44. সাহাবাগণের মর্যাদা

【1】

আবূ বকর আস্সিদ্দীক (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন গুহায় আত্মগোপন করেছিলাম তখন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, যদি কাফিররা তাদের পায়ের নীচের দিকে দৃষ্টিপাত করে তবে আমাদেরকে দেখে ফেলবে। তিনি বললেন, হে আবূ বকর! ঐ দুই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা আল্লাহ্ যাঁদের তৃতীয় জন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৩৬৫৩; মুসলিম ৪৪/১ হাদীস ২৩৮১) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ তার এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটি বেছে নেয়ার অধিকার দিয়েছেন। তার একটি হল দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আর একটি হল আল্লাহ্‌র নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহ্‌র কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবূ বকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য কুরবানী করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ, রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বান্দা সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ্ ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তার কাছে যা রয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে বেছে নিতে বললেন আর এ বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবূ বকর (রাঃ)-ই হলেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার সঙ্গ ও সম্পদ দিয়ে আমার প্রতি সবচেয়ে ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবূ বকর (রাঃ) । যদি আমি আমার উম্মতের কোন ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকর (রাঃ) এর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৯০৪; মুসলিম ৪৪/১, হাঃ নং ২৩৮২) ’আম্‌র ইব্‌নু ‘আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যাতুস্ সালাসিল যুদ্ধের সেনাপতি করে পাঠিয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন, ‘আয়িশাহ্। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবূ বকর)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কোন্ লোকটি? তিনি বললেন, ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব অতঃপর আরো কয়েকজনের নাম করলেন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৬২; মুসলিম ৪৪/১, হাঃ ২৩৮৪) যুবায়র ইব্‌নু মুত‘ঈম (রাঃ) তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এ নিকট এল। তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। স্ত্রীলোকটি বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কী করব? এ কথা দ্বারা স্ত্রীলোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর প্রতি ইশারা করেছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি আমাকে না পাও তাহলে আবূ বকরের নিকট আসবে। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৫৯; মুসলিম ৪৪/১ হাঃ ২৩৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজরের সালাত শেষে লোকজনের দিকে ঘুরে বসলেন এবং বললেন, একদা এক লোক একটি গরু হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সেটির পিঠে চড়ে বসলো এবং ওকে প্রহার করতে লাগল। তখন গরুটি বলল, আমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাদেরকে চাষাবাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এতদশ্রবণে লোকজন বলে উঠল, সুবহানাল্লাহ্! গরুও কথা বলে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এবং আবূ বকর ও ‘উমার তা বিশ্বাস করি। অথচ তখন তাঁরা উভয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। আর এক রাখাল একদিন তার ছাগল পালের মাঝে অবস্থান করছিল, এমন সময় একটি চিতা বাঘ পালে ঢুকে একটি ছাগল নিয়ে গেল। রাখাল বাঘের পিছনে ধাওয়া করে ছাগলটি উদ্ধার করে নিল। তখন বাঘটি বলল, তুমি ছাগলটি আমার থেকে কেড়ে নিলে বটে, তবে ঐদিন কে ছাগলকে রক্ষা করবে যেদিন হিংস্র জন্তু ওদের আক্রমণ করবে এবং আমি ব্যতীত তাদের অন্য কোন রাখাল থাকবে না। লোকেরা বলল, সুবহানাল্লাহ! চিতা বাঘ কথা বলে! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এবং আবূ বকর ও ‘উমার তা বিশ্বাস করি অথচ তাঁরা উভয়েই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭১; মুসলিম ৪৪/১ হাঃ ২৩৮৮)

【2】

‘উমার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর লাশ খাটের উপর রাখা হল। খাটটি কাঁধে তোলে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত লোকজন তা ঘিরে দু’আ পাঠ করছিল। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। হঠাৎ একজন আমার স্কন্ধে হাত রাখায় আমি চমকে উঠলাম। চেয়ে দেখলাম, তিনি ‘আলী। তিনি ‘উমার (রাঃ)-এর জন্য আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতের দু‘আ করছিলেন। তিনি বলছিলেন, হে ‘উমার! আমার জন্য আপনার চেয়ে বেশি প্রিয় এমন কোন ব্যক্তি আপনি রেখে যাননি, যাঁর কালের অনুসরণ করে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করব। আল্লাহ্‌র কসম। আমার এ বিশ্বাস যে আল্লাহ্ আপনাকে আপনার সঙ্গীদ্বয়ের সঙ্গে রাখবেন। আমার মনে আছে, আমি অনেকবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি, আবূ বকর ও ‘উমার গেলাম। আমি, আবূ বকর ও ‘উমার প্রবেশ করলাম এবং আমি, আবূ বকর ও ‘উমার বাহির হলাম ইত্যাদি। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮৫; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৮৯) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একবার আমি নিদ্রাবস্থায় (স্বপ্নে) দেখলাম যে, লোকদেরকে আমার সামনে আনা হচ্ছে। আর তাদের পরণে রয়েছে জামা। কারো জামা বুক পর্যন্ত আর কারো জামা এর নীচ পর্যন্ত। আর ‘উমার ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমার সামনে আনা হল এমন অবস্থায় যে, তিনি তাঁর জামা (অধিক লম্বা হওয়ায়) টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এর কী তা’বীর করেছেন? তিনি বললেনঃ (এ জামা অর্থ) দীন। (বুখারী পর্ব ২ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ২৩; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯০) ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, একদা আমি নিদ্রাবস্থায় ছিলাম। তখন (স্বপ্নে) আমার নিকট এক পিয়ালা দুধ নিয়ে আসা হল। আমি তা পান করলাম। এমনকি আমার মনে হতে লাগল যে, সে পরিতৃপ্তি আমার নখ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। অতঃপর অবশিষ্টাংশ আমি ‘উমার ইব্‌নুল-খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি এ স্বপ্নের কী ব্যাখ্যা করেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তা হল ‘আল-ইল্ম। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে আমি আমাকে এমন একটি কূপের কিনারায় দেখতে পেলাম যেখানে বালতিও রয়েছে, আমি কূপ হতে পানি উঠালাম যে পরিমাণ আল্লাহ্ ইচ্ছে করলেন। অতঃপর বালতিটি ইব্‌নু আবূ কুহাফা নিলেন এবং এক বা দু’বালতি পানি উঠালেন। তার উঠানোতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। আল্লাহ্ তার দুর্বলতাকে ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব বালতিটি তার হাতে নিলেন। তার হাতে বালতিটির আয়তন বেড়ে গেল। পানি উঠানোতে আমি ‘উমারের মত শক্তিশালী বাহাদুর ব্যক্তি কাউকে দেখিনি। শেষে মানুষ নিজ নিজ আবাসে অবস্থান নিল। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৬৪; মুসলিম পর্ব ৪৪/২ হাঃ ২৩৯২) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, একটি কুপের পাড়ে বড় বালতি দিয়ে পানি তুলছি। তখন আবূ বকর(রাঃ) এসে এক বালতি বা দু’বালতি পানি তুললেন। তবে পানি তোলার মধ্যে তাঁর দুর্বলতা ছিল, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। অতঃপর ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) এলেন। বালতিটি তাঁর হাতে গিয়ে বড় আকার ধারণ করল। তাঁর মত এমন দৃঢ়ভাবে পানি উঠাতে আমি কোন তাকৎওয়ালাকেও দেখেনি। এমনকি লোকেরা তৃপ্তির সাথে পানি পান করে গৃহে বিশ্রাম নিল। (বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৮২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৩) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি জান্নাতে প্রবেশ করে একটি প্রাসাদ দেখতে পেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার প্রাসাদ? তাঁরা (ফেরেশতাগণ) বললেন, এ প্রাসাদটি ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ)-এর। আমি তার মধ্যে প্রবেশ করতে চাইলাম; কিন্তু [তিনি সেখানে উপস্থিত ‘উমার (রাঃ)-এর উদ্দেশে বললেন] তোমার আত্মমর্যাদাবোধ আমাকে সেখানে প্রবেশে বাধা দিল। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনার ক্ষেত্রেও আমি (‘উমার) আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করব? (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৭ হাদীস নং ৫২২৬; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘এক সময় আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তিনি বললেন, আমি নিদ্রিত ছিলাম। দেখলাম আমি জান্নাতে অবস্থিত। হঠাৎ দেখলাম এক নারী একটি দালানের পাশে উযু করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ দালানটি কার? তারা উত্তরে বললেন, ‘উমারের। তখন তাঁর আত্মমর্যাদার কথা আমার স্মরণ হল। আমি পেছনের দিকে ফিরে চলে আসলাম।’ একথা শুনে ‘উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার সম্মুখে কি আমার কোন মর্যাদাবোধ থাকতে পারে? (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩২৪২; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৫) সা‘দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদা ‘উমার(রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসার অনুমতি চাইলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কয়েকজন কুরায়শ নারী কথাবার্তা বলছিল। তারা খুব উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছিল। অতঃপর যখন ‘উমার(রাঃ) অনুমতি চাইলেন, তারা উঠে শীঘ্র পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে অনুমতি প্রদান করলেন। তখন তিনি মুচকি হাসছিলেন। তখন ‘উমার বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ আপনাকে সর্বদা সহাস্য রাখুন।’ তিনি বললেন, আমার নিকট যে সব মহিলা ছিল তাদের ব্যাপারে আমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তারা যখনই তোমার আওয়াজ শুনল তখনই দ্রুত পর্দার আড়ালে চলে গেল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকেই তাদের বেশি ভয় করা উচিত ছিল।’ অতঃপর তিনি মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আত্মশত্রু মহিলাগণ! তোমরা আমাকে ভয় করছ অথচ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভয় করছ না? তারা জবাব দিল, হ্যাঁ, কারণ তুমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে অধিক কর্কশ ভাষী ও কঠোর হৃদয়ের লোক। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘শপথ ঐ সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তুমি যে পথে চল শয়তান কখনও সে পথে চলে না বরং সে তোমার পথ ছেড়ে অন্য পথে চলে।’ (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ৩২৯৪; মুসলিম ৪৪/২ হাঃ ২৩৯৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই মারা গেল, তখন তার ছেলে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে আসলেন এবং তার পিতাকে রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জামাটি দিয়ে কাফন দেবার আবেদন করলেন। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামা প্রদান করলেন, এরপর তিনি জানাযার সালাত আদায়ের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন জানালেন। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাযার সালাত পড়ানোর জন্য (বসা থেকে) উঠে দাঁড়ালেন, ইত্যবসরে ‘উমার (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাপড় টেনে ধরে আবেদন করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি তার জানাযার সালাত আদায় করতে যাচ্ছেন? অথচ আপনার রব আপনাকে তার জন্য দু‘আ করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে আমাকে (দু‘আ) করা বা না করার সুযোগ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তো ইরশাদ করেছেন, “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর; যদি সত্তরবারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর তবু আমি তাদের ক্ষমা করব না”। সুতরাং আমি তার জন্য সত্তরবারের চেয়েও বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করব। ‘উমার (রাঃ) বললেন, সে তো মুনাফিক, শেষ পর্যন্ত রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জানাযার সালাত আদায় করলেন, এরপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। “তাদের (মুনাফিকদের) কেউ মারা গেলে আপনি কক্ষনো তাদের জানাযাহ্‌র সালাত আদায় করবেন না এবং তাদের কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। [বুখারী পর্ব ৬৫ সূরা (৯) তাওবাহ (বারাআহ) অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৪৬৭০; মুসলিম ৪৪/২, হাঃ ২৪০০]

【3】

‘উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনাহ্র এক বাগানের ভিতর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে বাগানের দরজা খুলে দেয়ার জন্য বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম যে, তিনি আবূ বকর (রাঃ)। তাঁকে আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেয়া সুসংবাদ দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর আরেক ব্যক্তি এসে দরজা খোলার জন্য বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি তার জন্য দরজা খুলে দিয়ে দেখলাম, তিনি ‘উমার (রাঃ)। তাঁকে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুসংবাদ জানিয়ে দিলাম। তখন তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। অতঃপর আর একজন দরজা খুলে দেয়ার জন্য বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দরজা খুলে দাও এবং তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ জানিয়ে দাও। কিন্তু তার উপর ভয়ানক বিপদ আসবে। দেখলাম যে, তিনি ‘উসমান (রাঃ)। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, আমি তাকে বললাম। তখন তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন আর বললেন, ‘আল্লাহই সাহায্যকারী।’ (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৬৯৩; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪০৩) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি একদা ঘরে উযূ করে বের হলেন এবং মনে মনে বললেন আমি আজ সারাদিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কাটাব, তাঁর হতে পৃথক হব না। তিনি মাসজিদে গিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খবর নিলেন, সাহাবীগণ বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন, আমিও ঐ পথ ধরে তাঁর অনুসরণ করলাম। তাঁর খোঁজ জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। আমি দরজার নিকট বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরি ছিল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর প্রয়োজন সেরে উযূ করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দু’টি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম করলাম এবং ফিরে এসে দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে আজ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করব। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আবূ বকর! আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি ফিরে এসে আবূ বকর (রাঃ) কে বললাম, ভিতরে আসুন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন। আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডানপাশে কূপের ধারে বসে দু’পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে বসে পড়লাম। আমি আমার ভাইকে উযূ রত অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও আমার সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। তাই আমি বলতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার কল্যাণ চান তবে তাকে নিয়ে আসুন। এমন সময় এক ব্যক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সালাম পেশ করে আরয করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ‘উমার ইব্‌নু খাত্তাব অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসার অনুমতি এবং জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও। আমি এসে তাঁকে বললাম, ভিতরে আসুন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বামপাশে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতর দিকে পা ঝুলিয়ে বসে গেলেন। আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ্ যদি আমার ভাইয়ের কল্যাণ চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। অতঃপর আর এক ব্যক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে? তিনি বললেন, আমি ‘উসমান ইব্‌নু আফ্‌ফান। আমি বললাম, থামুন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে গিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে দাও। তবে কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে। তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের ধারে খালি জায়গা নেই। তাই তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে অপর এক স্থানে বসে পড়লেন। সা‘ঈদ ইব্‌নু মুসাইয়্যাব (রহঃ) বলেছেন, আমি এর দ্বারা তাদের কবর এরূপ হবে এই অর্থ করেছি। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৭৪; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪০৩)

【4】

‘আলী বিন আবূ ত্বলিব (রাঃ)-এর মর্যাদা।

সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক যুদ্ধাভিযানে রওয়ানা হন। আর ‘আলী (রাঃ)-কে স্বীয় স্থলাভিষিক্ত করেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, আপনি কি আমাকে শিশু ও নারীদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি এ কথায় রাযী নও যে, তুমি আমার কাছে সে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত মূসা (আঃ)’র নিকট যে মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন হারূন (আঃ)। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, [হারূন (‘আ.) নবী ছিলেন আর] আমার পরে কোন নবী নেই। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৭৯ হাদীস নং ৪৪১৬; মুসলিম ৪৪/৪, হাঃ ২৪০৪) সাহ্‌ল ইব্‌নু সা‘আদ (রাঃ) তিনি খায়বারের যুদ্ধের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যার হাতে বিজয় আসবে। অতঃপর কাকে পতাকা দেয়া হবে, সেজন্য সকলেই আশা করতে লাগলেন। পরদিন সকালে প্রত্যেকেই এ আশায় অপেক্ষা করতে লাগলেন যে, হয়ত তাকে পতাকা দেয়া হবে। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আলী কোথায়? তাঁকে জানানো হলো যে, তিনি চক্ষুরোগে আক্রান্ত। তখন তিনি আলীকে ডেকে আনতে বললেন। তাকে ডেকে আনা হল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের লালা তাঁর উভয় চোখে লাগিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি এমনভাবে সুস্থ হয়ে গেলেন যে, তাঁর কোন অসুখই ছিল না। তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি তাদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাব, যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সোজা এগিয়ে যাও। তুমি তাদের প্রান্তরে উপস্থিত হলে প্রথমে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাও এবং তাদের কর্তব্য সম্পর্কে তাদের অবহিত কর। আল্লাহ্‌র কসম, যদি একটি ব্যক্তিও তোমার দ্বারা হিদায়াত লাভ করে, তবে তা তোমার জন্য লাল রংয়ের উটের চেয়েও উত্তম। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১০২ হাদীস নং ২৯৪২; মুসলিম ৪৪/৪ হাঃ ২৪০৬) সালামাহ ইব্‌নু আকওয়া‘ (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধে ‘আলী(রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বেরিয়ে পড়লেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে ‘আলী (রাঃ) খায়বার জয় করেছিলেন, তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব, কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসে, আল্লাহ্ তাআলা তারই হাতে খায়বার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে, ‘আলী (রাঃ) এসে হাজির, অথচ আমরা তাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বললেন, এই যে ‘আলী (রাঃ) চলে এসেছেন। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পতাকা প্রদান করলেন। আর আল্লাহ্ তাআলা তাঁরই হাতে বিজয় দিলেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১২১ হাদীস নং ২৯৭৫; মুসলিম হাঃ ২৪০৭) সাহল ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমা (রাঃ)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু ‘আলী (রাঃ)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তিনি মাসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন, তখন ‘আলী (রাঃ) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গেছে এবং তাঁর শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবূ তুরাব! উঠ, হে আবূ তুরাব! [আবু তুরাবঃ আলী (রাঃ)-এর উপাধি] (বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৫৮ হাদীস নং ৪৪১; মুসলিম ৪৪/৪, হাঃ ২৪০৯)

【5】

সা’দ বিন আবূ ওয়াক্‌কাস (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মাদীনায় এলেন এই আকাঙক্ষা প্রকাশ করলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলল, আমি সা‘দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে গেলেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭০ হাদীস নং ২৮৮৫; মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১০) আলি (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সা’দ (রাঃ) ব্যতীত আর কারো জন্য তাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলতে দেখিনি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ (ফিদা) হোক।’ (সহিহ বুখারি ২৯০৫, মুসলিম ২৪১২) সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করেছিলেন, (তোমার উপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক)। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৭২৫; মুসলিম ৪৪/৫ হাঃ ২৪১১)

【6】

ত্বলহা ও যুবায়র (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ ‘উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, যেসব যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং যোগদান করেছিলেন, তন্মধ্যে এক যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন এক সময় ত্বলহা ও সা‘দ (রাঃ) ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। আবূ ‘উসমান (রাঃ) তাঁদের উভয় হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৩৭২২-৩৭২৩; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪১৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের সময় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘কে আমাকে শত্রু পক্ষের খবরাখবর এনে দিবে?’ যুবাইর (রাঃ) বললেন, ‘আমি আনব।’ তিনি আবার বললেন, ‘আমার শত্রু পক্ষের খবরাখবর কে এনে দিবে?’ যুবায়র (রাঃ) আবারও বললেন, ‘আমি আনব।’ অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীরই সাহায্যকারী থাকে আর আমার সাহায্যকারী যুবাইর।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৪০ হাদীস নং ২৮৪৬; মুসলিম ৪৪/৬ হাঃ ২৪১৫) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধ চলাকালে আমি এবং ‘উমার ইব্‌নু আবূ সালামাহ মহিলাদের দলে চলছিলাম। হঠাৎ যুবায়েরকে দেখতে পেলাম যে, তিনি অশ্বারোহণ করে বনী কুরায়যা গোত্রের দিকে দু‘বার অথবা তিনবার আসা যাওয়া করছেন। যখন ফিরে আসলাম তখন বললাম, আব্বা! আমি আপনাকে কয়েকবার যাতায়াত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! তুমি কি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন কে বনী কুরায়যা গোত্রের নিকট গিয়ে তাদের খবরা-খবর জেনে আসবে? তখন আমিই গিয়েছিলাম। যখন আমি ফিরে আসলাম তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য তাঁর মাতা-পিতাকে একত্র করে বললেন, আমার মাতাপিতা তোমার জন্য কুরবান হোক। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৩৭২০; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪১৬)

【7】

আবূ ‘উবাইদাহ বিন জার্‌রাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক উম্মাতের মধ্যে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি থাকেন আর আমাদের এ উম্মাতের মধ্যে বিশ্বস্ত ব্যক্তি হচ্ছে আবূ ‘উবাইদাহ ইব্‌নুল জার্‌রাহ (রাঃ)। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৩৭৪৪; মুসলিম হাঃ ২৪১৯) হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজরানবাসীকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন; আমি এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাব যিনি হবেন প্রকৃতই বিশ্বস্ত। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করতে লাগলেন। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ‘উবাইদাহ(রাঃ)-কে পাঠালেন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৩৭৪৫; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪২০)

【8】

হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ দাওসী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বানূ কায়নুকা বাজারে এলেন (সেখান হতে ফিরে এসে) ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘরের আঙিণায় বসে পড়লেন। তারপর বললেন, এখানে খোকা [হাসান(রাঃ)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে কিছুক্ষণ দেরী করালেন। আমার ধারণা হল তিনি তাঁকে পুতির মালা সোনা-রূপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন। তারপর তিনি দৌড়িয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তুমি তাকেও (হাসানকে) মহব্বত কর এবং তাকে যে ভালবাসবে তাকেও মহব্বত কর। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৪৯ হাদীস নং ২১২২; মুসলিম ৪৪/৮, হাঃ ২৪২১) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হাসানকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্কন্ধের উপর দেখেছি। সে সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, হে আল্লাহ্! আমি একে ভালবাসি, তুমিও তাকে ভালবাস। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৩৭৪৯; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ ২৪২২)

【9】

যায়দ বিন হারিসাহ ও উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম যায়দ ইব্‌নু হারিসাহ্কে আমরা “যায়দ ইব্‌নু মুহাম্মদ-ই” ডাকতাম, যে পর্যন্ত না এ আয়াত নাযিল হয়। তোমরা তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক, আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে এটিই অধিক ন্যায়সঙ্গত। [বুখারী পর্ব ৬৫ সূরা (৩৩) আল-আহযাব অধ্যায় ২ হাদীস নং ৪৭৮২; মুসলিম ৪৪/১০, হাঃ ২৪২৫] ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সেনাবাহিনী পাঠানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন, এবং উসামাহ ইব্‌নু যায়দ (রাঃ) কে উক্ত বাহিনীর নেতা মনোনীত করেন। কিছু সংখ্যক লোক তাঁর নেতৃত্বের উপর মন্তব্য প্রকাশ করতে লাগলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার নেতৃত্বের প্রতি তোমরা সমালোচনা করছ। ইতোপূর্বে তার পিতার নেতৃত্বের প্রতিও তোমরা সমালোচনা করেছ। আল্লাহ্‌র কসম, নিশ্চয়ই সে নেতৃত্বের জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি ছিল এবং আমার প্রিয়পাত্রদের একজন ছিল। অতঃপর তার পুত্র আমার প্রিয়পাত্রদের একজন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৭৩০; মুসলিম ৪৪ হাঃ ২৪২৬)

【10】

‘আবদুল্লাহ বিন জা‘ফার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আব্দুল্লাহ ইব্‌নু জা’ফর (রাঃ) ইব্‌নু যুবায়র (রাঃ), ইব্‌নু জা‘ফর (রাঃ)-কে বললেন, তোমার কি মনে আছে, যখন আমি ও তুমি এবং ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম? ইব্‌নু জা‘ফর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, স্মরণ আছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বাহনে তুলে নিলেন আর তোমাকে ছেড়ে আসলেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৯৬ হাদীস নং ৩০৮২; মুসলিম ৪৪/১১ হাঃ ২৪২৭)

【11】

উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আলী (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারইয়াম হলেন সর্বোত্তম আর নারীদের সেরা হলেন খাদীজাহ (রাঃ)। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৫ হাদীস নং ৩৪৩২; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩০) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পুরুষের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা অর্জন করেছেন। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম ব্যতীত আর কেউ পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়নি। তবে ‘আয়িশাহ্র মর্যাদা সব মহিলার উপর এমন, যেমন সারীদের (গোশতের সুরুয়ায় ভিজা রুটির) মর্যাদা সকল প্রকার খাদ্যের উপর। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৩৪১১; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, জিব্‌রাঈল (‘আ.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঐ যে খাদীজাহ (রাঃ) একটি পাত্র হাতে নিয়ে আসছেন। ঐ পাত্রে তরকারী, অথবা খাদ্যদ্রব্য অথবা পানীয় ছিল। যখন তিনি পৌঁছে যাবেন তখন তাঁকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে এবং আমার পক্ষ থেকেও সালাম জানাবেন আর তাঁকে জান্নাতের এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিবেন যার অভ্যন্তর ভাগ ফাঁকা-মোতি দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে থাকবে না কোন প্রকার শোরগোল; কোন প্রকার দুঃখ-ক্লেশ। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮২০; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩২) ইসমাঈল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইব্‌নু আবূ আউফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদীজাহ (রাঃ)-কে জান্নাতের খোশ খবর দিয়েছিলেন কি? তিনি বললেন, হাঁ। এমন একটি ভবনের খোশ খবর দিয়েছিলেন, যে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে এমন মোতী দ্বারা যার ভিতরদেশ ফাঁকা। আর সেখানে থাকবে না শোরগোল, কোন প্রকার ক্লেশ ও দুঃখ। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮১৯; মুসলিম ৪৪/১২ হাঃ ২৪৩২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজাহ (রাঃ)-এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যবহ করে গোশতের পরিমাণ বিবেচনায় হাঁড়-মাংসকে ছোট ছোট টুকরা করে হলেও খাদীজাহ (রাঃ)-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় ঈর্ষা ভরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতাম, মনে হয়, খাদীজাহ (রাঃ) ছাড়া দুনিয়াতে যেন আর কোন নারী নাই। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, হাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন, তাঁর গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮১৮; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩৫) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ খাদীজাহ্র বোন হালা বিনতে খুয়াইলিদ (একদিন) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুমতি চাইলেন। (দু’বোনের গলার স্বর ও অনুমতি চাওয়ার ভঙ্গি একই রকম ছিল বলে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদীজাহ্র অনুমতি চাওয়ার কথা মনে করে হতচকিত হয়ে পড়েন। তারপর (প্রকৃতিস্থ হয়ে) তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! এতো দেখছি হালা! ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ এতে আমার ভারী ঈর্ষা হলো। আমি বললাম, কুরাইশদের বুড়ীদের মধ্য থেকে এমন এক বুড়ীর কথা আপনি আলোচনা করেন যার দাঁতের মাড়ির লাল বর্ণটাই শুধু বাকি রয়ে গিয়েছিল, যে শেষ হয়ে গেছেও কত কাল আগে। তার পরিবর্তে আল্লাহ তো আপনাকে তার চেয়েও উত্তম উত্তম স্ত্রী দান করেছেন।* [‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-এর কথার জবাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছেন তা উল্লেখ সহীহুল বুখারীতে নেই। তবে হাদীস সংকলক আহ্‌মাদ ও তারবানী এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন যে, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্রুদ্ধ হন। অবশেষে আমি বললামঃ যিনি আপনাকে সত্যের বাহকরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, ভবিষ্যতে আমি তাঁর(খাদীজাহ্র) সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য ছাড়া অন্য কোনরূপ মন্তব্য করবো না। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩৮২১; মুসলিম ৪৪/১২, হাঃ নং ২৪৩৭)

【12】

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেন, দু’বার তোমাকে আমায় স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, তুমি একটি রেশমী কাপড়ে আবৃতা এবং আমাকে বলছে ইনি আপনার স্ত্রী, আমি তার ঘোমটা সরিয়ে দেখলাম, সে মহিলা তুমিই। তখন আমি ভাবছিলাম, যদি তা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে হয়ে থাকে, তবে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৪৪ হাদীস নং ৩৮৯৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ নং ২৪৩৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, “আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশী থাক এবং কখন রাগান্বিত হও।” আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে সক্ষম হন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বল, না! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রব-এর কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বল, না! ইব্রাহীম (‘আ.)-এর রব-এর কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহ্‌র কসম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে ক্ষেত্রে শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১০৯ হাদীস নং ৫২২৮; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ৬১০) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলতো। রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলা করত। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮১ হাদীস নং ৬১৩০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪০) ‘আয়িশাহ (রাঃ) লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার ব্যাপারে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর জন্য নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ২৫৭৪; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪১, ২৪৪২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) মৃত্যু রোগকালীন অবস্থায় রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে? এর দ্বারা তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরের পালার ইচ্ছে পোষণ করতেন। সহধর্মিণীগণ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যার ঘরে ইচ্ছে অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরে ছিলেন। এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তিকাল করেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তিকাল করেন এবং আল্লাহ তাঁর রূহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে, তাঁর মাথা ছিল আমার কণ্ঠ ও বক্ষের মধ্যে। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৫০; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পূর্বে যখন তাঁর পিঠ আমার উপর হেলান দেয়া অবস্থায় ছিল, তখন আমি কান ঝুঁকিয়ে দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন এবং মহান বন্ধুর সঙ্গে আমাকে মিলিত করুন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৪০; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এ কথা শুনেছিলাম যে, কোন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা যান না যতক্ষণ না তাঁকে বলা হয় দুনিয়া বা আখিরাতের একটি বেছে নিতে। যে রোগে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন সে রোগে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় বলতে শুনেছি-তাঁদের সঙ্গে যাঁদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা নি‘আমত প্রদান করেছেন [তাঁরা হলেন- নবী (‘আ.)-গণ, সিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ।] (সূরাহ আন-নিসা ৪/৬৯)। তখন আমি ধারণা করলাম যে, তাঁকেও একটি বেছে নিতে বলা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৫; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুস্থাবস্থায় বলতেন, জান্নাতে তাঁর স্থান দেখানো ব্যতীত কোন নবী (‘আ.)-এর প্রাণ কখনো কবজ করা হয়নি। তারপর তাঁকে জীবন বা মৃত্যু একটি গ্রহণ করতে বলা হয়। এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাঁর মাথা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর উরুতে রাখাবস্থায় তাঁর জান কবজের সময় উপস্থিত হল তখন তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে গেলেন। এরপর যখন তিনি সংজ্ঞা ফিরে পেলেন তখন তিনি ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! উচ্চে সমাসীন বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। অনন্তর আমি বললাম, তিনি আর আমাদের মাঝে থাকতে চাচ্ছেন না। এরপর আমি উপলব্ধি করলাম যে, এটা হচ্ছে ঐ কথা যা তিনি আমাদের কাছে সুস্থাবস্থায় বর্ণনা করতেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮৪ হাদীস নং ৪৪৩৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখনই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে যাওয়ার ইরাদা করতেন, তখনই স্ত্রীগণের মাঝে লটারী করতেন। এক সফরের সময় ‘আয়িশাহ (রাঃ) এবং হাফসাহ (রাঃ)-এর নাম লটারীতে ওঠে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভ্যাস ছিল যখন রাত হত তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে এক সওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন। এক রাতে হাফসাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বললেন, আজ রাতে তুমি কি আমার উটে আরোহণ করবে এবং আমি তোমার উটে, যাতে করে আমি তোমাকে এবং তুমি আমাকে এক নতুন অবস্থায় দেখতে পাবে? ‘আয়িশাহ (রাঃ) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আমি রাযী আছি। সে হিসাবে ‘আয়িশাহ (রাঃ) হাফসাহ (রাঃ)-এর উটে এবং হাফসাহ (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর উটে সওয়ার হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নির্ধারিত উটের কাছে এলেন, যার ওপর হাফসাহ (রাঃ) বসা ছিলেন। তিনি সালাম করলেন এবং তাঁর পার্শ্বে বসে সফর করলেন। পথিমধ্যে এক স্থানে সবাই অবতরণ করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হলেন। যখন তাঁরা সকলেই অবতরণ করলেন তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) নিজ পদযুগল ‘ইযখির’ নামক ঘাসের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ্! তুমি আমার জন্য কোন সাপ বা বিচ্ছু পাঠিয়ে দাও, যাতে আমাকে দংশন করে। কেননা, আমি এ ব্যাপারে রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু বলতে পারব না। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৯৮ হাদীস নং ৫২১১; মুসলিম ৪৪/১৩, হাঃ ২৪৪৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা নারীদের উপর এমন যেমন সারীদের মর্যাদা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের উপর। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৩৭৭০; মুসলিম ৪/১৩ হাঃ ২৪৪৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, হে আয়িশা! এই যে জিব্রাঈল (‘আ.) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন তিনি বললেন, তাঁর প্রতি সালাম, আল্লাহর রহমত এবং তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আপনি এমন কিছু দেখেন যা আমি দেখতে পাই না। এর দ্বারা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝিয়েছেন। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১৭; মুসলিম ৪৪/১৩ হাঃ ২৪৪৭)

【13】

উম্মু যার‘আ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত হয়ে বসল এবং সকলে মিলে এ কথার ওপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন তথ্যই গোপন রাখবে না। প্রথম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে অত্যন্ত হাল্কা-পাতলা দুর্বল উটের গোশতের মত যেন কোন পর্বতের চূড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে আরোহণ করা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারণে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করবে। দ্বিতীয় মহিলা বলল, আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলব না, কারণ আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা, যদি আমি তার সম্পর্কে বলতে যাই, তা হলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলতে হবে। তৃতীয় মহিলা বলল, আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই (আর সে যদি তা শোনে) তাহলে সে আমাকে ত্বলাক্ব দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহলে সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ ত্বলাক্বও দেবে না, স্ত্রীর মতো ব্যবহারও করবে না। চতুর্থ মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মত মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠাণ্ডাও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই। পঞ্চম মহিলা বলল, যখন আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে তখন চিতা বাঘের মত থাকে। যখন বাইরে যায় তখন সিংহের ন্যায় তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না। ৬ষ্ঠ মহিলা বলল, আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি হাত বের করেও আমার খবর নেয় না। সপ্তম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করতে পারে। অষ্টম মহিলা বলল, আমার স্বামীর পরশ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধ হচ্ছে যারনাম (এক প্রকার বনফুল-এর মত)। নবম মহিলা বলল, আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে (অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী)। তার ছাইভষ্ম প্রচুর পরিমাণের (অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমানদারীও হয়) এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। এ লোকজন তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করতে পারে। দশম মহিলা বলল, আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কী প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়ে ঊর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় (অর্থাৎ মেহমানদের যবাই করে খাওয়ানোর জন্য) এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাদেরকে মেহমানদের জন্য যবাই করা হবে। একাদশতম মহিলা বলল, আমার স্বামী আবূ যার‘আ। তার কথা আমি কী বলব। সে আমাকে এত অধিক গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রুপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম। আর আবূ যার‘আর আম্মার কথা কী বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত। আবূ জার‘আর পুত্রের কথা কী বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা-পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা। আর আবূ যার‘আর কন্যা সম্পর্কে বলতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সম্পূর্ণ অনুগতা সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবূ যার‘আর ক্রীতদাসীরও অনেক গুণ। সে আমাদের গোপন কথা কখনো প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না। সে মহিলা আরও বলল, একদিন দুধ দোহন করার সময় আবূ যার‘আ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল, যার দু’টি পুত্র-সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে ত্বলাক্ব দিয়ে তাকে শাদী করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে শাদী করলাম। সে দ্রুতগামী অশ্বে আরোহণ করত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মু যার‘আ! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও। মহিলা আরও বলল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবূ যার‘আর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করতে পারবে না (অর্থাৎ আবূ যার‘আর সম্পদের তুলনায় তা খুবই সামান্য ছিল)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, “আবূ যার‘আ তার স্ত্রী উম্মু যার‘আর প্রতি যেরূপ (আমিও তোমার প্রতি তদ্রুপ (পার্থক্য এতটুকুই) আমি তোমাকে ত্বলাক্ব দেব না এবং তোমার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করব। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ৮৩ হাদীস নং ৫১৮৯; মুসলিম ৪৪/১৪, হাঃ ২৪৪৮)

【14】

ফাতিমা বিনতু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা।

‘আলী ইব্‌নু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন যে, যখন তাঁরা ইয়াযীদ ইব্‌নু মু‘আবিয়াহ’র নিকট হতে হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর মাদীনায় আসলেন, তখন তাঁর সঙ্গে মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামাহ (রাঃ) মিলিত হলেন এবং বললেন, আপনার কি আমার নিকট কোন প্রয়োজন আছে? থাকলে বলুন। তখন আমি তাঁকে বললাম, না। তখন মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, আপনি কি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরবারীটি দিবেন? আমার আশঙ্কা হয়, লোকেরা আপনাকে কাবু করে তা ছিনিয়ে নিবে। আল্লাহ্‌র কসম! আপনি যদি আমাকে এটি দেন, তবে আমার জীবন থাকা অবধি কেউ আমার নিকট হতে তা নিতে পারবে না। একবার ‘আলী ইব্‌নু আবূ তালিব (রাঃ) ফাতিমাহ (রাঃ) থাকা অবস্থায় আবূ জাহল কন্যাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। আমি তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর মিম্বারে দাঁড়িয়ে লোকদের এ খুত্বা দিতে শুনেছি, আর তখন আমি সাবালক। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ফাতিমা আমার হতেই। আমি আশঙ্কা করছি সে দ্বীনের ব্যাপারে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে পড়ে।’ অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানূ আবদে শামস গোত্রের এক জামাতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর জামাতা সম্পর্কে প্রশংসা করেন এবং বলেন, সে আমার সঙ্গে যা বলেছে, তা সত্য বলেছে, আমার সঙ্গে যে ওয়াদা করেছে, তা পূরণ করেছে। আমি হালালকে হারামকারী নই এবং হারামকে হালালকারী নই। কিন্তু আল্লাহ্‌র কসম! আল্লাহর রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে একত্র হতে পারে না। (বুখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩১১০; মুসলিম ৪৪/১৫ হাঃ ২৪৪৯) মিসওয়ার ইব্‌নু মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ জেহেলের কন্যাকে ‘আলী (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমাহ (রাঃ) এ খবর শুনতে পেয়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললেন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের সম্মানে রাগান্বিত হন না। ‘আলী তো আবূ জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বা দিতে প্রস্তুত হলেন। (মিস্ওয়ার বলেন) তিনি যখন হামদ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবূল ‘আস ইব্‌নু রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলোম। সে আমার সঙ্গে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর ফাতিমাহ আমার টুক্রা; তাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহ্‌র কসম, আল্লাহ্‌র রাসূলের মেয়ে এবং আল্লাহ্‌র দুশমনের মেয়ে একই লোকের নিকট একত্রিত হতে পারে না। ‘আলী (রাঃ) তাঁর বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়ে নিলেন। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৭২৯; মুসলিম ৪৪/১৫ হাঃ ২৪৪৯) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ(রাঃ) একবার আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সব স্ত্রী তাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতেমাহ (রাঃ) পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তাঁর হাঁটা রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটার মতই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমন শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। এরপর তিনি তাঁকে নিজের ডান পাশে অথবা (রাবী বলেন) বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তার সঙ্গে কানে-কানে কিছু কথা বললেন, তিনি (ফাতেমাহ) খুব অধিক কাঁদতে লাগলেন। এরপর তাঁকে চিন্তিত দেখে দ্বিতীয়বার তাঁর সঙ্গে তিনি কানে-কানে আরও কিছু কথা বললেন। তখন ফাতেমাহ (রাঃ) হাসতে লাগলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের মধ্য থেকে আমি বললামঃ আমাদের উপস্থিতিতে রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষ করে আপনার সঙ্গে বিশেষ কী গোপনীয় কথা কানে-কানে বললেন, যার ফলে আপনি খুব কাঁদছিলেন? এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে চলে গেলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি আপনাকে কানে-কানে কী বলেছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভেদ (গোপনীয় কথা) ফাঁস করবো না। এরপর রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু হল। তখন আমি তাঁকে বললামঃ আপনার উপর আমার যে দাবী আছে, আপনাকে আমি তার কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি কি গোপনীয় কথাটি আমাকে জানাবেন না? তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বললেনঃ হাঁ এখন আপনাকে জানাবো। সুতরাং তিনি আমাকে জানাতে গিয়ে বললেনঃ প্রথমবার তিনি আমার নিকট যে গোপন কথা বলেন, তা হলো এই যে, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (‘আ.) প্রতি বছর এসে পূর্ণ কুরআন একবার আমার নিকট পেশ করতেন। কিন্তু এ বছর তিনি এসে তা আমার কাছে দু’ বার পেশ করেছেন। এতে আমি ধারণা করছি যে, আমার চির বিদায়ের সময় সন্নিকট। সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় করে চলবে এবং বিপদে ধৈর্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী। তখন আমি কাঁদলাম যা নিজেই দেখলেন। তারপর যখন আমাকে চিন্তিত দেখলেন, তখন দ্বিতীয়বার আমাকে কানে-কানে বললেনঃ তুমি জান্নাতের মুসলিম মহিলাদের অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের নেত্রী হওয়াতে সন্তুষ্ট হবে না? (আমি তখন হাসলাম)। (বুখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৩ হাদীস নং ৬২৮৫-৬২৮৬; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাদীস নং ২৪৫০ (আ.প্র. ৫৮৪২, ই.ফা. ৫৭৩৬)

【15】

উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে জানানো হল যে, একবার জিবরাঈল (‘আ.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন। তখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) তাঁর নিকট ছিলেন। তিনি এসে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলেন। অতঃপর উঠে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সালামাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, লোকটিকে চিনতে পেরেছ কি? তিনি বললেন, এতো দেহ্ইয়া। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম। আমি দেহ্ইয়া বলেই বিশ্বাস করছিলাম কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর খুত্বায় জিব্রাঈল (‘আ.)-এর আগমনের কথা বলতে শুনলাম। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২৫ হাদীস নং ৩৬৩৪; মুসলিম ৪৪/১৬ হাঃ ২৪৫১)

【16】

উম্মুল মু’মিনীন যাইনাব (রাঃ)-এর মর্যাদা।

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) কোন নবী সহধর্মিনী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেনঃ আমাদের মধ্য হতে সবার পূর্বে (মৃত্যুর পর) আপনার সাথে কে মিলিত হবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যার হাত সবচেয়ে লম্বা। তাঁরা একটি বাঁশের কাঠির মাধ্যমে হাত মেপে দেখতে লাগলেন। সওদার হাত সকলের হাতের চেয়ে লম্বা বলে প্রমাণিত হল। পরে [সবার আগে যায়নাব (রাঃ)-এর মৃত্যু হলে] আমরা বুঝলাম হাতের দীর্ঘতার অর্থ দানশীলতা। তিনি [যায়নাব (রাঃ)] আমাদের মধ্যে সবার আগে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মিলিত হন এবং তিনি দান করতে ভালবাসতেন। (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ১৪২০; মুসলিম ৪৪/১৭, হাঃ ২৪৫২)

【17】

আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর মাতা উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় উম্মু সুলাইম ছাড়া কারো ঘরে যাতায়াত করতেন না তাঁর স্ত্রীদের ব্যতীত। এ ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘উম্মু সুলাইমের ভাই আমার সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়ে শহীদ হয়েছে, তাই আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ২৮৪৪; মুসলিম ৪৪/১৯ হাঃ ২৪৫৫)

【18】

‘আবদুল্লাহ বিন মাস‘ঊদ (রাঃ) ও তাঁর মায়ের মর্যাদা।

মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ-কে বলতে শুনেছি যে, আমি এবং আমার ভাই ইয়ামান হতে মাদীনাহ্তে আসি এবং বেশ কিছুদিন মাদীনাহ্তে অবস্থান করি। তখন আমরা মনে করতাম যে, ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারেরই একজন লোক। কারণ আমরা তাঁকে এবং তাঁর মাকে হরহামেশা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে প্রবেশ করতে দেখতাম। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৩৭৬৩; মুসলিম ৪৪/২২ হাঃ ২৪৬০) শাকীক ইব্‌ন সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাসঊদ (রাঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দিলেন এবং বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! সত্তরেরও কিছু অধিক সূরাহ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে হাসিল করেছি। আল্লাহ্‌র কসম! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীরা জানেন, আমি তাঁদের চেয়ে আল্লাহ্‌র কিতাব সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। শাকীক (রহঃ) বলেন, সহাবীগণ তাঁর কথা শুনে কী বলেন তা শোনার জন্য আমি মজলিসে বসে থাকলাম, কিন্তু আমি কাউকে অন্যরকম কথা বলে আপত্তি করতে শুনিনি। (বুখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫০০০; মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬২) ‘আব্দুল্লাহ ইব্‌নু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, আল্লাহ্‌র কিতাবে অবতীর্ণ প্রতিটি সূরাহ সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং প্রতিটি আয়াত সম্পর্কেই আমি জানি যে, তা কোন্ ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম যে, কোন ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কিতাব সম্পর্কে আমার চেয়ে অধিক জ্ঞাত এবং সেখানে ঊট পৌঁছতে পারে, তাহলে সওয়ার হয়ে সেখানে পৌঁছে যেতাম। (বুখারী পর্ব ৬৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৫০০২; মুসলিম ৪৪/২২, হাঃ ২৪৬৩) মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘আম্‌র (রাঃ)-এর মজলিসে ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর আলোচনা হলে তিনি বললেন, আমি এই লোককে ঐদিন হতে অত্যন্ত ভালবাসি যেদিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা চার ব্যক্তি হতে কুরআন শিক্ষা কর, ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু মাস‘ঊদ- সর্বপ্রথম তাঁর নাম বললেন আবূ হুযাইফাহ (রাঃ)-এর মুক্ত গোলাম সালিম, উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) ও মু‘আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ) থেকে। উবাই (রাঃ) ও মু‘আয (রাঃ) এ দু’জনের কার নাম আগে বলেছিলেন সেটুকু আমার স্মরণ নেই। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ২৬ হাদীস নং ৩৭৫৮; মুসলিম ৪৪/২২ হাঃ ২৪৬৪)

【19】

উবাই বিন কা‘ব ও একদল আনসার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে (সর্বপ্রথম) যে চার ব্যক্তি সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করেছিলেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন আনসারী। (তাঁরা হলেন) উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ), মু‘আয ইব্‌নু জাবাল (রাঃ), আবূ যায়দ (রাঃ) এবং যায়দ ইব্‌নু সাবিত (রাঃ)। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৩৮১০; মুসলিম ৪৪/২৩, হাঃ নং ২৪৬৫) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ)-কে বললেন, আল্লাহ “সূরা বায়্যিনাহ” তোমাকে পড়ে শুনানোর জন্য আমাকে আদেশ করেছেন। উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ কি আমার নাম করেছেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৮০৯; মুসলিম ৪৪/২৩, হাঃ নং ২৪৬৪)

【20】

সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-এর বর্ণনা।

জাবির (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি সা‘দ ইব্‌নু মু‘আয (রাঃ)-এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ তা‘আলার আরশ কেঁপে উঠেছিল। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৩৮০৩; মুসলিম ৪৪/২৪ হাঃ ২৪৬৬) বারা’ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক জোড়া রেশমী কাপড় হাদীয়া দেয়া হল। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তা স্পর্শ করে এর কোমলতায় অবাক হয়ে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর কোমলতায় তোমরা অবাক হচ্ছ? অথচ সা‘দ ইব্‌নু মু‘আয (রাঃ)-এর (জান্নাতের) রুমাল এর চেয়ে অনেক উত্তম, অথবা বলেছেন অনেক মোলায়েম। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৩৮০২; মুসলিম ৪৪/২৪, হাঃ নং ২৪৬৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি রেশমী জুব্বা হাদিয়া দেয়া হল। অথচ তিনি রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন। এতে সাহাবীগণ খুশী হলেন। তখন তিনি বললেন, সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, জান্নাতে সা‘দ ইবনু মু‘আযের রুমালগুলো এর চেয়ে উৎকৃষ্ট। (বুখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ২৬১৫; মুসলিম ৪৪/২৪ হাঃ ২৪৬৯)

【21】

জাবির (রাঃ)-এর পিতা ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আম্‌র বিন হারাম (রাঃ)-এর মর্যাদা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার পিতাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত অবস্থায় নিয়ে এসে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে রাখা হল। তখন একখানি বস্ত্র দ্বারা তাঁকে আবৃত রাখা হয়েছিল। আমি তাঁর উপর হতে আবরণ উন্মোচন করতে আসলে আমার কাওমের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। পুনরায় আমি আবরণ উন্মুক্ত করতে থাকলে আমার কাওমের লোকেরা (আবার) আমাকে নিষেধ করল। পরে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হল। তখন তিনি (রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) এক ক্রন্দনকারিণীর শব্দ শুনে জিজ্ঞেস করলেন, এ কে? লোকেরা বলল, ‘আমরের মেয়ে অথবা (তারা বলল,) ‘আমরের বোন। তিনি বললেন, ক্রন্দন করছো কেন? অথবা বলেছেন, ক্রন্দন করো না। কেননা, তাঁকে উঠিয়ে নেয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাঁদের পক্ষ বিস্তার করে তাঁকে ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ১২৯৩; মুসলিম ৪৪/২৬, হাঃ ২৪৭১)

【22】

আবূ যার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবির্ভাবের খবর যখন আবূ যার (রাঃ) এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর ভাইকে বললেন, তুমি এ উপত্যকায় গিয়ে ঐ লোক সম্পর্কে জেনে আস যে লোক নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান হতে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই রওয়ানা হয়ে ঐ লোকের কাছে পৌঁছে তাঁর কথাবার্তা শুনলেন। এরপর তিনি আবূ যারের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমি তাঁকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম আখলাক গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম যা পদ্য নয়। এতে আবূ যার (রাঃ) বললেন, আমি যে জন্য তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে না। আবূ যার (রাঃ) সফরের জন্য সামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মাক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খোঁজ করতে লাগলেন। তিনি তাঁকে চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করাও পছন্দ করলেন না। এ অবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি শুয়ে পড়লেন। ‘আলী (রাঃ) তাঁকে দেখে বুঝলেন যে, লোকটি বিদেশী। যখন আবূ যার ‘আলী (রাঃ)-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবূ যার (রাঃ) পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন ‘আলী (রাঃ) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখনও কি মুসাফিরের গন্তব্য স্থানের সন্ধান হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। এ অবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। ‘আলী (রাঃ) পূর্বের ন্যায় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। তুমি কি আমাকে বলবে না কোন জিনিস এখানে আসতে তোমাকে অনুপ্রেরিত করেছে? আবূ যার (রাঃ) বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর পাকা অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। ‘আলী (রাঃ) অঙ্গীকার করলেন এবং আবূ যার (রাঃ) ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বললেন। ‘‘আলী (রাঃ) বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন ব্যাপার আমি দেখতে পাই তবে আমি রাস্তার পাশে চলে যাব যেন আমি পেশাব করতে চাই। আর যদি আমি সোজা চলতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবূ যার (রাঃ) তাই করলেন। ‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (‘আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐখানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তোমার স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে। আবূ যার (রাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মাসজিদে হারামে গিয়ে হাজির হলেন এবং উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করলেন, أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاِّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ লোকজন তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং মারতে মারতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় ‘আব্বাস (রাঃ) এসে তাঁকে রক্ষা করলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অবধারিত। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী কাফেলাগুলিকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াত করতে হয়। এ কথা বলে তিনি তাদের হাত হতে আবূ যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন সকালে তিনি ঐরূপই বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে ভীষণভাবে মারতে লাগল। ‘আব্বাস (রাঃ) এসে তাঁকে সামলে নিলেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৩৮৬১; মুসলিম ৪৪/২৮ হাঃ ২৪৭৪)

【23】

জারীর বিন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর নিকট প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন। আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি অশ্ব পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারি না। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বক্ষে হাত দিয়ে আঘাত করলেন এবং এ দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়তপ্রাপ্ত করুন।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৬২ হাদীস নং ৩০৩৫-৩০৩৬; মুসলিম ৪৪/২৯ হাঃ ২৪৭৫) জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশ‘আম গোত্রের একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কা‘বা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ অশ্বারোহীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা সুদক্ষ অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর অঙ্গুলির চিহ্ন দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দু‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়াত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’ অতঃপর জারীর (রাঃ) সেখানে যান এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ খবর দেওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দু‘আ করেন। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৪ হাদীস নং ৩০২০; মুসলিম ৪৪/২৯ হাঃ ২৪৭৬)

【24】

‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানায় গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ‘এটা কে রেখেছে?’ তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেনঃ ‘হে আল্লাহ্! তুমি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান কর।’ (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ১৪৩; মুসলিম ৪৪/৩০, হাঃ ২৪৭৭)

【25】

‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবিতকালে কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে বর্ণনা করত। এতে আমার মনে আকাঙক্ষা জাগলো যে, আমি কোন স্বপ্ন দেখলে তা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করব। তখন আমি যুবক ছিলাম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে আমি মাসজিদে ঘুমাতাম। আমি স্বপ্নে দেখলাম, যেন দু’জন ফিরিশ্‌তা আমাকে ধরে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলেছেন। তা যেন কুপের পাড় বাঁধানোর ন্যায় পাড় বাঁধানো। তাতে দু’টি খুঁটি রয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে এমন কতক লোক, যাদের আমি চিনতে পারলাম। তখন আমি বলতে লাগলাম, আমি জাহান্নাম হতে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাই। তিনি বলেন, তখন অন্য একজন ফেরেশ্‌তা আমাদের সঙ্গে মিলিত হলেন। তিনি আমাকে বললেন, ভয় পেয়ো না। আমি এ স্বপ্ন (আমার বোন উম্মুল মু’মিনীন) হাফসাহ (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। অতঃপর হাফসা (রাঃ) তা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলেন। তখন তিনি বললেনঃ ‘আবদুল্লাহ্ কতই ভাল লোক! যদি রাত জেগে সে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করত! তারপর হতে ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) খুব অল্প সময়ই ঘুমাতেন। (বুখারী পর্ব ১৯ অধ্যায় ২ হাদীস নং ১১২১-১১২২; মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৭৯)

【26】

আনাস বিন মালিক (রাঃ)-এর মর্যাদা।

উম্মু সুলায়ম (রাঃ) তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আনাস (রাঃ) আপনার খাদিম, আপনি আল্লাহ্‌র নিকট তার জন্য দু‘আ করুন। তিনি দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি তার মাল ও সন্তান বাড়িয়ে দিন, আর আপনি তাকে যা কিছু দিয়েছেন তাতে বারাকাত দান করুন। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৬৩৭৮-৬৩৭৯; মুসলিম ৪৪/৩১, হাঃ ২৪৮০, ২৪৮১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি। (বুখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৬২৮৯; মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৮২)

【27】

‘আবদুল্লাহ বিন সালাম (রাঃ)-এর মর্যাদা।

সা‘দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আবদুল্লাহ ইব্‌নু সালাম (রাঃ) ছাড়া যমীনে বিচরণশীল কারো ব্যাপারে এ কথাটি বলতে শুনিনি যে, ‘নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতবাসী’। সা‘দ (রাঃ) বলেন, তাঁরই ব্যাপারে সূরা আহকাফের এ আয়াত নাযিল হয়েছেঃ “এ ব্যাপারে বনী ইসরাঈলের মধ্য থেকেও একজন সাক্ষ্য দান করেছে।” (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৮১২; মুসলিম ৪৪/৩৩, হাঃ নং ২৪৮৩) কায়স ইব্‌নু উবাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাদীনাহর মাস্জিদে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন এমন এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলেন যার চেহারায় বিনয় ও নম্রতার ছাপ ছিল। লোকজন বলতে লাগলেন, এ ব্যক্তি জান্নাতীগণের একজন। তিনি হালকাভাবে দু’রাকআত সালাত আদায় করে মাসজিদ হতে বেরিয়ে এলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাঁকে বললাম, আপনি যখন মাসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখন লোকজন বলাবলি করছিল যে, ইনি জান্নাতবাসীগণের একজন। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম কারো জন্য এমন কথা বলা উচিত নয়, যা সে জানে না। আমি তোমাকে আসল কথা বলছি কেন তা বলা হয়। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় একটি স্বপ্ন দেখে তাঁর নিকট বর্ণনা করলাম। আমি দেখলাম যে, আমি যেন একটি বাগানে অবস্থান করছি; বাগানটি বেশ প্রশস্ত, সবুজ। বাগানের মধ্যে একটি লোহার স্তম্ভ যার নিম্নভাগ মাটিতে এবং উপরিভাগ আকাশ স্পর্শ করেছে; স্তম্ভের উপরে একটি শক্ত কড়া সংযুক্ত রয়েছে। আমাকে বলা হল, উপরে উঠ। আমি বললাম, এটাতো আমার সামর্থ্যের বাইরে। তখন একজন খাদিম এসে পিছন দিক হতে আমার কাপড়সহ চেপে ধরে আমাকে উঠতে সাহায্য করলেন। আমি উঠতে লাগলাম এবং উপরে গিয়ে আংটাটি ধরলাম। তখন আমাকে বলা হল, শক্তভাবে আংটাটি ধর। তারপর কড়াটি আমার হাতের মুঠায় ধরা অবস্থায় আমি জেগে গেলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট স্বপ্নটি বললে, তিনি বললেন, এ বাগান হল ইসলাম, আর স্তম্ভটি হল ইসলামের খুঁটি, আর খুঁটিসহ কড়াটি হল “উরুয়াতুল উস্‌কা” (শক্ত ও অটুট কড়া) এবং তুমি আজীবন ইসলামের উপর কায়েম থাকবে। (রাবী বলেন) এ ব্যক্তি হলেন, আবদুল্লাহ ইব্‌নু সালাম (রাঃ)। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ৩৮১৩; মুসলিম ৪৪/৩৩, হাঃ নং ২৪৮৪)

【28】

হাস্‌সান বিন সাবিত (রাঃ)-এর মর্যাদা।

সা‘ঈদ ইব্‌নু মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) মাসজিদে নববীতে আগমন করেন, তখন হাস্‌সান ইব্‌নু সাবিত (রাঃ) কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। তখন তিনি বললেন, এখানে আপনার চেয়ে উত্তম ব্যক্তির উপস্থিতিতেও আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। অতঃপর তিনি আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর দিকে তাকালেন এবং বললেন, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করছি; আপনি কি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, “তুমি আমার পক্ষ হতে জবাব দাও। হে আল্লাহ! আপনি তাকে রুহুল কুদুস [জিবরীল (‘আ.)] দ্বারা সাহায্য করুন।” তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ।* [মসজিদে কবিতা আবৃত্তি করতে হাস্‌সান সাবিত (রাঃ)-এর প্রতি উমার (রাঃ) আপত্তি করাতে তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে সাক্ষী হিসেবে পেশ করলেন যে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর উপস্থিতিতেও মাসজিদে কবিতা আবৃত্তি করেছেন।](বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১২; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৫) বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাস্‌সান (রাঃ)-কে বলেছেন, তুমি তাদের কুৎসা বর্ণনা কর অথবা তাদের কুৎসার জবাব দাও। তোমার সঙ্গে জিবরীল (‘আ.) আছেন। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩২১৩; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৬) ‘উরওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সম্মুখে হাস্‌সান (রাঃ)-কে তিরস্কার করতে উদ্যত হলে, তিনি আমাকে বললেন, তাকে গালি দিও না। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরফ হতে কবিতার মাধ্যমে শত্রুর কথার আঘাত প্রতিহত করত। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৫৩১; মুসলিম ৪৪/৪৩ হাঃ ২৪৮৯) মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তাঁর কাছে হাস্‌সান ইবনু সাবিত (রাঃ) তাঁকে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছেন। তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর প্রশংসায় বলছেন, “তিনি সতী, ব্যক্তিত্বসম্পন্না ও জ্ঞানবতী, তাঁর প্রতি কোন সন্দেহই আরোপ করা যায় না। তিনি অভুক্ত থাকেন, তবুও অনুপস্থিত লোকেদের গোশত খান না (অর্থাৎ গীবত করেন না)। এ কথা শুনে ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, কিন্তু আপনি তো এরূপ নন। মাসরূক (রহঃ) বলেছেন যে, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে বললাম যে, আপনি কেন তাকে আপনার কাছে আসার অনুমতি দেন? অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, “তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি।” ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অন্ধত্ব থেকে কঠিনতর শাস্তি আর কী হতে পারে? তিনি তাঁকে আরো বলেন যে, হাস্‌সান ইবনু সাবিত (রাঃ) রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষাবলম্বন করে কাফিরদের সঙ্গে মুকাবালা করতেন অথবা কাফিরদের বিপক্ষে নিন্দাপূর্ণ কবিতা রচনা করতেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৪১৪৬; মুসলিম ৪৪/৩৪, হাঃ ২৪৮৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হাসসান (রাঃ) কবিতার ছন্দে মুশরিকদের নিন্দা করতে অনুমতি চাইলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার বংশকে কিভাবে তুমি আলাদা করবে? হাসসান (রাঃ) বললেন, আমি তাদের মধ্য হতে এমনভাবে আপনাকে আলাদা করে নিব যেমনভাবে আটার খামির হতে চুলকে আলাদা করে নেয়া হয়। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১৬ হাদীস নং ৩৫৩১; মুসলিম ৪৪/৩৪ হাঃ ২৪৮৯)

【29】

আবূ হুরাইরাহ আদ্‌দাওসী (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের ধারণা আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনায় বাড়াবাড়ি করছে। আল্লাহ্‌র কাছে একদিন আমাদেরকে হাযির হতে হবে। আমি ছিলাম একজন মিসকীন। খেয়ে না খেয়েই আমি রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সান্নিধ্যে লেগে থাকতাম। মুহাজিরদেরকে বাজারের বেচাকেনা লিপ্ত রাখত। আর আনসারগণকে ব্যস্ত রাখত তাঁদের ধন-দৌলতের ব্যবস্থাপনা। একদা আমি রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার কথা শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যক্তি স্বীয় চাদর বিছিয়ে তারপর তা গুটিয়ে নেবে, সে আমার নিকট হতে শ্রুত বাণী কোন দিন ভুলবে না। তখন আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম। সে সত্তার কসম, যিনি তাঁকে হক্কের সঙ্গে প্রেরণ করেছেন! এরপর থেকে আমি তাঁর কাছে যা শুনেছি, এর কিছুই ভুলিনি। (বুখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৭৩৫৪; মুসলিম ৪৪/৮৫, হাঃ ২৪৯২)

【30】

বদর যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা এবং হাতিব বিন আবি বালতা (রাঃ)-এর কাহিনী।

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইব্‌নু আসওয়াদ (রাঃ)-কে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে।’ তখন আমরা রওনা দিলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছে গেলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর।’ সে বলল, ‘আমার নিকট তো কোন পত্র নেই।’ আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে।’ তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাজির হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইব্‌নু বালতাআ (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মাক্কাহর কয়েকজন মুশরিকের প্রতি লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে হাতিব! এ কী ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার ব্যাপারে কোন তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। আসলে আমি কুরাইশ বংশোদ্ভূত নই। তবে তাদের সঙ্গে মিশে ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মাক্কাহবাসীদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু অনুগ্রহ দেখাই, যদ্‌দ্বারা অন্তত তারা আমার আপনজনদের রক্ষা করবে। আর আমি তা কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং কুফরীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণেও নয়।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলছে।’ তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই।’ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমার যা ইচ্ছে আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৪১ হাদীস নং ৩০০৭; মুসলিম ৪৪/৩৬ হাঃ ২৪৯৪)

【31】

আবূ মূসা ও আবূ ‘আমির আল আশ‘আরী (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মাক্কাহ ও মাদীনাহ্‌র মধ্যবর্তী জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলাম। তখন বিলাল (রাঃ) তাঁর কাছে ছিলেন। এমন সময়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছিলেন তা পূরণ করবেন না? তিনি তাঁকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর। সে বলল, সুসংবাদ গ্রহণ কর কথাটি তো আপনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তখন তিনি ক্রোধ ভরে আবূ মূসা ও বিলাল (রাঃ)-এর দিকে ফিরে বললেন, লোকটি সুসংবাদ ফিরিয়ে দিয়েছে। তোমরা দু’জন তা গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে বললেন, আমরা তা গ্রহণ করলাম। এরপর তিনি এক পাত্র পানি আনতে বললেন। তিনি এর মধ্যে নিজের উভয় হাত ও মুখমণ্ডল ধুয়ে কুল্লি করলেন। তারপর বললেন, তোমরা উভয়ে এ থেকে পান করো এবং নিজেদের মুখমণ্ডল ও বুকে ছিটিয়ে দাও। আর সুসংবাদ গ্রহণ কর। তাঁরা উভয়ে পাত্রটি তুলে নিয়ে নির্দেশ মত কাজ করলেন। এমন সময় উম্মু সালামাহ (রাঃ) পর্দার আড়াল থেকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও অতিরিক্ত কিছু রাখ। কাজেই তাঁরা এ থেকে অতিরিক্ত কিছু তাঁর [উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর] জন্য রাখলেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৭ হাদীস নং ৪৩২৮; মুসলিম ৪৪/৩৬ হাঃ ২৪৯৭) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধ অতিক্রান্ত হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ আমির (রাঃ)-কে একটি সৈন্যবাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করে আওতাস গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠালেন। যুদ্ধে তিনি দুরাইদ ইবনু সিম্মার সঙ্গে মুকাবালা করলে দুরাইদ নিহত হয় এবং আল্লাহ তার সঙ্গীদেরকেও পরাস্ত করেন। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর সঙ্গে আমাকেও পাঠিয়েছিলেন। এ যুদ্ধে আবূ আমির (রাঃ)-এর হাঁটুতে একটি তীর নিক্ষিপ্ত হয়। জুশাম গোত্রের এক লোক তীরটি নিক্ষেপ করে তাঁর হাঁটুর মধ্যে বসিয়ে দিয়েছিল। তখন আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, চাচাজান! কে আপনার উপর তীর ছুঁড়েছে? তখন তিনি আবূ মূসা (রাঃ)-কে ইশারার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ঐ যে, ঐ ব্যক্তি আমাকে তীর মেরেছে। আমাকে হত্যা করেছে। আমি লোকটিকে লক্ষ্য করে তার কাছে গিয়ে পৌঁছলাম আর সে আমাকে দেখামাত্র ভাগতে শুরু করল। আমি এ কথা বলতে বলতে তার পিছু নিলাম- তোমার লজ্জা করে না, তুমি দাঁড়াও। লোকটি থেমে গেল। এবার আমরা দু’জনে তরবারি দিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ করলাম এবং আমি ওকে হত্যা করে ফেললাম। তারপর আমি আবূ আমির (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ আপনার আঘাতকারীকে হত্যা করেছেন। তিনি বললেন, এখন এ তীরটি বের করে দাও। আমি তীরটি বের করে দিলাম। তখন ক্ষতস্থান থেকে কিছু পানি বের হল। তিনি আমাকে বললেন, হে ভাতিজা! তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার সালাম জানাবে এবং আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। আবূ আমির (রাঃ) তাঁর স্থলে আমাকে সেনাদলের অধিনায়ক নিয়োগ করলেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন, তারপর ইন্তিকাল করলেন। (যুদ্ধ শেষে) আমি ফিরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন পাকানো দড়ির তৈরি একটি খাটিয়ায় শায়িত ছিলেন। খাটিয়ার উপর (যৎসামান্য) একটি বিছানা ছিল। কাজেই তাঁর পৃষ্ঠে এবং দুইপার্শ্বে পাকানো দড়ির দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে আমাদের এবং আবূ আমির (রাঃ)-এর সংবাদ জানালাম। তাঁকে এ কথাও বললাম যে, (মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছেন) তাঁকে [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে] আমার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করতে বলবে। এ কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনতে বললেন এবং অযু করলেন। তারপর তাঁর দু’হাত উপরে তুলে তিনি বললেন, হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দা আবূ আমিরকে ক্ষমা করো। (হস্তদ্বয় উত্তোলনের কারণে) আমি তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রাংশ দেখতে পেয়েছি। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে তোমার অনেক মাখলূকের উপর, অনেক মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কর। আমি বললামঃ আমার জন্যও (দু‘আ করুন)। তিনি দু‘আ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়সের গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং ক্বিয়ামাত দিবসে তুমি তাঁকে সম্মানিত স্থানে প্রবেশ করাও। বর্ণনাকারী আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন, দু’টি দু‘আর একটি ছিল আবূ ‘আমির (রাঃ)-এর জন্য আর অপরটি ছিল আবূ মূসা (আশ‘আরী) (রাঃ)-এর জন্য। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৬ হাদীস নং ৪৩২৩; মুসলিম ৪৪/৩৮, হাঃ ২৪৯৮)

【32】

আল আশ‘আরী (রাঃ)-দের মর্যাদা।

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আশ‘আরী গোত্রের লোকেরা রাতের বেলায় এলেও আমি তাদেরকে তাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ দিয়েই চিনতে পারি এবং রাতের বেলায় তাদের কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনেই আমি তাদের বাড়িঘর চিনতে পারি যদিও আমি দিবাভাগে তাদেরকে নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করতে দেখিনি। হাকীম ছিলেন আশ‘আরীদের একজন। যখন তিনি কোন দল কিংবা (বর্ণনাকারী বলেছেন) কোন দুশমনের মুখোমুখী হতেন তখন তিনি তাদেরকে বলতেন, আমার সাথীরা তোমাদের বলেছেন, যেন তোমরা তাঁদের জন্য অপেক্ষা কর। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২৩২; মুসলিম ৪৪/৩৯, হাঃ ২৪৯৯) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আশ‘আরী গোত্রের লোকেরা যখন জিহাদে গিয়ে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা মদীনাতেই তাদের পরিবার পরিজনদের খাবার কম হয়ে যায়, তখন তারা তাদের যা কিছু সম্বল থাকে, তা একটা কাপড়ে জমা করে। তারপর একটা পাত্র দিয়ে মেপে তা নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে নেয়। কাজেই তারা আমার এবং আমি তাদের। (বুখারী পর্ব ৪৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৪৮৬; মুসলিম ৪৪/৩৯ হাঃ ২৫০০)

【33】

জা’ফার বিন আবূ ত্বলিব, আসমা বিনতু ‘উমায়স এবং তাদের নৌকারোহীদের (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইয়ামানে থাকা অবস্থায় আমাদের কাছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হিজরতের খবর পৌঁছল। তাই আমি ও আমার দু’ভাই আবূ বুরদা ও আবূ রুহম এবং আমাদের কাওমের আরো মোট বায়ান্ন কি তিপ্পান্ন কিংবা আরো কিছু লোকজনসহ আমরা হিজরতের উদ্দেশে বের হলাম। আমি ছিলাম আমার অপর দু’ভাইয়ের চেয়ে বয়সে ছোট। আমরা একটি জাহাজে উঠলাম। জাহাজটি আমাদেরকে আবিসিনিয়া দেশের (বাদশাহ্) নাজ্জাশীর নিকট নিয়ে গেল। সেখানে আমরা জা‘ফর ইবনু আবূ তালিবের সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাঁর সঙ্গেই আমরা থেকে গেলাম। অবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাইবার বিজয়ের সময় সকলে এক যোগে (মাদীনায়) এসে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। এ সময়ে মুসলিমদের কেউ কেউ আমাদেরকে অর্থাৎ জাহাজে আগমনকারীদেরকে বলল, হিজরতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী। আমাদের সঙ্গে আগমনকারী আসমা বিন্‌ত উমাইস একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী হাফসাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনিও (তাঁর স্বামী জা‘ফরসহ) নাজ্জাশীর দেশে হিজরাতকারীদের সঙ্গে হিজরাত করেছিলেন। আসমা (রাঃ) হাফসাহ্‌র কাছেই ছিলেন। এ সময়ে ‘উমার (রাঃ) তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। ‘উমার (রাঃ) আসমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? হাফসাহ (রাঃ) বললেন, তিনি আসমা বিনত উমাইস (রাঃ)। ‘উমার (রাঃ) বললেন, ইনি হাবশায় হিজরাতকারিণী আসমা? ইনিই কি সমুদ্রগামিনী? আসমা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ! তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, হিজরাতের ব্যাপারে আমরা তোমাদের চেয়ে আগে আছি। সুতরাং তোমাদের তুলনায় রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি আমাদের হক অধিক। এতে আসমা (রাঃ) রেগে গেলেন এবং বললেন, কক্ষনো হতে পারে না। আল্লাহ্‌র কসম! আপনারা তো রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি আপনাদের ক্ষুধার্তদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন, আপনাদের অবুঝ লোকদেরকে নসীহত করতেন। আর আমরা ছিলাম এমন এক এলাকায় অথবা তিনি বলেছেন এমন এক দেশে যা রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহুদূরে এবং সর্বদা শত্রু বেষ্টিত হাবশা দেশে। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উদ্দেশেই ছিল আমাদের এ হিজরাত। আল্লাহ্‌র কসম! আমি কোন খাবার খাবো না, পানিও পান করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি যা বলেছেন তা আমি রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে না জানাব। সেখানে আমাদেরকে কষ্ট দেয়া হত, ভয় দেখানো হত। শীঘ্রই আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এসব কথা বলব এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করব। তবে আল্লাহ্‌র কসম! আমি মিথ্যা বলব না, পেচিয়ে বলব না, বাড়িয়েও কিছু বলব না। এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন, তখন আসমা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ‘উমার (রাঃ) এই কথা বলেছেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী উত্তর দিয়েছ? আসমা (রাঃ) বললেনঃ আমি তাঁকে এই এই বলেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, (এ ব্যাপারে) তোমাদের চেয়ে ‘উমার (রাঃ) আমার প্রতি অধিক হক রাখে না। কারণ ‘উমার (রাঃ) এবং তাঁর সাথীরা একটি হিজরাত লাভ করেছে, আর তোমরা যারা জাহাজে হিজরাতকারী ছিলে তারা দু’টি হিজরাত লাভ করেছে। আসমা (রাঃ) বলেন, এ ঘটনার পর আমি আবূ মূসা (রাঃ) এবং জাহাজযোগে হিজরাতকারী অন্যদেরকে দেখেছি যে, তাঁরা সদলবলে এসে আমার নিকট থেকে এ হাদীসখানা শুনতেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের সম্পর্কে যে কথাটি বলেছিলেন সে কথাটির চেয়ে তাঁদের কাছে দুনিয়ার অন্য কোন জিনিস অধিকতর প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আবূ বুরদাহ (রাঃ) বলেন যে, আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি আবূ মূসা [আশ‘আরী (রাঃ)]-কে দেখেছি, তিনি বারবার আমার নিকট হতে এ হাদীসটি শুনতে চাইতেন। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২৩০-৪২৩১; মুসলিম ৪৪/৪১, হাঃ ২৪৯৯)

【34】

আনসার (রাঃ)-এর মর্যাদা।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, إِذْ هَمَّتْ طَائِفَتَانِ مِنْكُمْ أَنْ تَفْشَلَا ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে দু’দলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল’’ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে তথা বনূ সালিমাহ এবং বনু হারিসাহ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি অবতীর্ণ না হোক তা আমি চাইনি। কেননা এ আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন, ‘‘আল্লাহ উভয় দলেরই সাহায্যকারী’’। [মুসলিম ৪৪/৩৯, হাঃ ২৪৯৯] (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৪০৫১) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, হার্‌রায় যাদেরকে শহীদ করা হয়েছিল তাদের খবর শুনে শোকে মুহ্যমান হয়েছিলাম। আমার এ শোকের সংবাদ যায়দ ইব্‌নু আরকাম (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি আমার কাছে পত্র লিখেন। পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছেন, হে আল্লাহ্! আনসার ও আনসারদের সন্তানদেরকে তুমি ক্ষমা করে দাও। এ দু‘আয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের সন্তানদের সন্তানদের জন্য দু‘আ করেছেন কিনা এ ব্যাপারে ইব্‌নু ফায্ল (রাঃ) সন্দেহ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬৩ হাদীস নং ৪৯০৬; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ ২৫০৬) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (আনসারের) কতিপয় বালক-বালিকা ও নারীকে রাবী বলেন, আমার মনে হয়- তিনি বলেছিলেন, কোন বিবাহ অনুষ্ঠান শেষে ফিরে আসতে দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্ জানেন, তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৭৮৫; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ নং ২৫০৭) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একজন আনসারী মহিলা তার শিশুসহ রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলেন। রাসূলাল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সঙ্গে কথা বললেন এবং বললেন, ঐ সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, লোকদের মধ্যে তোমরাই আমার সবচেয়ে প্রিয়জন। কথাটি তিনি দু’বার বললেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৭৮৬; মুসলিম পর্ব ৪৪ হাঃ নং ২৫০৯) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আনসারগণ আমার অতি আপনজন ও বিশ্বস্ত লোক। লোকসংখ্যা বাড়তে থাকবে আর তাদের সংখ্যা কমতে থাকবে। তাই তাদের নেক্‌কারদের নেক ‘আমালগুলো কবূল কর এবং তাদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দাও। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৮০১; মুসলিম ৪৪/৪৩, হাঃ নং ২৫১০)

【35】

আনসার (রাঃ) পরিবারের মধ্যে সর্বোত্তম।

আবূ উসায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম গোত্র হল বানূ নাজ্জার, তারপর বানূ ‘আবদুল আশহাল তারপর বনূ হারিস ইব্‌নু খাযরাজ তারপর বানূ সায়িদা এবং আনসারদের সকল গোত্রের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। এ শুনে সা‘দ (রাঃ) বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যদেরকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন? তখন তাকে বলা হল; তোমাদেরকে তো অনেক গোত্রের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩৭৮৯; মুসলিম ৪৪/৪৪, হাঃ নং ২৫১১)

【36】

আনসারদের (রাঃ) সঙ্গ লাভে যে কল্যাণ লাভ করা যায়।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক সফরে আমি জারীর ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার খেদমত করতেন। যদিও তিনি আনাস (রাঃ)-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আন্‌সরদের এমন কিছু কাজ দেখেছি, যার কারণে তাদের কাউকে পেলেই সম্মান করি। (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭১ হাদীস নং ২৮৮৮; মুসলিম ৪৪/৪৫ হাঃ ২৫১৩)

【37】

গিফার ও আসলাম গোত্রের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দু‘আ।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে নিরাপত্তা দিন। গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে মাফ করুন। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৪; মুসলিম ৪৪/৪৬ হাঃ ২৫১৬) ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে উপবিষ্ট অবস্থায় বলেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে মাফ করুন, আসলাম গোত্র, আল্লাহ্ তাদেরকে নিরাপত্তা দান করুন আর ‘উসাইয়া গোত্র, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যতা করেছে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৩; মুসলিম ৪৪/৪৬ হাঃ ২৫১৮)

【38】

গিফার, আসলাম, জুহাইনাহ, আশযা, মুজাইনাহ, তামিম, দাওস ও তাঈ গোত্রগুলোর ফাযীলাত।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কুরাইশ, আনসার, জুহায়নাহ, মুযায়নাহ, আসলাম, আশজা‘ ও গিফার গোত্রগুলো আমার সাহায্যকারী। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ছাড়া তাঁদের সাহায্যকারী আর কেউ নেই। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৩৫০৪; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আসলাম, গিফার এবং মুযাইনাহ ও জুহানাহ গোত্রের কিছু অংশ অথবা জুহাইনাহর কিছু অংশ কিংবা মুযায়নাহর কিছু অংশ আল্লাহ্‌র নিকট অথবা বলেছেন কিয়ামতের দিন আসাদ, তামীম, হাওয়াযিন ও গাত্ফান গোত্র চেয়ে উত্তম বলে বিবেচিত হবে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩৫২৩; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২১) আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) আকরা‘ ইব্‌নু হাবিস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ‘আরয করলেন, আসলাম গোত্রের সুররাক, হাজীজ, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয় আপনার নিকট বায়‘আত করেছে এবং (রাবী বলেন) আমার ধারণা জুহায়না গোত্রও। এ ব্যাপারে ইব্‌নু আবূ ইয়াকুব সন্দেহ পোষণ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি জান, আসলাম, গিফার ও মুযায়না গোত্রদ্বয়, (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি জুহায়না গোত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন যে বনূ তামীম, বনূ ‘আমির, আসাদ এবং গাত্ফান (গোত্রগুলো) যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হয়েছে, তাদের তুলনায় পূর্বোক্ত গোত্রগুলো উত্তম। রাবী বলেন, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, প্রাগুক্তগুলো শেষোক্ত গোত্রগুলোর তুলনায় অবশ্যই অতি উত্তম। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৩৫১৬; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, তুফাইল ইব্‌নু আম্‌র দাওসী ও তাঁর সঙ্গীরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে অবাধ্যতা করেছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দু‘আ করুন।’ অতঃপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদেরকে ইসলামে নিয়ে আসুন।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১০০ হাদীস নং ২৯৩৭; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তিনটি কথা শোনার পর হতে বনী তামীম গোত্রকে আমি ভালবেসে আসছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, দাজ্জালের মুকাবিলায় আমার উম্মতের মধ্যে এরাই হবে অধিকতর কঠোর। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, একবার তাদের পক্ষ হতে সদকার মাল আসল। তখন রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ যে আমার কাওমের সাদাকা। ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর হাতে তাদের এক বন্দিনী ছিল। তা দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, একে মুক্ত করে দাও। কেননা, সে ইসমাঈলের বংশধর। (বুখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ২৫৪৩; মুসলিম ৪৪/৪৭ হাঃ ২৫২৫)

【39】

মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা মানুষকে ঋণির মত পাবে। আইয়্যামে জাহিলীয়্যাতের উত্তম ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পরও তারা উত্তম যখন তারা দীনী জ্ঞান অর্জন করে আর তোমরা শাসন ও কর্তৃত্বের ব্যাপারে লোকদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক অনাসক্ত। আর মানুষের মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট ঐ দু’মুখী ব্যক্তি যে একদলের সঙ্গে এক ভাবে কথা বলে অপর দলের সঙ্গে আরেকভাবে কথা বলে। (বুখারী পর্ব ৬১ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৪৯৩-৩৪৯৪; মুসলিম ৪৪/৪৮ হাঃ ২৫২৬)

【40】

কুরাইশ নারীদের ফাযীলাত।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীলা হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেছেন, ‘ইমরানের কন্যা মারইয়াম কখনও উটে আরোহণ করেননি।’ (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৩৪৩৪; মুসলিম ৪৪/৪৯ হাঃ ২৪৩১)

【41】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁর সাথীদের মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধন প্রতিষ্ঠা।

আসিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নিকট কি এ হাদীস পৌঁছেছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইসলামে হিল্‌ফ (জাহিলী যুগের সহযোগিতা চুক্তি) নেই? তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে কুরায়শ এবং আনসারদের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ৩৯ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২২৯৪; মুসলিম ৪৪/৫০, হাঃ ২৫২৯)

【42】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের মর্যাদা, অতঃপর তাদের পরবর্তীদের, অতঃপর তাদের পরবর্তীদের।

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের সঙ্গে কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ। অতঃপর (তাঁর বারাকাতে) বিজয় দান করা হবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞেস করা হবে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের সহচরদের মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হবে, হ্যাঁ, অতঃপর তাদের বিজয়দান করা হবে। অতঃপর এক যুগ এমন আসবে যে, জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, (তাবি-তাবিঈন)? বলা হবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরও বিজয় দান করা হবে।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ২৮৯৭; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপরে এমন সব ব্যক্তি আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেয়ার আগে কসম করে বসবে। (বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৬৫২; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩৩) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের পর এমন লোকেরা আসবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানত রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। তাদের মধ্যে মেদওয়ালাদের প্রকাশ ঘটবে। (বুখারী পর্ব ৫২ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৬৫১; মুসলিম ৪৪/৫২ হাঃ ২৫৩৫)

【43】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ আজ যারা বেঁচে আছে তাদের কেউই একশ’ বছর পর পৃথিবীর উপর জীবিত থাকবে না।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর অবশিষ্ট থাকবে না। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ১১৬; মুসলিম ৪৪/৫৩, হাঃ ২৫৩৬)

【44】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী (রাঃ)-দের গালি দেয়া নিষিদ্ধ।

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা আমার সাহাবীগণকে গালমন্দ কর না। তোমাদের কেউ যদি উহূদ পর্বত পরিমাণ সোনা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় কর, তবুও তাদের একমুদ বা অর্ধমুদ-এর সমপরিমাণ সাওয়াব হবে না। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৩৬৭৩; মুসলিম ৪৪/৫৪ হাঃ ২৫৪১)

【45】

পারস্যবাসীদের ফাযীলাত।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে বসেছিলাম। এমন সময় তাঁর উপর অবতীর্ণ হলো সূরাহ জুমু‘আহ, যার একটি আয়াত হলো ঃ “এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি।” তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তিনবার এ কথা জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রাঃ)-ও উপস্থিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সালমান (রাঃ)-এর উপর হাতে রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকট থাকলেও আমাদের কতক লোক অথবা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যাবে। [৪৮৯৮; মুসলিম ৪৪/৫৯, হাঃ ২৫৪৬, আহমাদ ৯৪১০] (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৬২ হাদীস নং ৪৮৯৮)

【46】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ মানুষ উটের ন্যায়, একশ’টি উটের মধ্যে একটিও আরোহণের উপযোগী পাবে না।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই মানুষ শত উটের ন্যায়, যাদের মধ্য থেকে সাওয়ারীর উপযোগী একটি পাওয়া তোমার পক্ষে দুষ্কর। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ৬৪৯৮; মুসলিম ৪৪ অধ্যায় ৬০, হাঃ ২৫৪৭)