48. যিকর আযকার, দু‘আ, তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা
আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের প্রতি উৎসাহ প্রদান।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা করেন, আমি সেরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার দিকে এক বাহু অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু’বাহু অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৭৪০৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১, হাঃ ১৬৭৫)
আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ এবং যে তা আয়ত্ব করলো তার মর্যাদা।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার নিরানব্বই নাম আছে (এক কম একশ’ নাম)। যে ব্যক্তি এগুলোর হিফাযত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বেজোড়। তাই তিনি বেজোড়ই পছন্দ করেন। (বুখারী পর্ব ৫৪ ও ৮০ অধ্যায় ৮১ ও ৬৮ হাদীস নং ৬৪১০; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ২ হাঃ ২৬৭৭)
দু‘আ কবূলে দৃঢ় আশা রাখা এবং এ কথা না বলা “তুমি যদি চাও”।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দু‘আ করলে দু‘আর সময় ইয়াকীনের সঙ্গে দু‘আ করবে এবং এ কথা বলবে না হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে কিছু দান করুন। কারণ আল্লাহ্-কে বাধ্য করার মত কেউ নেই। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬৩৩৮; মুসলিম ৪৫ অধ্যায় ৩৭, হাঃ ২৬১৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কখনো এ কথা বলবে না যে, হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আপনার ইচ্ছে হলে আমাকে দয়া করুন। বরং দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দু‘আ করবে। কারণ আল্লাহ্-কে বাধ্য করার মত কেউ নেই। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬৩৩৯; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৩, হাঃ ২৬৭৯)
কোন বিপদে পড়ে মৃত্যু কামনা না করা।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তবে সে (মৃত্যু কামনা না করে) দু‘আ করবেঃ হে আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যুই মঙ্গলজনক হয় তখন আমার মৃত্যু দাও। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৬৩৫১; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৪, হাঃ ২৬৮০) কায়স (রহ.) আমি খাব্বাব (রাঃ)-এর নিকট গেলাম তিনি তাঁর পেটে সাতবার দাগ দিয়েছিলেন। তখন আমি তাঁকে বলতে শুনলামঃ যদি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মৃত্যুর জন্য দু‘আ করতে নিষেধ না করতেন, তবে আমি এর জন্য দু‘আ করতাম। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৬৩৫০; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৪ হাঃ ২৬৮০)
যে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎকে পছন্দ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাক্ষাৎকে পছন্দ করবেন আর যে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎকে অপছন্দ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাক্ষাৎকে অপছন্দ করবেন।
‘উবাদাহ ইব্নু সামিত (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসে, আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করে না, আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ লাভ করা পছন্দ করেন না। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬৫০৭; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৫, হাঃ ২৬৮৩, ২৬৮৪) আবূ মূসা আশ্‘আরী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাক্ষাৎকে ভালবাসে, আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ কে ভালবাসেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্র সাক্ষাৎ ভালবাসে না, আল্লাহ্ তা‘আলাও তার সাক্ষাৎ ভালবাসেন না। (বুখারী পর্ব ৮১ অধ্যায় ৪১ হাদীস নং ৬৫০৮; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৬, হাঃ ২৬৮৬)
যিকির আযকার, দু‘আ ও আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের ফাযীলাত।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা ঘোষণা করেন, আমি সেরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে; আমিও তাকে নিজে স্মরণ করি। আর যদি সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার দিকে এক বাহু অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু’ বাহু অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৭৪০৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১, হাঃ ১৬৭৫)
যিকিরের মাজলিসের ফাযীলাত।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্র একদল ফেরেশতা আছেন, যাঁরা আল্লাহ্র যিকরে রত লোকদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করেন। যখন তাঁরা কোথাও আল্লাহ্র যিকরে রত লোকদের দেখতে পান, তখন তাঁদের একজন অন্যজনকে ডাকাডাকি করে বলেন, তোমরা নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদনের জন্য এদিকে চলে এসো। তখন তাঁরা সবাই এসে তাঁদের ডানাগুলো দিয়ে সেই লোকদের ঢেকে ফেলেন নিকটস্থ আসমান পর্যন্ত। তখন তাঁদের রব তাঁদের জিজ্ঞেস করেন (অথচ এ সম্পর্কে ফেরেশতাদের চেয়ে তিনিই অধিক জানেন) আমার বান্দারা কী বলছে? তখন তাঁরা জবাব দেন, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, তারা আপনার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করছে, তারা আপনার প্রশংসা করছে এবং তারা আপনার মাহাত্ম্য বর্ণনা করছে। তখন তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? তখন তাঁরা বলবেনঃ হে আমাদের রব, আপনার কসম! তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলবেন, আচ্ছা, তবে যদি তারা আমাকে দেখত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা আপনাকে দেখত, তবে তারা আরও অধিক আপনার ‘ইবাদাত করত, আরো অধিক আপনার মাহাত্ম্য বর্ণনা করত, আর অধিক অধিক আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বলবেন, তারা আমার কাছে কী চায়? তাঁরা বলবেন, তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফেরেশতারা বলবেন, না। আপনার সত্তার কসম! হে রব। তারা তা দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা দেখত তবে তারা কী করত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত তাহলে তারা জান্নাতের আরো অধিক লোভ করত, আরো অধিক চাইত এবং এর জন্য আরো অতিশয় উৎসাহী হয়ে উঠত। আল্লাহ্ তা‘আলা জিজ্ঞেস করবেন, তারা কিসের থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় চায়? ফেরেশতাগণ বলবেন, জাহান্নাম থেকে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তাঁরা জবাব দেবেন, আল্লাহ্র কসম! হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, যদি তারা তা দেখত তখন তাদের কী হত? তাঁরা বলবেন, যদি তারা তা দেখত, তবে তারা এ থেকে দ্রুত পালিয়ে যেত এবং একে সাংঘাতিক ভয় করত। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দিলাম। তখন ফেরেশতাদের একজন বলবেন, তাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে, যে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং সে কোন প্রয়োজনে এসেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, তারা এমন উপবেশনকারীরা যাদের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিমুখ হয় না। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৬৬ হাদীস নং ৬৪০৮; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৮, হাঃ ২৬৮৯)
“হে আল্লাহ! এ দুনিয়ার কল্যাণ দান কর, আখিরাতের কল্যাণ দান কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর” এ দু‘আর ফাযীলাত।
আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময়ই এ দু‘আ পড়তেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দাও এবং আখিরাতেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের অগ্নিযন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর” (সূরা আল-বাকারাহ ২/২০১)। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৫৫ হাদীস নং ৬৩৮৯; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ৯, হাঃ ২৬৯০)
‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা ও দু‘আর ফাযীলাত।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে লোক একশ বার এ দু‘আটি পড়বেঃ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই; রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান তাহলে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান সাওয়াব তার হবে। তার জন্য একশটি সাওয়াব লেখা হবে এবং আর একশটি গুনাহ মিটিয়ে ফেলা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তানের নিকট হতে মাহফুজ থাকবে। কোন লোক তার চেয়ে উত্তম সাওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে ঐ দু‘আটির আমল বেশি পরিমাণ করবে। (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৩২৯৩; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১০ হাঃ ২৬৯১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যহ একশ’বার সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৬৫ হাদীস নং ৬৪০৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১০, হাঃ ২৬৯১) আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দশবার (আরবী) পাঠ করল সে যেন ইসমাঈলের বংশের একজন গোলাম আযাদ করার ন্যায় (সওয়াব অর্জন করল)। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৬৪ হাদীস নং ৬৪০৩ ও ৬৪০৪; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১০ হাঃ ৬২৯১-৬২৯২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’টি বাক্য এমন যে, মুখে তার উচ্চারণ অতি সহজ, পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহ্র কাছে অতি প্রিয়। তা হলোঃ (আরবী) (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৬৫ হাদীস নং ৬৪০৬; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১০, হাঃ ২৬৯৪)
যিকরের আওয়াজ আস্তে করা মুস্তাহাব।
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খাইবার যুদ্ধের জন্য বের হলেন কিংবা রাবী বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খাইবারের দিকে যাত্রা করলেন, তখন সাথী লোকজন একটি উপত্যকায় পৌঁছে এই বলে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর দিতে শুরু করল-আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। কারণ তোমরা এমন কোন সত্তাকে ডাকছ না যিনি বধির বা অনুপস্থিত। বরং তোমরা তো ডাকছ সেই সত্তাকে যিনি শ্রবণকারী ও অতি নিকটে অবস্থানকারী, যিনি তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। [আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন] আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাওয়ারীর পেছনে ছিলাম। তিনি আমাকে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলতে শুনে বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কায়স! আমি বললাম, আমি উপস্থিত হে আল্লাহ্র রাসূল! তিনি বললেন, আমি তোমাকে এমন একটি কথা শিখিয়ে দেব কি যা জান্নাতের ভাণ্ডারসমূহের মধ্যে একটি ভাণ্ডার? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল। আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা হল ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৯ হাদীস নং ৪২০২; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৩ হাঃ ২৭০৪) আবু বাকর সিদ্দিক (রাঃ) একদা তিনি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আরয করলেন, আমাকে সলাতে পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন, এ দু’আটি বলবে- “হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অধিক জুলুম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (বুখারী পর্ব ১০ অধ্যায় ১৪৯ হাদীস নং ৮৩৪; মুসলিম অধ্যায় ১৩, ২৭০৫) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘আম্র (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে বললেন, হে আল্লাহ্র! আমাকে এমন একটি দু‘আ শিখিয়ে দিন যা দিয়ে আমি আমার সলাতে দু‘আ করতে পারি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি বল, ...(আরবী).... হে আল্লাহ্! আমি আমার নফসের ওপর অত্যধিক যুলুম করেছি। অথচ আপনি ব্যতীত আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করার কেউই নেই। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সম্পূর্ণভাবে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয়ই আপনিই অধিক ক্ষমাপরায়ণ ও দয়াবান। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৭৩৮৭-৭৩৮৮; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৩, হাঃ ২৭০৫)
ফিতনা ইত্যাদির ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া।
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু‘আ পাঠ করতেনঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে দোযখের সংকট, দোযখের আযাব, ক্ববরের সংকট, ক্ববরের আযাব, প্রাচুর্যের ফিত্-না ও অভাবের ফিত্-না থেকে পানাহ চাই। হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধুয়ে দিন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে সাফ করে দিন, যেভাবে আপনি সাদা কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দূরে রেখেছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পানাহ চাই অলসতা, গুনাহ এবং ঋণ থেকে। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৬৩৭৭; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৪ হাঃ ৫৮৯)
অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাওয়া।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই বলতেনঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় চাইছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা এবং অতিরিক্ত বার্ধক্য থেকে। আরও আশ্রয় চাইছি, ক্ববরের আযাব থেকে। আর আশ্রয় চাইছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ৬৩৬৭; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৫ হাঃ ২৭০৬)
খারাপ পরিণতি ও ধ্বংসের মুখে পতিত হওয়া ইত্যাদি থেকে আল্লাহ্র নিকট আশ্রয় গ্রহণ।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বালা মুসীবতের কঠোরতা, দুর্ভাগ্যে নিপতিত হওয়া, নিয়মিত অশুভ পরিণাম এবং দুশমনের খুশী হওয়া থেকে পানাহ চাইলেন। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ২৮ হাদীস নং ৬৩৪৭; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৬, হাঃ ২৭০৭)
শয্যাগ্রহণ ও ঘুমানোর সময় কী বলবে?
বারাআ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন সালাতের উযূর মতো উযূ করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে বলবেঃ .......... আরবী .......... “হে আল্লাহ! আমার জীবন তোমার নিকট সমর্পণ করলাম। আমার সকল কাজ তোমার নিকট অর্পণ করলাম এবং আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করলাম তোমার প্রতি আগ্রহ ও ভয় নিয়ে। তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। হে আল্লাহ! আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের উপর এবং তোমার প্রেরিত নাবীর প্রতি।” অতঃপর যদি সে রাতেই তোমার মৃত্যু হয় তবে ইসলামের উপর তোমার মৃত্যু হবে। এ কথাগুলো (এ দু‘আটিকে) তোমার সর্বশেষ কথায় পরিণত কর। তিনি বলেন, ‘আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথাগুলো পুনরায় শুনালাম। যখন .......... আরবী .......... বললাম, তখন তিনি বললেনঃ না; বরং .......... আরবী ..........বল। (বুখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৭৫ হাদীস নং ২৪৭; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৭১০) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করতে যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গীর ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অবর্তমানে কষ্টদায়ক কোন কিছু রয়েছে কিনা। তারপর পড়বেঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনারই নামে আমার দেহখানা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠবো। যদি আপনি ইতোমধ্যে আমার জান কবয করে নেন; তা হলে, তার উপর দয়া করবেন। আর যদি তা আমাকে ফিরিয়ে দেন, তবে তাকে এমনভাবে হিফাযাত করবেন, যেভাবে আপনি নেককারদের হিফাযত করে থাকেন।” (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ৬৩২০; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৭, হাঃ ২৭১৪)
যে সমস্ত খারাপ কাজ কেউ করেছে বা করেনি তা থেকে আশ্রয় চাওয়া।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলে দু‘আ করতেনঃ আমি আপনার ইযযতের আশ্রয় চাচ্ছি, আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। আর আপনার কোন মৃত্যু নেই। অথচ জ্বিন ও মানুষ সবই মরণশীল। (বুখারী পর্ব ৯৭ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৭৩৮৩; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৭১৭) আবূ মূসা (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ দু‘আ করতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার অনিচ্ছাকৃত গুনাহ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের সকল বাড়াবাড়ি এবং আমার যেসব গুনাহ আপনি আমার চেয়ে অধিক জানেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করে দিন আমার ভুল-ত্রুটি আমার ইচ্ছাকৃত গুনাহ ও আমার অজ্ঞতা এবং আমার উপহাসমূলক গুনাহ আর এ রকম গুনাহ যা আমার মধ্যে আছে। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন; যেসব গুনাহ আমি আগে করেছি। আপনিই আগে বাড়ান আপনিই পশ্চাৎ ফেলেন এবং আপনিই সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ৬০ হাদীস নং ৬৩৯৮; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৭১৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খন্দকের যুদ্ধের সময়) বলতেন, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই তাঁর বাহিনীকে মর্যাদাবান করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করেছেন। এরপর শত্রু ভয় বলতে আর কিছুই থাকল না। (বুখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১১৪; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৮, হাঃ ২৭২৪)
সকালে ও ঘুমানোর সময় তাসবীহ পড়া।
‘আলী (রাঃ) ফাতিমাহ (রাঃ) যাঁতা চালানোর কষ্ট সম্পর্কে একদা অভিযোগ প্রকাশ করলেন। এপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী আসল। ফাতিমাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে, ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট তাঁর কথা বলে আসলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ঘরে আসলেন তখন ফাতিমাহ (রাঃ)-এর আগমন ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারে ‘আয়িশাহ (রাঃ) তাঁকে জানালেন। (‘আলী (রাঃ) বলেন) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলেন, যখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়েছিলাম। তাঁকে দেখে আমি উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় থাক এবং তিনি আমাদের মাঝে এমনভাবে বসে পড়লেন যে আমি তাঁর দু’পায়ের শীতলতা আমার বক্ষে অনুভব করলাম। তিনি বললেন, তোমরা যা চেয়েছিলে আমি কি তার চেয়েও উত্তম জিনিস শিক্ষা দিব না? তোমরা যখন ঘুমানোর উদ্দেশে বিছানায় যাবে তখন চৌত্রিশ বার “আল্লাহ্ আকবার” তেত্রিশবার “সুবহানাল্লাহ”, তেত্রিশবার “আল হামদুলিল্লাহ” পড়ে নিবে। এটা খাদিম অপেক্ষা অনেক উত্তম। (বুখারী পর্ব ৬২ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৩৭০৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ১৯ হাঃ ২৭২৭)
মোরগের ডাকের সময় দু‘আ বলা মুস্তাহাব।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন তোমরা আল্লাহর নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করে দু‘আ কর। কেননা এ মোরগ ফেরেশতাদের দেখে আর যখন গাধার আওয়াজ শুনবে তখন শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে, কেননা এ গাধাটি শয়তান দেখেছে।’ (বুখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩৩০৩; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ২০ হাঃ ২৭২৯)
বিপদের দু‘আ।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সংকটের সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু‘আ পড়তেনঃ “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, যিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও অশেষ ধৈর্যশীল আরশে আযীমের প্রভু। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই। আসমান যমীনের প্রতিপালক ও সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।” (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ২৭ হাদীস নং ৬৩৪৬; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ২১, হাঃ ২৭৩০)
দু‘আকারী যদি ‘আমি দু‘আ করেছি কিন্তু আমার দু‘আ কবূল হয়নি, বলে তাড়াহুড়া না করে তাহলে তার দু‘আ কবূল করা হয়
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেকের দু‘আ কবূল হয়ে থাকে যদি সে তাড়াহুড়া না করে। আর বলে যে, আমি দু‘আ করলাম। কিন্তু আমার দু‘আ তো কবূল হলো না। (বুখারী পর্ব ৮০ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৬৩৪০; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ২৪, হাঃ ২৭৩৫)
জান্নাতের অধিক অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামের অধিক অধিবাসী মহিলা এবং মহিলার ফিতনার বর্ণনা।
উসামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশই গরীব-মিসকীন; অথচ ধনবানগণ আটকা পড়ে আছে। অন্যদিকে জাহান্নামীদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি জাহান্নামের প্রবেশ দ্বারে দাঁড়ালাম এবং দেখলাম যে, অধিকাংশই নারী। [বূখারী পর্ব ৬৭, অধ্যায় ৮৮ হাদীস নং ৫১৯৬, ৬৫৪৭; মুসলিম ৪৮ হাঃ ২৭৩৬) উসামাহ ইব্নু যায়দ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পুরুষের ওপরে মেয়েলোকের অপেক্ষা অন্য কোন বড় ফিত্-না আমি রেখে গেলাম না। (বুখারী পর্ব ৬৭ অধ্যায় ১৭ হাদীস নং ৫০৯৬; মুসলিম ২৬, হাঃ ২৭৪০)
তিন গুহাবাসীর ঘটনা ও সৎকর্ম দ্বারা ওয়াসীলা বানানো।
ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেকজনকে বলল; তোমরা যে সব ‘আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলের ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দু‘আ কর। তাদের একজন বলল, ইয়া আল্লাহ! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতা-মাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একরাত্রে আমি আটকা পড়ে যাই। তারপর আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চীৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতা-মাতার ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ! তুমি যদি জান তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম তা হলে তুমি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল। আরেকজন বলল, ইয়া আল্লাহ! তুমি জান যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এত ভালবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালবেসে থাকে। সে বলল, তুমি আমা হতে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দীনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলে “আল্লাহকে ভয় কর”। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না। এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ) তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের হতে (গুহার মুখের) দু’-তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল। অপরজন বলল, হে আল্লাহ! তুমি জান যে, এক ফারাক (পরিমাণ) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি তাকে তা দিতে গেলে সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু ক্রয় করি এবং রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল, তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ! তুমি যদি জান আমি তা তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশে করেছি, তবে আমাদের হতে (গুহার মুখ) উন্মুক্ত করে দাও। তখন তাদের হতে গুহার মুখ উন্মুক্ত হয়ে গেল। (বুখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৯৮ হাদীস নং ২২১৫; মুসলিম ৪৮ অধ্যায় ২৭, হাঃ ২৭৪৩)