34. শিকার, যব্হ ও কোন্ প্রকার জন্তু খাওয়া যায়
প্রশিক্ষিত কুকুর দ্বারা শিকার করা।
আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে শিকারে পাঠিয়ে থাকি। তিনি বললেনঃ কুকুরগুলো তোমার জন্য যেটি ধরে রাখে সেটি খাও। আমি বললামঃ যদি ওরা হত্যা করে ফেলে? তিনি বললেনঃ যদি ওরা হত্যাও করে ফেলে। আমি বললামঃ আমরা তো ফলকের সাহায্যেও শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ সেটি খাও, যেটি তীরে যখম করেছে; আর যেটি তীরের পার্শ্বের আঘাতে মারা গেছে সেটি খেও না। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৪৭৭; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আমরা এমন সম্প্রদায়, যারা এ সকল কুকুরের দ্বারা শিকার করে থাকি। তিনি বললেনঃ তুমি যদি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলোকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠিয়ে থাক তাহলে ওরা যেগুলো তোমাদের জন্য ধরে রাখে, তা খাও; যদিও শিকারকে কুকুর হত্যা করে ফেলে। তবে যদি কুকুর শিকারের কিছুটা খেয়ে ফেলে (তাহলে খাবে না)। কেননা, তখন আমার আশঙ্কা হয় যে, সে শিকার নিজেরই উদ্দেশে ধরেছে। আর যদি তার সঙ্গে অন্য কুকুর মিলে যায়, তাহলে খাবে না। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৫৪৮৩; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পার্শ্বফলা বিহীন তীর (দ্বারা শিকার) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, যদি তীরের ধারালো পার্শ্ব আঘাত করে, তবে সে (শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত) খাবে, আর যদি এর ধারহীন পার্শ্বের আঘাতে মারা যায়, তবে তা খাবে না। কেননা তা প্রহারের মৃত, যবহকৃত নয়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি বিসমিল্লাহ পড়ে আমার (শিকারী) কুকুর ছেড়ে দিয়ে থাকি। পরে তার সাথে শিকারের কাছে (অনেক সময়) অন্য কুকুর দেখতে পাই যার উপর আমি বিসমিল্লাহ পড়িনি এবং আমি জানি না, উভয়ের মধ্যে কে শিকার ধরেছে। তিনি বললেন, তুমি তা খাবে না। তুমি তো তোমার কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ পড়েছ, অন্যটির উপর পড়নি। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২০৫৪; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯) আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তীরের ফলকের আঘাত দ্বারা লব্ধ শিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তীরের ধারালো অংশের দ্বারা যেটি নিহত হয়েছে সেটি খাও। আর ফলকের বাঁটের আঘাতে যেটি নিহত হয়েছে সেটি ‘অকীয’ (অর্থাৎ থেতলে যাওয়া মৃতের অন্তর্ভুক্ত)। আমি তাঁকে কুকুরের দ্বারা লব্ধ শিকার সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, যে শিকারকে কুকুর তোমার জন্য ধরে রাখে সেটি খাও। কেননা, কুকুরের ঘায়েল করা যবাহর হুকুম রাখে। তবে তুমি যদি তোমার কুকুর বা কুকুরগুলোর সঙ্গে অন্য কুকুর পাও এবং তুমি আশঙ্কা কর যে, অন্য কুকুরটিও তোমার কুকুরের শিকার পাকড়াও করেছে এবং হত্যা করেছে, তা হলে তা খেও না। কেননা, তুমি তো কেবল নিজের কুকুরের উপর বিসমিল্লাহ বলেছ। অন্যের কুকুরের ক্ষেত্রে তা বলনি। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৪৭৫; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯) আদী ইবনু হাতিম (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার কুকুরকে বিসমিল্লাহ পড়ে পাঠাও, এরপর কুকুর শিকার পাকড়াও করে এবং মেরে ফেলে, তবে তুমি তা খেতে পার। আর যদি কুকুর কিছুটা খেয়ে ফেলে, তাহলে খাবে না। কেননা, সে তো নিজের জন্যই ধরেছে। আর যদি এমন কুকুরদের সঙ্গে মিশে যায়, যাদের উপর বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি এবং সেগুলো শিকার ধরে মেরে ফেলে, তা হলে তা খাবে না। কেননা, তুমি তো জান না যে, কোন কুকুরটি হত্যা করেছে? আর যদি তুমি শিকারের প্রতি তীর নিক্ষেপ করে থাক; এরপর তা একদিন বা দু’দিন পর এমতাবস্থায় হাতে পাও যে, তার গায়ে তোমার তীরের আঘাত ব্যতীত অন্য কিছু নেই, তাহলে খাও। আর যদি তা পানির মধ্যে পড়ে থাকে, তা হলে তা খাবে না। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৪৮৪; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯২৯) আবূ সা‘লাবা আল খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের এলাকায় বসবাস করি। আমারা কি তাদের থালায় খেতে পারি? তাছাড়া আমরা শিকারের অঞ্চলে থাকি। তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করি এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দিয়ে শিকার করে থাকি। এমতাবস্থায় আমার জন্য কোন্টা বৈধ হবে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যে সকল আহলে কিতাবের কথা উল্লেখ করলে তাতে বিধান হলঃ যদি অন্য পাত্র পাও তাদের পাত্রে খাবে না। আর যদি না পাও, তাহলে তাদের পাত্রগুলো ধুয়ে নিয়ে তাতে আহার কর। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার তীর ধনুকের সাহায্যে শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দ্বারা শিকার করেছ এবং বিসমিল্লাহ পড়েছ, সেটি খাও। আর যে প্রাণীকে তুমি তোমার প্রশিক্ষণবিহীন কুকুর দ্বারা শিকার করেছ, সেটি যদি যবহ করতে পার তবে তা খেতে পার। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫৪৭৮; মুসলিম ৩৪/১, হাঃ ১৯৩০)
প্রত্যেক বিষদাঁত বিশিষ্ট জন্তু ও প্রত্যেক নখর বিশিষ্ট পাখি খাওয়া হারাম।
আবূ সা‘লাবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁত বিশিষ্ট সর্বপ্রকার হিংস্র জন্তু খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৯ হাদীস নং ৫৫৩০; মুসলিম ৩৪/৩, হাঃ ১৯৩২)
সাগরের মৃত (বৈধ) জন্তু খাওয়া বৈধ।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিনশ’ সওয়ারীর একটি সৈন্যবাহিনীকে কুরাইশদের একটি কাফেলার উপর সুযোগ মতো আক্রমণ চালানোর জন্য পাঠিয়েছিলেন। আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্ (রাঃ) ছিলেন আমাদের সেনাপতি। আমরা অর্ধমাস সমুদ্র তীরে অবস্থান করলাম। ভয়ানক ক্ষুধা আমাদেরকে পেয়ে বসল। ক্ষুধার জ্বালায় গাছের পাতা খেতে থাকলাম। এ জন্যই এ সৈন্যবাহিনীর নাম রাখা হয়েছে জায়শুল খাবাত অর্থাৎ পাতাওয়ালা সেনাদল। এরপর সমুদ্র আমাদের জন্য আম্বর নামক একটি প্রাণী নিক্ষেপ করল। আমরা অর্ধমাস ধরে তা থেকে খেলাম। এর চর্বি শরীরে লাগালাম। ফলে আমাদের শরীর পূর্বের মত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে গেল। এরপর আবূ ‘উবাইদাহ(রাঃ) আম্বরটির শরীর থেকে একটি পাঁজর ধরে খাড়া করালেন। এরপর তাঁর সাথীদের মধ্যকার সবচেয়ে লম্বা লোকটিকে আসতে বললেন। সুফ্ইয়ান (রাঃ) আরেক বর্ণনায় বলেছেন, আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ) আম্বরটির পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্য থেকে একটি হাড় ধরে খাড়া করালেন এবং (ঐ) লোকটিকে উটের পিঠে বসিয়ে এর নিচে দিয়ে অতিক্রম করালেন। জাবির বলেন, সেনাদলের এক ব্যক্তি (খাদ্যের অভাব দেখে) প্রথমে তিনটি উট যবেহ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবহ্ করেছিলেন, তারপর আরো তিনটি উট যবেহ করেছিলেন। এরপর আবূ ‘উবাইদাহ(রাঃ) তাকে (উট যবেহ করতে) নিষেধ করলেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৪৩৬১; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৯৩৫)
গৃহপালিত গাধার গোশ্ত খাওয়া হারাম।
আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার যুদ্ধের দিন মহিলাদের মুত‘আহ (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিয়ে) করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৬; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৪০৭) আবূ সা‘লাবা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহপালিত গাধার গোশ্ত খাওয়া হারাম করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৫৫২৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবার যুদ্ধের দিন গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ৫২১) (‘আবদুল্লাহ) ইব্নু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের সময় আমরা ক্ষুধায় কষ্ট ভোগ করছিলাম। খায়বার বিজয়ের দিন আমরা পালিত গাধার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং তা যব্হ করলাম। যখন তা হাঁড়িতে ফুটছিল তখন রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘোষণা দানকারী ঘোষণা দিলঃ তোমরা হাঁড়িগুলো উপুড় করে ফেল। গাধার গোশত হতে তোমরা কিছুই খাবে না। ‘আবদুল্লাহ (ইব্নু আবূ আওফা) (রাঃ) বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কারণে নিষেধ করেছেন, যেহেতু তা হতে খুমুস বের করা হয়নি। (রাবী বলেন) আর অন্যরা বললেন, বরং তিনি এটাকে অবশ্যই হারাম করেছেন। (বুখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩১৫৫; মুসলিম ৩৪/৫ হাঃ ১৯৩৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) (খাইবার যুদ্ধে) তাঁরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা গাধার গোশত পেলেন। তাঁরা তা রান্না করলেন। এমন সময়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করলেন, পাতিলগুলো উল্টে ফেল। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২২১-৪২২২; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জানি না, গৃহপালিত গাধাগুলো মানুষের মালপত্র বহন করে, কাজেই তা গোশত খেলে মানুষের বোঝা বহনকারী পশু নিঃশেষ হয়ে যাবে, এজন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খেতে নিষেধ করেছিলেন, না-খাইবারের দিনে এর গোশত স্থায়ীভাবে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২২৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৯৩৯) সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধে আগুন প্রজ্জ্বলিত দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এ আগুন কেন জ্বালানো হচ্ছে? সাহাবীগণ বললেন, গৃহপালিত গাধার গোশত রান্না করার জন্য। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পাত্রটি ভেঙ্গে দাও এবং গোশত ফেলে দাও। তাঁরা বললেন, আমরা গোশত ফেলে দিয়ে পাত্রটা ধুয়ে নিব কি? তিনি বললেন, ধুয়ে নাও। (বুখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ২৪৭৭; মুসলিম ৩৪/৫, হাঃ ১৮০২)
ঘোড়ার গোশ্ত খাওয়া।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের যুদ্ধের দিন (গৃহপালিত) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২১৯; মুসলিম ৩৪/৬, হাঃ ১৯৪১) আসমা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘আমালে আমরা একটি ঘোড়া (নাহর) যব্হ্ করেছি। পরে আমরা সেটি খেয়েছি। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৫৫১১; মুসলিম ৩৪/৬, হাঃ ১৯৪২)
দব্ব বা গিরগিটি খাওয়া বৈধ।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দব্ব* (মরু অঞ্চলের এক প্রকার প্রাণী) আমি খাই না, আর হারামও বলি না। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৫৫৩৬; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৩) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মাঝে কতিপয় ব্যক্তি সমবেত ছিলেন, তাদের মাঝে সা‘দও ছিলেন, তারা গোশ্ত খাচ্ছিলেন। এমন সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীদের কেউ তাদের ডেকে বললেন যে, এটা দবের গোশ্ত। তারা (আহার থেকে) বিরত রইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ খাও বা আহার কর, এটা হালাল। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ এটা (খেতে) কোন অসুবিধে নেই। তবে এটা আমার খাদ্য নয়। (বুখারী পর্ব ৯৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৭২৬৭; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৪) খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাইমূনাহ (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করলেন। মাইমূনাহ (রাঃ) তাঁর ও ইবনু ‘আব্বাসের খালা ছিলেন। তিনি তাঁর কাছে একটি ভুনা যব্ব দেখতে পেলেন, যা নজ্দ থেকে তাঁর (মাইমূনাহ্র) বোন হুফাইদা বিন্ত হারিস নিয়ে এসে ছিলেন। মাইমূনাহ (রাঃ) যবটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে উপস্থিত করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, কোন খাদ্যের নাম ও তার বিবরণ বলে না দেয়া পর্যন্ত তিনি খুব কমই তার প্রতি হাত বাড়াতেন। তিনি যব এর দিকে হাত বাড়ালে উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন বললঃ তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে যা পেশ করছ সে সম্বন্ধে তাঁকে অবহিত কর। তারপর সে মহিলাই বললঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ওটা যব। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত তুলে ফেললেন। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যব খাওয়া কি হারাম? তিনি বললেনঃ না। কিন্তু যেহেতু এটি আমাদের এলাকায় নেই। তাই এটি খাওয়া আমি পছন্দ করি না। খালিদ (রাঃ) বলেনঃ আমি সেটি টেনে নিয়ে খেতে থাকলাম। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৫৩৯১; মুসলিম ৩৪/৭, হাঃ ১৯৪৫, ১৭৪৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাসের খালা উম্মু হুফায়দ (রাঃ) একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে পনীর, ঘি ও দব্ব হাদিয়া পাঠালেন। কিন্তু নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধু পনীর ও ঘি খেলেন আর দব্ব অরুচিকর হওয়ায় বাদ দিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দস্তরখানে (যব) খাওয়া হয়েছে। তা হারাম হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দস্তরখানে খাওয়া হত না। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৫৭৫; মুসলিম ৩৪/৭ হাঃ ১৯৪৭)
টিড্ডি বা ফড়িং খাওয়া বৈধ।
ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাতটি কিংবা ছয়টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমরা তাঁর সঙ্গে পঙ্গপাল খাই। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৫৪৯৫; মুসলিম ৩৪/৮, হাঃ ১৯৫২)
খরগোশ খাওয়া বৈধ।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (মাক্কাহর অদূরে) মার্রায্ যাহরান নামক স্থানে আমরা একটি খরগোশ তাড়া করলাম। লোকেরা সেটার পিছনে ধাওয়া করে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। অবশেষে আমি সেটাকে পেয়ে গেলাম এবং ধরে আবূ ত্বলহা (রাঃ)-এর নিকট নিয়ে গেলাম। তিনি সেটাকে যব্হ করে তার পাছা অথবা রাবী বলেন, দু’ উরু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে পাঠালেন। [শু‘বাহ (রহঃ) বলেন,] দু’টি উরুই, এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা গ্রহণ করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ২৫৭২; মুসলিম ৩৪/৪, হাঃ ১৯৫৩)
যে সব জিনিস দিয়ে শিকার করা হয় এবং শত্রুর পশ্চাদ্ধাবণ করা হয় সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ কিন্তু পাথরের ব্যবহার নিন্দনীয়।
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে ছোট ছোট পাথর নিক্ষেপ করছে। তখন তিনি তাকে বললেনঃ পাথর নিক্ষেপ করো না। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাথর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন অথবা রাবী বলেছেনঃ পাথর ছোঁড়াকে তিনি অপছন্দ করতেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এর দ্বারা কোন প্রাণী শিকার করা হয় না এবং কোন শত্রুকেও ঘায়েল করা হয় না। তবে এটি কারো দাঁত ভেঙ্গে ফেলতে পারে এবং চোখ ফুঁড়ে দিতে পারে। তারপর তিনি আবার তাকে পাথর ছুঁড়তে দেখলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস বর্ণনা করেছিলাম যে, তিনি পাথর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন অথবা তিনি তা অপছন্দ করেছেন। অথচ তুমি পাথর নিক্ষেপ করছ? আমি তোমার সঙ্গে কথাই বলব না- এতকাল এতকাল পর্যন্ত। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৫৪৭৯; মুসলিম ৩৪/১০, হাঃ ১৯৫৪)
খাঁচার বা বেঁধে রাখা পশু তীর বা অন্য কিছু দ্বারা বিদ্ধ করা নিষিদ্ধ।
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবজন্তুকে বেঁধে তীর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৫৫১৩; মুসলিম ৩৪/১২, হাঃ ১৯৫৬) সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বললেনঃ আমি ইবনু ‘উমার(রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। এরপর আমরা একদল তরুণ কিংবা তিনি বলেছেন, একদল মানুষের কাছ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম, তারা একটি মুরগী বেঁধে তার প্রতি তীর ছুঁড়ছে। তারা যখন ইবনু ‘উমার(রাঃ)-কে দেখতে পেল, তখন তারা তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। ইবনু ‘উমার(রাঃ) বললেনঃ এ কাজ কে করেছে? এ কাজ যে করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উপর অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৫৫১৫; মুসলিম ৩৪/১১, হাঃ ১৯৫৮)