21. ক্রয়-বিক্রয়
স্পর্শ ও নিক্ষেপের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল হওয়া ।
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্পর্শ ও নিক্ষেপের পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৬৩, হাঃ ২১৪৬; মুসলিম ২১/১, হাঃ ১৫১১) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দু’ (দিনের) সওম ও দু’ (প্রকারের) ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর (দিনের) সওম এবং মুলামাসাহ ও মুনাবাযাহ (পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়) হতে। (বুখারী পর্ব ৩০ : /৬৭, হাঃ ১৯৯৩; মুসলিম ২১/১, হাঃ ১৫১১) আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ প্রকার কাপড় পরিধান করতে ও দু’ প্রকার ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয়ে তিনি ‘মুলামাসাহ’ ও ‘মুনাবাযাহ’ থেকে নিষেধ করেছেন। মুলামাসাহ হল, রাতে বা দিনে একজনের দ্বারা অপর জনের কাপড় হাত দিয়ে স্পর্শ করা। এটুকু ব্যতীত তা আর উলট-পালট করে দেখে না। আর মুনাবাযাহ হল, এক লোকের দ্বারা অন্য লোকের প্রতি তার কাপড় নিক্ষেপ করা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি দ্বারাও তার কাপড় নিক্ষেপ করা এবং এর দ্বারাই তাদের ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়া, দেখা ও পারস্পরিক সম্মতি ব্যতিরেকেই। আর দু’ প্রকার পোশাক পরিধানের (এর এক প্রকার) হল, ইশতিমালুস-সাম্মা’। সাম্মা হল এক কাঁধের উপর কাপড় এমনভাবে রাখা যাতে অন্য কাঁধ খালি থাকে, কোন কাপড় থাকে না। পোশাক পরার অন্য প্রকার হচ্ছে- বসা অবস্থায় নিজের কাপড় দ্বারা নিজেকে এমনভাবে ঘিরে রাখা, যাতে লজ্জাস্থানের উপর কাপড়ের কোন অংশ না থাকে। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /২০, হাঃ ৫৮২০; মুসলিম ২১/১, হাঃ ১৫১১)
পশুর পেটে আছে এমন বাচ্চা বিক্রয় হারাম ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গর্ভস্থিত বাচ্চার গর্ভের প্রসবের মেয়াদের উপর বিক্রি নিষেধ করেছেন। এ এক ধরনের বিক্রয়, যা জাহিলিয়াতের যুগে প্রচলিত ছিল। কেউ এ শর্তে উটনী ক্রয় করত যে, এই উটনীটি প্রসব করবে পরে ঐ শাবক তার গর্ভ প্রসব করার পর তার মূল্য দেয়া হবে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৬১, হাঃ ২১৪৩; মুসলিম ২১/৩, হাঃ ১৫১৪)
কোন ভাইয়ের দামদর করার উপর দামদর করা, কোন ভাই এর ক্রয়ের বিরুদ্ধে ক্রয় করা, ঠকানো ও পালানে দুধ জমা করার নিষিদ্ধতা ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয় না করে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৫৮, হাঃ ২১৩৯; মুসলিম ২১/৪, হাঃ ১৪১২) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (পণ্যবাহী) কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে) সাক্ষাৎ করবে না, তোমাদের কেউ যেন কারো ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে। তোমরা প্রতারণামূলক দালালী করবে না। শহরবাসী তোমাদের কেউ যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। তোমরা বকরীর দুধ আটকিয়ে রাখবে না। যে এরূপ বকরী ক্রয় করবে, সে দুধ দোহনের পরে এ দু’টির মধ্যে যেটি ভাল মনে করবে, তা করতে পারে। সে যদি এতে সন্তুষ্ট হয় তবে বকরী রেখে দিবে, আর যদি সে তা অপছন্দ করে তবে ফেরত দিবে এবং এক সা‘আ পরিমাণ খেজুর দিবে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৬৪, হাঃ ২১৫০; মুসলিম ২১/৪, হাঃ ১৫১৫) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে শহরের বাইরে গিয়ে বাণিজ্য বহরের কাফেলা থেকে মাল কিনতে নিষেধ করেছেন। আর বেদুঈনের পক্ষ হয়ে মুহাজিরদেরকে কোন কিছু বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর কোন স্ত্রীলোক যেন তার বোনের (অপর স্ত্রীলোকের) তালাকের শর্তারোপ না করে আর কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের দামের উপর দাম না করে এবং নিষেধ করেছেন দালালী করতে, (মূল্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে) এবং স্তন্যে দুধ জমা করতে (ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশে)। (বুখারী পর্ব ৫৪: /১১, হাঃ ২৭২৭; মুসলিম ২১/৪, হাঃ ১৫১৫)
অন্যায় সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে পথিমধ্যে বণিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নিষিদ্ধতা ।
আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (স্তন্যে) দুধ আটকিয়ে রাখা বকরী ক্রয় করে তা ফেরত দিতে চায়, সে যেন এর সঙ্গে এক সা‘আ পরিমাণ খেজুরও দেয়। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পণ্য ক্রয় করার জন্য) বণিক দলের সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে পথিমধ্যে) সাক্ষাৎ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৬৪, হাঃ ২১৪৯; মুসলিম ২১/৫, হাঃ ১৫১৮)
শহরবাসীর জন্য গ্রাম্য লোকের পক্ষে বিক্রয় করা হারাম ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা পণ্যবাহী কাফেলার সাথে (শহরে প্রবেশের পূর্বে সস্তায় পণ্য খরিদের উদ্দেশ্যে) সাক্ষাৎ করবে না এবং শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে। রাবী তাউস (রহ.) বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পক্ষে বিক্রয় না করে, তাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বললেন, তার হয়ে যেন সে প্রতারণামূলক দালালী না করে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৬৮, হাঃ ২১৫৮; মুসলিম ২১/৬, হাঃ ১৫২১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, গ্রামবাসীর পক্ষে শহরবাসী কর্তৃক বিক্রি করা হতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৭০, হাঃ ২১৬১; মুসলিম ২১/৬, হাঃ ১৫২৩)
মাল হস্তগত করার পূর্বে বিক্রয় বাতিল ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা নিষেধ করেছেন, তা হল অধিকারে আনার পূর্বে খাদ্য বিক্রয় করা। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি মনে করি, প্রত্যেক পণ্যের ব্যাপারে অনুরূপ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৫৫, হাঃ ২১৩৫; মুসলিম ২১/৮, হাঃ ১৫২৫) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি খাদ্য ক্রয় করবে, সে তা পুরোপুরি আয়ত্তে না এনে বিক্রি করবে না। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৫১, হাঃ ২১২৬; মুসলিম ২১/৮, হাঃ ১৫২৬) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বাজারের প্রান্ত সীমায় খাদ্য ক্রয় করে সেখানেই বিক্রি করে দিত। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থানান্তর না করে সেখানেই বিক্রি করতে তাদের নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৭২, হাঃ ২১৬৭; মুসলিম ২১/৮, হাঃ ১৫২৬)
উভয়ের সংযোগ ত্যাগ করার পূর্বে ক্রেতা ও বিক্রেতার ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার সুযোগ আছে ।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা প্রত্যেকের একে অপরের উপর ইখতিয়ার থাকবে, যতক্ষণ তারা বিচ্ছিন্ন না হবে। তবে খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়ে (বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও ইখতিয়ার থাকবে)। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৪৪, হাঃ ২১১১; মুসলিম ২১/১০, হাঃ ১৫৩১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন দু’ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় করে, তখন তাদের উভয়ে যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন না হবে অথবা একে অপরকে ইখতিয়ার প্রদান না করবে, ততক্ষণ তাদের উভয়ের ইখতিয়ার থাকবে। এভাবে তারা উভয়ে যদি ক্রয়-বিক্রয় করে তবে তা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। আর যদি তারা উভয়ে ক্রয়-বিক্রয়ের পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাদের কেউ যদি তা পরিত্যাগ না করে তবে ক্রয়-বিক্রয় সাব্যস্ত হয়ে যাবে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৪৫, হাঃ ২১১২; মুসলিম ২১/১০, হাঃ ১৫৩১)
বেচাকেনায় ও বর্ণনা দেয়ায় সত্য বলা ।
হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /১৯, হাঃ ২০৭৯; মুসলিম ২১/১০, হাঃ ১৫৩২)
যে বিক্রয়ে ধোঁকা দেয় ।
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করলেন যে, তাকে ক্রয়-বিক্রয়ে ধোঁকা দেয়া হয়। তখন তিনি বললেন, যখন তুমি ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন বলে নিবে কোন প্রকার ধোঁকা নেই। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৪৮, হাঃ ২১১৭; মুসলিম ২১/১২, হাঃ ১৫৩৩)
কেটে নেয়ার শর্ত ব্যতীত ফল উপযোগী হওয়ার পূর্বে বিক্রয় নিষিদ্ধ ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফলের উপযোগিতা প্রকাশ হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮৫, হাঃ ২১৯৪; মুসলিম ২১/১৩, হাঃ ১৫৩৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপযোগী হওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (এবং এ-ও বলেছেন যে) এর কিছুই দীনার ও দিরহাম এর বিনিময় ব্যতীত বিক্রি করা যাবে না, তবে আরায়্যাহ’র হুকুম এর ব্যতিক্রম। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৮৩, হাঃ ২১৮৯; মুসলিম ২১/১৩, হাঃ ১৫৩৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়ার এবং ওজন করার যোগ্য হওয়ার পূর্বে খেজুর বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আমি বললাম, এর ওজন করা কী? তখন তার নিকটে বসা একজন বলে উঠল, (অর্থাৎ) সংরক্ষণের উপযোগী হওয়া পর্যন্ত। (বুখারী পর্ব ৩৫ : /৪, হাঃ ২২৫০; মুসলিম ২১/১৩, হাঃ ১৫৩৭)
শুকনো খেজুরের বিনিময়ে রুতাব বা তাজা খেজুর বিক্রয় নিষিদ্ধ তবে আরায়্যা ব্যতীত ।
যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরিয়্যাহ এর মালিককে তা অনুমানে বিক্রি করার অনুমতি প্রদান করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৮২, হাঃ ২১৮৮; মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৩৪) সাহল ইবনু আবু হাসমাহ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনো খেজুরের বিনিময়ে তাজা খেজুর বিক্রি করতে বারণ করেছেন এবং আরিয়্যাহ-এর ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করেছেন। তা হল তাজা ফল অনুমানে বিক্রি করা, যাতে (ক্রেতা) তাজা খেজুর খাওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারে। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৮৩, হাঃ ২১৯১; মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৪০) সাহল ইবনু আবু হাসমাহ (রাঃ) তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ অর্থাৎ গাছে ফল থাকা অবস্থায় তা শুকনো ফলের বিনিময়ে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যারা আরায়্যাহ করে, তাদের জন্য তিনি এর অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৪২ : /১৭, হাঃ ২৩৮৪; মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৪০) আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওহ্হাব (রহ.) আমি মালিকের কাছে শুনেছি, উবায়দুল্লাহ ইবনু রাবী‘ (রহ.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু সুফিয়ান (রাঃ) সূত্রে আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে দাঊদ (রহ.) এ হাদীস কি আপনার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ ওসাক অথবা পাঁচ ওসাকের কম পরিমাণে আরিয়্যা বিক্রয়ের অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪ : /৮৩, হাঃ ২১৯০, মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৪১) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ নিষেধ করেছেন। তিনি (ইবনু ‘উমার) বলেন, মুযাবানাহ হলো তাজা খেজুর শুকনো খেজুরের বদলে ওজন করে বিক্রি করা এবং কিসমিস তাজা আঙ্গুরের বদলে ওজন করে বিক্রি করা। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৭৫, হাঃ ২১৭১; মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৪২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানাহ নিষেধ করেছেন, আর তা হলো বাগানের ফল বিক্রয় করা। খেজুর হলে মেপে শুকনো খেজুরের বদলে, আঙ্গুর হলে মেপে কিসমিসের বদলে, আর ফসল হলে মেপে খাদ্যের বদলে বিক্রি করা। তিনি এসব বিক্রি নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৯১, হাঃ ২২০৫; মুসলিম ২১/১৪, হাঃ ১৫৪২)
যে ব্যক্তি গাছে ফল থাকা অবস্থায় খেজুর গাছ বিক্রি করল ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ তাবীর করার পরে খেজুর গাছ বিক্রি করলে সে ফলের মালিক থাকবে, অবশ্য ক্রেতা যদি (ফল লাভের) শর্ত করে, তবে সে পাবে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৯০, হাঃ ২২০৪; মুসলিম ২১/১৫, হাঃ ১৫৪৩)
মুহাক্বলা, মুযা-বানাহ ও মুখাবারাহ নিষিদ্ধ হওয়া এবং ফল উপযোগী হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা এবং বা‘ইয়ে মু‘আওয়ামা আর তা হচ্ছে বাইয়ে সীনি-ন ।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখাবারা, মুহাকালা ও শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছের খেজুর বিক্রি করতে এবং ফল উপযুক্ত হওয়ার আগে তা বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। গাছে থাকা অবস্থায় ফল দীনার এবং দিরহামের বিনিময়ে ছাড়া যেন বিক্রি করা না হয়। তবে আরায়্যার অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৪২ : /১৭, হাঃ ২৩৮১; মুসলিম ২১/১৬, হাঃ ১৫৩৬)
জমি ভাড়া দেয়া ।
জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু লোকের অতিরিক্ত ভূসম্পত্তি ছিল। তারা পরস্পর পরামর্শ করে ঠিক করল যে, এগুলো তারা তিন ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ বা অর্ধেক হিসাবে ইজারা দিবে। এ কথা শুনে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কারো অতিরিক্ত জমি থাকলে হয় সে নিজেই চাষ করবে, কিংবা তার ভাইকে তা (চাষ করতে) দিবে। আর তা না করতে চাইলে তা নিজের কাছেই রেখে দিবে। (বুখারী পর্ব ৫১ : /৩৫, হাঃ ২৬৩২; মুসলিম ২১/১৭, হাঃ ১৫৩৬) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার নিকট জমি রয়েছে, সে যেন তা নিজে চাষ করে, অথবা তার ভাইকে দিয়ে দেয়, যদি এটাও না করতে চায়, তবে সে যেন তার জমি ফেলে রাখে। (বুখারী পর্ব ৪১ : /১৮, হাঃ ২৩৪১; মুসলিম ২১/১৭, হাঃ ১৫৪৪) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাবানা ও মুহাকালা বারণ করেছেন। মুযাবানার অর্থ- শুকনো খেজুরের বিনিময়ে গাছের মাথায় অবস্থিত তাজা খেজুর ক্রয় করা। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮২, হাঃ ২১৮৬; মুসলিম ২১/১৭, হাঃ ১৫৪৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে এবং আবু বাকর, ‘উমার, উসমান, মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর শাসনের শুরুতে ভাগে নিজের ক্ষেতে বর্গাচাষ করতে দিতেন। তারপর রাফি‘ ইবনু খাদীজের বর্ণিত। হাদীসটি তাঁর নিকট বর্ণনা করা হয় যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ষেত ভাগে ইজারাহ দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাফি‘ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে গেলাম। তিনি (ইবনু ‘উমার) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি [রাফি‘ (রাঃ)] বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ষেত ভাগে ইজারাহ দিতে নিষেধ করেছেন। তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, আপনি তো জানেন যে, আমরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় নালার পার্শ্বস্থ ক্ষেতের ফসলের শর্তে এবং কিছু ঘাসের বিনিময়ে আমাদের ক্ষেত ইজারাহ দিতাম। (বুখারী পর্ব ৪১: /১৮, হাঃ ২৩৪৩, ২৩৪৪; মুসলিম ২১/১৭, হাঃ ১৫৪৭)
খাদ্যের বিনিময়ে আবাদি জমি ভাড়া দেয়া ।
যুহাইর (রাঃ) তিনি বলেন, একটি কাজ আমাদের উপকারী ছিল, যা করতে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিষেধ করলেন। আমি বললাম, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন তাই সঠিক। যুহাইর (রাঃ) বললেন, আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা তোমাদের ক্ষেত-খামার কিভাবে চাষাবাদ কর? আমি বললাম, আমরা নদীর তীরের ফসলের শর্তে অথবা খেজুর ও যবের নির্দিষ্ট কয়েক ওসাক প্রদানের শর্তে জমি ইজারাহ দিয়ে থাকি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা এরূপ করবে না। তোমরা নিজেরা তা চাষ করবে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে চাষ করাবে অথবা তা ফেলে রাখবে। রাফি‘ (রাঃ) বলেন, আমি শুনলাম ও মানলাম। (বুখারী পর্ব ৪১: /১৮, হাঃ ২৩৩৯; মুসলিম ২১/১৮, হাঃ ১৫৪৭)
বিনা ভাড়ায় জমিতে চাষ করতে দেয়া ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্গাচাষ নিষেধ করেননি। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ তার ভাইকে জমি দান করুক, এটা তার জন্য তার ভাইয়ের কাছ হতে নির্দিষ্ট উপার্জন গ্রহণ করার চেয়ে উত্তম। (বুখারী পর্ব ৪১: /১০, হাঃ ২৩৩০; মুসলিম ২১/২১, হাঃ ১৫৫০)