ৯৫২)
ক্ববরের উপর (জানাযার) সলাত আদায়।
সুলাইমান আশ-শাইবানী তিনি বলেন, আমি শা‘বী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, এমন এক ব্যক্তি আমাকে খবর দিয়েছেন, যিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একটি পৃথক কবরের নিকট গেলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে লোকদের ইমামত করেন। লোকজন কাতারবন্দী হয়ে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আবূ আমর! কে আপনাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন? তিনি বললেন, ইব্নু ‘আব্বাস (রাযি আল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু)। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬১ হাঃ ৮৫৭, মুসলিম ১১/২৩, হাঃ ৯৫৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কালো এক পুরুষ বা এক মহিলা মাসজিদে ঝাড় দিত। সে মারা গেল। কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মৃত্যুর খবর জানতে পারেননি। একদা তার কথা উল্লেখ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটির কী হল? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সে তো মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? সে ছিল এমন এমন বলে তাঁরা তার ঘটনা উল্লেখ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁরা তার মর্যাদাকে খাটো করে দেখলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকে তার ক্ববর দেখিয়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি তার ক্ববরের কাছে আসলেন এবং তার জানাযার সলাত আদায় করলেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৬৭ হাঃ ১৩৩৭, মুসলিম ১১/২৩ হাঃ ৯৫৬)
জানাযাহ দেখলে দাঁড়ানো।
আমির ইব্নু রাবী‘আহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা জানাযা দেখলে তা তোমাদের পিছনে ফেলে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। হুমাইদী আরও উল্লেখ করেছেন, তা তোমাদের পশ্চাতে ফেলে যাওয়া বা মাটিতে নামিয়ে রাখা পর্যন্ত। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪৭ হাঃ ১৩০৭, মুসলিম ১১/২৪, হাঃ ৯৫৮) ‘আমির ইব্নু রাবী’আহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ জানাযা যেতে দেখলে যদি সে তার সহযাত্রী না হয়, তবে ততক্ষণ সে দাঁড়িয়ে থাকবে, যতক্ষণ না সে ব্যক্তি জানাযা পিছনে ফেলে বা জানাযা তাকে পিছনে ফেলে যায় অথবা পিছনে ফেলে যাওয়ার পূর্বে তা (মাটিতে) নামিয়ে রাখা হয়। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪৮ হাঃ ১৩০৮, মুসলিম ১১/২৪ হাঃ ৯৫৮) আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন জানাযা যেতে দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে, আর যদি সে তার সহযাত্রী হয় তাহলে সে ততক্ষণ বসবে যতক্ষণ তা নামিয়ে না রাখা হয়। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৪৯ হাঃ ১৩১০, মুসলিম ১১/২৪, হাঃ ৯৫৯) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ব দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম এবং নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এ তো ইয়াহুদীর জানাযা। তিনি বললেনঃ তোমরা যে কোন জানাযা দেখলে দাঁড়িয়ে পড়বে। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৫০ হাঃ ১৩১১, মুসলিম ১১/২৪, হাঃ ৯৬০) ‘আবদুর রহমান ইব্নু আবূ লাইলাহ (রহ.) তিনি বলেন, সাহ্ল ইব্নু হুনাইফ ও কায়স ইব্নু সা‘দ (রাঃ) কাদিসিয়াতে উপবিষ্ট ছিলেন, তখন লোকেরা তাদের সামনে দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাচ্ছিল। (তা দেখে) তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাদের বলা হল, এটা তো এ দেশীয় জিম্মী ব্যক্তির (অমুসলিমের) জানাযা। তখন তারা বললেন, (একদা) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে দিয়ে একটি জানাযা যাচ্ছিল। তখন তিনি দাঁড়িয়ে গেলে তাঁকে বলা হল, এটা তো এক ইয়াহূদীর জানাযা। তিনি এরশাদ করলেনঃ সে কি মানুষ নয়? (বুখারী পর্ব ২৩: /৫০ হাঃ ১৩১২, মুসলিম ১১/২৪ হাঃ ৯৬১)
জানাযাহ্ সলাত আদায়কালে ইমাম মৃত ব্যক্তির কোন বরাবর দাঁড়াবে?
সামুরাহ ইব্নু জুন্দাব (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পশ্চাতে আমি এমন এক স্ত্রীলোকের জানাযার সলাত আদায় করেছিলাম, যে নিফাসের অবস্থায় মারা গিয়েছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার (স্ত্রীলোকটির) মাঝ বরাবর দাঁড়িয়েছিলেন। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৬৩ হাঃ ১৩৩১, মুসলিম ১১/২৭, হাঃ ৯৬৪)