35. কুরবানী
কুরবানীর সময়
জুন্দাব ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সলাত আদায় করেন, অতঃপর খুত্বা দেন। অতঃপর যবেহ্ করেন এবং তিনি বলেনঃ সলাতের পূর্বে যে ব্যক্তি যবেহ্ করবে তাকে তার স্থলে আর একটি যবেহ্ করতে হবে এবং যে যবেহ্ করেনি, আল্লাহ্র নামে তার যবেহ্ করা উচিত। (বুখারী পর্ব ১৩ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৯৮৫; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬০) বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বুরদাহ (রাঃ) নামক আমার এক মামা সলাত আদায়ের পূর্বেই কুরবানী করেছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তোমার বকরী কেবল গোশ্তের বকরী হল। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার নিকট একটি ঘরে পোষা বকরীর বাচ্চা রয়েছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেটাকে কুরবানী করে নাও। তবে তা তুমি ব্যতীত অন্য কারোর জন্য ঠিক হবে না। এরপর তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের পূর্বে যবহ্ করেছে, সে নিজের জন্যই যবহ্ করেছে (কুরবানীর জন্য নয়) আর যে ব্যক্তি সলাত আদায়ের পর যবহ্ করেছে, সে তার কুরবানী পূর্ণ করেছে। আর সে মুসলিমদের নীতি-পদ্ধতি অনুসারেই করেছে। (বুখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৫৬; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬১) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের পূর্বে যে যবেহ্ করবে তাকে পুনরায় যবেহ (কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজকের এ দিনটিতে গোশত খাবার আকাঙ্ক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার নিকট দু’টি হৃষ্টপুষ্ট বকরীর চেয়েও অধিক পছন্দনীয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানি না, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি-না? (বুখারী পর্ব ১৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৯৫৪; মুসলিম ৩৫/১, হাঃ ১৯৬২) উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কিছু বকরী (ভেড়া) সাহাবীদের মধ্যে বণ্টন করতে দিলেন। বণ্টন করার পর একটি বকরীর বাচ্চা বাকী থেকে যায়। তিনি তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করেন। তখন তিনি বললেন, তুমি নিজে এটাকে কুরবানী করে দাও। (বুখারী পর্ব ৪০ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৩০০; মুসলিম ৩৫/২, হাঃ ১৯৬৫)
কুরবানীর জন্তু কারো মাধ্যম ছাড়া নিজ হাতে যব্হ করা মুস্তাহাব এবং যব্হ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ও ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি সাদা-কালো বর্ণের শিং বিশিষ্ট ভেড়া কুরবানী করেন। তিনি ভেড়া দু’টির পার্শ্বদেশ তাঁর পায়ে স্থাপন করে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে নিজ হাতেই সেই দু’টিকে যবহ্ করেন। (বুখারী পর্ব ৮৩ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৫৫৬৫; মুসলিম ৩৫/৩, হাঃ ১৯৬৬)
রক্ত প্রবাহিত করে এমন বস্তু দিয়ে যব্হ করা জায়িয তবে দাঁত, নখ ও হাড় ব্যতীত।
রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামী দিন শত্রুর সম্মুখীন হব, অথচ আমাদের কাছে কোন ছুরি নেই। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি ত্বরানিত করবে কিংবা তিনি বলেছেনঃ তাড়াতাড়ি (যবহ্) করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং এতে আল্লাহ্র নাম নেয়া হয়, তা খাও। তবে দাঁত ও নখ দ্বারা নয়। তোমাকে বলছিঃ দাঁত হল হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি। আমরা কিছু উট ও বকরী গনীমত হিসাবে পেলাম। সেগুলো থেকে একটি উট পালিয়ে যায়। একজন সেটির উপর তীর নিক্ষেপ করলে আল্লাহ উটটি আটকিয়ে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সকল গৃহপালিত উটের মধ্য বন্যপশুর স্বভাব রয়েছে। কাজেই তন্মধ্যে কোনটি যদি তোমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তার সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৫৫০৯; মুসলিম ৩৫/৪, হাঃ ১৯৬৮) রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে যুল-হুলায়ফাতে ছিলাম। সাহাবীগণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন, তারা কিছু উট ও বকরী পেলেন। রাফি‘ (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দলের পিছনে ছিলেন। তারা তাড়াহুড়া করে গনীমতের মাল বণ্টনের পূর্বে সেগুলোকে যবহ করে পাত্রে চড়িয়ে দিলেন। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশে পাত্র উলটিয়ে ফেলা হল। তারপর তিনি (গনীমতের মাল) বণ্টন শুরু করলেন। তিনি একটি উটের সমান দশটি বকরী নির্ধারণ করেন। হঠাৎ একটি উট পালিয়ে গেল। সাহাবীগণ উটকে ধরার জন্য ছুটলেন, কিন্তু উটটি তাঁদেরকে ক্লান্ত করে ছাড়ল। সে সময় তাঁদের নিকট অল্প সংখ্যক ঘোড়া ছিল। অবশেষে তাঁদের মধ্যে একজন সেটির প্রতি তীর ছুঁড়লেন। তখন আল্লাহ উটটিকে থামিয়ে দিলেন। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নিশ্চয়ই পলায়নপর বন্য জন্তুদের মতো এ সকল চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে কতক পলায়নপর হয়ে থাকে। কাজেই যদি এসব জন্তুর কোনটা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠে তবে তার সাথে এরূপ করবে। (রাবী বলেন), তখন আমার দাদা [রাফি‘(রাঃ)] বললেন, আমরা আশঙ্কা করছি যে, কাল শত্রুর সাথে মুকাবিলা হবে। আর আমাদের নিকট কোন ছুরি নেই। তাই আমরা ধারালো বাঁশ দিয়ে যবেহ করতে পারব কি? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে বস্তু রক্ত প্রবাহিত করে এবং যার উপর আল্লাহর নাম নেয়া হয়, সেটা তোমরা আহার করতে পার। কিন্তু দাঁত বা নখ দিয়ে যেন যবেহ না করা হয়। আমি তোমাদেরকে এর কারণ বলে দিচ্ছি। দাঁত তো হাড় আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। (বুখারী পর্ব ৪৭ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৪৮৮; মুসলিম ৩৫/৪, হাঃ ১৯৬৮)
ইসলামের প্রথম যুগে কুরবানীর গোশ্ত তিনদিনের অতিরিক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল ও সে বিধান রহিত হয়ে যাওয়া এবং তা বৈধ হয়ে যাওয়া যে চায় তার জন্য।
আব্দল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরবানীর গোশ্ত তোমরা তিন দিন পর্যন্ত খাও। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মিনা থেকে প্রত্যাবর্তনকালে কুরবানীর গোশ্ত থেকে বিরত থাকার কারণে যায়তুন খাদ্য গ্রহণ করতেন। (বুখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৭৪; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭০) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনায় অবস্থানের সময় আমরা কুরবানীর গোশ্তের মধ্যে লবণ মিশ্রিত করে রেখে দিতাম। এরপর তা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে পেশ করতাম। তিনি বলতেনঃ তোমরা তিন দিনের পর খাবে না। তবে এটি জরুরী নয়। বরং তিনি চেয়েছেন যে, তা থেকে যেন অন্যদের খাওয়ানো হয়। আল্লাহ অধিক অবগত। (বুখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৭০; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭১) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আমাদের কুরবানীর গোশ্ত মিনা’র তিন দিনের বেশি খেতাম না। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ খাও এবং সঞ্চয় করে রাখ। তাই আমরা খেলাম এবং সঞ্চয়ও করলাম। (বুখারী পর্ব ২৫ অধ্যায় ১২৪ হাদীস নং ১৭১৯; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭২) সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানী করেছে, সে যেন তৃতীয় দিবসে এমতাবস্থায় সকাল অতিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কুরবানীর গোশ্ত কিছু পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে। এরপর যখন পরবর্তী বছর আসল, তখন সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি সে রূপ করব, যে রূপ গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি বললেনঃ তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ, কেননা গত বছর তো মানুষের মধ্যে ছিল অভাব অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম যে, তোমরা তাতে সাহায্য কর। (বুখারী পর্ব ৭৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৫৫৬৯; মুসলিম ৩৫/৫, হাঃ ১৯৭৪)
ফারা‘আ ও ‘আতিরার বর্ণনা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (ইসলামে) ফারা‘ বা ‘আতীরাহ্ নেই। ফারা‘ হল উটের সে প্রথম বাচ্চা, যা তারা তাদের দেব-দেবীর নামে যবহ করত। (বুখারী পর্ব ৭১ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৪৭৩; মুসলিম ৩৫/৬, হাঃ ১৯৭৬)