36. পানীয়
মদ হারাম হওয়ার বর্ণনা এবং তা আঙ্গুরের রস, পাকা খেজুর, শুকনা খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হোক যা মাতাল করে।
আলী (রাঃ) তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্য হতে যে অংশ আমি পেয়েছিলাম, তাতে একটি জওয়ান উটনীও ছিল। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুমুসের মধ্য হতে আমাকে একটি জওয়ান উটনী দান করেন। আর আমি যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ফাতিমাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে বাসর যাপন করব, তখন আমি বানূ কায়নুকা গোত্রের এক স্বর্ণকারের সঙ্গে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হলাম যে, সে আমার সঙ্গে যাবে এবং আমরা উভয়ে মিলে ইযখির ঘাস সংগ্রহ করে আনব। আমার ইচ্ছে ছিল তা স্বর্ণকারদের নিকট বিক্রি করে তা দিয়ে আমার বিবাহের ওয়ালীমা সম্পন্ন করব। ইতোমধ্যে আমি যখন আমার জওয়ান উটনী দু’টির জন্য আসবাবপত্র যেমন পালান, থলে ও রশি ইত্যাদি একত্রিত করছিলাম, আর আমার উটনী দু’টি এক আনসারীর ঘরের পার্শ্বে বসা ছিল। আমি আসবাবপত্র যোগাড় করে এসে দেখি উট দু’টির কুঁজ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কোমরের দিকে পেট কেটে কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। উটনী দু’টির এ হাল দেখে আমি অশ্রু চেপে রাখতে পারলাম না। আমি বললাম, কে এমনটি করেছে? লোকেরা বলল, ‘হামযা ইব্নু ‘আবদুল মুত্তালিব এমনটি করেছে। সে এ ঘরে আছে এবং শরাব পানকারী কতিপয় আনসারীর সঙ্গে আছে।’ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চলে গেলাম। তখন তাঁর নিকট যায়দ ইব্নু হারিসা (রাঃ) উপস্থিত ছিলেন। রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার চেহারা দেখে আমার মানসিক অবস্থা উপলব্ধি করতে পারলেন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আজকের মত দুঃখজনক অবস্থা দেখেনি। হামযাহ আমার উট দু’টির উপর অত্যাচার করেছে। সে দু’টির কুঁজ কেটে ফেলেছে এবং পাঁজর চিরে ফেলেছে। আর সে এখন অমুক ঘরে শরাব পানকারী দলের সঙ্গে আছে।’ তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদরখানি আনতে আদেশ করলেন এবং চাদরখানি জড়িয়ে পায়ে হেঁটে চললেন। আমি এবং যায়দ ইব্নু হারিসা (রাঃ) তাঁর অনুসরণ করলাম। হামযাহ যে ঘরে ছিল সেখানে পৌঁছে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারা অনুমতি দিল। তখন তারা শরাব পানে বিভোর ছিল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হামযাহকে তার কাজের জন্য তিরস্কার করতে লাগলেন। হামযাহ তখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত। তার চক্ষু দু’টি ছিল রক্তলাল। হামযাহ তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি তাকাল। অতঃপর সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এবং তাঁর হাঁটু পানে তাকাল। আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর নাভির দিকে তাকাল। আবার সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাঁর মুখমণ্ডলের দিকে তাকাল। অতঃপর হামযাহ বলল, তোমরাই তো আমার পিতার গোলাম। এ অবস্থা দেখে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুঝতে পারলেন, সে এখন পূর্ণ নেশাগ্রস্ত আছে। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেছনে হেঁটে সরে আসলেন। আর আমরাও তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে আসলাম। (বুখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩০৯১; মুসলিম ৩৬/১ হাঃ ১৯৭৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি আবূ তালহার বাড়িতে লোকজনকে শরাব পান করাচ্ছিলাম। সে সময় লোকেরা ফাযীখ শরাব ব্যবহার করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে আদেশ করলেন, যেন সে এ মর্মে ঘোষণা দেয় যে, সাবধান! শরাব এখন হতে হারাম করে দেয়া হয়েছে। আবূ তালহা (রাঃ) আমাকে বললেন, বাইরে যাও এবং সমস্ত শরাব ঢেলে দাও। আমি বাইরে গেলাম এবং সমস্ত শরাব রাস্তায় ঢেলে দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, সে দিন মাদীনার অলিগলিতে শরাবের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল। তখন কেউ কেউ বলল, একদল লোক নিহত হয়েছে, অথচ তাদের পেটে শরাব ছিল। তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ “যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা পূর্বে যা কিছু পানাহার করেছে তার জন্য তাদের কোন গুনাহ হবে না”-(আল-মা-য়িদাহ ৯৩)। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২৪৬৪; মুসলিম ৩৬/১, হাঃ ১৯৮০)
পাকা খেজুর ও কিশমিশ একত্র করে নাবিজ বানানো মাকরূহ।
জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসমিস, শুকনো খেজুর, কাঁচা ও পাকা খেজুর মিশ্রণ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৬০১; মুসলিম ৩৬/৫, হাঃ ১৯৮৬) আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুরমা ও আধাপাকা খেজুর এবং খুরমা ও কিসমিস একত্রিত করতে নিষেধ করেছেন। আর এগুলো প্রত্যেকটিকে পৃথক পৃথকভাবে ভিজিয়ে ‘নাবীয’ তৈরী করা যাবে। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৬০২; মুসলিম ৩৬/৫, হাঃ ১৯৮৮)
আলকাতরা মাখানো পাত্রে, কদুর বোলে, সবুজ কলস ও কাঠের বোলে নাবিজ বানানো নিষিদ্ধ এবং এ বিধান রহিত হয়ে যাওয়া ও বর্তমানে এটা হালাল যতক্ষণ না তা মাতাল করে।
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কদু (লাউ)’র খোলসে এবং আলকাতরা মাখানো পাত্রে নাবিজ তৈরি করো না। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ৫৫৮৭; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯২, ১৯৯৩) আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা (কদু বা লাউয়ের খোলস) ও মুযাফ্ফাত (আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্র) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৪; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯৪) ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আসওয়াদকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কোন্ কোন্ পাত্রের মধ্যে ‘নাবীয’ তৈরী করা মাকরূহ। তিনি উত্তর করলেনঃ হাঁ। আমি বলেছিলাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! কোন্ কোন্ পাত্রের মধ্যে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন? তখন তিনি বললেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অর্থাৎ আহলে বায়তকে দুব্বা (কদু বা লাউয়ের খোলস) ও মুযাফ্ফাত (আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্র) নামক পাত্রে নাবীয তৈরী করতে নিষেধ করেছেন। (ইবরাহীম বলেন) আমি বললামঃ ‘আয়িশাহ (রাঃ) কি জার (মাটির কলসী) ও হানতাম (মাটির সবুজ পাত্র) নামক পাত্রের কথা উল্লেখ করেননি? তিনি বললেনঃ আমি যা শুনেছি কেবল তাই তোমাকে বর্ণনা করেছি। আমি যা শুনি নি তাও কি আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করব? (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৫; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৯৯৫) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ ‘আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করলো, ............ আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি শুষ্ক কদুর খোলস, সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র, তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে। (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ১৩৯৮; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ১৭) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ধরনের পাত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেন, তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হল, সব মানুষের নিকট তো মশ্ক মওজুদ নেই। ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কলসীর জন্য অনুমতি দেন, তবে আলকাতরার প্রলেপ দেয়া পাত্রের জন্য অনুমতি দেননি। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫৫৯৩; মুসলিম ৩৬/৬, হাঃ ২০০০)
যা মাতলামি আনে তাই মাদকদ্রব্য আর প্রত্যেক মাদকদ্রব্যই হারাম।
আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সকল পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৭১ হাদীস নং ৫৫৮৫, ৫৫৮৬, ২৪২; মুসলিম ৩৬/৭, হাঃ ২০০১) আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (আবূ মূসাকে গভর্নর নিযুক্ত করে) ইয়ামানে পাঠিয়েছেন। তখন তিনি ইয়ামানে তৈরি করা হয় এমন কতিপয় শরাব সম্পর্কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঐগুলো কী কী? আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তা হল বিত্উ‘ ও মিয্র শরাব। বর্ণনাকারী সা‘ঈদ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ বুরদাকে জিজ্ঞেস করলাম বিত্উ‘ কী? তিনি বললেন, বিত্উ‘ হল মধু থেকে গ্যাজানো রস আর মিয্র হল যবের গ্যাঁজানো রস। (সা‘ঈদ বলেন) তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সকল নেশা উৎপাদক বস্তুই হারাম। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬০ হাদীস নং ৪৩৪৩; মুসলিম ৩৬/৭, হাঃ ১৭৩৩)
যে মদপান করল তা থেকে বিরত হল না বা তাওবাহ করল না তার শাস্তি তাকে পরকালে তা থেকে বঞ্চিত করা হবে।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে এরপর সে তা থেকে তাওবাহ করেনি, সে ব্যক্তি আখিরাতে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৫৭৫; মুসলিম ৩৬/৮, হাঃ ২০০৩)
নাবিজ ততক্ষণ (খাওয়া) বৈধ যতক্ষণ না তা কঠিনভাবে বিকৃত হয় এবং মাদকদ্রব্যে পরিণত হয়।
সাহ্ল ইব্নু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ উসায়দ আস্ সা‘ঈদী (রাঃ) শাদী উপলক্ষে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার ওয়ালীমায় দাওয়াত করলেন। তাঁর নববধু সেদিন খাদ্য পরিবেশন করছিলেন। সাহ্ল বলেন, তোমরা কি জান, সে দিন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী পানীয় সরবরাহ করা হয়েছিল? সারারাত ধরে কিছু খেজুর পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তা থেকে তৈরি পানীয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খাওয়া শেষ করলেন, তখন তাঁকে ঐ পানীয়ই পান করতে দেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৭২ হাদীস নং ৫১৭৬; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৬) সাহ্ল (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আবূ উসায়দ আস্সা‘ঈদী (রাঃ) তাঁর ওয়ালীমায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবিগণকে দাওয়াত দিলেন, তখন তাঁর নববধূ উম্মু উসায়দ ব্যতীত আর কেউ উক্ত খাদ্য প্রস্তুত এবং পরিবেশন করেননি। তিনি একটি পাথরের পাত্রে সারা রাত পানির মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে রাখেন। যখন (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাওয়া-দাওয়া শেষ করেন, তখন সেই তোহফা (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পান করান। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৭৮ হাদীস নং ৫১৮২; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৬) সাহ্ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আরবের জনৈকা মহিলার কথা আলোচনা করা হলে, তিনি আবূ উসাইদ সা‘ঈদী (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন, সেই মহিলার নিকট কাউকে পাঠাতে। তখন তিনি তার নিকট একজনকে পাঠালে সে আসলো এবং সায়িদা গোত্রের দূর্গে অবতরণ করল। এরপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এসে তার কাছে গেলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দূর্গে তার কাছে প্রবেশ করে দেখলেন, একজন মহিলা মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তার সঙ্গে কথোপকথন করলেন, তখন সে বলে উঠল, আমি আপনার থেকে আল্লাহ্র নিকট পানাহ চাই। তখন তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে পানাহ দিলাম। তখন লোকজন তাকে বলল, তুমি কি জান ইনি কে? সে উত্তর করলঃ না। তারা বললঃ ইনি তো আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। সে বলল, এ মর্যাদা থেকে আমি চির বঞ্চিতা। এরপর সেই দিনই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অগ্রসর হলেন এবং তিনি ও তাঁর সহাবীগণ অবশেষে বানী সায়িদার চত্বরে এসে বসে পড়লেন। এরপর বললেনঃ হে সা’দ! আমাদের পানি পান করাও। সাহ্ল বলেন, তখন আমি তাঁদের জন্য এই পেয়ালাটিই বের করে আনি এবং তা দিয়ে তাঁদের পান করাই। বর্ণনাকারী বলেন, সাহ্ল তখন আমাদের কাছে সেই পেয়ালা বের করে আনলে আমরা তাতে করে পানি পান করি। তিনি বলেছেনঃ পরবর্তীকাল ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রাঃ) তাঁর নিকট হতে সেটি দান হিসাবে পেতে চাইলে, তিনি তাঁকে তা হেবা করে দেন। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৫৬৩৭; মুসলিম ৩৬/৯, হাঃ ২০০৭)
দুগ্ধপান বৈধ।
বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্র দিকে যাচ্ছিলেন তখন সুরাকা ইব্নু মালিক ইব্নু জু‘শাম তাঁর পেছনে ধাওয়া করল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য বদ্দু‘আ করলেন। ফলে তার ঘোড়াটি তাকে নিয়ে মাটিতে দেবে গেল। তখন সে বলল, আপনি আল্লাহ্র কাছে আমার জন্য দু’আ করুন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করব না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’আ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তৃষ্ণার্ত হলেন। তখন তিনি এক রাখালের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বাক্র সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, তখন আমি একটি বাটি নিয়ে এতে কিছু দুধ দোহন করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে এলাম, তিনি এমনভাবে তা পান করলেন যে, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৯০৮; মুসলিম ৩৬/১০, হাঃ নং ২১৪৬) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যে রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বাইতুল মুকাদ্দাসে ভ্রমণ করানো হয়, সে রাতে তাঁর সামনে দু’টি পেয়ালা রাখা হয়েছিল। তার একটিতে ছিল শরাব এবং আরেকটিতে ছিল দুধ। তিনি উভয়টির দিকে তাকালেন এবং দুধ বেছে নিলেন। তখন জিবরীল (আঃ) বললেন, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহ্র, যিনি আপনাকে স্বাভাবিক পথ দেখিয়েছেন। যদি আপনি শরাব বেছে নিতেন, তাহলে আপনার উম্মাত অবাধ্য হয়ে যেত। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৪৭০৯; মুসলিম ৩৬/১০, হাঃ ১৬৮)
নাবিজ পান করা ও পাত্র ঢেকে রাখা।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুমাইদ (রাঃ) এক পাত্রে দুধ নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ এটিকে ঢেকে রাখলে না কেন? এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও ঢেকে রাখা উচিত ছিল। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৬০৫; মুসলিম ৩৬/১১, ২০১০)
পাত্র ঢেকে রাখা, মশ্ক বেঁধে রাখা, দরজা বন্ধ করা, এগুলো করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলা এবং ঘুমানোর সময় বাতি ও আগুন নিভিয়ে রাখা এবং মাগরিবের পর শিশু ও গরু বাছুর বাড়ীর বাইরে যেতে না দেয়ার নির্দেশ।
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে অথবা বলেছেন, যখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে তখন তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে (ঘরে) আটকে রাখবে। কেননা এসময় শয়তানেরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হবে তখন তাদেরকে ছেড়ে দিতে পার। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং আল্লাহ্র নাম স্মরণ করবে। কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৩০৪; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১২) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরগুলোতে আগুন রেখে ঘুমাবে না। (বুখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ৬২৯৩; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১৫) আবূ মূসা (রাঃ) একবার রাত্রি কালে মাদীনাহ্’র এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসহ পুড়ে গেল। এদের অবস্থা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জানানো হলে, তিনি বললেনঃএ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তোমাদেরই হিফাযতের জন্য তা নিভিয়ে ফেলবে। (বুখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ৬২৯৪; মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১৬)
খাওয়া ও পান করার আদাব এবং তার বিধান।
উমার ইবনু আবূ সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ছোট ছেলে হিসাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছুটাছুটি করত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে বৎস! বিসমিল্লাহ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করতাম। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৩৭৬; মুসলিম ৩৬/১৩, হাঃ ২০২২) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশ্কের মুখ খুলে, তাতে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৫৬২৫; মুসলিম ৩৬/১৩, হাঃ ২০২৩)
জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট যমযমের পানি পেশ করলাম। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করলেন। (বুখারী পর্ব ২৫ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ১৬৩৭; মুসলিম ৩৬/১৫, হাঃ ২০২৭)
পান করার সময় পাত্রে নিঃশ্বাস ছাড়া ঘৃণিত এবং পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ছাড়া মুস্তাহাব।
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ১৫৩; মুসলিম ৩৬/১৬, হাঃ ২৬৭) সুমামাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আনাস (রাঃ)-এর নিয়ম ছিল, তিনি দুই কিংবা তিন নিঃশ্বাসে পাত্রের পানি পান করতেন। তিনি ধারণা করতেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করতেন। (বুখারী পর্ব ৭৪ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৫৬৩১; মুসলিম ৩৬/১৬, হাঃ ২০২৮)
প্রথমে পানকারীর পর দুধ, পানি বা এ জাতীয় বস্তুর পাত্র ডান দিক থেকে ঘুরান মুস্তাহাব।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এই ঘরে আগমন করলেন এবং কিছু পান করতে চাইলেন। আমরা আমাদের একটা বকরীর দুধ দোহন করে তাতে আমাদের এই কুয়ার পানি মিশালাম। অতঃপর তা সম্মুখে পেশ করলাম। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তাঁর বামে, ‘উমার (রাঃ) ছিলেন তাঁর সম্মুখে, আর এক বেদুঈন ছিলেন তাঁর ডানে। তিনি যখন পান শেষ করলেন, তখন ‘উমার বললেন, ইনি আবূ বকর; কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেদুঈনকে তার অবশিষ্ট পানি দান করলেন। অতঃপর বললেন, ডান দিকের ব্যক্তিদেরকেই (অগ্রাধিকার), ডান দিকের ব্যক্তিদের (অগ্রাধিকার) শোন! ডান দিক থেকেই শুরু করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, এটাই সুন্নাত, এটাই সুন্নাত, এটাই সুন্নাত। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৪ হাদীস নং ২৫৭১; মুসলিম ৩৬/১৭, হাঃ ২০২৯) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি পিয়ালা আনা হল। তিনি তা হতে পান করলেন। তখন তাঁর ডান দিকে ছিল একজন বয়ঃকনিষ্ঠ বালক আর বয়স্ক লোকেরা ছিলেন তাঁর বাম দিকে। তিনি বললেন, হে বালক! তুমি কি আমাকে অবশিষ্ট (পানিটুকু) বয়স্কদেরকে দেয়ার অনুমতি দিবে? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার নিকট থেকে ফাযীলাত পাওয়ার ব্যাপারে আমি আমার চেয়ে অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। অতঃপর তিনি তা তাকে প্রদান করলেন। (বুখারী পর্ব ৪২ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৩৫১; মুসলিম ৩৬/১৭, হাঃ ২০৩০)
আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়া ও কোন লোকমা পড়ে গেলেও তাতে ময়লা লাগলে পরিষ্কার করে খেয়ে নেয়া মুস্তাহাব এবং হাত চেটে খাওয়ার পূর্বে মুছে ফেলা মাকরূহ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন আহার করে সে যেন তার হাত না মোছে, যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অন্যকে দিয়ে চাটিয়ে নেয়। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ৫২ হাদীস নং ৫৪৫৬; মুসলিম ৩৬/১৮, হাঃ ২০৩১)
খাবারের মালিক দা‘ওয়াত দেয়নি এমন কেউ মেহমানের সঙ্গী হলে মেহমান কী করবে? এবং মেজবানের জন্য উত্তম হল সঙ্গী ব্যক্তিকে খাবারের অনুমতি দেয়া।
আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ শু‘আইব নামক এক আনসারী এসে তার কসাই গোলামকে বললেন, পাঁচ জনের উপযোগী খাবার তৈরী কর। আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সহ পাঁচজনকে দাওয়াত করতে যাই। তাঁর চেহারায় আমি ক্ষুধার চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। তারপর সে লোক এসে দাওয়াত দিলেন। তাদের সঙ্গে আরেকজন অতিরিক্ত এলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ আমাদের সঙ্গে এসেছে, তুমি ইচ্ছে করলে একে অনুমতি দিতে পার আর তুমি যদি চাও সে ফিরে যাক, তবে সে ফিরে যাবে। সাহাবী বললেন, না, বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ২০৮১; মুসলিম ৩৬/১৯, হাঃ ২০৩৬)
মেহমানের জন্য তার সাথে অন্য এমন লোককে নিয়ে যাওয়া বৈধ যার ব্যাপারে সে নিশ্চিত যে বাড়িওয়ালা এতে সন্তুষ্ট থাকবে এবং যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন পরিখা খনন করা হচ্ছিল তখন আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভীষণ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কাছে কোন কিছু আছে কি? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দারুন ক্ষুধার্ত দেখেছি। তিনি একটি চামড়ার পাত্র এনে তা থেকে এক সা‘ পরিমাণ যব বের করে দিলেন। আমার বাড়ীতে একটা বকরীর বাচ্চা ছিল। আমি সেটি যবেহ করলাম। আর সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। আমি আমার কাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সেও তার কাজ শেষ করল এবং গোশত কেটে কেটে ডেকচিতে ভরলাম। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ফিরে চললাম। তখন সে (স্ত্রী) বলল, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সহাবীদের নিকট লজ্জিত করবেন না। এরপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আমাদের একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করেছি এবং আমাদের ঘরে এক সা‘ যব ছিল। তা আমার স্ত্রী পিষে দিয়েছে। আপনি আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চৈঃস্বরে সবাইকে বললেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির খানার ব্যবস্থা করেছে। এসো, তোমরা সকলেই চল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার আসার পূর্বে তোমাদের ডেকচি নামাবে না এবং খামির থেকে রুটিও তৈরি করবে না। আমি (বাড়ীতে) আসলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবা-ই-কিরামসহ তাশরীফ আনলেন। এরপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট আসলে সে বলল, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আমি বললাম, তুমি যা বলেছ আমি তাই করেছি। এরপর সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে আটার খামির বের করে দিলে তিনি তাতে মুখের লালা মিশিয়ে দিলেন এবং বরকতের জন্য দু‘আ করলেন। এরপর তিনি ডেকচির কাছে এগিয়ে গেলেন এবং তাতে মুখের লালা মিশিয়ে এর জন্য বরকতের দু‘আ করলেন। তারপর বললেন, রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক। সে আমার কাছে বসে রুটি প্রস্তুত করুক এবং ডেকচি থেকে পেয়ালা ভরে গোশত বেড়ে দিক। তবে (উনুন হতে) ডেকচি নামাবে না। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় এক হাজার। আমি আল্লাহ্র কসম করে বলছি, তাঁরা সকলেই তৃপ্তি সহকারে খেয়ে বাকী খাদ্য রেখে চলে গেলেন। অথচ আমাদের ডেকচি আগের মতই টগবগ করছিল আর আমাদের আটার খামির থেকেও আগের মতই রুটি তৈরি হচ্ছিল। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১০২; মুসলিম ৩৬/২০. ২০৩৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তাল্হা (রাঃ) উম্মু সুলায়ম্কে বললেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্ঠস্বর দুর্বল শুনেছি। আমি তাঁর মধ্যে ক্ষুধা বুঝতে পেরেছি। তোমার নিকট খাবার কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ আছে। এই বলে তিনি কয়েকটা যবের রুটি বের করলেন। অতঃপর তাঁর একখানা ওড়না বের করে এর কিয়দংশ দিয়ে রুটিগুলো মুড়ে আমার হাতে গোপন করে রেখে দিলেন ও ওড়নার অপর অংশ আমার শরীরে জড়িয়ে দিলেন এবং আমাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পাঠালেন। রাবী আনাস বলেন, আমি তাঁর নিকট গেলাম। ঐ সময় তিনি কতক লোকসহ মাসজিদে ছিলেন। আমি গিয়ে তাঁদের সামনে দাঁড়ালাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখে বললেন, তোমাকে আবূ ত্বলহা পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি, হাঁ। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, জি-হাঁ। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গীদেরকে বললেন, চল, আবূ ত্বলহা আমাকে দাও‘আত করেছে। আমি তাঁদের আগেই চলে গিয়ে আবূ ত্বলহা (রাঃ)-কে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমনের কথা শুনলাম। এতদশ্রবণে আবূ ত্বলহা (রাঃ) বলেন, হে উম্মু সুলাইম! নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গী সাথীদেরকে নিয়ে আসছেন। তাঁদেরকে খাওয়ানোর মত কিছু আমাদের নিকট নেই। উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই ভাল জানেন। আবূ ত্বলহা (রাঃ) তাঁদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য বাড়ি হতে কিছুদূর এগুলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে দেখা করলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বলহা (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে তার ঘরে আসলেন, আর বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো। তিনি যবের ঐ রুটিগুলি হাযির করলেন এবং তাঁর নির্দেশে রুটিগুলো টুক্রা টুক্রা করা হল। উম্মু সুলায়ম ঘিয়ের পাত্র ঝেড়ে কিছু ঘি বের করে তরকারী হিসেবে উপস্থিত করলেন। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করে তাতে ফুঁ দিলেন অতঃপর দশজনকে নিয়ে আসতে বললেন। তাঁরা দশজন আসলেন এবং রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। অতঃপর আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তারা আসলেন এবং তৃপ্তি সহকারে রুটি খেয়ে চলে গেলেন। আবার আরো দশজনকে আসতে বলা হল। তাঁরাও আসলেন এবং পেটপুরে খেয়ে নিলেন। ঐভাবে উপস্থিত সকলেই রুটি খেয়ে তৃপ্ত হলেন। সর্বমোট সত্তর বা আশিজন লোক ছিলেন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৫৭৮; মুসলিম ৩৬/২০, হাঃ ২০৪০)
ঝোল খাওয়া জায়িয, কুমড়া খাওয়া মুস্তাহাব এবং দস্তরখানায় লোকেদের কতককে অন্যদের উপর প্রাধান্য দেয়া যদি মেজবান এটা অপছন্দ না করে।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক দরজী খাবার তৈরী করে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াত করলেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে রুটি এবং ঝোল যাতে লাউ ও গোশতের টুকরা ছিল, পেশ করলেন। আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখতে পেলাম যে, পেয়ালার কিনারা হতে তিনি লাউয়ের টুকরা খোঁজ করে নিচ্ছেন। সেদিন হতে আমি সব সময় লাউ ভালবাসতে থাকি। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ২০৯২; মুসলিম ৩৬/২১, হাঃ ২০৪১)
তাজা খেজুরের সাথে শসা খাওয়া।
আবদুল্লাহ ইবনু জা‘ফর ইবনু আবূ ত্বলিব তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাজা খেজুর কাঁকুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দেখেছি। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৫৪৪০; মুসলিম ৩৬/২৩, হাঃ ২০৪৩)
একসাথে খাওয়ার সময় সাথীদের বিনা অনুমতিতে এক সাথে দু’টো খেজুর বা দু’ টুকরা খাওয়া নিষিদ্ধ।
জাবালাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মাদীনায় কিছু সংখ্যক ইরাকী লোকের সাথে ছিলাম। একবার আমরা দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হই, তখন ইবনু যুবাইর (রাঃ) আমাদেরকে খেজুর খেতে দিতেন। ইবনু উমার (রাঃ) আমাদের নিকট দিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে তার ভাইয়ের অনুমতি ব্যতীত এক সাথে দু’টো করে খেজুর খেতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ২৪৫৫; মুসলিম ৩৬/২৫, হাঃ ২০৪৫)
মাদীনাহ্র খেজুরের মর্যাদা।
সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলা সাতটি আজ্ওয়া (মাদীনায় উৎপন্ন উন্নত মানের খুরমার নাম) খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। (বুখারী পর্ব ৭৬ অধ্যায় ৫২ হাদীস নং ৫৭৬৯; মুসলিম ৩৬/২৭, হাঃ ২০৪৭)
কাম’আ (এক প্রকার ছত্রাক যা খাওয়া যায়)-এর ফাযীলাত এবং চক্ষু রোগের ঔষধ হিসেবে তার ব্যবহার।
সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (আরবী) আল কামাআত (ব্যাঙের ছাতা) মান্না জাতীয়। আর তার পানি চোখের রোগের প্রতিষেধক। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৪৭৮; মুসলিম ৩৬/২৮, হাঃ ২০৪৯)
কালো কাবাস (আরক গাছের ফল)-এর ফাযীলাত
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ‘কাবাস’ (পিলু) গাছের পাকা ফল বেছে বেছে নিচ্ছিলাম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর মধ্যে কালোগুলো নেয়াই তোমাদের উচিত। কেননা এগুলোই অধিক সুস্বাদু। সাহাবীগণ বললেন, আপনি কি ছাগল চরিয়েছিলেন? তিনি বললেন, প্রত্যেক নাবীই তা চরিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ২৯ হাদীস নং ৩৪০৬; মুসলিম ৩৬/২৮, হাঃ ২০৫০)
মেহমানের সম্মান ও তাকে (মেহমানকে) প্রাধান্য দেয়ার ফাযীলাত
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে এল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। তাঁরা জানালেন, আমাদের নিকট পানি ছাড়া কিছুই নেই। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কে আছ যে এই ব্যক্তিকে মেহমান হিসেবে নিয়ে নিজের সাথে খাওয়াতে পার? তখন এক আনসারী সাহাবী [আবূ ত্বলহা ] বললেন, আমি। এ বলে তিনি মেহমানকে নিয়ে গেলেন এবং স্ত্রীকে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মেহমানকে সম্মান কর। স্ত্রী বললেন, বাচ্চাদের খাবার ছাড়া আমাদের ঘরে অন্য কিছুই নেই। আনসারী বললেন, তুমি আহার প্রস্তুত কর এবং বাতি জ্বালাও এবং বাচ্চারা খাবার চাইলে তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দাও। সে বাতি জ্বালাল, বাচ্চাদেরকে ঘুম পাড়াল এবং সামান্য খাবার যা তৈরি ছিল তা উপস্থিত করল। বাতি ঠিক করার বাহানা করে স্ত্রী উঠে গিয়ে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অন্ধকারের মধ্যে আহার করার মত শব্দ করতে লাগলেন এবং মেহমানকে বুঝাতে লাগলেন যে, তারাও সঙ্গে খাচ্ছেন। তাঁরা উভয়েই সারারাত অভুক্ত অবস্থায় কাটালেন। ভোরে যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ তোমাদের গত রাতের কাণ্ড দেখে হেসে দিয়েছেন অথবা বলেছেন খুশী হয়েছেন এবং এ আয়াত নাযিল করেছেন। ‘তারা অভাবগ্রস্ত সত্ত্বেও নিজেদের উপর অন্যদেরকে অগ্রগণ্য করে থাকে। আর যাদেরকে অন্তরের কৃপণতা হতে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলতাপ্রাপ্ত’ (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/৯)। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩৭৯৮; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৪) আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্র (রাঃ) তিনি বলেন, সফরে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমরা একশ’ ত্রিশজন লোক ছিলাম। সে সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কারো সঙ্গে কি খাবার আছে? দেখা গেল, এক ব্যক্তির সঙ্গে এক সা‘ কিংবা তার কমবেশী পরিমাণ খাদ্য আছে। সে আটা গোলানো হল। অতঃপর দীর্ঘ দেহী এলোমেলো চুলওয়ালা এক মুশরিক এক পাল বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে এল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন। বিক্রি করবে, না, উপহার দিবে? সে বলল, না, বরং বিক্রি করব। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট হতে একটা বকরী কিনে নিলেন। সেটাকে যব্হ করা হল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বকরীর কলিজা ভুনা করার আদেশ দিলেন। আল্লাহর কসম! একশ’ ত্রিশজনের প্রত্যেককে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই কলিজার কিছু কিছু করে দিলেন। উপস্থিতদের হাতে দিলেন; আর অনুপস্থিত ছিল তার জন্য তুলে রাখলেন। অতঃপর দু’টি পাত্রে তিনি গোশত ভাগ করে রাখলেন। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেল। আর উভয় পাত্রে কিছু উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। সেগুলো আমরা উটের পিঠে উঠিয়ে নিলাম। অথবা রাবী যা বললেন। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৬১৮; মুসলিম ৩৬/৩২ হাঃ ২০৫৬) আবদুর রহমান ইব্নু আবূ বাক্র (রাঃ) আসহাবে সুফ্ফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার নিকট দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের হতে) তৃতীয় জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজনকে সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বাক্র (রাঃ) তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশজন নিয়ে আসেন। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বাকরের ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই তিন জন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি-না? আবূ বাক্র (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘরেই রাতের আহার করেন, এবং ‘ইশার সলাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ‘ইশার সলাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে) ফিরে আসেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ি ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের নিকট আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান হতে। আবু বাক্র (রাঃ) বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি সরে গিয়ে আত্মগোপন করলাম। তিনি (রাগানি¦ত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভর্ৎসনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তা কখনই খাব না। আবদুর রহমান বলেন, আল্লাহ্র কসম! আমরা লুক্মা উঠিয়ে নিতেই নীচ হতে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে অধিক খাবার রয়ে গেলো। আবূ বাক্র (রাঃ) খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলেন তা পূর্বের সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বেশি। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বানূ ফিরাসের বোন। একি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি! আবূ বাক্র (রাঃ)-ও তা হতে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ হতেই হয়েছিল। অতঃপর তিনি আরও লুক্মা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে সন্ধি ছিলো তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। (এবং তারা মাদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যেকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিলো। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য হতে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রহমান যেভাবে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ৯ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬০২; মুসলিম ৩৬/৩২, হাঃ ২০৫৭)
খাদ্য অল্প হলেও ভাগ করে খাওয়ার ফাযীলাত এবং দু’জনের খাবার তিনজনের বা অনুরূপ কমলোকের খাবার বেশী জনের জন্য যথেষ্ট হওয়ার বর্ণনা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৩৯২; মুসলিম ৩৬/৩৩, হাঃ ২০৫৮)
মু’মিন খায় এক পেটে, কাফির খায় সাত পেটে।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন এক পেটে খায় আর কাফির অথবা মুনাফিক সাত পেটে খায়। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৩৯৪; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক লোক খুব বেশী পরিমাণে আহার করত। লোকটি মুসলিম হলে অল্প আহার করতে লাগল। ব্যাপারটি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ মু’মিন এক পেটে খায়, আর কাফির খায় সাত পেটে। (বুখারী পর্ব ৭০ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৫৩৯৭; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০)
খাবারের দোষ বর্ণনা না করা।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো কোন খাবারকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে খেতেন না হলে বাদ দিতেন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৩ হাদীস নং ৩৫৬৩; মুসলিম ৩৬/৩৫, হাঃ ২০৬৪)