5. মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা
মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা
আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন, মাসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোন্টি? তিনি বললেন, মাসজিদে আক্সা। আমি বললাম, উভয় মাসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সলাতের সময় হবে, সেখানেই সলাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফাযীলাত নিহিত রয়েছে। (বুখারী পর্ব ৬০ : /১০ হাঃ ৩৩৬৬, মুসলিম হাঃ) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়। (২) সমস্ত যমীন আমার জন্যে সলাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সলাতের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সলাত আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্যে গনীমত হালাল করা হয়েছে। (৪) অন্যান্য নবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। (৫) আমাকে সার্বজনীন সুপারিশের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৫৬ হাঃ ৪৩৮, মুসলিম হাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তিসহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (বুখারী পর্ব ৫৬ : /১২২ হাঃ ২৯৭৭, মুসলিম ৫/৫ হাঃ ৫২৩)
মাসজিদে নাববী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্মাণ।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় পৌঁছে প্রথমে মাদীনার উচ্চ এলাকার অবস্থিত বানূ ‘আমর ইব্নু ‘আওফ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন তাঁর বাহনের উপর, আবূ বকর (রাঃ) সে বাহনেই তাঁর পেছনে আর বানূ নাজ্জারের দল তাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবূ আয়্যূব আনসারী (রাঃ)-র ঘরের সাহানে অবতরণ করলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেখানেই সলাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই সলাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড়েও সলাত আদায় করতেন। এখন তিনি মাসজিদ তৈরি করার নির্দেশ দেন। তিনি বানূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বানূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ হতে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ না, আল্লাহ্র কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহ্র নিকটই আশা করি। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুর গাছ। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হলো, অতঃপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে দেয়া হলো, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো, অতঃপর মাসজিদের কিবলায় সারিবদ্ধ করে রাখা হলো এবং তার দু’ পাশে পাথর বসানো হলো। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেনঃ “ইয়া আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত (প্রকৃত) আর কোন কল্যাণ নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা কর।” (বুখারী পর্ব ৮ : /৪৮ হাঃ ৪২৮, মুসলিম পর্ব ৫ :/১ হাঃ ৫২৪)
বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কা’বার দিকে ক্বিবলা পরিবর্তন।
বারাআ’ ইব্নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল মুকাদ্দাসমুখী হয়ে ষোল বা সতের মাস সলাত আদায় করেছেন। আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার দিকে কিবলাহ করা পছন্দ করতেন। মহান আল্লাহ নাযিল করেনঃ “আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানোকে আমি অবশ্য লক্ষ্য করছি”- (আল-বাক্বারাহঃ ১৪৪)। অতঃপর তিনি কা’বার দিকে মুখ করেন। আর নির্বোধ লোকেরা- তারা ইয়াহুদী, বলতো, “তারা এ যাবত যে কিবলাহ অনুসরণ করে আসছিলো, তা হতে কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল? বলুনঃ (হে নবী) পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহ্রই। তিনি যাকে ইচ্ছে সঠিক পথে পরিচালিত করেন”- (আল-বাক্বারাহঃ ১৪২)। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক ব্যক্তি সলাত আদায় করলেন এবং বেরিয়ে গেলেন। তিনি আসরের সলাতের সময় আনসারগণের এক গোত্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ (তিনি নিজেই) সাক্ষী যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে তিনি সলাত আদায় করেছেন, আর তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার দিকে মুখ করেছেন। তখন সে গোত্রের লোকজন ঘুরে কা’বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩১ হাঃ ৩৯৯, মুসলিম পর্ব ৫ : /২ হাঃ ৫২৫) বারাআ (ইবনু ‘আযিব) (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ষোল অথবা সতের মাস ব্যাপী (মাদীনাহ্তে) বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করেছি। অতঃপর আল্লাহ তাঁকে কা’বার দিকে ফিরিয়ে দেন। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /১৮ হাঃ ৪৪৯২, মুসলিম পর্ব ৫ : /২ হাঃ ৫২৫) ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদা লোকেরা কুবা নামক স্থানে ফাজ্রের সলাত আদায় করছিলেন। এমন সময় তাদের নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন যে, এ রাতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ হয়েছে। আর তাঁকে কা’বামুখী হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজেই তোমারা কা’বার দিকে মুখ কর। তখন তাঁদের চেহারা ছিল শামের (বায়তুল মুকাদ্দাসের) দিকে। একথা শুনে তাঁরা কা’বার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩২ হাঃ ৪০৩, মুসলিম ৫/২, হাঃ ৫২৬)
ক্ববরের উপর মাসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ।
’আয়িশাহ (রাঃ) উম্মু হাবীবাহ ও উম্মু সালামাহ (রাঃ) হাবশায় তাঁদের দেখা একটা গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বর্ণনা করলেন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মাসজিদ বানাতো। আর তার ভিতরে ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামাত দিবসে তারাই আল্লাহ্র নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হবে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৪৮ হাঃ ৪২৭, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫২৮) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যে রোগে মৃত্যু হয়েছিল, সে রোগাবস্থায় তিনি বলেছিলেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারা সম্প্রদায়ের প্রতি আল্লাহ্র অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের ক্ববরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, সে আশঙ্কা না থাকলে তাঁর (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) ক্ববরকে উন্মুক্ত রাখা হত, কিন্তু আমি আশঙ্কা করি যে, (উন্মুক্ত রাখা হলে) একে মাসজিদে পরিণত করা হবে। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৬২ হাঃ ১৩৩০, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫২৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইয়াহূদীদের ধ্বংস করুন। কেননা তারা তাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৫৫ হাঃ ৪৩৭, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫৩০) ’আয়িশাহ (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁরা উভয়ে বলেছেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহ্র অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মাসজিদে পরিণত করেছে। (এ ব’লে) তারা যে (বিদ’আতী) কার্যকলাপ করত তা হতে তিনি সতর্ক করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৫৫ হাঃ ৪৩৬, মুসলিম ৫/৩, হাঃ ৫৩১)
মাসজিদ নির্মাণের ফাযীলাত এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান।
‘উবায়দুল্লাহ খাওলানী (রহঃ) তিনি ‘উসমান ইব্নু ‘আফ্ফান (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, তিনি যখন মাসজিদে নববী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেনঃ তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মাসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র (রহঃ) বলেনঃ আমার মনে হয় রাবী ‘আসিম (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৬৫ হাঃ ৪৫০, মুসলিম ৫/৪, হাঃ ৫৩৩)
রুকূ’তে গিয়ে দু’ হাত হাঁটুতে রাখার নির্দেশ এবং তাত্বীক (দু’হাত মিলিয়ে দু’ হাঁটুর মধ্যে রাখা) মানসুখ হওয়া।
মুস’আব ইব্নু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলাম। এবং (রুকু’র সময়) দু’ হাত জোড় করে উভয় উরুর মাঝে রাখলাম। আমার পিতা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, পূর্বে আমরা এরূপ করতাম; পরে আমাদেরকে এ হতে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাত হাঁটুর উপর রাখার আদেশ করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ১০ : /১১৮ হাঃ ৭৯০, মুসলিম ৫/৫, হাঃ ৫৩৫)
সলাতে কথা বলা নিষিদ্ধ এবং তা (কথা বলা)র বৈধতা রহিত হওয়া প্রসঙ্গে।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সলাতরত অবস্থায় সালাম করতাম; তিনি আমাদের সালামের জওয়াব দিতেন। পরে যখন আমরা নাজাশীর নিকট হতে ফিরে এলাম, তখন তাঁকে (সালাত আদায়রত অবস্থায়) সালাম করলে তিনি আমাদের সালামের জবাব দিলেন না এবং পরে ইরশাদ করলেনঃ সলাতে অনেক ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা রয়েছে। (বুখারী পর্ব ২১: /২ হাঃ ১১৯৯, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৩৮) যায়দ ইব্নু আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে সলাতের মধ্যে কথা বলতাম। আমাদের যে কেউ তার সঙ্গীর সাথে নিজ দরকারী বিষয়ে কথা বলত। অবশেষে এ আয়াত নাযিল হল- “তোমরা তোমাদের সলাতসমূহের সংরক্ষণ কর ও নিয়ানুমবর্তিতা রক্ষা কর; বিশেষ মধ্যবর্তী (আসর) সলাতে, আর তোমরা (সলাতে) আল্লাহ্র উদ্দেশে একাগ্রচিত্ত হও”- (আল-বাক্বারাহ্ঃ ২৩৮। তারপর থেকে আমরা সলাতে নীরব থাকতে আদিষ্ট হলাম। (বুখারী পর্ব ৬৫ : /৪৩ হাঃ ১২০০, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৩৯) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর একটি কাজে পাঠালেন, আমি গেলাম এবং কাজটি সেরে ফিরে এলাম। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলাম। তিনি জবাব দিলেন না। এতে আমার মনে এমন খটকা লাগল যা আল্লাহ্ই ভাল জানেন। আমি মনে মনে বললাম, সম্ভবত আমি বিলম্বে আসার কারণে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম; তিনি জওয়াব দিলেন না। ফলে আমার মনে প্রথম বারের চেয়েও অধিক খটকা লাগল। (সলাত শেষে) আবার আমি তাঁকে সালাম করলাম। এবার তিনি সালামের জওয়াব দিলেন এবং বললেনঃ সলাতে ছিলাম ব’লে তোমার সালামের জওয়াব দিতে পারিনি। তিনি তখন তাঁর বাহনের পিঠে কিব্লা হতে ভিন্নমুখী ছিলেন। (বুখারী পর্ব ২১ : /১৫ হাঃ ১২১৭, মুসলিম ৫/৭, হাঃ ৫৪০)
সলাতের মধ্যে শয়তানকে অভিসম্পাত করা বৈধ।
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গত রাতে একটা অবাধ্য জিন হঠাৎ আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যাতে সে আমার সলাতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, তাকে মাসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোর বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (‘আ)-এর এ উক্তি আমার স্মরণ হলো, “হে প্রভু! আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়”- (সূরা সোয়াদঃ ৩৫)। (বর্ণনাকারী) রাওহ্ (রহঃ) বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে শয়তানটিকে অপমানিত করে ছেড়ে দিলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৭৫ হাঃ ৪৬১, মুসলিম ৫/৮, হাঃ ৫৪১)
সলাত আদায়কালে শিশুদেরকে বহন করা বৈধ।
আবূ কাতাদাহ্ আনসারী (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মেয়ে যয়নবের গর্ভজাত ও আবুল আস ইব্নু রাবী’আহ ইব্নু ‘আবদ শামস (রহঃ)-এর ঔরসজাত কন্যা উমামাহ (রাঃ)-কে কাঁধে নিয়ে সলাত আদায় করতেন। তিনি যখন সাজদাহ্য় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন আর যখন দাঁড়াতেন তখন তাকে তুলে নিতেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /১০৬ হাঃ ৫১৬, মুসলিম ৫/৯, হাঃ ৫৪৩)
সলাতরত অবস্থায় দু’এক পা আগ পিছ হওয়া বৈধ।
সাহ্ল ইবনু সা’দ আস সা’ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হাযিম ইব্নু দীনার (রাঃ) বলেছেন যে, (একদিন) কিছু লোক সাহ্ল ইব্নু সা’দ সাঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কোন্ কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের অমুক মহিলার [বর্ণনাকারী বলেন, সাহ্ল (রাঃ) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন] নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। অতঃপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদীনা হতে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবা’র ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি দেখেছি, এর উপর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করেছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকূ’ করেছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বরের গোড়ায় সাজদাহ্ করেছেন এবং (এ সাজদাহ্) পুনরায় করেছেন, অতঃপর সলাত শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার অনুসরণ করতে এবং আমার সলাত শিখে নিতে পার। (বুখারী পর্ব ১১ : /২৬ হাঃ ৯১৭, মুসলিম ৫/১০ হাঃ ৫৪৪৪)
সলাতাবস্থায় কোমরে হাত রাখা মাকরূহ (অপছন্দনীয়)
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোমরে হাত রেখে সলাত আদায় করতে লোকদের নিষেধ করা হয়েছে। (বুখারী পর্ব ২১ : /১৭ হাঃ ১২২০, মুসলিম ৫/১১, হাঃ ৫৪৫)
সলাতে কঙ্কর স্পর্শ করা এবং মাটি সমান করা অপছন্দনীয়।
মু’আইকিব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, যে সাজদাহ্র স্থান হতে মাটি সমান করে। তিনি বলেন, যদি তোমার একান্তই করতে হয়, তবে একবার। (বুখারী পর্ব ২১ : /৮ হাঃ ১২০৭, মুসলিম ৫/১২, হাঃ ৫৪৬)
সলাতে বা সলাতের বাইরে মাসজিদে থু থু ফেলা নিষিদ্ধ।
‘আবদুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলাহর দিকের দেয়ালে থুথু দেখে তা পরিষ্কার করে দিলেন। অতঃপর লোকদের দিকে ফিরে বললেনঃ যখন তোমাদের কেউ সলাত আদায় করে সে যেন তার সামনের দিকে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন সলাত আদায় করে তখন তার সামনের দিকে আল্লাহ তা’আলা থাকেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩৩ হাঃ ৪০৬, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৭) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মাসজিদের কিবলাহর দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। অতঃপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুথু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলতে বললেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩৬ হাঃ ৪১৪, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৮) আবূ হুরায়রাহ্ ও আবূ সা’ঈদ (খুদরী) (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের দেয়ালে কফ দেখে কাঁকর নিয়ে তা মুছে ফেললেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যেন সামনের দিকে অথবা ডান দিকে কফ না ফেলে, বরং সে যেন তা তার বাম দিকে অথবা তার বাম পায়ের নীচে ফেলে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩৪ হাঃ ৪০৮, ৪০৯, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৮) উম্মুল ‘মুমিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলাহর দিকের দেয়ালে নাকের শ্লেষ্মা, থুথু কিংবা কফ দেখলেন এবং তা পরিষ্কার করলেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /২৩ হাঃ ৪০৭, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৪৯) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন যখন সলাতে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুথু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নীচে ফেলে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩৬ হাঃ ৪১৩, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৫১) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারা (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেয়া (মুছে ফেলা)। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩৭ হাঃ ৪১৫, মুসলিম ৫/১৩, হাঃ ৫৫২)
জুতা পরে সলাত আদায় করা বৈধ।
সা’ঈদ ইব্নু ইয়াযীদ আল-আয্দী (রহঃ) আমি আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তাঁর না’লাইন (চপ্পল) পরে সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, হাঁ। (বুখারী পর্ব ৮ : /২৪ হাঃ ৩৮৬, মুসলিম ৫/১৪, হাঃ ৫৫৫)
নক্শা বিশিষ্ট কাপড় পরে সলাত অপছন্দনীয়।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি নক্শা করা চাদর পরে সলাত আদায় করলেন। সলাতের পরে তিনি বললেনঃ এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে নিবিষ্ট করে রেখেছিল। এটি আবূ জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে একটি ‘আম্বজানিয়্যাহ’ (নকশাবিহীন মোটা কাপড়) নিয়ে এসো। (বুখারী পর্ব ১০: /৯৩ হাঃ ৭৫২, মুসলিম ৫/১৫, হাঃ ৫৫৬)
খাবার উপস্থিত হলে সলাত অপছন্দনীয়।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি খাবার উপস্থিত হয়ে যায় আর সলাতের ইকামাত দেয়া হয়, তাহলে প্রথমে রাতের খাবার খাবে। (বুখারী পর্ব ৭০: /৫৮ হাঃ ৫৪৬৫, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৭) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিকেলের খাবার পরিবেশন করা হলে মাগরিবের সলাতের পূর্বে তা খেয়ে নিবে খাওয়া রেখে সলাতে তাড়াহুড়া করবে না। (বুখারী পর্ব ১০: /৪২ হাঃ ৬৭২, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন রাতের খাবার উপস্থিত করা হয়, আর সে সময় সলাতের ইক্বামাত হয়ে যায়, তখন প্রথমে খাবার খেয়ে নাও। (বুখারী পর্ব ১০: /৪২ হাঃ ৬৭১, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৬০) ইব্নু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন খাবার খেতে থাক, তখন সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেলেও খাওয়া শেষ না করে তাড়াহুড়া করবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, আমাকে ইব্রাহীম ইব্নু মুনযির (রহঃ) এ হাদীসটি ওয়াহ্ব ইব্নু উসমান (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন এবং ওয়াহ্ব হলেন মাদীনাবাসী। (বুখারী পর্ব ১০ : /৪২ হাঃ ৬৭৪, মুসলিম ৫/১৬, হাঃ ৫৫৯)
রসুন, পিঁয়াজ অথবা ঐ জাতীয় জিনিস খেয়ে মাসজিদে গমন নিষিদ্ধ।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধের সময় বলেন, যে ব্যক্তি এই জাতীয় বৃক্ষ হতে অর্থাৎ কাঁচা রসুন খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের মাসজিদে না আসে। ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি এ জাতীয় গাছ হতে খায়, তিনি এ দ্বারা রসুন বুঝিয়েছেন, সে যেন আমাদের মাসজিদে না আসে। (রাবী আতা (রহঃ) বলেন) আমি জাবির (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বারা কী বুঝিয়েছেন (জাবির (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বারা কাঁচা রসুন বুঝিয়েছেন এবং মাখ্লাদ ইব্নু ইয়াযীদ (রহঃ) ইব্নু জুরাইজ (রহঃ) হতে দুর্গন্ধযুক্ত হবার কথা উল্লেখ করেছেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৩, মুসলিম ৫/১৭ হাঃ ৫৬১) আবদুল ‘আযীয (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রসুন খাওয়া সম্পর্কে কী বলতে শুনেছেন? তখন আনাস (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ জাতীয় গাছ হতে খায় সে যেন অবশ্যই আমাদের নিকট না আসে এবং আমাদের সাথে সলাত আদায় না করে। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৬, মুসলিম ৫/১৭, হাঃ ৫৬৩) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রসুন বা পিঁয়াজ খায় সে যেন আমাদের হতে দূরে থাকে অথবা বলেছেন, সে যেন আমাদের মাসজিদ হতে দূরে থাকে আর নিজ ঘরে বসে থাকে। (উক্ত সনদে আরো বর্ণিত আছে যে) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি পাত্র যার মধ্যে শাক-স্বব্জী ছিল, আনা হলো। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গন্ধ পেলেন এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, তখন তাঁকে সে পাত্রে রক্ষিত শাক-সব্জী সম্পর্কে অবহিত করা হলো, তখন একজন সাহাবী (আবূ আইয়ুব (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, তাঁর নিকট এগুলো পৌঁছিয়ে দাও। কিন্তু তিনি তা খেতে অপছন্দ মনে করবেন, এ দেখে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি খাও। আমি যাঁর সাথে গোপনে আলাপ করি তাঁর সাথে তুমি আলাপ কর না (ফেরেশ্তার সাথে আমার আলাপ হয়, তাঁরা দুর্গন্ধকে অপছন্দ করেন)। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৬০ হাঃ ৮৫৫, মুসলিম ৫/১৭, হাঃ ৫৬৪)
সলাতে ভুল-ভ্রান্তি হওয়া এবং তার জন্য সাজদাহ।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন সলাতের জন্য আযান দেয়া হয়, তখন শয়তান পিঠ ফিরিয়ে পালায় যাতে আযান শুনতে না পায় আর তার পশ্চাদ-বায়ু সশব্দে নির্গত হতে থাকে। আযান শেষ হয়ে গেলে সে এগিয়ে আসে। আবার সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হলে সে পিঠ ফিরিয়ে পালায়। ইক্বামাত শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। এমনকি সে সলাত আদায়রত ব্যক্তির মনে ওয়াস্ওয়াসা সৃষ্টি করে এবং বলতে থাকে, অমুক অমুক বিষয় স্মরণ কর, যা তার স্মরণে ছিল না। এভাবে সে ব্যক্তি কত রাক’আত সলাত আদায় করেছে তা স্মরণ করতে পারে না। তাই, তোমাদের কেউ তিন রাক’আত বা চার রাক’আত সলাত আদায় করেছে, তা মনে রাখতে না পারলে বসা অবস্থায় দু’টি সাজদাহ্ করবে। (বুখারী পর্ব ২২ : /৬ হাঃ ১২৩১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৩৮৯) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু বুহায়নাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সলাতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’রাক’আত আদায় করে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। মুসল্লীগণ তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন তাঁর সলাত সমাপ্ত করার সময় হলো এবং আমরা তাঁর সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি সালাম ফিরানোর পূর্বে তাক্বীর বলে বসে বসেই দু’টি সাজদাহ্ করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। (বুখারী পর্ব ২২ : /১ হাঃ ১২২৪, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭০) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন। (রাবী ইব্রাহীম (রহঃ) বলেনঃ আমার জানা নেই, তিনি বেশী করেছেন বা কম করেছেন।) সালাম ফিরানোর পর তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহ্র রাসূল! সলাতের মধ্যে নতুন কিছু হয়েছে কি? তিনি বললেনঃ তা কী? তাঁরা বললেনঃ আপনি তো এরূপ এরূপ সলাত আদায় করলেন। তিনি তখন তাঁর দু’পা ঘুরিয়ে কিবলাহমুখী হলেন। আর দু’টি সাজদাহ আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। পরে তিনি আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ যদি সলাত সম্পর্কে নতুন কিছু হতো, তবে অবশ্যই তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুল করে থাক, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। আমি কোন সময় ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তোমাদের কেউ সলাত সম্বন্ধে সন্দেহে পতিত হলে সে যেন নিঃসন্দেহ হবার চেষ্টা করে এবং সে অনুযায়ী সলাত পূর্ণ করে। অতঃপর যেন সালাম ফিরিয়ে দু’টি সাজদাহ দেয়। (বুখারী পর্ব ৮ : /৩১ হাঃ ৪০১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭২) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে যুহরের সলাত দু’রাক’আত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর সাজদাহর জায়গার সামনে রাখা একটা কাঠের দিকে অগ্রসর হয়ে তার উপর তাঁর এক হাত রাখলেন। সেদিন লোকেদের মাঝে আবূ বক্র, ‘উমার (রাঃ)-ও হাযির ছিলেন। তাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলেন। কিন্তু তাড়াহুড়া করে (কিছু) লোক বেরিয়ে গিয়ে বলতে লাগলঃ সলাত খাট করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছিল, যাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যুল্ ইয়াদাইন’ (দু’ হাতাওয়ালা অর্থাৎ লম্বা হাতাওয়ালা) বলে ডাকতেন, সে বললঃ হে আল্লাহ্র নাবী! আপনি কি ভুল করেছেন, না সলাত ছোট করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলে যাইনি এবং (সলাত) ছোটও করা হয়নি। তারা বললেনঃ বরং আপনিই ভুলে গেছেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! তখন তিনি বললেনঃ ‘যুল্ ইয়াদাইন’ ঠিকই বলেছে। অতঃপর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন ও সালাম ফিরালেন। এরপর ‘তাকবীর’ বলে আগের সাজদাহ্র মত অথবা তার চেয়ে দীর্ঘ সাজদাহ করলেন। অতঃপর আবার মাথা তুললেন এবং তাকবীর বললেন এবং আগের সাজদাহর ন্যায় অথবা তার চেয়েও দীর্ঘ সাজদাহ করলেন। এরপর মাথা উঠালেন এবং তাকবীর বললেন। (বুখারী পর্ব ৭৮ : /৪৫ হাঃ ৬০৫১, মুসলিম ৫/১৯, হাঃ ৫৭৩)
কুরআন তিলাওয়াতের সাজদাহ্।
ইব্নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমাদের সামনে এমন এক সূরাহ তিলাওয়াত করলেন, যাতে সাজদাহ্র আয়াত রয়েছে। তাই তিনি সাজদাহ্ করলেন এবং আমরাও সাজদাহ্ করলাম। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, আমাদের কেউ কেউ কপাল রাখার জায়গা পাচ্ছিলেন না। (বুখারী পর্ব ১৭ : /৮ হাঃ ১০৭৫, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৫) ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহয় সূরাহ আন্-নাজ্ম তিলাওয়াত করেন। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করেন এবং একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া তাঁর সঙ্গে সবাই সাজদাহ্ করেন। বৃদ্ধ লোকটি এক মুঠো কঙ্কর বা মাটি হাতে নিয়ে তার কপাল পর্যন্ত উঠিয়ে বলল, আমার জন্য এ যথেষ্ট। আমি পরবর্তী যমানায় দেখেছি যে, সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে। (বুখারী পর্ব ১৭ : /১ হাঃ ১০৬৭, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৬) যায়দ ইব্নু সাবিত (রাঃ) ‘আতা ইবনু ইয়াসার যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তার ধারণা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সূরা وَالنَّجْمِ (ওয়ান্ নাজ্ম) তিলাওয়াত করা হল অথচ এতে তিনি সাজদাহ্ করেননি। (বুখারী পর্ব ১৭ : /৬ হাঃ ১০৭২, মুসলিম ৫/ ২০০, হাঃ ৫৭৭) আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর সঙ্গে ‘ইশার সলাত আদায় করলাম। তিনি إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ সূরাটি তিলাওয়াত করে সাজদাহ্ করলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এ সাজদাহ্ কেন? তিনি বলেন, আমি আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে এ সূরায় সাজদাহ্ করেছি, তাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমি এতে সাজদাহ্ করব। (বুখারী পর্ব ১০ : /১০১ হাঃ ৭৬৮, মুসলিম ৫/২০, হাঃ ৫৭৮)
সলাতের পর পঠিতব্য যিক্র।
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, তাক্বীর শুনে আমি বুঝতে পারতাম সলাত শেষ হয়েছে। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সুফইয়ান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবূ মা’বাদ (রহঃ) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাসসমূহের মধ্যে অধিক সত্যবাদী দাস ছিলেন। ‘আলী (রহঃ) বলেন, তার নাম ছিল নাফিয। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪২, মুসলিম ৫/২৩, হাঃ ৫৮৪)
ক্ববরের আযাব বা শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা বৈধ হওয়া।
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমার নিকট মাদীনাহ্র দু’জন ইয়াহূদী বৃদ্ধা মহিলা এলেন। তাঁরা আমাকে বললেন যে, ক্ববরবাসীদের তাদের ক্ববরে ‘আযাব দেয়া হয়ে থাকে। তখন আমি তাদের এ কথা মিথ্যা বলে অভিহিত করলাম। আমার বিবেক তাঁদের কথাটিকে সত্য বলে মানতে চাইল না। তাঁরা দু’জন বেরিয়ে গেলেন। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন। আমি তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার নিকট দু’জন বৃদ্ধা এসেছিলেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাঁদের কথা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তারা দু’জন সত্যই বলেছে। নিশ্চয়ই ক্ববরবাসীদের এমন ‘আযাব দেয়া হয়ে থাকে, যা সকল চতুষ্পদ জীবজন্তু শুনে থাকে। এরপর থেকে আমি তাঁকে সর্বদা প্রত্যেক সলাতে ক্ববরের ‘আযাব থেকে আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করতে দেখেছি। (বুখারী পর্ব ৮০ : /৩৭ হাঃ ৬৩৬৬, মুসলিম ৫/২৩, হাঃ ৫৮৬)
সলাতে যে সকল জিনিস থেকে আশ্রয় চাইতে হবে।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর সলাতে দাজ্জালের ফিতনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন করতে শুনেছি। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৪৯ হাঃ ৮৩৩, মুসলিম ৫/২৫, হাঃ ৫৮৭) ‘উরওয়াহ ইব্নু যুবাইর (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতে এ বলে দু’আ করতেনঃ “কবরের ‘আযাব হতে, মাসীহে দাজ্জালের ফিত্নাহ হতে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিত্নাহ হতে ইয়া আল্লাহ্! আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ্! গুনাহ্ ও ঋণগ্রস্ততা হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।” তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ যখন কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ও’য়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৪৯ হাঃ ৮৩২, মুসলিম পর্ব ৫ :/২৫, হাঃ ৫৮৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করতেন, হে আল্লাহ্! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি ক্ববরের শাস্তি হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের ফিত্নাহ হতে এবং মাসীহ্ দাজ্জাল এর ফিত্নাহ হতে। (বুখারী পর্ব ২৩ : /৮৮ হাঃ ১৩৭৭, মুসলিম ৫/২৫, হাঃ ৫৮৮)
সলাত আদায়ের পর দু’আ পাঠ মুস্তাহাব এবং তার পদ্ধতি।
ওয়ার্রাদ (রাঃ) তিনি বলেন, মুগীরা ইব্নু শু’বা (রাঃ) আমাকে দিয়ে মু’আবিয়াহ (রাঃ)-কে (এ মর্মে) একখানা পত্র লিখালেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ফার্য সলাতের পর বলতেনঃ “এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য, তিনি সব কিছুই উপরই ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ্! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার নিকট (সৎকাজ ভিন্ন) কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।” (বুখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪৪, মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দরিদ্রলোকেরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের দ্বারা উচ্চমর্যাদা ও স্থায়ী আবাস লাভ করছেন, তাঁরা আমাদের মত সলাত আদায় করছেন, আমাদের মত সিয়াম পালন করছেন এবং অর্থের দ্বারা হাজ্জ, উমরা, জিহাদ ও সদাকাহ করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ শুনে তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। তবে যারা পুনরায় এ ধরনের কাজ করবে তাদের কথা স্বতন্ত্র। তোমরা প্রত্যেক সলাতের পর তেত্রিশ বার করে তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ্), তাহ্মীদ (আলহামদু ল্লিল্লাহ্) এবং তাক্বীর (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে। (এ বিষয়টি নিয়ে) আমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হলো। কেউ বলল, আমরা তেত্রিশ বার তাসবীহ্ পড়ব, তেত্রিশ বার তাহ্মীদ আর চৌত্রিশ বার তাক্বীর পড়ব। অতঃপর আমি তাঁর নিকট ফিরে গেলাম। তিনি বললেন, :.............. বলবে, যাতে সবগুলোই তেত্রিশবার ক’রে হয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৫৫ হাঃ ৮৪৩, মুসলিম ৫/২৬, হাঃ ৫৯৫)
তাকবীর তাহরীমা ও সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে কী বলবে?
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাক্বীরে তাহ্রীমাহ ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার মাতাপিতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাক্বীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কী পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি- হে আল্লাহ আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। (বুখারী পর্ব ১০ : /৮৯ হাঃ ৭৪৪, মুসলিম ৫/২৭, হাঃ ৫৯৮)
সলাতের জন্য ধীরস্থির ও শান্তভাবে আসা মুস্তাহাব এবং দৌড়ে আসা অপছন্দনীয় হওয়া।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন সলাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সলাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সলাতে যোগদান করবে। সলাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা’আতের সাথে সলাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। (বুখারী পর্ব ১১ : /১৮ হাঃ ৯০৮, মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০২) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের (আগমনের) আওয়ায শুনতে পেলেন। সলাত শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের কী হয়েছিল? তাঁরা বললেন, আমরা সলাতের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করবে না। যখন সলাতে আসবে ধীরস্থিরভাবে আসবে (ইমামের সাথে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা (ইমামের সলাত ফিরানোর পর) পূর্ণ করবে। (বুখারী পর্ব ১০ : /২০ হাঃ ৬৩৫, মুসলিম ৫/২৮, হাঃ ৬০৩)
মানুষ সলাতের জন্য কখন দাঁড়াবে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করছিলেন, তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে বেরিয়ে আসলেন। তিনি মুসাল্লায় দাঁড়ালে তাঁর মনে হলো যে, তিনি জানাবাত অবস্থায় আছেন। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে থাক। তিনি ফিরে গিয়ে গোসল করে আবার আমাদের সামনে আসলেন এবং তাঁর মাথা হতে পানি ঝরছিল। তিনি তাকবীর (তাহ্রীমাহ) বাঁধলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে সলাত আদায় করলাম। (বুখারী পর্ব ৫ : /১৭ হাঃ ২৭৫, মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৫)
যে ব্যক্তি কোন সলাতের এক রাক’আত পেল সে যেন সে সলাতই পেল।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোনো সলাতের এক রাক’আত পায়, সে সলাত পেলো। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৯ হাঃ ৫৮০, মুসলিম ৫/৩০, হাঃ ৬০৭)
পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের সময়।
বশীর ইব্নু আবূ মাস’ঊদ তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, একবার জিব্রীল (‘আ.) আসলেন, অতঃপর তিনি আমার ইমামত করলেন এবং তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপরও আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সঙ্গে সলাত আদায় করলাম। এ সময় তিনি তাঁর আঙ্গুলে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত গুনছিলেন। (বুখারী পর্ব ৫৯ : /৬ হাঃ ৩২২১, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০) ইব্নু শিহাব (রহঃ) ‘উমার ইব্নু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) একদা কোনো এক সলাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। তখন ‘উরওয়াহ ইব্নু যুবাইর (রাঃ) তাঁর নিকট গেলেন এবং তাঁর নিকট বর্ণনা করলেন যে, ইরাকে অবস্থানকালে মুগীরাহ ইব্নু শু’বা (রাঃ) একদা এক সলাত আদায়ে বিলম্ব করেছিলেন। ফলে আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, হে মুগীরাহ! এ কী? তুমি কি অবগত নও যে, জিব্রাঈল (আ.) অবতরণ করে সলাত আদায় করলেন, আর আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সলাত আদায় করলেন। আবার তিনি সলাত আদায় করলেন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সলাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সলাত আদায় করলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সলাত আদায় করলেন। আবার তিনি সলাত আদায় করলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সলাত আদায় করলেন। পুনরায় তিনি সলাত আদায় করলেন এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সলাত আদায় করলেন। অতঃপর জিব্রাঈল (আ.) বললেন, আমি এজন্য আদিষ্ট হয়েছি। ‘উমার (ইব্নু ‘আবদুল আযীয) (রহঃ) ‘উরওয়াহ (রহঃ)-কে বললেন, “তুমি যা রিওয়ায়াত করছ তা একটু ভেবে দেখ। জিব্রাঈলই কি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য সলাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন?” ‘উরওয়াহ (রহঃ) বললেন, বাশীর ইব্নু আবূ মাস’ঊদ (রহঃ) তার পিতা হতে এরূপই বর্ণনা করতেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /১ হাঃ ৫২১, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০) ‘উরওয়াহ (রহঃ) অবশ্য ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন মুহূর্তে ‘আসরের সলাত আদায় করতেন যে, সুর্যরশ্মি তখনও তাঁর হুজরার মধ্যে থাকতো। তবে তা উপরের দিকে উঠে যাওয়ার পূর্বেই। (বুখারী পর্ব ৯ : /১ হাঃ ৫২২, মুসলিম ৫/৩১, হাঃ ৬১০, ৬১১)
যুহরের সলাত প্রখর গরমের সময় ঠাণ্ডা করে পড়া মুস্তাহাব ঐ ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি জামা’আতে যায় এবং রাস্তায় তাকে রৌদ্রের তাপ লাগে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন গরম বেড়ে যায় তখন তোমরা তা কমে এলে (যুহরের) সলাত আদায় করো। কেননা, গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ। (বুখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৬, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৫) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুআয্যিন যুহরের আযান দিলে তিনি বললেনঃ ঠাণ্ডা হতে দাও, ঠাণ্ডা হতে দাও। অথবা তিনি বললেন, অপেক্ষা কর, অপেক্ষা কর। তিনি আরও বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের ফলেই সৃষ্টি হয়। কাজেই গরম যখন বেড়ে যায় তখন গরম কমলেই সলাত আদায় করবে। এমনকি (বিলম্ব করতে করতে বেলা এতটুকু গড়িয়ে গিয়েছিল যে) আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম। (বুখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৫, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নাম তার প্রতিপালকের নিকট এ বলে নালিশ করেছিলো, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আর এক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে দু’টি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দু’টি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব কর তাই। (বুখারী পর্ব ৯ : /৯ হাঃ ৫৩৭, মুসলিম ৫/৩২, হাঃ ৬১৫, ৬১৭)
গরমের তীব্রতা না থাকলে যুহরের সলাত নির্ধারিত সময়ের প্রারম্ভে পড়া মুস্তাহাব।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে আমরা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সলাত আদায় করতাম। আমাদের কেউ মাটিতে তার চেহারা (কপাল) স্থির রাখতে সক্ষম না হলে সে তার কাপড় বিছিয়ে তার উপর সাজদাহ্ করত। (বুখারী পর্ব ২১ : /৯ হাঃ ১২০৮, মুসলিম ৫/৩৩, হাঃ ৬২০)
‘আসরের সলাত প্রথম সময়ে পড়া উত্তম।
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসরের সলাত আদায় করতেন, আর সূর্য তখনও যথেষ্ট উপরে উজ্জ্বল অবস্থায় বিরাজমান থাকতো। সলাতের পর কোনো গমনকারী ‘আওয়ালী’র দিকে রওয়ানা হয়ে তাদের নিকট পৌঁছে যেতো, আর তখনও সূর্য উপরে থাকতো। আওয়ালীর কোন কোন অংশ ছিল মাদীনা হতে চার মাইল বা তার কাছাকাছি দূরত্বে। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৩ হাঃ ৫৫০, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২১) আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমরা ‘উমার ইব্নু আবদুল আযীয (রহঃ)-এর সঙ্গে যুহরের সলাত আদায় করলাম। অতঃপর সেখান হতে বেরিয়ে আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আমরা গিয়ে তাঁকে ‘আসরের সলাত আদায়ে রত পেলাম। আমি তাঁকে বললাম চাচা! এ কোন্ সলাত যা আপনি আদায় করলেন? তিনি বললেন, ‘আসরের সলাত আর এ হলো আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত, যা আমরা তাঁর সাথে আদায় করতাম। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৩ হাঃ ৫৪৯, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২৩) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আসরের সলাত আদায় করে উট যবেহ করতাম। তারপর সে গোশত দশ ভাগে ভাগ করা হত এবং সূর্যাস্তের পূর্বেই আমরা রান্না করা গোশত আহার করতাম। (বুখারী পর্ব ৪৭ : /১ হাঃ ২৪৮৫, মুসলিম ৫/৩৪, হাঃ ৬২৫)
‘আসরের সলাত ছুটে যাওয়ার ভয়াবহতা।
‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির ‘আসরের সলাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, (আরবী পরিভাষায়) .............. বাক্যটি ব্যবহার করা হয় যখন কেউ কাউকে হত্যা করে অথবা মাল-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৪ হাঃ ৫৫২, মুসলিম ৫/৩৫, হাঃ ৬২৬)
ঐ ব্যক্তির দলীল, যিনি বলেন- সলাতুল উসত্বা হচ্ছে ‘আসরের সলাত।
‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করেন, ‘আল্লাহ তাদের (মুশরিকদের) ঘর ও কবর আগুনে পূর্ণ করুন। কেননা তারা মধ্যম সলাত (তথা ‘আসরের সলাত) থেকে আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে, এমনকি সূর্য অস্তমিত হয়ে যায়।’ (বুখারী পর্ব ৫৬ : /৯৮ হাঃ ২৯৩১, মুসলিম ৫/৩৫ হাঃ ৬২৭) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) খন্দকের দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) এসে কুরাইশ গোত্রীয় কাফিরদের ভর্ৎসনা করতে লাগলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি এখনও ‘আসরের সলাত আদায় করতে পারিনি, এমন কি সূর্য অস্ত যায় যায়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন আল্লাহ্র শপথ! আমিও তা আদায় করিনি। অতঃপর আমরা উঠে বুতহানের দিকে গেলাম। সেখানে তিনি সলাতের জন্য উযূ করলেন এবং আমরাও উযূ করলাম; অতঃপর সূর্য ডুবে গেলে ‘আসরের সলাত আদায় করেন, অতঃপর মাগরিবের সলাত আদায় করেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /৩৬ হাঃ ৫৯৬, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩১)
ফাজ্র ও ‘আসরের সলাতের মর্যাদা এবং এ দু’ সলাতের প্রতি যত্নবান হওয়া।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফেরেশ্তামণ্ডলী পালা বদল করে তোমাদের মাঝে আগমন করেন; একদল দিনে, একদল রাতে। ‘আসর ও ফাজরের সলাতে উভয় দল একত্র হন। অতঃপর তোমাদের মাঝে রাত যাপনকারী দলটি উঠে যান। তখন তাদের প্রতিপালক তাদের জিজ্ঞেস করেন, আমার বান্দাদের কোন্ অবস্থায় রেখে আসলে? অবশ্য তিনি নিজেই তাদের ব্যাপারে সর্বাধিক পরিজ্ঞাত। উত্তরে তাঁরা বলেন ; আমরা তাদের সলাতে রেখে এসেছি, আর আমরা যখন তাদের নিকট গিয়েছিলাম তখনও তারা সলাত আদায়রত অবস্থায় ছিলেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৬ হাঃ ৫৫৫, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩২) জরীর ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি রাতে (পূর্ণিমার) চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ ঐ চাঁদকে তোমরা যেমন দেখছ, ঠিক তেমনি অচিরেই তোমাদের প্রতিপালককে তোমরা দেখতে পাবে। তাঁকে দেখতে তোমরা কোনো ভীড়ের সম্মুখীন হবে না। কাজেই সূর্য উদয়ের এবং অস্ত যাওয়ার পূর্বের সলাত (শয়তানের প্রভাবমুক্ত হয়ে) আদায় করতে পারলে তোমরা তাই করবে। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন, “কাজেই তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার তাসবীহ্ পাঠ কর সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে।” (ক্বাফঃ ৩৯) ইসমাঈল (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হল : এমনভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে যেন কখনো ছুটে না যায়। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৬ হাঃ ৫৫৪, মুসলিম ৫/৩৬, হাঃ ৬৩৩) আবূ বকর ইব্নু আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফাজর ও ‘আসরের) সলাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৬ হাঃ ৫৭৪, মুসলিম ৫/৩৭, হাঃ ৬৩৫)
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় মাগরিবের সলাতের প্রথম ওয়াক্ত হওয়ার বর্ণনা।
সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য পর্দার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাগরিবের সলাত আদায় করতাম। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৮ হাঃ ৫৬১, মুসলিম ৫/৩৮, হাঃ ৬৩৬) রাফি’ ইব্নু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাগরিবের সলাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হবার স্থান দেখতে পেতো। (বুখারী পর্ব ৯ : /১৮ হাঃ ৫৫৯, মুসলিম ৫/৩৮, হাঃ ৬৩৭)
‘ইশার সলাতের সময় এবং তা বিলম্ব করা।
‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায় করতে বিলম্ব করলেন। এ হলো ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রসারের পূর্বের কথা। (সালাতের জন্য) তিনি বেরিয়ে আসেননি, এমন কি ‘উমার (রাঃ) বললেন, মহিলা ও শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলেন এবং মাসজিদের লোকদের লক্ষ্য করে বললেনঃ “তোমরা ব্যতীত যমীনের অধিবাসীদের কেউ ‘ইশার সলাতের জন্য অপেক্ষায় নেই। (বুখারী পর্ব ৯ : /২২ হাঃ ৫৬৬, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৮) ‘আব্দুল্লাহ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) এক রাতে কর্মব্যস্ততার কারণে আল্লাহর রাসূল ‘ইশার সলাত আদায়ে দেরী করলেন, এমন কি আমরা মাসজিদে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জেগে উঠে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর পুনরায় জেগে উঠলাম। তখন আল্লাহর রাসূল আমাদের নিকট বেরিয়ে এলেন, অতঃপর বললেন, তোমরা ছাড়া পৃথিবীর আর কেউ এ সলাতের অপেক্ষা করছে না। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৪ হাঃ ৫৭০, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৯) হুমাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করা হয় যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আংটি পরেছেন কিনা? তিনি বললেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে এশার সলাত আদায়ে অর্ধরাত পর্যন্ত দেরী করেন। এরপর তিনি আমাদের মাঝে আসেন। আমি যেন তাঁর আংটির চমক দেখতে লাগলাম। তিনি বললেনঃ লোকজন সলাত আদায় করে শুয়ে পড়েছে। আর যতক্ষণ থেকে তোমরা সলাতের অপেক্ষায় রয়েছ, ততক্ষণ তোমরা সলাতের মধ্যেই রয়েছ। (বুখারী পর্ব ৭৭ : /৪৮ হাঃ ৫৮৬৯, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৪০) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও আমার সাথিরা-যারা (আবিসিনিয়া হতে) জাহাজ মারফত আমার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, বাকী’য়ে বুতহানের একটা মুক্ত এলাকায় বসবাসরত ছিলাম। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থাকতেন মাদীনায়। বুতহানের অধিবাসীরা পালাক্রমে একদল করে প্রতি রাতে ‘ইশার সলাতের সময় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে আসতেন। পালাক্রমে ‘ইশার সলাতের সময় আমি ও আমার কতিপয় সঙ্গী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাযির হলাম। তখন তিনি কোনো কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন, ফলে সলাত আদায়ে বিলম্ব করলেন। এমন কি রাত অর্ধেক হয়ে গেলো। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এলেন এবং সবাইকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে তিনি উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে বললেনঃ প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থানে বসে যাও। তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি যে, আল্লাহ্র পক্ষ হতে তোমাদের জন্য এটি এক নি’য়ামত যে, তোমরা ব্যতীত মানুষের মধ্যে কেউ এ মুহূর্তে সলাত আদায় করছে না। কিংবা তিনি বলেছিলেনঃ তোমরা ব্যতীত কোনো উম্মাত এ সময় সলাত আদায় করেনি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন্ বাক্যটি বলেছিলেন বর্ণনাকারী তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। আবূ মূসা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ কথা শুনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরলাম। (বুখারী পর্ব ৯ : /২২ হাঃ ৫৬৭, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৪১) ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত আদায় করতে দেরী করেছিলেন, এমন কি লোকজন একবার ঘুমিয়ে জেগে উঠল, আবার ঘুমিয়ে পড়ে জাগ্রত হলো। তখন ‘উমার ইব্নু খাত্তাব (রাঃ) উঠে গিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, ‘আস-সালাত’। অতঃপর আল্লাহ্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এলেন- যেন এখনো আমি তাঁকে দেখছি, তাঁর মাথা হতে পানি টপ্কে পড়ছিলো এবং তাঁর হাত মাথার উপর ছিলো। তিনি এসে বললেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবে (বিলম্ব করে) ‘ইশার সলাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম। ইব্নু জুরাইজ (রহঃ) (অত্র হাদীসের এক রাবী) বলেন, ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মাথায় হাত রেখেছিলেন তা কিভাবে রেখেছিলেন, বিষয়টি সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করার জন্য আতা (রহঃ)-কে বললাম। আতা (রহঃ) তাঁর আঙ্গুলগুলো সামান্য ফাঁক করলেন, অতঃপর সেগুলোর অগ্রভাগ সম্মুখ দিক হতে (চুলের অভ্যন্তরে) প্রবেশ করালেন। অতঃপর আঙ্গুলগুলো একত্রিত করে মাথার উপর দিয়ে এভাবে টেনে নিলেন যে, তার বৃদ্ধাঙ্গুল কানের সে পার্শ্বকে স্পর্শ করে গেলো যা মুখমণ্ডল সংলগ্ন চোয়ালের হাড্ডির উপর শ্মশ্রুর পাশে অবস্থিত। তিনি (নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) চুলের পানি ঝরাতে কিংবা চুল চাপড়াতে এরূপই করতেন। এবং তিনি বলেছিলেনঃ যদি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে এভাবেই (বিলম্ব করে) সলাত আদায় করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৪ হাঃ ৫৭১, মুসলিম ৫/৩৯, হাঃ ৬৩৯)
ফাজ্রের সলাত প্রথম ওয়াক্তে পড়া মুস্তাহাব আর তা হচ্ছে গালাস এবং তাতে কিরাআতের পরিমাণের বর্ণনা।
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ফাজরের জামা’আতে হাযির হতেন। অতঃপর সলাত আদায় করে তারা যার যার ঘরে ফিরে যেতেন। আবছা আঁধারে কেউ তাঁদের চিনতে পারতো না। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৭ হাঃ ৫৭৮, মুসলিম ৫/৪০ হাঃ ৬৪৫) জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত প্রচণ্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর ‘আসরের সলাত সূর্য উজ্জ্বল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সলাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ‘ইশার সলাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সকলেই সমবেত হয়েছেন, তাহলে সকাল সকাল আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন, লোকজন আসতে দেরী করছে, তাহলে বিলম্বে আদায় করতেন। আর ফাজরের সলাত তাঁরা কিংবা রাসলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /২৭ হাঃ ৫৬০, মুসলিম ৫/৪০ হাঃ ৬৪৬) বারযাহ আসলামী (রাঃ) তাকে সলাতসমূহের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি বললেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত সুর্য ঢলে গেলেই আদায় করতেন। আর ‘আসর (এমন সময় যে, সলাতের শেষে) কোনো ব্যক্তি সূর্য সজীব থাকতে থাকতেই মাদীনার প্রান্ত সীমায় ফিরে আসতে পারতো। (রাবী বলেন) মাগরিব সম্পর্কে তিনি কি বলেছিলেন, তা আমি ভুলে গেছি। আর তিনি ‘ইশা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোন দ্বিধা করতেন না এবং ‘ইশার পূর্বে ঘুমানো ও পরে কথাবার্তা বলা তিনি পছন্দ করতেন না। আর তিনি ফাজর আদায় করতেন এমন সময় যে, সলাত শেষে ফিরে যেতে লোকেরা তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তিকে চিনতে পারতো। এর দু’ রাক’আতে অথবা রাবী বলেছেন, এক রাক’আতে তিনি ষাট হতে একশত আয়াত পাঠ করতেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১০৪ হাঃ ৭৭১, মুসলিম ৫/৪০, হাঃ ৬৪৭)
জামা’আতে সলাতের ফাযীলাত এবং তা থেকে পিছিয়ে থাকার ভয়াবহতার বর্ণনা।
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি আল্লাহর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছেন যে, জামা’আতের সলাত তোমাদের কারো একাকী সলাত হতে পঁচিশ গুণ অধিক সওয়াব রাখে। আর ফাজরের সলাতে রাতের ও দিনের মালাকগণ একত্রিত হয়। অতঃপর আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলতেন, তোমরা চাইলে (এর প্রমান স্বরূপ) ‘........................’ অর্থাৎ “ফাজরের সলাতে (মালাকগণ) উপস্থিত হয়” পাঠ কর। শু’আইব (রহঃ) বলেন, আমাকে নাফি’ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করে শুনিয়েছেন যে, জামা’আতের সলাতে একাকী সলাত হতে সাতাশ গুণ বেশী সওয়াব হয়। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩১ হাঃ ৬৪৯, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫০) ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু ‘উমার (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতে সলাতের ফাযীলত একাকী আদায়কৃত সলাত অপেক্ষা সাতাশ’ গুণ বেশী। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩০ হাঃ ৬৪৫, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছে হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, অতঃপর সলাত কায়েমের নির্দেশ দেই, অতঃপর সলাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামত করার নির্দেশ দেই। অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং (যারা সলাতে শামিল হয় নাই) তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দু’টি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ‘ইশা সলাতের জামা’আতেও উপস্থিত হতো। (বুখারী পর্ব ১০ : /২৯ হাঃ ৬৪৪, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকদের জন্য ফাজর ও ‘ইশার সলাত অপেক্ষা অধিক ভারী সলাত আর নেই। এ দু’ সলাতের কী ফাযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুঁড়ি দিয়ে হলেও তারা হাযির হতো। (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন) আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, মুয়ায্যিনকে ইকামাত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামত করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে অতঃপর যারা সলাতে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩৪ হাঃ ৬৫৭, মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১)
ওজরের কারণে জামা’আত থেকে পিছিয়ে থাকার অনুমতি।
মাহমূদ ইব্নু রাবী’ আনসারী (রাঃ) ‘ইতবান ইব্নু মালিক (রাঃ), যিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সলাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভূমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা পার হয়ে তাদের মাসজিদে পৌঁছতে এবং তাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করতে সমর্থ হই না। আর ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার একান্ত ইচ্ছে যে, আপনি আমার ঘরে এসে কোন এক স্থানে সলাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সলাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবী বলেনঃ তাঁকে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ‘ইতবান (রাঃ) বলেনঃ পরদিন সূর্যোদয়ের পর আল্লাহর রাসূল্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাক্র (রাঃ) আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। আল্লাহর রাসূল্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরের কোন্ স্থানে সলাত আদায় করা পসন্দ কর? তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসূল্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দু’রাক’আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। তিনি (‘ইতবান) বলেনঃ আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাঁর জন্য তৈরি ‘খাযীরাহ’ নামক খাবার তাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেনঃ এ সময় মহল্লার কিছু লোক ঘরে ভীড় জমালেন। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘মালিক ইব্নু দুখাইশিন’ কোথায়? অথবা বললেনঃ ‘ইব্নু দুখশুন’ কোথায়? তখন তাঁদের একজন জবাব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলকে ভালবাসে না। তখন আল্লাহর রাসূল্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আমরা তো তার সম্পর্ক ও নাসীহাত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৪৬ হাঃ ৪২৫, মুসলিম ৫/৪৭, হাঃ ৩৩) মাহমূদ ইব্নু রাবী’ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, যে তাঁদের বাড়িতে রাখা একটি বালতির (পানি নিয়ে) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুল্লি করেছেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৫৪ হাঃ ৮৩৯, মুসলিম ৫/৪৭, হাঃ ৩৩)
নফল সলাত জামা’আতবদ্ধভাবে আদায় করার বৈধতা এবং মাদুর, কাপড় ইত্যাদি পবিত্র জিনিসের উপর সলাত আদায় করা।
মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত আদায় করতেন তখন হায়েয অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও আমি তাঁর বরাবর বসে থাকতাম। কখনো কখনো তিনি সাজদাহ করার সময় তাঁর কাপড় আমার গায়ে লাগতো। আর তিনি ছোট চাটাইয়ের উপর সলাত আদায় করতেন। (বুখারী পর্ব ৮ : /১৯ হাঃ ৩৭৯, মুসলিম ৫/৪৮, হাঃ ৫১৩)
জামা’আতে সলাতের ফাযীলাত এবং সলাতের জন্য অপেক্ষা করা।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জামা’আতের সাথে সলাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সলাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সলাতের উদ্দেশেই মাসজিদে আসে, সে মাসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান¦য়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক-একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মাসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সলাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সলাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ ফেরেশতামণ্ডলী তার জন্যে এ বলে দু’আ করেনঃ ইয়া আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, ইয়া আল্লাহ! তাকে রহম করুন, যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, সেখানে উযূ ভঙ্গের কাজ না করে। (বুখারী পর্ব ৮ : /৮৭ হাঃ ৪৭৭, মুসলিম ৫/৪৯, হাঃ ৬৪৯)
দূর হতে মাসজিদে আসার ফাযীলাত।
আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মসজিদ হতে) যে যত অধিক দূরত্ব অতিক্রম করে সলাতে আসে, তার তত অধিক পুণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে সলাত আদায় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তার পুণ্য সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক, যে একাকী সলাত আদায় করে ঘুমিয়ে যায়। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩১ হাঃ ৬৫১, মুসলিম ৫/৫০, হাঃ ৬৬২)
সলাতের জন্য হেঁটে যাওয়া পাপ মোচন করে ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, “বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ির সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে? তারা বললেন, তার দেহে কোনোরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ হলো পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন। (বুখারী পর্ব ৯ : /৬ হাঃ ৫২৮, মুসলিম ৫/৫১, হাঃ ৬৬৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মাসজিদে যায়, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখেন। (বুখারী পর্ব ১০ : /৩৭ হাঃ ৬৬২, মুসলিম ৫/৫১, হাঃ ৬৬৯)
ইমামাতের জন্য কে বেশি হকদার।
মালিক ইব্নু হুয়াইরিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার গোত্রের কয়েকজন লোকের সঙ্গে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম এবং আমরা তাঁর নিকট বিশ রাত অবস্থান করলাম। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত দয়ালু ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। তিনি যখন আমাদের মধ্যে নিজ পরিজনের নিকট ফিরে যাওয়ার আগ্রহ লক্ষ্য করলেন, তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা পরিজনের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে বসবাস কর, আর তাদের দ্বীন শিক্ষা দিবে এবং সলাত আদায় করবে। যখন সলাতের সময় উপস্থিত হয়, তখন তোমাদের একজন আযান দিবে এবং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বয়সে বড় সে ইমামত করবে। (বুখারী পর্ব ১০ : /১৭ হাঃ ৬২৮, মুসলিম ৫/৫৩, হাঃ ৬৭৪)
মুসলিমদের প্রতি কোন বিপদ পতিত হলে প্রত্যেক সলাতে কুনূতে নাযিলাহ পড়া মুস্তাহাব।
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ’ হতে মাথা উঠাতেন তখনঃ.............. বলতেন। আর কতিপয় লোকের নাম উল্লেখ করে তাঁদের জন্য দু’আ করতেন। দু’আয় তিনি বলতেন, ইয়া আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইব্নু ওয়ালীদ, সালামা ইব্নু হিশাম, আইয়্যাস ইব্নু আবূ রাবী’আ (রাঃ) এবং অপরাপর দুর্বল মুসলমানদেরকে রক্ষা করুন। ইয়া আল্লাহ্! মুদার গোত্রের উপর আপনার পাকড়াও কঠোর করুন, ইউসুফ (আ)-এর যুগে যেমন খাদ্য সংকট ছিল তাদের জন্যও অনুরূপ খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে দিন। (রাবী বলেন) এ যুগে পূর্বাঞ্চলের অধিবাসী মুদার গোত্রের লোকেরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরোধী ছিল। (বুখারী পর্ব ১০ : /১২৮ হাঃ ৮০৪, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৫) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রি’ল ও যাক্ওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে কুনূতে দু’আ পাঠ করেছিলেন। (বুখারী পর্ব ১৪ : /৭ হাঃ ১০০৩, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৭) ‘আসিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক তো বলে যে, আপনি রুকুর পরে বলেছেন। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। অতঃপর তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাস পর্যন্ত রুকুর পরে কুনূত পড়েন। তিনি বানূ সুলাইম গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে দু’আ করেছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চল্লিশজন কিংবা সত্তর জন ক্বারী কয়েকজন মুশরিকের কাছে পাঠালেন। তখন বানূ সুলাইমের লোকেরা তাঁদের হামলা করে তাঁদের হত্যা করে। অথচ তাদের এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে সন্ধি ছিল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ক্বারীদের জন্য যতটা ব্যথিত দেখেছি আর কারো জন্য এতখানি ব্যথিত দেখিনি। (বুখারী পর্ব ৫৮ : /৮ হাঃ ৩১৭০, মুসলিম ৫/৫৩ হাঃ ৬৭৭) আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটা সারীয়্যাহ (ক্ষুদ্র বাহিনী) পাঠালেন। তাদের কুর্রা বলা হতো। তাদের হত্যা করা হলো। আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এদের ব্যাপারে যেরূপ রাগানি¦ত দেখেছি অন্য কারণে সেরূপ রাগানি¦ত দেখিনি। এজন্য তিনি ফজরের সলাতে মাসব্যাপী কুনূত পড়লেন। তিনি বলতেনঃ উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে। (বুখারী পর্ব ৮০ : /৫৮ হাঃ ৬৩৯৪, মুসলিম ৫/৫৪, হাঃ ৬৭৭)
ছুটে যাওয়া সলাত আদায় করা এবং তা অবিলম্বে আদায় করা মুস্তাহাব।
‘ইমরান ইব্নু হুসাইন (রাঃ) এক সফরে তাঁরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। সারা রাত পথ চলার পর যখন ভোর কাছাকাছি হল, তখন বিশ্রাম নেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে পড়লেন। অবশেষে সূর্য উদিত হয়ে অনেক উপরে উঠে গেল, [ইমরান (রাঃ) বলেন] যিনি সর্বপ্রথম ঘুম হতে জাগলেন তিনি হলেন আবূ বাক্র (রাঃ)। আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে জাগ্রত না হলে তাঁকে জাগানো হত না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) জাগলেন। আবূ বাক্র (রাঃ) তাঁর শিয়রের নিকট গিয়ে বসে উচ্চৈঃস্বরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে লাগলেন। শেষে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে উঠলেন এবং অন্যত্র চলে গিয়ে অবতরণ করে আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সলাত আদায় করলেন। তখন এক ব্যক্তি আমাদের সাথে সলাত আদায় না করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত শেষ করে বললেন, হে অমুক! আমাদের সঙ্গে সলাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? লোকটি বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর সে সলাত আদায় করল। (ইমরান (রাঃ) বলেন) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অগ্রবর্তী দলের সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন এবং আমরা ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। এই অবস্থায় আমরা পথ চলছি। হঠাৎ উষ্ট্রে আরোহী এক মহিলা আমাদের নযরে পড়ল। সে পানি ভর্তি দু’টি মশকের মাঝখানে পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পানি কোথায়? সে বলল, (আশেপাশে) কোথায়ও পানি নেই। আমরা বললাম, তোমার ও পানির জায়গার মধ্যে দূরত্ব কতটুকু? সে বলল একদিন ও এক রাতের দূরত্ব। আমরা তাকে বললাম, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চল। সে বলল, আল্লাহর রাসূল কী? আমরা তাকে যেতে না দিয়ে তাকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলাম। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসেও ঐ রকম কথাই বলল যা সে আমাদের সঙ্গে বলেছিল। তবে সে তাঁর নিকট বলল, সে কয়েকজন ইয়াতীম সন্তানের মা। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মশক দু’টি নামিয়ে ফেলতে আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি মশক দু’টির মুখে হাত বুলালেন। আমরা তৃষ্ণার্ত চল্লিশ জন মানুষ পানি পান করে পিপাসা মিটালাম। অতঃপর আমাদের সকল মশক, বাসনপত্র পানি ভর্তি করে নিলাম। তবে উটগুলোকে পানি পান করান হয়নি। এত সবের পরও মহিলার মশকগুলো এত পানি ভর্তি ছিল যে তা ফেটে যাবার উপক্রম হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের নিকট যা কিছু আছে উপস্থিত কর। কিছু খেজুর ও রুটির টুকরা জমা করে তাঁকে দেয়া হল। এ নিয়ে নারীটি খুশীর সঙ্গে তার গৃহে ফিরে গেল। গৃহে গিয়ে সকলের নিকট সে বলল, আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, এক মহা যাদুকরের সঙ্গে অথবা মানুষে যাকে নাবী বলে ধারণা করে তার সঙ্গে। আল্লাহ্ এই মহিলার মাধ্যমে এ বস্তিবাসীকে হিদায়াত দান করলেন। স্ত্রীলোকটি নিজেও ইসলাম গ্রহণ করল এবং বস্তিবাসী সকলেই ইসলাম গ্রহণ করল। (বুখারী পর্ব ৬১ : /২৫ হাঃ ৩৫৭১, মুসলিম ৫/৫৫, হাঃ ৬৮২) আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কেউ কোনো সলাতের কথা ভুলে যায়, তাহলে যখনই স্মরণ হবে, তখন তাকে তা আদায় করতে হবে। এ ব্যতীত সে সলাতের অন্য কোনো কাফ্ফারা নেই। (কেননা, আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন) “আমাকে স্মরণের উদ্দেশে সলাত কায়েম কর”-(ত্বা--হা ১৪)। (বুখারী পর্ব ৯ : /৩৭ হাঃ ৫৯৭, মুসলিম ৫/৫৫, হাঃ ৬৮৪)