20. ‘ইতক (মুক্তি)
‘ইতক (মুক্তি)
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ যদি কোন ক্রীতদাস হতে নিজের অংশ মুক্ত করে আর ক্রীতদাসের মূল্য পরিমাণ অর্থ তার কাছে থাকে, তবে তার উপর দায়িত্ব হবে ক্রীতদাসের ন্যায্য মূল্য নির্ণয় করা। তারপর সে শরীকদেরকে তাদের প্রাপ্য অংশ পরিশোধ করবে এবং ক্রীতদাসটি তার পক্ষ হতে মুক্ত হয়ে যাবে, কিন্তু (সে পরিমাণ অর্থ) না থাকলে তার পক্ষ হতে ততটুকুই মুক্ত হবে যতটুকু সে মুক্ত করেছে। (বুখারী পর্ব ৪৯ : /৪, হাঃ ২৫২২; মুসলিম ২০, হাঃ ১৫০১)
গোলামকে মুক্তিপণের অর্থ উপার্জনের সুযোগ দান ।
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ তার (শরীক) গোলাম হতে অংশ আযাদ করে দিলে তার দায়িত্ব হয়ে পড়ে নিজস্ব অর্থে সেই গোলামকে পূর্ণ আযাদ করা। যদি তার প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকে, তাহলে গোলামের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। তারপর (অন্য শরীকদের অংশ পরিশোধের জন্য) তাকে উপার্জনে যেতে হবে, তবে তার উপর অতিরিক্ত কষ্ট চাপানো যাবে না। (বুখারী পর্ব ৪৭ : /৫, হাঃ ২৪৯২; মুসলিম ২০/১, হাঃ ১৫০৩)
ওয়ালার মালিক হবে আযাদকারী ।
আয়িশাহ (রাঃ) বারীরাহ (রাঃ) একবার তার মুকাতাবাতের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন পর্যন্ত তিনি মুকাতাবাতের অর্থ হতে কিছুই আদায় করেননি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা সম্মত হলে আমি তোমার মুকাতাবাতের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব। আর তোমার ওয়ালার (অভিভাবকের) অধিকার আমার হবে। বারীরাহ (রাঃ) কথাটি তার মালিকের কাছে পেশ করলেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করল এবং বলল, তিনি যদি তোমাকে মুক্ত করে সওয়াব পেতে চান, তবে করতে পারেন। ওয়ালা আমাদেরই থাকবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পেশ করলে তিনি বললেন, তুমি খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা, যে মুক্ত করবে, সেই ওয়ালার অধিকারী হবে। (রাবী) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সহাবীগণের সমাবেশে) দাঁড়িয়ে বললেন, মানুষের কী হল, এমন সব শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই। যে এমন সব শর্তারোপ করবে, যা আল্লাহ্র কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা, আল্লাহ্র দেয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য। (বুখারী পর্ব ৫০: /২, হাঃ ২৫৬১; মুসলিম ২০/২, হাঃ ১৫০৪) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বারীরার মাধ্যমে (শারী‘আতের) তিনটি বিধান জানা গেছে। এক. তাকে আযাদ করা হলো, এরপর তাকে তার স্বামীর সাথে থাকা বা না থাকার ইখ্তিয়ার দেয়া হলো। দুই. আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আযাদকারী আযাদকৃত গোলামের পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হবে। তিন. আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলেন, দেখতে পেলেন ডেগে গোশ্ত উথলে উঠছে। তাঁর কাছে রুটি ও ঘরের অন্য তরকারী উপস্থিত করা হলো। তখন তিনি বললেনঃ গোশ্তের পাত্র দেখছি না যে যার ভিতর গোশ্ত ছিল? লোকেরা জবাব দিল, হ্যাঁ, কিন্তু সে গোশ্ত বারীরাকে সদাকাহ হিসাবে দেয়া হয়েছে। আর আপনি তো সদাকাহ খান না? তিনি বললেনঃ তার জন্য সদাকাহ, আর আমাদের জন্য এটা হাদিয়া। (বুখারী পর্ব ৬৮: /১৪, হাঃ ৫২৭৯; মুসলিম ২০/২, হাঃ ১৫০৪)
“ওয়ালা” বিক্রয় করা ও দান করা নিষিদ্ধ ।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রীতদাসের অভিভাবকত্ব বিক্রি করতে এবং তা দান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৪৯: /১০, হাঃ ২৫৩৫; মুসলিম ২০/৩, হাঃ ১৫০৬)
আযাদকৃত গোলামের জন্য আযাদকারী মনিব ছাড়া অন্যকে মনিব গণ্য করা নিষিদ্ধ ।
ইবরাহীম তায়মী (রহ.) তিনি বলেন, আমার পিতা বর্ণনা করেছেন যে, একদা ‘আলী (রাঃ) পাকা ইটে নির্মিত একটি মিম্বরে আরোহণ করে আমাদের উদ্দেশ্যে খুত্বা পাঠ করলেন। তাঁর সঙ্গে একটি তরবারী ছিল, যার মাঝে একটি সহীফা ঝুলন্ত ছিল। তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমাদের নিকট আল্লাহ্র কিতাব এবং যা এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ আছে এ ব্যতীত অন্য এমন কোন কিতাব নেই যা পাঠ করা যেতে পারে। অতঃপর তিনি তা খুললেন। তাতে উটের বয়স সম্পর্কে লেখা ছিল এবং লেখা ছিল যে, ‘আয়র’ (পর্বত) থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মাদীনাহ হারাম (পবিত্র এলাকা) বলে বিবেচিত হবে। যে কেউ এখানে কোন অন্যায় করবে তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশতাকুল ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তার ফারয ও নফল কোন ‘ইবাদাতই কবূল করবেন না এবং তাতে আরও ছিল যে, এখানকার সকল মুসলিমের নিরাপত্তা একই পর্যায়ের। একজন নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তিও (অন্য কাউকে) নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবে। যদি কোন ব্যক্তি অপর একজন মুসলিমের প্রদত্ত নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্র, ফেরেশতাকূলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের লা‘নাত (অভিসম্পাত)। আল্লাহ্ তা‘আলা তার ফার্য ও নফল কোন ‘ইবাদাতই কবূল করবেন না। তাতে আরও ছিল, যদি কোন ব্যক্তি তার (আযাদকারী) মনিবের অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে নিজের (গোলাম থাকাকালীন সময়ের) মনিব বলে উল্লেখ করে, তাহলে তার উপর আল্লাহ্র, ফেরেশতাকুলের ও সমস্ত মানব সম্প্রদায়ের অভিসম্পাত। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তার ফার্য, নফল কোন ‘ইবাদাতই গ্রহণ করবেন না। (বুখারী পর্ব ৯৬ : /৫, হাঃ ৭৩০০; মুসলিম ২০/৪, হাঃ ১৩৭০)
গোলাম আযাদ করার ফাযীলাত ।
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করলে আল্লাহ্ সেই ক্রীতদাসের প্রত্যেক অঙ্গের বিনিময়ে তার এক একটি অঙ্গ (জাহান্নামের) আগুন হতে মুক্ত করবেন। (বুখারী পর্ব ৪৯: /১, হাঃ ২৫১৭; মুসলিম ২০/৫, হাঃ ১৫০৯)