2. পবিত্রতা
সলাতের জন্য পবিত্রতা আবশ্যক।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বায়ু নির্গত হবার পর ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তোমাদের কারো সলাত কবুল করবেন না। (বুখারী পর্ব ৯০ : /২ হাঃ ৬৯৫৪, মুসলিম ২/১ হাঃ ২২৫)
ওযুর গুণাগুণ এবং তার পরিপূর্ণতা।
উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ) ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-এর উযুর পানি আনানেল। অতঃপর তিনি সে পাত্র হতে উভয় হাতের উপর পানি ঢেলে তা তিনবার ধুলেন। অতঃপর তাঁর ডান হাত পানিতে ঢুকালেন। অতঃপর কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। অতঃপর তাঁর মুখমণ্ডল তিনবার এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, অতঃপর মাথা মাসহ করলেন। অতঃপর উভয় পা তিনবার ধোয়ার পর বললেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করতে দেখেছি এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করে দু’রাক‘আত সলাত আদায় করবে এবং তার মধ্যে অন্য কোন চিন্তা মনে আনবে না, আল্লাহ্ তা‘আলা তার পূর্বকৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারী পর্ব ৪ : /২৪ হাঃ ১৬৪, মুসলিম ২/৩ হাঃ ২২৬)
নাবী (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ প্রসঙ্গে।
আমর ইবনু আবূ হাসান (রহ.) ‘আমর ইবনু আবূ হাসান (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এক পাত্র পানি আনালেন এবং তাঁদের (দেখাবার) জন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত উযূ করলেন। তিনি পাত্র থেকে দু’হাতে পানি ঢাললেন। তা দিয়ে হাত দু’টি তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তিন খাবল পানি নিয়ে কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়লেন। তারপর আবার হাত ঢুকালেন। তিনবার তাঁর মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) দু’ হাত কনুই পর্যন্ত দু’বার ধুলেন। তারপর আবার হাত ঢুকিয়ে উভয় হাত দিয়ে সামনে এবং পেছনে একবার মাত্র মাথা মাসহ করলেন। তারপর দু’ পা টাখনু পর্যন্ত ধুলেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৩৯ হাঃ ১৮৬, মুসলিম ২/৭ হাঃ ২৩৫)
নাকে পানি দেয়া ও ঝাড়া এবং ইস্তিন্জায় বেজোড় ঢিলা-পাথর ব্যবহার করা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উযূ করে সে যেন নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করে। আর যে শৌচকার্য করে সে যেন বিজোড় সংখ্যক ঢিলা ব্যবহার করে। (বুখারী পর্ব ৪ : /২৫ হাঃ ১৬১, মুসলিম ২/৮, হাঃ ২৩৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম হতে উঠল এবং উযূ করল তখন তার উচিত নাক তিনবার ঝেড়ে ফেলা। কারণ, শয়তান তার নাকের ছিদ্রে রাত কাটিয়েছে।’ (বুখারী পর্ব ৫৯ : /১১ হাঃ ৩২৯৫, মুসলিম ২/৮ হাঃ ২৩৮)
পদদ্বয় পরিপূর্ণভাবে ধৌত করার আবশ্যকতা।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) ‘‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সফরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের পিছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের নিকট পৌঁছলেন, এদিকে আমরা (‘আসরের) সলাত আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম এবং আমরা উযূ করছিলাম। আমরা আমাদের পা কোনমতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তিনি উচ্চৈস্বঃরে বললেনঃ পায়ের গোড়ালিগুলোর (শুকনো থাকার) জন্য জাহান্নামের ‘আযাব রয়েছে। তিনি দু’বার বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারী পর্ব ৩ : /৩ হাঃ ৯৬, মুসলিম ২/৯ হাঃ ২৪১) মুহাম্মদ ইবনু যিয়াদ (রহ.) মুহাম্মদ ইবনু যিয়াদ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আমাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। লোকেরা সে সময় পাত্র থেকে উযূ করছিল। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তমরূপে উযূ কর। কারণ আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পায়ের গোড়ালীগুলোর জন্য দোযখের ‘আযাব রয়েছে। (বুখারী পর্ব ৪ : /২৯ হাঃ ১৬৫, মুসলিম ২/৯, হাঃ ২৪২)
উযূর ভেতর চমকানোর স্থানগুলো বৃদ্ধিকরা মুস্তাহাব এবং উযূর অঙ্গগুলো ঠিকভাবে ধৌত করা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, উযূর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারী পর্ব ৪ : /৩ হাঃ ১৩৬, মুসলিম ২/১২, হাঃ ২৪৬)
মিসওয়াক
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকেদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সলাতের সাথে তাদের মিস্ওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী পর্ব ১১ : /৮ হাঃ ৮৮৭, মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫২) আবূ মূসা (রাঃ) আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তখন তাঁকে দেখলাম তিনি মিসওয়াক করছেন এবং মিসওয়াক মুখে দিয়ে তিনি উ‘ উ‘ শব্দ করছেন যেন তিনি বমি করছেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৭৩ হাঃ ২৪৪, মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি (স্বপ্নে) দেখলাম যে, আমি মিসওয়াক করছি। আমার নিকট দু’ ব্যক্তি এলেন। একজন অপরজন হতে বয়সে বড়। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে কনিষ্ঠ ব্যক্তিকে মিসওয়াক দিতে গেলে আমাকে বলা হলো, ‘বড়কে দাও’। তখন আমি তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে দিলাম। আবূ ‘আবদুল্লাহ বলেন, ‘নু‘আয়ম, ইবনুল মুবারাক সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৭৩ হাঃ ২৪৬, মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭১)
ফিতরাতের স্বভাব।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাব) পাঁচটিঃ খাৎনা করা, ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নীচে), বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা ও গোঁফ ছোট করা। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /৬৩ হাঃ ৫৮৮৯, মুসলিম ২/১৬ হাঃ ২৫৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবেঃ দাঁড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /৬৪ হাঃ ৫৮৯২, মুসলিম ২/১৬ হাঃ ২৫৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ অধিক ছোট করবে এবং দাঁড়ি বড় রাখবে। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /৬৫ হাঃ ৫৮৯৩, মুসলিম ২/১৬ হাঃ ২৫৯)
(পেশাব-পায়খানা করার সময় কা‘বার দিকে মুখ বা পিঠ না করার ব্যাপারে) সতর্কতা অবলম্বন করা।
আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন কিবলাহর দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্ব দিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) বলেনঃ আমরা যখন সিরিয়ায় এলাম তখন পায়খানাগুলো কিবলামুখী বানানো পেলাম। আমরা কিছুটা ঘুরে বসতাম এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবাহ ইসতেগফার করতাম। (বুখারী পর্ব ৮ : /২৯ হাঃ ৩৯৪, মুসলিম ২/১৭ হাঃ ২৬৪) আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘লোকে বলে পেশাব পায়খানা করার সময় কিবলার দিকে এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে বসবে না।’ ‘আবদুল্লাহ্ ইব্ন ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি একদা আমাদের ঘরের ছাদে উঠলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে দু’টি ইটের উপর স্বীয় প্রয়োজনে বসেছেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /১২ হাঃ ১৪৫, মুসলিম ২/১৭, হাঃ ২৬৬) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আমার বিশেষ এক প্রয়োজনে হাফসাহ (রাঃ)-এর ঘরের ছাদে উঠলাম। তখন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলার দিকে পিঠ দিয়ে শাম-এর দিকে মুখ করে তাঁর প্রয়োজনে বসেছেন।’ (বুখারী পর্ব ৪ : /১৪ হাঃ ১৪৮, মুসলিম ২/১৭ হাঃ ২৬৬)
ডান হাত দ্বারা ইস্তিন্জা করা নিষিদ্ধ।
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায় তখন তার পুরুষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দিয়ে যেন শৌচকার্য না করে। (বুখারী পর্ব ৪ : /১৮ হাঃ ১৫৩, মুসলিম ২/১৮, হাঃ ২৬৭)
পবিত্রতা হাসিল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা।
আয়িশাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা প্রত্যেক কাজই ডান দিক হতে আরম্ভ করতে পছন্দ করতেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /২১ হাঃ ১৬৮, মুসলিম ২/১৯, হাঃ ১৬৮)
পেশাব-পায়খানায় পানি দ্বারা ইস্তিন্জা করা।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানায় যেতেন তখন আমি এবং একটি ছেলে পানির পাত্র এবং ‘আনাযাহ’ নিয়ে যেতাম। তিনি পানি দ্বারা শৌচকার্য করতেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /১৭ হাঃ ১৫২, মুসলিম ২/২১, হাঃ ২৭১) আনাস ইব্নু মালিক (রাযি আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে আমি তাঁর নিকট পানি নিয়ে যেতাম। তিনি তা দিয়ে শৌচকার্য করতেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫৬ হাঃ ২১৭, মুসলিম ২/২১, হাঃ ২৭১)
দু’ মোজার উপর মাসাহ করা।
হাম্মাম ইব্নু হারিস (রাঃ) হাম্মাম ইব্নু হারিস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রহ.)-কে দেখলাম যে, তিনি পেশাব করলেন। অতঃপর উযূ করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসহ্ করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও এরূপ করতে দেখেছি। (বুখারী পর্ব ৮ : /২৫ হাঃ ৩৮৭, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭২) ১৫৫. জারীর ইব্নু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি পেশাব করলেন। অতঃপর উযূ করলেন আর উভয় মোজার উপরে মাসহ্ করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও এরূপ করতে দেখেছি। (বুখারী পর্ব ৮ : /২৫ হাঃ ৩৮৭, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭২) হুযায়ফাহ (রাঃ) হুযায়ফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমার স্মরণ আছে যে, একদা আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাথে চলছিলাম। তিনি দেয়ালের পিছনে মহল্লার একটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় এলেন। অতঃপর তোমাদের কেউ যেভাবে দাঁড়ায় সে ভাবে দাঁড়িয়ে তিনি পেশাব করলেন। এ সময় আমি তাঁর নিকট হতে সরে যাচ্ছিলাম কিন্তু তিনি আমাকে ইঙ্গিত করলেন। আমি এসে তাঁর পেশাব করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে রইলাম। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬১ হাঃ ২২৫, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭৩) মুগীরাহ ইব্নু শু‘বা (রাঃ) মুগীরাহ ইব্নু শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গেলে তিনি (মুগীরাহ) পানিসহ একটি পাত্র নিয়ে তাঁর অনুসরণ করলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষ করে এলে তিনি তাঁকে পানি ঢেলে দিলেন। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন এবং উভয় মোজার উপর মাসহ করলেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৪৮ হাঃ ২০৩, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭৪) মুগীরাহ ইব্নু শু‘বা (রাঃ) মুগীরাহ ইব্নু শু‘বা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি কোন এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে মুগীরাহ! বদনাটি নাও। আমি তা নিলাম। তিনি আমার দৃষ্টির অগোচরে গিয়ে প্রয়োজন সারলেন। তখন তাঁর শরীরে ছিল শামী জুব্বা। তিনি জুব্বার আস্তিন হতে হাত বের করতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ হবার ফলে তিনি নীচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। আমি পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সলাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন। আর তাঁর উভয় চামড়ার মোজার উপর মাসহ করলেন ও পরে সলাত আদায় করলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৭ হাঃ ৩৬৩, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭৪) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (তাবূক) সফরে এক রাত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার সাথে পানি আছে কি? আমি বললামঃ হাঁ। তখন তিনি বাহন থেকে নামলেন এবং হেঁটে যেতে লাগলেন। তিনি এতদূর গেলেন যে, রাতের আঁধারে আমার থেকে অদৃশ্য হয়ে পড়লেন। অতঃপর তিনি ফিরে এলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁর (অযুর) পানি ঢালতে লাগলাম। তিনি মুখমণ্ডল ও দু’হাত ধৌত করলেন। তাঁর পরিধানে ছিল পশমের জামা। তিনি তা থেকে হাত বের করতে পারলেন না, তাই জামার নীচ দিয়ে বের করলেন এবং দু’হাত ধৌত করলেন। অতঃপর মাথা মাসহ করলেন। অতঃপর আমি তাঁর মোজা দু’টি খুলতে ইচ্ছে করলাম। তিনি বললেনঃ ছেড়ে দাও। কেননা, আমি পবিত্র অবস্থায় তা পরিধান করেছি। অতঃপর তিনি মোজাদ্বয়ের উপর মাসহ করেন। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /১১ হাঃ ৫৭৯৯, মুসলিম ২/২২, হাঃ ২৭৪)
কুকুর কোন কিছু চাটলে তার হুকুম।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমাদের কারো পাত্রে যদি কুকুর পান করে তবে তা যেন সাতবার ধুয়ে নেয়। (বুখারী পর্ব ৬০ : /৩৩ হাঃ ১৭২, মুসলিম ২/২৭, হাঃ ২৭৯)
আবদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষিদ্ধ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যেন স্থির- যা প্রবাহিত নয় এমন পানিতে কখনো পেশাব না করে। (সম্ভবত) পরে সে আবার তাতে গোসল করবে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬৮ হাঃ ২৩৯, মুসলিম ২/২৮, হাঃ ২৮২)
মাসজিদে পেশাব ও অন্যান্য অপবিত্র দ্রব্যাদি ধৌত করার অপরিহার্যতা এবং মাটি না খুঁড়ে পানির সাহায্যে পরিষ্কার হয়।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক বেদুঈন মাসজিদে প্রস্রাব করলো। লোকেরা উঠে (তাকে মারার জন্য) তার দিকে গেল। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তার প্রস্রাব করা বন্ধ করো না। অতঃপর তিনি এক বালতি পানি আনালেন এবং পানি প্রস্রাবের উপর ঢেলে দেয়া হলো। (বুখারী পর্ব ৭৮ : /৩৫ হাঃ ৬০২৫, মুসলিম ২/৩০, হাঃ ২৮৪)
দুধপানকারী শিশুর পেশাবের বিধান এবং তা ধৌত করার পদ্ধতি।
আয়িশাহ (রাঃ) আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে শিশুদের নিয়ে আসা হতো। তিনি তাঁদের জন্য দু‘আ করতেন। একবার একটি শিশুকে আনা হলো। শিশুটি তাঁর কাপড়ের উপর পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনালেন এবং তা তিনি কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন আর তিনি কাপড় ধুলেন না। (বুখারী পর্ব ৮০ : /৩ হাঃ ৬৩৫৫, মুসলিম ২/৩১, হাঃ ২৮৬) উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর এমন একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলেন যে তখনো খাবার খেতে শিখেনি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিশুটিকে তাঁর কোলে বসালেন। তখন সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনিয়ে এর উপর ছিটিয়ে দিলেন এবং তা ধৌত করলেন না।* (বুখারী পর্ব ৪ : /৫৯ হাঃ ২২৩, মুসলিম ২/৩১, হাঃ ২৮৭)
কাপড় থেকে মনী ধৌত করা এবং তা রগড়ানো।
সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (রাঃ) সুলায়মান ইব্নু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, ‘আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে কাপড়ে লাগা বীর্য সম্পর্র্কে জিজ্ঞেস করলাম।’ তিনি বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় হতে তা ধুয়ে ফেলতাম। তিনি কাপড় ধোয়ার ভিজা দাগ নিয়ে সলাতে বের হতেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬৪ হাঃ ২৩০, মুসলিম ২/৩২ হাঃ ২৮৮) ১৬৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি কাপড়ে লাগা বীর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বললেনঃ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় হতে তা ধুয়ে ফেলতাম। তিনি কাপড় ধোয়ার ভিজা দাগ নিয়ে সলাতে বের হতেন। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬৪ হাঃ ২৩০, মুসলিম ২/৩২ হাঃ ২৮৮)
রক্তের অপবিত্রতা এবং তা ধৌত করার পদ্ধতি।
আসমা (রাঃ) আসমা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল!) বলুন, আমাদের কারো কাপড়ে হায়যের রক্ত লেগে গেলে সে কী করবে? তিনি বললেনঃ সে তা ঘষে ফেলবে, তারপর পানি দিয়ে রগড়াবে এবং ভাল করে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর সেই কাপড়ে সলাত আদায় করবে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৬৩ হাঃ ২২৭, মুসলিম ২/৩৩, হাঃ ২৯১)
পেশাব অপবিত্র হওয়ার দলীল আর তার অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকার অপরিহার্যতা।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তিনি বললেনঃ এদের ‘আযাব দেয়া হচ্ছে, কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত। তারপর তিনি একখানি কাঁচা খেজুরের ডাল নিয়ে ভেঙ্গে দু’ভাগ করলেন এবং প্রত্যেক কবরের ওপর একখানি গেড়ে দিলেন। সহাবায়ে কিরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কেন এমন করলেন? তিনি বললেনঃ আশা করা যেতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব কিছুটা হালকা করা হবে। (বুখারী পর্ব ৪ : /৫৬ হাঃ ২১৮, মুসলিম ২/৩৪ হাঃ ২৯২)