12. যাকাত
যাকাত
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ উকিয়ার কম সম্পদের উপর যাকাত (ফারয) নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওয়াসাক* এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত নেই। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪ হাঃ ১৪০৫, মুসলিম ১২/১, হাঃ ৯৭৯)
মুসলিমের উপর গোলাম এবং ঘোড়ার যাকাত নেই।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের উপর তার ঘোড়া ও গোলামের কোন যাকাত নেই। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪৫ হাঃ ১৪৬৩, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮২)
অগ্রিম যাকাত আদায় করা ও যাকাত না দেয়ার বর্ণনা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিলে বলা হলো, ইব্নু জামীল, খালিদ ইব্নু ওয়ালীদ ও ‘আব্বাস ইব্নু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) যাকাত প্রদানে অস্বীকার করছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইব্নু জামীলের যাকাত না দেয়ার কারণ এ ছাড়া কিছু নয় যে, সে দরিদ্র ছিল, পরে আল্লাহর অনুগ্রহে ও তাঁর রসূলের বরকতে সম্পদশালী হয়েছে। আর খালিদের ব্যাপার হলো তোমরা খালিদের উপর অন্যায় করেছ, কারণ সে তার বর্ম ও অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে আবদ্ধ রেখেছে। আর ‘আব্বাস ইব্নু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তো আল্লাহর রসূলের চাচা। তাঁর যাকাত তাঁর জন্য সদাকাহ এবং সমপরিমাণও তার জন্য সদাকাহ। ইব্নু আবুয্ যিনাদ (রহ.) তাঁর পিতা হতে হাদীস বর্ণনায় শু‘আইব (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। আর ইব্নু ইসহাক (রহ.) আবুয্ যিনাদ (রহ.) হতে হাদীসের শেষাংশে ‘সদাকাহ’ শব্দের উল্লেখ করেননি। ইব্নু জুরাইজ (রহ.) বলেন, আ‘রাজ (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ২৪ ঃ /৪৯ হাঃ ১৪৬৮, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮৩)
মুসলিমদের উপর যাকাতুল ফিত্র হিসাবে খেজুর ও যব প্রদান।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) মুসলিমদের প্রত্যেক আযাদ, গোলাম পুরুষ ও নারীর পক্ষ হতে সদাকাতুল ফিত্র হিসেবে খেজুর অথবা যব-এর এক সা‘আ পরিমাণ* আদায় করা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারয করেছেন। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৭১ হাঃ ১৫০৪, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮৩) ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা‘আ পরিমাণ খেজুর বা এক সা‘আ পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করতে নির্দেশ দেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু’ মুদ (অর্ধ সা‘) গম আদায় করতে থাকে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৭৪ হাঃ ১৫০৭, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৪) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সা‘আ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা‘আ পরিমাণ যব অথবা এক সা‘আ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা‘আ পরিমাণ পনির অথবা এক সা‘আ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সদাকাতুল ফিত্র আদায় করতাম। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৭৩ হাঃ ১৫০৬, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৫) আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এক সা‘আ খাদ্যদ্রব্য বা এক সা‘আ খেজুর বা এক সা‘আ যব বা এক সা‘আ কিসমিস দিয়ে সদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর যুগে যখন গম আমদানী হল তখন তিনি বললেন, এক মুদ গম (পূর্বোক্তগুলোর) দু’ মুদ-এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৭৫ হাঃ ১৫০৮, মুসলিম ১২/৪ হাঃ ৯৮৫)
যাকাত অমান্যকারীর গুনাহ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়া তিন শ্রেণীর লোকের জন্য। একজনের জন্য পুরস্কার; একজনের জন্য আবরণ এবং একজনের জন্য (পাপের) বোঝা। যার জন্য পুরস্কার, সে হলো, ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ্র রাস্তায় ঘোড়া বেঁধে রাখে এবং রশি কোন চারণভূমি বা বাগানে লম্বা করে দেয়, আর ঘোড়াটি সে চারণভূমি বা বাগানে ঘাস খায়, তবে এর জন্য তার পুণ্য রয়েছে। আর ঘোড়াটি যদি রশি ছিঁড়ে এক বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তাহলেও তার গোবর ও পদক্ষেপসমূহের বিনিময়ে তার জন্য পুণ্য রয়েছে। এমনকি ঐ ঘোড়া যদি কোন নহরে গিয়ে তা থেকে পানি পান করে, অথচ তার মালিক পানি পান করানোর ইচ্ছে করেনি, তবে এর ফলেও তার জন্য পুণ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লৌকিকতা প্রদর্শন এবং মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা করার জন্য ঘোড়া বেঁধে রাখে তবে তার জন্য তা (পাপের) বোঝা। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গাধা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমার উপর আর কিছু অবতীর্ণ হয়নি, ব্যাপক অর্থপূর্ণ এই একটি আয়াত ব্যতীত। (আল্লাহ্র বাণীঃ) কেউ অণু পরিমাণ নেক কাজ করে থাকলে, সে তা দেখতে পাবে; আর কেউ অণু পরিমাণ বদ কাজ করে থাকলে, সে তাও দেখতে পাবে।। (যিলযালঃ ৭-৮)(বুখারী পর্ব ৫৬ : /৪৮ হাঃ ২৮৬০, মুসলিম ১২/৬ হাঃ ৯৮৭)
যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না তার শাস্তির ভয়াবহতা।
আবূ যর গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি কা‘বা গৃহের ছায়ায় বসে বলেছিলেনঃ কা‘বাগৃহের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। কা‘বাগৃহের রবের কসম! তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আমি বললাম, আমার অবস্থা কী? আমার মাঝে কি কিছু (ত্রুটি) পরিলক্ষিত হয়েছে? তিনি বলছিলেন, এমন অবস্থায় আমি তাঁর কাছে বসে পড়লাম। আমি তাঁকে থামাতে পারলাম না। যতক্ষণের জন্য আল্লাহ্ চাইলেন আমি চিন্তায় আচ্ছন্ন রইলাম। এরপর আমি আরয করলাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান ঐ সমস্ত লোক কারা হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেনঃ এরা হল ঐ সকল লোক যারা অধিক সম্পদের অধিকারী। তবে হাঁ, ঐ সমস্ত লোক স্বতন্ত্র যারা এরূপ, এরূপ ও এরূপ (ক্ষেত্রে খরচ করে)। (বুখারী পর্ব ৮৩ : /৮ হাঃ ৬৬৩৮, মুসলিম ১২/৮ হাঃ ৯৯০) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গমন করলাম। তিনি বললেনঃ শপথ সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ (বা তিনি বললেন) শপথ সেই সত্তার, যিনি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, অথবা অন্য কোন শব্দে শপথ করলেন, উট, গরু বা বকরী থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামাতের দিন হাযির করা হবে এবং তাকে পদপিষ্ট করবে এবং শিং দিয়ে গুঁতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকবে। হাদীসটি বুকায়র (রহ.) আবূ সারিহ (রহ.)-এর মাধ্যমে হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪৩ হাঃ ১৪৬০, মুসলিম ১২/৮, হাঃ ৯৯০)
সদাকাহ দেয়ার জন্য উৎসাহ দান।
যায়দ ইবনু ওয়াহ্ব (রহ.) আল্লাহ্র কসম! আবূ যার (রাঃ) রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এশার সময় মাদীনায় হাররা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা উহুদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যতীত এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন রাত পর্যন্ত আমার হাতে থেকে যাক। বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহ্র বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কিভাবে দেবেন) তা তাঁর হাত দিয়ে তিনি দেখালেন। অতঃপর বললেনঃ হে আবূ যার! আমি বললামঃ লাব্বাইকা ওয়া স‘দাইকা, হে আল্লাহ্র রাসূল! তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যারা অধিক সম্পদশালী, আখিরাতে তারা হবেন অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হবেন এর ব্যতিক্রম। অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, হে আবূ যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমনকি আমার চোখের আড়ালে চলে গেলেন। এমন সময় এটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে অগ্রসর হতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিষেধাজ্ঞা যে কোথায়ও যেয়ো না মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একটা আওয়ায শুনে শংকিত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদিও চুরি করে থাকে তবুও। (বুখারী পর্ব ৭৯ : /৩ হাঃ ৬২৬৮, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৪) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাতে আমি একবার বের হলাম। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একাকী চলতে দেখলাম, তাঁর সঙ্গে কোন লোক ছিল না। আমি মনে করলাম, তাঁর সঙ্গে কেউ চলুক হয়ত তিনি তা অপছন্দ করবেন। তাই আমি চাঁদের ছায়াতে তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি পেছনের দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে ফেললেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ কে? আমি বললাম, আমি আবূ যার। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। তিনি বললেনঃ ওহে আবূ যার, এসো। আমি তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ চললাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ অধিকের অধিকারীরাই ক্বিয়ামাতের দিন স্বল্পাধিকারী হবে। অবশ্য যাদের আল্লাহ্ সম্পদ দান করেন এবং তারা তা ডানে, বামে, আগে ও পেছনে ব্যয় করে আর মঙ্গলজনক কাজে তা লাগায়, (তারা ব্যতীত)। অতঃপর আমি আরও কিছুক্ষণ তাঁরসঙ্গে চলার পর তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি এখানে বসে থাক। (একথা বলে) তিনি আমাকে চতুর্দিকে প্রস্তরঘেরা একটি খোলা জায়গায় বসিয়ে দিয়ে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই বসে থেকো। তিনি বলেন, এরপর তিনি প্রস্তরময় প্রান্তরের দিকে চলে গেলেন। এমন কি তিনি আমার দৃষ্টির আগোচরে চলে গেলেন। এবং বেশ কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ফিরে আসার সময় আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, যদিও সে চুরি করে, যদিও সে যিনা করে। অতঃপর তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আমি আর ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম যে, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্ আমাকে আপনার প্রতি কুরবান করুন। আপনি এই প্রস্তর প্রান্তরে কার সাথে কথা বললেন? কাউকে তো আপনার কথার উত্তর দিতে শুনলাম না। তখন তিনি বললেনঃ তিনি ছিলেন জিব্রীল (‘আ.)। তিনি এই কংকরময় প্রান্তরে আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি বললেন, আপনার উম্মাতদের সুসংবাদ দেবেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সঙ্গে কাউকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওহে জিব্রীল! যদিও সে চুরি করে, আর যদিও সে যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার আমি বললামঃ যদিও সে চুরি করে আর যিনা করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। যদি সে শরাবও পান করে। নযর (রহ.)....আবূদ্ দারদা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবূদ্ দারদা থেকে আবূ সালিহের বর্ণনা মুরসাল, যা সহীহ নয়। আমরা পরিচয়ের জন্য এনেছি। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, তবে এ সুসংবাদ এ অবস্থায় দেয়া হয়েছে, যদি সে তাওবাহ করে আর মৃত্যুকালে ‘লা-ইল্লাল্লাহ্’ বলে। (বুখারী পর্ব ৮১ : /১৩ হাঃ ৬৪৪৩, মুসলিম ১২/৯ হাঃ ৯৯৬)
যারা ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করে তাদের শাস্তির ভয়াবহতা।
আহনাফ ইব্নু কায়স (রহ.) তিনি বলেন, একদা আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বললো, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হবে এবং কাঁধের চিকন হাড্ডির ওপর স্থাপন করা হবে, তা নড়াচড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল। আমিও তাঁর অনুগমন করলাম ও তাঁর কাছে বসলাম। অথচ আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বললেন, তারা কিছুই বুঝে না। কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলল, তিনি হলেন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি আমাকে বলেন, হে আবূ যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জবাবে বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেনঃ আমি পছন্দ করি না যে আমার জন্য উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ হোক আর তা সমুদয় আমি নিজের জন্য ব্যয় করি তিনটি দীনার ব্যতীত। [আবূ যার (রাঃ) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করবো না। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪ হাঃ ১৪০৭-১৪০৮, মুসলিম ১২/১০, হাঃ ৯৯২)
দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও গোপনে দানকারীর জন্য সুসংবাদ।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব এবং [আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, আল্লাহ তা‘আলার হাত পরিপূর্ণ। (তোমার) রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা কি দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কী পরিমাণ খরচ করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হাতের সম্পদে কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান।(বুখারী পর্ব ৬৫ : /১১ হাঃ ৪৬৮৪, মুসলিম ১২/১১ হাঃ ৯৯৩)
প্রথমে নিজের জন্য ব্যয় করা, অতঃপর পরিবার-পরিজনের জন্য, অতঃপর নিকটাত্মীয়ের জন্য।
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সংবাদ পৌঁছল যে, তাঁর সাহাবীদের একজন তার গোলামকে মৃত্যুর পরে কার্যকর হবে এই শর্তে আযাদ করলেন। অথচ তাঁর এছাড়া আর কোন মাল ছিল না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে গোলামটিকে আটশ’ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন এবং প্রাপ্তমূল্য তার নিকট পাঠিয়ে দেন। (বুখারী পর্ব ৯৩ : /৩২ হাঃ ৭১৮৬, মুসলিম ১২/১৩ হাঃ ৯৯৭)
নিকটাত্মীয়, পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর খরচ করা ও সদাকাহ করার মর্যাদা যদিও তারা মুশরিক হয়।
আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা (রাঃ) সবচাইতে বেশী খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মাসজিদে নাববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাগানে প্রবেশ করে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না”- (আল ইমরানঃ ৯২) তখন আবূ তালহা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমরা যা ভালবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না”- (আলু ইমরানঃ ৯২) আর বায়রুহা বাগানটি আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদাকাহ করা হলো, আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য সঞ্চয়রূপে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন তাকে দান করুন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাকে ধন্যবাদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ, এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ তা শুনলাম। আমি মনে করি, তোমার আপন জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। আবূ তালহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাই করব। অতঃপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। রাবী রাওহ (রহ.) . . . . . শব্দে ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ইউসুফ (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন। আর রাবী ইয়াহইয়া ইব্নু ইয়াহইয়া (রহ.) ও ইসমা‘ঈল (রহ.) মালিক (রহ.) হতে .. . . . শব্দ বলেছেন। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪৪ হাঃ ১৪৬১, মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ৯৯৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তার এক বাঁদীকে মুক্ত করে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাকে বললেন, তুমি যদি একে তোমার মামাদের কাউকে দিয়ে দিতে তবে তোমার অধিক পুণ্য হত। (বুখারী পর্ব ৫১ : /১৬ হাঃ ২৫৯৪, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ৯৯৯) ‘আবদুল্লাহ (ইব্নু মাস‘ঊদ) (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) [রাবী আ‘মাশ (রহ.) বলেন,] আমি ইবরাহীম (রহ.)-এর সাথে এ হাদীসের আলোচনা করলে তিনি আবূ ‘উবায়দাহ সূত্রে ‘আমর ইবনু হারিস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) হতে হুবহু বর্ণনা করেন। তিনি [যায়নাব (রাঃ)] বলেন, আমি মাসজিদে ছিলাম। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম তিনি বলছেনঃ তোমরা সদাকাহ দাও যদিও তোমাদের অলংকার হতে হয়। যায়নাব (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও তাঁর পোষ্য ইয়াতীমের প্রতি খরচ করতেন। তখন তিনি ‘আবদুল্লাহকে বললেন, তুমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জেনে এসো যে, তোমার প্রতি এবং আমার পোষ্য ইয়াতীমদের প্রতি খরচ করলে আমার পক্ষ হতে সদাকাহ আদায় হবে কি? তিনি [ইব্নু মাস‘ঊদ (রাঃ)] বললেন, বরং তুমিই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জেনে এসো। এরপর আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। তাঁর দরজায় আরো একজন আনসারী মহিলাকে দেখলাম, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। তখন বিলাল (রাঃ)-কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করুন, স্বামী ও আপন (পোষ্য) ইয়াতীমের প্রতি সদাকাহ করলে কি আমার পক্ষ হতে তা যথেষ্ট হবে? এবং এ কথাও বলেছিলাম যে, আমাদের কথা জানাবেন না। তিনি প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারা কে? বিলাল (রাঃ) বললেন, যায়নাব। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ যায়নাব? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আবদুল্লাহর স্ত্রী। নাবী সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তার জন্য দু’টি সওয়াব* রয়েছে, আত্মীয়কে দেয়ার সওয়াব আর সদাকাহ দেয়ার সওয়াব। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪৮ হাঃ ১৪৬৬, মুসলিম ১২/১৪, হাঃ ১০০০) উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আবূ সালামাহর সন্তানদের জন্য ব্যয় করলে তাতে আমার কোন সওয়াব হবে কি? আমি তাদের এ (অভাবী) অবস্থায় ত্যাগ করতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেনঃ হাঁ, তাদের জন্য খরচ করলে তুমি সওয়াব পাবে। (বুখারী পর্ব ৬৯ : /১৪ হাঃ ৫৩৬৯, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০১) আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) রাবী বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ এ কি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে? তিনি বললেন, (হাঁ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ সওয়াবের আশায় কোন মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তা তার সদাকাহ্য় পরিগণিত হয়। (বুখারী পর্ব ৬৯ : /১ হাঃ ৫৩৫১, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০২) আসমা বিনতে আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর। (বুখারী পর্ব ৫১ : /২৯ হাঃ ২৬২০, মুসলিম ১২/১৪ হাঃ ১০০৩)
মৃত ব্যক্তির নামে খরচ করলে তার নিকট সওয়াব পৌঁছা।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদাকাহ করে যেতেন। এখন আমি তাঁর পক্ষ হতে সদাকাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি [নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, হ্যাঁ। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৯৫ হাঃ ১৩৮৮, মুসলিম ১২/১৫, হাঃ ১০০৪)
প্রত্যেক সৎ কাজকে ‘সদাকাহ’ নামে অভিহিত করার বর্ণনা।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমেরই সদাকাহ করা আবশ্যক। উপস্থিত লোকজন বললঃ যদি সে সদাকাহ করার মত কিছু না পায়। তিনি বললেনঃ তাহলে সে নিজের হাতে কাজ করবে। এতে সে নিজেও উপকৃত হবে এবং সদাকাহ করবে। তারা বললঃ যদি সে সক্ষম না হয় অথবা বলেছেনঃ যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তাহলে সে যেন বিপদগ্রস্ত মাযলূমের সাহায্য করে। লোকেরা বললঃ সে যদি তা না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে সৎ কাজের নির্দেশ দিবে, অথবা বলেছেন, সাওয়াবের কাজের আদেশ দিবে। তারা বললঃ তাও যদি সে না করে? তিনি বললেনঃ তা হলে সে মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে । কারণ, এটাই তার জন্য সদাকাহ। (বুখারী পর্ব ৭৮ : /৩৩ হাঃ ৬০২২, মুসলিম ১২/১৭ হাঃ ১০০৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি সদাকাহ রয়েছে, প্রতি দিন যাতে সূর্য উদিত হয় দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও সদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও সদাকাহ, ভাল কথাও সদাকাহ, সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও সদাকাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও সদাকাহ। (বুখারী পর্ব ৫৬ : /১২৮ হাঃ ২৯৮৯, মুসলিম ১২/১৭ হাঃ ১০০৯)
দানকারী ও কৃপণতাকারী।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারী পর্ব ২৪ : /২৭ হাঃ ১৪৪২, মুসলিম ১২/১৭, হাঃ ১০১০)
সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ ঐ সময় আসার পূর্বে যখন সদাকাহ গ্রহীতা পাওয়া যাবে না।
হারিসাহ্ ইব্নু অহ্ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। (যাকে দাতা দেয়ার ইচ্ছে করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১১, মুসলিম ১২/১৭, হাঃ ১০১১) আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ) তিনি বলেন, মানুষের উপর অবশ্যই এমন এক সময় আসবে যখন লোকেরা সদাকাহর সোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু একজন গ্রহীতাও পাবে না। পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চল্লিশজন নারী একজন পুরুষের অধীনে থাকবে এবং তার আশ্রয় গ্রহণ করবে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১৪, মুসলিম ১২/১৮, হাঃ ১০১২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে উপচে না পড়বে, এমনকি সম্পদের মালিকগণ তার সদাকাহ কে গ্রহণ করবে তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। যাকেই দান করতে চাইবে সে-ই বলবে, প্রয়োজন নেই। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৯ হাঃ ১৪১২, মুসলিম ১২/১৮, হাঃ ১৫৭)
সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ থেকে সদাকাহ গৃহীত হওয়া এবং তার বৃদ্ধি সাধন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে, (আল্লাহ তা কবূল করবেন) এবং আল্লাহ কেবল পবিত্র মাল কবূল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাকাহ পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৯৭ : /২৩ হাঃ ১৪১০, মুসলিম ১২/১৯ হাঃ ১০১৪)
সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা খেজুরের একটু অংশ অথবা উত্তম কথা হয় এবং এটা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষাকারী ঢাল।
‘আদী ইব্নু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সদাকাহ করে হলেও। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১০ হাঃ ১৪১৭, মুসলিম ১২/২০ হাঃ ১০১৬) আদী ইব্নু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গেই আল্লাহ্ তা‘আলা কথা বলবেন। আর সেদিন বান্দা ও আল্লাহ্র মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। এরপর বান্দা নযর করে তার সামনে কিছুই দেখতে পাবে না। সে পুনরায় তার সামনের দিকে নযর ফেরাবে তখন তার সামনে পড়বে জাহান্নাম। তোমাদের মাঝে যে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে রক্ষা করে। রাবী বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। আবার বললেনঃ তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। এরপর তিনি পিঠ ফিরালেন এবং মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনবার এরূপ করলেন। এমন কি আমরা ভাবছিলাম যে তিনি বুঝি জাহান্নাম সরাসরি দেখছেন। তিনি আবার বললেনঃ তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি কেউ সেটাও না পাও তাহলে উত্তম কথার দ্বারা হলেও (আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর)। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৪৯ হাঃ ৬৫৩৯-৬৫৪০, [১৪১৩], মুসলিম ১২/২০ হাঃ ১০১৬)
মুটে মজুর সদাকাহ করতে পারে এবং অল্প পরিমাণ সদাকাহ্কারীকে দোষারোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আবূ মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আমাদের সদাকাহ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হল, তখন আমরা পরিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করতাম। একদা আবূ ‘আকীল (রাঃ) অর্ধ সা‘ খেজুর (দান করার উদ্দেশে) নিয়ে আসলেন এবং অন্য এক ব্যক্তি (‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আউফ) তার চেয়ে অধিক মালামাল (একই উদ্দেশে) নিয়ে উপস্থিত হলেন। (এগুলো দেখে) মুনাফিকরা সমালোচনা করতে লাগল, আল্লাহ এ ব্যক্তির সদাকাহ্র মুখাপেক্ষী নন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি [‘আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ (রাঃ)] শুধু মানুষ দেখানোর জন্য অধিক মালামাল দান করেছে। এ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়- “মু‘মিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাহ দেয় এবং যারা নিজেদের পরিশ্রমলব্ধ বস্তু ছাড়া ব্যয় করার কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, আল্লাহ তাদের বিদ্রুপ করেন। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”- (সূরাহ বারাআত ৯/৭৯)। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /৯ হাঃ ৪৬৬৮, মুসলিম ১২/২১ হাঃ ১০১৮)
মানীহা এর ফাযীলাত (দুগ্ধপানের জন্য দুগ্ধবতী উট-ছাগল-ভেড়া সাময়িকভাবে দান)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানীহা হিসাবে অধিক দুগ্ধবতী উটনী ও অধিক দুগ্ধবতী বকরী কতই না উত্তম, যা সকাল বিকাল পাত্র ভর্তি দুধ দেয়। (বুখারী পর্ব ৫১ : /৩৫ হাঃ ২৬২৯, মুসলিম ১২/২২ হাঃ ১০১৯)
দানকারী ও কৃপণতাকারীর দৃষ্টান্ত।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তিকে এমন দু’ব্যক্তির সাথে তুলনা করেন, যাদের পরিধানে লোহার দু’টি বর্ম আছে। তাদের দু’টি হাতই বুক ও ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে আছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করে তখন তার বর্মটি এমনভাবে প্রশস্ত হয় যে, তার পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এবং (শরীরের চেয়ে লম্বা হবার জন্য চলার সময়) পদচিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ লোকটি যখন দান করতে ইচ্ছে করে, তখন তার বর্মটি শক্ত হয়ে যায় ও এক অংশ অন্য অংশের সাথে মিলে থাকে এবং প্রতিটি অংশ স্ব স্ব স্থানে থেকে যায়। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর আঙ্গুল এভাবে বুকের দিক দিয়ে খোলা অংশের মধ্যে রেখে বলতে দেখেছি, তুমি যদি তা দেখতে (তাহলে দেখতে) যে, তিনি তা প্রশস্ত করতে চাইলেন কিন্তু প্রশস্ত হল না। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /৯ হাঃ ৫৭৯৭, মুসলিম ১২/২৩ হাঃ ১০২১)
সদাকাহ প্রদানকারীর সওয়াব বহাল থাকবে যদিও তা অযোগ্য লোকের হাতে পড়ে যায়।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (পূর্ববর্তী উম্মাতের মধ্যে) এক ব্যক্তি বলল, আমি কিছু সদাকাহ করব। সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে (ভুলে) সে এক চোরের হাতে তা দিয়ে দিলো। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, চোরকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। এতে সে বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, আমি অবশ্যই সদাকাহ করবো। সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে তা এক ব্যভিচারিণীর হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, রাতে এক ব্যভিচারিণীকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। লোকটি বললো, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সদাকাহ) ব্যভিচারিণীর হাতে পৌঁছল! আমি অবশ্যই সদাকাহ করব। এরপর সে সদাকাহ নিয়ে বের হয়ে কোন এক ধনী ব্যক্তির হাতে দিল। সকালে লোকেরা বলতে লাগলো, ধনী ব্যক্তিকে সদাকাহ দেয়া হয়েছে। লোকটি বলল, হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনারই, (আমার সদাকাহ) চোর, ব্যভিচারিণী ও ধনী ব্যক্তির হাতে গিয়ে পড়লো! পরে স্বপ্নযোগে তাকে বলা হলো, তোমার সদাকাহ চোর পেয়েছে, সম্ভবত সে চুরি করা হতে বিরত থাকবে, তোমার সদাকাহ ব্যভিচারিণী পেয়েছে, সম্ভবত সে তার ব্যভিচার হতে পবিত্র থাকবে আর ধনী ব্যক্তি তোমার সদাকাহ পেয়েছে, সম্ভবত সে শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ হতে সদাকাহ করবে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১৪ হাঃ ১৪২১, মুসলিম ১২/২৪, হাঃ ২২)
বিশ্বস্ত খাজাঞ্চীর এবং ঐ মহিলা যে সৎ উদ্দেশে তার স্বামীর গৃহ হতে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট অনুমতি সাপেক্ষে সদাকাহ করে, বিনষ্ট করার উদ্দেশে নয় তার প্রতিদান।
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে বিশ্বস্ত মুসলিম খাজাঞ্চী (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সদাকাহর সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, কোন কোন সময় তিনি ..............(বাস্তবায়িত করে) শব্দের স্থলে ............. (আদায় করে) শব্দ বলেছেন, সে খাজাঞ্চীও নির্দেশদাতার ন্যায় সদাকাহ দানকারী হিসেবে গণ্য। (বুখারী পর্ব ২৪ : /২৫ হাঃ ১৪৩৮, মুসলিম ১২/২৫, হাঃ ১০২৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্ত্রী যদি তার ঘর হতে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য সদাকাহ করে তবে এ জন্যে সে সওয়াব লাভ করবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চীও অনুরূপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্য জনের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১৭ হাঃ ১৪২৫, মুসলিম ১২/২৫, হাঃ ১০২৪) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, কোন স্ত্রী স্বামীর উপস্থিতিতে তাঁর অনুমতি ব্যতীত নফল রোযা রাখবে না। (বুখারী পর্ব ৬৭ : /৮৪ হাঃ ৫১৯২, মুসলিম ১২/২৫ হাঃ ১০২৫) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন মহিলা স্বামীর উপার্জন থেকে বিনা হুকুমে দান করে, তবে সে তার অর্ধেক সওয়াব পাবে। (বুখারী পর্ব ৬৯ : /৫ হাঃ ৫৩৬০, মুসলিম ১২/২৫ হাঃ ১০২৬)
যে ব্যক্তি এক সঙ্গে সদাকাহ ও উত্তম ‘আমালসমূহ করল।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সলাত আদায়কারী, তাকে সলাতের দরজা হতে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা হতে ডাকা হবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা হতে ডাকা হবে। যে সদাকাহ দানকারী, তাকে সদাকাহর দরজা হতে ডাকা হবে। এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, সকল দরজা হতে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা হতে ডাকা হবে? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ। আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হবে। (বুখারী পর্ব ৩০ : /৪ হাঃ ১৮৯৭, মুসলিম ১২/২৭, হাঃ ১০২৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় দু’টি করে কোন জিনিস ব্যয় করবে, জান্নাতের প্রত্যেক দরজায় প্রহরী তাকে ডাক দিবে। (তারা বলবে), হে অমুক। এদিকে আস। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাহলে তো তার জন্য কোন ক্ষতি নেই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি আশা করি যে, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ : /৩৭ হাঃ ২৮৪১, মুসলিম ১২/২৭ হাঃ ১০২৭)
দান করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও (সম্পদ) গণনা করা অপছন্দনীয় হওয়া।
আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খরচ কর, আর হিসাব করতে যেওনা, তাহলে আল্লাহ তোমার বেলায় হিসাব করে দিবেন। লুকিয়ে রেখ না, নইলে আল্লাহও তোমার ব্যাপারে লুকিয়ে রাখবেন। (বুখারী পর্ব ৫১ : /১৫ হাঃ ২৫৯১, মুসলিম ১২/২৮ হাঃ ১০২৯)
সদাকাহর প্রতি উৎসাহ প্রদান যদিও তা অল্প পরিমাণে হয়। অল্পকে তুচ্ছ মনে করে বিরত না থাকা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশিনীর হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা ছাগলের সামান্য গোশতযুক্ত হাড় হলেও। (বুখারী পর্ব ৫১ : /১ হাঃ ২৫৬৬, মুসলিম ১২/২৯ হাঃ ১০৩০)
গোপনে সদাকাহ করার ফাযীলাত।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দিন আল্লাহর (আরশের) ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না সে দিন আল্লাহ তা‘আলা সাত প্রকার মানুষকে সে ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক। (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদতের ভিতর গড়ে উঠেছে। (৩) যার অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মাসজিদের সাথে থাকে। (৪) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে যে দু’ব্যক্তি পরস্পর মহব্বত রাখে, উভয়ে একত্রিত হয় সেই মহব্বতের উপর আর পৃথক হয় সেই মহব্বতের উপর। (৫) এমন ব্যক্তি যাকে সম্ভ্রান্ত সুন্দরী নারী (অবৈধ মিলনের জন্য) আহ্বান জানিয়েছে তখন সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। (৬) যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সদাকাহ করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তাতে আল্লাহর ভয়ে তার চোখ হতে অশ্রু বের হয়ে পড়ে। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩৬ হাঃ ১৪২৩, মুসলিম ১২/৩০ হাঃ ১০৩১)
সুস্থাবস্থায় সম্পদের প্রতি আকর্ষণ থাকাকালীন সদাকাহ্ই উত্তম সদাকাহ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সাহাবী আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন্ সদাকাহর সওয়াব বেশি পাওয়া যায়? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার সদাকাহ করা যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। সদাকাহ করতে এ পর্যন্ত দেরী করবে না যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু, অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১১ হাঃ ১৪১৯, মুসলিম ১২/৩১, হাঃ ১০৩২)
উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত হল দানকারী এবং নিচের হাত যাচঞ্চাকারী।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মিম্বারের উপর থাকা অবস্থায় সদাকাহ করা ও ভিক্ষা করা হতে বেঁচে থাকা ও ভিক্ষা করা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেনঃ উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতার, আর নীচের হাত হলো ভিক্ষুকের। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১৮ হাঃ ১৪২৯, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৩) ওহায়ব (রহ.) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /১৮ হাঃ ১৪২৮, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৪) হাকিম ইব্নু হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন, আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে হাকিম! এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ব্যতীত) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপরের হাত নিচের হাত হতে উত্তম। হাকীম (রহ.) বলেন, আমি বললাম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত (সওয়াল করে) আমি কাউকে সামান্যতমও ক্ষতিগ্রস্ত করবো না। এরপর আবূ বকর (রাঃ) হাকীম (রহ.)-কে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তিনি তাঁর কাছ হতে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) (তাঁর যুগে) তাঁকে কিছু দেয়ার জন্য ডাকলেন। তিনি তাঁর কাছ হতেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, মুসলিমগণ! হাকিম (রহ.)-এর ব্যাপারে আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি। আমি তাঁর এই গনীমত হতে তাঁর প্রাপ্য পেশ করেছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। (সত্য সত্যই) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর হাকীম (রাঃ) মৃত্যু অবধি কারো নিকট কিছু চেয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করেননি। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৫০ হাঃ ১৪৭২, মুসলিম ১২/৩২, হাঃ ১০৩৫)
ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হওয়া।
হুমায়দ ইব্নু ‘আবদুর রহমান (রহ.) তিনি বলেনঃ আমি মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ইলম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহ্র হুকুমের উপর কায়েম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী পর্ব ৩ : /১৩ হাঃ ৭১, মুসলিম ১২/৩৩ হাঃ ১০৩৭)
প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে প্রয়োজন মিটতে পারে আর তার অবস্থা দেখে বোঝাও যায় না যে তাকে সদাকাহ করা যাবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রকৃত মিসকীন সে নয় যে মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়ায় এবং এক-দু’ লোকমা অথবা এক-দু’টি খেজুর পেলে ফিরে যায় বরং প্রকৃত মিসকীন সেই ব্যক্তি, যার এতটুকু সম্পদ নেই যাতে তার প্রয়োজন মিটতে পারে এবং তার অবস্থা সেরূপ বোঝা যায় না যে, তাকে দান খয়রাত করা যাবে আর সে মানুষের কাছে যাচঞ্চা করে বেড়ায় না। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৩৫ হাঃ ১৪৭৯, মুসলিম ১২/৩৪ হাঃ ১০৩৯)
মানুষের নিকট যাচঞ্চা করা অপছন্দনীয়।
‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কিয়ামাতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার মুখমণ্ডলে কোন গোশ্ত থাকবে না। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৫২ হাঃ ১৪৭৫, মুসলিম ১২/৩৫ হাঃ ১০৪০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ী সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /১৫ হাঃ ২০৭৪, মুসলিম ১২/৩৫, হাঃ ১০৪২)
যাচঞ্চা বা লোভ করা ব্যতীত যা দেয়া হয় তা গ্রহণ করা বৈধ।
‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, যে আমার চেয়ে বেশি অভাবগ্রস্ত, তাকে দিন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ তা গ্রহণ কর। যখন তোমার কাছে এসব মালের কিছু আসে অথচ তার প্রতি তোমার অন্তরে লোভ নেই এবং তার জন্য তুমি প্রার্থী নও, তখন তা তুমি গ্রহণ করবে। এরূপ না হলে তুমি তার প্রতি অন্তর ধাবিত করবে না। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৫১ হাঃ ১৪৭৩, মুসলিম ১২/৩৬, হাঃ ১০৪৫)
দুনিয়ার (সম্পদের) প্রতি লোভ-লালসা অপছন্দনীয়।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, বৃদ্ধ লোকের অন্তর দু’টি ব্যাপারে সর্বদা যুবক থাকে। এর একটি হল দুনিয়ার মুহাব্বাত, আরেকটি হল উচ্চাকাঙক্ষা। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৫ হাঃ ৬৪২০, মুসলিম ১২/৩৮ হাঃ ১০৪৬) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদাম সন্তানের বয়স বাড়ে আর তার সাথে দু’টি জিনিসও বৃদ্ধি পায়; ধন-সম্পদের মহব্বত ও দীর্ঘায়ুর আকাঙক্ষা। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৫ হাঃ ৬৪২১, মুসলিম ১২/৩৮ হাঃ ১০৪৭)
বানী আদামের যদি দু’টি উপত্যকা থাকে তাহলে সে তৃতীয়টি চাইবে।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি আদাম সন্তানের স্বর্ণ পরিপূর্ণ একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দু’টি উপত্যকার কামনা করবে। তার মুখ একমাত্র মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই ভরতে পারবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি তাওবাহ করে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ কবূল করেন। (বুখারী পর্ব ৮১ : /১০ হাঃ ৬৪৩৯, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৪৮) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ বানী আদমের জন্য যদি এক উপত্যকা পরিমাণ ধনসম্পদ থাকে, তা‘হলে সে আরও ধন অর্জনের জন্য লালায়িত থাকবে। বানী আদামের লোভী চোখ মাটি ব্যতীত আর কিছুই তৃপ্ত করতে পারবে না। তবে যে তাওবাহ করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার তাওবাহ কবূল করবেন। (বুখারী পর্ব ৮১ : /১০ হাঃ ৬৪৩৭, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৪৯)
অধিক ধন-সম্পদ থাকলেই ধনী নয়।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৈষয়িক প্রাচুর্য ঐশ্বর্য নয় বরং প্রকৃত ঐশ্বর্য হল অন্তরের ঐশ্বর্য। (বুখারী পর্ব ৮১ : /১৫ হাঃ ৬৪৪৬, মুসলিম হাঃ)
দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে যা বেরিয়ে আসবে সে ব্যাপারে ভয় করা।
আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য যমীনের বরকতসমূহ প্রকাশিত করে দেবেন, আমি তোমাদের জন্য এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞেস করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কী? তিনি বললেনঃ দুনিয়ার জাঁকজমক। তখন এক ব্যক্তি তাঁর কাছে বললেন, ভাল কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তাঁর উপর (ওয়াহয়ী) নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তাঁর কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞেস করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ভাল একমাত্র ভালকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনদৌলত সবুজ শ্যামল সুমিষ্টি। অবশ্যি বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষণকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে যে প্রাণী পেট ভরে খেয়ে সূর্যমুখী হয়ে জাবর কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃ খায় (এর অবস্থা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধনদৌলত তদ্রƒপ সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যয় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহণ করবে, তার অবস্থা হবে ঐ ব্যক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না। (বুখারী পর্ব ৮১ : /৭ হাঃ ৬৪২৭, মুসলিম ১২/৪১ হাঃ ১০৫২) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তিনি বললেনঃ আমার পরে তোমাদের ব্যাপারে আমি যা আশঙ্কা করছি তা হলো এই যে দুনিয়ার চাকচিক্য ও সৌন্দর্য (ধন-সম্পদ) তোমাদের সামনে খুলে দেয়া হবে। এক সহাবী বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কল্যাণ কি কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে? এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব হলেন। প্রশ্নকারীকে বলা হলো, তোমার কী হয়েছে? তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলছ, কিন্তু তিনি তোমাকে জওয়াব দিচ্ছেন না? তখন আমরা অনুভব করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাঁর ঘাম মুছলেন এবং বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? যেন তার প্রশ্নকে প্রশংসা করে বললেন, কল্যাণ কখনো অকল্যাণ বয়ে আনে না। অবশ্য বসন্ত মৌসুম যে ঘাস উৎপন্ন করে তা (সবটুকুই সুস্বাদু ও কল্যাণকর বটে তবে) অনেক সময় হয়ত (ভোজনকারী প্রাণীর) জীবন নাশ করে অথবা তাকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়। তবে ঐ তৃণভোজী জন্তু, যে পেট ভরে খাওয়ার পর সূর্যের তাপ গ্রহণ করে এবং মল ত্যাগ করে, প্রস্রাব করে এবং পুনরায় চলে (সেই মৃত্যু থেকে রক্ষা পায় তেমনি) এই সম্পদ হলো আকর্ষণীয় সুস্বাদু। কাজেই সে-ই ভাগ্যবান মুসলিম, যে এই সম্পদ থেকে মিসকীন, ইয়াতীম ও মুসাফিরকে দান করে অথবা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ বলেছেন, আর যে ব্যক্তি এই সম্পদ অন্যায়ভাবে উপার্জন করে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে এবং তার পেট ভরে না। ক্বিয়ামাত দিবসে ঐ সম্পদ তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৪৭ হাঃ ১৪৬৫, মুসলিম ১২/৪১ হাঃ ১০৫২)
যাচঞ্চা থেকে বিরত থাকা ও ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) কিছু সংখ্যক আনসারী সহাবী আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন, পুনরায় তাঁরা চাইলে তিনি তাঁদের দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেল। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট যে মাল থাকে তা তোমাদের না দিয়ে আমার নিকট জমা রাখি না। তবে যে চাওয়া হতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন আর যে পরমুখাপেক্ষী না হয়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে সবর দান করেন। সবরের চেয়ে উত্তম ও ব্যাপক কোন নি‘আমত কাউকে দেয়া হয়নি। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৫০ হাঃ ১৪৬৯, মুসলিম ১২/৪২, হাঃ ১০৫৩)
অল্পে তুষ্ট থাকা।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করতেনঃ হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারকে প্রয়োজনীয় জীবিকা দান করুন। (বুখারী পর্ব ৮১ : /১৭ হাঃ ৬৪৬০, মুসলিম ১২/৪৩ হাঃ ১০৫৫)
ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যে চায় অশ্লীল ও কঠোরভাবে।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে চলছিলাম। এ সময় তাঁর পরিধানে চওড়া পাড় বিশিষ্ট একটি নাজরানী ডোরাদার চাদর ছিল। একজন বেদুঈন তাঁর কাছে এলো। সে তাঁর চাদর ধরে খুব জোরে টান দিল। এমন কি আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। অতঃপর সে বললঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার নিকট আল্লাহ্র যে সম্পদ আছে, তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলুন। আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে ফিরে তাকিয়ে হাসলেন এবং তাকে কিছু দান করার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৫৮০৯, মুসলিম ১২/৪৪ হাঃ ১০৫৭) মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কিছু কবা’ (পোশাক বিশেষ) বণ্টন করলেন। কিন্তু মাখরামাহকে তা হতে একটিও দিলেন না। মাখরামাহ (রাঃ) তখন (ছেলেকে) বললেন, প্রিয় বৎস! আমাকে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে নিয়ে চল। [মিসওয়ার (রাঃ) বলেন] আমি তার সঙ্গে গেলাম, তখন তিনি আমাকে বললেন, যাও, ভেতরে গিয়ে তাঁকে আমার জন্য আহ্বান জানাও। [মিসওয়ার (রাঃ)] বলেন, অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আহ্বান জানালাম। তিনি বেরিয়ে এলেন। তখন তাঁর নিকট একটি কবা ছিল। তিনি বললেন, এটা আমি তোমার জন্য হিফাযত করে রেখে দিয়েছিলাম। মাখরামাহ (রাঃ) সেটি তাকিয়ে দেখলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মাখরামাহ খুশী হয়ে গেছে। (বুখারী পর্ব ৫১ : /১৯ হাঃ ২৫৯৯, মুসলিম ১২/৪৪ হাঃ ১০৫৮)
ঐ ব্যক্তিকে প্রদান যার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবার ভয় রয়েছে।
সা‘দ ইব্নু আবূ ওক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোককে কিছু দান করলেন। আমি তাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্য হতে এক ব্যক্তিকে কিছুই দিলেন না। অথচ সে ছিল আমার বিবেচনায় তাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গিয়ে চুপে চুপে বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আমি তো তাকে অবশ্য মু’মিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম (বল)। সা’দ (রাঃ) বলেন, এরপর আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মু’মিন বলে মনে করি। তিনি বললেনঃ বরং মুসলিম। এবারও কিছুক্ষণ নীরব রইলাম। আবার তার সম্পর্কে আমার ধারণা প্রবল হয়ে উঠলে আমি বললাম, অমুক সম্পর্কে আপনার কী হলো? আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে মু’মিন বলে মনি করি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অথবা মুসলিম! এভাবে তিনবার বললেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অন্য ব্যক্তি আমার নিকট অধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি আরেকজনকে দিয়ে থাকি এই আশঙ্কায় যে, তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৫৩ হাঃ ১৪৭৮, মুসলিম ১২/৫৪ হাঃ ১৫০)
ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রদান এবং যাদের ঈমান শক্ত তাদের ধৈর্য ধারণ করা।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) যখন আল্লাহ্ তা‘আলা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হাওয়াযিন গোত্রের মাল থেকে যা দান করার তা দান করলেন। আর তিনি কুরাইশ গোত্রের লোকদের একশ’ করে উট দিতে লাগলেন। তখন আনসারদের হতে কিছু সংখ্যক লোক বলতে লাগল, আল্লাহ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ষমা করুন। তিনি কুরাইশদেরকে দিচ্ছেন, আমাদেরকে দিচ্ছেন না। অথচ আমাদের তলোয়ার থেকে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাদের কথা পৌঁছান হল। তখন তিনি আনসারদের ডেকে পাঠালেন এবং চর্ম নির্মিত একটি তাঁবুতে তাদের একত্রিত করলেন আর তাঁদের সঙ্গে তাঁদের ব্যতীত আর কাউকে ডাকলেন না। যখন তাঁরা সকলে একত্রিত হলেন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘আমার নিকট তোমাদের ব্যাপারে যে কথা পৌঁছেছে তা কী?’ তাঁদের মধ্যে বয়স্ক লোকেরা তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য থেকে বয়স্করা কিছুই বলেননি। আমাদের কতিপয় তরুণরা বলেছেঃ আল্লাহ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ষমা করুন। তিনি আনসারদের না দিয়ে কুরায়শদের দিচ্ছেন; অথচ আমাদের তরবারি হতে এখনও তাদের রক্ত ঝরছে।’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি এমন লোকদের দিচ্ছি, যাদের কুফরীর যুগ মাত্র শেষ হয়েছে। তোমরা কি এতে খুশী নও যে, লোকেরা দুনিয়াবী সম্পদ নিয়ে ফিরবে, আর তোমরা আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে মনযিলে ফিরবে আর আল্লাহ্র কসম, তোমরা যা নিয়ে মনযিলে ফিরবে, তা তারা যা নিয়ে ফিরবে, তার চেয়ে উত্তম।’ তখন আনসারগণ বললেন, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রসূল! আমরা এতেই সন্তুষ্ট।’ অতঃপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমার পরে তোমরা তোমাদের উপর অন্যদের খুব প্রাধান্য দেখতে পাবে। তখন তোমরা ধৈর্য অবলম্বন করবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাউযে কাওসারে মিলিত হবে।’ আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু আমরা ধৈর্যধারণ করতে পারিনি। (বুখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৩১৪৭, মুসলিম হাঃ) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের বললেন, তোমাদের মধ্যে অপর গোত্রের কেউ আছে কি? তারা বললেন না, অন্য কেউ নেই। তবে আমাদের এক ভাগিনা আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন কোন গোত্রের ভাগ্নে সে গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত। (বুখারী পর্ব ৬১ : /১৪ হাঃ ৩৫২৮, মুসলিম হাঃ) আবূ তাইয়্যাহ (রহ.) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মাক্কাহ বিজয়ের দিন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদেরকে মালে গনীমত দিলে কিছু সংখ্যক আনসার বলেছিলেন যে, এ বড় আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি কুরাইশদের মাল দিলেন অথচ আমাদের তলোয়ার হতে তাদের রক্ত এখনও ঝরছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ কথা পৌঁছলে তিনি আনসারদেরকে ডেকে বললেন, আমি তোমাদের হতে যে কথাটি শুনতে পেলাম, সে কথাটি কী? যেহেতু তাঁরা মিথ্যা কথা বলতেন না, সেহেতু তাঁরা বললেন, আপনার নিকট যা পৌঁছেছে তা সত্যই। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, লোকজন গনীমতের মাল নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যাবে আর তোমরা আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে নিজ ঘরে ফিরবে। যদি আনসারগণ উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়ে চলে তবে আমি আনসারদের উপত্যকা বা গিরিপথ দিয়েই চলব। (বুখারী পর্ব ৬৩ : /১ হাঃ ৩৭৭৮, মুসলিম হাঃ) আনাস (ইবনু মালিক) (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাওয়াযিন গোত্রের মুখোমুখী হলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল দশ হাজার (মুহাজির ও আনসার সৈনিক) এবং (মাক্কাহ্র) নও-মুসলিম। যুদ্ধে এরা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। এ মুহূর্তে তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, ওহে আনসার সকল! তাঁরা জওয়াব দিলেন, আমরা হাযির, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনার সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত এবং আপনার সামনেই আমরা উপস্থিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্র বান্দা এবং তাঁর রসূল। মুশরিকরা পরাজিত হল। তিনি নও-মুসলিম এবং মুহাজিরদেরকে (গনীমত) বণ্টন করে দিলেন। আর আনসারদেরকে কিছুই দিলেন না। (এতে তারা নিজেদের মধ্যে সে কথা বলাবলি করছিল।) তখন তিনি তাদেরকে ডেকে এনে একটি তাঁবুর ভিতর জমায়েত করলেন এবং বললেন, তোমরা কি সন্তুষ্ট থাকবে না যে, লোকজন বকরী ও উট নিয়ে যাবে আর তোমরা যাবে আল্লাহ্র রসূলকে নিয়ে। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বললেন, যদি লোকজন উপত্যকা দিয়ে চলে আর আনসাররা গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের গিরিপথকেই বেছে নেব। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৫৬ হাঃ ৪৩৩৩, মুসলিম হাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ ইবনু আসিম (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের দিবসে আল্লাহ যখন আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই দিলেন না। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তাঁরা তা পাননি। অথবা তিনি বলেছেনঃ তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যেরা যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি, অতঃপর আল্লাহ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে দরিদ্র, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোন কথা বলেছেন তখন আনসারগণ জবাবে বলেছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্র রসূলের জবাব দিতে তোমাদেরকে বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে যাচ্ছেন, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছে করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন কিন্তু তোমরা কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহ্র নাবীকে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোন উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হচ্ছে (নববী) ভিতরের পোশাক আর অন্যান্য লোক হচ্ছে উপরের পোশাক। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে (দ্বীনের উপর টিকে থাকবে) যে পর্যন্ত না তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ কর। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৫৬ হাঃ ৪৩৩০, মুসলিম ১২/৪৬, হাঃ ১০৬১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ(রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কোন লোককে বণ্টনে অন্যদের উপর অগ্রাধিকার দেন। তিনি আকরা‘ ইব্নু হাবিছকে একশ’ উট দিলেন। উয়াইনাকেও এ পরিমাণ দেন। উচ্চবংশীয় আরব ব্যক্তিদের দিলেন এবং বণ্টনে তাদের অতিরিক্ত দিলেন। এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহ্র কসম! এতে সুবিচার করা হয়নি। অথবা সে বলল, এতে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি খেয়াল রাখা হয়নি। (রাবী বলেন) তখন আমি বললাম, আল্লাহ্র কসম! আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবশ্যই এ কথা জানিয়ে দিব। তখন আমি তাঁর নিকট এলাম এবং তাঁকে একথা জানিয়ে দিলাম। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি সুবিচার না করেন, তবে কে সুবিচার করবে? আল্লাহ তা‘আলা মূসা (‘আ.)-এর প্রতি রহম করুন, তাঁকে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি সবর করেছেন।’ (বুখারী পর্ব ৫৭ : /১৯ হাঃ ৩১৫০, মুসলিম ১২/৩৯ হাঃ ১০৬৮)
খারিজীদের বর্ণনা ও তাদের বৈশিষ্ট্য।
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জি‘য়রানা নামক জায়গায় গানীমাতের মাল বণ্টন করছিলেন, তখন এক ব্যক্তি বলল, ইনসাফ করুন। তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে তুমি হবে হতভাগা।’ (বুখারী পর্ব ৫৭ : /১৫ হাঃ ৩১৩৭, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৩) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু স্বর্ণের টুকরো পাঠালেন। তিনি তা চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। (১) আল-আকরা‘ ইবনু হানযালী যিনি মাজাশেয়ী গোত্রের ছিলেন। (২) ‘উইয়াইনাহ ইবনু বাদার ফাযারী। (৩) যায়দ ত্বায়ী, যিনি পরে বনী নাবহান গোত্রের ছিলেন। (৪) ‘আলকামাহ ইবনু উলাসা ‘আমিরী, যিনি বনী কিলাব গোত্রের ছিলেন। এতে কুরাইশ ও আনসারগণ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বলতে লাগলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজদবাসী নেতৃবৃন্দকে দিচ্ছেন আর আমাদেরকে দিচ্ছেন না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তো তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এমন মনোরঞ্জন করছি। তখন এক ব্যক্তি সামনে এগিয়ে আসল, যার চোখ দু’টি কোটরাগত, গণ্ডদ্বয় ঝুলে পড়া; কপাল উঁচু, ঘন দাড়ি এবং মাথা মোড়ানো ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহকে ভয় করুন। তখন তিনি বললেন, আমিই যদি নাফরমানী করি তাহলে আল্লাহর আনুগত্য করবে কে? আল্লাহ আমাকে পৃথিবীবাসীর উপর আমানতদার বানিয়েছেন আর তোমরা আমাকে আমানতদার মনে করছ না। তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইল। [আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন] আমি তাকে খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) বলে ধারণা করছি। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর অভিযোগকারী লোকটি যখন ফিরে গেল, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তির বংশ হতে বা এ ব্যক্তির পরে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে তারা কুরআন পড়বে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। দ্বীন হতে তারা এমনভাবে বেরিয়ে পড়বে যেমনি ধনুক হতে তীর বেরিয়ে যায়। তারা ইসলামের অনুসারীদেরকে (মুসলিমদেরকে) হত্যা করবে আর মূর্তি পূজারীদেরকে হত্যা করা হতে বাদ দেবে। আমি যদি তাদের পেতাম তাহলে তাদেরকে আদ জাতির মত অবশ্যই হত্যা করতাম। (বুখারী পর্ব ৬ : /৬ হাঃ ৩৩৪৪, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) ইয়ামান থেকে আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এক প্রকার (রঙিন) চামড়ার থলে করে সামান্য কিছু স্বর্ণ পাঠিয়েছিলেন। তখনও এগুলো থেকে সংযুক্ত মাটি পরিষ্কার করা হয়নি। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার জনের মাঝে স্বর্ণখণ্ডটি বণ্টন করে দিলেন। তারা হলেন, উয়াইনাহ ইবনু বাদ্র, আকরা ইবনু হারিস, যাইদ আল-খায়ল এবং চতুর্থ জন আলকামা কিংবা আমির ইবনু তুফাইল (রাঃ)। তখন সহাবীগণের মধ্য থেকে একজন বললেন, এটা পাওয়ার ব্যাপারে তাঁদের অপেক্ষা আমরাই অধিক হকদার ছিলাম। (রাবী) বলেন, কথাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। তাই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি আমার উপর আস্থা রাখ না অথচ আমি আসমানের অধিবাসীদের আস্থাভাজন, সকাল-বিকাল আমার কাছে আসমানের সংবাদ আসছে। রাবী বলেন, এমন সময়ে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। লোকটির চোখ দু’টি ছিল কোটরাগত, চোয়ালের হাড় যেন বেরিয়ে পড়ছে, উঁচু কপাল বিশিষ্ট, দাড়ি অতি ঘন, মাথাটি ন্যাড়া, পরনের লুঙ্গী উপরে উত্থিত। সে বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্কে ভয় করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার জন্য আফসোস! আল্লাহ্কে ভয় করার ব্যাপারে দুনিয়াবাসীদের মধ্যে আমি কি অধিক হকদার নই? রাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, লোকটি চলে গেলে খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমি কি লোকটির গর্দান উড়িয়ে দেব না? আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, হতে পারে সে সলাত আদায় করে। খালিদ (রাঃ) বললেন, অনেক সলাত আদায়কারী এমন আছে যারা মুখে এমন এমন কথা উচ্চারণ করে যা তাদের অন্তরে নেই। আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমাকে মানুষের দিল ছিদ্র করে, পেট চিরে দেখার জন্য বলা হয়নি। অতঃপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলেন। তখন লোকটি পিঠ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি বললেন, এ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব হবে যারা শ্র“তিমধুর কণ্ঠে আল্লাহ্র কিতাব তিলাওয়াত করবে অথচ আল্লাহ্র বাণী তাদের গলদেশের নিচে নামবে না। তারা দ্বীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেভাবে লক্ষ্যবস্তুর দেহ ভেদ করে তীর বেরিয়ে যায়। (বর্ণনাকারী বলেন) আমার মনে হয় তিনি এ কথাও বলেছেন, যদি আমি তাদেরকে পাই তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে সামূদ জাতির মতো হত্যা করে দেব। (বুখারী পর্ব ৬৪ : /৬১ হাঃ ৪৩৫১, মুসলিম ১২/৪৭, হাঃ ১০৬৪) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ভবিষ্যতে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যাদের সলাতের তুলনায় তোমাদের সলাতকে, তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযাকে এবং তাদের আমলের তুলনায় তোমাদের ‘আমালকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে; কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করবে না (অর্থাৎ অন্তরে প্রবেশ করবে না এবং তা লোক দেখানো হবে)। এরা দ্বীন (ইসলাম) থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমনভাবে নিক্ষিপ্ত তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে যায়। আর অন্য শিকারী সেই তীরের অগ্রভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পায়, তাতে কোন চিহ্ন নেই। সে তীরের ফলার পার্শ্বদেশদ্বয়েও নজর করে; অথচ সেখানে কিছু দেখতে পায় না। অবশেষে ঐ ব্যক্তি কোন কিছু পাওয়ার জন্য তীরের নিম্নভাগে সন্দেহ পোষণ করে। (বুখারী পর্ব ৬৬ : /৩৬ হাঃ ৫০৫৮, মুসলিম হাঃ) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গনীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বানু তামীম গোত্রের জুলখোয়াইসিরাহ্ নামে এক ব্যক্তি এসে হাযির হল এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি ইন্সাফ করুন। তিনি বললেন তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনসাফ না করি, তবে ইনসাফ করবে কে? আমি তো নিষ্ফল ও ক্ষতিগ্রস্ত হব যদি আমি ইনসাফ না করি। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে অনুমতি দিন আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই। তিনি বললেন, একে ছেড়ে দাও। তার এমন কিছু সঙ্গী সাথী রয়েছে তোমাদের কেউ তাদের সলাতের তুলনায় নিজের সলাত এবং সিয়াম নগণ্য বলে মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করে না। তারা দ্বীন হতে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে কিন্তু কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। কাঠের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। মাঝের অংশ দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অথচ তীরটি শিকারী জন্তুর নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্তমাংস পার হয়ে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হল এমন একটি কাল মানুষ যার একটি বাহু নারীর স্তনের মত অথবা মাংস খণ্ডের মত নড়াচড়া করবে। তারা লোকদের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে। আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি স্বয়ং আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে এ কথা শুনেছি। আমি এ-ও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘আলী ইব্নু আবূ তালিব (রাঃ) এদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। তখন ‘আলী (রাঃ) ঐ লোককে খুঁজে বের করতে আদেশ দিলেন। খোঁজ করে যখন আনা হল আমি মনোযোগের সঙ্গে তাকিয়ে তার মধ্যে ঐ সব চিহ্নগুলি দেখতে পেলাম, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন। (বুখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৬১০, মুসলিম ১২/৪৭ হাঃ ১০৬৪)
খারেজীদেরকে হত্যার ব্যাপারে উৎসাহিত করা।
‘আলী (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি যখন তোমাদের নিকট আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন হাদীস বর্ণনা করি, তখন আমার এমন অবস্থা হয় যে, তাঁর উপর মিথ্যারোপ করার চেয়ে আকাশ হতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় এবং আমরা নিজেরা যখন আলোচনা করি তখন কথা হল এই যে, যুদ্ধ ছল-চাতুরী মাত্র। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, শেষ যুগে একদল যুবকের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা মুখে খুব ভাল কথা বলবে। তারা ইসলাম হতে বেরিয়ে যাবে যেভাবে তীর ধনুক হতে বেরিয়ে যায়। তাদের ঈমান গলদেশ পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে না। যেখানেই এদের সঙ্গে তোমাদের দেখা মিলবে, এদেরকে তোমরা হত্যা করে ফেলবে। যারা তাদের হত্যা করবে তাদের এই হত্যার পুরস্কার আছে ক্বিয়ামাতের দিন। (বুখারী পর্ব ৬১ : /২৫, হাঃ ৩৬১১, মুসলিম ১২/৪৮ হাঃ ১০৬৬, আহমাদ ৬১৬)
খারিজীরা সৃষ্টি ও স্বভাবের দিক দিয়ে নিকৃষ্ট।
ইউসায়র ইব্নু ‘আমর (রহ.) তিনি বলেন, আমি সাহ্ল ইব্নু হুনায়ফ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খারিজীদের সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি, আর তখন তিনি তাঁর হাত ইরাকের দিকে বাড়িয়েছিলেন যে, সেখান থেকে এমন একটি কওম বের হবে যারা কুরআন পড়বে সত্য, কিন্তু তা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না, তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৮৮ : /৭ হাঃ ৬৯৩৪, মুসলিম হাঃ)
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর বংশধরদের জন্য যাকাত (গ্রহণ) হারাম। তারা হচ্ছে বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব। এছাড়া অন্যরা নয়।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, খেজুর কাটার মৌসুমে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে (সদাকাহর) খেজুর আনা হতো। অমুকে তার খেজুর নিয়ে আসতো, অমুকে এর খেজুর নিয়ে আসতো। এভাবে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে খেজুর স্তূপ হয়ে গেলো। হাসান ও হুসাইন (রাঃ) সে খেজুর নিয়ে খেলতে লাগলেন, তাদের একজন একটি খেজুর নিয়ে তা মুখে দিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন এবং তার মুখ হতে খেজুর বের করে বললেন, তুমি কি জান না যে, মুহাম্মাদের বংশধর (বনূ হাশিম) সদাকাহ ভক্ষণ করে না। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৫৭ হাঃ ১৪৮৫, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৬৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আমার ঘরে ফিরে যাই, আমার বিছানায় খেজুর পড়ে থাকতে দেখি। খাওয়ার জন্য আমি তা তুলে নেই। পরে আমার ভয় হয় যে, হয়ত তা সদাকাহর খেজুর হবে, তাই আমি তা রেখে দেই। (বুখারী পর্ব ৪৫ : /৪৫ হাঃ ২৪৩২, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৭১) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) পথ অতিক্রমকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়ে থাকা একটি খেজুর দেখে বললেন, এটা যদি সদাকাহর খেজুর বলে সংশয় না থাকতো, তবে আমি তা খেতাম। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) সূত্রে হাম্মাম (রহ.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার বিছানায় পড়ে থাকা খেজুর আমি খাই। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৪ হাঃ ২০৫৫, মুসলিম ১২/৫০, হাঃ ১০৭১)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী হাশিম ও বানী মুত্তালিবের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ, যদিও হাদিয়াদাতা সদাকাহর মাধ্যমে ঐ মালের মালিক হয়ে থাকে এবং ঐ জিনিসের বর্ণনা যে, সদাকাহ গ্রহীতা যখন তা গ্রহণ করে তখন সেটা সদাকাহর হুকুম হতে মুক্ত হয়ে যায় এবং তা প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হালাল হয়ে যায় যাদের জন্য সদাকাহ গ্রহণ করা হারাম।
আনাস (রাঃ) বারীরাহ (রাঃ)-কে সদাকাহকৃত গোশতের কিছু আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেয়া হল। তিনি বললেন, তা বারীরাহ’র জন্য সদাকাহ এবং আমাদের জন্য হাদিয়া। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৬২ হাঃ ১৪৯৫, মুসলিম ১২/৫২, হাঃ ১০৭৪) উম্মু ‘আতিয়্যাহ আনসারীয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বললেনঃ তোমাদের কাছে (খাবার) কিছু আছে কি? ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেনঃ না, তবে আপনি সদাকাহস্বরূপ নুসাইবাহকে বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছিলেন, সে তার কিছু পাঠিয়ে দিয়েছিল (তাছাড়া কিছু নেই। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সদাকাহ তার যথাস্থানে পৌঁছেছে। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৬২ হাঃ ১৪৯৪, মুসলিম হাঃ)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদিয়া গ্রহণ করতেন আর সদাকাহ ফিরিয়ে দিতেন।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সদাকাহ? যদি বলা হত সদাকাহ, তাহলে সহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হত হাদিয়া, তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সঙ্গে খাওয়ায় শরীক হতেন। (বুখারী পর্ব ৫১ : /৭ হাঃ ২৫৭৬, মুসলিম ১২/৫৩ হাঃ ১০৭৭)
সদাকাহ দানকারীর জন্য দু‘আ করা।
আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কোন গোত্র থেকে সদাকাহ আসত তখন তিনি দু‘আ করে বলতেন, হে আল্লাহ তুমি রহমত বর্ষণ কর, আর যখন আমার পিতা সদাকাহ নিয়ে আসতেন, তখন দু‘আ করে বলতেন, হে আল্লাহ তুমি আবূ আওফার বংশের উপর রহমত বর্ষণ কর। (বুখারী পর্ব ২৪ : /৬৪ হাঃ ১৪৯৮, মুসলিম ১২/৫৩, হাঃ ১০৭৮)