33. ইমারাত বা নেতৃত্ব

【1】

মানুষদের উপর কুরাইশদের প্রাধান্য এবং খিলাফাত বা প্রতিনিধিত্ব হবে কুরাইশদের মধ্যে থেকে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, খিলাফত ও নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলেই কুরাইশের অনুগত থাকবে। মুসলিমগণ তাদের মুসলিমদের এবং কাফিররা তাদের কাফিরদের অনুগত। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৪৯৫; মুসলিম ৩৩/১, হাঃ ১৮১৮) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ বিষয় (খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা) সর্বদাই কুরাইশদের হাতে থাকবে, যতদিন তাদের দু’জন লোকও বেঁচে থাকবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৩৫০১; মুসলিম ৩৩/১, ১৮২০) জাবির ইব্‌নু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, বারজন আমীর হবে। এরপর তিনি একটি কথা বলছিলেন যা আমি শুনতে পারিনি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হবে। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৭২২২-৭২২৩; মুসলিম ৩৩/১, হাঃ ১৮২১)

【2】

কাউকে খালীফা নিযুক্ত করা বা তা বাদ দেয়া।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ)-কে বলা হল, আপনি কি (আপনার পরবর্তী) খলীফা মনোনীত করে যাবেন না? তিনি বললেনঃ যদি আমি খলীফা মনোনীত করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে গিয়েছিলেন, অর্থাৎ আবূ বকর (রাঃ)। আর যদি মনোনীত না করি, তাহলে আমার চেয়ে যিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন তিনি খলীফা মনোনীত করে যাননি। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এতে লোকেরা তাঁর প্রশংসা করল। তারপর তিনি বললেন, কেউ এ ব্যাপারে আকাঙক্ষী আর কেউ ভীত। আর আমি পছন্দ করি আমি যেন এ থেকে মুক্তি পাই সমানে সমান, না পুরস্কার না শাস্তি। আমি জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে এর দায়িত্ব বহন করতে পারব না। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৫১ হাদীস নং ৭২১৮; মুসলিম ৩৩/২, হাঃ ১৮২৩)

【3】

নেতৃত্ব চাওয়া ও তার প্রতি লালায়িত হওয়া নিষিদ্ধ।

আবদুর রহমান ইব্‌নু সামুরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু সামুরাহ! তুমি নেতৃত্ব চেয়ো না। কেননা, চাওয়ার পর যদি নেতৃত্ব পাও তবে এর দিকে তোমাকে সোপর্দ করে দেয়া হবে। আর যদি না চেয়ে তা পাও তবে তোমাকে এর জন্য সাহায্য করা হবে। (বুখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৬৬২২; মুসলিম ৩৩/৩, হাঃ ১৬৫২) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলাম। আমার সঙ্গে আশ‘আরী গোত্রের দু’ব্যক্তি ছিল। একজন আমার ডানদিকে, অপরজন আমার বামদিকে। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মিস্ওয়াক করছিলেন। উভয়েই তাঁর কাছে আবদার জানাল। তখন তিনি বললেনঃ হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু কায়স! রাবী বলেন, আমি বললামঃ ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসসহ পাঠিয়েছেন, তারা তাদের অন্তরে কী আছে তা আমাকে জানায়নি এবং তারা যে চাকরি প্রার্থনা করবে তা আমি বুঝতে পারিনি। আমি যেন তখন তাঁর ঠোঁটের নিচে মিস্ওয়াকের প্রতি লক্ষ্য করছিলাম যে তা এক কোণে সরে গেছে। তখন তিনি বললেন, আমরা আমাদের কাজে এমন কাউকে নিয়োগ দিব না বা দেই না যে নিজেই তা চায়। বরং হে আবূ মূসা! অথবা বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু কায়স! তুমি ইয়ামনে যাও। এরপর তিনি তার পেছনে মু‘আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ)-কে পাঠালেন। যখন তিনি তথায় পৌঁছলেন, তখন আবূ মূসা (রাঃ) তার জন্য একটি গদি বিছালেন। আর বললেন, নেমে আসুন। ঘটনাক্রমে তার কাছে একজন লোক শৃঙক্ষলাবদ্ধ ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ঐ লোকটি কে? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, সে প্রথমে ইয়াহূদী ছিল এবং মুসলিম হয়েছিল। কিন্তু পুনরায় সে ইয়াহূদী হয়ে গেছে। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, বসুন। মু‘আয (রাঃ) বললেন, না, বসব না, যতক্ষণ না তাকে হত্যা করা হবে। এটাই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ফায়সালা। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। এরপর তার সম্পর্কে নির্দেশ দেয়া হল এবং তাকে হত্যা করা হল। তারপর তাঁরা উভয়েই কিয়ামুল্ লায়ল (রাত জাগরণ) সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন একজন বললেন, আমি কিন্তু ‘ইবাদাতও করি, নিদ্রাও যাই। আর নিদ্রাবস্থায় ঐ আশা রাখি যা ‘ইবাদাত অবস্থায় রাখি। (বুখারী পর্ব ৮৮ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৬৯২৩; মুসলিম ৩৩/৩, হাঃ ১৮২৪)

【4】

ন্যায়বিচারক ইমামের মর্যাদা ও স্বেচ্ছাচারী শাসকের অপকারিতা ও প্রজাদের প্রতি নম্রতার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তাদেরকে (প্রজাদেরকে) কষ্টে ফেলা নিষিদ্ধ।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হবে। যেমন- জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। একজন পুরুষ তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী স্বামীর ঘরের এবং তার সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। আর ক্রীতদাস আপন মনিবের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী। কাজেই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শোন! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। কাজেই প্রত্যেকেই আপন অধীনস্থদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ২৫৫৪; মুসলিম ৩৩/৫, হাঃ ১৮২৯) হাসান বসরী (রহ.) ‘উবাইদুল্লাহ্ ইব্‌নু যিয়াদ (রহ.) মাকিল ইব্‌নু ইয়াসারের মৃত্যুশয্যায় তাকে দেখতে গেলেন। তখন মাকিল (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করছি যা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি যে, কোন বান্দাকে যদি আল্লাহ্ তা‘আলা জনগণের নেতৃত্ব প্রদান করেন, আর সে কল্যাণকামিতার সঙ্গে তাদের তত্ত্বাবধান না করে, তাহলে সে বেহেশ্তের ঘ্রাণও পাবে না। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৭১৫০; মুসলিম ৩৩/৫, হাঃ ১৪২)

【5】

গুলুল বা বণ্টনের পূর্বে গানীমাতের মাল থেকে চুরি করা কঠোরভাবে হারাম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়ান এবং গনীমতের মাল আত্মসাৎ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। আর তিনি তার মারাত্মক অপরাধ ও তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের কাউকে যেন এ অবস্থায় ক্বিয়ামাতের দিন না পাই যে, তাঁর কাঁধে বকরী বয়ে বেড়াচ্ছে আর তা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে চিৎকার দিচ্ছে। অথবা তাঁর কাঁধে রয়েছে ঘোড়া আর তা হি হি করে আওয়াজ দিচ্ছে। ঐ ব্যক্তি আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো (দুনিয়ায়) তোমার নিকট পৌছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে উট যা চিৎকার করবে, সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! একটু সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে ধন-দৌলত এবং আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না। আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। অথবা কেউ তার কাঁধে বয়ে বেড়াবে কাপড়ের টুকরাসমূহ যা দুলতে থাকবে। সে আমাকে বলবে, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে সাহায্য করুন। আমি বলব, আমি তোমার জন্য কিছু করতে পারব না; আমি তো তোমার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৮৯ হাদীস নং ৩০৭৩; মুসলিম ৩৩/৬, হাঃ ১৮৩১)

【6】

কর্মচারীর হাদিয়া গ্রহণ হারাম।

আবূ হুমায়দ সা‘ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে রাজস্ব আদায়কারী নিযুক্ত করে পাঠালেন। সে কাজ শেষ করে তাঁর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা আপনার জন্য আর এ জিনিসটি আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার মা-বাবার ঘরে বসে রইলে না কেন? তা হলে তোমার জন্য হাদিয়া পাঠাত কিনা তা দেখতে পেতে? এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশার ওয়াক্তের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাশাহ্‌হুদ পাঠ করলেন ও আল্লাহ্ তা‘আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। এরপর বললেনঃ রাজস্ব আদায়কারীর অবস্থা কি হল? আমি তাকে নিযুক্ত করে পাঠালাম আর সে আমাদের কাছে এসে বলছে, এটা সরকারী রাজস্ব আর এ জিনিস আমাকে হাদিয়া দেয়া হয়েছে। সে তার বাবা-মার ঘরে বসেই রইল না কেন? তাহলে দেখত তার জন্য হাদিয়া দেয়া হয় কি না? ঐ মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ, তোমাদের মাঝে কেউ যদি কোন বস্তুতে সামান্যতম খিয়ানত করে, তা হলে ক্বিয়ামাতের দিন সে ঐ বস্তুটিকে তার কাঁধে বহন করা অবস্থায় আসবে। সে বস্তুটি যদি উট হয় তা হলে উট আওয়াজ করতে থাকবে। যদি গরু হয় তবে হাম্বা হাম্বা করতে থাকবে। আর যদি বকরী হয় তবে বকরী আওয়ায করতে থাকবে। আমি পৌঁছে দিলাম। রাবী আবূ হুমায়দ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্ত মুবারক এতটুকু উত্তোলন করলেন যে, আমরা তাঁর দু’বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। (বুখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৬৬৩৬; মুসলিম ৩৩/৭, হাঃ ১৮৩২)

【7】

পাপকর্ম ছাড়া ‘আমীরের আনুগত্য করা ওয়াজিব ও পাপকর্মে আনুগত্য হারাম।

ইবনু ‘আব্বাস তিনি বলেছেন যে, (আরবী) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ ইবনু ক্বায়স ইবনু আদী সম্পর্কে যখন তাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সৈন্য দলের দলনায়ক করে প্রেরণ করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৪৫৮৪, মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৩৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহ্‌রই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহ্‌রই নাফরমানী করল। এবং যে ব্যক্তি আমার (নির্বাচিত) ‘আমীরের আনুগত্য করল, সে আমারই আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার (নির্বাচিত) আমীরের নাফরমানী করল সে আমারই নাফরমানী করল। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৭১৩৭; মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৩৫) আবদুল্লাহ্ বিন ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্‌র নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া না হয়, ততক্ষণ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় সব বিষয়ে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য তার মান্যতা ও আনুগত্য করা কর্তব্য। যখন নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয়, তখন আর কোন মান্যতা ও আনুগত্য নেই। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৭১৪৪; মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৩৯) আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ক্ষুদ্র সৈন্যদল প্রেরণ করলেন এবং একজন আনসারী ব্যক্তিকে তাঁদের আমীর নিযুক্ত করে সেনাবাহিনীকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি (‘আমীর) তাদের উপর ক্ষুব্ধ হলেন এবং বললেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের দৃঢ়ভাবে বলছি যে, তোমরা কাঠ সংগ্রহ করবে এবং তাতে আগুন প্রজ্বলিত করবে। এরপর তোমরা তাতে প্রবেশ করবে। তারা কাঠ সংগ্রহ করল এবং তাতে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। এরপর যখন তারা প্রবেশ করতে ইচ্ছে করল, তখন একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আগুন থেকে পরিত্রাণের জন্যই তো আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করেছি। তাহলে কি আমরা (অবশেষে) আগুনেই প্রবেশ করব? তাঁদের এসব কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ আগুন নিভে যায়। আর তাঁর (‘আমীরের) ক্রোধও অবদমিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বললেনঃ যদি তারা তাতে প্রবেশ করত, তাহলে কোন দিন আর এত্থেকে বের হত না। জেনে রেখো! আনুগত্য কেবলমাত্র বিধিসঙ্গত কাজেই হয়ে থাকে। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৭১৪৫; মুসলিম ৩৩/৮, হাঃ ১৮৪০) জুনাদাহ ইব্‌নু আবূ উমাইয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘উবাদাহ ইব্‌নু সামিত (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমরা বললাম, আল্লাহ্ আপনাকে সুস্থ করে দিন। আপনি আমাদের এরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করুন, যা আপনাকে উপকৃত করবে এবং যা আপনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন। তিনি বললেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আহ্বান করলেন। আমরা তাঁর কাছে বাই‘আত করলাম। এরপর তিনি (‘উবাদাহ) বললেন, আমাদের থেকে যে অঙ্গীকার তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরূপে শোনা ও মানার উপর বাই‘আত করলাম। আরও (বাই‘আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফ্‌রী দেখ, তোমাদের নিকট আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তবে ভিন্ন কথা। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৭০৫৫-৭০৫৬; মুসলিম ২৯/৯, হাঃ ১৭০৯)

【8】

পর্যায়ক্রমে খালীফাদের আনুগত্য করা বা মান্য করার প্রতি নির্দেশ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বানী ইসরাঈলের নাবীগণ তাঁদের উম্মাতকে শাসন করতেন। যখন কোন একজন নাবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নাবী তাঁর স্থলাভিসিক্ত হতেন। আর আমার পরে কোন নাবী নেই। তবে অনেক খলীফাহ্ হবে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আমাদেরকে কী নির্দেশ করছেন? তিনি বললেন, তোমরা একের পর এক করে তাদের বায়‘আতের হক আদায় করবে। তোমাদের উপর তাদের যে হক রয়েছে তা আদায় করবে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ঐ সকল বিষয়ে যে সবের দায়িত্ব তাদের উপর অর্পণ করা হয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫০ হাদীস নং ৩৪৫৫; মুসলিম ৩৩/১০, হাঃ ১৮৩২) ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শীঘ্রই স্বজনপ্রীতির বিস্তৃতি ঘটবে এবং এমন ব্যাপার ঘটবে যা তোমরা পছন্দ করতে পারবে না। সহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ঐ অবস্থায় আমাদের কী করতে বলেন? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহ্‌র কাছে চাইবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০৩; মুসলিম ৩৩/১০, হাঃ ১৮৪৩)

【9】

কর্তৃপক্ষের অত্যাচার ও অন্যায়ভাবে অন্যদেরকে প্রাধান্য দানের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ।

উসায়দ ইব্‌নু হুযায়র (রাঃ) একজন আনসারী বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আপনি কি আমাকে অমুকের ন্যায় দায়িত্বে নিয়োজিত করবেন না? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আমার ওফাতের পর অপরকে অগ্রাধিকার দেওয়া দেখতে পাবে, তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে অবশেষে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তোমাদের সাথে সাক্ষাতের স্থান হল হাউয। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৭৯২; মুসলিম ৩৩/১১, হাঃ ১৮৪৫)

【10】

ফিত্না প্রকাশ পাওয়ার সময় (মুসলিমদের) জামা‘আতবদ্ধ থাকার অপরিহার্যতা এবং কুফুরীর প্রতি আহ্বান থেকে সতর্কীকরণ।

হুযাইফাহ ইব্‌নু ইয়ামান (রাঃ) লোকজন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেন আমি ঐ সবের মধ্যে পড়ে না যাই। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা জাহিলীয়্যাতে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবন যাপন করতাম অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোন অকল্যাণের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অকল্যাণের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মেশানো। আমি বললাম, মন্দ মেশানো কী? তিনি বললেন, এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কি আরো অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন, হাঁ তখন জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। আমি বললাম, আমি যদি এ অবস্থায় পড়ে যাই তাহলে আপনি আমাকে কী করতে আদেশ দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের এমন দল ও তাঁদের ইমামকে আঁকড়ে ধরবে। আমি বললাম, যদি মুসলিমদের এহেন দল ও ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, তখন তুমি তাদের সকল দল উপদলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে এবং মৃত্যু না আসা পর্যন্ত বৃক্ষমূল দাঁতে আঁকড়ে ধরে হলেও তোমার দ্বীনের উপর থাকবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬০৬; মুসলিম ৩৩/১৩, হাঃ ১৮৪৭) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি আমীরের কোন কিছু অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে। কেননা, যে ব্যক্তি সুলতানের আনুগত্য থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে যাবে, তার মৃত্যু হবে জাহিলি যুগের মুত্যুর ন্যায়। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৭০৫৩; মুসলি ম৩৩/১৩, হাঃ ১৮৪৯)

【11】

যুদ্ধ করতে ইচ্ছে করার পূর্বে সৈন্যদের নিকট হতে সেনাপতির বাই‘আত গ্রহণ মুস্তাহাব এবং বৃক্ষের নিচে বাই‘আতে রিযওয়ানের বর্ণনা।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদাইবিয়াহ্‌র যুদ্ধের দিন আমাদেরকে বলেছেন, পৃথিবীবাসীদের মধ্যে তোমরাই সর্বোত্তম। সেদিন আমরা ছিলাম চৌদ্দশ। আজ আমি যদি দেখতাম, তাহলে আমি তোমাদেরকে সে গাছের জায়গাটি দেখিয়ে দিতাম। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ৪১৫৪; মুসলিম ৩৩/১৮, হাঃ ১৮৫৬) মুসাইয়্যাব (ইবনু হায্‌ন) (রাঃ) তিনি বলেন, (যেটির নীচে বাই‘আত করা হয়েছিল) আমি সে গাছটি দেখেছিলাম। কিন্তু পরে যখন ওখানে আসলাম তখন আর সেটা চিনতে পারলাম না। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ৪১৬২; মুসলিম ৩৩/১৮, হাঃ ১৮৫৯) ইয়াযীদ ইবনু আবূ ‘উবাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হুদাইবিয়াহ্‌র দিন আপনারা কোন্ জিনিসের উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাই‘আত করেছিলেন। তিনি বললেন, মৃত্যুর উপর। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ৪১৬৯; মুসলিম ৩৩/১৮, হাঃ ১৮৬০) আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, হার্‌রা নামক যুদ্ধের সময়ে তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, ‘ইব্‌নু হানযালা (রাঃ) মানুষের নিকট থেকে মৃত্যুর উপর বায়আত গ্রহণ করছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর আমি তো কারো নিকট এমন বায়আত করব না। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১১০ হাদীস নং ২৯৫৯; মুসলিম ৩৩/১৮ হাঃ ১৮৬১)

【12】

মুহাজিরীনদের তাদের পূর্বের বাসস্থানে বসতি স্থাপন হারাম।

সালামাহ ইব্‌নুল আকওয়া‘ (রাঃ) একবার হাজ্জাজ আমার কাছে আসলেন। তখন তিনি তাঁকে বললেন, হে ইব্‌নু আক্ওয়া‘! আপনি সাবেক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলেন না কি যে বেদুঈন সুলভ জীবন যাপন করতে শুরু করেছেন? তিনি বললেন, না। বরং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বেদুঈন সুলভ জীবন যাপনের অনুমতি প্রদান করেছেন। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৭০৮৭; মুসলিম ৩৩/১৯, হাঃ ১৮৬২)

【13】

মাক্কাহ বিজয়ের পর ইসলাম, জিহাদ ও ভাল কাজ করার উপর বাইয়াত গ্রহণ এবং ফতহে মাক্কাহ্‌র পর আর কোন হিজরাত নেই- এর অর্থের বর্ণনা।

মুজাশি‘ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ মা‘বাদ (রাঃ) (মুজালিদ) কে নিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম যেন তিনি তাঁর নিকট হতে হিজরাতের জন্য বাই‘আত গ্রহণ করেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হিজরাতকারীদের জন্য হিজরাত অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। আমি তার নিকট হতে ইসলাম ও জিহাদের জন্য বাই‘আত গ্রহণ করব। [বর্ণনাকারী আবূ ‘উসমান নাহদী (রহঃ)] বলেন, এরপর আমি আবূ মা‘বাদ (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, মুজাশি‘ (রাঃ) সত্যি বলেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৪৩০৮; মুসলিম ৩৩/২০, হাঃ ১৮৬৩) আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন বলেছেন, ‘মক্কা বিজয়ের পর (মক্কা থেকে) হিজরাতের প্রয়োজন নেই। কিন্তু জিহাদ ও নেক কাজের নিয়্যাত বাকী আছে আর যখন তোমাদের জিহাদের ডাক দেয়া হবে তখন তোমরা বেরিয়ে পড়বে।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৯৪ হাদীস নং ৩০৭৭; মুসলিম ৩৩/২০, হাঃ ১৩৫৩) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) এক বেদুঈন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তোমার তো বড় সাহস! হিজরতের ব্যাপার কঠিন, বরং যাকাত দেয়ার মত তোমার কোন উট আছে কি? সে বলল, জী হ্যাঁ, আছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাগরের ওপারে হলেও (যেখানেই থাক) তুমি ‘আমাল করবে। তোমার ন্যূনতম ‘আমালও আল্লাহ বিনষ্ট করবেন না। (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ১৪৫২; মুসলিম ৩৩/২০, হাঃ ১৮৬৫)

【14】

মহিলাদের বাই‘আতের পদ্ধতি।

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ঈমানদার মহিলারা যখন হিজরাত করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসত, তখন তিনি আল্লাহ্‌র নির্দেশ- “হে ঈমানদারগণ! কোন ঈমানদার মহিলা হিজরাত করে তোমাদের কাছে আসলে তোমরা তাদেরকে যাচাই কর”...... অনুসারে তাদেরকে যাচাই করতেন। ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেনঃ ঈমানদার মহিলাদের মধ্যে যারা (আয়াতে উল্লেখিত) শর্তাবলী মেনে নিত, তারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হত। তাই যখনই তারা এ ব্যাপারে মৌখিক স্বীকারোক্তি প্রকাশ করত তখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বলতেন যাও, আমি তোমাদের বাই’আত গ্রহণ করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! কথার মাধ্যমে বাই’আত গ্রহণ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত কখনো কোন নারীর হাত স্পর্শ করেনি। আল্লাহ্‌র শপথ! তিনি শুধুমাত্র সেই সব বিষয়েই বাই‘আত গ্রহণ করতেন, যে সব বিষয়ে বাই‘আত গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাই‘আত গ্রহণ শেষে তিনি বলতেনঃ আমি কথায় তোমাদের বাই‘আত গ্রহণ করলাম। (বুখারী পর্ব ৬৮ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৫২৮৮; মুসলিম ৩৩/২১, হাঃ ১৮৬৬)

【15】

সাধ্যানুযায়ী শোনা ও আনুগত্য করার উপর বাই‘আত।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর কথা শোনা ও তাঁর আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করতাম, তখন তিনি আমাদের বলতেনঃ যা তোমার সাধ্যের মধ্যে। (বুখারী পর্ব ৯৩ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ৭২০২; মুসলিম ৩৩/২২, হাঃ ১৮৬৭)

【16】

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার বয়স।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তাকে (ইবনু উমরকে) পেশ করলেন, তখন তিনি চৌদ্দ বছরের বালক। (ইবনু ‘উমার বলেন) তখন তিনি আমাকে (যুদ্ধে গমনের) অনুমতি দেননি। পরে খন্দকের যুদ্ধে তিনি আমাকে পেশ করলেন এবং অনুমতি দিলেন। তখন আমি পনের বছরের যুবক। (বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ২৬৬৪; মুসলিম ৩৩/৩২, হাঃ ১৮৬৮)

【17】

কাফিরদের ভূমিতে কুরআন মাজীদ নিয়ে সফর নিষিদ্ধ, যখন তাদের হস্তগত হওয়ার ভয় থাকে।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু উমর (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন সঙ্গে নিয়ে শত্রু-দেশে সফর করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১২৯ হাদীস নং ২৯৯০; মুসলিম ৩৩/২৪, হাঃ ১৮৬৯)

【18】

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা এবং প্রতিযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ দান।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের জন্যে তৈরি ঘোড়াকে ‘হাফ্‌য়া’ (নামক স্থান) হতে ‘সানিয়াতুল ওয়াদা’ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর যে ঘোড়া যুদ্ধের জন্যে তৈরি নয়, সে ঘোড়াকে ‘সানিয়া’ হতে যুরাইক গোত্রের মাসজিদ পর্যন্ত দৌঁড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর এই প্রতিযোগিতায় ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ)। অগ্রগামী ছিলেন। (বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৪২০; মুসলিম ৩৩/২৫, হাঃ ১৮৭০)

【19】

ক্বিয়ামাত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে মঙ্গল (লিখিত)।

আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ আছে কিয়ামত অবধি। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ২৮৪৯; মুসলিম ৩৩/২৬ হাঃ ১৮৭১) উরওয়াহ বারিকী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ গুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত। অর্থাৎ (আখিরাতের) পুরস্কার এবং গনীমতের মাল। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ২৮৫২; মুসলিম ৩৩/২৬ হাঃ ১৮৭৩) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশ দামে বরকত আছে। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ২৮৫১; মুসলিম ৩৩/২৬ হাঃ ১৮৭৩)

【20】

জিহাদ ও আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হওয়ার ফাযীলাত।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়, যদি সে শুধু আল্লাহর উপর ঈমান এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমানের কারণে বের হয়ে থাকে, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা দেন যে, আমি তাকে তার পুণ্য বা গনীমত (ও বাহন) সহ ঘরে ফিরিয়ে আনব কিংবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর আমার উম্মতের উপর কষ্টদায়ক হবে বলে যদি মনে না করতাম তবে কোন সেনাদলের সঙ্গে না গিয়ে বসে থাকতাম না। আমি অবশ্যই এটা ভালবাসি যে, আল্লাহ্‌র রাস্তায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় নিহত হই। (বুখারী পর্ব ২ অধ্যায় ৩৬ হাদীস নং ৩৬; মুসলিম ৩৩/২৮ হাঃ ১৮৭৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে এবং তাঁরই বাণীর প্রতি দৃঢ় আস্থায় তাঁরই পথে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, আল্লাহ তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা সে যে সাওয়াব ও গনীমত লাভ করেছে তা সমেত তাকে ঘরে ফিরাবেন, যেখান হতে সে জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল। (বুখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩১২৩; মুসলিম ৩৩/২৮ হাঃ ১৮৭৬) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় মুসলিমদের যে যখম হয়, কিয়ামতের দিন তার প্রতিটি যখম আঘাতকালীন সময়ে যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থাতেই থাকবে। রক্ত ছুটে বের হতে থাকবে। তার রং হবে রক্তের রং কিন্তু গন্ধ হবে মিশকের মত। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৬৭ হাদীস নং ২৩৭; মুসলিম ৩৩/২৮, হাঃ ১৮৭৬)

【21】

আল্লাহ্ তা‘আলার রাস্তায় শাহাদাত লাভ করার ফাযীলাত।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশের পর একমাত্র শহীদ ব্যতীত আর কেউ দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে না, যদিও দুনিয়ার সকল জিনিস তার নিকট থাকবে। সে দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাঙক্ষা করবে যেন দশবার শহীদ হয়। কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখেছে। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২৮১৭; মুসলিম ৩৩/২৯ হাঃ ১৮৭৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে এমন কাজের কথা বলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হয়। তিনি বলেন, আমি তা পাচ্ছি না। (অতঃপর বললেন) তুমি কি এতে সক্ষম হবে যে, মুজাহিদ যখন বেরিয়ে যায়, তখন থেকে তুমি মাসজিদে প্রবেশ করবে এবং দাঁড়িয়ে ‘ইবাদাত করবে এবং আলস্য করবে না, আর সিয়াম পালন করতে থাকবে এবং সিয়াম ভাঙ্গবে না। লোকটি বলল, এটা কে পারবে? (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৭৮৫; মুসলিম ৩৩/২৯ হাঃ ১৮৭৮)

【22】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় সকাল-সন্ধ্যা (অতিবাহিত) করার ফাযীলাত।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৭৯২; মুসলিম ৩৩/৩০ হাঃ ১৮৮০) সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল কিংবা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার ভিতরের সকল কিছু থেকে উত্তম। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৭৯৪; মুসলিম ৩৩/৩০ হাঃ ১৮৮১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌র রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা তা থেকে উত্তম যেখানে সূর্যের উদয়াস্ত হয়। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৭৯৩; মুসলিম ৩৩/৩০ হাঃ ১৮৮২)

【23】

জিহাদের ও পাহারা দেয়ার ফাযীলাত।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষের মধ্যে কে উত্তম?’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘সেই মু’মিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করে।’ সাহাবীগণ বললেন, ‘অতঃপর কে?’ তিনি বললেন, ‘সেই মু’মিন আল্লাহ্‌র ভয়ে যে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান নেয় এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২৭৮৬; মুসলিম ৩৩/৩৪ হাঃ ১৮৮৮)

【24】

ঐ দু’ লোকের বর্ণনা যাদের একজন অপরজনকে হত্যা করল এবং দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করল।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু’ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ্ সন্তুষ্ট থাকবেন। তারা একে অপরকে হত্যা করে উভয়েই জান্নাতবাসী হবে। একজন তো এ কারণে জান্নাতবাসী হবে যে, সে আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা হত্যাকারীর তাওবা কবুল করেছেন। ফলে সেও আল্লাহ্‌র রাস্তায় শহীদ বলে গণ্য হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৮২৬; মুসলিম ৩৩/৩৫ হাঃ ১৮৯০)

【25】

আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যোদ্ধাদেরকে যানবাহন ইত্যাদি দ্বারা সাহায্য করা ও যোদ্ধাদের অনুপস্থিতিতে উত্তমভাবে তাদের পরিবারের খবর নেয়া।

যায়দ ইব্‌নু খালিদ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীর আসবাবপত্র সরবরাহ করল সে যেন জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র পথে কোন জিহাদকারীর পরিবার-পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করল, সেও যেন জিহাদ করল। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ২৮৪৩; মুসলিম ৩৩/৩৮ হাঃ ১৮৯৫)

【26】

অক্ষম ব্যক্তিদের উপর থেকে জিহাদের অপরিহার্যতা রহিত হওয়ার বিধান।

বারা‘ (রাঃ) তিনি বলেন, لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ আয়াতটি নাযিল হলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ (রাঃ)-কে ডেকে আনলেন। তিনি কোন জন্তুর একটি চওড়া হাড় নিয়ে আসেন এবং তাতে উক্ত আয়াতটি লিখে রাখেন। ইব্‌নু উম্মু মাকতুম জিহাদে শরীক হওয়ার ব্যাপারে তাঁর অক্ষমতা প্রকাশ করলে فَنَزَلَتْ لاَ يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ আয়াতটি নাযিল হল। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩১ হাদীস নং ২৮৩১; মুসলিম ৩৩/৪০ হাঃ ১৮৯৮)

【27】

শহীদ জান্নাতে যাবে তার প্রমাণ।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি কোথায় থাকব বলে আপনি মনে করেন? তিনি বললেন, জান্নাতে। তখন ঐ ব্যক্তি হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেললেন, এরপর তিনি লড়াই করলেন, এমনকি শহীদ হয়ে গেলেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪০৪৬; মুসলিম ৩৩/৪১, হাঃ ১৮৯৯) আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানূ সুলায়মের সত্তর জন লোকের একটি দলকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশে বানূ ‘আমিরের নিকট পাঠান। দলটি সেখানে পৌঁছলে আমার মামা (হারাম ইব্‌নু মিলহান) তাদেরকে বললেন, আমি সর্বাগ্রে বনূ আমিরের নিকট যাব। যদি তারা আমাকে নিরাপত্তা দেয় আর আমি তাদের নিকট আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী পৌঁছাতে পারি, (তবে তো ভাল) অন্যথায় তোমরা আমার কাছেই থাকবে। অতঃপর তিনি এগিয়ে গেলেন। কাফিররা তাঁকে নিরাপত্তা দিল, কিন্তু তিনি যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী শুনাতে লাগলেন, সেই সময় আমির গোত্রীয়রা এক ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করলো। আর সেই ব্যক্তি তার প্রতি তীর মারল এবং তীর শরীর ভেদ করে বের হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন আল্লাহু আকবার, কা‘বার রবের কসম! আমি সফলকাম হয়েছি। অতঃপর কাফিররা তার অন্যান্য সংগীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং সকলকে শহীদ করল, কিন্তু একজন খোঁড়া ব্যক্তি বেঁচে গেলেন, তিনি পাহাড়ে আরোহণ করেছিলেন। হাম্মাম (রহঃ) অতিরিক্ত উল্লেখ করেন, আমার মনে হয় তার সঙ্গে অন্য একজন ছিলেন। অতঃপর জিব্‌রীল (আঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খবর দিলেন যে, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তিনি (রব) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদের সন্তুষ্ট করেছেন। (রাবী বলেন) আমরা এ আয়াতটি পাঠ করতাম, আমাদের কাওমকে জানিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের রবের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরও সন্তুষ্ট করেছেন। পরে এ আয়াতটি মানসুখ হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি বিরুদ্ধাচরণ করার কারণে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রমাগত চল্লিশ দিন রি‘ল, যাকওয়ান, বানূ লিহয়ান ও বানূ উসাইয়্যার বিরুদ্ধে দুআ করেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৮০১; মুসলিম ৩৩/৪১, হাঃ ৬৭৭)

【28】

যে আল্লাহ তা‘আলার বাণী সমুন্নত করার জন্য যুদ্ধ করে সে আল্লাহ্‌র রাস্তায় (যুদ্ধ করে)।

আবূ মূসা (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি গনীমতের জন্য, এক ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হওয়ার জন্য এবং এক ব্যক্তি বীরত্ব দেখানোর জন্য জিহাদে শরীক হলো। তাদের মধ্যে কে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করল? তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কালিমা বুলন্দ থাকার উদ্দেশে যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করল।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ২৮১০; মুসলিম ৩৩/৪২ হাঃ ১৯০৪) আবূ মূসা (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ কোন্‌টি, কেননা আমাদের কেউ লড়াই করে রাগের বশবর্তী হয়ে, আবার কেউ লড়াই করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তিনি তার দিকে মাথা তুলে তাকালেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর মাথা তোলার কারণ ছিল যে, সে ছিল দাঁড়ানো। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আল্লাহর বাণী বিজয়ী করার জন্য যে যুদ্ধ করে তার লড়াই আল্লাহ্‌র পথে হয়।’ (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ১২৩; মুসলিম ৩৩/৪২, হাঃ ১৯০৪)

【29】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল এবং যুদ্ধ ও অন্যান্য কাজও এ কথার মধ্যে শামিল।

উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয়ই প্রতিটি আমলের গ্রহণযোগ্যতা তার নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। কোন ব্যক্তি তা-ই লাভ করবে যা সে নিয়্যাত করে থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরাত করবে তার হিজরাত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির জন্যই হবে। আর যার হিজরাত দুনিয়াকে হাসিলের জন্য হবে অথবা কোন রমণীকে বিয়ে করার জন্য হবে তার হিজরাত সে উদ্দেশেই হবে যে জন্য সে হিজরাত করেছে। (বুখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৬৬৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৫, হাঃ ১৯০৭)

【30】

সাগরে যুদ্ধের ফাযীলাত।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হারাম বিন্‌তু মিলহান (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতেন এবং তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খেতে দিতেন। উম্মু হারাম (রাঃ) ছিলেন ‘উবাদাহ ইব্‌নু সামিত (রাঃ)-এর স্ত্রী। একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তাঁর মাথার উকুন বাছতে থাকেন। এক সময় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু ব্যক্তিকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মাঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর, অথবা বলেছেন, বাদশাহ্‌র মত তখ্‌তে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহঃ) সন্দেহ করেছেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্‌র নিকট দুআ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য দুআ করলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অতঃপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার হাসার কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের মধ্য থেকে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত কিছু ব্যক্তিকে আমার সামনে পেশ করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আল্লাহ্‌র নিকট দু‘আ করুন, যেন আমাকে তিনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। অতঃপর মু‘আবিয়াহ ইব্‌নু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ)-এর সময় উম্মু হারাম (রাঃ) জিহাদের উদ্দেশে সামুদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন বের হন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। এতে তিনি শাহাদাত লাভ করেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৭৮৮-২৭৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৯ হাঃ ১৯১২)

【31】

শাহীদদের বর্ণনা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা‘আলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শহীদ পাঁচ প্রকার- ১. প্লেগে মৃত ব্যক্তি ২. কলেরায় মৃত ব্যক্তি ৩. পানিতে নিমজ্জিত ব্যক্তি ৪. চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি এবং ৫. আল্লাহ্‌র পথে (জিহাদে) শহীদ। (বুখারী পর্ব ১০ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৬৫২-৬৫৩; মুসলিম ৩৩/৫১, হাঃ ১৯১৪) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহামারীতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৩৬৪০; মুসলিম ৩৩/৫১ হাঃ ১৯২১)

【32】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আমার উম্মাতের মধ্যে একটি দল সর্বদা সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে। যারা তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।

মুগীরাহ ইব্‌নু শু‘বাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমনকি যখন ক্বিয়ামাত আসবে তখনও তারা বিজয়ী থাকবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৩৬৪০; মুসলিম ৩৩/৫৩, হাঃ ১৯২১) মু‘আবীয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা আল্লাহ্‌র দ্বীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা অপমান করতে চাইবে অথবা তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা এ অবস্থার উপর থাকবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৩৬৪১; মুসলিম ৩৩/৫৩, হাঃ ১০৩৭)

【33】

“সফর” শাস্তির একটি টুকরো এবং মুসাফিরের জন্য উত্তম হল তার কাজ সম্পন্ন করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় ব্যঘাত ঘটায়। কাজেই সকলেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবিলম্বে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়। (বুখারী পর্ব ২৬ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ১৮০৪; মুসলিম ৩৩/৫৫, হাঃ ১৯২৭)

【34】

‘তুরুক’ অপছন্দনীয় আর তা হচ্ছে সফর থেকে ফিরে রাতে বাড়িতে প্রবেশ করা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রে কখনো পরিবারের নিকট প্রবেশ করতেন না। তিনি ভোরে কিংবা বিকেলে ছাড়া পরিবারের নিকট প্রবেশ করতেন না। (বুখারী পর্ব ২৬ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ১৮০০; মুসলিম ৩৩/৫৬, হাঃ ১৯২৮) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক জিহাদ থেকে ফিরছিলাম। যখন আমরা মাদীনায় প্রবেশ করব এমন সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, যেন (তোমার স্ত্রী মহিলাটি) (যার স্বামী এতদিন কাছে ছিল না) নিজের অগোছালো কেশরাশি বিন্যাস করে নিতে পারে এবং ক্ষৌর কার্য করতে পারে। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৫০৭৯; মুসলিম ৩৩/৫৬, হাঃ ১৯২৮)