45. সদাচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক ও শিষ্টাচার
মাতাপিতার প্রতি সদাচরণ এবং তাঁরা দু’জনই এর বেশি হকদার।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃ তোমার মা। লোকটি বললঃ তারপর কে? নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর তোমার আব্বা। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৯৭১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১, হাঃ ২৫৪৮) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে তাঁদের খিদমতের চেষ্টা কর।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৩৮ হাদীস নং ৩০০৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১ হাঃ ২৫৪৯)
নফল সলাত বা এ জাতীয় ‘ইবাদাতের উপর মাতাপিতার প্রতি সদাচরণকে অগ্রাধিকার দেয়া।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনজন শিশু ছাড়া আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে ‘জুরাইজ’ নামে ডাকা হতো। একদা ‘ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না সলাত আদায় করতে থাকব। তার মা বলল, হে আল্লাহ্! ব্যভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরাইজ তার ‘ইবাদাত খানায় থাকত। একবার তার নিকট একটি নারী আসল। তার সঙ্গে কথা বলল। কিন্তু জুরাইজ তা অস্বীকার করল। অতঃপর নারীটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো। এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার নিকট আসল এবং তার ‘ইবাদাতখানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ উযূ সেরে ‘ইবাদাত করল। অতঃপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা বলল, আমরা আপনার ‘ইবাদাতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বলল, না। তবে মাটি দিয়ে। বনী ইসরাঈলের একজন নারী তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। নারীটি দু‘আ করল, হে আল্লাহ্! আমার ছেলেটি তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, হে আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর না। অতঃপর মুখ ফিরিয়ে স্তন্য পান করতে লাগল। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বললেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। অতঃপর সেই নারীটির পার্শ্ব দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। নারীটি বলল, হে আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো না। শিশুটি তাৎক্ষণিক তার মায়ের স্তন্য ছেড়ে দিল। আর বলল, হে আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর। তার মা বলল, তা কেন? শিশুটি বলল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন। আর এ দাসীটির ব্যাপারে লোকে বলেছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে (দাসীটি) কিছুই করেনি। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৩৪৩৬; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ২ হাঃ ২৫৫০)
আত্মীয়তার সম্পর্ক ও তা বিচ্ছিন্ন করা হারাম।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন। এ থেকে তিনি নিস্ক্রান্ত হলে ‘রাহিম’ (রক্ত সম্পর্কে) দাঁড়িয়ে পরম করুণাময়ের আঁচল টেনে ধরল। তিনি তাকে বললেন, থামো। সে বলল, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী লোক থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্যই আমি এখানে দাঁড়িয়েছি। আল্লাহ্ বললেন, যে তোমাকে সম্পর্কযুক্ত রাখে, আমিও তাকে সম্পর্কযুক্ত রাখব; আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়ই, হে আমার প্রভু। তিনি বললেন, যাও তোমার জন্য তাই করা হল। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, ইচ্ছে হলে তোমরা পড়, “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বাঁধন ছিন্ন করবে।” (বুখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৪৭ হাদীস নং ৪৮৩০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৪) যুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৫৯৮৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ২০৬৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৫৫৭)
হিংসা, ঘৃণা ও কথা বলা নিষেধ।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করো না। তোমরা সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো। কোন মুসলিমের জন্য তিন দিনের অধিক তার ভাইকে পরিত্যাগ করে থাকা জায়িয নয়। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৫৭ হাদীস নং ৬০৬৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৭, হাঃ ২৫৫৯)
শারয়ী ওযর ব্যতীত কারো সাথে তিনদিনের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন রাখা হারাম।
আবূ আইউব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জন্য হালাল নয় যে, সে তার ভাই-এর সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে আর অপরজন সে দিকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম সালামের সূচনা করবে, সেই উত্তম ব্যক্তি। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৬২ হাদীস নং ৬০৭৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৮, হাঃ ২৫৬০)
কারো প্রতি খারাপ ধারণা করা, গোয়েন্দাগিরি করা, দোষ-ত্রুটি অনে¦ষণ করা ও দালালি করা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে থেকো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ অনুসন্ধান করো না, গোয়েন্দাগিরী করো না, একে অন্যকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৮৫ হাদীস নং ৬০৬৬; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ৯ হাঃ ২৫৬৩)
মু’মিন ব্যক্তি কোন অসুখে পড়লে অথবা চিন্তাগ্রস্ত হলে অথবা এ জাতীয় কোন বিপদে পড়লে এমনকি যদি তার কাঁটাও ফুটে তাহলে এর বিনিময়ে তাকে সওয়াব দেয়া হবে।
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে অধিক রোগ যাতনা ভোগকারী অন্য কাউকে দেখিনি। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৫৬৪৬; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি তো কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমাদের দু’ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললামঃ এটি এজন্য যে, আপনার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ ব্যাপারটি এমনই। কেননা যে কোন মুসলিম মুসীবতে আক্রান্ত হয়, তা একটা কাঁটা হোক কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেভাবে গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যায়। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৫৬৪৮; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪ হাঃ ২৫৭১) ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদ-আপদ আপতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭২) আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৫৬৪১-৫৬৪২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭৩) ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কৃষ্ণ বর্ণের মহিলাটি, সে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বললঃ আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার ছতর খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহ্র কাছে দু‘আ করুন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যদি চাও, ধৈর্য ধারণ করতে পার। তোমার জন্য থাকবে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহ্র কাছে দু‘আ করি, যেন তোমাকে নিরাময় করেন। মহিলা বললঃ আমি ধৈর্য ধারণ করব। সে বললঃ তবে যে সে অবস্থায় ছতর খুলে যায়। কাজেই আল্লাহ্র নিকট দু‘আ করুন যেন আমার ছতর খুলে না যায়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য দু‘আ করলেন। (বুখারী পর্ব ৭৫ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ৫৬৫২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৪, হাঃ ২৫৭৬)
যুল্ম করা হারাম।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যুল্ম কিয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ ধারণ করবে। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ২৪৪৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৫ হাঃ ২৫৭৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর যুল্ম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন। (বুখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৪৪২; মুসলিম পর্ব ৪৫, অধ্যায় ১৫, হাঃ ২৫৮০) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যালিমদের ঢিল দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না। (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহিওয়া সাল্লাম) এ আয়াত পাঠ করেন “আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোন জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের যুলুমের দরুন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন” (সূরাহ হূদ ১১/১০২)। (বুখারী পর্ব ৬৫ সূরা (১১) হূদ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৪৬৮৬; মুসলিম, পর্ব ৪৫, অধ্যায় ১৫, হাঃ ২৫৮৩)
ভাইকে সাহায্য কর সে যালিম হোক অথবা মাযলুম হোক।
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী হে আনসারী ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করলেন এবং মুহাজির সাহাবী, ওহে মুহাজির ভাইগণ! বলে সাহায্য প্রার্থনা করলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে বললেন, কী খবর, জাহিলী যুগের মত ডাকাডাকি করছ কেন? তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, এক মুহাজির এক আনসারীর নিতম্বে আঘাত করেছে। তিনি বললেন, এমন ডাকাডাকি পরিত্যাগ কর। এটা অত্যন্ত গন্ধময় কথা। এরপর ঘটনাটি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু উবায়র কানে পৌঁছল, সে বলল, আচ্ছা, মুহাজিররা এমন কাজ করেছে? “আল্লাহ্র কসম! আমরা মাদীনায় ফিরলে সেখান থেকে প্রবল লোকেরা দুর্বল লোকেদেরকে অবশ্যই বের করে দিবে।” এ কথা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছল। তখন ‘উমার (রাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি আমাকে অনুমতি দিন। আমি এক্ষুণি এ মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিচ্ছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ কথা বলতে না পারে যে, মুহাম্মাদ তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে হত্যা করেন। [বুখারী পর্ব ৬৫, অধ্যায় ৫, হাদীস নং ৪৯০৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ১৬ হাঃ ২৫৮৪)
মু’মিনদের পরস্পর পরস্পরের প্রতি দয়া, সহযোগিতা ও সহানুভূতি করা।
আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজন মু’মিন আরেকজন মু‘মিনের জন্যে ইমারতস্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি তার হাতের আঙুলগুলো একটার মধ্যে আর একটা প্রবেশ করালেন। (বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৮৮ হাদীস নং ৪৮১; মুসলিম ৫৪ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৫৮৫) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পারস্পারিক দয়া, ভালবাসা ও সহানুভুতি প্রদর্শনে তুমি মু’মিন্দের একটি দেহের মত দেখবে। যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ নেয়। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬০১১; মুসলিম পর্ব ৪৫ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৫৮৬)
অশ্লীলতা থেকে বাঁচার জন্য নম্রতা অবলম্বন করা।
‘আয়িশাহ (রাঃ) একবার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসার অনুমতি চাইলে তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও। সে বংশের নিকৃষ্ট ভাই অথবা বললেনঃ সে গোত্রের নিকৃষ্ট সন্তান। লোকটি ভিতরে আসলে তিনি তার সাথে নম্রভাবে কথাবার্তা বললেন। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনি এ ব্যক্তি সম্পর্কে যা বলার তা বলেছেন। পরে আপনি আবার তার সাথে নম্রতার সাথে কথাবার্তা বললেন। তখন তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে-ই যার অশালীনতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংশ্রব ত্যাগ করে। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৪৮ হাদীস নং ৬০৫৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২২ হাঃ ২৫৯১)
প্রকৃতপক্ষে দোষী এমন কোন ব্যক্তিকে যদি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নাত করেন অথবা গালি দেন অথবা তার উপর বদদু‘আ করেন তাহলে সেটা তার জন্য পবিত্রতা, প্রতিদান ও দয়ায় পরিগণিত হবে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ দু‘আ করতে শুনেছেনঃ হে আল্লাহ! যদি আমি কোন মু’মিন ব্যক্তিকে মন্দ বলে থাকি, তবে আপনি সেটাকে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আপনার নৈকট্য অর্জনের উপায় বানিয়ে দিন। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ৬৩৬১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৫, হাঃ ২৬০১)
মিথ্যা বলা হারাম তবে তা কোন্ ক্ষেত্রে বৈধ তার বর্ণনা।
উম্মু কুলসুম বিনতে ‘উকবাহ (রাঃ) তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য ভালো কথা পৌঁছে দেয় কিংবা ভালো কথা বলে। (বুখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ২ হাদীস নং ২৬৯২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৭ হাঃ ২৬০৫)
মিথ্যার অপকারিতা, সত্যের সৌন্দর্য ও তার মর্যাদার বর্ণনা।
‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সত্য নেকীর দিকে পরিচালিত করে আর নেকী জান্নাতের দিকে পৌঁছায়। আর মানুষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে অবশেষে সিদ্দীক-এর দরজা লাভ করে। আর মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপ তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা কথা বলতে বলতে অবশেষে আল্লাহ্র কাছে মহামিথ্যাচারী রূপে সাব্যস্ত হয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৬৯ হাদীস নং ৬০৯৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ২৯ হাঃ ২৬০৬)
রাগের সময় যে নিজেকে সংবরণ করতে পারবে তার মর্যাদা এবং কিসে রাগ দূরীভূত হয়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ৬১১৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩০, হাঃ ২৬০৯) সুলাইমান ইবনু সুরাদ (রাঃ) একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনেই দু’ব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাঁর কাছেই বসা ছিলাম, তাদের একজন অপর জনকে এত রাগান্বিত হয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিল। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়তো, তা হলে তার ক্রোধ চলে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ্শাইত্বনির রাজীম’ পড়তো। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলল, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছো না? সে বললঃ আমি নিশ্চয়ই পাগল নই। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৭৬ হাদীস নং ৬১১৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩০ হাঃ ২৬১০)
মুখমণ্ডল বা চেহারায় মারা নিষেধ।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন যুদ্ধ করবে, তখন সে যেন মুখমণ্ডলে আঘাত করা হতে বিরত থাকে। (বুখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ২৫৫৯; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩২ হাঃ ২৬১২)
মাসজিদে, বাজারে বা যেখানে লোকজন একত্রিত তার মধ্য দিয়ে অস্ত্র নিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তির প্রতি অস্ত্রের ধারালো দিক ধরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ।
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তীর সাথে করে মাসজিদে নববী অতিক্রম করছিল। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ এর ফলাগুলো হাত দিয়ে ধরে রাখ। (বুখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৪৫১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২৬১৪) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মাসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে, কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোন মুসলিমের গায়ে লেগে না যায়। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৭০৭৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৪, হাঃ ২৬১৫)
কোন মুসলিমের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা করা নিষেধ।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন তার অপর কোন ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করে ইশারা না করে। কেননা সে জানে না হয়ত শয়তান তার হাতে ধাক্কা দিয়ে বসবে, ফলে (এক মুসলিমকে হত্যার অপরাধে) সে জাহান্নামের গর্তে নিপতিত হবে। (বুখারী পর্ব ৯২ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৭০৭২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৫, হাঃ ২৬১৭)
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানোর ফাযীলাত।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা‘আলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারী পর্ব ১০ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৬৫২; মুসলিম পর্ব ৪৫, হাঃ ১৯১৪)
বিড়াল জাতীয় যে প্রাণী ক্ষতি করে না তাকে শাস্তি দেয়া হারাম।
‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করাইনি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত। (বুখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৮২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৭, হাঃ ২২৪২)
প্রতিবেশীর প্রতি ইহসান করার বিশেষ উপদেশ।
‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে জিব্রীল (‘আঃ) সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। আমার মনে হতো যেন, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬০১৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪২, হাঃ ২৬২৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিব্রীল (‘আঃ) বরাবরই আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হয় যে, অচিরেই তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারিস বানিয়ে দিবেন। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬০১৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪২, হাঃ ২৬২৫)
হারাম নয় এমন বিষয়ে সুপারিশ করা মুস্তাহাব।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কেউ কিছু চাইলে বা প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়া হলে তিনি বলতেনঃ তোমরা সুপারিশ কর সওয়াব প্রাপ্ত হবে, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছে তাঁর নাবীর মুখে চূড়ান্ত করেন। (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬০২৭; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৪, হাঃ ২৫৮৫)
সৎলোকদের সাথে বসা এবং খারাপ লোক থেকে দূরে থাকা মুস্তাহাব।
আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সৎসঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উপমা হল, কস্তুরী বহনকারী ও কামারের হাপরের ন্যায়। মৃগ-কস্তুরী বহনকারী হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি কিছু ক্রয় করবে কিংবা তার নিকট হতে তুমি লাভ করবে সুবাস। আর কামারের হাপর হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে কিংবা তুমি তার নিকট হতে পাবে দুর্গন্ধ। (বুখারী পর্ব ৭২ অধ্যায় ৩১ হাদীস নং ৫৫৩৪; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৫, হাঃ ২৬২৮)
কন্যাদের প্রতি ইহসান করার মর্যাদা।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা দু’টি শিশু কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু চাইলো। আমার নিকট একটি খেজুর ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। সে নিজে না খেয়ে খেজুরটি দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিল। এরপর মহিলাটি বেরিয়ে চলে গেলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। তাঁর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি বললেনঃ যাকে এরূপ কন্যা সন্তানের ব্যাপারে কোনরূপ পরীক্ষা করা হয় সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে আড় হয়ে দাঁড়াবে। (বুখারী পর্ব ২৪ অধ্যায় ১০ হাদীস নং ১৪১৮; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৬, হাঃ ২৬২৯)
সন্তানের মৃত্যুতে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণের ফাযীলাত।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিমের তিনটি (নাবালিগ) সন্তান মারা গেল, তবুও সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, এমন হবে না। তবে কেবল কসম পূর্ণ হওয়ার পরিমাণ পর্যন্ত। (বুখারী পর্ব ২৩ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ১২৫১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩২) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনার হাদীস তো কেবলমাত্র পুরুষ শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যে দিন আমরা আপনার নিকট আসব, আল্লাহ্ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন। তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে। তারপর (নির্দিষ্ট দিনে) তাঁরা সমবেত হলেন এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কাছে এলেন এবং অল্লাহ্ তাঁকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দিলেন। এবং বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি সন্তানদের থেকে তিনটি সন্তান আগে পাঠিয়ে দেয় (মৃত্যুবরণ করে) তাহলে এ সন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের পথে অন্তরায় হয়ে যাবে। তাদের মাঝ থেকে একজন মহিলা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! যদি দু’জন হয়? বর্ণনাকারী বলেন, মহিলা কথাটি পরপর দু’বার জিজ্ঞেস করলেন। তারপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দু’জন হলেও, দু’জন হলেও, দু’জন হলেও। (বুখারী পর্ব ৯৬ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৭৩১০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩৩) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) আবদুর রহমান আল-আসবাহানী (রহঃ).আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এমন তিনজন, যারা সাবালক হয়নি। (বুখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ১০২; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৭, হাঃ ২৬৩৪)
আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তাকে অন্য বান্দাদের নিকটেও প্রিয় বানিয়ে দেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিব্রীল (‘আঃ) কে ডেকে বলেন, আল্লাহ্ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তাই তুমিও তাকে ভালবাস। সুতরাং জিব্রীল (‘আঃ) তাকে ভালবাসেন। তারপর জিব্রীল (‘আ.) আসমানে এ ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ্ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, তোমরাও তাকে ভালবাস। তখন তাকে আসমানবাসীরা ভালবাসে এবং যমীনবাসীদের মাঝেও তাকে মাকবূল করা হয়। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৩৩ হাদীস নং ৭৪৮৫; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৪৮, হাঃ ২৬৩৭)
মানুষ তার সাথে যাকে সে ভালবাসে।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! ক্বিয়ামাত কবে হবে? তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি এর জন্য কী জোগাড় করেছ? সে বললঃ আমি এর জন্য তো অধিক কিছু সলাত, সওম এবং সদাকাহ আদায় করতে পারিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি যাকে ভালবাস তারই সঙ্গী হবে। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৯৬ হাদীস নং ৬১৭১; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৫০, হাঃ ২৬৩৯) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ এক ব্যক্তি একদলকে ভালবাসে, কিন্তু (‘আমালে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। তিনি বললেনঃ মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সঙ্গী হবে। (বুখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৯৬ হাদীস নং ৬১৭০; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৫০, হাঃ ২৬৪১)