22. পানি সিঞ্চন
পানি বণ্টন এবং ফলমূল ও শাক-সব্জি ভাগাভাগির ভিত্তিতে বর্গাচাষের ব্যবস্থা ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারবাসীদেরকে উৎপাদিত ফল বা ফসলের অর্ধেক ভাগের শর্তে জমি বর্গা দিয়েছিলেন। তিনি নিজের সহধর্মিণীদেরকে একশ’ ওয়াসাক দিতেন, এর মধ্যে ৮০ ওয়াসাক খুরমা ও ২০ ওয়াসাক যব। ‘উমার (রাঃ) (তাঁর খিলাফতকালে খায়বারের) জমি বণ্টন করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীদের ইখতিয়ার দিলেন যে, তাঁরা জমি ও পানি নিবেন, না কি তাদের জন্য ওটাই চালু থাকবে, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় ছিল। তখন তাদের কেউ জমি নিলেন আর কেউ ওয়াসাক নিতে রাজী হলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) জমিই নিয়েছিলেন। (বুখারী পর্ব ৪১ : /৮, হা: ২৩২৮; মুসলিম ২২/১, হাঃ ১৫৫১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খায়বার জয় করেন, তখন ইয়াহূদীদের সেখান হতে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। যখন তিনি কোন স্থান জয় করেন, তখন তা আল্লাহ্, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুসলিমদের জন্য হয়ে যায়। কাজেই ইয়াহূদীদের সেখান হতে বহিষ্কার করে দিতে চাইলেন। তখন ইয়াহূদীরা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অনুরোধ করল যেন তাদের সে স্থানে বহাল রাখা হয় এ শর্তে যে, তারা সেখানে চাষাবাদের দায়িত্ব পালন করবে আর ফসলের অর্ধেক তাদের থাকবে। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, আমরা এ শর্তে তোমাদের এখানে বহাল থাকতে দিব যতদিন আমাদের ইচ্ছা। কাজেই তারা সেখানে বহাল রইল। অবশেষে ‘উমার (রাঃ) তাদেরকে তাইমা ও আরীহায় নির্বাসিত করে দেন। (বুখারী পর্ব ৪১: /১৭, হা: ২৩৩৮; মুসলিম ২২/১, হাঃ ১৫৫১)
বৃক্ষরোপণ ও চাষাবাদের ফাযীলাত ।
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মুসলিম ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখি কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকাহ্ বলে গণ্য হবে। মুসলিম (রহ.) ..... আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৪১ : /১, হা: ২৩২০; মুসলিম ২২/২, হাঃ ১৫৫৩)
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়া ।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রং ধারণ করার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। জিজ্ঞেস করা হল, রং ধারণ করার অর্থ কী? তিনি বললেন, লাল বর্ণ ধারণ করা। পরে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দেখ, যদি আল্লাহ্ তা‘আলা ফল ধরা বন্ধ করে দেন, তবে তোমাদের কেউ (বিক্রেতা) কিসের বদলে তার ভাইয়ের মাল (ফলের মূল্য) নিবে? (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮৭, হা: ২১৯৮; মুসলিম ২২/৩, হাঃ ১৫৫৫)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ লাঘব করা মুস্তাহাব ।
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার দরজায় ঝগড়ার আওয়াজ শুনতে পেলেন; দু’জন তাদের আওয়াজ উচ্চ করেছিল। তাদের একজন আরেকজনের নিকট ঋণের কিছু মাফ করে দেয়ার এবং সহানুভূতি দেখানোর অনুরোধ করেছিল। আর অপর ব্যক্তি বলছিল, ‘না, আল্লাহ্র কসম! আমি তা করব না।’ আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দু’জনের কাছে এলেন এবং বললেন, সৎ কাজ করবে না বলে যে আল্লাহ্র নামে কসম করেছে, সে ব্যক্তিটি কোথায়? সে বলল, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি। সে যা পছন্দ করবে তার জন্য তা-ই হবে।’ (বুখারী পর্ব ৫৩: /১০, হা: ২৭০৫; মুসলিম ২২/৪, হাঃ ১৫৫৭) কা‘ব (রাঃ) তিনি মাসজিদের ভিতরে ইব্নু আবু হাদরাদ (রহ.)-এর নিকট তাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করলেন। দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চঃস্বরে কথাবার্তা হলো। এমনকি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘর হতেই তাদের কথার আওয়াজ শুনলেন এবং তিনি পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কা‘ব! কা‘ব (রাঃ) উত্তর দিলেন, লাব্বাইক ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পাওনা ঋণ হতে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কা‘ব (রাঃ) বললেনঃ আমি তাই করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি ইব্নু আবু হাদরাদকে বললেনঃ উঠ, আর বাকীটা দিয়ে দাও। (বুখারী পর্ব ৮: /৭১, হা: ৪৫৭; মুসলিম ২২/৪, হাঃ ১৫৫৮)
ক্রেতা যদি দেউলিয়া হয়ে যায় এমতাবস্থায় বিক্রেতা তার মাল ক্রেতার নিকট অক্ষত অবস্থায় পেলে তা ফেরত নিতে পারবে ।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিংবা তিনি বলেছেন যে, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন কেউ তার মাল এমন লোকের কাছে পায়, যে নিঃসম্বল হয়ে গেছে, তবে অন্যের চেয়ে সে-ই তার বেশি হকদার। {আবু ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহ.)] বলেন, এ সনদে উল্লেখিত রাবীগণ বিচারকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তারা হলেন ইয়াহ্ইয়া ইবনু সাঈদ, আবু বকর ইবনু মুহাম্মাদ, ‘উমার ইবনু আবদুল আযীয, আবু বকর ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) ও আবু বকর (রহ.) তারা সকলেই মদিনায় বিচারক ছিলেন।} (বুখারী পর্ব ৪৩: /১৪, হা: ২৪০২; মুসলিম ২২/৫, হাঃ ১৫৫৯)
অসচ্ছল ব্যক্তিকে সুযোগ দেয়ার ফাযীলাত ।
হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতা সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কোন নেক কাজ করেছ? লোকটি উত্তর দিল, আমি আমার কর্মচারীদের আদেশ করতাম যে, তারা যেন সচ্ছল ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় এবং তার উপর পীড়াপীড়ি না করে। রাবী বলেন, তিনি বলেছেন, ফেরেশতারাও তাঁকে ক্ষমা করে দেন। আবু মালিক (রহ.) রিব্ঈ ইবনু হিরাশ (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য সহজ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দিতাম। শু‘বাহ্ (রহ.) আবদুল মালিক (রহ.) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আওয়ানাহ (রহ.) আবদুল মালিক (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন, আমি সচ্ছলকে অবকাশ দিতাম এবং অভাবগ্রস্তকে মাফ করে দিতাম এবং নু‘আইম ইবনু আবু হিন্দ (রহ.) রিব্ঈ (রহ.) সূত্রে বলেন, আমি সচ্ছল ব্যক্তি হতে গ্রহণ করতাম এবং অভাবগ্রস্তকে ক্ষমা করে দিতাম। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১৭, হা: ২০৭৭; মুসলিম ২২/৬, হাঃ ১৫৬০) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যবসায়ী লোকদের ঋণ দিত। কোন অভাবগ্রস্তকে দেখলে সে তার কর্মচারীদের বলত, তাকে ক্ষমা করে দাও, হয়তো আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। এর ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১৮, হা: ২০৭৮; মুসলিম ২২/৬, হাঃ ১৫৬২)
ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে টাল-বাহানা করা হারাম । অন্যের নিকট ঋণ হাওয়ালা করে দেয়া জায়িয এবং তা সম্পদশালী ব্যক্তির জন্য গ্রহণ করা মুস্তাহাব ।
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম। যখন তোমাদের কাউকে (ঋণ পরিশোধের জন্যে) কোন ধনী ব্যক্তির হাওয়ালা করা হয়, তখন সে যেন তা মেনে নেয়। (বুখারী পর্ব ৩৮: /১, হা: ২২৮৮; মুসলিম ২২/৭, হাঃ ১৫৬৪)
প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা উদ্বৃত্ত পানি বিক্রি হারাম ।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘাস উৎপাদন হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রুখে রাখা যাবে না। (বুখারী পর্ব ৪২: /২, হা: ২৩৫৩; মুসলিম ২২/৮, হাঃ ১৫৬৬)
কুকুরের মূল্য, গণকের উপার্জন, ব্যভিচারিণী মহিলার পারিশ্রমিক হারাম ।
আবু মাসঊদ আনসারী (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারের বিনিময় এবং গণকের পারিতোষিক (গ্রহণ করা) হতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১১৩, হা: ২২৩৭; মুসলিম ২২/৯, হাঃ ১৫৬৭)
কুকুর হত্যা করার নির্দেশ ।
আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) ‘রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর মেরে ফেলতে আদেশ করেছেন।’ (বুখারী পর্ব ৫৯: /১৭, হা: ৩৩২৩; মুসলিম ২২/১০ হাঃ ১৫৭০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর কিংবা পশু রক্ষাকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কোন কুকুর পোষে, সেই ব্যক্তির আমলের সাওয়াব থেকে প্রত্যহ দুই কীরাত পরিমাণ কমে যায়। (বুখারী পর্ব ৭২: /৬, হাদীস নং ৫৪৮১; মুসলিম হাঃ ১৫৭৪) আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি শস্য ক্ষেতের পাহারা কিংবা পশুর হিফাযতের উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে কুকুর পোষে, প্রতিদিন তার নেক আমল হতে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকবে। (বুখারী পর্ব ৪১: /৩, হা: ২৩২২; মুসলিম ২২/১০, হাঃ ১৫৭৫) সুফ্ইয়ান ইবনু আবু যুহাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পোষে যা ক্ষেত ও গবাদি পশুর হিফাযতের কাজে লাগে না, প্রতিদিন তার নেক আমল হতে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকে। আমি বললাম, আপনি কি এটা আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এ মাসজিদের প্রতিপালকের কসম (আমি তাঁর কাছেই শুনেছি)। (বুখারী পর্ব ৪১: /৩, হা: ২৩২৩; মুসলিম ২২/১০, হাঃ ১৫৭৬)
শিঙ্গাওয়ালার পারিশ্রমিক হালাল ।
আনাস (রাঃ) তাঁকে শিঙ্গা লাগানোর পারিশ্রমিক দানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা লাগিয়েছেন। আবু তাইবা তাঁকে শিঙ্গা লাগায়। এরপর তিনি তাকে দু’ সা‘ খাদ্যবস্তু প্রদান করেন। সে তার মালিকের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করলে তারা তাঁর থেকে পারিশ্রমিকের পরিমাণ লাঘব করে দেয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ তোমরা যে সকল জিনিসের দ্বারা চিকিৎসা কর, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল শিঙ্গা লাগানো এবং সামুদ্রিক চন্দন কাঠ ব্যবহার করা। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের শিশুদের জিহবা, তালু টিপে কষ্ট দিও না। বরং তোমরা চন্দন কাঠ (ধোঁয়া) ব্যবহার করাও। (বুখারী পর্ব ৭৬: /১৩, হা: ৫৬৯৬; মুসলিম ২২/১১, হাঃ ১৫৭৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা লাগিয়ে নিয়েছেন এবং যে শিঙ্গা লাগিয়ে দিয়েছে সে ব্যক্তিকে পারিশ্রমিক দিয়েছেন আর তিনি (শ্বাস দ্বারা) নাকে ঔষধ টেনে নিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৭৬: /৯, হা: ৫৬৯১; মুসলিম ২২/১১, হাঃ ১২০২)
মাদক দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় হারাম ।
আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ সূরা বাকারাহ’র সুদ সম্পর্কীয় আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে গিয়ে সে সব আয়াত সাহাবীগণকে পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন। (বুখারী পর্ব ৮: /৭৩, হা: ৪৫৯; মুসলিম ২২/১২, হাঃ ১৫৮০)
মাদক দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয়, মৃত জন্তু, শুকর ও মূর্তি বিক্রি হারাম ।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাক্কাহ বিজয়ের বছর মাক্কাহ্’য় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শরাব, মৃত জন্তু, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা হারাম করে দিয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! মৃত জন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তা দিয়ে তো নৌকায় প্রলেপ দেয়া হয় এবং চামড়া তৈলাক্ত করা হয় আর লোকে তা দ্বারা চেরাগ জ্বালিয়ে থাকে। তিনি বললেন, না, তাও হারাম। তারপর আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইয়াহূদীদের বিনাশ করুন। আল্লাহ্ যখন তাদের জন্য মৃতের চর্বি হারাম করে দেন, তখন তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে মূল্য ভোগ করে। আবু আসিম (রহ.) ....... আতা (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে (হাদীসটি) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতে শুনেছি। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১১২, হা: ২২৩৬; মুসলিম ২২/১৩, হাঃ ১৫৮১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, অমুক ব্যক্তি শরাব বিক্রি করেছে। তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা অমুকের বিনাশ করুন। সে কি জানে না যে, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইয়াহূদীদের সর্বনাশ করুন, তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছিল; কিন্তু তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১০৩, হা: ২২২৩; মুসলিম ২২/১৩, হাঃ ১৫৮২) আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা ইয়াহূদীদের বিনাশ করুন। তাদের জন্য চর্বি হারাম করা হয়েছে। তারা তা (গলিয়ে) বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১০৩, হা: ২২২৪; মুসলিম ২২/১৩, হাঃ ১৫৮৩)
সুদ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সমান পরিমাণ ছাড়া তোমরা সোনার বদলে সোনা বিক্রি করবে না, একটি অপরটি হতে কম-বেশি করবে না। সমান ছাড়া তোমরা রূপার বদলে রূপা বিক্রি করবে না ও একটি অপরটি হতে কম-বেশি করবে না। আর নগদ মুদ্রার বিনিময়ে বাকি মুদ্রা বিক্রি করবে না। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৭৮, হাঃ ২১৭৭; মুসলিম ২২/১৮, হাঃ ১৫৮৪)
স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকীতে বিক্রি নিষিদ্ধ ।
আবু মিনহাল (রহ.) তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ‘আযিব ও যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-কে সার্ফ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা উভয়ে (একে অপরের সম্পর্কে) বললেন, ইনি আমার চেয়ে উত্তম। এরপর উভয়েই বললেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাকীতে রূপার বিনিময়ে সোনা কেনা বেচা করতে বারণ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮০, হা: ২১৮০-২১৮১; মুসলিম ২২/১৬, হাঃ ১৫৮৯) আবু বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমান সমান ছাড়া রূপার বদলে রূপার ক্রয়-বিক্রয় এবং সোনার বদলে সোনার ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি রূপার বিনিময়ে সোনার বিক্রয়ে এবং সোনার বিনিময়ে রূপার বিক্রয়ে আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮১, হা: ২১৮২; মুসলিম ২২/১৬, হাঃ ১৫৯০)
সমান সমান পরিমাণ খাদ্যশষ্যের ক্রয়-বিক্রয় ।
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে খায়বারে তহসীলদার নিযুক্ত করেন। সে জানীব নামক (উত্তম) খেজুর নিয়ে উপস্থিত হলে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুর কি এ রকমের? সে বলল, না, আল্লাহ্র কসম, হে আল্লাহ্র রাসূল! এরূপ নয়, বরং আমরা দু’ সা’ এর পরিবর্তে এ ধরনের এক সা’ খেজুর নিয়ে থাকি এবং তিন সা’ এর পরিবর্তে এক দু’ সা’। তখন আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ করবে না। বরং মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিরহাম দিয়ে জানীব খেজুর ক্রয় করবে। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৮৯, হা: ২২০১-২২০২; মুসলিম ২২/১৮, হাঃ ১৫৯৩) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, বিলাল (রাঃ) কিছু বরনী খেজুর (উন্নতমানের খেজুর) নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কোথায় পেলে? বিলাল (রাঃ) বললেন, আমাদের নিকট কিছু নিকৃষ্ট মানের খেজুর ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে তা দু‘ সা’-এর বিনিময়ে এক সা‘ কিনেছি। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হায়! হায়! এটাতো একেবারে সুদ! এটাতো একেবারে সুদ! এরূপ করো না। যখন তুমি উৎকৃষ্ট খেজুর কিনতে চাও, তখন নিকৃষ্ট খেজুর ভিন্নভাবে বিক্রি করে দাও। তারপর সে মূল্যের বিনিময়ে উৎকৃষ্ট খেজুর কিনে নাও। (বুখারী পর্ব ৪০: /১১, হা: ২৩১২; মুসলিম ২২/১৮, হাঃ ১৫৯৪) আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) আমাদের মিশ্রিত খেজুর দেয়া হতো, আমরা তা দু’ সা‘-এর পরিবর্তে তার দু’ সা‘ বিক্রি করতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এক সা‘-এর পরিবর্তে দু’ সা‘ এবং এক দিরহামের পরিবর্তে দু’ দিরহাম বিক্রি করবে না। (বুখারী পর্ব ৩৪: /২০, হা: ২০৮০; মুসলিম ২২/১৯, হাঃ ১৫৯৫) আবু সালিহ যায়য়াত (রহ.) তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-কে বলতে শুনলাম, দীনারের বদলে দীনার এবং দিরহামের বদলে দিরহাম (সমান সমান বিক্রি করবে)। এতে আমি তাঁকে বললাম, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তো তা বলেন না? উত্তরে আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে (ইবনু ‘আব্বাসকে) জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, আপনি তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে শুনেছেন না আল্লাহ্র কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বললেন, এর কোনটি বলিনি। আপনারাই তো আমার চেয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বেশি জানেন। অবশ্য আমাকে উসামা [ইবনু যায়দ (রাঃ)] জানিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বাকী বিক্রি ব্যতীত ‘রিবা’ হয় না। আবু ‘আবদুল্লাহ (বুখারী) (রহ.) বলেন, আমি সুলায়মান ইবনু র্হাব (রহ.)-কে বলতে শুনেছি, বাকী বিক্রি ব্যতীত ‘রিবা’ হয় না, এ কথার অর্থ আমাদের মতে এই যে, সোনা-রূপার বিনিময়ে, গম যবের বিনিময়ে কম-বেশি বেচা-কেনা করাতে দোষের কিছু নেই যদি নগদ হয়, কিন্তু বাকী বেচা-কেনাতে কোন কল্যাণ নেই। (বুখারী পর্ব ৩৪: /৭৯, হা: ২১৭৮-২১৭৯; মুসলিম ২২/১৮, হাঃ ১৫৯৬)
হালাল গ্রহণ করা ও সন্দেহযুক্তকে ছেড়ে দেয়া ।
নু‘মান ইব্নু বশীর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায়, যে তার পশু বাদশাহ্ সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রেখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রেখ যে, আল্লাহ্র যমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রেখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রেখ, সে গোশতের টুকরোটি হল অন্তর। (বুখারী পর্ব ২: /৩৯, হা: ৫২; মুসলিম ২২/২০, হাঃ ১৫৯৯)
উট বিক্রি করা ও তাতে চড়ে যাওয়ার শর্ত লাগানো ।
জাবির (রাঃ) তিনি তাঁর এক উটের উপর সওয়ার হয়ে সফর করছিলেন, সেটি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং উটটিকে (চলার জন্য) প্রহার করে সেটির জন্য দু‘আ করলেন। ফলে উটটি এত জোরে চলতে লাগলো যে, কখনো তেমন জোরে চলেনি। অতঃপর তিনি বললেন, ‘এক উকিয়ার বিনিময়ে এটি আমার নিকট বিক্রি কর।’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, ‘এটি আমার নিকট এক উকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি কর।’ তখন আমি সেটি বিক্রি করলাম। কিন্তু আমার পরিজনের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত সওয়ার হওয়ার অধিকার রেখে দিলাম। অতঃপর উট নিয়ে আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে এর নগদ মূল্য দিলেন। অতঃপর আমি চলে গেলাম। তখন আমার পেছনে লোক পাঠালেন। পরে বললেন, ‘তোমার উট নেয়ার ইচ্ছে আমার ছিল না। তোমার এ উট তুমি নিয়ে যাও, এটি তোমারই মাল।’ শু‘বাহ (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটটির পেছনে মাদীনাহ পর্যন্ত আমাকে সওয়ার হতে দিলেন । ইসহাক (রহ.) জারীর (রহ.) সূত্রে মুগীরাহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, আমি সেটি এ শর্তে বিক্রি করলাম যে, ‘মদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তার পিঠে সাওয়ার হওয়ার অধিকার আমার থাকবে। ‘আতা (রহ.) প্রমুখ বলেন, (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন) মাদীনাহ পর্যন্ত তোমার তাতে সওয়ার হওয়ার অধিকার থাকবে । ইব্নু মুনকাদির (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মাদীনাহ পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হওয়ার শর্ত করেছেন । যায়দ ইব্নু আসলাম (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তোমার প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হতে পারবে । আবু যুবাইর (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণণা করেন যে, তোমাকে মাদীনাহ পর্যন্ত এর পিঠে সওয়ার হতে দিলাম । আ‘মাশ (রহ.) সালিম (রহ.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, এর উপর সওয়ার হয়ে তুমি পরিজনের নিকট পৌঁছবে । ‘উবাইদুল্লাহ্ ও ইব্নু ইসহাক (রহ.) ওয়াহ্ব (রহ.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক উকিয়ার বিনিময়ে সেটি খরীদ করেছিলেন । জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে যায়দ ইব্নু আসলাম (রহ.) ওয়াহাব (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন । ইব্নু জুরাইজ (রহ.) ‘আত্বা (রহ.) প্রমুখ সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,) আমি এটাকে বার দীনারের বিনিময়ে নিলাম । দশ দিরহামে এক দীনার হিসেবে তাতে এক উকিয়াই হয় । মুগীরাহ (রহ.) শাবী (রহ.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে এবং ইব্নু মুনকাদির ও আবু যুবাইর (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনায় মূল্য উল্লেখ করেননি । আ’মাশ (রহ.) সালিম (রহ.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনায় এক উকিয়া স্বর্ণ উল্লেখ করেছেন । সালিম (রহ.) সূত্রে জাবির (রাঃ) থেকে দাউদ ইব্নু কায়স (রহ.)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি সেটি তাবুকের পথে খরীদ করেন । রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, চার উকিয়ার বিনিময়ে । আবু নাযরা (রহ.) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি সেটি বিশ দীনারে খরীদ করেছেন । তবে শাবী (রহ.) কর্তৃক বর্ণিত । এক উকিয়াই অধিক বর্ণিত । আবু ‘আবদুল্লাহ্ (রহ.) বলেন, (রিওয়ায়াতে বিভিন্ন রকমের হলেও) শর্তারোপ কৃত রিওয়ায়েতই অধিক সূত্রে বর্ণিত এবং আমার মতে এটাই অধিক সহীহ । (বুখারী পর্ব ৫৪: /৪, হা: ২৭১৮; মুসলিম ২২/২১ হাঃ ১৫৯৯) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার উটের কী হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটনীর পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনীটিকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দু‘আ করলেন। অতঃপর এটি সবক’টি উটের আগে আগে চলতে থাকে। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখন তোমার উটনীটি কেমন মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রি করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনের অন্য কোন উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রি কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রি করলাম যে, মাদীনাহ্য় পৌঁছা পর্যন্ত এর উপর আরোহণ করব। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। অতঃপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মাদীনাহ্য় পৌঁছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি আমাকে উটনীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলা করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমান বয়সের কোন মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্বে বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যাতে সে তাদের দেখাশোনা করতে পারে এবং তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্য় আসেন, পরদিন আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরাহ (রাঃ) বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এতে কোন কোন দোষ মনে করি না। (বুখারী পর্ব ৫৬: /১১৩, হা: ২৯৬৭; মুসলিম ২২/১২, হাঃ ৭১৫) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট নিকট হতে একটি উট দু’ উকিয়া ও এক দিরহাম কিংবা দু’ দিরহাম দ্বারা কিনে নেন এবং তিনি যখন সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গাভী যব্হ করার নির্দেশ দেন। অতঃপর তা যব্হ করা হয় এবং সকলে তার গোশ্ত আহার করে। আর যখন তিনি মাদীনাহ্য় উপস্থিত হলেন তখন আমাকে মাসজিদে প্রবেশ করে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করতে আদেশ করলেন এবং আমাকে উটের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন। (বুখারী পর্ব ৫৬: /১৯৯, হা: ৩০৮৯; মুসলিম ২২/২১, হাঃ ৭১৫)
যে ব্যক্তি ধারে কিছু নিল এবং ঋণদাতাকে তার চেয়ে বেশি দিল এবং তোমাদের মধ্যে সে উত্তম যে উত্তমভাবে অন্যের পাওনা আদায় করে ।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পাওনার জন্য তাগাদা দিতে এসে রূঢ় ভাষায় কথা বলতে লাগল। এতে সাহাবীগণ তাকে শায়েস্তা করতে উদ্যত হলেন। তখন আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, পাওনাদারদের কড়া কথা বলার অধিকার রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, তার উটের সমবয়সী একটি উট তাকে দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! এটা নেই। এর চেয়ে উত্তম উট রয়েছে। তিনি বললেন, তাই দিয়ে দাও। তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোৎকৃষ্ট, যে ঋণ পরিশোধের বেলায় উত্তম। (বুখারী পর্ব ৪০: /৬, হা: ২৩০৬; মুসলিম ২২/২২, হাঃ ১৬০১)
বন্ধক রাখা এবং এটা বাড়ীতে ও সফরে জায়িয ।
আ‘মাশ (রহ.) তিনি বলেন, বাকীতে ক্রয়ের জন্য বন্ধক রাখা সম্পর্কে আমরা ইবরাহীম (রহ.)-এর কাছে আলোচনা করছিলাম। তখন তিনি বলেন, আসওয়াদ (রহ.) ‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহূদীর নিকট হতে নির্দিষ্ট মেয়াদে মূল্য পরিশোধের শর্তে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট নিজের লোহার বর্ম বন্ধক রাখেন। (বুখারী পর্ব ৩৪: /১৪, হা: ২০৬৮; মুসলিম ২২/২৪, হাঃ ১৬০৩)
বা‘ইয়ে সালাম ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনাবাসী ফলে দু’ ও তিন বছরের মেয়াদে সলম করত। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন ব্যক্তি সলম করলে সে যেন নির্দিষ্ট মাপে এবং নির্দিষ্ট ওজনে নির্দিষ্ট মেয়াদে সলম করে। (বুখারী পর্ব ৩৫: /২, হা: ২২৪০; মুসলিম ২২/২৫, হাঃ ১৬০৪)
বিক্রয়ে কসম খাওয়া নিষিদ্ধ ।
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মিথ্যা কসম পণ্য চালু করে দেয় বটে, কিন্তু বরকত নিশ্চিহ্ন করে দেয়। (বুখারী পর্ব ৩৪: /২৬, হা: ২০৮৭; মুসলিম ২২/২৭, হাঃ ১৬০৬)
শুফ্‘আহ
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সব সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়নি, তাতে শুফ্‘আহ এর ফায়সালা দিয়েছেন। যখন সীমানা নির্ধারিত হয়ে যায় এবং পথও পৃথক হয়ে যায়, তখন শুফ্‘আহ এর অধিকার থাকে না। (বুখারী পর্ব ৩৬: /১, হা: ২২৫৭; মুসলিম ২২/২৮, হাঃ ১৬০৮)
প্রতিবেশির দেয়ালে খুঁটি গাড়া ।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন প্রতিবেশি যেন তার প্রতিবেশিকে তার দেয়ালে খুঁটি পুঁততে নিষেধ না করে। তারপর আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, কী হল, আমি তোমাদেরকে এ হাদীস হতে উদাসীন দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ্র কসম, আমি সব সময় তোমাদেরকে এ হাদীস বলতে থাকব। (বুখারী পর্ব ৪৬: /২০, হা: ২৪৬৩; মুসলিম ২২/২৯, হাঃ ১৬০৯)
যুল্ম করা অন্যের জমি জবর-দখল করা ইত্যাদি হারাম ।
সা‘ঈদ ইব্নু যায়িদ ইব্নু ‘আম্র ইব্নু নুফাইর (রাঃ) ‘আরওয়া’ নামক এক মহিলা এক সাহাবীর (সা‘ঈদের) বিরুদ্ধে মারওয়ানের নিকট তার ঐ পাওনার ব্যাপারে মামলা দায়ের করল, যা তার ধারণায় তিনি নষ্ট করেছেন। ব্যাপার শুনে সা‘ঈদ (রাঃ) বললেন, আমি কি তার সামান্য হকও নষ্ট করতে পারি? আমি তো সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুলুম করে অন্যের এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের শিকল তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে। ইব্নু আবুয যিনাদ (রহ.) হিশাম (রহ.) থেকে, তিনি তাঁর পিতা নিকট হতে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তিনি (হিশামের পিতা ‘উরওয়াহ) (রাঃ) বলেন, সা‘ঈদ ইব্নু যায়দ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম (তখন তিনি এ হাদীস বর্ণনা করেন)। (বুখারী পর্ব ৫৯: /২, হা: ৩১৯৮; মুসলিম ২২/৩০, হাঃ ১৬১০) আবু সালামাহ (রাঃ) তাঁর এবং কয়েকজন লোকের মধ্যে একটি বিবাদ ছিল। ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, হে আবু সালামাহ! জমির ব্যাপারে সতর্ক থাক। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এক বিঘত জমি অন্যায়ভাবে নিয়ে নেয়, (কিয়ামাতের দিন) এর সাত তবক জমি তার গলায় লটকিয়ে দেয়া হবে। (বুখারী পর্ব ৪৬: /১৩, হা: ২৪৫৩; মুসলিম ২২/৩০, হাঃ ১৬১২)
রাস্তার পরিমাণ কত হবে যখন এতে মতানৈক্য হবে ।
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (রাস্তার ব্যাপারে) জমি নিয়ে বিবাদ হলে, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাস্তার জন্য সাত হাত জমি ছেড়ে দেয়ার ফয়সালা দেন। (বুখারী পর্ব ৪৬: /২৯, হা: ২৪৭৩; মুসলিম ২২/৩১, হাঃ ১৬১৩)