19. লি‘আন
লি‘আন
সাহ্ল ইবনু সা‘দ সা‘ঈদী (রাঃ) উওয়াইমার আজলানী (রাঃ) ‘আসিম ইবনু আদী আনসারী (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেনঃ হে আসিম! কী বল, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে (ব্যভিচার-রত অবস্থায়) পায়, তবে সে কি তাকে হত্যা করবে? আর এতে তোমরাও কি তাকে হত্যা করবে? (যদি সে হত্যা না করে) তাহলে কী করবে? হে আসিম! তুমি আমার এ বিষয়টি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস কর। এরপর আসিম (রাঃ) এ ব্যাপারে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ অপছন্দ করলেন এবং অশোভনীয় মনে করলেন। এমন কি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আসিম (রাঃ) যা শুনলেন, তাতে তার খুব খারাপ লাগল। আসিম (রাঃ) গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে উওয়াইমির এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আসিম! আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে কি উত্তর দিলেন? আসিম (রাঃ) উওয়াইমিরকে বললেনঃ তুমি আমার কাছে কোন ভাল কাজ নিয়ে আসনি। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে অপছন্দ করেছেন, সে সম্বন্ধে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। উওয়াইমির (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্র শপথ! তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে ক্ষান্ত হব না। এরপর উওয়াইমির (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁকে লোকদের মাঝে পেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! কী বলেন, কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে অপর ব্যক্তিকে (ব্যভিচার-রত) দেখতে পায়, সে কি তাকে হত্যা করবে? আর আপনারাও কি তাকে হত্যার বদলে হত্যা করবেন? অন্যথায় সে কী করবে? আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যাও তাকে নিয়ে এসো। সাহ্ল (রাঃ) বলেন, তারা উভয়ে লি‘আন করল। সে সময় আমি লোকদের সাথে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে ছিলাম। উভয়ে লি‘আন করা সমাপ্ত করলে উওয়াইমির বললঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! যদি আমি তাকে (স্ত্রী হিসাবে) রাখি, তবে আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি বলে প্রমাণিত হবে। এরপর আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দেয়ার পূর্বেই তিনি স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দিলেন। ইবনু শিহাব (রহ.) বলেনঃ উভয়কে পৃথক করে দেয়াই পরবর্তীতে লি‘আনকারীদ্বয়ের হুকুম হিসাবে পরিগণিত হলো। (বুখারী পর্ব ৬৮ : /৪, হাঃ ৫৩০৮; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লি‘আনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বলেছিলেন, আল্লাহ্ই তোমাদের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমাদের একজন মিথ্যুক। তার (মহিলার) উপর তোমার কোন অধিকার নেই। সে বললঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার মাল? তিনি বললেনঃ তোমার কোন মাল নেই। তুমি যদি সত্যই বলে থাক, তাহলে এ মাল তার লজ্জাস্থানকে হালাল করার বিনিময়ে হবে। আর যদি মিথ্যা বলে থাক, তবে এটা চাওয়া তোমার জন্য একান্ত অনুচিত। (বুখারী পর্ব ৬৮ : /৫৩, হাঃ ৫৩৫০; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রীকে লি‘আন করালেন এবং সন্তানের পৈতৃক সম্পর্ক ছিন্ন করে উভয়কে পৃথক করে দিলেন। আর সন্তান মহিলাকে দিয়ে দিলেন। (বুখারী পর্ব ৬৮ : /৩৫, হাঃ ৫৩১৫; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নু আদী (রাঃ) এ ব্যাপারে একটি কথা জিজ্ঞেস করে চলে গেলেন। এরপর তাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তার কাছে এসে অভিযোগ করল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে অপর এক ব্যক্তিকে পেয়েছে। আসিম (রাঃ) বললেনঃ অযথা জিজ্ঞাসার কারণেই আমি এ ধরনের বিপদে পড়তাম। এরপর তিনি লোকটিকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলেন এবং অভিযোগকারীর বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলেন। লোকটি ছিল হলদে হালকা দেহ ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর ঐ লোকটি যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে বলে সে অভিযুক্ত করে সে ছিল প্রায় কালো, মোটা ধরনের স্থুল দেহের অধিকারী। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আল্লাহ্! সমস্যাটি সমাধান করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করল, যাকে তার স্বামী তার কাছে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের (স্বামী-স্ত্রী) উভয়কে লি‘আন করালেন। এক ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সে বৈঠকেই জিজ্ঞেস করলঃ এ মহিলা সম্বন্ধেই কি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, “আমি যদি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম, তবে একেই রজম করতাম”? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না, সে ছিল (অন্য এক) মহিলা, যে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত। (বুখারী পর্ব ৬৮: /৩১, হাঃ ৫৩১০; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৭) মুগীরাহ (রাঃ) তিনি বলেছেন, সা‘দ ইব্নু ‘উবাদাহ (রাঃ) বললেন, আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে সোজা তরবারি দ্বারা হত্যা করব। এ উক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি সাদের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? আল্লাহ্র কসম! আমি তার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আর আল্লাহ্ আমার চেয়েও অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। আল্লাহ্ আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন হওয়ার কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (সর্বপ্রকার) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এইজন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদ দাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মস্তুতি আল্লাহ্র চেয়ে অধিক কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। (বুখারী পর্ব ৯৭ : /২০, হাঃ ৭৪১৬, মুসলিম ১৯, হাঃ ১৪৯৯) আবু হুরায়রাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার একটি কালো সন্তান জন্মেছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কিছু উট আছে কি? সে উত্তর করলঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সেগুলোর রং কেমন? সে বললঃ লাল। তিনি বললেনঃ সেগুলোর মধ্যে কোনটি ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তবে সেটিতে এমন বর্ণ কোত্থেকে এলো। লোকটি বললঃ সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারণে এরূপ হয়েছে। তিনি বললেনঃ তাহলে হতে পারে, তোমার এ সন্তানও বংশগত কারণে এরূপ হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৬৮ : /২৬, হাঃ ৫৩০৫; মুসলিম ১৯, হাঃ ১৫০০)